বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

বেঁচে থাকার স্বপ্ন!

329 গতকাল ছিমছাম চেহারা, রুচিসম্মত সাজ পোশাকে একজন কালো মেম এলেন, ট্রলিতে খাবারের আইটেম। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার রেজিস্টারে উনি চেক আউট করতে পারবেন কিনা। ট্রলির ভেতরে চোখ বুলিয়ে মনে মনে অবাক হলাম, প্রচুর শাক-সব্জি, ফল, ওটমিল, ননী তোলা দুধের জার। এসমস্ত খাবার কিনে একমাত্র আমি, মেক্সিকানরা এবং ইন্ডিয়ানরা ( এখানে একমাত্র আমি বাংলাদেশী)। সাদা আমেরিকানরাও হেলথি খাবার কিনে তবে আমাদের মত ঘাস পাতা কিনে না, কালো আমেরিকানরা তো শুধু হাই সুগার দেয়া ড্রিংকস, চর্বিযুক্ত খাবার, আর মাংস কিনে। মাংসের কতরকম আইটেম যে কিনে ওরা।

আমি ভদ্রমহিলার জিনিসগুলো চেক আউট করার এক পর্যায়ে বললাম, ” তুমি দেখছি খুব হেলথি ফুড খাও”। মহিলা বললেন, “এ বছর থেকে শুরু করেছি হেলথি ডায়েট, কারণ আমি আমার নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান দেখে যেতে চাই।”
– তোমার নাতি নাতনিরা কে কোন ক্লাসে পড়ে?
– ওরা এখনও ছোট , ৮, ১০ আর ১৩ বছর বয়স।
– বাহ! নাতি নাতনির গ্র্যাজুয়েশান দেখার ভাবনা থেকে হেলথি ডায়েট শুরু করেছো, কী চমৎকার সিদ্ধান্ত।
– তোমার কি মনে হয় না আমি নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান পর্যন্ত বাঁচবো?

– বাঁচবেনা মানে? তোমাকে বাঁচতেই হবে। এত সুন্দর চাওয়া! আচ্ছা, খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তোমার ডায়েটে কী পরিবর্তন এনেছো? তুমি কি ঘরে রান্না শুরু করেছো?
– আমি এখন ঘরে রান্না করি, মাংস প্রায় বাদ দিয়েছি, গ্রিলড চিকেন অল্প খাই, শাক সবজি বেশী খাই। ভাজাভুজি বন্ধ, আর সোডা ( কোল্ড ড্রিংকস) এক্কেবারে বাদ, নরমাল ওয়াটার খাই, রেস্টুরেন্টে যাইনা।
– দারুণ! তোমার স্বাস্থ্য খুব সুন্দর, তুমি নিশ্চয়ই আগে থাকতেই খুব স্বাস্থ্য সচেতন ছিলে, নাহলে হঠাৎ করে দৈনন্দিন জীবনে এতবড় চেঞ্জ নিয়ে আসা কঠিন কাজ। আচ্ছা তোমার বয়স কত জানতে পারি?
– আমার বয়স এই মাসেই ৬৭ পূর্ণ হবে।
– মাই গড! তোমাকে দেখে আমি ভেবেছিলাম ৫০-৫১ বছর বয়স হবে। মিসিসিপিতে খুব কম মানুষ দেখেছি যারা সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সচেতন, তুমি ব্যতিক্রম।
– আমি স্বাস্থ্য সচেতন ছিলামনা, কিন্তু এখন মনে হয় আর কিছুদিন বাঁচি, নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান দেখে যাই।
– তোমার জন্য অনেক শুভকামনা, তুমি নাতি নাতনিদের স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটির সকল গ্র্যাজুয়েশান অনুষ্ঠানে থাকবে।

কালো মেম বুক ভরা আশা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।
** আফ্রিকান আমেরিকান জনগণের অধিকাংশই এখনও নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের পর্যায়ে পড়ে। তাদের এহেন অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য তারা নিজেরাই সত্তর ভাগ দায়ী, বাকী ত্রিশ ভাগ সামাজিক বৈষম্যের কারণে। এই কথাটি বলছি আমার নিজ দায়িত্বে, কারণ আমি নিজে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ, আমার স্বামীও। আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য আমরা দশ ভাগও দায়ী ছিলাম না, কিন্তু আমরা আলোর পথে আসতে চেয়েছি বলেই আলোর দেখা পেয়েছি, আফ্রিকান আমেরিকান জনগণের আটানব্বই ভাগ নিজেদের দুরবস্থার জন্য তামাদি হয়ে যাওয়া বর্ণপ্রথাকে দায়ী করে, সরকারকে দায়ী করে (যদিও আমেরিকান গরীব জনগণ সরকারের কাছ থেকে ফুড স্ট্যাম্প পায়, বাচ্চাদের লেখাপড়ার সুবিধা পায়, কালোদের জন্য সুযোগ অতিরিক্ত কোটাতেও দেয়া আছে, চিকিৎসা সুবিধা পায়।)

কিন্তু ওরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেনা, ওদের খাদ্যাভ্যাস সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী। ওরা জাংক ফুড বেশী খায়, শাক সবজি খাওনা, জলের পরিবর্তে সারাক্ষণ কোক, ফান্টা খাচ্ছে, ভাজাভুজি খাবার এদের পছন্দ। এদের অধিকাংশই হাই ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলের ওষুধ খায়। গ্র্যাজুয়েশান দূরের কথা, সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়েও ওরা স্কুলের গন্ডিটাও পুরোপুরি ডিঙ্গাতে পারেনা। স্কুল পাশের আগেই রেস্টুরেন্টে ওয়েটার, ক্লিনারের কাজ নিয়ে পয়সা উপার্জন করা শুরু করে। খুব কম ছেলেমেয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, প্রবেশ করেও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেনা।

আফ্রিকান আমেরিকানদের গড় আয়ু খুব কম, কারণ ওদের অলস, নেতিবাচক জীবনাভ্যাস। এজন্যই কালকের কালো মেমের বেঁচে থাকার কারণ এবং স্বপ্নের কথা শুনে ভীষণ ভালো লেগেছে। ঈশ্বর যেন ওনার আশা পূর্ণ করেন।**

.
( মুহূর্তে দেখা মানুষ)

আমাদের বেড়াল আমাদের মতো হয়নি

কুড়ি
রাইটার্স বিল্ডিংয়ে হইচই, আলোড়ন, তোলপাড়। একে তো সরকারি অস্ত্র খোয়া গেল, তারপর বাঘের হাতে বন্দুক, সে গুলিও চালাচ্ছে। রোবটরা যদি রাইফেলের জোরে একটা বিদ্রোহমতো ক’রে গোসাবা বা কুলতলির দখল নিয়ে বসে? যুদ্ধের বাজারে তখন এক্সট্রা গৃহযুদ্ধের চাপ; জিনিসটায় রাজনৈতিক রঙও লেগে যাবে, পশ্চিমবঙ্গে বাঘ-পতাকাওলা পার্টি আছে না!

মিটিংয়ের আহবায়ক বন দপ্তরের প্রধান সাত্যকি জোয়ারদার সাহিত্যিক মানুষ; বললেন, আমরা যদি গঠনমূলক দিক থেকে দেখি — বাঘের হাতে রাইফেল মানে জঙ্গল চোরাশিকারি-মুক্ত। তার এই চূড়ান্ত এগিয়ে থাকা অরণ্য-বাঁচাও ফর্মুলা বিক্কিরি হল না। দু’বছর এলএলবি প’ড়ে ছেড়ে দেওয়া ডেপুটি সেক্রেটারি (গৃহ) বিদ্যে ফলালেন, স্যার বাঘ গুলি ছুঁড়ছে কোর্টে প্রমাণ করবেন কী ক’রে? কার্তুজের খোল তো উদ্ধার করা যায়নি! ডিআইজি সাহেবের প্রথম থেকেই আলোচনায় ইন্টারেস্ট নেই। তিনি কাছাকাছির মধ্যে নদী ও জলসেচ দপ্তরের সচিবের কান পেয়ে সেখানেই ফিসফিসোলেন : পেটের ভেতর যেমন গ্যাস আর অ্যান্টাসিড নিজেরা নিজেরা মারামারি করে, আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোই; তেমনি এখন জন্তু-জানোয়ারে যুদ্ধ চলুক; পুলিশের নাক গলানোর কী আছে! পর্যটন দপ্তরের এক বাচ্চা বিসিএস অফিসার মহা উত্তেজিত — বাঘের একটা রাইফেল-হাতে ছবি পাওয়া যায় না?

— দূর বাবা, ঘটনার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না! শিউলি বলল। মাথা ঝাঁকাল চাঁদ।

— বড় বড় মাতব্বরই ঠাওর করতে পারছে না, তার তোরা! এট্টু সবুর কর। কাকিমা কোথায়?
কাকিমা বারাসাতে গেছে, দিদিমা পাড়ায় শুনে টিপুদা একটা বিড়ি ধরাল।

আমলাদের দৌড় বুঝে নিয়ে বনমন্ত্রী শশধর চ্যাটার্জি গলা চড়িয়েছেন : ধূলিভাসানি বিটের ফরেস্ট অফিসারকে ডাকা হয়নি? সে কোথায়? রঞ্জিত সমাদ্দার উঠে দাঁড়াতেই — কী ব্যাপার, রাইফেলটা বাঘের হাতে তুলে দিয়ে নাকে তেল লাগিয়ে ঘুমোচ্ছেন?
স্যার, আমার একটা শান্তি-পরিকল্পনা আছে। আমরা বাঘদের কাছে আবেদন রাখতে পারি ওয়েপন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে।
সরি টু সে, সবাই গাঁজা খেয়ে আসেননি তো মিটিংয়ে!
স্যার, রোবট আমাদের ঘোষণা না বুঝলেও নন্দরাক্ষস বুঝবে।
হু ইজ নন্দ? পোষা বাঘ নাকি আপনাদের? কুনকে হাতির মতো জঙ্গলে ছেড়ে রেখেছেন?

সব শুনে চাটুজ্জেবাবুর মুখ উজ্জ্বল হল। রূপান্তরিত শিলা পড়েছিলাম ক্লাস এইটের ভূগোলে, তারপর এই রূপান্তরিত বেড়াল! বেশ লেগে পড়ুন, আমার বেস্ট অফ লাক থাকল।

সারাদিন ধরে মাইকিং হচ্ছে কৈকলমারি-শুইয়া-ধূলিভাসানি বিটের নদীবক্ষে এবং বন-ঘেরা রাস্তায় : মাননীয় বাঘগণ ও বিশেষভাবে প্রিয় নন্দ, আপোনাদের চুরি করা, সরি ছিনতাই করা রাইফেলের অভাবে বন দপ্তরের ডে-টু-ডে কাজ খুবই হ্যাম্পার হচ্ছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণ নেই ব’লে আপোনাদের হাতের টিপ খুবই খারাপ। একটা বাঁদর-সাইজের ঈগল পর্যন্ত মারতে পারলেন না। তাই বেশি ফুটুনি না ক’রে, সরি, জটিলতা বৃদ্ধি না ক’রে রাইফেল জমা দিয়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় প্রদান করুন। শুইয়া নদীর খাঁড়িকে হাতিয়ার সমর্পণের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, সময় আগামি কাল সকাল দশ ঘটিকা। সরকার কথা দিচ্ছে, চার হাতপায়ে চালানো বন্দুক আবিষ্কার হলে সবার আগে এই জঙ্গলেই সাপ্লাই দেওয়া হবে।

মাঝ-মাতলায় দাঁড়িয়ে থাকা লঞ্চে ঠাসাঠাসি গ্রামের কিছু মাতব্বর, পুলিশ, রেসকিউ টিম, ব্যান্ডপার্টি আর ‘সুন্দরবন বার্তা’ পত্রিকার একই দেহে মালিক-সম্পাদক-সাংবাদিক-ক্যামেরাম্যান বিকাশ সাঁপুই। বাঘের হাতে ঘড়ি নেই ব’লে দশটা বাজতে পাঁচ থেকে ব্যান্ডপার্টির কনসার্ট চালু : “কর চলে হম ফিদা জান-ও-তন সাথিয়োঁ”… কিন্তু কোনও সাড়া নেই। তারপর “অ্যায় বতন অ্যায় বতন হমকো তেরী কসম” সুর ওঠা মাত্র নদীর পাড়ে কালোহলুদ মাথাও ফুটে উঠতে লাগল। বাজিয়েরা ভয়ে থেমে গেছে, সমাদ্দার চেঁচালেন : চালিয়ে যাও; তিনি খেয়াল করেছেন বাঘদল গানের তালে তালে পা ফেলে এগিয়ে আসছে —- ঝম্পু ঝম্পু ঝম ঝম, ঝম্পর ঝম্পর ঝম। মিছিলের নেতৃত্বে এক বাদামি বুনো শুয়োর, আরে না না, ও তো আচ্ছাসে বডি বানানো আমাদের নন্দরাক্ষস! পিঠে তার রাইফেল, মুখে কামড়ে আছে স্লিংয়ের কাপড়। শুইয়া খালের মুখে নৌকো বেঁধে রেখে এসেছিল ফরেস্ট গার্ডরা, তার গলুইতে রেশন দোকানের মুটে যেমন পিঠ ঝাঁকিয়ে চালের বস্তা ফ্যালে, তেমনি এক ঝটকায় রাইফেলটা নামিয়ে দিল নন্দ। তারপর লোহার গজালে বাঁধা কাছির ফাঁস দাঁত দিয়ে খোলার চেষ্টা করতে লাগল। পেছনে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে দুশো রোবট, সময় লাগছে দেখে একটা মুশকো বাঘ কামড়ে উপড়ে দিল লোহার খোঁটা। ওমনি ফরফর ক’রে ভাসতে ভাসতে নৌকো লঞ্চের গায়ের কাছে! এদিকে হাফ-সেঞ্চুরি মানুষ হাততালি দিচ্ছে, ওপাশ থেকে ডবল সেঞ্চুরি বাঘের একজোট গর্জন! সেই শব্দে লঞ্চ থেকে ক্যামেরাসুদ্ধু নদীতে পড়ে গেল বিকাশ সাঁপুই।

বাসু মুখে হাতচাপা দিয়েছে : আমি জানতাম লাস্টে ক্যামেরাম্যান জলে পড়ে যাবে।
— কেন রে মনিদা?
— যদি কেউ অস্ত্র জমা দেওয়ার ছবি দেখতে চায়!

টিপুদা বাসুর চোখদুটো পুনরাবিষ্কার করছিল। সেখানে বুদ্ধি, সতর্কতা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে সীমাহীন এক মোকাম থেকে দেয়াল-তোলা ঘরে স’রে যাওয়ার রাস্তা আঁকা হচ্ছে। ছেলেটা ভুলে যাচ্ছে কল্পনার মাটিতে আলপনা আরও সুন্দর ফোটে, স্বপ্নের টিকিট কাটলেই জীবনের ট্রেনে চাপা যায়। আসলে পাঠক জন্ম নেয় কাহিনির সামনে বুঁদ হয়ে বসে থাকবে ব’লে — প্রতিমাকে পুজো দেওয়া মানুষ যেন; আর সমালোচক পা টিপে-টিপে মূর্তির পেছনে গিয়ে দেখতে থাকে কাদা-মাখানো বিচালি, কাঠের শলাগুলো। ছোটরা নতুন জামার ভাঁজভাঙা গন্ধেই মাত; বড়রা রঙ বোতাম কিচ্ছু না, পরখ করে সেলাই কতটা অপলকা।

বাসুদেবও অসহায়ভাবে বড় হয়ে যাচ্ছে!

(আরও আছে)

মার্চের অসুখ

মনে আছে, সে-বছর তোর ভীষণ অসুখ?
দিবারাত্র কষ্ট, খিদে নেই ঘুম নষ্ট –
এক অসহ্য সুখে তোর পুড়ে যেত বুক।

শোনিত মধ্যে ফুলে ভরা আস্ত একটা মার্চ গাছ
মাথা দোলাত হঠাৎ হঠাৎই হাওয়ায়
হাওয়ারও বিরাম ছিল না দু’বাড়ি আসা-যাওয়ায়

তোর মাথার ভেতর, নিঃশ্বাসে তখন একটাই নাম
বললাম, ভালো নয়, অহেতুক এ মর্ষকাম –

রক্তে পোঁতা অমনি দুলে উঠল চিরকালীন গাছ
আমার চোখে শেকড় চারিয়ে গেল
বললি, মার্চ! ও মার্চ! মার্চ – ভালোবাসলাম
তুই দিয়েছিলি এই নামের ইনাম

তথাপি কখন তোর সেরে গেল সব অসুখের সুখ
ইদানীং আর মাটিতে পড়ে না পা –
আজ লালফুলী মার্চ, কাল শুধু ঝরাপাতা

ধৈর্যের ফল!

1638 হয়তো অতিরিক্ত যত্ন করে ফেলেছিলাম, তাই ছবির অর্কিডটা ফুল পাতাসহ তিন বছর আগে মরে গেছিলো। টবটার মধ্যে রয়ে গেছিল শুধু কাঠের চিপস।

চোখের সামনে জলজ্যান্ত অর্কিডটা মরে গেলো, কী যে খারাপ লাগছিলো। হাতে ধরে টবটাকে বাইরে ফেলে দিতেও পারিনি। আমি তো এমনিতেও ওয়ালমার্ট থেকে মরে হেজে যাওয়া গাছ সস্তায় কিনে এনে ঠিক বাঁচিয়ে ফেলি। আমার কিচেনল্যান্ডের প্রতিটি গাছ আমার হাতে পুণর্জন্ম পেয়েছে।

তিন বছর আগে মরে যাওয়া অর্কিডের শূন্য টবটা আমাদের বেডরুমের জানালায় অন্যান্য অর্কিডের পাশে রেখে রোদ জল দিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রায় পাঁচ মাস পর লক্ষ্য করলাম, কাঠের চিপসের ভেতর থেকে আধা সে:মি সাইজের কালচে সবুজ কিছু বেরিয়ে আসছে। আমি শকড হয়ে গেছিলাম। আমি তো গাছপালা ভালোবাসি, কিন্তু কোন্ গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা জানি না। বিশেষ করে অর্কিড, অর্কিড তো মাটিতে জন্মে না। অর্কিড পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ, অন্য গাছের ডালে ওরা জন্মায়। তাই টবের মধ্যে মাটির পরিবর্তে কাঠের চিপস থাকে।

নিয়ম না জেনে একবার একটা তাজা অর্কিড ছোটো টব থেকে সরিয়ে মাটি ভর্তি বড়ো টবে দিয়েছিলাম। পনের দিনের মধ্যে সেই সবুজ বড়ো বড়ো পাতাসহ অর্কিডটা মরে একেবারে মাটির সাথে মিশে গেলো। তখনই এক বাগান বিশেষজ্ঞ বৌদির কাছ থেকে জেনেছি, অর্কিড নাকি মাটিতে বাঁচে না।

যা বলছিলাম, গত তিন বছরে সেই মরে যাওয়া অর্কিডটা বেঁচে উঠে ছোটো ছোটো তিনটি পাতাও মেলেছে। আমি গত ছয় মাস বাড়িতে ছিলাম না, স্বামীর কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। মিথীলার স্কুল জীবন থেকে বন্ধু এমিলির কাছে দায়িত্ব দিয়ে গেছিলাম সপ্তাহে একদিন ঘরে ঢুকে যেন মানিপ্ল্যান্ট, অর্কিডে জল দিয়ে যায়। মাঝে প্রচন্ড গরমের সময় আমাদের বাড়ির ইলেকট্রিসিটি লাইন দশ দিনের জন্য বন্ধ ছিলো এবং এমিলিও অই সময়ে আসতে পারেনি।

যখন এসেছে, ঘরে ঢুকে দেখে চারদিকে আগুনের মতো গরম, সব লতা পাতা, অর্কিড শুকিয়ে হলুদ হয়ে প্রায় মরে গেছে। আমাকে ফোন করতেই এই সংবাদ শুনে আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমিলি শুধু সরি সরি বলে চলেছে, ও কেন আরও আগে আসতে পারলো না তার জন্য আফসোস করছে। আমি বললাম, আমরা ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি গাছগুলোয় আবার জল দিতে থাকো। আমরা বাড়িতে ফিরেই আমি ঘরের গাছগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সব গাছের বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত অবস্থা। কিন্তু এমিলির দেয়া জল খেয়ে তখনও বেঁচে আছে।

নতুন বছর ২০২৩ এলো। গত তিন মাসে আমার ঘরের মানিপ্ল্যান্ট সবুজ হয়ে লতিয়ে উঠেছে, অর্কিডে আবার ফুলের স্টিক বেরিয়ে ফুল ফুটতেও শুরু করেছে, সেই বেঁচে ওঠা তিন পাতার অর্কিডটাও দেখি দাঁড়াতে শুরু করেছে। অর্কিডের তিন পাতার দিকে তাকিয়ে প্রায়ই ভাবি, এই অর্কিডের পাতা কবে বড়ো হবে, কবে হৃষ্টপুষ্ট হবে তবেই ফুলের স্টিক বের হবে! চার পাঁচ দিন আগে জানালায় থাকা অর্কিডগুলোকে বাথরুমের বেসিনে রেখে স্নান করাচ্ছিলাম, তিন পাতার অর্কিডটাকেও স্নান করিয়েছি।

স্নান শেষে যখন ওদের সবাইকে আবার জানালায় এনে বসিয়েছি, দেখি তিন পাতার অর্কিডে সরু কাঠির মতো একটা নতুন ডালা বের হচ্ছে। এই ডালাগুলোকে আমি চিনি। এটাই ফুলের স্টিক, তবে অর্কিডের স্টিক এতো সরু হয় তা আগে দেখিনি। নতুন বছরে ভাবছিলাম নতুন জন্ম পাওয়া এই তিন পাতার অর্কিড কবে বড়ো হবে, কবে ফুল ফুটবে! আর দশ দিন পরেই কিনা সেই অর্কিডে ফুলের স্টিক বের হলো!

আজ দুপুরে এই ছোট্টো অর্কিডের টবটা বাথরুমে নিয়ে স্নান করালাম। এরপর মিথীলার কাছে নিয়ে এলাম, বললাম ওর পুণর্জন্মের কাহিনী। সব শুনে মিথীলা বিস্মিত! এক দৃষ্টিতে অর্কিডের দিকে তাকিয়ে মুখে বললো, মা, তোমার অনেক ধৈর্য। অনেক ধৈর্য। তুমি একটা মাত্র মানিপ্ল্যান্ট থেকে এতোগুলো পট বানিয়েছো, দুইটা ব্যাম্বু প্ল্যান্ট থেকে এতোগুলো ব্যাম্বু প্ল্যান্ট বানিয়েছো! তুমি চেয়েছিলে মানিপ্ল্যান্ট লতা দিয়ে আমাদের সিঁড়ির রেলিং পেঁচাতে। অলরেডি সেই লতা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে! আর আর্যর জন্য কত বছর ধরে ফান্ড রেইজ করেই যাচ্ছো। ফান্ড ঠিকমতো না এলে তোমার মন খারাপ হয়, তুমি চিন্তায় পড়ে যাও। তবুও নতুন করে আবার স্টার্ট করো।

আমার মনে হচ্ছে, তোমার অর্কিডটা যেমন বেঁচেছে, নতুন ফ্লাওয়ার স্টিক বেরিয়েছে, আর্যর জন্য তুমি ফান্ড রেইজিং সাকসেসফুল হবে। আর্যও সেরে উঠবে। মিথীলার কথা শুনে আমার চোখে জল এসেছে। বললাম, এই প্রথম আমার পরিবারের কেউ একজন স্পষ্ট করে আমায় চিনলো। মিথীলা, তুমি আমায় ঠিক চিনেছো। বাইরে থেকে আমাকে যতোই হুড়ুমদুড়ুম মনে হোক, ভেতরে আমি অনেক স্থির, আমার অসীম ধৈর্য, এবং আমি লক্ষ্যে স্থির থাকি। এবং আজ আমি বলছি, আমার চেয়েও অনেক বেশী ধৈর্য তোমার। আমাদের কত কঠিন কাজ তুমি করে দাও। মা বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, বাজারে নিয়ে যাওয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, অনলাইনের ভেজাল সামাল দেয়া— কী না করো তুমি!

আর্যর জন্য ফান্ড রেইজ করা অত সহজ হতো না যদি না তুমি রাত জেগে অসীম ধৈর্য নিয়ে বারবার Go Fund Go Fund খুলে দিতে।

জীবন চক্র

জয়ত্রী জয়ের প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছে। জয় শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি। জয়ত্রীর ধারণা পরাজিতরা সারা জীবন পরাজিত থেকে যায়। অকেজো কেউ ঘাড়ে চাপলে তাকে কেজো বানানো প্রায় অসম্ভব। জয়ত্রী দ্রুততর মানবী; দৌড়ে তাকে এখন পর্যন্ত কেউ হারাতে পারেনি। তার চাই দ্রুত বাহন; যে নিমিষেই দিগন্ত পার করিয়ে দেবে। জয়ের মধ্যে সেই স্পৃহা দেখতে পাচ্ছে না। কলেজের সামান্য দৌড়; এখানেই কোয়ালিফাইড হতে পারল না।

পনের বছর পরের কথা। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। জয়তীকে রাস্তা পেরুতে হবে কিন্তু স্ক্রাচে ভর দিয়ে রাস্তা পেরানো অসম্ভবই মনে হচ্ছে। এগিয়ে এলো জয়। তার হাতের ইশারায় থেমে গেল দুপাশের সমস্ত চলাচল। জয়ত্রী নির্বিঘ্নে রাস্তা পেরুলো। অপর পারে পৌঁছে কিছুক্ষণ জয়ের কথা ভাবলো। বুকে সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হচ্ছে বুঝতে পারল।

ব্যস্ততা কেড়ে নেয় কবিতার প্রহর

33

ভেবে ভেবে লিখবো,
সাজাবো কবিতার খাতা শব্দে শব্দে,
কিছু মানসম্মত কবিতা বেরোবে কলম হতে
হয় না এমন হয় না আর, আমার কবিতার প্রহর
কেড়ে নেয় সময়।

মানহীন কবিতায় ভরে রেখেছি হৃদয় খাতা;
তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতায় পড়ে থাকে কষ্টে বোনা সব শব্দ
কবে জানি পাবো ফিরে আমার কবিতা লিখার প্রহর
হয়তো পাবো না আর তবুও নিরাশায় বাঁধিনি বুক।

কবিতা নিয়ে বসলেই হু হু করে বয় বৈরী হাওয়া
মানুষ এসে দেয় গল্প জুড়ে,
কত কাহিনী, কত যন্ত্রণা শেষে এক তিল অবসর
সেই অবসরে লিখে ফেলি হাজার কবিতা।

কবিতা পড়ে না কেউ হয়তো,
কেউ দেয় না প্রশংসার ছোঁয়া;
তবুও কবিতা নিয়েই কাটিয়ে দেই আর দু’দন্ড অবসর
একদিন আসবেই আমার সেই মহেন্দ্র ক্ষণ।

ভাগ্য একদিন হবে সুপ্রসন্ন
আমি কবিতার প্রহর পাবো হাতের মুঠোয়
সেদিন কী আর ভাবনাতে পারব কবিতা সাজানোর শব্দ
হয়তো হারিয়ে যাবে সেদিন আমার কবিতারা।

যখন উচ্ছাস প্রাণে, হাজার শিরোনাম ঠোঁটে
অথচ লিখতে না পারার যন্ত্রণা ধরে রাখে আমায়
আমার মূল্যবান সময়গুলো হারিয়ে যায় ব্যস্ততার সাগরে
আমি মানহীন কবিতাই তবে লিখে যাবো অনন্তকাল।

আমাদের বেড়াল আমাদের মতো হয়নি

সতেরো
নারকোলগাছের গাব্‌ড়ো দিয়ে ব্যাট বানিয়ে ক্রিকেট চলছিল উঠোনে, হঠাৎ খেলা ভেঙে শুরু শিশুকিশোর নাচ। সঙ্গে গান এক লাইনের — আজ মাংসো খাবো। আআজ মাংসো খাবো। তখন নির্মল স্তব্ধ ও সুচিন্তিতভাবে বাজারের ব্যাগ তুলে দিচ্ছে মায়ার হাতে।

কলোনির কোনও ঘরে মাংস রান্না হলে আশপাশের বাড়িগুলোর চাল নাক আকাশে তুলে গন্ধ নেয়। পাড়ার বাতাসে যখন ভাসছে কৌতূহল আর বিষণ্ণতার মৌরিফুল, ভটচাজবাড়ির হেঁসেলের দরজায় ভিড় অধিকারসচেতন মানুষের।

সঞ্জু — মা, এবারে আমারে চারটে মাংস দেবা।
(বেড়াতে আসা ছোটছোট ভাগনেদের কথা ভুলে গেলি, মামা!)
শিউলি — আমি পায়ের হাড়টা চুষে চুষে খাবো। গতবার মনিদা পাইছে।
(গতবার = সাড়ে তিন মাস আগে দুর্গাপুজোর মহাষ্টমী।)
— মা, আমারে দুটো আলু দেবা কিন্তু৷
(অন্তত এক পিস মেটের দাবি তোলার জন্যে চাঁদকে উসকেছিল ননীবালা। কিন্তু রামকৃষ্ণ যতই বিবেকানন্দকে ভবতারিণীর কাছে টাকাপয়সা চাইতে পাঠাক, সে শুধু জ্ঞান-ভক্তি প্রার্থনা করেই ফিরে আসবে।)

আজ দুপুরের নায়ক পাঁঠার মাংস, আর নায়িকা চালের গুঁড়ো মাখিয়ে ভাজা কুমড়োর ফুল। বাচ্চারা খেতে বসেছে রান্নাঘরে, একটু ফাঁক রেখে দিদিমার আসন। দরজার বাইরে কিশমিশ চোখ বুজে কিন্তু মনশ্চক্ষু খুলে বসে আছে। আর হয়ত একুশ দিন, ঋতুট্রেনে ড্রাইভারের কেবিন থেকে শীত নেমে গিয়ে চেপে বসবে বসন্ত। এখন কিশোরের সদ্য গোঁফ ওঠার মতো আমের বোল গজাচ্ছে, রোদ বাবলু গিরির মতো লিকলিকে, রঘুনাথের মাঠে সাইকেলে সে এক পাক ঘুরে এলে একদলা ক’রে ভাত মুখে তুলে দিচ্ছে মা।

এদিকে মায়া যেই পেছন ফিরল, ননীবালা নিজের পাতের একখানি কুমড়োফুলভাজা ছুঁড়ে নিখুঁত অবতরণ করিয়েছে চাঁদের থালায়। ভাজায় অনাগ্রহী চাঁদ তক্ষুনি ফেরত পাঠাল পালটা থ্রো-তে, আর চেলে দিয়েই বুঝেছে — কেলেঙ্কারি ঘটালাম! ননীবালা স্মিত মুখে বাঁহাতে ঘটি উঁচু ক’রে গলায় জল ঢেলে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ছে।

— গাধা ছেলে, দিলি তো দিদিমার পাত ছুঁয়ে! সেই কাল দুফোরের আগে আর ভাত মুখি তোলবে না। তোমারেও মা বলিহারি, ছেলেটার স্বভাব খারাপ করেই ছাড়বা!
— ওরে, আমার খাওয়া হয়ে গিছিলো। তুমি শুদুশুদু চাঁদরে বকাবকি কোরে না, মনি।

আঠেরো
বাটিতে-বাটিতে মাংসের তেলভাসা নিফুটি ঝোলে বারোর এগারো ভাগ মাথা গুঁজে আছে দু’টুকরো ছোট মাংস আর এক পিস আলু।

শুধু একটা জামবাটি ছেলেমেয়েদের থেকে সরিয়ে রেখেছে মায়া। ওতে ‘বাবার মাংস’। নির্মল পাঁচ দানা অন্ন থালার বাঁ পাশে মাটিতে শ্রীবিষ্ণুকে উৎসর্গ ক’রে তার ওপর জল ছিটিয়ে ওই গণ্ডূষেরই অবশিষ্ট মুখে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে ভাত ভাঙে। তারপর বাটির চার থেকে এক টুকরো মাংস পাতে তুলে নিলে “সবটুক খাতি হবে, নয়ত আমার মাথা খান” ব’লে জেদ ধ’রে উবু হয়ে বসে তার স্ত্রী। তখন সে দ্বিতীয় টুকরোটা নেয়। মায়ার দিব্যি কাটা থামছে না দেখে শেষ ভাতের দলা গিলে নিয়েই বলে “পেট ভ’রে গেছে”। আর কিছু করার নেই, নির্মল খেতে ব’সে কথা বলেছে মানে তার আহারে ইতি।

চার দিনের দিন ভোরেই মামা-মামিকে ঢপাঢপ প্রণাম ক’রে কাজল-কৃষ্ণেন্দু বিদায় নিয়েছিল। অবাক মায়া দোষী ঠাওরায় নির্মলকে। আপনাকে কতবার সাবধান করেছি, “তোমরা কি আজ থাকপা, না যাবা? থাকতি হলি থাকো, আর যদি যাতি চাও, রোদ থাকতি বেরোয় পড়ো সকাল সকাল” কথাটা অতিথি ভালো মনে নেয় না। জামাই নিশ্চয়ই কিছু মনে করেছিল…।

প্রায় তক্ষুনি বাসু চেঁচাল, জ্যামিতিবাক্স থেকে আমার পেনসিল আর রবার কে নিয়েছে? ক্রমশ দেখা যাবে শিউলির জরির কাজ করা ব্লাউজ, সিঁদুর কৌটোয় রাখা গোপার অন্নপ্রাশনে পাওয়া কানের দুল, পঞ্জিকার ভাঁজে নির্মলের চারমিনারের খরচ সাড়ে দশ টাকা — এমন বস্তুসমূহের হদিশ নেই। সবাই অনুসন্ধানে ডুবে আছে, রান্নাঘরে খ্যানখেনিয়ে বাসন পড়ার শব্দ হল। গোয়েন্দা কিশমিশ বেড়া বেয়ে উঠে শিকে থেকে বাটি ফেলে দিয়েছে। মেঝেয় গড়াচ্ছে সেই দু’টুকরো নির্মল মাংস।

উনিশ
— অপরাধ কে করে? যে মানসিকভাবে দুর্বল। তুমি কাজলদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাইছ না। কিন্তু দুর্বলকে ত্যাগ করাও কি অপরাধ নয়?

— অপরাধীদের তো মেরেই ফেলা হল মহাভারতে। ভায়েরাই মারল ভায়েদের। কৃষ্ণ সমর্থন করলেন। আমি শুধু বাড়িতে আসতে দেব না বলেছি। আপনি সারাদিন গীতা প’ড়ে এখন উলটো কথা বলেন কেন?

— যা পড়ি তার সবটুকু মানি এমন তো নয়।

— না মানলে কৃষ্ণনাম উচ্চারণ করামাত্র চোখে জল ভ’রে যায়, গলা বুজে আসে?

— ভক্তি মানুষের সংস্কারে থাকে, খুঁজে বেড়াতে হয় না। কিন্তু স্পৃহা তার নিজের অর্জন। অভিলাষ থেকেই আসে জ্ঞান।

বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে বউ এসেছে তার পাশটিতে। আজকের ঘটনা আপন-পর সবার জন্যে ‌মন-কাঁদা মহিলার ভেতরটা থরথরিয়ে দিয়েছে। কথার শুশ্রূষা চাইছে সে। স্বভাবে দ্বিধাগ্রস্ত নির্মল কিছুক্ষণ চুপ ক’রে বিষয় আর কথনভঙ্গি হাতড়াতে থাকে। তারপর তার কিশোরপ্রতিম পাতলা গলা শোনা যায়।

— কুরুক্ষেত্রে অর্জুন তার ঠাকুরদা, জ্যাঠা-কাকা, শ্বশুর, মামা, ভাই, ছেলে, নাতি, শিক্ষক, বন্ধু — সবার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে ভেবে শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রক্তের সম্পর্কের টান আর মানবতার শিক্ষা থেকে তিনি সমরে অংশ নিতে পারবেন না ব’লে শ্রীকৃষ্ণকে জানান। এখানে অর্জুনের মনোভাব দয়া, ক্ষমা আর স্যাক্রিফাইসের। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, আমার পূজনীয়কে আমি মারব কীভাবে? বোঝা যায়, অর্জুন কৃষ্ণের তুলনায় অনেক আধুনিক মানুষ। গীতার শুরুতে যদুনাথ তাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করতে দুটো লোভ দেখিয়েছেন, পৃথিবীতে রাজ্যভোগ আর মৃত্যুর পরে স্বর্গলাভ, কিন্তু কিরীটির লক্ষ্য জীবনে নৈতিকভাবে সুখী হওয়া। “স্বজনং হি কথং হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধব” — স্বজনদের বধ ক’রে আমি কীরূপে সুখী হব, মাধব? বলছেন, ভিক্ষে করে খাব, কিন্তু রক্তমাখা অর্থ ও কাম চাই না। তিনি সামাজিক নৈতিকতার বোধে সুরক্ষিত। উত্তরে কৃষ্ণ প্রচুর উপদেশ দিলেন, যার প্রথম দুটো — মানুষের মূল হচ্ছে আত্মা, সে অনশ্বর, এক শরীর ছেড়ে অন্যতে যায়। তাই প্রকৃত অর্থে কাউকে মারা যায় না, তুমিও মারছ না। দ্বিতীয়ত, নিষ্কাম কর্ম করলে পাপ স্পর্শ করবে না।

ব’লে নির্মল থামে।
— ঘুমোলে?
— শুনছি।
— বোঝা যাচ্ছে?
— দিব্যি সুন্দর।

— অর্জুনের জ্ঞান বাস্তব ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। কিন্তু বাসুদেব যা বলছেন, সেটা দার্শনিক বিবেচনা যার কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই। আমরা কেউই জানি না আত্মার ধারণা কতদূর সত্যি বা কামনাহীন কর্ম করলে তজ্জনিত পাপ ছোঁবে কিনা। এই স্তরের কল্পবিশ্বাস দিয়ে পার্থিক সংকটের মোকাবিলা করতে গেলে স্ববিরোধিতার জালে জড়িয়ে পড়তে হয়। শ্রীকৃষ্ণও পড়েছেন।

জীবনের নৈতিক সমস্যার সমাধান জীবনের বৃত্তেই খোঁজা উচিত। আয়ুর প্রাক-এ বা আয়ুর অন্তিমে কী আছে, আমরা অবগত নই, কিন্তু এটুকু টের পেয়েছি যে ব্যক্তির জন্মমৃত্যুর আগেপারে এই পৃথিবী ও তার প্রাণপ্রবাহ থেকে যায়। কাজেই মানুষের অভিজ্ঞতায় অনশ্বরতার সবচেয়ে কাছাকাছি জিনিস হল মানবসমাজ, আত্মা বা অন্য কিছু না। এই জীবনস্রোতকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় ক্ষমা আর ভালোবাসা।

— আমাকে গীতা পড়াবেন?

— তাহলে তুমি আমার মতোই ভাবতে থাকবে। গীতার বাংলা অনুবাদ কিনে আনব, নিজে প’ড়ো। আর জানো তো, স্কুলে পাঠ্যবইয়ের মানেবই মুখস্থ করতে নেই? গীতারও পণ্ডিতদের লেখা হাজারটা ব্যাখ্যা আছে, একটাও ছোঁবে না।

.
(আরও আছে)

“অর্থ মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠার পেছনের কারণ”

327

অর্থ
অর্থ কেন এবং কি কারনে রাষ্ট্রীয় সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে প্রয়োজন আর এর ব্যাবহারিক ভূমিকা ও উৎস কি সেটাই খুঁজে বের করবো।

প্রয়োজন বা চাহিদা।
আপনার প্রয়োজন, চাহিদা বা চাহিদার প্রয়োজনে “অর্থ আমাদের এই মহাবিশ্বে প্রথম ঈশ্বর” অর্থই শক্তি শক্তি অর্থ এই বিষয়টি কেমন হতে পারে যদি অর্থকে প্রায়শই বিশ্বে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার শক্তি হিসাবে দেখা হয়, মানুষ শাসিত মানুষ ও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলি যতটা সম্ভব এটি অর্জনের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা করে।

অহংকার মন্দ ও নমনীয়তা।
আপনি এই তিনটি শব্দের কোন শব্দটির ওপর প্রভাব বিস্তার করবেন সেটা একমাত্র আপনি ভাল বুঝবেন আপনার মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দ্বারা সেই কর্মটি সাধন হবে বলে মনে করি যেমন, টাকা মানুষকে অহংকারী করে কিংবা টাকা মানুষকে সাম্রাজ্যবাদ তৈরি করতে উৎসাহিত করে। টাকা কখনো ভয়ংকর শক্তির মূর্তরূপ তেমনি টাকা মানব জীবনে গড়িয়ে তুলতে পারে সুন্দর জীবন।

যেমন বলা হয়ে থাকে “টাকা হল সমস্ত মন্দের মূল,” এবং যদিও এটি অবশ্যই দুর্নীতি এবং লোভের উত্স হতে পারে তবে এর প্রতিরূপ অত্যন্ত ভয়ংকর, এটি ভালোর জন্য একটি শক্তিশালী শক্তিও হতে পারে। এর জন্য চাই ভালো মানুষ এবং চিন্তাশীল শক্তি যা বুলেটের বদলে প্রাণসঞ্চার করবে দুঃস্বপ্নের বদলে স্বপ্ন চারিত করবে লুণ্ঠনের বদলে বিলিয়ে দেবে ধ্বংসের বদলে গড়াবে।

অর্থ, ভালো ও মন্দ।
সত্যি কথা হলো, টাকা ভালো না খারাপ; এটা সহজভাবে বোঝা না গেলেও যার হাতে যাবে তার ব্যবহার ও বন্টন নিয়ে বলে দেবে এটি ভালো না খারাপ। যাই হোক, এটা অনস্বীকার্য যে অর্থ আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অর্থ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস।
সবচেয়ে মৌলিক স্তরে, অর্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুর মধ্যে এক নম্বর। আপনি যেহেতু জঙ্গলে বসবাস করছেন না তাই আপনার অর্থের প্রয়োজন আপনি যদি জঙ্গলে বাস করতেন তাহলে আপনার অর্থের কোন প্রয়োজন নাই।

অর্থের প্রয়োজনীয়তা।
আপনি যখন সামাজিকভাবে জীবন যাপন করবেন তখন আপনার যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের যোগান থাকতে হবে অথবা আপনার চাহিদা মত অর্থের পরিষেবা গ্রহণ করতে হবে এটি পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয়, পরিবহনের জন্য অর্থ প্রদান এবং আশ্রয় প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। অর্থ ছাড়া, আমাদের এই মহা বিশ্বের অনেক জায়গায় বাস করা অসম্ভব।

অর্থ সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ: যাদের অর্থ বেশি তাদের আরও শক্তিশালী, সম্মানিত এবং প্রভাবশালী হিসাবে দেখা হয় অর্থ আমাদের সমাজ গঠনে যেমন সহায়তা করে তেমন রাষ্ট্র গঠনেও প্রয়োজন অর্থ মানুষকে নিষ্ঠুর করতে পারে আবার অর্থ মানুষকে আভিজাত্য এনে দিতে পারে শাসক করে দিতে পারে এবং শোষিত এবং শাসিত করতে পারে।

কর্ম অর্থ ও পথ।
জীবন চলার পথে অর্থ যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি আপনার কর্মের জন্য যখন আপনি পথ খুঁজবেন তখন অর্থই আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট পথ ও গন্তব্য প্রদান করতে পারে, ব্যবসার জন্যও অর্থ অপরিহার্য। কর্মচারীদের অর্থ প্রদান, উপকরণ কিনতে এবং তাদের পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কোম্পানি গুলির অর্থের প্রয়োজন। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মূলধন প্রয়োজন, এবং অর্থ এটি সম্ভব করে। এমন অনেক অসম্ভব রয়েছে যা অর্থ দ্বারাই সম্ভব পর হয়।

চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা কিংবা চ্যালেঞ্জ থেকে পিছু হটা।
আপনি যদি ঝুঁকি নিতে না জানেন তাহলে আপনার সফলতা আসবে না। এই কারণেই বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক এবং ব্যবসায় তাদের অর্থ লাগাতে তারা বিশ্বাস করে যে সফল হবে: তারা জানে যে ব্যবসা সফল হলে, তারা তাদের বিনিয়োগে উদার রিটার্ন কাটবে। অর্থ অন্যদের সাহায্য করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মহাবিশ্বে অর্থ শুধুমাত্র মানুষের প্রয়োজন!
আমাদের এই মহাবিশ্বে একমাত্র মানবজাতির জন্যই অর্থ প্রয়োজন যারা একটি দেশ ও সমাজে বসবাস করতে ইচ্ছুক তাই, বহুমাত্রিক দাতব্য সংস্থাগুলো ব্যক্তি এবং কর্পোরেশনের অনুদানের উপর খুব বেশি নির্ভর করে। অর্থ অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে, যেমন দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা চিকিৎসা জরুরী পরিস্থিতিতে যারা ভুগছেন।

জীবনের উন্নতির জন্য অর্থের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। শেষ পর্যন্ত, অর্থ তাদের কাছে কী বোঝায় তা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রতিটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কারো কারো জন্য, অর্থ হবে শেষ উপায়, তাদের আবেগকে অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান সরবরাহ করে। অন্যদের জন্য, এটি শক্তি এবং প্রভাবের উৎস হবে। যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে আমাদের জীবনে অর্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

স্নো-কোন!

299 ভর দুপুরে আমার উত্তম কুমার গেছেন ইউনিভার্সিটিতে, নতুন ছাত্র ছাত্রীদের অভিষেক অনুষ্ঠানে ঘন্টা দুয়েকের জন্য। একা ঘরে আমি কমপিউটারে ধারাবাহিক ‘সুবর্ণলতা’ দেখছি। কিছুক্ষণ আগে বাইরে থেকে দরজার লক খোলার শব্দ পেয়ে বুঝলাম, অনুষ্ঠান শেষ করে উত্তম ফিরে এসেছেন।

আমি স্ক্রিনে নাটক সিনেমা গান যা-ই দেখি, ভলিউম উঁচুর দিকে থাকে। আমি কথাও বলি উঁচু ভলিউমে যাতে কুড়ি হাত দূরে থাকলেও কারো শুনতে সমস্যা না হয়। আর আমার উত্তম কুমার হয়েছেন আমার উলটো। টিভিতে নাটক দেখছেন অথচ ডায়লগে সাউন্ড নেই, কারো সাথে কথা বলছেন অথচ পাঁচ হাত দূরে থেকে অন্য কেউ শুনতে পাচ্ছে না!

এভাবেই বিয়ের পর ৩৭ বছর উত্তম আর অধম একসাথে থাকতে থাকতে গলার নীচু এবং উঁচু ভলিউমে সমঝোতা হয়ে গেছে। ৩৭ বছরে আরেকটা পরিবর্তন এসেছে। আমরা দুজনেই এখন কথা কম বলি, টিভিতে নাটক সিনেমা দেখি যার যার রুমে বসে অর্থাৎ সাউন্ড ভলিউমের তারতম্য নিয়ে যাতে ঝগড়া না হয় সেই চিন্তা করেই নির্ঝঞ্ঝাট দূরত্বে থাকি! এসব শুনলে মনে হয়, বিয়ের ৩৭ বছর পর স্বামী স্ত্রীতে প্রেম ফুরিয়ে যায়! আমারও তাই মনে হয়, আমাদের মধ্যে প্রেম ফুরিয়ে গেছে মনে হয়!

কিন্তু মাঝে মাঝে উত্তমের ঘর থেকে গান ভেসে আসে, “নীড় ছোটো ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়ো” অথবা “ধন্য আমি ধন্য হে, পাগল তোমার জন্য যে” এমন আরও মন আকুল করা সব গান। এসব গান শুনে আমার মন কেমন করে, ফিরে পেতে ইচ্ছে করে আমাদের প্রথম জীবনের দিনগুলো! আমি বিভ্রান্ত হই, আসলেই কি বিয়ের বয়স দীর্ঘ হলে স্বামী স্ত্রীতে প্রেম ফুরিয়ে যায়! আজও ক্ষণিক আগে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে যখন বুঝলাম উত্তম ফিরে এসেছে, সুবর্ণলতায় তখন মেজো বউয়ের মন পাওয়ার জন্য তার স্বামী পেবো বোকা বোকা কান্ড করেই চলেছে।

সব ছাপিয়ে উত্তমের গলা ভেসে এলো। নাটক পজ করে কান খাড়া করলাম উত্তম কি বলছে শোনার জন্য।
শুধোলাম, কি গো, কিছু বলছো?
উত্তম বললো, স্নো কোন খাবে? তোমার জন্য এনেছি।
আমি উত্তমের কথার মানে বুঝিনি বোধ হয়! চেয়ার ছেড়ে উঠে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে শুধোলাম,
কি এনেছো?
– স্নো কোন
– স্নো কোন কি? কোথা থেকে এনেছো? তুমি কি ভার্সিটি থেকে কোথাও গেছিলে?
– না, অন্য কোথাও যাইনি। ওখান থেকেই এনেছি তোমার জন্য। নতুনদের অভিষেক অনুষ্ঠান, স্ন্যাকসের আয়োজন ছিলো। ছেলেমেয়েরা দেখলাম খুব খাচ্ছে এটা, তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।

আমি তো মুখ হা করে দাঁড়িয়েই আছি, স্নো কোন কাকে বলে তাই জানি না। উত্তম রঙিন বরফ কুচিতে ভরা কাগজের একটা গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিলো। বললো, অনেক রকম ফ্লেভার ছিলো, আমি দুই রকমের সিরাপ মিশিয়েছি, আমি নিজেই পছন্দ করেছি ফ্লেভার। একটা ম্যাঙ্গো, আরেকটা গ্রেইপ ফ্লেভার। আমি মন্ত্র চালিত অবস্থায় হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, আমি টাইম মেশিনে চড়েছি কি না!
টাইম মেশিন কি আমায় ৩৭ বছর পেছনে নিয়ে গেছে! ৩৭ বছর আগে ঠিক এমনটাই হতো, প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটতো।

এমনকি ২২ বছর আগেও ঘটতো এমন ঘটনা। অফিসের কোনো প্রোগ্রাম, উত্তম আমাকে ছাড়া যেতোই না। অফিসে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে, উত্তম আমার পছন্দের খাবার প্যাক করে নিয়ে আসতো। কোম্পানির খরচে তিন দিনের অফিস ট্যুরে দুবাই যাচ্ছে টিম, উত্তম নিজের টাকা দিয়ে আমার জন্য টিকেট কিনে আমাকে সাথে নিয়ে গেছে! বাইরে গেছে, ফেরার সময় আমার জন্য স্যুটকেস ভর্তি সুন্দর সুন্দর শাড়ি নিয়ে এসেছে। এসবই হতো দেশে থাকতে, আমেরিকা আসার পর ধীরে ধীরে আমরা মন মননে বুড়ো বাঙালি হয়ে গেছি!

বাঙালি বুড়ো হওয়ার আগেই মন এবং মগজ থেকে প্রেম, রোমান্সের সুইচ দুটো অফ করে দেয়। বুড়ো বাঙালি দম্পতি পরস্পরের প্রতি প্রেমময় আচরণ করছে, প্রেমের কথা বলছে— এ দৃশ্য বিরল। আমার হতবিহ্বল ভাব কেটে গেলো। হাতে পায়ে স্বভাবগত উচ্ছ্বাস বেরিয়ে এলো।
বললাম, এর নাম স্নো কোন? এটা তো ডেসিয়া।
উত্তম বলল, ডেসিয়া আবার কি?
-আমাদের ছোটো বেলায় সাইকেল ভ্যানে বিশাল কাঠের বাক্স নিয়ে আসতো। হাঁক দিতো, ‘ডেসিয়া, ডেসিয়া’!
কাঠের বাক্সে নানা রঙের সিরাপের বোতল সাজানো থাকতো, আইসক্রিমওয়ালা করাতের মধ্যে বরফের চাকা ফেলে ঘষতো, করাতের নীচে বরফের কুচি জমা হতো। সেই বরফকুচি হাত দিয়ে চেপে চেপে কাঠির মধ্যে বসিয়ে তার উপর সিরাপ ঢেলে দিতো। ওটাই ডেসিয়া, এখানে নাম স্নো কোন। এরপর বললাম, তা এত বড়ো কাপ স্নো কোন আমি একা খাবো কেন? তুমি অর্ধেক নাও।
– না না, এটা তোমার জন্যই। বরফ আমার দাঁতে লাগলে দাঁত সিরসির করে।
– এতোকাল পর তুমি আবার সেই আগের মতো অনুষ্ঠান থেকে আমার জন্য কিছুমিছু নিয়ে এলে, আমি তো আনন্দে বেহুঁশ হয়ে গেছি! তোমাকে ছাড়া আনন্দ কার সাথে শেয়ার করবো?
– আমার জন্যও এনেছি, একটা কোকের ক্যান।

তখনও টাইম মেশিন ২২ বছরের পথ পার হয়নি। এক ছুটে উত্তম কুমারকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম। খুকীদের মতো নেকু নেকু আবদেরে গলায় বললাম, স্নো কোন-টা খাবো? খেলেই তো সব স্মৃতি হারিয়ে যাবে।
এই স্নো কোন-টা টাইম মেশিন। তুমি আজ আমাকে টাইম মেশিনে তুলে দিয়েছো। স্নো কোন হাতে নিয়ে আমি চলে গেছি আমাদের বাংলাদেশ জীবনে।

ঐ জীবনে আমাদের প্রাণ প্রাচুর্য ছিলো, ভালোবাসা ছিলো, টান ছিলো, রোমান্স ছিলো, আলো ছিলো, মাঝে মাঝে টাকার অভাব ছিলো, কিন্তু কখনও প্রাণের অভাব ছিলো না ——
আমেরিকায় আলো বাড়ি গাড়ি সব আছে শুধু প্রাণ নেই কোথাও।

২১ বছর আগে আমেরিকা এসেছি। ২১ বছর পর আজ নতুন করে আমার দেহে প্রাণের সাড়া পেলাম।

★ সুখ উপস্থিত হয় হঠাৎ, ধরতে পারলেই সুখ তোমার, ধরতে না পারলে সুখ ফুড়ুত।

মৌ

173

মৌ
অনেক দিন পর তোমার ম্যাসেজ, ফোন করতে বললে। ফেসবুকে নয় সরাসরি মোবাইল এ।

অনেক দিন পর কথা হলো। একদিন তোমাকে বলেছি, তোমার কাছের মানুষ গুলোর তোমার কাছে অনেক কিছুই চাওয়া বা পাওয়ার সময় এখন। তাই যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছি। আমি জানি, কোথায় থামতে হবে। একটা সময় ছিল ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা কথা বলেছি। সময় সবকিছু বদলে দেয়।

তোমার জন্য আমি সত্যিই ব্যথিত। তুমিই তোমার ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছিলে, আমি তখন তোমাকে কি বলেছি মনে করতে পারি। বেশিরভাগ মানুষই একটা ভুলকে ভুলতে গিয়ে আরেকটা ভুল করে। তুমি একটা সুন্দর কথা বলেছো, ওর একটা শিক্ষিত কাজের মানুষের দরকার ছিল, আমি তাই।

এই কথাটাই অনেকেই বুঝতে পারে না। তুমি বুঝতে পেরেছো। এই সত্যটা বুঝতে কারো কারো সমস্ত জীবনটাই পার হয়ে যায়। তোমাকে ম্যাসেজ এই বলতে পারতাম। ইচ্ছে করেই বলছি না। ম্যাসেঞ্জার এ কিছু না লেখাই ভালো। আত্মবিশ্বাস হীন মানুষেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যকে অবিশ্বাস করেন। এটা এক রকমের মানসিক সমস্যা। কেউ যখন কাউকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে তাও নিজের অক্ষমতা এবং অবিশ্বাস এর কারণেই করে। একবার কারো গায়ে হাত তোলার অভ্যাস হয়ে গেলে তা আর বদলানো যায় না, তা সন্তানই হোক বা স্ত্রী হোক, এমনকি বাবা মাও।

কি জানো, প্রেম ভালোবাসা সংসার দাম্পত্য এই বিষয়গুলো শ্বাশত কোন সংজ্ঞা নেই। তুমি যে সমাজে বাস করবে তাই মুখ্য। এমনকি শরীরও। একা একজন মানুষ বাঁচতে পারে। এই কথাটি তোমার সমাজ বা দেশ মেনে নিতে পারে না। তুমি কোথায় একা বেড়াতে যেতে পারবে না। বাসা ভাড়া নিতে পারবে না, বাসে ছেড়ে যেতে পারবে না। কতো সমস্যা।

কি জানো মানুষ সব সময় নিজের জন্য বেঁচে থাকে। যুদ্ধ করো নিজের জন্য। লিও টলেষ্টয়ের সেই ‘ওয়াট ম্যান লিভ বাই’ গল্পটা মনে নেই! ম্যাসেঞ্জার এ কিছু লেখার দরকার নেই। তিনি তোমার মহৎ হবেন এমন তো কথা নেই। তুমি আমি মরে গেলেও এই মহাবিশ্বের তো নয়ই, কোন মানুষেরই কিছু যায় আসে না।

ভালো থেকো। যতদিন বাঁচো নিজের জন্য বেঁচে থেকো।
একটা ভুলের মাশুল দিতে নতুন কোন ভুল করো না।

মিতা

আমাদের বেড়াল আমাদের মতো হয়নি

পনেরো
— ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল সম্পর্কে কিছু জানা আছে?
— কেষ্টর শালা কি পাগল? না, বলতে পারব না।

— বাদ দে, বাংলাই ভালো। মোট একুশ জাতের কেশরওলা সাপখেকো ঈগল হয়। এদের মুন্ডুটা বড়, মাথায় পেছনে ব্যাকব্রাশ করা চুলের মতো একগোছা ঘন পালক আর চোখে কালো মণির চারপাশে হলুদ বর্ডার দেওয়া। এছাড়া বাদামি গলা আর পেটের পাখনা জুড়ে সাদা ছিটছিট দাগ থাকছে। এই জাতের ঈগল সাপ খেয়ে বাঁচে; তবে পাখি, মাছ বা ছোটখাটো জন্তু পেলেও ছাড়ে না। ঘন জঙ্গলের ভেতর জলের কাছাকাছি কোনও বয়ড়া গাছের মাথায় চুপ ক’রে ব’সে শিকারের দিকে নজর রাখা কাজ, আর বিপদের লক্ষণ দেখলে কানফাটানো ডাক ছাড়ে — ঈলুইই…কী-কী-কী-কীলুইইই।

টিপুদার দেখাদেখি বাসু ডাকল, চাঁদও চেষ্টা করল একবার। তারা পাঁচজন রঘুনাথের পাশের মাঠে বাতিল রেল লাইনের স্তূপের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আঙুলে দোকানের চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে টিপুদা একটা দামি হাসি দিল : এই ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল বা সংক্ষেপে কসাই-এর বিরুদ্ধে স্টেপ না নিলে সুন্দরবনের অনেকগুলো বাঘ হয়ত প্রাণে বাঁচত না।

কসাইয়ের চোখ হল এক্স-রে মেশিনের ঠাকুরদা; মাতলা-র পশ্চিমে কৈকলমারি-ধূলিভাসানিতে উড়ে-চ’রে বেড়ায়, আর যেই দ্যাখে বাঘ গুঁড়ি মেরে কোনও হরিণ বা বুনো শুয়োরের দিকে এগোচ্ছে, ওর মার্কামারা চিল… সরি ঈগলচিৎকার পেড়ে পশুটাকে দেয় ভাগিয়ে। সারাদিন পেটে মাংসপানি পড়ে না বাঘের। জঙ্গলে যারা মধুর চাক ভাঙতে যায় তাদের অনেককেও কসাই এভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

এমন একটা পরিস্থিতিতে নন্দরাক্ষস সুন্দরবনে এসে পড়ল। প্রথম কিছুদিন নন্দর লেগেছিল ও-যে সামান্য মেছোবেড়াল নয়, কনসেন্ট্রেটেড বাঘ — এটা সবাইকে বোঝাতে। তারপর দশটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা রোবট আচমকা চিল্লিয়ে কসাইকে ওপর থেকে ফেলে দিয়ে ঘেঁটি কামড়ে ধরবে কিম্বা রাতে সে ঘুমোলে চুপিচুপি চ’ড়ে যাবে গাছে — শার্দূলজাতির এসব ডিজাইন ব্যর্থ হওয়ার পরে নন্দ পেশ করল তার মাস্টার প্ল্যান, যে-গল্প আগেই করেছি।

শিউলি হাঁদার মতো জিগ্যেস করল, কোন প্ল্যান? বাসু ওর বিখ্যাত চিন্তামণি পোজে দু-আঙুলে নীচের ঠোঁট টেনে ধরল : নন্দরাক্ষসই তাহলে রোবট পাঠিয়েছিল লঞ্চ থেকে রাইফেল চুরি করতে? কসাইকে গুলি করবে ব’লে!
চাঁদের স্বপ্ন-স্বপ্ন মুখ আরও করুণ : পাখিটাকে মেরে ফেলছে? ও যে কত মানুষের প্রাণ বাঁচাল?
টিপুদা থমকে গিয়ে তার কাঁধ জড়িয়ে ধ’রে পা দোলালো একটু।

— লক্ষ্যভেদ হলেই লক্ষ্যপূরণ হবে, নাহলে নয়, এমনটা ভাবছিস কেন? নন্দ দুটো বুদ্ধিমান রোবট বেছে তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিল। পরের দিনই সুযোগ এসে গেল — কসাই দুপুরবেলা গাছের মগডালে ব’সে আপনমনে একটা সাপের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে খাচ্ছে। শীতকাল ব’লে গাছে পাতা নেই, ঝোপের আড়াল থেকে নন্দ আরামসে তাক করল রাইফেল, একটা বাঘ শক্ত ক’রে ধ’রে রাখল রাইফেলের বাঁট, আর একজন ট্রিগার টিপে দিল।

পায়ের নীচের ডালটা ভ্যানিশ; কসাই ডানা ঝাপটিয়ে যেই আকাশে উড়েছে, সন্ত্রাসবাদীরা যেমন প্রথম কার্যক্রম না খাটলে দ্বিতীয়টা কাজে লাগায়, ব্যাগড়া মাস্টারকে ফের তাক করল নন্দ, দুই বাঘ মিলে আবার গুলি চালাল। নীল আকাশে সূর্যের দিকে ছুটে গেল বুলেট।

চারদিক থেকে অনেক রোবট দৌড়ে এসেছে, তিন বাঘ লজ্জায় তাদের দিকে তাকাতে পারছে না। শেষে নন্দরাক্ষসের কথাই জনতার মনোবল ফিরিয়ে আনল, যেটা টিপুদা একটু আগে বলেছে:

— বন্ধুগণ, লক্ষ্যভেদ হলে তবেই লক্ষ্যপূরণ হবে, এমন নয়। গুলি যেভাবে কসাইয়ের কান ঘেঁষে শিস কেটে বেরিয়ে গেল, তাতে আগামি কিছুদিন ওর নিজের মুখ দিয়ে আর শিস বেরোবে না। আমি লিখে দিতে পারি, সুন্দরবন ছেড়ে পালিয়েছে পাখিটা।

ষোল
নির্মলের তিন বোনের বুদ্ধিমান শ্বশুরবাড়িরা পার্টিশানের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরনগরের বড়া গ্রামে তিন মুসলিম পরিবারের সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় ক’রে নিয়েছিল। ইঁটসুরকিতে গাঁথা বাস্তুভিটের বদলে তারা পেয়েছে বেড়ার তৈরি, মানুষসমান উঁচু মাটির বারান্দাওলা এবং গতকাল পর্যন্ত ঝাঁট-পড়া নিকোনো বাসস্থান। এছাড়া চাষজমির বদলে চাষজমি, বিশেষ ক’রে ছোট বোনের ভাগে ঝিলের মতো নিঃসীম পুকুর যার জলজোড়া পানিফলের লতা আর পাশের জঙ্গলে হায়না-দম্পতি।

একফোঁটা চেহারা ব’লে মায়ার ছোট ননদের নাম কুট্টি; শয়তান ঘটকের পাল্লায় প’ড়ে তার মেয়ে কাজলের বিয়ে হল এ-বঙ্গে এসেই; জামাই কৃষ্ণেন্দু নাকি শেয়ার বাজারে লেনদেন করে, প্রচুর কামাই। পরে দেখা যাচ্ছে তার রোজগারপাতি শূন্য; যে কাজেই যায়, দুদিন পরে ছেড়ে চলে আসে।

— অনেকদিন মামা-মামিরে দেহি না, তাই ভাবলাম…।
আত্মীয়ের অপরাধী-মুখ দেখে গৃহকর্ত্রীর ভয়ে এসে ভালোবাসা মেশে। সজনের ডাঁটা দেওয়া মুগের ডাল, আলুভাতে, মানকচুর তরকারি (জামাই নিল না, ওর গলা ধরে) আর বারোমাসি আমড়ার টক দিয়ে চারজনে ভাত খেয়ে উঠতে উঠতে বিকেল চারটে বেজে যায়। কৃষ্ণেন্দু বটতলার দিকে বেরলো বিড়ি ফুঁকতে। ওদিকে বড়ঘরে ছোটমামির কড়া জেরার মুখে কাজল।
— কয় মাস, দুই?
— কী কও বুঝি না!
— ন্যাকা সাজিসনে, কাজ্‌লা। ছোট্‌টারে কোলে নিচ্ছিস না, আবার ঠ্যাং মেলে খাতি বসলি। ব’লে সে নিজের নাভির নীচে বাঁহাতে চাপড় মারে।
— এই কোঁখে নয়ডা ধরিছি, তিনডে হয়েও বাঁচেনি।
— আজকে নিয়ে পেরায় আড়াই মাস।
— সংসারের এই অবস্থা, কৃষ্ণেন্দুরে মানা করিসনি?
— করি তো ছিলাম… তোমার জামাইয়ের যে বড্ডো মেয়ের শখ!

পরদিন সকালে কৃষ্ণেন্দু গামছা প’রে (“আহ, করো কি বাবাজি”) শালিমার নারকেল তেলের খালি কৌটো দিয়ে কলতলার ছ্যাদলা ঘষতে লেগে গেল। তারপর বেলা বাড়তে মামিশাশুড়ির চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে ফেলল মাথায় চাল না থাকা বাথরুমে। তিতপোল্লার খোসা দিয়ে হাতেপায়েপিঠে কাপড়কাচা বল সাবান ঘ’ষে দু-দু বালতি জল এক-এক জনের ঘাড়ে ঢেলে যখন বাইরে বের করছিল, যেন বইয়ের নতুন সংস্করণ ছাপা হয়ে বাজারে এসেছে। এবার কাজল রসুন-নিমপাতা-পেঁয়াজ বেঁটে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে শিউলির মাথায় ঘষতে লেগে পড়ল, মেয়ের কেশবনস্থলী থেকে উকুন নিব্বংশ করতে হবে। অবশেষে বাড়ির মেয়েদের যার যেটুকু হাতে-কানে-গলায় আছে, তেঁতুলজলে ডুবিয়ে ধুয়ে দিতেই দোকান থেকে এক্ষুনি গড়িয়ে আনার মতো হেম আবার হেসে উঠল হেমবর্ণে! বাচ্চাদের “উপোরে তাকাবি না, চোখ বন্ধ কর” ব’লে কঞ্চির ডগায় ন্যাকড়া জড়িয়ে তিন ঘরের ছাদের সব ঝুল ঝেড়ে ফেলল শ্যামাঙ্গী। ওদিকে কৃষ্ণেন্দু জং-পড়া কোদালেই পেয়ারাগাছের পাশ থেকে মাটি তুলে রান্নাঘরের ছাঁচতলায় ঢেলে ফলার উল্টোপিঠ দিয়ে বসিয়ে দিতে দিতে বলছে : বর্ষাতে আর জল জমবে না, দ্যাখবেন মামি। পরের দিন সে কাতা-র দড়ি দিয়ে বড়ঘরের দরজায় ঝুঁকে আসা কাঁঠালগাছটাকে সোজা ক’রে দক্ষিণ কোণের সুপুরিগাছের সঙ্গে বেঁধে দিল। খোপের ঘরের খাটের তলা থেকে কবেকার আটটা নারকোল বের ক’রে দা দিয়ে ছাড়ানোর পর বাঁশের লগা-র মাথায় কঞ্চি বেঁধে সেই কোটা দিয়ে পায়খানার পাশের হ্যাচ্চাই উঁচু লেবুগাছ থেকে পেড়ে ফেলল ছাব্বিশটা লেবু। তার ইচ্ছে নারকোল আর পাতিলেবুক’টা নিয়ে বাজারে গিয়ে বসে।
— ওমা, কাজল তোর বররে ঠ্যাকা। কয় কী ও! আমাদের মানসম্মান ব’লে কিছু থাকবেনে নাকি!

সুতরাং, নারকেল-কুরুনির মাথা উপচে পড়ে কাঠটগরে, কাঁসার থালায় যেন পুষ্পভোগ চুড়ো হচ্ছে। বড় বড় শ্বাস টানতে টানতে শাঁখাপলা বাজিয়ে কুরুনির মাথায় হাত ঘোরাচ্ছে কাজল, তার ঘামেসিঁদুরেখোঁপায়হাসিতে-মাখা মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে গোপা শিউলি দুই বোন। নারকোল-ফাটানো ঘোলা ঝাঁঝালো জল গামলায় ঢেলে বাচ্চাদের হাওয়ালে করা হয়েছে, প্রত্যেকে দুই ঢোঁক ক’রে খাবে। সঞ্জু নীচু হয়ে সবার গলার হাড়ের ওঠানামা গুনছে — ওমা, ভাই তিন ঢোঁক খেয়ে নিল!

.
(আরও আছে)

যা আমাদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে

33 ১. শিক্ষা, জ্ঞান, জীবিকা, এবং একজনের অধিকারকে সম্মান করা এমন কিছু মৌলিক বিষয় যা একজন ব্যক্তির জীবনে সাফল্যকে সংজ্ঞায়িত করে। যদিও শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য, একজনের জীবিকা তাদের নিজস্ব কর্ম এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা গঠিত হয়। ব্যক্তি হিসাবে, আমাদের অবশ্যই সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং অন্ধ জ্ঞানের শিকার হওয়া এড়াতে হবে, যা আমাদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে।

২. আজকের বিশ্বে, তথ্যের প্রচার আগের যে কোন সময়ের চেয়ে সহজ হয়ে উঠেছে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট আমাদের প্রচুর পরিমাণে তথ্যের অ্যাক্সেস প্রদান করে। যাই হোক, অ্যাক্সেসের এই সহজতার সাথে ভুল তথ্য এবং অন্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার বিপদ আসে। ব্যক্তি হিসাবে, এটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব যে আমরা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য সন্ধান করি এবং কোনো মিথ্যা বা যাচাই করা তথ্য ছড়ানো এড়াতে পারি।

৩. উপরন্তু, আমাদের ক্রিয়াকলাপ এবং জীবনের সিদ্ধান্তগুলি আমাদের নিজস্ব মূর্খতা বা বিচারের অভাব দ্বারা গঠিত হয়। আমাদের অবশ্যই সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ক্ষতিকারক পরিণতি হতে পারে এমন উদ্ভট চাওয়া বা বিবেকহীন পছন্দ করার ফাঁদে পড়া এড়াতে হবে। এটি করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের জীবিকার জন্য একটি পথ তৈরি করতে পারি যা টেকসই এবং পরিপূর্ণ।

৪. এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকেরই তাদের নিজস্ব কর্মজীবনের পথ বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের পছন্দকে সম্মান করতে হবে। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হই বা না-ই করি না কেন, আমাদের অবশ্যই ব্যক্তি বা তাদের কাজকে অসম্মান করা এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তির কাজের পথ অনন্য, এবং আমাদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব পছন্দ করতে এবং তাদের নিজস্ব পথ অনুসরণ করার অধিকারকে সম্মান করতে হবে।

৫. উপসংহারে, শিক্ষা, জ্ঞান এবং ব্যক্তিগত অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। ব্যক্তি হিসাবে, আমাদের অবশ্যই সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, অন্ধ জ্ঞানের বিস্তার এড়াতে হবে এবং অন্যদের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। এটি করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের জীবিকার জন্য একটি পথ তৈরি করতে পারি যা পরিপূর্ণ হয় এবং সমাজে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারে।

আমার বিয়ের সাজ কমপ্লিট

2

মিথীলা একবার জিজ্ঞেস করেছিল, “মা বাংলাদেশে বিয়েতে মেকাপ দিয়ে বউয়ের গায়ের রঙ চেঞ্জ করে কেন? জামাইদের গায়ের রঙ চেঞ্জ করে না কেন? কালো বউকে সাদা বানায়, সাদা বউকে কালো বানায় না কেন? তোমাকে কি সাদা বানিয়েছিল?”

উত্তরে আমি বলেছিলাম, আমাদের দেশের অধিকাংশ কালো মেয়েগুলো বোকা। ওরা অযথাই গায়ের রঙ নিয়ে দুঃখ পায়, ওরা নিজেকে নিয়ে অহংকার বোধ করতে জানে না। আরে গায়ের রঙ কি কেউ ইচ্ছে করলেই বদলাতে পারে? কিন্তু চাইলেই গুণ অর্জন করা যায়। আসলে মেয়েগুলোরও দোষ নেই।

আমাদের দেশে মেয়েদের গায়ের রঙের ইমপর্ট্যান্স অনেক বেশী, মেয়েদের গুণের কদর কম। তাই বিয়ের সময় সবাই যেনো বউ দেখে সুন্দরী বলে, সেটা ভেবেই কালো মেয়েরা মেকাপ দিয়ে রঙ বদলায়। আর আমার কথা আলাদা। আমি তো ছোটোবেলা থেকেই বুদ্ধিমতী আর জেদী, তাই ছোটোবেলা থেকেই আমি বলতাম, “কালো, জগতের আলো”!

তাছাড়া আমার বাবা মা কেউই আমার গায়ের রঙ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতো না। বাবা মা শুধু আমার লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করতো, আর আমার রাগ আর জেদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতো। বিয়ের সময় তোমার পাপা তো অনেক ফর্সা ছিল, আমি কালো ছিলাম। তাতে কি, কালো তো জগতের আলো। তাই বিয়েতে আমাকে মেকাপ দিয়ে সাদা বানায়নি। এমনকি আমার বিয়েতে আমাকে ঘরেই সাজানো হয়েছে। কারণ ঢাকায় বিউটি পার্লার থাকলেও নারায়ণগঞ্জে তখনও বিউটি পার্লারের চল আসেনি।

আমার পিসী আমার পায়ে আলতা, হাতে নেইল পলিশ দিয়ে আলপনা এঁকেছে। আর আমার বন্ধু দীনা চুলে কয়েকটা বেণী করে প্রতিটা বেণীতে তাজা ফুলের মালা পেঁচিয়ে তা দিয়ে ডিজাইনের খোঁপা বেঁধে দিয়েছে। আর তোমার প্রফেসর মামার মেয়ে গোপা চন্দনের আলপনায় আমার মুখ সাজিয়েছে।

জানো তো, তখন নারায়ণগঞ্জে ফুলের দোকানও ছিলো না। বিয়ে হতো কাগজের মালা দিয়ে। আমার বিয়েতে তাজা ফুল, তাজা ফুলের মালা এসেছে। আমার ইউনিভার্সিটির বান্ধবীরা হোস্টেলের বাগান থেকে ফুল এনেছে, আর গোপা ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারের বাগান থেকে ফুল এনে মালা গেঁথেছে।

আরেকটা কথা, আমার স্কিন তো খুব সেনসিটিভ, বিয়ের আগে খুব এলার্জি এটাক হয়েছিলো। তাই গোপা আমার মুখ সাজানোর সময় কোনো ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার ইউজ করেনি। সিমপল পন্ডস পাউডার হাতে ছড়িয়ে সেটাই মুখে হালকা করে দিয়েছে। চোখে গাঢ় কাজল, কপালে লাল টিপ আর চন্দনের আলপনা আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আমার বিয়ের সাজ কমপ্লিট।

অই সাজ দেখেই সবাই আমাকে সুন্দর বলেছে।”
এরপর আমার বিয়ের এলবাম খুলে আমার ছবি দেখালাম। মিথীলা খুব খুশি আমার বিয়ের ছবি দেখে।

অস্তিত্ব, আত্মা, মানব জীবন

33n অস্তিত্ব: একটি দার্শনিক অনুসন্ধান। অস্তিত্বের ধারণাটি বহু শতাব্দী ধরে দার্শনিকদের মধ্যে আগ্রহ ও বিতর্কের বিষয়। অস্তিত্বের প্রকৃত অর্থ কী এই প্রশ্নটি বিভিন্ন কোণ থেকে অন্বেষণ করা হয়েছে, তবে একটি নির্দিষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এই নিবন্ধে, আমরা অস্তিত্বের অর্থ এবং মানব জীবনের সাথে এর সম্পর্ক অন্বেষণ করার চেষ্টা করব।

অস্তিত্ব এবং মানব জীবন

অস্তিত্ব এবং মানব জীবনের মধ্যে সম্পর্ক জটিল এবং বহুমুখী। মানুষের ভৌত জগতের অস্তিত্ব বলা হয় এবং তাদের অস্তিত্ব সময়ের সাথে সাথে এবং তাদের অভিজ্ঞতার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যাই হোক, অস্তিত্বের ধারণাটি কেবলমাত্র ভৌত জগতের বাইরে যায় এবং জীবনের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক দিকগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করে। একজন ব্যক্তি যেভাবে অস্তিত্ব অনুভব করে তা তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

আত্মার অস্তিত্ব

অস্তিত্বের সবচেয়ে বিতর্কিত দিকগুলির মধ্যে একটি হল আত্মার অস্তিত্ব। অনেক ধর্মীয় এবং দার্শনিক বিশ্বাস পোষণ করে যে মানব আত্মা আমাদের সত্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমাদের চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং কর্মের জন্য দায়ী। যাই হোক, আত্মার অস্তিত্বকে সমর্থন করার জন্য কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আত্মার ধারণা রহস্যে আবৃত থাকে এবং এর অস্তিত্ব বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়।

আত্মা এবং মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক

আত্মা এবং মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্কও অনেক জল্পনা-কল্পনার বিষয়। কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশ্বাস করে যে আত্মা মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকে, হয় পরবর্তী জীবনে বা পুনর্জন্মের মাধ্যমে। অন্যরা বিশ্বাস করে যে মৃত্যু দেহ এবং আত্মা উভয়ের অস্তিত্বের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। মৃত্যুর ধারণা এবং মৃত্যুর পরে আত্মার কী ঘটে তা এখনও একটি রহস্য এবং অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় অজানা গুলির মধ্যে একটি।

অস্তিত্ব বোঝার জন্য অনুসন্ধান

অস্তিত্ব সম্পর্কে একটি বৃহত্তর পরিসরে বোঝার জন্য অনুসন্ধান একটি অন্তহীন অনুসন্ধান. ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শনের অধ্যয়নের মাধ্যমে, আমরা বিশ্ব এবং এতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করি। যাই হোক, অস্তিত্বের অনেক দিক রয়েছে যা রহস্যে আবৃত থাকে এবং এই বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে সঠিক তথ্য উন্মোচন করা অসম্ভব হতে পারে।

ভালবাসা এবং আবেগের শক্তি

অস্তিত্ব এবং মানব জীবনের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংযোগগুলোর মধ্যে একটি হল ভালবাসা এবং আবেগের শক্তি। ভালবাসা মানুষকে একত্রিত করতে পারে, এমনকি যখন তারা হাজার হাজার কিলোমিটার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়। একে অপরকে ভালবাসে এমন দু’জন মানুষের মধ্যে বন্ধন অটুট, এবং একজনের ব্যথা বা সুখ অন্যজন অনুভব করে।

স্মৃতির গুরুত্ব

স্মৃতি মানুষের অস্তিত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তারা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বের উপলব্ধি গঠন করে। স্মৃতি সুখী বা বেদনাদায়ক হোক না কেন, তারা আমরা কে এবং আমরা কীভাবে বিশ্বকে দেখি তা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাই হোক, যখন প্রয়োজনের সময় স্মৃতিগুলো ভুলে যায়, তখন তাদের মূল্য হ্রাস পায়।

ভাঙ্গা প্রতিশ্রুতি এবং অকৃতজ্ঞতার ক্ষতি

দুর্ভাগ্যবশত, মানুষের অস্তিত্ব সব সময় প্রেম এবং সুখ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় না। লোকেরা নিষ্ঠুর এবং অকৃতজ্ঞ হতে পারে এবং যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তারা বড় ক্ষতি করতে পারে। যখন মানুষ এই ধরনের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়, ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শিকারের সবচেয়ে কাছের বলে মনে করা হয় এবং যারা কাছাকাছি থাকে তাদের দ্বারা ক্ষতিটি সবচেয়ে গভীরভাবে অনুভূত হয়।

মানবতা ও মানবিকতার গুরুত্ব

মানুষের অস্তিত্বের অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও, এটি এখনও আমাদের এই মহাবিশ্বের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করা সম্ভব। অন্যদের ভালো করা একটি পার্থক্য তৈরি করার একটি উপায় এবং একটি ইতিবাচক আলোতে মনে রাখা। যদিও এমন কোন গ্যারান্টি নেই যে আপনি অন্যদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না, তবুও অন্যদের ভাল করা একটি সার্থক প্রচেষ্টা। অন্যদের ভাল করার মাধ্যমে, আমরা চিন্তাশীল চিন্তার ব্যক্তি হিসাবে স্মরণ করতে পারি এবং বিশ্বের উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যেতে পারি।

সততার সাথে সেবা

সমস্ত প্রাণীর সেবা একটি মহৎ এবং নিঃস্বার্থ কাজ যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের মঙ্গল ও বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিষেবাটি অনেক রূপ নিতে পারে, স্বেচ্ছাসেবক এবং সম্প্রদায়ের কাজ থেকে শুরু করে আমাদের চারপাশের লোকদের প্রতি সদয় এবং বিবেচিত হওয়া পর্যন্ত। যাই হোক, যা এই পরিষেবাটিকে সত্যিকারের প্রভাবশালী করে তোলে তা হল যখন এটি সততার সাথে করা হয়, যার অর্থ এটি এমন একটি পদ্ধতিতে করা হয় যা সৎ, ন্যায্য এবং নৈতিক ও নৈতিক নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

সততা হল ভাল চরিত্রের একটি ভিত্তি, এবং এটিই একটি সত্যিকারের নিঃস্বার্থ কাজকে ফাঁপা থেকে আলাদা করে। এটি নিশ্চিত করে যে পরিষেবাটি কেবল অন্যদের সুবিধার জন্যই সঞ্চালিত হয় না, তবে কাজটি সম্পাদনকারী ব্যক্তির সুবিধার জন্যও। এটি পরিপূর্ণতা এবং সন্তুষ্টির গভীর অনুভূতির জন্য অনুমতি দেয়, কারণ ব্যক্তি জানে যে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে বিশ্বের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সততার সাথে সেবা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস ও সম্মানের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, কারণ লোকেরা এই ক্রিয়াকলাপের ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পায় এবং সেগুলি সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই বিশ্বাস সম্প্রদায়ের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা এবং সহযোগিতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, কারণ লোকেরা সাধারণ লক্ষ্যগুলো জন্য একসাথে কাজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে যখন তারা জানে যে তারা একে অপরের উপর নির্ভর করতে পারে।

যাই হোক, সেবায় সততা সব সময় সহজে আসে না। এমন অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা এটিকে কলুষিত এবং দুর্বল করতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব, লোভ এবং যাদের পরিবেশন করা হচ্ছে তাদের চাহিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বোঝার অভাব। পরিষেবাটি সততার সাথে সম্পাদিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, আত্ম-সচেতনতার একটি দৃঢ় অনুভূতি গড়ে তোলা এবং নিয়মিতভাবে একজনের অনুপ্রেরণা এবং কর্মের প্রতিফলন করা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তমনা হওয়া এবং সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা সন্ধান করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পক্ষপাতকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং বিশ্ব সম্পর্কে একজনের বোঝার প্রসারিত করতে সহায়তা করে।

উপসংহারে, সমস্ত প্রাণীর সেবা একটি সু-কর্মশীল সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, এবং এটি ব্যক্তি ও সম্প্রদায় উভয়ের মঙ্গল ও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। যাই হোক, সত্যিকার অর্থে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে, এই পরিষেবাটি অবশ্যই সততার সাথে সম্পাদন করতে হবে। এটি করার মাধ্যমে, ব্যক্তিরা বিশ্বে একটি ইতিবাচক এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পারে, সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত সবার জন্য একটি আরও ন্যায্য এবং ন্যায়সংগত সমাজ নিয়ে আসতে পারে। অস্তিত্ব একটি জটিল এবং বহুমুখী ধারণা যা বহু শতাব্দী ধরে অনুসন্ধান করা হয়েছে আর এর জন্য আজ পর্যন্ত কোন সঠিক গন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি যার দ্বারা এর বিশ্বাস মানব সমাজে স্থাপিত হয়।