বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

শব্দনীড়ের ব্যয় নির্বাহে স্পন্সর হয়ে আপনিও পাশে আসুন

সৌহার্দ্য সম্প্রীতিতে মুখরিত থাক শব্দনীড়। থাকুক সর্বজনীনতা; থাক মুক্ত বাক্ স্বাধীনতার অনন্য একটি মঞ্চ যেখানে অনালোকিত নক্ষত্ররা হাতে হাতে রেখে তৈরী করবে ছায়াপথ … এই আশা আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে শব্দনীড়ের পথচলা।

শব্দনীড় আপনার পছন্দের ব্লগ নয় কেনো !! ব্লগকে সময় দিতে আপনার অনিচ্ছা বা আন্তরিকতার কেন অভাবে হচ্ছে এটা জানা উচিত। ব্লগে উপস্থিত আছেন এবং নিজের ব্লগ প্রকাশ রেখে অন্যের ব্লগের প্রতি উৎসাহের অনীহা, এগিয়ে না এসে ব্লগকে বরং নিষ্প্রাণ এবং অতিথির তালিকায় নিজেকে আড়াল রেখে ব্লগের কার্যক্রমের উপর নজর রাখায় মূলত ব্লগের লাভ অথবা ক্ষতি কতটুকু হচ্ছে; গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিতে ব্লগারদের মতামত নেয়া সমিচীন মনে করে শব্দনীড়।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো শব্দনীড় কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। কারু একক ব্যক্তিগত অর্থে শব্দনীড়ের নির্বাহ ব্যয়ভার বহন করা হয় না। বিবিধ ধারায় উপধারা প্রসঙ্গ থাকার পরও আলোচনা সমালোচনা সমকালীন প্রতিবেদন গল্প প্রবন্ধ অথবা সাহিত্যের অন্যান্য উপকরণ না এসে কেন একটি ব্লগ দিনের পরদিন শুধুমাত্র কবিতা নির্ভরই উঠবে জানা প্রয়োজন। খোলামেলা আলোচনা চাই।

শব্দনীড়ে কোন পেইড ব্লগার নেই। সঞ্চালকের কোন বেতন নেই।

সুতরাং একটি ব্লগ বোরিং হয়ে গেলে তাকে চালু রাখার কোন প্রয়োজন আছে মনে করার যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। প্রাসঙ্গিক কারণে প্রশ্ন গুলোর উত্তরের পাশাপাশি আমাদের মূলত কি করণীয় তা জানা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আশু প্রয়োজন। কেননা নতুন করে ব্লগ চালু হওয়ার পর চলতি শব্দনীড় এর সার্ভার সোর্স এবং আর্থিক প্রয়োজন কতটুকু এটা বুঝতে চাওয়ার জন্য অনতিপূর্বে সময় চাওয়া হয়েছিলো। সূত্র এখানে। বিজ্ঞাপন হীন একটি ব্লগ ঐচ্ছিক সুধীজনের অপর্যাপ্ত স্পনসরে আদৌ চালানো সম্ভব কিনা সেটাও পরিমাপ করার সময় চলে এসেছে।

আর্থিক অনুদান বললে “নিয়মিত ভিক্ষা বা মানসিক অত্যাচার” মনে করেন কেউ কেউ। ইতিমধ্যে অনেকে এই অস্বস্তির কারণ দেখিয়ে শব্দনীড়কে ভালোবেসে এড়িয়ে চলার পথ বেছে নিয়েছেন। শব্দটিতে তাই নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমরা চাই স্পনসর। আমরা বুঝতে চাই কে এবং কয়জন শব্দনীড়কে নিজের ব্লগ মনে করবেন। কেননা শব্দনীড়কে দূর্যোগহীন বাঁচিয়ে রাখতে আপনাদের সঙ্গ এবং স্পনসরশিপ দুটোই প্রয়োজন। প্রয়োজন সহযোগিতা এবং নির্মোহ ভালোবাসা।

আপনার স্পনসর ছোট হলেও ক্ষতি নেই। শব্দনীড় এর হিসাব খাতে স্বনাম প্রকাশ অথবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবেও আপনি থাকতে পারেন শব্দনীড়ের পাশে। আপনি হবেন শব্দনীড় অংশ এবং অঙ্গ। স্পনসরদের নিয়ে শব্দনীড় পরিচালনা কমিটি তৈরী করা হবে। প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকবে অটুট।

অনুগ্রহ করে আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তাবনা এবং মতামত রাখুন।

* আমরা কি ব্লগকে সরব রাখতে পারি কি না ?
* শব্দনীড়ে ব্লগিং করতে আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ?
* শব্দনীড় পরিচালনা কমিটিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান কিনা ?

আমরা চাই একক নয়; দশ হাতে একশো জনের ঘরে শব্দনীড়কে পৌঁছে দিতে। শব্দনীড় থাক সর্বজনীন বাক্ স্বাধীনতায় সকলের পাশে। শুভ ব্লগিং। ধন্যবাদ।

বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত। ছোট বউয়ের খালি কোন কাজ নেই। এদিকে যায় সেদিকে যায়, কি করে ভেবে পায় না। আশে পাসের মানুষ ভাবে ঢঙী মাইয়ার ঢঙ দেখে আর বাঁচি না, ননদ শাশুড়ি খাইটা মরে, আর তিনি উলালে বেড়ান। কোন কাজ কাম না পেয়ে শেষ মেস ছোট বউ ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে চাল আর ডাল বের করল। সেটা একসাথে মেশাল। এবার বসে বসে চাল ডাল আলাদা করতে লাগল। আশে পাসের মানুষ দেখল, বউটা কত কাজের।

সেই বউ এখন কোথায়?
বাংলাএকাডেমীতে।

ব্যাকরণ ভাষা তৈয়ার করে না। ভাষা ব্যকরণ তৈরি করে। ভাষার মধ্যে সহজাত যে শৃংখলা থাকে সেটার প্রাতিষ্ঠানিক বা লিখিত রূপ হল ব্যকরণ। তাই ব্যকরণ নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যত্তিক। কিন্তু ভাষার নিজস্ব গতি আছে। সে গতিপথ ভাষা নিজেই ঠিক করে নেয়। ব্যাকরণের কিংবা কোন একাডেমীর দেখানো পথে হাঁটা ভাষা পছন্দ করে না।

ভাষার উপর এ ধরনের আরোপিত বিষয় হল এক ধরনের ফ্যাসিবাদ। বিদেশী শব্দ উচ্চারণে দীর্ঘ ঈ দরকার হয় না এই ধরনের কথাবার্তা কূপমণ্ডূকতা প্রকাশ করে। সে কূপমণ্ডূকতা যখন আপনার আমার উপর চাপিয়ে দেখা হবে সেটা হল ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিপ্রকাশ।

অভিনন্দন টিম বাংলাদেশ


বিরাট কোহেলির জিহ্বা টা অতটা অপমানকর ছিলো না, যত টা অপমানকর ছিলো
পাকি ইমরান খানের বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠা নিয়ে করা মন্তব্যে,
বিরাট নিজ দলের বিজয়ে অহং আক্রান্ত ছিল,অথবা তাদের চিরশত্রু পাকিস্তানিদের সাথে শেষ লড়াই লড়বে বলে কিছুটা অতি উত্তেজিনা।
কিন্তু ইমরান খান আক্রান্ত জাতি গত বিদ্বেষে-
বাঙালী কে তারা কখনো মানুষ বলে বিবেচনা করতে পারেনি, ফলে বাংলাদেশের সাথে খেলায় মুখোমুখি না হয়েও শুধু বাংলাদেশের সেমিফাইনাল অবধি উত্তীর্ণ হওয়াটা তাকে বিষিয়ে তুলেছিল।
ইমরান খানের ভয় ছিলো আজকের ফাইনাল খেলায় বাঙালীরর মুখোমুখি হবে আর পরাস্ত হবে, অথবা সে ভেবেছিল বাংলাদেশ কে নিয়ে রূঢ় ও অপমানকর উক্তি করলে ভারত তাকে কিছুটা
মায়া দেখাবে;
কিন্তু খেলা খেলাই
জয় পরাজয়ের নিশ্চিত একটি প্রাপ্তি নির্ধারণ এর মাধ্যম, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ কোনটাই খেলতে নামে না। খেলাই খেলার ফলাফল নির্ধারণ করে, আর সেটা সব সময় এক রকম হতে হবে এমন কোন কথা নাই।
তাছাড়া আজকেত খেলার জয় পরাজয় নিয়ে অন্তত বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না। কিন্তু
খেলা প্রেমিক বলে দর্শক হিসেবে যে কেউ যে কোন দল কে সাপোর্ট করতে পারে এটা স্বাভাবিক,
তবু যেখানে পাকিস্তানের প্রশ্ন-
যারা আমাদের মাঠে বা মাঠের বাহিরে কোথাও মানুষ বলে নুন্যতম সম্মান দিতে পারে নি, তাদের সমর্থনে আর যাই করি না কেন বিজয় উল্লাস করতে আমার বিবেকে বাধে।

একটা কথা বলে শেষ করবো-
অভিনন্দন টিম বাংলাদেশ কে, যারা প্রাণপণ লড়াই করে সেমিফাইনাল এর মাঠ অব্ধি নিয়ে গিয়েছে আমাদের জাতীয় সংগীত।
জয় বাংলা

প্রেমের সাথে প্রেমের পথে

প্রেম নিয়ে দু চার পংক্তি। প্রেম কি আসে? নাকি প্রেম করতে হয়? নাকি প্রেম হয়ে যায়?

এর পরের প্রশ্ন প্রেম করার, প্রেম হওয়ার বা প্রেম আসার বয়স মাপকাঠি ঠিক কি? অর্থাৎ যারা ম্যাচিওর পঁচিশ তিরিশ বছরের পরে বা নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যাদের প্রেম আসে বা হয় তাদের বেলায় এক রকম। আবার যাদের বয়স তার নীচে তাদের প্রেম আসা বা হওয়া কতটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সামাজিকতা বহন করে?

এর পরে প্রেমের আসা, প্রেমে পড়া বা প্রেম করা কি সত্যিই আকস্মিক? ওই যেমন সিনেমায় দেখায় ও এলেই গরমেও মধুর বাতাস বয়, ভিড় বাসে মনে হয় আকাশে উড়ছি, রাতে পছন্দের খাবার না পেলেও অমৃত মনে হয় – এ সব কি সত্যিই হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।
কি কথা? এসব আদ্য প্রান্ত সত্যিই মনে হয় তখন সেক্সচুয়াল টান অবধারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্পর্শ সাপেক্ষ দুই দেহের সংযোগ। অল্প সংযোগ পূর্ণ মিলনের অদম্য আগ্রহে উপরের সমস্ত অবস্থানের জন্য ছটপট করে। তার ফলে বয়স পঁচিশের নিচে যে সব অবধারিত অবস্থান প্রয়োজন তা আর সম্পন্ন হয়ে ওঠে না। যেমন ক্যারিয়ার তৈরীর জন্য পড়াশুনা, নিজের মেধার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়াস সবই জলাঞ্জলি যায়। মনের মধ্যে সেই সব অনাগত আদিম গুঞ্জরিত হতে থাকে।

এর উপর আছে টিন এজ সমস্যা। যৌবন প্রারম্ভে হরমোনাল মানসিকতা উদ্দাম ছোটাছুটি করে। তার পুরোটাই কিন্তু বিপরীত অথবা দুই দেহের সংযোগ হওয়ার আপ্রাণ আগ্রাসী ভাবনা। প্রেমের জ্যোতি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র থাকে বলে মনে হয় না। এই সংযোগ যদি সময় সুযোগে আরো গাঢ়তর হয় তখন প্রেমের অবস্থানের সূচনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য মানুষ হিসেবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে পরিচিতি হারিয়ে যায়। গড্ডলিকায় শুধু বয়ে যায়। যদিও বা কিছু করার বাসনা গড়ে ওঠে তা অনেক পরে নিজস্ব বোধ বুদ্ধি অবস্থানের পর্যায়ক্রমে।

অর্থাৎ পরিণত বোধের পরেই যে দুই দেহের মধ্যে মনের আদান প্রদান গড়ে ওঠে তাকেই প্রেম বলা যেতে পারে। রাধাকৃষ্ণ হীর রাঞ্ঝা সেলিম আনারকলি এসবই সেই সব জীবনের ফসল চিত্রকলা। রাধাকৃষ্ণ তো জন্মসূত্রেই বোধ সম্পন্ন।

আমাদের আশেপাশে শুধুমাত্র প্রেম সকল চিন্তাভাবনায় কত যে এই বোধহীন হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নারী পুরুষ বা দুই দেহের মন নাড়াচাড়ায় প্রেমের যে পূর্ণতা তা আকাশ অসীম অনন্তের ভাব প্রয়াস। সময় সুযোগ অবস্থান সংযোগ এবং তার অবস্থানিক বোধ পরিচালনায় প্রেমের উন্মুখ চিত্র। সিনেমার মত হুট করে ধাক্কা লাগল আর প্রেম হয়ে গেল – তা কখনই বাস্তবে হয় না। সদ্য যৌবন পা শুধুই ছলাকলায় ডুবে নাবিক কথামালা। পাড়ে পৌঁছতে পারে অথবা হারিয়ে যেতে পারে। বোধ পরিপূর্ণ এ রকম অনেক আছে যারা প্রেম করেছেন কি না জানি না তবে একটা ধরেছেন ছেড়েছেন আবার ধরেছেন আবার ছেড়েছেন এবং আবার তাও তারা প্রতিষ্ঠিত জীবনে ও মননে। সে নারী অথবা পুরুষ, যে কেউ।

কেউ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে যে স্কুল লাইফে চুটিয়ে প্রেম করেও স্কলার ফেলোসিভ বা সর্বোচ্চ হতে পেরেছেন? তাহলে এই স্থিতি সীমান্তে প্রেমের ভূমি রাজ্য কি? বোধ পূর্ণতা পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে আয়ত্বে রাখতে পারে না। অন্য এক দেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরে। এই খোঁজার মাঝে যদি সদ্য যৌবন তা পেয়ে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে তা বিপরীতমুখী। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনুকুল।

ভাবনার বিষয় তাহলে শুধু প্রেম কি দেয়? আর কি পায়? জৈবিক চাহিদার অজৈবিক পার্থিব অবস্থানে? এর পরে আছে বৈধ আর অবৈধ প্রেম। বৈধ অর্থাৎ সবার সামনে বুক ফুলিয়ে সমাজ সংসারকে সামনে রেখে। যেমন বিয়ে এই জাতীয় অবস্থান। আবার লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। সবাই গানটি জানে ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’। প্রকাশ্যে আসবেই আজ কাল কিংবা পরশু। কিন্তু তবু অনেকেই মনে করে কিছু হবে না চল, প্রেম ঘুরে আসি থুড়ি প্রেম করি। কেউ জানতে পারবে না।

যতদূর জানি প্রেমের এই কোন লুকানো ঝুকানো ধরা পড়েছেই। টিন এজ এই অবস্থানে ঢুকে পড়ছে প্রেম রহস্যে। ফলে নিজস্ব কেরিয়ার বৃত্তিতে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। বোধ না জন্মানো বড়দের মত হওয়ার প্রেম নেশায় কত অকাল হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। তাকে রোধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবার। আমাদের বড়দের। পাশে থাকা, বুঝতে শেখা, বুঝিয়ে বলা ও নিয়মিত টিন এজের মত হওয়া। টিন এজ মেধা যা পড়াশুনার মাধ্যমেই বিকশিত হয়। তার সাথে মানবিক বোধ আহরণ করতে শেখে।

ঠিক সেই সময় প্রেমের নেশা যা পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও বিনোদন থেকে দেখে শেখে এবং সদ্য তাই তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। ফলে মেধার অপচয় ঘটে যায়। তাকে রোধ করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বোধ পূর্ণতা প্রেম জীবনে স্বাগত। আনন্দম।

দখলের মহোৎসব, পাহাড় ও মানুষের কান্না

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ২০ জন, কাপ্তাইয়ে ১১ জন ও কাউখালীতে ২১ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন। প্রকাশিত খবর আরো জানাচ্ছে, টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য এসেছে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। এই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অতীতের নিরীক্ষণগুলো বলছে- ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট চট্টগ্রামের লালখানবাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। অনেকেই এসব ঘটনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলবেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, পাহাড়গুলো কাটছে কারা? এর নেপথ্যে কে? দখলের এই যে মহোৎসব চলছে, তা বাধা দেয়ার কি কেউ নেই?

নির্বিচারে গাছ কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছ উজাড়ের কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। তুমুল বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের পূর্বাভাস মানুষকে জানানো হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি। পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতে পারত। বন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল এবং গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন শক্ত রাখে। কিন্তু লোভী মানুষেরা অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটছে। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষ বসতির প্রয়োজনেও পাহাড় কাটছে। এতেই পাহাড় ধসের পথ তৈরি হয়। ফলে টানা বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসে পড়ে। এ কারণে প্রায় প্রতি বছরই ছোটখাটো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এর আগে ২০০৭ সালে এ বর্ষাকালেই বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন ১২৭ জন নিহত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল মিডিয়াকে বলেছেন, পাহাড় ধসের প্রধান কারণ দুটি। ভূতাত্তিক¡ক ও মানবসৃষ্ট। কোনো অঞ্চলে ৩টি ভূতাত্তিক¡ক কারণে পাহাড় ধস হতে পারে। সেগুলো হলো- পাহাড়ের ভূতাত্তিক¡ক গঠন, বালুর বিন্যাস এবং পাহাড়ের ঢালুতা। আর মনুষ্যসৃষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে- পাহাড়ে চাষাবাদ এবং বন উজাড়। এসব কারণ যখন তৈরি হয় তখন অধিক বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের ফাটল দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এতে পাহাড় ভারি হয়ে যায়। ফলে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে তিনি যে কোনো মূল্যে পাহাড় কাটা বন্ধের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া পাহাড়ে পর্যাপ্ত উপযুক্ত গাছপালা লাগানো, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গরিব মানুষকে অন্যত্র পুনর্বাসন করার পরামর্শ দেন তিনি। ২০০৭ সালের ১১ জুন কেবল চট্টগ্রামেই পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি করা হয়, যার সচিব ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক মো. জাফর আলম। ওই কমিটি পাহাড় ধসের ২৮ কারণ চিহ্নিত করেছিল। রক্ষা ও ধস ঠেকাতে প্রণয়ন করেছিল ৩৬ দফা সুপারিশ। কিন্তু সে সব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি গত ১০ বছরেও।

কী নির্মম বাংলাদেশের বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়! তাদের চোখ-কান কি খোলা নেই? একটি সবুজ বনাঞ্চলকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে কেন?

কমিটি যে সুপারিশগুলো করেছিল, তার দিকে নজর দেয়া যাক। কমিটি ২৮টি কারণের উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলেছিল- ভারি বর্ষণ, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা ইত্যাদি।

কমিটি সুপারিশ করেছিল- পাহাড়ের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প গড়ে না তোলা, পাহাড়ে জরুরি ভিত্তিতে বনায়ন করা, ঢালু পাহাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণ, নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পাহাড়ের পানি ও বালি অপসারণের ব্যবস্থা করা, যত্রতত্র পাহাড়ি বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ করা, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলের পাদদেশে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করে পর্যটন স্পট করা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব পাহাড় প্রায় খাড়া অবস্থায় রয়েছে সেখানে স্বাভাবিক বনায়ন সম্ভব না হলে মুলি বাঁশ রোপণ ইত্যাদি।

চট্টগ্রামে যারা পাহাড় কাটছে এরা খুবই শক্তিশালী। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এমনকি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধেই পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। আবার প্রভাবশালীরা পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন সব সময়। যে কারণে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও বসতি স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রয়েছে প্রশাসনের অবহেলা ও গাফিলতি।

বাংলাদেশে যে দখলদারির ত্রাস চলছে, তা সভ্যতার জন্য অশনিসংকেত। এমনটি চলতে দেয়া যায় না। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কিংবা জৈন্তাপুরের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর খনন করেও ধস তৈরি করা হয়েছিল। তা নিয়েও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এখন পাহাড় কাটার নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই সবুজ নিধন চলছে। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র যখন এমন হীন কাজে বাধা দেয় না তখন সেটা রাষ্ট্রীয় মদত বলেই পরিগণিত হয়। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে সবুজ টিলা পাহাড়কে বাঁচাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তার তীব্র প্রতিবাদ এবং ঘৃণা জানিয়ে একটি কথাই বলতে চাই- একাত্তরে কিন্তু এই আদিবাসীরাও আমাদের বিজয়ের জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। আমরা তা ভুলে যাই কেন?

__________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। শনিবার, ১৭ জুন ২০১৭

কাতারের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সফর করে এলেন। এর পরেই মধ্যপ্রাচ্যে ঘটছে নতুন মেরুকরণ। হঠাৎ করেই সৌদি আরব ঘোষণা দিয়েছে তারা কাতারের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে। একই সঙ্গে একটি অ্যালায়েন্সও তৈরি করেছে সৌদি আরব। আরব অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া এবং ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে। কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণায় সৌদি আরবের সঙ্গে রয়েছে- সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, মিসর ও লিবিয়া। আরব দেশগুলোর বাইরে মালদ্বীপও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাতার ইসলামিক স্টেট (আইএস), আলকায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে এই অ্যালায়েন্স। এর মাঝেই রিয়াদ, কাতারের সঙ্গে সীমান্ত আটকে দিয়ে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সব ধরনের যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সব মিত্র দেশ ও সব কোম্পানিকেও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। কাতার সরকার ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের সমর্থন দিচ্ছে বলেও সৌদি সরকারের অভিযোগ। সৌদি সমর্থিত ইয়েমেন সরকারও ইরান সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আকাশসীমা বা বন্দর কাতারের বিমান বা নৌযানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সংগঠনকে মদত দেয়ার কারণে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিসর। আরব আমিরাতভিত্তিক ইতিহাদ, এমিরেটস ও ফ্লাই দুবাই এরই মধ্যে কাতারে যাওয়া-আসার সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। বাহরাইন তাদের ঘোষণায় কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ এনেছে। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থাকা সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট থেকেও কাতারকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর জবাবে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের এ সিদ্ধান্ত অন্যায়। যেসব অভিযোগ ও দাবি করা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। সৌদি আরবের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার বলছে, প্রতিবেশীদের এমন সিদ্ধান্ত ‘দেশের নাগরিক ও বসবাসকারীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে না’।

এদিকে নতুন এই ইস্যুতে মহা খুশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে তাকে জানানো হয়েছিল যে কাতার ‘জঙ্গিদের সমর্থন করছে ও অর্থের জোগান দিচ্ছে।’ কাতারের সঙ্গে যে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই। তিনি বলেছেন, কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার কৃতিত্ব তার। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটারে লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় আমি বলেছিলাম জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে হবে, এটাকে কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। দেখেন, নেতারা কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন।’ এরপর আরেকটি টুইট বার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘সৌদি আরবসহ পঞ্চাশটি দেশ যে বলছে তারা চরমপন্থা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে, তা দেখে খুব ভালো লাগছে। কাতারকে উদ্ধৃত করে তারা তাদের সিদ্ধান্তও জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ শেষ করার লক্ষ্যে সম্ভবত এটাই শুভ সূচনা।’

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, রিয়াদ-আবুধাবি জোট সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের শিয়াদের প্রতি কাতারের সমর্থন বৃদ্ধি পেতে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ইরানের সঙ্গে গ্যাসফিল্ড ভাগাভাগি করায় ইরানের প্রতি সুন্নি রাষ্ট্র কাতারের নমনীয় অবস্থানেরই ইঙ্গিত দেয়। কাতার সব সময় তার নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য গর্ব করে আসছিল। কারণ, লেবানন থেকে সুদান পর্যন্ত আঞ্চলিক সংঘাতগুলোতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে দোহা তার প্রমাণ রাখতে পেরেছিল। কিন্তু দোহার সমালোচকেরা বলছে, এ ধরনের নিরপেক্ষ মধ্যস্থতা উপসাগরীয় সুন্নি দেশগুলোর স্বার্থে সক্রিয়ভাবে আঘাতকারী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের নামান্তর মাত্র। কাতারের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে কোটি কোটি ডলার দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছর ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে জিম্মি করা কাতারিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কাতার এই অর্থ দেয়। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও বাহরাইনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য রিয়াদ তেহরানকে অভিযুক্ত করেছে। তারা এটাকে ইরানের অনধিকার চর্চা হিসেবে অভিহিত করেছে।

এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র খেলছে দ্বৈত খেলা। লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে ভিন্ন খবর। এতে আরশাদ মোহাম্মদ ও স্টিভ ওঁলাদের লেখা প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, কাতার-আরব উত্তেজনা নিরসনে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়েছে, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সমন্বয় করে সৌদি আরব কাতারের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার যে ঘোষণা দিয়েছে সে বিষয়ে অন্ধকারে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এসব তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। সৌদি আরব তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছে, কাতার ইরানকে সমর্থন করে। তারা মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বেশ কিছু গ্রুপকে সমর্থন দেয়।

ওয়াশিংটনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বা শান্তি ধরে রাখার অনেক কারণ আছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যতগুলো বিমান ঘাঁটি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি রয়েছে কাতারের আল উদেইদ-এ। আইসিসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে লড়াইয়ের বড় ঘাঁটি এটি। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার মেয়াদে আইসিসকে পরাজিত করার অগ্রাধিকার ঘোষণা দিয়েছে। উপরন্তু হামাস ও তালেবানের মতো গ্রুপকে স্বেচ্ছায় স্বাগত জানায় কাতার। এ দুটি গ্রুপের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র লড়াই করছে। ফলে কাতারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকার ফলে যখন প্রয়োজন তখনই ওই গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য দেশগুলোকে নিয়ে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্তের পেছনে পূর্বানুমিত কারণ কী তা তারা বুঝতে পারছেন না। তারা আরো বলেছেন, সৌদি আরব মনে করে থাকতে পারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে কঠোর ইরান বিরোধিতার নীতিতে তারা শক্তিমান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্পের সফরের মাধ্যমে তারা হয়তো ভেবে নিয়েছেন তিনি তাদের সমর্থন করছেন। মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো আভাস পায়নি। তাই হোয়াইট হাউস বলেছে, উপসাগরে সৃষ্ট এই উত্তেজনা নিরসনে তারা কাজ করবে।

পাকিস্তান জানিয়েছে কাতারের সঙ্গে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। মধ্যপ্রাচ্যের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ কুয়েত এবং ওমান কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করছে না। কাতার ইস্যুতে চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ও জিসিসির ভবিষ্যৎ শঙ্কায় ফেলবে বলে ভয় কুয়েত ও ওমানের। কুয়েতের আমির, কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলেন। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা করার জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল সাবাহ। মধ্যপ্রাচ্যে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কাতারের আমির। শুরু থেকেই দুই পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন তিনি। চলমান সংকট নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির। কিন্তু কুয়েতের আমিরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সে ভাষণ স্থগিত করেছেন তিনি। কাতার ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পুতিন-এরদোয়ান আলাপে দুই নেতা কাতারের কূটনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে, তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যা সমাধানে কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতায় প্রস্তুত আঙ্কারা। একটি বিষয় আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেই কাজ করে।

সৌদি আরবে এক সফরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ বছরে সৌদি আরবে ৩৫ হাজার কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রি চুক্তির পর নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে অস্ত্র বিক্রেতা ৬টি মার্কিন কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়ে গেছে। এসব অস্ত্র এখন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আরো বিভেদ প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করে নিজের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সৌদি আরব এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন অনুমানও করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অস্ত্র চুক্তিটি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, ইরানের ক্ষতিকর প্রভাব রোখাই এই চুক্তির লক্ষ্য। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম-সেবার এই প্যাকেজ সৌদি আরব তথা গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তায় সমর্থন জোগাবে।

আমাদের মনে আছে, ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপ নেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডে ট্রাম্পের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরবকে ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের দেশ হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, দেশটি দুটি পবিত্র মসজিদের রক্ষক। এই সফর তার ভাবমূর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ বিষয়টিও হয়তো ট্রাম্প বিবেচনায় নিয়েছিলেন। রিয়াদে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়টি ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও এখন কাতারের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে প্রশ্ন আসছে। কাতার একটি ধনী দেশ। মাত্র ২৫ লাখ মানুষের এই দেশটি তেল সম্পদে ভরপুর। কোনো কালো শক্তি কি সেই সম্পদে অবৈধ ভাগ বসাতে চাইছে ? কাতার কি সিরিয়া-লিবিয়া-ইরাকের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে? তা না হলে হঠাৎ সৌদি আরব কার নির্দেশে কাতারের পিছু লাগল? মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রয়োজন। এর অন্যতম ধাপ হলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুর ন্যায্য স্থায়ী সমাধান। বিশ্বে জঙ্গিবাদী যে কালোশক্তি এখন মহড়া দেখাচ্ছে এর মূল কারণ এই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। বিষয়টি ট্রাম্প এবং সৌদি প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে। যে কোনোভাবেই কাতারে আগ্রাসন থামানো দরকার। এ জন্য বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে উদারতা নিয়ে।

__________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। শনিবার, ১০ জুন ২০১৭

আমাদের ভয়ের কারণ অন্যত্র

আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি তাদের ভয়ের কারণ আছে। এই কারণ গুলো কী- তা ক্ষমতাসীনদের না জানার কথা নয়। বাংলাদেশে যদি মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটে তবে, এর বেনিফিসিয়ারি কে হবে, তাও জানেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ভাস্কর্য নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা নতুন নয়। এর আগেও বাংলাদেশে ভাস্কর্য আক্রান্ত হয়েছে। শহীদ মিনার আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৬-এর সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বার বনানী গোলচত্বরের ‘বিজয় ভাস্কর্য’ ভেঙ্গে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকজন বলছিলেন, এটা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পরিকল্পিত নাশকতা।

রণাঙ্গনে যুদ্ধ শেষে বিজয়-সন্ধিক্ষণে কাঁধে রাইফেল নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ডান হাত দিয়ে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছেন, এমন দৃশ্যের এ ভাস্কর্য রড-সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরি। প্রায় নয় ফুট উঁচু এ মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ১৯৯১ সালে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় স্থাপন করেছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সেটি সরিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে বনানী গোলচত্বরের পর্যটন মোটেলের সামনে স্থাপন করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিমানবন্দর মোড়ে স্থাপন করা লালনের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয় ধর্মীয় গোষ্ঠীর আন্দোলনের মুখে। ওই সময় রাজধানীর মতিঝিলে বিমান অফিসের সামনের ভাস্কর্য বলাকাতেও হামলা হয়। আমাদের মনে আছে, বিমানবন্দরের সামনে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল সরকারের সংশিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নিয়েই। বিমানবন্দরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দেশের লোকায়ত শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি বিদেশিদের আকৃষ্ট করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। মৌলবাদীদের তাণ্ডবের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এর আগেও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য ভেঙেছে। এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আস্কারা পেয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় ছিল সেই সময়ে একজন মৌলবাদী নেতা ফজলুল হক আমিনী হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে দেশের সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হবে। আমরা স্মরণ করতে পারি, সত্তরের দশকের শেষার্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে শিল্পী আবদুলাহ খালেদ নির্মিত ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাঙারও চেষ্টা চালিয়েছিল জামায়াত সমর্থক ইসলামী ছাত্রশিবির ক্যাডাররা। সে সময় ছাত্র-শিক্ষক তথা সচেতন মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তাদের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।

একই অবস্থা আমরা দেখেছি ২০১৭ সালেও। সুপ্রিমকোর্টের সামনে স্থাপন করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানো ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবি আরো সুদূরপ্রসারী। তারা চার বছর আগেই দেশের সব ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলেছে। সে দাবি এখনো বহাল আছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে স্থাপন হয় ভাস্কর্য। এটি স্থাপনের পরপর ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো এটি অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আর রমজান মাস শুরুর আগেই এটি অপসারণ না হলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। হেফাজতে ইসলাম এই যে হুকমি দিয়ে যাচ্ছে এর নেপথ্য কারণ কী? তারা কি সরকারকে কোনো টোপে ফেলতে চাইছে?

হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক ও সংস্কৃতিকর্মী। এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণ করা ঠিক হয়নি। ভাস্কর্য যেমন একটি প্রতীক, এর অপসারণও একটি প্রতীক। এর ফলে তাদের চাপ আরো বাড়বে এবং হেফাজত রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করবে। এটা করতে দেওয়া ঠিক হবে না। তারা দর কষাকষি করতেই থাকবে। এক দলের কাছ থেকে সুযোগ নিয়ে, আরেক দলের কাছ থেকেও সুযোগ নিতে চাইবে। তারা এভাবেই নিজেদের শক্তি সংহত করছে। এ ভাস্কর্য অপসারণ করা গ্রহণযোগ্য নয়, এটা দুঃখজনক।’

বরেণ্য বুদ্ধিজীবী কামাল লোহানী বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষ দাবি করা সরকার এখন মৌলবাদী, সা¤প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আপস করছে। আমরা কোন পথে যাচ্ছি, সেটা ভাবতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাহাত্তরের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা রেখেছিলেন, সেটির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এ সরকার ফিরিয়ে আনেনি। হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষিতে এই ভাস্কর্য অপসারণের পূর্বে পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘কাজটা তো করেছেন প্রধান বিচারপতি। তার নির্দেশনা ছাড়া তো সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্যের গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি কেনইবা এটা বসালেন কেনইবা এটা সরালেন? এটা সরিয়ে তিনি যেটা করলেন হেফাজতের দাবির কাছে নতি স্বীকার করলেন। হেফাজত ভবিষ্যতে দাবি করবে শরিয়া আইন চালু করতে হবে। হিন্দু প্রধান বিচারপতি থাকতে পারবে না। প্রধান বিচারপতি কি তাহলে এরপর তার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন? এটাও তো তাদের দাবি। কেন তিনি এটা করতে গেলেন? রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক মতলবে বিভিন্ন সময় মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আপস করে- বিএনপি করেছে, এখন আওয়ামী লীগও করছে। সেটার জন্য তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি যদি হেফাজতের দাবির কাছে নতি স্বীকার করেন, তাহলে আমরা যাবো কোথায়?’

ভাস্কর্য নিয়ে এই বিতর্কের পাশাপাশি অনেক কথা বেরিয়ে এসেছে ভাস্কর মৃনাল হকের ব্যাপারেও। জানিয়ে রাখি, আমি যে শহরে থাকি সেই নিউ ইয়র্কে একসময় পরবাসী ছিলেন এই মৃনাল হক। ৯০-এর দশকে বেশ কয়েক বছর তিনি এখানে ছিলেন। তিনি যে বিএনপি ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন- তা আমাদের অনেকেরই জানার সুযোগ হয়নি। কিংবা তিনি তার কর্মকাণ্ডেও কখনো রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ ঘটাননি। নিউ ইয়র্কে থাকতে তিনি কিছু কাজও করেছিলেন ভাস্কর্যের। একজন দন্ত চিকিৎসক মীনা ফারাহ’র (যিনি আগে মীনা সাহা ছিলেন) কেনা একটি বাণিজ্যিক ভবনের দেয়ালেও তিনি কিছু সিরামিকের কাজ করেন। যাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য ফুটে উঠেছিল। পরে তা অযত্নে ভেঙে ভেঙে পড়ে যায়।

মীনা ফারাহ নিউ ইয়র্কে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। মেজর জিয়াকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে একটি বইও লিখেছিলেন। এই সেই মীনা ফারাহ, যিনি একাত্তরের ঘাতক রাজাকার শেরপুরের মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রথমে সাক্ষী দিতে তৈরি থাকলেও পরে অজ্ঞাত কারণে সাক্ষী দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই মীনা ফারাহ’র সঙ্গে মৃনাল হকের সখ্য গড়ে উঠেছিল নিউ ইয়র্কে। চলমান সময়ে এই মীনা ফারাহ বাংলাদেশের মৌলবাদী মিডিয়াগুলোর অন্যতম লেখিকা।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ইসলামী দলগুলোকে একাট্টা করতে চাইছে। তাদের ভোট চাইছে। এটাই এখন মূলত রাজনীতির বহিরাঙ্গন। কিন্তু ভেতরে কী ঘটছে? আপনাদের মনে আছে- আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী, বিচারপতি বদরুল হায়দার জামায়াত নেতা আলবদর গোলাম আযমের সঙ্গে দেখা করে দোয়া চেয়েছিলেন। তাতে কি কোনো কাজ হয়েছিল? না- হয়নি।

আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি, বর্তমান সরকার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ফসল এবং ধারাবাহিকতা। একাত্তরের পরাজিত মৌলবাদীরা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে যদি সেই একই কালো মুদ্রার ওপিঠ সওয়ার হয়, তাহলে পরিণতি কী হতে পারে- তা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভেবে দেখেছেন? যারা একাত্তরে মহান স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল- তারাই আজ ভাস্কর্য তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। মিলে-মিশে রাজনীতি করা ভালো। কিন্তু যারা এই দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়, যারা মৌলবাদী হুংকার দেয় তারা কেমন বাংলাদেশ চায়- তা কি অনুধাবন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা?

আমাদের আরেকটি চুক্তির কথা মনে আছে। সেটি হলো- ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত পাঁচ দফা নির্বাচনী চুক্তি। এ নির্বাচনী সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিলেন আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এবং খেলাফত মজলিসের পক্ষে মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। এই চুক্তির পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে খেলাফত মজলিস আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোটের’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পাঁচ দফা নির্বাচনী চুক্তিতে বলা হয়েছিল- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হচ্ছে যে, নিম্নবর্ণিত ৫টি বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে আসন্ন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করবে এবং মহান আল্লাহ তা’আলা বিজয় দান করলে এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে-

১. পবিত্র কুরআন সুন্নাহ ও শরিয়ত বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না।
২. কওমি মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
৩. নিম্নবর্ণিত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা হবে। হযরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।
৪. সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলেমগণ ফতোয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সনদবিহীন কোনো ব্যক্তি ফতোয়া প্রদান করতে পারবে না।
৫. নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এভাবেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক কৌশল চলছে। কে জিতে কে হারে, তা দেখার জন্য জনগণ তৈরিই থাকেন। সবশেষে, আমি যে প্রশ্নগুলো করে লেখা শেষ করতে চাই তা হলো- ভাস্কর মৃনাল হক প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে লিখিত টেন্ডার পেয়ে কাজটি করেছিলেন কি? তিনি গ্রীক দেবীর আদলে যে ভাস্কর্যটি বানিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের অনুমোদিত ছিল কি? আমাদের ভয়ের কারণ হচ্ছে- কোনো কালো শক্তি পেছন থেকে দাবার গুটি চাল দিচ্ছে কি না। আমাদের শংকা হচ্ছে, এসব দেখে শুনে বাংলাদেশে মৌলবাদীরা তাদের ফণা দেখাচ্ছে চাচ্ছে কি না। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার। এই সুযোগে আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাস্কর্যগুলো যেন অপমানিত না হয়।

________________________________
দৈনিক খোলাকাগজ। ঢাকা। ৫ জুন ২০১৭ সোমবার।

একটি শাহবাগ আন্দোলনের জন্ম না হলে

আন্দোলনটি মূলত শুরু করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ জননীর সঙ্গে মঞ্চে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। এসব অনেক ঘটনা আমাদের মনে আছে। ১৪ অক্টোবর ১৯৯২ সালে মহাসমাবেশের মঞ্চে কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও জননেত্রী শেখ হাসিনা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পাশে গিয়ে বসেছিলেন। তা ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটা শহীদ জননী নিজেও জানতেন, বাংলার মাটিতে ঘাতক-দালালদের বিচার আওয়ামী লীগই করবে এবং এর নেতৃত্ব শেখ হাসিনাই দেবেন। ১৯৯৩ সালে তিনি সে কথা আমাকে নিউইয়র্কে একান্ত সাক্ষাৎকারে খুব স্পষ্ট করেই বলেছিলেন। এটাও বলেছিলেন, এর জন্য প্রজন্মকে তৈরি হতে হবে। বলে রাখি, সেই তৈরি হওয়া প্রজন্মই শাহবাগ আন্দোলন।

আমাদের মনে আছে, শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, আমার ইচ্ছে হয় শাহবাগে ছুটে যাই। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তিনি জাতীয় সংসদে বলেন, ‘আমার মনও শাহবাগের আন্দোলনে ছুটে যেতে চায়।’ তিনি বলেন, তিনি তরুণ প্রজন্মকে বলতে চান, তার দলও তাদের সঙ্গে একমত। তাদের শপথ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার, তারা তা করবেন। তরুণ প্রজন্ম জাতীয় সংসদে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তার প্রতিটি কথা যুক্তিসঙ্গত।

ট্রাইব্যুনাল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। এবার ক্ষমতায় এসে সেই অঙ্গীকারই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিচারের রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আইন মেনেই তারা চলবেন। তারপরও ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও গণদাবি যেন তারা বিবেচনায় নেন। মহান সংসদের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের কাছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা বিবেচনা করার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শাহবাগের আন্দোলনকে অভূতপূর্ব জাগরণ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি করেছে। জাগরণ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে। প্রতি জেলা, প্রতি উপজেলায় সব জায়গায় মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আন্দোলনে সোচ্চার শিশু, নারী, বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। আন্দোলনের কারণে শাহবাগের নাম আর শাহবাগ না থেকে স্বাধীনতার তরুণ প্রজন্ম স্কয়ার হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে ওই এলাকায় শাহবাগ নামে একটি হোটেল ছিল। তাই সেখানকার নাম শাহবাগ রাখা হয়। এই নামে এক ধরনের পাকিস্তানি গন্ধ আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা যে প্রতিভা দেখিয়েছ, তাতে মনে হয়, এখন খুব স্বস্তিতে মরতে পারব, শান্তিতে মরতে পারব।’ প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তরুণ প্রজন্মের আজকের আন্দোলন দেখে তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তারুণ্যের আজকের আন্দোলন দেখে আর কোনোদিন এ দেশে রাজাকার-আলবদরের ঠাঁই হবে না- এই বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। এর আগে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ রায় ফাঁসির দাবি জানান তারা।

সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আলোচনার সূত্রপাত করেন। এরপর একে একে ৩২ জন সংসদ সদস্য প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনায় অংশ নেন। সবশেষে বক্তব্য দেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই ঘটনার পরপরই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বিএনপি। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছিল, বিচারকেরা নিজস্ব মূল্যায়ন, যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে রায় ঘোষণা করতে না পারলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমগ্র বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি এ কথা বলে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই কথা বলা হয়। দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা ওই বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের হাতেই শাহবাগের আন্দোলনের নেতৃত্ব কুক্ষিগত করার প্রয়াস চলছে। ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং অব্যাহত রাখতে’ নতুন প্রজন্ম একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে বলেও আশা করছে দলটি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বিবেচনা করে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বিচারকদের অনুরোধ জানিয়ে, সমগ্র জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সমাবেশ মঞ্চের ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। অথচ মানবতা বিরোধীসহ যে কোনো অপরাধে অভিযুক্তদের যথাযথ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারপ্রধানের। বিচারকরা তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন, যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে যদি রায় ঘোষণা করতে না পারেন তাহলে সমগ্র বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এটা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’ বিএনপির নীতি নির্ধারকরা ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবে। বিএনপি সব সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। একই সঙ্গে বিচারটি যাতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় বিএনপি সে দাবিও জানিয়ে আসছে। বিএনপির এই দাবির প্রতি সম্মান দেখালে বিচারটি প্রশ্নবিদ্ধ হতো না।

আমরা লক্ষ করতে পারি, এভাবেই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে ফেলেন। বাংলাদেশ দেখে, কে কার পক্ষ নিচ্ছেন। এভাবেই এগিয়েছে শাহবাগ আন্দোলন।

আরো পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখব, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি এর পূর্ব থেকেই এই বিচার চেয়ে আসছিল। শহীদ জননীর রেখে যাওয়া এই একই দাবিতে বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু প্রিয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০০৯ সাল থেকে একটি সংগঠন কাজ করেছে প্রতিনিয়ত। ক্যাম্পাস অঙ্গনের রাজপথে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম আর যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান ছিল সদা দৃশ্যমান। সেই সংগঠনটির নাম ‘¯েøাগান ’৭১’। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন। ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে ¯েøাগান ’৭১ এর প্রতিবাদী মিছিলটিই ছিল সারাদেশের মধ্যেই প্রথম সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। সেই মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেছিলেন। শাহবাগ আন্দোলন ছিল এমন অনেক প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের প্রাণের সম্মিলন। শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন বরেণ্য কবি শহীদ কাদরী। তিনি ছিলেন খুবই নির্ভীক মানুষ। এখনো তার কথা আমাকে শাণিত করে। শহীদ কাদরী বলেছিলেন, শাহবাগ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা আমাকে আবারো চমকে দিয়েছে। যেমনটি আমি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির মাঝে দেখেছিলাম। কবি বলেছিলেন, আমি ভেবে পাই না একাত্তর পরবর্তী সময়েই কেন এসব ঘাতক-দালালদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়নি। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে কি এমন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, যারা কাদের মোল্লার মতো একজন খুনিকে হত্যা করতে পারল না! ভেবে অবাক হই, এমন চিহ্নিত একজন ধর্ষক কিভাবে এতদিন বেঁচে আছে! তার কথা শুনে শিউরে উঠি। এই যে শাহবাগ আন্দোলন, তা থামাতে কি কম চেষ্টা হয়েছিল? ২২ মে ১০১৩ দৈনিক জনকণ্ঠের বিপোর্টে আমরা জানি, রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের নাশকতার রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। বোমা, ককটেল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে ২০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে তারা। এই টাকা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় বণ্টনও করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচিতে জেলা ও থানা শহর থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছিল। তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছে। জামায়াতের সঙ্গে থাকা ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠনের কর্মীরাও প্রস্তুত রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা এ খবর দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে- তাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারে রায় যাই হোক না কেন জামায়াত-শিবির গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মতো দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাবে। এই তাণ্ডবের জন্য বিরাট অঙ্কের একটি তহবিল গঠন করেছে জামায়াত। প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। সরকারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তারা টাকার অঙ্ক আরো বাড়াতে পারে। সরকার যদি কঠোর অবস্থানে থাকে- সে ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির কৌশল পরিবর্তন করবে। এতে বেশি টাকার প্রয়োজন হবে বলে জামায়াতের নেতারা মনে করছেন। বোমা তৈরির জন্য দেশের বাইরে থেকে দক্ষ লোকও তারা দেশে নিয়ে এসেছে। যেসব জায়গায় জামায়াতের শক্তি বেশি সেইসব এলাকায় তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া নাশকতা চালানোর জন্য বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষকে টাকা দিয়ে পক্ষে নিয়েছে। বিচারের রায় ঘোষণার পর পরই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তারা নাশকতায় যোগ দেবে। বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রশিক্ষিত ছাত্রদের গোপনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কুখ্যাত রাজাকার কামারুজ্জামানের রায় নিয়ে জামায়াত কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা অপেক্ষায় রয়েছে গোলাম আযমের রায়ের। এ রায় যাই হোক না কেন তবু তারা হিংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে। কারণ কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কামারুজ্জামানের রায় আর গোলাম আযমের রায় একসঙ্গে মিলিয়ে তাদের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই রোডম্যাপ বেশ কয়েকদিন আগেই করেছে। জামায়াত-শিবিরের ফোনালাপ থেকে রোডম্যাপ সম্পর্কে জেনেছে। বিভিন্ন জেলায় সংস্থাটি বেশকিছু প্রশিক্ষিত জামায়াত-শিবির কর্মীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা সরকারের ওপর মহলে পাঠিয়েছে।

এই ছিল সেই সময়ের অবস্থা। সেই অবস্থা উত্তরণে শাহবাগ আন্দোলন অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেছে। সবিনয়ে বলতে চাই, শহীদ জননী যে আন্দোলন করেছিলেন তার একটি আইনি সমাধানের পথ প্রশস্ত করে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। বেনিফিসিয়ারিও হয়েছে আওয়ামী লীগের মহাজোট। শাহবাগ আন্দোলনও সমর্থন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর বেনিফিসিয়ারিও হয়েছে আওয়ামী লীগ। আমরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, আমাদের ঐক্যের মূল ¯্রােত এভাবেই মিশেছে বারবার বাংলার জলে ও মাটিতে।

আজ যারা এই শাহবাগ আন্দোলনকে খাটো করে দেখছেন, কিংবা নানা ধরনের হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলছেন তাদের অদূর ইতিহাস আবারো পড়া দরকার। সেই সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চেরও উচিত বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা না বলা। কারণ যা করার আওয়ামী লীগই করেছে এবং ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগই করবে। আর কোনো দলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দরজা বাংলাদেশে উন্মোচিত হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তাই সবাইকে সংযত হতে হবে। তা না হলে এই সুযোগে অপশক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে।

__________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। শনিবার, ৩ জুন ২০১৭।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত-এঁর প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা

তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তিনি একজন শিক্ষক। তাঁর দুর্ভাগ্য তিনি বাংলাদেশের এমন একটি এলাকার শিক্ষক, যেখানে তাঁর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী তাঁর পক্ষে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করল না। করতে পারল না। মানুষ একটি রাষ্ট্রে কি অসহায় হতে পারে! মানুষকে কীভাবে জিম্মি করা যায়!

নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে একটি ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। যে মামলাটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, সেখানে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন যে, চাকরি এমপিওভুক্ত করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে শ্যামল কান্তি ভক্ত তার কাছ থেকে এক লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা নিয়েছেন। মামলার বাদী অভিযোগ করেন, তার চাকরি এমপিওভুক্তি হয়নি এবং তিনি টাকাও ফেরত পাননি। এ মামলাটি পুলিশ তদন্ত করার পর শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। আর ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় গত বছরের মে মাসে। এর দুই মাস পর মামলাটি করেন ওই শিক্ষিকা। মামলাটি করা হয় গত বছরের ২৭ জুলাই। অন্যদিকে, শ্যামল কান্তি ভক্ত তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁকে চাপে রাখতেই প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নির্দেশে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাটি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি আজ বলেন, ‘আমি এখানে ন্যায়বিচার পেলাম না। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে ঘুষের অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি কখনো এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। যে সময় ঘুষ নেয়ার কথা বলা হয়েছে, তখন শীতকালীন বন্ধ ছিল বিদ্যালয়।’

এর আগের ঘটনাবলি আমাদের মনে আছে। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবোস করানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে ঘটনা তদন্তের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সে কমিটি শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও একই কথা বলেছিল।

শ্যামল কান্তি ভক্তকে নতুন করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলেই আসছিল। এ বিষয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘আমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন করে হুমকিও দিচ্ছে ওসমান পরিবার। শামীম ওসমান তো আমাদের মামলা তুলে নিতেও বলেছেন। এর মধ্যে লোকও পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, মামলার বাদী সরকার। আমি কী করতে পারি? তারপরও তিনি আমার সঙ্গে বসতে চান। আমার নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ সদস্য আছেন। তিনি আমার কথা শোনেন না। কোথায় থাকেন, ডাকলেও আসেন না। ফলে আমাকে হত্যা করা হতে পারে এমন শঙ্কার মধ্যে আমি দিন পার করছি।’

ঘুষের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ গত ১৪ এপ্রিল শ্যামল কান্তি ভক্তকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিলেন। ২৪ মে এর শুনানি ছিল। হারুনুর রশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ফলে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছি। চারজন সাক্ষীও আছে। অভিযোগকারী ছাড়াও তার স্বামী ও স্কুলের একজন অভিভাবক প্রতিনিধি এই মামলার সাক্ষী হয়েছেন। এখানে অভিযোগকারী শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে এমপি সাহেবের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিরপেক্ষভাবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছি।’ প্রবীণ এই শিক্ষকের গ্রেপ্তারে ফুঁসে উঠছে দেশবাসী। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তোলপাড়। ঘুষগ্রহণ ও প্রদান দুটিই প্রচলিত আইনে অপরাধ দাবি করে শ্যামল কান্তি ভক্তের আইনজীবী এড. শাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ঘুষ প্রদানের ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। লাঞ্ছনার মামলাটিকে ধামাচাপা দিতে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেছেন, যদি আমরা ধরে নিই ‘ঘুষ’ আদান-প্রদানের ঘটনাটি ঘটেছে, তাহলে শ্যামল কান্তি ভক্তের মতো একই অপরাধে অপরাধী শিক্ষিকা মোর্শেদা আক্তারও। তাই প্রশ্ন তুলছি, একই অপরাধে অপরাধী হয়ে মোর্শেদা কেন কারাগারে নন? একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির উচিত এ ব্যাপারে মোর্শেদা বেগমের বিরুদ্ধেও আইনগত প্রদক্ষেপ নিতে আদালতে প্রার্থনা করা। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আলোচনা করব। মোর্শেদা আক্তার যদি ঘুষ দিয়ে থাকেন, তবে তিনিও অপরাধী। তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। আমাদের মনে আছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে কান ধরে উঠবোস করানোর ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কান ধরে দাঁড়িয়ে’ প্রতিবাদ জানিয়েছিল একদল শিক্ষার্থী। তারা আধা ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে হালকা বৃষ্টির মধ্যে তাদের এই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, এভাবে হয়রানির শিকার হলে শিক্ষকদের মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা আজ ভাববার বিষয়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করবে। তারা বলেছিলেন, মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শ্যামল কান্তি ভক্ত স্যারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতেই এ কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তারা।

এই ঘটনায় গত বছরই কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত সংসদ সদস্য সেলিম ও তার সহযোগীদের বিচার চেয়ে তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘শুধু একজন শিক্ষক নয়, যেন কান ধরে উঠবোস করছে বাংলাদেশ!’ সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় তিনশ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। সমাবেশের বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছিলেন, ‘দেশে অনাচারের রাজত্ব চলছে। যেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আমাদের যে আইনকানুন, রীতিনীতি ও নৈতিকতা আছে তার সবগুলোর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু মানুষ তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজ করছে। তারা এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র লজ্জিত কিংবা বিব্রতবোধ করছে না।’ এ ধরনের নেতা ও আইন প্রণেতাকে প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন আইন প্রণেতা নারায়ণগঞ্জে যেটা করলেন সেটা আমাদের আইন অনুযায়ী অবৈধ কাজ। আমাদের উচ্চ আদালত এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।’ ‘জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য’ ওই শিক্ষককে কান ধরানো হয়েছে বলে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গ তুলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছিলেন, ‘যদি নেতার এমনই ব্যক্তিত্ব হয়, জনগণকে কথা বলে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পারেন না, আরেকটি অন্যায় তিনি করেন, তাহলে সেই নেতার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি এবং কথা বলতেও আমি দ্বিধাবোধ করি না, এরা ওই ধরনের আচরণকে সমর্থন করে। আমি মোটেও আশ্চর্য হব না, যদি দেখা যায় ওই ঘটনার পেছনে এই ভদ্রলোকেরও হাত ও উসকানি ছিল।’

অনেক কিছুই ঘটে গেছে এই নারায়ণগঞ্জে। অনেক কিছুই ধামাচাপা পড়েছে। প্রশ্ন আসছে, রাষ্ট্রের ভেতরে কি এক একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ? আচ্ছা দেখলে কি মনে হয় এই লোকটি ঘুষ নিতে পারেন? তাঁকে দেখলে কি মনে হয় না তিনি কত আতঙ্কিত? ওই ন্যক্কারজনক অপমানের দুই মাস পরে মামলা হয়েছিল। এর আগে বাদী মামলা করেন নি কেন? জানি এসব বিষয় নিয়ে তর্ক করে জেতা যাবে না। একটি কথা বলতে চাই, এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার। তিনিই পারেন এই সমস্যার সমাধান করতে। কোনো বলবানের ভয়ে কেউ তো দেশ ছাড়তে পারেন না। একজন প্রবীণ শিক্ষকের কাছে আমি আবারো ক্ষমা চাইছি। এর চেয়ে একজন শব্দশ্রমিক হিসেবে আমার আর কি করার আছে!

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসঃ প্রাসঙ্গিকতা ও প্রত্যাশা

Ismail Abdulhi is a pastoralist in Ta Kuti village (Niger State) and beneficiary of Nigeria’s Fadama II project. (Photo: Arne Hoel)

পরিবার ও পরিবার দিবসঃ আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৯৩ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী ১৫ মে কে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষও ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘগ এবং পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর এ দিনটি আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পারিবারিক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ়ীকরণ ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূলত এ দিবস পালনের প্রয়াস নেয়া হয়। ছোটবেলায় পরিবারের সংজ্ঞা শেখা আছে সবারই। মা-বাবা,ভাই-বোন, দাদা-দাদী – সবাইকে নিয়েই গঠন হয় পরিবারের।

সমাজের মৌলিক ভিত্তি হলো পরিবার। একটি পরিবার একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানুষ পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্দেশনা। জীবন আসলে গড়ে ওঠে এখান থেকেই। মানুষের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠও বলা হয় পরিবারকে। পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও দৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে থাকে। পরিবার তাই মানুষের জন্য স্বপ্নডাঙ্গা। মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

International Day of Families: Theme 2017- “Families, Education and well-being”.

বিশেষজ্ঞদের চোখে পরিবারঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে পরিবার ও এর ভুমিকা বিধৃত করেছেন। ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের প্রমাণ বহন করে।

তবে সমাজ ভেদে, সংস্কৃতিভেদে পরিবারের গঠন, কাঠামো, কার্যক্রম ও সার্বিক ভূমিকা ভিন্ন হয়ে থাকে। সময়ের সাথে, সভ্যতার বিকাশের সাথে আর টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবাবের ভূমিকা যেমণ পরিবর্তিত হচ্ছে; সাথেসাথে পারিবারিক কাঠামো আর মূল্যবোধেও আসছে ভিন্নতা।

যৌথ পরিবার ভাঙ্গার কারণঃ অনেক কারণেই যৌথ পরিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও ক্রমেই কমে কমে বিলুপ্তির পথে এখন। অর্থনৈতিক কারণ এদের মধ্যে অন্যতম। সমাজবিজ্ঞানী ফলসমের মতে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার বৃদ্ধির কারণ প্রধানত:

* অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নতি;
*স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা;
* অলাভজনক শিশুশ্রম এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার;
* ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ।

পরিবারের গুরুত্বঃ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারের অনেক মৌলিক কাজ রয়েছে ।

যেমণঃ

* জৈবিক;
*মনস্তাত্ত্বিক;
*অর্থনৈতিক,;
* শিক্ষাদান;
* শিশুর সামাজিকীকরণ;
* সংস্কৃতির সংরক্ষণ;
*মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ;
* সমমর্যাদার নিশ্চয়তা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকার
*সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান উন্নয়ন।

আজকের শিশু ভবিষ্যতের আগামীর দক্ষ নাগরিক। এই শিশুকে উপযোগী করে গড়ে তোলে পরিবার । শিশুর মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধরন, প্রথা-রীতিনীতি এ সবের ওপর ভিত্তি করে শিশুর জীবন-আচরণ গড়ে ওঠে। তাই চারিত্রিক সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা এবং সর্বোপরি সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুণাবলী আসলে পরিবারেই গ্রথিত হয়।

বাস্তবতাঃ

পরিবার – আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেমন? এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, আমাদের দেশেও পরিবারের কাঠামো আগের মতো নেই। সময়, জীবন, জীবিকা, মানসিকতা ও মূল্যবোধের দ্বান্দ্বিক কারণে আমাদের পরিবারগুলো ভেঙ্গে একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে। মা-বাবা, ভাই বোন, দাদা দাদি – সবাই মিলে যে সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো তা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা, স্বার্থের দোলাচলে আমরা অনেকেই ভুলে যাই- পরিবারের আপনজনদের কথা। এমনকি বাবা-মায়ের খোঁজও নেয়া হয় না। আমাদের সমাজেও তাই দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা যাচ্ছে বেড়ে।

এমনকি ছোট পরিবারেও সহনশীলতা আর পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় অশান্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। এর প্রভাব সরাসরি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের ওপর পড়ছে; পাশাপাশি সেই পরিবারের শিশুরা বেড়ে উঠছে বিরূপ পরিবেশে। সুস্থ মানসিক ও মানবিক বোধ গঠন হচ্ছে বাধাগ্রস্থ।

যৌতুককে কেন্দ্র করেও অশান্তি লেগে থাকে অনেক পরিবারে।

পারিবারিক অশান্তির কারণে ঘটছে না না ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পরিবারে সৌহার্দের অভাবে, সন্তানের হাতে বাবা-মায়ের খুন, বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু বা ‘বৃদ্ধ বাবা-মাকে’ অবহেলার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পারিবারিক অশান্তির জন্য মানুষের মানসিক ও মানবিক বোধের অবক্ষয় হচ্ছে।

সুন্দর পরিবারের জন্য করণীয়ঃ

পারিবারিক সুখ-শান্তি যাতে বিনষ্ট হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে। ঘর বা পরিবার এক পবিত্র আশ্রয়। সব পাখি দিন শেষে যেমন তার নীড়ে ফিরে আসে মানুষও সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষে ঘরে ফিরে আসে। তবে ঘরে অবশ্যই শান্তি থাকতে হবে। হতে হবে সুইট-হোম। পরিবারের মধ্যে ভালোবাসায় ভরপুর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। আগে নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে হবে, তারপর দেশকে ভালোবাসতে হবে। কারণ নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে না পারলে নিজের দেশকে ভালোবাসা সম্ভব হবে না। পরিবার শক্তিশালী হলে সমাজ এগিয়ে যাবে আরে দেশ হবে শক্তিশালী।

পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। দুজনের ভূমিকা ও অধিকার হতে হবে সমান্ ও সম্প্রীতির। অন্যসব সদস্যেরও থাকতে হবে সমান অধিকার। মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। সবার আবেগের মূল্যায়ন করতে হবে যৌক্তিকভাবে সময়ের নিরিখে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ পরিবারের কাঠামোকে করতে পারে মজবুত।

শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে সবার খোঁজ নেয়া উচিত। পরিবারের সবার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। মিথস্ক্রিয়া সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক। মাঝেমধ্যে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া- ফ্যামিলি ডে আউট – অনেক ফলদায়ক হতে পারে।

পরিবারের জেষ্ঠ্য সদস্যদের সম্মানের চোখে দেখা একান্ত প্রয়োজন। এতোটুকু কথা বা খোঁজ নেয়া অনেক সুন্দর মানবিক প্রভাব ফেলতে পারে তাঁদের মনে।

আত্মীয়-স্বজনকে সমান চোখে দেখা জরুরি। নিজের ভাই-বোন, মা-বাবাকে অনেকে প্রাধিকার দেয়। পক্ষান্তরে, স্বামী বা স্ত্রীর আত্মীয়কে ভিন্ন চোখে দেখা অনেক পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।

শেষকথাঃ

এটা ঠিক যে, শুধু দিবস পালন করে পরিবারকে সুখী বা শান্তিময় করা সম্ভব নয়। তদুপরি, আমাদের দেশে পরিবার দিবসের পরিচিতিও নেই সেভাবে। তবে একটি সুন্দর পরিবার, সুখী পরিবারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। যার যার স্থান থেকে। কারণ সমাজ বিনির্মাণে আর রাষ্ট্র পরিচালনায় যে সুন্দর মনের যোগ্য ও দক্ষ মানুষ দরকার – সে মানুষ গড়ে ওঠে পরিবারে। পরিবার সে অর্থে একটি রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম ইউনিট।

সেই পরিবারের ভালবাসা ও মমতার বন্ধনে বেঁচে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে পরিবর্তন হবে অনেক কিছুর; পরিবারেরও। সেটিই স্বাভাবিক । এরই মাঝে, সবার সচেতন কন্ট্রিবিউশিনের মধ্যদিয়ে পরিবার হয়ে ওঠতে পারে সুখের আধার। কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়। শান্তির নীড়।

__

Photo credit: UN website

মা দিবসঃ ইতিহাস- ইতিবৃত্ত

মা দিবস ( Mother’s Day) হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়। বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে। ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি “হলমার্ক হলিডে” অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করেন।

ইতিহাসঃ
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে।
প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে। জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত “মাদার্স ডে প্রক্লামেশন” বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণাঃ
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং “মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার” আর “মা দিবস” এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন। মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তাঁর দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠানঃ
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অনান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়। কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উত্সর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত। অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উত্সব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে।

বিভিন্ন ধর্মে মাঃ
ইসলাম ধর্মে ‍মা– আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)।
হিন্দু ধর্মে ‍মা– সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
ক্যাথলিক ধর্মে, দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।

বিভিন্ন দেশে মা দিবসঃ

আফ্রিকীয় দেশসমূহঃ বহু আফ্রিকীয় দেশ ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে, যদিও আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে এমন অনেক অনুষ্ঠান এবং উত্সব আছে যা আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠার বহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে।

বলিভিয়াঃ বলিভিয়ায় ২৭শে মে মা দিবস পালিত হয়। অধুনা কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭শে মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসবে এই দিনটিকে মা দিবসরূপে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২৭ সালে। এই যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত অনেক মহিলাকে স্পেনীয় সৈন্যবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে।

চীনঃ চীনের মা দিবস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কার্নেশন সেখানে জনপ্রিয়তম উপহার এবং সবথেকে বেশি বিক্রিত ফুল। ১৯৯৭ সালে দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্য, এই দিনটিকে চালু করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র, পিপিল’স ডেইলি’র একটি নিবন্ধে ব্যাপারটির বিষয়ে লেখা হয় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও, চীনের মানুষ বিনা দ্বিধায় এই দিনটিকে গ্রহণ করেছে কারণ এটি একদমই এই দেশের রীতি মাফিক – মানে গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা”।

গ্রিসঃ গ্রীসে, যিশু কে মন্দিরে পেশ করার ইস্টার্ন অর্থডক্স ফিস্ট ডের সঙ্গেই পালন করা হয় মা দিবস। যেহেতু থিওটকস ( ঈশ্বরের মাতা) যিনি এই ফিস্টের (ভোজ) বিশিষ্ট চরিত্র এবং তিনিই যিশু কে জেরুসালেমের মন্দিরে এনেছিলেন, তাই জন্য এই পরবটি মায়েদের সঙ্গে সংযুক্ত।

ইরানঃ ২০ জুমাদা আল-থানি, মহম্মদ (সঃ) -এর কন্যা ফাতিমা(রাঃ)র জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে পালন করা হয় মা দিবস।

জাপানঃ প্রাথমিক ভাবে শোয়া যুগ -এ রানী কজুন -এর (রাজা আকিহিতো’র মা) জন্মদিনটিকেই মা দিবস হিসাবে পালন করা হত জাপান। এখন এটি একটি জনপ্রিয় দিন। বিশেষত কার্নেশন আর গোলাপ উপহার হিসবে দেওয়া হয় এই দিন।

নেপালঃ বৈশাখ(এপ্রিল) মাসে হয় “মাতা তীর্থে অনুসি ” বা “একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা”। এই উত্সবটি পালিত হয় অমাবস্যার সময় যার জন্য এটির নাম “মাতা তীর্থে অনুসি “। “মাতা” মানে মা, “তীর্থ” মানে তীর্থযাত্রা। উত্সবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত মাতা তীর্থে যাওয়া এই উত্সবের একটি অঙ্গ। এই তীর্থযাত্রাটি ঘিরে একটি কিংবদন্তি আছে। প্রাচীন কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মা দেবকী ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে বাড়ি ফিরতে ভীষণ দেরী করেন.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়ের অবর্তমানে খুবিই দুঃখিত হয়ে ওঠেন। উনি তখন মা কে খুঁজতে বেরিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজেন কিন্তু খুঁজে পান না। শেষে যখন তিনি “মাতা তীর্থ কুন্ড”- তে পৌঁছন তখন তিনি মা কে দেখতে পান পুকুরে স্নানরত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন মা কে খুঁজে পেয়ে এবং মা কে তিনি মায়ের অবর্তমানকালীন সব দুঃখের কথা বলেন। মা দেবকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন “আহা! তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক”। সেই থেকে এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত প্রাপ্তির এক দ্রষ্টব্য ও পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। এও কিংবদন্তি আছে যে এক পুন্যার্থী পুকুরের জলে নিজের মায়ের প্রতিকৃতি দেখে প্রায় জলে পরে মারাই যাছিলেন। এখনও সেখনে পুকুর ধারটিতে লোহার বেঁড়া দেওয়া আছে। পুজার্চনার পরে পুন্যার্থীরা সেখনে নৃত্য, গানের মাধ্যমে নিজেদের মনোরঞ্জন করে। কিংবদন্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখার অবকাশ নেই যেহেতু এগুলো প্রাচীন পুঁথির অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা সব।

থাইল্যান্ডঃ থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় থাইল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে।

রোমানিয়াঃ রোমানিয়া-তে দুধরনের আলাদা ছুটির দিন আছে: মা দিবস আর মহিলা দিবস।

ইউনাইটেড কিংডম এবং আয়ারল্যান্ডঃ ইউনাইটেড কিংডম ও আয়ারল্যান্ড-এ , ইস্টের সানডে(২৭শে মার্চ, ২০০৯)-র ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার মাদারিং সানডে পালিত হয়.খুব সম্ভবত ষোড়শ শতকের বছরে একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়ার খ্রিস্টীয় রেওয়াজ থেকেই এর উত্পত্তি. এর মূল তাত্পর্য হল যে মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হবেন.অনেক ঐতিহাসিক -এর মতে যুবতী শিক্ষানবিশ-দের এবং অন্য যুবতীদের তাদের মালিকরা কাজ থেকে অব্যহতি দিত তাদের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য। ধর্মনিরিপেক্ষিকরণের ফলে এখন এই দিনটি মূলত মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিন যদিও বহু গির্জা এটিকে এখনও সেই ঐত্তিহাসিক ভাবে দেখতেই পছন্দ করে যেখানে থাকে যিশু খ্রিস্ট -এর মা মেরি ও “মাদার চার্চ”-এর মত ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। মাদারিং সানডে সর্বাগ্রে পড়তে পারে ১লা মার্চ(যে বছরগুলিতে ইস্টের পরে ২২শে মার্চ) ও তারপর পড়তে পারে ৪ঠা এপ্রিল(যখন ইস্টের ২৫শে এপ্রিল পরে)।

ভিয়েতনামঃ ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় লে ভূ-লান এবং চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী সপ্তম মাসের পঞ্চদশ (পনেরো) দিনে এটি পালিত হয়। যাদের মায়েরা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানায় আর যাদের মায়েরা পরলোক গমন করেছেন তারা প্রার্থনা করে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করে।

মা দিবসের বাণিজ্যিকিকরণঃ
সরকারী মা দিবস পালনের ন’ বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাত্পর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন। মা দিবসের বানিজ্যিকরণ ও দিনটিকে বানিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বানিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করা কালীন এবং অবশেষে বলেন যে তিনি “ভাবেন যে এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হত কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের বাইরে… মা দিবস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিকভাবে সবথেকে সফলতম পরব. ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে রেস্টুরেন্টে ডিনার করার অন্যতম জনপ্রিয় দিন হল মা দিবস।

মাকে ভালোবাসা দিনে আবদ্ধ নয়ঃ
ফ্রেমে বন্দি একটি দিনে মাকে ভালোবাসা
তা নয় জেনো, মা যে আমার নিত্য কাঁদাহাসা
মা যে অনেক দূরে
সুদূর অচিনপুরে
অনুক্ষণ তাও মাকে যে পাই, মা-ই সকল আশা।
~~~
সূত্রঃ বাংলা উইকপিডিয়া

অপরাধীর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, অপরাধী ও ভুক্তভোগি জনগণ কি উপভোগ করবে ? ভুক্তভোগি কি এদেশের জনগণ নয় ? নাগরিক নয় ?

অপরাধীর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, অপরাধী ও ভুক্তভোগি।
জনগণ কি উপভোগ করবে ?
ভুক্ত ভোগি কি এদেশের জনগণ নয় ? নাগরীক নয়?

যাহারা ধর্ষকগংদের এরেস্ট করতে বিরত আছেন যাহারা টাকার ব্যাগ দিয়ে ধর্ষনকে সমর্থন করছেন চেপে যাওয়ার বাসনায় মন চনমন করছেন তাহাদিগের পরিবারের কোনো মাইয়া “বউ মেয়ে মা ” ধর্ষন হইলে কতোটা দ্রুত ধর্ষকগং এরেস্ট হইতেন বলে আপনি মনে করেন ?

মজার ব্যাপার হইল পুলিশ এখনো শনাক্ত করতে পারে নাই ধর্ষকরা কোথায় আছে !!!
আসলে মজাটা তখনই হইত যখন দেখতাম পুলিশ পরিবারের কেও ধর্ষন হইছে …

মজা দেখতাম আমিন জুয়েলার্স এর মাইয়া বউ ধর্ষন হইলে
মজা দেখতাম ওই এমপির মাইইয়া বউ ধর্ষন হইলে
মজা দেখতাম ওই ব্যবসায়ীর মাইইয়া বউ ধর্ষন হইলে।

(কোনধরণের বিপদে কেউ পড়ুক তা আমার কাম্য নয়)
তুলে ধরার জন্য ক্ষমা প্রার্থী

যাহারা অর্থের বিনিময়ে অপরাধীকে বাঁচানোর যুদ্ধে নামে তাহাড়া কতোটা উদ্গ্রীব হয়ে আসামীকে ধরার তোরজোর শুরু হতো। সেটাও দেখা যেতো।

প্রত্যেকটি অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিৎ। টাকার বিনিময়ে কোনো অপরাধের সাজা হবেনা সেটা হতে পারেনা। তাহলে আপনি বিচারের যোগ্যতা রাখেন না।

আইনের পোশাকের মর্যাদা রাখতে পারলেন না। আইন যদি ন্যার্য্যভাবে অপরাধের শাস্তি দিতে না পারে তাহলে সে আইন না মানাইই মহৎ কাজ হবে। বরং অপরাধীকে শাস্তি আপনি দিতে পারেন।

আপনি দুর্বল কিংবা ক্ষমতাসিন হোন সেটা বড় কথা নয়। আপনার সাথে অপরাধ হয়েছে আপনি অবশ্যই তাকে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার রাখেন।

যাহারা ভাবছেন অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন তাদের বিবেচনাবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবশ্যই কেউ একজন জেগে উঠবে আর যখন সেইই একজন জেগে উঠবে তখন চারপাশের কেও আর বসে থাকবে না। তৈরি হয়েই পথে নামবে। তখন আঁতাতকারী আর অপরাধী যেই হোক রক্ষা নাই।

অতএব আইনের লোক ও অপরাধী সাবধান।
সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি তাদের বিচারের আওতায় নিন।

বিচার পাবার অধিকার সবার আছে। আইনের সাহায্য পাবার অধিকার সবার আছে। জনগণের টাকায় ভাত খেয়ে জনগণের টাকায় পোশাক পড়ে জনগনের টাকায় পাওয়া ছাদের নীচে থেকে অপরাধীর সাথে হাত মিলিয়ে আঁতাত করা বন্ধ করুন।

মনে রাখবেন
যায় দিন ভালো আর আসে দিন খুবই খারাপ খুবই ভয়ঙ্করও হতে পারে।

কাজী আরিফ : আমাদের সময়ের অগ্রপথিক

হ্যাঁ, তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের অগ্রপথিক। কোথায় ছিলেন না তিনি! শিল্পে, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে। সমাজে, মননে, মনীষায়। তিনি জানিয়ে যেতেন, আমরা দাঁড়াতে চাই। দাঁড়াতে চাই কবিতায়। দাঁড়াতে চাই, একটি অগ্রসরমান প্রজন্মের হাত ধরে। কাজী অরিফের অনেক পরিচয় ছিল। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অস্ত্র হাতে।

পেশায় তিনি স্থপতি ছিলেন। আর নেশায়, আপাদমস্তক কাব্যপ্রেমিক। তিনি কবিতার মাঠে বিচরণ করতেন চব্বিশ ঘণ্টা। কাজী আরিফ আমাদের কৈশোরের নায়ক ছিলেন। রেডিও কিংবা টিভিতে তাঁর কণ্ঠ শুনলে আমরা চমকে উঠতাম। কী ভরাট উচ্চারণ! কী বর্ণিল তাঁর উপস্থাপনা।

সেই কাজী আরিফের সঙ্গে আমার ঢাকায় দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি। প্রথম দেখা হয়েছিল নিউইয়র্কে। ১৯৮৯ সালে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত আজকের ‘সাপ্তাহিক পরিচয়’ পত্রিকা তখন মাসিক হিসেবে বের হওয়া শুরু করেছে। এর সম্পাদক নাজমুল আহসান। আমি সেই কাগজের প্রধান প্রতিবেদক। নাজমুল ভাই-ই আমাকে কাজী আরিফের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। সেই দিন থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন আমার প্রিয় আরিফ ভাই।

আমি এই ‘পরিচয়’ পত্রিকাতেই তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। প্রচ্ছদে তা ছাপা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কাজী আরিফ, আবৃত্তি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

কাজী আরিফ ছিলেন একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তিনি হু হু করে হেসে কথা বলতেন। তিনিই জানিয়েছিলেন তার এই শিল্পবোধ সম্পন্ন শুরুর দিনগুলোর কথা। বলেছিলেন- ‘শুরুটা হয়েছিল এক মজার ঘটনা দিয়ে। ১৯৬৮ সালের দিকের কথা। একটা অনুষ্ঠানে উপস্থাপক আসেনি তাই আমাকে তুলে দেয়া হলো উপস্থাপনা করতে। আমি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতাম বলে তাদের ধারণা জন্মেছিল আমি উপস্থাপনা করতে পারব। হলোও তাই। তখন অনেকেই বলেছিল আমার কণ্ঠ আবৃত্তির কণ্ঠের মতো। কিন্তু ঠিক তখনই শুরু হলো না আবৃত্তিটা।

স্মৃতি আউড়িয়ে তিনি বলেছিলেন- ‘সেই ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। আমি তখন ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। এরপর যোগ দিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে আবার এসে ক্লাস শুরু করলাম বুয়েটে। মূলত তখনই প্রবলভাবে শুরু হয় আবৃত্তিটা।

১৯৭২ সালে আমি যখন বুয়েট হলে এসে উঠি তখন হল প্রায় ফাঁকা। অনেক কম ছাত্র ছিল। মারাত্মক নিঃসঙ্গতায় ভুগতাম আমি। নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য শুরু করলাম বইপড়া। প্রচুর পড়তাম। ওই বছরেই অংশ নিলাম বুয়েটের এক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়। চ্যাম্পিয়ন হলাম নজরুল, আধুনিক ও রবীন্দ্রনাথ তিন বিভাগের আবৃত্তিতেই। এরপর থেকে যেখানেই প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই অংশ নিতাম শুধুমাত্র পুরস্কার হিসেবে বই পাব বলে। এভাবেই আসলে আবৃত্তি শুরু।’

কাজী আরিফ ছিলেন, কাজী সব্যসাচীর সরাসরি ছাত্র। কিভাবে দীক্ষা পেলেন গুরুর থেকে? জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন- ‘সে অনেক কথা। আমি আসলে ওনাকে খুঁজতে থাকি ১৯৭২ সাল থেকেই, পাই ১৯৭৩ সালে। অনেক কষ্টে অনুমতি পাই কথা বলার। ওনাকে আবৃত্তি করে শোনালাম। ব্যস, সে থেকেই শুরু হৃদয়ের সেতুবন্ধন। তারপর তিনি নিজেই মাঝে মাঝে যেতে বলতেন আমাকে। আমি নিয়ম করে চলে যেতাম নজরুল ভবনে। গুরুর সামনে আবৃত্তি করতাম কবিতা। ভুল হলে তিনি শুধরে দিতেন। এভাবেই শেখা ওনার থেকে।’

কাজী আরিফ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি পেয়েছিলেন সেই ‘কাজী সব্যসাচী পুরস্কার’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠপুত্র আবৃত্তিশিল্পী প্রয়াত কাজী সব্যসাচী। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম পথপ্রদর্শক, প্রবাদপ্রতিম এ শিল্পীর ৩৭তম প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ‘কাজী সব্যসাচী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬’ প্রবর্তন করে কাজী সব্যসাচী পরিবার। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে এ পুরস্কার প্রদান করা হয় বাংলা ভাষার দুই খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শিল্পী কাজী আরিফকে। মনে পড়ছে, এই পুরস্কারটি পেয়েই তিনি নিউইয়র্কে ছুটে এসেছিলেন চিকিৎসার প্রয়োজনে। তারপর ফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন তাঁর আনন্দের কথা। বলেছিলেন- ‘এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি ইলিয়াস। কারণ আমি সরাসরি সব্যসাচীর ছাত্র। পুলকিত হয়েছিলাম আমরা সবাই।

নিউইয়র্কের ‘বহুবচন’ নামে একটি সাহিত্যআড্ডার আয়োজন করেন নাট্যজন মুজিব বিন হক ও কবি শামস আল মমীন। সেই আয়োজনের সবগুলোতেই উপস্থিত থাকতেন তিনি, উত্তর আমেরিকায় এলেই। আমার পরম সৌভাগ্য, ‘বহুবচন’-এর অনুষ্ঠানে তিনি আমার লেখা কবিতা আবৃত্তি করে আমাকে চমকে দিয়েছিলেন। চিরকৃতজ্ঞ করে রেখেছিলেন আমাকে। তাঁর সঙ্গে আবৃত্তিশিল্প নিয়ে প্রায়ই আমার কথা হতো। হতাশা ব্যক্ত করতেন। বলতেন- ‘আবৃত্তির ভবিষ্যৎ দৃশ্যত অন্ধকার। কারণ, যে বা যারা আবৃত্তি করছে তাদেরটা ঠিকঠাক আবৃত্তি হয়ে উঠছে না। তাই, শ্রোতাপ্রিয়তা হারাচ্ছে।’ তাঁর এই অনুযোগ আজকের আবৃত্তিশিল্পীদের বিবেচনায় নেয়া দরকারি বলেই মনে করি।

গত বছর নিউইয়র্কে সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘ঘুংঘুর’-এর সম্পাদক কবি হুমায়ুন কবিরের কবিতা নিয়ে একক কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান করেছিলেন কাজী আরিফ। সেখানেই চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম। বলছিলাম- ‘আরিফ ভাই চলুন একটা গ্রুপ ছবি তুলি!’ তিনি খিল খিল করে হেসে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- ‘হঠাৎ ছবির এত গুরুত্ব কেন ইলিয়াস! কি তুমি আমাকে নিয়ে অবিচুয়ারি লিখবা?’ আমিও হেসে দিয়েছিলাম উচ্চৈঃস্বরে। বলেছিলাম- ‘উই নিড ইউ এনাদার হানপ্রেড ইয়ারস, ইয়াংম্যান! তিনি আবারো হেসে বলেছিলেন- কয় কি? আমারে একশ বছর বাঁচায়ে রাখতে চায়! এক বছরও তো যাবে না! হ্যাঁ সেটাই তো হয়ে গেল প্রিয় আরিফ ভাই! এক বছরও পার হলো না! এভাবে বলে কয়ে চলে গেলেন আপনি! চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে আসার পরও বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক হত্যার প্রতিবাদে প্রবাসীদের মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে মৌলবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বারবার। আমাকে বলেছিলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটলেই মৌলবাদ নিপাত যাবে।

১৯৭১ সালে ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন কাজী আরিফ। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে লেখাপড়া শুরু করেন আর সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি।

বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্পের অন্যতম রূপকার ছিলেন কাজী আরিফ। তিনি মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে।

কর্মজীবনেও তিনি ছিলেন বীর। তাঁর স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ডেক্সট্রাস কলসালটেন্স লিমিটেড থেকে করা স্থাপত্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনাল, বিমান ভবন, ডেইলি স্টার ভবন, বিজিএমইএ ভবন, ইনডোর স্টেডিয়াম, গলফ ক্লাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-লাইব্রেরি।

তাঁর শবদেহের পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যারা আবৃত্তিকে জনপ্রিয় করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাজী আরিফ, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। একটি প্রতিক‚ল সময়ে তিনি আবৃত্তিচর্চা শুরু করেছিলেন। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তিনি আবৃত্তিকে এক অন্য শিখরে তুলে দিয়ে গেলেন।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেছেন, সত্তর দশকের শেষ দিকে আরিফ আবৃত্তির সঙ্গে আর আমি নাটকের সঙ্গে যুক্ত হই। এভাবে আমাদের বন্ধুত্বের শুরু। আশির দশকে যখন আমরা আন্দোলন করি, তখন যে কবিতা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে তা আমরা আরিফের কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারি। আশির দশকে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধ্বনি-তরঙ্গে যে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত করেছিলেন, সেই শহীদ মিনারেই রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধায় ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষযাত্রায় চলে গেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের এই অগ্রসেনা। দেশের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাওয়া কাজী আরিফকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদক দেয়ার বিষয়টি ‘বিবেচনায়’ রাখবেন বলে জানিয়েছেন আমাদের সংস্কৃতিমন্ত্রী। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এমন ‘বিবেচনা’র আর কত জীবন অপেক্ষা করবেন আমাদের গুণীজন। না, কাজী আরিফ তাঁর জীবদ্দশায় সঠিক মূল্যায়ন পাননি। কেন পাননি? তা আমাদের ভাবতে হবে।

আমি প্রস্তাব করি, বাংলা একাডেমিতে কাজী আরিফের নামে একটি ভবনের নামকরণ করা হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবৃত্তি বিষয়ে কোনো ইনস্টিটিউট যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে তা যেন কাজী আরিফের নামে করার কথা সুবিবেচনায় রাখা হয়। আমরা আমাদের আলো হারাচ্ছি। আমরা মানুষগুলোকে হারাচ্ছি। হে রাষ্ট্র, তুমি তোমার যোগ্য সন্তানদের যথার্থ সম্মান আর কবে করতে শিখবে? আর কত অপেক্ষা করব আমরা? আরিফ ভাই, আপনার আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক।

_____________________________
নিউইয়র্ক থেকে ফকির ইলিয়াস : কবি, লেখক।
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। ৬ মে ২০১৭ শনিবার।

রাজনীতির নখর, মানুষের উপলব্ধি

বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্বার্থের খেলাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার যে রেওয়াজটি ছিল- তা অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন। অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন, এই দেশে ১৯৫২, ’৬৯, ’৭০, ’৭১ সাধিত হয়েছিল। অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন, বাঙালি জাতির উজ্জ্বল গৌরবের কথা। এর কারণ কী? কারণ একটাই যে কোনোভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা। এই ক্ষমতা এখন মানুষের জন্য আর থাকছে না। হয়ে যাচ্ছে, কেবলই দলের। কেবলই নিজেদের। আর এর জন্য যা যা বলা দরকার- সেটাই বলছেন রাজনীতিকরা।

ভারতের অস্ত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘যারা নিজেরাই অস্ত্র আমদানি করে তাদের কাছ থেকে আবার অন্য দেশে রপ্তানি করা, সেটা কী করে আশা করেন? কারণ ভারত তো নিজেরা অস্ত্র তৈরি করতে পারে না এবং তাদের অস্ত্র সেরকম উন্নত ও মানসম্পন্ন নয়।’ খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী চীনের যেসব অস্ত্রশস্ত্র আছে, সেগুলোতে অভ্যস্ত। তারা আগে থেকে সেগুলো ব্যবহার করছে। আমরা যখন সমঝোতা করেছি, আগে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা করেছি। আর আমরা কোনো পুরনো জিনিস নয়, আধুনিক অস্ত্র নিয়েছি। চীন তো শুধু বাংলাদেশ নয়, বহু দেশে তার অস্ত্র রপ্তানি করে।’ প্রতিরক্ষায় অন্য সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে, তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন।’

ভারত বিষয়ে খালেদা জিয়ার মনোভাব এই দেশের মানুষ ভালো করেই জানেন, বুঝেন। ভারতবিরোধী ইস্যু সম্বল করেই প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জন্ম দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে যে মহড়া চলছে- তা হলো, মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা। রাজনৈতিক প্রতারণা করা। ১৯৭১ সালে যে দেশটি সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল, এখন এর সংখ্যা সতেরো কোটি, বলা হচ্ছে। মানুষের আয় বেড়েছে। এই সুবাদে মানুষকে এক ধরনের শিকল পরিয়ে রাখার প্রবণতাও বেড়েছে বহুগুণ। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কৌশল যে অব্যাহত রাখছে না, তা আমি বলছি না। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এখন শুধু কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে-ই-হাদিসকে, স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি দেয়া হবে। সরকারের কোনো প্রতিনিধি ছাড়াই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলোর করা কমিটির অধীনে পরীক্ষা নিয়ে এই সনদ দেয়া হবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলোর চাওয়া অনুযায়ী এই প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের শেষদিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষ গঠন করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি রাখার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য আইনের খসড়া অর্থ, জনপ্রশাসন ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন শেষে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়। কিন্তু খসড়াটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। মূলত মাদ্রাসাগুলোর সবাই একমত না হওয়ায় এবং রাজনৈতিক কারণে তা পিছিয়ে যায়। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। বেশির ভাগ মাদ্রাসাই মফস্বল এলাকায় অবস্থিত। লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও এর আগে কোনো সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার মূলত জামায়াতের বিপক্ষে একটি প্যারালাল শক্তি তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু কথা হচ্ছে- এই শক্তি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিত্রশক্তি হয়ে থাকবে কিনা!

মূর্তি কিংবা ভাস্কর্য ভাঙার কথা কারা বলছে এই বাংলাদেশে? আমরা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখব, বিশ্বে অনেকগুলো ভাস্কর্য ভেঙেছে আইসিস। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ৬০০ সালের মধ্যে প্রাচীন পৃথিবীর একটি বিশাল অংশ ছিল অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অধীনে। গোটা মধ্যপ্রাচ্য ছিল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। আজকের ইরাকের উত্তরাংশে নির্মিত বিভিন্ন শহর বিভিন্ন সময়ে ছিল এই সাম্রাজ্যের রাজধানী। সম্রাট সেনাশেরিবের আমলে নিনেভাহ ছিল তেমনই এক রাজধানী। খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ সালে পরিত্যক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত ৫০ বছর ধরে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর। পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে এই শহরের ধ্বংসাবশেষের নমুনা সংরক্ষিত আছে। এটি আইসিসের দখলে আসে ২০১৪ সালে। এরপর এখানে অবস্থিত অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় তারা। শহরের প্রাচীন প্রবেশদ্বারে অবস্থিত বিশাল মূর্তি বৈদ্যুতিক ড্রিল মেশিন ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার দৃশ্য দেখা যায় আইসিসের প্রকাশিত ভিডিওতে। নিনেভা শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল ইউনুস নবীর মসজিদ। মসুলের সবচেয়ে ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর একটি ছিল এটি। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আইসিস বাহিনী মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয়। গোটা ইরাকজুড়ে আইসিস আরো গুঁড়িয়ে দেয় আল-কুব্বা হুসেইনিয়া মসজিদ, অটোমান আমলের হামু কাদো মসজিদ, জাওয়াদ হুসেইনিয়া মসজিদ, আল আরবাইন মসজিদ, খুদর মসজিদ।

ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠা এক শহর ছিল দুরা-ইউরোপোস। এই শহরের অমূল্য সম্পদগুলোর কারণে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে লুটতরাজ হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আইসিস বাহিনী এখানকার প্রাচীন নিদর্শনগুলো লুট করে বিক্রি করে দেয় তাদের যুদ্ধের ফান্ডের অর্থের জন্য। রোমের বিরুদ্ধে পালমিরার বিদ্রোহের পর ২৭৩ সালে রোমান সম্রাট অরেলিয়ান এই শহর ধ্বংস করে ফেলেছিল। পরবর্তী সময়ে সম্রাট ডায়োক্লেটিয়ান এটি আবার নির্মাণ করেন, তবে একটু ছোট আকারে। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে পালমিরার অধিবাসীরা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়। এরপর পঞ্চম শতাব্দী থেকে প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যে তারা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। সে সময় শহরে প্রচলিত পালমিরিয়ান ও গ্রিক ভাষার বদলে শুরু হয় আরবি ভাষার প্রচলন। ১৪০০ সালে এসে আবার ধ্বংসের শিকার হয় পালমিরা, এবারে তৈমুর লংয়ের বাহিনীর হাতে। সেই ধ্বংসযজ্ঞের পর এটি পরিণত হয় একটি ছোট গ্রামে। অবশেষে ১৯৩২ সালে শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়, এর অধিবাসীরা সরে যায় অন্যত্র। দীর্ঘ আট দশক পর আধুনিক যুগের আরেক বর্বর বাহিনীর হাতে পড়ল পালমিরা। ইউনেস্কো ঘোষিত এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি ২০১৫ সালে দখলে নেয় আইসিস।

পাঠক, এসব ঘটনাগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী? এমন কি কোনো অশুভ শক্তি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে? বাংলাদেশে এক শ্রেণির রাজনীতিক আছেন- যারা মুখে বলেন তারা মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেন না। তারা বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক। কিন্তু আমরা দেখি, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রকারান্তরে এসব মৌলবাদী কালো শক্তিকেই মদদ দেন। যেমনটি দেয়া হয়েছিল, বাংলাভাই, শায়খ রহমান, মুফতি হান্নানকে। এরা ক্ষমতার জন্য সবই পারে। তারা এই কাজে সিদ্ধহস্ত। তা এই ২০১৭ সালেও দেখাচ্ছে তারা। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের দিকে তাকাতে পারি। সংবিধান বলছে-

* বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন

জাতীয় সংস্কৃতি-

* রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন

ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-

* ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,

(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,

(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,

(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।

আমাদের আজ বাস্তবতার দিকে তাকাতে হবে। সরকার শান্তি চাইছে। নীতিনির্ধারকরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নীতি প্রণয়ন করছেন। কিন্তু আমাদের সমসাময়িক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। প্রজন্মকে জানাতে হবে সত্য ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। রাজনীতি যদি নখর দেখায়, তখন মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষের উপলব্ধিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বীজ সমুন্নত রাখতে চাইলে সেই আলোকেই রাষ্ট্রকে শিরদাঁড়া উঁচু করে স্থির থাকতে হবে। কৌশল গ্রহণ ভালো। তবে তা যেন মেরুদণ্ডকে বাঁকা না করে।

___________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৭

উৎসবের অর্থনীতি ও প্রজন্মের আগ্রহ

বাঙালি জাতি আরেকটি বাংলা নববর্ষকে আমন্ত্রণ জানালো। উদযাপন করলো নতুনের আবাহন। দেশে বিদেশে বাংলা নববর্ষ বরণ দিনে দিনে নবরূপ পাচ্ছে। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক। আমার কাছে মনে হয়েছে, বাঙালি নিজ সংস্কৃতির দিকে ফিরছে। শিকড়ের সন্ধানে এগিয়ে যাচ্ছে প্রজন্ম।

খবর বেরিয়েছে, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে বৈশাখের শাড়ি তৈরির ধুম লেগেছিল। হাজার-হাজার তাঁতি এখন নানা রংয়ের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনরাত খটখট আওয়াজে মুখরিত ছিল জেলার এনায়েতপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজিপুর ও সয়দাবাদের তাঁতপল্লিগুলো।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী, বৈশাখী শাড়ির নকশা না থাকলেই নয়। তাই ছোট-বড় সবার মন ভরাতে তৈরি করা হয়েছে ডুগডুগি, তবলা, হাতপাখা ও ঘুড়ির আলপনাসহ নানান প্রতীক সম্বলিত নকশার শাড়ি। বাহারি ডিজাইন ও উন্নত সুতার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সিরাজগঞ্জের শাড়ির ছিল ব্যাপক চাহিদা। এখানে প্রতিদিনই এসব শাড়ি কিনতে তাঁতিবাড়িতে ভিড় করেছেন ব্যাপারীরা। বৈশাখ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জে অন্তত ১০ কোটি টাকার শাড়ি বেচাকেনা হবে বলে ধারণা ছিল তাঁতিদের।

এবারের বৈশাখ বরণ উপলক্ষে উৎসব বাণিজ্যও ছিল অনেক জমজমাট। পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্রেতারা ব্যস্ত ছিলেন বৈশাখী কেনাকাটায়। বৈশাখ বরণে ঢাকায় ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ব্যবসায়ীরা এবার বিচিত্রিতা এনেছেন তাদের কালেকশনেও। এবারের নববর্ষ উপলক্ষে আড়ং-এ গরমে পরার জন্য আরামদায়ক সুতি কাপড়ের সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। পোশাকে লাল-সাদার পাশাপাশি উজ্জ্বল রং যেমন হলুদ, কমলা, মেরুন ও নীল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া স্লিম ফিটের সুতির পাঞ্জাবিতে এপ্লিকের কাজ, এ্যামব্রয়ডারি, মাল্টি কালার প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আর শাড়িতে এ্যামব্রয়ডারি, টাই ডাই এপ্লিকের কাজ রয়েছে। শাড়িগুলোর আঁচলে ঝুল ও বিভিন্ন আলপনা প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ছিল রঙিন জামদানি ও হাফ সিল্কের চেক শাড়িও। মেয়েদের কামিজে এ্যামব্রয়ডারি ও টাই ডাই, ফুলেল প্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। বৈশাখের সাজের সঙ্গে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য আড়ংয়ে আরো আনা হয়েছিল বিভিন্ন নকশার ব্যাগ, গহনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী।

বিষয়গুলো সমাজের জন্য খুবই দরকারি। কারণ বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি বেশ একটা কঠিন সময় পার করছে আমাদের সামাজিক বিবর্তনের প্রয়োজনে। খুবই আনন্দের কথা, বিদেশেও বৈশাখ বরণ উৎসবটি অত্যন্ত মর্যাদা পেয়েছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। নিউ ইয়র্কে তিনদিনব্যাপী বৈশাখ বরণ উৎসব পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।

‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৪’কে বরণের সবচেয়ে বড় উৎসবটি হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বেলাজিনো পার্কিং লটসহ সুপরিসর মিলনায়তনে। এ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল তথা পহেলা বৈশাখ জ্যাকসন হাইটসে বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে বাঙালি নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ঢল নেমেছিল। আর উচ্ছল জনতার এই সরব উপস্থিতির স্পষ্ট ঘটে ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে বৈশাখী র‌্যালির মধ্য দিয়ে। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানে র‌্যালি এগিয়ে যায় বেলাজিনো পার্কে। এক পর্যায়ে পার্কসহ পুরো মিলনায়তন বাঙালির প্রাণে প্রাণে ভরে উঠে। এরপরই মূল মঞ্চে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এই ‘বৈশাখী উৎসব’র উদ্বোধন ঘোষণা করে হোস্ট সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্ক’’।

ড্রামা সার্কেল নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে বৈশাখ বরণের বর্ণাঢ্য উৎসব হয় কুইন্স প্যালেসে। এখানে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। গত দেড় দশকের মতো এই সংগঠনের বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানে এবারও পান্তা ইলিশ পরিবেশিত হয়। সঙ্গীতে অংশ নেন প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা। এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত প্রবাসের কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও বাঙালি সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে প্রবাসীদের নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে এই নিউ ইয়র্কেও বড় ধরনের মঙ্গল শোভাযাত্রা হতে পারে।’ ‘গেলো বছরের গ্লানি মুছে, সকল অশুভ শক্তি পর্যুদস্ত করে মঙ্গলের পথে সকলে এগিয়ে যাই- এই হউক নতুন বছরের প্রত্যাশা’; বলেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মান্নান।

শুধু বাঙালি প্রজন্মই নয়- প্রচুর বিদেশিও বৈশাখী পোশাক পরে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন র‌্যালি-সমাবেশে। বিদেশিদের মাঝে আমাদের পাঞ্জাবি-শাড়ির যে চাহিদা বাড়ছে, তাও ছিল চোখে পড়ার মতো। নিউ ইয়র্কের ভারতীয়-বাংলাদেশি কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দোকানিরা ভালো ব্যবসা করেছেন, জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

সাধারণত আমি বাংলাদেশের জাতীয় কিছু ছুটি ও উৎসবের সময় লম্বা ভ্যাকেশন কাটাই। বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ, দুই ঈদ উৎসব আমি পরিবারকে সাথে নিয়েই কাটাই। এবারের পয়লা বৈশাখেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু এবার আমার নতুন কিছু অভিজ্ঞতা হলো। তা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।

বৈশাখ বরণের একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে দুপুরের আড্ডায় গিয়েছিলাম। দেখলাম সেখানেও দুটি পক্ষ। একজন বলেই ফেললেন- ‘দেখুন, বৈশাখ বরণ আমাদের ঈদের চেয়েও বেশি ঘটা করে পালিত হচ্ছে।’ আমি পাল্টা জবাব দিলাম। বললাম, ঈদ একটি গোষ্ঠীর উৎসব। কিন্তু বাংলা নববর্ষ সকলের। সকল ধর্মের মানুষের, বাংলাদেশের। শুরু হয়ে গেল সেই পুরোনো কাসুন্দি। ‘মুসলামান’ আগে না ‘মানুষ’ আগে। আমি সাধারণত এসব বিষয়ে দীর্ঘ তর্ক করি না। কিন্তু সেদিন আর মুখ চেপে রাখতে পারলাম না। বেশ উচ্চস্বরেই কথা বললাম। কিন্তু মৌলাবাদ যাদের মগজ ধোলাই করে ছেড়ে দেয় তাদের বোঝানো বড় কঠিন কাজ। উত্তর আমেরিকায়ও এই মৌলবাদী শক্তিটি কম তৎপর নয়। তারা ঢুকে পড়েছে মসজিদে মসজিদে। বৈশাখ উৎসব আমাদের নয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের এমন অনেক কথা তারা বলে বেড়াচ্ছে। ‘মঙ্গল’ শব্দটিই কি তবে তারা নাজায়েজ ঘোষণা করবে?

আমরা এতদিন জেনে এসেছি- বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান কোনো ধর্ম বা বর্ণের বিশেষ অনুষ্ঠান নয়। আবহমান কাল ধরে এটি বাঙালি সর্বজনীন জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাঙালির চিরকল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুল ভ্রান্তি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে গিয়ে বাঙালি নতুন বছরের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় পালন করে থাকে নববর্ষ। উৎসবের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে তাই রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ। সেদিন সে সব মানুষের সঙ্গে একত্র হয়ে বৃহৎ সেদিন সেসব মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে মহৎ’।

রবীন্দ্রনাথ ১৩০৯ সালে শান্তিনিকেতনে প্রথম বাংলা নববর্ষের উৎসব পালন করেন। রবীন্দ্রনাথের বর্ষবরণের উদ্যোগ বাঙালির মানসপটে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে তার শেকড়ের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বাঙালির মনোজগতে চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালি সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে বিশাল স্থান জুড়ে রয়েছে নববর্ষের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। এসব আচার-অনুষ্ঠান বাঙালির হৃদয়ে আনন্দ ধারা সৃষ্টি করে।

অবাক হওয়ার কিছু নেই, একটি শ্রেণি এই রবীন্দ্রনাথকেই বিতর্কিত করতে চেয়েছে শুধু তার ধর্মীয় পরিচয়কে হাতিয়ার করে। ১৯৪৭ পরবর্তী সময় থেকেই মনেপ্রাণে ও আচার আচরণে একটি শ্রেণি কখনোই বাঙালি হতে পারেনি। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কোনো উৎসব বলে মনে করেন না। এরা একুশের অহঙ্কারকে অস্বীকার করে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকারের সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এরাই তো রাজাকারের, বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা ভুলে যাইনি, এই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। এরা বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয় কায়দায় অন্ধকারের অচলায়তনে আবদ্ধ করতে চায়। দেশে-বিদেশে এদের চ্যালা চামুণ্ডারাই বাঙালি জাতির ঐতিহ্যকে অস্বীকারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এবারে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা যাবে না- এমন হুমকি বাংলাদেশে কেউ কেউ দিয়েছিল। তারা তা ঠেকাতে পারেনি। কারণ বাঙালি জাতি, এই প্রজন্ম তার শিকড়ের সন্ধানেই ফিরছে। প্রত্যেকটি উৎসবের পেছনে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক সাপোর্ট খুবই জরুরি।

বাংলাদেশে এই কাজটি হচ্ছে। যা খুবই আশাজাগানিয়া। আমরা পাশ্চাত্যের দিকে তাকালে দেখবো, ভ্যালেন্টাইনস ডে, ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, ইস্টার ডে, গুড ফ্রাইডে, এমনকি ক্রিসমাসেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। আর ব্যবসার আমেজই হয়ে উঠে উৎসবের প্রাণ। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজাও বাঙালির ‘অর্থনীতির উৎসবে’ পরিণত হয়েছে অনেক আদিকাল থেকে। বৈশাখ বরণ আগে তেমনটি ছিল না। গেলো ১৫ বছরে তা নবরূপে এসেছে। রমনার বটমূলের মূর্ছনা এখন ছড়িয়ে পড়েছে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টরোন্টো, টোকিও, মস্কো, সিডনি, প্যারিস, রোম, দুবাই, জেদ্দা, প্রভৃতি শহরে। এই সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ বাড়তেই থাকবে। তা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলা সাহিত্য সভ্যতার ইতিহাস হাজার বছরের। যারা বিদেশে ইংরেজিতে কথা বলে, সেই প্রজন্মও বাংলা নববর্ষকে বরণে র‌্যালিতে নামছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বড় বিজয় আর কী হতে পারে।

___________________________________
দৈনিক খোলাকাগজ। ঢাকা। ২৩ এপ্রিল ২০১৭ রোববার।