বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

প্রবাসীদের হেয় প্রতিপন্ন করার আগে

আমরা ইদানীং একটি ট্রেন্ড লক্ষ করছি। কেউ কেউ প্রবাসীদের নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করছেন। তারা প্রবাসীদের শ্রেণিবিভাগও করছেন। তারা বলছেন- যারা আর কোনোদিন দেশে ফিরে যাবে না, এরা দেশের শত্রু। এরা বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। এরা ভোগবাদী। এমন অনেক কথা।
আমি এ বিষয় নিয়ে লিখতে চাইনি। কারণ আমি যে নগরে থাকি, এখানে অনেক মানুষ অনেকভাবে নিজেদের দিকে দৃষ্টি ফেরাবার চেষ্টা করে। এমনকি কেউ কেউ দিগম্বর হয়েও মানুষের নজর কাড়তে চায়। কিন্তু মানুষের কি তাতে নজর দেওয়া উচিৎ? না উচিৎ নয়। কারণ এদের কাজই হলো- অন্য কাউকে কারণে অকারণে হেনস্থা করা। এদের এ ফাঁদে মানুষ পা দেবে কেন?

বিদেশে আমরা যারা থাকি, মাঝে-মাঝেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকি। এ সব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে অতিথি নিয়ে আসা হয়। অনেকেই এতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বিদেশে, প্রবাসীদের অর্থে আকাশে ওড়া, হোটেল, খাওয়া, নগদ- ইত্যাদি কে না পেতে ভালোবাসে! আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে অনেক সময় আমার কাছে অনেকের নাম প্রস্তাব আসে। আমি কারো নাম কখনো এপ্রুভ করেছি। কখনো প্রত্যাখান করেছি। আমি কিছু ‘ধাউড় লেখক-কবি’কে জানি, যারা অভিবাসী বাঙালির এমন সম্মান পাওয়ার উপযুক্ত নন। কেন নন তা আমরা ক্রমশ দেখছি।

কেউ কেউ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আয় নিয়ে প্রায়ই বুলি আওড়ান। তারা রাজস্ব বোর্ডের অংশিক হিসাবও দেখান। এ গুলো সবই তাদের মতলববাজি। প্রবাসীদের হেয় করার একটি কায়দা মাত্র। এ সব কায়দাবাজদের চিহ্নিত করা দরকার। এদের তালিকা করে রাখা দরকার।

প্রবাসীরা কী করছেন বাংলাদেশের জন্য? তা কি বারবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে? আমি ব্যক্তিগতভাবে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার ধন্যবাদ দিই। তিনি যতবারই প্রবাসীদের সমাবেশে কথা বলেন, তিনি আহ্বান করেন- ‘আপনারা দেশে এসে কোনো অসুবিধায় পড়লে আমাকে জানাবেন। শেষ বয়সে হলেও আপনারা বাংলাদেশে সময় কাটাবেন, আমি এ প্রত্যাশা করি’।

প্রধানমন্ত্রীর নিজ সন্তানেরা বিদেশে থাকেন। আরেকজন রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানও বিদেশে থাকেন। এ তালিকা চাইলে আরো দীর্ঘ করতে পারি। যা বাংলা ভাষাভাষী সকলেই জানেন। এ বছরের শুরুর ডাটা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন (তিন হাজার ১০০ কোটি) ডলারে, যাতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানই বেশি।

২০০৮ সালের পর ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী বিদেশে গেছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে গত বছর দেশের বাইরে গেছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ কর্মী। পুরনো শ্রমবাজার খোলার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারেও লোক পাঠানো শুরু হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীকর্মী যাওয়ার হারও বাড়ছে। শুধু অদক্ষ কর্মীই নয়, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্স থেকে শুরু করে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির হার বাড়ছে।

সারা দেশে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে নির্মাণ করা হচ্ছে অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ উন্নত দেশেও কর্মী পাঠানো শুরু হচ্ছে। নতুন কয়েকটি শ্রমবাজারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। কোটি প্রবাসীর পাঠানো টাকায় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানিতে গত আট বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সাত লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন শ্রমিক গেছেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ওমানে, এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৮ জন। ওমানের পরই সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে গেছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৪৫০ জন। কাতারে গেছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৬৩৭ জন। এর পরই বাহরাইনে ৭১ হাজার ৭৪০ জন, সিঙ্গাপুরে ৫৪ হাজার ও কুয়েতে গেছেন ৩৮ হাজার ৬৮২ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। এ ভাবে ১৬২টি দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। শুধু সৌদি আরবেই বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন ২৬ লাখের বেশি। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সে সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।
এ সব হলো বর্তমানের চিত্র। আর অদূর অতীতে? বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্মেরও আগে থেকে এ ভূখণ্ডটির জন্য প্রবাসীদের অবদানের শুরু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা লড়তে লন্ডন থেকে ব্রিটিশ আইনজীবী পাঠান প্রবাসীরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে অর্থ-অস্ত্র জোগানের পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায়ে প্রবাসীদের ভূমিকা ইতিহাস পড়লেই জানা যাবে।

সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রটির বৈদেশিক রিজার্ভ গঠন এবং জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের সূচনাটিও প্রবাসীদের অবদান। বিগত কয়েক দশক ধরে অব্যাহত বিদেশি মুদ্রা পাঠিয়ে দেশটির অর্থনীতির চাকাও সচল রাখছেন এ প্রবাসীরাই।

তাহলে কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভের শিকার কেন হবেন এ প্রবাসীরা? এমন নিমকহারামরা চোখে কি ছাই দিয়ে হাঁটছে? খুঁজলে দেখা যাবে, এদের ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউও বিদেশে থাকে। আরো খুঁজলে দেখা যাবে, বিদেশে পড়তে গিয়ে এদের ছেলে-মেয়েরা সেই প্রবীণ প্রবাসীদের আনুকূল্য চেয়েছে এবং পেয়েছে। তাহলে অভিবাসী বাঙালীকে হেয় করা কি আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে না?

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আমাদের অর্থনীতিকে সব সময় জোরদার ও সমৃদ্ধ করে আসছেন। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবাসীরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন। প্রায় ১ কোটি প্রবাসী দেশের ৩-৪ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহসহ জীবন-মানের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। প্রতিটি গ্রামেই যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। হয়তো সব জায়গায় রাস্তাঘাট ভালো নয়। তবে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন গ্রামে আর ঝুপড়ি ঘর দেখা যায় না। প্রতিটি ঘরই এখন সিআই সিটে নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এর পেছনে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদান এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেশী ভারত বিশ্বের প্রধান রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ। এরপরই রয়েছে চীন। রেমিট্যান্স আয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মতো প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ চিন্তায় যখন এগোচ্ছে বাংলাদেশ তখনই একটি চক্র প্রবাসীদের কটাক্ষ করছে। এটা খুবই দুঃখ ও লজ্জাজনক ব্যাপার।

বিদেশের বিভিন্ন দেশে বাংলা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে প্রজন্মকে। একটি উদাহরণ দিই। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরেও মনের অজান্তেই মুখে চলে আসে মায়ের ভাষা। নিশীথ সূর্যের দেশে জাপানে প্রবাসী বাঙালিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম, অর্থাৎ শিশুরাও বাঙলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠছে পারিবারিক এবং সামাজিক প্রচেষ্টায়।
জীবনের প্রয়োজনে প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি পাড়ি জমান এই দ্বীপরাষ্ট্রে। জাপান প্রবাসীদের অনেকেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ঐ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে। আবার পুরোদস্তুর বাঙালি পরিবারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, বরং তুলনামূলক বেশিই বলা চলে। তাদের ঘর আলোকিত করা সন্তানরাই আজ দ্বিতীয় বাঙালি প্রজন্ম। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও এ দ্বিতীয় প্রজন্ম বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে জাপানে। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও নিজ সন্তানকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। সংস্কৃতিমনা অভিভাবকদের মধ্যেই এ প্রচেষ্টা বেশি। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের বাংলা পড়া এবং লেখার অভ্যাস করান তারা। সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন বাংলায়। জাপানে বাংলা ভাষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকে। এ চেষ্টা চলছে আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সেও।

বিদেশে কতজন কৃতি বাঙালি থাকেন- সেই হিসাব না-ই দিলাম। এরা বিদেশে থেকেও দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা কে না জানে, গ্লোবাল ভিলেজে বসে একটি দেশের জন্য অনেক কিছুই করা যায়। আর বাংলাদেশের বিষয়ে অনেককিছুই বিদেশের বিভিন্ন ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়- তা তো নতুন করে বলার দরকার নাই।

তারপরেও যারা প্রবাসীদের প্রতি আঙুল তুলে, প্রবাসীদের এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশের মানুষকেও। আমি সকল অভিবাসী বাঙালিকে সবিনয় অনুরোধ করি, এমন হীনম্মন্যদের প্রবাসীদের কোনো আয়োজনে আমন্ত্রণ জানাবেন না। এদের নিজ খরচে বিদেশে আনবেন না। এমনকি এমন চিহ্নিত কেউ যদি বিদেশে এসে প্রবাসীদের সভা-সমাবেশ-সিম্পোজিয়ামে হাজির হয়, এদের বর্জন করুন। তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন করুন।

__________________________________________
দৈনিক খোলাকাগজ। ঢাকা। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সোমবার প্রকাশিত।

রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, তাদের কোন শেখ মুজিব নাই

আসলে রোহিঙ্গা দের এই দুর্ভোগের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। ওরা শত শত বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করলেও নিজেদের মায়ানমার এর অধিবাসী করে দাঁড় করাতে পারেনি।

পারেনি তাদের মধ্যে একজন শেখ মুজিব হয়ে জন্ম নিতে। কিন্তু বছর বছর সন্তান জন্মদান আর পান চিবাতে ভুল করে নি। এক জন রোহিঙ্গাও নাই যে দাবী করতে পারে সে তার ধর্মের জন্য লড়ছে, অথচ তাদের মধ্যে ধর্মবাজ উগ্রভাব এর অভাব নাই। আইএস কিংবা মওদুদী চিন্তাধারার এক বিশাল জনগোষ্ঠী এই রোহিঙ্গারা।

কিন্তু বাংলাদেশ উদার মানসিকতার দেশ। যদিও অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান- কিন্তু বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছেন নিপীড়িত মানুষ হিসেবে। আর প্রতিবেশী হিসেবে সেটা বাংলাদেশের মানবিক দায়িত্ব।

তবে মায়ানমার সরকার তাদের জাতিগত নিধন এর দায় এড়াতে পারবেনা। রোহিঙ্গাদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও দেশান্তরি হতে বাধ্য করার অপরধে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সুতরাং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষনে প্রস্তাবিত পাচ দফা অনুযায়ী সু চি সরকার কে তার জনগনদের স্বদেশে ফেরত যাবার রাস্তা করে দিতে হবে।

অবশ্য আমাদের দেশে আজ যারা লোক দেখানো মায়া কান্নায় ব্যস্ত, তাদের অনেকেই চায় রোহিঙ্গা সমস্যা লেগে থাকুক। পারলে তাদের এদেশেই থাকতে দেয়া হোক-
এতে তাদের উপ্রি সুবিধা হয়, কারণ তাদের মতোই রোহিঙ্গারা উগ্র ধর্মান্ধ স্বভাবের। তা ছাড়া হত দরিদ্র এই জনগোষ্ঠীকে দিয়ে খুব সহজেই আইএস, জঙ্গীরা তাদের অপকর্ম করিয়ে নিতে পারবে।

অতএব, আমরা ভাবতেও চাই না যে
কোন ভাবে রোহিঙ্গা রা এই দেশে দীর্ঘ মেয়াদী বসবাস করছে বা করবে।

-দাউদুল ইসলাম


====\\=====

ঘুষের আরেক নাম স্প্রীট মানি !

সভ্যতার আদি থেকেই মানব সমাজে দূর্নীতির অস্তিত্ব ছিল; যা এখন আরও প্রকটভাবে বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সীমাহীন চাহিদা ও লোভ এবং সীমিত সাধ্যের মধ্যে থাকার যে সংঘাত, তা থেকেই দূর্নীতির উদ্ভব। বিভিন্ন প্রাচীন র্ধমগ্রন্থে দূর্নীতি বিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র কোরআন, বাইবলে, বেদসহ নানা র্ধমগ্রন্থে দূর্নীতির কুফল ও পরিণাম বিষদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ অত্র উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত দন্ডবিধিতেও দূর্নীতি মূলক অপরাধের শাস্তির বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দূর্নীতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। চানক্যের অর্থশাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতির বিশদ বিবরণ রয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের চেষ্টাও প্রাচীন। ১৮৬০ সনে প্রণীত দ-বিধিতে কতিপয় অপরাধমূলক কার্যকে দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে দ-ের বিধান আরোপ করা হয়। তবে এ দ-বিধি প্রচলিত হওয়ার পূর্বেও এ দেশে এ জাতীয় অপরাধের দ-ের বিধান ছিল। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দ-বিধি ১৮৬০ প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার আইনগত কাঠামো সৃষ্টি হয় ।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৪ সনে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণকর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সনে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ বলবৎ করা হয়। দুর্নীতি দমনে জারিকৃত এ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুলিশ বিভাগের ওপর। এতে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত না হওয়ায় দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে একটি পৃথক সরকারি দপ্তর তথা দুর্নীতি দমন ব্যুরো গঠনসহ অন্যান্য লক্ষ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন আইন, ১৯৫৭ বলবৎ করা হয়। প্রাথমিকভাবে অস্থ’ায়ী দপ্তর হিসেবে কাজ করলেও ১৯৬৭ সন থেকে একটি স্থায়ী দপ্তর হিসেবে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্বাধীনভাবে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করার আইনি সুযোগ ছিল না।
১৯৫৭ সনে দুর্নীতি দমনের নিমিত্তে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান তথা দূর্নীতি দমন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত আইনে কেবলমাত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি নিবারণ র্কাযক্রম পরিচালিত হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সকলের কাছেই এটি প্রতিবাদ হয় যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক যত কঠোর আইন-ই প্রণয়ন করা হোক না কেন; এর বিরুদ্ধে জনসচতেনতা বৃদ্ধি করা ব্যতীত এবং গণর্কমচারীদের ভিতরে দুর্নীতি বিরোধী মানসিকতা তৈরী ছাড়া দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এসকল বাস্তবতা অনুধাবন করেই দুর্নীতি দমনমূলক র্কাযক্রমরে পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক র্কাযক্রম পরিচালনাকে গুরুত্ব দেয়ার আবশ্যকতা দেখে দেয়। সময়ের সাথে সাথে র্দুনীতির প্রকার প্রকরণ পরিবর্তিত হওয়ায় এবং দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম সুসংহত করার জন্য ২০০৪ সালরে ২১ নভেম্বর হতে দুর্নীতি দমন কমশিন আইনরে মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন যাত্রা শুরু করে।
একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর জরিপে বাংলাদেশ একাধিকবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে দেশের সাধারণ মানুষ, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সনের ২১শে নভেম্বর “বাংলাদেশ ব্যুরো অব এন্টিকরাপশন” বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দুদক প্রতিষ্ঠার পর অর্থ ও মুদ্রা পাচার, ভূমি, ভূমি রাজস্ব ও ইজারা, ঘুষ (অর্থ, সম্পদ বা সেবা), অবৈধ উপায়ে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ অর্জন, নির্মাণ কাজ ও যোগাযোগ খাতে দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বেসরকারি সংস্থাসমূহে দুর্নীতি, শুল্ক ও কর, রাজস্ব, ব্যবসায়ী/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ, সরকারি ক্রয়-বিক্রয়, লাইসেন্স ইস্যু করা, অঙ্গীকারের শপথ ভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুদক আইন-২০০৪-এর তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তুর্ভুক্ত হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুসারে-২০১৩ সালের অনিষ্পন্ন অনুসন্ধানের সংখ্যা ছিল ৩১২১। এসব অনিষ্পন্ন অনুসন্ধানের মধ্যেও কমিশন ২০১৪ সালে ৪৬৫৪টি নতুন অনুসন্ধান কাজ হাতে নিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে দুদকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২৫০০টি এর অধিক অভিযোগ আসে, যার মধ্যে ১৬৮৯টি অনুসন্ধানের জন্যে গৃহীত হয় এবং ২৩৭টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়। কমিশন ২০১৪ সালে সর্বমোট ৭৭৭৫টি অনুসন্ধান কাজের মধ্যে ৩৭৭৫টি নিষ্পত্তি করেছে। সম্পন্ন এসব অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে কমিশন ৩৩৩টি এজাহারও দায়ের করেছে। বাকী সম্পন্ন অনুসন্ধানগুলোর ফলাফল কমিশনের রেকর্ডের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। কমিশনের তফসিলভুক্ত দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের হাতে-নাতে ধরতে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা নির্বাচিত অথবা মনোনীত জনপ্রতিনিধি কোনো কাজের জন্য ঘুষ দাবী করলে ঘুষ প্রদানের পূর্বেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ’ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতে-নাতে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এসব অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে দুর্নীতির উৎস স্থল।
দুর্নীতি বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম অন্তরায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে দুর্নীতি। একবিংশ শতাব্দীর পর দেশে ঘুষ-দুর্নীতির প্রভাব ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি চাকুরি প্রাপ্তি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে। বিভিন্ন টেন্ডার কাজে দুর্নীতি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন তপশীলি ব্যাংকে ঋণ প্রদানের ক্ষেতেও দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। বিশেষ করে কৃষি ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোতে সাধারণ কৃষকরা ঋণ গ্রহণের আগে ও পরে অনিয়ম দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। দেশের চিকিৎসা সেবা এখন সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক কারবার শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও কুচিং বাণিজ্য করছেন। কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিক জনসেবার আদলে দলের পদবী নিয়ে ক্ষমতায় পাকাপুক্ত হলে নানাভাবে অন্যায় দূর্নীতির আশ্রয় প্রশয় দিয়ে থাকেন। দেশের অফিস-আদালতের স্তরে স্তরে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা রীতিমত শেখড়ে পৌছে গেছে। চলমান ঘুষ-দুর্নীতির মহাউৎসবে জাতির গোড়ায় পচন ধরেছে। এই ঘুষ-দুর্নীতির ছোবল থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি কমেছে..? ঘুষ ছাড়া কী কোন কাজ করতে পারি..? আপামর জনসাধারণ কি সচেতন হয়েছে..? এসব প্রশ্নের জবাব আমজনতা অনেক ভাবে দিতে পারবেন। আমার যুক্তি তর্ক সচেতন পাঠকদের সংগে গড়মিল হতে পারে। কারণ একেক জনের চিন্তা চেতনা ভিন্ন।
আমি মনে করি, দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের পরে ঘুষ-দুর্নীতি শব্দটির লাগাম খুব বেশি না হলেও কিছুটা টানা পড়েছে। ফলে প্রকাশ্যে ঘুষ-দুর্নীতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু জাতির শেখড়ে ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি। তথ্য-প্রযুক্তির যুগের সংগে তাল মিলায়ে ঘুষ-দুর্নীতির লেনদেনে পরিবর্তন এসেছে। ঘুষ-শব্দটি পরিবর্তন হয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘‘স্প্রীট মানি’’। এই নতুন শব্দটি এখন অফিস-আদালতে ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও ঘুষের বিপরীতে নতুন শব্দ ‘‘স্প্রীট মানি’’ কথাটি শুনেছেন একজন ১ম শ্রেণির চিকিৎসক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি পেশায় একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তিনি তেঁতুলিয়ায় সরকারি চাকুরিতে যোগদানের পর মাসিক বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির জন্য নিয়মানুযায়ী যাবতীয় কাগজপত্র তেঁতুলিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দেবার পরও দীর্ঘ কয়েক মাস ঘুরেছেন। তিনি ন্যায্য বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কিন্তু উদীয়মান চিকিৎসক তাঁর নীতিতে অটল থেকে বৈধভাবে কাজ হাসিলের চেষ্টা করেন। এজন্য হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিট অফিসার সহ অন্যান্য কর্মচারীদের কথামত দীর্ঘদিন ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
আমি বিষয়টি জেনে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলি। সেদিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে বাহিরে ছিলেন। তিনি মুঠোফোনে আমার পরিচয় জেনে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য পরের সপ্তাহে অফিসে যেতে বলেন। আমি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কথামত যথারীতি ভুক্তভোগী চিকিৎসক সহ অফিসে যায়। এই অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাংকেতিক নাম (গোকি)। তিনি দেশের মফস্বল সাংবাদিক সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা আদলে আমাকেও সেই পাল্লায় উঠালেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেও সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বলে জাহির করে তার ভিজিটিং কার্ড তুলে দেন। তাঁর কথা শেষে কিছুটা যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে বুঝালাম ওই ধরণের সাংবাদিক আমি নই। এবার তিনি চিকিৎসকের কাজটি অর্থাৎ বেতন-ভাতার ‘পে-ভিক্সেসন’ করে দিলেন। আমি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম। এই সুযোগে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ভুক্তভোগী চিকিৎসক কে বুঝালেন এসব কাজে ‘স্প্রীট মানি’ লাগে। ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকের মুখে পরক্ষণে শুনলাম নঁথিপত্র প্রস্তুত করতে ঘুষ লাগে না ‘‘স্প্রীট মানি’’ লাগে। ঘটনা চলতি বছরের শুরুর দিকে কিন্তু সময়ের অভাবে লেখনি প্রকাশ করতে পারিনি।
আমাদের দেশে দুর্নীতি কমবেশী সব ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ দুর্নীতি করতে সহায়তা করেন; কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন। তবে প্রতিবাদকারীর সংখ্যা খুব সীমিত। এখনো অনেকে ঘুষের টাকা দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেন। আর কোন কারণে স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেন। এরআগে দুর্নীতিকারীর বিষদাঁত না ভেঙ্গে স্বার্থ হাসিলের জন্য নিশ্চুপ থাকেন। এখনো সময় আছে দেশকে দুর্নীতির কোরাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য সকলের প্রতিবাদী হতে হবে। নিজ নিজ পরিবার থেকে দুর্নীতিমুক্ত পরিবার গঠনে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে মনে শপথ নিতে হবে ‘নিজে দুর্নীতি করব না; কারো দুর্নীতি মানব না’। এক্ষেতে উপজেলা/জেলা/ইউনিয়ন দুর্নীতি দমন কমিটিকে শক্তিশালী করে জনসচেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেককে নিজ পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের মাঝে দুর্নীতি বিরোধি চেতনা সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সমাজ থেকে অন্যায়,ঘুষ-দুর্নীতি, স্প্রীট মানি ইত্যাদি শব্দগুলো চিরতরে নির্মুল করতে পারলে বাংলাদেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি লাভ করবে। #

শব্দনীড়ের ব্যয় নির্বাহে স্পন্সর হয়ে আপনিও পাশে আসুন

সৌহার্দ্য সম্প্রীতিতে মুখরিত থাক শব্দনীড়। থাকুক সর্বজনীনতা; থাক মুক্ত বাক্ স্বাধীনতার অনন্য একটি মঞ্চ যেখানে অনালোকিত নক্ষত্ররা হাতে হাতে রেখে তৈরী করবে ছায়াপথ … এই আশা আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে শব্দনীড়ের পথচলা।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো শব্দনীড় কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। কারু একক ব্যক্তিগত অর্থে শব্দনীড়ের নির্বাহ ব্যয়ভার বহন করা হয় না। বিজ্ঞাপন হীন একটি ব্লগ ঐচ্ছিক সুধীজনের অপর্যাপ্ত স্পনসরে আদৌ চালানো সম্ভব কিনা পরিমাপ করার সময় এসেছে। একমাত্র আমাদের সম্মিলিত অনুদানে ব্লগ চালু রাখা সম্ভব।

শব্দনীড়ে কোন পেইড ব্লগার নেই। সঞ্চালকের কোন বেতন নেই।

আর্থিক অনুদান বললে “নিয়মিত দান বা মানসিক অত্যাচার” মনে করেন কেউ কেউ। ইতিমধ্যে অনেকে এই অস্বস্তির কারণ দেখিয়ে শব্দনীড়কে ভালোবেসে এড়িয়ে চলার পথ বেছে নিয়েছেন। শব্দটিতে তাই নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমরা চাই স্পনসর। আমরা বুঝতে চাই কে এবং কয়জন শব্দনীড়কে নিজের ব্লগ মনে করবেন। কেননা শব্দনীড়কে দূর্যোগহীন বাঁচিয়ে রাখতে আপনাদের সঙ্গ এবং স্পনসরশিপ দুটোই প্রয়োজন। প্রয়োজন সহযোগিতা এবং নির্মোহ ভালোবাসা।

আপনার স্পনসর ছোট হলেও ক্ষতি নেই। শব্দনীড় এর হিসাব খাতে স্বনাম প্রকাশ অথবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবেও আপনি থাকতে পারেন শব্দনীড়ের পাশে। আপনি হবেন শব্দনীড় অংশ এবং অঙ্গ। স্পনসরদের নিয়ে শব্দনীড় পরিচালনা কমিটি তৈরী করা হবে। প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকবে অটুট।

অনুগ্রহ করে আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তাবনা এবং মতামত রাখুন।

* আমরা কি ব্লগকে সরব রাখতে পারি কি না ?
* শব্দনীড়ে ব্লগিং করতে আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ?
* শব্দনীড় পরিচালনা কমিটিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান কিনা ?

আমরা চাই একক নয়; দশ হাতে একশো জনের ঘরে শব্দনীড়কে পৌঁছে দিতে। শব্দনীড় থাক সর্বজনীন বাক্ স্বাধীনতায় সকলের পাশে। শুভ ব্লগিং। ধন্যবাদ।

সেক্স ইন রিলেশনঃ মানসিকতার চরম অধ:পতন

ইদানিং যা শুনছি আর দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, “সেক্স ইন রিলেশন” ব্যপারটা বেশ কমন হয়ে গেছে। এমনকি আমাদের তরুন সমাজের অনেকেই ব্যপারটাকে খুব স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছে, যেন রিলেশনে সেক্স হওয়াটাই কমন! মেয়েরাও সেসব ছেলেদের পেছনেই ঘুরছে যাদের টার্গেট হলো- খেয়ে ছেড়ে দেয়া। একদল মজা লুটছে, আরেকদল মজা নিচ্ছে।

ব্যপারটা ঘটে যাওয়ার পর, কমন ডায়ালগ হচ্ছে- “মানুষই তো ভুল করে”। ওয়েল, এটা মানতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে মানুষ ভুল করে, এবং তওবা করে পবিত্র হওয়া যায়। আমার মূল কনসার্ন হলো- ভুল করা এক জিনিস, আর সেক্সের মত জঘণ্য কাজকে অপরাধ মনে না করে “রিলেশনে এরকম হতেই পারে”- এই মানসিকতা ধারন করাটা বিপরীত জিনিস। যখন স্ক্যান্ডাল বের হয় বা ব্রেকআপ হয়, তখনই কেন মনে হয় যে আপনি ভুল করেছেন! এর আগে বহুবার সেক্স করার পরও, কেন আপনার মনে অনুতাপ হলো না? কেন মনে হলো না যে, আপনি জঘণ্যতম পাপ করছেন!

মেজরিটি পার্সেন্ট তরুনরা যেকোন উপায়ে তার গার্লফ্রেন্ডকে ভোগ করতে চায়, ব্যপারটা ইদানিং অনেকটা প্রি-প্ল্যানড হয়ে গেছে। মেয়েরাও যেন নিজেকে বিলিয়ে দেবার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নেমেছে, তারা তাদের মাইন্ড সেটাপ করেই নিয়েছেঃ There is no difference between boyfriend and husband. তো হাজব্যান্ডের সাথে যা করা যায়, বয় ফ্রেন্ডের সাথেও তাই করা যায়!

একটা কথা বলি, ভুল করে থাকলে সেটা এখনই তওবা করে শুধরে ফেলুন। কিন্তু, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের মত “রিলেশনে সেক্স হতেই পারে” বা “খেয়ে ছেড়ে দেবো” এই মানসিকতা পোষণ করে যেনায় লিপ্ত থাকবেন না। যে মেয়েটাকে আপনি খেয়ে ছেড়ে দিবেন, সে হয়তো কারো না কারো বোন; ঠিক একইভাবে আরেকটি ছেলেও যাকে খেয়ে ছেড়ে দিবে, সে হয়তো আপনার নিজেরই বোন! ইয়েস, মাইন্ড ইট!

———–
ফেসবুকে আমি।

ভারতে হিন্দুত্ববাদ-বিরোধী সিনিয়র সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা

ভারতের এক সিনিয়র সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে মঙ্গলবার রাতে ব্যাঙ্গালোরে তাঁর বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
গৌরী লঙ্কেশ ঘোষিতভাবেই হিন্দু দক্ষিণপন্থীদের সমালোচক ছিলেন তাঁর লেখার মাধ্যমে।
ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, “মঙ্গলবার রাতে যখন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বাড়ির ঠিক সামনেই গুলি চালানো হয়। ঠিক কী কারণে এই হামলা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
এক পুলিশ আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “গৌরী যখন বাড়ির দরজা খুলছিলেন, ঠিক সেই সময়েই বুকে সরাসরি দুটো আর মাথায় একটা গুলি করা হয়।”
চল্লিশ বছর আগে তাঁর বাবা যে ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’ শুরু করেছিলেন, মিজ লঙ্কেশ সেটির সম্পাদক ছিলেন।
গৌরী লঙ্কেশ তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে ‘কমিউনাল হারমনি ফোরাম’ নামে একটি গোষ্ঠীকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গেছেন, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে এবং দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করা হয়।
তাঁর পত্রিকায় ২০০৮ সালে ছাপা কয়েকটি লেখার জন্য মানহানির মামলা করেছিলেন বিজেপি-র সংসদ সদস্য প্রহ্লাদ যোশী।
সেই মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন ও ছয় মাসের জেল হয়। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

মিজ লঙ্কেশের হত্যার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে আরও দুই যুক্তিবাদী ও হিন্দুত্ববাদ-বিরোধী লেখক এম এম কালবুর্গি ও ডঃ পানসারির হত্যার ঘটনার সঙ্গে।
মিজ লঙ্কেশের মতাদর্শের সঙ্গে ওই দুই যুক্তিবাদীর মতামতের সম্পূর্ণ মিল ছিল।
এই সিনিয়র সাংবাদিকের হত্যার পরে সামাজিক মাধ্যমে মতামত জানাতে শুরু করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
কবি জাভেদ আখতার লিখেছেন, “দাভোলকর, পানসারে, কালবুর্গি, এবং এখন গৌরী লঙ্কেশ। যদি পর পর একই ধরণের মানুষ নিহত হতে থাকেন, তাহলে হত্যাকারীরা কারা?”
অভিনেত্রী রেণুকা সাহানে টুইট করেছেন, “আরেকজন যুক্তিবাদী কণ্ঠ রোধ করে দেওয়া হল, আততায়ীদের চিহ্নিত করা যায় নি। গৌরী লঙ্কেশ, দাভোলকর, কালবুর্গি, পানসারে – কারা মারল এদের সবাইকে?”

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

বন্যা ও কোরবানীঃ বাস্তব সম্মত ও মানবিক চিন্তা করুন

আমাদের সস্তা চিন্তা-ভাবনার সর্বশেষ উদাহরণ হল কোরবানীর সাথে বন্যাকে টেনে নিয়ে আসা। সস্তা ও অগভীর ভাবনায় নিজেকে আলোচনায় আনার প্রচেষ্টা এই দেশে হর হামেশা হয়ে থাকে, সুতরাং এইটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই সমস্ত ভাবনা প্রকাশের মাধ্যমে চিন্তার দৈন্যতা ও মনের সংকীর্নতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে লোকসংখ্যার আধিক্যের কারনে যেকোন মত যাহির করলে তা নিয়ে লাফালাফি করার জন্য আরো দু একজন সংকীর্নমনাকে খুব সহজেই পাওয়া যায়।

সমাজের ও ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় কোনকিছুই এই বন্যার কারনে বন্ধ হয়নি। কোটি টাকা খরচ করে বিয়ের – জন্মদিনের প্রোগ্রাম, বিলাসী রেস্তোরাঁয় আয়েশী খানাপিনা কোনকিছুই বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি শপিং মলগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বিলাসী শপিং। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে অপচয় করাকে স্ট্যাটাস হিসেবে গন্য করা হয়। যার যত অপচয়ের ক্ষমতা আছে সে তত বেশি উপরের শ্রেনীর। পুঁজিবাদে অপচয় এমনই সংক্রামক এবং এতবেশি আচরিত হয় যে একসময় এই অপচয়কে আর অপচয় মনে হবে না, মনে হবে এটাই প্রয়োজন। যাই হোক, আমাদের দৈনন্দিন এইসমস্ত অপচয় কিন্তু আমাদের সস্তা চিন্তাধারীমাথাগুলোর চোখে পড়ে না। তাই তাদের আহবান কখনোই বলে না, নিজেদের অপচয় হতে কিছু বাঁচিয়ে সেটা বন্যার্তদের দান করুন।

আমাদের দেশে ৭৫% লোক শুধুমাত্র কোরবানীর সময়ে গোশ্ত খেতে পায়। ( কয়েক বছর আগের পত্রিকার রিপোর্ট, অনলাইনে সার্চ দিলে পেতেও পারেন।) এই পুষ্টিহীনতার দেশে কোরবানীর সময়ে নিম্ন আয়ের লোকজনের কিছুটা হলেও আমিষের স্বাধ মিটে।

সারা দেশে কোরবানীর হাটে বেচার জন্য প্রচুর গরু পালিত হয়। সেই গরুগুলো পালে সমাজের প্রান্তিক লোকজনই। তারা এই সময়ে কিছু পূঁজিপাট্টা সংগ্রহ করে আরো ভাল কিছু করতে চায়। হয়ত এই টাকা দিয়েই সে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াতে চায়, বউ সন্তানের কাপড় চোপড়ের ব্যাবস্থা করে। অথবা নিজের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তনে আরো বেশি কিছু করতে চায়।

দেশের যে বিস্তীর্ন অঞ্চল মহাপ্লাবনে ডুবে আছে সেইসব অঞ্চলেও প্রচুর লোকজন গবাদি পশু পেলে-পুষে বড় করেছেন কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য। আপনি যদি কোরবানী বন্ধ করেন এই সব প্রান্তিক বন্যার্ত মানুষের কি হবে সেটা ভেবে দেখেছেন?

বন্যার্তদের দান করা জন্য কোন অজুহাত দরকার হয় না। আপনি আপনার সর্বস্ব দিয়ে দেন। আপনাকে দেখে আরো লোকজন উৎসাহিত হবে। কিন্তু কোরবানী বন্ধ করে দান করব এই ধরনের ভাঁড়ামি এবং হিপোক্রেসী করা থেকে বিরত থাকুন। যারা বলে কোরবানী বন্ধ করে দান করব প্রকৃত অর্থে তারা কোরবানীই দেয় না অর্থাৎ কোরবানীর মানে তারা বুঝে না। কোরবানী তাদের কাছে ত্যাগ নয় তাদের কাছে ভোগ। তাই এত সহজে তারা কোরবানী বন্ধের কথা বলতে পারে।

আমাদের মত দুর্নীতিপ্রবন দেশে সরকারী বেসরকারী ত্রাণ কি পরিমান দুর্নীতি হয় তা কল্পনা অনুমান করা কঠিন নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের অনেক দায়িত্বশীলের কাছে আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে। ত্রাণ ব্যবস্থা যাতে দুর্নীতি মুক্ত হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দেয়া আমাদের নাগরিক কর্তব্য। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়া উচিত। দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে কিভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব সেদিকে বরং আমাদের খেয়াল করা উচিত।

আপনি কোরবানী বন্ধ না করে কোরবানীর মাংস, চামড়া বন্যার্তদের জন্য পাঠিয়ে দিন। কোরবানীর পশু বন্যার্তদের থেকে ক্রয় করুন। বাস্তব সম্মত ও মানবিক চিন্তা করুন। হিপোক্রেট ও সস্তা লোকজনের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

অস্ত্র

সুন্দরী নারীর সম্মোহনী শক্তির সাথে আমরা প্রায়শ পরিচিত। সুন্দরীর তুলনা শুধু আরেক সুন্দরী। তবে পরজনমে সুন্দরী হয়ে জন্মাতে ইচ্ছে করলে দোষের কি?

ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা? কিন্তু সত্যি সত্যি একটু ভেবে দেখুনতো –
সুন্দরী নারীর কারণে কত রাজা হয়েছেন রাজ্যহারা!
কত যুবক জীবন উৎসর্গ করেছে উইপোকার মতো!

এসব তো পুরনো দিনের কথা, ইতিহাস।

আচ্ছা বলুন তো, গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়ার সাধ্য কার?
কার হাসি দেখে ন্যাড়া বেলতলায় যায় বার বার ?
মুনি- ঋষির ধ্যান ভাংগে কে?

থাক, এসব কথা। এবার একটা গল্প বলি।
এক যে ছিলো সৎ অফিসার। নাম তার আলী নূর। আলী নূর ঘুষ খায় না, ঘাসও না। মাস যায়, মাছ খায় না। নিবেদিত মানুষ। কাজ অন্ত প্রাণ।

একদিন এক ঠিকাদার এসে বললো, স্যার, আপনি ঘুষ খান না, গুড। তবে কত খান না? হাজার? লাখ?
হাজার লাখ নূরের কাছে পাত্তাই পেল না।

অতঃপর শয়তান গেলো তার বউয়ের কাছে।
মেয়ে মানুষ শাড়ি পছন্দ করে না, গয়না পছন্দ করে না, তাই কি হয়?
বউ কাবু হলো। কিন্তু বউ নূরকে কাবু করতে পরলো না।

এবার এগিয়ে এলো ইবলিশ। সে ঘুষের বদলে পাঠালো এক সুন্দরী ষোড়শী। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো রূপ। তরমুজের ফলার মতো বাঁকানো ঠোঁট।আর সেই মায়াবী হাসি….

নূর নড়লো। নড়লো ফাইলও।

ফাঁদটা কার বা দোষটা কার? আলী নূরের? শয়তানের? রূপের? আবার, রূপ- সৌন্দর্যের কারিগরটাই বা কে? আর কেইবা বানায় বাঁকা ঠোঁটের অস্ত্র?

বাংলাদেশের বন্যার কারণ ও প্রতিকার

বাংলাদেশ পলিবাহিত বিস্তীর্ণ এক সমতল ব-দ্বীপ। ভূমি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি পাহাড়, সমতল থেকে সামান্য উঁচু ভূমি ও সমতল প্লাবন ভূমি, এই তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিন নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ৪,৬৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল গঠন করেছে বাংলাদেশ। এদেশের অর্থনীতি মূলত: কৃষিনির্ভর এবং সামগ্রিকভাবে মৌসুমী জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এদেশকে প্রায়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়।

প্রকৃতির দুই রূপ- সৃষ্টি ও ধ্বংস। প্রকৃতি একদিকে গঠন করছে, অন্যদিকে বিনাশ করছে। বিভিন্ন কারণে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। এসব ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, নদী ভাঙ্গন, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। তবে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যার আঘাতই সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত: কিছু কিছু এলাকায় আঘাত এনে ক্ষতিসাধন করে থাকে এবং এর স্থায়িত্বকাল অল্প সময় হয় কিন্তু বন্যা প্রায় সমগ্র দেশে আঘাত এনে প্লাবিত করে থাকে। এর স্থায়ীত্ব বেশিদিন থাকে। তখন অসহায় হয়ে পড়ে গোটা জাতি। বন্যার কারণে জনজীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দু:খ, কষ্ট। বন্যা যেন এখন নিয়মিত বার্ষিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। এর কারণে এদেশে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে পরিগণিত।

বাংলাদেশে বন্যার সংজ্ঞা স্বতন্ত্র। বর্ষাকালে যখন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওড় ও নিচু এলাকা ছাড়িয়ে সমস্ত জনপদ পানিতে ভেসে যায় এবং ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় তখন তাকে বন্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চল অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখন্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতি বছর বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮৪৪,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়।

আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অতি ক্ষুদ্র একটি দেশ। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। আজ জনবহুল ও দরিদ্র বাংলাদেশের উন্নয়নের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা। বন্যার কারণে প্রায় প্রতি বছর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটা বিরাট অংশ নষ্ট হয়ে যায়। বন্যাকালীন দুর্দশার চিত্র অবর্ণনীয়। সামগ্রিক জীবনযাত্রা মারাত্মক রূপে ব্যাহত হয়। সারা দেশে ধ্বংসের চিহ্ন দেখা যায়। আপনজনদের হারানোর হাহাকার গভীর দাগ কাটে। প্রকৃতির এই খেয়ালীপনার কাছে মানুষ আজ অসহায়। বন্যার সর্বনাশী টানে ঘর-বাড়ি ভেসে যায়। কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। শস্যের ক্ষতি হয় ব্যাপক। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। বিমানবন্দর, স্থলপথ, রেলপথ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। যে মহাসড়কে গাড়ী চলে সেখানে চালাতে হয় নৌকা। ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়। গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আর তখন মানুষের একমাত্র আশ্রয় হয় ঘরের চালে বা গাছের ডালে।

বন্যা পরবর্তী দৃশ্যও করুণ। নানা প্রকার ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়। পেটের পীড়া, আমাশা, সর্দি, জ্বর, কাশি ইত্যাদি হয়। বন্যার সময় তুলনামূলকভাবে পানির উচ্চ প্রবাহ, যা কোন নদীর প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম তীর অতিক্রম করে ধাবিত হয়। নদীর তীর ছাড়িয়ে পানি আশপাশের সমভূমি প্লাবিত করলে সাধারণত জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বন্যা। প্লাবনভূমি যেহেতু মানুষের কাঙ্খিত ও কৃষিকাজের সহায়ক, তাই বন্যাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা ও এর ক্ষয়-ক্ষতির সীমা যাতে ছাড়িয়ে না যায় তা লক্ষ্য করা আমাদের জরুরী। বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যাকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-

(১) মৌসুমি বন্যা: এই বন্যা ঋতুগত, নদনদীর পানি ধীরে ধীরে উঠানামা করে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
(২) আকস্মিক বন্যা: আকস্মিক পাহাড়ি ঢল অথবা স্বল্প সময়ে সংঘটিত প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে কিংবা প্রাকৃতিক অথবা মানবসৃষ্ট বাঁধ ভেঙে সংঘটিত হয় আকস্মিক বন্যা। এতে করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয় এবং মানুষ ও পশুপাখি চরম দুর্ভোগে পড়ে।
(৩) জোয়ার সৃষ্ট বন্যা: সংক্ষিপ্ত স্থিতিকাল বিশিষ্ট এই বন্যার উচ্চতা সাধারণত ২ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ভূভাগের নিষ্কাশন প্রণালীকে আবদ্ধ করে ফেলে। এই বন্যা জানমালের তেমন ক্ষতি হয় না।
এছাড়াও আমরা বন্যাকে আরো চারটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
(১) সাধারণ বন্যা: যা প্রতিবছরই আমাদের দেশে সংঘটিত হয়।
(২) তীব্র বন্যা: কয়েক বছর পর পর সংঘটিত হয়।
(৩) মারাত্মক বন্যা: গড়ে প্রতি ৫ বছর অন্তর হয়।
(৪) প্রলয়ংকরী বন্যা: গড়ে প্রতি ১০ বছর অন্তর হয়ে থাকে।

এক হিসাবানুযায়ী দেখা গেছে প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর প্রলয়ংকরী বন্যা দেখা দেয়। গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ সালে এদেশে প্রলয়ংকরী বন্যা হয়ে গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ছিল ২০০৪ সালের বন্যা। ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এদেশে গত ১০৭ বছরের ইতিহাসে ১৯১০, ৩১, ৫৪, ৫৬, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯৮, ২০০০, ২০০৪, ২০০৭ ও ২০১৪, বর্তমান ২০১৭ সহ ২০ বার বন্যা হয়েছে। গড়ে প্রায় পাঁচ বছর অন্তর অন্তর একবার বন্যা হয়েছে। তাছাড়া ছোট খাট বন্যা প্রতি বছরই হচ্ছে। এভাবে যদি বন্যা হয় তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে উন্নত হবে?
এ বছর হঠাৎ করেই যেন বন্যার আলামত দেখা দিয়েছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রায় ২০টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে বেশির ভাগ নদনদীর পানি। এতে প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। তবে বন্যার প্রকোপ সবচাইতে বেশি দেখা দিয়েছে যেসব জেলাগুলোতে সেগুলো হলো- লালমনিরহাট, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, যশোর, রাঙামাটি, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, বান্দরবন প্রভৃতি। প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী যদি এভাবে বাংলাদেশে বন্যা হতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে? তাকে কি নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় নেই?

বন্যার কারণ: বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে বন্যা সংঘটিত হয়। বন্যা সংঘটনের জন্য দায়ী কারণগুলি হচ্ছে-

(১) অতিবর্ষণ বন্যার অন্যতম একটি কারণ। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টি বহুল এলাকা চেরাপুঞ্জি মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। তাই এ অঞ্চলে অধিক বৃষ্টি হয়। ফলে বন্যা দেখা দেয়।
(২) সাধারণভাবে নিম্ন উচ্চতাবিশিষ্ট ভূসংস্থানের কারণে বন্যা দেখা দেয়। যার উপর দিয়ে এদেশের প্রধান প্রধান নদী প্রবাহিত হয়ে গেছে। নদীগুলি তাদের শাখা-প্রশাখা এবং উপনদীর সমন্বয়ে ঘন বিন্যাস নিষ্কাশন জালিকা গড়ে তুলেছে। ফলে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে।
(৩) ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বন্যা দেখা দেয়। এদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ প্রধান তিনটি নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ। যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৬-৭ মিটার উঁচু। ফলে বর্ষাকালে যখন তিনটি নদীর বিশাল অববাহিকায় পানি এক সঙ্গে এসে পড়ে তখন বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে তা থেকে বন্যার সৃষ্টি হয়।
(৪) দেশের বাইরে নদনদীর উজান এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এদেশে বেশী বন্যা দেখা দেয়।
(৫) দেশের প্রায় নিম্নাঞ্চল ভরাটের ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে তা থেকে প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয়।
(৬) হিমালয় পর্বতে তুষার গলন এবং প্রাকৃতিকভাবে হিমবাহের স্থানান্তর সংঘটন বন্যার আরেকটি কারণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পর্বতমালা হিমালয় আমাদের দেশে অবস্থিত। গ্রীষ্মকালে তাপে বরফ গলে কোটি কোটি কিউসেক পানি গঙ্গা, যমুনা, মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়।
(৭) প্রধান প্রধান নদীসমূহে একসঙ্গে পানি বৃদ্ধি এবং এক নদীর ওপর অন্য নদীর প্রভাব বিস্তারের কারণে বন্যা দেখা দেয়।
(৮) গাছপালা কেটে অরণ্য নিধন করা হচ্ছে। গাছপালার শিকড়ে বাধা পেয়ে অনেক বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে চলে যায়। কিন্তু গাছপালাও বনাঞ্চল উজাড় করার ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পানি সরাসরি নদীতে চলে যায়। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
(৯) পলি সঞ্চালনের ফলে নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, নদীর পার্শ্বদেশ দখল হয়ে যাওয়া, ভূমিধ্বস হয়ে যাওয়ার কারণে বন্যা হয়।
(১০) ভারত প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে ফারাক্কার পানি আটকে রাখে এবং বর্ষা মৌসুমে সকল গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়ার সন্ত্রাসী প্রয়াস চালায়। যার ফলে বাংলাদেশের বন্যার আকার ভয়াবহ ধারণ করে।
(১১) প্রকৃতির ওপর মানবীয় হস্তক্ষেপ বন্যার সংঘটনের অন্যতম একটি কারণ।
(১২) আমাদের দেশের নদীগুলোর গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই নদী কেটে এর গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(১৩) জোয়ার ভাটা এবং বায়ু প্রবাহের বিপরীতমুখী ক্রিয়ার ফলে নদনদীর সমুদ্রমুখী প্রবাহ ধীরগতি প্রাপ্ত হয়ে বন্যা দেখা দেয়।
(১৪) সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া বন্যার আরেকটি কারণ।
(১৫) সম্ভাব্য গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ফলেও বন্যা হচ্ছে।
(১৬) ভূ-গাঠনিক বিশৃঙ্খলা (ভূমিকম্প, নদীর প্রবাহ ও ভূরূপতত্ত্বে পরিবর্তন) আমাদের দেশের বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বন্যার প্রতিকার: বন্যার প্রতিকার কিভাবে করা যাবে তা নিয়ে হয়তো আমরা অনেকে চিন্তা করি না। আমরা বন্যা সমস্যার প্রতিকার গুলো জেনে নিই।

(১) বন্যা সর্ম্পকে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২) ত্রাণ সামগ্রী মজবুত রাখতে হবে।
(৩) প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বহুতল আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।
(৪) উজান এলাকায় জলাধার নির্মাণ করে বর্ষাকালে নদীর উদ্বৃত্ত পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(৫) নদীর উপচানো পানি প্রতিরোধে সারাদেশে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
(৬) বর্তমানে যেসব বেড়িবাঁধ আছে সেগুলো উচু করতে হবে।
(৭) পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিস্তৃত করে দিতে হবে।
(৮) রাস্তাঘাটের মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ কালভার্টসহ পানি সরবরাহ পথের সৃষ্টি করতে হবে।
(৯) ভরাট নদী-নালা সংস্কারের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(১০) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
(১১) আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে বৃহৎ নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
(১২) নদীর পাড়সহ সারাদেশে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
(১৩) পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
(১৪) বন্যাদুর্গতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে যাতে তারা দুর্যোগের সময় এখানে আশ্রয় নিতে পারে।
(১৫) খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দীঘি ও হাওর-বাঁওড় খনন/পুনঃখনন বা সংষ্কার করে জলাশয়ের গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বন্যা সমস্যার প্রতিকারের উপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বন্যার স্থায়ী সমাধানের ওপর নির্ভর করছে এ দেশের মানুষের স্বস্থি ও শান্তি। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের অসহনশীল মনোভাবকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে মরণ ফাঁদ ফারাক্কা কে রুখতে হবে। সে জন্য চাই জাতীয় উদ্যোগ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও।

বঙ্গবন্ধুর চেতনায় চলমান উন্নয়নের বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর চেতনায় চলমান উন্নয়নের বাংলাদেশ।
জাতির জনক ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন সমাজ। যে সমাজে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। হ্যাঁ- এই ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেই চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে একাত্তরের চেতনাকে বুকে ধারণ করে।

পনেরোই আগস্টের সেই কালরাতে যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা চেয়েছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দিতে। তারা চেয়েছিল ভেঙে দিতে একটি উন্নয়নশীল জাতির মেরুদণ্ড। আজ বিয়াল্লিশ বছর পর সে প্রশ্নটিই আসে, সেই ষড়যন্ত্রকারীরা কতটা সফল হয়েছে। হ্যাঁ, তারা বাংলাদেশের কাঠামো ভেঙে দিতে চেয়েছিল। হয়তো আরো জঘন্য রূপ নিলে বাংলাদেশ বর্তমান পাকিস্তানের মতো রূপ নিত। তা নেয়নি। কোনো লাল মসজিদ ট্র্যাজেডি যদিও বাংলাদেশে সংঘটিত হয়নি তবুও ১৭ আগস্টের বোমা হামলার মতো মারাত্মক কাজ তারা করতে পেরেছে বাংলাদেশে। দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে। আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক হত্যার মাধ্যমে। বাংলাভাই, শায়খ রহমান, মুফতি হান্নান, মাওলানা মহিউদ্দিন তৈরির মাধ্যমে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে যে পরিবর্তনটি ষড়যন্ত্রকারীরা করতে পেরেছিল, তা কি ঠেকানো যেত না? আমার বারবার যেন মনে হয় তা ঠেকানোর পথ প্রশস্ত ছিল। কিন্তু যারা সেদিন সশস্ত্র ক্ষমতাবান ছিলেন তারা ‘রিস্ক’ নিতে চাননি। কেন ‘রিস্ক’ নিলেন না, সে প্রশ্নটি আমি আজো করি। বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন তখন দেশে একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনী বহাল ছিল। সেনা, নৌ, বিমান তিনটি বাহিনীই ছিল জাগ্রত। যারা এই হীন অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিল এরা ছিল বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য। প্রশ্নটি হচ্ছে এই, সপরিবারে শেখ মুজিবকে হত্যার পরে হলেও সেনাবাহিনী কেন তাৎক্ষণিক ওই কতিপয় চক্রান্তকারী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নিল না? কেন সেদিনের সেনাবাহিনী প্রধান কে এম শফিউল্লাহ তার বাহিনী নিয়ে জাতির পক্ষে, ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন না? যদি তেমনটি হতো তাহলে হয়তো আরো কিছু রক্তপাত হতো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হতো। জাতির জনক বেঁচে না থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী তাজউদ্দীন, মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, সামাদ আজাদসহ অন্য নেতারা সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা পেতেন। খন্দকার মোশতাকের মতো নর্দমার কীটদের রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার স্বপ্ন ভণ্ডুল হয়ে যেত। কে এম শফিউল্লাহ তা নিয়ে অনেকভাবেই জবাব দিয়েছেন। তিনি যে জবাবই দিন না কেন, তিনি যে ভুলটি করেছিলেন তার মাসুল গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে আজো তিলে তিলে। জাতির এতই দুর্ভাগ্য, আজ বিয়াল্লিশ বছর পরও ঘাতকদের প্রেতাত্মা ধাওয়া করছে গোটা জাতিকে। আশার কথা, বাংলাদেশে জাতির জনকের খুনিদের একাংশের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি খুনি অংশ বিদেশে পালিয়ে আছে। এদের শাস্তির মুখোমুখি করা খুবই জরুরি কাজ। এ জন্য সরকারকে নিরলস কাজ করে যেতে হবে।বিশ্বের কোনো দেশে, কোনো ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের বিচারকর্ম বন্ধ কিংবা তা নিয়ে গড়িমসির ঘটনা বোধহয় আর নেই। বাংলাদেশের যিনি স্থপতি, যিনি একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়ার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন, তার হত্যাকাণ্ডের বিচারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাষ্ট্রীয় আইন। তথাকথিত ইনডেমনিটি বিলের নামে হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একজন মহান নেতার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধটুকু থাকলে কোনো দল বা নেতা তা করতে পারে? বিষয়গুলো এ জন্য তুলছি, এসব কথা এই প্রজন্মের জানা দরকার।

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতির চেয়ে জঘন্য হীনমন্যতা বোধহয় আর কিছু নেই। এসব করার পেছনে প্রকারান্তরে একটি কারণ ছিল। আর তা হলো ঘাতকচক্রকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা। সে আশায় আজ যে গুড়েবালি পড়েছে, তা হচ্ছে তাদেরই কৃতকর্মের ফল। বিএনপি-জামায়াত জোটের চেহারা দেশের মানুষের এখন আর অপরিচিত নয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুকে যতটা অবমূল্যায়ন করতে চাননি, খালেদা জিয়া এবং তার শাসনামলে তা করা হয়েছে বহুগুণে। শেখ মুজিবের সমান্তরালে অন্য কোনো নেতা দাঁড়াবেন কিনা তা মহাকালই বলবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- শেখ মুজিবের জীবদ্দশায় এবং তারও অগ্রজ বেশ কজন নেতা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে এসে নতুন রাষ্ট্র গঠনের নেতৃত্বটি দিতে পারেননি। আর পারেননি বলেই শেখ মুজিবকে এগিয়ে আসতে হয়েছিল এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন। আর সে জন্যই তিনি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।

আজ যারা শেখ মুজিবের পাশাপাশি ‘জাতীয় নেতা’র সনদ লাগিয়ে অন্যদের ছবি রাখার কথা বলেন তারা আদৌ বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় চেয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়। বাংলাদেশে শেখ মুজিবের কাতারবন্দি করার জন্য নামের তালিকা শুধু বেড়েই চলেছে। কিন্তু তাই বলে কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুছে ফেলা যাবে? না যাবে না। একটি বিষয় অনেক চরম ক্রান্তিকালেও প্রমাণিত হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর চেতনা লালন করেন তারা ভোগবাদী নন। আজকের প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার সহদোরা শেখ রেহানা যদি ভোগবাদীই হতেন, তবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের তাদের একমাত্র বাড়িটি ট্রাস্টে দিয়ে দিতেন না।

বাংলাদেশে শেখ মুজিবের বজ্রকণ্ঠের যে অমিত তেজ তা ঢেকে দেয়ার প্রচেষ্টা ১৯৭৫ সালে করা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। বোমা মেরে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্রে যে জঘন্যতম হামলা করা হয়েছিল, তা ছিল সেই ধারাবাহিকতায়। এরও সুবিচার বাংলার মাটিতে এখন পর্যন্ত হয়নি। এই শোক বহন করেই চলেছে বাংলার মাটি, বাংলার নদীনালা।

ইতিহাসের উজ্জ্বল আলো ছিলেন শেখ মুজিব। পঞ্চাশের দশক ছিল তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের কাল। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন এক কুশলী রাজনৈতিক নেতা। এ সময় শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। তিনি দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষিমন্ত্রী হন মুজিব। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৬৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত এবং ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ছয় দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। মুজিবের ৬ দফার প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থনে ভীত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে শেখ মুজিবকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার সমস্ত জনগণ। জনরোষের কাছে নতি স্বীকার করে এক পর্যায়ে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় শোষকগোষ্ঠী। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানেই উত্থাপিত হয় এগারো দফা দাবি যার মধ্যে ছয় দফার সবগুলো দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাখো মানুষের এই জমায়েতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ববাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এর সবই সম্ভব হয়েছিল শেখ মুজিবের প্রজ্ঞার কারণে।

আমরা এই প্রত্যয় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে লক্ষ করছি, আগস্টের শোক ও বেদনাকে চিত্তে ধারণ করে তারা সোনার বাংলা গড়তেই এগিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের একটি শক্তিশালী বাহুর মতোই মুজিব আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির জন্য। সেই শেখ মুজিব এখন চিরনিদ্রায় শায়িত তার জন্মস্থান সবুজ টুঙ্গিপাড়ায়। তার শয্যাপাশে গিয়ে এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা নিজের শৌর্য, শক্তি এবং রক্ত¯্রােতেরই সন্ধান করে। কোনো অপশক্তিই এই গতিধারা থামাতে পারবে না। আলোকিত মানুষের জীবনকর্ম আরেকটি জীবনকে আলোকিত করে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা হয়েই থাকবেন চিরদিন।

বিষয়টি ভাবলে খুবই দুঃখ পাই, বাংলাদেশের রাজনীতিক পরিচয়ধারীরাই হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে শেখ মুজিবের স্বপ্নগুলোকে নস্যাৎ করতে বিভিন্ন সময় নানাভাবে তৎপর হয়েছেন। এসব মতলববাজরাও একদিন আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হবেন আগামী প্রজন্মের হাতেই। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগই হবে বাঙালি প্রজন্মের পাথেয়। আজকের যে উন্নয়ন, তা দেশের মানুষের ঐক্য ও সংহতির ফসল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন হয় না। বঙ্গবন্ধু সেটাই জানাতে চেয়েছিলেন মানুষকে। প্রজন্ম আজ তা অনুধাবন করছে। এটাই এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি।

____________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭

শব্দনীড় ব্লগকে প্রাণবন্ত করতে আমার কয়েকটি প্রস্তাব

আমি শব্দনীড়ের একজন পুরাতন সদস্য ছিলাম। নতুন করে শব্দনীড় চালু হওয়ায় আবার নতুন রূপে শব্দনীড়ে আসছি। ইদানিং শব্দনীড়কে আগের মতো প্রাণবন্ত দেখছি না। বর্তমানে ব্লগারকে মধ্যে তেমন কোন আন্তরিকতা দেখছি না। আমি লক্ষ্য করে দেখছি দুয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই কিছুক্ষণের জন্য ব্লগে প্রবেশ করে একটি কবিতা পোস্ট করে কয়েকদিনের জন্য গায়েব হয়ে যায়! ওনি নিজেতো অন্যের পোস্টে মন্তব্য করেনই না, এমনকি নিজের পোস্টের মন্তব্যেরও প্রতি উত্তর দেন না। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই দুঃখজনক মনে হলো। যেখানে শব্দনীড় একটা সময় ব্লগারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সেখানে এমন করুণ অবস্থা হবে তা আমি ভাবতে পারি না। এভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে ব্লগ চলতে পারে না। ইদানিং অনেক ব্লগই বন্ধ হয়ে গেছে। শব্দনীড়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শব্দনীড় পূনরায় সচল হয়েছে। এমন অবস্থায় শব্দনীড় নতুন রূপে পুনরায় আসতে পারায় ব্লগারদের জন্য আশার আলো হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাস্তবে তা দেখছি না।

শব্দনীড় আমার প্রাণের ব্লগ। সারাদিন কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাই তখনই শব্দনীড়ে ঢু মারি। তাইতো দিন যতই যাচ্ছে ততই শব্দনীড়ের প্রতি আমার দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। সেই দায়িত্ব থেকে শব্দনীড়কে আরো প্রানবন্ত করতে কয়েকটি প্রস্তাব দিচ্ছি।

১। ‍প্রতি মাসে একজন সেরা মন্তব্যকারী ও একজন সর্বোচ্চ মন্তব্যকারীকে পুরস্কার প্রদান। সেই পুরস্কার হতে পারে বই বা অন্যকিছু। যাহা ফলাফল ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে কুরিয়ার করে পুস্কার প্রাপ্ত লেখকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।

২। বৎসরে অনন্ত একবার সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা। (সেটা ফেব্রুয়ারি মাসে হলে ভালো হয়।)

২। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ঢাকাতে নির্দিষ্ট স্থানে ব্লগারদের আড্ডা ও মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করা।

৩। প্রতি বছর শীত অথবা বর্ষাকালে শব্দনীড়ের সদস্যদেরকে নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা।

৪। বছরে দুই ঈদ ও বাংলা নতুন বছরে ই-ম্যাগাজিন বের করা।

আশা করি উপরোক্ত প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করলে শব্দনীড় আগের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। শুভ ব্লগিং।

নুরে হত্যাচেষ্টা ও একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি…

নুরে হত্যাচেষ্টা ও একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি…
(ওয়াচডগের আর্কাইভ হতে)

জনাব আসাদুজ্জামান নুর , রাজনীতির মাঠে আপনি বাকের ভাই নন যার উপর আক্রমনের প্রতিবাদে আমাদেরও চোখের পানি ফেলতে হবে। এদেশের জীবন হতে সে সব দিন বিদায় নিয়েছে যখন নাটকের বাকের ভাইয়ের জন্যও মানুষ সহমর্মিতা দেখাত। সে হৃদয় আজ শকুনের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। নুর সাহেব, আপনি সেসব শকুনদেরই একজন। আপনি তাদেরই একজন যারা এদেশকে আলীবাবা চল্লিশ চোরের সিসিম ফাঁক মন্ত্রবলে ফাঁক করেছে, ধর্ষণ করেছে, লুটেছে, চাটার মত চেটেপুটে খেয়েছে। রাজনীতির খাতায় প্রথম যেদিন নাম লিখিয়েছিলেন সাথে শকুনের খাতায়ও নাম লিখিয়েছিলেন সেদিন। বাংলাদেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও তার খেলোয়াড়দের পরিচয় না জেনে এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন বিশ্বাস করা কঠিন। আশাকরি ভুলে যাননি লুটের পয়সায় সন্তানকে লন্ডন পাঠানোর ইতিবৃত্ত। সুসংবাদ হচ্ছে, এ পথে আপনি একা নন। আপনার আশপাশের সবাই একই পথের পথিক। দেশকে গৃহযুদ্ধের আগুনে ঠেলে দিয়ে আপনারা উত্তাপ নিচ্ছেন শীত নিবারণের। জ্বলজ্যান্ত মানুষকে গুম করছেন, বছরের পর বছর ধরে লম্বা করছেন লাশের মিছিল। কেবল এক ব্যক্তির সেবা করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন মানুষ হিসাবে পরিচয় দেয়ার ন্যূনতম মনুষ্যত্ব। নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তামাশা করতে গিয়েছিলেন নীলফামারীর জনপদে। নুর সাহেব, ভেবে দেখুন একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসির জন্য যে নীলফামারীর মানুষ রাস্তায় নেমেছিল একই মানুষ তাদের প্রিয় আসাদুজ্জামান নুর ভাইকে হত্যার জন্য ককটেল, গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে দ্বিধা করেনি। একবারও কি ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়? যারা আপনাকে মারতে গিয়েছিল তারা এলিয়ন নয়। এদেশেরই সন্তান। রাজনৈতিক পছন্দ মানুষের জন্মগত অধিকার। আপনি যেমন একটা দল বেছে নিয়েছেন, তাদেরও অধিকার আছে বেছে নেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রতিপক্ষ নির্মূল করার অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি। কিন্তু আপনারা তাই করছেন।

জনাব নুর, আপনারা দেশকে ভাগ করেছেন। শহর-বন্দর, হাট-বাজার, নদী-নালা সহ সবকিছু ভাগ করেছেন। ভাগ করেছেন প্রতিটা পরিবার। কেবল দেশ নয়, বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবার এখন যুদ্ধের মাঠ। এখানে ভাই লড়ছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, বাপ লড়ছে সন্তানের বিরুদ্ধে, এথনিক ক্লিনজিংয়ের দোর গোড়ায় দাড়িয়ে প্রিয় জন্মভূমি। এবং সবকিছু হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নামে। রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পারিবারিক লড়াইকে আপনারা নাম দিয়েছেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। জনাব, জাতি হিসাবে আমাদের বয়স ৪২ বছর পেরিয়ে গেছে। অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি আমরা। আপনাকে চিনতেও ভুল হয়নি। আপনি তাদেরই একজন যাদের হাতে জিম্মি ১৫ কোটি মানুষের জীবন। ট্যাংক, কামান, থানা, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও প্রতিবেশী দেশের শক্তিশালী প্রভু নিয়ে রক্তাক্ত করছেন দেশের অলিগলি রাজপথ। যে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের উন্মাদ বানিয়েছেন, শিরায় শিরায় পৌছে দিয়েছেন ঘৃণার বিষাক্ত বীজ। জনাব, ভুলে গিয়েছেন কি এ দেশের মানুষ কেন পাকিস্তানী সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল? আপনার মত সেবাদাসদের ক্ষমতায় পাঠিয়ে বিশেষ পরিবারের সেবা করার জন্য নয় নিশ্চয়? পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরশাসক ও তাদের দোসর ২২ পরিবারের শোষন, নিপীড়ন হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যই এদেশের মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, মাথার উপর ছাদ, স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তার জন্য স্বাধীনতা এনেছিল। অথচ আপনার মত কৃতদাসরা আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন রাজাকার নিধন আর জামাতি নিশ্চিহ্ন করার অপর নামই নাকি স্বাধীনতা।

জনাব নুর, যুদ্ধের মাঠে আপনি একজন সৈনিক। এবং প্রতিপক্ষের বৈধ টার্গেট। নীলফামারীর যুদ্ধে আপনি চার সহযোগী হারিয়েছেন। কাঁদছেন কেন? চোখের পানি আর নাকের পানি একাকার করে আপনি যখন হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা বর্ণনা করছেন একই সময় আপনার পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও দলীয় ক্যাডারের দলও ট্যাংক, কামান নিয়ে বিরান করছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। মানুষ মারছে পাখির মত। হত্যাই যদি সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে রাজনীতির মাঠে কেবল আপনারা হত্যা করবেন আর প্রতিপক্ষ পালাতে থাকবে তা হতে পারেনা। ওরাও হত্যা করবে এবং তা হবে বৈধ। চাইলে যুদ্ধ সংক্রান্ত জেনেভা কনভেনশন পড়ে দেখতে পারেন।

রক্তের দাগ হাতে নিয়ে বাকের ভাইয়ের ভালবাসা চাওয়ার ভেতর গৌরবের কিছু নাই…… পরাজয়ের গ্লানি।

ধর্ষিতা ধরণীর ছায়া

ধর্ষিতা ধরণীর ছায়া

বিষয়টি নিয়ে লিখতে বিবেকে বাধে। কী লিখবো! কেন লিখবো! এই লেখা কি মানুষ পড়ে? পড়বে? যদি পড়তো- তবে আজকের বাংলাদেশ কেন এমন হবে? বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি চরম ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কারা এসব করছে? তাদের শাস্তি হচ্ছে কি? বিচার হয়েছে কি? এরা কি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী? যদি তাই হয়- তাহলে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে কারা?

বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সর্বত্র। দুটি প্রতীকী ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীর সঙ্গে এক যুবকের বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছিল। বিয়ে ঠিক হয়েছিল দুই পরিবারের সম্মতিতেই। এনগেজমেন্ট দিনও ঠিক হয়। এরই মধ্যে ছেলেটি ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। নানা প্রলোভন আর প্ররোচনার এক পর্যায়ে তরুণী ওই যুবকের ঘনিষ্ঠ হয়। অন্তরঙ্গ সেসব মুহূর্তের ছবি ছেলেটি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে রাখে। পরে ছেলেটি ওই তরুণীর পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এত টাকা যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় তরুণীর পরিবারের সদস্যদের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করা হয়। টাকা না দিলে ওই ছবি সে ওয়েবসাইটে দেওয়ার হুমকি দেয়। লজ্জা, ঘৃণা, অপমানে ওই তরুণী দু’দফা আত্মহত্যার চেষ্টাও চালায়। বিষয়টি তরুণীর বন্ধু-বান্ধবীরা জেনে যাওয়ায় লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়।

আরেকটি ঘটনা আরো ভয়াবহ। একজন কলেজ ছাত্রী তার সেলফোনের লক খুলতে যান একটি দোকানে। ওই দোকানের কর্মচারী ছাত্রীর সেলফোনের লক খুলে দেয়। তবে ওই সেলফোনে থাকা ছাত্রীর দুটি ছবি ব্লুটুথ দিয়ে ডাউনলোড করে নেয়। ছাত্রীর অজান্তেই সে এই কাজটি করে। এরপরই ওই ছাত্রীর মোবাইলে ফোন করে তাকে ভালোলাগার কথা জানায়। এক পর্যায়ে প্রস্তাব দেয় প্রেমেরও। রাজি না হওয়ায় কলেজের ওই ছাত্রীর মুখাবয়বের সঙ্গে নগ্নদেহের ছবি মিলিয়ে ফোন নম্বরসহ ছেড়ে দেওয়া হয় পর্নোসাইটে। কী মারাত্মক জিম্মি দশায় পড়ছে এই প্রজন্ম!

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের খবর বেরুচ্ছে। প্রশ্ন আসছে, প্রতিদিন এত ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরও মানুষ উদাসীন ও নিশ্চুপ থাকে কেন? আবার কোনো কোনো ঘটনায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ ফেটে পড়তে দেখি কেন? কেউ কেউ কারণ হিসেবে ঘটনার নৃশংসতার মাত্রাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু আসলে প্রতিটি ঘটনাই তো সমান। বাংলাদেশে অধিকাংশ দরিদ্র শ্রেণীই অপরাধের অসহায় শিকার। এদের সিংহভাগ সমাজের আর্থিকভাবে সবচেয়ে পিছনের সারিতে থাকা নারীরা। আরো সুচিহ্নিতভাবে বললে শ্রমজীবী-দলিত শ্রেণি।

এই ছবি শুধু আজকের নয়। চার হাজার বছর ধরে এই অসভ্য অত্যাচার চলে আসছে। শূদ্রকে অস্পৃশ্য অশুচি চিহ্নিত করে শূদ্রাণী ভোগে অতি তৎপর। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য যদি শূদ্রাণীকে ধর্ষণ করে তাহলে শাস্তি নামমাত্র অর্থদণ্ড। এই রীতি এখনো চলছে। এই যুগেও। কথাটা প্রতীকী অর্থেই বলছি।

এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের যুগ। কিন্তু আজও আদিবাসীরা থাকেন জঙ্গলে আর পাহাড়ে। আজও দলিতেরা থাকেন নগরের প্রান্তে ঝুপড়ি বস্তিতে কিংবা গ্রামের বাইরের প্রান্তরে। তথাকথিত উন্নয়নের চাঁদমারিতে অবস্থা এখনো অনেক এলাকায় ভয়াবহ। আর এমন ঘটনার নায়ক যদি হয় রাজনীতির শীর্ষ নেতা!

বাংলাদেশে সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলেশিশুরাও। পুলিশের ধারণা শিশুরা একশ্রেণির মানুষের যৌন বিকৃতির টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

শিশু ধর্ষণের এরকম হাজার হাজার পরিসংখ্যান রয়েছে শুধু গণমাধ্যমের হিসাবে, বাস্তবে নিশ্চয়ই আরো বেশি। সারা পৃথিবীতেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তবে আমাদের দেশে সংখ্যাটা উদ্বেগজনক। এসব একেকটি ঘটনা পূর্বের নৃশংসতাগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শিশুরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তা ডাক্তারদেরও হতবাক করছে। অনেক ঘটনায় গণমাধ্যম সরব, সামাজিক মাধ্যমও সরব স্বাভাবিকভাবে। মূলত বিচার চেয়ে সবাই সরব। কিন্তু বিচার হয়েছে কি? পাশাপাশি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার চেয়েও সরব হওয়া সকলের সামাজিক দায়িত্বও।

জানা দরকার, শিশু ধর্ষণ কারা করে, কেন করে। অপরাধ-বিজ্ঞানটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক দিকটায়ও আলোকপাত হচ্ছে না। বিচার তো চাইতেই হবে। এতটা সরব না হলে এরকম ঘটনায় ভিকটিমের ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়াও হয় না, বিচার ব্যবস্থাও ঠিকমতো কাজ করে না। তাই আমাদের চিৎকার অবশ্যই লক্ষ্যভেদি। জনগণের দায়িত্ব জনগণ পালন করছে। কিন্তু গাফিলতি থেকে যাচ্ছে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং অপরাধবিজ্ঞানীদের। দায় আছে সরকার তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীর।

প্রতি বছর হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে, তারপরও কেন কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে না? শুধু আবেগঘন লেখা তো মুহূর্তের, দীর্ঘ মেয়াদে তা কোনো কাজে আসে না এসব ক্ষেত্রে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের লোকেদের দ্বারা শিশুরা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও পরিবারের বাইরের লোকেদের দ্বারাই ৮৩% ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষ্য এক্ষেত্রে আরো উদ্বেগজনক। শিশুদের প্রতি যেসব পুরুষ যৌনেচ্ছা অনুভব করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাদের পিডোফাইল বলে। বিষয়টিকে সাইক্রিয়াটিক ডিজওর্ডার হিসেবে শনাক্ত করা আছে। নির্যাতকরা, ধর্ষকরা সবাই যে পিডোফিল তা নয়, আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো সাধারণত পিডোফিলরাই ঘটায় বলে জানা যায়। এছাড়াও হেবফাইল, এফবোফাইল রয়েছে- এরা মূলত কিশোরীদের ওপর আক্রমণ চালায়।
বিষয়টির উপর বিবিসি বাংলা একটি বিজ্ঞান-প্রতিবেদন করেছিল। ‘শিশু যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্কের গঠন কি আলাদা?’ শিরোনামে।

ক্যানাডার টরন্টোর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক ড. জেমস ক্যান্টর শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্ক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিন্তু বিতর্কিত তথ্য। তিনি বলছেন, ‘পিডোফিলিয়া একটা যৌন প্রবণতা এবং মানুষ এই প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। সময়ের সঙ্গে এর পরিবর্তন ঘটে না।’ ড. ক্যান্টর বলছেন সাধারণ মানুষ যেমন শিশুদের দেখলে আদর করে, তাদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করে- এই পিডোফাইলদের মধ্যে সেধরনের প্রবণতা জাগে না, শিশুদের দেখলে তাদের মধ্যে যৌন প্রবণতা সৃষ্টি হয়।

তার তত্ত্ব অনুযায়ী এধরনের প্রবণতা জন্ম নেয় যখন মাতৃগর্ভে একটা শিশু বেড়ে ওঠে এবং তার মস্তিষ্ক গঠিত হয়। তিনি গবেষণায় দেখেছেন মা গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ও অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশ হয় না। তবে এ নিয়ে আরো গবেষণা করে তিনি দেখতে চান এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করা যায় কি না। তার এই গবেষণাকে বিতর্কিত বলছেন ক্যানাডারই অটোয়ার একজন গবেষক ড. পল ফেডোরফ। তিনি মনে করেন না এটা জন্মগত সমস্যা। তার মতে এর চিকিৎসা সম্ভব।

তিনি বলেছেন অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ দিয়ে এধরনের অপরাধীদের যৌন প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব। তার মতে ওষুধ ব্যবহার করে শিশুদের ওপর তাদের যৌন নির্যাতনের প্রবণতা যদি রোখা যায় তাহলে এদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তাদান সম্ভব।

দেখা যাচ্ছে, বিষয়টিতে বিজ্ঞান এখনো একটি বিতর্কিত জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে পিডোফাইল একটা মানসিক রোগ, তা সে জন্মগত হোক বা না হোক। এক্ষেত্রে সামজিকভাবে আমাদের করণীয় হতে পারে এরকম কোনো রোগীর (বিকৃত মানুষ) সন্ধান পেলেই তা গোপন না রাখা। অন্তত প্রথমদিকে নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের জানানো। আপনজন হলেও এক্ষেত্রে আবেগশূন্য হতে হবে। প্রয়োজনে থানায় একটা জিডি করেও রাখা যায়।

পর্নোগ্রাফি প্রমোটের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার ক্রাইম বাড়ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ‘ট্রেড মাইক্রো’র একটি গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশেই মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন এবং জিএসএম মডেম হ্যাক করার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের লোভ দেখিয়ে ফোন ব্যবহারকারীকে ফাঁদে ফেলে তার সিম ক্লোনিং করে একই নম্বর যেমন মেসেজ পাঠানো এবং কল করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি গ্রাহকের ই-মেইল পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পিন নম্বর প্রভৃতি হ্যাক করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে ঢাকার উত্তরায় তাইওয়ান ও চীনের একটি সংঘবদ্ধ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতচক্র ধরা পড়ে যারা প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছিল চীন ও তাইওয়ান থেকে। এসব বিষয়ে মানুষের সচেতনতা এখন খুবই জরুরি বিষয়।

যে সত্যটি সব অভিভাবককেই মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, তার সন্তান যেন সুষ্ঠু গাইডেন্স পেয়ে বড় হতে পারে। প্রযুক্তি মানবসমাজের জন্য আশীর্বাদ হলেও তা মানবজীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক কিংবা নিয়ামক নয়। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটারের ডেটাবেইসে যে তথ্য আপলোড করা হবে, তাই কিন্তু সার্চ করে পাওয়া যাবে। কম্পিউটার এমন কোনো শক্তি নয় যা অদৃশ্য, অস্পর্শ কিছু বলে দিতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে এবং বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। যাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিয়োগাত্মক দিকগুলো আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করতে না পারে। মুক্তপ্রবাহের যুগে তথ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, অসাধু তৎপরতা, অসামাজিক কর্মকাণ্ড যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তির দরজা দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যেন প্রমাদজনিত ভাইরাসে না ভুগি। কারণ, কোনো অপস্বাধীনতা মানবজীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না। আনতে পারে না।

ধরণী ধর্ষিতা হচ্ছে। মানুষ আর মানুষের মুখ দেখতে চাইছে না। কী অসহনীয় এই যাতনা। মানবিক বিবেককে জাগাতে হবে। তা না হলে কারোই উদ্ধার নেই।

__________________________________
দৈনিক খোলাকাগজ। ঢাকা। ৪ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার।

বুদ্ধিবৃত্তির পচন ও সমকালের বাংলাদেশ

বুদ্ধিবৃত্তির পচন ও
সমকালের বাংলাদেশ।

কবি শহীদ কাদরীকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আমাদের সময়ের প্রধান কবি কে? তিনি বলেন- শামসুর রাহমান। আমি বলি- আরেকটু ভেবে বলুন। তিনি বলেন, শামসুর রাহমান। শহীদ কাদরী কথা বলতেই থাকেন। তিনি বলেন, জীবনানন্দ দাশের পর শামসুর রাহমানই অন্যতম ও বড় কবি। তিনি বাংলা কবিতার জন্য যা করে গেছেন, অন্য কেউ ততটা পারেননি।

আমি বলি, রাহমান তো মুক্তিযুদ্ধে যাননি। আল মাহমুদ গিয়েছিলেন। শহীদ কাদরী বলেন, মাহমুদ গিয়েও যা করতে পারেননি, রাহমান না গিয়েও তার চেয়ে অনেক বেশি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে গেলেই সবাই শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারে না, ইলিয়াস। কে কোন মতলবে গিয়েছিল, কার মোটিভ কী ছিল, তা যুদ্ধের পরেই বেরিয়ে আসে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের ইতিহাস- সেই সাক্ষ্যই দেয়। বলতে থাকেন শহীদ কাদরী।

শহীদ কাদরী বুদ্ধিবৃত্তিকে সম্মান করতেন। তিনি কবিতাকে নাকচ করে দিতেন না। তিনি কবির পচনকে নাকচ করে দিতেন। সময়কে চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিতেন কার স্খলন কোথায়, কীভাবে হয়েছে। কবি শহীদ কাদরী নিউ ইয়র্কে ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। একটি কবিতা সন্ধ্যায় কবি ফরহাদ মজহারের কবিতা পড়ানো হয়েছিল।

গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি নিবেদন করা হয় বাংলাদেশ ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের উদ্দেশে। সেখানে ফরহাদ মজহারের কবিতা পড়েছিলেন আমাদের বন্ধু, নিউ ইয়র্কের আবৃত্তিকার আনন্দ ইকবাল। অনুষ্ঠানগুলো সাজানোর আগে শহীদ কাদরী আমার সাথে ফোনে কথা বলতেন। এ নিয়েও ফোন দিয়েছিলেন। আমি বলি, আপনি ফরহাদ মজহারকে কতটা কবি মনে করেন? তিনি হেসেছিলেন। বলেছিলেন- “তার কিছু কবিতা তো হয়ে উঠেছে। হ্যাঁ, তার স্খলন হয়েছে। সে এখন হেফাজতিদের দোসর। একই দোষে আল মাহমুদও তো দুষ্ট। কিন্তু আল মাহমুদকে তো কবি হিসেবে খারিজ করে দেওয়া যাবে না। ফরহাদ মজহার অলওয়েজ ওয়াজ এ সাশপিসিয়াস ফেস। তা আমরা, আমাদের বন্ধুরা জানতো। ফরহাদ আমাকে ‘ওস্তাদ’ ডাকতো। এখনো ডাকে। তার ব্যক্তি চরিত্র খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। কিন্তু তার কিছু কবিতা আছে। আমি সে দিকেই আলো ফেলেছি। তার ব্যক্তি মূল্যায়ন যে জেনারেশন করবে না- তা কিন্তু নয়।”

শহীদ কাদরীর কথাগুলো আমার খুবই মনে পড়েছে। ফরহাদ মজহারকে আমি চিনি প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। মজহারুল হক ফরহাদ একজন ফার্মাসিস্ট হিসেবে গ্রিনকার্ড নিয়েই আমেরিকায় এসেছিলেন। তার প্রাক্তন স্ত্রী নিউ ইয়র্কেই থাকেন। তার মেয়ে নিউ ইয়র্কে আইনজীবীর পেশা নিয়েছেন। ফরহাদ মজহারের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ড. সলিমুল্লাহ খান। ছিলেন বললাম এজন্য- এখন আর নেই। কারণ সলিমুল্লাহ খান ভেতরে ঢুকে অনেক কিছুই পরখ করার সুযোগ পেয়েছেন। দেখেছেন। এখন এই সলিমুল্লাহ খান খুব স্পষ্ট করেই বলেন- ‘ফরহাদ মজহার সংশোধনেরও অযোগ্য ব্যক্তি’।

ফরহাদ মজহার বারবার রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মিডিয়াকে আক্রমণ করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ত্রাসী বলেছেন। তার কথাগুলো এখনও ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। দৈনিক আমাদের সময়, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ লিখেছিল- ফরহাদ মজহার বলেছেন, “১৭ আগস্টের জেএমবি’র বোমাহামলাকারীরা যদি সন্ত্রাসী হয়, তাহলে ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী!” ফরহাদ মজহার আরো বলেছিলেন “জেএমবির ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের বোমাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যদি অবৈধ হয় তবে ৫২, ৬৬, ৬৯ ও ৭১-এর সকল আন্দোলন-সংগ্রামও সন্ত্রাসীকর্মকাণ্ড!”

‘বোমা হামলাকারীরা সন্ত্রাসী হলে মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী’ শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময় যে রিপোর্ট ছেপেছিল- তা পাঠকের আবারো পড়া আবশ্যক মনে করি। মিল্টন আনোয়ারের পুরো রিপোর্টটি ছিল- “১৭ আগস্ট যারা দেশব্যাপী বোমা হামলা করেছে তারা যদি সন্ত্রাসী হয় তাহলে ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা কি সন্ত্রাসী? ১৭ আগস্টের হামলাকারীদের যদি সন্ত্রাসী বলি তবে আমাদের ’৫২, ’৬৬, ’৬৯ বা ’৭১-এর আন্দোলনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বোমাবাজি, সন্ত্রাস : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম আয়োজিত আলোচনাসভায় জনাব মজহার আরো বলেন, ১৭ আগস্টে যারা হামলা করেছে তারা তাদের মতো করে সমাজটাকে বদলাতে চায়। আমরাও বিদ্যমান সমাজটাকে বদলাতে চাই। কিন্তু আমরা কি আমাদের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এমন কোনো কাজ করছি যার মাধ্যমে এই সমাজটাকে বদলানো যায়? আমরা যদি কিছু না-ই করে থাকি তবে যারা সমাজটাকে বদলাতে চায় তাদের সন্ত্রাসী বলবো কেন? যারা ইসলামের নাম নেয়, কট্টরপন্থী রাজনীতির মাধ্যমে সমাজ বদলাতে চায়, আমরা তাদের সন্ত্রাসী বলছি। অথচ আমরা বুশ, ব্লেয়ারকে বলি না যে, তারা খারাপ কাজ করছে।

তিনি বলেন, আগস্টের বোমা হামলাকে প্রথাগত সন্ত্রাস বলা যায় না। বিচারে যদি অভিযোগ প্রমাণিত না হয় তাহলে আপনি তার কোমরে দড়ি বেঁধে ধরে নিয়ে যেতে পারেন না। অথচ সমস্ত দৈনিক পত্রিকা এতটাই নিষ্ঠুর যে, এ ধরনের লোকদের সত্যিকারের আসামি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। একজন লোক বোমায় আহত হয়েছে অথচ পত্রিকা লিখেছে সে বোমা মারতে গিয়ে আহত হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের পত্রিকা এ ধরনের কাজ করলে পত্রিকার সম্পাদককে ডেকে এনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি দেওয়া হতো। অথচ আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কোরআন শরীফে বলা আছে, আমি তাদের কানে সিসা ঢেলে দিয়েছি, বুকে মোহর মেরে দিয়েছি। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র মানেই সবার কাছে মৌলবাদী সন্ত্রাসী। আমি তো তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী দেখিনি। আমি সন্ত্রাস দেখেছি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা ছাত্রের মধ্যে, জর্জ বুশের মধ্যে, পাশ্চাত্য ধারার সভ্যতার মধ্যে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিস্তার খুলনা-সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘেরের থেকে। অনেকে বলে ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। আমি এটার সঙ্গে একমত নই। ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে। আমরা শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছি এবং মিত্রকে খুন করেছি। আমরা জঙ্গিবাদকে দেশের একমাত্র সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে মোকাবেলা করছি তখন অন্যান্য রাষ্ট্র একে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছে। আমরা যতক্ষণ না এই চেতনার সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো ততদিন আমাদের মুক্তি নেই।

আলোচনাসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিআইবি চেয়ারম্যান সাদেক খান, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (স.)-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ এম ইব্রাহীম, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।’
আমাকে একটি বিষয় খুব ভাবায়। ঐ সময়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিংবা তাদের সন্তান-স্ত্রী কেন এই ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করলেন না? কেন তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি? কী বাধা ছিল সে সময়?

বাংলাদেশে কিছু চিহ্নিত চরিত্র সবসময়ই মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত করেই যাচ্ছে। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, ফরহাদ মজহার, তুহিন মালিক, আসিফ নজরুল এরা কার পারপাস সার্ভ করছেন- তা দেশবাসীর অজানা নয়। এই পালে এখন নতুন যুক্ত হয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জাসদ থেকে এসেছিলেন আওয়ামী লীগে। এখন তিনিই বলছেন, আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া তার ভুল ছিল?
আওয়ামী লীগ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মান্না বলেছেন, ‘নৌকায় তো আমিও ছিলাম। ড. কামাল নৌকা থেকে নেমেছেন, সেই নৌকায় আমিও চড়েছি। বেকুব না হলে কেউ আওয়ামী লীগ করে! আওয়ামী লীগকে বোঝার জন্য ড. কামালের কত সময় লেগেছে জানি না, কিন্তু আমার বুঝতে অত সময় লাগেনি।’

এখানে একটা কথা আমি বলতে চাই। জাসদ জন্ম নেওয়ার পর যারা জাসদে যোগ দিয়েছিল, এদের একটি বিশেষ অংশ ছিল রাজাকারপন্থী। পাকিস্তানপন্থী। এরা জাসদের নামে মূলত বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের বিরোধিতা করতে চেয়েছিল। অনেক জামায়াতি আলবদরও সেদিন জাসদে ঢুকে পড়েছিল। এরাই এখন তাদের আসল চেহারা দেখাচ্ছে। এরাই এখন ১৯৭১-এর চেতনার শিকড়ে কুঠার চালাতে মোটেই দ্বিধা করছে না।
প্রিয় পাঠক, ড. আফতাব আহমাদ মানের এক শিক্ষকের কথা আপনাদের মনে থাকার কথা। ড. আফতাব আহমাদ এক সেমিনারে বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে, বিতর্কের জন্ম দেন। তার কথা ছিল একজন হিন্দু কবি, মুসলমানপ্রধান দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হতে পারেন না। এই আফতাব আহমাদ আততায়ীর হাতে নিহত হন।

বাংলাদেশে এমন ঘাপটি মেরে থাকা বুদ্ধিবিকারগ্রস্ত অনেক আছে। এরা একটি নতুন সার্কেলও তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কিছু ‘মর্দে মুমিন’কে দিয়ে তারা ‘মানবতাবাদের নামে’, ‘ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে’ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলাচ্ছে। খুঁজলে দেখা যাবে, এদের পূর্বপুরুষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। মনে রাখা দরকার আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিকড় কেটে ফেলা এক নয়। বাংলাদেশে ৩০ লাখ শহীদ সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তো এরাই করছে।

বেগম খালেদা জিয়ার কথাটি আপনাদের মনে আছে? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের যে সংখ্যা বলা হয় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বাংলাদেশের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল বলে সরকারিভাবে উল্লেখ করা হয়।

দু’দফা ক্ষমতায় থাকার সময়েও খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় এসে ঢাকায় আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া এই মন্তব্য করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই সমাবেশে দেওয়া ভাষণের একটা বড় অংশজুড়েই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা কথাবার্তা। এরই এক পর্যায়ে তিনি উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষদের আনুষ্ঠানিক যে সংখ্যা সেটি নিয়ে বিতর্কের কথা। তিনি বলেছিলেন, মক্তিযুদ্ধের সময় কত মানুষ নিহত হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

এ নিয়ে পরে আদালতকে কথা বলতে হয়েছিল। নেত্রকোনার রাজাকার মো. ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বক্তব্য আসে। রায়ের একটি অংশে বলা হয়, “প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস হলো- পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর দখল থেকে মাতৃভ‚মিকে মুক্ত করতে বাঙালি জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা নয়টি মাস যুদ্ধ করেছেন। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, লাখ লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের প্রিয় বাংলাদেশকে মুক্ত করতে। প্রায় এক কোটি মানুষকে শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, আরো বহু মানুষ তাদের বাস্তুভিটে হারিয়েছেন। এই মীমাংসিত ইতিহাস এখন জাতির পবিত্র আবেগ ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে, যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ জাতি পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’।”

রায়ের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ইতোমধ্যে ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, রায়ে সেই যুক্তি খণ্ডন করে দৃঢ়তার সঙ্গে আদালত বলেছেন, ত্রিশ লাখ শহীদ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কের অবকাশ নাই। এই ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ।’
কিন্তু এই মহল থেমে নেই। তারা অপপ্রচারের মতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে। তারা নানাভাবে বাংলাদেশের মূল অস্তিত্বে আঘাত করতে চাইছে। এই পচন ঠেকাতে হবে। এজন্য আজকের বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। এরা চিহ্নিত মোনাফেক। এরা এই দেশেই আছে। কিন্তু দেশের মূল ভিত্তিকে বিদ্রূপ করেই যাচ্ছে। শহীদ কাদরীর ভাষায় আবারো বলি, সাশপিসিয়াস ফেসগুলো জাতির জন্য খুবই ভয়ংকর। মানবতার জন্য তো বটেই।

__________________________________
দৈনিক খোলাকাগজ। ঢাকা। ২১ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার।

প্রকৃতি

প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব পৃথিবী জুড়ে
বর্ষা ঋতুর খরা মাঠে ফসল পুড়ে।
কৃষক চিন্তিত মাঠে বীজতলা নিয়ে
আমন চাষীর নীড়ে বৃষ্টি নাই জিয়ে।
আবাহওয়ার বদলে দূর্যোগ ঋতু ভরে
প্রকৃতির নীলা-খেলা সব প্রভুর ঘরে।
কোন খানে খরা কোথাও জলে ভাসে
ত্রাণের জন্য বান ভাসিরা ছুটে আসে।
আইলা-সিডর দূর্যোগ দু’দশকে মিলে
জলবায়ুর বিরুপ চাপ যুদ্ধ বিগ্রহ খিলে।
হিরোশিমার বিস্ফোরন বিশ্ব যুদ্ধের রেস
শক্তিধর দেশে পরমানবিক সমর বেশ।
নদীর উজানে বাঁধ প্রকৃতির মরন ফাঁদ
পাহাড়-পর্বত কাটা পড়ে ভারসাম্য কাঁধ।
বন জংগল বিলীন প্রকৃতির উপর চাপ
বন্য-প্রাণি পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের হাক।
সাগর তলাদেশে পলিথিনে উচ্চতা বাড়ে
প্রকৃতি বিরুপ চাপ দেয় জলবায়ুর ঘারে।
জলবায়ু সম্মেলন দেশ নেতাদের ভিড়
যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড় ধরা হোক শান্তির নীড়।
রদ-বদলের প্রভাব জুড়ে ষড়ঋতুর দেশ
সতেজ সবুজ ভরে উঠুক বাংলার বেশ।
শপথ নিব রক্ষা করি ভূবনে ভার-সাম্য
প্রকৃতি ভাল হোক সৃষ্ট জীবের কাম্য।
-০-১৮-৭-২০১৭
(সকালে কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে)