বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

দ্রবণের প্রতিবেশী

নিশ্চয়ই পূর্বজনমে আমরা একই সমুদ্রে বসবাস করেছিলাম।
দ্রবণে ছিলাম তবে নোনাজল,
আর আমাদের প্রতিবেশী ছিল মনুষ্যপাথর সকল।

পাথরের ভিন্নচোখে দেখা হয়, যে ভবিষ্যত
মানুষের পদরেখা সে ছায়ায় একা হয়ে থাকে
কেউ পড়ে শিরোনাম, কেউ বসে মুখছবি আঁকে।

আমরা কি তবে সেই এঁকে রাখা জীবনের আলো
কালি আর রঙ মাখা- নগরের আদিম দর্শক
আঁকাবাঁকা নদীদের সহোদর- শাপলায় ডুবে থাকা বক।

সুবর্ণ গোলক

বিচ্ছিন্ন এক উপদ্বীপে অপেক্ষারত প্রেমিকা
জ্যোছনা রাতে ময়ূর পালক কলম তুলে নেয়।
প্রেমিকের তরে একটি একটি করে সংলাপ
লিখে যায় প্রবাল আর ঝিনুকে মোড়া পাতায়।

তার কাপড়ে ঝলমলে তারা, আঁচলে রামধনু,
খোলা চুল বাতাসে ভাসে, কানে মোতির দুল।
কাজল কালো চোখে হাসির বিদ্যুৎ খেলে যায়।
শঙ্খ প্রবালের হার গলায় দোলে, নাকে নোলক,
দু’ হাতে লাল মোতির চুড়ি আগুণ ঝলসায়।

তার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাত পাখিরা ডানা ছড়িয়ে
বসে থাকে তার পাশে, চুপচাপ, তারাও জানে।
লেখা শেষে প্রেমিকা যত্ন করে মুড়ে নেয় পাতা,
চিঠিটি বেঁধে দেয় শুভ্রবসন লক্ষী পেঁচার পায়ে।

সে উড়ে চলে যায় বহুদূর, সারা রাত পার করে
ভোরের উজানে সেই তার ঘরের জানালায় বসে।
ঘুমে ঢোলা প্রেমিক চোখ মুছে হাতে নেয় সে চিঠি
তাতে লেখা, “সুবর্ণ গোলক সে শুধু তোমারি তরে।”

একটি মেয়াদোত্তীর্ণ অক্সিজেনপাইপের গল্প

জীবন থেমে আছে সময়ের মেদে; কারেন্টের জালে আটকে থাকা মাছের মতোন। স্পিনারের মতো ঘুরছে চোখ— নিঃশঙ্ক বাঁচার আকুলতায়।
তবুও চলো, হাওয়ায় দোলানো বেয়াড়া চুলের ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি বিলের কিনারে।

বৃন্তের শক্ত বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়া বোঁটার মতো— হৃদয় বেয়ে নেমে গেলে দুর্বোধ্য রাত। তোমার খোঁপায় গুজে রাখা নিশিগন্ধায় চেয়ে রবে যে কালের মৃত ভ্রমর; তার চোখ থেকে কেড়ে এনে স্বপ্ন— লিখে নেব আনুগত্যের নতুন ইতিহাস।

তুমি শুধু উন্মোক্ত করে দিয়ে উজ্জল ভোর, একটু কাছে এসো। আমি তোমার সিঁথি ভরে ঢেলে দেব ফের; মুঠোভর্তি সূর্যকণা।

মানুষ অন্ধ হয়…

মানুষ অন্ধ হয়
হতেই হয়- প্রেমান্ধ, ধর্মান্ধ, ধনান্ধ, ক্ষমতা কিংবা শোষোণান্ধ
কেউ কেউ আবেগান্ধ, কেউ কেউ রাগান্ধ
আবার কেউ কেউ ডুবে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় মোহান্ধতায়
অন্ধত্ব মানুষকে নিয়ে আসে চারিত্রিক এককে-
অন্ধত্বে আত্মস্থ হয়ে উঠা মানুষ গুলো একে একে ধারণ করে
বিশেষ বিশেষণ,
অন্ধত্ব জুড়ে থাকে তাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে…
এবং কি তাদের যা কিছু অর্জন,
যা কিছু ত্যাগ- বিসর্জন, উপমা, উপাধি থাকে
সর্বত্রই এই অন্ধত্বের জয় জয়কার অবাধ বিচরণ!
যে যত বেশী অন্ধ সে তত বেশী সফল
পৃথিবীতে অন্ধত্ব বরণ করা ছাড়া আর কোন নিস্তার নাই…

পার্থক্য কেবল জন্মান্ধ মানুষের
জন্মান্ধের কাছে দিন রাত সবিই সমান অন্ধকার
অন্ধকার তার কাছে স্বচ্ছ দিনের মত, সে তো জানে না স্বচ্ছ দিন কি!
আলোর স্বাদ তার কাছে নিছক শব্দ স্বর
শব্দই তার আলো…
সে বোঝে উত্তাপ, হিমাদ্র,
বৃষ্টি তার কাছে স্রেফ রিমঝিম; আর্দ্র- অনার্দ্র রাত
বাতাস, তাকে ছুঁয়ে জানিয়ে দেয় ফুলের প্রকার ভেদ, নদীর রূপ,
নারীর বিশুদ্ধতা
আশ্চর্য হচ্ছে- সেও হাতড়ে বেড়ায় প্রতিটি স্থাবর অস্থাবর
দারুণ এক অন্ধ বিশ্বাসে…
জন্মান্ধের কাছে অন্ধ-বিশ্বাস ছাড়া আর কি উপায় আছে?

অথচ-
আমরা হতভাগ্যরা প্রতিদিন অন্ধ হচ্ছি!
অন্ধের মত হাতড়ে বেড়াচ্ছি
নতুন নতুন গন্ধ, সুখ… প্রতিদিন বদলাচ্ছি সুশীল মুখোশ!
আসক্তির অন্ধত্বে জেগে আছি উন্মুখ…আক্রোশ; তৃষ্ণার্ত চাতকের মত
না পারছি দাড়াতে বিশেষ কোন এককে
না পারছি বসতে নিশ্চিন্তে…কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছি
ঘুরে ফিরে একিই বৃত্তে!

আকাশ আমার ভরলো আলোয়

ch

ভোরের আকাশে ঝুলে আছে শরতের আলো;
শ্রাবণের রঙ নেই নীলে, হলো না আর মেঘ কালো;
শ্রাবণ যায় বৃথা, বৃষ্টির ধারা আর বইলো না
তীব্র উষ্ণতায় মনে শান্তি আর রইলো না।

এই শ্রাবণ যেন তুমি, আগুন খরা
যেন আগুন দিয়ে গড়া
কেমন অহম বলো তার, ঠিক যেন তুমি,
একটু খানি বৃষ্টি হয়ে ঝরে না শ্রাবণ,
ভরলো না সুখে মনের জমি।

কেমন যেন হয়ে গেল শ্রাবণ, তোমার মত
বর্ষার মৌসুমে হিম জল না ঢেলে বুকে বাড়ালো তাপের ক্ষত;
উষ্ণতার আচে পুড়ে যাই
কী করে বুকের তারে বলো সুখ বাজাই।

বৈরী হাওয়ায় ভেসে যাই, ডুবে যাই
কী করে সুখের ফুল দিয়ে মনঘর সাজাই?
শ্রাবণ যেন তুমি হয়ে গেল
আগুন আগুন, করে দিল জীবন এলোমেলো।

তুমি শরত হও না, হলে না হেমন্ত
কেমন বিতৃষ্ণায় পুড়ছে এ মনতো;
শ্রাবণ তাকালো না ফিরে, শ্রাবণ যেন তুমি
করেই গেল কী দিন কী রাত, একই গোয়ার্তমি।

তুমি শরতের মেঘের মত হলে না নরম,
আর শ্রাবণ ঝরায় না বৃষ্টি, ঢেলে দিল গরম
পুড়ে পুড়ে ছাই, নেয়ে ঘেমে বিতৃষ্ণা ডুবে ডুবে
সুখের স্বপ্ন গেল কর্পূরের মত উবে।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

ওহে জয়দেব

এক
মাটি থেকে ছিটকে উঠে মাটিতেই ভেসে যাবে,
জানা।
ঝরনা হল মাথার পাগড়ি, তাতে গোঁজা ময়ূরের ডানা
ঝরনার কোমরে বাঁকা নদী, চার চাঁদের আলোয় ঝলসাচ্ছে কাজল
ও মন ময়না ময়না ময়না… কৃষ্ণকথা বল

দুই
আমার যে ভবঘোরা — সুন্দর হবে
বনপাস স্টেশনে আচমকা ট্রেন থেমে গেলে
ব্যাগ থেকে বের করব রিভল…, নাহ বিস্কুট
কষ্টের নাড়িভুঁড়ি দুহাতে ভেতরে ঠেলে
গুণছুঁচ দিয়ে খুলি সেলাই করেছি
এবার এক প্যাকেট সবুজ আমলকি… খুচরো পয়সা
মেঝেয় ফেলে দিয়ে হকার মেয়ের পা ছোঁব।
ছায়ায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান থাকবে এ-জীবনে;
প্রুফে একটা বানান ভুল তন্ন তন্ন করার মতো
আমি খুঁজব প্রেম…

খুঁজতেই তো এসেছি

তিন
সে গৌরহরি সেবাশ্রমই হোক, কি
পবন বাউলের আখড়া
আমাকে দুপুরদুপুর ভাতে বসিয়ে দাও
সে হোক অজয়ে সোয়া-নগ্ন মেয়েবউ, কি
লোভে ফাজিল সাধু
আমাকে ঘুরঘুর করাও গাঁজাকলকের চারপাশে
গোল অন্ন-মুগডাল গোল পাতে
গোল ডাবুহাতায় বিতরণ করো
সে ফানাফানা কলার কাঁদি হোক, বাস্‌নায় জড়ানো,
মুসলমান কুটুমবাড়ি নেবে
কিম্বা দুশোমতো কুঠোভিখিরি
নদীকাটা দুধারি রাস্তায়;
আমাকে ভ’রে উঠতে দাও কান্নাসজলে

যেটুকু যাবে, তার সঙ্গে অবশিষ্ট উব্‌জে চলে যায়
তারপর যাবজ্জীবন আমার পরিবেশনা
আর তোমাদের ‘দারুণ খেলাম’!

দাঁড়াও, আগে নিজে মুগ্ধ হয়ে নি’

চার
তোমাকে কৃষ্ণনগরে দেখেছি না, দাঠাকুর?
আমি রবি, বউ খুঁজে পাচ্ছি না, সেবাইতকাকা।
জয়দেব-পদ্মাবতী মিলনমন্দির থেকে নেমে
আমরা আলাদা হয়ে গেনু। মেলায় পুলিশ আছে
নাম জিগ্যেস করার জন্যে। লিখে নিয়ে
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাইকে অ্যালাউন্স ক’রে দেবে।
কিন্তু বউটা বড় কাঁচা আমার, পূর্ণিমা।
এবারে যে-সে ডাক দেবে — পূর্ণিমা ধীবর,
এদিকে এসো; পূর্ণিমা ধীবর, চলো আমার সঙ্গে…

বউ হারিয়ে গেছে, ফিরে পাব
চলে গেলে আর ফেরত আসবেনি

পাঁচ
গৌরীদাসের সঙ্গে চৈতন্যের মিলন হল কোথায়?
কেউ বলছেন শ্রীখণ্ডে, কেউ কাটোয়ায়,
কেউ বা মাধাইতলা। আমরা বলি,
স্থান গুরুত্বের নয়, কথা হল কাল।
কোন কালে দেখা?
যেথা যেথা নিত্য হরিনাম সংকীর্তন।
সেথায় নিত্য নবদ্বীপধাম, নিত্য বৃন্দাবন।।

গোরাচাঁদ নিত্যানন্দাদি বন্ধু ও শিষ্যদের নিয়ে নগর-পরিক্রমায় বেরিয়েছেন, বদনে হরিনাম — এমনি সময়ে গৌরীদাস উপস্থিত। তাকে দেখতেই গৌরাঙ্গের মনে পড়েছে শ্রীরাধার কথা। কেননা,
এই গৌরীদাস তো আর কেউ নন,
তিনি বৃন্দাবনের সুবল। মহাপ্রভু গৌরীকে জড়িয়ে ধ’রে “রাধা রাধা” ব’লে উচ্চস্বরে…

আহা, সে কী অশ্রু! কোনও ভক্ত বলছেন
প্রভুর দু’চোখ বেয়ে মুক্তো গড়িয়ে পড়ছে। আবার কোনও ভক্ত — না না, গড়িয়ে পড়ছে মুক্তি। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের ভক্তিরূপ গাল বেয়ে মুক্তি গড়িয়ে পড়ছে গো!

.
[প্রথম অংশ। ‘ভুবনভোজন চলছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে।]

একটা যাপন

হলুদ কুসুমের ভেতর লুকিয়ে থাকা মহিরুহ যাপন
বেরিয়ে এসো, এই রাজ হাওয়া ঘড়ির অবুঝ
মহাপয়ার ধরে পোস্টমর্টেম করো মৃত চোখ,
এমন বিঘ্নিতসুন্দর থেকে আরও কাছের হয়ে ভেবে দেখো
কবে বেদখল হয়ে গেছে পরস্পর পায়চারি-
শেয়ালের যথাযথ আধুলি শব্দ
সেই অভিনব বরফে ভিজে ওঠে পাহাড়ের বড় ছায়া
কচ্ছপের মতো সারারাত, শুয়ে থাকা মাটি—ফসল
পৃথিবীর লতামূল নদী…
এই খুনসুটি খুলে দেয় গোপন গ্রন্থের অর্গান থেকে
পূর্ণ সমর্থন, সেই গান, যার কোনোটাই তুমি দেখনি…

একগুচ্ছ বনের আদেশ আঁকতে পারো, শেষ ছবির
সঙে সন্তপ্ত রঙের ইটচাপা দুর্বাঘাসের নগর—
শ্রেষ্ঠ সংবিধানে শিশুরা নির্লিপ্ত হাসি রেখে যাচ্ছে
এই হামাগুড়ি মানুষের নৈঃশব্দ্য আলাদা করে কেন?

জোনাক জ্বলা একটি রাতে

ch

জোনাক জ্বলা একটি রাতে
তুই কী আমার পাশে হাঁটবি?
সারি সারি গাছের তলে
হেঁটে তুই কী কথা বাটবি?

আয় না একদিন গাঁয়ের পথে
হেঁটে হেঁটে শান্তি কুড়াই
চাঁদের আলোয় জোছনা মেখে
দেহ আর মন একটু জুড়াই।

তুই কি আমার সঙ্গী হবি
আঁধার রাতে হাঁটবি পথে
উঠবি নাকি এক রাত্রিরে
হাতটি ধরে আলোর রথে।

মিষ্টি হাওয়া বইবে যেদিন
যদি জানাই নিমন্তন্ন
সকল কর্ম ফেলে তুই কি
চলে আসবি আমার জন্যয?

ধরবি হাতে দিবি স্পর্শ
ভালোবাসবি আমায় কি তুই?
আসবি একদিন হাঁটবি পাশে
অপেক্ষাতে থাঁকি নিতুই।

তুই আমার পাখি হবি
মনের মাখে বসবি এসে
জোনাক পোকা হবি কি তুই
যাবি বন্ধু সুখে ভেসে?

জোনাক জ্বলা রাত প্রহরে
হাঁটতে ইচ্ছে তোকে নিয়ে
আয় না একদিন দুজন মিলে
সুখ মুগ্ধতা নিই ছিনিয়ে।

ড্রামা ও ড্রাকুলা

পর্দা নামার আগেই সরে যাচ্ছে খলনায়কের দল। যারা
বাঁশি বাজিয়েছিল, পরিচালক কেড়ে নিচ্ছে তাদের হাতের
বাঁশি। নেপথ্যের সুরে যারা দিয়েছিল কণ্ঠ- ধমক দিয়ে
কেউ থামিয়ে দিচ্ছে তাদের গলা।

কেউ কেউ বদলে দিতে চাইছে রক্তদাগ মুছে ফেলার পদ্ধতি।
বলছে, একাত্তরেও রক্তাক্ত হয়নি এই মাটি,
যারা’ ভুল করে যুদ্ধ করেছিল, এখন বরং তারাই
করছে অনুতাপ’ – এমন কথাও বলছে কেউ কেউ।

তারপরও শরতের চাঁদকে সাক্ষী রেখে একটি কিশোরী
পা ভিজাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। ভরা আশ্বিনে সাইকেল
চালাতে চালাতে একটি কিশোর রোমন্থন করছে তার
বালকবেলা। যুবা কৃষকের লাঙল আর অষ্টাদশী তরুণীর
সেলাই মেশিনে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ।
#

শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ

সারাজীবন ধরে দেখলাম
অদ্ভুত কিছু প্রজাপতি
খেয়ে যায় প্রেমের লার্ভা
সবুজ ধানের পাকা ছোঁয়া
তালশাঁস নরম হৃদয় আমার

সারাজীবন প্রেমিকদের দেখলাম
ধূর্ত শেয়াল অথচ
প্রজাপতিগুলোর সামনে
শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ যেন
এতই চতুর, এতই বোকা

আশা

আসবে কিনা জানিনা
তবুও বলি এসো,
জনম জনম আমায় তুমি যেন ভালোবাসো।

থাকবে কিনা জানিনা
তবুও বলি থেকো,
জনম জনম আমায় তুমি এরূপ পাশে রেখো।

হাসবে কিনা জানিনা
তবুও বলি হেসো,
জনম জনম হাসবার জন্য আমার পাশে এসো।

বলবে কিনা জানিনা
তবুও বলি বলো,
জনম জনম আমায় তুমি সঙ্গী করে চলো।

নেবে কিনা জানিনা
তবুও বলি নিও,
জনম জনম আমায় তুমি আদর যত্ন দিও।

রচনাকালঃ
০৮/০৬/২০২৩

চাপা

চাপা ক্রোধে
চপলা চাপাতি উন্মত্ত করি নৃশংস নৃত্যে
যতক্ষণ না
দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে কাধে চাপানো ক্রোধানল…
শানিত বুকে
শোণিতের শীৎকার
মুখরিত শ্লোগান চাপিয়ে
নিংড়ে তুলি অতলের শেকড়, আসল অস্তিত্ব!
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতায় চেপে থাকা ঝড়
মুখোমুখি বেধড়ক হাঙ্গামা, অজস্র শব্দ-স্বর….

নিড়ানি পেয়ে উঠে আসে বিবস্ত্র যুগ
কালের গহ্বরে ডুবন্ত আবেগ, পুরনো অসুখ!

হয়তো আমি নির্বোধ
বুঝিনা কিছু
এবার বেরিয়ে পড়বো অনন্তের পথে
তোরা আসিস না কেউ
এদিকে ফিরেও তাকাস না কেউ
আমি একা চলতে চাই.. একদম একা
আমার সহ্য হচ্ছে না ক্রোধ!…

২১/৯/২৩

একটি কবিতার চারাগাছ

আখাম্বা সময় একদিন একটা গাধা ছিলো..
এখন সে দুরন্ত টগবগে ঘোড়া হয়েছে;
ছায়াপথের মায়া ছেড়ে সে এখন আমার
এই শহরে এসে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে!

তবুও আমি পিতলের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ করি
ভাগ্যিস ভাগ্যের চাকা এখন যত্রতত্র ওড়ে
আর আমার বুভুক্ষু সময় কেবলই মাটি খুঁড়ে!

এতোকিছুর পরেও আমার হৃদয় ফুঁড়ে
একটি কবিতার চারাগাছ জন্ম নেয়; সেও জন্মান্তরে
পত্রিকার পাতার হাত ধরে বৈতরণী খুঁজতে চায়
আমি ছাড়া আর সব তা পাখিরা জানে
আমার সেই চারাগাছ আজ বড় হতে চায়!
আমার সেই চারাগাছ আগাগোড়া জল চায়!

সে জানে না.. সমুদ্রে কত বিশাল জলরাশি
কেবল পান করার মত কোনো জল নাই..!!

এক আশ্চর্য মায়ায় বেধেছো আমায়

happy

মায়া আর মাধুর্যে তুমি এক অনিন্দ্য জাদুকর
আমি ঠিক কবে এতটা মুগ্ধতা নিয়ে
কাউকে হৃদয়ে ধারণ করেছি, মনে পড়েনা।

প্রিয় নিয়মের বেড়াজাল ভেঙ্গে
স্রোতের বিপরীতে এসে
যদি জড়িয়ে রাখতে পার;
তোমার বাহুডোরে……

তবে হয়তো এ পৃথিবীর সকল সীমাবদ্ধতা
সকল সংকীর্ণতাকে ছুড়ে ফেলে
একক এবং অন্যতম করে অনন্তের পথে
শুধু তোমাকেই বাঁধতাম আমার যাপনে!

প্রিয়তম, কী এক আশ্চর্য মায়ায়
বেধেছো আমায়।।
তোমার প্রহরের পথে অকারণে অপ্রয়োজনে
তোমার প্রতি আমারও মুগ্ধতা
শুধু বেড়েই চলেছে কেন যে এমন হয়

কোন ফাল্গুনের স্মৃতি ধরে
হৃদয়ের গভীরে জমিয়ে থাকা বসন্তের দাবানল
নিমিষে এই পৃথিবীকে তুলেছে কাঁপন

আজকাল তোমার সাথে কথা না হলে
খুব অসহ্য ব্যথায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণের
কি এক কষ্ট ভেঙ্গে দিচ্ছে ট্রিলিয়ন বছরের অহংকারের প্রবাল প্রাচীর
যেন আমার চারপাশে মহাসাগর শূন্যতায় হাবুডুবু
আর হবেনা পলকে ফেরা।

সমাজের চেপে দেওয়া আতঙ্ক,
বিস্মৃতির বিধি নিষেধকে তোয়াক্কা না করে চলে এসো, চলে এসো এই অনন্য বেলার পড়ন্ত বিকেলে এখানে জমা রয়েছে হাজার বছরের অতৃপ্ততা।

ভেঙ্গে চৌচির করে দাও সকল অহমিকা,
জমে থাকা জিদ, যা বরাবরই জীবনকে নষ্ট করেছে।

নতুন করে শুরু করা
নতুন করে,বেঁচে থাকার এক অনন্য প্রচেষ্টায়
আমি গ্রহণ করতে পারি হাজার বসন্ত।

চলে এসো, এ জীবনে জলস্নাত
শুভ্র এক কদম ফুল হয়ে, এখানে জমা
মহাবিশ্বের সকল অন্ধকার
এই গভীর অন্ধকারে এসে আলোয় বিমোহিত করো আমায় আমার অধরা বসন্ত।

রক্ত জবার মত মন আমার

ch

কেবল যে তুমিই কষ্ট দাও তা নয়
কর্মস্থলও আমায় হৃদয়ে তুলে দেয় ব্যথার ভার
তুমি অথবা কর্মস্থল কারো সাথেই নেই আর প্রণয়
আমি একলা নেই যেন কোথাও আমার পরিবার।

বুকে যে রক্ত ক্ষরণ হয় তা কেব তুমিই দাও না
কর্মস্থলও আমায় ভাসায় ব্যথায়
সবারই স্বার্থ যেন আমার কাছেই পাওনা;
কত খোটা কত লাঞ্ছনা পাই কথায় কথায়।

সবাই রক্ত জবার রঙ চিনে, রক্ত ক্ষরণ কী চিনে না
আমি বড্ড আবেগী ছিলাম, মন ছিল সবুজ
কত করে সমস্যাগুলো বলি, বলতে বলতে মুখে তুলি ফেনা
কেউ বুঝে না আমায়, তোমরা বড্ড অবুঝ।

আমার মন বুঝলো না কেউ, না অফিস, না তুমি
বুকের ব্যথা দেখাবো আর কারে
আমি রক্ত জবা, ঝরেই যাবো, বুকের নদীতে ব্যথার ঊর্মি
আমি যেন আমারও নই, আমি ডুবি ব্যথার বালিচরে।

কেউ রাখেনি কথা, সবাই চাপিয়ে দেয় কষ্ট
কাউকে কিছু বলিনি, কেদেছি শুধু
আমার মূল্যবান সময়গুলো তোমরাই করেছো নষ্ট
বুকের উঠোন আজ মরু ধুঁধু।

রক্ত জবা গাছ বুক উঠোনে করেছি বপন
দেখে যেয়ো রক্ত ক্ষরণের রঙ কেমন
একদিন সব পাবো ফিরে দেখে যাই দিবা স্বপন
এসব ভেবে ভেবে কষ্ট পাই, আমি এবেলা আনমন।

.
(ক্যানন, চুনারুঘাট)