বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

অজানা গন্তব্যের প্রতি ভালোবাসা

shamim

অজানার রাজ্যে, ভালবাসা তার পথ খুঁজে পায়,
একটি অজানা যাত্রা, যেখানে হৃদয় দুলতে সাহস করে।
অনিশ্চয়তার কুয়াশার মধ্য দিয়ে, আমরা দুজনেই অন্বেষণ করি,
একটি প্রেমের গল্প উদ্ঘাটন, চিরকাল আমরা অনুনয়.

রাতের গভীরে, আমাদের আত্মা উড়ে যায়,
তারা দ্বারা পরিচালিত, কখনও এত উজ্জ্বল উজ্জ্বল.
কোন মানচিত্র নেই, কোন কম্পাস নেই, শুধু আমাদের হৃদয়ে বিশ্বাস,
আমরা এই ভালবাসা পরিক্রমণ করার সময়, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত প্রদান করে।

যদিও পথ মোচড় দিতে পারে, এবং সন্দেহ দেখা দিতে পারে,
আমাদের ভালবাসা বাতিঘর, আমাদের চূড়ান্ত পুরস্কার।
এই অজানা রাজ্যে, আমরা অনন্তকাল ঘুরে বেড়াব,
প্রেমের গন্তব্যের জন্য, আমরা এটিকে আমাদের বাড়ি করব।

দ্বিতীয় মানব

মানব এসেছে কাছে, দ্বিতীয় মানব।
প্রথম মানব নয়!
প্রথম মানব আজীবন পাশে থাকার
প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।
কারণ তিনি ছিলেন লোভী, প্রতারক
মিথ্যাচারে ভরা ছিলো তার অন্তঃপুর।
দ্বিতীয় মানব সমাজের দর্পণ
যার কাছে থেকে সংক্ষিপ্ত জীবন চলার
অশেষ উপদেশ পেয়েছি ;
তাই আমি তাকে গ্রহণ করেছি
আমি তাকে নিজ হতে বিভাজন হতে দেইনি।
তার প্রতিটি কর্মই বিখ্যাত
কারণ সে কিংবদন্তি।

রচনাকালঃ
১২/১১/২০২২

মধ্যে বয়সী ললনা

হে মধ্যে বয়সী ললনা
তুমি করো না ঐ দূরন্ত বালকের সঙ্গে ছলনা।
যে বালক বিস্ময়-বিহ্বলে ভাবে তোমার কথা
দেখে মনে হয় বুকে তার অদ্রি সমতুল ব্যাথা।
তোমার বিবর্ণ বিবর্তনে বিরূপ বিধানেও
তোমার স্বপ্ন বিলাসে বিমোহিত সেও।
হে মধ্যে বয়সী ললনা, তুমি দিও তারে ভালোবাসা
দিও তারে এক বুক আশা, করো না নিরাশা।
করো না কভু তার সঙ্গে ছলনা
হে মধ্যে বয়সী ললনা।
নতুনকে পেয়ে তুমি তারে কভু ভুলনা
হে মধ্যে বয়সী ললনা।।

রচনাকালঃ
১১/১১/২০২২

আদরে আপ্লুত

dd

ছাই রঙা মাঠের কোমর্য জুড়ে
কিলবিল করে উঠে শিশিরমন্ডিত শস্যফুল,
আশ্চর্য এক নিসর্গ ধ্বনিতে নেমে আসে সূর্যকণা-
ঐশ্বরিক আদরে আপ্লুত প্রজাপতি, পতঙ্গকুল।

আজ তবে ভেস্তে যাক যাবতীয় নিয়ম-নখর
স্নান ঘরে পড়ে থাক বাসি কাপড়,
মহুয়ার ঘ্রাণ মেখে চলো ছুঁয়ে আসি নন্দিত উদ্যান।

কলমিলতা

তুমি সব জানালা খুলে রাখো
আমি খুজে বেড়াই তোমার অস্তিত্ব
জ্যোৎস্না রাতে নক্ষত্রেরা স্থান বদলায়।
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বল কে চায়
স্বর্ণ সিংহাসন অথবা ব্যাংক ব্যালেন্স?
তুমি নাওনি আমায় তাই তাই অভিমানে
আজ পদ্মকলি আধবোজাই রইলো
পাখিরাও আজ ভালবাসার গান গায়নি
তোমার শ্রান্ত পায়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট
তুমি আমায় নাওনি তাই আকাশটাও থমথমে।

নুন

রাইচোখ—ঢেকে রাখা চশমায় মুখ তোমার
পাউরুটি ঝোলানো ফোঁকর দিয়ে যতটুকু
দেশ দেখা যায়, আটপৌরে শরীরের মতো;
তুমি—ফসলে বাধানো—দু’ধারে গান, সুর যত—
দুটো অক্ষর বালিকা কত প্রত্নতত্ত্ব অন্ধকারে
ধন্না ধরে আছে, অই চাউর রোদ—উত্তর
কুয়াশা। পেছনে দৌড়াতে টের পায় সমুদ্র
নুন—মেরুদণ্ডের ফাটল ছুঁয়ে শুয়ে পড়েছে
মানুষ স্রেফ এক হুজগে হাওয়া। ভাটির সন্তান—
বাদাবনের উজান পাতায় আছড়ে পড়া চাঁদ!

আগমনীর প্রারম্ভ মূহুর্তে

সেই কালো ছেলেটা দেখছিল।
এই সময়টায় এবং
শুধুমাত্র এই সময়টায় সে সময় পায়
তার রূপকথার পৃথিবীটা কেমন
আস্তে আস্তে মাথা তুলছে।

কালো অ্যাসফল্টের রাস্তার অর্দ্ধেক জুড়ে
ও পাশের একফালি ফাঁকা জায়গায়
কয়েকদিনের সমূহ ব্যস্ততা,
কত রকমারী জিনিসপত্র জোড়াতালি
কত মানুষের আনাগোনায়
কখনো রাজপ্রাসাদ, কখনো প্রেমের দূর্গ।

ছেলেটা এত শত বোঝেনাকো,
বোঝার কিম্বা ওগুলো ছোঁয়ার কোনো
মৌলিক অধিকারও নেই তার;
তাতে কিচ্ছুই যায় ও আসেনা
বিস্মিত দুই সরল চোখের,
আসলে সে এত জানেই না!

একবার সে একটা আস্ত সিনেমা দেখেছিল।
কারা যেন সারা বিকেলের সূর্যডোবা আলোয়
মাঠজুড়ে টাঙিয়েছিল অত্যাশ্চর্য এক কাপড়,
আর ঝুপ করে অন্ধকার লাফিয়ে পড়তেই
সে এক মায়াবী জগৎ তার মনে সেঁধিয়ে গেল।
মাঝেমাঝে ঘুমের অবকাশে সেও
হয়ে যায় সিনেমার সেই মায়াবী পুরুষ…
তারপরেই, খিদের অসভ্য খোঁচায় সব উধাও।

কিন্তু এখানে, চোখের সামনে
যে রোশনাই জুড়ে চারদিনের অলীক পৃথিবী
ওরা কিছু খেতে দেয়না কেন?
ওরা কিছু খুদ তুলে দিলে মা টাও
ফুটপাথে মরতো না ওষুধের অভাবে।
ছেলেটা তখন তাকিয়েছিল একদৃষ্টিতে,
সেই কালো হাড়জিরজিরে ছেলেটা।

গায়ে কোনো জামা ছাড়াই দাঁড়িয়েছিল
সূর্যাস্তের পরম আদরী আলোয়,
শতচ্ছিন্ন প্যান্ট অবহেলায় নেমে যাচ্ছিল নিচে,
কিন্তু আশ্চর্য, ছেলেটা উলঙ্গ হচ্ছিল না।
ছেলেটা দেখছিল আগমনীর তুমুল ব্যস্ততায়
সেই সুগন্ধী সুবেশ কর্ত্তাদের পরনেই
কোনো কাপড় নেই, চোখে কোনো পাতা নেই,
ওদের স্বচ্ছ অলিভ ত্বক কোথায় উধাও।

ছেলেটা ক্রমশই আকাশ ছাড়িয়ে উঠছিল।
সেই কালো শতচ্ছিন্ন ছেলেটা,
তার সমস্ত খিদের আগুন হাতের তালুতে নিয়ে
একদৃষ্টে তাকিয়েছিল
সেই সুন্দর মায়াবী জগতের দিকে, যেখানে
মা কোনোদিনই আসবে না।

28
.
(আসছে পুজো। আমার তিতলিঝোরা কাব্যগ্রন্থের একটা কবিতা এসময়ের জন্য দিলাম এখানে)

তোমাদের সংলাপ থেকে

তোমাদের সংলাপ থেকে আমার নাম মুছে ফেলতে পারো নি,
সে কৃতিত্ব আমার নয়। বরং সেই সমুদ্রের গান শোনে যে পাখি
উড়ে গিয়েছিল উত্তরে, আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম
আমার প্রিয় পতঙ্গেরা যেন নীলান্তেই খুঁজে পায় আমার নাম,
তাদের রিসাইকেল বিনেও যেন খুঁজে পায় আমার সদ্য
ডিলিট করা ছবি………

কিংবা আমার পোষা টিয়ে, যদি একদিন ফিরে আসে
এই ভিটেতে- সে যেন জানতে পারে,
আমার কাব্যলেখায় আমি ব্যবহার করেছিলাম
তার পালক। শুধু ‘কবি’র খাতায় নাম লেখাবো বলে।
#

প্রাইভেট ফার্মে এটা হবে

এক
আমার ভালোবাসার সামনের দুটো দাঁত ফাঁকা
ভালোবাসলে বীভৎস দেখায়!

দুই
ইরানি ট্রফির প্রথম পনেরোতেও যেদিন আস্তানা দিলে না, তবে থেকে ঘুমের হসসোউকার
খুলে হাওয়া। আজ অবসর ঘোষণার পর যন্ত্রণায়
দাঁড়ি পেল মুটিয়া মন

শুধু ভারি চোখদুটো
শুক্রথলি ভারি হয়ে আছে

তিন
আমার লাইফ রজনীকান্ত্‌
একমুখ দাড়ি কেটে চুলটা একটু ফুলিয়ে নিলেই
ছাপ্পান্ন সপ্তাহ
কিন্তু আসলে ফাঁকা বাড়িতে একা
খালি পেটে শুয়ে থাকে রজনীকান্ত্‌
তাকে কেউ ভালোবাসে না (না-টা ইকো হবে)

জ্বলন্ত সিগারেট ডিগবাজি খেয়ে নামছে
পেট্রোলসাগরে

চার
তুমি হাই-প্রোফাইলের কাছে গেছ
এই সপ্রতিভ যাওয়া তোমাকে জীবনের
‘কভি গম’ অংশটুকু দেবে না
তুমি আকর্ষণীয় চোখ, দারুণ পিআর
আর দিনে পঞ্চাশটা পুশ আপের কাছে…
একটা জব হাতে থাকতেই
বেটার অপশানে চলে গেছ

প্রাইভেট ফার্ম বলেছে কেন, বস!

পাঁচ
ও-জানোয়ার তোকে বিখ্যাত ক’রে গেল
বুঝতে পারছিস না?
রেসিপি খসছে না হৃদয় থেকে?
এই সুযোগ, দুর্দান্ত সব আইটেম নামা, চন্দন!
ফুসফুসে আইসক্রিম জমিয়ে শিরায়
গাজরের স্টু সাজাবি, আর কাঁদতে কাঁদতেই ব্যালাডের সুরে ঠোঁটের স্যালাড কুচিয়ে নে
কতদিন রক্তেমাংসে ট্রিট দিসনি আমাকে, বাবুজান

ছয়
এই প্রেম বারোমাস
এই প্রেম চিরদিনের
আমি বনগাঁ লাইনের সেই দৃষ্টিহীন প্রেমিক
তবে ইশারা করলে দিতে পারব না
হাত বাড়িয়ে স্পর্শ ক’রে চেয়ে নেবেন

আমিই সে
প্রতিদিনের পরিচিত
সোনামুগ ডালে কাঠকয়লার আঁচে তৈরি
বাংলার ঝিরিঝিরি নিজস্ব ভালোবাসা

আছি, বলবেন

.
[‘সহ্যকে যন্ত্রণা করি’ বই থেকে]

পাখির জন্মদিন

আজ পাখির জন্মদিন—সবুজ বনের অর্গান খুলে
পাহাড় ভরতি মারিজুয়ানা দুপুর চারদিকে উড়ছে
পথের মতো ভ্রমণ আর মানুষের চেহারায়—ভেসে
ওঠে দূরের গ্রাম—শহর। শিশুদের খেলনায় দাঁড়ায়ে
বাঁকা নদীর মতো—মৃত সন্ধ্যার বিলরোবিন চাঁদ—
শৈশবের বাগানবাড়ি, কাঠের দরজা খুলে দিয়েছে

পাখি ওড়ে—রমণীরা সন্তানের চোখে চোখ পাতায়
এখানে ভীষণ একটা পথ পাখিরা বহন করে—
আপন ভেবে—ভোর, অভিরূপ বংশগড়ন লাফিয়ে
ওড়ে—তাতে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ—নাচে দুটো গান
— তীরবর্তী ছায়াযুবতীর এই অতল খুনসুটি
সাজানো— দীর্ঘ বর্ণচ্ছটা বৃষ্টি–দুপুর, পথিকের মতো;

আকাশে যেন চৈত্রের খরা

choo

বর্ষা চলে যায়, শ্রাবণের ধারা বয় না ধরায়
আকাশটা দখল নিয়েছে চৈত্রের খরায়
দিন যেন তোমার মতন, কড়া রোদ্দুর;
বিতৃষ্ণা জমছে মনে এক সমুদ্দুর।

আকাশে শুভ্র মেঘেদের আস্ফালন
কী করে অঝোর ধারার বৃষ্টির স্বপ্ন করি লালন
চাই বয়ে যাক বৃষ্টির ধারা মর্তের উপর সকাল দুপুর;
বৃষ্টি পড়ুক ঝরোঝর টাপুর টুপুর।

বৃষ্টি আসে না আর, দিন হয়ে ওঠে তোমার মত
উষ্ণতায় ছেয়ে যায় বুক, বাড়ে বুকে বিতৃষ্ণার ক্ষত
দীর্ঘশ্বাসই দিল প্রকৃতিও, যেমনটি দাও তুমি
আকাশও যে করে যাচ্ছে গোয়ার্তমি।

আকাশের বুকে জমুক কালো মেঘ
ঝরুক ধরায় শ্রাবণের আবেগ
দু’ফোটা বৃষ্টির বিন্দু শান্তি নিয়ে আসুক আমার জন্যর
আকাশ কেন বল তো তোমার মতই হলো বন্য ।

থোকা থোকা শুভ্র মেঘফুল
মেঘফুল হয়ে যাক আমার যত ভুল
তোমার ভুলগুলো যেন চৈত্রের খরা
অনুতাপ নেই তাই, বৃষ্টি নিয়ে আসে না মেঘ হরকরা।

ও আকাশ বৃষ্টি ঝরা, বন্ধুর মত হোস না তুই
কালো মেঘ তোর বুকে নিয়ে আয়, মন বাড়িয়ে ছুই
আকাশটা কেন তোমার মতই হয়ে ওঠলো আজ;
শুনতে যে চাই বৃষ্টির রিনিঝিনি আওয়াজ।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, সিএমএইচ, ঢাকা, মিরপুর)

সে কবিতা নয়

কলমের নিব ঘষে যে পাখি বের হয়ে আসে….
পতপত করে ওড়ে যায় সাদা কাগজের গায়
গায়ের জোরে হয়ত কামড় বসায় কোনো না
কোনো কোরা, আনকোরা পত্রিকার
পাতায়
হয়ত ছাতাও বিস্তার করে বৈসাবি রোদের মাথায়!

আমার কাছে কেনো জানি কেবলই মনে হয়…
সে আর যা-ই হোক…. সে কবিতা নয়;
বরং
যে পাখি হাজার প্রচেষ্টাতেও উড়তে পারে না,
শরমেই মরে থাকে লাল দালানের বন্দি বাঁদর
মেহনতিরে দিতে পারে না একচিমটি বুনোআদর
ছুঁয়ে দিতে পারে না কোনোএক ভোরের সবিতা
কেবল ধুঁকে ধুঁকে মরে পড়ে থাকে হৃদয় কাবায়
আমার মতে, সেই হলো কবিতা. সেই কবিতা!

অন্ধকার শুনে শুনে

পৃথিবীর কোমল হৃদয়ে চাঁদ যেন জেগে রয় –
মানুষের বুকের গহীন ক্ষত হয়ে;
জেগে রয় প্রকাণ্ড আসমান –
আমার নির্বাক চাহনি হয়ে।

সন্ধ্যার গাঢ়তর রঙে গ্রহ ছুটে যায় নক্ষত্রের পানে-
সমুদ্রে ঝিনুক হেঁটে যায় জলের দিকে।
পেলব অন্ধকারে – মানুষ কেবল আসে না
মানুষের কাছেপিঠে।

এ অভিশাপ
এ শাপ
এ শঙ্খ
এ সখ-
এই আমার বাঁচিবার অথবা
মরিবার সুতীব্র শখ।

যদিওবা রাত আর আসমান চিনেছে মানুষ –
কবে কোন নৈঃশব্দকে শুনে-
কার বুকে কে রেখে পা-
শব্দকে নাম দিয়েছে ‘অন্ধকার’;
কে গেছে মরে ঐ অন্ধকার শুনে।

জানে না সে কথা-
কবে কোন মানুষ এক, একা-
ভেঙেছিল পাহাড়।
দুর্দান্ত অন্ধকার রাত্রে-
মানুষের মনে পড়ে পাহাড়-
মানুষ এক পাহাড় – যদি বুক খুলে দ্যাখো।

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়
রাত নেমে এলে গাছেরাও হিংস্র হয়ে উঠে। পাতাগুলো ছড়াতে থাকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

আমার যে কী হয়! রাত নামলেই ইচ্ছে করে কোন ঝোপালো গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে সারারাত পাতার বাঁশি বাজাই। যেমন বাজাতাম শৈশবের অলস উদাস দুপুর গুলোতে। বাজাই আর পান করি সোনালি জ্যোৎস্নার অমিয়দ্রাক্ষারস।

আমার কোন আপত্তি নেই রাতভর পাতার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ফুসফুস ভরে নিতে। সারাদিন কত মানুষের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ ঢুকে যায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আর শরীর সেই বিষগুলো নিতে নিতে হয়ে গেছে নীলকণ্ঠ পাখি। কণ্ঠনালীতে জমে আছে কালকুটের ভরা থলে।

হয়না। রাতগুলো থাকে লৌহদরোজার নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বন্ধী। দূরে থাকে গাছ। পাতার বাঁশি।
পাহাড়সমান অনতিক্রম্য বাধা অতি ক্ষুদ্র এক ইচ্ছেপূরণের পথেও!

পুনর্জন্মবিশ্বাসী হলে আমি চাইতাম খোঁপায় বুনোফুল গোঁজা এক পাহাড়ী আদিবাসি রমনীর জীবন। হ্যাঁ জন্মে জন্মে আমি এক নারীই থাকতে চাই। কিন্তু সেই নারী এই নিগড়বন্ধী সমাজের কেউনা। জীবন হবে মুক্তবিহঙ্গের মতো, প্রজাপতির মতো স্বচ্ছন্দবিহারের। যে নারীরা অবগুণ্ঠনের আড়ালে লুকোয়না তাদের নারীত্ব——–বিব্রত নয় লোভীচোখের নগ্ন-চাহনীতে। উৎসবের রাতে মহুয়ার নেশায় ঘোরমাতাল হয়। নাচে তার পুরুষের হাতে হাতে ধরে, পায়ের তালে তালে তাল মিলিয়ে। ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বঁড়শিতে মাছ ধরে। চুলে মহুয়ার ফুল গুঁজে ঘুরে বেড়ায় পাহাড়ীঝর্ণার মতো বন্ধনহীন।

জীবনতো হবেই এমন সহজ আর অনাবিল।
নিরিবিলি রাতে পাতার বাঁশি বাজানোর সুযোগহীন জীবন আমার চাইনা।
এমন নয় যে এই বাঁশির সুরে তৈরি হয় কোন মোহনীয় আবেশ, বরং খানিকটা বিকট অথবা উদ্ভট মনে হয় কখনো কখনো। কিন্তু বাজাতে পারলে প্রাণের অফুরান স্পন্দনের শব্দ বেজে উঠে ঠিকই।
এই ইচ্ছেপূরণের ব্যর্থতাকে আমূল গ্রাস করে ফেলে সীমাহীন বিষাদের নীলঢেউ। আর সারারাত সেই উথালপাথাল ঢেউয়ের নাগরদোলায় দুলতে থাকে পৃথিবী।

ঘুম আসেনা। ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী কেবলই পালিয়ে বেড়ায়। ছড়াগানের ছন্দে ছন্দে ঘুমে ঢুলু ঢুলু সেই চোখ দু’টোই যে ফেলে এসেছি সহস্র আলোকবর্ষ দূরের শৈশবে —- কেন যে বারবার ভুলে যাই! সেই মায়াভরা শিশুকাল আর ফিরবেনা। তবু হাতছানি দেবে। পিছু ডাকবে। আরো অনিদ্রায় অনিদ্রায় ভরে দেবে ব্যাকুল রাতগুলো।

খুব চড়ামূল্যে কিনে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতাটুকু। আর এই মহামূল্য নির্জনতার ভেতরেই ঢুকে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল। নিজের সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় চাওয়াপাওয়া যোগবিয়োগের অংক। জীবনতো কখনো শুরু হয়না কোন অংকের সূত্রে। তবে কেন এত হিসেবের মারপ্যাঁচ উঠে আসে ! কেন যে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও মনটাকে স্মৃতিশূন্য কিংবা একেবারে অনুভুতিশূন্য করে ফেলা যায়না ! কেন যে!

বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না জীবনে কিছু পাগলামি না থাকলে। এই এখন যেমন একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কুয়াশাভেজা ব্যালকনিতে বসে হি হি করে কাঁপছি। মনে হচ্ছে এর চাইতে আনন্দদায়ক আর কিছু ঘটেনি এই জীবনে। এমনকি এখন যদি আকাশভাঙ্গা জ্যোৎস্না নেমে এসে প্লাবিত করে দিতে চায়, তাকে বলবো– ‘এখন নয়। এখন এই জ্বরতপ্ত অন্ধকার নির্জনতাই আমার প্রিয়। আলো চাইনা’।

যাপিতজীবন আর স্বপ্নের মাঝখানে এক রেললাইন ফাঁক। আজীবন পাশাপাশি তবু কেউ কাউকে ছোঁয়না ; কেবলই সমান্তরে ছুটে চলা আকাশ আর সমুদ্রের মতো।

দৃশ্যতঃ আমার কোথাও যাবার ছিলনা।
তবু চোরাটানে আবার এসে দাঁড়াই ইস্টিশনে। টিকেট কাউন্টারের জানালায় হাত বাড়িয়ে এক অচেনা গন্তব্যের টিকিট কিনে ফেলি।

সব যাত্রাইতো আর পূর্বনির্ধারিত নয়।

রাত্রিরে ১

রোজ নিঃশব্দে এসে শয়ানের পাশ ঘেসে ফোটে যে ফুল
সমস্ত প্রহর কাটে সুরভীর আস্বাদ সন্ধানে তার,
হিমশুভ্র তনুখানি জুড়ে সব পেয়ে না পাওয়ার হাহাকার,
অর্ধঘুমঘোরে এ আমার অলস স্নায়ু অবসাদ মোছে কামনায়।

পাশ ফিরলেই সংসার তার আবির ছড়িয়ে ভোর আনে।

রাত্রি তোমার লীলা
পাশ ফিরলেই রাজা
পাশ ফিরলেই প্রজা!