ট্যাগ আর্কাইভঃ ফকিরের কবিতা

এখন আমার যাবার ঘণ্টা বাজে

হয়ত হাটছ নগর রাজপথে,
হয়ত তুমি পেরুতে
একটা দারুন গানের সুর বাজে,
তোমার হৃদ সৈকতে
থমকে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে চাও,
তোমার পরান ছুটে
নিজেকে খোঁজে ঘুরে দেখতে কি পাও
বাংলার ফসল মাঠে!

হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।
যখন মায়াবী গানটি তালে গাও
অনিন্দ্য আয়োজনে
তাহারা বাইতে কি চায় নিজ নাও
বাংলা জলে আনমনে!

এখন উত্তাল সময় ব্যাটে বলে
ক্রিকেট খেলা মাঠে
বাঘের বাচ্চারা খামচে ধরিয়াছে
চড়ে ক্যাঙারো পিঠে
যখন বিজয়ী উত্তাল গান গাও
নাচো মিছিল নৃত্যে
তখন তাহারা সরবে উঠে মেতে
আহা, আনন্দ চিত্তে!
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

এখন তাহারা কর্মী জাতিসংঘে
বাসিন্দা ওয়েস্টে,
এখন তাহারা কোম্পানি মালিক
সৌদি মিডল ইস্টে।
তাদের জন্ম, বেড়ে উঠা বোস্টনে
পিতার বরিশাল,
যতই সুদূর উপরে তারা তবু
বাংলায় হয় মাতাল।
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

এখন আমার যাবার ঘণ্টা বাজে
ট্রেনের হুইসিল
বৃষ্টিতে ভিজিয়ে শরীর আনন্দে
হৃদয় স্বপ্নিল
এখন যাবার বেলা দেশের ঋণ
কিভাবে যে শোধাই
সন্তানের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তাই
দেশপ্রেম গান গাই।

আমার গানের ট্রেনের অতি গতি
তোমার দিক ছুটে
আমি ততদিনে হবো অতীত স্মৃতি
তুমি ফ্রাঙ্কফুর্টে।
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

আমি

তোমার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে,
পৃথিবীকে ব্যবহার করতে
আমাকে দিলে অনুমতি!
কিছু ফিরে পাব সেই প্রত্যাশায়, মতিগতি
করে নিয়ে ঠিক
আমি বিনিয়োগ করি অধিক।

বলতেই হয় আমার ইতিহাস
ব্যর্থতার পরিহাস।
বিশেষ করে
টমেটোর পাতা ঝরে
এতটা পোকার আক্রমণ
গুটিয়ে নিতে চায় মন!

তোমার উচিত হবে
অধিক বর্ষণমুখরতা ঝরঝর হয়ে না যেন ঝরে, ভবে
অধিক শৈত্যের রাত যেন না আসে,
পৃথিবীর অন্যখানে তোমার রহমতে হাসে-
সকল প্রাণ পায় উপাদান ঠিক যতটা প্রয়োজন
তুমি কর কি দারুণ আয়োজন!

আর এদিকে আমার বেলায়ঃ
আমি বীজ বুনি তালতলায়
মাটি খুড়ি, বাধি সারি সারি আইল জমিনে
তারপর মাথায় রাখি উল্টো হাত, ‘কেমনে
খাইলরে আমার ফসল মরার পোকায়!’
হাত যায় আবার কোমড় গামছায়।

প্রশ্ন জাগে সারা অংগে
আমার মত হৃদয় খেলে নাকি তোমার সংগে?
তোমার কাছে আলাদা নয় কিছু
জীবন মরন, চিত্ত হরন ছুটি তোমার পিছু।
পোকার পিছনে তুমি কি জানো
আমার হাত কতটা রক্তে রাঙানো?

আমার পাপ করছে অনুতাপ সাধু সাধু বলে
আমিই দায়ী পাকা টমেটো টসটসে গাছেতে ঝুলে!

নিজের গান গাই -৩

৩. শরীর লিখে বীরত্ব গাথা

সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।
বর্তমানের কথা জুড়ি
অতীতের ও দূর গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

অতীত এসে বসল পাশে
সামনে দেখি ভবিষ্যৎ হাসে
লোক সকলে মাতে তাতে
সুধাই আমি দূরে গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

পথিক দাঁড়ায় চলার পথে
অতীত নিয়ে কেবল নাচে
বলি, বর্তমানের গুপ্ত কথা
মনটা শুধু এখন বাঁচে।
এখন সুধা পরাণ দোলা
এখন স্বর্গ, নরক জ্বলে
এখন ঘোড়া দুলকি চালে
টগবগিয়ে সামনে চলা গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।
যৌবন কালের কথা জুড়ি
সৃষ্টিশীলতা সুর গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

সমকাম এসে বসল পাশে
সামনে দেখি বিকৃতি আসে
কিছু লোক মিছে মাতে
সুধাই আমি দূরে গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

বিপরীতে এসে হাতটি ধরে
প্রেমের কথা জানায় ব্যাথা
বলি, যৌবনেরই গুপ্ত কথা
শরীর লিখে বীরত্ব গাথা।
যৌবন সুধা বিজয় দোলা
যৌবন সৃষ্টি, জীবন খেলে
যৌবন ঘোড়া দুলকি চালে
টগবগিয়ে সামনে চলা গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

স্বাধীনতা

আমাকে আকড়ে রাখো
হারিয়ে ফেলো না-
কি এসে যায়, কে কি বললো
কি এসে যাবে, কে কি জানলো
তোমার প্রথম নাম মুক্তি
তোমার দ্বিতীয় নাম যুদ্ধ
তোমার নামে বইয়ে বেড়াই ভাব, ছন্দ
মানুষের ভিতরের লাল গোলাপ
প্রতিটি জীবে, পদার্থে
আমার মন তোমায় সাথে নিয়ে চলে
চেতনা তোমার ডানায় ভর করে উড়ে

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

আমাকে আকড়ে রাখো
হারিয়ে ফেলো না-
চিতার ক্ষুধা পায়
হরিণের পিছন পিছন ছুটে
তোমার প্রথম নাম প্রেম
তোমার দ্বিতীয় নাম দেশ
তোমার নামে ধরেছি মাথা বাজি, উদ্দেশ
যখন শিশু প্রথম নিঃশ্বাস নেয়
যখন রাত্রি ভোরের আলোতে হারায়
যখন তিমি সাগরের বিশলতায় ভাসে
যখন সব ছাড়িয়ে মানুষ বড় হয়ে উঠে

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

আমরা তাপ থেকে এসেছি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা ইলেকট্রন
আধার হৃদয়ে ব্যাথা জাগে, আলোর স্ফুটন
বাতাসের মাঝের অনু
সাগরের জলকণা
ঐ সূর্য, আর হা, মানুষ
সব একই উপাদানে তৈরি, একই নির্দেশ

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

নিজের গান গাই

১. নিজের গান গাই

আপন কথা আপন সূরে নিজের গান গাই
আমার কাব্য দারুন গাথা তোমাকে ছুঁবে তাই
যেমনি অনু পুস্প রেনু সকলি গড়ে তোলে
তেমনি তুমি মাঠের ভূমি অনুর চাকে দোলে
এসেছি আমি পিতার হতে মায়ের কোল জুড়ে
তেমনি পিতা তাহার পিতা এমনি ঘুরে ফিরে।

বিজন বনে গভীর মনে আত্মাকে জেগে তুলি
মধুর স্বর রক্ত কণা হাওয়া থেকে দুলি
ধর্ম ঘানি পাঠের বাণী দূরত্বে রেখে আসি
অবসরে যাও আর কী চাও বাজাও মরা বাঁশি!
আমার হৃদে সজল হ্রদে খারাপ ভালো ভাসে
আমিতো দেই আসুক যেই স্বাগত উর্ধশ্বাসে।

২. আপন গন্ধে মাতাল

ঘরের রেকে উথলে উঠা পারফিউমে ঠাসা
নিজের ঘ্রাণে জাগলো প্রাণে আপন ভালোবাসা
গন্ধহীন, নয় রঙিন, নয় পারফিউম
বায়ুর সাথে সন্ধ্যা প্রাতে চলছে প্রেম ধুম
আমি তাহারে, রাখি কোথারে, মুখে লুকিয়ে রাখি
তাহার ছাড়া বাঁচে না প্রাণ, কেমন করে থাকি?

ধ্বনির সাথে কথার মেলা হৃদয় কম্পন
গানের টানে সুরের খেলা বায়ু সন্তরণ
নিশ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস দিয়ে জীবন বিনিময়
সকল খানে দেখবে তুমি কৃত্রিমতা লয়
কে তুমি একর একর জমির মালিক আছো
কে তুমি বিদ্বান অতীব বইয়ে সন্মান খোঁজ

সকল পাবে সকল খানে নিজেকে পাবে নাকো
সকল পাবে সকল খানে তাহার হবে সাঁকো
অন্যের চোখে দেখবি যদি জন্মে কেন এলি
অন্যের কথা বলবি যদি নিজেদের কি পেলি?
নিজ গন্ধ বায়ু ছন্দ কাটবে সকল দ্বন্দ্ব
আমি নিজের গান গাই এটা হোক আনন্দ।

সমর্পণ

শুরুতে পেয়েছি ভয়, হৃদয় নির্মুল চিলতা
তুমি ছাড়া বাঁচা মনে হলো নিরেট বাতুলতা
বহু নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি ভেবে-
অনেক করেছো প্রবঞ্চনা
নিজেকে দিয়েছি সান্ত্বনা
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছো সেভাবে, অনুভবে
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

তুমি চলে গেছো আমার জীবনাকাশ থেকে দূরে
দেখতে এসেছো মলিন মেঘ গাঁথা, চেহারা ঘিরে?
খুলে ফেলেছি সেই অবোধ বন্ধন,
হাতে নিয়াছি মুক্ত হবার চাবি
ছুড়ে ফেলেছি সমস্ত অপদস্থ ছবি
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছিলে সেভাবে, এখন
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

তুমি কি সে নও আঘাতে দিয়েছিলে বিদায়?
ভেবেছিলে আমি মুছে যাব আত্মহত্যায়?
ভেবছিলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাব?
জেনেছি কিভাবে ভালোবাসতে হয়,
জেনেছি কিভাবে ভালোবাসা পেতে হয়
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছিলে সেভাবে, চলব
তোমার জন্য না হয়ে একটু উতলা-

সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ধরে রাখি
ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো একত্রে জুড়তে থাকি
দুঃখের সাগর উড়িয়েছি কান্নার বাষ্পে
সব ছেড়ে দাঁড়িয়েছি উচ্চশিরে
যে ভালেবাসে নিজেকে সঁপেছি তাহারে
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছো সেভাবে, অনুভবে
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

দীর্ঘশ্বাস

কোকিলরে তুই ডাকিস না আর কুহু কুহু স্বরে
তোর সেই ডাকে বারেবারে তাকে বড় মনে পড়ে!
চারিধারে বইছিল এক উড়নচণ্ডী হাওয়া
হলো না আর নির্মল তার মুখখানি ছুঁয়া!
এত যে তারে ভেসেছিলাম ভালো কোথায় হারলো
মন খুশি উর্বশী এ মনে কী বেদনা ছড়ালো
ভুলে ছিলাম জেগে গেলাম উঠলরে নাভিশ্বাস
তোর ডাকে দুর্বিপাকে হলো গহীন সর্বনাশ!

পূর্ণিমার রাত চাঁদের আলোয় কী মায়া ছড়ালি
তারে নিয়ে তুই ফাল্গুনী রাতে কোথায় হারালি?
আজও আমি পুকুরের ধারে চুপটি জেগে রই
পূর্ণিমাতো ঠিকই আছে আমার চাঁদটি কই!
এত যে তারে চেয়েছিলাম আজ কোথায় হারালো
মন পবনের নায়ে ভেসে সে কোন ঘাটে দাঁড়ালো!
তোর কারণে ভোলা স্মরণে জপি অতি জলোচ্ছ্বাস
মায়া জাগালি কেন কাদালি করলিরে সর্বনাশ!

ফুল ফোটে ফুল ঝরে, যাহা ঝরে সে না ফিরে আর
থাকে শুধু সুধাবার সুগন্ধি স্মৃতি উপহার
এইখানে গাইবার গান টুকু পেয়ে যায় সূর
চলে যাব কোন খানে জানিনা কোন সুদূর
একদিন এইখানে কবি মন উঠেছিল নেচে
সেইদিন আর ফিরে পাবে নাকো খোঁজ যত মিছে!
ঐ কোকিলের মতো, ঐ চন্দ্রিমার উচ্ছ্বাস
তুমি পাও খুঁজে এই গানে গানে কারো দীর্ঘশ্বাস?

কোমল স্পর্শ

প্রতিদিন মানুষ মরছে।
এটা একটা শুরু।
প্রতিদিন মৃত্যু থেকে
নতুন বিধবা আর এতিম জন্ম লয়।
তারা হাত গুটিয়ে বসে নতুন জীবন নিয়ে ভাবে।

তারপর তারা গোরস্থানে যায়
এদের মধ্যে কেউ প্রথম বার।
তারা কাঁদতে ভয় পায়
কখনও না কাঁদতে।
কেউ কেউ গভীর সমবেদনা নিয়ে-
কি করতে হবে, কি দোয়া পড়তে হবে
কবরে মাটি দেয়ার নিয়ম, বলে দেয়।

তারা বাড়ি ফিরে আসে
সদ্য বিধবাটি তার বিছানার উপর বসে-
লোকেরা একে একে এসে তাকে সান্ত্বনা দেয়
কেউ তার হাতে রাখে হাত, কেউ জড়িয়ে ধরে।
সে সকলকে বলার মতো কথা খুঁজে পায়
এখানে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

তার হৃদয় চাইছে তারা সকলে চলে যাক।
সে কবরে ফিরে যেতে চায়, অসুস্থ ঘরটায়
কিম্বা হাসপাতালে। জানে এটা সম্ভব নয়।
কিন্তু এটা তার একমাত্র আশা ফিরে যাবে পিছনে
বেশি দূর নয়, একটা বিবাহানুষ্ঠানে, কোমল স্পর্শে।

আহা কি যে সুখ

বলেছিলো, কোন এক দেশ হলে হবে,
আমরা বললাম, বাংলাদেশটা লাগবে!
নিজ ভুমে পান্তাপুটি লুটিপুটি খাব
আপনার হাতে শাসনের স্বাদ নিব
চাষী কি শ্রমিক নাই কোন দুখ
হৃদয়ে বাংলার টান , আহা কি যে সুখ!

হৃদয় আমার ছাড়খার- খানখান
ধর্ম না জাতি নিব- টানাটানি উপাখ্যান
আজীবন ধর্ম আর বাংলা ভালোবাসি
তবে কেন দুইটাতে এত রেষারেষি?
ধার্মিক নাকি বাঙালি নাই কোন দুখ
হৃদয়ে ন্যায়ের টান, আহা কি যে সুখ!

একথা কেউ শুনছে নাকি একথা শুনবে
কাব্য চর্চা করে শেষে ধর্মটা হারাবে!
গজে উঠা গোড়াদের শুনি হাঁকডাক
শিল্পের টুঁটি চেপে কয়- চুপ থাক
ধর্ম কি শিল্প, অপসংস্কৃতি দূর হোক
হৃদয়ে আলোর টান, আহা কি যে সুখ!

কোথা থেকে গান আসে, কোথা থেকে সুর
কোন দুঃখ উৎসে জন্মে, যায় বহুদূর
আমি তাহা জানি নাকো, গাথি কথামালা
শব্দ-ভাস্কর্যে প্রাণ হয় যে উতলা
হাসি কি অশ্রুধারা, না বুঝি প্রিয় মুখ
ধর্ম শিল্পে মানুষ খুঁজি, আাহা কি যে সুখ!

এমন আলোর ঝিলিক

এমন আলোর ঝিকিল দেখে তোমাকে কে কোথায়
খুজে পাবে আর; ছিল বসে তালগাছের তলায়
পুকুর পাড়ে ক্ষুধায়, কেউ নেয়নি খবর তার
থুত্থুরে বৃদ্ধার, ছেলে মেয়ে নিয়ে আপনা সংসার
ঘর, আছে মহা ঝামেলায় এই বাংলার গ্রামে-
আমাকে পাঠালে চিঠি ভরে মহাপ্রকৃতির খামে;
আউশধানের চাল, পুটিমাছ জলপাই টকে
রেধে নিয়ে ঝোলের সাথে মসুরের ডালে- এ মাকে

আহা, অনেক যত্নে যেই খাওয়ালাম নিজ হাতে,
তৃপ্তির যে আলো চোখে মুখে উঠলো ফোটে চকিতে-
সেই আলোতে আমি তোমায় দেখলাম হে আল্লাহ
অজান্তে এসে ছিলে দৃষ্টিতে তুমি, সুবহানাল্লাহ!

যাই মসজিদে এবাদত করতে তোমার বটে
এমনি করে তো কখনও কেথাও উঠোনি ফোটে!
(সনেট লেখার প্রচেষ্টা চালালাম)

পথের গান

যদি না পাও খুঁজে
আমি যে পথে চলিতাম
জানবে তুমি, আমি গিয়াছি সরে
জানবে হৃদয় খোলা রেখে
আমি শত মাইল দূরে হারালাম।

শত মাইল, শত মাইল, শত মাইল
শত শত মাইল দূর হতে সৌরভে
তুমি এই পথে গাওয়া গান শুনতে পাবে
শত মাইল দূর হতে আমাকে শুনতে পাবে।

প্রভু আমি এক, প্রভু আমি দুই
প্রভু আমি তিন, প্রভু আমি চার
প্রভু আমি পাঁচ শত মাইল দূরে
হারায়ে গিয়াছি অজানার ভীড়ে।

ঠিকানা হতে দূরে, ঠিকনা হতে দূরে
অজানার ভীড়ে,
প্রভু আমি পাঁচ শত মাইল দূরে
প্রভু আমি হাজারো মাইল দূরে!

নাই কোন বস্ত্র পরনে
নাই অর্থকরী আপন নামে
আমি ফিরব কিভাবে একমূখী পথে!
একমূখী পথে,
একমূখী পথে,
প্রভু, একমূখী এই পথে
যায় না ফিরা আপন নামের ঘাটে।
আপন নামের ঘাটে,
আপন জানা ঘাটে
আপন মানা ঘাটে,
কিছুটা কালের পরে
পাবে না খুঁজে কেউ আপনাকে এই তল্লাটে।

যদি না পাও খুঁজে
আমি যে পথে চলিতাম
জানবে আমি গিয়াছি সরে
শত শত মাইল দূর হতে তবু, সৌরভে
তুমি এই পথে গাওয়া গান শুনতে পাবে।

উদাস ফকির মানুষে আবার

কদমফুল বিলকুল খা খা রোদ্দুর
ছুটবি হেথা, থামবি কোথা, কদ্দূর?
-ওরে তুই ঠিকানা খুঁজিস কার!
পথ আছে যার শুধু চলবার
পথেই ছন্দ-আনন্দ, পথে সুরাসুর।

ঠিকানা একটা ছিল ছন দিয়ে ঘেরা
তাতে বেধেছিলাম ছোট একটা ঢেড়া
পিপিলিকা দল ছুটে যেত স্ত্রত
আকাবাকা পথটি হয়ে সাব্যস্থ
জাগে মায়ার বাঁধন, তাই ঘরহারা!

একবার বাঁধি ঘর নদী তীরাঞ্চল
আমি ছিলাম ডাঙায়, পাশে বহে জল
মাটির মায়ায় আমি থাকি স্থির
সাগর টানে নদী থাকে অস্থির
পরান ছুটে সদূরে- চক্ষু ছলোছল।

আমি উদাস ফকির মানুষে আবার
বেঁধেছি ঘর যত, ছেড়েছি বারবার
অগনিত অনন্ত অসীম মাঝে
মন ভরে ছুটেছি পথের খুঁজে
শুনি মানুষকেই মানুষে ফিরাবার।

প্রেম দাও

প্রেম দাও
……..

গতকাল রাতে কিছুতেই ঘুমাতে পারিনি,
কিছুক্ষণ পরপর নয়নের জলে বালিশ ভিজেছে।

হে প্রভু তুমিতো জানো,
সন্তানকে আমরা কতটা ভালোবাসি!
সন্তানের জন্মের যে রসায়ন তুমি আমাদের
শরীরে দিয়েছো
আমরা তার খবরও রাখি না
শুধু প্রেমোন্মাদনায় কাঁপি-
কেউ যদি কখনও এই সন্তানেরে অবহেলা করে,
তুমিতো জানো নিজেকে আঘাতের চেয়ে
বহুগুন ব্যাথা বাজে হৃদয়ে।

হে প্রভু,
মানুষতো তোমারই সৃষ্টি,
তোমারই অনুগ্রহে অস্তিত্বে আছি
শুনেছি মানুষ তোমার সৃষ্টিশীলতার সেরা নৈপুণ্যে গড়া।
আমাকে কেউ ঘৃণাভরে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে
তুমিও কি কষ্ট পাও না, হে মহান স্রষ্টা!
আমি তা জানি না, করতে পারি না অনুভব!

কিন্তু গতকাল রাতে, প্রভু তুমিতো জানো
একফোঁটা ঘুমাতে পারিনি
যে সৃষ্টিশীলতা তুমি আমার মননে দিয়েছো
আমি শব্দের নন্দিত খাচায়
সুন্দরের প্রতিমূর্তি করে সাজাই কেবল
তাকেই ছুড়ে দিল মতবাদের ক্রোধাগ্নি শিখায়
চরম মূর্খতায় দাঁড় করাল তোমার বিপরীত উচ্চারণে-

প্রভু, ঘৃণা নয় প্রেম দাও
তোমার ক্রোধের উপর
তোমার রহম যে হয়ে আছে বিজয়ী হয়ে।

ধনী

ধনী
ফকির আবদুল মালেক
………..

একসাথে কান্নার আনন্দ আছে।
একসাথে সুখ ভাগাভাগি করে নেবার আনন্দ আছে।
একসাথে বিশ্বাস ভাগাভাগি করার আনন্দ আছে।
একসাথে আনন্দ ভাগাভাগির আনন্দ আছে।

একসাথে ঈশ্বরকে ভাগাভাগি করে নেবার
আনন্দ আছে- খুঁজি না!
গরীবের ঈশ্বর যেভাবে উপাসনা পায়
ধনীর ঈশ্বর সেভাবে পায় না!
গরীর যেভাবে কাঁদে
ধনী সেভাবে কাঁদে না।

বড় সাধ জাগে,
গরীবের মতো করে ঈশ্বরকে ডাকি।
ধনীদের মতো করে ঈশ্বরকে চিনি।
ফকিহ্’দের মতো করে ঈশ্বরকে খুঁজি ।

আমিতো ছাড়ি নাই ঘর
তবু ঘরকে করেছি পর
নিজ নামে আছে যে সম্পদ ক্ষমতায়
মন থেকে তারে দিয়াছি বিদায়।

গরীবের মত করে কাঁদতে চাহি
কাঁদতে পারি না
তবে কি গরীবের মতো করে
ঈশ্বরকে ডাকতে পারি না!

লোকে আমায় ফকির কহে
আমিতো গরীব নই,
সবকিছু ছেড়েছি তাই
ধনী হয়ে বেঁচে রই!

এই সত্ত্বায় অবিরল অনল

এই সত্ত্বায় অবিরল অনল

মানুষের মস্তিষ্ক ধারণ করে আছি।
আপন অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে অন্যের অভিজ্ঞতা
আত্মস্থ করার সমস্ত আয়োজন হয়ে গেছে সারা পূর্ব-পুরুষের হাতে,
উত্তর পুরুষ ফকির কুটিরে শুয়ে শুয়ে ঘুরি ফিরি
পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের গ্রহে গ্রহে আর অভিজ্ঞতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে

হঠাৎ -আগুন আগুন- চিৎকারে ছিটকে পরি অজপাড়াগাঁয়ে
-নাড়া পাড়ায় আগুন
-আগুন নেভানো তাড়না নেই কারো
লোকালয় থেকে দুরে বলেই হয়তো বা,
ব্যস্ত হয়ে উঠলাম আমার সকল কোমল স্মৃতি পুড়ে যাচ্ছে বলে-
গতকাল রাতে আকাশ গলা জোস্নার শ্রাবনে সিক্ত হয়েছিলাম
আয়েশা আর আমি
পুকুরের ধারে কৃষানের পুঞ্জিভূত এই নাড়ার স্তুপে
পরস্পর হয়েছিলাম সংলগ্ন

আমাদের চোখে স্বপ্ন ছিল স্বপ্নের মতো
আমাদের কথায় ছিল সদ্য বলতে পারা
শিশুর কথার চপলতার মতো চঞ্চলতা
আমাদের হৃদয় ছিল হৃদয়ে নিপতিত
আমার স্মৃতি পুড়ে যাচ্ছে-

আয়েশা কোন ফাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে পাশে, বললে, তাহাদ আলী দেখছিল
যখন ফিরছিলাম ঘরে। মনে পড়ে, গভীর রাতে সে গিয়েছিল আমার কক্ষে
-কি আজে বাজে বই পড়ো সারাক্ষন, বলছিলো, বিজ্ঞান আর কবিতা,
কি হবে পাতাল-মর্ত্য-আকাশের আবিষ্কারে
আর শব্দের গাথুনীতে রহস্য বুনে,
জীবনের ধুলো ঝেড়ে মস্তিষ্কে দাও ঝাঁকুনি
তাকিয়ে দেখো সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্ম মিলে কিভাবে লুটে নিয়ে যাচ্ছে
মানুষের অন্তর্গত অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সমস্ত অর্জন,
জেনে রেখো মাটির নীচে লুকিয়ে আছে কোথাও কোথাও আগ্নেয়গিরি
আর প্রতিটি মানুষ এক একটা দাবানল-
তোমাদের অতিমানবীয় প্রেমভাব নিয়ে তোমরা মত্ত থাকো অনর্গল
আমি মানব- এই সত্ত্বায় অবিরল অনল।