ফেসবুকে স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজ আছে, তা আপনি জানেন কি? আমি জানি এবং নিয়মিত ফলো করে আসছি। আজকে এ নিয়েই কিছু লিখতে চাই! আশা করি সাথে থাকবেন। তার আগে ব্লগ এবং ব্লগিং নিয়ে আমার কিছু নূন্যতম অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, জেনে নিন!
বর্তমানে মোবাইল ফোন হাতে-হাতে ছড়াছড়ি। ঘরে ঘরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ওয়াই ফাই নামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। একসময় কারোর হাতে মোবাইল ফোন দেখলেই, সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতাম। আর ভাবতাম, কী দিয়া যে তৈরি করলো এই মোবাইল! ঈশ! যদি আমি একটা কিনতে পারতাম!
এভাবে ভাবতে ভাবতে ২০০৬ ইংরেজি সালে নোকিয়া ১১১০ মডেলের ৩৬০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল সেট নিজেই কিনে ফেললাম। সাথে ৫৫০ টাকা দিয়ে একটা বাংলালিঙ্ক সিম কার্ডও কিনে শুরু করলাম, নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা অপরের সাথে কথা বলা।
এরপর ২০০৭ ইংরেজি সালে নোকিয়া N-73 মডেলের পুরাতন একটা মোবাইল সেট কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকি। তখনকার সময়ে নেটওয়ার্কভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল GPRS সার্ভিস। সেসময় নোকিয়া বাটন মোবাইলের সেটিং থেকে কনফিগারেশন সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। আর অনলাইনে থাকা বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করতাম। এটাই ছিলো আমার নিয়মিত অভ্যাস।
কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর মোবাইলটি আর ভালো লাগছিল না। ভালো না লাগার করণ ছিলো শুধু একটাই। তাহলে নোকিয়া N-73 মডেল মোবাইলে বাংলা লেখা যেতো না, আর মোবাইল স্ক্রিনে বাংলা লেখা প্রদর্শিতও হতো না।
এরপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোকিয়া C-3 দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। তাতেও বাংলা লেখা যেতো না। মনের আক্ষেপ আর আফসোস শুধু থেকেই যেতো। তারপরও বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সার্চ করা ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ। সেসব কাজের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ব্লগে উঁকি মারা সহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া সহ আরও অনেককিছু। তবে বেশকিছু অনলাইনভিত্তিক দিনলিপি বা ব্লগে সময়টা বেশি ব্যয় করতাম।
একসময় অনলাইনে থাকা একটা স্বনামধন্য ব্লগে লেখকদের লেখা পড়তে খুবই ভালো লাগতো। নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করতো। একসময় নোকিয়া বাটন মোবাইল C-3 দিয়ে এক ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কিন্তু নোকিয়া C-3 মোবাইলে তো বাংলা লেখা যায় না। কোনরকমভাবে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে স্বল্পসংখ্যক শব্দ দিয়ে একটা লেখা জমা দিলাম। ব্লগে লেখা জমা দিয়ে বেশকিছুদিন আর ব্লগে প্রবেশ করিনি।
এরপর প্রায় দুই তিনমাস পর অনেক কষ্ট করে মনের স্বাদ মেটানোর জন্য সিম্ফনি W-82 মডেল-এর একটা মোবাইল কিনলাম। মোবাইলটা কিনেই, সেইদিনই ব্লগে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য হলো, আমার জমা দেওয়া লেখাটার অবস্থা দেখা। দেখি সম্মানিত মডারেটর লেখার শিরোনাম বাংলায় দেওয়ার জন্য বলছে। সিম্ফনি এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা লেখা যেত। লেখার শিরোনাম দিলাম, “আমিও মানুষ”। আবার জমা দিয়ে আর ব্লগে প্রবেশ করি না। প্রায় কয়েকমাস পর ব্লগে প্রবেশ করলাম। দেখি আমার লেখায় কয়েকজন সম্মানিত লেখকদের মূল্যবান মন্তব্য। সেসব মন্তব্যের উত্তর দিতে গেয়েই, আজ অবধি ব্লগ আর ব্লগিংয়ের মাঝেই আটকা পড়ে আছি। ব্লগে লিখছি, পড়ছি, দেখেও যাচ্ছি। অনেক সম্মানিত লেখক-লেখিকাদের সাথে ঘনিষ্ঠতাও গড়েছি। শুরু থেকে এপর্যন্ত ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগের পোস্টের মন্তব্য বিষয়ে সামান্যতম ধ্যানধারণাও মোটামুটি অর্জন করতে পেরেছি বলেও মনে হয়।
ব্লগ:
আমার জানা মতে ”ব্লগ” শব্দটি ইংরেজী (Blog), এর বাংলা প্রতিশব্দ৷ যা এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি (Blog) শব্দটি আবার (Weblog) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেটুকু জানা যায়, এই ব্লগের ইতিহাস এবং অনলাইন দিনপত্রী ১৯৯৭ ইংরেজি সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলছে। প্রায় ব্লগই মূলতঃ লেখায় আকিন, কিছু কিছু আছে শিল্প(আর্টব্লগ), ছবি(ফটোব্লগ)। ডিসেম্বর ২০০৭এর হিসাবে, ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন “টেকনোরাটি” প্রায় এগারো কোটি বার লাখের ও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছে।
ব্লগার:
যারা আমার আগে থেকে ব্লগে লিখেন, তাঁরা অবশ্যই ব্লগ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালোই জানেন। তা আর নতুন করে নতুন কিছু উপস্থাপন করার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমরা যারা ব্লগে লেখালেখি করছি, সবাই জানি যিনি ব্লগে লিখেন; তাকে “ব্লগার” বলে। তবে সহ ব্লগারগণ একে অপরকে লেখক লেখিকা বলেই বেশি সম্বোধন করে থাকে। যেহেতু একই প্লাটফরমে একে অপরের সাথে লেখা শেয়ায় করছে, তাই। তারপর পছন্দ অপছন্দের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যার যার মনের ভাব জানান দিচ্ছে। এতে করে একে অপরের সাথে খুব অল্পদিনে মধ্যেই সুসম্পর্কও গড়ে উঠছে।
ব্লগিং:
যিনি ব্লগে পোষ্ট করেন তাকে ব্লগার বলে। পোস্ট করা বা ব্লগে লেখালেখি করা হচ্ছে “ব্লগিং”।
মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া:
ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের পছন্দের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন। আর পাঠক সেখানে লেখার উপর ভিত্তি করে তাদের মন্তব্য করতে পারেন৷ মন্তব্য দানকারী পাঠককে অবশ্যই ব্লগের নিবন্ধিত পাঠক হতে হবে। মানে হচ্ছে, একজন ব্লগারের লেখনীয় পোস্টে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে তাকে সেই ব্লগে লগইন করতে হবে। নিবন্ধিত সদস্য ছাড়া কিছুতেই মন্তব্য করতে পারবে না। ব্লগের পোস্টে আর ব্লগার অথবা লেখক-লেখিকার লেখায় মন্তব্য হলো একরকম চুম্বকের আকর্ষণের মতন। চুম্বক যেমন লোহাকে কাছে টানে, তেমনিভাবে মন্তব্যকারীকে পোস্টদাতা বা লেখক-লেখিকা ভালোবেসে ফেলে। তারপর একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাব গড়ে উঠে।
ব্লগ পোস্ট:
সাম্প্রতিক কালে অনলাইনে থাকা বেশিরভাগ ব্লগ সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একজন দায়িত্বশীল ব্লগার নিজের এলাকার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক লেখা ব্লগে আপডেট করেন বা করে থাকেন। অনেক সময় কোন খবরের শিরোনামের উপরও ব্লগার তার মতপোষন করে লিখে ব্লগে পোস্ট করে থাকেন। আবার কেউ কবিতা লিখেন। কেউ ইতিহাস লিখেন। কেউ সাহিত্য নিয়ে লিখেন। কেউ আবার ছোটগল্প ও রম্য লিখে ব্লগে পোস্ট করেন।
শব্দনীড় বাংলা ব্লগ:
তবে আমার মনে হয়, আমাদের এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের জন্মকাল ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ। ব্লগে প্রথম পোস্ট করেছিলেন, সম্মানিত লেখক মুরুব্বী। লেখার শিরোনাম ছিল, “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল!” পোস্টে মন্তব্য দানকারী ছিলেন, সম্মানিত লেখক মামুন। এপর্যন্ত শব্দনীড় বাংলা ব্লগে পোস্টের সংখ্যা ৭৭৮১টি। সর্বশেষ পোস্টের শিরোনাম, “আমার দেখা ব্লগ ব্লগার ও ফেসবুকে শব্দনীড় ব্লগ পেইজ!”
ব্যক্তিগত:
আমি এই স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগে নিবন্ধিত হয়েছি, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ। পোস্ট করেছি আগস্ট মাসের ৭ তারিখ। লেখার শিরোনাম ছিল, “আমি রাত জাগা পাখি!” মন্তব্য পড়েছিল ৬+৬=১২টি। আমার নগণ্য লেখনীয় পোস্টে ৫জন সম্মানিত লেখক-লেখিকার করা মন্তব্যের উওর দিয়ে গিয়েই হয়তো এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের মায়াজালে আটকা পড়েছি। মনে হয় আর কখনো শব্দনীড় থেকে আড়াল হতে পারবো না।
আমার চেয়ে আরও হৃদয়বান ব্লগার এই শব্দনীড়ে আরও অনেক আছে। তাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন, পোস্ট করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি অধম শুধু সময়ের অভাবে এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগে নিয়মিত হতে পারছি না। কারণ, আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ, তাই। তবে আমার হাতে থাকা ব্যবহারিক মোবাইল থেকে প্রতিদিন কয়েকবার ব্লগে উঁকি মারি। সবার পোস্ট ফলো করি। সময়ের অভাবে পোস্টে মন্তব্য করতে বা দিতে পারি না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত!
শব্দনীড় বাংলা ব্লগে আমার লেখা প্রকাশ হওয়ার পর আমি ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করি। একসময় ফেসবুকের সার্চ বক্সে শব্দনীড় লিখে সার্চ করে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ দেখতে পাই! মনে মনে খুবই আনন্দিত হলাম। আনন্দিত হলাম এই কারণে যে, বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক নিউজ, ব্লগ সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিজস্ব পেইজ থাকে। যার কারণ হলো সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ানো। ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগের নিজস্ব পেইজ থাকা মানে ব্লগের পোস্ট বা ব্লগারদের লেখায় পাঠক সংখ্যা বাড়ানোই এর মূল লক্ষ্য।
দুঃখ:
শব্দনীড় ব্লগ টিম ব্লগের সমস্ত পোস্ট অটোমেটিক ফেসবুক পেইজে শেয়ার হচ্ছে। আমরাও শব্দনীড় বাংলা ব্লগে লেখালেখি করছি, পোস্ট করছি, পাঠক সংখ্যার দিজে নজর রাখছি, মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি রাখছি আমরা কিন্তু সবাই বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করছি। কেউ কেউ নিজের প্রকাশিত পোস্ট ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করছে। পোস্টের পাঠক সংখ্যা দিকে তাকিয়ে থাকছে।
অথচ ফেসবুকে থাকা শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজের দিকে কেউ একটি নজরও দিচ্ছি না। শব্দনীড় বাংলা ব্লগ ফেসবুক পেইজে থাকা নিজের পোস্টের দিকেও কেউ নজর দিচ্ছে না, লাইক দিচ্ছে না, দুটি শব্দ বিশিষ্ট বাক্য লিখে মন্তব্যও করছে না।
এসব দেখে সবই ভালো লাগে, তবুও দুঃখ শুধু এখানেই থেকে যায়। দুঃখ থাকবে না সেদিন, যেদিন দেখবো ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজে ব্লগ থেকে শেয়ার হওয়া প্রতিটা পোস্টে সবার লাইক কমেন্ট দেখবো। তখন ব্লগে থাকা পোস্টগুলোর পাঠক সংখ্যাও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ব্লগের সুনামও বাড়বে।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদের সাথে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!