খেয়ালী মন এর সকল পোস্ট

চিঠি- ২

যারা এখনো চিঠি পড়তে ভালোবাসেন আজকের লেখা তাদের জন্য।

প্রিয় আমার

গাঢ় চৈত্রের দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিম ধরা ডাকে ক্লান্ত ভাতঘুম চোখে। দরজার কলিং বাজলো, এই সময়টায় সাধারণত কেউ আসে না, ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলে দরজা খুলে দাঁড়াতেই ডাকপিয়ন ধরিয়ে দিলো খামে ভরা তোমার চিঠি। এক অজানা শিহরণে ছুঁয়ে গেলো কিছু ভালোলাগা, ভালোবাসা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম অদ্ভুত সুন্দর তোমার গোটাগোটা হাতে লেখা আমার ঠিকানাটার দিকে।

খাম খুলে তাড়াহুড়া করে সবাই যে ভাবে সব চিঠি পড়ে আমি তেমন করে কোন দিন তোমার চিঠি পড়িনি, আজো পড়বো না; হয়তো কোন ‍দিনই পড়বো না, এটা নিয়ে তোমার লেখা দশটি চিঠি হলো, প্রথম চিঠিটা বাদে আর কোন চিঠি কোন দিন খুলে পড়িনি মানে পড়া হয়নি। নিশ্চয়ই তোমার প্রশ্ন জাগছে কেন- কি কারন ! সত্যি করে বলি আমি তোমার চিঠি পড়লে নিজেকে গুছিয়ে গুটিয়ে রাখতে পারতাম না, কেউ না জানুক আমি জানি কি অসাধারন তোমার চিঠির উপস্থাপনা, কি মায়াবী করে তুমি লিখতে পারো।

আমি জানি আমার প্রতি তুমি কোনদিন কোন অভিযোগের অঙ্গুল তুলবে না, তুলবে না কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর তুলেই বা কি হবে আমি তো ফিরে যেতে পারবো না সেই অমর্ত্য মৃত চুম্বনে; যেখানে সব স্বপ্নের সমাধি পেরিয়ে সব শব গুলো বসে থাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে নিজেকে নিবিষ্ট করতে।

তুমি হয়তো জানো শুধুমাত্র ছোট একটা জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া যায় তাবত পৃথিবীর সুখে গড়া সংসার; জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষয় অবক্ষয়ের মাঝে হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ ক’জনেই বা খোঁজে?

আমাদের জীবনের জলপ্রপাতে যে স্ফটিক জল দেখতে পাই, ভুল করে সেই কবিতার ব্যাখ্যা নিজের দিকে দাঁড় করিয়ে কবিকে ভালোবাসা যায় কিন্তু পাখির নীড় ঝড়ো বাতাসের বিপরিতে কতটা অসহায় তা যুগল পাখি মাত্রই জানে। আমার প্রজাপতির জীবনে কারো হাতের তালুতে ঝুলেও বা কতদিন বাঁচতে পারবো!

আমি জানি শত বিপদ মোকাবেলা করেও তুমি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে, আমাকে পেতে তোমার এই বিনিদ্র যন্ত্রণার অভ্যন্তরে সহিষ্ণু প্রেম আমি গভীর ভাবে অনুভব করি অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারি না, হাতকে প্রসারিত করতে পারি না, মুখে হাসি নিয়ে তোমার দিকে ছুটে যেতে পারি না।

প্রিয়তম আমার; যে ভালোবাসার ছোঁয়ায় তুমি আমাকে রাঙিয়ে দিয়েছিলে, যে ভালোবাসার আলিঙ্গনে শীতল হিমালয় থেকে জলধারা বয়েছিলো, যে উষ্ণ চুম্বনে জীবনের পরিপূর্ণ স্বাধ নিয়ে আমি দূর থেকে দূরে হারিয়ে যাচ্ছি, সেই ধরা ছোঁয়ার বাইরের ভালোবাসায় তোমাকে যা দিতে পেরেছি তা কোন দিন আর কাউকে দেয়া হবে না।

তুমি অপেক্ষার প্রহর গুলো দীর্ঘ করো না
তুমি আশার করতলে চোখে জল এনো না
তুমি নীরব ভাষার আহবানে খুঁজো না আমায়
যে পথ চলেছে অামার সন্ধ্যা তারার পথে
সেখানে নিরব বিষণ্নতায় আমি প্রহর গুনি
অনাহুতা জীবনের।

ভালো থেকো নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

আমি
…………..

ব্যক্তিগত সময়

অগনিত মানুষের ভীড়ে ব্যাক্তিগত চঞ্চল হারায় ঠিকানা
সাগরের সৈকতে পরে থাকে মৃত ঝিনুকের খোলস
অভাবের দিন ভাগ করে খায় ভাবনায় সাজানো ফুলের কলি
ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো প্রকাশ বিহীন অাটকে থাকে বুকের পাঁজড়ে
আমার মৌনতার সৌখিন রস বিপনণ হয় সংসারের কৃতঋণে
আমি আর ব্যাক্তিগত সময় খুঁজে পাই না।

যাপিত জীবনের ভঙ্গুর সময় হরিয়েছি অভিমানে অাঙ্গিনায়
প্রেমের সৌরভ নিয়ে জলভরা মেঘ উড়ে গেছে গোধূলি লগনে
কাদাজলে হেঁটে গেছি গহীনের অভ্যাসিত প্রাঙ্গণে মুক্তির অাশায়
জীবনের সূত্র ভুলকরে লিখেছিলাম কবিতার কোড়া খাতায়
সময় ভৌগলিক সীমানার প্রাচীনতম প্রাচীর তুলে দিয়েছে ক্ষত মনে
আমি ব্যক্তিগত সময় হারিয়ে ফেলেছি জীবনের সন্ধিক্ষণে।

মুখোশে ঢেকে রাখা মুখে খুঁজেফিরি চালচুলা আর সঙ্গম
ঘুণধরা চাঁদের গলিত অালোয় জেগেছিলো যে প্রেমের বিষ
হায়নার চোখে তাকেই ভেবেছি চিত্রানদীর জল, চেয়েছিলাম পান করতে
ব্যবচ্ছেদ সরিয়ে কেড়ে নিলে বিষের পেয়ালা, সেই থেকে
ভুলে সব কোলাহল আমিও দু’হাতে পাহাড় সরাতে ব্যস্ত আর
তুমি বসতি সাজাও আজো হরিণী চঞ্চলতায়।
আমি আর হারিয়ে ফেলা ব্যাক্তিগত সময়কে খুঁজি না_
আমি আর ব্যাক্তিগত সময় খুঁজে পাই না।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^♥^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

শরতের শূন্য কাব্য

শূন্য যখন শূন্য তা’কে ছোঁয়
আকাশ নীলে নীলাম্বরী সাজ
শরৎ সকালে শিউলির সুভাষ খুব
উদাসীন প্রেম কাশফুলের শাড়ি,
বেভুলা বাতাস অাঁচল ধরে টানে
লজ্জা কুসম শূন্যে ভেসে যায়
তাকিয়ে দেখি বসতভিটা হাসে
শরৎ দিনের রক্তক্ষরণ গায়।

দক্ষিণ দিকে খোলা বারান্দায়
কিছুটা বাতাস গতরে বুলায় সুখ
পূর্ব দিকে খোলা দরজার চৌকাঠে
শুভ্র শরতের প্রস্ফুটিত রূপ,
এখন শূন্য ঘরের দ্রাঘিমা
হয়নি পূর্ণ ফসলের পাকা বীজে
তবুও স্বপ্নের অহেতুক আগমন
অালোর পরশ ঘাসের শিশিরে।

শূন্য ঘরে নীরবে শূন্যে মিশে
যত স্মৃতিকথা শূন্য বাতাসে ভাসে
দেখিছি যুগল কল্পিত রাজহাঁস
শিউলির মালা ভাসিয়েছে নীল জলে,
কাশফুল দিয়ে ঢেকে রাখা সেই মুখ
লজ্জা জড়ান লাজুক চোখের ভাষা
না বলা কথার দ্বিধা থরথর ঠোঁটে
শিউলি বোঁটার রং জমেছিলো খুব।

এমন শরতে দশভুজা এক দেবী
অকালবোধনে জেগেওঠে বারেবার
ছারখার হয় বুকের গৃহস্থালি
শরৎ আকাশের নীলাম্বরী সাজ।

ভাগাড়ের দেয়ালে নিয়তির ছবি

ভাগাড়ের জীর্ণ দেয়ালে
সময়ের শ্যওলা জমেছিলো বেশ
দেয়ালটা স্বাক্ষি আছে
অভাবের ভাগাড়ে আছে জীবনের ক্লেশ।
রক্তের পোড়খাওয়া স্মৃতি জমাট বেধে,
দাগ হয়ে জমে থাকে অন্ধকার দেয়ালের গায়,
হৃদয়ের যত ক্ষত শরীরের সাথেই হারায়।

কেউ খুঁজে দেখেনা ভাগাড়ের বুকে জমে থাকা বিষে
কত প্রাণ আজও ঘোরে সেই দেয়ালের কার্নিশে
দেহহীন প্রাণীরা বলে দেয়ালের কাছে
কোথায় আমার সরূপ বলে দেও পাছে;
সরূপ খুঁজিতে প্রাণ করে হায় হায়
দেয়াল চিৎকার করে বলে, এখানে
মানুষ কিংবা পশু নাহি চেনা যায়,
জানিতে পারে কিছু শেওলা আমার
রক্তের ছোঁয়া পেয়ে জীবন তাহার।
ডি এন এ বিভাজন আছে তার কাছে
মানুষ পশুর ফারাক হয় তার কাছে
যদিও সে আমার গায় বসত করে
তবুও নিজ নামে জীবন সে ধরে।

আত্মারা খুঁজে ফেরে শ্যওলার ঘর
পাইলে তাহার দেখা, হবে জবরদখল।

ভাগাড়ের শ্যওলার বলে চেনো নাই মোরে!
তোমার মগজ কোষে সদা যে ঘোরে?
সেই আমি, আমি আমরা তুমি যাকে করেছো আবাদ
সরূপ জানিবার আগে বল, তুমি কোন জাত?
বলিতে পারিলে কথা দেহটার পাবে দেখা
হয়তো সে হয়ে আছে কবরে কঙ্কাল।

বুঝেশুনে ভয় পেয়ে দেহহীন প্রাণ, মিনতি করিয়া যাচে
মোর কোন দেহে ছিলো জান? জানি না কিছুই আমি
ভাগাড়টা অন্তরজামি, দেয়াল স্বাক্ষী আছে
কে বা কারা বয়েছিল লাশ। হয়তো
পশুই ছিলাম নয়তো মানুষ,
আজ আর মনে নাই
বেহিসাবি হুস।

হিসাবের খাতা ছিল
শরীরের কাছে, শরীর বেঁচেছে
দোকান নিয়তির কাছে।
নিয়তি জেগেছিলো ভাগাড় দেয়ালে
জীবন বিলিয়েছে প্রাণ
আপন খেয়ালে।

অাপনার কিছু নাই জানে মহাজন
তাই আজ দেয়াল ঘেরা ভাগাড়ের মন
নিয়তির বিচিত্র ছবি ঝুলানো দেয়ালে
শব ছবি খসে যায় শরীর হারালে।

জনারণ্যে পৃথিবীর জবানবন্দী

বয়ে চলা প্রথাগত পাণ্ডুলিপিতে সময়ের ঘুণপোকা খুরে খায় মানচিত্র
বদলে যায় দেশ,বদলে যায় সমাজ, বদলে যায় ভাষা বদলায় জীবনবোধ,
কখনো কখনো যাকে জীবনের অভিশাপ বলো তাও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে
সু- বাতাসে ভালোবাসতে না পারা লোকদের শিহরিত করে উদাহরণ হয়ে।

আমাকে যারা বসন্ত উৎসবে সাজিয়েছে আজ, কালকে তারাই
বিসর্জিত করবে দশমী উৎসব শেষে। লক্ষ, হাজার বছরের জীবনে জেনেছি
সু দীর্ঘ জীবন যাপনে কোন সুখ নেই, প্রতিটি প্রান খোলস বদলের খেলা
তা তুমি মানুষ থেকে মৃত মানুষ হও আর আমি হেমন্ত থেকে বর্ষাকাল।
শরতের সুখে যে মৌমাছির দল মধু পান করে উড়ছে আমার বুকে
সেই মৌমাছিই সুযোগ পেয়ে হুল ফুটিয়েছে জৈষ্ঠ মাসের গরমে। তাই বলি
আমি পৃথিবী, আমার বুকের মাঝে যে রক্তের বৃষ্টি ঝড়ে পড়ে তাও আমার।

আমি পৃথিবী বলেই নিশ্চুপ মৌনতায় দেখতে পাই
বোবা কান্নায় ভিজে যাওয়া দিগন্তের ঘাসফুলের চোখ,
কষ্টের খুশিতে হাসতে থাকা হাসনাহেনার মুখ,
বন্ধনহীন জীবনধারায় ঝরনার ছুটে চলার চপলতা,
গন্তব্যহীন অচল মুদ্রার মত পাহাড়ের স্থির কষ্ট নিয়ে জেগে থাকা
কিংবা বিহ্বল খুশিতে যে ভালোবাসা ছুঁয়ে দিয়েছিলো কোন একজনকে
সেই ভালোবাসার গভীরে জমে থাকা পাপবোধ।

কালের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আমার মত নির্ঘুম কেউ জেগে থাকে না।
অামার হয়তো তোমার মত মরণ নেই কিন্তু জীবিত কি আছি?
তোমরা তোমাদের সময়ের আয়ু খরচ করে মৃতরূপে একটা পর্যায়ে চলে যেতে পার
কিন্তু আমি জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে তোমাদের ক্ষতগুলো দেখে যাই।
অপারগতার সনাতনী ধর্ম ছুঁয়ে আমি কিছুই পিছনে ফেরাতে পারি না ;
যে ছোঁয়ায় জীবনে ফিরে পায় নিরন্তন কুসুম কুসুম প্রেম আমি তেমন করে
ছুঁতে পারিনি কোন প্রজাপতির ডানা কিংবা সবুজ ঘাসের বুকে জমেথাকা শিশিরবিন্দু,
এনে দিতে পারিনি প্রেমিক পুরুষের প্রথম ছোঁয়ায় যে কম্পিত শিহরণ জাগে সেই অনুভুতি।
শুধু বুঝেছি মৃত প্রাণের স্বর্গ লাভ হয়ত একদিন হবে কিন্তু পৃথিবীর শেষ গন্তব্য ধংশে বিলীন হওয়া।

পূর্ণ বা অপূর্ণতার কথা বলে তোমরা মানুষ বা মৃত বাসনার জন্য
যে সুখ বা দুঃখ খুঁজে পাও তাতে তোমাদের অনুভূতির প্রকাশ হয়
কিন্তু অপার কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা নিয়ে আমি আমার বুকে সবুজ খুঁজে পাই না
তোমাদের জীবনের জন্য আমি নিজেকে জাগিয়ে রাখি যতটা কষ্ট সয়ে
তোমরা ঠিক ততটা অামাকে অনুভূতিহীন অনুগত দাস করে রেখেছ
এই জাগতিক সংসারে তোমাদের প্রয়োজনে।

তবু আমি বলে যাই শেষ সত্যি কথা… এই পৃথিবীর বুকে
শেষ বলে কিছু নেই সময়ের পথে, তাই শুরু হোক… শুরু করো
নব রুপে নতুন দিনের পথ। তোমাদের চলার পথে তোমরাই
এঁকে দিতে পারো আগামী দিনের সুখরেখা যা তোমাদের
পরবর্তী বংশধর বহন করে পৌছে দেবে তাদের
পরের প্রজন্মের কাছে ধারাবাহিক ভাবে।

===============================

সাপের খামারে শাপ বন্দি

সাপের খামারে শাপ বন্দি খেলা
ঘুম ঘরে হয় নিত্য দিনের আসর,
আমাদের আছে সৌখিন আলোর ঘর
ভালোবাসা সব সাজানো ড্রয়িং রুমে।
নগ্ন বালিশে একাকি মানুষ জাগি
সাপের খামারে জনতার কোলাহল,
অাকাশ নীলে আকাশ কুসম স্বপ্ন
পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের খতিয়ান।

আমাদের মাঝে শর্তবিহীন যত শর্ত
সব কিছু আজ শব হয়ে ভাসে গাঙ্গে,
ক্ষয়ে যাওয়া যত পৌরাণিক প্রতিবিম্ব
বেলা অবেলায় ভেসে গেছে প্লাবনে।
হীম ঘরে পরে অাছে, হৃদয়ের কথা
শরীর শুধু কাগজে কলমে মানুষ;
ভালোবাসা কিছু অামিও বুঝি বন্ধু
অন্ধের কাছে মূল্যহীন সফেদ বকুল।
উৎপীড়নে পদ্যের ফাঁকা বুলি
মগজের কোষে বাড়ায় শিহরণ,
আমাদের মাঝে যোগফল বলে কিছু নেই
তবুও ডাহুক মাঝরাতে ওঠে ডাকি…..

জেনেটিক রোগে ভেঙ্গে যায় সব সন্ধি
মননে ক্ষরণ প্রবল বাতাসে ওড়ে;
সাপের খামারে বিষধর যত সাপ
বিষের সূতায় তোমাকে আমাকে জোড়ে।
যুগল ডানায় যুগলবন্দী সুরে
চলে যাওয়া দিন ফিরে না আপন নীড়ে,
শাপ গুলো যত সাপ হয়ে যায় কুরুক্ষেত্রে
স্বপ্ন লিপ্ত জীবনের দ্বন্দ্ব যুদ্ধে।
মুখগহ্বরে সুখের তেতো স্বাধ
বিষের সূতায় জোড়ানো সব ক্ষত;
ব্যথার আগুন পোড়খাওয়া দীর্ঘ রাত
বিধাতার কাছে করেছিলো মাথানত।

তবুও ঘরের দক্ষিণের বারান্দায়
তুমি আমি মিলে সাপের খামার গড়ি,
বিভাজনের টানে সরল পথের ধাঁধায়
শাপ গুলোর শব বাক্স বন্দি করি।

=============================♣♠

মেঘ ফিরে যা আপন দেশে

মেঘ বাতাসে ভেসে ভেসে – আজ শ্রাবণে বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি পরে চোখের পাতায় – কাঁপন জাগে বুকে ভাঁজে।

চাইনা আমি বৃষ্টি নামুক – এ শহর আজ বদ্ধপুকুর
বৃষ্টি হলেই শহর জুরে – নোংরা জলের বন্যা হবে

মেঘ চলে যা পাড়ার দেশে – ঝড়না যেথায় শীতলপাটি
ভিজবো আমি রোদের তাপে – পুষবো বুকে মরুভূমি।

বৃষ্টির জল ধুয়ে দিলে – যত্নে রাখা কষ্ট গুলো
কোথায় তাকে রাখবো আমি – নীলাভ ভূমী সফেদ হলে!

স্মৃতি গুলো বৃষ্টি মেখে – মাটির বুকে পরলে গলে
উদাস দুপুর কাকে নিয়ে – ঘুমপাড়ানি গল্প হবে?

বুকের ভিতর বৃষ্টি পরে – হৃদয় যদি যায় ভেসে আজ
কোন ঘাটেতে ফেলবো নোঙর – হারাই যদি সেই ঠিকানা।

মেঘকে লেখা চিঠি গুলো – যত্নে ঘুমায় বুক পকেটে
বৃষ্টিতে তা ভিজে গেলে – সকল প্রণয় মূর্ছা যাবে।

চোখের কোনে বৃষ্টি ফোঁটায় – অশ্রু যদি যায় ভিজে আজ
কি দিয়ে আর গাঁথবো মালা – ফুল গুলো সব ভ্রুন পোষে।

মেঘ চলে যা আপন দেশে – যেথায় চাতক তোকে খোঁজে
শহরটা আজ তপ্ত আপোষ – বুকে চিতিয়ে করবে ধারন।

চাইনা আমি বৃষ্টি নামুক – সবার চোখে কান্নার রঙ
বৃষ্টি হলেই শহর জুরে – নীল, বেগুনী বন্যা হবে।

================================♥♥

সুখের চন্দ্রক্ষয়

সুখের চন্দ্রক্ষয়

দ্বাদশী চাঁদ ডুবে যাবার পর যে ম্লান আলো জেগে থাকে পৃথিবীর বুকে
তেমন মলিনতা দেখেছিলাম তোমার রক্তিম মুখে।
শেষ রাতে ডেকে ডেকে সঙ্গীকে খোঁজে যে বিরহী পাখি
তেমনি ভাঙ্গনের সুর শুনেছিলাম তোমার সঙ্গীতে।
সাদা মেঘের উপর দিয়ে খুব ধীর চলে যায় যে জল ভরা কালো মেঘ তেমনি গিয়াছো চলি।
পাড়ে যাবার কড়ি দিয়ে কিনেছিলে সুখ, আঁচলে তুলে তাকে দেখেছিলে কাঁটার কাঁকন ;
দিবা শেষে হিসাবে জরানো পূজার থালায় ফুল খুঁজে পায়নি ভ্রমর, নৈবদ্য হয়নি জমা মানস মন্দিরে।
চেয়ে চেয়ে দেখেছিলাম নয়নজলে চোখের কাজল কপোল তলে কতটা মানায়।

অবশেষে
সবকিছু বৃথা যায় চন্দ্রক্ষয়ের মত
ভালোবাসা এক দিন কৃষ্ণ পক্ষ হয়।

চলে যেতে হবে

==============================♣
অনেক দিনের চেনা মানুষ গুলো
ঠিক যেন শুকনো পাতার মতো
টুপ টাপ ঝরে পরে সম্পর্ক্য এর বাঁধন ছিঁড়ে।

প্রতিটি চৈত্র দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে
ক্লান্ত পায়ে হেঁটে আসা বালকের মত।

আকাঙ্খার নদী পথ ভুল করে
আমার কবিতার পাতায় ভিন্ন স্রোতে
সমুদ্রের পা ছুঁয়ে চলে যায়।

সৌরভিত সুখ অজানা খবরের কাগজে
বিজ্ঞাপন হয়ে ফেরীওয়ালার হাতে,
সবুজ পাতার ফাঁকে অবুঝ পাতা খেকো কীট
গড়ে আপন আত্মীয়।

চলে সময়ের ধারাবাহিকতা আপন নিবাসে,
বসন্তের বাহারি দিন সেই কবে চলে গেছে;
আজ রংধনুর রং গুলো কিংবদন্তী।

সময়ের খুব গভীরে ডুব দিতে পারিনা বলেই
চুল গুলো কাশফুল, চোখের ছানিতে ছুরি চলে,
লাঠিখেলার লাঠিয়াল দারায় লাঠিতে ভর করে;
তবুও তো কিছু ফিরিয়ে দিয়েছে সময়ের কালসাপ।
জানি, গড়িয়ে পরা পাথর গুলো সময়ের কাছে
নূরী পাথর কিংবা বালু হয়ে টিকে থাকে,
কিন্তু বেশীরভাগ বয়সী মানুষ হারায় তার সব পরিবর্তন রেখা,
নতজানু হয়ে ফিরে যায় সম্মানীয় শেষতম বিদায়ের পথে।

স্বপ্নের করবী রূপের আগুনে পুড়ে ক্ষার হয় ;
চলে যাওয়া সহজ কিন্তু থেকে যেতে প্রয়োজন
বিবর্তনের স্ফটিক ধারনা
যা আমার জানা নেই ।
===========================♣♣
ছবিটি শাহাবাগ থেকে তুলেছিলাম।

করতলে স্বপ্নের পাখি

আসো করতল খুলে দেখি
কতটা সু-দূরে গেলে আঁখি থেকে
মুছে যায় গহীনের স্মৃতি।

আসো করতল খুলে দেখি
সাজানো সবুজ বনে হলুদের আগমনে
খেলাঘর থেকে কেন ভেসে যায় সুখ।

আসো করতল খুলে দেখি
মুছে দিয়ে গোধূলির সিঁদুর রঙ
কে গান গায় জীবনের পথে যেতে যেতে;
উল্লাসিত মিছিলের স্লোগানে
যেখানে স্রোতের সুরে
জমে থাকে কিছু বালু
আঁখির নদীতে।

আসো করতল খুলে দেখি
ফাগুনের আহব্বানে কে থাকে
দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভিক্ষারি মন নিয়ে
নত জানু হয়ে।

আসো করতল খুলে দেখি
আমাদের মাঝে বে সুরের গান
কার কণ্ঠে জেগেছিলো প্রথম;
কে প্রথম ডালি ভরা স্বপ্ন গুলো
ধূলোর মত দু’হাতে উড়িয়েছি
দিগন্তের সীমানায়।

আসো করতল খুলে দেখি
ভাঙ্গনের পথে যেতে যেতে
দৃষ্টির আড়ালে কতটা নোনা জল
পড়েছিলো বুকের পাথুরে জমিনে।

আসো করতল খুলে দেখি
সময়ের স্রোতে
যে পাখি গেল উড়ে
সেই হিসাব আছে কিনা জমা
মুষ্টিবদ্ধ করতলে।

হারানো বোধ ও অপেক্ষার প্রহর

আমাদের যৌবন সময়ের স্মৃতি ম্লান চাঁদের আলোয় পানসে হয়েছে সেই কবে;
উজ্জল রোদে কত শত রঙধনু ভেঙে দিয়েছে
দৃষ্টি সীমার বাইরে,
যেখানে ছিলো তোমার, আমার আমাদের সময়ক্ষেপণ।
পারিজাত দেখেছিলো কোন এক অন্ধ জাতিশ্বর
আমাদের ভালোবাসাও গতানুগতিক;
ভুবন পরিবর্তনে সময়ের সমাপ্তির পৌনঃপুনিক
ভালোবাসা জেগে থাকে চিন্তার কোষে,
রঙের উদাসী পরিবর্তনের খেলা বিধাতার ঘরে
আমরা সবাই প্রেমের মাধুকরী।

তারপর সময়ের ভাজে ভাজে জোয়ার ভাটা;
বেলা চলে যায় গোধূলি অালোর সাথে
খেলা চলে শরীর পতনের, ভেঙে পরে
চিন্তার ত্রিভূজ মন চৌরাস্তার ধুলোয়;
ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় সুবাসিত প্রেমের ক্ষরণ
সেখান দিয়েই শুরু দায়িত্ব দায়।

আমারা হারিয়েছি যে সৌখিন স্বপ্নের বাগান
সেখানে আর ফিরে যেতে পারনি, খুঁজে পাইনি
ফুলের সৌরভযুক্ত মৌনতার মিছিল ;
আমাদের ছেড়ে ঢং ঢং ঘন্টা বাজিয়ে
চলে গেছে যে সময়ের ট্রেন;
তা আর ফিরে আসেনি দাড়িয়ে থাকা ষ্টেশনে।

তার পরেও অামাদের বোধ অপেক্ষার প্রহরে
অাক্ষেপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ধূলিময় স্মৃতির গহীনে
সুনিপুণ ভাগ্যফলের আশায়।
__________________♥

শেষ চিঠি (২য় পর্ব)

প্রিয়তমা,
নীলকণ্ঠে দৃশ্যপটে দেখি
হলুদ বিকেলের দীর্ঘ ছায়া
সময়ের ব্যাবধানে দীর্ঘতম রজনী,
অপেক্ষার আক্ষেপ নিয়ে চলে যাওয়া দিন
উপহার দিয়ছে যে গাঢ়তম নীল,
সেই বেদনাবোধ ধারণ করে কেউ তো নীলকণ্ঠ হয়ে যায়,
যার কোন কষ্টের অনুভূতি নেই; শুধু থাকে বিষপানের জন্য দৃশ্যের নামাবলী।

আমাদের মাঝে সেই প্রাচীর ছিলো সমাজের কম্পন,
যেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো এক চিমটি কাঁচা হলুদ রোদ্দুর গায়ে মাখবে বলে।
যাপিত জীবনের শীতলতম দিনে কথার মালাশবের মত পরে থাকে নিরব দেহ নিয়ে,
আমাদের আর উঠে দাঁড়াবার পথ নেই।

দৃষ্টি সীমা যে সবুজ পথের দিকে পরে আছে, অতলান্ত মন সেই দিকে ধায়।
হীরক রাজার গয়নাগাটি গায় জড়িয়ে নাচের পুতুল বউ অনেক উপলব্ধি ধারণ করে,
তোমাকে আর তোমাতে খুঁজে পাইনি।

সেই থেকে মহাশ্যূনে ফেল দিয়েছি হলি উৎসবের রঙের থালা,
কালো দীর্ঘশ্বাস গায়ে জড়িয়ে ভষ্ম নিয়ে দু’হাতে উড়াই সমস্ত প্রেমের বনানী জুড়ে,
বিহঙ্গের ডানায় কালো রঙ দিয়ে আকাশ জুড়ে আঁকি হৃদয় ক্ষয়ের ক্যানভাস,
সাগরের ঢেউ হয়ে মুছে দিয়েছি কত না বালুতে লেখা পদ্য,
গোলাপ গুলো গাছ থেকে তুলে ফুলদানিতে রেখে দিয়েছি মৃতরূপ দেখবো বলে।

ভালোবাসার সকল রঙ এক রকম হয় না
কেউ কেউ হলুদ দীর্ঘশ্বাস থেকে উঠে দাড়িয়ে
সফেদ জোৎসনায় পুড়ে হয়ে যায়কোমল নীলকণ্ঠ মানুুষ।

১৩/০৫/২০২০
খেয়ালীমন

** নীলকণ্ঠ তাকেই বলে যিনি কণ্ঠে বিষ ধারণ করেন।

শেষ চিঠি (১ম-পর্ব)

প্রিয়তম,
তোমার জমিয়ে রাখা গোপন দুঃখ গুলো কখনো
ছুঁতে না পারার কষ্ট আমাকে স্বপ্নবিহীন জাগিয়ে রাখে রাতের পর রাত।

ভাবনার বাক্সবন্দী স্মৃতিকথা খোলা হয়নি কোনদিনই যা তোমাকে দেখাবো ভেবে জমিয়ে রেখেছিলাম বসন্তের দিনে।
আজো সেই গোপন ভারমুক্ত হলো না;
দিগন্তরেখার কাছাকাছি শেষ বিকেলের হলুদ সূর্য জানিয়ে দিচ্ছে তার বিদায়ের বারতা ;

আমিও রকিং চেয়ারে বসে দুলে যাচ্ছি; ফুটপাথের চালচুলোহীন নেশাগ্রস্থ ভিখারির মত।

উঠে দাঁড়াবার উপায় আছে ঠিকই কিন্তু ইচ্ছের কাছে পরাজিত নির্লিপ্ত মন সময়ের কালক্ষেপণে বেশী প্রাধান্য দিয়ে ঝুলে আছে এক নিকষকালো গহ্বরে।

কি হবে এই বেলা শেষের আলোয় পৌরাণিক গল্পের ঝুলি খুলে, সেই তো রাত, সেই তো অন্ধকারের হাহাকার, সেইতো প্রদীপের তেল ফুরিয়ে যাবার যৌক্তিক বাহানা।

তাই বার বার ফিরে যাই নিদ্রাহীন স্বপ্নবিহীন রেলগাড়িতে পাড়ি দেয়া জীবনের পথে। এতে করেও একটা অপূর্ণ ইচ্ছের সুখ খুঁজে পাওয়া যায়, যাতে কিনা হারানোর ভয় নেই, স্বপ্নক্ষয়ের জ্বালা নেই, বিষাদময়তা নেই, ক্লান্তি নেই,দুঃখ নেই, আবেগ নেই,রোষানল নেই, চোখেরজল নেই, কষ্টের হা হুতাশ নেই, এই নেই, সেই নেই, আমি নেই এমন কি তুমিও নেই।

তবু যা থাকে তা গলে গলে জ্বলে ক্ষয়ে যাওয়া মোমের তলানি, সময় বেঁচে থাকার শেষে ক্ষণে নতুন শক্তি নিয়ে পুনরায় স্মৃতিপটের সাথে বসে দুলে দুলে খুলে দেয়া বাক্সবন্দী প্রজাপতির ইচ্ছের রোদ্দুর।

চাইলেই সেই রোদ্দুর প্রজাপ্রতির ডানায় তোমাকে নাচতে দেখতে পারি, শুনতে পারি তোমার কণ্ঠের টুংটাং জলতরঙ্গ। ছুঁয়ে দেখতে পারি প্রজাপতির বালুচরি রঙের নক্সা,এর সাথে সৌখিন মেজাজে আলী আকবর শুনতে শুনতে দু’এক পেগ মেরে দিতেও দ্বিধা নেই, এতে করে কোন পাপ বোধ জাগবে না !

আমি জানি, সময়ের মানদণ্ডে আমরা কেউ আগে পরে নেই; আমাদের যাত্রা সমতালে গন্তব্যের শেষ স্টপইজ, যদিও পথ ও রথ ভিন্ন হতে পারে।

তার পরও পিছন ফিরে না তাকাবার মত ইচ্ছেরা আমাদের মত মৃত হবে না কোন দিন, আর বাক্সের সেখানেই জমে থাকে, থাকবে তোমার, আমার আমাদের না ছুঁয়ে যাওয়া গোপন দুঃখগুলো।

১২/০৫/২০২০
====
✍️ খেয়ালীমন

স্বপ্ন ক্ষয়

আমার দেখা স্বপ্ন গুলো
স্বপ্ন হয়েই ক্ষয়
কিছু স্বপ্ন ভেসে ভেসে
উদাস হাওয়া হয়।

আমার দেখা স্বপ্ন গুলো
মরুর তপ্ত বালু
স্বপ্ন কিছু ঝড়না হয়ে
পাহাড় থেকে ঢালু।

স্বপ্ন আমার ভেজায় আমায়
দিনে কিংবা রাতে
স্বপ্ন কিছু লুটিয়ে পরে
পথের বাঁকে বাঁকে।

স্বপ্ন দেখে স্বপ্ন উড়াই
নাটাই আমার হাতে
ভোকাট্টা হয় স্বপ্ন ঘুড়ি
নবীন সুতার সাথে।

কিছু স্বপ্ন ঠিকানা হীন
ঘুরে বেরায় পথে
হঠাৎ কারো পকেট পেল
চলে তাহার সাথে।

অভিমানী সব স্বপ্ন গুলো
চাঁদের অালোয় ভেজা
হয়নি কেনা ফুলের সুবাস
ছিলাম নাতো রাজা।

স্বপ্ন আমার অাঁধার বোঝে
প্রদীপ তলে আলোর খোঁজে
ছুটতে গিয়ে হোচট খেয়ে
গড়িয়ে পরে খাদে
নিদারুণ সেই যন্ত্রনাকেই
দারুন ভালোবাসে।
♦♦♦