শেখ সাদী মারজান এর সকল পোস্ট

বইমেলায় মারজানের কাব্যগ্রন্থ মধ্যবিত্ত জীবনের মানে

এবারের বইমেলায় চলন্তিকা প্রকাশনী হতে প্রকাশ হয়েছে তরুণ কবি-আবৃত্তিকার শেখ সাদী মারজানের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ মধ্যবিত্ত জীবনের মানে

মধ্যবিত্ত জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা; প্রতীক ও রুপকের সাথে শব্দের গাঁথুনীতে ফুটে উঠেছে। ৪৮ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে চল্লিশটি কবিতা। কখনো ছন্দে, কখনো মুক্ত ছন্দে কাব্য নির্মিত হয়েছে এই গ্রন্থে। ফ্লাপ লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শুভঙ্কর দাস। বইটি পাওয়া যাচ্ছে- অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩৬৮ নম্বর স্টলে। এছাড়াও বইটি পাওয়া যাচ্ছে রকমারি ডটকমসহ বেশকিছু অনলাইন পরিবেশক হাউজে। গায়ের মূল্য: ১০০ টাকা।

poem book of marjan

মাটির ঘ্রাণ

সবুজ ফসলের মাঠে ছড়িয়ে আছে
অবারিত সুখ-হাসি-কান্না
যেন চাষীর ঘাম-ঝরানো মহাকাব্য।

মাটির সাথেই গভীর সখ্যতা
বাংলার প্রতিটি চাষীর।
ওরা বোঝে- মাটির হাসি-কান্না
সারাটি জীবন প্রিয় মাটিকে-ই
ভালবেসে।

বাংলার মানুষের শরীর হতে
মাটির ঘ্রাণ ভেসে আসে।

রাফিদের কাণ্ড

রুমের দরজা আটকিয়ে পড়তে বসেছে রিজুয়ানা। রুমের দরজা আটকে পড়তে বসার কারণ হচ্ছে- ছোট ভাই রাফিদের দুষ্টুমির অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার প্রচেষ্টা। রাফিদ এবার ছয় বছরে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে দুষ্টুর শিরোমনি বললে ভুল হবে না। দুষ্টুমিতে অলিম্পিয়াড থাকলে সেখান থেকে সে হয়তো স্বর্ণপদক নিয়ে আসতো। অথবা দুষ্টুমির ওয়ার্ল্ড টুর্নামেন্ট থাকলে সে ট্রফি সে জয় করে নিয়ে আসতোই। দুষ্টুমির বিভিন্ন কৌশল সে আবিষ্কার করে। তাকে দুষ্টুমির গবেষকও বলা যেতে পারে। রাফিদ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে তার দুষ্টুমির সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

গত সপ্তাহে রিজুয়ানা ওর বান্ধবী অর্পার সাথে পদ্মবিল ভ্রমণের প্ল্যান করেছিল। বাসা থেকে প্রাইভেট এর উদ্দেশ্যে বের হবে। কিন্তু প্রাইভেট না পড়ে ওরা পদ্মবিলে যাবে। যাবতীয় প্ল্যান ওরা ফোনে ফোনে করেছে। সকালে যখন রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে। তখন দরজার সামনে রাফিদ সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে পদ্মবিলে যাবো।
– আমি তো প্রাইভেটে পড়তে যাচ্ছি।
– না। তুমি পদ্মবিলে যাচ্ছো। আমি জানি। আমারে সাথে না নিলে আম্মু-আব্বুর কাছে সব বলে দিবো।
রাফিদের কথা শুনে রিজুয়ানা হতবাক! ও কী করে প্ল্যানটা জানলো! অগত্যা রাফিদকে সাথে নিয়ে পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। চোখ ধাঁধানো পদ্মবিলে গিয়ে রাফিদ প্রথমে বায়না ধরলো তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দিতে হবে। বায়না অনুযায়ী তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দেয়া হলো। তারপর সে দ্বিতীয় বায়না ধরলো নৌকায় চড়বে। কিন্তু আশেপাশে খালি নৌকা দেখা যাচ্ছে না। রাফিদ নাছোড়বান্দা; নৌকায় সে চড়বেই চড়বে। এরপর কান্না শুরু করে দিল। রিজুয়ানা রেগেমেগে রাফিদের গালে বসিয়ে দিল এক থাপ্পর। থাপ্পর খেয়ে রাফিদ আরো জোরে কান্না শুরু করে দিল। তখন রিজুয়ানা বললো-
– চুপ কর।
– না।
– স্পাইসি চিপস কিনে দেবো।
– আচ্ছা দাও।
রাফিদকে স্পাইসি চিপস কিনে দেওয়া হলো। স্পাইসি চিপস হাতে পেয়ে রাফিদ বললো-
– ধন্যবাদ।

রিজুয়ানার ফাইনাল পরীক্ষার আর কিছুদিন বাকী। রাতের খাবার শেষে রিজুয়ানা ওর রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেল- রাফিদ ওর পড়ার টেবিলের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। রিজুয়ানা বললো তুই এখান থেকে বের হ। রাফিদ মাথা নীচু করে রিজুয়ানার রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাতে পড়া শেষ করে ঘুমানোর পূর্বে রিজুয়ানার ফোন বেজে উঠলো। সুমি ফোন করেছে। আগামী পরশু রীতার জন্মদিন। যেভাবেই হোক উদযাপন করতে হবে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। এ মুহূর্তে জন্মদিন উদযাপন করলে বাসা থেকে রাগ করবে। তাই গোপনে উদযাপন করতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সুমির নানুর বাসায় উদযাপন করা হবে। কেকের অর্ডার, মোমবাতি, গিফট সবশেষে ফাটানোর জন্য ডিমের ব্যবস্থা করতে হবে।

দুদিন পর দুপুরবেলা রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে সুমির নানুর বাসার উদ্দেশ্যে; ঠিক তখনই দেখতে পেল রাফিদ নতুন জামা গায়ে, লাল প্যান্ট পড়ে, চুলে সিঁথি কেটে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলো-
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে।
– আমার সাথে মানে?
– সুমি আপুর নানুর বাসায় যাবো।
– কেন?
– জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। আমারে সাথে না নিলে আম্মুরে সব বলে দিবো।
রিজুয়ানা বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকায়। ও কী করে জানলো? এখন ওর সাথে না নিয়ে উপায় নেই। আম্মুরে বলে দিলে আব্বুও জানবে, তারপর রাহাত ভাইয়া জানবে। পিঠে ঢিপিস ঢিপিস পড়বে। অগত্যা রাফিদরে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিল।

সুমির নানুর বাসায় আরো কয়েকজন বান্ধবী এসছে। রাফিদকে আদর করে কোলে নিতে চাইলো। কিন্তু সে কারো কোলে উঠলো না। চেয়ারে বসে একা একা কিছু ভাবতে লাগলো। এরই মধ্যে টেবিলে কেক রেখে মোমবাতি জ্বালানো হলো। সবাই একসাথে উঠলো হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ বলে ফু দিয়ে মোমবাতি নেভাতেই রাফিদ বললো- সবাই দেখো কেকটা কেমন কালো, বলেই ছুরি দিয়ে কেকে বাসিয়ে দিল এক কোঁপ। ওর কাণ্ড দেখে সবাই থ’ হয়ে গেল। এরপর রিজুয়ানা রাগে গড়গড় করতে লাগলো। ডিম ফাটানো আর হলো না।

রিজুয়ানা বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে আছে। এতো কষ্টের আয়োজন রাফিদ একাই মাটি করে দিল। এর মধ্যে রাফিদ এসে বললো-
-আপু তোমরা আজ ডিম ফাটাওনি কেনো?
-তুই যা এখান থেকে।
-আচ্ছা। আমি যাচ্ছি। আম্মু তোমারে খেতে ডাকছে।
রাফিদ অবশ্য আগেই খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষে রুমে এসে দেখলো রাফিদ খাটের কোনে বসে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই তোর কাজে যা।
রাফিদ যাচ্ছি বলে স্কেল নিয়ে দৌড় দিলো।

রিজুয়ানা চিন্তায় পড়ে গেল। সব প্ল্যান রাফিদ কী করে বুঝে যায়। ওকে এড়িয়ে চলার কোনো উপায় নেই। প্রাইভেটে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে আলোচনা করতে লাগলো। রাফিদকে বাদ দিয়ে কী করে পরবর্তী কোনো কিছু করা যায়। সবশেষে বুদ্ধি বের হলো। সকালে রাফিদ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাসা থেকে বের হতে হবে। তাহলে রাফিদ আর সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরতে পরবে না।

কিছুদিন পর পয়লা বসন্ত। স্কুলে বসন্তের অনুষ্ঠান হবে। রিজুয়ানা ও তার বান্ধবীরা প্ল্যান করলো, ওই দিন সকলেই বাসন্তী রঙয়ের ড্রেস পড়বে। হাফ পিরিয়ডের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। রিজুয়ানা সকাল আটটার সময় বাসা থেকে বের হবে। কারণ রাফিদ সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠে। রাফিদ ঘুম থেকে জাগার আগেই যদি রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হতে পারে তাহলে রাফিদকে আর সাথে নিতে হবে না।

বসন্তের প্রথম দিন সকালে রিজুয়ানার দরজায় ঠকঠক শব্দ। রাফিদ চিল্লাপাল্লা করছে। আপু উঠো। সকাল হয়ে গেছে। রিজুয়ানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তখন সকাল ০৭ঃ১০ বাজে। দরজা খুলে বিস্ময়ে হতবাক। রাফিদ বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলো-
– তুই পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছিস কেন?
– আজ বসন্তের প্রথম দিন। তাই বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছি। তোমার সাথে স্কুলে যাবো।
– আমার সাথে স্কুলে কেন যাবি?
– তোমাদের স্কুলে আজ অনুষ্ঠান আছে, তাই যাবো।

রিজুয়ানা রাগে ফেটে পড়লো। রাফিদকে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিলো স্কুলের দিকে। বান্ধবীরা সবাই বললো- রাফিদ আজও চলে এসেছে। রিজুয়ানা সবাইকে আজ সকালের কথা বললো। সবাই শুনে মন্তব্য করলো যে, রাফিদের ঘাড়ে হয়তো জ্বীন তাই সে সবকিছু জেনে যায়। আর এ জন্যই অনেক দুষ্টুমি করে।

কয়েকদিন পর রাতে রিজুয়ানা ইংরেজি বই খুঁজে পাচ্ছিল না। বই খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল খাটের নীচে বইটি পড়ে আছে। খাটের নীচে হাত দিলো বই উঠানোর জন্য। হাতে নাগাল পাচ্ছিল না। অগত্যা মাথা ঝুকে বই উঠাতে গেল। বই হাতে নিয়ে মাথা বের করার সময় কিসের সাথে যেন গুতা লাগলো। তবে খাটের কাঠের সাথে নয়। টর্চ লাইট এনে জ্বালিয়ে দেখতে পেল খাটের নীচের দিকের কাঠের সাথে স্কস্টেপ দিয়ে কিছু একটা লাগানো। তারপর সেটা খুলে এনে দেখতে পেল একটা পুরনো মোবাইল। তারপর চিনতে পারলো; এটা রাহাত ভাইয়ার পুরনো একটা মোবাইল। এটা হাতে নিয়ে রাফিদ খেলতো। বাটনে চাপ দিতেই স্ক্রিনে লাইট জ¦লে উঠলো। তারমানে এটি এখনও সচল রয়েছে। কিন্তু এটি এখানে স্কস্টেপ দিয়ে কে লাগিয়ে রেখেছে? নিশ্চয়ই রাফিদ এটি এখানে লুকিয়ে রেখেছে। রিজুয়ানা বাসার কাউকে কিছু না বলে মোবাইল ফোনটি ওর ব্যাগে রেখে দিল। পরের দিন রাফিদ রিজুয়ানার রুমে আসলো। রিজুয়ানা কিছু না বলে কৌশলে দেখতে লাগলো রাফিদ কি করে। রাফিদ খাটের কোনে বসে রইলো। তারপর একটা কলম নিয়ে খাটের নীচে ছুড়ে ফেলে দিল। তারপর সে খাটের নীচে গেল ফেলে দেওয়া কলমটি তুলতে। কলম তুলতে খাটের নীচে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রইলো। তারপর বের হয়ে এলো। বেচারার মন খারাপ হয়ে গেল। আনমনে কিছু ভাবতে লাগলো যেন। রাতে ঘুমানোর সময় রাফিদ উৎপাত শুরু করে দিলো। সে ঘুমাতে চাইছে না। ঘুম পাড়ানোর জন্য আম্মু গান শোনাল, ছড়া শোনাল, গল্প শোনাল। কিন্তু সে কিছুতেই ঘুমাবে না। তারপর আম্মু জিজ্ঞেস করলো এমন করছে কেন? রাফিদ অভিযোগ দিলো রিজুয়ানা আপু তার খেলার পুরনো মোবাইল নিয়ে গেছে। মোবাইল না দিলে সে এখন কিছুতেই ঘুমাবে না। আম্মু বললো তুমি তোমার ট্যাব চালাও। ট্যাবে গান শোনো, কার্টুন দেখো। রাফিদ বললো- না, আমার ওই মোবাইলটি খুবই দরকার। তুমি রিজুয়ানা আপুক বলো আমার মোবাইলটি দিতে। এরপর জোরে কান্না শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বললো নানুরে ফোন দাও। আমি নানুর সাথে কথা বলবো। নানুকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো রিজুয়ানা আপু আমার মোবাইল নিয়ে গেছে; দিচ্ছে না। তুমি দিতে বলো। নানু রাহাতকে কল করে বললো, রিজুকে বলো রাফিদের মোবাইল ফেরত দিতে। রাহাত রিজুয়ানার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলো ওটা ওর সেই পুরাতন মোবাইল, যেটি সে পাঁচ বছর আগে কিনেছিল। দুই বছর আগে ব্যবহার বাদ দিয়ে ঘরে ফেলে রেখেছিল। রাহাত তার পুরাতন মোবাইলটি হাতে নিয়ে স্ক্রিনে টাচ করে দেখলো মোবাইলটি এখনও সচল। লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল ওখানে লাইভ ইয়ার্ড রেকর্ড নামে নতুন ধরনের একটা এ্যাপ চালু আছে। পরে রাহাতের মনে পড়লো এরকম একটা এ্যাপ রাফিদের ট্যাবেও সে দেখেছিল। তারপর রাফিদের ট্যাব হাতে নিয়ে ওই এ্যাপের ভিতর প্রবেশ করেই রেকর্ড অপশনে ঢুকে সে দেখতে পেল ওই মোবাইলের এ্যাপের সাথে রাফিদের ট্যাবের কানেকশন রয়েছে। ওখানকার সবকিছু এখানে রেকর্ড হয়ে আছে। এই রেকর্ডের মাধ্যমে রাফিদ রিজুয়ানার সমস্ত প্ল্যান জেনে যায়। রাহাত সব বুঝেও চুপচাপ থাকলো। ছয় বছরের রাফিদের উদ্ভাবিত এই টেকনোলোজি সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।

Rafid Miah
Rafid Miah.

প্রিয়তম প্রকৃতি

index

সবুজ ধানের কচি পাতায়
জমে থাকা শিশির বিন্দুতে
সূর্যের আলোর ঝলকানি‌
নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায় ।

নীরব ঘাতকের ক্রমাগত তাণ্ডবে
অবারিত যন্ত্রণায় জর্জরিত পৃথিবী
ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।

প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্যের কোনায়
বেদনার করুণ সুর শোনা যায়
লাশের মিছিল দীর্ঘ; আরো দীর্ঘ।

বেদনার আলিঙ্গন মুক্ত হতে
শান্তনা খুঁজতে খুঁজতে
পথের বাঁকে ঘুরে ফিরে
প্রিয়তম প্রকৃতির কাছে যাই।

অস্পষ্ট পথ

ঘন কুয়াশায় দিশেহারা নাবিক;
কোনদিকে বন্দর? অস্পষ্ট পথ
কনকনে শীতে সমুদ্রের বুকে
দিগ্ভ্রান্ত জাহাজ ছুটে চলে।

যাত্রীর দল আশায় বুক বাঁধে
কাঙ্খিত বন্দর বুঝি সন্নিকটে;
আঁধার কেটে দিনের সূর্য উঠবে
নতুন আলোয় পথ হবে স্পষ্ট।

জোছনাবাসী

প্রতি পূর্ণিমায় আমি একা-ই হেঁটেছি
গ্রামের মেঠো পথ ধরে নির্জন মাঠে।
স্বপ্ন-দিঘীর শান বাঁধানো ঘাটে বসে
লোনা জলের ফোঁটায় গাল ভিজিয়েছি।

ইট-পাথরের এই শহরে একা-ই জাগি
ব্যালকনিতে বসে চন্দ্রকলার বর্ণ দেখি।

আসন্ন ফাগুন পূর্ণিমায় আবারও হাঁটবো
একা নয়, কেউ একজন হাত ধরবে!
নির্জন মাঠে নয়, কোলাহলমুখর প্রান্তরে
চারপাশে থাকবে অজস্র জোছনাবাসী।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হয়েছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে শেখ সাদী মারজানের ৩য় কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’।

তিন ফর্মার বইটিতে ৪০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি নিজেই। ভুমিকা লিখেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান কবি তাজিমুর রহমান।

তারুণ্যের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি, আনন্দ-বেদনা, দেশ ও ভাষা প্রেম ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজ-সাবলীল ভাষায় ফুটে উঠেছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’ গ্রন্থের কবিতায়।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৬৭১ নং স্টলে। গা‌য়ের মূল্য ৮০ টাকা। ২৫% ছা‌ড়ে ৬০ টাকা।

বাংলাদেশ সাহিত্য উৎসব ২০২০

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত বাঙালি জাতিসত্তার মাস ফেব্রুয়ারির ২২ ও ২৩ তারিখে কবিতাপত্র ‘দিকচিহ্ন’- এর উদ্যোগে দেশি-বিদেশি কবি-সাহিত্যিকের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ জাতীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ, শাহবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ সাহিত্য উৎসব ২০২০’। এ উৎসবের থিম ‘ভেদাভেদহীন শান্তির পৃথিবী চাই’।

বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ, বিশ্বের অন্যান্য ভাষার সাহিত্যিকদের সঙ্গে বাংলা ভাষার সাহিত্যিকদের মেলবন্ধন এবং সাহিত্যের সঙ্গে গণমানুষের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করাই উৎসব আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

তিনদিনব্যাপী এ সাহিত্য উৎসবের আহ্বায়ক লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, যুগ্ম-আহ্বায়ক কবি ও সমাজ সংগঠক মোহন রায়হান। উৎসব উদ্বোধন করবেন লেখক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন লেখক ও সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

উৎসবে বাংলা ভাষার গতি প্রকৃতি, কবিতাঃ ব্যক্তি ও সমষ্টির দ্বৈরথ, বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা, বাঙালির ইংরেজি চর্চ্চা ও অনুবাদ সংকট, মাধ্যমের ভিন্নতা ও শিল্পের ঐক্য- শিরোনামের পাঁচটি পর্বে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনায় অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্যবোদ্ধা ও গুণীজন। এ ছাড়াও থাকবে দেশি-বিদেশি কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ, আনুষ্ঠানিক সম্মাননা প্রদান ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সাহিত্য উৎসব ২০২০-এ অংশগ্রহণের জন্যে আপনাকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনার অংশগ্রহণ আমাদের উৎসবকে আলোকিত করে তুলবে।

নামচা

ভুল প‌থে চল‌তে চল‌তে কে‌টে গেল প‌চিশ বসন্ত
ভাব‌তে ভাব‌তে কে‌টে গেল কতগু‌লো ফাগুন
কত চৈত্র এ‌লো গে‌লো, অলসতা র‌য়েই গেল।

কত তারকা খ‌সে পড়‌লো আকাশ হ‌তে
তারপর ভষ্ম ছাই, এখন অ‌স্তিত্বহীন!
হৃদ‌য়ের আকা‌শে উড়‌লো কত পা‌খি
স্মৃ‌তিগু‌লো আজও উজ্জ্বল, তা‌কি‌য়ে দে‌খি।

শর‌তের শি‌শির বিন্দু চু‌পি চু‌পি ব‌লে যায়,
ও‌গো বন্ধু, একটু প‌রেই বিদায় নেবো
কাল প্রভাতে যথারী‌তি আবার আস‌বো

একদিন মানুষেরা ভুলে যায়

চাপা আর্তনাদ ভেসে আসে বাতাসে
বয়ে আনে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের বার্তা
ক্ষয়ে যায় মানবতা, মুছে যায় চির সত্য ইতিহাস
জোর-জুলুম জিতে যায়; সময়ের নির্মম পরিহাস
রাজপথ কেঁপে ওঠে মানুষের মিছিলে
ব্যারিকেড দেয় পালিত পেটুয়ার দলে
দিন যায় রাত যায়, সবকিছু থেমে যায়
অতঃপর একদিন মানুষেরা ভুলে যায়।

অশ্বত্থ

ওই যে দেখছ অশ্বত্থ গাছটি
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে
নিজেকে পুড়িয়ে আমাদেরকে ছায়া দিচ্ছে;
ওই গাছটি একদিনে অতবড় হয়নি।

বীজ থেকে চারা গাছ, তারপর ধীরে ধীরে
লড়াই করে করে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি।
এই বৃক্ষ কানন থেকে অশ্বত্থকে বের করে দিবে?

ও যে এই কাননের সৌন্দর্য-সম্পদ
এখানেই যে ওর জন্ম, বেড়ে ওঠা
এই মাটিতেই গেঁথে আছে ওর শেকড়।

স্নিগ্ধ গোলাপ এখন বিষাক্ত

পৃথিবীর উদ্যানে গুনগুন করছে বিষাক্ত ভ্রমর
বিষের হুল ফুটিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অঙ্গে
বিষে নীল হচ্ছে উদ্যানের লাল গোলাপ
বদলে যাচ্ছে গোলাপের চেহারা
স্নিগ্ধ গোলাপ এখন বিষাক্ত।

বইমেলায় মারজানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ তরুণ বাচিকশিল্পী শেখ সাদী মারজানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত” চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে ৪০টি কবিতা। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে- পশ্চিমবঙ্গের কবি-কথাসাহিত্যিক আবদুস শুকুর খান ও তাঁর সহধর্মিনী নিলোফা খানকে। এর আগে ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মারজানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলোর বিলাপ আঁধারের হাসি” প্রকাশিত হয়েছিল।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে- লিটল ম্যাগ চত্বরের চলন্তিকার (১২৭ নম্বর)স্টলে।

অসমাপ্ত আবেগ

বোদরামের সৈকতে
মুখ থুবরে পড়ে আছে একটি শিশু
গায়ে লাল জামা, নীল হাফপ্যান্ট
পায়ে জুতা আর মোজা আছে
দেহ থেকে প্রাণটা উড়ে গেছে

যেন ফুটন্ত একটি ফুল
কান পেতে বালুর কথা শুনছে
আর বলছে-
এই তোমাদের সভ্য পৃথিবী!

সমুদ্র তাকে গ্রাস করেনি
ফিরিয়ে দিয়েছে, অথচ
চলমান সভ্যতা, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ
মানুষকে ভীনদেশে, সমুদ্রে আর মৃত্যুর পথে ঠেলছে

Youtube

রোহিঙ্গা বালকের আর্তনাদ

তোমা‌দের দুয়া‌রে আ‌মি একটু আশ্রয় চাই

আমার বাবা ছিল
মা ছিল ভাই ছিল
বোন ছিল

আমার স্বপ্ন ছিল ফস‌লের মাঠে সোনা ফলাবার
গেরুয়া কাপড় গা‌য়ে জড়া‌নো একদল লোক
ও‌দের হা‌তে চাপা‌তি-আ‌গ্নেয়াস্ত্র
চো‌খে হিংসা, লোভ, লালসা
ওরা আমার বাবা‌কে হত্যা ক‌রে‌
আমার বোন‌কে ধর্ষণ ক‌রে‌
আমার মা‌য়ের কোল থে‌কে ভাই‌টি‌কে ‌কে‌ড়ে নি‌য়ে
ছু‌ড়ে ‌দেয় দাউদ‌াউ আগু‌নে
জ্বা‌লি‌য়ে পু‌ড়ি‌য়ে ছারখার ক‌রে‌ আমার বস‌তি

আর আ‌মি আমার শোক বিহ্বল মা কে রে‌খে
আমার জীবন নি‌য়ে পা‌লি‌য়ে এ‌সে‌ছি তোমা‌দের দুয়া‌রে
আ‌মি মানুষ আ‌মি বাঁচ‌তে চাই

youtu.be/-NOc9pi68wI
কবিতাটির আবৃত্তি লিংক।