মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

ঘুম পরী

night-sky_4-jpg

দিনের শেষে খুকুর চোখে আয়রে ঘুম আয়
ঘুম পরী তোর পায়ে পড়ি খুকুর চোখে আয়।।

খুকু আমার সোনার পুতুল বায়না ধরেছে
চাঁদের দেশে যাবে বলে রকেট কিনেছে,
সেই রকেটের পাখায় চড়ে আয়রে ঘুম আয়।।

চাঁদের দেশে ফুল বাগানে থাকবে খুকু একা
সন্ধ্যা হলেই জোনাক মালা জ্বলবে থোকা থোকা,
সেই আলোরই সোপান বেয়ে খুকুর চোখে আয়।।

শব্দনীড় রঙ্গমঞ্চ-আমাদের এইসব দিনরাত্রি-৩

বাসে করে কোথাও যাবেন বলে বাসে উঠে একটা সিট খালি আছে দেখে এগিয়ে গেলেন এবং দেখলেন জনৈক ভদ্রলোক (সুন্দর সার্ট প্যান্ট পরনে বলে ভদ্রলোক ধরে নিতে পারেন) তার নিজের গাড়ি মনে করে এমন ভাবে দুইজনের সীটের ৮০% জুরে বসে আছেন। আপনি ক্ষণিক অপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে বলেই ফেললেন একটু চেপে বসবেন?
ভদ্রলোকের কোন বিকার নেই।
এমন অবস্থায় কি করবেন?

রাগিণী

pict0098_filtered-2

গান গেয়ে পাখি ওই তরু শাঁখে
অবেলায় বকুল তলে আমায় কেন ডাকে।।

স্বপনের ওই সুদূরে কে বাঁশরী বাজায়
নেশা লাগান সুরে দূর গাঁয়ের বাঁকে।।

তারই বিধুর সুর এসে আমার প্রাণে বাজে
উতল করা সেই বাঁশরী আমায় কেন ডাকে।

হৃদয় তিমিরে নিভে গেছে শুকতারা
স্মৃতির বনে তবু ছায়া জেগে থাকে।।

আসুন একটা গান শুনি

youtu.be/Bka8zJetyiQ

লিখতে বলেছিলে গান
হয়নি লিখা আজো তাই
আকাশ ছেয়ে গেছে মেঘে
বসন্ত আসেনি, বহেনি বাতাস
ওঠেনি চাঁদ এখন বসে আছি নিশি জেগে।।

ফিরায়ে দিয়েছিলে তুমি
হয়নি দেখা সেই দিন
সেই থেকে আজো ভরে আছে মোর বীণ
হৃদয়ে আজো তুমি তো আছ জেগে।।

বাতাস ছিল মৌসুমি
মনে পরে সেই দিন
এসেছিলে তুমি, ফাগুন নিয়ে এসেছিলে সেই দিন
স্বপনে যেন সেই ছোঁয়া আছে লেগে।।

আমার বাড়িতে নিমন্ত্রণ

এই বাড়িট আমার। কোস্টারিকা শহরের এক প্রান্তে এই বাড়িটা কিনেছিলাম ১৮৬৫ সালে যখন আমার বয়স মাত্র ৩৫ বছর। কে কে এই বাড়িতে নেমতন্ন গ্রহন করতে আগ্রহী দয়া করে জানাবেন। না না ভাবনার কিছু নেই এখানে একসাথে আপনাদের মত ১০/১২টা পরিবার বেড়াতে পারবে। খাওয়া দাওয়ার কথা ভাবছেন? আরে না না, পাশেই সমুদ্র, ওখানে অনেক মাছ পাওয়া যায় আর বাড়ির ভিতরে রিতিমত ৩২ একর জমিতে একটা গরু আর একটা হাস, মুরগী, টার্কির খামার রয়েছে। শাকসব্জির কথা ভাবছেন? না না এ ব্যাপারে কিচ্ছু চিন্তা করবেন না ২৮০ একর জায়গা জুরে রয়েছে বিশাল শব্জি, ফুল আর ফলের বাগান।

 photo My Home 1_zpssx2cmyuu.jpg

বিকেলে এখানে বসে নিজের গরুর দুধ দিয়ে নিজের বাগানের কফি খাওয়া যাবে। কি বলেন ভাল লাগবে না? সাথে যে যা খেতে চাইবেন সবই করা যাবে। ১০জন বিশ্বের নামকারা শেফ এখানে কাজ করে ৫টা কিচেনে।

 photo My Home 2_zpsveifmpmf.jpg

রাতে ঘুমাবার সময় কোন চিন্তা নাই বাড়ির চারিদিকে পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত সিকিউরিটি লাইট জ্বলে, এর মধ্যে ইচ্ছা করলে কবিতা আঁকতে পারবেন, ছবি লিখতে পারবেন আবার সাথে যদি আপন মানুষ থাকে তাহলে একান্তে বসে প্রেম করতেও পারবেন। এমন নিরিবিলি জায়গা আর কোথায় পাবেন? মশা মাছির জন্য ভয়? একেবারেই অসম্ভব! সারাদিনরাত ধরে প্রাকৃতিক ওষুধপত্র স্প্রে হতেই থাকে।
কী ভাল লাগছে না? তাহলে শব্দনীড়ের সবাই মিলে আসুন। আড্ডা, গল্প, খানাপিনা আনন্দ সব হবে।
 photo My Home 3_zpsi0nitriy.jpg

পাশবিক পশুত্বের স্বপ্ন

dog_take_cow_milk1447805387

বেশ কিছুদিন ধরে একটা স্বপ্ন মাথায় ঘুর ঘুর করছে কিন্তু ঠিক গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারছি না। আচ্ছা, চার পায়ে হেটে বনে যারা বাস করে কিংবা ঘুরে বেড়ায় তাদের আমরা পশু বলি, তাই না? আর আমরা? আমরা হলাম ‘মানুষ’ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী! আমরা রকেট বানিয়ে চাঁদে যেতে পারি, উড়োজাহাজে করে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস যেতে পারি, টেস্ট টিউব বেবির জন্ম দিতে পারি, মানুষের দেহ কেটে রোগ সারাতে পারি, ঘরে বসে কিংবা রাস্তায় হাটতে হাটতে ঢাকা থেকে টোকিওতে কথা বলতে পারি, মগজ ধোলাই করে মনুষ্য নিধন কাজে লাগাতে পারি আবার ইচ্ছা করলে ২/৪ হাজার কোটি গরম টাকা আত্মসাৎ করতে পারি, ২০০ তলা দালান বানিয়ে স্বর্ণ বা হিরা মানিক মতি মুক্তা দিয়ে সাজিয়ে বসত করতে পারি। কী না পারি? আমরা সবই পারি।
আর একজন মানুষকে কেটে টুকরা টুকরা করে কিমা বানিয়ে মেরে ফেলে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখতে পারি, দুই টাকার জন্য জীবন্ত মানুষের গায়ের চামড়া তুলে লবণ মাখিয়ে ক্ষ্যাপা নৃত্য দেখতে পারি। প্রেমের আহবানে সাড়া না দিলে রাতের অন্ধকারের কোন প্রয়োজন নেই দিনের আলোতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারি আসলে আমাদের কোন জুরি নেই। এমন সময়ে কেও হাতের মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকে আবার কেও তামাশা দেখার জন্যে ভিড় করে। আমরা যা ইচ্ছা তাই করতেও পারি করাতেও পারি।
এত কিছু করার পরে ক্যামেরা হাতে আমাদের সাংবাদিক সাহেবরা ঘটা করে ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন খবরের কাগজে সংবাদ ছাপা হয় পাশবিক নির্যাতন! অতপর আহারে! উহ! আহ! এমনও করতে পারি।
download

কিন্তু ওই যে যাদের কথা বলছিলাম যারা বনে বসতি গেড়েছে। তারা কি নিতান্ত ক্ষুধার তাড়না ছাড়া এমন করে কাউকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারে? তাহলে আমরা “পাশবিক” শব্দটা কেন ব্যবহার করি? কেন বলি না মানবিক নির্যাতন! বনের ওই চার পেয়ে প্রাণীরা এ কথা যেদিন জানতে পারবে সেদিন কি ওরা আমাদের ক্ষমা করবে ভেবেছেন? সেদিন ওরা কি বলবে, মানবিক পশুত্ব না কী?
স্বপ্নের শেষটা আর দেখা হয় না।

মানুষ

human1_1280

বেহেশত দোজখ চন্দ্র সূর্য আর গ্রহ তারা
যিনি করেছেন সৃষ্টি
তিনিই সৃষ্টি করেছেন আদম
দিয়েছেন তাকে দৃষ্টি।

বেহেশতে সে আদম ঘুরে ফিরে একা
মলিন বিষণ্ণ মনে
সঙ্গী বিহীন একা নির্জনে।
আদমের একাকীত্বের নীরবতা মেটাতে
সৃষ্টি করেছেন প্রথম মানবী তারই সাথে
প্রথমে এলো পুরুষ বেহেশতের পরে
নারী এলো তার সঙ্গী হয়ে
আদম পুরুষ আর নারী হাওয়া
দুজনার ছায়া যেন দুজনে।

হাওয়ার সঙ্গী আদম
আদমের সঙ্গী হাওয়া।
আদম করে সম্মান হাওয়ায়
তারি কাছে সে শ্রদ্ধা পায়।
ইবাদত বন্দেগী আর হাসি খেলা
কেটে যায় দিন রাত বসন্ত যে মেলা।
স্বর্গের প্রান্ত হতে প্রান্তরে
অবাধ গতি দুজনার।

নিষিদ্ধ হলো শুধু গন্দমের স্বাদ-
বন্ধ হলো বেহেশতের দুয়ার।
শয়তানের ছলনায় নারীর ভুলে
প্রথম মানব প্রথম মানবী
নেমে এল দুজনার হাত ধরে মর্তের কুলে।
নারীর সাথে পুরুষও পেলো
নারীর ভুলের মাশুল।

ধন্য হলো পৃথিবী, ধন্য হলো আকাশ বাতাস
ধন্য হলো মানবের প্রেম মায়ার বাধন।
দুজনে মিলে সাজল পৃথিবী, খোদার ইশারায়,
একই সাথে দুজনে মিলে খোদার জয়গান গায়।

ধীরে ধীরে ছেয়ে গেল মাটির পৃথিবী আদম সন্তানে
কেটে গেল কত না হাজার বছর কে জানে।
নারী আর পুরুষে মিলে ভরে দিল সোনার ধরা
শস্য শ্যামল ফুল ফসল আর মমতায় ভরা।
মাঠে ফলে ফসল পুরুষের লাঙ্গলে
রাখে তারে বেধে নারীর আঁচলে।

যতনে শুকায়ে রোদে ঘরে তুলে রাখে,
ক্লান্তি মুছায়ে পুরুষের সুখের পরশ মাখে।
নারীর প্রেরণায় পুরুষ হয়েছে বলিয়ান
তেমনি পুরুষ নারীকে করেছে মহীয়ান।
কেহ নয় পরাধীন সকলেই স্বাধীন
নারী কেন ভাবে সে পুরুষের অধীন?

নারী আর পুরুষের পাশাপাশি চলা
এমনি করে কেটে যায় যদি বেলা,
বেদনাময় জীবনের হবে অবসান
বসন্তের মধুময় শিখা রবে অম্লান।

নারী পুরুষের ভেদাভেদ ভুলে আদম সন্তান
উভয়ে মিলে যেন করে সুখের সন্ধান।
শত হাসি কান্না শত মায়া প্রীতি
নতুনের মাঝে হৃদয়ে দোলাবে স্মৃতি।
অনাগত জীবন হবে সুখময়
উঠবে সফলতায় ভরে,
আমার এ ক্ষুদ্র বারতা কইবে কথা
শত জনমের তরে।

আম বাগানের ভূত

images

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের পথে ধামরাই ছাড়িয়ে একটা বাস স্টপেজ আছে নাম সুতি পাড়া। এই সুতি পাড়া দিয়ে প্রায় মাইল তিনেক দক্ষিণে এগিয়ে গেলে নান্নার ছাড়িয়ে হাতের বাম দিকে কাছেই রৌহা গ্রাম আর ওই রাস্তা ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে সুয়াপুর বাজার। নান্নার এলাকায় আগের দিনের জমিদারদের বসবাস ছিল। তাদের কেউ এখন নেই। দেশ ভাগের পর প্রায় সবাই ভারতে চলে গেছে। তাদের দালান কোঠা বিনা যত্নে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে ভেঙ্গে পরি পরি অবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় কি ছিলনা ওখানে? বৈঠক খানা ছিল, রংমহল ছিল তাতে ঝাঁর বাতি ছিল, নাচ গান জলসা হতো। পাশেই মন্দির ছিল, কালি ঘর ছিল। বার মাসে তের পাবন, পূজা, মেলা ইত্যাদি নানা ধরনের উৎসব লেগেই ছিল। নানা নানীর কাছে গল্প শুনেছি। সে এক মহা আনন্দের দিন ছিল তখন। হিন্দু মুসলমান মিলে নানা আনন্দ উৎসব উল্লাসে তাদের দিন মাস বছর কেটে যেত। তারা চলে গেছে বলে তাদের দেখিনি তবে তাদের রেখে যাওয়া দালান কোঠার অবশিষ্ট আমিও দেখেছি।

আমরা সেবারে মানিকগঞ্জের পশ্চিমে আমাদের গ্রাম ঝিটকা থেকে গরু গাড়ি করে সবাই আম কাঁঠাল খাবার জন্য মামা বাড়ি বেড়াতে গেছি। পথে মার সে কি আনন্দ! কতদিন পর বাবার বাড়ি যাচ্ছে। সারাটা পথে মা আমাদের ভাই বোনদের একটুও বকা বকি করেনি, এ মা যেন ভিন্ন মা! মানিকগঞ্জে এসে বাবা দোকান থেকে পরটা হালুয়া কিনে আনলেন গাড়োয়ান কোন এক কুয়ো থেকে এক কলস ভরে পানি ভরে আনল তাই দিয়ে দুপুরের খাবার হলো। বাড়ি থেকে দাদিও কিছু খাবার দিয়ে দিয়েছিল। সারা পথে সেগুলি খেয়েছি। সন্ধ্যার একটু আগে পৌঁছেছি। সে রাতে অন্ধকার হয়ে এলো তাই আর কিছু দেখার ছিল না। নানা বাড়ি পৌঁছে সারাদিনে পথের কাপর চোপর বদলানো, মুখ হাত ধোয়া, খাওয়া দাওয়া করতে করতেই মনে হলো রাত দুপুর হয়ে গেছে। মামা খালা, মামাত ভাই বোনদের সাথে এটা সেটা গল্প করে সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে মায়ের পাশে শোবার সাথে সাথেই ঘুম। এর আগেও মামা বাড়ি এসেছি কিন্তু তখন মনে হয় ছোট ছিলাম বলে সেসব দিনের কথা বিশেষ কিছু মনে পড়ছে না। এবারের কথাই মনে আছে। মামা বাড়ির পশ্চিমে দুই এক বিঘা জমির পরেই খেলার মাঠ, পুবে আর এক বাড়ি, দক্ষিণে বিশাল চক, চকের ওপাশে ডিসট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা আর রাস্তার সাথেই নান্নার জমিদার বাড়ি দেখা যায়। উত্তরে এক ভিটা বাড়ি, আগে হিন্দুদের বসতি ছিল। তারা এ সব বিক্রি করে ওপাড়ে চলে গেছে। ওদের আবার বাড়িতেই একটা মন্দির ঘর ছিল তাতে নানান দেব দেবীর মূর্তি ছিল এবং বছর বছর নতুন মূর্তি গড়ার সময় পুরনো গুলি পিছনের ডোবায় ফেলে দিত। নানা নিজের বাড়ি সংলগ্ন বলে সম্ভবত ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই বাড়ি কিনে নিয়েছিলেন। পরে ঘর দরজা অন্যত্র সরিয়ে ওই বাড়িতে যে সব ভাল ভাল গাছ গাছালি ছিল সে গুলিই শুধু রেখে দিয়েছিলেন। খুব ভাল জাতের সাত আটটা আম গাছ ছিল। এক এক গাছের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল, চাপিলা, ঝুনকি, লম্বা, দক্ষিণের গাছ এমনি কিছু। নানী আবার ওই ভিটা বাড়িকে আমবাগান বলে ডাকত।

আমরা যখন গেলাম তখন ছিল ঝড়ের সময়। কাল বৈশাখীর শেষের দিক। পরদিন বিকেলের একটু আগে হঠাৎ করে ঈশান কোণে কাল মেঘ করে ঝড় উঠে এলো। ঝড় বয়ে গেল প্রচণ্ড বেগে। থেমে থেমে বেশ

অনেকক্ষণ ধরে, সাথে বৃষ্টি। মেঘলা ঝড়ো আকাশে একটু তারা তাড়ি সন্ধ্যা নেমে এলো। ঘরে ঘরে হারিকেন বা কুপি বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হলো। এর একটু পর পরই ঝর বৃষ্টি থামলে সম বয়সী ছোট মামা রাজীব, মামাত ভাই সাহেদ আর মামাত বোন শেফালি বলল চল আম কুড়িয়ে আনি। দেখলাম ওরা ছোট ছোট ঝুরির মত নিয়ে যাবার জন্য রেডি। জিজ্ঞেস করলাম কোথায়? শেফালি হাতে ইশারা করে দেখিয়ে বলল ওই আম বাগানে, চলনা ভাইয়া! ‘চল’ বলে আমিও ওদের পিছনে পিছনে গেলাম। বেশ আম কুড়চ্ছি। মাকে দেখলাম একটু পরে বাড়ির পাশে এসে আমাদের দেখে গেল। শেফালিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল
কি রে শেফালি আম আছে?
হ্যাঁ ফুফু অনেক আম পড়েছে,
কুড়িয়ে নিয়ে আয়।
ফুফু তুমিও আস
না আমি যাব না, তুই দেখিস তোর ভাই যেন ওদিকে যায় না
আম কুড়াতে কুড়াতে ছোট মামা আর সাহেদ পুবের ওই বাড়ির ছেলে মেয়েদের সাথে ওদিকে চলে গেল শেফালি আর আমি এই ভিটায় রয়ে গেছি। আমরা জানি না যে ওরা ওদিকে চলে গেছে। আমরাও আস্তে আস্তে ভিটার উত্তর দিকে চলে এসেছি যেখানে পুরানা মূর্তি ফেলা হতো। মূর্তির ব্যাপারটা আমাদের কেউ জানতাম না। বেশ অন্ধকার, একটু ভয় ভয় করছে। আমি কিছু দেখছিনা বলে কিছুই কুড়াতে পারছি না।

শেফালি চল বাড়ি যাই, ভীষণ অন্ধকার আমার ভয় করছে।
দূর ভাইয়া তুই কি বোকা, ওইতো বাড়ি এখানে ভয় কি?
শেফালির কথা শেষ না হতেই লক্ষ করলাম আম গাছ থেকে সাদা দব দবে পোশাক পড়া কে যেন নেমে শেফালির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লম্বা লম্বা পা ফেলে। শেফালিকে ডাকলাম কিন্তু লক্ষ করলাম শেফালি কিছু শুনছে না, ওকে আমের নেশায় পেয়ে বসেছে। এর মধ্যেই দেখলাম পাশের গাছ থেকে আরও একজন নেমে এলো। শেফালিকে ডাকছি কিন্তু ও শুনছে না। একটু পরেই বুঝলাম ভয়ে আমার গলা দিয়েই কোন শব্দ বের হচ্ছে না। হঠাৎ আমার পায়ের সাথে কিসের এক ডালে লেগে যেন একটু শব্দ হলো তাতেই শেফালি এবার পিছনে তাকিয়ে দেখে দুই ভূত শূন্যে ভর করে ওর দিকে যাচ্ছে। থমকে থমকে এক অচেনা ভঙ্গিতে হাঁটছে। সম্ভবত ওদের দেখেই শেফালি এক চিৎকার দিয়ে আমার দিকে দৌড় দিল। আমি দেখছি ও সমানে হাত পা ছুড়ছে কিন্তু কিছুতেই এগুতে পারছে না ওর মুখ দিয়ে কেমন যেন গোঙ্গানির মত শব্দ হচ্ছে শুধু। একটু পরেই লক্ষ করলাম আমিও আর হাটতে পারছি না। সামনের ডান দিক থেকে কাল কুচকুচে চেহারার মাথা ছাড়া কি যেন আমার দিকে ফাঁত ফাঁত শব্দ করে ঝোপ ঝাঁর ভেঙ্গে এগিয়ে আসছে। মাথা নেই শুধু বুকের উপর একটা চোখ। কি করি এখন, কিছু ভাবার মত সুযোগ নেই। চিৎকার দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মা বলে এক চিৎকার দিলাম। ব্যাস এই পর্যন্তই মনে আছে।

হঠাৎ চোখে মুখে পানির ঝাপটা পেয়ে চেতনা ফিরে এলে দেখলাম নানুর বড় ঘড়ের বারান্দায় পাতা পাটিতে আমি মায়ের প্রায় কোলে কোন ভাবে পরে আছি আমার পাশে শেফালি তার মায়ের পাশে বসে আছে।

পরে সবার কাছে যা শুনেছি:
আম কুড়িয়ে ছোট মামা আর সাহেদ বাড়িতে ফিরে আসার সময় শেফালির আর আমার চিৎকার শুনে আম বাগানে যেয়ে দেখে আমি আর শেফালি দুই জনেই ওখানে যে ডোবা তার ধারে পরে রয়েছি, শেফালির পা ডোবায় জমা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে সমস্ত শরীর কাদায় মাখান এবং শরীরে ভীষণ দুর্গন্ধ। তখন সাহেদ চিৎকার করে তার দাদি এবং আমার নানীকে ডাকলে বাড়ি থেকে লাঠি আর হারিকেন নিয়ে যেয়ে আমাদের উদ্ধার করে আনে।
নানী খুব রাগ করল আমাদের এই আম কুড়ানোর অভিযাত্রার জন্য।
কেন কাল সকালে আম আনা যেত না? এই রাতে কেন গেল? আমার মাকেও খুব বকাবকি করল তুই দেখলি ওরা ওখানে রয়েছে তা ওদের ফিরিয়ে আনলি না কেন বা তুই ওখানে থাকলি না কেন?
মা যতই বলছে আমি কি জানি এমন হবে?
নানু ততই বলছে জানতে হবে কেন, ওই ভিটার কথা তোর মনে নেই? আমি যে এখানে বসে পান খাবার সময় কত কি দেখতাম সেগুলির কথা এত তারা তাড়ি ভুলে গেলি কেমনে? কত নাচ, কত কি দেখেছি! সবতো বলেছি তোদের। তখন জানলাম আমি যেটা দেখেছি মাথা ছাড়া তার নাম ওখানকার স্থানীয় ভাষায় নিস্কাইন্ধ্যা। মানে যার কাঁধ নেই মাথা নেই বুকের উপরের দিকে একটাই চোখ এমন এক দেহ।

এইতো গোধূলি বেলা

love-questions

বরষার মেঘ ডেকে আনে যদি শুভ্র বসনা ঝুর ঝুর কামিনী
হেমন্তিকা ছড়াবে হেসে গোধূলির পরে মধু গন্ধ ভরা মধু যামিনী।
ফাগুন বলবে এসে কি কথা বল এত শুনি শুধু দুজনার কানাকানি
সপ্ত ঋষি বলবে হেসে নিরালায় কইবে কথা নয়ত হবে জানাজানি।

নিশীথিনী

b64f0f098729e5d88f427ec5c40bd54b

ঝিল্লী ডাকা জোনাক জ্বলা নিশি রাতে
জোছনা চাদর গায়ে পৃথিবী ঘুমায়,
শিশির কণা মুক্তা হয়ে ঝরে মেঠো পথে
তমাল তরু শুধু ঘুম পারানি গান গায়।

দূর আকাশের তারাগুলি মিটিমিটি হাসে
সুরেলা বাঁশরি এলোমেলো বাতাসে ভাসে।
সুদূর নীহারিকা চেয়ে দেখে সুপ্ত মশাল জ্বেলে
কাজল কলঙ্কে নিশীথিনী মনের ছবি আঁকায়।

শিশির বিছানো আঁচলে হেমন্ত গায় নিশি রাগিণী
নিঝুম স্বপনে মগ্ন মোহনীয় মধু যামিনী।
তিমির কুহেলিকা বসে থাকে বসন্তের পথ চেয়ে
নীরবে কে যেন মনে সুর ঝড়িয়ে শিহরণ জাগায়।।

জীবনের অণু পরমাণু-৫

–সময়ের অধিকার—
এইতো গত বিষ্যুদবারে আমার শশুর শাশুড়ির কুলখানিতে গিয়েছিল আমার স্ত্রী, দুই কন্যা এবং আমার মেঝ কন্যার ছেলে আমার শাহানশাহ রিজভান রিহান। মানিকগঞ্জে নিজের নানা বাড়ি এবং মায়ের নানাবাড়িতে তার এই প্রথম যাত্রা। খুব ভয়ে ভয়েই ছিলাম একেবারে গ্রামে গিয়ে তার কেমন অবস্থা হবে। আমি পরদিন শুক্রবার সকালে যাব। আমার গিন্নী অবশ্য একা কোথাও যেতে চায় না কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনের খাতিরে মেয়ে নাতিদের নিয়ে যেতে হয়েছে। যথারীতি শুক্রবার সকালে অন্যান্য বারের মত আমি অপেক্ষায় আছি ভোরেই একটা ফোন আসবে “উঠেছ?”, আবার একটু পরে আর একটা ফোন “ নাশতা করে রেডি হয়েছ?” আবার একটু পরে আর একটা ফোন “বের হয়েছ, সাবধানে এসো, সাথে পানি আর কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে বের হয়ো!”
কিন্তু আমি আশা করলে হবে কি, কোন ফোন এলো না। আমি সময়মত বের হলাম। বাসে উঠলাম, মানিকগঞ্জ পর্যন্ত গেলাম কিন্তু না কোন ফোন নেই!
কারণ, তিনি ব্যস্ত রয়েছেন ঐ যে আমার শাহানশাহ জনাব রিজভান রিহান সাহেবকে নিয়ে। ঝিটকা পৌঁছে ফোন দিলাম আমি ঝিটকা এসেছি, কিছু কি নিয়ে আসতে হবে? না আর কিছু লাগবে না শুধু তোমার ভাইয়ার জন্য পানি নিয়ে এসো।
বাড়ি পৌঁছে দেখি রিহান সাহেব বেশ আমোদেই আছে। বাড়ির গরু, হাস-মুরগী, অনুষ্ঠানের রান্না বান্না, অনেক লোকজনের আনাগোনাতে সে গ্রামীণ জীবনের বৈচিত্র্য খুবই উপভোগ করছে, বুঝলাম এটাই এখন সময়ের অধিকার, তাকে সময় দিতে গিয়ে আমাকে ফোন করার সময় কোথায়?

শিশির ভেজা বসন্ত

15873428_190124701459974_6538441196124493206_n

তোমাকে জানতে চেয়েছি
পৌষের হিমেল বাতাসে
চৈতী খর দহনে
বৈশাখী ঝড় জলে
আর শরতের সুনীল আকাশে।

তোমাকে দেখতে চেয়েছি
জ্যোৎস্না রাতে ধবল চাঁদের পাশে
কাজল মেঘের গহনে
অবাক বিস্ময় বিহ্বলে
পাপড়ি ছড়ানো পথের দেশে।

স্বপনের সুদূরে সোনালী নদী
ওপাড়ে বয়ে চলে ঝিলিমিলি শান্তি
মরু প্রান্তরে, কাটে অমানিশা!
পথ ভোলা পথিকের পথের দিশা
প্রতীক্ষার জ্বলন্ত অগ্নিগিরি নিয়ে বুকে
বসে আছি, দেখব শিশির স্নাত তোমাকে।

জীবনের অণু পরমাণু-৪

stock-vector-cartoon-father-scolding-unhappy-boy-isolated-267276749

কত কি করতে ইচ্ছে করে। বই মেলা থেকে সুন্দর সুন্দর বই কিনতে ইচ্ছে করে, পরিবার নিয়ে সাগর পাড়ের বালিয়াড়িতে প্রিয়জনের হাত ধরে পায়ে পায়ে হাটতে, ইচ্ছে করে এই ইট পাথরের ঢাকা শহরের বাইরে নতুন কোন পাড়াগাঁয়ের কুয়াশা ভেজা মেঠো পথে খালি পায়ে হেঁটে বাড়াই, গ্রাম ছাড়া রাঙ্গা মাটির পথের পাশে মাটির দুয়ারে মাটির ঘরে কয়েকদিন থাকি, মাটির চুলায় কাঠ খড়ি দিয়ে রান্না করা দেশি মুরগীর মাংস দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে প্রাণটা জুড়িয়ে আসি। গ্রামের কাচা মাটির হাটে ঘুরে ঘুরে বাতাসা, বাইলার ডিম, নিমকি কিনে বিলিয়ে দেই। কত মসজিদ আছে যেখানে মুসুল্লিরা খেজুর পাতার মাদুরে হারিকেনের আলোতে নামাজ আদায় করে তাদের মসজিদ পাকা করে বিজলি বাতি জ্বেলে নামাজের বিছানা কিনে দেই। যারা জীবন বাঁচাবার মিথ্যে আশা নিয়ে রাজধানী ঢাকা শহরে এসে ফুটপাথে কিংবা ফ্লাই ওভারে আশ্রয় খুঁজে পায় তাদের জন্য মাথার উপরে ছাদ ওয়ালা একটা নিশ্চিত আশ্রয় বানিয়ে দেই আবার যেসব কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা অর্থাভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন তাদের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেই। যে সব ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বড় রাস্তায় ফুল বিক্রি করে কিংবা পত্রিকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে তাদের টেনে নিয়ে বসিয়ে দেই কোন পাঠশালায়।

কিন্তু আমার সব আশা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা হাইড্রোজেনের মত সপ্ত আকাশে উড়ে যায়। কোন ভাবনাই বাস্তব হতে পারে না শুধু কল্পনাতেই বেচে থাকে।
যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে ৪/৫ শত কোটি টাকা খরচ করে, যারা পৃথিবীর সমস্ত টাকা পয়সা নিয়ে বসে আছে, বিশাল অট্টালিকায় কত আরাম আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে, কত দামি গারি হাঁকাচ্ছে তারা এত টাকা কোথায় পায়?
আমার পকেটগুলো কেন এসব করার জন্য এতটা অসহযোগিতা করে, কৃপণতা করে? এর কোন জবাব পাই না কেন?

ধন্যবাদ বন্ধু। আবার দেখা হবে কোন গল্পদাদুর গল্পের আসরে।

জীবনের অণু পরমাণু-৩

804962b61d0605617dff74cf36ebe899_123d5c8141561533a0569619d9d0ee-clipart-of-someone-eating-bad-tasting-food_918-900
একবার নরউইচে ডিউটি পরল। বিশাল একটা পাব বন্ধ হয়ে গেছে তাই চৌকিদারি ডিউটি করি, শূণ্য পাব কোন লোকজন নেই। কিচেনে শুধুমাত্র ফ্রিজ আর একতা মাইক্রো ওয়েভ ছাড়া কিছু নেই। তবে পানি এবং পানীয় আছে প্রচুর। পাশের Tesco থেকে রেডি খাবার এনে গরম করে খাই। কয়েক দিন গেল। একদিন রাতে পিজা গরম করে খেতে বসেছি, এক গ্লাস কোক নিয়েছি। হঠাৎ মনে হলো Tesco থেকে আনা পিজা কি হালাল? কেমনে বুঝি? বিনে ফেলে দেয়া প্যাকেট নিয়ে এসে পড়ে দেখি পোর্ক দিয়ে বানিয়েছে। যাহ! কি করি এখন, ফ্রিজে আর কিছু নেই অন্তত তখন রাতের খাবার মত। গেটে তালা দিয়ে বের হলাম কয়েকদিন আগে দেখেছি রেল স্টেশনে যাবার পথে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে। ভাবলাম আজকের মত ফ্রায়েড রাইসের সাথে কোন মাছ বা সবজি এনে চালিয়ে দেব।
যা ভেবেছি নিয়ে এসে প্যাকেট খুলে এক চামচ ভাত আর চিংড়ী মাছ মুখে দিয়ে দেখি জাস্ট সেদ্ধ, কোন মশলা নেই। একটু লবণ আর সিরকা ছিটিয়ে খেয়ে নিলাম। বাহ! কি মজা! এইতো জীবন তাও আবার প্রবাস জীবন!
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
আবার দেখা হবে বন্ধু, ভিন্ন কোন আয়োজনে কিংবা শব্দনীড়ের এই মধুর আসরে।

এই পথ চাওয়া

 photo rain-59.gif

রাতের আকাশে ফোটেনি তারা
শুধু তুমি ছিলে না বলে
এখনও বহেনি বসন্ত বাতাস
শুধু তুমি আসনি বলে
ঝরে গেছে সব না ফোটা বকুল
তুমি ছিলে না বলে।।

আমিতো সুদূর পানে চেয়ে রয়েছি
তোমার পথ চেয়ে
হৃদয় সাগরে তেমনি করে
সোনার তরী বেয়ে
কখনও ভুল করে আবার
যদিবা তুমি আস ফিরে।।

বুঝিবা আজ মিছে হল
শুধু এই পথ চাওয়া
একা একা বসে থাকা
আর গুন গুন গান গাওয়া
ঝরে গেল হায় আমার
না বলা কথার মুকুল।।