মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

জীবনের অণু পরমাণু-২

http://www.dreamstime.com/royalty-free-stock-photography-boy-dreaming-image2776397

অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল কিছু লেখা লেখি করব কিংবা গঠন মূলক কিছু করব। বিশেষ করে যখন একটা ব্রিটিশ কোম্পানির জাহাজে ডেক ক্যাডেট হিসেবে জয়েন করে হুট করে একেবারে বাংলাদেশের বাইরে এক দেশের বন্দর ছেড়ে আর এক দেশে যেতাম, আসা যাওয়ায় পথে সমুদ্রের নানা রূপ কখনও রুদ্র আবার কখনও শান্ত রূপ দেখতাম, ঢেউ এর তাণ্ডব, উদাসী বালুকাবেলার সম্মোহনী রূপ দেখতাম, আবার এই বালিয়াড়িতে নানা রঙ এর, নানা বর্ণের মানুষের আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখতাম। ওদিকে আবার নানা শহরের বিচিত্র মানুষের আনাগোনা রঙ ঢং দেখতাম সেই তখন থেকে।
অনেকদিন এই স্বপ্ন লালন করলেও তখন কিন্তু লেখার সুযোগ পাইনি! সুযোগ পেলাম বা বাস্তবায়ন শুরু করলাম যখন আটলান্টিকের দ্বিপ ব্রিটেনের জীবন কাটাতে শুরু করলাম তখন। হাতে প্রচুর সময় ছিল। সাথে ছিল চারিদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ আর ছিল তুষার ঝরার স্বপ্নিল মোহনীয় পরিবেশ।
একে একে লিখে ফেললাম ৫/৭টি গ্রন্থ। গল্প, গীতিকবিতা, উপন্যাস এবং নানা কিছু আবোল তাবোল।
দেশে ফিরে এসে এর মধ্যে থেকে কয়েকটা গ্রন্থ আকারে নিজের গাঁইটের টাকা খরচ করে কয়েকটা বই মেলায় প্রকাশ করলাম।

স্বপ্নের ধারা বদলে গেল। সময়ের চাহিদা/ইচ্ছার বহুরূপী চাহিদা/ মনের সুপ্ত বাসনার কারণে ভাবছি শুধু শুধু বই গুলি ঘরের কোণে ফেলে রেখে কি হবে? কে জানবে এই কাহিনীর কথা, আমার এত বছরের সঞ্চিত তিলে তিলে জমানো মেধা, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের ফসল সবাইকে না জানালে এটা কি ব্যর্থ হয়ে অন্ধকার বাক্সের ভিতর ন্যাপথলিনের গন্ধ শুকে শুকে বা বইয়ের শোকাসের ভিতরে শুধু গুমরে কেঁদে এক সময় উই পোকার খাদ্যে পরিণত হবে? এখন মনে হচ্ছে দুইটা উপন্যাস “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে” নিটোল এক প্রেমের কাহিনী এবং “নক্ষত্রের গোধূলি” পৃথিবীর ৫টা মহাদেশের পটভূমিকায় নানা শ্রেণীর চরিত্র এসেছে এই উপন্যাসে। এই কাহিনী দুইটি নিয়ে মনে একটা বাসনা জন্মাতে চাইছে নাটক বা সিনেমা করতে পারলে মানুষের মনে সাহিত্যের একটা নতুন দিগন্ত ছড়িয়ে দেয়া যেতো। মানুষকে ভ্রমণ কাহিনীর ছলে সামাজিক নিত্য ঘটা কাহিনীর সাথে আবার নতুন করে জানিয়ে দেয়ার একটা সহজ ও সুন্দর প্রচেষ্টা হতে পারে এক সাথে দুই ফল।
মনে মনে নায়িকা এবং নায়কের চেহারাও একে রেখেছি। কিন্তু নিরালায় একা একা বসে বসে ভাবি এত টাকা কোথায় পাব??
এই একটা প্রশ্নের জন্যেই মনটা থাকে বিষণ্ণ। আহারে! কেনযে এত স্বপ্ন আসে!

মামা বাড়ির আবদার

10699824_781258908587710_7329353745917455042_o
(মামা বাড়ির দুধভাত দেখতে এমন হলে কি হবে আমরা কোনদিন এমনটা দেখিনি)
“মামার বাড়ির আবদার” এই প্রবাদ বাক্য আমরা কেবল শুনেই এসেছি কিন্তু বাস্তবে কোনদিন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাইনি যদিও আমাদের উপযুক্ত ৪ জন মামা ছিলেন যাদের ৩ জন এখনও বর্তমান আছেন। দেশ স্বাধীন হবার পরে আমার SSC পরীক্ষার পর আমার বাবা যখন ঢাকায় আমার পড়ালেখা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন এক মামার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এর বাসায় থেকে আমাকে পড়াশুনা চালিয়ে যাবার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।

সেখানে একদিন বাথরুমের বাল্ব বদলাবার সময় হাত থেকে পরে একটা বাল্ব ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন এক মামা বেশ ভাল করেই বকুনি দিয়েছিলেন যা এখনও মনে আছে। মামি কোনদিন ভাগ্নে হিসেবে আমাকে খাবার সময় ভাত বেড়ে দেয়ার সময় পায়নি। একদিন দুপুরে খাবার সময় তখন মামা বাড়ির সফুরা নাম্নী এক কাজের মহিলার কাছে কোন একটা তরকারি চেয়ে নিয়েছিলাম বলে পরে মামিকে বলতে শুনেছি ‘এরা দেখি সব লুট করে খেয়ে ফেলছে’ এ কথা এখনও আমার মনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।
মামা একটা বড় বিদেশি কোম্পানিতে চাকুরীর সূত্রে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতেন। একবার রাজশাহী থেকে ফিরে এলে গাড়ি ভরে আম, লিচু, মিষ্টি এবং বেশ কিছু কাপড় চোপর এনেছিলেন। সন্ধ্যার পরে তার ছোট দুই মামা বাক্স ঝাকা খুলে সবাইকে দিচ্ছিলেন আর মামা পাশের খাটে আধ শোয়া অবস্থায় দেখছিলেন। কয়েকটা জামা শহীদ, কামরুল এবং অন্যান্য কাওকে দিলেন কিন্তু পাশেই যে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই আমার প্রতি কারো দৃষ্টি পড়েনি, তবে হ্যাঁ কয়েকটা লিচু আর একটু আমের ভাগ পেয়েছিলাম। এ কথাও ভুলে যাবার মত নয়।

একদিন আমার বাবা আমাকে বিষন্ন মুখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কিরে কি হয়েছে? না আব্বা কিছু হয়নি! শত হলেও বাবার মন সে কি কিছু আচ করতে পারে না? আবার জিজ্ঞেস করলেন তখন কেদে দিয়ে বললাম আমি আর এখানে থাকব না! কেন? তখন এই কয়েকটা কথা আব্বাকে জানালাম শুনে তিনি আমাকে আবার গ্রামে ফিরে যাবার কথা বললেন। ফিরে গেলাম গ্রামের বাড়িতে। এর কিছুদিন পরেই আব্বা গাবতলিতে একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে এলেন আর আমি ভর্তি হলাম মিরপুরের বাংলা কলেজে। আমার আর মামার বাড়ির আবদার দেখা হলো না। এমন অবহেলার ভাগ্নেই ছিলাম আমরা। তখন এমনি অবহেলার ভাগ্নে হলে কি হবে আমার কদর বেড়ে গেলে তখন, যখন আমি বিদেশি জাহাজ থেকে আমার প্রথম সমুদ্র যাত্রা শেষ করে দেশে ফিরে এসেছি। দেশে আসার আগে মামা তার চাকুরী থেকে তার দুর্ভাগ্য বা যে ভাবেই হোক টার্মিনেট হয়ে ঢাকায় এসে আমাদের মিরপুরের বাসায় থাকছেন। দেশে আসার পরে আমাদের এজেন্ট চিটাগাং এর জেমস ফিনলে থেকে আমার সমুদ্র যাত্রা এর টাকা নিয়ে আসতেই সব টাকা আমার মা বাবা মামার হাতে তুলে দিলেন। জীবনে টিকে থাকার জন্য মামার তখন কি এক ব্যবসা করার জন্য টাকার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। মামা আমাকে বললেন আমার ব্যবসা হলে তোর টাকা ফিরিয়ে দিব চিন্তা করিস না। এর পরের সমুদ্র যাত্রা গুলির টাকাও একই ভাবে মামার কাছেই চলে যায়। তখন থেকেই মূলত আমি নিতান্ত টাকা রোজগারের মেশিন হতে পেরে আমার কদর বেড়ে গেল, আমিই মামার প্রিয় ভাগ্নে হয়ে গেলাম যদিও বিনিময়ে আমি বঞ্চনা ব্যতীত আর কিছুই কোনদিন পাইনি। সে টাকাও আর কোনদিন ফিরে পাইনি এভাবেই একদিন হঠাত শুনি মামা ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের দুই ভাইয়ের সেইসব টাকা আর কোনদিন উদ্ধার হবে কি?

তবে হ্যাঁ এ কথাও ভুলি নাই, গাবতলির বাসায় আসার পরে একদিন আম্মাকে বলেছিলাম “আম্মা সিল্কের পাঞ্জাবী আবার কেমন“? সেই কথা আম্মা আবার মামাকে বলেছিলেন। তারপরে একদিন দেখি মামা আমাদের বাড়িতে এসেছেন এবং আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলেন, খুলে দেখি ওতে একটা পাঞ্জাবী। মামা বললেন ‘গায়ে দিয়ে দেখ তোর লাগে নাকি, এটাই সিল্কের পাঞ্জাবী’। এই কথা আমি যতদিন বেচে থাকব ততদিন আমার মনে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ ছাড়া আমরা মামাদের আর কোন কিছু কোন দিন পাইনি। আমাদের মামিরাও আমাদের জন্য কোনদিন কিছু রান্না করার প্রয়োজন মনে করেনি। তেমনি আমরাও জানিনা কোন মামির রান্না কেমন!
পরবর্তীতে আমি দেশে একটা চাকুরী পেয়ে আর জাহাজে যাওয়া হয়নি তখন আমার রোজগার কমে গেল আবার এদিকে দাঁড়াল আমার মেঝ ভাই কাদের, সে চলে গেল বিলাত। এখন থেকে যে কাদেরকে কেও চিনত না সেই কাদেরই নতুন করে সবার প্রিয় হয়ে গেল। এতদিন যে টাকার যোগানদাতা ছিলাম আমি তা বর্তাল কাদেরের উপর।
এসব কথা বলতে গেলে অনেক হয়ে যাবে তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কিছু লেখা অর্থহীন। মনের কথা মনেই থাক। ভঙ্গুর এই জীবনে কতজনের কত কিছুই ঘটে তার হিসাব কে রাখে!
তবুও ভাল মামারা আমাদের তাদের বাড়ি থেকে ঘার ধরে তাড়িয়ে দেয়নি, এতেই আমরা খুশি।

বিঃ দ্রষ্টব্য- মুরুব্বী মহাশয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমার এই ছোট গল্প লেখার প্রথম প্রচেষ্টা। যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে সমস্ত কৃতিত্ব মুরিব্বী সাহেবের আর খারাপ লাগলে পূর্ণ ব্যার্থতা আমার।

ক্ষণিকের ফোটা ফুল

আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭। বিগত ২০১৬ সালের এই দিনে আমার সৃষ্টিকর্তার অনেক আদরের বান্দা , আমার মোহাম্মদে রসুলের উম্মত আমাদের জ্যৈষ্ঠ কন্যা এবং আমার গানের পাখি তার নিজের ৩৪ দিন বয়সের প্রথম পুত্র রাফসান চৌধুরী সহ আমাদের সবাইকে ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য এসে তার নানা সৌরভ বিলিয়ে দিয়ে চলে গেছে তার আপন ঠিকানায়। সৃষ্টিকর্তার এমনই ইচ্ছা ছিল তাই তিনি নিয়ে গেছেন।

সে ছিল আমার সকল কাজের এমনকি আমার এই যাবতীয় লেখালেখির উৎসাহ, প্রেরণা এবং আমার সমস্ত পরিবারের পথিকৃৎ, আমার বংশের অলংকার। আমার লেখা গানগুলিতে সুর দিয়ে আমাকে গেয়ে শোনাত। বলতাম, আব্বু আমার এই এমন চরিত্রের জন্য একটা নাম প্রয়োজন, কি নাম দেব?
আব্বু এই নামটা দাও।
লেখা শেষ হলে বলতাম এই গল্পের বা এই বইয়ের একটা নাম দাও
আব্বু এই নাম দাও
তাই দিতাম। লেখার সময় বানান সন্দেহ হলে ওর কাছেই জেনে নিতাম।
আমার সর্ব শেষ গীত কবিতার বইটি ওরই এডিট করা, ওর নামকরণ করা এবং ওরই প্রচ্ছদ বাছাই করা। বইটা এবার বই মেলায় প্রকাশ করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সে শক্তি আর আমি পাইনি। ও যাবার পর এখনও কম্পিউটার অন করে My Books নামের folder এ এলেই সেই মুখ সামনে এসে দাঁড়ায় আর আমার সমস্ত শরীর মন প্রাণ স্তব্ধ হয়ে যায়, কী বোর্ড চলতে চায় না চোখের পানিতে ভিজে যায়। আমার চারিদিক আধারে ভরে যায় কিছুই করা হয় না কিছুই পারি না।
IMG_1386
(এই সেই রাফসান চৌধুরী [মা এর দেয়া নাম। জন্ম ২২শে জানুয়ারি ২০১৬] যে এখনও জানে না পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ মা ওকে এই বিশ্ব মায়ের কাছে ছেড়ে চলে গেছে ওপাড়ে-বিগত ০৩/০২/২০১৭ তারিখের ছবি, http://rafsancy.blogspot.com/)

আমার প্রিয় ব্লগ বন্ধুদের কাছে সবিনয় অনুরোধ সবাই আমার সেই মেয়ে তানজিমা খালিদ এবং তার রেখে যাওয়া স্মৃতি ওর সন্তান রাফসান চৌধুরীর জন্য দোয়া করবেন।

বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

 photo Cartoon Writer_zpsoewn716k.jpg
সকল বঙ্গবাসী কবি বলিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নিজেদের পরিচিত করিয়াছেন এমনকি তাহাদের কেও কেও কবিদের কাকের সহিত গণনা করিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন নাই। তবে একথা সত্য যে এই বঙ্গ কবিই একদিন বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার আয়ত্ত করিয়া সকল বঙ্গবাসীকে কবির আসনে বসাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে সকলের মনে কবি হইবার বাসনা অত্যন্ত প্রকট রূপে দেখা দিয়াছে এমন করিয়া ভাবিলে দোষের কিছু দেখা যায় না।
একজন কবি বা লেখক কিংবা ঔপন্যাসিক যাহাই বলেন না কেন তিনি লিখতে বসিবার পূর্বে বহুকাল ধরিয়া ভাবিতে থাকেন। ভাবনার বৃক্ষ যখন কিছুটা বিস্তৃত হয় তখন তিনি হাতে কলম ধরিয়া কাগজ পত্র লইয়া বসেন। আজকাল অবশ্য কাওকে কালি কলম বা কাগজের বোঝা বহন করিতে হয় না কেবল একখানা কম্পিউটার হইলেই কর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ। ইহা যশবান বৈজ্ঞানিক বৃন্দের কর্মফল বলিয়া তাহাদের অন্তত এক কুড়ি ধন্যবাদ জানান উচিত।

আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ ইত্যাদি পরে দিলেও তেমন ক্ষতি হইবে না এই সময় যাহা বলিতেছিলাম, লেখক মহাশয় লিখিতে বসিলেন। ঘণ্টা, দিন মাস, বছর ব্যাপিয়া লিখিয়া এবং অন্তত দুই কুড়ি দফায় পাঠ করিয়া (এডিট) অবশেষে একখানা গ্রন্থ রচনা করিলেন এবং যেহেতু আজকালের পুস্তক প্রকাশক অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া নিজের টাকা খরচ করিয়া লেখকের হাবিজাবি লেখা প্রকাশ করিতে চাহেন না বলিয়া শতেক পুস্তক প্রকাশকের দুয়ারে ঘুরিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া নিজ গাঁইটের টাকা খরচ করিয়া সত্যি সত্যি এক খানা গ্রন্থ ছাপাইয়া ফেলিলেন। নিজের লেখা গ্রন্থখানা সুন্দর ছবিওলা মলাটের ভিতরে ছাপার অক্ষরে দেখিয়া যারপরনাই পুলকিত হইলেন।
লেখক মহাশয় পুলকিত হইলে কি হইবে তাহার পুস্তকের প্রতি কাহারো কোন আগ্রহ নাই কারণ সকলেই জানে এই গদাধর মিয়া বা মশাই আবার কি লিখিতে জানে? ইহার লেখা মূল্য দিয়া ক্রয় করা মানেই হইল স্বেচ্ছায় নিজ পকেটের টাকা গঙ্গায় ফেলিয়া দেওয়া। আচ্ছা বলুন তো আজকাল কি আর এইরূপ আহাম্মক দেখা যায়?
লেখক মিয়া একে বলে ওকে বলে জান আমার লেখা একটি বই ছাপা হইয়াছে, দেখ কি সুন্দর তাই না?

বাহ! বেশ সুন্দরতো আমাকে একটা সৌজন্য কপি দিয়ে দাও তাহলে! তুমি একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন তাই একটা সৌজন্য কপি আমার অধিকার!
ইহা শুনিয়া লেখকের লেখার ইচ্ছা কর্পূরের মত সপ্ত আকাশে উড়িয়া গেল কিন্তু বন্ধু জনের সৌজন্য কপি না দেয়ার মত ক্ষমতা অবশিষ্ট রহিল না। ওদিকে বন্ধু জন উক্ত সৌজন্য কপি বগলদাবা করিয়া বাড়িতে লইয়া গেল এবং যথারীতি বসার ঘরের তাকে সাজাইয়া রাখিল। কিছুদিন পর লেখক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিল
ওহে বন্ধু আমার পুস্তক খানা পাঠ করিয়া তোমার অনুভূতি কেমন হইল?
হা হা আমি অত্যন্ত মনযোগী দিয়াই পাঠ করিয়াছি কিন্তু বন্ধু তোমার হাত এখনও ঠাকুর মশাইর মত পাকিয়া উঠেনি!

ভয়ংকর ভূত

রাজার বাড়ি ঝিটকার কাছে ছয়য়ানি গালা গ্রামে। এবার ঝিটকা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অনেক ভাল পাশ দিয়ে মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। মহাদেবপুর, ঝিটকা, হরিরামপুর, ঘিওর এই সব জায়গার কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে মেসের মত থাকে। এক মহিলা তিন বেলা রান্না করে দিয়ে যায়। মানিকগঞ্জ তখন মহকুমা শহর হিসেবে খুব বড় কিছু নয়, মোটামুটি ছোট এক শহর। শনিবারে ক্লাস করে সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়। সোমবার সকালে আবার দেখা হবে। বাড়ি থেকে আসার সময় কারো মা এক ঝুরি চিরা, কারো জন্য কিছু পিঠা আবার কেউ কিছু নারকেল গুড় দিয়ে দেয় তাই নিয়ে আসে। সবাই মিলে মিশে খায়। একবার রাজার মা এক টিন মুড়ি দিয়ে দিয়েছিল সেই মুড়ি খেয়ে মহাদেবপুরের দ্বিজেন সাহা আবারও বায়না দিয়েছে। রাজা তোর বাড়ির মুড়ি ভীষণ সুস্বাদু তুই যখনই বাড়ি যাবি তখনই কিন্তু অন্তত আমার জন্য এক টিন মুড়ি আনবি। রাজা এবার বাড়ি এসে আগেই মাকে বলে দিয়েছে মা দ্বিজেনের জন্য এক টিন মুড়ি দিও।

রাজার কলেজে যেতে আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে এর মধ্যে মুড়ি ভাজতে হবে। রাজার মায়ের মুড়ির চিন্তায় ঘুম হয় না। শীতের দিনে পাড়ার সব বৌ ঝিরা বাপের বাড়ি চলে গেছে। মুড়ি ভাজবে কাকে নিয়ে? কয়দিন দেরি করেও কাউকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে একাই ভাজবে বলে রাতে সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে যাতে ভোরে উঠে একা একাই শুরু করা যায়। ঘুম হয়েছে কি হয়নি তাতে কি আসে যায়! পুব আকাশ ফর্সা হবার আগে, পাখিরা কিচির মিচির শুরু করার আগেই রাজার মা বিছানা ছেড়ে ভোরের কাজ কর্ম সেরে মুড়ি ভাজার চাউল, হাড়ি পাতিল ঝাঁজর এই সব কিছু এনে চুলার পাশে রেখে বাঁশের চালার তৈরি রান্না ঘরের পিছন থেকে কলার পাতা কাটতে গেছে তখন দেখল ইয়া লম্বা কে যেন সাদা দবদবে পোশাক পড়ে রান্না ঘরের পিছন থেকে সরে বাড়ির ঢালু দিয়ে বন কচু, ছিটকি, মটকার আগাছা ভেঙ্গে পিছনের পুকুরের উপর দিয়ে হেটে পার হয়ে জংলা ভিটার দিকে চলে গেল। আস্তে করে কয়েকটা কলার পাতা কেটে এনে চুলার পাশে রেডি করে রাখল। চুলা জ্বালিয়ে দুই এক খোলা মুড়ি ভাজা হয়েছে মুড়ির ঘ্রাণ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে আশে পাশে পৌঁছেছে এমন সময় রান্না ঘরের পিছনে ঝোপ ঝাঁরে প্রচণ্ড জড়াজড়ি ভাঙ্গা চোরার শব্দ শুনতে পেল রাজার মা। একটু ভয় পেল কিন্তু চুলায় আগুন জ্বলছে বলে সে ভয়কে প্রশ্রয় দিল না। এদিকে ওই জরা জরি ভাঙ্গা চোরার শব্দ বেরেই চলেছে। এভাবেই আরও কয়েক খোলা ভাজা হয়ে গেল। রান্না ঘরের মেঝেতে খেজুর পাতার পাটির উপর পুরনো শাড়ি বিছিয়ে বালি পরিষ্কার করার জন্য মুড়ি রাখতে হচ্ছে। রাজার মা চুলা ছেড়ে রান্না ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে বলল
এই তোরা কে এমন হুড়া হুরি করছিস, তোরা একটু থামতো!
সাথে সাথে নাকি সুরে,
মুড়ি দে! মুড়ি দে আমরা বাড়ি যাই!
কোন বাড়ি যাবি?
ওই যে পুকুর পাড়ের তেঁতুল গাছে।
আচ্ছা ঠিক আছে হুড়া হুরি করবি না চুপ করে থাক মুড়ি ভাজা হলে দেব। এখন থাম।

নাকি সুরে জবাব এলো, বেলা উঠে গেলে লোকজন চলাফেরা শুরু হবে তখন আমরা থাকব কেমনে? এখনই দিয়ে দে!
আচ্ছা মুড়ি পাইলে চইলা যাবি?
নাকি সুরে,
হ যামু!
আচ্ছা নে!
এই বলে একটা ছোট ঝুরি ভরে কিছু মুড়ি ছিটিয়ে দিল ওই দিকে যেখান থেকে হুরাহুরি জড়াজড়ির শব্দ আসছিল। অন্ধকারে বিশেষ কিছু দেখতে পেল না কিন্তু ভোরের আলো ফুটে উঠলে দেখল কোন মুড়ি পড়ে নেই।

পরের দিন রাজা মুড়ির টিন নিয়ে মানিকগঞ্জে চলে গেল। সহসা আর কোন ছুটি নেই। আবার সেই এসএসসি পরীক্ষার সময় ছুটি। মুড়ি পেয়ে দ্বিজেন মহা খুশি, মজা করে মুড়ি খায়। এর মধ্যে শুধু ক্লাস আর ক্লাস। দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যেন প্রায় তিন মাস হয়ে গেল। এবার বিশ দিনের ছুটি। খালি মুড়ির টিন আর গাঁটঠি বোচকা নিয়ে রাজা বাড়ি আসছে। ক্লাস শেষ করে ছুটি হলো বলে রওয়ানা হতে বেলা পরে গেল। বাঠইমুরি ছেড়ে কলতার কাছে আসার আগেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। আট মাইল পথ হেটে আসা সহজ কথা নয়। অন্ধকার রাত বলে একটু ভয় ভয় করছিল।

কলতা থেকে কোন সাথি সঙ্গী পায় কিনা সে আশায় ছিল কিন্তু কলতা এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও কাউকে না পেয়ে একাই হাটতে শুরু করল। কলতার পুল পার হয়ে ঝাউ তলা এসে একজনকে পেল সে বিজয়নগর যাবে। বেশ তবুও কিছুটা সঙ্গী হলো। হাটতে হাটতে আলাপ করতে করতে বেশ অনেকটা পথ প্রায় বিজয় নগর বাজার পর্যন্ত এসে সঙ্গের লোকটা ওপাড়ে নিমতা চলে গেল। রাজা একটু ভাবনায় পড়ল সোজা গ্রামের পাশ দিয়ে যাবে নাকি চকের মধ্যে দিয়ে ভুসকুরা হয়ে সোজা যাবে! না অনেক হাটা হয়েছে সোজা যাওয়াই ভাল হবে এতটা পথ ঘুরে যাবার এমন কি দরকার! বেশ, সেই অনুযায়ী বাম দিকে ভুসকুরার রাস্তা দিয়ে হেটে আসছে। অন্ধকারে গ্রামের মেঠো পথে হেটে যাচ্ছে আর লোক বসতি একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে। গেরস্ত বাড়ির পিদিমের আলো ম্লান হয়ে আসছে, দেখা যায় না।

এক সময় ভুসকুরার সেই বিখ্যাত দীঘির কাছে এসেছে পরে দীঘির পাড় থেকে কেমন যেন ছট ফটানির মত শব্দ পাচ্ছে। পুকুর পাড়ে যে সব আগাছা থাকে সেগুলি ভাঙ্গা চোরার মত কেমন শব্দ। মনে হচ্ছে কোথাও কিছু তছনছ করে ওলট পালট করছে কেউ। যেন কোন আক্রোশ ঢেলে দিচ্ছে কারো উপর! কি হচ্ছে? কোথায় হচ্ছে? এত অন্ধকারে কি হতে পারে, কে হতে পারে? রাজা একটু দাঁড়াল। শুধু ওই শব্দ হচ্ছে জন প্রাণীর কোন সারা শব্দ নেই, কিন্তু এই শব্দ কে করছে! অবাক হয়ে অনেকক্ষণ এদিক ওদিক দেখল কিন্তু কিছুই পেল না। ঘুট ঘুটে অন্ধকারে তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছে না। একবার ভাবে ডেকে জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু কাকে

জিজ্ঞেস করবে? তবুও কি মনে করে একটু জোরে ডাকল কে, কে ওখানে? কারো কোন সারা নেই! আবার ডাকল, কে? কে ওখানে? এবারও কোন সারা নেই তবে ওই শব্দটা যেন হঠাৎ করেই থেমে গেল। আশ্চর্য! আর কোন শব্দ নেই! রাজা বুদ্ধি করে পাশের শেওড়া গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙ্গে সাথের মুড়ির টিন ঢোলের মত বাজাতে শুরু করল। তাক ঢুমা ঢুম, তাক ঢুমা ঢুম। বাজাতে বাজাতে যেখান থেকে শব্দ আসছিল প্রায় তার কাছে চলে আসল কিন্তু অন্ধকার বলে সঠিক জায়গাটা বুঝতে পারছিল না। তবুও অন্ধকারের মধ্যেই যতটা পারে হাতরে হাতরে কাছে এসে দেখ হ্যাঁ এইতো এইখানেই ঝট পটানি হয়েছে কিছু টানা হ্যাচরাও হয়েছে মনে হলো! মনে হল কাউকে টেনে দীঘির পাড়ে চালায় তুলে নিয়েছে, হ্যাঁ এইতো তাজা ডাল ভাঙ্গার চিহ্ন। এমন দেখেই রাজার একটু ভয় ভয় করতে লাগল, গা ছম ছম করে উঠল। মনে হলো শরীর ঘামতে শুরু করেছে। ওদিকে দীঘির কিনারা থেকে একটা অস্পষ্ট গোঙানির মত শব্দ পাচ্ছিল। এবার রাজা পুরোপুরি ভয় পেয়ে গেল। না আর এখানে থাকা যাবে না। ডিটেকটিভ গিরি করার কোন দরকার নেই যার যা হয়েছে
হোক বাবা আমি চললাম বলে বাড়ির দিকে এক দৌড়। কিছুদূর যেতে না যেতেই দেখে আব্দুলের বাবা আর বড় ভাই হারিকেন নিয়ে এদিকে আসছে। ওদের দেখে রাজা দাঁড়াল।

রাজা কি মানিকগঞ্জ থেকে আসছ?
হ্যাঁ চাচা
তা এ ভাবে দৌড়চ্ছ কেন, একেবারে হাঁপাচ্ছ, ভয় পেয়েছ নাকি?
হ্যাঁ চাচা, বলেই ভুসকুরার দীঘির পাড়ে যা দেখেছে সব খুলে বলল। শুনে আবদুলের বড় ভাই বলল
কি জানি আমাদের আবদুল তো সেই সন্ধ্যার আগে গরু নিতে এসেছিল কিন্তু গরু বাড়ি চলে গেছে অথচ ও যায় নি! কোথায় গেল আমরা খুঁজতে বেরিয়েছি।
রাজার কি মনে হলো বলল
চলেন তো দেখি, আমার মনে হয় ওই ওখানে দীঘির পাড়ে দেখতে হবে। আমি অন্ধকার বলে ভাল করে দেখতে পারিনি
আচ্ছা চলো।

ওরা হারিকেন নিয়ে আগে আগে আর পিছনে রাজা চলল।
কিছুদূর গিয়ে দীঘির পাড়ে এসে রাজা দেখিয়ে দিল এইযে এখানে আমি দেখেছিলাম কিছু ছিটকির ভাঙ্গা ডাল।
দীঘির পাড়ে চালার উপরে উঠে যেখানে গোঙানির শব্দ শুনেছে সেখানে গিয়ে দেখে অচেতন আবদুলের দেহ অর্ধেক পানিতে আর বাকি অর্ধেক কাদায় পরে রয়েছে। এই দেখেই ওদের কারো বুঝতে বাকি রইল না কি হয়েছে। দোয়া কালাম পড়তে পড়তে ওখান থেকে তিনজনে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক করে যখন সুস্থ করল তখন আবদুল বলল আমি গরুর খুঁটি উঠিয়ে ছেড়ে দিয়েছি আর অমনিই গরুগুলি এক এক করে বাড়ির দিকে চলে এলো আমি আসছিলাম কিন্তু মনে হলো কে যেন আমাকে জোড় করে পিছনে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে অথচ কাউকে দেখছি না। বেশ কিছুক্ষণ ধ্বস্তা ধ্বস্তি করলাম কিছুতেই ছাড়া পেলাম না তারপরে আর আমার কিছু মনে নেই।
রাজা জিজ্ঞেস করল, তখন কি অন্ধকার হয়ে আসছিল?
হ্যাঁ অন্ধকার তো গরু ছাড়ার আগেই হয়ে গেছে
বুঝেছি তখনই আমি শব্দ পেয়েছি কিন্তু কিছুই দেখছিলাম না আবার ভয় করছিল বলে মুড়ির টিন বাজাচ্ছিলাম
আবদুলের ভাই বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তোমার টিন বাজাবার শব্দ শুনেছি!

ফাল্গুনের গান

One of the most cherished trees by Puerto Ricans

জল ঝরাইয়া মায়ের চোখে
শিমুল ফুলের কলি
কেন সাজাইলা ফাগুনেরে
রক্তে রাঙ্গা তুলি।।

এই মাসেতে গান থামাইল
সবুজ বনের পাখি
পথ হারাইল পায়রা গুলি
মেইলা সজল আঁখি
রফিক শফিক ছালাম বরকত
নিজে হইল বলি।।

গুলির মুখে শহীদ হইল
কত সোনার চান
কেহ বলে আল্লা রসুল
কেউবা ভগবান
যাদের কথায় গাইল যে গান
দোয়েল শ্যামা বুলবুলি।।

আমার প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ

নক্ষত্রের গোধূলি
Nokkhotrer Godhuli Cover
এ দেশের কোন এক রাশেদ সাহেবের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে এই কাহিনী লিখা শুরু করেছিলাম। তখন ভাবীনি যে এই লেখা একদিন গ্রন্থ আকারে প্রকাশ হবে। রাশেদ সাহেবের ভাগ্যের আকাশে নানান গ্রহ নক্ষত্রে কি ভাবে দিন আসে যায়, সন্ধ্যা বা রাত্রি আসে যায়, কেন তার মত একজন সহজ সরল অতি সাধারণ মানুষ যিনি কোন ঘোর প্যাচ বোঝে না, যে কিনা তার নিজের দেশকে অকৃত্রিমভাবে ভালবাসে যেমন বাসে তার মাকে, স্ত্রীকে এই তার জন্য এই সোনার দেশে এক মুঠো অন্নের সংস্থান হয়না। নিজের দেশ ছেড়ে, সংসার ছেড়ে, স্ত্রী সন্তান প্রিয়জন ছেড়ে জীবনের একটা প্রান্তে এসে ভিন দেশে যেতে হয় তাই নিয়েই এই কাহিনী। জীবনে চলা পথে নানান উত্থান পতন এবং পায়ে পায়ে হোঁচট খাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তাই নিয়ে পাঁচটি মহাদেশের পটভূমিতে এই উপন্যাস রচিত হয়েছে।

একই ধরনের নানা ঘটনা ঘটে যায় নানা জনের জীবনে যার কিছু আমরা ভাবতে পারি আবার কিছু ভাবতেও পারিনা। যিনি আমাদের জীবনের চলা পথ, গতি দুর্গতি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি যেখানে যা ঘটাচ্ছেন তা আর একজনের জীবনে হুবহু ঘটতে দেখা যায় না। কখনও কারো সাথে কিছুটা মিলে গেলেও পুরোটা সাধারণত এক হয়েছে এমন দেখা যায় না অর্থাৎ মুল ঘটনা তিনিই ঘটাচ্ছেন বা বলা যায় মুল গল্প তিনিই রচনা করে রেখেছেন যিনি এই জীবন নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমরা শুধু এমনি নানা ঘটনা জোড়া তালি দিয়ে আবার নতুন এক কাল্পনিক রূপ দিতে পারি। এর বেশি কিছু আমাদের কলমে পেরে উঠে না। তেমনি করে কারো জীবনের সাথে এখানে তুলে ধরা রাশেদ সাহেবের জীবন চলা পথ মিলে গেলে তা হবে নিতান্ত কাকতালীয় ঘটনা।

বইয়ের নামঃ –নক্ষত্রের গোধূলি
লেখকঃ মোহাম্মদ খালিদ উমর
প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
প্রচ্ছদঃ Dan (UK)
মূল্যঃ ৬০০ টাকা (২০%-২৫% কমিশন) ৩০ ফর্মা
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
বইটি প্রকাশ হয়েছে বইমেলা ২০১৬ সালে।
ISBN: 978-984-702-091-4

প্রাপ্তিস্থানঃ
১। নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ৪৬ পি কে রায় রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০/ মেলার স্টলেও পাবেন
২। ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৩। উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৪। রিতা ইন্টারন্যাশনাল, কোলকাতা-৭০০০৪৯
৫। সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, লন্ডন, ইউ কে
৬। অন্যমেলা, ৩০০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, ফার্স্ট ফ্লোর, সুইট নং ২০২, টরোন্টো, কানাডা
৭। এটিএন মেগা স্টোর, ২৯৭০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, টরোন্টো, কানাডা
** দেশের কোন পাঠক চাইলে কুরিয়ারের মাধমেই পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঠিকানা জানিয়ে সম্পূর্ণ মূল্য বিকাশ করে পাঠালেই হবে কোন চার্জ দিতে হবে না।
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে
Cover Momo Chittey
একজন নাবিকের অসাধারণ এক প্রেমগাঁথা নিয়ে লেখা উপন্যস।
পাঠকের মতামত-
বিবর্ণ মেঘের বাকল সরিয়ে নষ্ট আঁধারে ধবধবে জোৎস্নার মতো হৃদয়ের যত লুকানো ভালবাসা একদিন আলোকিত করে হৃদয়ের মানুষ হৃদয়ে ফিরে আসে।
লেখক তার উপন্যাসের শিরোনামে সুন্দর শব্দ চয়ন করেছেন। মমচিত্তে নিতি নৃত্যে। ভালবাসা নিয়ে যখন মানুষ অ-রুচির অন্ধকারে আচছন্ন, ঠিক তখনই উপযুক্ত সময়ে লেখক ভালবাসা এবং জীবনের যুদ্ধ নিয়ে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর একটি গল্প “নির্বাক বসন্ত”। প্রেম-বিচেছদের কুয়াশায় আচছন্ন মানুষের চোখ। কিন্তু এমন কোন চোখ আর মন আছে কি, যে একমাত্র একজনের জন্যে অশ্রু -শ্রাবণ বর্ষণ করে? এই গল্পে একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এই গল্পে লেখক চলার পথে এক জীবনে কতটা যুদ্ধ করতে হয় সে শুধু নিজের জন্য পরিবার এবং মনের মানুষটির জন্যেও তা ফুটিয়ে তুলেছেন। আসলে ভালবাসা এমনই হতে হয়। যে প্রেমিকা তার মনের মানুষের জন্য ভালোবাসা উজাড় করে দিতে পারে রূপে-গুণে-জ্ঞানে আর ভালবাসা দিয়ে। লেখক তার গল্পে লিখেছেন তার দুটি লাইন আমার হৃদয়কে প্রলম্ভিত করেছে, তিনি লিখেছেন, আকাশে চন্দ্র সূর্য এবং অগণিত তারকা অসংখ্য বার উদয় হয়ে আবার অস্ত গেছে, অনেক প্রতীক্ষার দুঃসহ লগ্ন পেরিয়ে গেছে দূর মহা সাগরের ওপাড়ে। নিরুর জীবনের অনেক গুলি নির্বাক বসন্ত কাউকে না জানিয়ে নিরুর চোখের নোনা জল বয়ে নিয়ে গেছে সেই কোন অচেনা সুদূর নীল জলের নীল মহাসাগরের অতলে যে সাগরে তার নিশাত ঘুরে বেড়ায়। আমি লেখকের অনেক গল্প এবং কবিতা পড়েছি প্রতিটি লেখাই আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমিনুল ইসলাম, এডমিন, বন্ধু ব্লগ।

বইয়ের নামঃ মম চিত্তে নিতি নৃত্যে
লেখকঃ মোহাম্মদ খালিদ উমর
প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
প্রচ্ছদঃ সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান
মূল্যঃ ২৫০ টাকা (২০%-২৫% কমিশন)
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
বইটি প্রকাশ হয়েছে বইমেলা ২০১৫ সালে।
ISBN: 978-984-702-074-7

প্রাপ্তিস্থানঃ
১। নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ৪৬ পি কে রায় রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০/ মেলার স্টলেও পাবেন
২। ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৩। উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৪। রিতা ইন্টারন্যাশনাল, কোলকাতা-৭০০০৪৯
৫। সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, লন্ডন, ইউ কে
৬। অন্যমেলা, ৩০০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, ফার্স্ট ফ্লোর, সুইট নং ২০২, টরোন্টো, কানাডা
৭। এটিএন মেগা স্টোর, ২৯৭০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, টরোন্টো, কানাডা
** দেশের কোন পাঠক চাইলে কুরিয়ারের মাধমেই পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঠিকানা জানিয়ে সম্পূর্ণ মূল্য বিকাশ করে পাঠালেই হবে কোন চার্জ দিতে হবে না।
ভূত ভয়ংকর-
Vut Voyongkorr
গা ছমছম করা ১০টি গল্প দিয়ে সাজান হয়েছে এই বইটি।
প্রকাশকের মতামত-
ভূত ভয়ংকর কথা
ভূত ভয়ংকর বিশ্বাস অবিশ্বাসের ভয়ংকর সব গল্প কথা কিংবা বলা যায় কল্প কথা। একথা বলছি এজন্যে যে ভূত-আছে, ভূত-নেই। এমন সব কথা আমাদের মধ্যে ভীষণ ভাবে প্রচলিত প্রবাদ হয়ে বর্তমান।
শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতীতো দূরের কথা আমরা যারা বুড়ো খোকা অনেকেই বিশ্বাস করি এবং ভূতকে দেখে-না দেখে ভয় পাই। কোন যুক্তিতেই তা প্রমাণ করতে পারি না। তাই বলে ভূতের গল্প বলা বা লেখা থেমে নেই- বর্তমান আইটি যুগেও ভূত বর্তমান।
লেখক মোহাম্মদ খালিদ উমর তার গ্রন্থ ‘ভূত ভয়ংকর’-এ এমন সব গা-ছমছমে গল্প তুলে ধরেছেন যা সাহিত্য গুণে, ভাষার বুনটে বিশ্বাস যোগ্যতা আদায় করে নেয়।
আমি বিশ্বাস করি এবং আশা করি সব বয়সের পাঠকের কাছে এই ভূত কাহিনী দারুণ আতংক জাগাবে।
জর্জ, প্রকাশক।

বইয়ের নামঃ ভূত ভয়ংকর
লেখকঃ মোহাম্মদ খালিদ উমর
প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
প্রচ্ছদঃ জর্জ হায়দার
মূল্যঃ ১৫০ টাকা (২০%-২৫% কমিশন)
বইয়ের ধরণঃ ভূতের গল্প, গা ছমছম করা ১০টি গল্পের সমাহার রয়েছে এতে।
বইটি প্রকাশ হয়েছে বইমেলা ২০১৫ সালে।
ISBN: 978-984-702-073-0

প্রাপ্তিস্থানঃ
১। নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ৪৬ পি কে রায় রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০/ মেলার স্টলেও পাবেন
২। ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৩। উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৪। রিতা ইন্টারন্যাশনাল, কোলকাতা-৭০০০৪৯
৫। সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, লন্ডন, ইউ কে
৬। অন্যমেলা, ৩০০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, ফার্স্ট ফ্লোর, সুইট নং ২০২, টরোন্টো, কানাডা
৭। এটিএন মেগা স্টোর, ২৯৭০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, টরোন্টো, কানাডা
** দেশের কোন পাঠক চাইলে কুরিয়ারের মাধমেই পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঠিকানা জানিয়ে সম্পূর্ণ মূল্য বিকাশ করে পাঠালেই হবে কোন চার্জ দিতে হবে না।
ষড়ঋতু-
Cover Shoro Ritu (2)
ঋতু পরিবর্তনের আমাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পটভূমিতে বিভিন্ন স্বাদের ৮টি গল্পে সাজান এই বইটি।
প্রকাশকের মতামত-
ষড়ঋতু কথা-
ঋতু বৈচিত্রের দেশ আমাদের এই দেশ। ছয়টি ঋতু নিয়ে আবর্তিত এই পথ পরিক্রমা, নানা ঋতুর নানা রঙ, নানা সুবাস, বিচিত্র তার চরিত্র ও উন্মাদনা, শান্ত শুভ্র মাদকতা।
প্রকৃতির সাথে যেমন এই ঋতুর পরিবর্তন সাধিত হয়-তেমনি সমাজ জীবনেও আসে নানা বৈচিত্র।
এখানে আমি বলতে চাইছি, ষড়ঋতুর ৮টি গল্পে লেখক ঋতু পরিবর্তনের চোখে দেখা রূপগুলোর মতো-নানান ধরনের কাহিনী চিত্র তুলে ধরেছেন চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের আদলে। এখানে আছে, চমৎকার বর্ণনায় দেশি-বিদেশি পটভূমিকায় সব গল্প।
গল্পগুলোর পাঠক-নানা ঋতু বা নানা বিচিত্র জীবন ঘনিষ্ট গল্প পাবেন এই লেখকের লেখা গল্পে। ভীষণ রকম মুন্সিয়ানা আছে তার লেখার মধ্যে, তিনি ভালো রকম রপ্ত করেছেন গল্পগাথা ও পরিবেশন করার ব্যাকরণটি।
আমি বিশ্বাস করি ষড়ঋতুর সবকটি গল্পে পাঠক নিজেকে খুজে না পেলেও বর্তমান সমাজকে পাবেন দারুণ ভাবে। এখানেই সার্থক লেখক।
জর্জ, প্রকাশক।

বইয়ের নামঃ ষড়ঋতু
লেখকঃ মোহাম্মদ খালিদ উমর
প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
প্রচ্ছদঃ জর্জ হায়দার
মূল্যঃ ২০০ টাকা (২০%-২৫% কমিশন)
বইয়ের ধরণঃ গল্প। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পটভূমিতে লেখা ৮টি গল্পের সমাহার রয়েছে এতে।
বইটি প্রকাশ হয়েছে বইমেলা ২০১৫ সালে।
ISBN: 978-984-702-072-3
প্রাপ্তিস্থানঃ
১। নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ৪৬ পি কে রায় রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০/ মেলার স্টলেও পাবেন
২। ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৩। উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৪। রিতা ইন্টারন্যাশনাল, কোলকাতা-৭০০০৪৯
৫। সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, লন্ডন, ইউ কে
৬। অন্যমেলা,৩০০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, ফার্স্ট ফ্লোর, সুইট নং ২০২, টরোন্টো, কানাডা
৭। এটিএন মেগা স্টোর, ২৯৭০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, টরোন্টো, কানাডা
** দেশের কোন পাঠক চাইলে কুরিয়ারের মাধমেই পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঠিকানা জানিয়ে সম্পূর্ণ মূল্য বিকাশ করে পাঠালেই হবে কোন চার্জ দিতে হবে না।
জীবন পথের বাঁকে বাঁকে
Jibon22-540x253
নিজের ব্লগসহ দেশ বিদেশের নানা সামাজিক ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে কলম বা কী-বোর্ড সঞ্চালন শুরু করলেও লেখালেখির একটা সুপ্ত বাসনা সেই ছোটবেলা থেকেই মনের কোন এক কোণে জমে ছিল। নাবিক জীবনে কুল কিনারা বিহীন সাগরের নীল জলে ভেসে এবং বিলাতের দিনগুলি কাটাবার সময় মনের মাঝে জমা কিছু কথা ডাইরির পাতায় লিখে রাখতাম। তা দেখে বন্ধু রফিকুল ইসলাম বলল আপনি এমন করে দিন রাত লিখছেন, তা এগুলোকে এ ভাবে খাতায় বন্দী করে না রেখে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিন! আমাকে দিন এর অঙ্গসজ্জা থেকে শুরু করে যেখানে যা কিছু করতে হবে আমি করে দিচ্ছি।
মংলা বন্দরে কর্ম কালীন যে সব কবিতা লিখেছিলাম সেগুলোতে সুর দিয়ে গান লেখায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মংলার দিগরাজের বন্ধু শতদল হালদার। যেমন নীল নীল সাগর তীরে, ওগো প্রেম, বাতায়নে ভাবি বসে একা, স্বর্ণালি সুন্দর এই দিন এবং মন আমার দোদুল দোলে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে এই সব সাড়া জাগানো গানগুলো সে সময়েরই লেখা। এখনও তিনি অক্লান্ত ভাবে সুর করে চলেছেন। শুধু বললেই হল শতবাবু একটা গান দেখবেন? অমনিই এসে হাজির, কই দেখি কি লিখেছেন! যিনি এভাবে উৎসাহ এবং স্বীকৃতি দিয়েছেন তাকে কি আমি ভুলতে পারি? কখন যেন ঠাঁই করে নিয়েছেন আমার হৃদয়ের অনেকখানি জুড়ে। এই গানগুলি দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে গানের এলবাম করার ইচ্ছেও রয়েছে।
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে আমার বিভিন্ন লেখার বানান সংশোধনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব সুশান- বর্মণ। ভ্রাতৃপ্রতিম সুশান্ত বর্মণ এবং কঠিন সমালোচনা করে আমার নানা ভুল ভ্রান্তি দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতের অসম প্রদেশের তিনসুকিয়া কলেজের বাংলার অধ্যাপক ভ্রাতৃপ্রতিম সুশান্ত কর।
বইটি প্রকাশের ব্যাপারে অনেকেই নানা ভাবে উৎসাহ এবং তাগিদ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সবার এই সম্মিলিত উৎসাহ এবং তাগিদের ফলেই বইটি প্রকাশ করা হয়ে উঠেছে এবং এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
বইটি প্রকাশ হয়েছে বইমেলা ২০১২ সালে।
ISBN: 978-984-90146-8-3

বইয়ের নামঃ জীবন পথের বাঁকে বাঁকে
লেখকঃ মোহাম্মদ খালিদ উমর
প্রকাশকঃ ব্লগার্স ফোরাম
প্রচ্ছদ- শামীম সুজায়েত
মূল্যঃ ২০০ টাকা (২০%-২৫% কমিশন)
বইয়ের ধরণঃ গল্প
প্রাপ্তিস্থানঃ
১। নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ৪৬ পি কে রায় রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০/ মেলার স্টলেও পাবেন
২। ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৩। উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০
৪। রিতা ইন্টারন্যাশনাল, কোলকাতা-৭০০০৪৯
৫। সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, লন্ডন, ইউ কে
৬। অন্যমেলা, ৩০০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, ফার্স্ট ফ্লোর, সুইট নং ২০২, টরোন্টো, কানাডা
৭। এটিএন মেগা স্টোর, ২৯৭০ ড্যানফোর্ট এভিনিউ, টরোন্টো, কানাডা
** দেশের কোন পাঠক চাইলে কুরিয়ারের মাধমেই পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঠিকানা জানিয়ে সম্পূর্ণ মূল্য বিকাশ করে পাঠালেই হবে কোন চার্জ দিতে হবে না।

বাংলার রূপ

 photo Bangladeshi village picture 3_zpsecdfzuiz.jpg

মেঘনা যমুনা পদ্মার সঙ্গমে
দেখেছি বাংলার রূপ
নীল শাড়ী পরা গায়ের বধূ
জ্বালায় সুগন্ধি ধূপ
সাঁঝের বেলা দেখো মাটির ঘরে।

মেঘনা নদীর মোহনায় দুপুরে
রেখেছে ঘিরে বালুচরে মেঘের ছায়ায়
ঢেউ জাগে ঝিকিমিকি উত্তাল সাগরে।

এখানে পাখি ডাকে নদীর তীরে
দামাল ছেলে মাখে পথের ধুলা
সাম্পান মাঝী গান গেয়ে ভিড়ে
কভু যায় কি তাকে ভোলা।

নীলিমা সুদূর সীমানায়
সোনালী সূর্য উকি দেয়
রাঙ্গা মাটির ওই পাহাড়ে
দেখ ভাই নবীন সাথী ঘুম থেকে জেগে।

দুই দেশে এক ঈদ

9d899a224010b208efc23a8944cc958a
অনেক অনেক দিন আগের কথা। যখন ঢাকা শহরে দুই টাকায় একটা প্রমাণ সাইজের পদ্মার ইলিশ পাওয়া যেত এবং আমার মা সেই ইলিশের কোর্মা ও ইলিশ পোলাও রান্না করতে পারতেন। আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে অতি উপাদেয় খাদ্য হিসাবে ওগুলির স্বাদ আস্বাদন করতাম। আমি তখন পত্নী হীন (দয়া করে কেউ আবার বিপত্নীক ভাববেন না) তবে সহসা আমাকে সপত্নীক করার জন্য ছন্দা নামে এক হবু ভদ্র মহিলা ওরফে আমার সবে ধন নীলমণি একমাত্র প্রিয়তমা, যিনি দেশে বাস করতেন এবং কেন যেন আমার সাথেই যুগল বাঁধার স্বপ্নে বিভোর থাকতেন।

তখনকার প্রেম ভীষণ কঠিন প্রেম ছিল। অনেক কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে তবেই কোন প্রেমিকার কাছ থেকে একেবারে তারাহুরো করে লেখা একটা প্রেম পত্র পাওয়া যেত। সে সময়ের প্রেম প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে একটু নির্জনে আলাপ, দূর থেকে সামান্য চোখের ভাষায় বা একটু ইশারা ইঙ্গিতে তোমার আমার ভালবাসা বাসির মধ্যেই সীমিত ছিল, এবং এই ছিল অনেক। এর বেশী ভিন্ন কোন উষ্ণতার আশা করা ছিল আত্মঘাতী মূলক আচরণ। তখন মোবাইল, ফোন বা ইন্টারনেটে আলাপ করার কোন কিছুই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি বলে তারা প্রেমিক প্রেমিকাদের ভর্তসনা ছাড়া আর কিছু পেত না। রাতের আঁধারে মিটমিটে হারিকেনের আলোতে পড়ার টেবিলে নোট তৈরির ছুতায় সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রেমপত্র লিখে আবার সেই চিঠি লুকিয়ে পোস্ট অফিসে যেয়ে পোস্ট করে এসে মাস দুয়েক পরে উত্তর পাবে সে আশায় পথের দিকে চেয়ে থাকা ছিল আরও কঠিন। প্রতীক্ষার প্রতিটি প্রহর যেন আর শেষ হতে জানত না। দুই বা তিন মাস পর কোন রকমে উত্তর পেয়ে সহজেই কি আর তা পড়া যেত? সুযোগ খুঁজতে হত কখন এই চিঠি পড়ার শুভক্ষণ আসবে। রাতের অন্ধকারে যখন সবাই ঘুমিয়ে পরত তখন বালিশের কাছে হারিকেন বা মাটির প্রদীপ এনে সামান্য আলোতে কিংবা শেষ বিকেলে সবাই যখন নানা কাজে ব্যস্ত তখন পুকুরের পাড়ে বেতের ঝোপে মশার কামড়ের সাথে বা খড়ের পালার পাশে বসে প্রেমিকের চিঠি পড়ার আনন্দ ছিল ভিন্ন স্বাদের। বুক ঢিব ঢিব করত, এই বুঝি কেউ দেখে ফেলে! তবুও কি যে না বলতে পারার মত একটা ভিন্ন ধরনের স্বর্গীয় আনন্দ তা বোঝান যায় না। সে চিঠি এক বার, দুই বার তিন বার পড়েও যেন আশ মিটত না। কাছেই কারো সারা পেয়ে চিঠি লুকবার যে কি চেষ্টা তা আজকাল কেউ বুঝবেই না।

সত্যি কথা বলতে কি, আমার এই লেখালেখির হাতে খড়ি দিয়েছে আমার ছন্দা। তাকে লিখতে হত বিশাল উপন্যাসের মত চিঠি। যাতে কবে কি খেয়েছি, কোথায় গিয়েছি, সে দেশের সুন্দরীরা দেখতে এবং শুনতে কেমন, এ ছাড়া আর কি কি দেখেছি এবং দিনের মধ্যে কতবার তার কথা মনে হয়েছে সব ইনিয়ে বিনিয়ে না লিখলে পরের চিঠিতে তার বকুনি নির্বিবাদে হজম করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না। তখন ব্রিটিশ এয়ার এর নাম ছিল BOAC বা ব্রিটিশ ওভার সিজ এয়ারওয়েজ কর্পোরেশন। আমি তখন আয়ারল্যান্ডের তৈরি এরিনমোর নামের হলুদ রঙ টিনে ভরা অতি মহনীয় সুগন্ধযুক্ত তাম্রকূট দিয়ে বিড়ি বানিয়ে ধূমপানে অভ্যস্ত ছিলাম। এই বিড়ি বানানোর কাজে আমার সূ দক্ষতা সারা জাহাজে সর্বজন বিদিত ছিল।
সেই তখনকার কথা বলছি। আজকের কথা নয়। আমি তখনও জাহাজের ডেক ক্যাডেট। আমার এই ভয়েজের ‘ওশেনিয়া’ জাহাজ খানার মালিক ছিল ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম কোম্পানি।
একবার কুরবানির ঈদের মাস খানিক আগে সউদি আরবের রাস্তানূরাহ থেকে কাঁচা তেল (ক্রুড ওয়েল) নিয়ে স্পেনের একটি বন্দরে আনলোড করেছি। এর পর জাহাজটা গ্যাস ফ্রি করে ডকিং করার জন্য ইংল্যান্ডের প্লিমাউথে যাবার কথা। হিসাব অনুযায়ী প্লিমাউথে যাবার পর আমার রিলিভার আসবে এবং আমি দেশে ফিরে এসে সবার সাথে আনন্দে ঈদ উদযাপন করব আর এরই এক ফাঁকে ছন্দার সাথে এক পলকের দেখা আর একটু খানি হাতে হাত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করার ইচ্ছা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। সেই এক ফাঁকে ওর জন্য কেনা জিনিষগুলি দিয়ে আসব। এমন কিছু দেয়া যাবে না যা দেখে ওকে প্রশ্নের সামনে পরতে হয়। কোথায় পেলি বা কে দিয়েছে? মনের এমন একটা আশা বুকের মধ্যে ভরে রেখেছি, দিন গুলি যাচ্ছে একেকটা বছরের মত।

স্পেনের মাদ্রিদে তেল নামিয়ে চলে আসছি আর রাস্তায় গ্যাস ফ্রি করছি। কয়েক দিনের মধ্যে জাহাজ প্লিমাউথে এসে পৌঁছেছে। শুনলাম আমার রিলিভার রহিম ভাই লন্ডনে চলে এসেছে। দেশে আসার পোটলা বোচকা বাঁধাবাঁধির ঝামেলা সেরে ফেলেছি। জাহাজ তখনও ডকে আসেনি, মাত্র আউটার এঙ্কারেজে অপেক্ষা করছে। চিফ অফিসার জানিয়ে দিল রেডি হয়ে থাকতে কাল বিকেলে তোমার রিলিভার আসছে।
জাহাজ নোঙ্গরেই ছিল।

ক্যাপ্টেন হিসাব নিকাশ করে জাহাজ থেকে আমার যা প্রাপ্য তা দিয়ে দিল সাথে আমার সিডিসিটা আর একটা প্রশংসাপত্র। আমি ডলারের পরিবর্তে কিছু ব্রিটিশ পাউন্ড চেয়ে নিলাম। ভাবলাম ব্রিটেন থেকে সাইন অফ করছি যদি কিছু কেনা কাটা করি তাহলে আবার ডলার ভাঙ্গান এক ঝামেলার ব্যাপার হবে। বিকেল চারটায় সবাইকে see you again বলে হাতে বুকে মিলিয়ে আপাত বিদায় (নাবিকেরা সাধারণত বাই বাই বলে না) নিয়ে বাক্স পেটরা ডেকে এনে রেখে ব্রিজে গেলাম। ওয়াচ ডিউটি করছিল ক্যাভেন।
কি খবর ক্যাভেন কোন খবর পেয়েছ?
জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই রেডিওতে ডাকছে
“ওশেনিয়া ওশেনিয়া দিস ইজ প্লিমাউথ কলিং’ ।
ক্যাভেন জবাব দিল
‘প্লিমাউথ বল, আমি তোমাকে পরিষ্কার শুনছি”
বাংলাদেশ থেকে তোমাদের লোক এসেছে, প্লিমাউথ পাইলট ২ তাকে নিয়ে তোমাদের দিকে যাচ্ছে ওকে রিসিভ কর। আচ্ছা প্লিমাউথ, আমরা রেডি আছি। লন্ডন আমাদের জানিয়েছে। তুমি ওদের পাঠিয়ে দাও।
হ্যাঁ হ্যাঁ ওরা আধা ঘণ্টা আগে সেইল কর চলে গেছে।
ক্যাভেনকে আবার দেখা হবে বলে নিচে এসে ডেকে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পরে দেখি প্লিমাউথ পাইলট আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওটা দেখেই ছন্দার মুখটা বুকের ভিতরে কোথায় যেন ভেসে এলো। না না না শুধু বুকে নয় এ তো দেখছি সারা আটলান্টিক জুড়েই ছন্দার মুখ! যেদিকে তাকাই শুধু ছন্দা ছন্দা আর ছন্দা! কি আশ্চর্য!

রহিম ভাই এলো। ছোট্ট করে একটু কুশল জেনে এবং জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম। এজেন্টের ব্যবস্থা অনুযায়ী সে রাতে প্লিমাউথের একটা হোটেলেই থাকতে হল। পরদিন লন্ডন থেকে আমাদের এজেন্ট ফোন করল। ওপাশে হ্যারি বলছে।
আগামী কাল ১৩ তারিখ সকাল সাড়ে সাতটায় BOAC তে প্লিমাউথ থেকে এথেন্স এবং তারপরে এথেন্স থেকে তোমাদের বিমানে ডাইরেক্ট ঢাকা।

ঢাকার ল্যান্ডিং কখন?
কিছু একটা দেখে বলল
উম, সকাল ৫টা
গুড হ্যারি, তুমি জান ১৪ তারিখে আমাদের গ্রেট ফেস্টিভাল এবং আমি তাহলে আমার ফ্যামিলির সাথে সময় মত দেখা করতে পারব।
আশা করি তুমি এর আগেই ঢাকা পৌঁছে যাবে। আজ সন্ধ্যার পর তুমি টিকেট পেয়ে যাবে।
ঠিক আছে, পৌঁছালেই হল।
বিকেলে একটু বের হলাম। প্লিমাউথ ব্রিটন সাইড বাস স্টেশনের কাছের মার্কেট থেকে টুকি টাকি কিছু কেনাকাটা করলাম ছোট বোন আর ছন্দার জন্য। পাশের বুটস থেকে আমার নিজের জন্য একটা সানগ্লাস কিনলাম
১৪ তারিখে বাংলাদেশে ঈদ হলে এখানে ১৩ তারিখ মানে আগামী কাল ঈদ হবার কথা। এখানে ঈদের নামাজ পাব না, কোথায় মসজিদ জানি না আর তাছাড়া এই প্লিমাউথে পরিচিত কেউ নেই। তবে শুনেছি লন্ডনের ব্রিকলেনের জামে মসজিদে সাধারণত সকাল ৮টা থেকে জামাত শুরু হয়ে ১০ টা পর্যন্ত কয়েকটা জামাত হয়। তখন ওই এলাকায় ওটাই সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখন ইস্ট লন্ডন জামে মসজিদ হয়েছে, প্রায় ৫০০০ মুসুল্লি এক জামাতে নামাজ পড়তে পারে।

এখানকার জামাত ধরার কোন সুযোগ নেই। ফ্লাইটটা এখান থেকে দুপুর বা বিকেলে হলেও চেষ্টা করতে পারতাম। ওকে নো প্রবলেম! দেশে গিয়ে জামাত ধরতে পারব মনে হচ্ছে। এক ঈদ দুই জায়গায়! এমন অবাক কাণ্ড কয়জনের ভাগ্যে হয়?ঢাকায় যদি ভোর ৫টায় নামতে পারি তাহলে ইমিগ্রেশন, কাস্টম ইত্যাদি এয়ারপোর্টের ঝামেলা সেরে একটা বেবি ট্যাক্সি নিয়ে মিরপুরে যেয়ে কাটায় কাটায় জামাত ধরতে পারব আশা করি, যদি কোথাও কোন বিভ্রাট না হয়। তবে এথেন্স থেকে বিমান যদি কোন ঝামেলা না করে শিডিউলে থাকে। অবশ্য এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার হবে কারণ বিমান লেট করবে না তাই কি হয়? অন্তত এর আগের ফ্লাইটগুলিতে যা দেখেছি।

এজেন্টের গাড়ি এসে সকালে সাড়ে চারটায় প্লিমাউথ সিটি এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। তখন সিকিউরিটির এত ঝামেলা ছিল না। চেক ইন, ইমিগ্রেশন এসব সেরে সময়মত প্লেনে উঠে বসলাম। একটু পরেই সীট বেল্ট বাঁধা,

আস্তে আস্তে প্লেনের রান ওয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে এক দৌড়ে আকাশে উড়ে যাওয়া। দিনের বেলা বলে সব দেখলাম জানালার পাশের সিটে বসে। সকালের নাস্তা আর চায়ের পাট শেষ। এখানে প্লেনে বসে আকাশে উড়ে যাচ্ছি দেশে যাবার পথে এথেন্সের দিকে আর পিছনে রেখে এলাম যেখানে ঈদ করছে কত জনে! কি আশ্চর্য এই বিশ্ব! একই সাথে কত জায়গায় কত কি ঘটে যাচ্ছে! আমি রয়েছি এখন আকাশে!
নাস্তা করার সময় ভাবছিলাম ভাগ্য ভাল যে আজকের টিকেট পেয়েছে, না পেলে আজ যদি এখানে থাকতে হত তাহলে এখানেই ঈদ করে যেতে পারতাম। ইংলিশ ঈদ কেমন একটু দেখা হত। সারা রাতে চোখ বুজতে পারিনি। হোটেলের রুমে বসে টেলিভিশনে এই চ্যানেল ওই চ্যানেল করেছি। যদি ঘুম এসে যায় আর এজেন্ট এসে ডাকাডাকি করে সেই ভয়ে। একটু চোখ বন্ধ করেছি আর ওমনিই বিমান বালার সুললিত মার্জিত ইংরেজি কণ্ঠ। লেডিজ এন্ড জ্যান্টল মেনো আপনারা আপনাদের সিট বেল্ট বেঁধে নিন আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই এথেন্স বিমান বন্দরে নামব ইত্যাদি ইত্যাদি। রাতের অনিদ্রার জন্য মাথা টনটন করছে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখি এড্রিয়াটিক সাগর পিছনে রেখে প্লেন আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে। সামনে গ্রিসের এথেন্স এয়ারপোর্ট এর রাডার টাওয়ার দেখা যাচ্ছে। হাতের ঘড়িতে দেখি কোথা দিয়ে এই পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম তার কিছুই টের পেলাম না? তাইতো বলি, এর মধ্যে ছন্দা এসেছিল কি করে? তাহলে কি স্বপ্ন দেখেছি ছন্দাকে? হ্যাঁ তাই হবে। যাক হাতের ব্যাগ গুছিয়ে শীতের কাপড় গায়ে চড়িয়ে সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম।

নিয়ম অনুযায়ী ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রানজিটে থাকলে সেই এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে লাঞ্চ এবং হোটেল দেয়ার কথা কিন্তু নিয়ম থাকলেও বিমানের কাউকে খুঁজে না পেয়ে নিজের পকেটে থাকা পাউন্ড দিয়ে লাঞ্চ করে নিলাম। এর মধ্যে নাস্তা, চা কফি কয়েকবার খেয়েছি। কোন চিন্তা নেই, পকেটে অনেক ডলার আর পাউন্ড রয়েছে। আরও কয়েক জায়গা থেকে আসা বেশ কয়েকজন এবং এখানকার স্থানীয় কয়েকজন বাঙালি জমা হয়েছে দেখলাম। তাদের মধ্যে যারা আমার মত ট্রানজিট লাউঞ্জে আছে তাদের সাথে খুচরা গল্প করে সময় কাটিয়ে দিচ্ছি আর বুকের মধ্যে ঢোল বাজছে, দেশে ফিরে ঈদের চিন্তায় ছটফট করছি।
ফ্লাইট রাতে বলে রাতেও এখানেই খেতে হবে। পাউরুটির মত ও দেশের এক রকম রুটি, সবজি সেদ্ধ আর ডিম। দুই বেলায় এই একই খাবার খেয়েছি। ভয়ে অন্য কিছু নেইনি, কি জানি বাবা কি না কি, হালাল হারামের ব্যাপার। কি আছে নাম জানি না, চিনি না।

রাতে খাবার পর বিমানের কাউন্টারে এক লোককে দেখে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম
চেক ইন কখন করবেন?
ফ্লাইট ডিলে কাজেই এখনও কিছু বলতে পারছি না
কাল ঈদ, একথা কি আপনারা জানেন না?
একটু বান্দর হাসি দিয়ে (অন্তত তখন আমার তাই মনে হয়েছে)
আমরা এখানে আজই ঈদ করেছি!
কিন্তু আমরা যারা ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার তারা দেশে যেয়ে ঈদ করব, তার কি হবে?

দেখুন, এ ব্যাপারে আমি বলতে পারছি না, আসলে ফ্লাইট নিউইয়র্ক থেকেই লেট
সাথে জুরিখ থেকে আসা এক ভদ্রলোক বলেই ফেলল তাহলে আর দেশে ঈদ করা হয়েছে, দেখুন এই এয়ারপোর্টেই ঈদ করতে হয় কিনা!
আমারও তাই মনে হচ্ছে!
নানা জনে নানা ধরনের কথা বলাবলি করছি।
রাতে খেয়ে এসে শুনলাম প্লেন আগামী কাল দুপুর একটার আগে আসছ না।
বাহ! দারুণ খবর শোনালেন ভাই, এবার বাড়ি গিয়ে এক ঘুম দেন, ঈদ তো করেই ফেলেছেন, আর চিন্তা কি?
যান কাউন্টার বন্ধ করে দিন!

সত্যিই একটু পরে দেখি সেই ভদ্রলোক আর নেই, সারা এয়ারপোর্ট তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আর তাকে পেলাম না।
যারা এথেন্স এর যাত্রী তারা যার যার বাসায় চলে গেল আর আমরা যারা ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার তারা ১০/১২ জন হবে মনে হয় ঠিক মনে পরছে না, ওয়েটিং লাউঞ্জের এক পাশে একটু নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে ফ্লোরে বসলাম। পরিষ্কার চকচকে ফ্লোর। কি করব, রাত কাটাতে হবে আর আগামী কাল ঈদ করতে হবে। মিটিং শুরু হল, সাইপ্রাস থেকে আসা এক বয়স্ক ভদ্রলোককে নেতা বানান হল। তখন বড় ভাই কথাটার খুব প্রচলন।
আচ্ছা বড় ভাই আপনি এখন আমাদের নেতা, বলুনতো এখন কি করা যায়?
কি আর করবেন, এখন সবাই ঘুম দিন কাল সকালে যা করার করব।
এখনই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখলে ভাল হয় না?
কি সিদ্ধান্ত নেব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।
আমি বললাম আচ্ছা আমি না হয় হটাত করে এসেছি, আমার টিকেট করেছে আমার এজেন্ট তাই এই দিনে এই ফ্লাইটে আসতে হল কিন্তু আপনারা কেন এলেন?
নানা জনে নানা সমস্যা নিয়ে বলল।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল নামাজ পড়ার কথা ভুলে যান, পথে এভাবে কি আর ষোল কলা পূরণ হয়?
কাল সকালে এখানে পুডিং বা ফ্রুট কাস্টার্ড বা এপল পাই জাতীয় মিষ্টি যা আছে তাই সবাই মিলে একসাথে বসে খেয়ে ঈদ করব। ঠিক আছে?
হ্যাঁ হ্যাঁ খুব ভাল আইডিয়া! তাই হবে।
এত রাতে ওয়েটিং লাউঞ্জ সবটাই প্রায় খালি, বিশেষ কেউ নেই। কাছাকাছি সময়ে আর কোন ফ্লাইট আছে বলে মনিটরে দেখা যাচ্ছে না।
আমরা একে একে একেকটা সোফা দখল করে হাতের ব্যাগ মাথার নীচে রেখে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম কি আর এত সহজ? মাঝে মাঝে এ ওকে ডাকছে একটু ইয়ার্কি চলছে কেউ আবার উঠে বসে সিগারেট টানছে আর সময়মত বাড়িতে যেতে না পারার দুঃখে মনে মনে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছে। এই এত লম্বা সময় একসাথে থাকার ফলে নানান শহর থেকে আসা সবার সাথে মোটামুটি একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে।

কারো ঘুম আর আসছে না। ভোরে এথেন্সের পুব আকাশ একটু একটু করে লাল হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে সূর্য উঠতে শুরু করল। এর মানে হল আমাদের দেশের ঈদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকেই কুরবানির গরু জবাই করে ফেলেছে। আমরাও সবাইকে ডেকে ওয়াস রুম থেকে মুখে হাতে পানি ছিটিয়ে গেলাম রেস্টুরেন্টে। ঢোকার সময় কাউন্টারে বসা মুটকি বুড়িকে গুড মর্নিং জানিয়ে বললাম আমাদের ঈদের দুর্দশার কথা। বুড়ি শুনে খুব উহ আহ করল। আমরা কিচেনের পাশে অর্ডার দেয়ার জন্য এগুচ্ছি আর তখন বুড়ি এক সুন্দরী ওয়েট্রেসকে ডেকে গ্রীক ভাষায় কি যেন বলল। সুন্দরী ঘার কাত করে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। গতকাল লক্ষ করিনি, আজ দেখলাম অনেক মিষ্টি জাতীয় খাবার। আমাদের যার যা ইচ্ছা অর্ডার করে অপেক্ষা করছি। একটু পরে সবারটা এক সাথে দু/ তিনটা ট্রেতে সাজিয়ে দিল আর ট্রে নিয়ে আমরা জানালার পাশে পূর্ব দিকে এসে বসলাম। গ্রীসের সকাল দেখে ঈদ করব।
আমরা নাস্তা খাচ্ছি। একটু পরে দেখি সেই সুন্দরী দুই হাতে দুইটা ট্রে নিয়ে আমাদের টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল। একটু অবাক হয়ে ওকে বললাম
আমরা আর কিছুর অর্ডার দেইনি, আমাদের সব কিছু নিয়ে এসেছি
সুন্দরী গ্রিক উচ্চারণে বলল
আমি জানি, কিন্তু এগুলি আমাদের ম্যানেজার ইশারা করে দেখিয়ে দিল ওই বুড়ি তোমাদের ফেস্টিভ্যালের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছে
তাই নাকি? বেশ বেশ!

আমরা খুব খুশী হয়ে ওর হাতের ট্রে থেকে একে একে পেয়ালাগুলি নামিয়ে নিলাম। দেখলাম আইসক্রিম।
সুন্দরীকে বলে দিলাম তোমাকে এবং তোমাদের সবাইকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। আমরা খুব খুশী হয়েছি।
এর পর সবাই কফির পেয়ালা নিয়ে বসলাম। আমি পকেট থেকে সেই আইরিশ তামাক এরিনমোরের টিন খুলে বসলাম।
তামাকের গন্ধে অনেকেই যারা অধূমপায়ী তারাও দেখলাম একটু লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখে বলল
ভাই আমাকেও একটা বানিয়ে দিন।
জানতাম এমন হবে তাই বেশি করেই কয়েকটা বানালাম।

কফি সিগারেট খেয়ে যখন বাইরে এলাম দেখি বিমানের কাউন্টারে দুই জন লোক দেখা যাচ্ছে। একটু কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম।
কি ভাই, কোন খবর পেলেন?
হ্যাঁ হ্যাঁ প্লেন লন্ডন থেকে টেক অফ করেছে। এখানে একটার দিকে পৌঁছাবে আর তার ৪৫ মিনিট পরে আপনাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফ্লাই করবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন। একটু পরেই চেক ইন শুরু করব।
হিসেব করে দেখলাম লোকটা যেমন বলেছে তা যদি ঠিক হয় তাহলে বিকেল নাগাদ ঢাকায় পৌছাতে পারব। তার মানে সেদিন আর ছন্দার সাথে দেখা হবে না। দেখা হবে তার পরদিন মানিকগঞ্জে।

অমর একুশে এবং আমরা বাঙালি

bangla-language

একুশে ফেব্রুয়ারি! এতদিন ছিল শহীদ দিবস আর এখন স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের। এটা আমাদের গর্ব, বাংলা আমাদের অহংকার!
ছোট বেলায় আমি নিজে এই দেশের বাহিরে বাবা মার সাথে এই বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করেছি। সেখানে বাংলা স্কুলেই পড়তাম। ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই স্কুল থেকে প্রভাতফেরীতে বের হতাম, টিচাররা সেফটিপিন দিয়ে বুকে কাল ব্যাজ আটকিয়ে দিতেন। সবাই একে একে লাইন ধরে বের হতাম। বেশ অনেকদিন পরে বাংলা কোন সিনেমার একটা গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” গাইতাম। তখন আস্তে আস্তে বুঝতে শিখেছি ভাষা কাকে বলে মাতৃ ভাষা কাকে বলে। আমরা তখন ঘর এবং স্কুলের বাইরে ভিন্ন ভাষায় কথা বলতাম।
একসময় পেপার পত্রিকা পড়ে জানলাম ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস কেমন করে হয়েছে কে এবং কারা এই ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিল। তাদের জন্য বুকে কষ্ট হতো আবার নিজেরা বাংলায় কথা বলতে পারি বলে গর্বও হোতো। এই বিশ্বের একমাত্র বাংলা ভাষার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়েছিল জানলাম। আরও জানলাম ব্রাজিলিয়ানরা একটা গান গায় “ফিরিয়ে দাও আমাদের ভাষা” ওদের ইতিহাস এখনও আমি জানি না আসলে জানার সুযোগ পাইনি।
21 February Unique Facebook Covers (4)
ইদানীং একটা ব্যাপার দেখে খুবই অবাক লাগে এই ফেব্রুয়ারি মাস এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন এলেই আমাদের মনে পড়ে আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দরদ উথলে উঠে কিন্তু এই মাস পার হয়ে গেলেই আমরা একটু শিক্ষিত যারা তারা কথার সাথে ২/১টা ইংরেজি না বলতে পারলে তাকে ছোট বা মূর্খ ভাবি। ভিন্ন ভাষা জানা বা বলতে পারা প্রয়োজন সে আমি আমার জীবনের ৩৬ বৎসর বিদেশের নানা দেশে থেকে এসে হারে হারে বুঝতে পারি। কিন্তু বিদেশে আমি নিজেকে বাংলা দেশের এবং আমার ভাষা বাংলা বলে নিজেকে গর্বিত মনে করেছি কিন্তু ভেবে পাইনা অনেকেই এতে লজ্জা পায় কেন!
এদেশে দেখি সরকারি অফিসে বাংলায় নথিপত্র লেখা এবং পত্র যোগাযোগ করা সরকারি ভাবে বাধ্য করা হয়েছে। খুব ভাল লাগে। অপেক্ষায় আছি কবে আমাদের এই বাংলা ভাষায় উচ্চ শিক্ষা নেয়া যাবে । কিন্তু বেসরকারি অফিসে কেন এই বাংলা ভাষা চালু হচ্ছে না? সরকার কেন এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না? কেন এই দেশের মানুষ “আমি বাংলা পড়তে পারি না, আমি বাংলা লিখতে পারি না” বলে গর্ব বোধ করে?
আমাদের বাংলা ভাষার দাবী জানানো, যুদ্ধে প্রাণ দেয়ার কথা বিচার করে এই দিনটিকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস প্রচলিত হয়েছে এতে মনটা আরও আনন্দ পায়। কিন্তু দুঃখ লাগে যখন দেখি এই মাসটা চলে গেলে সবাই বাংলার প্রতি কেমন যেন অবজ্ঞা দেখায়। আমি ভাল বাংলা জানি না, কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারি না, বাংলা বানানে হাজার হাজার ভুল। তাহলে কি আবার আমাদেরকে এই বাংলার জন্য যুদ্ধ করতে হবে? এসব দেখে ভীষণ অবাক লাগে। কবে তোরা বাংলা শিখবি, কবে তোরা বাঙালি হবি?
এই একটাই প্রশ্ন আমার।
আছে কেও যিনি আমার প্রশ্নের জবাব দিবেন!

ভ্যালেন্টাইন ডে

pink heart shape made of wood with forget-me-not flowers on a rustic wooden background copy space for your text
আজ বিশ্বখ্যাত “ভালবাসা বা Valentine” দিবস। ভালবাসার আবার দিবস কি? হ্যাঁ আছে, ভালবাসা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ভালবাসা সার্বজনীন এবং কোন একটা বিষেষ দিনে এই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়া হয় আজ সেই দিন, এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। তবে এই দিবসের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ কাহিনী যা অনেকেই জেনে বা না জেনে দিনটা পালন করে আসছে। এখন বলছি এই দিনের আসল কাহিনী। বিলেতে থাকা কালীন নরউইচ শহরে একটা বিশাল “পাব” (পানশালা) এ কাজ করেছিলাম। তখন ওখানে একটা পুরনো বই থেকে এই তথ্য পেয়েছিলাম ওই বই পড়ে যা পেয়েছি তাই লিখছি।

১২৬৯ খ্রিস্টাব্দের সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাসু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস-২ এর সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। তার এক বিশাল সৈন্য বাহিনীর দরকার হয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায় এবং পুরো রাজ্য অসন্তোষ সৃষ্টি হলো।

এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক যাজক সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশু প্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। তিনি গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেন; তিনি পরিচিতি পেলেন ‘ভালবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে।
প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াছকে ভালো বেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোম বাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেয় এবং তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের সাথে পরিচয় হয় জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের সাথে। আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি তাকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসার বলে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে এবং একসময় তারা উভয়ের প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা তার সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা আর এই আধ্যাত্মিকতার সংবাদ শুনে সম্রাট তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং তাকে রাজকার্যে সহযোগিতার জন্য বলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানান।

এতে রাজা ক্ষুব্ধ হয়ে ১২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন। মৃত্যু দন্ডের ঠিক আগের মূহুর্তে ভ্যালেন্টাইন কারা রক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চান। তিনি মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখেন ‘From your Valentine’ অতঃপর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১২৭০ খৃঃ ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে ‘বিশ্বভালবাসা দিবস’ পালন করা হয়।
b0cc2e091470d6c3b3cf96e41eb4fa9a
আসুন আমরা সবাই সবাইকে সারাদিন ভরে সারা বছর ভরে ভালবাসি, ভালবাসা ছাড়া যে এই মায়াময় পৃথিবী বিষাদময়। ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে ছোট্ট হলেও ভালবাসার জনকে কিছু উপহার দেই এবং ভালবাসার জন যা দেয় তাতেই যেন আনন্দ খুজে নেই।
ধন্যবাদ সবাইকে, সবার জন্য ভালবাসা!Rose 6

এসেছে ফাগুন মন রাঙ্গাতে

5646144146_88f734f38e

মন আমার দোদুল দোলে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে
দোলে ওই চঞ্চল বসন্তে।।
ভ্রমরের গুঞ্জনে কোকিলের গানে গানে
ভুলায়ে আপন ভোলা দখিনা দেয় যে দোলা
মৌ বনেরই প্রান্তে।।
রিনি ঝিনি কাঁকন বাজে গোধূলির রঙ্গিন সাঁঝে
কে আমায় মাতাল হৃদয় যে হারাল নূপুরেরই ছন্দে।।

celebrations of Pahela Falgun in Bangladesh (3)

গানের অডিও লিংকঃ-You Tube
www.youtube.com/watch?v=1zEkUxvkwXs&feature=youtu.be"

ব্লগিং এ আদবকায়দা শালীনতা

how-often-blog-why-blogging-writing-ideas

ব্লগিং এর আদবকায়দা কিংবা শালীনতা :

অনেকের অনেক রকম নেশা থাকে যেমন ছুটির দিনে বা অবসরে বড়শী ফেলে মাছ ধরে, কেউ ফুলের বাগান কিংবা শাকসবজির বাগান করে আবার কেউ খেলাধুলা করে। এই ধরনের নেশাগুলি কিন্তু সবই নেশার মাধ্যমে কিছু প্রাপ্তি বা সহজ কথায় বলা যায় সব কিছুই গঠন মূলক কাজকর্ম। ঠিক তেমনি ব্লগিং কারো কোন পেশা নয় এটা একটা নির্মল নেশা। অহেতুক গালগল্প না করে, অহেতুক আড্ডা না দিয়ে কিংবা অকাজের কোন চিন্তা ভাবনা বা দুশ্চিন্তা না করে যারা ব্লগিং করেন তাদের সালাম জানাচ্ছি এবং সার্বিক শুভকামনা করছি।

ব্লগিং যারা করেন তাদের প্রত্যেকেরই ছোট কিংবা বড় নানা ধরনের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নানা ধরনের ডিগ্রি আছে আমরা এটা ধরেই নিতে পারি। কারণ এখানে কেবল হাজিরা দিলেই হয় না এখানে এলে যেকোনো বিষয়েই হোক কিছু না কিছু লিখতে হয় এবং সর্বোপরি একটু কম্পিউটার জ্ঞান থাকতে হয়। কম্পিউটারে শুধু word জানা থাকলেই হয় না সাথে ইন্টারনেট, গ্রাফিক্স বা এমনি অনেক কিছুই জানতে হয়। সেই হিসেবে আমরা ধরেই নিতে পারি তারা প্রত্যেকেই শিক্ষিত ব্যক্তি।

এখানে নিয়মিত বা অনিয়মিত যেভাবেই নিজ উপস্থিতি দিয়ে থাকুন না কেন আপনি কম বা বেশী কোনো পোস্ট দিচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে চিন্তা ভাবনা করে অনেক পরিশ্রম করে কিছু লিখছেন আর তা ব্লগে প্রকাশ করছেন এবং সংগত কারণেই আপনার মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছা জাগ্রত হয় আমি কেমন লিখলাম সে সম্পর্কে সবাই কি বলছে! অনেকেই এমনি তার মতামত দেন কিংবা অভিনন্দন জানান কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যার পোস্টে মন্তব্য করলেন তিনি সাধারণ ধন্যবাদটুক পর্যন্ত জানাতে কৃপণতা করেন এমনকি তিনি অন্য কারো পোস্ট দেখেনও না বা কোন মন্তব্যও করেন না। এটা আমরা কোন শিক্ষিত ভদ্রজনের কাছে কি এমনটা আশা করি? মোটেই না। তাহলে কেন আপনি শুধু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকবেন? অন্যের পোস্টে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন নিদেন পক্ষে আপনার পোস্টে করা মন্তব্যের প্রতি উত্তর দিন। এটুক ভদ্রতা কিন্তু আমরা সবাই আশা করতে পারি।

কেউ নিজেকে সবার চেয়ে উত্তম ভাবলে কি একসাথে ব্লগিং করা যায়? যায় না। তবে আমি নিজেও কিন্তু কবিতার পোস্ট দেখি না কারণ কবিতার জটিল কথা বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই বা আমি এই ব্লগকে কবিতা সর্বস্ব ব্লগ হিসেবে দেখতেও চাই না। তবে মাঝে মাঝে যে কোথাও যাই না তাও আবার হলফ করে বলা যাবে না। কোথাও কোথাও যাই আবার সাধারণ ভাবে কিছু একটা বলতে হয় তাই বলে আসি কিন্তু পরে যখন দেখি আমার সেই সামান্য মতামতের কোন প্রতি উত্তর নেই তখন মনটা ভেঙ্গে যায়। এমনটা কি আপনার হয় না? নিশ্চয়ই হয়।

কাজেই আসুন না আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে শব্দনীড়কে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলি। সবাই সবার কৃত কর্মের প্রতি সম্মান জানাই এবং নিজেও সম্মানিত হই। আমরা কে কি করছি তাই এক জন আর একজনের কাজ দেখব দরকার হলে তাকে পরামর্শ দেব নতুনেরা শিখবে, বন্ধুরা আলোচনা করবে তবেই না জমবে নির্মল নিষ্কলুষ আড্ডা। আমরা সবাই সবার নিকট আত্মীয়ের মত ঘনিষ্ট বন্ধু হই!

শব্দনীড় তুমি ভাল থাক, দিনে দিনে তোমার বৈভব সরা বিশ্বে ছড়িয়ে পরুক এই কামনা করছি আর সেই সাথে আমরা সবাই এই শব্দনীড়ের ছায়াতলে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করি এই প্রত্যাশা নিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

আবার দেখা হবে বন্ধু, হয়ত আগের মত শব্দনীড় আয়োজিত কোন পিকনিক কিংবা কোন জমকালো আড্ডায়। সবাইকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

blogging

নেই যেখানে ইতি

সরিষা-ক্ষেত-থেকে-চরমপন্থি-নেতার-লাশ-উদ্ধার-700x336

এখনও ইচ্ছে করে কোন পূর্ণিমা রাতে
রবি ঠাকুরের জোছনা ভেজা পথে
রজনীগন্ধা সুবাস নিয়ে
মানসীর স্বপ্ন রাঙ্গা হাতে হাত রেখে
চলে যাই অনেক দূরে-
যেখানে জল আসবে না চোখে
আর থাকবে না সুকান্তর ঝলসানো রুটি।

এখনও ইচ্ছে করে ঝর ঝর বাদল দিনে
সুকুমার ছন্দে পায়ে পায়ে হারিয়ে যাই
মেঠো পথ প্রান্তরে,
নয়ত যেখানে থরে থরে সাজানো
সরষে ফুলের পাশে হলুদ আচলে বিছানো মায়া ঘিরে
জসীম উদ্দিনের মটর সুটি।

এখনও ইচ্ছে করে শিমুল পলাশের ফাগ মেখে
জোনাকি প্রদীপ হাতে নিয়ে বসন্ত রাতে
জয়নুলের ছবি হয়ে
জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি নদীর বুকে পাল তুলে
স্বপ্নের দেশে যাই ছুটি।

দুরন্ত ইচ্ছে গুলো রেখেছি বেধে।
চক্ষুহীন ঘুণে ধরা সমাজে নিষেধের বেড়া
ভেঙ্গে পারে না মেলতে ডানা দূর নীলিমায়,
শুধু গুমরে ফিরে অন্ধ নীল কারাগারে।

তাই ইচ্ছে করে শিকল ভেঙ্গে
হৃদয়হীন সমাজের অন্ধ শাসন ভেঙ্গে
নজরুলের বিদ্রোহী আগুন জ্বেলে
ছিনিয়ে আনি প্রিয়তমার
মেহেদী রাঙ্গা হাত দুটি।।