মুরুব্বী এর সকল পোস্ট

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter

শব্দনীড় ব্লগে ঠিক এই মূহুর্তে কতজন উপস্থিত জানতে চাই …

শব্দনীড় ব্লগে ঠিক এই মূহুর্তে কতজন উপস্থিত বলুন তো !! অনেকদিন শব্দনীড়ে ব্লগাদের উপস্থিতির এমন স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা যায় নি। এসে ফিরে যান।

সেই কাকভোর থেকে বিরামহীন বৃষ্টি আর সাপ্তাহিক ছুটির এই অবসরে আমার মতো ঘরে বাইরে থেকে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী শব্দনীড় এর সঙ্গে আছেন দেখে ভালো লাগছে। ঠিক এই অনুভূতি পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।

প্রশ্ন হচ্ছে উপস্থিতির যেমন সংখ্যা দেখতে পাচ্ছি সেটা কি কেবল আমিই দেখতে পাচ্ছি নাকি আপনারাও পাচ্ছেন জানতে চাই। জানতে পেলে ভালো লাগবে।

যদি থাকেন আপনার একটি মন্তব্য চাই।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৯

শ্যামলিমায় মালিনী কার হাতে রয়;
প্রার্থনায় স্মরি শিল্পভেদী কুরুশ-কাঁটা না যেন তার হয়।

সময় সময়ের বন্ধু … সময়ও সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বি।

পাহাড় সমতলের উজান ভেঙ্গে এগিয়ে চলা
আর ঘর-বৃত্তের ছন্ন ছাউনিতে ফিরে যাওয়া
অঙ্কের শূন্য; অঙ্কের সূত্র-শূন্যেই পরিশেষ।

সময় … আমি আমাকে খুঁজে পাই।
আমি আমার কথা গুলোন খুঁজে পাই।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৮

লোকায়ত লৌকিকে কখনো সখনো এভাবেই নৈঃশব্দ জেগে থাকে;
নন্দিত নরকের মলিন এই সপ্তর্ষির উত্তর চরাচর।

কখনো এতো দূরে যাও; যেখানে কারো ডাক না পৌঁছে।
আমি আমিই। আমরা আমি নই !!

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৭

কত পরাজয়ের চিহ্ন তোমার চোখেমুখে কত সংলাপ;
নিজেকে যতই লুকোও তবু দেখি।

আজন্মের সেই অনাদি কাল থেকে দেখে আসি।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৬

রাতভর বা গোধূলির এই চৈতালী আলোয়;
এলোমেলো বিভ্রম বিস্তীর্ণের পথও আনন্দের।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৫

ঘুমন্ত মানুষ শিশুর মতো পাপহীন জ্যোতির্ময়;
দেহ সটান চোখ বুঁজে থাকা কারো ঘুম-মুখ দেখলে আশাহত হই না।

স্বপ্নঘেরা উচ্ছল স্বপ্নবাজদের আদলের প্রচ্ছায়ায় আশাবাদী হই
এখানে আমাদের স্বপ্নডোর … ভালোবাসার বিজলি চমক।
বেঁচে থাকার শর্তহীন বীজমন্ত্র।
জীবন !! সে তো একটাই।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৪

জল নেমে গেলে ডাঙ্গা ধরে রাখে খড়কুটো অথবা বালুকায় বেলা …
নদীর প্রবাহ পলি হয়তো জন্মের বীজ … নয় অলঙ্কার- অনড় শামুক।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫৩

গতিহীন দুর্গতি সবাইকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়; একাকী নিঃস্ব করে দেয়;
প্রত্যেকেই ভাঙ্গতে চাই নদীর মত –
আমরা প্রত্যেকেই ভাঙ্গতে চাই; আমাদের মত …

ভেঙে দিই থামিয়ে দিই সম্পর্কগুলোর অচেনা
গতি উপচে পড়ার গতি নৈঃশব্দের গতি।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

শব্দনীড়ের ব্যয় নির্বাহে স্পন্সর হয়ে আপনিও পাশে আসুন

সৌহার্দ্য সম্প্রীতিতে মুখরিত থাক শব্দনীড়। থাকুক সর্বজনীনতা; থাক মুক্ত বাক্ স্বাধীনতার অনন্য একটি মঞ্চ যেখানে অনালোকিত নক্ষত্ররা হাতে হাতে রেখে তৈরী করবে ছায়াপথ … এই আশা আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে শব্দনীড়ের পথচলা।

শব্দনীড় আপনার পছন্দের ব্লগ নয় কেনো !! ব্লগকে সময় দিতে আপনার অনিচ্ছা বা আন্তরিকতার কেন অভাবে হচ্ছে এটা জানা উচিত। ব্লগে উপস্থিত আছেন এবং নিজের ব্লগ প্রকাশ রেখে অন্যের ব্লগের প্রতি উৎসাহের অনীহা, এগিয়ে না এসে ব্লগকে বরং নিষ্প্রাণ এবং অতিথির তালিকায় নিজেকে আড়াল রেখে ব্লগের কার্যক্রমের উপর নজর রাখায় মূলত ব্লগের লাভ অথবা ক্ষতি কতটুকু হচ্ছে; গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিতে ব্লগারদের মতামত নেয়া সমিচীন মনে করে শব্দনীড়।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো শব্দনীড় কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। কারু একক ব্যক্তিগত অর্থে শব্দনীড়ের নির্বাহ ব্যয়ভার বহন করা হয় না। বিবিধ ধারায় উপধারা প্রসঙ্গ থাকার পরও আলোচনা সমালোচনা সমকালীন প্রতিবেদন গল্প প্রবন্ধ অথবা সাহিত্যের অন্যান্য উপকরণ না এসে কেন একটি ব্লগ দিনের পরদিন শুধুমাত্র কবিতা নির্ভরই উঠবে জানা প্রয়োজন। খোলামেলা আলোচনা চাই।

শব্দনীড়ে কোন পেইড ব্লগার নেই। সঞ্চালকের কোন বেতন নেই।

সুতরাং একটি ব্লগ বোরিং হয়ে গেলে তাকে চালু রাখার কোন প্রয়োজন আছে মনে করার যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। প্রাসঙ্গিক কারণে প্রশ্ন গুলোর উত্তরের পাশাপাশি আমাদের মূলত কি করণীয় তা জানা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আশু প্রয়োজন। কেননা নতুন করে ব্লগ চালু হওয়ার পর চলতি শব্দনীড় এর সার্ভার সোর্স এবং আর্থিক প্রয়োজন কতটুকু এটা বুঝতে চাওয়ার জন্য অনতিপূর্বে সময় চাওয়া হয়েছিলো। সূত্র এখানে। বিজ্ঞাপন হীন একটি ব্লগ ঐচ্ছিক সুধীজনের অপর্যাপ্ত স্পনসরে আদৌ চালানো সম্ভব কিনা সেটাও পরিমাপ করার সময় চলে এসেছে।

আর্থিক অনুদান বললে “নিয়মিত ভিক্ষা বা মানসিক অত্যাচার” মনে করেন কেউ কেউ। ইতিমধ্যে অনেকে এই অস্বস্তির কারণ দেখিয়ে শব্দনীড়কে ভালোবেসে এড়িয়ে চলার পথ বেছে নিয়েছেন। শব্দটিতে তাই নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমরা চাই স্পনসর। আমরা বুঝতে চাই কে এবং কয়জন শব্দনীড়কে নিজের ব্লগ মনে করবেন। কেননা শব্দনীড়কে দূর্যোগহীন বাঁচিয়ে রাখতে আপনাদের সঙ্গ এবং স্পনসরশিপ দুটোই প্রয়োজন। প্রয়োজন সহযোগিতা এবং নির্মোহ ভালোবাসা।

আপনার স্পনসর ছোট হলেও ক্ষতি নেই। শব্দনীড় এর হিসাব খাতে স্বনাম প্রকাশ অথবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবেও আপনি থাকতে পারেন শব্দনীড়ের পাশে। আপনি হবেন শব্দনীড় অংশ এবং অঙ্গ। স্পনসরদের নিয়ে শব্দনীড় পরিচালনা কমিটি তৈরী করা হবে। প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকবে অটুট।

অনুগ্রহ করে আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তাবনা এবং মতামত রাখুন।

* আমরা কি ব্লগকে সরব রাখতে পারি কি না ?
* শব্দনীড়ে ব্লগিং করতে আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ?
* শব্দনীড় পরিচালনা কমিটিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান কিনা ?

আমরা চাই একক নয়; দশ হাতে একশো জনের ঘরে শব্দনীড়কে পৌঁছে দিতে। শব্দনীড় থাক সর্বজনীন বাক্ স্বাধীনতায় সকলের পাশে। শুভ ব্লগিং। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫২

অনেক হল মোমবাতি প্রজ্বলন, অনেক বেলুন উড়ে গেছে দূরে নিশানাহীন আর নয় দ্রোহে মাখন লেপন। এবার সংগ্রামে শুরু হোক কঠোরতার দিন। দূর হোক নিকষ অন্ধকারের রাজনীতি, বন্ধ হোক প্রহসনের বুলি আশ্বাস। প্রজ্ব্বলিত হোক সত্যের মশাল। নয় দাবি নয় অপেক্ষার চাদর বোনা, অনেক হল মোমবাতি প্রজ্বলনায়ের দাবির মিছিলে। এবার রুখো।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৫১

জলবিম্ব ভেসে ওঠে, দুলে যায় দলে দলে অনেক চিত্রপট –
দেখি আমার অবয়ব? ঠিক আমি নই…আমার মত দু’পেয়ে মানুষ;
তবু সে যে আমার বাংলাদেশ। নিত্য অহংকারে আমারই বাংলাদেশ।

__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ঈদ মোবারক

ঈদ আনন্দের দিন, খুশির দিন, উৎসবের দিন। ঈদ আমাদের জন্য বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ, খুশির বারতা। ঈদের গুরুত্ব আমাদের কাছে যেমন ধর্মীয় তেমনি সামাজিক। প্রতি বছরই ঈদ আসে নতুনের মত। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশীর সওগাত পবিত্র ঈদুল ফিতর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল তার কবিতায় লিখেছেন, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। আপনাকে তুই বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’ আনন্দের সওগাত নিয়ে আসা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা ঈদ উৎসবে মিলিত হই সকল ভেদাভেদ ভুলে। চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়ে এক কাতারে সামিল হই। বুঝি মানুষ মানুষের জন্য।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শব্দনীড় এ আমার সকল সহব্লগার, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। যে যেখানে আছেন সবাই ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ঈদ মোবারক।

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি :: কবি নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ। জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫ ইং আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণা বাংলাদেশ। বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদেরও একজন তিনি। মাত্র ৪ বছর বয়সে মা বীনাপনিকে হারান তিনি ৷ মা মারা যাবার পর তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন।

শিক্ষাজীবন বারহাট্টা স্কুলে ভর্তি হন শুরুতে। স্কুলের পুরো নাম ছিলো করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউট। দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান ১৯৬২ সালে। মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল স্কুল থেকে। বাবা তাঁর মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- “কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’। মেট্রিকের পর আই.এস.সি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ সহ পড়তে থাকেন এখানে। নেত্রকোণায় ফিরে এসে নির্মলেন্দু গুণ আবার ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও তাঁর কবি বন্ধুদের কাছে আসার সুযোগ পান। নেত্রকোণার সুন্দর সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে তাঁর দিন ভালোই কাটতে থাকে৷ এক সময় এসে যায় আই.এস.সি পরীক্ষা। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে আই.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের। পরবর্তীতে বাবা চাইতেন ডাক্তারি পড়া কিন্তু তিনি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ ৷ হঠাত্‍ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায়৷ দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে আসেন গ্রামে। ঢাকার অবস্থার উন্নতি হলে ফিরে গিয়ে দেখেন তাঁর নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া। আর ভর্তি হওয়া হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিরে আসেন গ্রামে। আই.এস.সি-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। মাসে ৪৫ টাকা, বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা। তখনকার দিনে অনেক টাকা। ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে বি.এ. পাশ করেন তিনি ( যদিও বি.এ. সার্টিফিকেটটি তিনি তোলেননি। ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

কর্মজীবন এবং সাহিত্য ধারা। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন। সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন। তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে। কবিতার পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো – “অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্য রচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।” তথ্য : অন্তর্জাল।

পুরস্কার প্রাপ্তি : বাংলা একাডেমী পদক (১৯৮২) একুশে পদক (২০০১) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬) সহ অসংখ্য পুরস্কারে ঋদ্ধ হয়েছেন কবি।
পেয়েছেন খ্যাতি যশ সম্মান ভালোবাসা।

অসংখ্য সাহিত্য কবিতার পাশাপাশি বহুল আবৃত্ত কবিতা সমূহের মধ্যে – হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) – ইত্যাদি অন্যতম। প্রিয় কবির জন্মদিনে জানাই জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কবি নির্মলেন্দু গুণ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে।

হুলিয়া

আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে।

কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিৎকার করে উঠেছিল; – আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন- কিন্তু চিনতে পারলেন না।

বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি।
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি।

আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া।
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে।

পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লকলকে জিভ দেখালো।
স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি।
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল।

হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
এক সময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু’জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়।
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম।
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে।

পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে –
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,— ‘মা’।
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো।
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম।

মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু’ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাঁচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি।

মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি।
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে।
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বৃষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য।
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস।
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবরঃ
– আমাদের ভবিষ্যত কী?
– আইয়ুব খান এখন কোথায়?
– শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
– আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?

আমি কিছুই বলবো না।
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্যতকে চেয়ে চেয়ে দেখবো।
উৎকণ্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিৎকার করে
কণ্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
‘আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না।’

ব্লগবুক অণুলিখন ৫০

ফিরে যাওয়া সেই জীর্ণ দ্রাঘিমায় …
যেখানে সেখানে বর্ণহীন জীবনও রঙিন প্রজাপতি।


.
__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।

ব্লগবুক অণুলিখন ৪৯

‘কঠিন বেদনার তাপস দোঁহে যাও চিরবিরহের সাধনায়।
…. জয়ী হও অন্তরবিদ্রোহে।’

কঠিন বেদনার তাপস দোঁহে যাও চিরবিরহের সাধনায়।
ফিরো না, ফিরো না, ভুলো না মোহে।
গভীর বিষাদের শান্তি পাও হৃদয়ে,
জয়ী হও অন্তরবিদ্রোহে।

যাক পিয়াসা, ঘুচুক দুরাশা, যাক মিলায়ে কামনাকুয়াশা।
স্বপ্ন-আবেশ-বিহীন পথে যাও বাঁধনহারা
তাপবিহীন মধুর স্মৃতি নীরবে বহে।
__________________

প্রেম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।


.
__________________________
___ রেটিং বাটনে ক্লিক দিতে পরিশ্রম কম
রেটিং চর্চা অব্যাহত রাখি আসুন। ধন্যবাদ।