সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

অতি খুশির ভারে

40d21

হেমন্ত যেই প্রতি বছর
কৃষাণেরি দ্বারে,
মুখে ফোটে হাসির ঝলক
অতি খুশির ভারে।

ছাতিম ফুলের গন্ধে সবে
উদাস হয়ে পড়ে,
নবান্নেরি উৎসব তখন
সবার ঘরে ঘরে।

সোনার ধানে ভরে গোলা
হেমন্তের এ খেলা,
গ্রামেগঞ্জে মেলার হিড়িক
বসে রাত্রি বেলা।

পিঠাপুলি ফিরনী পায়েস
খাওয়া চলে গাঁয়ে,
শিউলি ঝরা বকুল তলে
মানুষ জড়ো ছায়ে।

শশী হাসে রাতের বেলা
ছড়ায় শুভ্র আলো,
গাঁয়ে তখন স্বস্তির হাওয়া
মনটা রহে ভালো।

খড়ির ভাগ্য

s1

বাড়িতে আগে দেখেনি তাকে,
সে কেগো মা, জিজ্ঞাসি মাকে।
এ কি, মানুষের নাম, ‘খড়ি’ ?
তোর কি তাতে, জ্বালায় মরি।

মা যে বিরক্ত, করি প্রস্থান,
ভাবি, আমারই নেই জ্ঞান।
চাঁদ দেখি, বসি জানালেতে,
মা পাঠালে দুধ, খড়ির হাতে।

খাবে এ তুমি, বলি আমি হেসে,
মুখখানি তার. হলো ফ্যাকাসে।
জোর করে যে খাইয়েছি কিছু,
খড়ি তাকায়, বার বার পিছু।

পড়া করে কচিরা, দিই উঁকি,
দিদি করেন যে তদারকি;
খড়িও আছে বসি, ঐ কোণে,
কার কি লাগে, ওই তো আনে।

খড়িও পড়ুক , সেও তো কচি,
দিদির সে আঁখি, পালালে বাঁচি।
পুতুলের বিয়ে, আজ বিকেলে,
নিমন্ত্রণ পেয়ে, এলাম চলে।

খড়ি নেই, খুঁজে পাই শেষে,
রান্না ঘরে বসে, মা’র রোষে।
খড়িকে ছাড় মা, আজ বিয়ে,
মা’র শান্তি,মোর কান মলে।

পরিবেশ যেন হলো থমথম,
খড়ির হাসি, দেখি এই প্রথম;
খুকু বলে, মোর কানে কানে.
বক মোরে, দাদুকে না কেনে ?

বিত্তের এক গাড়ির কত যে সেবা,
কচি সোনা খড়ির মূল্য দিল কেবা।
এক রত্তি অবুঝ সে কোমল হৃদয়ে
না জানি কত ব্যথা আছে লুকিয়ে।

করোনাকালের কবিতা

তিন। হয়ত: প্রকৃতি সবই জানে

হয়ত: প্রকৃতি সবই জানে
আমরা সে যান্ত্রিক জীবনে
নেই আর সহমর্মিতা মননে
স্নেহ মমতা নেই প্রিয়জনে
ব্যস্ত কখন পৌঁছব গগনে।

হয়ত: প্রকৃতি সবই জানে
দৌড়াচ্ছি সুখের অন্বেষণে
প্রিয়জন একাকী রয় ঘরে
নিঃসঙ্গ ভেবে কি কষ্ট মনে
সাথী দীর্ঘশ্বাস জল নয়নে।

হয়ত: প্রকৃতি সবই জানে
করোনার দাপটে এ ক্ষণে
মানুষ ভয়ে কোয়ারেন্টিনে
জন্ম নিবে মায়া প্রিয়জনে
তাকাবে বাবামা পরিজনে।

নয়ত বসুধা মিছে

নয়ত বসুধা মিছে

কে বলেছে তোমায় তুমি আমার পর
ছড়াও সুগন্ধ সৌরভ, হই উন্মাদ;
কখন হারিয়ে যাও, মনে লাগে ডর
এতোই সুন্দর যে তুমি,হারে ঐ চাঁদ।
এ হৃদয়ে তুমি যেন সে এক পৃথিবী
দিবানিশি যারে আমি বারে বারে খুঁজি;
সবি ম্লান,উজ্জ্বল শুধু তোমার ছবি
অন্তরে আছো, প্রেমফুলে অপ্সরা সাজি।

না পেলে ভালোবাসা অনুভবি শূন্যতা
হৃদয়খানি ভেঙ্গে হয় তবে চৌঁচির;
নীরবতায় তোমার, পাই সে বারতা
যেন এ প্রেম তোমার, কত সুগভীর।
পড়ে আছি তাই ভালোবাসারই পিছে
পরই আপন, নয়ত বসুধা মিছে।

চতুর্দশপদী কবিতা

জলে পুষ্পডালা

70404195305

তরল তিমিরে যেন প্লাবিত পৃথিবী
রোদ-স্নানে ফিরে পায় তার সজীবতা;
পাখিদের কলরবে, উচ্ছ্বসিত সবি
মৃদু স্নিগ্ধ সমীরণে নাচে তরুলতা।
উষ্ণ দুপুরে মাটির বুকখানি যেন
হয়ে উঠে ক্লান্ত, হয় অতীব তৃষ্ণার্ত;
পশুপাখি মানুষের কি কষ্ট কখনো
বিকেলের মর্তখানি তবে বড় শান্ত।

প্রকৃতির প্রতিরূপ মানব জীবনে
শিশুকাল কাটে যেন আঁধার বিবরে;
ঝলমলে উদ্ভাসন কৈশোর যৌবনে
তুষ্টি মিলে ঐ কষ্টের হাতখানি ধরে।
বিকেলটা তবে বাড়ি ফিরবার পালা
চিরশান্তির বন্যার জলে পুষ্পডালা।

.
চতুর্দশপদী কবিতা

কেটে যাবে বিপদ

returning

কেটে যাবে বিপদ খুব শীঘঘির
থাকি না হয় কিছুদিন ঘরে;
কেহ যদি যাও, যেথা তবে ভিড়
সংক্রমণ যেন ততটা বাড়ে।

নিত্যই চলছে করোনার কামান
শঙ্কিত আমরা বিশ্ববাসী;
অস্ত্র এখন থাকি সবাই সাবধান
তবেই মুখে ফুটবে হাসি।

দৃশ্যত: সকলে দূরে দূরে থাকি
রহিব হৃদয়ের কাছাকাছি;
দেশটাকে যেন খুব ভালো রাখি
আমরা, যে যেথায় আছি।

কত কষ্ট খেটে খাওয়া মানুষের
ঘরে কিছু নেই, হাহাকার;
এক নিদারুণ বাস্তবতা সময়ের
এহি ক্ষণ পাশে দাঁড়াবার।

খণ্ড কবিতা – ২

resde

যে হৃদয় বেদনায় ভরা
খুশিরা যেথা তবে অনুপস্থিত;
মুহূর্তগুলোও অগ্নি ঝরা
সেথা গড়ে অসন্তোষের ভিত।

জগতে অভাবই অভাব
আরো বেশি ভালোরই প্রয়াস;
চাই আরো চাই স্বভাব
বিকশিত চায় আরো বিকাশ।

মিলবে পথ বাঁচবে দেশ

কিযে একটা করোনা এলো বিশ্ব মাঝে
ঝরেই যাচ্ছে প্রাণ সুবাস;
ফুল সবই ফুটার আগে নেতিয়ে পড়ে
কেমন খেলা এ কি সর্বনাশ।

ধরনী বুকে এলো দুর্যোগ হয়নি ভোর
তারই আগে সন্ধা নামলো;
এলো না বর্ষা অঝোর বৃষ্টি মেঘ গর্জন
খাল বিলও শুকিয়ে গেলো।

ডাক্তার নার্স, যাদের ধর্ম সতত সেবা
এখন তবে তারাই কাহিল;
কোথায় যাবে আম জনতা এ দুর্দিনে
হচ্ছে বড়ো মৃত্যুর মিছিল।

কত নামই যাচ্ছে মুছে অতল গভীরে
চলে যাচ্ছে, কত প্রিয়জন;
সময় কত অতীত হলে, মিলবে পথ
বাঁচবে দেশ হাসবে জনগণ।

বাংলার সে একাত্তরে যখন মুক্তিযুদ্ধ
কত উড়ত বোমারু বিমান;
কি মসজিদ বা মন্দিরে মানুষ যেতো
কে যায় আজ সর্বত্র বিরান।

ড্যাডি

plath-bioa

Daddy: অনুবাদ কবিতা (প্রথম অংশ)

তিরিশটি বছর যেন
পদ প্রদীপ হয়ে, করেছি বসবাস;
ড্যাডি, তুমি কখনো
কায়ক্লেশে, তবু কত শক্তি শ্বাস।

যদিও হন্তার কারণ
ছিলে ঐ ঈশ্বর প্রদত্ত মর্মর ভাস্কর;
সিলমোহরের মতন
যেন বিপদে পাশে, নখের উপর।

তুমি ছিলে যেন প্রধান
উদ্ভট আটলান্টিক মহা সাগরের;
দিতে যেথা সবুজ ঘ্রাণ
খুঁজি সততই তুমে পুনরুদ্ধারের।

পোলীয় জার্মান যুদ্ধে
যেথায় শুধু অবশিষ্ট জঞ্জাল স্তূপ;
মিশে তুমি রক্ত দাগে.
জিহ্বা চোয়ালে আমার, হই চুপ।

তীঁরের মত হৃদয়ে বিঁধে,
মনে প্রাণে ছিলে তুমি, জার্মানী;
অথচ আমার মন কাঁদে
এতটুকু কই মুখে, অশ্লীল ধ্বনি।

যেন এক ইঞ্জিন চালিত
টাইরল ভিয়েনার বরফ ‘পরে;
কথা বলি ঐ ইহূদীর মত
মিলছিল পূর্ব পুরুষে যাযাবরে।

.
মূল: Sylvia Plath

ড্যাডি

plath-bio

Daddy: অনুবাদ কবিতা
(দ্বিতীয় অংশ)

যখন রাগে হারাতে ধৈর্য
আর মোচ সতত কি ঝরঝরে;
নীল চোখে লাগতো আর্য্য
হতেম কম্পিত, শত ভয় ডরে।

তুমি ছিলে সূর্য নও ঈশ্বর
ফ্যাসিবাদী,তবে নারীর পছন্দ;
নির্দয় ও মুখখানি কঠোর
পাশবিকতায়, তুমি ছিলে অন্ধ।

ড্যাডি, ছবি টানা দেয়ালে
ফাঁটা চিবুক,শুনি তবু পদপাত;
যেন তুমি দুর্ভাগাদের দলে
খন্ডিত এ হৃদয়, কত রক্তপাত।

আমার বয়স হয়ত দশ
তোমাকে করে তারা,সমাহিত;
মরিতে চাহি যখন বিশ
পেতে চাহি হোক সে হাড় যত।

আমি হলেম যেন বস্তা বন্দী
হই একদম তোমারই প্রতিরূপ;
চাহি সবে ভালোবাসায় বাঁধি
চিৎকারে নাকি শুধু সর্প ছোপ।

এ হাতে যদি একজন নিধন
বলে বেড়ায়,রক্তপেরা দুইজন;
কিভাবে সহি সেই অপমান
সাত বর্ষ জুড়ে আমার রক্তপান।

তোমার কালো হৃদয়ের দায়
গ্রামবাসীর আরো অসন্তোষ রাজ
ব্যঙ নৃত্য, কি পদাঘাত হায়
আমি নাকি তুমি, সন্তান জারজ।

.
মূল: Sylvia Plath

তুমি হে প্রভু

ttyui

শেষ বিচারের মালিক তুমি হে প্রভু
এ ব্রহ্মাণ্ডের কোথায় কি, জ্ঞাত সবই;
তুমিই তো প্রেমময়ী, স্নেহময়ী বিভু
গুণগান উপাসনা যত সেও তোমারি।

পশুপাখি মানুষ কিংবা কীট পতঙ্গ
মাগে কৃপা, তুমিই শক্তিমান জগতে ;
চায় মমতা, সহায়তা, অনন্ত সঙ্গ
ব্যাকুল সবাই তোমার করুণা পেতে।

গর্হিত কুকর্মে যারা চলছে বিপথে
অশিষ্ট অনাচার থেকে রাখিও দূরে;
চালিয়ো মোদের সতত সরল পথে
তব প্রিয়জনের পথ আঁকড়ে ধরে।

তাঁরাই তো ভুবনের সে পদ্ম কমল
আলোর চ্ছটা, এ পৃথিবীর ঝলমল।

.
সূরা ফাতেহা অনুকরণে

লিমেরিক

11713_n

কই আর থামে
আতঙ্ক আর কান্না জীবনে কই আর থামে আজকাল
ঐ হিমালয় কি বিশাল দৃঢ় যেন হাসি খুশিতে চিরকাল;
বুকের ধন পাথর তবুও কাঁদে
ক্লান্তি অশান্তি যত উতলা নদে
পাথরেও ফুটে ফুল নদীও পায় শেষে সমুদ্রের নাগাল।

এই তো জীবন

জীবনের স্রোত বহে নদীর মতন
কলকল তানে তবে গন্তব্য অজানা;
স্বপন ডানায় ঘুরে জগত কানন
সুখের আশায় সহে শত বিড়ম্বনা।
তমস বিবরে খুঁজে বেড়ায় সকাল
অভাব যন্ত্রণা সদা খেলে লুকোচুরি;
ব্যর্থতার উগ্র নৃত্যে হাসির আকাল
হৃদয়ের অতলান্তে কান্না আহাজারি।

সোনালি প্রত্যুষ দেয় যেন হাতছানি
ছুটছে জীবন, মিলে যদি সুখখান;
প্রাপ্তির খুশীতে যায় ভুলে সব গ্লানি
পতনে দলনে প্রাণ যত হোক ম্লান।
অবিরাম চলা তবু, এই তো জীবন
চাওয়া পাওয়া সেতো রয় অনুক্ষণ।

.
চতুর্দশপদী কবিতা
বিন্যাস: ৮ + ৬।
অন্ত্যমিল: কখকখ, গঘগঘ, ঙচঙচ, ছছ

অ‍্যাকুরিয়াম

এই পৃথিবীটা আসলে একটি ছোট্ট
সে অ‍্যাকুরিয়ামের মতন;
আমরা রঙিন ক্ষুদ্র মাছ খুবই তৃপ্ত
পাচ্ছি যে সহস্র যতন।

যেমন মৃত্তিকা করে সকল প্রাণীর
লালন পালন ভরণ পোষণ;
রঙিন মৎস্যরাও তো হেসে খেলে
রসে মজায় কাটায় জীবন।

সময়ে যদি ভাঙ্গে সব, হয় চুরমার
ভাঙ্গে কাঁচের দেয়াল খানি;
মৃত্যু-প্লাবনে জলসব শুকিয়ে যাবে
মিটে যাবে সব দুঃখ গ্লানি।

এমনই অপূর্ণ জীবন মানুষেরও
সততই যেন এই ভুবনে;
মুহূর্তেই নিক্ষিপ্ত, আবর্জনা স্তূপে
নিস্তেজ হয় হৃদয় মনে।

যত ক্ষণ তবে থাকবে প্রবাহমান
অ‍্যাকুরিয়ামের সে জলধারা;
হয়ত জীবনও কাটবে খুব ভালো
হাসি, খুশি ও পুলক ভরা।

মানুষ আর গিরগিটি

ttyuio

আগে শুনতাম গিরগিটি তার
রঙ বদলায় ভাই,
মানব মাঝেও কত রঙ আছে
সদাই পাল্টে তাই।

ক্ষমতা পেলেই হাছুইন্যা সে
হাসেন সাহেব হয়,
পাড়ার লোকেরা পাত্তা দিত না
এখন পায় যে ভয়।

স্বার্থের লাগি কী মধুর কথা
সাজে অতিভালো নর,
যে মানুষটাকে ডাকু জানতাম
আজ যে সে হরিহর।

এরি নাম ধরা রঙের বাহার
পাল্টায় সারা ক্ষণ,
যেনো ভিক্ষুক হাতটি বাড়ায়
চায় আরো বেশি ধন।

জানি না হায় রে মানুষ জগতে
আবার মহান হবে ?
স্বার্থ-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে কবে
দুখ শোকে পাশে রবে ?

.
মাত্রাবিন্যাস : মাত্রাবৃত্ত : ৬+৬/৬+২