সৌমিত্র চক্রবর্তী এর সকল পোস্ট

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

দহন ২৭ এবং ২৮

unti

দহন ২৭

মাঝেমাঝে দুঃখ আসে
মাঝেমাঝে সুখ,
কখনো অল পারফেক্ট
কখনো ভুলচুক।
***

দহন ২৮

এভাবেই একটা করে নিস্পত্র দিন কাটে
পাগল নুড়ি ছিটকে যায় পায়ের চলন্ত ঘাতে
পাগলের কোনো বিশেষ দিন থাকে না
শুধুই ফ্যালফ্যাল চাউনিতে মেশে
গত জন্মের না পাওয়া চাওয়ার গুচ্ছ।
***

দহন ২৫ এবং ২৬

unti

দহন ২৫

কাছেরা দূরে গেল
দূরেরা কাছে,
রাস্তা বদলে যায়
আমি তো একই আছি।

***

দহন ২৬

বোতল গেলাশ সামনে আছে
ঢালছি কিন্তু খাচ্ছি না।
মনের অসুখ গাছ হয়েছে
জল না দিলেও কমছে না।।
***

দহন ২৩ এবং ২৪

untitle-1-1-1

দহন ২৩

বছর পকেটে পুরে এগোয় পাগল
ঝাঁকড়া চুলে লুটোপুটি খায়
আদিম আকাশ
তৈরী করা নকল হাসি কিম্বা
বাকি সব বকোয়াস
***

দহন ২৪

কোথায় যেন একফোঁটা রক্ত ঝরলো…

কেউ আহা বললো কি! কিম্বা
কোনো উৎসুক চোখ জানলায়…

কুয়াশায় শুধু বেদনার্ত মুখের মিছিল।
***

গোলবাড়ির কষা মাংস !!

22401735

উপকরন :~
১. ১ কেজি খাসি/পাঠা-র মাংস
২. ২ টো বড় পেয়াজ সরু করে কুচানো
৩. ২ বড় চামচ রসুন বাটা
৪. ২ বড় চামচ আদা বাটা
৫. ১ বড় চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
৬. ৩ বড় চামচ জিরে গুড়ো
৭. ২ বড় চামচ লঙ্কা গুড়ো
৮. ৩ বড় চামচ দই ভাল করে ফেটানো
৯. নুন স্বাদমত

১০. ২/৩ এলাচ
১১. দারচিনী ১ টুকরো
১২. ৩/৪ লবঙ্গ
১৩. ২/৩ শুকনো লঙ্কা
১৪. ২ টো তেজপাতা
১৫. ১ কাপ সরষের তেল
১৬. ১ কাপ পাকা পেপে বাটা
১৭. ১ ছোট চামচ পাঁচফোড়ন

প্রণালী :~
মাটন টা পাকা পেপে বাটা দিয়ে ৪-৬ ঘণ্টা ম্যারিনেট করতে হবে।

একটা বড় কড়াইতে সরষের তেল দিয়ে গরম হলে তাতে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, পাঁচফোড়ন, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি দিতে হবে। সুন্দর গন্ধ বেরলে পেঁয়াজ কুচানো টা দিতে হবে। পেয়াজ টা সোনালী রঙ ধরলে তাতে মাংস টা দিয়ে দিতে হবে। সাথে নুন দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট রান্না করার পর মাংস টা রঙ পরিবর্তন হয়ে কালচে হতে শুরু করবে। মাংস টাকে কিন্তু সমানে নেড়ে যেতে হবে যেন তলায় বসে না যায়।

তারপর ১ কাপ গরম জল দিতে হবে। আর পাত্র টা ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। তারপর গ্যাস একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। এভাবে ২ ঘণ্টা রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে নেড়ে দিতে হবে। একটা পাত্রতে আদাবাটা, রসুনবাটা, লঙ্কাবাটা, জিরে গুড়ো একসাথে মেশাতে হবে। অন্য একটা পাত্রে ২ চামচ সরষের তেল গরম করে তাতে ওই মিক্সচার টা দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। তারপর সেটা মাংসের ওপর ঢেলে দিয়ে ভাল করে নেড়ে দিতে হবে।

তারপর তাতে লংকা গুড়ো টা আর দই টা মেশাতে হবে।
আর আধঘণ্টা রান্না করতে হবে।
তারপর মাংস থেকে তেল ছাড়তে শুরু করবে।
তারপর মাংসের ওপর গরম মসলা ছড়িয়ে দিয়ে গ্যাস অফ করে দিতে হবে।
এটা রুমালি রুটি অথবা পরটার সাথে খুব ভাল লাগবে।

দহন ২১ এবং ২২

untitle-1-1

দহন ২১

যারা মেরেছিল তারা বিলীন হয়েছে
পেছনে রেখেছে কলঙ্ক দাগ,
যারা মরেছিল আজ অক্ষয়বট
মিলিয়ে গিয়েছে দুঃখ ও রাগ।
***

দহন ২২

ভালোবাসি বললেই বেড়ার গায়ে
ফোটা ফুল নিষাদ রক্তচোখ
ভালোবাসি ভাবলেই সাধাসিধে
ফ্ল্যাটও গুয়ান্তেনামোর টর্চার সেল।
***

দহন ১৯ এবং ২০

untitle-1

দহন ১৯

প্রশস্ত রাস্তা তৈরী করিনি আমার একটেরে ঘরের সামনে
মুখের ওপরে বহুবার বন্ধ করেছি ভারী সেগুন দরজা,তবুও
স্খলনের অসতর্ক সেকেন্ডে জানলার রন্ধ্রপথে
ঢুকে রেখে গেছে উন্মত্ত পায়ের ছাপ।

***

দহন ২০

একটা রঙিন
একটা সাদাকালো,
একটা কাটায়
অন্ধকারে
একটা থাকে ভালো।

দহন ১৭ এবং ১৮

untitle

দহন ১৭

প্রাত্যহিকী ক্রমেই অস্পষ্ট / হাতের রুক্ষ তালু / দূর প্রান্তিক খর্জূর বৃক্ষ / হৃদয়ের নিস্তব্ধ অতলে / বসতবাড়ির নিভৃত অন্দরমহল / জীবন আর মুখ / মুখ ও জীবন / এক সময়ে আত্মবিলোপ / পৃথিবী ঘুরে যায় শনশন্ …

***

দহন ১৮

লাম্পট্য নির্মাণ করে অস্থায়ী মায়ার নদী
সঙ্গম ও বিচ্ছেদের মাঝে খরচ হয় খুচরো সেকেন্ড…

***

দহন ১৫ এবং ১৬

untitle

দহন ১৫

কবির চোখে জল এনেছ
সোনাঝরা গাছের নীচে
ফেলে এসেছ পিস পিস কবর
তৈরী থেকো রাত সংকল্পবদ্ধ হলে
সরল মুখোশের আড়াল ছিঁড়ে
অপেক্ষায় আছে ইস্পাতী গিলোটিন…

***

দহন ১৬

কিভাবে মুখ পাথর হয়
চোখের জল ক্যামোফ্লেজ!

সব হাসি উজ্জ্বল
সফেদ বিড়ম্বনা…!

***

দহন ১৩ এবং ১৪

kabitasou

দহন ১৩

যতদিন পাগল হবোনা
প্রলাপ বকেই যাব,
পাগল হলেই
পাতাঝরা নির্বাক গাছ।

***

দহন ১৪

পাগল হতে হতে থেমে গেলে
কার্বাইনের গুলিও হাড় মাংসে চুমু খেতে খেতে ফিরে যায়
পিঠে ঠান্ডার খোঁচাতেই বোঝা যায় আগুন পালিয়েছে চুপিচুপি।

***

দহন ১১ এবং ১২

kabitasou

তবু দুঃখ বদলে যায় শোকে
দশমিকের ভগ্নাংশে জ্বলে নরম পালক

***

দহন ১২

জানা আছে মনখারাপী বয়ঃসীমা?
কতখানি কাটলে তবে রক্ত ঝরায়ে উদাসী দিন?
গ্রীনউইচের লম্বা কাঁটা
খোঁচায় কেবল বিষাক্ত ক্ষণ,
কত মৃত্যু দেখলে খুশী
দ্বিচারিণী স্বপ্নকন্যা!

***

জলকে চল

IM202

জল কে বলি চল
চল জলকে চল
ওমনি জল ঝাঁপিয়ে পড়ে
আমার জানালায়।

জল যদি হয় পাহাড়
পাহাড় করে আহার
সেতুবন্ধে টুকরো পাথর
মৃত্যু কিনারায়।

জল কে বলি আয়
খেলবি যদি আয়
ওমনি জল গোঁসাগনগন
চললো সিতারায়।

জলই কাটে দাগ
অকাল হোলির ফাগ
এক চিলতের এদিক ওদিক
বেহেস্ত নিয়ে যায়।

আমার আমি’র জল
তাই জলকে চল
নক্সাকাটা দুর্গ প্রাকার
ময়ূরপঙ্খী বায়।

জাবরকাটা ৫

456454

আমাদের ছোটবেলাটা আজকের বাচ্চাদের শৈশবের মতো এমন তুতুপুতু ছিল না। ছিল না এতরকম অনর্থক ‘এটা কোরোনা কার্টসি শেখো, ওটা কোরোনা প্রোটোকল জখম হবে’ র ত্রিবন্ধনী। পড়ার সময় বাদে অন্য সময় চেটেপুটে সদব্যবহার করেছি। দেখেছি দুচোখ মেলে। সেদিনের দেখে শেখা আজও বহু কাজে লাগে। মাঝেমাঝে নিজের মধ্যে নিজে একলা ডুব দিলে দেখা দৃশ্য সিনেমায় রূপান্তরিত হয়ে মনের চোখের পাতায় খেলা করে।

বলতে গেলে ভারতের মোটামুটি প্রায় সব ভাষাভাষী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের। প্রত্যেক প্রদেশের মানুষের বিভিন্ন অভ্যাসে যে স্বতন্ত্রতা আছে তাকে অনুভব করেছি। উত্তরের খাওয়া আর দক্ষিনী খাওয়া যেমন মেলে না, ঠিক তেমনি দৈনন্দিন আচার, অভ্যাসও আলাদা।
ওড়িয়ারা এমনিতে খুবই শান্ত প্রকৃতির আর স্বভাববাধ্য মানুষ। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে? থাকেও সর্বদাই। কিন্তু শান্ত, সাংঘাতিক কর্মঠ এই মানুষগুলোকে মিশলেই ভালোবেসে ফেলা যায়। ওড়িয়া ভাষাও শিখেছিলাম সেই সময়ে। আজ চর্চার অভাবে ভুলে গেছি।

পখলভাতঅ মানে পান্তাভাত আর রাগঅ মানে ঝাল ওদের খুব পছন্দের খাবার। মাছ বেশি ভালোবাসে মাংসের চেয়ে। সাধারণ নিম্নবিত্তরা গুড়াকুর নিয়মিত নেশা করে। মিষ্টির মধ্যে ওদের প্রিয় মালপোয়া। এটা ওরা প্রত্যেক বাড়ীতেই বানায় উৎসবে, ব্যসনে।

অন্ধ্রের লাগোয়া গঞ্জাম জেলার ওড়িয়ারা তাদের ভাষায়, খাবারে পরিস্কার তেলেগু ছাপ বহন করে। আর মজার ব্যাপার হলো মেয়ের জন্যে ওদের কাছে সবচেয়ে ভালো পাত্র হলো মেয়ের মামা।
আমরা যেমন দোসা খাই ঠিক সেরকমটি তামিল রা খায় না। ওরা নারকেল তেলে ভাজা প্লেন দোসা ভেতরে কোনোরকম পুর ছাড়াই নারকেলের চাটনি দিয়ে খায়। অসম্ভব টক দই ওদের খুব প্রিয়। লুঙ্গির মতো ধুতি যাকে ওরা বলে ভেস্টি, এখনো বহু তামিল, তেলেগু, মালয়ালি পরেন।

গোলগাপ্পা মানে আমাদের ফুচকার ভেতরে গোলাপের পাপড়ি আর বোঁদে দিয়ে কি যে অখাদ্য করে তুলে পরম তৃপ্তিতে পাঞ্জাবীরা খায় সেটা পাঞ্জাবে না গেলে জানতেই পারতাম না। ওদের লস্যির গ্লাস ভারী অদ্ভুত। অনেকটা শঙ্কুর মতো। নীচে সরু ওপরে চওড়া। সাধারণ মানুষেরা কিন্তু খুবই সরল।

বেশিরভাগ রাজস্থানী হিন্দু আর জৈন দু ধর্মই পালন করেন। গরম রুটিতে পাকা ঘি লাগিয়ে উচ্ছে ভাজা আর মাঠঠা মানে ঘোল দিয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ওরা খায়। সঙ্গে অবশ্যই লংকা কিম্বা লেবুর আচার আর আগুনে সেঁকা পাঁপড়।

ওই রুটিই আবার গমের বদলে বাজরার আটার হলে গুজরাতিদের প্রিয়। ব্যাসনের লাড্ডু পশ্চিমাঞ্চলের প্রিয় মিষ্টি।

নাগারা শুনেছিলাম কুকুর খায়। সত্যিই খায়। তবে সব নাগারা খায় না। ওদের মধ্যে বিশেষ দু একটা উপজাতি কুকুরের মাংস খায়। এটা ওদের খুব প্রিয় মাংস। তবে কুকুর পুড়িয়ে খাওয়াই ওরা বেশি পছন্দ করে।

বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। এত ছোট্ট পরিসরে এত বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, আমি তাদের সেইসময়ে এত কাছ থেকে দেখেছি, খেলেছি, ভাব হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে অখন্ড ভারত আছে সেদিন বুঝিনি। আজ একান্তে বসে অনুভব করি গান গাইতে গাইতে শীতের দুপুরে পাঁপড় বেলা মধ্যবয়সীনির দল আর আমার মায়ের মধ্যে একটুও তফাৎ ছিল না সেদিন, আজও নেই।

বৃষ্টি এল রে

pexels

বৃষ্টি শুরু হলো। এ বাংলা বছরের প্রথম বৃষ্টি। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই কাঠের বনবাংলোর টালির চালে বেশ একটা মৌতাত জমানো কনসার্ট। হাওয়ার গোঁ গোঁ শব্দ, ভয়ার্ত পাখিছানার অস্ফূট কিচমিচ, দূরের আদিবাসী গ্রামে ঘুমন্ত গেরস্তর দরজায় শুয়ে থাকা বার্ণিশ করা কালো কুকুরের ডাক, গম্ভীর মেঘের তাল – সুর – লয় মেলানো ডাক মিলেমিশে মোৎসার্টের সিক্সথ সিম্ফনি কেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলো। এ বছরের প্রথম বৃষ্টি।

প্রত্যেক টুকরো মিলিসেকেন্ড জুড়ে এক আশ্চর্য নক্সায় বোনা হয়ে যায় এক আস্ত জীবন। সিগারেটের নীল ধোঁয়া আবছায়া নারী অবয়ব তৈরী করতে করতেই যেমন হঠাৎই ভেঙে এদিক ওদিকে বিস্তার করে তার লাইটইয়ার গতির অয়েলপেন্টিং। তারপর টুকরো হতে হতেই মিলিয়ে যায়, রেখে যায় কিছুটা কটু কিছুটা মিষ্টি গন্ধ, তেমনি অনেক আঁচড়ের দাগ দেহে স্বাক্ষর না রেখে লাবডুবডুব ছন্দের মেশিনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের আবোলতাবোল সরণীর এ গলি ও গলি বেয়ে কুমির তোর জল কে নেমেছি খেলায় মেতে ভুলেই যায় সারাদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোন অন্ধ বনে এক কাঠুরিয়া একমনে লোহার কুড়াল কে আদর করে আর মুখ তুলে অন্যমনস্ক চোখে আকাশ দেখে।

বৃষ্টি এলো কি মহাজন! বছরের প্রথম বৃষ্টি!

পাঁচশো কোটির একমাত্র সবেধন নীলমনি প্রাণী ইউনিভার্সে একা রাজত্ব করে অন্যদের মাথায় ছড়ি ঘুরিয়ে। তার ঘরকুনো স্বভাব, তার মুসাফিরি, তার বৈপরিত্য, তার অসূয়া, তার তীব্র পাহাড় ফাটানো গলিত লাভার মতো ভালোবাসা আছড়ে পড়ে বৃষ্টির প্রথম দমকে তেতে থাকা ফুটিফাটা মাটির ওপরে। একা রাত্রির অনাদর সহ্য করে ভাবনারা নিউরন ভেদ করে উঠে আসে, সূর্য লাল না হলে গাছেরা সবুজ হতো না। অন্ধকালো একপাশে সরিয়ে আকাশ লাল আভায় পেতে দিচ্ছে ইচ্ছে আসন। সাইবেরিয়ান অতিথি ফিরে গেছে তার নিজস্ব চঞ্চু নির্মানে প্রিয় মুখ ঢলঢল আবেগ শিবিরে। এসেছে নতুন অতিথি, বহুদিনের অপেক্ষার মেঘের গর্ভ ফাটিয়ে।

ওরে শাঁখ বাজা! ও গ্রাম্য ছলাৎ ছল কালো নষ্টস্বপ্ন পারিস কি এই সাইবার সময়ে এখনো উলু দিতে!

বৃষ্টি এলো রে! এ বছরের প্রথম বৃষ্টি!

ইন্দ্রপতন

PARIS, FRANCE - september 11. Colombian writer Gabriel Garcia Marquez during Portrait Session held on september 11, 1990. Photo by Ulf Andersen / Getty Images

আজকের দিনে চলে গেছিলেন তিনি।
সেই লেখকের লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কুইজ স্মরণে লেখা।

ইন্দ্রপতন
দুধসাদা দুপুরের আগুনচোখ ইঞ্চি ইঞ্চি
সারাগায়ে প্রতিহত করতে করতে অক্সিজেন
কমে আসে মাথায় কোষে শিরায় উপশিরায়,
দুচোখ জুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাল ঘুম।

যৌবনের নিয়ম তছনছ করা সন্ধে রাত্রি সকাল
খাপছাড়া উদ্দাম তর্কাধীন বিষয় ছানবিন,
কনেদেখা আলোয় ক্রমশঃ দূর থেকে দূরে যাওয়া
একবারও ছুঁতে না পাওয়া রজনীগন্ধা মুখ,
ভরা ছিলো, আছে, থাকবেও স্মৃতিসুধায়।

ডিপ্রেশনের অখণ্ড অবসরে খড়কুটো ধরতে গিয়ে
কখনো হাতে ঠেকে যায় বৃহৎ বাওবাব,
অনেকটা বেনোজল গিলে ফেলা
অবুঝ পাকস্থলী শান্ত হয় স্থিতধী বাসায়,
অনেকটা উজান বেয়ে বোধ পরিণত হয়।

ভালোবাসি ভালোবাসি বলার মূর্খ উচ্চস্বর
ধীরলয়ে এগোয় অন্তরার নিখুঁত টানে,
মার্কুইজের সত্ব জারে ডোবানো সত্বা
একটু করে বোঝে ভালোবাসা মানে।

কিজানি কখনো কি ভালোবাসতে
পেরেছি কাউকেই! কোনোদিন!

শুভ নববর্ষ

1997_n

চাই তো, ভালো থাকি, শান্তিতে থাকি, স্বচ্ছল থাকি। শুধু আমি একা নই, চারপাশে কিম্বা আমার বৃত্তের বাইরে সবাই ভালো থাকুন। কারন, হাপুস হুপুস করে পঞ্চব্যাঞ্জন দিয়ে ভাত খাওয়ার সময়ে চোখ তুলে যদি দেখি অনেকগুলো অভুক্ত, অপুষ্ট মুখ প্রচন্ড সর্বগ্রাসী ক্ষিদে নিয়ে জুলজুল করে আমার খাওয়া দেখছে, তাহলে আর একটা গ্রাসও যে গলা দিয়ে নীচে নামবে না বস্!

তাই নিজের স্বার্থেই চাই সবাই ভালো থাকুন। প্রত্যেক বছরই এই একই চাওয়া আমার, তোমার, আমাদের সবার। সবাই চাই, মা গো, সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। চাই তো ভালো থাকতে! কিন্তু বছরের চাকা ঘুরতেই চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে মেরু বিস্তৃত ফারাক। ভালো গুলো কখন যে কালোর ফাঁদে পড়ে হারিয়ে যায় তার চোখের শেষ বিন্দু জল সমেত, জানতেও পারি না।

তবুও আশায় আশ্রয় নিই। কেবল চাষাই নয়, আমরা সবাই যে আশাতেই বাঁচি। সেই আশায় বুক বেঁধে জীবনের আরো একটা বছর পার করে দিয়ে অন্তিম চরণের দিকে হেঁটে যেতে যেতে চাই, ভালো থেকো গো বন্ধুরা এবং যারা বন্ধু নও, পরিচিত আর অপরিচিত, জানা কিম্বা অজানা মানুষেরা, সবাই … সবাই …

একরাশ শুভেচ্ছা আর গ্যালাক্সি জোড়া ভালোবাসা তোমাদের সবার জন্য। মহামারী অতিক্রম করে ভালো থেকো। আনন্দে থেকো। শুভ নববর্ষ প্রিয় মানুষ!