সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

গল্পে গল্পে জীবনের কথা

ggtyu

কতদিন চলে গেল দেখতে দেখতে।
এই তো সেদিন শুরু হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায়। তারপর শুধু যায় আর যায় দিন। যেন কিছু থেমে থাকে না। আসলে জীবনের নতুন বা পুরাতন বলে কিছু নেই। জীবনে যখন যেটা ঘটে সেটা মানিয়ে নিয়ে চলাটাকেই জীবন বলে। হয়তো এতে করে জীবনে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আসে যা জীবনের ভুলগুলো শুধরে নিতে সাহায্য করে।

প্রতিটি মানুষ তার মনে নিজস্ব এক জগতে তৈরি করে,
যেখানে সে সময় বা অসময়ে বিচরণ করে, সেই জগৎ টাকে সাজায়। এখানে শুধু তার ভালো লাগাটায় রাখে। ভালো মানুষদের রাখে বড় কথা তার সবচেয়ে আপনজনদের এই জগতে রাখে। মানুষের যেমন ভালোর আলাদা জগত আছে, তেমনই আছে দুঃখ ও কষ্টের এক ভিন্ন জগৎ, যে জগতে কারোর স্থান নেই। সে একাই এখানে বসবাস করে। কেউ আসতে চাইলেও তাকে ফিরিয়ে দেয় সে।

ছোট বেলায় যখন শুনতাম রূপকথার গল্প, দাদা বা দাদির কাছে নাম না জানা আঞ্চলিক গল্প তখন সেই গল্পের মত জীবনকে ভাবতাম। যে জীবনটা কত সহজ। কিন্তু এতদিন পর এসে মনে হচ্ছে এ জীবন এত সহজ
নয় গল্পে বা উপন্যাসে যত সহজ করে বলা হয়।

এ জীবন বড়ই কঠিন এক যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। টাকার অভাবে যখন কলেজে ভর্তি হতে পারিনি তখন আব্বাকে অহেতুক দোষ দিয়েছি। যে কেন আমাকে টাকা দিতে পারি নি, কেন আমাকে পড়াতে চায় না। কিন্তু এতটা বছর পর এসে আমি নিজে থেকেই বুঝতে পারছি যে কেন আব্বা তখন আমাকে টাকা দিতে পারি নি। কেন পড়াতে চায় নি। আব্বা চেয়েছিলেন যা পড়েছি, তা অনেক হয়েছে এখন একটু আব্বার সাথে কাজ করে সংসারের হাল ধরি। কিন্তু আমি কি করছি।

আমি কাজ করছি ঠিকই, টাকা তো সংসারে দিই নাই, বরং নিজেই নিজের অভাব গুলো পূরণ করছি আর যতটা পারছি পড়েছি। তাতেও তো আব্বাকে খুশি করতে পারি নি, কারণ তিনি তা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন আমরা যেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কি করি। কিন্তু আমরা তা করি নি।

জীবনটা বুঝি এমনই। ভুল তো ভুলই।
অতীত তো শুধুই অতীত তাকে বদলানো যাবে না।
যা এতদিন পর চরমভাবে উপলব্ধি করছি।

একাকিত্ব

তুমি নেই বলেই আমার
একাকিত্ব এত ভালো লাগে।
এইখানে পৃথিবীর প্রান্তরে
ভোর বেলার আকাশ, রৌদ্রমুখী পাহাড়
ঘাসের বুকে চুমো এঁকে যায়।

এইখানে নদীর জলে
কত স্মৃতি ভাসে হাঁসের পাখনায় !
এইখানে জলের ভিতর
তুমি নয় অন্য কেউ, অন্য কোনো নারী
কোথাও দেখেছি যারে।

এইখানে শূন্যে মেঘ থেকে
কিছুটা দূরে একা হেঁটে যাই।
কোথাও তুমি নেই বলে আর
একাকি চলে যাই দূরে, ঢের দূরে।

ঘরে ফিরা

3067

ফুটপাত, ধুলাবালি।
ব্যস্ত নগরীর কোলাহল। পিছনে ফেলে ঘরে ফিরা।

ফিরে আসার সাঁঝ। শিমুল গাছ।
ঢুস দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা সাঁকো।
বাঁকা পথ পেরুলেই উঠোন। লাউ মাঁচা।

চেনা ডাকে স্থির চোখ। চৌকাঠ মাড়িয়ে আসা।
তৃষিত চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে শুধু চেয়ে থাকা।

ম্লান মুখ, সিক্ত চোখ।
পৃথিবী ভুলে, অজান্তেই জড়িয়ে কাঁদা “মা-মা” বলে।

অনুশোচনা

আজকাল আমি পকেটে করে
গভীর রাত্রি কিনে রাখি …।
এক খণ্ড অন্ধকার আকাশ, আর
একটি ঠান্ডা জল প্রপাত সাজিয়ে
রাখি কপোলের তিলক ছুঁয়ে
দু’চোখের প্রান্তদেশে—যেখানে তুমি থাকো।

যখন তুমি আমাকে বিদায় বলেছিলে
তখন আমার বুকের চারপাশে শুধুই শূন্যতা,
আর ছিল নাম না জানা কিছু বিষণ্ন্নতা।

আমাদের প্রথম স্পর্শ, প্রথম ছোঁয়া,
সেই প্রথম আলিঙ্গন ঠোঁটের চূড়ায় ঠোঁট,
সেই উষ্ণতা আমি আজও মিস করি,
যা আমি আর কখনো ফিরে পাবো না।

তবে একটাই অনুশোচনা,
যখন সবকিছুই ভুল হয়ে যায়, তখন –
সত্যের উর্ধ্বে সত্য পথ হারায় চেনা পথে।

ডাহুকী

Stor

রোজ ডেকে যায় ডাহুকী;
কারণে অকারণে ডেকে যায় সে।

বিস্তর রৌদ্রের সফর শেষে
ক্লান্ত দিনের পাখি
গোধূলী সীমার ঠোঁটে করে যখন আনে
এক পিয়ালা গাঢ় রাত্রি।
ছায়াধূপে মিশে চুপি চুপি
জোনাক ফুল ঝরে পড় যখন পথে পথে
অতসী ছুঁড়ির মতন শিশিরের দলে।

আকাশের জানালায় কান পেতে
আমি তখনো শুনতে পাই,
এই সবুজ দ্বীপের ছায়া পিছনে ফেলে
দূরে— দূরে— আরো দূরে ফাঁকা মাঠে
ডেকে যায় ডাহুকী বিরহী সুরে।

কোন্ সে অভিমানে; কোন্ সে বিরহে
বুকফাটা আর্তনাদে
ঝরা ফসলের ক্ষেতে; কখনো-বালুচরে,
হেমন্তের ভিজা ঘাসে; কখনো-
শ্মশানের খেয়াঘাটে, রোজ রোজ
সহসায় ডেকে যায় ডাহুকী করুণ সুরে।

ভাবনার মিথ

জোছনা ঝরানো কোনো এক হৈমন্তী রাতে
একটি রাস্টিক ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে
চলে যাই দুজনে চেনা জানা দৃষ্টির বাইরে !

খুউব গভীর একটা হাওয়া,
অথচ অনেক আরামদায়ক হবে,
বয়ে যাবে আমাদের হৃদ মাঝে !

ধুলো উড়ে গেলে, ডাহুকের লাল চোখে
শতাব্দীর রাত জাগা আমাদের ভাবিয়ে তুলে !

তারপর এক সময়, ঠিক তার আরও কিছু পর
ছায়ার লিপিতে রাতের কত শত কথা
গেঁথে যায় ঝরে পড়া কবুলের ফুল সযতনে !

তারপর একদিন তুমি আমি তারা হবো হাজার
আলোক বর্ষ দূরের পথে ভাবনার মিথ ভুলে !

রোজ চলে যাই

2751

আমি ছুটে যাই
সময়স্রোতের সাঁকো বেয়ে
দিগন্তের সীমানা ছাড়িয়ে
দল বাঁধা নক্ষত্রের দেশে।

আমি ছুটে যাই
জলসিঁড়ি ধানসিঁড়ি নদী ধরে
জ্যোতির্ময় রৌদ্রের সমুদ্রে।
আমি কেবলই ছুটে যাই
বসন্ত রঙিন তোমার পৃথিবীতে।

আমি যত বয়ে যাই
তুমি তত চলে যাও !

তবুও আমি জীবনকে ভালোবাসি
তোমার কথা ভেবে।
এই ভেবেই আমি রোজ চলে যাই
তোমার থেকে দূরে।

আমি চলে যাই বলেই
রোজ বিকেলের রৌদ্রে বসন্ত
সতেজ হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
দিনের শরীরে রৌদ্রের রঙ
জ্বলে উঠে দীপ্তি নিয়ে।

কেবলই স্রোত বয়ে যায়
সময়ের নিজের নিয়মে।
ভেঙে যায় সাঁকো থেকে যায় স্মৃতি
চলে যাই আমি রয়ে যাও তুমি।

আস্তাবল

একটি অসমাপ্ত বিকেল বসে ছিল
পৌষের খোলা ছাদে,
জানালার গ্রীলে নিশ্চুপ দুটি পাখি,
টবের জলে অঙ্কুরিত ভালোবাসা।
নির্বাক কবির চোখে হতাশার ছাপ;
দিগন্ত জুড়ে অপেক্ষার আস্তাবল !

সন্ধ্যা নামার আগে

26117

চলো সন্ধ্যা নামার আগে কোথাও আমরা
একটা ঘর বাঁধি – জীবন থেকে মরণের ঘর।
উঠোন জুড়ে হাসনা হেনা, টগর, জবা,কিংবা
তোমার ভালো লাগা সব ফুলগুলো থাকুক।
এই যে এমন সন্ধ্যা নামার আগে,
হয়তো আমাদের আর কখনো দেখা হবে না,
হয়তো হবে না আর কখনো কোনো কথা বলা,
তবুও চলো, চলে যাই দূরে কোথাও নির্জন প্রান্তরে।

অথচ, সেদিন দেখবে এতটা দিন পর এমন বিরান দিনে
নিয়তি নিয়ে যাবে আমাকে দূরে – দূর থেকে বহুদূরে !
তুমি থেকে যাবে এই ঝলমলে আলোর ভিতর।
ঠিক যেমন সন্ধ্যা নামার আগে সূর্যের সোনালী
আলোক রশ্মি ছড়িয়ে গোধূলি সাজায় – তেমনই !

হয়তো সেদিন তুমি ভালো থাকবে,সুখে কাটাবে দিন,
হয়তো এই দুঃখের ফানুস উড়িয়ে সময় করবে রঙিন,
অথচ – তখন,
আমার ভিতরে বাহিরে বিষাদ সন্ন্যাস,
কাঁটায় ভরা ক্যাকটাস,
বুকের খামে লুকানো অচেনা চার অক্ষর
একটু আশ্রয়ের বিশ্বস্ত ঠিকানা খুঁজে মরবে
বেদনার মরু চরে বারোমাস।

এই যে শুনছো? তোমাকেই বলছি,
চলো, চলে যাই দূরে কোথাও।
এই সাগর নদী,পাহাড় ঝর্ণা, মেঠোপথ, রাঙামাটি গ্রাম,
তরুলতা, বৃক্ষরাজী, সব কিছু পায়ে মাড়িয়ে চলো যাই।

চলো সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা ঘর বাঁধি।।

উদ্ভাস্তপ্রেম

259457

এই অঘ্রাণের আকাশ তলে
নীরবে ঝরে পড়ে
মেঠো চাঁদোয়া জোছনা;
বুকে নিয়ে শিশিরের জল।

সেইখানে আকাশ থমকে থাকে
মেঘের ভাঁজে ভাঁজে
অতৃপ্ত হৃদয় পাজর জুড়ে
এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে !

বিনিদ্র রাত পেরিয়ে জোনাক খামে
মাঘের হিয়ালি ছেড়ে
হলদে পাতার মরমর সুর ছড়িয়ে
বিবর্ণ ফুলের গন্ধে বসন্ত আসে !

মাকাল বসন্তে ফুল পাখির ভিড়ে
অবিরত রক্ত ক্ষরণে
ব্যথিত এই অলির স্বপ্ন চোখে শুধুই
উদ্ভাস্ত প্রেম খেলে অঘ্রাণের দিনমানে !

কি মায়ায় বাঁন্ধিলা

1836_n

কি মায়ায় বাঁন্ধিলা আমায়
বন্ধুরে…
তোরেতো ভুলে থাকা দায়।
অন্তরেতে প্রেম বাড়াইয়া
চইলা গেলা কোন অজানাই।

দেহ দিলা, আদর দিলা মনতো দিলা না
তোরে ভালোবেসে আমি হইলাম দিওয়ানা।
তোরই লাইগা কাঁন্দি এখন
বইসা নিরালায়।

কি মায়ায় বাঁন্ধিলা আমায়
বন্ধুরে….
তোরেতো ভুলে থাকা দায়।

ভুলিবো কেমনে তোর প্রেমের’ই কথা
এই মনে যে দিছো তুমি দুঃখ কষ্ট ব্যথা।
তোরই লাইগা নিশিদিন আমি
কলিজাটা পুড়াই।

কি মায়ায় বাঁন্ধিলা আমায়
বন্ধুরে….
তোরেতো ভুলে থাকা দায়।

প্রাক্তন

245689

যাকে দেখার পর বুকের ভিতরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি
স্ফুলিঙ্গ লাভার মত বেরিয়ে আসতে চায়
তার নাম হল “প্রাক্তন”।
তাহলে তুমি কি আমার প্রাক্তন?
না তো তুমি তা নয় তো ?
তাহলে কি ছ্যাকা দেওয়া প্রেমিক!
তোমার সাথে কখনো তো প্রেম করিনি আমি।
বড়জোর দেখা হলে কথা বলেছি
কেমন আছো, কেমন যাচ্ছে দিনকাল,
শুধু সাধারণ কিছু কুশল বিনিময় ।
এই তো ব্যাস! এতটুকুনই তো !

তাহলে তোমাকে দেখার পর এমন হয় কেন আমার?
বুকের ভিতর সাত সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে
হঠাৎ করে কেউ তীর ফলক বসিয়ে দেয় বুকে
তখন আমি বুঝতে পারি
বুকের ভিতর ষোড়শীর যৌবন – ছল্ ছল্ জল।
চোখে ফাগুনের আগুন
ঘ্রাণ পাই সেঁদো মাটির গন্ধ মাখা খড়ের ওম।

ফেলে আসা পথে ধুলোর স্মৃতি
লেগে থাকে বায়নার সেফটিপিনে।
তাহলে কি ভালোবেসে ফেলেছি আমি ?
নাকি ভালোবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণায় বুকে
পাথর ফলক কাটে তোমাকে দেখার পর।
সময়ের পা ধরে এতটা পথ এসে
মনের ডাকবাক্স খুলে দেখি দুস্তর লেফাফা
পুরোটাই শূন্য।
কিছু নেই আজ আমার।

তবুও প্রশ্ন তোমারও কি তাই?
নাকি এই প্রেম আর লুকোচুরি খেলায়
দুজনেই গচ্ছা গেছি প্রাচীন কোনো হৃদে।
ভালো থেকো তুমি, প্রাক্তনদের ভালো থাকতে হয়!
শুধু আমি আকাশের বুকে চেয়ে ভাবি
প্রাক্তন তুমি কি একা !
তাহলে আমি কি ?