
প্রিয় যূথিকা,
আজ ভোরে এক বন্ধুর টাইম লাইনে তোমাকে দেখলাম বিয়ের বর কনে ফটো সেশনে
তুমিও ক্যামেরা বন্দি হয়েছ কনের সাথে।
এই তো বছর পাঁচেক পর দেখলাম ?
মনে হলো এক কোটি বছর পর দেখলাম তোমায়।
এই যে কতদিন পর তোমায় দেখলাম তারও একটা হিসাব আছে মনে মনে।
যদিও নিজের থেকে হয়তো কিছুটা বদলে গেছ,
কিন্তু আমার কাছে এখনো আগের মতোই আছ তুমি।
সাহস করে কখনো তোমার সামনে যেতে পারিনি
বলতে পারিনি কতটা ভালোবাসি তোমায়
তোমার জন্য এই বুকের ভিতর কতখানি হাহাকার।
কেমন করে নির্ঝরের মত রক্ত ঝরে হৃদয়ে।
যখনই বলতে চেয়েছি, তখনই মনে হয়েছে
লোকে কি বলবে?
এ সমাজ কি বলবে? সমাজ কি মানবে এ ভালোবাসা ?
আর তার চেয়েও বড় ভয় ছিল ধর্ম
আমাদের ধর্মটাই যে ভিন্ন ছিল।
তোমার সাথে শেষবার যেদিন দেখা হয়েছিল
সেদিন আমি বড় ব্রিজে বন্ধুদের সাথে বসে।
ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে অটোভ্যানে করে স্বপরিবারে
কোথা হতে যেন আসছিলে।
তুমি ছিলে ভ্যানের পেছনের সারিতে বসা।
গল্পের ফাঁকে হঠাৎই তোমার দিকে চোখ পড়ে গেল—
সেই যে অপলক চেয়ে থাকলাম যতক্ষণ দেখা গেল।
তারপর,
মিলিয়ে গেলে দিনের আলোর মত পথের বাঁকে।
তখন কি যে এক ভালো লাগা রেশ থেকে বারবার
মনে হচ্ছিল ঐ দূর থেকে তোমার নিঃস্পলক
এক জোড়া চোখ আমায় অপলক চেয়ে দেখছে।
সে বছরই জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসলাম
ছোট একটা চাকরিও পেলাম।
নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম।
চাকরির প্রথম প্রথম কাজের চাপ কম থাকায়
মাঝেমধ্যে কাছের বন্ধুদের কাছ থেকে একটুআধটু
খোঁজ খবর নিতাম তোমার।
সময় পেলেই তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে বসতাম ।
এরই মধ্যে শ’খানেক কবিতা থেকে বাছাই করে
গেল বছর একটি বই বের করেছিলাম।
আমার অচল ভালোবাসার মতই বইটিও অচল হয়ে
ঘরের বুক সেলফে রয়ে গেছে।
খুব একটা অযত্নে নেই –
সময় পেলেই আমি খুব যত্নে তোমাকে পাঠ করি।
এমনই করে দিন মাস বছর যাচ্ছিল,
কাজের চাপ টাও বেড়ে গেল, আমিও ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
জীবনের অববাহিকায় কত ভাঙা গড়া হল
টেরই পেলাম না কখনো।
তারপর বিয়েটা হল, সংসার হল,
এতকিছুর ভিতর তোমাকে
এক রকম ভুলে যাবার উপক্রম।
কিন্তু, চাইলেই কি আর সত্যি করে ভুলা যায় ? যায় না!
যখন ভীষণ একা একা লাগে
তখন তোমাকে অনুভব করি।
রাতে যখন চোখে ঘুম আসে না
বিষাদের জানালা খুলে যখন বেদনারা আসে
তখনো আমি তোমাকে অনুভব করি হৃৎস্পন্দনে।
মাঝে মাঝে ভাবি, ভালোই হয়েছে
আমাদের ভালোবাসাটা না হয়ে।
হলে হয়তো এই ছা-পোষা জীবনে খুব বেশি
সুখ দিতে পারতাম না তোমায়।
তবুও বলছি,
ভালোবাসা হওয়া না হওয়াতে কি আসে যায়
আমার ভালোবাসাটা আগের মতোই থাক।
প্রিয় যূথিকা,
বছর পাঁচেক পর দেখলাম তোমায়।
জানি না আর কখনো দেখা হবে কি না।
দেখা হোক বা না হোক,
কথা হোক বা না হোক
তবুও একটা অনুরোধ করব রাখবে তো?
কখনো যদি তোমাকে দেখার ইচ্ছে হয় আমার
দেখা দিও — কাছে থেকে না হোক দূর থেকেই হোক
একটু দেখতে দিও। প্লিজ…!
আসলে কি জানো যূথিকা,
দূর থেকে দেখার মাঝেও একটা সুখ সুখ অনুভূতি আছে।
দূর থেকে দেখে জ্বলে পোড়ার মাঝেও
এরকম ভালোবাসা আছে, প্রেম আছে।
বছর পাঁচেক পর দেখলাম,
জানি আর দেখা হবে না, শেষবারের মত বলে নিই
যেখানেই থাকো ভালো থেকো, ভালো থাকো।