সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

অভিমান

29f

বিকেলের রৌদ্রর তোমার খোলা জানালায়
গোধূলি এঁকে গেলে,

জানালার গ্রীল ধরে তুমি আর থেকো না দাঁড়িয়েো
এমন উদাস চোখে!

চুলের ভাঁজ খুলে দিয়ে সন্ধ্যাকে আমন্ত্রণ করিও
নীরব তুলসী তলে!

দীপশিখা জ্বালিয়ে আরতি করিও যতনে যূথিকা
রাত্রি নামার মুখে!

যেটুকু অভিমান মনে পুষে রাখো তাকে মুছে ফেল
প্রিয় অভিসারে!

মেঘালয়ে মেঘবরণে সোনা মুখে একটু হাসিও তুমি
ভালোবাসি বললে!

তুমি আসবে বলে তাই

297f

চেয়ে থাকি অজানায় নির্বাক দৃষ্টি মেলে
একবার যদি দেখা পাই দূর শংঙ্খচিলে।

ভাবনা জুড়ে আছো তুমি
আমার সারাদিন ভর।

বেখেয়ালী মন খুঁজে ফিরে
তোমায় শুধুই অষ্টপ্রহর।

তুমি আসবে বলে তাই
আজো আমি পথ চেয়ে রই।

গোধূলীর শেষ আলোই খালি পায়ে হেঁটে
চলে এসো তুমি বর্ষিত শ্রাবণের সূর্যস্নাণে।

অপেক্ষা

297

দমকা একটা বাতাস আসুক ধেয়ে
উড়িয়ে দিক সব নায়ের পাল।
ছিন্নভিন্ন হোক জীবন।
কেটে যাক অপেক্ষায় শতশত যুগ
হঠাৎ কেউ ভিজিয়ে দিক আঁচল।
পূর্ণ হোক এই না পাওয়া মন।

আকাশ জোৎস্নায় পূর্ণিমার চাঁদ

295r

এই যে আরও একটা দিন শেষ হয়ে গেল
প্রায় রাত নেমে গেছে
চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে গেছে।
কোথাও কোথাও পাখিরা ফিরছে নীড়ে
কোথাও পথিক হেঁটে যায় দূরের পথে সন্ধ্যা নামার মুখে
সমস্ত দিনের ধুলোমাখা ক্লান্তি বুকে জমিয়ে।

বৃষ্টি হোক কিংবা শিলাবৃষ্টি হোক
তুষারপাত হোক কিংবা ঝড় হোক
আমি বসে থাকি বারান্দায়, একা বসে থাকি বারান্দায়।

হয়তো তুমি আসবে
এক আকাশ জোৎস্নায় পূর্ণিমার চাঁদ নিয়ে।

বছর পাঁচেক পর

max

প্রিয় যূথিকা,
আজ ভোরে এক বন্ধুর টাইম লাইনে তোমাকে দেখলাম বিয়ের বর কনে ফটো সেশনে
তুমিও ক্যামেরা বন্দি হয়েছ কনের সাথে।
এই তো বছর পাঁচেক পর দেখলাম ?
মনে হলো এক কোটি বছর পর দেখলাম তোমায়।
এই যে কতদিন পর তোমায় দেখলাম তারও একটা হিসাব আছে মনে মনে।

যদিও নিজের থেকে হয়তো কিছুটা বদলে গেছ,
কিন্তু আমার কাছে এখনো আগের মতোই আছ তুমি।

সাহস করে কখনো তোমার সামনে যেতে পারিনি
বলতে পারিনি কতটা ভালোবাসি তোমায়
তোমার জন্য এই বুকের ভিতর কতখানি হাহাকার।
কেমন করে নির্ঝরের মত রক্ত ঝরে হৃদয়ে।

যখনই বলতে চেয়েছি, তখনই মনে হয়েছে
লোকে কি বলবে?
এ সমাজ কি বলবে? সমাজ কি মানবে এ ভালোবাসা ?
আর তার চেয়েও বড় ভয় ছিল ধর্ম
আমাদের ধর্মটাই যে ভিন্ন ছিল।

তোমার সাথে শেষবার যেদিন দেখা হয়েছিল
সেদিন আমি বড় ব্রিজে বন্ধুদের সাথে বসে।
ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে অটোভ্যানে করে স্বপরিবারে
কোথা হতে যেন আসছিলে।
তুমি ছিলে ভ্যানের পেছনের সারিতে বসা।

গল্পের ফাঁকে হঠাৎই তোমার দিকে চোখ পড়ে গেল—
সেই যে অপলক চেয়ে থাকলাম যতক্ষণ দেখা গেল।
তারপর,
মিলিয়ে গেলে দিনের আলোর মত পথের বাঁকে।
তখন কি যে এক ভালো লাগা রেশ থেকে বারবার
মনে হচ্ছিল ঐ দূর থেকে তোমার নিঃস্পলক
এক জোড়া চোখ আমায় অপলক চেয়ে দেখছে।

সে বছরই জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসলাম
ছোট একটা চাকরিও পেলাম।
নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম।
চাকরির প্রথম প্রথম কাজের চাপ কম থাকায়
মাঝেমধ্যে কাছের বন্ধুদের কাছ থেকে একটুআধটু
খোঁজ খবর নিতাম তোমার।
সময় পেলেই তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে বসতাম ।
এরই মধ্যে শ’খানেক কবিতা থেকে বাছাই করে
গেল বছর একটি বই বের করেছিলাম।
আমার অচল ভালোবাসার মতই বইটিও অচল হয়ে
ঘরের বুক সেলফে রয়ে গেছে।

খুব একটা অযত্নে নেই –
সময় পেলেই আমি খুব যত্নে তোমাকে পাঠ করি।

এমনই করে দিন মাস বছর যাচ্ছিল,
কাজের চাপ টাও বেড়ে গেল, আমিও ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
জীবনের অববাহিকায় কত ভাঙা গড়া হল
টেরই পেলাম না কখনো।

তারপর বিয়েটা হল, সংসার হল,
এতকিছুর ভিতর তোমাকে
এক রকম ভুলে যাবার উপক্রম।
কিন্তু, চাইলেই কি আর সত্যি করে ভুলা যায় ? যায় না!
যখন ভীষণ একা একা লাগে
তখন তোমাকে অনুভব করি।
রাতে যখন চোখে ঘুম আসে না
বিষাদের জানালা খুলে যখন বেদনারা আসে
তখনো আমি তোমাকে অনুভব করি হৃৎস্পন্দনে।

মাঝে মাঝে ভাবি, ভালোই হয়েছে
আমাদের ভালোবাসাটা না হয়ে।
হলে হয়তো এই ছা-পোষা জীবনে খুব বেশি
সুখ দিতে পারতাম না তোমায়।

তবুও বলছি,
ভালোবাসা হওয়া না হওয়াতে কি আসে যায়
আমার ভালোবাসাটা আগের মতোই থাক।

প্রিয় যূথিকা,
বছর পাঁচেক পর দেখলাম তোমায়।
জানি না আর কখনো দেখা হবে কি না।
দেখা হোক বা না হোক,
কথা হোক বা না হোক
তবুও একটা অনুরোধ করব রাখবে তো?

কখনো যদি তোমাকে দেখার ইচ্ছে হয় আমার
দেখা দিও — কাছে থেকে না হোক দূর থেকেই হোক
একটু দেখতে দিও। প্লিজ…!

আসলে কি জানো যূথিকা,
দূর থেকে দেখার মাঝেও একটা সুখ সুখ অনুভূতি আছে।
দূর থেকে দেখে জ্বলে পোড়ার মাঝেও
এরকম ভালোবাসা আছে, প্রেম আছে।

বছর পাঁচেক পর দেখলাম,
জানি আর দেখা হবে না, শেষবারের মত বলে নিই
যেখানেই থাকো ভালো থেকো, ভালো থাকো।

অযাচিত দিনকাল

Untit

যে মানুষটি বিশ্বাস যোগ্য ছিলো,
যে মানুষটি হাতে হাত রেখে
বুকে আকাশ সমান ভরসা নিয়ে বলেছিল
সুখে দুঃখে সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো।

একসাথে পথ চলতে গিয়ে সামান্য কিছু বাগ্বিধিনায়
হঠাৎ করে সেই মানুষটি বদলে গেলে বুকটা
হা-হা-কা-র করে উঠে। মনে হয় জীবন যেন এক সাহারা মরু।
চোখের সামনে ধূ-ধূ মরীচিকা।

এই যে এতটা বছর পাশে থাকা,
এত্ত এত মান – অভিমান, এত্ত অনুযোগ, অভিযোগ
এসব কিছুই মিথ্যে মনে হয়।

খুব কাছ থেকে একটা মানুষকে এতটা বদলে যেতে
দেখে নিজেই নিজের উপর থেকে বিশ্বাস বস্তুটা হারিয়ে ফেলেছি।

আমি চাই তুমি আসো একদিন

2911

এ-ই যে শুক্রবারের বিষণ্ণ বিকেল
একলা কাটে দূরের শহরে।
ছলছুতো করেও হোক একদিন তুমি
আসো আমার কাছে।

আমি সর্বস্ব হারিয়ে গেঁথে যাবো তোমার ভিতরে।

তবুও যদি বুঝাতে পারি এটুকু যে,
দূরে থাকা মানুষের আপাদমস্তক বিরহ শোক !

আমি চাই
ছলছুতো করেও হোক তুমি আসো – দেখো।

এতদিনের জমিয়ে রাখা অভিমান
দু’ এক ফোঁটা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ুক আমার বুকে।

আমি চাই
ঘন কুয়াশার রাত চোখেমুখে অপার সৌন্দর্যধারা
একটা বৃষ্টি ভেজা দিন
ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট
সদ্য স্নান সারা ভেজা চুলের ঘ্রাণ ঘর ভরে থাকুক।

আমি চাই
অনুরাগে ঝরে পড়া চোখের জলে
রুমালে নয় শাড়ির আঁচলে মুছে দিক।

আমি চাই
ছলছুতো করেও হোক তুমি আসো একদিন।

ভালোবাসা

2909

দূরে গেলে মায়া বাড়ে
ভালোবাসা হয় আরও গভীর অনুভব।
কাছে থেকেও কখনো কখনো
মন পাওয়া যায় না – জানা যায় না মনের গভীরতা।

ভালোবাসা এমন এক কয়েন,
যার একপাশ অপর পাশ থেকে বিপরীত থাকে।

একা রাতের গল্প

Pho

তারপর একা রাত, কেটে যাক অন্ধকার
পাশাপাশি সেই কিছু কথা বলা দরকার।

এই শোনো, এসে বস পাশে
বাড়িয়ে দাও হাত ভালোবেসে।

তুমিহীন যে কটা দিন কেটেছে আমার
তার চেয়েও বেশি কষ্টের কথা না বলার।

এই শোনো, চেয়ে দ্যাখো আকাশে
চাঁদ হাসে তোমাকে ভালোবেসে।

এই রাত জানুক, জানুক রাতের তারা
কেউ নেই জীবনে আমার তুমি ছাড়া।

এই শোনো, বল কথা এসে
সব মান – অভিমান শেষে।

অদৃশ্য

283a

মেঘে মেঘে আজ অনেক বেলা
রৌদ্রস্নাতে দীঘল কায়া।। ভিজে যায় হিজল গা’র পথ।
বৃষ্টি ফুলে ঘাসফড়িং এর মেলা
খেলা করে অচিন ছায়া।। আলো ছায়ায় অদেখা শপথ।

ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষ।। চেনা তবু অচেনা
মুখ ও মুখোশে অদৃশ্য দানব–
কে বা’ জানে ফুল হাতে ধ্বংসে মত্ত।। কি’ই বা সব জানা
সৃষ্টি ও ধ্বংসের রঙিন প্রচ্ছদ।

কথোপকথন

চলে গিয়েও আবার ফিরে আসেন
ভুলে গিয়েও আবার ভালোবাসেন

এমন করেন কেন আপনি ?
নাকি –
এসব শুধুই আধিক্যতা,
কিংবা,
ভালোবেসে ভালোবাসার প্রবণতা।

জানেন তো…?
একবার ভালোবাসলে সারাজীবন বাসতে হয়
একবার ভুলতে চাইলেও বারবার মনে পড়ে যায়।।

কেন, জানেন আপনি?

হুমম জানি, ভালোবাসা যে এমনই,
চির শ্বাশত, চিরন্তন এক অসুখের নাম। ভুলা যায় না।

দ্বিপদী কবিতাগুচ্ছ: চয়নিকা

২৭|| || বর্তমান

ভালোবাসার জন্যই আজ শুধু ভালোবাসার কথা বলা,
বর্তমানে ভালোবাসা বুকে আঁকড়েই এই সব পথ চলা।

২৮ || || অতীত

প্রিয় ঘর আমাকে প্রতিক্ষণ’ই বলে______
আমাকে ছেড়ে যেও না, আমি’ই তোমার অতীত!

২৯ || || ভবিষ্যৎ

পথ আমাকে সব সময় মনে করিয়ে বলে____
আমাকে অনুসরণ কর, এটায় তোমার ভবিষ্যৎ!

৩০ || || অবসর

অবসরে যেখানে’ই থাকো না কেন—- মন বলে,
প্রার্থনা কর তোমার স্বীয় প্রভুর নামে!

কথোপকথন -০১

20220209_172731

চলে যাবে? এই তো এলে, সবে সূর্য হলো লাল।
গোধূলি রাঙা বিকেল। অস্থির তুমি।
যেতে হবে আজ। আসবো আবার আগামী কাল
অনেক কাজ বাঁকি। ভালো থেকো তুমি।

বস না একটু! কতদিন পর দেখা, হোক না দুটি কথা!
জানি না আজ কেন এত ব্যকুল।
দ্যাখো সন্ধ্যা নামে। পুর বীর আকাশ ছেয়ে রাত আসে।
আজ কেন কেন তুমি এত ব্যকুল?

বকুল, গাঁদা, শিউলি, চাঁপা তোমার চুলে থাকতো গাঁথা।
এখনো কি করো চুলের খোঁপা?
থাক না এসব! অন্য কিছু বল। কি লাভ আত্মদহনে?
তার চেয়ে ভালো চুপ থাকা।

হুম্! ঠিক বলেছো। যে মনে স্বপ্নের দহন জ্বলে শুধু
স্বপ্ন হারার আগুন নদে। তার চুপ থাকায় শ্রেয়।
রেগে গেলে বুঝি! এই যে রাগ করে কি পেলে জীবনে?
যে রাগে শুধু কষ্ট দিতে পারে তা বর্জনই কি শ্রেয় নয়?

তোমারও তো কম ছিল না আত্মঅহমিকা। তবুও সখী।
থাক্! বাদ দাও এসব কথা কেমন।
হুম্! সেই ভালো। স্মৃতি শুধু ক্ষত বাড়ায়। রক্ত ঝরায়।
সময় বড্ড বেহায়া! যেতে হবে এখন।

চলে যাবে! যাও, সময় পেলে এসো। আমি আছি এই
শিমুল তলা, ভাঙা সাঁকো, ধুলাবালি মিশে।
সন্ধ্যার পাখায় রাত নামে ডাহুকীর চোখ মেলে যেই,
তেমনই পাবে আমায় বসে আছি তোমার আশে।

কবিতা

2791

এক পৃথিবীর এক আকাশ
আকাশ দেখার গল্প বলি তারায় তারায়।।

হাত বাড়িয়ে আঙুল ধরে না সে,
যে গল্প বলার ছলে ক্লান্ত চোখে ঘুম নামায়।।

যেখানে সত্য শব্দের অনুরণন

2788

প্রতিদিন সূর্য উঠছে, আবার ডুবে যাচ্ছে।
এই যে সাদা-সাদা মেঘেদের নিচে
সবুজ – সবুজ ঘাসে মিশে বেঁচে আছি
আমি এক স্বপ্ন মানুষ।

যে কি না আমার আমিকে
নিঃশব্দে ডুবে যেতে দিচ্ছি গভীর সমুদ্রে।
যেখানে আমার সত্য আমার চোখে
শব্দের অনুরণন হয়ে বেজে যাচ্ছে।
আর আমি ডুবে ডুবে ঢেউ গুণি স্মৃতির সমুদ্রে।

আমার অতীত শুধুই আমার অতীত,
সে দিনগুলো স্মৃতির ক্যানভাসে যেন ধোয়া
কাদামাটির মলিন ভাস্কর্য এক।

অথচ,
জীবন ঘুরছে আর মন তার অস্তিত্ব খুঁজছে।