বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

আমি সুখি না

————
সুখ গাছের সব আম আমার ব্যাগে
কিন্তু যে দু একটি আম কোন রকমের
পাতার ভেতরে লুকিয়ে আছে
সেগুলোর জন্য আমার ঘুম নেই

মোট কথা আমি দুখি মানুষ
হতে পারে এটা আমার পাপের ফল
কিংবা মানসিক সংকীর্ণতা

পুকুরের সব মাছ আমার ব্যাগে
কিন্তু যে দু একটি মাছ পুকুরে কোন রকমে পুকুরে
লুকিয়ে আছে-সেগুলোর জন্যে আমার ঘুম নেই
এক কথা আমাকে যে কোনভাবে
দুশ্চিন্তারা ঘিরে ফেলে

আগামী পঞ্চাশ বছরের খাবার আমার
সংগ্রহে আছে
আগামী পঞ্চাশ বছরের পোশাক আমার
স্টকে আছে
আমার সাড়ে তিন হাত দেহ থাকার জন্যে
ছয় কুটরি বিশিষ্ট দোতালা একটি ঘর-ও আছে
আর বহু টাকাও আছে

তারপরেও আমার সুখ নেই
সুখ না থাকায় কি আমার বৈশিষ্ট
আমি কি সুখ চাইনি?
খাদ্য,বস্ত্র ,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা
এই আমার মৌলিক চাহিদা মিটে গেছে
মোট কথা আমার আর কি দরকার?
তাহল সুখী না হওয়াটাই হয়ত
আমার আসল বৈশিষ্ট্য।

শরীরটা পঁচে যাবে

——-
সেদিন গায়ে সাবান ঘসতে ঘসতে মনে হল
এই শরীরটা তাহলে একদিন পঁচে যাবে?
কি বিপদ! এত আদরের শরীর আমার
এত সুন্দর জামা, সুন্দর খাবার খেয়ে
শরীরটাকে খুব মজবুত রাখি
তাহলে কি শরীরের যত্ন ছেড়ে দিব?
বিষয়টা ভাবতে ভাবতে অবাক হলাম
এখন শরীরের কথা ভাবলেই মনে হয়
শরীরটা তাহলে পঁচে যাবে
তাই আর শরীরটা নিয়ে ভাবছি না
যেটা পঁচবে না, সেটা মন
সেটার যত্নেই বেশী নিব-ভাবছি।

খাওনাটোও আজকাল না বোধক বা সন্দেহে চলে গেছে

আমার কিনে দেওয়া খাবার কেউ খেতে চাচ্ছে না
—————
সেদিন নামাজ পড়তে গিয়ে খুব অপরিচিত দরিদ্র এক বৃদ্ধকে
বললমা –দাদা আপনার কি কি খেতে ভাল লাগে?
দাদা বলল-এই বয়সে দাঁত পড়ে গেছে
কিছুই খেতে পারি না

আমার দুটো পয়সা হয়েছে হয়ত
দুখি মানুষকে খুব খাওয়াতে ইচ্ছে করে
সেদিন অসহায় এক পথ শিশুকে বলতে গেলাম
বাবা তুমি কি কি খেতে চাও?-কিনে দিব
সে আমাকে ছেলে ধরা মনে করে দিল এক দৌড়

মানে আমার এক অবাক ব্যপার!
অসহায় এক নারীকে বললাম-আপনার কি খেতে
মন চায়,বলেন ,কিনে দেব।
তিনি বললেন-আমার মেয়ের ক্যানসার,সে হসপিটালে
তার জন্য কয়েক লাখ টাকার দরকার
খাওয়া প্রসঙ্গে কিছু বলার থাকল না

রাস্তাতে যেখানে পাচ্ছি তাকেই বলছি
ভাই আপনি কিছু খাবেন –কিনে দেব
কি বিপদ ! সবাই ভিন্ন ভাবছে
মানে আমি কি অজ্ঞান পার্টি ,নাকি ছেলে ধরা
খাওনাটোও আজকাল না বোধক বা সন্দেহে চলে গেছে

ছাত্র জীবনে বাসে উঠার আগে বাবা আমাকে বলে দিত
বাসে কেউ কিছু দিলে খাবি না
আমিও তাই করতাম
এখন দেখছি উল্টোটা ঘটছে
আমার কিনে দেওয়া খাবার কেউ খেতে চাচ্ছে না।

আমাকে কবি বললে লজ্জা পাই!

আমাকে কবি বললে লজ্জা পাই!
—————-

এই মধ্য বয়সে এসে হঠাৎ কবিতা লিখছি
সেজন্যে আমাকে মাঝে মাঝেই কথা শুনতে হয়
হঠাৎ প্রতিভার বিকাশ! প্রেম করেছিলেন নাকি?
মধ্য বয়সে বধি জ্ঞান লাভ! হঠাৎ লিখছেন! ইত্যাদি

মোট কথা, কবি বললে আমার খুব লজ্জা লাগে
আমার কবিতাগুলো আদও কবিতা কিনা জানিনা
সাহিত্য জ্ঞানও আমার কম
যা মনে আসে আধ খাওয়া করে একটু লিখে দিয়

এই আমার মধ্য বয়স,হটাৎ লিখছি ঠিকই
ছেড়া পাঞ্জাবি, ঝোলা ব্যাগ,কিংবা, বই চশমা
কোন কিছুই আমার সাথে নেই
আমি খাটো মানুষ পাঞ্জাবিতে আমাকে মানাবে না
মানে অবাক ব্যপার!

কবি কথাটা আমার উপর চাপাবেন না
আমার খুব লজ্জা লাগে
কিছু একটা লিখছি ঠিকই
তাই বলে তার হাত পা গজিয়ে অনেক দূর চলে যাবে!
কবি হওয়ার যোগ্যতাও হয়ত আমার নেই
কবি বললে লজ্জা লাগে
আমাকে লিখতে দিন
আর সকল সুন্দর কবিদের প্রতি রইল ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

প্রভু

(প্রভু আপনি সকল ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করেছেন। কিন্তু আপনি বোধ হয় বুঝতে পারেননি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোন অর্জন স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে হলে সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো কোন কৌশল অবলম্বন না করা।)

Lord

কাঠুরিয়া : আপনি আমাদের প্রভু, আমরা সারাক্ষণ আপনার পূজা করি, আপনার গান করি, আপনার স্তব করি, আমাকে একমুঠো ভাত দিন প্রভু। আমার দেওয়া একমুঠো ভাত আপনার ঘরে সাত মুঠো ভাত হয়ে ফিরে আসবে। আমি সাত জনম আপনার দাস হয়ে থাকব প্রভু। আমার সাত পুরুষ আপনার দাস হয়ে থাকবে।

প্রভু : তোমার ভুখ আমার ভুখ, তোমাদের দুঃখ আমার দুঃখ, এক বস্তা চাল তোমাকে দিলাম। যাবার সময় আমার গুদাম ঘর থেকে নিয়ে যাবে। যা তুমি খাবে, তোমার মাকে খাওয়াবে, তোমার স্ত্রীকে খাওয়াবে, তোমার সন্তানকে খাওয়াবে।

কাঠুরিয়া : মঙ্গল হোক প্রভুর, মঙ্গল হোক, প্রভুর সমস্ত ধন সাতগুণ হয়ে যাক। প্রভু আপনি আমাকে যে চাল দান করেছন তাতে আমার এক মাস চলে যাবে। হে প্রভু আমি এখান থেকে অর্ধেক চাল বিক্রি করে যদি একটি কুড়াল ক্রয় করি তা দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে যে উপার্জন হবে তা দিয়ে আমার সংসারের চাল সারা বছর ধরে কিনতে পারব প্রভু।

প্রভু : বৃক্ষ তোমাদের জীবন বাঁচায়, বৃক্ষ থেকে তোমার ফল পাও, ফুল পাও, জীবনের জন্য আহার পাও, আমার দেওয়া চাল বিক্রি করি তুমি কিনা সেই বৃক্ষ নিধন করবে, প্রকৃতিকে উজাড় করবে? তুমি জান কি তোমার এই ভুল পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে, পৃথিবীর জীবকুলের জীবন বিপন্ন করতে পারে।

কাঠুরিয়া : আমাকে ক্ষমা করুন প্রভু আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনও এরকম মরণ ঘাতি কাজ করার কথা চিন্তা করব না।

প্রভু : তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। গোমস্তা যাও ওকে এক বস্তা চাল দিয়ে দাও। আমি চাইনা আমার এলাকায় কেউ ভুখে কষ্ট করে দিন চালাক।
___________

গোমস্তা : প্রভু একজন ধীবর এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।
প্রভু : পাঠাও ওকে।

বহু পুরাতন সাদা রঙের গেঞ্জিটি দীর্ঘ দিনের ময়লা জমে কাদাটে রঙ ধারণ করেছে। পিঠের দিকের অংশে গেঞ্জির প্রায় অর্ধেকটা ছেড়া। লুঙ্গিতে কাদা জল মেখে আছে। মজলিশ কক্ষে প্রবেশ করতে ভয় পাও জেলেটির বুভুক্ষু’র তাগিদ তাকে সাহস জুগিয়েছে।

প্রভু : কি চাই তোমার?

ধীবর : আমার মাছ ধরার জালটি ছিড়ে গেছে প্রভু। আমি আর মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। আমার সংসারে সদস্যদের মুখে ঠিকমত অন্ন জোগাতে পারছি না। ক্ষুধার জ্বালায় আমার মেয়েটি…….।

(জেলেটি আর কথা বলতে পারছে না। হু হু করে কাঁদতে শুরু করল)

প্রভু : থামাও তোমার কান্না। আমি আমার রাজ্যে কোন কান্না দেখতে চাইনা। গোমস্তা ওকে কিছু চাল ও বাজার করার জন্য কিছু পয়সা দিয়ে……

প্রভু শেষ করার আগেই

ধীবর : প্রভু আমি কোন খাবার ভিক্ষা চাইনা। আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন তাহলে সেটা দিয়ে জাল কিনতে পারতাম, তা দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আমার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম, আস্তে আস্তে আপনার টাকাটাও পরিশোধ করে দিতাম।

প্রভু : আমি চাইনা তোমরা জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি কর। আর এই ভাবে নদীর সমস্ত মাছ উজাড় করে দাও। আমি চাই আমার রাজ্যে প্রতিটি গাছ, প্রতি মাছ নিরাপদে থাকুক। এই বিশ্বকে আমি সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চাই। বরং তুমি আপাতত আমার দেওয়া টাকা, চাল দিয়ে তোমার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দাও। কাল থেকে আমার রাজ প্রসাদের পাশে যে পুকুর গুলো আছে সেগুলো দেখা-শুনা কর। মাস শেষে তোমাকে যে টাকা দেব তাদিয়ে তোমার চলতে খুব একটা কষ্ট হবে না।

ধীবর : হে ভগবান আমাদের প্রভূকে তুমি আরও ক্ষমতা দাও, আরও সম্পদ দাও। এই রকম একজন মহান মানুষের হাতে সম্পদ গেলে সেই সম্পদতো জনগণই পাবে। মঙ্গল হোক প্রভুর, আমাদের প্রভুর মঙ্গল হোক।
___________

দুই

প্রভুর মেয়ের আজকে জন্ম দিন। রাজ্যের সকল রাস্তা-ঘাট আজ ফুলে ফুলে শোভিত করা হয়েছে। এই দিনে ও বিশেষ বিশেষ দিনগুলো রাস্তা-ঘাটের শোভা বর্ধনের জন্য কৃষকদের দিয়ে বহুমুখী ফুলের চাষ করানো হয়েছে। অবশ্যই কৃষকদেরকে ধান বা অন্যান্য ফসলে যে পরিমাণ লাভ হতো তার চেয়ে ফুল চাষে বেশি মুনাফা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রভুর মেয়ের জন্ম দিন উপলক্ষে যেমন রাজ্যের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তেমনি ভাবে রাজ্যের সকল শ্রেণীর মানুষের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে আজকে চারিদিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মেঘগুলো আজকে হাসা-হাসি করছে। নীল পবনের সাথে আকাশ সীমানা জুড়ে আজ মেঘ ও রোদ্দুরের খেলা চলছে। সূর্যের উদ্ধত হাসি পৃথিবী নামক গ্রহের প্রশান্তিতে কিছু বাগড়া দিতে চাইছে কিন্তু প্রভুর কন্যার জন্ম দিনের সমস্ত আনন্দ সূর্যের সেই উদ্ধতকে টিপ্পনী দিচ্ছে।

বিশাল আকৃতির পুরো মাঠ জুড়ে সবাইকে খেতে দেওয়া হয়েছে। সারি সারি মানুষগুলো বসে বসে খানা খাচ্ছে এবং প্রভুর নানান ধরনের স্তব করছে।

তিন

সন্ধ্যা প্রায় শেষ। পশ্চিম কোণের লাল আভার সমাপ্তি ঘটেছে। প্রতিদিনের মত আজকেও মজলিস শুরু হয়ে গেছে। প্রভু নিয়মিত ভাবে এই সময়টাতে রাজ্যবাসীর সমস্যাসমূহ শুনে থাকেন এবং তাদের সমস্যাসমূহ নিরসনে নানান সহযোগিতা করে থাকেন। সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন শিক্ষক এসেছেন।

প্রভু : আপনার কি সমস্যা মাস্টার মশায়?

শিক্ষক : প্রভু একজন শিক্ষক হিসাবে আমি যা মাইনে পাই তা দিয়ে আমার চলতে তেমন কোন কষ্ট হয় না। আর তাছাড়া আপনি যে ভাবে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করছেন তাতে কারওর তেমন কোন সমস্যা থাকারও কথা নয়। আমারও তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রভু অতি সহযোগিতার ফলে মানুষ কিছুটা কর্ম বিমুখ হচ্ছে।

প্রভু : আপনি আপনার কথা বলুন মাষ্টার মশায়।

শিক্ষক : প্রভু আমি একটু পাঠশালা ও শিক্ষার বিষয় বস্তু নিয়ে কথা বলতে এসেছি। দিন দিন পাঠশালায় ছাত্র-ছাত্রী বেড়েই চলেছে সেই তুলনায় পাঠশালা ও শিক্ষকের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। আর তাছাড়া আমরা শিক্ষা ব্যবস্থারও তেমন উন্নতি সাধন করতে পারিনি।

প্রভু : বলুন কতটি পাঠশাল আপনার চাই। সকলের শিক্ষার সুব্যবস্থা করার জন্য যতগুলো পাঠশালা দরকার ততগুলো পাঠশালা পর্যায়ক্রমে তৈরী করা হবে। সেই মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগেরও ব্যবস্থা করা হবে।

শিক্ষক : কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা…

প্রভু : শিক্ষা ব্যবস্থার আবার কি হলো?

শিক্ষক : প্রভু আমরা বহু মানুষকে লেখা-পড়া শেখাচ্ছি কিন্তু কাউকে শিক্ষিত করতে পারছি না। আমাদের লেখা-পড়া অতিত ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিহাস মুখস্ত করাচ্ছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা জানে না তারা যে অংকগুলো করছে কেন সেগুলি করছে। ভাষা শিখতে গিয়ে এত করে ব্যাকরণ শিখতে হচ্ছে যে মুল ভাষা শেখার কথা তারা ভুলেই যাচ্ছে। পরীক্ষার জন্য একই পড়া তাদের বার বার পড়তে হচ্ছে ফলে পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের পথ সঙ্কুচিত হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদের ভাষা শেখাচ্ছি, আমরা জিহাদি পথ দেখাচ্ছি কিন্তু আমরা শান্তির পথ সুখের পথ, ভালবাসার পথ দেখাচ্ছি না। জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধু করতে গিয়ে আমরা বিভেদ তৈরীর পথ শেখাচ্ছি। ধর্ম শিক্ষার নামে আমরা অধর্ম শেখাচ্ছি। ধর্ম শিক্ষা দিতে গিয়ে আমরা, আমার পথ, আমার মতই সত্য এবং অন্যের পথ, অন্যে মত ভুল; এহেন ভুল শিক্ষা দিচ্ছি। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছি কিন্তু আমাদের পুস্তকাদি অতিত ভিত্তিক। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে আমরা আবার কখনও কখনও যুদ্ধের পথও বাতলে দিচ্ছি।

প্রভু : মাষ্টার মশায় আপনি আপনার স্কুল ও ছাত্রদের নিয়ে ভাবুন; শিক্ষার বিষয় বস্তু, পদ্ধতি মান এসব নিয়ে ভাববার জন্য উচ্চ ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ গুণীজনদেরকে রাজ্যের কোষাগার থেকে উচ্চ বেতন দিয়ে পোষা হচ্ছে। তাছাড়া ইতিহাস অংক ধর্ম এসব যেভাবে শেখানো হচ্ছে তাতো ঠিকই আছে। মানুষ ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের অতীত ইতিহাস জানতে পারছে. দেশকে কিভাবে ভালবাসতে হয় তা তারা শিখতে পারছেন। মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শিখছে; আমি তো কোথাও ভুল দেখছি না। মাষ্টার মশায় আপনি আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে থাকেন। আগামী মাস থেকে আপনি আর ভার প্রাপ্ত প্রধান হিসাবে থাকবেন না প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনার বেতন পঁচিশ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হলো।

শিক্ষক : মঙ্গল হোক প্রভুর, মঙ্গল হোক।
___________

তিন

গোমস্তা : প্রভু আপনি শুনে থাকবেন যে, আমাদের পাশের রাজ্যে খরার কারণে ঠিকমত ফসল ফলাতে পারেনি। সাধারণ মানুষজন তাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। ঐ রাজ্যে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

প্রভু : গোমস্তা প্রয়োজনীয় সকলকে বলে দাও তারা জন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পাহারা দিয়ে রাখে। কোনভাবে যেন এই রাজ্যের চাল, ডাল, গম চোরাই পথে ঐ রাজ্যে যেতে না পারে। আমি কোন ভাবেই চাইনা যে, এই রাজ্যের খাবার ঐ রাজ্যে চোরাই পথে চলে যাক আর আমার রাজ্যের মানুষ খাদ্য অভাবে পড়ুক।

গোমস্তা : হুজুর এবার আমাদের রাজ্যে অনেক খাবার উৎপাদন হয়েছে। যে পরিমাণ খাবার উৎপাদন হয়েছে তা দিয়ে সারা বছরের খাবার হয়ে অনেক বেশি খাবার মজুদ থাকতে পারত। কিন্তু অতিরিক্ত খাবার মজুদের ফলে কৃষকরা তাদের ফসলের উৎপাদিত মূল্যের চেয়ে বিক্রয় করে কম মূল্য পেতে পারে এই আশঙ্কায় অতিরিক্ত সম্ভাব্য খাবার আপনার নির্দেশে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যে খাবার গুলো থাকলে এই দুর্ভিক্ষের সময় আমরা সেই খাবারগুলো তাদেরকে দিতে পারতাম। যৌক্তিক কারণে তাদের সাথে আমাদের এত দিনের তিক্ত সম্পর্ক ভাল হতে পারতো।

প্রভু : আর যদি ঐ রাজ্যে দুর্ভিক্ষ না হতো তাহলে আমার কৃষকরা সেই উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে তারাই দুর্ভিক্ষে পড়তো। এই রাজ্যের মানুষের আমিই ভাগ্য নিয়ন্তা। এরা কি ভাবে ভাল থাকবে না থাকবে সেটা নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়। যদি ঐ রাজ্যের মানুষের খুব বেশি অভাব হয় তাহলে তারা আমার রাজ্যে এসে কামলা খাটুক। তাহলে আমাদেরও উৎপাদন বাড়বে ওদের সমস্যার কিছুটা সমস্যার সমাধান হবে। দীর্ঘ দিন যাবৎ ঐ রাজ্যের দাসত্ব থেকে আমার রাজ্যের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। এখন আমার মাথা উচু করে চলতে শিখেছি। এই রাজ্যের মাটি, মানুষ আমার প্রাণতুল্য। এদের মাথা উঁচু করে রাখার জন্য আমি……….। থাক এসব বিষয় নিয়ে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইনা।
___________

গোমস্তা : প্রভু আপনার কাছে কয়েকজন মানুষ দেখা করতে এসেছে।

প্রভু: তাদেরকে বলে দাও আমি এই সময় কারওর সাথে দেখি করিনা।

গোমস্তা : প্রভু ওনারা অনেক দূর থেকে এসেছেন। সংখ্যায় দশ পনের জনের মত হবেন।

প্রভু: আমি এখন বিশ্রাম করব।

গোমস্তা : প্রভু ওনারা একটি মধ্যম শ্রেণীর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসাবে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন। তাদের অনেক সমর্থক আছেন।

প্রভু : ঠিক আছে, পাঠিয়ে দাও।

সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবী পরা কয়েক প্রৌঢ় বয়সের মানুষ। কারও কারও গলায় পৈতা পরা আছে। দু’হাত উচূ করে মাথা কুর্ণিশ করে কয়েকবার নমস্কার করলেন।

১ম অতিথি : প্রভু আমাদের এই ভুখণ্ডে আমাদের ধর্ম বিশ্বাসী সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ এবং মোহাম্মদীয় ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ৭৮ ভাগ। প্রভু এখানে যদি ৪টি মসজিদ থাকে তাহলে অবশ্যই একটি মন্দির থাকা সমীচীন কিন্তু এই রাজ্যে এমনটি পাবেন না যেখানে রাজ্যের সহযোগিতায় তৈরী করা মন্দির আছে।

২য় অতিথি : প্রভু আপনার প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। এই রাজ্যের প্রভু হিসাবে আপনাকে রাখার ব্যাপারের আমাদেরও আনুপাতিক হারে অংশীদারিত্ব আছে। প্রভু আমাদের ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আপনার সহযোগিতা কাম্য। প্রভু আপনি সকল বর্ণের, সকল ধর্মের প্রভু।

প্রভু : তোমরা চলে যাও আগামী একবছরের মধ্যে এই রাজ্যে যতগুলো মসজিদ তৈরী করা হয়েছে চার ভাগের এক ভাগ মন্দির করে দেওয়ার ঘোষণা দিলাম।

সকলে সমস্বরে বলতে লাগল-জয় হোক প্রভুর, জয় হোক।
___________

চার

গোমস্তা : প্রভুর শত শত মানুষ রাস্তায় নেমেছে, আপনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।

প্রভু : কেন শত শত মানুষ রাস্তায় নেমেছে? আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ কি? তার স্লোগান কেন দিচ্ছে?

গোমস্তা : আপনি নাকি এই রাজ্যের মন্দির নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই তারা স্লোগান দিচ্ছে স্বধর্মভ্রষ্ট প্রভুর পতন চাই। আর এ কাজে উস্কানি ও নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা আপনাকে হটিয়ে আপনার সিংহাসনে বসতে চায়। আর তারাই সাধারণ জনতাকে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে জনতাকে ভ্রষ্ট পথে পরিচালিত করছে।

প্রভু : আমি মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করতে চাইছি ঠিক, তাতে আমি স্বধর্মভ্রষ্ট হলাম কিভাবে?

গোমস্তা : এই রাজ্যে একদিকে মসজিদে আযান পড়বে আবার একই সময়ে অন্য দিকে মন্দিরে ঘন্টা পড়বে। মুমিনগণ যখন নামায পড়তে মসজিদে যাবে তখন চলার পথে তাদের চোখে মন্দিরের মূর্তি পড়বে। মুমিনদের নামায হবে না। তা ছাড়া এই পবিত্র ভূমিতে ভগবানের তুষ্টি সাধনের নামে বলিদানের পাঠার রক্তে এই পবিত্র ভূমি অপবিত্র হবে তা নাকি কেউ মেনে নেবে না।

প্রভু : কিন্তু আমরাও তো গরু কোরবানী দেই। এই পবিত্র ভূমির অধিকারী তো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও তো বলতে পারে আমাদের এই পবিত্র ভূমি গরুর রক্তে অপবিত্র হতে দেবো না।

গোমস্তা : যে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজনকে পাঠার রক্তকে অপবিত্র মনে করে সেই রাজ্যের প্রভু কেউ তাই মনে করা উচিৎ। প্রভু আমি জানি যে আপনি কোন ধর্ম বিশ্বাস করেন না কিন্তু তবু আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন, কোরবানীর সময় শত শত গরু কোরবানী দিয়ে তার মাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিলিয়ে দেন। এই রাজ্যের প্রভু হিসাবে রাজ্যকে শাসন করতে হলে আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা প্রয়োজন। অতএব, আপনার ভেবে দেখা উচিৎ হবে এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কি চায় এবং আপনাকে সেই ভাবেই সামনের দিনগুলোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রভু : আমি অনেক সংঘাতের পর এই রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম। আমি নতুন করে আর কোন সংঘাতে জড়াতে চাইনা। আন্দোলনরত মুসলিম বিদ্রোহীদের সাথে আমি আলোচনায় বসতে চাই। আমি তাদের কথা শুনতে চাই।

পরের দিন পূর্বাহ্ন…….

প্রভুর বাড়ীর সামনে হাজার হাজার আন্দোলনরত মুসলমান সমবেত হয়েছে। তাদের দাবী একটাই মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে অথবা রাজ্যের শাসনভারের দায়িত্ব থেকে সরে আসতে হবে। এমন সময়। ভীত রাজা সকলের সামনে উপস্থিত হন।

১ম বিদ্রোহী : আমরা আমাদের এই পবিত্র ভূমিতে মন্দির নির্মাণ করতে দেব না।

(না বলার সাথে সাথে উপস্থিত জনসমুদ্র না না করে উঠল।)

প্রভু : ঠিক তোমরা যা চাইছো তাই হবে।

সমস্বরে সকলে : এই পবিত্র ভূমিতে কোন মন্দির নির্মাণে আমরা সরাসরি কোন ভূমিকা রাখব না।

প্রভু : কিন্তু তোমাদের কাছে আমারও এ বিষয়ে কিছু বলার আছে।

জনতা সমস্বরে : বলুন বলুন

প্রভু : আমি তাদের মন্দির বানিয়ে দেবনা ঠিক আছে কিন্তু তাদেরকে তাদের মত করে ধর্ম পালন করতে দিতে হবে বা তারা চাইলে তারা নিজেরা মন্দির নির্মাণ করতে পারবে।

(জয়োউল্লাসে সকলে রাজ প্রাসাদ এলাকা ছেড়ে যে যার কাজে চলে গেলেন।)

পরের দিন……………

গোমস্তা : প্রভু খারাপ খবর আছে।

প্রভু : কি খারাপ খবর?

গোমস্তা : সনাতন ধর্মাবালম্বীগণ সমবেত জনগণের বিরাট অংশ রাজ প্রসাদের দিকে আসছে।

প্রভু : কিন্তু কেন?

গোমস্তা : তাদের অভিযোগ এই রাজ্যের প্রভু সাম্প্রদায়িক, তিনি মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছেন। রাজ্যের প্রভু হিসাবে আপনি যেটা করতে পারেন না। আপনি যা করবেন সকলের জন্য, সকল ধর্মের জন্য করবেন সেটাই হতে হবে কিন্তু তা হয়নি। আপনি এক সম্প্রদায়ের চাপে অন্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করেছেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের এই দাবিকে নৈতিক মনে করছে। অন্যদিকে হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র যেখানে মুসলীমগণ সংখ্যালঘু সেখানে এমনটি হতে পারে যে মসজিদ নির্মাণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে দেশের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্দোলন, অন্যদিকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ও বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক চাপ আপনাকে সিংহাসনহীন করে দিতে পারে।

প্রভু : না, সেটা হতে পারেনা, আমি সব সময় আমার দেশের জনগণের সকল কথা শুনে এসছি, তাদের সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করে এসছি। এই সিংহাসন আমি কোন ভাবেই ছাড়তে পারব না। এই সিংহাসন না থাকলে আমি আমার এই জনগণকে সেবা করতে পারব না। তাদের আমি সকল সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের সাথে কথা বলতে চাই।

গোমস্তা : প্রভু আন্দোলনরত সম্প্রদায় প্রসাদের কাছে পৌঁছে গেছে। চলুন আপনি তাদের সাথে কথা বলুন।

প্রভু: (বিদ্রোহী জনতার উদ্দেশ্যে) আপনারা কেন আন্দোলন করছেন?

সমবেত জনতা : (সমস্বরে) আপনি মন্দির তৈরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছেন না। আপনি প্রভু হয়ে এই রকম সাম্প্রদায়িক হতে পারেন না।

প্রভু : ঠিক আছে, আমি খুব দুঃখিত যে আপনাদের পুরো দাবী মানছি না বা মানতে পারছি না। তবে মসজিদ থেকে আপনারা একটু দূরত্ব্বে মন্দির নির্মাণ করুন। মন্দির নির্মাণ ব্যয়ের আংশিক অর্থ আমি নগদ অনুদান হিসাবে আপনাদেরকে দেব।

(প্রভুর এই সিদ্ধান্তে তারা পুরোপুরি খুশি হতে পারল না। তারপর তারা চলে গেলো।)

রাজ্য আজ স্পষ্টতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রভু আজ উভয় পক্ষ থেকে চরম সমালোচিত হচ্ছে। একপক্ষ বলছে প্রভু সাম্প্রদায়িক, অন্য পক্ষ বলছে প্রভু স্বধর্মভ্রষ্টা। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সারা রাজ্য জুড়ে উভয় পক্ষই সভা সেমিনার, মিছিল মিটিং করছে। প্রভু চেষ্টা করছে উভয় পক্ষের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করতে। কিন্তু কোন কৌশলই কাজ করছে না। যে যার মত করে ইস্যুটি ব্যাখা করছে। জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখতে মসজিদ মন্দির ইস্যুতে যে কৌশল গ্রহণ করেছিলেন তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে চলেছে। বিরোধী সংগঠনগুলো এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ইস্যু করে রাজনীতিতে খুবই সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করছে।

চার :

এই বছর প্রভুর রাজ্যে প্রচুর খরা হচ্ছে, বৃষ্টির অভাবে মাঠের ধানগুলো লাল হতে শুরু করেছে। একই সাথে প্রকৃতি ও রাজনৈতিক তাপে প্রভুর একেবারে টালমাটাল অবস্থা। সকলে খুবই চিন্তিত। এক পক্ষ বলছে মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করায় এই রকম দশা। অন্য পক্ষ বলছে প্রভু তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় ভগবান ক্ষুব্ধ হওয়া এই রকম করছে। রাজনৈতিক, ধর্মীয় আন্দোলনের সাথে খুবই শিঘ্রই অর্থনৈতিক আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রভু : গোমস্তা, গোমস্তা তুমি কোথায়?

গোমস্তা : প্রভু আমি তো সব সময় আপনার সাথেই থাকি। আমি আপনার চৈতন্য। আপনার যখন প্রয়োজন হয়েছে আপনি আমাকে শারিরীক অবয়ব দান করেছেন। আপনি আমাকে দাস বানিয়ে রেখেছেন। অর্থ্যাৎ আপনি আপনার নিজের বিবেককে দাস বানিয়ে রেখেছেন। যে মানুষ নিজের বিবেককে দাস বানিয়ে রেখেছে সে মানুষ কোন ভাবেই অন্যর স্বাধীনতা এনে দিতে পারে না। প্রভু অপেক্ষা করুন দেখুন কি ভয়াবহ পরিস্থিতি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রভু দেখুন একদল কৃষক এদিকে আসছে। ঐযে ঐদিকে তাকিয়ে দেখুন সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ এদিকে থেকে আসছে। দেখুন আর এক দিক থেকে মুসলীম সম্প্রদায় এদিকে আসছে। একদল কৃষক সহ সেই কাঠুরিয়া, ধীবর, সেই শিক্ষক প্রত্যেকেই আছে। আজকে তাদের সময়, আজকে তাদের সুযোগ এসেছে। আপনার স্ব-স্ব দিনে তাদের দ্বিমতকে আপনি সহমত বানিয়েছিলেন, আজকে তাদের দিনের তারা তাদের দিনকে কাজে লাগাবে।

জনৈক কৃষক : প্রভু এ বছর আমাদের খরায় সমস্ত ফসল মারা গেছে, গত বছর আমরা দাম পাবনা বলে আমাদের ফসল আমাদের নিকট থেকে বাজার মূল্যে ক্রয় করে কিছু গুদামজাত করেছিলেন এবং কিছু নদীতে ফেলেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম প্রভু কত মহান আমাদের ফসলের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করার জন্য ন্যায্য মূলে ক্রয় করে সেই ফসল নদীতে ফেলে দিচ্ছেন। আমাদের ঘামে উৎপাদিত ফসল, আমাদের খাজনার টাকায় ক্রয় করা সেই ফসল এবার আমাদের নিকটেই চড়া দামে বিক্রয় করবেন। এবং আমাদেরকে তা চড়ামূল্যে ক্রয় করতেও হবে তা-না-হলে এদেশের কৃষকরা অনাহারে মরবে। পাশের রাজ্যের মজুদকৃত খাদ্য থাকলেও আমাদের প্রভুর দেশপ্রেমের জন্য আমরা তা কিনেও খেতে পারব না। বা আমাদের প্রভু কত মহান। সমস্বরে (সকলে কটাক্ষ করে) বা বা আমাদের প্রভু কত মহান।

সনাতন ধর্মাবলম্বী : প্রভু কতিপয় স্বার্থন্বেষী মানুষ তাদের স্বার্থে ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মকে ব্যবহার করেছে আপনি তাদেরকে অনুগত রাখার জন্য নিজেই উপরন্তু তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্ম ব্যবহারকারীদের আপনি নিজের কায়েমী স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদেরকে দমন করেননি।(সকলে সমস্বরে) হ্যাঁ আপনি দমন করেননি।

মুসলিম ধর্মাবলম্বী : (সকলে সমস্বরে) আমরা স্বধর্ম ভ্রষ্টা প্রভুকে আর দেখতে চাইনা।

শিক্ষক : প্রভু আপনি এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার ঝুঁকি নেননি যে শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজ ব্যবস্থাকে একটি পজেটিভ স্থায়ী পরিবর্তন আনবে। আপনি সকল ক্ষেত্রের মত শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ধর্মীয় অন্ধত্ব, জাতীয়তাবাদের বন্ধ্যাত্ব, মনস্তত্ত্ব পরিবর্তনের জন্য কোন ব্যবস্থা চালু করেননি বা করতে দেননি। আজকে আপনি আনুগত্যের লোভে যে আনুগত্য দেখিয়েছেন তার সেই আনুগত্যের লোভই আপনাকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

গোমস্তা : প্রভু আপনি সকল ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করেছেন। কিন্তু আপনি বোধ হয় বুঝতে পারেননি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোন অর্জন স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে হলে সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো কোন কৌশল অবলম্বন না করা।

প্রভু সম্পূর্ণ স্তব্ধ, সমবেত সকল জনতাও স্তব্ধ। প্রভুর চোখ দিয়ে টপ-টপ করে পানি পড়ছে। প্রভু কিছু বলতে যাচ্ছে এমন সময়, আকাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘন কাল মেঘ গুলো দ্রুত গতিতে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে শুরু করল। শাঁ শাঁ শব্দে একটু দূরের বাতাসের শব্দ কানে ভেসে আসছে। শব্দ ও বাতাসের গতি দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। বাতাসে ধুলো-বালি আর রোদে পুড়ে মরা ফসলের টুকরো টুকরো পাতা একাকার হয়ে গেছে, ধুলোবালিতে চোখ খুলে রাখার অবস্থা নেই। নগ্ন বাতাসে মেঘেদের দিগ্বিদিক ছুটোছুটি। চারিদিকে মেঘেদের কান ফাটানো গর্জন শোনা যাচ্ছে কিন্তু কোথাও এক ফোটা বৃষ্টির পানি দেখা যাচ্ছে না তবে প্রভুর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে…….
___________

প্রুফ রিডার : বিউটি

আলমগীর কবির।

তর্ক করতে রাজি না

সেদিন আমার এক বন্ধু বলল যে
তোরতো আর কাজ নেই ,কি সব লিখিস!
ওগুলোতো কবিতা না, পাগলামি
ভাবলাম তর্ক করে আর কি হবে
সময় নষ্ট ,কথা না বলে অন্য কাজ করিগে

বউ বলল তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবন নষ্ট
আমিও উল্টো বলতে গিয়ে থেমে গেলাম
ভাবলাম তর্ক করে কি হবে ,সময় নষ্ট
থাক অন্য কাজে মন দিইগে

মোটকথা তর্ক এড়িয়ে যাচ্ছি
সেদিন এক রিক্সাআলার সাথে ভাড়া নিয়ে
তর্ক হবার উপক্রম
থেমে গেলাম , তর্ক করে সময় নষ্ট করতে
রাজি না

মোট কথা মাথায় কিছু থাকলেতো তর্ক করব
গায়েও শক্তি নেই
কেউ কেউ তর্কে হেরে গেলে চোখ রাঙ্গিয়ে শোধ তোলে
আমি তাও পারি না
কেউ কেউ তর্কে জিতে গেলে গর্বে বুক ভরিয়ে ফেলে
আমি তর্কে জিতিও না , আর দু একবার যদি
ভাগ্রক্রমে জিতেও যায় তবু গর্ব করতে পারিনা

এখন এভাবেই চলছি, আগে থেকেই ধরে নিরাম
আপনারা যা বলবেন তাই-ই সঠিক
আমি ছোট মানুষ ,বুদ্ধিতে কাঁচা
সুতরাং চুপ করে মেনে নিলাম আপনার কথা
তর্ক করতে পারব না।

অনুগল্প : ব্যাখ্যাহীন

অপরিচিত : বাহ! আপনি তো বেশ আধুনিক!
আমি : আমাকে কেউ আধুনিক বল্লে আমি কিছুটা অপমান বোধ করি!
অপরিচিত : স্যরি,
আমি : Young Man, No Problem, Don’t Worry!
অপরিচিত : কিন্তু কেন?
আমি : কারণ আধুনিকতা একধরনের রিচুয়্যাল! যার মাধ্যমে পরিবর্তনকে গ্রহণ করা হয়। সেখানে বেশ আধুনিক মানুষ হিসাবে আমাকে থাকতে হয় সহিষ্ণূ; সেটা স্রোতে গাঁ ভাসানো দলের বড়জোর সামনের সারিতে থাকার মত কিছু একটা । তাই আমার কাছে ‘আপনি তো বেশ আধুনিক‘ শব্দটি আত্ম সম্মানহানীকর প্রশংসা মনে হয়।
অপরিচিত : কিন্তু ভাইয়া আত্ম সম্মানহানীর প্রতিশোধটাতো বেশ স্মার্টলি নিলেন।
আমি : আবার তো সমস্যায় ফেলে দিলেন!
অপরিচিত : Sorry ভাইয়া! মন্দ কিছু বল্লাম নাকি?
আমি : না, মন্দ কিছু বলেননি, তবে—
অপরিচিত : তবে..?
আমি : স্মার্ট শব্দটি যে কারণে আমার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেন তাতে মনে হলো আমি সব সময় শব্দের বর্ম নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে প্রয়োজন, প্রয়োগ করি। ‘আপনি তো বেশ স্মার্ট’ শব্দটি তাই কিছুটা শান্তিহানীকর প্রশংসা মনে হয়। বলে আমি হেসে উঠলাম।
আমার হাসি শুনে প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে অপরিচিত ভদ্রলোক কিছুটা জোরে হেসে উঠলেন।
আমি : হেসে উঠলেন যে?
অপরিচিত : কেন এতে আবার কিছু হানি ঘটল নাকি?
আমি : জ্বি,
অপরিচিত : কি হানি ঘটল?
আমি : দৃষ্টি হানী ঘটল!
অপরিচিত : হাসির সাথে দৃষ্টি হানীর কি সম্পর্ক? (বলে হাসতে লাগলেন)।
আমি : হাসতে গিয়ে আমার চশমটা পড়ে গেলো যে, বলে আমি হাসতে লাগলাম।
অপরিচিত : ভাইয়া আর কিছু করব না বা বলব না যাতে আপনার মূল্যবান কিছু হানী ঘটে।
আমি : না করায় ভাল কারণ আজকের আন্ডওয়্যারটা ভাল ব্রান্ডের না।
এইবার ভদ্রলোক সত্যিই জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলেন।
পরিশেষে : এতদিন মনে করতাম যন্ত্রের যন্ত্রনায় কাতর মানুষগুলো হাসতে জানে না; শুধুমাত্র প্রবঞ্চনা, ধাপ্পাবাজী এই সব করতে পারে। আমি বলছি ঢাকার অধিবাসীদের কথা, যদিও জানি না যে ঢাকার আদিবাসীগণ হাসতে পারেন কিনা। এইতো; যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ব্যয়, সারাক্ষণ কাজ আর কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে বিরামহীন হাসি ঠাট্টা চলছেই। সময় ভাল যাচ্ছে না মন্দ যাচ্ছে সেই বিবেচানাটুকু করারও কোন সুযোগ নেই।
তবে, রাজধানীর এই একমাস সময়ের আমার সবচেয়ে অবিচ্ছেধ্য অংশ হলো-আমার মেয়েকে মিস করা, আমার মেয়ে মানে যাকে ছাড়া আমি এই পৃথীবির অস্তিত্ত্বকে এক সেকেন্ডও কল্পনা করতে পারিনা তাকে ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। ওর সাথে ফোনে কথাও বলি না, না সেটা রাগে নয়, অভিমানে নয় বা সময়ের অভাবে নয়, কারণ ফোন দিলেই ও শুধু বলে- বাবা তুমি দর্শনা অফিসে অফিস করনা কেন, তুমি আমার সাথে ঘোরনা কেন? তুমি এখনই চলে আস। এই শব্দ গুলি শোনার পর আমার যা অনুভূতি হয় সেটা কোন ভাবেই ব্যাখ্যারযোগ্য নয়। ব্যাখ্যাহীন জীবনের, ব্যাখ্যাতীত হাজারো বিষয় নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে ব্যাখ্যাহীন ফল পাওয়া যাবে তাই No ব্যাখ্যা…সকলেই ভাল থাকবে!
সকলকে ধন্যবাদ

আলমগীর কবির
লালমাটিয়া, ঢাকা।

আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ

———
কষাই আজকে সকাল উঠেই ছাগল জবাই করবে
হাতে উর লম্বা চাকু ,
কীসে উকে মানুষ জবাই করতে বাঁধা দেয়?
মুদি দোকান সিগারেট বিক্রি করবে
অনেক মানুষ উর কাছ থেকে সিগারেট কিনে খাবে
কিন্তু মুদি দোকানদান অধুমপায়ী?
কীসে উকে ধুমপান করতে বাঁধা দেয়?
বিষ বিক্রেতা বিষ বিক্রি করবে
কৃষক আজকে জমিতে সার ও বিষ ছেটাবে
হাত ভর্তি তার বিষে
কিসে কৃষককে ও দোকানীকে বিষ পানে বাধা দেয়?
হে আত্মনিয়ন্ত্রণ। প্রতিটি মানুষের কাছে কিছু
আত্মনিয়ন্ত্রণ জমা থাকে
ফলে কুলে দাড়িয়ে থেকেও সে পড়ে না
আর আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টা ভেবে প্রতিনিয়ত
অবাক হচ্ছি।

মনের জীবন

নিশ্বাস যায় যায়, ঘুরেফিরে প্রার্থনা, হাতটা পড়ে আছে পাশে, স্নায়ুতে থেমে থেমে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা, লোভী মন, মৃত্য খণ্ডাতে একের পর এক অভিনয়, নবাগত হয়ে মরণ জয়ের নেশা, পাপ পূণ্যের পিটে ঠেসেঠুসে নতুন একটি দিন, আবার অবুঝ বাসনা, পরের দিন যে অনিন্দ্য সুন্দর!

বর্ষার বিয়োগে শীতের আগমন ,প্রকৃতির মতো নির্জীব জীবন
মানুষ নয় প্রাণী হয়ে ভাবি একি খসখসে যন্ত্রনা-
ঘড়ির কাঁটায় ফিরে আসে সময়, জীবন ক্ষয়ে ক্ষয়ে, বয়সের
ভারে নতজানু দার্শনিকের চুল ঝরে, রহস্যের বরফ জমাট বাঁধে-

মাথা পা টলছে, কাঁপছে পৃথিবী ,নেশায় মত্ত না হয়ে নেশাতুর,
পাওয়া আজ না পাওয়ায় মিশেছে, রঙিন থেকে সাদা কালো, পৃথিবী একটি মৃত শব্দ, স্বাদ কোরক নষ্ট হওয়া মানুষের স্বাদ।।

আমার মধ্যে আছে এক স্পষ্ট দরিদ্রতার ছায়া

আমার মধ্যে আছে এক স্পষ্ট দরিদ্রতার ছায়া
————————–
খুব ভাল ও সুন্দর একটি শার্ট পরে ভাইভাই গেলাম
গিয়ে দেখলাম অন্যদের চাইতে আমার শার্টটা নরমাল

ঈদের নামাজ পড়তে গেলাম সুন্দর একটা পাঞ্জাবী পরে
গিয়ে দেখি এলাকার সব চেয়ে দরিদ্র লোকটি আমার
অনুরুপ পাঞ্জাবি পরে নামাজে এসেছে

সবাই বলে আমি নাকি আনস্মার্ট
আমার বউ বলে তোমার আরো ভাল ভাল পোশাক
পরা উচিৎ
কিন্তু যত ভাল পোশাক-ই পরি না কেন
আমার চলাফেরা ও পোশাক দরিদ্রদের সাথে মিলে যাই

যদি কথা বলি সেকথার মাঝে আঞ্চলিকতা থাকবেই
মাথাটা আমার নীচ ,যেন ক্ষমতাবানদের সামনে দিয়ে হাটছি
এক কথা আমার মধ্যে আছে এক স্পষ্ট দরিদ্রতার ছায়া

পকেটে টাকা থাকলেও আমাকে দরিদ্র মনে হবে
না থাকলেও আমাকে দরিদ্র মনে হবে
চেহারাতেও যথেষ্ঠ ক্লান্তির ছাপ
খেটে খাওয়া মানুষদের মত

আত্মীয়র বাড়ীতে গেলেও আমাকে একটু অবহেলা
মোট কথা আমার সাথে দরিদ্রতার যথেষ্ট মিল আছে
যদিও আমার অর্থকড়ি একেবারে সামান্য নয়

তারপরেও বাঁচতেতো হবেই
তাই মনে মনে বলি ,শান্ত্বনাবাক্য-
’’হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্ট্রের সম্মান ’’।

তাহলে কি কবিতা লেখা ছেড়ে দেব?

পড়াশুনা করে যে দরিদ্র ছেলেটি চাকরি পায়নি
আমার কবিতা তার ভাললাগবে না
যে গার্মেন্টস শ্রমিকের শরীরের অর্ধেক পুড়ে গিয়েছে
তারও আমার কবিতা ভাললাগবে না
যে কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায়নি
তারও আমার কবিতা ভাললাগবে না
যে নারী গণ ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে
তাও আমার কবিতা ভাল লাগবে না

আমার কবিতার দুটো সান্ত্বনা বাক্য
গার্মেন্ট শ্রমীককে দেওয়া বৃথা আশ্বাসের মত কি?
ধর্ষণের স্বীকার নারীর উপযুক্ত বিচার পাবার
মিথ্যা শান্ত্বনা নাকি কৃষককে দেওয়া ভর্তুকির
মিথ্যা আশ্বাস

আচ্ছা দু চারটি লাইন না নায় লিখলাম
লিখে কি হবে?
লিখে কি হবে-আগামীতে আগুনে পোড়া থেকে
শ্রমীকরা কি বাঁচবে?
রাতে ও দিনে প্রতিটি সময় ও জায়গা কি
সকলের জন্য নিরাপদ হবে?

তাহলে কি কবিতা লেখা ছেড়ে দেব?
তাহলেতো বলতেই হয়-
“ক্ষুধার জ্বালাই পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি”।

ভাগ্য

‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)

শুরুর কথা‎
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার ‎তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে ‎কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা ‎এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে ‎বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে‎
‎ সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,‎
‎ মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও ‎পূর্বনির্ধারিত, ‎
‎ ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই। ‎
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ‎ঘটছে তা হল‎
‎১.‎ ‎দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে ‎আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা ‎খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।‎
‎২.‎ সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ ‎করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট ‎করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের ‎‎যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই ‎অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?‎
‎৩.‎ বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ ‎করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের ‎তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন- ‎
‎ ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট ‎করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ ‎আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না ‎এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।‎
‎ কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা ‎মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ‎ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ‎ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে। ‎
‎৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি ‎হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন ‎তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য ‎মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।‎
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার ‎বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎‎বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা ‎করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং ‎তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে। ‎
‎ ‎
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে ‎উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে ‎সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
‎১.‎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য। ‎
‎২.‎ উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে ‎আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে ‎জানিয়ে দেয়া,‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে ‎‎যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা ‎রাখা,‎
গ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।‎
ঘ.‎ জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা। ‎
‎৩.‎ কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।‎
‎৪.‎ তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।‎
‎৫.‎ তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।‎
‎৬.‎ মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা ‎অনুযায়ী হবে।‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য ‎
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন ‎প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১ ‎
‎ ‎اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.‏
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে ‎পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)‎
তথ্য – ২‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে ‎অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে ‎যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।‎
‎ (আন’আম : ১৬৫) ‎
তথ্য – ৩‎
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا ‏الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.‏
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে,‎‏ ‏‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে ‎‎দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো ‎পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো ‎অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে ‎সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ‎আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং ‎নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার ‎বা শাস্তি দেয়া’। ‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে ‎‎দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া ‎এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ ‎করতে হবেÑ
ক.‎ সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
‎কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি ‎নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই ‎জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ ‎‎কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ ‎বিবেক-বিরুদ্ধ।‎

খ.‎ উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া‎
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-‎উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় ‎করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে ‎‎সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে ‎পারবে না।‎

গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার ‎জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া‎
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে ‎অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ‎ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর ‎লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে ‎হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা ‎পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে ‎হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।‎
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা ‎
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো ‎তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় ‎বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ ‎সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎‎কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো ‎যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই ‎শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। ‎
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা ‎অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, ‎‎যেমন‎
‎ জন্মের স্থান, কাল, বংশ;‎
‎ লিঙ্গ,‎
‎ শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,‎
‎ মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।‎
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে ‎‎(ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের ‎‎(মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ‎না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট ‎করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার ‎বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ ‎কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি ‎দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল ‎‎রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার ‎বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ‎ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।‎

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক ‎বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-‎সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ‎

ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা ‎নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া

তথ্য- ১ ‎
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ‎ ‎تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ ‏وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.‏
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর ‎‎কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি ‎‎খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা ‎নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো।‎ ‎ (বাকারা : ২৫৬)‎
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও ‎‎কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
তথ্য – ২ ‎‏ ‏
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.‏
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই? ‎
‎(বালাদ : ১০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে ‎সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।‎
তথ্য – ৩‎
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى ‏وَالْفُرْقَانِ.‏
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির ‎জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও ‎মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। ‎ ‎ (বাকারা : ১৮৫) ‎
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির ‎জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে ‎মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ‎ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
‎ অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও ‎বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে ‎দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি ‎উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক.‎ আল-কুরআন,‎
খ.‎ সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ.‎ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি‎
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের ‎‎মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ‎ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ‎মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট ‎করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ‎‎বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার ‎তাগিদ দিয়েছেন।‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) ‎প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা ‎‎যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা‎
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত ‎জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা ‎তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-‎বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-‎কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

তথ্য – ১ ‎
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.‏
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) ‎জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)‎
তথ্য – ২ ‎
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.‏
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) ‎নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত ‎করে রেখেছেন। (জাসিয়া‎‏ ‏‎: ১৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩‎
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‏وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.‏
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই ‎আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ ‎‎থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের ‎জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? ‎ ‎ (লোকমান : ২০) ‎
‎ আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের ‎আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
‎‎ মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের ‎জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন, ‎
‎‎ ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে ‎‎রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা ‎তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,‎
‎ ‎ ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ‎জন্যে ব্যবহার করতে পারে।‎
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা ‎সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ ‎‎স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ

‎ ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১ ‎
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.‏
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ‎ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯) ‎
তথ্য – ২‎
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ ‏النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.‏
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি ‎কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে ‎নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ‎অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।‎

‎ সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন‎
তথ্য – ১ ‎
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.‏
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে ‎তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা ‎অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।‎
‎ (দাহার:৩)‎
তথ্য – ২ ‎
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.‏
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা ‎নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। ‎ ‎ (দাহার : ২৯) ‎
তথ্য – ৩ ‎
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.‏
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)‎
তথ্য – ৪ ‎
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.‏
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)‎‏ ‏
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন ‎নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত ‎হয়।‎
তথ্য – ৫ ‎
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.‏
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া ‎হয়নি।‎ ‎ (বাইয়েনা : ৫)‎
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ‎ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ‎ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। ‎
তথ্য – ৬ ‎
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.‏
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে ‎পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ ‎অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।‎
তথ্য – ৭ ‎
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.‏
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি ‎পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)‎
তথ্য – ৮‎
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.‏
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ‎ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ‎ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা ‎সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে ‎‎(স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে ‎মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার ‎অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০) ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে ‎চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত ‎নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ‎ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো ‎অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা ‎এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে ‎‎সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।‎

ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা‎
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ ‎বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং ‎একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে ‎‎সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ‎জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) ‎একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি ‎জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের ‎মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ‎ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা ‎কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন। ‎
‎ আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় ‎বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা ‎যায় উপরের আয়াতখানি হতে। ‎
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?‎
বিবেক-বুদ্ধি‎
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে ‎‎যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে ‎পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% ‎যুক্তিসঙ্গতও।‎
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত ‎সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ‎ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা ‎যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ ‎‎দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।‎

আল-কুরআন ‎
তথ্য – ১ ‎
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.‏
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন ‎‎(নিজ কর্মের দোষেই আসে)। ‎ ‎ (শুরা : ৩০) ‎
তথ্য – ২ ‎
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.‏
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।‎
‎ (রুম : ৪১) ‎
তথ্য – ৩ ‎
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.‏
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ ‎‏)‏অকল্যাণ‏(‏‎ তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই ‎‎(কর্মদোষেই) হয়। ‎ ‏ ‏‎ (নিসা : ৭৯)‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .‏
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই ‎নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে ‎আনে)। (ইউনুস : ৪৪) ‎
তথ্য – ৫ ‎
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.‏
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ ‎পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না ‎করে। (রাদ : ১১) ‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, ‎কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে ‎‎দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।‎

সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট ‎এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও ‎উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
‎ ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,‎
‎ মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎
‎ ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,‎
‎ মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত ‎
‎ দেয়া হবে।‎
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে ‎‎কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার ‎উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, ‎বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন ‎নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে ‎এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা‎
‎ মানুষ দায়ী নয়।‎
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ‎ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং ‎
‎ সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত ‎হয়। ‎

‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা ‎অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার ‎সরল অর্থ ‎
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ ‎সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১ ‎
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.‏
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎‏ ‏‎(ফোরকান : ২) ‎
তথ্য – ২ ‎
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন ‎‎(জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩ ‎
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।‎
‎ (কামার:৪৯) ‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً‎ ‎‏.‏
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল ‎জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)‎

তথ্য – ৫ ‎
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.‏
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) ‎অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। ‎ ‎ (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ ‏مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ ‏الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.‏
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত ‎মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে ‎দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের ‎সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। ‎সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস
তথ্য – ১‎
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ‏وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ ‏وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.‏
‏ (رواه مسلم)‏
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন ‎আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‎‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির ‎উপর। (মুসলিম)‎
তথ্য – ২‎
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا ‏خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ ‏الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى ‏وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.‏
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) ‎লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী ‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর ‎‎(তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার ‎বিষয়টিও। ‎ ‎ (মুসলিম)‎
‎ ‎
তথ্য – ৪‎
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি ‎একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে ‎‎থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার ‎‎চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর ‎বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।‎
‎ (আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

তথ্য – ৫‎
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ ‏الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ ‏لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ‎বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) ‎তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে ‎পাবে। (বুখারী)‎
‎ ‎
‎ তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ‎ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে। ‎

কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- ‎সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা‎

প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ‎ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ‎মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের ‎
‎‎ কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,‎
‎‎ মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং ‎
‎‎ একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,‎
এক কথায় মানুষের সকল বিষ।

‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,‎

‎ কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,‎

‎ বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,‎

‎ আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের ‎শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব ‎সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।‎

‎ আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ‎কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের ‎মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ

‎ দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ ‎কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ‎ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।‎

‎  সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা ‎লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে ‎‎থাকবে।‎

‎ কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন‎

‎ সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট ‎করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ ‎আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি। ‎

‎ সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ‎ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি ‎অর্থবোধক হয় না। ‎

বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎

আরবী কদর ‎‏(تقدير)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(قدر)‏‎ শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে ‎পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-‎

‎ ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং

‎ কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, ‎নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।‎

কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে ‎তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য ‎কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার ‎উপর।‎

বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ যদি ‎পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা ‎পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, ‎‎বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং‎

‎২.‎ মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ‎ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,‎

মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ‎তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা ‎অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে ‎সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ ‎‎গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, ‎একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,‎

‎২.‎ আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।‎

তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ

সফল হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল ‎হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

‎ তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা ‎কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ‎‎(ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও ‎হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক ‎হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ

‎১.‎ কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, ‎নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা ‎বা গুরুত্ব থাকে,‎

‎২.‎ কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,‎

‎৩.‎ আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি ‎‎দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর ‎মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,‎

‎৪.‎ সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ ‎পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব ‎‎থাকবে।‎

সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর‎‏(تقدير) ‏‎ শব্দ ধারণকারী ‎বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ‎ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে ‎আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন। ‎

তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে ‎পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো ‎কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে

আল-কুরআন

وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.‏

অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎

তথ্য-২‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে ‎দিয়েছেন)। ‎‏ ‏‎(আল’আলা‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎৩) ‎

ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে ‎‎রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে ‎জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার ‎জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ‎

তথ্য-৩‎

إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏

অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)‎

তথ্য-৪‎

إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.‏

অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের ‎প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)‎

তথ্য-৫‎

وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ. ‏

অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ ‏قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا ‏أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.‏

অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ‎ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; ‎সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে ‎আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও ‎পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন ‎লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। ‎

‎(মুসলিম)‎

তথ্য-২‎

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ ‏الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ. ‏

অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। ‎সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর ‎প্রাকৃতিক আইন)। ‎

‎(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎

وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏

অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক ‎আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। ‎

‏ ‏‎(মুসলিম) ‎

তথ্য – ৪‎

وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏

অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন ‎রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ‎ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা ‎করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, ‎‎তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত। ‎‏ ‏

‏ ‏‎(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ‎ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ‎ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর। ‎

তথ্য – ৫‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ ‏أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى

অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি ‎জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল ‎করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে ‎রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না ‎যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য ‎‎পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ ‎হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে ‎সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ ‎করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট ‎সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে ‎তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-‎ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।‎

তথ্য – ৬‎

عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ ‏عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا ‏وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)‏

অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে ‎শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, ‎তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় ‎পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ‎ভরা পেটে। ‎‏ ‏‎ (তিরমিযি)‎

ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে ‎তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের ‎উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন ‎কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন ‎অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি ‎শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য ‎চাওয়া।‎

তথ্য – ৩‎

ক.‎ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ‎‎কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম) ‎

খ.‎ হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ ‎‎রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ‎ওঠে।‎ ‎ (মুসলিম)‎

গ.‎ উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর ‎সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‎‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে ‎রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। ‎আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু ‎একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‎‘সেটি হল বার্ধক্য।’‏ ‏‎(আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে‎‏ ‏মাজাহ)‎

ঘ.‎ যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি ‎আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির ‎চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে ‎পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে ‎অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল ‎‎(সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল ‎‎(সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।‎‏ ‏

‏ ‏‎(মুয়াত্তা) ‎

সম্মিলিত ব্যাখ্যা ‎

‎রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া‎‏ ‏বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় ‎সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ ‎আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি ‎‎রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত ‎করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে ‎‎রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ‎ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় ‎হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নিুর্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ‎ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে ‎হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ‎‎ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন। ‎

তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, ‎বুঝা বা বের করার উপায়

মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, ‎পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-‎বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি ‎প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের ‎করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। ‎তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা ‎প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ

তথ্য -১‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর ‎পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)‎

তথ্য -২‎

وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .‏

অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই ‎নাই? ‎‏ ‏‎(বালাদ‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎১০) ‎

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে ‎রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার ‎উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎

‎ আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি ‎মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন ‎তিনভাবে, যথাÑ

ক.‎ কিতাবের মাধ্যমে ‎

কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের ‎সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও ‎‎দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর ‎কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো ‎জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্ত‎‎রের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর ‎একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ‎ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় ‎হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না ‎তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ ‎হচ্ছে আল-কুরআন।‎

খ.‎ নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে ‎

সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ‎বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত ‎সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।‎

গ.‎ মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে

‎যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি ‎উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি ‎খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, ‎কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।‎

মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে ‎পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না

‎কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু ‎মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে ‎‎কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ‎ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। ‎চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ‎ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার ‎কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না ‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.‏

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)‎

ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। ‎এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে ‎এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, ‎কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত। ‎

তথ্য-২‎

وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.‏

অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের ‎কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন ‎না)। ‎‏ ‏‎(শুরা-৩০)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় ‎মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল ‎হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ‎ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল ‎বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন ‎না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়া সম্ভব। ‎

ব্লগ অনুসন্ধান
Search
সহযোগিতা
ফকির আবদুল মালেক
৮৩
Home Banner
সকল পোস্ট
নির্বাচিত পোস্ট
নোটিশ বোর্ড
অনুসারিত ব্লগ
ফকির আবদুল মালেক ব্লগ
নতুন ব্লগ লিখুন
পোস্টটি যিনি লিখেছেন
তাহান তাহান
অনুসরণ করুন
Understanding the Glorious Quran

মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার বিচার হবে কী করে?
‌পাহাড় এখন বারুদের স্তূপ
শুরু হলো গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম
ট্রাম্প এর আমলে কেমন থাকবে বাংলাদেশ?
ট্রাম্প আসার পর ব্যবসা না বাড়ায় হতাশ এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট
from: dw.com
‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)

শুরুর কথা‎
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার ‎তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে ‎কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা ‎এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে ‎বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে‎
‎ সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,‎
‎ মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও ‎পূর্বনির্ধারিত, ‎
‎ ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই। ‎
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ‎ঘটছে তা হল‎
‎১.‎ ‎দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে ‎আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা ‎খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।‎
‎২.‎ সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ ‎করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট ‎করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের ‎‎যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই ‎অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?‎
‎৩.‎ বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ ‎করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের ‎তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন- ‎
‎ ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট ‎করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ ‎আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না ‎এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।‎
‎ কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা ‎মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ‎ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ‎ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে। ‎
‎৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি ‎হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন ‎তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য ‎মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।‎
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার ‎বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎‎বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা ‎করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং ‎তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে। ‎
‎ ‎
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে ‎উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে ‎সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
‎১.‎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য। ‎
‎২.‎ উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে ‎আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে ‎জানিয়ে দেয়া,‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে ‎‎যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা ‎রাখা,‎
গ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।‎
ঘ.‎ জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা। ‎
‎৩.‎ কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।‎
‎৪.‎ তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।‎
‎৫.‎ তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।‎
‎৬.‎ মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা ‎অনুযায়ী হবে।‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য ‎
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন ‎প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১ ‎
‎ ‎اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.‏
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে ‎পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)‎
তথ্য – ২‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে ‎অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে ‎যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।‎
‎ (আন’আম : ১৬৫) ‎
তথ্য – ৩‎
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا ‏الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.‏
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে,‎‏ ‏‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে ‎‎দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো ‎পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো ‎অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে ‎সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ‎আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং ‎নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার ‎বা শাস্তি দেয়া’। ‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে ‎‎দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া ‎এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ ‎করতে হবেÑ
ক.‎ সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
‎কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি ‎নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই ‎জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ ‎‎কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ ‎বিবেক-বিরুদ্ধ।‎

খ.‎ উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া‎
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-‎উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় ‎করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে ‎‎সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে ‎পারবে না।‎

গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার ‎জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া‎
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে ‎অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ‎ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর ‎লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে ‎হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা ‎পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে ‎হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।‎
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা ‎
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো ‎তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় ‎বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ ‎সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎‎কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো ‎যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই ‎শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। ‎
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা ‎অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, ‎‎যেমন‎
‎ জন্মের স্থান, কাল, বংশ;‎
‎ লিঙ্গ,‎
‎ শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,‎
‎ মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।‎
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে ‎‎(ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের ‎‎(মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ‎না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট ‎করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার ‎বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ ‎কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি ‎দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল ‎‎রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার ‎বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ‎ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।‎

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক ‎বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-‎সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ‎

ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা ‎নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া

তথ্য- ১ ‎
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ‎ ‎تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ ‏وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.‏
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর ‎‎কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি ‎‎খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা ‎নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো।‎ ‎ (বাকারা : ২৫৬)‎
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও ‎‎কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
তথ্য – ২ ‎‏ ‏
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.‏
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই? ‎
‎(বালাদ : ১০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে ‎সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।‎
তথ্য – ৩‎
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى ‏وَالْفُرْقَانِ.‏
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির ‎জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও ‎মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। ‎ ‎ (বাকারা : ১৮৫) ‎
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির ‎জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে ‎মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ‎ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
‎ অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও ‎বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে ‎দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি ‎উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক.‎ আল-কুরআন,‎
খ.‎ সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ.‎ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি‎
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের ‎‎মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ‎ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ‎মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট ‎করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ‎‎বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার ‎তাগিদ দিয়েছেন।‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) ‎প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা ‎‎যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা‎
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত ‎জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা ‎তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-‎বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-‎কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

তথ্য – ১ ‎
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.‏
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) ‎জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)‎
তথ্য – ২ ‎
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.‏
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) ‎নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত ‎করে রেখেছেন। (জাসিয়া‎‏ ‏‎: ১৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩‎
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‏وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.‏
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই ‎আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ ‎‎থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের ‎জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? ‎ ‎ (লোকমান : ২০) ‎
‎ আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের ‎আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
‎‎ মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের ‎জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন, ‎
‎‎ ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে ‎‎রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা ‎তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,‎
‎ ‎ ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ‎জন্যে ব্যবহার করতে পারে।‎
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা ‎সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ ‎‎স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ

‎ ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১ ‎
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.‏
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ‎ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯) ‎
তথ্য – ২‎
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ ‏النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.‏
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি ‎কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে ‎নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ‎অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।‎

‎ সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন‎
তথ্য – ১ ‎
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.‏
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে ‎তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা ‎অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।‎
‎ (দাহার:৩)‎
তথ্য – ২ ‎
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.‏
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা ‎নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। ‎ ‎ (দাহার : ২৯) ‎
তথ্য – ৩ ‎
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.‏
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)‎
তথ্য – ৪ ‎
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.‏
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)‎‏ ‏
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন ‎নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত ‎হয়।‎
তথ্য – ৫ ‎
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.‏
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া ‎হয়নি।‎ ‎ (বাইয়েনা : ৫)‎
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ‎ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ‎ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। ‎
তথ্য – ৬ ‎
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.‏
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে ‎পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ ‎অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।‎
তথ্য – ৭ ‎
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.‏
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি ‎পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)‎
তথ্য – ৮‎
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.‏
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ‎ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ‎ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা ‎সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে ‎‎(স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে ‎মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার ‎অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০) ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে ‎চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত ‎নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ‎ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো ‎অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা ‎এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে ‎‎সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।‎

ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা‎
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ ‎বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং ‎একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে ‎‎সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ‎জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) ‎একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি ‎জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের ‎মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ‎ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা ‎কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন। ‎
‎ আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় ‎বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা ‎যায় উপরের আয়াতখানি হতে। ‎
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?‎
বিবেক-বুদ্ধি‎
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে ‎‎যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে ‎পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% ‎যুক্তিসঙ্গতও।‎
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত ‎সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ‎ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা ‎যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ ‎‎দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।‎

আল-কুরআন ‎
তথ্য – ১ ‎
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.‏
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন ‎‎(নিজ কর্মের দোষেই আসে)। ‎ ‎ (শুরা : ৩০) ‎
তথ্য – ২ ‎
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.‏
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।‎
‎ (রুম : ৪১) ‎
তথ্য – ৩ ‎
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.‏
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ ‎‏)‏অকল্যাণ‏(‏‎ তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই ‎‎(কর্মদোষেই) হয়। ‎ ‏ ‏‎ (নিসা : ৭৯)‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .‏
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই ‎নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে ‎আনে)। (ইউনুস : ৪৪) ‎
তথ্য – ৫ ‎
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.‏
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ ‎পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না ‎করে। (রাদ : ১১) ‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, ‎কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে ‎‎দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।‎

সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট ‎এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও ‎উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
‎ ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,‎
‎ মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎
‎ ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,‎
‎ মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত ‎
‎ দেয়া হবে।‎
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে ‎‎কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার ‎উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, ‎বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন ‎নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে ‎এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা‎
‎ মানুষ দায়ী নয়।‎
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ‎ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং ‎
‎ সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত ‎হয়। ‎

‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা ‎অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার ‎সরল অর্থ ‎
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ ‎সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১ ‎
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.‏
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎‏ ‏‎(ফোরকান : ২) ‎
তথ্য – ২ ‎
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন ‎‎(জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩ ‎
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।‎
‎ (কামার:৪৯) ‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً‎ ‎‏.‏
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল ‎জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)‎

তথ্য – ৫ ‎
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.‏
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) ‎অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। ‎ ‎ (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ ‏مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ ‏الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.‏
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত ‎মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে ‎দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের ‎সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। ‎সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস
তথ্য – ১‎
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ‏وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ ‏وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.‏
‏ (رواه مسلم)‏
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন ‎আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‎‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির ‎উপর। (মুসলিম)‎
তথ্য – ২‎
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا ‏خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ ‏الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى ‏وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.‏
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) ‎লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী ‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর ‎‎(তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার ‎বিষয়টিও। ‎ ‎ (মুসলিম)‎
‎ ‎
তথ্য – ৪‎
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি ‎একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে ‎‎থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার ‎‎চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর ‎বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।‎
‎ (আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

তথ্য – ৫‎
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ ‏الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ ‏لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ‎বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) ‎তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে ‎পাবে। (বুখারী)‎
‎ ‎
‎ তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ‎ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে। ‎

কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- ‎সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা‎

প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ‎ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ‎মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের ‎
‎‎ কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,‎
‎‎ মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং ‎
‎‎ একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,‎
এক কথায় মানুষের সকল বিষ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫৬
৩১২৬ বার পঠিত১১ ২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৩৯ ০
তাহান বলেছেন: (মূল পোষ্ট সম্পূর্ন ডকুমেন্টের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাকী অংশ মন্তব্য আকারে নিম্নে দেওয়া হল)

‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,‎

‎ কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,‎

‎ বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,‎

‎ আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের ‎শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব ‎সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।‎

‎ আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ‎কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের ‎মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ

‎ দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ ‎কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ‎ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।‎

‎  সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা ‎লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে ‎‎থাকবে।‎

‎ কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন‎

‎ সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট ‎করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ ‎আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি। ‎

‎ সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ‎ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি ‎অর্থবোধক হয় না। ‎

বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎

আরবী কদর ‎‏(تقدير)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(قدر)‏‎ শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে ‎পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-‎

‎ ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং

‎ কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, ‎নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।‎

কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে ‎তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য ‎কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার ‎উপর।‎

বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ যদি ‎পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা ‎পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, ‎‎বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং‎

‎২.‎ মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ‎ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,‎

মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ‎তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা ‎অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে ‎সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ ‎‎গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, ‎একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,‎

‎২.‎ আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।‎

তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ

সফল হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল ‎হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

‎ তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা ‎কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ‎‎(ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও ‎হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক ‎হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ

‎১.‎ কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, ‎নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা ‎বা গুরুত্ব থাকে,‎

‎২.‎ কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,‎

‎৩.‎ আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি ‎‎দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর ‎মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,‎

‎৪.‎ সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ ‎পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব ‎‎থাকবে।‎

সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর‎‏(تقدير) ‏‎ শব্দ ধারণকারী ‎বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ‎ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে ‎আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন। ‎

তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে ‎পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো ‎কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে

আল-কুরআন

وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.‏

অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎

তথ্য-২‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে ‎দিয়েছেন)। ‎‏ ‏‎(আল’আলা‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎৩) ‎

ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে ‎‎রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে ‎জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার ‎জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ‎

তথ্য-৩‎

إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏

অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)‎

তথ্য-৪‎

إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.‏

অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের ‎প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)‎

তথ্য-৫‎

وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ. ‏

অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ ‏قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا ‏أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.‏

অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ‎ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; ‎সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে ‎আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও ‎পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন ‎লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। ‎

‎(মুসলিম)‎

তথ্য-২‎

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ ‏الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ. ‏

অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। ‎সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর ‎প্রাকৃতিক আইন)। ‎

‎(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎

وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏

অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক ‎আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। ‎

‏ ‏‎(মুসলিম) ‎

তথ্য – ৪‎

وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏

অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন ‎রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ‎ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা ‎করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, ‎‎তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত। ‎‏ ‏

‏ ‏‎(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ‎ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ‎ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর। ‎

তথ্য – ৫‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ ‏أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى

অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি ‎জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল ‎করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে ‎রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না ‎যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য ‎‎পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ ‎হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে ‎সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ ‎করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট ‎সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে ‎তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-‎ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।‎

তথ্য – ৬‎

عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ ‏عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا ‏وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)‏

অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে ‎শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, ‎তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় ‎পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ‎ভরা পেটে। ‎‏ ‏‎ (তিরমিযি)‎

ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে ‎তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের ‎উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন ‎কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন ‎অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি ‎শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য ‎চাওয়া।‎

তথ্য – ৩‎

ক.‎ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ‎‎কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম) ‎

খ.‎ হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ ‎‎রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ‎ওঠে।‎ ‎ (মুসলিম)‎

গ.‎ উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর ‎সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‎‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে ‎রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। ‎আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু ‎একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‎‘সেটি হল বার্ধক্য।’‏ ‏‎(আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে‎‏ ‏মাজাহ)‎

ঘ.‎ যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি ‎আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির ‎চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে ‎পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে ‎অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল ‎‎(সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল ‎‎(সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।‎‏ ‏

‏ ‏‎(মুয়াত্তা) ‎

সম্মিলিত ব্যাখ্যা ‎

‎রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া‎‏ ‏বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় ‎সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ ‎আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি ‎‎রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত ‎করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে ‎‎রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ‎ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় ‎হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নির্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ‎ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে ‎হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ‎‎ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন। ‎

তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, ‎বুঝা বা বের করার উপায়

মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, ‎পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-‎বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি ‎প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের ‎করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। ‎তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা ‎প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ

তথ্য -১‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর ‎পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)‎

তথ্য -২‎

وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .‏

অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই ‎নাই? ‎‏ ‏‎(বালাদ‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎১০) ‎

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে ‎রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার ‎উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎

‎ আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি ‎মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন ‎তিনভাবে, যথাÑ

ক.‎ কিতাবের মাধ্যমে ‎

কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের ‎সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও ‎‎দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর ‎কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো ‎জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্ত‎‎রের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর ‎একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ‎ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় ‎হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না ‎তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ ‎হচ্ছে আল-কুরআন।‎

খ.‎ নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে ‎

সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ‎বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত ‎সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।‎

গ.‎ মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে

‎যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি ‎উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি ‎খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, ‎কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।‎

মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে ‎পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না

‎কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু ‎মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে ‎‎কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ‎ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। ‎চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ‎ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার ‎কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না ‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.‏

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)‎

ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। ‎এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে ‎এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, ‎কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত। ‎

তথ্য-২‎

وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.‏

অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের ‎কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন ‎না)। ‎‏ ‏‎(শুরা-৩০)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় ‎মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল ‎হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ‎ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল ‎বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন ‎না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়া সম্ভব। ‎

তথ্য-৩‎

وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ.‏

অর্থ: কোন বয়স্ক ব্যক্তির আয়ু দীর্ঘায়িত হোক বা কারোর আয়ু হ্রাস পাক তা ‎একটি কিতাবে লিখিত থাকেই। (ফাতের : ১১)‎

ব্যাখ্যা: এ আয়াত থেকে সহজেই জানা ও বুঝা যায় মানুষের আয়ু প্রাকৃতিক ‎নিয়ম অনুযায়ী বাড়ে বা কমে। আর কী কী বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) মিলিত হলে আয়ু ‎বাড়বে বা কমবে, তা আল্লাহ একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। তবে এই বৃদ্ধির ‎একটি শেষ সীমা আছে যার পর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কারো আয়ু আর বড়ে ‎না। এ কথাটিই বলা হয়েছে সূরা মুনাফিকুনের ১০ ও ১১ নং আয়াতে এবং ‎আরো অনেক জায়গায় এভাবে-‎

وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمْ الْمَوْتُ فَيَقُولَ ‏رَبِّ لَوْل أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنْ ‏الصَّالِحِينَ.وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا.‏

সরল অর্থ: এবং আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার ‎আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় (যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন) বলবে- হে আমার ‎রব, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান-সদ্কা ‎করতাম এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু ব্যক্তির (মৃত্যুর) ‎নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেন না। ‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে ‎তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী আয়ুর একটি শেষ সীমা আছে। ঐ শেষ ‎সীমায় কেউ পৌঁছে গেলে তিনি আয়ু আর বাড়ান না তথা তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক ‎আইন অনুযায়ী আয়ু আর বাড়ে না। তখন তার মৃত্যু অবধারিত হয়। ‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَنَامُ وَلَا يَنْبَغِي لَهُ أَنْ ‏يَنَامَ يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُهُ يُرْفَعُ إِلَيْهِ عَمَلُ اللَّيْلِ قَبْلَ عَمَلِ ‏النَّهَارِ وَعَمَلُ النَّهَارِ قَبْلَ عَمَلِ اللَّيْلِ حِجَابُهُ النُّورُ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي ‏بَكْرٍ النَّارُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ ‏مِنْ خَلْقِهِ. رواه مسلم

অর্থ: হজরত আবু মুসা আশ’আরী (রা.) বলেন, এক দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ‎পাঁচটি কথা নিয়ে আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ ‘১. আল্লাহ তা‘আলা ‎কখনো ঘুমান না, ২. ঘুমানো তাঁর পে সাজেও না, ৩. তিনি দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-‎নিচু করেন, ৪. বান্দাদের রাত্রের আমল দিনের আমলের পূর্বে এবং দিনের ‎আমল রাত্রের আমলের পূর্বে তাঁর নিকটে পৌঁছান হয় এবং ৫. তাঁর (তিনি ও ‎তাঁর সৃষ্টির মধ্যে) পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। যদি তিনি এই পর্দা সরিয়ে দিতেন ‎তা হলে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টির যে পর্যন্ত পৌঁছাত সমস্তকেই জ্বালিয়ে দিত’।‎‏ ‏

‎ (মুসলিম)‎

ব্যাখ্যা: ‘আল্লাহ দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-নিচু করেন’ কথাটির অর্থ হচ্ছে তাঁর সৃষ্ট ‎তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল সেটি তিনি পরিবর্তন ‎করেন। ‎

তথ্য – ২‎

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏قَالَ يَدُ اللهِ مَلْأى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا ‏أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ وَكَانَ ‏عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ. رواه البخارى

অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন Ñ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন Ñ ‘আল্লাহ ‎তায়ালার হাত (ভাণ্ডার) সদা পূর্ণ, রাতদিন অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারী দানও ‎তা কমাতে পারে না। যখন হতে তিনি আসমানÑজমিন সৃষ্টি করেছেন, তখন ‎‎থেকে কত না দান করে আসছেন অথচ সে দান তাঁর হাতে যা আছে তার কিছুই ‎কমাতে পারে নাই। (সৃষ্টির পূর্বে) তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই ‎রয়েছে দাঁড়ি-পাল্লা। তিনি তা উঁচু বা নিচু করে থাকেন। ‎

ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীসখানির ন্যায় এ হাদীসখানি থেকেও জানা ও বুঝা যায় ‎আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল তা কম বেশী করেন বা ‎করতে পারেন।‎

‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় ‎মানুষের ভুলের জন্যে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে যে ‎খারাপ ফলাফল হওয়ার কথা তা আল্লাহর মাধ্যমে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।‎

প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর অনুযায়ী, কৃতকর্মের স্বাভাবিক ‎ফলাফলকে আল্লাহ যে সকল কারণে পরিবর্তন করেন

কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে মানুষের কৃতকাজের প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে স্বাভাবিক ‎ফলাফল হওয়ার কথা তা শুধু মহান আল্লাহ পরিবর্তন করতে পারেন। মানুষের ‎নিজের পে স্বাধীনভাবে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ যে সব কারণে ‎ঐ ফলাফল পরিবর্তন করেন তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ নিজ ইচ্ছায় মানুষকে তি বা বিপদ থেকে বাঁচানো

এ কথাটি আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা ‎নং ৩৯) সূরা শুরার ৩০ নং আয়াতের মাধ্যমে।‎

‎২.‎ তাঁর কাছে করা মানুষের দোয়া

তাঁর নিকট করা দোয়ার কারণে আল্লাহ যে মানুষের কর্মের ফল বা ‎পরিণতি পরিবর্তন করেন তা কুরআন ও হাদীসের নিুের তথ্য থেকে ‎জানা যায় Ñ

আল-কুরআন

وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ. اُجِيْبُ دَعْوَةَ ‏الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.‏

অর্থ: আমার বান্দা যদি তোমার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ‎করে তবে বলে দাও আমি তাদের অতি নিকটে। কবুল করে নেই ‎প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা যদি আমার নিকট প্রার্থনা করা হয়।‎

‎ ‎ ‎ (বাকারা-১৮৬)‎

ব্যাখ্যা: এখান থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় যথার্থভাবে ‎করা দোয়ার কারণে আল্লাহ মানুষের কর্মফল বা পরিণতি ‎পরিবর্তন করেন। প্রতিটি কাজে মানুষের ভুল-ত্র“টি থাকাটাই ‎‎স্বাভাবিক। তাই কৃতকাজের ভুল-ত্র“টি মা করে আল্লাহ যাতে ‎ভাল ফলাফল দেন সে জন্যে আমাদের সকলের তাঁর নিকট ‎কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা উচিত।‎

আল-হাদীস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ ‏الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ.‏

অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‎‎তোমরা ভয়াবহ বিপদ, দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বর, মন্দ ফায়সালা ‎এবং শত্র“র আক্রমণ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।‎‏ ‏‎ ‎

‏ ‏‎(বুখারী)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানিতে রাসূল (সা.) সকল ধরনের বিপদ থেকে ‎রা পাওয়ার জন্যে অর্থাৎ কর্মপদ্ধতির দুর্বলতার জন্যে আল্লাহ ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইনে (তাকদীর) যে বিপদ-আপদ আসার ‎কথা তা থেকে রা পাওয়ার জন্যে, আল্লাহর নিকট দোয়া করতে ‎বলেছেন। দোয়ার মাধ্যমে বিপদ-আপদ তথা পরিণতি পরিবর্তন ‎হয় বলেই রাসূল (সা.) দোয়া করতে বলেছেন।‎

‎যে উপায়ে আল্লাহ কর্মের ফলাফল বা পরিণতি পরিবর্তন করেন‎

সভ্যতার বর্তমান স্তরে এসে তথা রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর ‎জ্ঞান মানুষের আয়ত্তে আসার পর, মহান আল্লাহর তাকদীর তথা প্রাকৃতিক ‎আইন পরিবর্তন করার উপায়টি বুঝা সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আমরা ‎‎দেখছি বিজ্ঞানীরা একটি পরিচালনাপদ্ধতি স্থির করে সে পদ্ধতি অনুসরণ করে ‎মানুষবিহীন রকেট মহাশূন্যে পাঠান। রকেট সে পরিচালনা পদ্ধতি অনুযায়ী ‎চলতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নিকট একটি রিমোট কন্ট্রোল থাকে ‎যার সাহায্যে তারা পৃথিবীতে বসেই ঐ পরিচালনা পদ্ধতি পরিবর্তন করতে ‎পারেন এবং বাস্তবে দরকার হলে তা করেনও।‎

মহান আল্লাহও প্রাকৃতিক আইন তৈরী করে মানুষসহ মহাবিশ্বের সকল কিছুকে ‎ঐ আইন অনুযায়ী চলা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনবোধে ‎রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর মাধ্যমে ঐ আইন পাল্টানোর মতা ‎নিজের কাছে রেখেছেন এবং প্রয়োজন মতো তা করেনও। মহান আল্লাহ তাঁর ‎রিমোট কন্ট্রোল মেশিনটির কথা নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেনÑ

بَلْ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلٌّ لَهُ قَانِتُونَ. بَدِيعُ ‏السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ.‏

অর্থ: প্রকৃত ব্যাপার হল আকাশ ও পৃথিবীর সকল জিনিসই আল্লাহর মালিকানার ‎বস্তু। সবই তাঁর (অতাৎণিক বা তাৎণিক) আদেশানুগত (ইচ্ছানুগত)। তিনি ‎মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যখন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন ‎‘হও’। আর অমনি তা হয়ে যায়।‎‏ ‏‎(বাকারা‎‏ : ‏‎১১৬,‎‏ ‏‎১১৭)‎

ব্যাখ্যা: এখানে প্রথম আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎আল্লাহর অতাৎণিক বা তাৎণিক ইচ্ছার অনুগত। অতাৎণিক ইচ্ছাটি হচ্ছে ‎তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর। দ্বিতীয় আয়াতখানিতে ‎আল্লাহ তাঁর তাৎণিক ইচ্ছা প্রয়োগ করার উপায়টি জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা ‎হচ্ছে ‘হও’ বলা। অর্থাৎ আল্লাহ ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ‎তাঁর তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন যেমন পরিবর্তন করতে পারেন তেমনই তিনি ‎তা দ্বারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে বা ঘটাতেও পারেন।‎

আল্লাহ তাঁর ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোন কাজ বা ‎বিষয়ের ফলাফল, পরিণতি বা গুণাগুণ পাল্টিয়ে দেয়ার একটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ‎আল-কুরআনের নিুোক্ত তথ্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

قُلْنَا ينَارُ‎ ‎كُوْنِى بَرْدًا وَّسَلمًا عَلَى اِبْرَاهِيْم.‏

অর্থ: আমি বললামÑ‘হে আগুন, শান্তিদায়ক ঠাণ্ডা ‘হও’ ইব্রাহীমের জন্যে।’

‎ ‎‏ ‏‎(আম্বিয়া:৬৯)‎

ব্যাখ্যা: আগুনের জন্যে নির্দিষ্ট তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন হচ্ছে পুড়িয়ে ‎‎ফেলা বা পুড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আগুনের সে তাকদীরকে তার দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও উপায় আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে ‎দিয়েছেন।‎

নমরুদ যখন পুড়িয়ে মারার জন্যে ইব্রাহীম (আ.) কে আগুনের মধ্যে নিপে ‎করল তখন তাঁর ‘হও’ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঐ ‎আগুনকে ইব্রাহীম (আ.) এর জন্যে আরামদায়ক ঠাণ্ডায় পরিবর্তন হতে নির্দেশ ‎দিলেন। আর সাথে সাথে ঐ বিশেষ স্থানের আগুন দাহ্য মতা হারিয়ে ‎আরামদায়ক ঠাণ্ডায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। এখান থেকে বুঝা যায় সকল বিষয়ের ‎তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন আল্লাহ ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের ‎‎(জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে ‎করেন।‎

মানুষ ও মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি, মহান আল্লাহ একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ লিখা অনুযায়ীই হবে- ‎কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্যের অসতর্ক ও প্রকৃত ব্যাখ্যা

প্রথমে চলুন কুরআন ও হাদীসের ঐ ধরনের বক্তব্যগুলোর কয়েকটি জেনে নেয়া ‎যাক Ñ

আল-কুরআন

তথ্য- ১‎

مَا‎ ‎اَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِى الْاَرْضِ وَلاَ‎ ‎فِىْ اَنْفُسِكُمْ اِلاَّ فِىْ كِتَابٍ ‏مِّنْ قَبْلِ اَنْ نَبْرَاَهَاطاِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ . لِّكَيْ لاَ تَأْسَوْا عَلَى ‏مَا فَاتَكُمْ وَلاَ تَفْرَحُوْا بِمَاآتَكُمْطوَاللهُ لاَيُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ.‏

অর্থ: পৃথিবীতে বা তোমাদের উপর আসা কোন বিপদ এমন নাই যা সৃষ্টির পূর্বে ‎একটি কিতাবে লিখা নাই। আল্লাহর পে এটি অতীব সহজ। তোমাদের এ ‎তথ্য জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে‏ ‏Ñ তিগ্রস্ত হলে তোমরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হও ‎এবং আল্লাহ কোন কিছু তোমাদের দান করলে গর্বিত না হও। আল্লাহ কোন ‎অহংকারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। ‎ ‏ ‏‎(হাদিদ-২২,২৩) ‎

তথ্য- ২‎

قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ‏الْمُؤْمِنُوْنَ.‏

অর্র্থ: (তাদের) বল, (ভাল-মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না শুধু সেগুলো ব্যতীত যা ‎আল্লাহ আমাদের জন্যে লিখে রেখেছেন। তিনি আমাদের সহায়। আর ‎মু’মিনদের কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।‎‏ ‏‎(তওবা-৫১)‎

ন: তথ্য- ৩‎

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ إِلاَّ بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاً.‏

অর্র্থ: কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মৃত্যুবরণ করে না। (আর তা) নির্দিষ্ট ‎কিতাবে লিখা রয়েছে। ‎ ‏ ‏‎ ‎‏ ‏‎(আল-ইমরান-১৪৫)‎

তথ্য- ৪‎

وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلاَ تَضَعُ إِلاَّ بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ ‏يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرٌ.‏

অর্র্থ: কোন স্ত্রীজাতীয় প্রাণী এমন গর্ভধারণ করে না এবং এমন কোন সন্তান ‎প্রসবও করে না, যা আল্লাহর জানা নেই। কোন দীর্ঘজীবীর আয়ু দীর্ঘায়িত হোক ‎বা কারো আয়ু হ্রাস পাক তা একটি লিপিতে লিখিত থাকেই। আল্লাহর জন্যে ‎এটি খুবই সহজ। ‎‏ ‏‎(ফাতের-১১)‎

তথ্য- ৫‎

يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَا قُتِلْنَا هَاهُنَا قُلْ لَوْ كُنْتُمْ فِي ‏بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمْ الْقَتْلُ إِلَى مَضَاجِعِهِمْ ج

অর্র্থ: তারা বলে আমরা যদি কিছু কলা-কৌশল খাটাতে পারতাম তাহলে এখানে ‎খুন হতাম না। তুমি বলে দাও, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও ‎যাদের মৃত্যু লিখা ছিল তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে আপনা থেকেই ‎‎পৌঁছে যেত। ‎‏ ‏‎(আল-ইমরান- ১৫৪)‎

আল-হাদীস

তথ্য- ১‎

عَنْ عَبْدِاللهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ (رض) قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهِ ‏عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ فِي ‏بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ‏ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعٍ بِرِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ ‏سَعِيدٌ فَوَاللهِ إِنَّ أَحَدَكُمْ أَوِ الرَّجُلَ يَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا ‏يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ بَاعٍ أَوْ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ ‏بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‏حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذِرَاعٍ أَوْ ذِرَاعَيْنِ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ ‏الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا. رواه البخارى

অর্র্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, বিশ্বাসী ও ‎বিশ্বস্ত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে ‎চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্রবিন্দুরূপে জমা থাক। তারপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘আলাক’ ‎এবং এরপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘মুদগাহ’ রূপে থাক। তারপর আল্লাহ তা’আলা ‎একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং তাঁকে রিযিক, মউত, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য ‎‎- এ চারটি ব্যাপার (লিপিবদ্ধ করার জন্যে) নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি আরও ‎বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ (অথবা বলেছেন কোন ব্যক্তি) ‎জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে, এমন কি তার এবং জাহান্নামের মাঝে ‎‎কেবলমাত্র এক হাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় লিখাটি তার ‎ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে ‎‎দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি বেহেশ্তীদের আমল ‎করতে থাকে, এমন কি তার ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা ‎‎দু’গজের ব্যবধান থাকে, এমন সময় ঐ লিখাটি তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ‎আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ ‎করে। ‎ ‎ ‎‏ ‏‎(বুখারী ও মুসলিম) ‎

তথ্য- ২‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ ‏عَزَّ وَجَلَّ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ يَا رَبِّ عَلَقَةٌ يَا ‏رَبِّ مُضْغَةٌ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهُ قَالَ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى شَقِيٌّ أَمْ ‏سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالْأَجَلُ فَيُكْتَبُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ.رواه البخارى

অর্র্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ‎বলেন- আল্লাহ তা’আলা রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিয়োজিত ‎করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রভু! এটি ‘ফোঁটা’। হে প্রভু! এটি ‘আলাক’। হে ‎প্রভু! এটি ‘মুদগাহ’। আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর সৃষ্টি পরিপূর্ণ করতে চান, তখন ‎‎ফেরেশতা বলেন, হে প্রভু! এটি নর হবে, না নারী? এটি হতভাগ্য হবে, না ‎ভাগ্যবান? তার জীবিকা কী পরিমাণ হবে? তার আয়ুষ্কাল কী হবে? তখন ‎‎(আল্লাহ তা’আলা যা নির্দেশ দেন) তার মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ঐ রূপই ‎লিপিবদ্ধ করা হয়।‎

তথ্য- ৩‎

অর্র্থ: হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন রাসূলে করীম (সা.) ‎‎দু’হাতে দুটি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান এই দু’টি ‎কিতাব কী? আমরা বললামঃ জী না, কিন্তু আপনি যদি আমাদের বলে দেন। ‎তখন হুজুর আপন ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি আল্লাহ ‎রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব, এতে সমস্ত বেহেশতীর নাম, ‎তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এবং এতে কখনো বেশীও ‎হবে না এবং কমও না। অতঃপর তাঁর বাম হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে ‎বললেনঃ এটাও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব। এতে ‎‎দোজখীদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এদের ‎‎শেষ ব্যক্তির নামের পরও সর্বমোট একুন করা হয়েছে। সুতরাং এতেও কখনো ‎‎বেশী এবং কম করা যাবে না। ‎

তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি ব্যাপার এরূপ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েই থাকে, ‎তবে আমলের কী দরকার হুজুর? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেনঃ তোমরা সত্য ‎পথে থেকে ঠিকভাবে কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের তথা সকল ‎কাজে নির্ধারিত ১০০% সঠিক ফলাফলের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা কর। কেননা, ‎‎বেহেশতী ব্যক্তির অন্তিম কাজ বেহেশতীদের কাজই হবে, (পূর্বে) সে যে আমল ‎করে থাকুক না কেন। এইরূপে দোজখী ব্যক্তির অন্তিম আমল দোজখীদের ‎আমলই হবে (পূর্বে) সে যে আমলই করে থাকুক না কেন।’ অতঃপর তিনি ‎নিজের দুই হাতে ইশারা করলেন এবং কিতাব দুটিকে (নিজের পিছনের দিকে) ‎‎ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের পরোয়ারদেগার আপন বান্দাদের সকল বিষয় ‎‎(যথাযথভাবে) শেষ করেছেন। একদল বেহেশতে যাবে। একদল দোজখে ‎যাবে। ‎ ‎ (তিরমিজী)‎

তথ্য- ৪‎

অর্র্থ: আলী (রা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা.) এর সঙ্গে ‎উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে ছিল একটি লাঠি, যা দিয়ে তিনি মাটি ‎খুঁড়ছিলেন। তিনি তখন বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার ‎ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। লোকদের ভিতর থেকে এক ‎ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তা হলে (এর উপর) নির্ভর করব ‎না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমল কর। কেননা, প্রচেষ্টাকৃত কাজে সফল হওয়া ‎সকলের জন্যে সহজ করা হয়েছে। এর পর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ

فَاَمَّا مَنْ اَعْطَى وَاتَّقى.‏‎ (বুখারী)‎

আলোচ্য বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা ‎

আলোচ্য কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকে যে তথ্য ‎মুসলমান সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হচ্ছে-‎

‎১.‎ আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকে লিখে রেখেছেন Ñ

‎ প্রত্যেক মানুষের সকল কাজের একটিমাত্র ফল, ‎

‎ সকলের মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ,‎

‎ প্রত্যেকের জন্যে বেহেশত বা দোযখের কোন একটি ঠিকানা।‎

‎২.‎ ঐ লিখন মানুষের চেষ্টা-সাধনা দ্বারা একটুও পরিবর্তন হয় না।‎

পূর্বে উল্লিখিত (৩০ ও ৩১ নং পৃষ্ঠা) ‘তাকদীর’ শব্দ ধারণকারী কুরআন ও ‎হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা যে সকল কারণে ইসলামে গ্রহণযোগ্য ‎হতে পারে না, আলোচ্য বক্তব্যসমূহের উল্লিখিত ব্যাখ্যাও সেই একই কারণে ‎ইসলামে কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।‎

বক্তব্যসমূহের প্রকৃত বা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা

বক্তব্যসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা করা ও বুঝার জন্যে, যে বিষয়গুলো মনে রাখতে ‎হবে তা হচ্ছে Ñ

ক. পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের মাধ্যমে আমরা ‎‎জেনেছি কোন একটি কাজের চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতির পথে অসংখ্য ‎পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় বা উপাদান (ঋধপঃড়ৎ) আছে। যেমন Ñ‎

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা ও তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎২.‎ কর্মপ্রচেষ্টা ও পদ্ধতি এবং তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎৩.‎ ধৈর্য, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ ইত্যাদি ও তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎৪.‎ মানুষের দ্বারা আল্লাহর নিকট করা দোয়া ও তার বিভিন্ন ধরন এবং

‎৫.‎ আল্লাহর নির্ধারিত করে রাখা ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা ‎অসংখ্য বিষয়।‎

খ.‎ ঐ অসংখ্য পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয়ের একটি পরিবর্তন হয়ে গেলে ‎একটি কাজের ফল বা পরিণতি পরিবর্তন হয়ে যায়।‎

গ.‎ অসংখ্য পরিবর্তনশীল বিষয় পরিবর্তিত (চবৎসঁঃধঃরড়হ ঈড়সনরহধঃরড়হ) ‎হয়ে একটি কাজের ভাল বা মন্দ অসংখ্য ফল বা পরিণতি হতে পারে।‎

ঘ.‎ প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ কোড (উঘঅ ঈড়ফব) ভিন্ন এবং ঐ উঘঅ এর ‎ভিত্তিতে প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে কিছু বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও ‎বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন পায়। প্রতিটি মানুষের ঐ উঘঅ ঈড়ফব এবং ‎জন্মগতভাবে পাওয়া বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের কথা ‎আল্লাহর জানা আছে।‎

ঙ.‎ আল্লাহ আলোচ্য বক্তব্যসমূহে কোথাও বলেননি তিনি উল্লিখিত কিতাবে ‎প্রত্যেক কাজ বা বিষয়ের একটিমাত্র ফল বা পরিণতি লিখে রেখেছেন।‎

তাই পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির সকল তথ্যের সাথে ‎সংগতি রেখে আলোচ্য বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে তা ‎হচ্ছে Ñ

‎ উঘঅ এর ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া ‎শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের সঙ্গে,‎

‎ কার্য সম্পাদনের পথে উপস্থিত থাকা সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) ‎বিষয় বা বস্তু ব্যবহার করে যত ধরনের ভাল বা মন্দ ফলাফল হওয়া ‎সম্ভব, একজন মানুষের প্রতিটি কাজের সে সকল ধরনের ফলাফল,‎

‎ বেঁচে থাকা বা মৃত্যু হওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য সকল পরিবর্তনশীল ‎‎(ঠধৎরধনষব) বিষয় ব্যবহৃত হয়ে প্রতিটি মানুষের মৃত্যু ঘটার সম্ভবপর ‎সকল উপায়, সময় ও স্থান,‎

‎ আমল, ওজর, অনুশোচনা, উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা, তওবা ইত্যাদি সকল ‎পরিবর্তনশীল বিষয়ের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে ‎একজন মানুষ যে সকল অবস্থায় বেহেশ্ত এবং যে সকল অবস্থায় ‎‎দোযখ পাবে তার সকল অবস্থা,‎

মহান আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। আর যেহেতু ‎আল্লাহ সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় নির্ভুলভাবে বিবেচনা করে এবং ‎তিনকালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) জ্ঞানসহকারে তা লিখেছেন তাই ঐ ‎লিখায় একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাপারে যতগুলো অবস্থান বা ‎ফলাফল লিখা আছে তার বাইরে কোন অবস্থান বা ফলাফল ঘটবে না বা মানুষ ‎ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ে সকল পরিবর্তনশীল জিনিস ব্যবহার ‎করে ব্যক্তি মানুষ যে অবস্থায় বা ফলাফলেই পৌঁছাক না কেন, ঐ কিতাবে তা ‎লিখা পাওয়া যাবে বা লিখা আছে। আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ‎এরকম হলে তা পূর্বে আলোচনাকৃত আল-কুরআনের সকল বক্তব্যের সাথে ‎সামঞ্জস্যশীল হয়। কারণ তা হলে-‎

‎১.‎ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টা প্রয়োগের সুযোগ ও মূল্য ‎‎থাকবে। তাই মানুষ কর্মফলের জন্যে দায়ী থাকবে।‎

‎১.‎ তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী সকল বিষয় ‎সম্পাদন হওয়ার কারণে তা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ীই হবে।‎

‎২.‎ মহান আল্লাহর মহাবিশ্বের সকল কিছুর নিখুঁত জ্ঞান থাকার ফলেই তা ‎লিখে রাখা সম্ভব হয়েছে স্বীকার করে তৌহীদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ‎একটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া হবে।‎

তাই আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের এ ব্যাখ্যাটিই শুধু ইসলামে গ্রহণযোগ্য ‎হবে। আল্লাহ যে একটি কাজের ১০০% সঠিক ফলাফলটিসহ, সঠিক ও ভুল ‎উভয় দিকের সম্ভবপর সকল ফলাফল ঐ কিতাবে লিখে রেখেছেন তার প্রমাণ ‎পাওয়া যায় কুরআন ও হাদীসের নিম্নোক্ত তথ্য থেকে‎

আল-কুরআন‏.‏

অর্র্থ: কোন বিষয় সম্বন্ধে কখনও এরকম বল না যে আমি আগামীকাল সে ‎কাজটি করব। (তুমি কিছুই করতে পার না) যদি আল্লাহ তা না চান। ভুলবশত ‎এরূপ বলা হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তোমার রবের স্মরণ করবে আর বলবেÑআশা ‎আছে আমার রব ঐ ব্যাপারে (১০০%) সঠিক পথটির নিকটবর্তী পথের দিকে ‎আমাকে পথ দেখাবেন। (কাহাফঃ ২৩, ২৪)‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে রাসূল (সা.) কে একটি কাজের ১০০% সঠিক পথটির ‎কাছাকাছি থাকা অবস্থানের জন্যে পথ দেখাতে তাঁর নিকট আশা তথা দোয়া ‎করতে বলেছেন। এখান থেকে বুঝা যায় কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎বক্তব্যসমূহে উল্লেখ থাকা কিতাবে, সঠিক ও ভুল উভয় দিকের সকল ‎পরিবর্তনশীল জিনিস (ঋধপঃড়ৎ) গ্রাহ্যে এনে, একটি বিষয় বা কাজের সম্ভবপর ‎সকল ধরনের ভাল বা খারাপ ফলাফল আল্লাহ্ লিখে রেখেছেন।‎

আল-হাদীস‏.‏

অর্থ: আমল কর এবং নিজের সাধ্য মত সর্বাধিক সংখ্যক সঠিক কাজ করার ‎‎চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থেক। জেনে রেখ, কোন ব্যক্তিকে শুধু তার ‎আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।‎

সাহাবায়ে কিরামগণ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ‎আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি উত্তর দিলেন-‎

অর্থ: না, আমিও না, যদি না আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত ‎করেন। ‎ ‎ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)‎

ব্যাখ্যা: আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত বাস্তব যে কথাটি রাসূল (সা.) হাদীসখানির ‎‎শেষে উল্লেখ করেছেন, সে কথাটি দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করলে পুরো হাদীসখানা ‎বুঝতে সহজ হবে। ‎

হাদীসখানির শেষে রাসূল (সা.) বলেছেন, নিখুঁতভাবে সকল আমলে ‎সালেহ পালন করে পৃথিবীর কেউই এমনকি তিনিও জান্নাতে যেতে পারবেন না। ‎কারণ, সকলের জীবনেই কোন না কোন আমল করার ব্যাপারে কিছু না কিছু খুঁত ‎‎থাকবেই। আর ঐ খুঁত আল্লাহ মাফ করে দিলেই শুধু জান্নাত পাওয়া সম্ভব হবে। ‎

তাই হাদীসটির প্রথমে রাসূল (সা.) বলেছেন, যত বেশি সংখ্যক আমল ‎ঈমানের দাবি অনুযায়ী পালন করা সম্ভব তা যথাযথভাবে করার চেষ্টা অবশ্যই ‎করতে হবে। আর যখন কোন আমল, বাধ্য হয়ে ছাড়তে হবে তখন সত্যের ‎কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ কোন আমল ছাড়ার জন্যে গুনাহ না হওয়ার যে ‎সীমারেখা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তার কাছাকাছি তথা প্রায় সমান বা ‎মাঝামাছি গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ তা ‎ছাড়তে। কারণ ঐ রকম কাছাকাছি থাকলে আল্লাহ রহমত করে তাদের গুনাহ ‎‎দুনিয়া বা আখিরাতে কোন না কোনভাবে মাফ করে দিবেন।‎

‎ ‎

‘জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয় তিনটি পূর্ব নির্ধারিত’

বহুলপ্রচারিত‏ ‏কথাটির সঠিক পর্যালোচনা‎

মুসলিম সমাজে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয়গুলো পূর্বনির্ধারিত কথাটি ব্যাপকভাবে ‎চালু আছে এবং প্রায় সবাই তা বিশ্বাসও করে। তাই চলুন এবার এ বিষয়টি ‎পর্যালোচনা করা যাক ‎

‎যে বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ যে বিষয়ে মানুষের ইচ্ছা ও কর্ম প্রচেষ্টার কোন ‎ভূমিকা নেই সেটি সঠিকভাবে করতে পারা বা না পারার দরুন পুরস্কার বা শাস্তি ‎‎দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। এটি সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজ বোধগম্য ‎একটি কথা। তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী‎

‎‎ বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত হয় তবে তার কোনটি সঠিকভাবে পালন ‎করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।‎

‎‎ বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত না হয়ে থাকে তবে তার প্রত্যেকটি

সঠিকভাবে পালন করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া‎

যুক্তিসঙ্গত হবে।‎

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী দেখা যায়‎

‎‎ জন্মের স্থানের ভিত্তিতে মানুষের পুরস্কার বা শাস্তির বিধান নেই। অর্থাৎ ‎মুসলিমের ঘরে বা মক্কা শরীফে জন্ম হলে যেমন পুরস্কার নেই, ‎‎তেমনই পতিতার ঘরে বা হিন্দুস্থানে জন্ম হলে কোন শাস্তি নেই। ‎

‎‎ আত্মহত্যা করলে ইসলামে কঠিন শাস্তির বিধান আছে। ‎

‎‎ হিন্দু মেয়ে মুসলিম না বানিয়ে বিয়ে করলে শাস্তির বিধান আছে। ‎

এর কারণ হল-‎

‎  জন্মের স্থান ও সময় পূর্বনির্ধারিত। মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার এ ‎ব্যাপারে কোন ভূমিকা নেই। ‎

‎  মুত্যুর কারণ ও সময় পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার‎

‎ সেখানে ভূমিকা আছে। ‎

‎  বিবাহ পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার এখানেও ভূমিকা ‎আছে। ‎

‎শেষ কথা‎

তাকদীর সম্পর্কিত কুরআন-হাদীসে উপস্থিত থাকা আপাত বিপরীতধর্মী বক্তব্য ‎নিয়ে নিষ্ঠাবান মুসলিমদের মনে মনে যে দ্বন্দ্বে পড়তে হয় বা দুষ্ট লোকদের ‎টিটকারীমূলক বক্তব্য নিয়ে যে দুরবস্থায় পড়তে হয়, আশা করি তা নিরসনে ‎পুস্তিকাটি সহায়ক হবে। এর ফলস্বরূপ আশা করা যায় মুসলিম জাতি তাকদীর ‎তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইনের সাথে তাদের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টার ‎‎যে সম্পর্ক, সেটি ভাল করে বুঝে নিয়ে জীবনের সকল দিকে কর্মপ্রচেষ্টা ‎যথাযথভাবে বাড়িয়ে দিবে। আর এর চূড়ান্ত ফলস্বরূপ পূর্বের ন্যায় তারা আবার ‎পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বা বিজয়ী হতে পারবে ইনশাআল্লাহ্।‎

ভুল-ত্র“টি ঈমানদারীর সাথে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রেখে এবং সঠিক হলে ‎ঈমানদারীর সাথে তা গ্রহণ করে শুধরিয়ে নেয়ার ওয়াদা রেখে এবং আপনাদের ‎‎দোয়া চেয়ে শেষ করছি। আল্লাহ্ হাফেজ! ‎

সমাপ্ত

হে প্রতিদিন আমি অন্যায় করি

হে প্রতিদিন আমি অন্যায় করি
——————-
প্রতিদিন আমি কিছু অন্যায় করি বলেই
আমি রোবট নয়
গাছ পালাও নয় ,অন্য কোন প্রাণী নয়
শুকনো ডাল পালা নয়

প্রতিদিন আমি অন্যায় করি
আফসোস করি, প্রায়শ্চিত্ত করি
খোদার কাছে ক্ষমা চাই
ফলে আমার নিজেকে শুকনো বস্তু
প্রাণহীন সত্ত্বা মনে হয় না

প্রতিদিন আমি জেনে না জেনে
অন্যায় করি ফলে আমার আফসোস হয়
ফলে আমার চিন্তার জগৎ জীবন্ত থাকে
নিজেকে মানুষ মনে হয়
পৃথিবীতে আমার জীবনটা স্বার্থক মনে হয়

যে ব্যক্তি আজ হত্যা করবে
যে ব্যক্তি আজ হত্যার স্বীকার হবে
উভয়েই দুর্ভাগা কিন্তু মানুষ
উনাদেরকে তাড়িয়ে আমরা পৃথিবীকে স্বর্গ বানাব
না হত্যাকারী ও হত্যার স্বীকার হওয়া ব্যক্তি
কালক্রমে পৃথিবীতে আসতেই থাকবে

খাদ্যে ফরমালিন দিয়ে মানুষ হত্যা
মনের কষ্ট দিয়ে মানুষ হত্যা
গোপনে নারীর গর্ভপাত বা শিশু হত্যা
মানুষের আশা নষ্ট করে মানুষ হত্যা
আমি কোন না কোন হত্যাকারী

হে আমি অন্যায়কারী,প্রতিদিন আমি
আমার কৃতকর্ম ও অন্যায়কে স্বীকার করি
আর অন্যায়কারীদের ভালবাসি

অন্যায় করি বলেই আমি মানুষ
অন্যায় করি বলেই আমি খোদার কাছে
বলতে পারি হে খোদা আমাকে ও অন্যদের
ক্ষমা কর
অন্যায় করি বলেই খোদার কাছে আমার ভাষা
আসে
অন্যায় করি বলেই খোদার কাছে আমার নিজেকে
ছোট মনে হয়

অন্যায় করে ক্ষমা চাই বলেই আমার অন্যায়
সীমিত হয় ,সীমারেখা থাকে
অন্যায় করে স্বীকার করি বলেই
আমার অন্যায় বেশীদূর পৌছায় না
তবে সকল অন্যায় কারীকে ভালবাসি
কারণ অন্যায়কারীরাও মানুষ।

আত্মচিন্তন-৬

আত্মচিন্তন-৬

জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে অসংখ্য ছোট বড় ঘটনা থাকে যা আমরা কোনদিনই সব জানতে পারি না । ঘটনা ঘটার আগেই বা ঘটার সময় বুঝতে পারলে জীবন এত ঘটনা বহুল হতো না নিশ্চয়ই !
তবুও, এতসব ঘটনা ঘটে বলেই হয়তো জীবন এত সুন্দর !!!
তাই নয় কি ?

বিচ্যুতি

ঝুপ ঝুপ এক পশলা বৃষ্টির মতো রক্তের দাগ, নরকের রক্ত খাদক ; পায়ে পিটে বেড়ী, স্বর্গ থেকে ক্রমশ দুরে সরে যোজন যোজন, মানুষের ঈশ্বরকে কাছে টানতে নিজের ঈশ্বরকে বলিদান, ভিতরে ভিতরে অন্যজন করছি লালন।

পর জন্মের মাঝে ব্যবচ্ছেদ টেনে, মানুষ তোমার আমার
এক জন্মে, এক নৌকায়, রেখা ,শত শত বিচ্যুতি –
অকৃত্রিম গোলাপ, বাতাসে বাষ্পে গন্ধ, তবু মিলনের মাঝে অযুত পথে
হাইড্রার আগমন ভিলেন রূপে।

তোমরা মানুষ ভেবে ভুল কর বার বার কিন্তু আমি করেছিলাম শুধু
এক বার, তারপর….তারপর চন্দ্রগ্রহণের শেষে চাঁদ ওঠেনি।