বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

আমার অবাক শিশুটি


——
আমাকে অবাক করে আমার শিশুটি
কোন একটি ঠুনকো বিষয়কে নিয়ে ও হেসে ওঠে
সামান্য একটা জিনিস নেড়েই ওর শান্তি
একে বারেই গুরত্বহীন একটি বিষয়ের দিকে
ও চেয়েই রইবে
ও কোন দিকে হেটে যাবে ও যেন নিজেই জানে না
এক নিশ্বাসে ও ছুটে যাবে ওর মার কাছে
আবার আমার কাছে ফিরে আসবে

এই বড় পৃথিবীকে আমার তেমন কোন সম্পদ নেই
আমার একটিই সম্পদ –আমার শিশুকে দেখলে
আমার চোখ ভরে
ও আমার দিকে এক নিশ্বাসে ছুটে আসে
ও আমাকে খুব ভালবাসে।

একলাই পাবে

——–

আমাকে একলাই পাবে
পথে পথে আমি একাই হাটি
একাই ভ্রমর হয়ে ফুলে ফুলে ঘুরি
একাই বনে আসি
নদীতে যাই
প্রিয়সী আমি একলাই থাকি

প্রতিদিন আকাশের সব তারা দেখা যাবে না
প্রতিদিন সব ভ্রমর দেখা যাবে না
প্রতিদিন সব জোস্না দেখা যাবে না

প্রিয়সী আমি একলাই আছি
একলাই কোলাহল পাশ দিয়ে যাই আসি
একলা একলাই সব খানে ঘুরে আসি।

আত্ম – বিশ্লেষন – ০৩

আজও জীবনের চাওয়া পাওয়া গুলি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
বিষন্নতায় ভরে থাকে রাতের বাসরের প্রতিটি ক্ষন,
অনুভূতিহীন শরীরে শরীরে ঘর্ষন
হৃদয় মন পিষে ক্ষয় হয় অব্যক্ত বেদনায়।
যেন পরিপূর্ন চেতনাবোধের অবসান।
শিউলী ও কামিনী ফুলের সুভাস ও সৌন্দর্য মিশ্রিত ভোর।
বন-উপবনে পুষ্পের ছড়াছড়ি,
নয়ন-মন, হৃদয়কে করে তোলে মুগ্ধ।
নদীর তীরে কাশফুলের কমল-ধবল রূপে মাতোয়ারা প্রকৃতি
জ্যোসনা-প্লাবিত রাতে জাগে স্বপ্নের শিহরণ।

খাদ্যের কিছু জীবন অভ্যাস

মানুষের জীবন লোভের ভাণ্ডার। যত পায় আরও চায়। সন্তুষ্টি তার জীবনে সাময়িক। তবু সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বয়স যখন চল্লিশ পেরিয়ে যায়।
১। সবসময় পরিমিত আহার করা উচিত। পেট ভরে খাওয়া চলবে না। অর্থাৎ পেটের কিছু অংশ খালি রেখে দেওয়া উচিত। কেন না আমরা বেশিরভাগ খাওয়ার খাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সেই খাওয়ার হজম হলেও শরীরে তা শুধু জমা হয়। জমার পরিমাণ বাড়ছে কমছে খরচ। ফলে সুগার, পেশার, ওজন বেশি, ভুঁড়ি বাড়া হার্টের রোগ ইত্যাদি নানান রোগের বাসাও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ যত জমা তত রোগের আমন্ত্রণ।
২। নিয়মিত শরীরকে কাজে লাগানো দরকার। সকালের মর্নিং ওয়াক। সম্ভব না হলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে হাঁটাচলা করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু হাঁটা দরকার। হাঁটার চেয়ে বড় ব্যায়াম কিছু নেই। শারীরিক কসরত যোগব্যায়াম খেলাধূলা ইত্যাদি করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু যদি এগুলো সম্ভব না হয় তাহলে শুধু হাঁটা। সকালের শীতল ছায়ায় কিংবা বিকেলের মৃদু মন্দ হাওয়ায় শুধু হাঁটা। হাঁটলেই আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের নড়াচড়া হয়। জোরে হাঁটা বা দৌড়নো নয়। শুধু হাঁটা। এতেই আপনার শরীরের জমা খরচ হবেই। তার মানে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই হাঁটবেন। হাঁটতে ভয় পাবেন না।
৩। যেখানেই যান না কেন সাথে জল এবং শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুটের প্যাকেট) ক্যারি করবেন। জল আমাদের দেহের বাহক। অর্থাৎ আমরা যা কিছু খাবার ইনটেক করি তার অপ্রয়োনীয় বাইরে বের করতে এই জল কার্যকরী। জলে যদি ক্রমাগত অশুদ্ধি থাকে বা কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর সচল রাখার জন্য দেহজ জমা রাখা ও খরচ করার সুনির্দিষ্ট কাজ ব্যহত হয়। অর্থাৎ রাস্তায় চায়ের দোকান বা অজানা সোর্স থেকে জল না খাওয়াই ভাল। ঘরের জল ক্যারি করাটাই সবচেয়ে বেটার। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে – অ্যালোপ্যাথি হোমওপ্যাথি, হাইড্রো(জল)প্যাথি ইজ দ্যা বেস্ট প্যাথি।
৪। প্রতিদিন কোন না কোন ফল খাবেন তবে তা কোনকিছু খাবার খাওয়ার পর। একেবারে পরিমিত। একটা কি দুটো। চেষ্টা করবেন দুপুরের আগে খাওয়ার। ফলের কার্যকারিতার মাপকাঠি এভাবে করা যেতে পারে – সকালে ফল খেলে সোনার মত উপকারিতা, দুপুরে খেলে রূপোর মত, আর রাতে খেলে লোহার মত উপকারিতা পাবেন।
৫। বহুল প্রচারিত খাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ঘুমোবেন না। ঠিক। তবে ঘুমোবেন রাত এগারোটার মধ্যে। কোনভাবে রাত জাগার কোন প্রয়োজন নেই। যারা রাত জেগে ডিউটি করেন তাদের কথা আলাদা। না হলে রাত জাগার কোন মানেই হয় না। যে কোন কাজ আপনি রুটিন পরিবর্তন করে দিনে করার চেষ্টা করতেই পারেন। আর একটা কথা সময় থাক বা না থাক দিনে বিছানা পেতে আয়েশ করে কখনই ঘুম নয়।
বেশির মানুষ বলে নানান চিন্তা কি করে ঘুম আসবে? এটা কথাটাই ঠিক না। তিনটে জিনিস কাওকে জোর করতে হয় না বা জোর করবেন না। প্রত্যেকে নিজের তাগিদে এবং ভাল থাকার প্রয়াসে সেই তিনটে কাজ করে অথবা করতে পারে। খাওয়া, ঘুমানো, আর মলত্যাগ। খাও খাও, ঘুমাও ঘুমাও, যাও যাও। বলার কোন দরকার নেই। এগুলো কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রথমেই বলেছি মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায়। ফলে জোর করা মানেই বিড়ম্বনা। শরীরকে খাটাবেন তবেই ঘুম আসবে। শরীরকে বিশ্রাম আর আয়েশের মধ্যে রাখলে ঘুম আসবে না। অনেকেই দুপুরে একটু গড়িয়ে নেন। আর রাতে জেগে থাকেন। একটা নির্দিষ্ট রিদমে শুধু রাতে নির্দিষ্ট সময়ে রোজ ঘুমোতে গেলে ঘুম আসবেই। ফলে জোর করার দরকার নেই। আর ঠিক একই রকম ভাবে সকালের প্রাতকৃত্য পাক না পাক রোজ করবেন। রিদমে তা ফলপ্রসূ।
৬। সবার সব কিছুই খাওয়া যায়। খাওয়াতে খুব একটা বারণ নেই। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আপনি গ্রহণীয় খাবার হজম হয়তো করতে পারবেন কিন্তু খরচ করতে পারবেন না। এই খরচ করার মত প্রয়োজনীয় সার্মথ্য কিন্তু আপনার কমতে থাকবে। তাই গ্রহণও কমিয়ে দেওয়া উচিত। এবং কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে খাওয়া উচিত। যেমন ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংস পুরোটাই জমার খাতায়। সব বয়সের ক্ষেত্রে যতটা খাবেন পুরোটাই জমা। খরচ নাই। কম বয়সে যদিও বা কিছু খরচ করা যায় পরে আর তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৭। সবাই প্রায় নেশা করে। এই নেশা পরিমিত হোক বা অপরিমিত সবটাই কিন্তু বিড়ম্বনার। চল্লিশের পরে এই ইনটেক নেশা সবটাই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যায়। এই বিড়ম্বনার আবার দুটো দিক। এক আপনার শারীরিক বিড়ম্বনা আর দুই আপনার পারিবারিক বিড়ম্বনা। অনেক সময় এর ফলে আপনি দিব্যি হাসপাতালে আর দৌড়াদৌড়ি বাড়ির লোকের। হয়তো সবক্ষেত্রে নয় কিন্তু কিছুটা তো এর জন্য দায়ী। তার মানে আপনার কার্যকারিতা অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা। এক না ঢোকা। দুই নিজেকে ভাবা ও পরিবারকে ভাবা।
৮। দিনে যতবার খাবেন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবেন। আধঘণ্টা এদিক ওদিক হতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দুই তিন ঘণ্টা পেরিয়ে না যায়। মাঝে মধ্যে হয়তো নিয়ম ব্রেক হল হতেই পারে, কিন্তু সেটাই যেন নিয়ম না হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের শরীরও একটা রিদমে চলে। বিপাক ক্রিয়ার জন্য নিসৃত রস নির্দিষ্ট সময়ে নিসৃত হয়। সে যদি খাবার পেল তো ভাল না পেল তো মাংসপেশী হজম করতে শুরু করল। তাই প্রতিদিন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত।
৯। এই খাওয়ার দাওয়ার অভ্যাসের উপর আরো অনেক কিছু নির্ভরশীল। যেমন বদহজম, গলা বুক জ্বালা, পেট ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি নিয়মিত সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য পেটের রোগ থেকে রেহাই সম্ভব। আর রোগ সৃষ্টি থেকে দূরে থাকা আর তার মোকাবিলা করার প্রধান ও সহজ রাস্তা হল পেট পরিস্কার রাখা। পেট সুস্থ রাখা। মুখ থেকে পায়ূ পর্যন্ত যে নালী বা ড্রেন তাকে যে যতটা পরিচ্ছন্ন রাখতে পেরেছে সে তত বেশি সুস্থ।
১০। সবাই জানে ভাল থাকার পাশওয়ার্ড হল যতটা সম্ভব মুখ বন্ধ রাখা। সে বলার জন্য হোক আর খাওয়ার জন্য। বেশি বলা মানে বিড়ম্বনা, বেশি খাওয়া মানেও বিড়ম্বনা। খোলা রাখুন চোখ কান ইত্যাদি। সে সমস্ত থেকে ইনপুট সমূহ মস্তিষ্ককে সার্ফ করে তোলে। আর মুখ খোলা অতটা অগ্রবর্তী করে তুলতে পারে না। পুষ্টিকর সুষম খাওয়ার বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় কি? ঘটায়। পরিমিত আহারে। অতিরিক্ত নয়। ঠুঁসে দিতে তোতাপাখির মত জ্ঞান গ্রহণের মৃত্যু।

পালাবদল

এক বনে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রাণীদের বসবাস। প্রাণীদের বৈচিত্র এত বেশি যে সেখানে সুষ্ঠু ও শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো ছাড়া বনের প্রাণীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই সবাই মিলে বন রাজ্যে একটা শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলার উদ্যোগ নিল। যথা উদ্যোগ তথা বাস্তবায়ন। একটি প্রাশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলা হলো। এই কাঠামোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাকে দায়িত্বভার দেওয়া যায় সকলে মিলে সে বিষয়ে চিন্তা করতে লাগল। বিশৃঙ্খল ভাবে কোন সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় ও বিষয়টা খুব জটিল হওয়ায় বনের সকল প্রাণী মিলে একটা সার্বজনীন সভার আয়োজন করল। সেই সভায় সংখ্যাগরিষ্ট প্রাণীদের নিকট থেকে প্রস্তাব আসল; যিনি বনরাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তার থাকতে হবে শক্তি ও সাহস এবং এই শক্তি ও সাহস দ্বারা যাতে তিনি যে কোন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আরও সিদ্ধান্ত হল যে- যিনি দায়িত্ব পালন করবেন একটানা দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করবেন এবং পরবর্তী দুই বছরের জন্য আর একটা শক্তি ও সাহসি প্রাণীকে সেই দায়িত্বভার প্রদান করা হবে। সভায় এই সিদ্ধান্তও নেওয়া হলো যে-যেহেতু রাজ্য চালানোর জন্য রাজাকে প্রচুর পরিমাণে মেধা ও শ্রম প্রয়োগ করতে হবে সেহেতু বন রাজ্যের সকল প্রাণীর তাদের উপার্জিত সম্পদের একটা অংশ রাজাকে প্রদান করতে হবে। এই প্রস্তাবের আলোকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাঘ ও সিংহ কে বনরাজ্য চালানোর দায়িত্বভার ধারাবাহিক ভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। প্র্রথম মেয়াদে এই দায়িত্ব বাঘকে প্রদান করা হলো।
এই বনের সবচেয়ে বেশী সংখ্যাক প্রাণী হলো হরিণ, স্বভাবে বেশ শান্ত এবং দেখতে সুন্দর। এই হরিণ বনের সৌন্দর্য্য বছরের পর বছর বৃদ্ধি করে চলেছে। বনে শেয়ালের সংখ্যা যথেষ্ঠ। এরা একটু চতুর প্রকৃতির এবং চিন্তা চেতনায় সুবিধাভোগী। বনটিতে গাধার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। গাধাদের মূল কাজ হল খাওয়া ও ঘুমানো, কে কি করল এসব নিয়ে তাদের ভাবনার কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়াও এখানে সুন্দর পাখি ও অন্যান্য প্র্রাণীও যথেষ্ঠ পরিমাণে বাস করে। বনটি সুন্দর সুন্দর বৃক্ষ-তৃণে সমৃদ্ধ।

হরিণগুলো তৃণ ভোজন করে বেঁচে থাকে, কখনও সখনও হয়তো ভাবে কি করে আরও ভাল খাবার সংগ্রহ করা যায় তবে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলপ্রসু হয় না। গাধাগুলো সারাদিন খেটে খুটে সামান্য খাদ্য সংগ্রহ করে সন্ধ্যা বেলা তা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কখনও সে ভাবে না, কি করে পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করা যায়, কি করে এই বনে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। শেয়ালগুলোর মূল কাজ ধুর্তমী করা। সে সারাক্ষণ কি করে গাধা এবং হরিণগুলোর সংগ্রহ করা খাবার খাওয়া যায় সেই চিন্তাতেই মত্ত থাকে এবং তাদের সংগৃহীত খাবার কু-কৌশলে কুক্ষিগত করে ভোগ করে।
যেহেতু এই বনরাজ্যের রাজা হিসাবে বাঘ চলমান মেয়াদের দায়িত্ব পালন করছে। প্রত্যেক প্রাণীই রাজস্ব হিসাবে তাদের সংগৃহীত খাবারের একটি অংশ বাঘকে দিয়ে থাকে। যেহেতু বনের শত শত হরিণ, গাধা ও শেয়াল তাদের খাবারের একটি অংশ বনের বাঘকে রাজস্ব হিসাবে দেয় সেহেতু বাঘ বসে বসে তার প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবার পেয়ে যায় এবং কিছুটা অবশিষ্ট্য থেকে যায়। দেশে যখন খাবারের সংকট দেখো দেয় তখন অবশিষ্ট্য এই খাবার হরিণ, গাধা ও শেয়ালদের মাঝে বিক্রি করে দেয়। ফলে বাঘগুলো একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠছে অন্যদিকে সম্পদেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। বাঘের সুখ, স্বাচ্ছন্দ বাঘকে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে অভ্যস্ত করে তুলছে। আর এসব দেখে পরবর্তী মেয়াদের বন রাজার তা সহ্য হচ্ছে না।
তবে ঝামেলা শুরু হল তখন যখন বন রাজা বাঘ ও তার চেলারা হরিণ শাবকদের ধরে ধরে খাওয়া শুরু করল।

আজকে বনের সমস্ত হরিণ, গাধা ও শেয়াল একজায়গায় সমবেত হয়েছে। সমবেত হওয়ার কারণ বন রাজা বাঘ ও বাঘের চেলারা হরিণের বাচ্চাদেরকে ধরে ধরে খাচ্ছে। রাজ্য ক্ষমতা দেওয়ার সময় শর্তছিল বনের সকল প্রাণী যে খাবার সংগ্রহ করবে সেখান থেকে একটা অংশ বনের রাজাকে দেবে। বিনিময়ে বনের রাজা বনে বসবাসরত সকল প্রাণীদের জান ও মালের নিরপত্তা বিধান করবে। বন রাজা বাঘ এখন অন্য প্র্রাণীদের তো নিরাপত্তা দিচ্ছেই না বরং রাজাদের পরিবারের অন্যান্য বাঘেরা হরিণদের বাচ্চাদের ধরে ধরে ধরে খাচ্ছে।

-আমরা রাজা বাঘের পরিবারের সদস্যদের এই সব অনিয়ম মেনে নেবনা। একটি হরিণ বলল। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব।
হরিণ সর্দারের এই কথা শুনে কিছু হরিণ তার সাথে একাত্মতা ঘোষনা করল।

-বল্ল-হ্যাঁ হ্যাঁ বাঘেদের এই অত্যাচার অনিয়ম মেনে নিতে পারিনা। এর একটা বিধি ব্যবস্থা করতেই হবে।

হরিণদের এই প্রতিবাদের ফলে সুবিধাভোগী কুচক্রী শেয়াল গোপনে গোপনে কিছু হরিণের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হতে প্ররোচিত করল এবং সেই বিশ্বাঘতক হরিণদেরকে রাজা বাঘের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিল। শেয়াল বল্লল-

-তোমারা যদি রাজার বিরুদ্ধে আন্দোলন না কর তাহলে রাজা তোমাদের বা তোমাদের সন্তানদেরকে ধরে খাবেনা।

বিপন্ন জীবন বাঁচাতে কিছু হরিণ শেয়ালের এই কুচক্রের সাথে যোগ দিল এবং তারা আন্দোলনে যাওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখল।
প্রোরোচিত হরিণদেরকে শেয়াল বল্ল-

-রাজা সাহেব বলেছে, যে সকল হরিণেরা প্রতিবাদ করছে তোমরা যদি তাদের নাম ও ঠিকানা আমাদেরকে জানিয়ে দাও তাহলে রাজা তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের উৎপাদিত ফসলের যে অংশ নেন তা নেবেন না। তাছাড়া পুরষ্কার হিসাবে রাজা তোমাদেরকে রাজ পরিবারের খাবারও খেতে দিবে।

এই শুনে কিছু হরিণ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দিল এবং কিছু হরিণ প্রতিবাদ বন্ধ করার পাশা-পাশি প্রতিবাদী অন্য হরিণের তালিকা শেয়ালের মাধ্যমে রাজাকে পৌঁছে দিল।

কিছুদিন পর বনে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা গেলো। যে হরিণগুলো বন রাজার অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দিল তারা গাধায় পরিণত হলো এবং যারা প্রতিবাদী হরিণদের তালিকা রাজার কাছে পৌঁছে দিল তারা শেয়ালে পরিণত হলো।

একদিকে বনরাজা ও বনরাজার পরিবারের সদস্যগণ হরিণ ধরে ধরে খেতে লাগল, আর একদিকে নিরব হরিণেরা গাধায় পরিণত হতে লাগল, অন্যদিকে বিশ্বাস ঘাতক হরিণেরা শেয়ালে পরিণত হতে লাগল। এতসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বনে হরিণের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে কমতে লাগল।
সংক্ষুব্ধ হরিণেরা বাধ্য হয়ে বাঁচার তাগিদে সিংহকে সাথে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন করতে শুরু করল। সিংহও রাজ্যভার পাওয়ার লোভে সংক্ষুব্ধ হরিণদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিল। ধীরে ধীরে আন্দোলন জোরালো হতে লাগল। বনের সকল প্রাণী বুঝতে পারল বাঘের মেয়াদ শেষের পথে। ধূর্ত শেয়ালেরা ভাব বেগতিক দেখে তারাও সিংহ-হরিণের দলে যোগ দিল। বনের সম্মিলিত সকল প্রাণীর দূর্বার আন্দোলনের ফলে সময়ের আগেই বাঘ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলো।

পরবর্তী মেয়াদের জন্য সিংহ বন রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করল। কিছুদিন যাওয়ার পর যে সকল হরিণেরা শেয়াল এবং গাধায় রুপান্তর হয়ে গিয়েছিল তারা আবার হরিণ হয়ে গেল এবং নতুন নতুন হরিণ জন্মগ্রহণ করায় হরিণের সংখ্যা বনে যথেষ্ঠ পরিমাণে বেড়ে গেলো। আন্দোলনরত হরিণেরা আবার নিরিহ হতে শুরু করল। বনে শান্তি ফিরতে শুরু করল। তবে ধূর্ত শেয়ালদের ধূর্তমী আবার নতুন করে শুরু হলো।

বনে হরিণের সংখ্যা বর্ধন দেখে এবং এই বর্ধিত হরিণের কচি মাংশ দেখে সিংহ এবং তার পরিবারের সদস্যরা লালায়িত হলো। একদিকে তাদের লালসা চরম পর্যায়ে, অন্যদিকে বনের হরিণসহ সকল প্রাণীর শান্ত অবস্থা দেখে তারা লোভ সামলাতে পারলনা। বাঘের শাসন আমলের শেয়ালের ভূমিকার কথা সিংহের জানা ছিল সেই অভিজ্ঞতা থেকে সিংহরা শেয়ালকে তাদের স্বার্থ হাছিলে কাজে লাগাতে শুরু করল। শেয়ালেরা তাদের পুরাতন ভূমিকায় ফিরে গেলো, প্রোরোচিত হরিণেরাও তাদের পূর্বের ভূমিকায় ফিরে গেলো।

কিছুদনি পর

বিশ্বাস ঘাতক হরিণেরা আবার শেয়ালে রুপান্তর হতে শুরু করল, প্রতিবাদ বিমুখ হরিণেরা গাধায় পরিণত হতে শুরু করল।
সুযোগ বুঝে বাঘ সিংহর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হরিণ ও শেয়ালদের সংঘবদ্ধ করার প্রয়াসে হরিণ, বাঘ, গাধাসহ সকল প্রাণীকে একত্র করে

বল্ল-
-সিংহ তোমাদের উপর যে অত্যাচার শুরু করেছে আমি এর প্রতিবাদ করতে চাই। (এই কথা বলার সময় বাঘ মনে মনে খুব লজ্জা পেলো। ভাবল আমি যে কাজ করেছি এরাওতো সেই একই কাজই করছে তা হলে আমি…..)। সিংহর এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায়না। নিরিহ হরিণদেরকে যে ভাবে ধরে ধরে খাচ্ছে এটা চরম অন্যায়। (এবার বাঘ আনমনে তার ভুড়িতে হাত বুলিয়ে মনে মনে বল্র আমার এই ভুড়ি তো এই হরিণদের মাংশেই গড়া।)আমার সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব। আর আমি এবার এই বনরাজ্যের দায়িত্ব পেলে আমি তোমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেব, তোমাদের জন্য উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করব।

-বাঘ ভাই আপনি এবং আপনার চেলারা আমাদের যেভাবে অত্যাচার করেছিলেন তা আমরা আজও ভুলতে পরিনি। সিংহ এখন যা করছে আপনি ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে তাই করেছিলেন। আমরা সেটা ভুলে যায়নি। তবুও বাঁচার তাগিদে আপনার সাথে আন্দোলন করছি। একটি হরিণ বল্ল।
-বাঘ খর্বকায় এক হরিণের এই কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠল।
বনের দায়িত্বে কখনও বাঘ আসে, কখনও সিংহ আসে কিন্তু যিনিই বন রাজ্য চালানোর দায়িত্ব পান না কেন তিনি সেই একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
কয়েক বছর পর-

বাঘ, শেয়াল এবং হরিণ অথবা সিংহ, শেয়াল এবং হরিণ এখন আর যুগপৎ আন্দোলন করতে যাইনা। বাঘ এবং সিংহ তারা দুই পক্ষই শলা পরার্শ করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে-তারা যেহেতু উভয় পক্ষই কচি হরিণের মাংশ খেতে পছন্দ করে সেহেতু তারা এখন আর গন্ডগোল করবে না। বরং মিলে মিশে পালাক্রমে হরিণ ধরে ধরে খাবে।

আরও কয়েক বছর-

বনে এখন আর কোন হরিণ নেই, বাঘে সিংহে প্রচুর পরিমাণে হরিণ তারা ধরে ধরে খেয়েছে। বিশ্বাস ঘাতক হরিণগুলো শেয়ালে পরিণত হয়েছে, প্রতিবাদ বিমুখ হরিণগুলো গাধায় পরিণত হয়েছে। হরিণ এই বনের এখন এক বিলুপ্ত প্রাণী। তাই সিংহ বাঘের রসনা বিলাসের জন্য এখন আর কচি হরিণের সুস্বাদু মাংশ ভক্ষণ করতে পারেনা।

বাঘ সিংহ হরিণে সুস্বাদু মাংশ আস্বাদনের অভাবে কাঁদে, শেয়াল এখন ধূর্তমীর খেলা করার জন্য কাউকে পায়না, তাই সে কাঁদে। যে সকল নির্বোধ হরিণ গাঁধাদের সঙ্গী ছিল তাদের হারানোর বেদনায় কাঁদে। বনের সকল প্রাণীদের সময় এখন শুধুমাত্র স্মৃতি চারণ ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাটে।
পরিবর্তনের প্রত্যাশায় কিছু কিছু প্রাণী ভাবে হাতি অনেক বড়, শক্তিশালী ও শান্ত প্রকৃতির প্রাণী হাতি এসে নিশ্চয় তাদের সুদিন ফিরিয়ে দেবে। আবার তখনই আরেক ভাবনা এসে সুভাবনাকে প্রতিহত করে; ভাবে হাতির পেটতো সিংহ বা বাঘের চেয়ে আরও অনেক বড়।

সে-ই তো মানুষ

বৃষ্টির পানি যার গায়ে পড়ে সে-ই তো মানুষ
রোদ যার গায়ে লাগে সে-ই তো মানুষ
ঝড়ে যার চোখে ধুলি পড়ে সে-ই তো মানুষ
যে একটু কাঁদতে পারে হাসতে পারে
সে-ই তো মানুষ
যার গায়ে ধুলি লাগে সে-ই তো মানুষ
জীবনে চলার পথে যার গায়ে কলঙ্ক লাগে
সে-ই তো মানুষ
সবাই কাছে ভাল হতে পারেনি যে
সে-ই তো মানুষ
সবার বিবেচনায় বুদ্ধিমান নয় যে
সে-ই তো মানুষ
ব্যস্ততায় কপাল ঘামে যার সে-ই তো মানুষ
আলাপ চারিতায় সরলতা ভরা অনানুষ্ঠানিক মুখ যার
সে-ই তো মানুষ

এরকম মানুষকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে মন চায়
এরকম মানুষ এক পেট ভরে আহার করোতে মন চায়
এরকম মানুষ একটি ভাল পোশাক কিনে দিতে মন চায়
এরকম মানুষের সাথে মন ভরে গল্প করতে মন চায়।

নিঃসঙ্গ

আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন অনেক ভীড়ের মধ্যে একা থাকি!
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন ইতর রঙের কালো ধোয়ারা আমাকে ঘিরে রাখে!
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন দল বেধে যন্ত্র দানবেরা আমাকে আমার-
একাকিত্বকে বিঘ্নিত করে পেছন পাণে ছুটে চলে।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন অরণ্যমাতাকে দেখি শব্দ শকূনের কাছে গণ ধর্ষণ হতে।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন দেখি বাস্তবতার গর্ভ হতে প্রসাব হচ্ছে জারজ বিশ্বাস।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন তোমার সময়ের হাতে আমার সময়—
অর্পিত না হয়ে সমর্পিত হয়।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন, যখন হাজারো-
যন্ত্রনাপ্রদেয় যন্ত্রের অনুসঙ্গে সঙ্গহীনতা নিঃসঙ্গ হয়।

খোদা ভালই রেখেছেন

খুব ব্যস্ত ছিলাম, একজন জিজ্ঞাসা করল কেমন আছেন?
কেমন আছি ভাবার সময় ছিল না
উত্তর দিলাম-খোদা ভালই রেখেছেন।

ভাল থাকি আর মন্দ থাকি কেউ যদি
জিজ্ঞেস করে –কেমন আছেন?
উমনি সহজ উত্তর –খোদা ভালই রেখেছেন
উল্টো যদি কাউকে বলে ফেলি-
আমি খারাপ থাকলে আপনি কি আমার সমস্যার
সমাধান দিতে পারবেন?
কথাটা বেমানান হবে

যাই হোক উক্ত উত্তরে আমার বেশ সুবিধে হয়
খুব ব্যস্ততার মাঝে ভাবতে হয় না
খারাপ আছি না ভাল আছি
বেশী বিশ্লেষণ করার-ও প্রয়োজন হয় না
কারণ খারাপ আছি বললে আবার খারাপ থাকার কারণ
বিশ্লেষণ করতে হবে
মোট কথা খোদা আমাকে ভালই রেখেছেন
যে অবস্থায় আছি সেই অবস্থায়-ই খোদার দান
ও অগোনিত দানে ভরা
সুতরাং খোদা আমাকে ভালই রেখেছেন।

ভালবাসা

যে ভালবাসা মাপা হবে না ,বোঝা হবে না
যে ভালবাসা কেউ জানবে না
জানা হবে না,জানা যাবে না
যে ভালবাসা বোঝানো যাবে না
বোঝা যাবে না,বোঝানো সম্ভব হবে না
সে ভালবাসা মূল পাবে না
যে ভালবাসা মূল্য দেওয়া যাবে না
যে ভালবাসা কান্না হয়ে পড়ে রইবে নদীর স্রোতে
যে ভালবাসা ধুলায় লুটিয়ে রবে
সে ভালবাসা খুব কষ্টের
খুব-ই কষ্টের ।

খুশির ঈদ

রমজানের রোজা শেষে এলো খুশির ঈদ
আকাশে-বাতাসে সরোবর মহানন্দের ঈদ
ভোর প্রভাতে শুরু হয় মহা খুশির ঈদ
ছেলে-মেয়ে সাধ সাজে নতুন কিছুর ঈদ
ঈদে কারো আনন্দ ফূর্তি দুস্থের মন মলিন
ব্যস্ত কেহ কেনা কাটায় ঘরে ফেরার দিন
গাড়িতে বড্ড জ্যাম্ টিকিটহীন কারবার
লঞ্চ-ইস্টিমারে দুর্দশা নদীতে অথই জল
পথে বসে ভ্রাম্যমান আদালত ট্রেনে ছিনতাই
যাকাত নিতে ডাকাত হাতে প্রাণ হলো সার।
হত্যা গুমের রাজনীতিতে কতই শোকাকার
কারো থাকে মাংস পোলাও কারো ডাল ভাত
হায়রে খুশির ঈদে পথে ক’জন চাইছে ভাত
বছর ঘুরে এলো ঈদ আনন্দ হোক সবার।
-০-

_________________
অমর ২১ শে বই মেলা-২০১৭
আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘‘স্মৃতির কাছে’’ বই থেকে।

স্বর্গ পেলে সব স্বাদ মিটে যাবে

স্বর্গ পেলে সব স্বাদ মিটে যাবে।
———
জামা কাপড় কিনতে গিয়ে খুব ভাল একটা পোশাক
আমার পছন্দ হল,কিনার সামর্থ্য ছিল না
মনে মনে বললাম- সৎ ভাবে থাকি পরকালে
অনেক পরা যাবে

বাজারে খাসির ইলিশ মাছের ১০০০ টাকা কেজি
সামর্থ্যের অভাবে কিনতে নো পেরে বললাম-
ও থাক! স্বর্গ যদি পায় অনেক পাওয়া যবে

রাস্তাতে সেদিন এক রুপবতী নারী দেখে
মাথা গরম! কি আর করার!
মনে মনে বললাম- স্বর্গ যদি পায় অনেক হুর পরি পাবো
সমস্যা নেই

প্রতিদিন কিছু না কিছু খারাপ কাজের সুযোগ আসে
আমি জানি আমার মত সরল সোজা বোকা লোক
খারাপ করলেই ধরা খাবে
তাই নিজেকে শান্ত্বনা দিই, ও থাক!
সামান্যর জন্য খারাপ কাজ করে কি হবে?
স্বর্গ যদি পায় সব স্বাদ মিটে যাবে

জীবনে অনেক কিছুই মেলাতে পারিনি
জীবে জল আসে-লোভে লোভে
তারপরেও বলি স্বর্গ যদি পায় সব স্বাদ মিটে যাবে
ধর্মের একটি কথা দিয়ে নিজেকে খুব শান্ত্বনা দিই-
স্বর্গ যদি পায় সব স্বাদ মিটে যাবে

কিন্তু স্বর্গ যে পাব তার-ই বা গ্যারান্টি কিসের?
কিন্তু তারপরেও ধর্মের শেখানো বুলিটি
আমাকে সব সময় সৎ থাকতে উৎসাহিত করে-
স্বর্গ যদি পায় সব স্বাদ মিটে যাবে।

ঈদ মোবারক

ঈদ আনন্দের দিন, খুশির দিন, উৎসবের দিন। ঈদ আমাদের জন্য বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ, খুশির বারতা। ঈদের গুরুত্ব আমাদের কাছে যেমন ধর্মীয় তেমনি সামাজিক। প্রতি বছরই ঈদ আসে নতুনের মত। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশীর সওগাত পবিত্র ঈদুল ফিতর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল তার কবিতায় লিখেছেন, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। আপনাকে তুই বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’ আনন্দের সওগাত নিয়ে আসা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা ঈদ উৎসবে মিলিত হই সকল ভেদাভেদ ভুলে। চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়ে এক কাতারে সামিল হই। বুঝি মানুষ মানুষের জন্য।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শব্দনীড় এ আমার সকল সহব্লগার, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। যে যেখানে আছেন সবাই ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ঈদ মোবারক।

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

রোজা বা শাওম শব্দের অর্থ সংযম তথা বিরত থাকা। সংযম এবং ত্যাগ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক এবং ত্যাগের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে সংযম সাধনা।

ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ এবং আনন্দ ও সুখ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক। আনন্দ হীন জীবন কখনই সুখের নয়। সুখি হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে আনন্দিত হওয়া।

এ থেকে আমরা ত্যাগ ও সুখের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাই।

ত্যাগ দুই প্রকার হতে পারে, মানুষের সুখের জন্য ত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য ত্যাগ। তবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে ত্যাগের পূর্বে আমাদের অবশ্যই সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগ তথা সৃষ্টির সেবা করতে জানতে হবে অন্যথায় সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব নয়।

মানুষের জন্য ত্যাগ মোটেই সহজ সাধ্য ব্যাপার না। আত্ম স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য ত্যাগের মধ্যে সত্যিকারের সুখ আছে বলেই ত্যাগ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। ত্যাগী ব্যাক্তি মুখাপেক্ষী নয় কোন প্রতিদানের।

কিন্তু অনেক সময় ত্যাগ করা যতটা কঠিন তার চেয়ে বেশী কঠিন হয়ে ওঠে ত্যাগার্থে স্বীয় ক্ষয় ক্ষতি মেনে নেয়া।

ত্যাগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ত্যাগী ব্যাক্তি ঠিকই বুঝবেন তিনি কার জন্য, কি এবং কেন ত্যাগ করছেন কিন্তু যার জন্য ত্যাগ করা হচ্ছে তিনি কোন দিনই বুঝবেন না তার জন্য সত্যিকার অর্থে কি ত্যাগ করা হয়েছে এবং তা কতটা কষ্ট সাধ্য ছিল।

ত্যাগের ফল ত্যাগীর জন্য কষ্টের হলেও ভোগীর জন্য সব সময়ই মিষ্টির। তাই ত্যাগীর সারা জীবনের কষ্টের দান অস্বীকার করতে ভোগীর এক মুহূর্ত সময় ও ভাবনার প্রয়োজন হয় না।

ভোগী কর্তৃক ত্যাগীর ত্যাগের এই অস্বীকৃতি কখনও কখনও ত্যাগী ব্যাক্তির নিকট ত্যাগের সুখের চেয়েও বহুগুন কষ্টের হয়ে উঠতে পারে। আর তখনই ত্যাগ হারায় তার মহিমা ও সার্থকতা।

প্রকৃত ত্যাগ তো সেটাই যা সত্যিকার অর্থেই কোন রকমের কোন প্রতিদান প্রত্যাশা করে না। মানুষের অগোচরে মানুষের জন্য ত্যাগই যথার্থ ত্যাগ। নিরবে নিভৃতে প্রতিনিয়ত এই ত্যাগীদের জন্যই পৃথিবী এত সুন্দর ও সুখের।

রোজার সংযমের ও ত্যাগের শিক্ষা এবং ঈদের আনন্দ আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক অফুরন্ত সুখ ।
এই কামনায় –

“সবাইকে ঈদ মোবারক”

আত্মচিন্তন-৭

আত্মচিন্তন-৭

এই যে আমরা, আমাদের কি সত্যি কোন অস্তিত্ব আছে ?

বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব হীনতার এ প্রশ্ন প্রমাণ নির্ভর নয়। কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে। কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ম এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান। বর্তমান অবস্থান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র। অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয়। তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন সত্য। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

বয়সের দোষ

বয়সের দোষ
—-
ছোট বেলায় দোষ করলে মাছুম শিশু বলে
দোষ কেটে যেত

তরুন বয়সের দোষগুলো কেটে যেত
বয়স দোষ –এই হিসেবে

এখন মধ্য বয়সে কোন ভাবেই দোষ কাটাছে না
উল্লেখ্য দোষ করা আমার স্বভাব
আমি অন্যদের মত নয়

সেদিন চাকরির ভাইভাই হাফ শার্ট পরে গিয়েছিলাম
আমাকে এই অপরাধে ভাইভা থেকে
বের করে দেওয়া হল

মোটরসাইকেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বলে
দিতে হল জরিমানা

মানে এই বয়সটা নিয়ে আমার খুব গা জ্বালা করছে
কোন ভাবেই দোষ কাটাতে পারছি না
দোষ করাও বন্ধ হচ্ছে না
ফলে মাশুল দিতে দিতে শেষ হয়ে যাচ্ছি।