বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

বাংলাদেশ, দ্যা ল্যান্ড অব মুজিব

ff

আপনার ছবির দিকে তাকালেই
অনেকগুলো আকাশ এসে আমার
হাতের মুঠোয় ধরা দেয়!
অনেকগুলো পথ, পথের মিছিল,
আর মিছিলের মানুষেরা,
‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে দিতে
অতিক্রম করে বিশ্বের না না প্রান্ত
‘লিটল বাংলাদেশ’ কিংবা
‘শেখ মুজিব ওয়ে’ তে দাঁড়িয়ে
এই প্রজন্ম, মার্কিনী হাওয়ায়
ওড়ায় বাংলাদেশের পতাকা।

আপনার ছবির দিকে তাকালেই
অনেকগুলো কবিতা,
আমার মগজের কোষে ঢেউ তোলে,
একটি দোয়েলের জন্যে ভালোবাসা
একটি শাপলার জন্যে প্রেম;
লিখিত হতে থাকে পত্র-পল্লবে-
আমার দুপাশে দাঁড়িয়ে স্যালুট
জানায় পৃথিবীর তাবৎ লাল ও সবুজ।

‘বাংলাদেশ, দ্যা ল্যান্ড অব মুজিব’
বলে যে মেক্সিকান সাংবাদিক
আমার বুকপকেটে হেলে থাকা
কোটপিনটি সোজা করে দিয়েছিলেন;
সেটাতে ওই মানচিত্র ছিল-
পতাকা দেখেই তিনি জড়িয়ে
ধরেছিলেন আমাকে,
আর বলেছিলেন-
উঁচু-শির মুজিবের মতোই এগিয়ে
যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।

🇧🇩

নিউইয়র্ক / ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আমাকে ঋণী করো

da

এসো,
আমাকে ঋণী করো
মনে প্রাণে
যৌবনে প্লাবনে
করো ঋণে ঋণে জর্জরিত,
বিদীর্ণ করো
অঙ্গার করো
করো জীর্ণ কুন্তল, নিষ্প্রভ;
বিবাগী করো
উদগ্রীব করো
এই জন্মে যা শোধ অসম্ভব!
করো ঘায়েল
রুদ্ধ পায়েল
ঋণের শৃঙ্খলে হই দেউলিয়া প্রেমিক
প্রেমে- উদ্যমে
গুপ্ত সঙ্গমে
তোমাতেই করো সুরলিয়াজমের সৈনিক!

.
দাউদুল ইসলাম।

রক্তচোষাদের আজ্ঞাবহ

CL_1694193013719

অপরাধবোধে বিদ্ধ হয়ে আছি,
কত অনাচারের সাক্ষী হয়ে,
কত মানুষের করুণ মৃত্যুতে-
আমাকে শোকাতুর করতে পারেনি।

নিষিদ্ধ জনপদে অবাদ বিচরণে,
আদিমতায় সুখের অনুসন্ধান,
হাড় ভাঙা উপাদেয়-
সহাস্য বদনে সভ্যের মুখোশ।

সকিনা বিবির ছিন্নভিন্ন লাশ,
রুইতনের প্রতিবাদ রুখে দিয়েছি,
টাকায় বিক্রি আমাতে-
মনুষ্যত্ববোধ কখনোই জাগেনি।

ত্রাণের টাকায় প্রমোদতরী,
নিষিদ্ধ এলাকায় সদলবলে,
প্রকাশ্য দিবালোকেও ভয়হীন আত্মা-
পরার্থ চিন্তন কখনো আসেনি।

আমি বিক্রিত দাস,
অসংগতি চোখে পড়েনা আমার,
আমি রক্তচোষাদের আজ্ঞাবহ-
মানবিকতা আমার সংস্পর্শে আসেনি।

বিধবা জমিরনের জমিতে আমার লোভ,
চাঁদার সওদা করি প্রকাশ্য জনপদে,
আমি জুলুমকারীদের দলভুক্ত-
অন্যায়ে নতজানু-নতশির।

সুভাষিণীর পথ আগলে রাখা বখাটেরা,
আমার সম্মুখে বীরদর্পে চলে,
আমি নতশিরে চুপচাপ-
শত অনাচার সয়ে গেছে আমায়।

অপরাধবোধে বিদ্ধ হয়ে আছি,
কত অনাচারের সাক্ষী হয়ে,
অমানুষিক কার্যক্রমে আমি প্রস্তুত থাকি-
আমি আজ্ঞাবহ রক্তচোষাদের।

মন যেন এক প্রেম ফুল

ch

তুমি পাতা আমি ফুল, এসো খেলি লুকোচুরি
তুমি সবুজ আমি বেগুনি…..আমরা ভালোবাসার শাখে প্রেম কুঁড়ি;
তুমি হাসো আমি কাঁদি
তুমি কঠিন আমি হই আহ্লাদি।

এইতো জীবন ফুল ফুল প্রেম, আবার কাঁটা
আমাদের জীবন ঝগড়াঝাটি, বিবাদ ফ্যাসাদ
আবার খুব সাদামাঠা;
তুমি হাতুড়ি আমি মোম, তুমি জ্বলো আমি গলি
তবুও মাঝে মাঝে বুক বৃক্ষে ফুটে প্রেমের কলি।

আমি বিষণ্ণ তোমার বিষাদের ভরা মুখ
কত শত অভিমান দাঁড়িয়ে থাকে সম্মুখ
তুমি কালো মেঘ, আমি রঙধনু
কখনো বা বেজে উঠে বুকে ভালোবাসার বেণু।

তুমি পাতাল আমি আকাশ
কখনো মুহুর্মুহু দীর্ঘশ্বাস
আমি মনে রাখি না, তুমি ভুলো না
কখনো প্রেম ফুল দেব তুমি মন দোর খুলো না।

আমি ফিরে আসি, তুমি কঠোর, বুকে জমাও ঘৃণা
তুমি জানো এমন আচরণে শান্তি মিলবে না
তবুও বুকে পুষো বিদ্বেষ
আমিও অমান্য করি আদেশ নির্দেশ।

তুমি ক্যাকটাস, আমি কচুরীপানা ফুল
ফুল হয় না কখনো আমাদের যা ছিল ভুল
তুমি হাসো বাঁকা ঠোঁটে আমি কষ্ট পাই
আছি তবু কাছাকাছি, অসুখে বিসুখে বিপদে
আমাদের ভেতর আর হিংসা নাই।
.
(ক্যানন ৬০০ডি, ঢাকা)

আমি তুমি

______আমি তুমি

আমি তুমির লুকোচুরি
মেঘমল্লার মতো বৃষ্টির ঘ্রাণ
যেন মৃগনাভি কস্তুরী!
পৃথিবী ময়
বাসনায় বাসনায়
রোশনাই; জোছনার মাদকতা।

কালে কালে ছিন্ন পাতায়
মর্ম দহন গাছ তলায়; আমি তুমির
ফিরে পাবার অপেক্ষা!
রংধনু প্রলাপ
মেঘ আঁকে ঐ
উতল বায়ু খেলে যায় হরষে
নড়ে উঠে ঘাস ফুল
নড়ে উঠে গাছের পাতা
ওমনি উড়ে গেল পক্ষী ঐ
ঝোপ ঝাড় উজালা।

আমি তুমির প্রলাপ আঁকে ঐ
বুলবুলির খুনসুটি!
লাউ ফুলে
ভ্রমর ঐ গান গায়
আমি তুমির লুকোচুরি।

আজ ২০ ভাদ্র ১৪৩০

ডাক ডুগ-ই বাজাই

রেললাইনের পাশেই চায়ের স্টলে বসে আছি
মাঝেমধ্যে সাপের মতোন ট্রেন আসে-যায়
আমি তাকিয়ে থাকি এই আছি.. এই না-ই!

এখানে হাজার কিসিমের মানুষও আসে
কেউ কেউ চা খায়—
আর কেউ নাক দিয়ে…মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়ায়!

ওড়াতে ওড়াতে মানুষগুলো রঙিন ঘুড়ি হয়
মুখে মুখে কথার খৈ ফুটে
রাজনীতি, সমরনীতি.. কাঁচাবাজারে ছুটে!

আমি কেবল হাবাগোবার মতো বসে থাকি
কিছুতেই ঠাহর করতে পারি না
এখন দিন না-কি…. এখন রাত না-কি!
তবুও মনে মনে সরস পঙক্তিতে কবিতা সাজাই
তবুও নিজের ভেতর নিজেই ডুগডুগি বাজাই!!

বধির হয়ে যাও

পরমা প্রকৃতিতে
ডুবে যাও
কৃতজ্ঞতায় নতজানু থেকে
তলিয়ে যাও..
মিলিয়ে মিশে যাও
মৌন শিলাস্তরের বুকে,
অশ্রু পতনে, রুধীরাক্তের হিমাঙ্কে
শূন্য হয়ে যাও…
বিলিয়ে দাও আপনাকে
অমিয় মধুরত্বে
… তারপর বধির হয়ে যাও!

আখর

ঝরা পাতার প্রতিটি আখরে তার নাম
বহুদিন জলের দাগে নাম অদৃশ্য ছিল
সেদিন সকালে আলো পড়ে সরোবরে
মৃদু হাওয়ায় কেঁপে ওঠে দেবদারু পাতা
তার নাম জ্বলজ্বল করে চোখের সমুখে
মৃদু স্বরে তার চেনা নাম ধরে ডেকে উঠি
জলে ভাসিয়ে ছিলাম সবুজ কেয়াপাতা
তারা প্রদীপ হয়ে তার নগরে ভেসে যায়।

নগর জীবন

ইট কংক্রিট এই নগরে
কোথায়ও ছায়া নেই!
প্রাচীরের দেয়ালে
উর্বরতা নেই!

পিচঢালা পথে
সবুজের হাতছানি নেই!

সূর্যোদয়ে
পাখির কিচির-মিচির নেই!
পূর্বালী বাতাশ নেই!

শূন্যের দিকে চেয়ে চেয়ে
কত দিন কেটে যায়
রাতের চন্দ্রালোকে

মেঘের আড়ালে চাঁদ
নক্ষত্রের লুকাচুরি
হিসাবের খাতা খুলে।

যাপিত জীবন
কেটে যায়
নিয়তির নিয়মে।

গোধূলীর আ‌লোয় চি‌নে নি‌য়ো পথ

ch

বি‌কেল দাও বি‌কি‌য়ে আমার কা‌ছে, মন ক‌রো নিলাম
‌তোমা‌কেও না হয় এক‌টি বি‌কেল দিলাম
‌গোধূলীর আ‌লোয় পথ ‌চি‌নে নি‌য়ে
‌কিছু মুগ্ধতা চ‌লো আ‌নি ছি‌নি‌‌য়ে।

চ‌লো ঘু‌রে আ‌সি বৃ‌ষ্টি ভেজা এই শহ‌রের অ‌লিগ‌লি
জা‌নো ম‌নের শা‌খে উ‌ঁকি দি‌য়ে‌ছে ই‌চ্ছের ক‌লি
‌ভেজা দি‌নের বু‌কে হে‌ঁটে বেড়াই, যা‌বে কোথাও?
ভাল্লা‌গে না ঘ‌রে ব‌সে অযথাই হাউকাউ।

‌চ‌লো মে‌ঠোপ‌থ ধ‌রে হা‌ঁটি
যেখা‌নে বৃ‌ষ্টি সে‌জে‌ছে প‌রিপা‌টি
ঘা‌সের উপর বৃ‌ষ্টির বিন্দু, আকা‌শে স্বচ্ছ মেঘ
তু‌মি একবার দাও না ছু‌ঁয়ে আমার আ‌বেগ।

বৃ‌ষ্টি ঝ‌রে গে‌লে আকাশটাও স্বচ্ছ আ‌লোয় ভরপুর
কাটা‌বে আমার সা‌থে এক‌টি দুপুর
যা‌বে বি‌কে‌লের বু‌কে হাট‌তে
পার‌বে আমায় নি‌য়ে যত গোপন কথা আমার সা‌থে বাট‌তে?

আকা‌শের বু‌কে রাখ‌বো বিষ নীল দু‌টো চোখ?
বিষ যত উ‌ড়ে যা‌বো, প্রকৃ‌তি হ‌তে টে‌নে নাও সুখ
আম‌ি না হয় বিষ কাঁটা তোমার গলায়
চুপ থে‌কো, হে‌ঁটো স‌ঙ্গে, কী যা‌বে আস‌বে কথা বলা না বলায়।

‌মে‌‌ঠোপ‌থের কিনা‌রে ঘা‌সের বাগান
‌যেখা‌নে আজ হ‌য়ে‌ছিল বৃ‌ষ্টির রিনিঝিনি গান
বৃ‌ষ্টির সুর থে‌মে গেল সহসা, ঘাস সাজ‌লো মু‌ক্তোর দানায়
চ‌লো না এসব মুগ্ধতা কুঁড়া‌তে, উ‌ড়ি বি‌কে‌লের বু‌কে কল্প ডানায়।

.
(স‌্যামসাং এস নাইন প্লাস, গ্রীণ ম‌ডেল টাউন, ঢাকা)

ভাঁজকপাল

তোমার সৌন্দর্যের ভেতরে ওয়াশিংটন ক্ল্যাপস ওড়ে
আমেরিকা ঈগল মুখ বাড়ায়—শিশুর মতো; কেবল
ঢুকে পড়ে—হাতের তলায় কালো বেড়ালের ছায়া
একটা অনিশ্চিত রঙ—অনুমতিহীন তাকিয়ে আছে

নিগ্রো রমণীদের সেরানি ঘামের জলপাই প্রচ্ছদ
বরাভয় শিরার গহিনে পদচ্ছাপ ছড়িয়ে যায়—
হাওয়াঘর মুছে পরস্পর—ঝড় থেকে দিয়েছিল
নিকটস্থ গোলাপ,বেনামে পরাগ উড়ছে—এখানে
দোল খায় আসমানি কেতাব—শাদা বক। জড়াজড়ি
পৃথিবী গোল হয়ে শোকবিদ্ধ আলপিন জ্বলে ওঠে
হেরেমখানার চারপাশ।আটকা পড়ে পরিত্যক্ত
—শরীর, দেউলিয়া হবার আগে তাতার জঙ্গল হতে
প্রথম দেখা যায়—মৃত্যুর অর্গান হতে বেঁচে আছে।

জলপাহাড়

এত বৃষ্টি চারদিকে,
তবু ধুয়ে নিতে পারছে না আমাদের সম্মিলিত পাপ…
এত আগুন চারদিকে
তবু পুড়ে যাচ্ছে না অজগরের লকলকে জিভ

ঘূর্ণির প্রতিবেশী হয়ে থাকি
তবু উড়িয়ে নেবার শক্তি দেখি না
সবাই আমার চোখের দিকেই তাকায়
তবু পরিচিত কোনও মানুষ দেখি না…

পদদলিত

alm

৯৬ ফেল, ৯৭ পাশ ৯৮ কথোপকথন
অভিমান আকাশ ছুঁয়া, তারপর
দেড় যুগ জল পিণ্ডে ভাসমান
দুঃখ কষ্ট লাঞ্ছনা গঞ্জনা বিচ্ছিরি কাণ্ড
তারপর ২০০০ অচিনা স্মৃতির মাতল
সোনালি মাঠে রক্তাক্ত কায়া;
তবু না কি তেলে জলে মিললো না
কি নির্দয় পাষাণ-সংসার ধর্ম!
তারপর- তারপরও মৃত্যু বুঝও না
অহমিকার পদতলে, মাটি পদদলিত;
এভাবেই সংসার ধর্ম কর্ম গুণান্বিত-
অতঃপর অবুঝ জ্ঞান শূন্য অনন্ত।

১৯ ভাদ্র ১৪৩০, ০৩ সেপ্টেম্বর ২৩

নারী কিসে আটকায়

যেই সব পুরুষেরা বউদের ‘ডাট খায়
সেই স্বামী কচু জানে
নারী কিসে আটকায়।
বউয়ের মুখেমুখে কথা বলে ‘ঠাট খায়
তার কাছে জানা দোষের
নারী কিসে আটকায়।

তুমি বড় তাতে কি? বউ বড়লাট খায়
হাবাগোবা জানবে কি
নারী কিসে আটকায়!
লন্ডনে বসে বসে প্রেম করে চাটগাঁয়
এই বেটা কিছু জানে
নারী কিসে আটকায়!

যেই স্বামী সুখী হতে আজীবন ছাঁট খায়
আজও সে শিখেছে কি
নারী কিসে আটকায়।
এতো সব পরেওতো কত জনে খাট খায়
তার কাছে জেনে নিও
নারী কিসে আটকায়!

নির্ঝর ঝর্না

নির্ঝর ঝর্না
অভিমানে ভুলেছে প্রাণচর্চা, সুরের মূর্ছনা;

ভোমরা মেলেছে ডানা,
ফুলেরা লুকিয়েছে পাতার ঘোমটায়…
মিটিমিটি হাসছে শ্যামা প্রথম যৌবনা।

পাথর গলিয়ে নামছে বরফের স্রোত
বুকে হিমালয় কন্যার গুপ্ত প্রেম….
দহনের তোরণ ফেরিয়ে ভিড়ছে সবুজ স্মরণ,
বহুকাল আগের চুম্বন স্মৃতি, প্রবল বরিষণ!

আয়োজন যজ্ঞে ব্যতিব্যস্ত সমস্ত পক্ষিকূল,
আরণ্যক মন্থনে –
আগামী বসন্তে এখানে প্রজাপতির মেলা বসবে
ফিরবে সাঁইজির, একতারা,রবিশংকরের তবলা
ভাবের চুলে জাগবে দোলা..
থাকবে প্রাণের রসদ, অমর্ত্য ভরতনাট্যম…

কেউই জানবেনা একান্ত গোপনে
ঝর্নার নির্ঝরে উন্মত্ত হবে- একটি দৈব সঙ্গম!