বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়
রাত নেমে এলে গাছেরাও হিংস্র হয়ে উঠে। পাতাগুলো ছড়াতে থাকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

আমার যে কী হয়! রাত নামলেই ইচ্ছে করে কোন ঝোপালো গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে সারারাত পাতার বাঁশি বাজাই। যেমন বাজাতাম শৈশবের অলস উদাস দুপুর গুলোতে। বাজাই আর পান করি সোনালি জ্যোৎস্নার অমিয়দ্রাক্ষারস।

আমার কোন আপত্তি নেই রাতভর পাতার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ফুসফুস ভরে নিতে। সারাদিন কত মানুষের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ ঢুকে যায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আর শরীর সেই বিষগুলো নিতে নিতে হয়ে গেছে নীলকণ্ঠ পাখি। কণ্ঠনালীতে জমে আছে কালকুটের ভরা থলে।

হয়না। রাতগুলো থাকে লৌহদরোজার নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বন্ধী। দূরে থাকে গাছ। পাতার বাঁশি।
পাহাড়সমান অনতিক্রম্য বাধা অতি ক্ষুদ্র এক ইচ্ছেপূরণের পথেও!

পুনর্জন্মবিশ্বাসী হলে আমি চাইতাম খোঁপায় বুনোফুল গোঁজা এক পাহাড়ী আদিবাসি রমনীর জীবন। হ্যাঁ জন্মে জন্মে আমি এক নারীই থাকতে চাই। কিন্তু সেই নারী এই নিগড়বন্ধী সমাজের কেউনা। জীবন হবে মুক্তবিহঙ্গের মতো, প্রজাপতির মতো স্বচ্ছন্দবিহারের। যে নারীরা অবগুণ্ঠনের আড়ালে লুকোয়না তাদের নারীত্ব——–বিব্রত নয় লোভীচোখের নগ্ন-চাহনীতে। উৎসবের রাতে মহুয়ার নেশায় ঘোরমাতাল হয়। নাচে তার পুরুষের হাতে হাতে ধরে, পায়ের তালে তালে তাল মিলিয়ে। ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বঁড়শিতে মাছ ধরে। চুলে মহুয়ার ফুল গুঁজে ঘুরে বেড়ায় পাহাড়ীঝর্ণার মতো বন্ধনহীন।

জীবনতো হবেই এমন সহজ আর অনাবিল।
নিরিবিলি রাতে পাতার বাঁশি বাজানোর সুযোগহীন জীবন আমার চাইনা।
এমন নয় যে এই বাঁশির সুরে তৈরি হয় কোন মোহনীয় আবেশ, বরং খানিকটা বিকট অথবা উদ্ভট মনে হয় কখনো কখনো। কিন্তু বাজাতে পারলে প্রাণের অফুরান স্পন্দনের শব্দ বেজে উঠে ঠিকই।
এই ইচ্ছেপূরণের ব্যর্থতাকে আমূল গ্রাস করে ফেলে সীমাহীন বিষাদের নীলঢেউ। আর সারারাত সেই উথালপাথাল ঢেউয়ের নাগরদোলায় দুলতে থাকে পৃথিবী।

ঘুম আসেনা। ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী কেবলই পালিয়ে বেড়ায়। ছড়াগানের ছন্দে ছন্দে ঘুমে ঢুলু ঢুলু সেই চোখ দু’টোই যে ফেলে এসেছি সহস্র আলোকবর্ষ দূরের শৈশবে —- কেন যে বারবার ভুলে যাই! সেই মায়াভরা শিশুকাল আর ফিরবেনা। তবু হাতছানি দেবে। পিছু ডাকবে। আরো অনিদ্রায় অনিদ্রায় ভরে দেবে ব্যাকুল রাতগুলো।

খুব চড়ামূল্যে কিনে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতাটুকু। আর এই মহামূল্য নির্জনতার ভেতরেই ঢুকে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল। নিজের সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় চাওয়াপাওয়া যোগবিয়োগের অংক। জীবনতো কখনো শুরু হয়না কোন অংকের সূত্রে। তবে কেন এত হিসেবের মারপ্যাঁচ উঠে আসে ! কেন যে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও মনটাকে স্মৃতিশূন্য কিংবা একেবারে অনুভুতিশূন্য করে ফেলা যায়না ! কেন যে!

বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না জীবনে কিছু পাগলামি না থাকলে। এই এখন যেমন একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কুয়াশাভেজা ব্যালকনিতে বসে হি হি করে কাঁপছি। মনে হচ্ছে এর চাইতে আনন্দদায়ক আর কিছু ঘটেনি এই জীবনে। এমনকি এখন যদি আকাশভাঙ্গা জ্যোৎস্না নেমে এসে প্লাবিত করে দিতে চায়, তাকে বলবো– ‘এখন নয়। এখন এই জ্বরতপ্ত অন্ধকার নির্জনতাই আমার প্রিয়। আলো চাইনা’।

যাপিতজীবন আর স্বপ্নের মাঝখানে এক রেললাইন ফাঁক। আজীবন পাশাপাশি তবু কেউ কাউকে ছোঁয়না ; কেবলই সমান্তরে ছুটে চলা আকাশ আর সমুদ্রের মতো।

দৃশ্যতঃ আমার কোথাও যাবার ছিলনা।
তবু চোরাটানে আবার এসে দাঁড়াই ইস্টিশনে। টিকেট কাউন্টারের জানালায় হাত বাড়িয়ে এক অচেনা গন্তব্যের টিকিট কিনে ফেলি।

সব যাত্রাইতো আর পূর্বনির্ধারিত নয়।

রাত্রিরে ১

রোজ নিঃশব্দে এসে শয়ানের পাশ ঘেসে ফোটে যে ফুল
সমস্ত প্রহর কাটে সুরভীর আস্বাদ সন্ধানে তার,
হিমশুভ্র তনুখানি জুড়ে সব পেয়ে না পাওয়ার হাহাকার,
অর্ধঘুমঘোরে এ আমার অলস স্নায়ু অবসাদ মোছে কামনায়।

পাশ ফিরলেই সংসার তার আবির ছড়িয়ে ভোর আনে।

রাত্রি তোমার লীলা
পাশ ফিরলেই রাজা
পাশ ফিরলেই প্রজা!

ধূসর পৃথিবীতে-

পাইনি কথাটি ডাহা একটা মিথ্যা হবে
মায়ের কাছে পেয়েছি, পেয়েছি বোনের কাছে,
পেয়েছি বন্ধুদের সাথে; জানা অজানা মানুষের মাঝে
ফিরিয়েও দিয়েছি শতশত এ জনমে!

আকাশ ছোঁয়ার সাধ মিটেছে
কাশফুলের নরম বিছানায় বিনিদ্র রজনীতে
কোলাহল করেছি নীলিমার সাথে বিমুগ্ধ বাক্যালাপে
আঁধার পেরিয়ে অরুণ আলোয় রাঙা পৃথিবীতে!

ঘুরেছি দেশে-বিদেশে; ছুটেছি অজানা পথে
তেপান্তরের মাঠে গল্পে মেতেছি কতো না বিচিত্র্য বিষয়ে!
তাজমহলের পদ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না রাতে স্বপ্নের খেলা খেলেছি বর্ণিল সমাহারে
সাগরের নোলাজলে স্নান করেছি বিষাদের ছায়া মুছে দিতে।

বিস্তীর্ণ মরুর বুকে ক্যাকটাসের স্বপ্নযাত্রায় বিমোহিত হয়ে
স্বপ্ন বুনেছি সজীবতার, সঙ্কল্প করেছি দুর্গম পথে বিজয়ী হতে
হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু রেখেছি; হয়নি পদানত অপঘাতে
সপ্নের সাথে মিতালি করেছি অধরাকে কাছে পেতে।

কোথাও তবু যেন এক ভীষন্নতা, ধূসর এই পৃথিবীর রুক্ষতায়
সকল অর্জন যেন ম্লান হয়ে যায় ক্ষুদ্র এক বালিকার অবহেলায়,
সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়
এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়।।

প্রার্থনা এই আমার

chho

প্রার্থনা এই তোমার নিকট
ওগো মহান প্রভু
পূণ্যিতে দাও ভরে তুমি
আমার মনের বিঁভু।

অশুদ্ধতা মনের যত
দূর করে দাও ত্বরা
নাড়ে যেন শান্তি এসে
মন দুয়ারে কড়া।

পাপে ভরা জীবন আমার
আছি কষ্টে আমি
মাফ করে দিয়ো পাপ আমার
ওগো অন্তর্যামী।

ভ্রান্তির পথে হাঁটছি সদা
পাই না পথের দিশা
চোখের সম্মুখ খাড়া আছে
পাপের অমানিশা।

সোজা পথে চালাও প্রভু
যে পথে নেই কাঁটা
পাপের কাঁটায় রাখলে যে পা
সুখে পড়ে ভাটা।

এই দুনিয়ার মোহ আমায়
অন্ধ করে রাখে
রঙ তামাশা মন্দ কর্ম
কাছে কেবল ডাকে।

বাঁচাও প্রভু মোহ হতে
মন শুদ্ধ দাও করে
মনের ভিতে পূণ্যির খামার
দাও আল্লাহ দাও গড়ে।

কালকেউটের বাসর

dau

আমি আর কই যামু-
যহন আমারে চিনে না আমার খেতি জমিন
যহন আমারে সে ফিইরা চাহে না, কাদা জলে
মাখতে দেয়না- গড়তে দেয়না কস্তূরী হরিণ…
আমি এখন কোন ক্ষেতে চালামু হালের লাঙ্গল
চাষের কলা কৌশল মেনে চিনে- কোন আশায়
দিমু নিড়ানি সাফ করমু আগাছার জঙ্গল;
আমি না হয় মগ্ন আছিলাম নিশান্তের ধ্যানে-
শ্রাবণে গানে জলধির নৃত্যে
তাই বইলে-কি জমিন ভুলিতে পারে, বেগানা কৃষাণের মদমত্তে!
এখন জমিন জোড়া বধ্যভূমি- বুকের ধন ছেঁড়া স্বপ্ন সমাধি
কান্নার গহীনের বাদ্য বাজে, বাজে শঙ্খধ্বনির মর্মর
রাতের পাখীদের ক্ষুধার্ত শীৎকার- মত্ত শুধু কালকেউটের বাসর!

আমি কোন খানে পামু আশ্রয়, কারে করমু পথের সাথী
যেখানে বেবাকতেই কয় তপ্ত কথা- তয়, কে হইবো অগতির গতি
কে চাইবো ফিরে- অহন
কে বুঝবো এই অধম নাখান্দা নালায়েক (অ)কবির মন
ভিটে বাস্তু হারা- দুদণ্ড ঠাই নাই যার
পথের দিশা হারা- বুকে খণ্ড বিখণ্ড মেঘ, বিচ্ছিন্ন আবেগ
বাড়িয়ে চলিছে সংকট!
কলিজা পোড়া গন্ধ নির্গত দীর্ঘশ্বাসে
বুঝতেইতো পারিনি তুলোর মতন মেঘে- তুষের আগুন পুষে রেখেছে!

৭.৭.১৭

ভালো থাকা ভোরগুলো

‘তোমরা সবাই ভালো থেকো’- বলতে বলতে একটি ছায়া
আচমকা মিলিয়ে যায়। একশত সতেরো বছর,
বেঁচেছিলেন লালন- ডাক তুলে একটি টিয়ে এসে
বসে সবুজ কার্নিশে। একটি ভোর তার সমগ্র যৌবন নিয়ে,
লিখেছিল যে কবিতা, সেই কবিতাটি কেবল
‘কবি,কবি’ বলে সারা দুপুর ভরে কাঁদে।

আসলে কান্নাকামী সমুদ্রই কেবল জানে সকল
প্রাণের দুঃখবাদ। নতুন ভোর উঠবে বলে যে কদমফুল
মাটিতে ঝরে পড়ে, সে ও নিজস্ব নিয়মে লিখে,
বিগত বোশেখের সরল পংক্তিমালা। আর মাটির গভীরে
ক্রমশ বড় হতে থাকে কঙ্কালের বিশালত্ব।

‘ভালো থেকো ভোর, ভালো থেকো কালের সুদূর’
এমন উপাখ্যান ছড়িয়ে নদী ও মেঘ গড়ে প্রবাহের মিতালী।
বড় অসহায় হয়ে এর পাশে এসে দাঁড়ায় জীবনের স্মৃতিগুলো।
#

………………………………………
[ সৈয়দ শামসুল হক- শ্রদ্ধাষ্পদেষু ]

উষ্ণ বাউর

rtyu

নয় তো মাটির চাপায় উড়ে বসবে
এক নাক দুর্বলা ঘাসের বাসনা;
এ কি দর্পণের গায়ে অনল জ্বেলে না
শুধু সেলফিতে ভূত পুত রঙিলা
আজও দেখি দৃশ্যপটে কান্না!
ভাদ্র শেষে আশ্বিনের মার্জনা
আর উষ্ণ বাউর বাজনা;
মনের ময়লা কতখানি পরিষ্কার
এই কার্তিকে হবে পরীক্ষা-
জোছনা সলক আর বুঝি চায় না
গলার মালা সেলফিতে বয় না।

৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২৩

শহরতলীতে ইভনিং ওয়াকের ইমেজারি

ind

ক্রমশঃ দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে
আবছায়া আঁধারে শহর ঢেকে যায়
দূরে নদীর জলে বোটগুলো ঢেউয়ের তালে তালে দোলে
আরও দূরে নদীর ওপারে শহরের
উঁচু উঁচু ইমারতের মাথা মিশে আছে মেঘেদের দেশে
পাশে প্ল্যানেটোরিয়ামের ডিম্বাকৃতি চূড়া
গাছের ডাল হেলে হেলে পড়ে যায় জলের উপর
পাতাগুলো জলের সাথে ভেসে ভেসে ওঠে
ইঁটের রাস্তা আর পাশে জগিং ট্রেইল সোজা চলে গেছে বহুদূর
যেতে যেতে হাঁপিয়ে গেলে বেঞ্চিতে বসে যাই
পাশে হেঁটে যাওয়া হাঁসগুলোকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকি
তারা প্যাঁক প্যাঁক করতে করে শাবকগুলি নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যায়।

জ্বর জ্যোৎস্না

একটা আলজিভ বিকেল। নুডলসের মতো
—চিকন। ভেজা শরীর, উর্বর বুক দেখা যায়।
সে দৌড় দিতে ভুলে গেছে। রেশমগুটি থেকে
সুতো হাসে। শাদা কবুতর—তিলগ্রন্থ ওড়ায়-
চুম্বন আর উরুতে বেড়ে ওঠে রুটিকারখানা

মৌনসন্ধ্যা। সেরকম গাঢ়, ভেতরে গোপন জ্বর
জ্যোৎস্না নেই। হারিকেনের বিষণ্ণ রঙ, উপল
পাতার তল ভেসে আসে। তাতে জেলেবাড়ি
পার হওয়া যায়। শানবাঁধানো—পুকুর। পাখিরা
গোসলে সাঁতরায়, পৃথিবীর সব আনন্দ তাদের।
রবারগাছ মূর্ছাঘুমে—মনে হয় নৃত্য করা হলুদ
পাতা টের পেলে প্রবেশের পথ খুঁজে বেড়াবে।
দূরের ধানকল ঘাসের আত্মহত্যা থামিয়ে
সিল্ক রোদের মাঠ শুয়ে পড়ে। নতুন পুনর্পাঠে…

কত অচেনা পথ হয়ে যায় চেনা

chh

চেনাপথগুলো ছেড়ে আসি, সে পথ হয় অচেনা
হয় না সেই পথে হেটে আর মুগ্ধতা কেনা;
অচেনা পথ হয় চেনা হাটলে জীবনের বাকে বাকে
ভিড় জমায় মনে নতুন মুগ্ধতারা ঝাকে ঝাকে।

চেনা পথ অচেনা হয়, তুমিও কি আমার অচেনা পথ
হয়নি চেনা তোমাকে আর,
হলো না আর নেয়া ভালো থাকার শপথ
তোমার আমার সম্পর্কটা হয়ে ওঠলো না মায়ার।

তুমি আমার অচেনা পথ, আমিও হইনি চেনা তোমার
কেউ কাউকে বলতে পারিনি, ভালোবাসি বেশুমার;
কেমন যেন সময় আমাদের সম্পর্ক করতে থাকলো বিচ্ছিন্ন
আমরা তবুও হাঁটি অচেনা পথ ধরে, পাশে আছি, মন ভিন্ন।

কোথায় হারালাম, কেন এমন হলো, হলো না কেউ কাউকে চেনা
তুমিও হতাশায় নিমজ্জিত, সত্যল? বলবেনা?
হাসিহীন তুমি থেকে যাও একাকি
ভেবে দেখো সময় কতটুকু আর বাকি।

দুজনার পথ দুটো, অথচ একই পথে হাটি তবু
আমরা বিষণ্ণতা কুড়িয়ে অসুস্থ করে রাখি মনের বিভু।
সমঝোতায় হলো না আর সংসার পাতা
আমাদের জীবন নামায় বিষাদের কাব্যরগাথা।

দীর্ঘশ্বাসের লহর ছড়িয়ে দিই অচেনা পথে হেটে হেটে
কেউ আর দেখি না কারো মন ঘেটে
চুপ কথার রাজ্যে হারিয়ে আমরা সুখ খুজি
কখনো মন ব্যেথায় ডুবে গেলে আলগোছে একাকিত্বের বুকে মুখ গুজি।

.
এই মেঘ এই রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস

একটি বাউল গান [] তোমার কোনো পরিচয় নাই

তোমার কোনো পরিচয় নাই,
আমি যদি ডাক না দেই
আমি তোমার ছবির বাহক
সাথেই আছি- কোথায় নেই!

১। সব কর্তৃত্ব আমায় ঘিরে
পাপ আর পূণ্যের সব বিচার,
তোমার হুকুম পালন করি-
আমার তো নাই অধিকার,
আমি ছাড়া তুমি বেকার,
লুকিয়ে আছ আলোতেই ।।

২। যুগে যুগে তোমায় খুঁজে
করছে যারা আত্মদান,
কোথায় নিয়ে রাখছো তাদের
কিসের বিচার, কি বিধান!
বলো প্রেমের কি প্রতিদান
দূরে সরাও নিমিষেই ।।

৩। ফকির ইলিয়াস বলে মায়ার
কঠিন শিকল নিয়ে পা’য়
পারি না আর চলতে আমি
বেড়েই চলছে দেনা-দায়
বাঁঁচবো আছি এই ভরসায়
শুধু তোমার পরশেই ।।

.
#
নিউইয়র্ক

এলোকেশী

তখন তার এলোচুল বাতাসকে করছে শাসন
এমন মেঘলা দিনে ভিজতে ইচ্ছে করে ভীষণ
সুবাসে তার মাতাল চারপাশ যখনতখন
এমন নেশায় কতবার হয়েছে ইচ্ছে মরণ
চাতকের মতো চেয়ে থাকি, হয় যদি বর্ষণ
বাড়ছে তৃষ্ণা যত দেখি ঢেউয়ের আন্দোলন।

long-hair-girls-dp-28

ধূসর এ আঙিনা তার পরশ পেয়েছে যখন
এই অবেলায় হলো যেন বসন্তের আগমন
হাসি তার নির্ঝরিণী বারবার হচ্ছে প্রসারণ
ভাসছে চাঁদের খেয়া করতে তাকে দর্শন
কোথায় শিখেছে সে এমন নিখুঁত বশীকরণ
সকাল-বিকাল করছে কেবল হৃদয় হরণ।

জানি আসবে জ্বর তবু মন শুনছে না বারণ
আসছে ঝড় চোখের ভেতর করছে সম্মোহন
চোখবুজে যতবার করছি আত্মসমর্পণ
নির্ঘুম সারাবেলা তবু স্বপ্নলোকে বিচরণ
জানবে না কেউ এই এলোমেলো হবার কারণ
শুধু নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে থাকবে তার আলোড়ন।

একদিন তোমাকে ফেরাবে

—————-একদিন তোমাকে ফেরাবে

সেই স্মৃতিগুলো,
একদিন তোমাকে ফেরাবেই;

সেই পুরাতন পথ!
আগোল খোলা আকাশ তো, কত কিছু ভুলেছো? খসে পড়া পালকের মতো
ঝরে গেছে কতক? কাঠবাদাম তলে, বৃষ্টি ছোঁয়ার মাতম;
ঝরা পাতায় সাঁড়ি বেঁধে চলে পিঁপড়ার দল। স্মৃতির ভির করা উঠানে
সজনে ডালে ভেজা কাক; উঁকি দিয়ে দ্যাখে
এখনো কতক খসে পড়া স্মৃতি তোমার।

ফিরবে বলে বাসন্তী বেলা
তোমার আরধ্য বিরহ অভিমানে কাঁদে; বলে উঠে চুপিসারে
অরন্য বিলাপ। ঝিঁর ঝিঁরে বৃষ্টিতে নেতিয়ে পড়া লজ্জাবতী যেন
বৃষ্টির ছোঁয়া মুর্চ্ছা যায়।

আঙ্গিক খোলসে লুকিয়ে ছিল কিছু স্মৃতি
তুমি তাও ভুলে যেতে বসেছ; বিষম খেয়ে তন্দ্রা
অভিমানে আবসা পথে হাঁটে
যাক তা সরে যাক আসমান জমিন ভেদে
তবু্ও যাতনা বার বার ফিরে; কটুম পাখি যায় ডেকে
একদিন তোমাকে ফেরাবে।
========

ভাদ্র মাসের তাল

কথা প্রসঙ্গে এবার ভাদ্রের কথায় আসি
আগে যখন কালে-ভদ্রে ভাত বাসি হতো
এখন বাসি হয় নগদ টাকায় কেনা হাসি
তবুও আমি এই ভাদ্র মাস বড় ভালোবাসি!

আগের দিনে ভাদ্রের গরমে পাকতো তাল
এখন কথায় কথায় গরম হয় মাথার চাল
আগে চুল পাকলে ফকফকা সাদা হতো
আর এখন হয় নিঁখুত কালো অথবা লাল!

তেজারতিতে তেজি ভাব মোটেই আর নেই
তবুও বায়নার চৌকাঠে সখিনা ফুলায় গাল
আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা তবুও উলংগ দেহ
আশেপাশে দশ-বারোজন হাঁটে… তবু্ও
মুখ খিচিয়ে বলে..আমার সঙ্গী নাই কেহ!
——————

জালস্বপ্ন

বড্ড স্মৃতিভ্রম হচ্ছে ইদানিং আমার
যান্ত্রিক শহরে এসে সব ভুলে যেতে বসেছি আমি
এখন আর ঘুম ভাঙ্গেনা দোয়েল কয়েল শালিক আর ময়নার গান শুনে!
ভুলতে বসেছি মধ্যরাতে ঝিঝির মিষ্টি-মধুর ঘুম পাড়ানি সুর।
আমি এখন হয়তো আর পরখ করতে পারবো না; কোনটি শালিক কোনটি ময়না!
কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে ডাহুকের ছানা হয়তো আজো ভেসে বেড়ায়
ঝুরিঝুরি হয়তে আজো বিরহ বেদনায় নিস্তব্ধ রাত কাটায় কোন গাছের ডালে
চোখে এখন আর ভাসেনা সারি সারি শ্বেতবলাকার সান্ধ্য-আয়োজন
‘নিম’ বলে হুতুম ডাক দিয়ে যায় হয়তো আজো মহাযাত্রীর অন্তিম শয়ানের পাশে!
কুসংস্কার বলে হয়তো উড়িয়ে দেই অতি-আধুনিক সভ্যসমাজে-
তবে কি মরেনি সেইদিন যেইদিন হুতুম ডাক দিয়েছিল তোমার চালের ওপর দিয়ে।
জোড়া শালিক দেখে তুমিও কি স্বপ্ন দেখ নি ভালোবাসা পাওয়ার
হয়তো মিথ্যে হয়তো ছিল অলীক; ছিল মিথ্যে স্বপ্ন, তবুও দোলা লেগেছিল জলে!
টুনটুনি হয়তো এখনো বাসা বুনে নিচু কোন গাছের ডালে
ছোট্ট পাখিটি স্বপ্ন অশেষ; শুন্য নীড়ে হাহাকারে মাতে ঝড়ের শেষে
বাবুই পাখির শক্তগাথুনি বাসা বাঁধে তাল তমালের পাতায় পাতায়
ঝড়ের তালে দোলে; দুলছে যেন মহাকাল, ভাঙে গড়ে অনন্তকাল।
সাজের বাহারে ময়না টিয়া, বাঙালি ললনার প্রতিমূর্তিরূপে
জন্মান্তর বাঙালি মিত্রতা গড়েছে বিনে সুতার মালায় প্রকৃতির সাথে
তবুও মানুষ আজ ছুটে চলেছে যন্ত্রের নগরে মিথ্যে সুখের আবাহনে।