বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

মাদারিং সানডে

images এক
ইংল্যান্ডের লিংকনশায়ারের পটভূমিতে লেখা গ্রাহাম সুইফটের উপন্যাস ‘মাদারিং সানডে’। নাম না বদলে সিনেমা করেছেন ইভা হাসন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে দশ বছর হল, কিন্তু তার ছেটানো রক্ত লেগে নাগরিকের জীবনে। শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত নিভেন-পরিবারের সন্তানেরা যুদ্ধে নিহত, তাদের বন্ধু শেরিংহাম ফ্যামিলিতে শুধু বেঁচে আছে পল নামের ছেলেটা।

১৯২৪ সালের মাদারিং সানডে, এদিন বাড়ির প্রত্যেক কাজের লোককে ছুটি দেওয়ার নিয়ম যাতে তারা নিজেদের মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। নিভেন-পরিবারের হাউজমেড জেন ফেয়ারচাইল্ডও ডে-অফ পেয়েছে, যদিও জেন অনাথ, দেখা করার মতো মা নেই তার। দিনটাকে উদ্‌যাপন করার জন্যে নিভেনরা প্রতিবেশী শেরিংহাম আর হবডে-দের সঙ্গে মিলে পিকনিকের ব্যবস্থা করল।

এদিকে, পলের সঙ্গে জেনের গোপন যৌনসম্পর্ক। জেন ভালোবাসে তাকে। লন্ডনের আইন-কলেজের ছাত্র পল “পড়ার চাপ, একটু পরে যাচ্ছি” ব’লে আপ্‌লি টাউনে নিজের বাড়িতে একা থেকে গেল আর চুপিচুপি ডেকে নিল জেনকে। দুজনে গভীর শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় কাটাচ্ছে কয়েকটা ঘন্টা।

দুই
একশো বছর আগে ইংল্যান্ডের কাউন্টির সৌন্দর্য এই ছবির প্রথম তুক। সমান ক’রে ছাঁটা ঘাসের লম্বা মাঠ, ফুলগাছে সাজানো ফার্মহাউজ, পেশি-ঝলসানো ঘোড়ার চারণভূমি দেখতে দেখতে ইয়োরোপের সুস্বাদু শীত অনুভব করা যায় নিজের জিভে। আর অভিজাততন্ত্রের রেশ টেনে চলা ধনী ব্রিটিশদের বাড়ির ভেতরটাও যেন ঈশ্বরের মতো — পুরনো, সুমহান, নড়চড়বিহীন।

পল চড়ুইভাতির জন্যে রওনা হলে নগ্ন তরুণী সেই বাড়ি ঘুরে ঘুরে দ্যাখে। গোঁফদাড়িভরা তেলরঙের পূর্বপুরুষ পার হয়ে আলমারি খুলে পলের পোশাকের গন্ধে বিভোর হয়, পৌঁছোয় পারিবারিক লাইব্রেরিতে — চামড়ায় বাঁধানো, নিশ্ছিদ্র সার দেওয়া বইয়ের আবলুশ যক্ষপুরী। বেরোনোর আগে পল ব’লে গেছে এমা হবডে-র সঙ্গে তার আজ এনগেজমেন্ট, যে-এমা পলের বন্ধু ও নিভেনদের ছেলে জেমসের বাগদত্তা ছিল। প্রেমিকের সঙ্গে নিজের বিয়ে সে কল্পনাতেও আনেনি, তবু খবরটা শোনার পর জেন ক্যামন ভ্যাবলা মেরে গেছে। পল বলছিল, আমরা দুজন সারা জীবন খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকব, কেমন? জেন মরা চোখে তাকিয়ে পুতুলের মতো ঘাড় নেড়েছে। পলের সিগারেটের নেশা, কিন্তু এ-পর্যন্ত একটাও স্টিক না-ধরানো জেন পল-বিদায়ের পর থেকে নন-স্টপ ধোঁয়া টেনে যাচ্ছে (সিনেমার শেষ পর্যন্ত তার ঠোঁট থাকবে সিগারেটে)। এবং সে আর পোশাকও পরছে না (কী আসে-যায়)! আমরা যারা ছবির শুরুতে লিংকনশায়ারের ল্যান্ডস্কেপে রঙিন বৃক্ষবসন্তে ডুবে গেছিলাম — বাড়ির ভেতরে নিষ্পত্র ওকগাছের মতো, বরফভাসা ঝর্নাজলের মতো বাদামি খোলা চুলের আর এক প্রকৃতিকে দেখি। যৌবনের আদুল পরমাকৃতি যতদূর বিষণ্ণ হতে পারে ততখানি ফুঁপিয়ে ওঠে সংগীত-পরিচালক মরগ্যান কিবি-র পিয়ানো। কিছুক্ষণ পরে জেন আপ্‌লি থেকে নিভেনদের বাড়ি ফিরে যায় এবং শোনে পল গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। এবার তার দ্বিতীয় পরীক্ষা। উচ্চবংশীয় প্রেমিকের বিয়ে মেনে নিতে হয়েছিল, এখন সে মরে গেছে জেনেও আকাশ চুরমার করা কান্না গিলে ফেলতে হবে।

তিন
এই ছবির প্রথম অংশে ক্যামেরা দাঁড়িয়ে আছে তাক লাগানো নিসর্গদৃশ্য আর নারীশরীরের উদ্ভাসে, দ্বিতীয় অংশে বিদ্যুৎগতিতে এসেছে-গেছে ফ্ল্যাশ ব্যাক আর ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড।

জেন অসম্ভব পড়তে ভালোবাসে। তাকে একবার নিজের বাড়ির লাইব্রেরিতে স্টিভেনসনের কিডন্যাপড-এর পাতা ওলটাতে দেখে ফেলেছিল হতবাক নিভেন-কর্তা গডফ্রে। পল চলে যাওয়ার পরে সে পরিচারিকার পেশা ছেড়ে একটা বুকশপে কাজ নেয় এবং লিখতে শুরু করে। ওই দোকানেই বইয়ের তাকের গলিঘুঁজিতে জেনের পরিচয় দর্শনের ছাত্র অনুভূতিপ্রবণ কালো যুবক ডোনাল্ডের সঙ্গে। তাদের ভালোবাসা এবং বিয়ে হল। সে জেনকে জিগ্যেস করেছিল, তোমার লেখক হওয়ার পেছনের কারণ কী? জেন বলে, তিনটে। এক : তার জন্ম (না হলে লিখত কী করে?), দুই : টাইপরাইটার উপহার পাওয়া, তিন… তিন… তিন নম্বরটা থাকগে। ডোনাল্ডের ধরা পড়ল দুরারোগ্য ব্রেন টিউমার। মৃত্যুশয্যায় সে তৃতীয় কারণ জানতে চাইলে বউ কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল — আমি তোমাকে ভালোবাসি।

পরের ঘটনা সামান্য। জেন বড় লেখক হল, বৃদ্ধ হল (অভিনয়ে গ্লেন্ডা জ্যাকসন), প্রচুর পুরস্কার জুটল তার। এমনই এক স্বীকৃতি পাওয়ার দিন সাংবাদিকেরা বাইট নিতে এসেছে, এই দৃশ্যে সিনেমা শেষ।

চার
এ-ছবিতে খল নয় কেউ, পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী যেন, শুধু শ্রেণিপার্থক্য বয়ে আনে দুঃখঅপমান। পল জোর ক’রে প্রেমিকাকে বশ করেনি, ক্যাপ পরলে গর্ভধারণ এড়ানো যাবে শুনে মেয়েটি চোখ কপালে তুললে সস্নেহে বলে, তোমার ইচ্ছে না হলে থাক। তখন মনে পড়ে, জেনের মাও গর্ভবতী পরিচারিকা ছিলেন। এদিকে, সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পলের এমাকে বিয়ে করতে হচ্ছিল, তাই তার মৃত্যু আদতে আত্মহত্যা কিনা এটা বারবার ভাবিয়েছে গডফ্রে নিভেনকে। আবার গডফ্রে-র স্ত্রী ক্ল্যারি যখন কাঁদতে কাঁদতে জেনকে চুমু খাচ্ছে, বলছে, তোমার সৌভাগ্য তুমি জন্ম থেকে অনাথ, আত্মজন নেই ব’লে বিচ্ছেদকষ্টও নেই (You’re comprehensively bereaved at birth — ঠিক এই বাক্যটা), তখন জেনের সঙ্গে আমরাও চমকে উঠি! তাই কি হয়, মানুষ তার দীর্ঘ জীবনে কত অপরিহার্য সংযোগ তৈরি ক’রে বসে, সেসব কি রক্তের বাঁধনের চেয়ে কিছু কম? এভাবে অভিজাত আর নিম্নবর্গের শোকস্রোত পাশাপাশি বয়ে যায়, কেউ কাউকে বুঝতে পারে না।

কত কত স্মরণযোগ্য দৃশ্য আছে ছবিতে! ঘন্টা-বাজা এক মিষ্টি চার্চ থেকে বেরনো নতুন দম্পতিকে দেখে জেন জিগ্যেস করছে, ওরা কি সব সত্যি বলবে একে অন্যকে? অথবা জেনের শরীর উন্মোচিত করতে করতে পল হাসিমুখে : You are slightly interesting than law books, বা ওই দৃশ্যটা যখন আদরকালীন জেন প্রেমিককে গুনগুনিয়ে বলল, তোমার বীজ মাটিতে ফ্যালো, আমরা দুজন তাতে সার-জল দেব, গাছ বড় হবে। আবার, আপ্‌লির বাড়ি থেকে বেরনোর আগে ফুলদানি থেকে একটা হোয়াইট ক্রিম ছিঁড়ে বুকের ভেতর ভ’রে নিল জেন। কিম্বা ধরো, এক পলকে গা কাঁপিয়ে দেওয়া খবরের কাগজের হেডলাইন — প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাড়ে ছ’লাখ ব্রিটিশ সেনা মারা গেছে!

এত নিখুঁত চিত্রনাট্য, এমন যত্নে বানানো ফিল্ম, পর্দায় সিগারেটের প্রত্যেক টানে শুকনো পাতা পোড়ার শব্দ। যেমন ‘অভি’ থেকে ‘নয়’ আলাদা হওয়ার নয়, আমার কাছে জেন মানেই ওডেসা ইয়ং। আবার, নগ্ন প্রেমিকের ধাপে-ধাপে পোশাকে সেজে ওঠা দেখে জোশ ওকনোর ছাড়া আর কাকেই বা সে বলত, তুমি বড্ড হ্যান্ডসাম? তেমনি শোপে ডিরিসু ছাড়া আর কারও মুখেই মিলত না উদারতা-সারল্য-প্রজ্ঞার থ্রি ইন ওয়ান।
তবু ছবির শেষ পর্যন্ত জেগে থাকে জেনের লেখক হওয়ার তৃতীয় অজুহাত… তারপর দেখি এক স্বপ্নদৃশ্যে পল জেনের পাশে ব’সে বলছে : তোমার লিখতেই হবে। আমার জন্যে এই অতীত পুনর্নির্মিত করো। তোমার নিজের জন্যেও।

সেই মুহূর্তে আরও একবার মনে হয় — আমাদের কীই বা করার আছে, এই ক্ষুদ্রমহৎ জীবন লিখে যাওয়া ছাড়া — যতদিন না ঘরের টেলিফোনে বাইরের অনন্ত ডাক পাঠায়, যে-শব্দে জেনকে তার প্রেমিক ডাকত। বৃদ্ধ জেনের পাদুটো আজও সেই বাজনা শুনলে থামে, কথা মুছে দিয়ে স্তব্ধ হয় সে।

শ্রেষ্ঠ শিল্পও দর্শককে এভাবে বারবার নিথর করবে।

mot

[সিনেমা : মাদারিং সানডে। কাহিনি : গ্রাহাম সুইফট। পরিচালনা : ইভা হাসন। ক্যামেরা : জেমি রামসে। সুর : মরগ্যান কিবি। অভিনয় : ওডেসা ইয়ং (জেন) , জোশ ওকনোর (পল), শোপে ডিরিসু (ডোনাল্ড)। মুক্তি : কান চলচ্চিত্র উৎসব, ২০২১। সময় : ১০৪ মিনিট। দেশ : ইউকে।]

নারী কিসে আটকায়

যেই সব পুরুষেরা বউদের ‘ডাট খায়
সেই স্বামী কচু জানে
নারী কিসে আটকায়।
বউয়ের মুখেমুখে কথা বলে ‘ঠাট খায়
তার কাছে জানা দোষের
নারী কিসে আটকায়।

তুমি বড় তাতে কি? বউ বড়লাট খায়
হাবাগোবা জানবে কি
নারী কিসে আটকায়!
লন্ডনে বসে বসে প্রেম করে চাটগাঁয়
এই বেটা কিছু জানে
নারী কিসে আটকায়!

যেই স্বামী সুখী হতে আজীবন ছাঁট খায়
আজও সে শিখেছে কি
নারী কিসে আটকায়।
এতো সব পরেওতো কত জনে খাট খায়
তার কাছে জেনে নিও
নারী কিসে আটকায়!

নির্ঝর ঝর্না

নির্ঝর ঝর্না
অভিমানে ভুলেছে প্রাণচর্চা, সুরের মূর্ছনা;

ভোমরা মেলেছে ডানা,
ফুলেরা লুকিয়েছে পাতার ঘোমটায়…
মিটিমিটি হাসছে শ্যামা প্রথম যৌবনা।

পাথর গলিয়ে নামছে বরফের স্রোত
বুকে হিমালয় কন্যার গুপ্ত প্রেম….
দহনের তোরণ ফেরিয়ে ভিড়ছে সবুজ স্মরণ,
বহুকাল আগের চুম্বন স্মৃতি, প্রবল বরিষণ!

আয়োজন যজ্ঞে ব্যতিব্যস্ত সমস্ত পক্ষিকূল,
আরণ্যক মন্থনে –
আগামী বসন্তে এখানে প্রজাপতির মেলা বসবে
ফিরবে সাঁইজির, একতারা,রবিশংকরের তবলা
ভাবের চুলে জাগবে দোলা..
থাকবে প্রাণের রসদ, অমর্ত্য ভরতনাট্যম…

কেউই জানবেনা একান্ত গোপনে
ঝর্নার নির্ঝরে উন্মত্ত হবে- একটি দৈব সঙ্গম!

চিকেনিজম ভাবান্দোলন

প্রগতিশীল ও উন্নত রাষ্ট্র বলতে মানসলোকে যে ধারণা পুস্পপত্রে পল্লবিত হয়ে ওঠে ওয়েস্ট শেয়ালপুর রিপাবলিক ঠিক তাই। ফলে শিয়ালপুরের রাজধানীর নাম চিকেনডাঙা শোনার পর বিস্ময় জাগেনি। এই রাজধানীতেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ব মুরগিসুন্দরী প্রতিযোগিতা’।

বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার কথা শুনলেও বিশ্বমুরগি সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়ে পুরোই অজ্ঞ ছিলাম। শেয়ালডাঙার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী স্যার মোরগালিয়াম কুককুরুক যখন এ তথ্য জানালেন তখন বিস্ময় গোপন করতে পারিনি। অগাধ কৌতূহল নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম-
: স্যার, এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের কারণ কি?
: চিকেনিজম ভাবান্দোলনের ফসল এই প্রতিযোগিতা। মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী মুরগিবাদীদের চলমান সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানাতে শেয়ালপুর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে।

নিজ অজ্ঞানতাকে মনে মনে ধিক্কার জানিয়ে প্রশ্ন করলাম-
: এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন কি কি পুরষ্কার পান?

শেয়ালপুর রিপাবলিকের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী বেশকিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন-
: যে প্রতিযোগী চ্যাম্পিয়ন হন তিনি অনেক পুরষ্কারইই পান। মুরগিধিকার আন্দোলনের ব্রাণ্ড এম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। তবে সবথেকে বড় পুরষ্কার হলো মুরগি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তারা আমৃত্যু শেয়ালদের সাহচর্য পান।

আবার বিস্মিত হবার পালা, সারাজীবন জেনে এসেছি শেয়াল আর মুরগীর সম্পর্ক খাদক ও খাদ্যের, আর মন্ত্রী মশাই বলছেন সাহচার্যের কথা! কৌতূহল চাপতে না পেরে বললাম-
: মন্ত্রী মশাই, শেয়ালদের সাহচর্য বিষয়ে যদি একটু খোলাসা করে বলতেন-
: ভেরী সিম্পল। চ্যাম্পিয়নসহ ফার্স্ট ও সেকেন্ড রানার্স আপ বিশ্ব মুরগিসুন্দরী শেয়ালদের সাথে রাত কাটিয়ে জানিয়ে দেন- মুরগিস্বাধীনতা হরণ করা যাবেনা।

যত জানছি ততই কৌতূহল বাড়ছে, জানতে চাইলাম-
: এতে শেয়ালদের লাভ কি?

মন্ত্রীমশাই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানালেন-
: সবকিছুতেই লাভ থাকতে হবে! শেয়ালদের মনে মুরগিদের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা নেই- এ ধারণা সম্পূর্ণ অবান্তর। শেয়ালদের মত এতো বেশী করে কে আর মুরগিদের ভালোবাসে!

মন্ত্রী মশায়ের কাছে ক্ষমা চাইলাম। কিন্তু তার রাগ কমেছে বলে মনে হোলো না। কিছুটা ভয় নিয়েই প্রশ্ন করলাম-
: বাকী প্রতিযোগিরা কি সুযোগ পান?

মন্ত্রীমশাই ঝাঁঝালো স্বরে বললেন-
: আপনার কি মনে হয়?

বিনয়ের সাথে উত্তর দিলাম-
: স্যার, আমার কোনো ধারণা নেই। তাই আপনার কাছে প্রকৃত তথ্যটা জানতে চাইছি-

স্যার মোরগালিয়াম ক্ষোভে ফেটে পড়লেন-
: শেয়ালপুর রিপাবলিকের মোরগরা কি মরে গেছে! বাকী প্রতিযোগীরা এই মোরগদের সাহচর্য পায়। তারপরেও দু:খজনক সত্য হোলো মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় মোরগদের ভূমিকা সবসময়েই ফোকাসের বাইরে থেকে গেছে। মুরগী আগে না ডিম আগে প্রশ্ন থেকেই এই অবহেলার শুরু, যেনো ডিমোৎপাদনে মোরগের কোনো ভূমিকা নেই।

আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস হলো না। মন্ত্রী মশায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় তিনি কানে কানে বললেন- ‘মুরগির প্রয়োজন হলে বলবেন, সংকোচ করবেন না। মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকেনিজম বিশেষজ্ঞ ৩৪-২৬- ইনফিনিটি মুরগি পাঠিয়ে দেবো, জাস্ট রুম নাম্বারটা জানাবেন।’

.
#খসড়া অণুগল্প
১৩১০২০১৮

বিভোর

জীবনের সমান্তরালে এক নদী বয়ে গেছে
তার বুকে ফুটে ওঠে থোকা থোকা ফুল
পাহাড় মাঝে মাঝে সেই ফুলে হাত রাখে
সবুজ ছায়া মেলে পাইনের সারি দাঁড়িয়ে

আকাশ তখন তারাদের গানে বিভোর
ভোরের আলো ফুলের রেণু মেখে উচ্ছ্বল
মেঘের ঢেউ মুছে দিয়েছে রাতের কালোরেখা
শিশির ভেজা মাঠে কদমের পাতা ঝরে যায়।

কালের কাক

আমার কিছু হয়নি সমুদ্রের ঘোড়া রোগ
শীতটা যেমন তেমন কেটে গেছে, ডাকেনি ডাহুক
এখন চলছে বসন্ত অন্তহীন
আমার পোড়া অন্তর কবিতার আওয়াজ ক্ষীণ!

এখনও পোড়া ধ্বনি শুনি
শুনি প্রতিধ্বনি আদিম
কামনার শর বারবার আঘাত হানে
কেউ জ্বালে না ভালোবাসার পিদিম!

নৌকো করে জলে ভাসি
বিষণ্ণ প্রহর সেও আমাকে বলে, বড়ো ভালোবাসি
আমার আশেপাশে ঘুরে কালের কাক
যতখুশি ভুল বুঝো প্রেমী, আমিও হয়েছি নির্বাক!!

পাখির ভাষা, মানুষের চলার পথ

পাখিভাষ্য শিখতে পারে না মানুষ। কিন্তু মানুষ পোষে পাখি,
উড়ে যেতে চায় পাখির ডানায়- চলে ও চালায়
জীবন, জীবনের ছায়া- জলের একান্ত প্রতিবিম্ব।

মানুষ যে অক্ষর ধারণ করে বুকের পাঁজরে- তার মাঝে
কি থাকে পাখির জন্য সামান্য ভালোবাসা!
অথবা যারা বৃক্ষ হত্যা করে, নগর পোড়ায়,
দখল করে নদী- তাদের প্রতি কি থাকে পাখির ধিক্কার!

পাখি ও মানুষ একই মাটিতে বসবাস করে পাশাপাশি-
তবু কি এক পরিতাপ এসে বিদ্ধ করে
আমাদের ঋতুকাল, আমাদের সংলগ্ন সবুজ।

কাকাতুয়া চোখ

দূরের কিছু মানুষ দেখা যায়—শাদা পাথর জল
প্রাণ ভাসানো রমণীদের গোপন করা বুদ্ধ হাসি
গড়িয়ে যাচ্ছে দুপুরের নীল টিলা—হাওয়ায়
ডানা মেলছে—পায়চারি পাহাড়, কিনারে দাঁড়িয়ে
সবুজের বুলেট ট্রেন—সন্ধ্যায় পালাচ্ছে পাখিস্বত্ব
এই পরাবাস্তব ধরে অনেক দূর উত্তাপ ছড়ায়–

ঘর–জীবনের চৌকাঠ কোথায় রেখে এসেছি!

একবার নিজ সমাধি জুড়ে—আগাছা দেখি
মুগ্ধ হচ্ছি–সাঁওতাল কন্যাটি কবে আকন্দগাছ
হয়ে জন্মেছিল! অতিশব্দে হেসে ফেলি—
শেষপর্যন্ত বেড়ে ওঠা শিকারি রূপের সুখ–সন্তপ্ত
নিঃশ্বাসের পিঠাপিঠি বাসা বাঁধে, অবনীপ্রান্তর;
আর নরকশয্যা সামলাতে কাকাতুয়া চোখ ধুয়ে নিই

কিছু সময় কাটতো যদি নির্জনে

ch

খোলা আকাশের নিচে একান্ত আমার কিছু সময় হত যদি
চোখ দুটি বানিয়ে রাখতাম নদী,
কাঁদতাম আবার হাসতাম
আবার কল্পতরীতে সুখে ভাসতাম।

কিছু অভিযোগ তুলে ধরতাম প্রকৃতির কাছে
আহারে মনে কতই না অভিমান জমা আছে
দেখিয়ে দিতাম আকাশকে হয়ে উর্ধ্বমুখী,
উচ্ছাস ফিরে পেতে সবুজে দিতাম উঁকি।

একটি নির্জন প্রহর যদি আমার হত
মিহি হাওয়ার মলমে সাড়াতাম বুকের ক্ষত
না পাওয়ার যে হাহাকার মনের কোণে
হাহাকার ছুঁড়ে ফেলে কিছু নতুন স্বপ্ন বুকে যেতাম বোনে।

আমি আকাশের কাছে করতাম অনুনয়
মানুষের সাথে নয় আমার যেন মেঘেদের সাথে বাড়ে প্রনয়,
চোখের কুঠুরিতে মুগ্ধতা কিছু করতাম জমা,
মনকে বানিয়ে রাখতাম না আর নর্দমা।

আমার একান্ত কিছু প্রহর চাই
যেখানে হাউকাউ, স্বার্থের গান নাই
আমি খোলা আকাশের নিচে এক খন্ড জমি চাই
যে জমিতে দাঁড়ালে আকাশ দেখতে পারি, মনে সুখ পাই।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, স্থান অজানা)

… তারপর একটি ফুৎকার

da

নরক থেকে উঠে আসছে
দাহ্য উত্তাপ
তেজস্বী রোদ্দুরে
নামছে গনগনে রশ্মি
নিটোল বৃক্ষ, নীরব
গোমড়ামুখো পত্র পল্লবে
জমেছে
পৃথিবীর সমস্ত কায়া কালিমা;
বায়ুশূন্য
গনগনে আকাশে জ্বলজ্বলে উষ্মা
চোখ রাঙাচ্ছে মানুষের চারণভূমে
মানুষের পাপে
মানুষের ঘৃণায়
অবর্ণনীয় অভিশাপে!..
যেনো
মৃয়মান হয়ে আসছে পৃথিবী
থেমে যাচ্ছে পাখিদের কোলাহল
উধাও বন,বৃক্ষরাজি,তৃণের জঙল
চুকে যাচ্ছে –
জীববৈচিত্র্যের আনাগোনা
মিছে লেনদেন
পতঙ্গভুক
মানুষের মোহ মায়া
চিরন্তন ক্ষুধা তৃষ্ণা… আজন্ম আকাঙ্খা!
রুধীরাক্তের উত্থান-পতনে বিবর্ণ সমুদ্র
বিদীর্ণ চাতালে
ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ আত্মহুতি দিতে দিতে
জানিয়ে যাচ্ছে অতলান্ত কাহিনী!..
নির্ভার দুগ্ধ শিশুরা
মাতৃস্তন থেকে মুখ তুলে হাসছে
নিঃশেষের বাকে…
রতিমগ্ন সুখ ত্যাগ করে
রাতের অন্ধকার হাতড়াচ্ছে নবদম্পতি!
নির্ঝর ঝর্ণার স্মৃতি বুকে
দাড়িয়ে থাকা পর্বতশৃঙ্গ, লুপ্ত চোখে
অনন্তের হাহাকার…
বাকী শুধু
ইস্রাফিলের শিঙার গর্জে উঠা!
শুধু একটি ফুৎকার
কেমন হবে সেই ধ্বনি? সেই দুর্মার
ধ্বংসের বীভৎসতা!…

মৃত আত্মারা
দৌড়াচ্ছে উল্কাপিণ্ডের মতো
ঝড়ের বেগে দৌড়াচ্ছে জীবন্ত প্রজাতিরা…

কেউ-ই আর মানুষ নয়
না পশু
না পাখি, জীব জন্তু
অবশেষে সকল আত্মা মিশবে এক মোহনায়
সবার হাতে আমলনামা
কৃতকর্মের ফিরিস্তি দেখে সে-ই কি চিৎকার;
ক্রোধে, শোধে
আর্তনাদে গলবে আগ্নেয় লাভা!…

যার পাদদেশে
অথবা গহ্বরে অনন্তকাল পুড়বে দুর্ভাগারা!

.
১/৬/২৩

মৃত ঘোড়ার মুখ দেখে

হর্সরেস শেষ হয়ে গেছে বেশ আগেই। যারা দেখতে এসেছিল ঘোড়দৌড়
তারা সবাই ফিরে গেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি।
আমার নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য না থাকায়— পথ থেকে পথে দীর্ঘদিন বড়
সুখে বাজিয়েছি সানাই। উৎসব নয়, তবু আনন্দে নেচেছি নদীর মতো।
আর আকাশের সীমানা থেকে ধার নিয়ে কিছু ছায়া, সাজিয়েছি নিজের
চৌহদ্দি। খুঁটি ও খড়ম দেখে যে পুরুষ নির্ণয় করতেন নিজের নিশানা—
ঠিক তার মতোই পিছু হাত দিয়ে তাকিয়েছি তারাবিহীন রাতের দিকে।

এই ঘোড়দৌড়ে এসেও আমি দেখতে চাইনি হার-জিতের ক্ষুদ্রতালিকা।
তাকিয়েছি লাগাম ধরা সওয়ারের দিকে। যে তার নিজের গন্তব্য জানে না,
তার ললাট লিখন দেখে হেসেছি অনেক ক্ষণ। তৃষ্ণায় কাতর ঘোড়াটির
হ্রেষাধ্বনি শুনে ভেঙেছে আমার পাঁজর। তারপর দেখেছি মাঠের মধ্যখানেই
হঠাৎ থেমে গেছে ঘোড়টির বুকের স্পন্দন। ধরাধরি করে ওরা সরিয়ে
নিয়েছে লাল অশ্বদেহ। আর দূরে পড়ে আছে শতবর্ষের পুরনো লাগাম।

মৃত ঘোড়ার মুখ দেখে নিজেকেই পরাজিত মনে হয়েছে বার বার। যে দৌড়
আজ থেকে অর্ধশতক আগে আমি দিয়েছিলাম— সে দিনটি কি বুধবার ছিল !

চিরায়ত


জোছনা চুরির গল্প অনেক শুনেছি
পলিগামী পুরুষের রসায়ন
ভাবতে ভাবতে
নিঃশ্ছিদ্র মশারীর আকার-প্রকার
নির্ধারন করে ফেলি
চাঁদও কি জোছনাভূক প্রানী নাকি
চাঁদেও ফোটে নানাবিধ ফুল!

আমাদের এখানে বৃষ্টি হত
মনে রাখবার মত রাত্রিও নামত
ঋতুবতী গুহানারী একবার চাঁদে ফেলে
এসেছিল লাল রঙটার অর্থ
অন্ধকার আর নীরবতা
যোগ হয়েছিল আলোর সমগোত্রে
যার কারনে গল্পগুলো খরস্রোতা হয়ে গিয়েছিল।

সেই থেকে ওরা গল্প করত সারারাত
যদিও নারীটি বাঁধা থাকত লালঝুঁটি
মোরগের কাহিনীতে যেখানে একটি মেয়ে
জুতার ফিতায় নানারঙ যোগ করে
খলখল হেসে উঠত
পুরুষটা আবার হাসি-কান্না সব থেকেই
আমিষ খুঁটে খেতে শিখেছিল প্রবল।

আদি থেকে এভাবেই চুরি হয়ে যাচ্ছিল
সমস্ত কুলীন নিঃশ্বাস
যা আটকে থাকে প্রতিটি জোছনার রঙে;
রঙভ্রান্তির বিকারে।


তুরাগের জলে ডুবন্ত এক মানুষ দেখেছিলাম
যে বাঁচতে চায়নি মোটেও
তার উর্ধ্বমুখি হাত ছিল না সাধারন
অথচ আমরা তাকে বাঁচিয়েছিলাম আর সে
ক্ষেপে উঠেছিল লজ্জাহীনের মত।

তাকে বাঁচাবার লজ্জায় আমাদের ঘুম নষ্ট হয়
এখনো, আমরা প্রতি রাতে পালা করে
লোকটাকে পাহারা দেই
এরপরে শিলা, এরপরে লিনা
এরপরে একসময় হয়তো আমরা কেউ থাকব না।

লোকটা তখন অনায়াসে ডুবে যেতে পারবে
তখন তার কান্না শুনবে তুরাগ, শুধুই এক নদ।


বিড়ালকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার মুকুটে
কি লাগানো আছে মেয়ে?
বিড়াল তার থাবা মেলে ধরে বলল, মুকুট নেই
শুধু নখে মেখে রেখেছি কাঁটা-কাঁটির সোহাগ!

কর্ময‌জ্ঞে হা‌রি‌য়ে‌ছি মন

ch

‌কোথা দি‌য়ে যে সময়গু‌লো পালায়, পাই না আর টের
সময় হ‌তে নি‌জের জন‌্য সময় আর কর‌তে পা‌রি না বের;
সময় ব‌্যস্ততার যাতাক‌লে ফে‌লে
আ‌মি ছে‌ড়ে উ‌ড়ে যায় দূ‌রে, ডানা মে‌লে।

পাই না ‌নি‌জের জন‌্য সময় আর অফুরন্ত
মন যে হ‌য়ে উঠ‌লো দুরন্ত;
সয় না আর সয় না ব‌্যস্ততার জ্বালা
কত আর দেখ‌বো ক‌র্মের যাত্রাপালা।

পালা‌তে চাই দূ‌রে, যেখা‌নে নেই প‌রি‌চিত জন
‌কে দে‌বে আমায় এক টুক‌রো নির্জন
ক‌বিতার ছন্দ হা‌রি‌য়ে কা‌ঁদি, ‌নিস্তব্ধ ম‌নের বাড়ী
বয়স ফুরা‌য়ে যায়, ক‌বে আর টান‌বো ক‌র্মের পি‌ছে দা‌ঁড়ি।

চাই চাই, অ‌তি চা‌হিদার ভি‌ড়ে আ‌মি আর নাই
আ‌মি যেন ধু‌লো বা‌লি ছাই
ফুঁ দিলেই আ‌মি ‌বিষণ্ণতার সমুদ্দু‌রে হাবুডুবু খাই
‌দিন‌শে‌ষে নি‌জে‌কে বড্ড ক্লান্ত পাই।

আমার বেলাগু‌লো চু‌রি হ‌য়ে যায়, কর্ম বড্ড না‌ছোরবান্দা
স্বা‌র্থের ফুল ফুটা‌তে মানুষজন ক‌রে নিত‌্যই ধান্ধা;
সে ধান্ধা‌তে মন রে‌খে আ‌মি নি‌জে‌কেই হারাই;
ই‌চ্ছে ক‌রে সব ছে‌ড়ে ছু‌ড়ে দূর ‌কোথাও যে‌তে পা বাড়াই।

বু‌কের ভেত‌রে ব‌্যথার নদী
ব‌য়ে চ‌লে‌ছে নিরব‌ধি;
মাথায় বোঝা হয় কর্ম, আ‌মি ভু‌লের পর ক‌রি ভুল
ভুলগু‌লো এ জীব‌নে হ‌বে না আর ফুল।

ভু‌লের সাগর পা‌ড়ি দি‌তে কতই না কষ্ট, কী পে‌রেশা‌নি
কত মন্দ কথা বাহার শু‌নি, শু‌নি কত শাস‌নের বাণী
কা‌জের বোঝা ঘা‌ড়ে চা‌পি‌য়ে তোমরা ত‌ড়িৎ গ‌তি‌তে চাও কাজ
শু‌নো না কান পে‌তে বু‌কের গহী‌নে দীর্ঘশ্বা‌সের আওয়াজ।

দীর্ঘ আলাপ

আমার পাশাপাশি একটা বিকেল—ডুবে যাচ্ছে
হাওয়ার ভেতরে—তারপর গতদিনের জ্যোৎস্না
আজও ফিরে এল, শরতের আলাপে বসে থাকি
দীর্ঘ আলাপ শেষে—পাহাড়ের গারোভাষা যেমন
পাতাছেঁড়া বিদ্যাগ্রন্থ–টিলার গাছ আয়ত্ত করছে
ঘাসেদের বুক চিরে পথ করা মানুষের মনস্কতা—

কখনো তোমার মুখ—কখনোবা আধুলি রূপ
আর বিষণ্ণতা জানতে চেয়ে এখানে দণ্ডিত হই
আমাদের আলাপ বেঁচে থাকলে দেখা হবে
চোখ আর ভুরুর ইশারায়—এই ভেবে একটানা
রাত সমর্পিত হয়—অন্তস্রোতে শীতরেণুর নিঃসঙ্গ
পুতুল নাচ। নিরুত্তর বেড়াল চুপচাপ যষ্টিমধু খায়—
নিরাবরণ ঘাসেরা হেসে ওঠে ছোট শিশুর মতো;

বুকের ধ্রুপদী দাগ

আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যে সরু রাস্তা
সবুজ পরিধান করি তুমি রোজ যাও;

তুমি বোধহয় নবম শ্রেণী,
আমিও। তোমাদের স্কুলের বিপরীতে
শ্যাওলা পরা যে দালান ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু
হচ্ছে; তার কোন এক ক্লাসে
এলজেব্রা কষতে গিয়ে আটকে যাচ্ছি।

অমনোযোগী ছাত্রের প্রতি
বিপিন পালের কোন দয়ামায়া নাই।

এলজেব্রা কষতে গিয়ে
আমি সবুজ কষি, কষি তোমার নাকফুল।

অমনোযোগের শাস্তি বেঞ্চে দাঁড়ানো,
তবে মন্দ লাগছে না।

জানালার বাইরে তোমাদের স্কুলের
চকচকে নতুন বিল্ডিং
অসংখ্য সবুজের সমারোহ।

কোন এক সবুজে তুমিও আছো
উৎসুক চোখ বাইরে তাকিয়ে আছে।

চোখের দূরবীন তোমাকে খুঁজছে
বুকে চিনচিনে ব্যাথা;
মেয়ে তুমি কী জানো
তুমিই বুকের ধ্রুপদী দাগ।