বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

তুমি কোথায়?

nit

তোমাকে খুঁজি!
পথেঘাটে, বনজঙ্গলে, পাহাড়ের কোণে,
হিমালয় পর্বতে, এখানে-সেখানে,
খুঁজেছি বহু এই পৃথিবীর সবখানে
পাইনি কোথাও, দেখি-ও-নি দু’নয়নে।

তুমি কোথায়?
খুঁজে পাই অন্তর দৃষ্টিতে,
আকাশে-বাতাসে, বজ্রপাতে, বৃষ্টিতে,
তুফানে, জলোচ্ছ্বাসে, সুস্বাদু ফলের মিষ্টিতে,
সাগর নদীতে আর তোমার সৃষ্টিতে।

তুমি সত্যি আছো!
পাহাড়-পর্বত হিমালয় বলে,
নদী বলে, পাহাড়ের ঝর্ণায় বলে,
পূর্ণিমার চাঁদ বলে, আকাশে তারা বলে,
মনের বিশ্বাস বলে, এ দেহের নিশ্বাস বলে।

নিতাই বাবু
২৬/০৮/২০২৩ইং।

বাঙালি সেকুলারের মনের পশু সঙ্কট

abu

১.
কোরবানি ঈদের পরদিন, রাত ৮টা। সুনসান পাড়া, নিরবতা বিদীর্ণ করে কেউ একজন তীব্র গতিতে বাড়ির কলাপসিবল দরজা ঝাঁকাচ্ছে। কল বেল থাকার পরও এভাবে দরজা ঝাঁকানো ভীতিকর, ভয় পেতে শুরু করেছি।

আতঙ্ক আর কৌতূহল মিশ্রিত মন নিয়ে দ্রুত দরজার সামনে গেলাম, মহল্লার এক ভায়ের ভয়ার্ত চেহারা, দু’হাতে সজোরে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন, ভেঙে ফেলতে চাইছেন। আমাকে দেখে কিছুটা সম্বিৎ ফিরে পেলেন, কাতর স্বরে বললেন,
– জলদি দরজার তালা খুলো, আমারে বাঁচাও.. প্লিজ বাঁচাও।

তাকে ঘরে এনে বসালাম। পরপর দুই গ্লাস পানি খেলেন। বোঝা গেলো খুব বিপজ্জনক কিছু ঘটেছে। জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হইছে ভাই!
– তুমি তো জানো আমি দুইটা কোরবানি দেই। একটা পারিবারিকভাবে ঈদের দিন, আরেকটা একা দেই, ঈদের পরদিন।
– আমি তো জানতাম একটা দেন।

গত এক যুগ ধরে এই ভাইদের বাসায় একটা গরু কোরবানি দিতে দেখে আসছি, তিনি দুইটা পশু কোরবানি দেবার কথা বলায় কিছুটা বিস্মিত হলাম। সেই বিস্ময় ভাঙাতে তিনি জানালেন,
– না, একটা না। ঈদের দিন পারিবারিকভাবে কোরবানি দেই বনের পশু, আর ফেসবুকে সিরিয়াস হবার পর থেকে ঈদের পরদিন একা একা কোরবানি দেই মনের পশু।

একটা ঢোক গিলে জানতে চাইলাম,
– তা সমস্যাটা কি, ভাই?
– বিশাল সমস্যা। আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর মনের পশুটারে জবাই দিবার জন্য পায়ে বাইন্ধা একটানে মাটিতে ফেলছি, মুহুর্তের মধ্যে ঝাড়া দিয়া খাড়ায়া গেলো, ফ্র‍্যাকশন অব সেকেন্ড খাড়ায়া রইলো, তারপর দিলো ঝাইররা দৌড়।
– বলেন কি! তারপর?
– আমিও পশুর পিছনে দিলাম দৌড়, টের পায়া ওই পশু গিয়া ঢুকলো সেলিনাদের বাসায়।
– সেলিনা? কোন সেলিনা! আপনাদের বাড়ির পাঁচ ছ’টা বাড়ির পর যে থাকে! মানে আপনার এক্স মানে প্রাক্তন..

কথা শেষ করতে না দিয়ে মহল্লার ভাই চেঁচিয়ে উঠলেন-
– চুপ। একদম চুপ। বিশ্বাসঘাতিনী, আইয়ূব বাচ্চু তাই বলেছেন ‘সেলিনা এখন অন্য কারো/আমার কেউ নয়..’
– ওহ! আচ্ছা। তবে সেলিনার কথা থাক, আপনার মনের পশুর কথা বলেন-
– বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সেলিনাদের গেটে দাঁড়ায়ে আছিলাম, কিন্তু মনের পশুটা ঢুকছে তো ঢুকছেই। বের আর হয়না। একটু আগে বের হইলো সেলিনার বড় ভাই, সাথে তার মনের পশু, তার মনের পশু আবার দুইটা- যমজ এলসেশিয়ান কুত্তা।
– বলেন কি!
– হ রে ভাই! সেলিনার বড় ভাইরে দেইখা সালাম দিলাম, তিনি সালামের জবাব নিয়া জিগাইলেন, ‘এইখানে কি করতাছো, বিলাল?’
– তারপর!
– আমি জবাব দিবার আগেই সেলিনার ভায়ের মনের পশু দিলো ধাওয়া, আমার পাছায় কামড়ায়া কিচ্ছু বাকী রাখে নাই, ধাওয়া খাইতে খাইতে এইখানে আয়া পরছি।

মহল্লার ভায়ের মনের পশু গেছে পালিয়ে, তার ওপর প্রাক্তনের বড় ভায়ের মনের পশু এক জোড়া এলসেশিয়ানের ধাওয়া খাওয়ার ভয়ে চুপচাপ আমার বাসায় বসে আছেন, দেখে মায়া লাগছে, কষ্টও হচ্ছে।

২.
মাঝরাতে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। এমন বৃষ্টিতেই চার পাঁচজন বন্ধু মিলে পাহারা দিয়ে মহল্লার বড় ভাইকে বাসায় পৌছে দিলাম। সকালে ঘুম ভাঙলো ভায়ের ডাকে, বৃষ্টি নেই কিন্তু বারান্দায় গোড়ালি পর্যন্ত পানি। রাস্তায় পানি বেশী, ময়লাও। ওই পানি পেরিয়ে মহল্লার ভাই চলে এসেছেন। বিস্ময় গোপন করে জানতে চাইলাম,
– এতো সকালে! কোনো সমস্যা, ভাই?
– সমস্যা মানে বিশাল সমস্যা।

একটা মাত্র জীবনে মানুষকে বহু বিশাল বিশাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়! ভোরের আলোয় মনটা বিষন্ন হয়ে উঠলো, বিষাদভরা কণ্ঠে বললাম,
– চলেন, ছাদে বসি। চা খেতে খেতে কথা বলি..

দু’জনে ছাদে উঠেছি। ক’টা চড়াই, বাবুই আর দোয়েল খাবার খাচ্ছে। প্রতিদিন এদের খাবার দেওয়া হয়, না দিলে ভোরে এসে চেঁচামেচি শুরু করে। পাখিগুলো আমাদের দেখে উড়ে গেলো না, ভাই বললেন,
– এগুলির দেখি অনেক সাহস!
– উড়ে যাবার পাখা আছে, ভয় কেনো পাবে?
– তা ঠিক! তা ঠিক!

চায়ে চুমুক দিচ্ছি, ভাই উশখুশ করছেন কিন্তু কথা শুরু করতে পারছেন না। অগত্যা আমিই প্রশ্ন করলাম-
– কি সেই বিশাল সমস্যা!
– প্রথম সমস্যা হলো, সেলিনার ভায়ের মনের জোড়া কুত্তা যে আমারে কামড়াইলো, এর জন্য কি নাভির গোড়ায় ইনজেকশন নিতে হইবো!

দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম,
– না, ভাই। মনের ইনজেকশনই বড় ইনজেকশন। দ্বিতীয় সমস্যাটা কি?

ভাই একটু কেশে নিয়ে শুরু করলেন,
– কোরবানি ঈদের পরদিন মানে গতকাল তো মনের পশুরে কোরবানি দিতে পারিনি, দৌড়ায়া সেলিনাদের বাড়িতে পালাইলো।
– হুম।
– কিন্তু কেলেঙ্কারি কাণ্ড ঘইটা গেছে-
– ছি: ছি: বলেন কি!
– হ, আমার মনের পশু তো সেলিনার মনের পশুরে নিয়া জঙ্গলে ভাগছে..
– ওহ! এতে আর সমস্যা কি?
– এইটাই তো সমস্যা! মনের পশু এখন তো আর মনের পশু নাই, পুরাই বনের পশু হয়া গেলো।
– এইভাবে তো ভাবি নাই! তবে আগামী ঈদের পরদিন কোরবানি দিবেন কি!

ভাই স্বস্তির স্বরে জানালেন,
– ওইটা নিয়া চিন্তা নাই। মনের পশু পালানোর আগে তিনটা বাচ্চা দিয়া গেছে, নাদুস নুদুস, মনের মাঠে নাপাম ঘাস খায়া খায়া বড় হইতাছে–

খুব কৌতূহল নিয়েই জানতে চাইলাম-
– বলেন কি! আচ্ছা ভাই, বছরে বছরে মনের পশু কুরবানি না দিয়া, মনের পশুর খামারটারে এক্কেবারে উচ্ছেদ করলে হয়না!

আমার বোকামিতে ভাই মৃদু হাসলেন,
– এইটা একটা কথা হইলো! মনের পশু কুরবানি দিতে কইছে, খামার উচ্ছেদ করতে তো কয়নি। তাছাড়া খামার বন্ধ করলে প্রতি ঈদে ফেসবুকের পাকপবিত্র ময়দানে মনের পশু কোরবানি দিমু কেম্নে!

‘কে এমনটা বলেছে’ এই প্রশ্নের উত্তর জানার সাহস হলো না, তাই চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,
– সমস্যা কি আরও কিছু আছে?
– হুম
– কি সেটা?
– আমার গফরে বুঝাইতে পারিনা আমি শুধু তারেই ভালবাসি, আমার ১২টা গফের একটা গফও আমার এই কথাটা বিশ্বাস করে না।

মুরগির ডিম ফুটে ছাগলের বাচ্চা বের হলেও এতটা তাজ্জব হতাম না, তাজ্জবতা কাটিয়ে বললাম,
– দু:খজনক, মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক–, এ তো অনেক বড় প্রব্লেমেটিক সমস্যা।
– এটা বড় সমস্যা না, সমস্যা হইলো আমার মনের পশুর লগে ওদের মনের পশুও যদি ভাইগা যায় তবে তো বিশৃঙ্খলা হয়া যাইবো।
– ভাগতে চাইলে ভাগতে দেন, বিশৃঙ্খলা হইবো ক্যান!
– বিশৃঙ্খলা হইবো না! ওগো ১২জনের মনে ১২টা পশু, আর আমার মনে পশু মাত্র ৩টা। অবস্থাটা বোঝা একবার, এক্কেবারে পরকীয়া হয়া যায় না!

সাহস নিয়ে বললাম,
– আপনার গফদের মনে আর বনে আসলে একটাই পশু, মানে ১২জন মিলে ১টা পশুরেই শেয়ারে পালতাছে, চিন্তা কইরেন না।
– এইটা হইলে তো ভালোই। কিন্তু একটারে নিয়া যদি বারো পশু পালায়! কিয়েক্টা অরাজকতা! এর থেকে পরিত্রাণের কি কোনো উপায় নাই!!

এই বিশাল সমস্যার সমাধান খুব কঠিন নয়, ভায়ের মনে হাইব্রিড পশু চাষ করলেই হবে। কিন্তু বলার ইচ্ছে হলো না, বাঙালি সেক্যুলারের মন বুঝা খুব কঠিন, তাদের মনের পশুরে বুঝা কঠিনতর, তাই ভায়ের চেহারার সাথে মিলিয়ে নিজের চেহারায় চিন্তার ভাব ধরে রাখি, যেনো কোরাসে চিন্তা করছি।

.
পুরানো লেখা।

বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ওগো মহান কবি, বিশ্বকবি
আজ তোমার জন্মতিথির
এই মিলন সন্ধিক্ষণে
লহ মোর সহস্র প্রণাম।

তুমি মোর গুরু, তুমি মোর পিতা
তোমার গানে পাই আমি কথা —-
সে গান আমার কণ্ঠে বাজে।

তার সুরের কোমল মূর্ছনায়
আমি মুগ্ধ, অভিভূত
নয়নের ধারা বয় অবিরত।

আমি খুঁজে পাই তোমায়
তোমারি গানে গানে।
হে কবি, তোমার ওই সুন্দর
দেবোপম কান্তি স্নিগ্ধতায় ভরপুর।
সেই রূপ আমার মনে আনে
প্রগাঢ় শান্তির অনুভূতি।

কে বলে তুমি নেই ?
তুমি আছ, তুমি থাকবে,
এই মানবজাতির হৃদয়ে
প্রতিদিন বহুদিন চিরন্তন ভাবনায়।

আয়না

ria

প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে
দেখতে পাই আমার
অন্য এক অস্তিত্ব,
যেখানে আমার গোপন ক্ষতগুলো
দগদগে ঘা হয়ে ফুটে ওঠে।

আমার চারপাশে অসংখ্য আয়না
বার বার ক্ষতগুলোকে
চিনিয়ে দিতে চায়,
ক্রমশ সরে যাই নিরাপদ দূরত্বে।
সঠিক আয়নার সামনে
দাঁড়ানো হয়ে ওঠে না আর।

ছোঁয়াচে রোগ

একদিন বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাওয়া কিছু কথা
আজ বৃষ্টির জলের সাথেই ফিরে এসেছে
দৈবাৎ কোনো শকুনের চোখ পড়েনি
দৈবাৎ কোনো প্রকাণ্ড দেহি চিল ছোঁ মারেনি!!

হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে পড়শির অধিকার
হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে বাপ-দাদার উত্তরাধিকার!

ওদের কারো কারো চুনকাম করা অদ্ভুত মুখ
কেউ কেউ বিপন্ন প্রজাতির গুটি বসন্তে খুঁজে
ফিরছে পঞ্চম প্রজন্ম আগের হারানো সুখ!

তবুও আমাদের বেঁচে থাকে ভোগ আর সম্ভোগ
তবে কি…
করোনার মতোন এও কোনো ছোঁয়াচে রোগ?

সিকি শৈশব

তোমদের বয়সের তলে চাপা পড়েছে আমার
নৃত্যরত টনটন করে বেড়ে ওঠা শিশু—শৈশব
অথচ আমি ভাড়া থাকি—দেয়ালঘড়ির ভেতর;
আর্দ্র চোখদুটো মানুষের ইস্তেহার পাঠ করে
খুঁজে বেড়ানো আঁতুড় ঘ্রাণের নীল হাওয়া—
জেনেছি মানুষের সৌন্দর্য—ধূসরপক্ষ—ক্ষীয়মান

প্রথম রঙ—উঠতি জীবনের মুখোমুখি—বরইফুল
বয়ে নিচ্ছে রক্তমাখা চাটনি, প্রেম; মশলাবনের
হারানো বিজ্ঞপ্তি—ড্রয়ারভরতি নীরব অনুবাদ
সেই দৌড়—হরবোলা আয়োজন—কানামাছি
জংধরা ঝিনুকের লুকোনো ধার—কত মারকুট
নির্জন সম্পর্কের টিলায়—টিলায় সিকি দুলছে
আর জীবনের পেছনে দাঁড়ায় অযুত চেনামুখ।

যখন দীর্ঘশ্বাস উ‌ঠে বু‌কে

ch

‌বিশাল আকা‌শে তাকাই যখন দীর্ঘশ্বাস আট‌কে থা‌কে বু‌কে
‌ছোট ছোট মে‌ঘেরা এ‌সে দাঁড়ায় চো‌খের সম্মু‌খে
‌নিঃশ্বাস ছে‌ড়ে ভা‌বি….. কী আর করার আ‌ছে আমার
আকাশ‌কে জানাই অ‌ভি‌যোগ, কেন রে আকাশ
আমার বু‌কে ক‌ষ্টের খামার…

আকাশ আমায় ভা‌লো রা‌খে, সুখ পাই অনায়া‌সে
ভুল‌তে ক‌‌রি চেষ্টা
ম‌নে জাগাই ভা‌লো থাকার তেষ্টা
কাটা‌তে চাই না ছোট জীবন কেবল আয়া‌সে।

আকা‌শে ‌চোখ রা‌খি তাক
‌কেন ‌যে মন আকা‌শে দু‌র্বিপাক
ভা‌লো থাক‌তে চাই তবুও বিষণ্ণতা এ‌সে ধ‌রে ঝে‌ঁকে
আ‌মি চাই না কা‌লো মেঘ নেই ম‌নে মে‌খে।

চাই মন আকা‌শে ‌রোদ্দুর জ্বলুক ঝলম‌লি‌য়ে
সময় কেন আমায় রা‌খে না কষ্ট ভু‌লি‌য়ে
কান্না চো‌খে রা‌খি, ঠো‌ঁটে রা‌খি রাগ
জ্ব‌লে না আর মন দেয়া‌‌লে সু‌খের চেরাগ।

মন আকা‌শে কেবল কা‌লো মেঘ’রাই উ‌ড়ে
আর ম‌নের উচ্ছলতা যায় দূ‌রে
চাই শুভ্র মে‌ঘের মত মন থাকুক পুত প‌বিত্র,
এখা‌নে কেউ নেই আমার, কেউ নয় যেন মিত্র।

বুকটা লা‌গে ফাঁকা, যেমন মেঘহীন আকাশ
ফাঁকা বু‌কে জমা হয় মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস
‌বিষণ্ণ মে‌ঘের মত মন আজ
‌সেখা‌নে নেই আজ সু‌খের আওয়াজ।

.
(স‌্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

নবীন সুর ও সংগীতে

da

… এভাবে ফিরে আসে অতীত,
প্রাচীন ঘোর
নামে শৈল প্রপাত
অন্তরে রঙ্গীন প্রভাবরি ভোর।
সহস্র রজনী কাটে নির্ঘুম
কেটেকুটে রচিত হয় কবিতা
কাটে দ্বিধা, সুধা… স্বপ্নচারিতা
কাটেনা কেবল-
তোমাকে দেখার নেশা…. শ্রুতি মনোহর!

এই যে বাজছে শুনি
শঙ্খের চুম্বনে তুমুল শঙ্খ ধ্বনি,
ধ্রুপদ রাগ,
সমুদ্র মন্থনে জেনে গেছি
তোমার সনে আগুনের গোপন প্রণয়!
জলও খুজে অতল
নবীন সুরে বুঝে বিরল সংগীত
আমিই কেবল খুঁজিনি জীবন
চিনতে যাই নি আসল- নকল।

করাতকল

সোমবার এলেই বাড়তে থাকে দীর্ঘশ্বাস।
করাতকলের মতো ঘ্যাষ ঘ্যাষ শব্দ
তীক্ষ্ণধারে কাটছে ধানি জমির ফসল।

জানা আছে সেই মন্ত্র – ভাঙ্গলেই আয়ু শেষ
বিঁধে থাকি – পাছে পড়ে যাই যদি –
অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ।

তবু ডাক দিয়ে যায় নিষিদ্ধ করাতকল
সানগ্লাস– ধরে রাখে চোখ
পুরুষ্টু আঙুলে ছুঁয়ে দেখি করাতকলের রক্তবমি।

আনন্দ– একটা সিনেমার টিকেট!
অতঃপর– ট্রাফিক সিগন্যাল! কারফিউ!
অবাক বিস্ময়– করাতকল!

গোলাপি চাঁদ

images (4)

ডাকছে গোলাপি চাঁদ
এই নির্ঘুম আধোরাত
জানি না তো অনুবাদ
ভাঙছে জোয়ারে বাঁধ।

এই হাওয়া মৃদুমন্দ
আঁকাবাঁকা জলতরঙ্গ
মনে হয় অতীন্দ্রিয়
শোনায় কত যে গল্প।

সরিয়ে মেঘের পালক
উঁকি দেয় দুরন্ত চোখ
জানি না কোন শ্লোক
তাকিয়ে থাকি অপলক।

বাতাসে ফুলের গন্ধ
আবার এসেছে বসন্ত
ভাসছে জলে প্রতিবিম্ব
ছুঁতে গেলে হই বিভ্রান্ত!

গোপন সুর

br

বৃষ্টি.. পতনোন্মুখ পরাগকে উসকে দেয়
স্খলনের নেশা, লাজুক রেণু ঝেড়ে
ধূম্রল আড়ালে খুলে দেয় সঙ্কোচের ফটক,
কামান্ধ প্রলয়ের সৌষ্ঠবে বাজে বজ্রনিনাদ,
তুলে নেয় আদ্রক চুম্বন
ঘামের ঝর্নায় রচনা করে সায়েরি, প্রেম-প্রবাদ!

রাগিনীর অক্ষিসারে জ্বলজ্বলে কবিতা,
বৃষ্টির নন্দনে একাকার নদীটির আপন নাগমা
একজীবনের সমস্ত ব্যাকুলতা বয়ে
হয়েছে পরিনিতা খরস্রোতা!..

দহনের পরিক্রমা আর-
অজস্র উন্মাষিক মেঘের পাহাড় ডিঙিয়ে
নিশি ক্লান্ত বকের চোখে এঁকে দেয় পূর্ণিমা চুম্বন!…

কবিতার কবি’রাও উন্মত্ত হ্রেষা
ছন্দবদ্ধ শৃঙ্গারে আজকাল ঠিক পুষে না যাদের
ছুটে চলে দূর.. সমুদ্দুর..
ধ্রুপদী বুকে প্রলুব্ধ আলিঙ্গন তৃষ্ণায় আকণ্ঠ মন
স্বর্গীয় হুরেরাও
পুরুষের তাম্রতামাটে ঠোঁটে খুঁজে জীবনের গোপন সুর।

.
দা উ দু ল ই স লা ম।
১৮/৮/২৩

প্রতীক্ষা

ria

ইচ্ছে তোমার, ইচ্ছে আমার
ইচ্ছে ভালোবাসার,
ইচ্ছে স্বপন, ইচ্ছে কাঁপন
ইচ্ছে কাঁদা হাসার।

আমার তুমি ভীষণ প্রিয়
আমার বাঁচার আশা
হৃদয় থেকে হৃদয় জুড়ে
আমার ভালোবাসা

সন্ধ্যে এলে তুমিও এসো
দোলা লাগুক মনে
সেই আশায় গুনছি প্রহর
স্বপ্নে জাগরণে

বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি ঝরুক
আমার ভুবন জুড়ে।
হাতটা ধরে নিয়ে চলো
ভিজতে বহুদূরে।

মধ্য আয়ের দেশ

366

উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে দেশ,
দুর্মূল্যের বাজারে মানুষ হচ্ছে নিঃশেষ।
নেতারা খাচ্ছে পোলাও কাচ্চি বিরিয়ানি,
খেটে-খাওয়া মানুষ দিনদিন হচ্ছে ঋণী।

উন্নয়নের কারিশমা মাথায় ঋণের বোঝা,
জনগণ মরছে নেতা সাজে ওঝা।
দুর্মূল্যের বাজারে ভোজ্যদ্রব্য লাগামহীন ছুটছে,
অখাদ্য-কুখাদ্য গরিবের কপালে জুটছে।

নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায়,
তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে নাকে ডগায়।
দেশ উন্নয়নে আলোকিত হচ্ছে চারদিক,
বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকার এদিক-সেদিক।

গরিবের মাথার ঘাম গড়াচ্ছে পায়,
কৃষকের আর্তনাদ ধ্বনি মুখরিত গাঁয়।
মেহনতি মানুষের শরীর হচ্ছে রক্তশূণ্য,
দুর্নীতিবাজ নেতাদের জীবন হচ্ছে ধন্য।

দেশের টাকা মানে জনগণের রক্ত,
দুর্নীতিবাজরা তা বিদেশে পাচারে রপ্ত।
নেতারা বিদেশে বানাচ্ছে আলিসান বাড়ি,
দেশেও থাকে তাদের বুলেটপ্রুফ গাড়ি।

গরিব মরে মরুক না খেয়ে থাকুক,
করোনা রোগে ভুগে ডেঙ্গুতে মরুক।
যত রোগের পাদুর্ভাব নেতাদের লাভ,
রিলিফ মেরে দেখায় মানবতার ভাব!

দুর্নীতির রাহু গলা টিপে ধরছে,
রাহুগ্রাসে গরিবেরা ধুকে ধুকে মরছে।
উন্নয়ন আর দুর্নীতি সমানতালে চলছে,
তবুও নেতাগণ মধ্য আয়ের দেশ বলছে।

.
নিতাই বাবু
১৪/০৮/২০২৩ইং।

চেতনাহীন কবিতা ও একটি জীবন্ত লাশ!

জন্ম আর মৃত্যু সব সময় মুখিয়ে থাকে
সে ব্রহ্মপুত্রের নাদান চর হোক কিংবা রাজপ্রাসাদ!
কালেভদ্রে কেউ কেউ দ্বিগুণ হয় জন্মসাল
আর কেউ জন্মের আগেই কুড়িয়ে নেয় মহাকাল!

প্রতিটি জন্মের মতো কবিতারও জন্ম হয়
প্রসব বেদনায় শিরোনাম খুঁজে নেয় পাগল পাঠক
শব্দ ও ভাবের কারাগারে যখন হয় সে আটক!
অতঃপর আসে কবিতার মৃত্যু স্বাদ…
পাঠকহীন কবিতাগুলোও তেমনি বারবার মরে
পড়ে থাকে যুদ্ধের মাঠে চরম বিস্বাদ!

যেভাবে লড়াইয়ের ময়দানে মরে পড়ে থাকে
পলায়নপর আহত কাপুরুষ সৈনিক,
যেভাবে অলসের প্রতিটি ক্ষণের মৃদু মৃত্যু হয়
সেভাবেই চেতনাহীন কবিও জিয়ন্তে লাশ হয়!

বৃষ্টি ভেজা দিনে এক কাপ উষ্ণতা চাই

ch

ঝুম বৃষ্টির এই দিনে মন যেন ডানা মেলা পাখি
এমন সুখের দিনে সময় দিয়ে যাক ফাঁকি
এক কাপ চা হাতে আজ বৃষ্টি বিলাসী
টুপটাপ ঝরুক বৃষ্টি, আমি বৃষ্টি ভালোবাসি।

ঝুপঝাপ রিনিঝিনি আয় বৃষ্টি আয়
ঘিরে রাখ আজ আমায় ভীষণ মায়ায়,
ও বৃষ্টি চা খাবি, এসে বস চায়ের কাপে
নে করে নে স্নান চায়ের উত্তাপে।

আয় বৃষ্টি আয়, ঝমঝমিয়ে আয় না
আশা করি রাখবি আমার বায়না,
চা দেব আজ খেতে
দে বৃষ্টি আজ তোর বুক পেতে।

পাখি আমি ডানা মেলা পাখি, উড়ি মেলে ডানা
আজ আমার অফিস পাড়ায় যেতে আছে মানা,
চায়ের কাপে বৃষ্টির জল
বৃষ্টি থামিস না, করিস না আজ ছল।

ঝুমঝুমিয়ে নাম রে বৃষ্টি আকাশ ভেঙ্গে ঝর
দে কাঁপিয়ে বৃক্ষ লতা, টিনের চাল থত্থর,
উষ্ণ জলে ভেজাচ্ছি ঠোঁট
আয় বৃষ্টি আয় আরাম করবো কিছু লোট।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)