আশা

আসবে কিনা জানিনা
তবুও বলি এসো,
জনম জনম আমায় তুমি যেন ভালোবাসো।

থাকবে কিনা জানিনা
তবুও বলি থেকো,
জনম জনম আমায় তুমি এরূপ পাশে রেখো।

হাসবে কিনা জানিনা
তবুও বলি হেসো,
জনম জনম হাসবার জন্য আমার পাশে এসো।

বলবে কিনা জানিনা
তবুও বলি বলো,
জনম জনম আমায় তুমি সঙ্গী করে চলো।

নেবে কিনা জানিনা
তবুও বলি নিও,
জনম জনম আমায় তুমি আদর যত্ন দিও।

রচনাকালঃ
০৮/০৬/২০২৩

চাপা

চাপা ক্রোধে
চপলা চাপাতি উন্মত্ত করি নৃশংস নৃত্যে
যতক্ষণ না
দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে কাধে চাপানো ক্রোধানল…
শানিত বুকে
শোণিতের শীৎকার
মুখরিত শ্লোগান চাপিয়ে
নিংড়ে তুলি অতলের শেকড়, আসল অস্তিত্ব!
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতায় চেপে থাকা ঝড়
মুখোমুখি বেধড়ক হাঙ্গামা, অজস্র শব্দ-স্বর….

নিড়ানি পেয়ে উঠে আসে বিবস্ত্র যুগ
কালের গহ্বরে ডুবন্ত আবেগ, পুরনো অসুখ!

হয়তো আমি নির্বোধ
বুঝিনা কিছু
এবার বেরিয়ে পড়বো অনন্তের পথে
তোরা আসিস না কেউ
এদিকে ফিরেও তাকাস না কেউ
আমি একা চলতে চাই.. একদম একা
আমার সহ্য হচ্ছে না ক্রোধ!…

২১/৯/২৩

একটি কবিতার চারাগাছ

আখাম্বা সময় একদিন একটা গাধা ছিলো..
এখন সে দুরন্ত টগবগে ঘোড়া হয়েছে;
ছায়াপথের মায়া ছেড়ে সে এখন আমার
এই শহরে এসে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে!

তবুও আমি পিতলের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ করি
ভাগ্যিস ভাগ্যের চাকা এখন যত্রতত্র ওড়ে
আর আমার বুভুক্ষু সময় কেবলই মাটি খুঁড়ে!

এতোকিছুর পরেও আমার হৃদয় ফুঁড়ে
একটি কবিতার চারাগাছ জন্ম নেয়; সেও জন্মান্তরে
পত্রিকার পাতার হাত ধরে বৈতরণী খুঁজতে চায়
আমি ছাড়া আর সব তা পাখিরা জানে
আমার সেই চারাগাছ আজ বড় হতে চায়!
আমার সেই চারাগাছ আগাগোড়া জল চায়!

সে জানে না.. সমুদ্রে কত বিশাল জলরাশি
কেবল পান করার মত কোনো জল নাই..!!

মিথীলার জন্মদিনে সকলের কাছে মিথীলার জন্য আশির্বাদ চাই

376t প্রতি বছর মিথীলার জন্মদিনে একই কথা আমি লিখি, মিথীলার জন্মের পর কেঁদেছিলাম। লিখি, কারণ এটাই আমার কৃত অপরাধের জন্য নিজেকে শাস্তি দেয়ার উপায়। ১৯৯৯ সালের ১০ই সেপ্টেম্বরের সকাল ৯টায় সিজারিয়ান অপারেশানের মাধ্যমে যখন আমার তৃতীয় কন্যার জন্ম হলো, আমি খুব কেঁদেছিলাম। কেঁদেছিলাম কারণ, প্রথম দুই কন্যার জন্মের পর “দুটি সন্তানই যথেষ্ট” ভেবে দুই সন্তান নিয়েই জীবন কাটাবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপরেও খাঁটি বাঙালি মায়ের মনে এক টুকরো আক্ষেপ ছিলো, দুটি কন্যা না হয়ে যদি আমার কন্যা এবং পুত্র দুইই থাকতো, তাহলে দুজন দুরকম মানুষ হতো।

কে আমায় বেশি ভালোবাসতো! পুত্র নাকি কন্যা? নিশ্চয়ই কন্যা তার বাবাকে বেশি ভালোবাসতো, পুত্র বেশি ভালোবাসতো তার মাকে। কিন্তু আমার তো দুটোই কন্যা, পুত্র সন্তান কেমন হয় ভেবে তো লাভ নেই! দুই কন্যা নিয়েই আমরা সুখী ছিলাম। ওরা একটু বড়ো হতে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন ভিসা নিয়ে মেলবোর্ন চলে গেলাম। মেলবোর্নের আলো বাতাসে দুই কন্যাই লেখাপড়া নাচ গান আবৃত্তি অংকনে তুখোড় হয়ে উঠছিল। দুই কন্যার মেধার প্রকাশ দেখতে দেখতে কখন যে পুত্র সন্তানের জন্য আক্ষেপ মিটে গেলো টেরই পাইনি। এরপর অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট হাতে আমরা আবার দেশে ফিরে এলাম। দেশে ফিরেই আমি একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যোগ দেই। অই স্কুলে ক্লাস ওয়ান- টু’র ক্লাস টিচার হিসেবে সারাক্ষণ বাচ্চাদের মাঝেই কেটে যেতো।

বাচ্চাদের মাঝে থাকতে থাকতেই দ্বিতীয় কন্যার জন্মের আট বছর পর তৃতীয় সন্তানের অপ্রত্যাশিত আগমন টের পেলাম। ভাবলাম, না চাইতেই যখন ঈশ্বর আরেকটি সন্তান আমার কাছে পাঠাচ্ছেন, নিশ্চয়ই পুত্রসন্তান হবে।
ঈশ্বর তো ভক্তের মনের কথা জানেন, আমি যে আগে খুব চাইতাম আমার একটা ছেলে একটা মেয়ে হলে ভালো হতো! তাই বোধ হয় ঈশ্বর এবার পুত্র সন্তান পাঠাচ্ছেন। এদিকে ভয়ও পাচ্ছিলাম ভেবে, প্রথম দুটি সিজারিয়ান অপারেশানের পর তৃতীয় বারেও নিশ্চয়ই সিজারিয়ান অপারেশান হবে! পর পর তিন বার সিজারিয়ান অপারেশন হলে আমিই যদি মরে যাই! মনকে বুঝ দিলাম, আমি তো দুই কন্যা নিয়েই সুখে ছিলাম, পুত্রের কথা ভুলেও গেছিলাম। তারপরেও ঈশ্বর যখন পাঠাচ্ছেন পুত্রকে, ঈশ্বরই রক্ষা করবেন।

প্রায় ভুলে যাওয়া পুত্র সন্তানের ইচ্ছে আবার আমার মনকে চাঙ্গা করে তুললো। আমি পুত্রের মুখ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে নয় মাস কাটিয়ে দিলাম। দুই কন্যার অফিশিয়াল নামের আদ্যক্ষর ঋ, আর পুত্রের বাপের নামের আদ্যক্ষর জ। আমি ঋ এবং জ দিয়ে পুত্রের নাম বের করতে ব্যস্ত, কন্যার নাম খুঁজিই নি। ডাক্তার হাফিজ যখন সিজারিয়ান অপারেশন করে তৃতীয় কন্যার আগমন ঘোষণা করলেন, আমি ভেবেছি ডাক্তার আমার সাথে মজা করছে। আমার শিয়রে দাঁড়ানো ডা: হাসি ভাবীর দিকে তাকালাম, ভাবী আমার হাতে একটু চাপ দিয়ে ইশারায় বললো, মেয়ে হয়েছে।

আমার মনে হলো, ঈশ্বর আমার সাথে ঠাট্টা করেছেন, অকারণে ঈশ্বর আমার সাথে চরম ফাঁকিবাজি করলেন! ঈশ্বরের প্রতি প্রচন্ড অভিমানে অপারেশান টেবিলেই আমার দুই চোখ ফেটে জল এলো। আমি একেবারে চুপ হয়ে গেলাম। হাসি ভাবী আমার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলে চলেছেন, মৌটুসির আম্মু, কাঁদছেন কেন? কী সুন্দর পুতুলের মতো বেবি হয়েছে। আমি তখন কারো সাথে কথা বলতে রাজী নই। সেই যে কান্না শুরু হলো, অঝোরে দুই চোখ দিয়ে জল গড়াতেই লাগলো। কেবিনে উপস্থিত- অনুপস্থিত আত্মীয় বান্ধব স্বজন সকলেই ধরে নিলো, ছেলে সন্তানের আশায় আমি তৃতীয়বার বাচ্চা নিয়েছি, তৃতীয় বারেও মেয়ে হওয়ায় আমি এভাবে কাঁদছি।

তাদের কারোরই জানার কথা নয়, আমি ঈশ্বরের সাথে অভিমান করে কাঁদছি। আমি তো খুশিই ছিলাম দুই কন্যা নিয়ে, পুত্র যদি ভাগ্যে নাই তবে কেন ঈশ্বর আমায় এত বছর পরে আরেকটা মেয়ে দিয়ে আত্মীয় বন্ধুদের কাছে হাসির পাত্র সাজিয়ে দিলো! আমার আত্মীয় স্বজনেরা অবশ্য মনে মনে যেটাই বলুক, আমার সামনে সকলেই ভালো কথা বলেছে। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে, তৃতীয় কন্যার জন্ম বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার, আর কন্যা যদি হয় এমন চাঁদের মতো, তাহলে পাঁচ কন্যাতেও ক্ষতি নেই! বর্তমান যুগে মেয়েরাই ছেলের চেয়ে ভালো হয়, মেয়ে বিয়ে দিলে এখন জামাই ছেলে হয়ে যায়! কারো কোনো আশার বাণী, উচ্ছ্বাসের বাণীই আমার অভিমান ভাঙাতে পারেনি।

তৃতীয় দিনে আমার সমস্ত অভিমান ভেঙে সত্যিকারের বোধ জেগেছিলো মায়ের দুটো কথায়। মা বলেছিলো, “মিঠু তুই যে এভাবে কানতেছিস, তুই তো ঈশ্বরের দানকে অবজ্ঞা করছিস। ফুলের মতো শিশুটা নয় মাস তোর পেটে বড়ো হলো, এখন তারে দেখে তুই এমন মরাকান্না জুড়ে দিছিস, ঈশ্বর নাকি তোরে অপমান করেছে! এই ছোট্ট শিশুটা তো মান অপমান কিছুই বোঝে না। সে তোর কোলে এসেছে আর তুই কিনা মরা কান্না কেঁদে দুই দিন বয়সের শিশুটাকে অপমান করতেছিস। বেশী বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু ভগবান অসন্তুষ্ট হবেন। কান্না বন্ধ কর। তৃতীয় মেয়ে হইছে বলে কানতেছিস, দুই মেয়ে যখন কলেজ ইউনিভার্সিটি চলে যাইবো, এই তিন নাম্বার মেয়েই তোর মাঝবয়সে একলা সময়ের সাথী হবে।”

মায়ের কথায় আমি ঝাঁকুনি খেলাম। ছোট্টো শিশুটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে মরমে মরে যেতে ইচ্ছে করলো। বাড়ি ফিরলাম। দুই কন্যার ডাক নামের আদ্যক্ষর ম। আমার দাদু নাম পাঠালো মধুমিতা, মামাতো ভাই নাম দিলো মুর্ছনা, আরও কয়েকটি নাম। কোনো নামই আমার মনে ধরে না। বাবা তো জানতে পেরেছে তৃতীয়বার কন্যা সন্তান পেয়ে আমার পাগলামির কথা। আমাকে খুশি করার জন্য সবাই চেষ্টা করছে, আমার সিংহ পুরুষ বাবাও চেষ্টা করলো খুশি করতে। বললো, তোর মেয়ের নাম রাখ মিথীলা। ব্যস, মিথীলা নাম মনে ধরে গেলো আমার। এটাও ভাবলাম, আমার মায়ের কথায় যে বাচ্চার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছি, আমার বাবার দেয়া নামে ওকে ডাকবো।

এবার মিথীলার জন্য অফিশিয়াল নাম রাখতে হবে। আমি তো ছেলের নাম ঠিক করে রেখেছিলাম, ক্লিনিকে তো বাচ্চার নাম দিতে হবে। আমি তো তখন কেঁদেই আকুল, কন্যার বাবা চট করে কন্যার নাম দিয়েছে আয়ুষী। যখন আমি ধাতস্থ হয়েছি, আয়ুষী নাম বাতিল করে দিয়েছি। বড় দুই কন্যা ঋত্বিকা ঋজয়া, ছোটোটার নামও তো ঋ দিয়ে হতে হবে। ঝট করে মনে হলো, ঋষিজা। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা আত্মজা মানে যদি আমার কন্যা হয়, তাহলে ঋষিজা তো ঋষির কন্যা হবে।
মা বলল, হ্যাঁ। বললাম, আমি তো দজ্জাল মা হলেই কি, কন্যার বাবা তো সাক্ষাৎ ঋষি। তাহলে ওতো ঋষির কন্যাই হলো, ওর নাম হোক ঋষিজা। ঋষিজা রায় মিথীলা।

মিথীলা হয়ে গেলো ওর দুই দিদির খেলার পুতুল। মিথীলাকে আমি বড়ো করে তোলার সুযোগই পেলাম না। ওর দুই দিদি কলেজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মিথীলাকে নিজেদের মন মতো খাইয়ে সাজিয়ে বড়ো করেছে। এরপর দুই দিদিই যখন কলেজ ইউনিভার্সিটি চলে গেলো, আমাদের ফাঁকা বাড়িতে মিথীলাই হয়ে গেলো বুড়ো বাবা মায়ের জিয়নকাঠি। আমার মায়ের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বড় দুই কন্যা বাপ সোহাগি হলেও মিথীলা রয়ে গেলো মা সোহাগি হয়ে। মেয়ের হাতের সেবা যত্ন পাওয়ার জন্য আমাকে বুড়ো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি।

মিথীলা যখন ক্লাস ফোরে পড়ে, তখন থেকেই ও আমাকে ঘরের কাজে হেল্প করে। মাঝরাতে চা বানিয়ে খাওয়ায়, কাজ থেকে মাথা ব্যথা নিয়ে ফিরলে মাথা টিপে দেয়। আমি বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত মিথীলা না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে। রান্নাঘর পরিষ্কার করা, কাপড়চোপড় গোছানো, ঘর গোছানো, খাবার দাবার গরম করা– প্রতিটি বিরক্তিকর কাজ মিথীলা অসীম ধৈর্যের সাথে করে।

মিথীলার জন্মের সময় আমার বয়স পঁয়ত্রিশ। একটা ভয় ছিলো, পারবো তো মিথীলার পায়ের তলায় মাটি এনে দিতে! বেঁচে থাকবো তো ততোদিন! মিথীলা যখন স্কুল গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করে এমোরি ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্রাড করতে যাবে, ওর বয়স ১৮ হয়নি। ওকে ডেকে বললাম, মা গো, তুমি আমার অধিক বয়সের সন্তান। তোমার দুই দিদি আমাকে যতদিন পেয়েছে, তুমি তার চেয়ে অনেক কম সময় আমাকে পাবে।

তুমি যখন লেখাপড়া শেষ করে চাকরি বাকরি করবে, বিয়ে করে সংসার করবে— আমি হয়তো ততদিন বেঁচে থাকবো না। ভালো কিছু দেখলে, ভালো কিছু পেলে তুমি হয়তো মনে মনে আফসোস করবে, মা থাকলে মাকেও দেখাতাম। হয়তো ভাববে, মায়ের খুব শখ ছিলো অনেক আরাম বিলাসে থাকার। মা থাকলে মাকে অনেক আরাম দিতে পারতাম। যখনই তোমার আফসোস হবে, তুমি আমার আজকের কথা স্মরণ করো। তুমি অলরেডি আমাকে সারাজীবনের সুখ দিয়েছো মিথীলা। যখন সুখ তোমার কাছে আসবে, তুমি সুখটা উপভোগ করবে। তোমার দেহটা তো আমার দেহ থেকেই তৈরি হয়েছে, তাই তুমি সুখি হলেই আমার সুখ।

এখন মিথীলা ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি শেষ করে চাকরির জগতে ঢুকে গেছে। ওর দুই দিদি কবেই পড়াশুনা শেষ করে যার যার প্রফেশন নিয়ে ব্যস্ত। এত ব্যস্ততার মধ্যেও ওরা মিথীলার জন্য মন প্রাণ উজাড় করে দেয়। আর মিথীলা? সত্যিই মিথীলা ঈশ্বরের পাঠানো এক পরম উপহার। মিথীলা সত্যিই আমার একলা সময়ের অনেক বড়ো অবলম্বন। আমি আজও নিজের কাছেই নিজে লজ্জিত হই আমার তৃতীয় কন্যার আগমনে কেঁদেছিলাম বলে। আজও নিজের কাছেই নিজে দুঃখ প্রকাশ করি সেদিনের কৃতকার্যের জন্য।

মিথীলা চাকরি শুরু করার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। মিথীলা ওর বেতন থেকে আমাকে হাতখরচ বাবদ টাকা দেয়। কয়েক মাসের টাকা একসাথে একটা খামের ভেতর ভরে এতো ভদ্রভাবে বিনয়ের সাথে খামটা আমার হাতে দেয়, আমার চোখে জল চলে আসে। এটাও বলে, মা এই খাম থেকে টাকা নিয়ে তুমি খরচ করবে। তোমার তো ওয়ালমার্টে গেলেই শুধু গাছ কিনতে ইচ্ছে করে, বাসনকোসন কিনতে ইচ্ছে করে, তুমি কিনবে।
টাকা ফুরিয়ে গেলে আমাকে বলবে, টাকা জমিয়ে রাখবে না।

গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসি বেড়াতে গেলাম মিশার কাছে, মিথীলা আমাকে নিয়ে কত জায়গা বেড়ালো। সাজগোজের দোকান সেফোরাতে গেছিলো নিজের জন্য পারফিউম কিনতে। কয়েক বছর আগে সেফোরা থেকে আমার মামাতো বোন টুম্পা অনেক দাম দিয়ে আমাকে একটা লিপস্টিক কিনে দিয়েছিলো। তখন মিথীলা স্কুলে পড়ে, লিপস্টিকটা আমার এতো প্রিয় ছিলো, কিন্তু কোথায় যে হারিয়ে গেছে!

এরপর থেকে আমি ওয়ালমার্ট থেকেই লিপস্টিক কিনি রেগুলার ব্র্যান্ডের। সেদিন সেফোরাতে গিয়ে মিথীলার মনে পড়েছে লিপস্টিকটার কথা। আমাকে তখনই সেই একই রঙের লিপস্টিক কিনে দিলো, কনসেলার কিনে দিলো। আমার কেবলই মনে পড়ছিলো মায়ের কথাগুলো। সেদিন আমার কান্না থামাতে মা তিরস্কার করে যে কথাগুলো বলেছিলো, মায়ের সেদিনের তিরস্কারের কথাগুলোই আমার জন্য আশির্বাদ হয়ে গেছে!

মিথীলা করোনার সময়টাতে এনভায়রনমেন্টাল হেলথ এবং কেমিস্ট্রি, দুই সাবজেক্টে অনার্স কমপ্লিট করেছে এবং গত বছর এনভায়রনমেন্টাল হেলথে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। পাঁচ বছরের পড়া সোয়া চার বছরে কমপ্লিট।
মিথীলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম পিএইচডি করতে চায় কিনা! মিথীলা দুই হাত জোড় করে, ‘ না, মা আর পড়তে পারবো না” বলে দিয়েছে! তাতে আমি একটু আশাহত হয়েছি।

আমি চেয়েছিলাম আমাদের মেয়েরা ওদের বাবার মতো পড়ুয়া হোক, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিন কন্যাই তাদের মায়ের মতো লেখাপড়া বিমুখ হয়েছে, কী আর করা! গত বছর চাকরি খোঁজার আগে আমি বলেছি, মিথ তোমার পড়া শেষ, কিছুদিন বাবা মায়ের সাথে সময় কাটাও। চাকরিতে ঢুকে গেলে সারাজীবন ক্যালেন্ডারের পাতা আর ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাবা মায়ের সাথে নিরলস সময় কাটানোর সুযোগ পাবে না! পাপা ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দুই মাসের জন্য ভারত যাচ্ছে, আমিও যাচ্ছি।
তুমিও চলো, আমরা ভারত ঘুরে আসি।

তীর্থ ক্ষেত্রে যাবো, গঙ্গায় ডুব দিয়ে মনের যত কালি, গ্লানি সব বিসর্জন দিয়ে আসবো। তুমি ইয়াং জেনারেশনের প্রতিনিধি, বুড়ো বাবা মায়ের সাথে থাকলে অজানা অচেনা জায়গায় আমরা মনে বল পাবো। তাছাড়া তুই সবার আদরে আহ্লাদে বড়ো হয়েছিস বলে জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে চোখের সামনে দেখিসনি। আমাদের সাথে তুইও ভারতে চল, এরপর বাংলাদেশেও নিয়ে যাবো।

জীবন কি, জীবনের পথ কেমন, জীবনের পথ চলতে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা কত ঠোক্কর খায়, সব নিজের চোখে দেখে আসবি। অভিজ্ঞতা হওয়া দরকার। মিথীলা মহানন্দে রাজী হয়েছে। গত বছর এই সময়ে আমরা ভারতের উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন পৌঁছেছি। দেরাদুন থেকে তীর্থক্ষেত্র হরিদ্বার, ঋষিকেশ ঘুরেছি, দিল্লী আগ্রা জয়পুর আজমের ঘুরেছি, কলকাতার দুর্গাপূজা দেখেছি, আপনজনদের সাথে দেখা করেছি। মিথীলা দারুণ এনজয় করেছে। লাক্সারি বাসেও যেমন চড়েছে, ভীড়ের ট্রেন, টেম্পো গাড়ি, ভ্যান রিক্সাও চড়েছে।

376 গত বছর মিথীলার জন্মদিনে আমরা দেরাদুন ছিলাম। এই বছর মিথীলা আছে ওয়াশিংটন ডিসিতে মিশার কাছে। মিশা দুই দিন আগে থেকেই মিথীলাকে প্রতিদিন ট্রিট দিচ্ছে। মৌটুসি ডালাস থেকে ট্রিট পাঠাচ্ছে। মিথীলা ভোজন রসিক। নানা স্বাদের খাবার পেলে মিথীলা খুশি হয়। ওর দুই দিদি সেভাবেই ওকে ট্রিট দেয়।

আমি যখন লেখাটি শেষ করে এনেছি, দেখি ঘড়িতে রাত এগারো, অর্থাৎ ভার্জিনিয়ায় রাত ১২টা। লেখা থামিয়ে মিথীলাকে ফোন করলাম। এক রিং হতেই মিথীলা কল রিসিভ করেছে। আমি সেই চিরাচরিত প্রথায় গান গেয়ে মিথীলাকে হ্যাপি বার্থডে বললাম। মিথীলা বললো, মা এবার তো তোমার গান দ্য বেস্ট হয়েছে। আমি তো রেকর্ড করতে পারিনি! দ্য বেস্ট হওয়ার কারণটা বলে দেই: মিথীলাকে একেক জন একেক নামে ডাকে। আমি প্রতিটা নাম মেনশন করে গানে গানে উইশ করেছি। এতো অল্পেই মিথীলা এতো বেশি খুশি হয়।

প্রতি বছর জন্মদিনে একই কথা আমি লিখি, অই যে মিথীলার জন্মের পর কেঁদেছিলাম। লিখি, কারণ এটাই আমার কৃত অপরাধের জন্য নিজেকে শাস্তি দেয়ার উপায়। আমার একটাই চাওয়া, জীবনে যদি ভালো কিছু করে থাকি, তার পুরস্কার হিসেবে ঈশ্বর যেনো আমাদের তিন কন্যাকে সুস্থদেহে দীর্ঘজীবী করেন। মিথীলার জন্মদিনে সকলের কাছে মিথীলার জন্য আশির্বাদ চাই।

এক আশ্চর্য মায়ায় বেধেছো আমায়

happy

মায়া আর মাধুর্যে তুমি এক অনিন্দ্য জাদুকর
আমি ঠিক কবে এতটা মুগ্ধতা নিয়ে
কাউকে হৃদয়ে ধারণ করেছি, মনে পড়েনা।

প্রিয় নিয়মের বেড়াজাল ভেঙ্গে
স্রোতের বিপরীতে এসে
যদি জড়িয়ে রাখতে পার;
তোমার বাহুডোরে……

তবে হয়তো এ পৃথিবীর সকল সীমাবদ্ধতা
সকল সংকীর্ণতাকে ছুড়ে ফেলে
একক এবং অন্যতম করে অনন্তের পথে
শুধু তোমাকেই বাঁধতাম আমার যাপনে!

প্রিয়তম, কী এক আশ্চর্য মায়ায়
বেধেছো আমায়।।
তোমার প্রহরের পথে অকারণে অপ্রয়োজনে
তোমার প্রতি আমারও মুগ্ধতা
শুধু বেড়েই চলেছে কেন যে এমন হয়

কোন ফাল্গুনের স্মৃতি ধরে
হৃদয়ের গভীরে জমিয়ে থাকা বসন্তের দাবানল
নিমিষে এই পৃথিবীকে তুলেছে কাঁপন

আজকাল তোমার সাথে কথা না হলে
খুব অসহ্য ব্যথায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণের
কি এক কষ্ট ভেঙ্গে দিচ্ছে ট্রিলিয়ন বছরের অহংকারের প্রবাল প্রাচীর
যেন আমার চারপাশে মহাসাগর শূন্যতায় হাবুডুবু
আর হবেনা পলকে ফেরা।

সমাজের চেপে দেওয়া আতঙ্ক,
বিস্মৃতির বিধি নিষেধকে তোয়াক্কা না করে চলে এসো, চলে এসো এই অনন্য বেলার পড়ন্ত বিকেলে এখানে জমা রয়েছে হাজার বছরের অতৃপ্ততা।

ভেঙ্গে চৌচির করে দাও সকল অহমিকা,
জমে থাকা জিদ, যা বরাবরই জীবনকে নষ্ট করেছে।

নতুন করে শুরু করা
নতুন করে,বেঁচে থাকার এক অনন্য প্রচেষ্টায়
আমি গ্রহণ করতে পারি হাজার বসন্ত।

চলে এসো, এ জীবনে জলস্নাত
শুভ্র এক কদম ফুল হয়ে, এখানে জমা
মহাবিশ্বের সকল অন্ধকার
এই গভীর অন্ধকারে এসে আলোয় বিমোহিত করো আমায় আমার অধরা বসন্ত।

রক্ত জবার মত মন আমার

ch

কেবল যে তুমিই কষ্ট দাও তা নয়
কর্মস্থলও আমায় হৃদয়ে তুলে দেয় ব্যথার ভার
তুমি অথবা কর্মস্থল কারো সাথেই নেই আর প্রণয়
আমি একলা নেই যেন কোথাও আমার পরিবার।

বুকে যে রক্ত ক্ষরণ হয় তা কেব তুমিই দাও না
কর্মস্থলও আমায় ভাসায় ব্যথায়
সবারই স্বার্থ যেন আমার কাছেই পাওনা;
কত খোটা কত লাঞ্ছনা পাই কথায় কথায়।

সবাই রক্ত জবার রঙ চিনে, রক্ত ক্ষরণ কী চিনে না
আমি বড্ড আবেগী ছিলাম, মন ছিল সবুজ
কত করে সমস্যাগুলো বলি, বলতে বলতে মুখে তুলি ফেনা
কেউ বুঝে না আমায়, তোমরা বড্ড অবুঝ।

আমার মন বুঝলো না কেউ, না অফিস, না তুমি
বুকের ব্যথা দেখাবো আর কারে
আমি রক্ত জবা, ঝরেই যাবো, বুকের নদীতে ব্যথার ঊর্মি
আমি যেন আমারও নই, আমি ডুবি ব্যথার বালিচরে।

কেউ রাখেনি কথা, সবাই চাপিয়ে দেয় কষ্ট
কাউকে কিছু বলিনি, কেদেছি শুধু
আমার মূল্যবান সময়গুলো তোমরাই করেছো নষ্ট
বুকের উঠোন আজ মরু ধুঁধু।

রক্ত জবা গাছ বুক উঠোনে করেছি বপন
দেখে যেয়ো রক্ত ক্ষরণের রঙ কেমন
একদিন সব পাবো ফিরে দেখে যাই দিবা স্বপন
এসব ভেবে ভেবে কষ্ট পাই, আমি এবেলা আনমন।

.
(ক্যানন, চুনারুঘাট)

অজানা গন্তব্যের প্রতি ভালোবাসা

shamim

অজানার রাজ্যে, ভালবাসা তার পথ খুঁজে পায়,
একটি অজানা যাত্রা, যেখানে হৃদয় দুলতে সাহস করে।
অনিশ্চয়তার কুয়াশার মধ্য দিয়ে, আমরা দুজনেই অন্বেষণ করি,
একটি প্রেমের গল্প উদ্ঘাটন, চিরকাল আমরা অনুনয়.

রাতের গভীরে, আমাদের আত্মা উড়ে যায়,
তারা দ্বারা পরিচালিত, কখনও এত উজ্জ্বল উজ্জ্বল.
কোন মানচিত্র নেই, কোন কম্পাস নেই, শুধু আমাদের হৃদয়ে বিশ্বাস,
আমরা এই ভালবাসা পরিক্রমণ করার সময়, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত প্রদান করে।

যদিও পথ মোচড় দিতে পারে, এবং সন্দেহ দেখা দিতে পারে,
আমাদের ভালবাসা বাতিঘর, আমাদের চূড়ান্ত পুরস্কার।
এই অজানা রাজ্যে, আমরা অনন্তকাল ঘুরে বেড়াব,
প্রেমের গন্তব্যের জন্য, আমরা এটিকে আমাদের বাড়ি করব।

দ্বিতীয় মানব

মানব এসেছে কাছে, দ্বিতীয় মানব।
প্রথম মানব নয়!
প্রথম মানব আজীবন পাশে থাকার
প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।
কারণ তিনি ছিলেন লোভী, প্রতারক
মিথ্যাচারে ভরা ছিলো তার অন্তঃপুর।
দ্বিতীয় মানব সমাজের দর্পণ
যার কাছে থেকে সংক্ষিপ্ত জীবন চলার
অশেষ উপদেশ পেয়েছি ;
তাই আমি তাকে গ্রহণ করেছি
আমি তাকে নিজ হতে বিভাজন হতে দেইনি।
তার প্রতিটি কর্মই বিখ্যাত
কারণ সে কিংবদন্তি।

রচনাকালঃ
১২/১১/২০২২

ছড়া নিয়ে কড়া কথা

ইদানীং ছড়া ও ছোটদের কবিতা লেখার জোয়ার নেমেছে।

পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখেছি – লেখা আহবান করলে শ’য়ে শ’য়ে লেখা এসে জমা হতে থাকে। অবশ্য তার অধিকাংশ লেখাই পাঠযোগ্য হয় না।

ছন্দ না জেনে বা ব্যাকরণের অংক মেনে আঙুলের কর গুনেগুনে অক্ষর বসিয়ে আর যেনতেন অন্ত্যমিল দিয়ে যা কিছু একটা লিখলেই যে সেটা ছড়া বা ছোটদের কবিতা হয়ে যায় না – এটা আমরা বুঝি না বা জানতে চাই না।

একটা মানোত্তীর্ণ ছড়া বা ছোটদের কবিতা হয়ে উঠতে চাই সহজাত সাবলীল ছন্দবোধ। স্বতঃস্ফূর্ত ও সুষম শব্দ চয়ন। আঙ্গিকের বিভিন্নতার সাথে বিষয় ও উপস্থাপনার নতুনত্ব এবং বিশুদ্ধ ধ্বনিযুক্ত অন্ত্যমিল।

কিন্তু হতাশার বিষয় – আমাদের অধিকাংশ ছড়াকার কবিদের লেখায় এ সব কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না কোনো ভাবনা-চিন্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গতানুগতিকায় গা ভাসিয়ে একদম পড়াশুনো ছাড়াই আমরা লিখে চলেছি একটার পর একটা ছড়া কবিতা। আর ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি সম্পাদকের পিছে পিছে। জান লড়িয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছি সাহিত্য সভায় সভায়। আমরা কি লেখার মান-সচেতন নই, না কি লেখার ভাল-মন্দই বুঝি না ?

এই অশুদ্ধতার জোয়ারে ভেসে ভেসে হারিয়ে যাচ্ছে না কি আমাদের অনেকের লেখা বিশুদ্ধ ছড়া কবিতা ?

মধ্যে বয়সী ললনা

হে মধ্যে বয়সী ললনা
তুমি করো না ঐ দূরন্ত বালকের সঙ্গে ছলনা।
যে বালক বিস্ময়-বিহ্বলে ভাবে তোমার কথা
দেখে মনে হয় বুকে তার অদ্রি সমতুল ব্যাথা।
তোমার বিবর্ণ বিবর্তনে বিরূপ বিধানেও
তোমার স্বপ্ন বিলাসে বিমোহিত সেও।
হে মধ্যে বয়সী ললনা, তুমি দিও তারে ভালোবাসা
দিও তারে এক বুক আশা, করো না নিরাশা।
করো না কভু তার সঙ্গে ছলনা
হে মধ্যে বয়সী ললনা।
নতুনকে পেয়ে তুমি তারে কভু ভুলনা
হে মধ্যে বয়সী ললনা।।

রচনাকালঃ
১১/১১/২০২২

আদরে আপ্লুত

dd

ছাই রঙা মাঠের কোমর্য জুড়ে
কিলবিল করে উঠে শিশিরমন্ডিত শস্যফুল,
আশ্চর্য এক নিসর্গ ধ্বনিতে নেমে আসে সূর্যকণা-
ঐশ্বরিক আদরে আপ্লুত প্রজাপতি, পতঙ্গকুল।

আজ তবে ভেস্তে যাক যাবতীয় নিয়ম-নখর
স্নান ঘরে পড়ে থাক বাসি কাপড়,
মহুয়ার ঘ্রাণ মেখে চলো ছুঁয়ে আসি নন্দিত উদ্যান।

কলমিলতা

তুমি সব জানালা খুলে রাখো
আমি খুজে বেড়াই তোমার অস্তিত্ব
জ্যোৎস্না রাতে নক্ষত্রেরা স্থান বদলায়।
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বল কে চায়
স্বর্ণ সিংহাসন অথবা ব্যাংক ব্যালেন্স?
তুমি নাওনি আমায় তাই তাই অভিমানে
আজ পদ্মকলি আধবোজাই রইলো
পাখিরাও আজ ভালবাসার গান গায়নি
তোমার শ্রান্ত পায়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট
তুমি আমায় নাওনি তাই আকাশটাও থমথমে।

নুন

রাইচোখ—ঢেকে রাখা চশমায় মুখ তোমার
পাউরুটি ঝোলানো ফোঁকর দিয়ে যতটুকু
দেশ দেখা যায়, আটপৌরে শরীরের মতো;
তুমি—ফসলে বাধানো—দু’ধারে গান, সুর যত—
দুটো অক্ষর বালিকা কত প্রত্নতত্ত্ব অন্ধকারে
ধন্না ধরে আছে, অই চাউর রোদ—উত্তর
কুয়াশা। পেছনে দৌড়াতে টের পায় সমুদ্র
নুন—মেরুদণ্ডের ফাটল ছুঁয়ে শুয়ে পড়েছে
মানুষ স্রেফ এক হুজগে হাওয়া। ভাটির সন্তান—
বাদাবনের উজান পাতায় আছড়ে পড়া চাঁদ!

আগমনীর প্রারম্ভ মূহুর্তে

সেই কালো ছেলেটা দেখছিল।
এই সময়টায় এবং
শুধুমাত্র এই সময়টায় সে সময় পায়
তার রূপকথার পৃথিবীটা কেমন
আস্তে আস্তে মাথা তুলছে।

কালো অ্যাসফল্টের রাস্তার অর্দ্ধেক জুড়ে
ও পাশের একফালি ফাঁকা জায়গায়
কয়েকদিনের সমূহ ব্যস্ততা,
কত রকমারী জিনিসপত্র জোড়াতালি
কত মানুষের আনাগোনায়
কখনো রাজপ্রাসাদ, কখনো প্রেমের দূর্গ।

ছেলেটা এত শত বোঝেনাকো,
বোঝার কিম্বা ওগুলো ছোঁয়ার কোনো
মৌলিক অধিকারও নেই তার;
তাতে কিচ্ছুই যায় ও আসেনা
বিস্মিত দুই সরল চোখের,
আসলে সে এত জানেই না!

একবার সে একটা আস্ত সিনেমা দেখেছিল।
কারা যেন সারা বিকেলের সূর্যডোবা আলোয়
মাঠজুড়ে টাঙিয়েছিল অত্যাশ্চর্য এক কাপড়,
আর ঝুপ করে অন্ধকার লাফিয়ে পড়তেই
সে এক মায়াবী জগৎ তার মনে সেঁধিয়ে গেল।
মাঝেমাঝে ঘুমের অবকাশে সেও
হয়ে যায় সিনেমার সেই মায়াবী পুরুষ…
তারপরেই, খিদের অসভ্য খোঁচায় সব উধাও।

কিন্তু এখানে, চোখের সামনে
যে রোশনাই জুড়ে চারদিনের অলীক পৃথিবী
ওরা কিছু খেতে দেয়না কেন?
ওরা কিছু খুদ তুলে দিলে মা টাও
ফুটপাথে মরতো না ওষুধের অভাবে।
ছেলেটা তখন তাকিয়েছিল একদৃষ্টিতে,
সেই কালো হাড়জিরজিরে ছেলেটা।

গায়ে কোনো জামা ছাড়াই দাঁড়িয়েছিল
সূর্যাস্তের পরম আদরী আলোয়,
শতচ্ছিন্ন প্যান্ট অবহেলায় নেমে যাচ্ছিল নিচে,
কিন্তু আশ্চর্য, ছেলেটা উলঙ্গ হচ্ছিল না।
ছেলেটা দেখছিল আগমনীর তুমুল ব্যস্ততায়
সেই সুগন্ধী সুবেশ কর্ত্তাদের পরনেই
কোনো কাপড় নেই, চোখে কোনো পাতা নেই,
ওদের স্বচ্ছ অলিভ ত্বক কোথায় উধাও।

ছেলেটা ক্রমশই আকাশ ছাড়িয়ে উঠছিল।
সেই কালো শতচ্ছিন্ন ছেলেটা,
তার সমস্ত খিদের আগুন হাতের তালুতে নিয়ে
একদৃষ্টে তাকিয়েছিল
সেই সুন্দর মায়াবী জগতের দিকে, যেখানে
মা কোনোদিনই আসবে না।

28
.
(আসছে পুজো। আমার তিতলিঝোরা কাব্যগ্রন্থের একটা কবিতা এসময়ের জন্য দিলাম এখানে)

তোমাদের সংলাপ থেকে

তোমাদের সংলাপ থেকে আমার নাম মুছে ফেলতে পারো নি,
সে কৃতিত্ব আমার নয়। বরং সেই সমুদ্রের গান শোনে যে পাখি
উড়ে গিয়েছিল উত্তরে, আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম
আমার প্রিয় পতঙ্গেরা যেন নীলান্তেই খুঁজে পায় আমার নাম,
তাদের রিসাইকেল বিনেও যেন খুঁজে পায় আমার সদ্য
ডিলিট করা ছবি………

কিংবা আমার পোষা টিয়ে, যদি একদিন ফিরে আসে
এই ভিটেতে- সে যেন জানতে পারে,
আমার কাব্যলেখায় আমি ব্যবহার করেছিলাম
তার পালক। শুধু ‘কবি’র খাতায় নাম লেখাবো বলে।
#