অগ্রন্থিত গান

প্রতি সন্ধ্যা পার হলে আশঙ্কার রাত এসে তাতে
দিনগুলো ছেঁটে অভিজাত মোম—দৃষ্টি জ্বলায়—
বিপর্যস্ত পিতলের ঘন্টায় বেঁধে রাখা দলছুট
পাহাড়ের মতো স্কেচ করা সেই ডাস ঘোড়াদের
কুচকাওয়াজ, ঘাসের আসন থেকে তুলে আনে
তুমুল নৃত্য, বুক ভার পৃথিবী।শোভাযাত্রা ছড়ায়
–পেখমধরা নদী, সমতলের দিকে মেলে দেয়
আঙুল দুটির শ্বাসকষ্ট—শরীর…

সবুজ ব্যথায় একদল সেচজমি খসে পড়ে—
বুকে-ঘরে। আটাকল মেশিনের গমফুল,
পাখি ক্রমশ মানুষের সমান ভূমিরেখা চেহারার
মতো গর্জন ফলানো—অগ্রন্থিত গান, সকল মাটি
মোটাসোটা রূপসী প্রেম, মধুপিপাসা, একদিন
এখানে জন্মেছিল বিখ্যাত সম্মেলন। জানি—
সেই দিনগুলোয় বেড়াতে আসত দূরের মানুষ।

কামনার বন। ধূলোয় জমানো বারান্দা রাত—দিন
পুরুষের সংসার, লাউপাতার তলে সবুজ সাপ।

জীবন সাজিয়ে দাও ডায়ান্থাস ফুলের মতন

chh

ঝরা শিউলী হতে চাই না, চাই না বকুল হতে
হতে চাই সে ফুল, যে ফুলের আয়ূ অথৈ
হাঁটতে চাই না ঝরা ফুলের পথে,
ফুলে পা মাড়িয়ে চলি, তাতে স্বস্তি কই!

তুমি মন জমিনে রুয়ে দাও ম্যাজেন্ডা ডায়াস্থাস
রঙবাহারী ফুল ফুটুক, পাপড়ি মেলুক ডানা
চাই না হতাশা দাও আর, দাও দীর্ঘশ্বাস
আমার মন ভুবনে ঝগড়া ফ্যাসাদ এখন থেকে মানা।

মানা শুনলে ভালো, না শুনলে আমি একলা পাখি
বসে থাকবো ঠায় মনে মুগ্ধতা নিয়ে
যাবো না বেরসিক তোমাকে আর ডাকি;
তুমি তো কেবল পারো শান্তি নিতে ছিনিয়ে।

এবেলা মন বড় আনমনা,
ভাবনাতে নেই কেউ
তুমি এসো রংবাহারী মন নিয়ে, করো না ছলনা
মনে ওঠাও বন্ধু ভালোবাসার ঢেউ।

রঙের ধরায় পানসে সময় কাটাতে চাই না
মন যে ফুল, পাপড়ির ডানা মেলতে চায়
রাখবে এবেলা ছোট বায় না
সুখ রোদ্দুর দেবে তুলে মনের মাঁচায়।

দীর্ঘশ্বাসের প্রহরগুলো দিয়ে দেব ছুটি
যদি রুয়ে দাও গোলাপী ডায়ান্থাসের চারা
ফুটুক ডালে ডালে প্রেম ফুল, মৌ পোকারা খাক সুখে লুটোপুটি,
কই তুমি? সম্মুখে এসে হও খাড়া।

.
(স্যামসাং এ সেভেন, ঢাকা)

সত্য খোঁজার জন্য প্রশ্ন করুন

প্রশ্ন করা মানুষের উন্নতির ভিত্তি। প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমেই আমরা নতুন ধারণা আবিষ্কার করি, পুরানো অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করি এবং যা সম্ভব তার সীমানা ঠেলে দিই। আমরা একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাস বা কর্ম সম্পর্কে যতই নিশ্চিত বোধ করি না কেন, এটি কেবলমাত্র প্রশ্ন করার মাধ্যমেই আমরা সত্যই জানতে পারি যে এটি সঠিক বা ভুল। তাই আসুন আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ কৌতূহলকে আলিঙ্গন করি এবং কখনই কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বন্ধ করি না যা বৃহত্তর বোঝা পড়া এবং জ্ঞানার্জনের দিকে নিয়ে যায়।

দ্রবণের প্রতিবেশী

নিশ্চয়ই পূর্বজনমে আমরা একই সমুদ্রে বসবাস করেছিলাম।
দ্রবণে ছিলাম তবে নোনাজল,
আর আমাদের প্রতিবেশী ছিল মনুষ্যপাথর সকল।

পাথরের ভিন্নচোখে দেখা হয়, যে ভবিষ্যত
মানুষের পদরেখা সে ছায়ায় একা হয়ে থাকে
কেউ পড়ে শিরোনাম, কেউ বসে মুখছবি আঁকে।

আমরা কি তবে সেই এঁকে রাখা জীবনের আলো
কালি আর রঙ মাখা- নগরের আদিম দর্শক
আঁকাবাঁকা নদীদের সহোদর- শাপলায় ডুবে থাকা বক।

সুবর্ণ গোলক

বিচ্ছিন্ন এক উপদ্বীপে অপেক্ষারত প্রেমিকা
জ্যোছনা রাতে ময়ূর পালক কলম তুলে নেয়।
প্রেমিকের তরে একটি একটি করে সংলাপ
লিখে যায় প্রবাল আর ঝিনুকে মোড়া পাতায়।

তার কাপড়ে ঝলমলে তারা, আঁচলে রামধনু,
খোলা চুল বাতাসে ভাসে, কানে মোতির দুল।
কাজল কালো চোখে হাসির বিদ্যুৎ খেলে যায়।
শঙ্খ প্রবালের হার গলায় দোলে, নাকে নোলক,
দু’ হাতে লাল মোতির চুড়ি আগুণ ঝলসায়।

তার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাত পাখিরা ডানা ছড়িয়ে
বসে থাকে তার পাশে, চুপচাপ, তারাও জানে।
লেখা শেষে প্রেমিকা যত্ন করে মুড়ে নেয় পাতা,
চিঠিটি বেঁধে দেয় শুভ্রবসন লক্ষী পেঁচার পায়ে।

সে উড়ে চলে যায় বহুদূর, সারা রাত পার করে
ভোরের উজানে সেই তার ঘরের জানালায় বসে।
ঘুমে ঢোলা প্রেমিক চোখ মুছে হাতে নেয় সে চিঠি
তাতে লেখা, “সুবর্ণ গোলক সে শুধু তোমারি তরে।”

একটি মেয়াদোত্তীর্ণ অক্সিজেনপাইপের গল্প

জীবন থেমে আছে সময়ের মেদে; কারেন্টের জালে আটকে থাকা মাছের মতোন। স্পিনারের মতো ঘুরছে চোখ— নিঃশঙ্ক বাঁচার আকুলতায়।
তবুও চলো, হাওয়ায় দোলানো বেয়াড়া চুলের ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি বিলের কিনারে।

বৃন্তের শক্ত বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়া বোঁটার মতো— হৃদয় বেয়ে নেমে গেলে দুর্বোধ্য রাত। তোমার খোঁপায় গুজে রাখা নিশিগন্ধায় চেয়ে রবে যে কালের মৃত ভ্রমর; তার চোখ থেকে কেড়ে এনে স্বপ্ন— লিখে নেব আনুগত্যের নতুন ইতিহাস।

তুমি শুধু উন্মোক্ত করে দিয়ে উজ্জল ভোর, একটু কাছে এসো। আমি তোমার সিঁথি ভরে ঢেলে দেব ফের; মুঠোভর্তি সূর্যকণা।

মানুষ অন্ধ হয়…

মানুষ অন্ধ হয়
হতেই হয়- প্রেমান্ধ, ধর্মান্ধ, ধনান্ধ, ক্ষমতা কিংবা শোষোণান্ধ
কেউ কেউ আবেগান্ধ, কেউ কেউ রাগান্ধ
আবার কেউ কেউ ডুবে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় মোহান্ধতায়
অন্ধত্ব মানুষকে নিয়ে আসে চারিত্রিক এককে-
অন্ধত্বে আত্মস্থ হয়ে উঠা মানুষ গুলো একে একে ধারণ করে
বিশেষ বিশেষণ,
অন্ধত্ব জুড়ে থাকে তাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে…
এবং কি তাদের যা কিছু অর্জন,
যা কিছু ত্যাগ- বিসর্জন, উপমা, উপাধি থাকে
সর্বত্রই এই অন্ধত্বের জয় জয়কার অবাধ বিচরণ!
যে যত বেশী অন্ধ সে তত বেশী সফল
পৃথিবীতে অন্ধত্ব বরণ করা ছাড়া আর কোন নিস্তার নাই…

পার্থক্য কেবল জন্মান্ধ মানুষের
জন্মান্ধের কাছে দিন রাত সবিই সমান অন্ধকার
অন্ধকার তার কাছে স্বচ্ছ দিনের মত, সে তো জানে না স্বচ্ছ দিন কি!
আলোর স্বাদ তার কাছে নিছক শব্দ স্বর
শব্দই তার আলো…
সে বোঝে উত্তাপ, হিমাদ্র,
বৃষ্টি তার কাছে স্রেফ রিমঝিম; আর্দ্র- অনার্দ্র রাত
বাতাস, তাকে ছুঁয়ে জানিয়ে দেয় ফুলের প্রকার ভেদ, নদীর রূপ,
নারীর বিশুদ্ধতা
আশ্চর্য হচ্ছে- সেও হাতড়ে বেড়ায় প্রতিটি স্থাবর অস্থাবর
দারুণ এক অন্ধ বিশ্বাসে…
জন্মান্ধের কাছে অন্ধ-বিশ্বাস ছাড়া আর কি উপায় আছে?

অথচ-
আমরা হতভাগ্যরা প্রতিদিন অন্ধ হচ্ছি!
অন্ধের মত হাতড়ে বেড়াচ্ছি
নতুন নতুন গন্ধ, সুখ… প্রতিদিন বদলাচ্ছি সুশীল মুখোশ!
আসক্তির অন্ধত্বে জেগে আছি উন্মুখ…আক্রোশ; তৃষ্ণার্ত চাতকের মত
না পারছি দাড়াতে বিশেষ কোন এককে
না পারছি বসতে নিশ্চিন্তে…কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছি
ঘুরে ফিরে একিই বৃত্তে!

নজরুল কাব্যে দ্রোহ, অসাম্প্রদায়িকতা এবং প্রেম

ja

যে কীর্তিমান মহাপুরুষের জন্ম না হলে বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ থাকতো, তিনিই আমাদের বাঙ্গালি জাতিসত্তার কবি, প্রাণের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার সম্পর্কে অল্প কথায় কিছুমাত্র বলার সাধ্য আমার নেই। এক সমুদ্র জল থেকে এক ‘আজলা ভরে যতটা তুলে আনা যায় ঠিক ততটুকু অথবা তারচেয়েও কিছুটা কম। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস সাহিত্যে প্রতিভার বিচারে তাঁর ধারে কাছেও কেউ নেই। তিনি এক অবিসংবাদিত, অতুলনীয় এবং অলৌকিক প্রতিভার অধিকারী। সাহিত্যের সকল শাখায় যার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল পদচারণা। কবিতা, ছড়া, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস সহ সকল ক্ষেত্রেই তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। জীবন ও জগতের সুগভীর দর্শন তাঁর লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করে আমাদেরকে ঋণী করে গেছেন। যেই ঋণের দায় পরিশোধ করা আমাদের জন্য অসাধ্য। তবে তাঁর চিন্তা, চেতনা, দর্শন আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিছুটা হলেও এই দেনা লাঘবের সুযোগ রয়েছে। চলুন এবার আসা যাক মহাপ্রাণ এই সত্তার বিদ্রোহী সত্তায়। কবি বলেছেন,

“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।” বিদ্রোহী/ কাজী নজরুল ইসলাম —- আজ কোথায় সেই চিরায়ত বিদ্রোহের সুর? যেখানে অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন — সেখানেই কোথায় প্রতিবাদ? তেলবাজ, পদলেহী, চাটুকারদের দৌরাত্ম্য আজ সাহিত্য জগত থেকে শুরু করে সবখানে উন্মাদ জলের মতোন সয়লাব। প্রতিবাদহীন এই নপূংশক সমাজ চারাগাছ থেকে আজ বিশাল মহীরুহ। সবাই কেবল নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই তিরতির করে উঠে যাচ্ছে খাটের তলা থেকে আগরতলা। পারলে ছুঁয়ে দেয় আকাশ! মানবতার নূণ্যতম বালাই নেই। নেই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা। মানবিক বোধের দরজা-জানলা বন্ধ করে সবাই যেন মেতে উঠছে অমানবিক এক পৈশাচিক খেলায়। বলতে কিছুমাত্র দ্বিধা নেই যে, এতে করে মানুষ হিসাবে আমরা কেবলই পরাজিত হচ্ছি। কোনো এক অজানা অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছি। এমন এক অন্ধকূপ অথবা জন্মান্ধ গুহায় নিজের ঠিকানা খুঁজে নিজেই খুঁজে নিচ্ছি যেখান থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। মুক্তির কোনো পথ থাকবেও না।

তবে কি এভাবেই আমরা তলিয়ে যাব? এভাবেই তলিয়ে যেতে থাকব? অথচ গর্ব করার মতোন বিষয় মানুষ হিসাবে আমরাই মহাবিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রাণি! আমাদের পতাকা এখন চাঁদে উড়ছে, মংগলে উড়ছে। ভবিষ্যতে শনি, বুধ, বৃহস্পতি, নেপচুন, প্লুটো সহ ছায়াপথ, গ্যালাক্সি জুড়ে চলতে থাকবে আমাদের জয়রথ। শুধু আফসোস থেকে যাবে এতোকিছুর পরেও আমরা কেবল মানুষ হব না– সত্যিকারের মানুষ! সাম্যের কবি, প্রাণের কবির “মানুষ” কবিতাটির অংশ বিশেষ পড়া যাক—

মানুষ/ কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।-
পূজারী, দুয়ার খোলো,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’

, হ্যা.. আমরা অবশ্যই মানুষ; তবে তা নামিক মানুষ। নাম সর্বস্ব মানুষ। প্রশ্ন থেকে যায়, এইসব নাম খাওয়া স্ত মানুষ আর ইতর প্রাণির মাঝে কতটুকু পাথর্ক্য আছে? বনের সিংহ নিরীহ হরিণের মাংশ খুবলে খায়, মহিষের তাজা খুনে উৎসব পালন করে। এরাও কেউ নিজের মাংশে হাড়ি চাপায় না, উদরপূর্তি করে না। প্রকৃতির দেয়া নিয়ম-কানুন তারা যথার্থই নেমে চলে। কেবল আমরা মানুষেরা মানুষের রক্তে হাত রাঙাই। ভাই ভাইয়ের অধিকারে খড়গ হস্ত হই, দুর্বলের টুটি চেপে ধরে হাতুড়ি চালাই, শাবল, চালাই, গাইতি চালাই, বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিই অনাগত স্বপ্ন। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও কেবল নিজস্ব স্বার্থ এবং পশু প্রবৃত্তির তাগিদে, ক্ষমতা এবং প্রভাব প্রতিপত্তির লিপ্সায় পশুদের সাথে একই কাতারে দাঁড়াই। দাঁড়াতে এতোটুকুও দ্বিধা করি না। এই যদি হয় আমাদের প্রকৃত অবস্থা, তাহলে আমার বলতে দ্বিধা নেই, যে থুতু আজ আমরা অন্যের দিকে নিক্ষেপ করছি, তা একদিন অবশ্যই কালের চক্রে নিজের দিকেই ফিরে আসবে। আসবেই। আসতেই থাকবে। মানবতা, সাম্য এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় মানব নামের এই জাতিটিকে নিশ্চিতভাবেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। এতে কোনোরকম সন্দেহ নাই। অসাম্যের বিরুদ্ধে চির সোচ্চার কবি এজন্যই বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলতে পেরেছেন, “আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল মানুষের।”

নজরুল সত্তায় নারী প্রেম যেন এক চিরজাগ্রত চেতনা। নারীকে ইতিহাসের পানশালা থেকে, নর্দমার পঙ্কিল আবর্ত থেকে হাত ধরে, বুকে আগলে, মাথায় তুলে যে মহাপুরুষ পুরুষের সাথে একই সারিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন… তিনিই আমাদের জাতি সত্তার, আমাদের ভালোবাসার কবি, প্রেমের কবি নজরুল। যে নারী একদিন কেবল ছিল পুরুষের সেবাদাসী, পুরুষের শষ্যার নিরীহ এবং নিষ্পৃহ সংগিনী… সেই অবহেলিত, বঞ্চিত, পদদলিত নারী সম্পর্কে তিনি বলেছেন,
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।“(উৎস- ‘নারী’ কবিতা)

কী অসাধারণ সরল স্বীকারোক্তি! শুধু তাই নয়, এ যেন শিশ্নধারী প্রবল প্রতাপশালী পুরুষের উঁচু নাকে একটা ঘুষি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সুউচ্চ সিংহাসন থেকে পুরুষকে টেনে হিচঁড়ে নারীর কাতারে নামিয়ে আনার নামান্তর। পুরুষের আজন্ম লালিত অহংকার ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার শামিল। ঘরে-বাইরে, সমরে-সংগমে নারীর অবদানের স্বীকৃতি দিতে তিনি আরও বলেছেন,
কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষী নারী।” (উৎস -‘নারী’ কবিতা)।

নারী ও পুরুষের চিরন্তন ভালোবাসার স্বীকৃতি তাঁর লেখায় মানব শরীরের ধমনীতে প্রবাহিত রক্তের মতোন প্রোজ্জ্বল। কিশোর প্রেমের স্মৃতি আওড়াতে তিনি তাঁর “চৈতি হাওয়া” কবিতায় বলেছেন, “হাস্‌তে তুমি দুলিয়ে ডাল/ গোলাপ হ’য়ে ফুটতো গাল”। কী দুর্দান্ত অথচ সাবলীল উপমার মায়াজাল! নারী আর চিরমোহিনী প্রকৃতি যেন একই রুপের চিরন্তন আঁধার। নারী-পুরুষের প্রেম-ভালোবাসার এই স্বীকৃতির পাশাপাশি প্রেমের নামে৷ ভালোবাসার নামের শরীর ভোগ করার বিষয়ে চরম হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে ম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।”

তিনিই নজরুল যিনি সারাজীবন সাম্যের গান গেয়েছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়গান গেয়েছেন, সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে হুংকার দিয়েছেন। মানুষকে জাত-পাত, সাদা-কালো, উঁচু-নিচু নয়—- কেবলই মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন। হৃদয় থেকে প্রতিটি মানুষকে শ্রদ্ধা করেছেন, ভালোবেসেছেন। প্রিয় পাঠক, আসুন প্রিয়কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী কবিতাটির অংশবিশেষ একবার পাঠ করা যাক।

সাম্যবাদী// কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।

এই একটি কবিতাই প্রমাণ করে দেয়, “অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি এবং লেখকদের মধ্যে নি:সন্দেহে কাজী নজরুল ইসলাম শীর্ষস্থানীয়। তিনি তার অসংখ্য কবিতা, গল্প এবং প্রবন্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছেন। বিশ্বের সমস্ত মানুষকে মানবতার একই পতাকা তলে সমবেত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
“মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/ এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে/ এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান’।

প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি, সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি, মানবতার কবি নজরুলকে বোঝার জন্য কিংবা বোঝানোর জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ তার সৃষ্টি অসংখ্য এমন চরণ। বিদ্রোহী হয়ে ওঠা বা বিদ্রোহ প্রকাশের ধরন যে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে উৎক্ষিপ্ত। মানবসত্তা বিকাশের জয়গান মূলত যে কোনো বিদ্রোহী সুরের সঙ্গেই একাট্টা হয়ে অনুরণিত হয় ব্যক্তিমানসে। যা থেকে প্রথমে দ্রোহ এবং পরবর্তীতে বিদ্রোহী চেতনার জন্ম নেয়। কাজী নজরুল ইসলাম তার সময়কে ভেদ করে এগিয়েছেন। যেটুকু কাব্য ও সাহিত্য চর্চার সময় তিনি পেয়েছেন ব্যক্তি জীবনে; কাজ করে গেছেন সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার জন্যই।
গাহি সাম্যের গান-, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান। এটি নজরুলে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিচ্ছবি।

নজরুলের মানবসত্ত‍া এবং তার বিদ্রোহ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেউ কেউ নজরুলকে বহুবিধ বিশ্লেষণে ভূষিত করেছেন। যার মধ্যে বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, মানবতার মুক্তিদূত এবং সর্বতোভাবে প্রেমের কবি অন্যতম। শুধু তাই নয় প্রেম প্রকাশের ক্ষেত্রে নজরুলের আরেক ধরনের বিদ্রোহ সামনে ভেসে আসে। যেখানে কখনও প্রেমিকসত্তা নিরঙ্কুশভাবে বিলীন প্রেমাস্পদের কাছে অথবা কখনও বা প্রেমবিদ্রোহ জাগরুক থাকে বিরহের যূপকাষ্ঠে নিজেকে বলি দিয়ে।

আগের বলেছি, বিশাল সমুদ্র থেকে এক আজলা ভরে যতটা জল আনা যায়, আমার আলোচনাও তাই। একজন সত্যিকার মানুষ হিসাবে, একজন কবি-লেখক হিসাবে, একজন শিল্পী হিসাবে, একজন অভিনেতা হিসাবে, একজন প্রেমিক হিসাবে, একজন পিতা হিসাবে, একজন স্বামী হিসাবে নজরুল সত্তার কোনো তুলনা নাই। তাঁর তুলনা কেবল তিনি নিজেই। মানুষকে কতটা ভালোবাসলে একজন মানুষ বলতে পারেন, “মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই।“

সবশেষে প্রাণের কবি, মন, মানস, বোধের কবি, বাঙালি জাতিসত্তার কবি চির বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।।
——————–

আকাশ আমার ভরলো আলোয়

ch

ভোরের আকাশে ঝুলে আছে শরতের আলো;
শ্রাবণের রঙ নেই নীলে, হলো না আর মেঘ কালো;
শ্রাবণ যায় বৃথা, বৃষ্টির ধারা আর বইলো না
তীব্র উষ্ণতায় মনে শান্তি আর রইলো না।

এই শ্রাবণ যেন তুমি, আগুন খরা
যেন আগুন দিয়ে গড়া
কেমন অহম বলো তার, ঠিক যেন তুমি,
একটু খানি বৃষ্টি হয়ে ঝরে না শ্রাবণ,
ভরলো না সুখে মনের জমি।

কেমন যেন হয়ে গেল শ্রাবণ, তোমার মত
বর্ষার মৌসুমে হিম জল না ঢেলে বুকে বাড়ালো তাপের ক্ষত;
উষ্ণতার আচে পুড়ে যাই
কী করে বুকের তারে বলো সুখ বাজাই।

বৈরী হাওয়ায় ভেসে যাই, ডুবে যাই
কী করে সুখের ফুল দিয়ে মনঘর সাজাই?
শ্রাবণ যেন তুমি হয়ে গেল
আগুন আগুন, করে দিল জীবন এলোমেলো।

তুমি শরত হও না, হলে না হেমন্ত
কেমন বিতৃষ্ণায় পুড়ছে এ মনতো;
শ্রাবণ তাকালো না ফিরে, শ্রাবণ যেন তুমি
করেই গেল কী দিন কী রাত, একই গোয়ার্তমি।

তুমি শরতের মেঘের মত হলে না নরম,
আর শ্রাবণ ঝরায় না বৃষ্টি, ঢেলে দিল গরম
পুড়ে পুড়ে ছাই, নেয়ে ঘেমে বিতৃষ্ণা ডুবে ডুবে
সুখের স্বপ্ন গেল কর্পূরের মত উবে।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

বৃষ্টিভেজা শব্দেরা

ria

মাঝেমধ্যে মনে হয় নিরপেক্ষ ব্যবচ্ছেদ হোক। সময়ের আবর্তনে মনের অলিগলি বড় ক্লান্ত। আকাশও উপচে পড়ছে। এক ফোঁটা-দু ফোঁটা, তারপর মুষলধারে আঙুল বেয়ে, চিবুক ছুঁয়ে, হাতের পাতায়।

একাই বন্ধ ঘরে নিজের সঙ্গে তর্কে কখনো হেরে যাই, কখনো জয়ী। মাঝরাতে দেখি একটা একটা করে তারা জমায় আকাশ, কখনো আধখানা, কখনো বা পুরো চাঁদ অপেক্ষায় থাকে। কতকিছুই যে আবোল তাবোল ভেবে চলি! মাঝেমধ্যে স্বপ্নগুলো কাছে টেনেই পরমুহূর্তে আবার দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া মন্দ লাগে না।

কিন্তু শব্দেরা যখন ছেড়ে যায়, ঠিক তখনই ইচ্ছে করেই নিজেকে আঁকড়ে ধরি। বৃষ্টি ফোঁটায় ফোঁটায় দাগ কাটে কাচ রঙা চোখে, সোঁদা গন্ধে ধুয়ে যায় চুল, সবুজ হাওয়া এসে বলে যায় শরৎ এসেছে। মন টেনে নিয়ে যায় মনখারাপী আবরণ ফেলে আনমনে কোনো কাশবনে।

ওহে জয়দেব

এক
মাটি থেকে ছিটকে উঠে মাটিতেই ভেসে যাবে,
জানা।
ঝরনা হল মাথার পাগড়ি, তাতে গোঁজা ময়ূরের ডানা
ঝরনার কোমরে বাঁকা নদী, চার চাঁদের আলোয় ঝলসাচ্ছে কাজল
ও মন ময়না ময়না ময়না… কৃষ্ণকথা বল

দুই
আমার যে ভবঘোরা — সুন্দর হবে
বনপাস স্টেশনে আচমকা ট্রেন থেমে গেলে
ব্যাগ থেকে বের করব রিভল…, নাহ বিস্কুট
কষ্টের নাড়িভুঁড়ি দুহাতে ভেতরে ঠেলে
গুণছুঁচ দিয়ে খুলি সেলাই করেছি
এবার এক প্যাকেট সবুজ আমলকি… খুচরো পয়সা
মেঝেয় ফেলে দিয়ে হকার মেয়ের পা ছোঁব।
ছায়ায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান থাকবে এ-জীবনে;
প্রুফে একটা বানান ভুল তন্ন তন্ন করার মতো
আমি খুঁজব প্রেম…

খুঁজতেই তো এসেছি

তিন
সে গৌরহরি সেবাশ্রমই হোক, কি
পবন বাউলের আখড়া
আমাকে দুপুরদুপুর ভাতে বসিয়ে দাও
সে হোক অজয়ে সোয়া-নগ্ন মেয়েবউ, কি
লোভে ফাজিল সাধু
আমাকে ঘুরঘুর করাও গাঁজাকলকের চারপাশে
গোল অন্ন-মুগডাল গোল পাতে
গোল ডাবুহাতায় বিতরণ করো
সে ফানাফানা কলার কাঁদি হোক, বাস্‌নায় জড়ানো,
মুসলমান কুটুমবাড়ি নেবে
কিম্বা দুশোমতো কুঠোভিখিরি
নদীকাটা দুধারি রাস্তায়;
আমাকে ভ’রে উঠতে দাও কান্নাসজলে

যেটুকু যাবে, তার সঙ্গে অবশিষ্ট উব্‌জে চলে যায়
তারপর যাবজ্জীবন আমার পরিবেশনা
আর তোমাদের ‘দারুণ খেলাম’!

দাঁড়াও, আগে নিজে মুগ্ধ হয়ে নি’

চার
তোমাকে কৃষ্ণনগরে দেখেছি না, দাঠাকুর?
আমি রবি, বউ খুঁজে পাচ্ছি না, সেবাইতকাকা।
জয়দেব-পদ্মাবতী মিলনমন্দির থেকে নেমে
আমরা আলাদা হয়ে গেনু। মেলায় পুলিশ আছে
নাম জিগ্যেস করার জন্যে। লিখে নিয়ে
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাইকে অ্যালাউন্স ক’রে দেবে।
কিন্তু বউটা বড় কাঁচা আমার, পূর্ণিমা।
এবারে যে-সে ডাক দেবে — পূর্ণিমা ধীবর,
এদিকে এসো; পূর্ণিমা ধীবর, চলো আমার সঙ্গে…

বউ হারিয়ে গেছে, ফিরে পাব
চলে গেলে আর ফেরত আসবেনি

পাঁচ
গৌরীদাসের সঙ্গে চৈতন্যের মিলন হল কোথায়?
কেউ বলছেন শ্রীখণ্ডে, কেউ কাটোয়ায়,
কেউ বা মাধাইতলা। আমরা বলি,
স্থান গুরুত্বের নয়, কথা হল কাল।
কোন কালে দেখা?
যেথা যেথা নিত্য হরিনাম সংকীর্তন।
সেথায় নিত্য নবদ্বীপধাম, নিত্য বৃন্দাবন।।

গোরাচাঁদ নিত্যানন্দাদি বন্ধু ও শিষ্যদের নিয়ে নগর-পরিক্রমায় বেরিয়েছেন, বদনে হরিনাম — এমনি সময়ে গৌরীদাস উপস্থিত। তাকে দেখতেই গৌরাঙ্গের মনে পড়েছে শ্রীরাধার কথা। কেননা,
এই গৌরীদাস তো আর কেউ নন,
তিনি বৃন্দাবনের সুবল। মহাপ্রভু গৌরীকে জড়িয়ে ধ’রে “রাধা রাধা” ব’লে উচ্চস্বরে…

আহা, সে কী অশ্রু! কোনও ভক্ত বলছেন
প্রভুর দু’চোখ বেয়ে মুক্তো গড়িয়ে পড়ছে। আবার কোনও ভক্ত — না না, গড়িয়ে পড়ছে মুক্তি। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের ভক্তিরূপ গাল বেয়ে মুক্তি গড়িয়ে পড়ছে গো!

.
[প্রথম অংশ। ‘ভুবনভোজন চলছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে।]

একটা যাপন

হলুদ কুসুমের ভেতর লুকিয়ে থাকা মহিরুহ যাপন
বেরিয়ে এসো, এই রাজ হাওয়া ঘড়ির অবুঝ
মহাপয়ার ধরে পোস্টমর্টেম করো মৃত চোখ,
এমন বিঘ্নিতসুন্দর থেকে আরও কাছের হয়ে ভেবে দেখো
কবে বেদখল হয়ে গেছে পরস্পর পায়চারি-
শেয়ালের যথাযথ আধুলি শব্দ
সেই অভিনব বরফে ভিজে ওঠে পাহাড়ের বড় ছায়া
কচ্ছপের মতো সারারাত, শুয়ে থাকা মাটি—ফসল
পৃথিবীর লতামূল নদী…
এই খুনসুটি খুলে দেয় গোপন গ্রন্থের অর্গান থেকে
পূর্ণ সমর্থন, সেই গান, যার কোনোটাই তুমি দেখনি…

একগুচ্ছ বনের আদেশ আঁকতে পারো, শেষ ছবির
সঙে সন্তপ্ত রঙের ইটচাপা দুর্বাঘাসের নগর—
শ্রেষ্ঠ সংবিধানে শিশুরা নির্লিপ্ত হাসি রেখে যাচ্ছে
এই হামাগুড়ি মানুষের নৈঃশব্দ্য আলাদা করে কেন?

জোনাক জ্বলা একটি রাতে

ch

জোনাক জ্বলা একটি রাতে
তুই কী আমার পাশে হাঁটবি?
সারি সারি গাছের তলে
হেঁটে তুই কী কথা বাটবি?

আয় না একদিন গাঁয়ের পথে
হেঁটে হেঁটে শান্তি কুড়াই
চাঁদের আলোয় জোছনা মেখে
দেহ আর মন একটু জুড়াই।

তুই কি আমার সঙ্গী হবি
আঁধার রাতে হাঁটবি পথে
উঠবি নাকি এক রাত্রিরে
হাতটি ধরে আলোর রথে।

মিষ্টি হাওয়া বইবে যেদিন
যদি জানাই নিমন্তন্ন
সকল কর্ম ফেলে তুই কি
চলে আসবি আমার জন্যয?

ধরবি হাতে দিবি স্পর্শ
ভালোবাসবি আমায় কি তুই?
আসবি একদিন হাঁটবি পাশে
অপেক্ষাতে থাঁকি নিতুই।

তুই আমার পাখি হবি
মনের মাখে বসবি এসে
জোনাক পোকা হবি কি তুই
যাবি বন্ধু সুখে ভেসে?

জোনাক জ্বলা রাত প্রহরে
হাঁটতে ইচ্ছে তোকে নিয়ে
আয় না একদিন দুজন মিলে
সুখ মুগ্ধতা নিই ছিনিয়ে।

ড্রামা ও ড্রাকুলা

পর্দা নামার আগেই সরে যাচ্ছে খলনায়কের দল। যারা
বাঁশি বাজিয়েছিল, পরিচালক কেড়ে নিচ্ছে তাদের হাতের
বাঁশি। নেপথ্যের সুরে যারা দিয়েছিল কণ্ঠ- ধমক দিয়ে
কেউ থামিয়ে দিচ্ছে তাদের গলা।

কেউ কেউ বদলে দিতে চাইছে রক্তদাগ মুছে ফেলার পদ্ধতি।
বলছে, একাত্তরেও রক্তাক্ত হয়নি এই মাটি,
যারা’ ভুল করে যুদ্ধ করেছিল, এখন বরং তারাই
করছে অনুতাপ’ – এমন কথাও বলছে কেউ কেউ।

তারপরও শরতের চাঁদকে সাক্ষী রেখে একটি কিশোরী
পা ভিজাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। ভরা আশ্বিনে সাইকেল
চালাতে চালাতে একটি কিশোর রোমন্থন করছে তার
বালকবেলা। যুবা কৃষকের লাঙল আর অষ্টাদশী তরুণীর
সেলাই মেশিনে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ।
#

শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ

সারাজীবন ধরে দেখলাম
অদ্ভুত কিছু প্রজাপতি
খেয়ে যায় প্রেমের লার্ভা
সবুজ ধানের পাকা ছোঁয়া
তালশাঁস নরম হৃদয় আমার

সারাজীবন প্রেমিকদের দেখলাম
ধূর্ত শেয়াল অথচ
প্রজাপতিগুলোর সামনে
শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ যেন
এতই চতুর, এতই বোকা