this is a test post …………………………What is Lorem Ipsum?
Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries, but also the leap into electronic typesetting, remaining essentially unchanged. It was popularised in the 1960s with the release of Letraset sheets containing Lorem Ipsum passages, and more recently with desktop publishing software like Aldus PageMaker including versions of Lorem Ipsum
এই জনমের আগে
শীতের মধ্য রাত
রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে
ঘুম ভেঙে যায়
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।
এই আনাচের ক্ষেত
এই ধুন্দল মটর মশুর ডালের ক্ষেত পেরিয়ে
এই জলাশয়ে জাগ দেয়া পাট শুকানোর গন্ধ নিয়ে
এই গোধুলী সন্ধায় ধোঁয়াটে কুয়াশা চাদরের
মাঠ দেখতে দেখতে
এই বড়াল ব্রীজ চাটমোহর ঈশ্বরদী পেরিয়ে
চলে গেছি সুদূর দিনাজপুেরে,
দেখা হয়েছিল সেখানে
ক্যাডাভিয়ার সাথে,
কথা হয়েছিল তার সাথে, তাহার সাথে
উষ্ণ নিশ্বাস ছেড়ে বলেছিল সে আমারে
এক পৃথিবী ভালোবাসা দিলাম আজ তোমারে।
সেই রাতে ডানা ঝাপটিয়েছিলো এক রাতজাগা পাখি
দেখেছিলাম আমরা মেলে আমাদের চারিটি আঁখি
ভয় পেয়েছিলো সে রাতে আমার ক্যাডাভিয়া
চারিদিকে ছিলো অন্ধকারের বিমূর্ত ছায়া
তাকিয়েছিলো ক্যাডাভিয়া সেই রাতে নক্ষত্রের পানে
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেছিলো আমার কানে কানে
চলে যেয়ো না কখনো তুমি আমাকে ছেড়ে
কেউ যেনো তোমাকে নেবে আমার থেকে কেড়ে।
দিয়েছিলাম কথা আমি তারে, তাহারে
যাবো না কখনো আমি তোমাকে ছেড়ে
রাখতে পারনি আমি সে কথা তার, তাহার
তাইতো ফিরে আসি আমি বারেবার
বহু দেশ ঘুরে ঘুরে খুঁজেছি তারে
পাইনিকো দেখা তারে, তাহারে
হয়তো বা কোন এক বলাকার বেশ ধরে
কিংবা কখনো আকাশে বালিহাঁসে ভর করে
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।
ভ্রূণের শহর ছেড়ে
ভ্রূণের শহর ছেড়ে চলে আসা নদীর কাছে জানতে চাই,
পুষ্পেরা কেমন আছে। উত্তরে হাসে নদী, বলে –
ভাসাই বলেই আমি জোয়ারের জনক
আর যারা ভালোবাসার মর্মার্থ জানে,
তারাই বলতে পারে- কী মহান বিরহের ত্বক।
উজানের উৎস থেকে উঠে আসা মেঘের কাছে
জানতে চাই, তুমি কি পারো হে বন্ধু
পুঁতে যেতে ভাসানের বীজ..
আমাকে উদাস রেখে মেঘ চলে যায়,
পৃথিবীর অন্যবাঁকে, যমজ শিশু
আমাকে দেবে বলে, দুহাতে কুড়ায় খনিজ।
পীড়িত দৃষ্টিপাত
ভোরের দেয়ালে লাগানো আয়না।
ক্রমশ বদলে যাচ্ছে আয়নার ভেতর-
দৃশ্যগুলো ক্লান্ত বহুকাল।
দৃশ্যের ফাঁকে আমরা বড় একা-
আটকে আছি অসুস্থ সময়ের আচ্ছাদনে।
তবুও আতঙ্ক আর দীর্ঘশ্বাস-
গোপন করে আকাশের দিকে তাকাই
দেখি, আমাদের বারান্দায় আকাশ থেকে-
ঝরছে নতুন চাঁদের ভাঙা ভাঙা আলো।
আমরা আধভাঙা বিশ্বাস নিয়ে—
তাকিয়ে থাকি সেই বারান্দার দিকে।
একা অবসরে কল্পনায় আমি বিশ্ব ভ্রমণ করি
একখানা পুরানো খাতার ছেঁড়া পাতা নজরে এলো। ভাঁজ খুলে দেখি ছেঁড়া কাগজে লেখা আছে, বাঁধা ধরা লেখাপড়ার প্রতি কোনকালেই আমার খুব বেশী আগ্রহ ছিল না। স্মৃতিশক্তি প্রখর হওয়ায় বাড়তি সুবিধা ছিল, স্কুলের পড়া একবার দু’বার পড়লেই মনে থাকতো। তাই স্কুলের পড়া নিয়ে কখনও টেনশান করিনি।
আমার ভালো লাগতো রূপকথার গল্প পড়তে। নতুন বছরে নতুন বই হাতে পাওয়া মাত্র ইংলিশ র্যাপিড রিডার বই থেকে সবগুলো গল্প পড়ে ফেলতাম। মায়ের ছিল গল্পের বই পড়ার প্রচন্ড নেশা। আমার মেজদাদা আর আমি, এই দু’ভাইবোন পেয়েছিলাম মায়ের চরিত্রের এই দিক। আমাদের ঘরে আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না, যে ক’খানা কাঠের চেয়ার, তক্তপোশ, টেবিল ছিল, সেগুলোতে ছিল না কোনো নান্দনিক সৌন্দর্য্য, শোয়া-বসার প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট ছিল। এইসব সস্তা দামের আসবাবপত্রের মাঝে একটি সস্তা কিন্তু খুবই মূল্যবান ছোট বুকসেলফ ছিল।
সেই ছোট বুকসেলফে অনেক বড়ো বড়ো গল্পের বই সাজানো থাকতো। বেশীর ভাগ বই ছিল স্বদেশী আন্দোলনের উপর লেখা। আমার মা আর মেজদাদা পড়তো সেইসব স্বদেশী আন্দোলনের বইগুলো। আমার মা কেন স্বদেশী আন্দোলনের বইগুলো পড়তে এত ভালোবাসতেন তা আমার জানা নেই। ইদানিং মনে হয়, মা সাধারণ পরিবারে জন্মালেও মন মানসিকতায় উনি গৃহী ছিলেন না। তাঁর মাঝে প্রবল দেশাত্মবোধ ছিল, চলনে-বলনে প্রতিবাদী ছিলেন, ব্যক্তিত্ব ছিল কঠিন। রান্নায় পারদর্শী হলেও গৃহকর্মে সুনিপুন ছিলেন না। উনার ভালো লাগতো গল্পের বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতে। পেশায় শিক্ষক ছিলেন তাই বইখাতা নিয়েই উনার সময় কেটে যেত।
আমাদের সাথে রাজা রাণী, ভূত পেত্নীর গল্প করেননি। সব সময় ক্ষুদিরাম, মাস্টার দা, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া, বিনয়, বাঘা যতীন, বাদল, দীনেশ প্রমুখদের জীবনের গল্প করতেন, আমরা ভাইবোন মন্ত্রমুগ্ধের মত এঁদের গল্প শুনতাম।
আমার মেজদাদা বয়সে আমার চেয়ে তিন বছরের বড় হলেও সে ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঞ্চিত বইগুলো অনায়াসে পড়তো। মা কিছুই বলতো না, আর আমি মায়ের মুখের গল্প শুনেই সন্তুষ্ট থাকতাম, অত মোটা বইগুলো পড়ে দেখার ইচ্ছে হতো না। ঐ যে বললাম, আমার ভালো লাগতো রূপকথার গল্প। ঠাকুরমার ঝুলি থেকে রাক্ষস ক্ষোকসের গল্প গোগ্রাসে গিলতাম। আমার সংগ্রহে একটামাত্র বিদেশী রূপকথার গল্পের বই ছিল, ‘সোভিয়েত দেশের নানাজাতির রূপকথা’।
আমাদের ছোটকাকা এই বইটি উপহার দিয়েছিলেন মেজদাকে। মেজদা বইটা দিয়েছে আমাকে। আমার উপর মায়ের কড়া শাসন ছিল, ঘরে থাকতে হবে, পাড়া বেড়ানো যাবে না। তাই ঘরে থেকে সোভিয়েত দেশের নানাজাতির রূপকথা বইটিই বার বার পড়তাম। রূপকথার গল্প পড়ে আমার একটা উপকার হয়েছে, আমি কল্পনা করতে শিখেছি।
যখনই একা থাকতাম, চলে যেতাম রূপকথার রাজ্যে। রূপকথার চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠতো। দিনে দুপুরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, কোনো একদিন চলে যাব চাষীর ছেলে ইভানের বাড়িতে, নয়তো দেখে আসবো পগাতিক গরোশেককে। এভাবেই কল্পনায় বিদেশ যাওয়ার জন্য স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করি।
আজও সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। একা অবসরে কল্পনায় আমি বিশ্ব ভ্রমণ করি।
মুখ ও মুখোশ
মন ভালো রাখতে ব্রহ্মপুত্রের কাছে এসেছিলাম
এখানেও তিল রাখার মত জায়গা নেই
পঙ্গপালের মত গিজগিজ করা মানুষ
দুই চোখ… চার চোখ…
কোনটা ছেলে কোনটা মেয়ে… কোনটা
বুড়ো আর কোনটা আইবুড়ো বুঝা মুশকিল
লাল ফিতার দৌরাত্মার চেয়েও মেকাপের দাপট বেশি!
সেই কবে পড়েছিলাম- শস্যের চেয়ে আগাছা বেশি
আজ এখানে মুখের চেয়ে মুখোশ বেশি!
ছায়া, দগ্ধের ওপরে
এক
এ-জীবন কোনও কিছুর অপেক্ষায় রাখো
ছাদ-অপেক্ষায় রাজমিস্তিরি,
বাঁশি থাকে হাওয়া-সাধনার…
কখন ভাসানে ক’রে রোদ উঠে গেল
তুমি ব’সে আছ, মেরুদণ্ডে বেঁধানো কুঁড়িটা
একটা পুজোর গান অপেক্ষায় রাখত গোটা পাড়া
একটি শাড়িনী রাস্তার চৌমাথাভরা ইয়াং ছেলেদের।
তেমন আতিথ্য নিয়ে জলের পিঠে দাও
ছোট হাতের ভরসা
ঘাসের হাড়ে যেন ফের ঘাস না গজায়
সন্ধে আসে জীবন-অনুভূমিক
দুই
সন্ধে নেমে আসার পদ্ধতি আমি দেখেছি কাছ থেকে
দিনকে কমিয়ে ডীম ক’রে আকাশের হাতে
তুলে দেওয়া — মা-দিদিমা বাসনমাজার থালা ডোবালে জলের মধ্যে, কাঁসাপেতলের মুদিত চোখ পেছন-পেছন ঘাটে আসা আমাদের যেটুকু দেখেছে
তেমন সাপের তলপেট, চাঁদ থেকে লাফ দিচ্ছে
সন্ধের ক্রশিং
যেন কোথাও জাগ দেওয়া ছিল কুচিকুচি
সজনে পাতার নিচে, এখন সুরৎ বোম্বাই
সা-নি-ধা নামছে, “আহা কোন বাগানে ছিল”
বলছে সন্ধের হকার, আমাদের সন্ধ্যাতারাবাবু
তিন
আমি সন্ধে নামাই সমুদ্রবেদিতে
অভাবে পুষ্কর, ডোবাও চইলবেক
চারিদিকে বনগন্ধ পরাক্রম, “ও আমার
দলে খেলবে” ব’লে ইলেকট্রিক খুঁটিকে
গাছ বানিয়েছে জার্মানিলতা
উল্কাসনে ব’সে এক-তরোয়ালে চিরে দিচ্ছি
আকাশের পেট থেকে জমির নাবাল
চুঁয়ে নামল কালো প্রস্ফুটিত
পাটগন্ধ, পাটশব্দ, একমুঠো ধুলোর তণ্ডুল…
আমি সন্ধ্যা নামাইয়া থাকি
.
[‘নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ’ বইতে আছে]
পর্যটন নিশি
তপ্ত নিশ্বাসে উবে যায় ঘুম..
অধীর ত্রাসে
মিশে থাকে নিঝুম পর্যটন
অচিন পর্বতারোহণের নেশা;
জ্যোৎস্নার বনে
পুনমী আলো ছায়া
সুগন্ধি মোহন মৃগ
অস্থির…
ঠুমরীর তালে নাচে নটরাজ
গোপন মুদ্রায়
স্ফুরিত মধুপের সুক্ষ্ণ কারুকাজ!
অগ্রন্থিত গান
প্রতি সন্ধ্যা পার হলে আশঙ্কার রাত এসে তাতে
দিনগুলো ছেঁটে অভিজাত মোম—দৃষ্টি জ্বলায়—
বিপর্যস্ত পিতলের ঘন্টায় বেঁধে রাখা দলছুট
পাহাড়ের মতো স্কেচ করা সেই ডাস ঘোড়াদের
কুচকাওয়াজ, ঘাসের আসন থেকে তুলে আনে
তুমুল নৃত্য, বুক ভার পৃথিবী।শোভাযাত্রা ছড়ায়
–পেখমধরা নদী, সমতলের দিকে মেলে দেয়
আঙুল দুটির শ্বাসকষ্ট—শরীর…
সবুজ ব্যথায় একদল সেচজমি খসে পড়ে—
বুকে-ঘরে। আটাকল মেশিনের গমফুল,
পাখি ক্রমশ মানুষের সমান ভূমিরেখা চেহারার
মতো গর্জন ফলানো—অগ্রন্থিত গান, সকল মাটি
মোটাসোটা রূপসী প্রেম, মধুপিপাসা, একদিন
এখানে জন্মেছিল বিখ্যাত সম্মেলন। জানি—
সেই দিনগুলোয় বেড়াতে আসত দূরের মানুষ।
কামনার বন। ধূলোয় জমানো বারান্দা রাত—দিন
পুরুষের সংসার, লাউপাতার তলে সবুজ সাপ।
জীবন সাজিয়ে দাও ডায়ান্থাস ফুলের মতন
ঝরা শিউলী হতে চাই না, চাই না বকুল হতে
হতে চাই সে ফুল, যে ফুলের আয়ূ অথৈ
হাঁটতে চাই না ঝরা ফুলের পথে,
ফুলে পা মাড়িয়ে চলি, তাতে স্বস্তি কই!
তুমি মন জমিনে রুয়ে দাও ম্যাজেন্ডা ডায়াস্থাস
রঙবাহারী ফুল ফুটুক, পাপড়ি মেলুক ডানা
চাই না হতাশা দাও আর, দাও দীর্ঘশ্বাস
আমার মন ভুবনে ঝগড়া ফ্যাসাদ এখন থেকে মানা।
মানা শুনলে ভালো, না শুনলে আমি একলা পাখি
বসে থাকবো ঠায় মনে মুগ্ধতা নিয়ে
যাবো না বেরসিক তোমাকে আর ডাকি;
তুমি তো কেবল পারো শান্তি নিতে ছিনিয়ে।
এবেলা মন বড় আনমনা,
ভাবনাতে নেই কেউ
তুমি এসো রংবাহারী মন নিয়ে, করো না ছলনা
মনে ওঠাও বন্ধু ভালোবাসার ঢেউ।
রঙের ধরায় পানসে সময় কাটাতে চাই না
মন যে ফুল, পাপড়ির ডানা মেলতে চায়
রাখবে এবেলা ছোট বায় না
সুখ রোদ্দুর দেবে তুলে মনের মাঁচায়।
দীর্ঘশ্বাসের প্রহরগুলো দিয়ে দেব ছুটি
যদি রুয়ে দাও গোলাপী ডায়ান্থাসের চারা
ফুটুক ডালে ডালে প্রেম ফুল, মৌ পোকারা খাক সুখে লুটোপুটি,
কই তুমি? সম্মুখে এসে হও খাড়া।
.
(স্যামসাং এ সেভেন, ঢাকা)
সত্য খোঁজার জন্য প্রশ্ন করুন
প্রশ্ন করা মানুষের উন্নতির ভিত্তি। প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমেই আমরা নতুন ধারণা আবিষ্কার করি, পুরানো অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করি এবং যা সম্ভব তার সীমানা ঠেলে দিই। আমরা একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাস বা কর্ম সম্পর্কে যতই নিশ্চিত বোধ করি না কেন, এটি কেবলমাত্র প্রশ্ন করার মাধ্যমেই আমরা সত্যই জানতে পারি যে এটি সঠিক বা ভুল। তাই আসুন আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ কৌতূহলকে আলিঙ্গন করি এবং কখনই কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বন্ধ করি না যা বৃহত্তর বোঝা পড়া এবং জ্ঞানার্জনের দিকে নিয়ে যায়।
দ্রবণের প্রতিবেশী
নিশ্চয়ই পূর্বজনমে আমরা একই সমুদ্রে বসবাস করেছিলাম।
দ্রবণে ছিলাম তবে নোনাজল,
আর আমাদের প্রতিবেশী ছিল মনুষ্যপাথর সকল।
পাথরের ভিন্নচোখে দেখা হয়, যে ভবিষ্যত
মানুষের পদরেখা সে ছায়ায় একা হয়ে থাকে
কেউ পড়ে শিরোনাম, কেউ বসে মুখছবি আঁকে।
আমরা কি তবে সেই এঁকে রাখা জীবনের আলো
কালি আর রঙ মাখা- নগরের আদিম দর্শক
আঁকাবাঁকা নদীদের সহোদর- শাপলায় ডুবে থাকা বক।
সুবর্ণ গোলক
বিচ্ছিন্ন এক উপদ্বীপে অপেক্ষারত প্রেমিকা
জ্যোছনা রাতে ময়ূর পালক কলম তুলে নেয়।
প্রেমিকের তরে একটি একটি করে সংলাপ
লিখে যায় প্রবাল আর ঝিনুকে মোড়া পাতায়।
তার কাপড়ে ঝলমলে তারা, আঁচলে রামধনু,
খোলা চুল বাতাসে ভাসে, কানে মোতির দুল।
কাজল কালো চোখে হাসির বিদ্যুৎ খেলে যায়।
শঙ্খ প্রবালের হার গলায় দোলে, নাকে নোলক,
দু’ হাতে লাল মোতির চুড়ি আগুণ ঝলসায়।
তার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাত পাখিরা ডানা ছড়িয়ে
বসে থাকে তার পাশে, চুপচাপ, তারাও জানে।
লেখা শেষে প্রেমিকা যত্ন করে মুড়ে নেয় পাতা,
চিঠিটি বেঁধে দেয় শুভ্রবসন লক্ষী পেঁচার পায়ে।
সে উড়ে চলে যায় বহুদূর, সারা রাত পার করে
ভোরের উজানে সেই তার ঘরের জানালায় বসে।
ঘুমে ঢোলা প্রেমিক চোখ মুছে হাতে নেয় সে চিঠি
তাতে লেখা, “সুবর্ণ গোলক সে শুধু তোমারি তরে।”
একটি মেয়াদোত্তীর্ণ অক্সিজেনপাইপের গল্প
জীবন থেমে আছে সময়ের মেদে; কারেন্টের জালে আটকে থাকা মাছের মতোন। স্পিনারের মতো ঘুরছে চোখ— নিঃশঙ্ক বাঁচার আকুলতায়।
তবুও চলো, হাওয়ায় দোলানো বেয়াড়া চুলের ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি বিলের কিনারে।
বৃন্তের শক্ত বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়া বোঁটার মতো— হৃদয় বেয়ে নেমে গেলে দুর্বোধ্য রাত। তোমার খোঁপায় গুজে রাখা নিশিগন্ধায় চেয়ে রবে যে কালের মৃত ভ্রমর; তার চোখ থেকে কেড়ে এনে স্বপ্ন— লিখে নেব আনুগত্যের নতুন ইতিহাস।
তুমি শুধু উন্মোক্ত করে দিয়ে উজ্জল ভোর, একটু কাছে এসো। আমি তোমার সিঁথি ভরে ঢেলে দেব ফের; মুঠোভর্তি সূর্যকণা।
মানুষ অন্ধ হয়…
মানুষ অন্ধ হয়
হতেই হয়- প্রেমান্ধ, ধর্মান্ধ, ধনান্ধ, ক্ষমতা কিংবা শোষোণান্ধ
কেউ কেউ আবেগান্ধ, কেউ কেউ রাগান্ধ
আবার কেউ কেউ ডুবে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় মোহান্ধতায়
অন্ধত্ব মানুষকে নিয়ে আসে চারিত্রিক এককে-
অন্ধত্বে আত্মস্থ হয়ে উঠা মানুষ গুলো একে একে ধারণ করে
বিশেষ বিশেষণ,
অন্ধত্ব জুড়ে থাকে তাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে…
এবং কি তাদের যা কিছু অর্জন,
যা কিছু ত্যাগ- বিসর্জন, উপমা, উপাধি থাকে
সর্বত্রই এই অন্ধত্বের জয় জয়কার অবাধ বিচরণ!
যে যত বেশী অন্ধ সে তত বেশী সফল
পৃথিবীতে অন্ধত্ব বরণ করা ছাড়া আর কোন নিস্তার নাই…
পার্থক্য কেবল জন্মান্ধ মানুষের
জন্মান্ধের কাছে দিন রাত সবিই সমান অন্ধকার
অন্ধকার তার কাছে স্বচ্ছ দিনের মত, সে তো জানে না স্বচ্ছ দিন কি!
আলোর স্বাদ তার কাছে নিছক শব্দ স্বর
শব্দই তার আলো…
সে বোঝে উত্তাপ, হিমাদ্র,
বৃষ্টি তার কাছে স্রেফ রিমঝিম; আর্দ্র- অনার্দ্র রাত
বাতাস, তাকে ছুঁয়ে জানিয়ে দেয় ফুলের প্রকার ভেদ, নদীর রূপ,
নারীর বিশুদ্ধতা
আশ্চর্য হচ্ছে- সেও হাতড়ে বেড়ায় প্রতিটি স্থাবর অস্থাবর
দারুণ এক অন্ধ বিশ্বাসে…
জন্মান্ধের কাছে অন্ধ-বিশ্বাস ছাড়া আর কি উপায় আছে?
অথচ-
আমরা হতভাগ্যরা প্রতিদিন অন্ধ হচ্ছি!
অন্ধের মত হাতড়ে বেড়াচ্ছি
নতুন নতুন গন্ধ, সুখ… প্রতিদিন বদলাচ্ছি সুশীল মুখোশ!
আসক্তির অন্ধত্বে জেগে আছি উন্মুখ…আক্রোশ; তৃষ্ণার্ত চাতকের মত
না পারছি দাড়াতে বিশেষ কোন এককে
না পারছি বসতে নিশ্চিন্তে…কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছি
ঘুরে ফিরে একিই বৃত্তে!