প্রাইভেট ফার্মে এটা হবে

এক
আমার ভালোবাসার সামনের দুটো দাঁত ফাঁকা
ভালোবাসলে বীভৎস দেখায়!

দুই
ইরানি ট্রফির প্রথম পনেরোতেও যেদিন আস্তানা দিলে না, তবে থেকে ঘুমের হসসোউকার
খুলে হাওয়া। আজ অবসর ঘোষণার পর যন্ত্রণায়
দাঁড়ি পেল মুটিয়া মন

শুধু ভারি চোখদুটো
শুক্রথলি ভারি হয়ে আছে

তিন
আমার লাইফ রজনীকান্ত্‌
একমুখ দাড়ি কেটে চুলটা একটু ফুলিয়ে নিলেই
ছাপ্পান্ন সপ্তাহ
কিন্তু আসলে ফাঁকা বাড়িতে একা
খালি পেটে শুয়ে থাকে রজনীকান্ত্‌
তাকে কেউ ভালোবাসে না (না-টা ইকো হবে)

জ্বলন্ত সিগারেট ডিগবাজি খেয়ে নামছে
পেট্রোলসাগরে

চার
তুমি হাই-প্রোফাইলের কাছে গেছ
এই সপ্রতিভ যাওয়া তোমাকে জীবনের
‘কভি গম’ অংশটুকু দেবে না
তুমি আকর্ষণীয় চোখ, দারুণ পিআর
আর দিনে পঞ্চাশটা পুশ আপের কাছে…
একটা জব হাতে থাকতেই
বেটার অপশানে চলে গেছ

প্রাইভেট ফার্ম বলেছে কেন, বস!

পাঁচ
ও-জানোয়ার তোকে বিখ্যাত ক’রে গেল
বুঝতে পারছিস না?
রেসিপি খসছে না হৃদয় থেকে?
এই সুযোগ, দুর্দান্ত সব আইটেম নামা, চন্দন!
ফুসফুসে আইসক্রিম জমিয়ে শিরায়
গাজরের স্টু সাজাবি, আর কাঁদতে কাঁদতেই ব্যালাডের সুরে ঠোঁটের স্যালাড কুচিয়ে নে
কতদিন রক্তেমাংসে ট্রিট দিসনি আমাকে, বাবুজান

ছয়
এই প্রেম বারোমাস
এই প্রেম চিরদিনের
আমি বনগাঁ লাইনের সেই দৃষ্টিহীন প্রেমিক
তবে ইশারা করলে দিতে পারব না
হাত বাড়িয়ে স্পর্শ ক’রে চেয়ে নেবেন

আমিই সে
প্রতিদিনের পরিচিত
সোনামুগ ডালে কাঠকয়লার আঁচে তৈরি
বাংলার ঝিরিঝিরি নিজস্ব ভালোবাসা

আছি, বলবেন

.
[‘সহ্যকে যন্ত্রণা করি’ বই থেকে]

পাখির জন্মদিন

আজ পাখির জন্মদিন—সবুজ বনের অর্গান খুলে
পাহাড় ভরতি মারিজুয়ানা দুপুর চারদিকে উড়ছে
পথের মতো ভ্রমণ আর মানুষের চেহারায়—ভেসে
ওঠে দূরের গ্রাম—শহর। শিশুদের খেলনায় দাঁড়ায়ে
বাঁকা নদীর মতো—মৃত সন্ধ্যার বিলরোবিন চাঁদ—
শৈশবের বাগানবাড়ি, কাঠের দরজা খুলে দিয়েছে

পাখি ওড়ে—রমণীরা সন্তানের চোখে চোখ পাতায়
এখানে ভীষণ একটা পথ পাখিরা বহন করে—
আপন ভেবে—ভোর, অভিরূপ বংশগড়ন লাফিয়ে
ওড়ে—তাতে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ—নাচে দুটো গান
— তীরবর্তী ছায়াযুবতীর এই অতল খুনসুটি
সাজানো— দীর্ঘ বর্ণচ্ছটা বৃষ্টি–দুপুর, পথিকের মতো;

আকাশে যেন চৈত্রের খরা

choo

বর্ষা চলে যায়, শ্রাবণের ধারা বয় না ধরায়
আকাশটা দখল নিয়েছে চৈত্রের খরায়
দিন যেন তোমার মতন, কড়া রোদ্দুর;
বিতৃষ্ণা জমছে মনে এক সমুদ্দুর।

আকাশে শুভ্র মেঘেদের আস্ফালন
কী করে অঝোর ধারার বৃষ্টির স্বপ্ন করি লালন
চাই বয়ে যাক বৃষ্টির ধারা মর্তের উপর সকাল দুপুর;
বৃষ্টি পড়ুক ঝরোঝর টাপুর টুপুর।

বৃষ্টি আসে না আর, দিন হয়ে ওঠে তোমার মত
উষ্ণতায় ছেয়ে যায় বুক, বাড়ে বুকে বিতৃষ্ণার ক্ষত
দীর্ঘশ্বাসই দিল প্রকৃতিও, যেমনটি দাও তুমি
আকাশও যে করে যাচ্ছে গোয়ার্তমি।

আকাশের বুকে জমুক কালো মেঘ
ঝরুক ধরায় শ্রাবণের আবেগ
দু’ফোটা বৃষ্টির বিন্দু শান্তি নিয়ে আসুক আমার জন্যর
আকাশ কেন বল তো তোমার মতই হলো বন্য ।

থোকা থোকা শুভ্র মেঘফুল
মেঘফুল হয়ে যাক আমার যত ভুল
তোমার ভুলগুলো যেন চৈত্রের খরা
অনুতাপ নেই তাই, বৃষ্টি নিয়ে আসে না মেঘ হরকরা।

ও আকাশ বৃষ্টি ঝরা, বন্ধুর মত হোস না তুই
কালো মেঘ তোর বুকে নিয়ে আয়, মন বাড়িয়ে ছুই
আকাশটা কেন তোমার মতই হয়ে ওঠলো আজ;
শুনতে যে চাই বৃষ্টির রিনিঝিনি আওয়াজ।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, সিএমএইচ, ঢাকা, মিরপুর)

সে কবিতা নয়

কলমের নিব ঘষে যে পাখি বের হয়ে আসে….
পতপত করে ওড়ে যায় সাদা কাগজের গায়
গায়ের জোরে হয়ত কামড় বসায় কোনো না
কোনো কোরা, আনকোরা পত্রিকার
পাতায়
হয়ত ছাতাও বিস্তার করে বৈসাবি রোদের মাথায়!

আমার কাছে কেনো জানি কেবলই মনে হয়…
সে আর যা-ই হোক…. সে কবিতা নয়;
বরং
যে পাখি হাজার প্রচেষ্টাতেও উড়তে পারে না,
শরমেই মরে থাকে লাল দালানের বন্দি বাঁদর
মেহনতিরে দিতে পারে না একচিমটি বুনোআদর
ছুঁয়ে দিতে পারে না কোনোএক ভোরের সবিতা
কেবল ধুঁকে ধুঁকে মরে পড়ে থাকে হৃদয় কাবায়
আমার মতে, সেই হলো কবিতা. সেই কবিতা!

অন্ধকার শুনে শুনে

পৃথিবীর কোমল হৃদয়ে চাঁদ যেন জেগে রয় –
মানুষের বুকের গহীন ক্ষত হয়ে;
জেগে রয় প্রকাণ্ড আসমান –
আমার নির্বাক চাহনি হয়ে।

সন্ধ্যার গাঢ়তর রঙে গ্রহ ছুটে যায় নক্ষত্রের পানে-
সমুদ্রে ঝিনুক হেঁটে যায় জলের দিকে।
পেলব অন্ধকারে – মানুষ কেবল আসে না
মানুষের কাছেপিঠে।

এ অভিশাপ
এ শাপ
এ শঙ্খ
এ সখ-
এই আমার বাঁচিবার অথবা
মরিবার সুতীব্র শখ।

যদিওবা রাত আর আসমান চিনেছে মানুষ –
কবে কোন নৈঃশব্দকে শুনে-
কার বুকে কে রেখে পা-
শব্দকে নাম দিয়েছে ‘অন্ধকার’;
কে গেছে মরে ঐ অন্ধকার শুনে।

জানে না সে কথা-
কবে কোন মানুষ এক, একা-
ভেঙেছিল পাহাড়।
দুর্দান্ত অন্ধকার রাত্রে-
মানুষের মনে পড়ে পাহাড়-
মানুষ এক পাহাড় – যদি বুক খুলে দ্যাখো।

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়
রাত নেমে এলে গাছেরাও হিংস্র হয়ে উঠে। পাতাগুলো ছড়াতে থাকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

আমার যে কী হয়! রাত নামলেই ইচ্ছে করে কোন ঝোপালো গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে সারারাত পাতার বাঁশি বাজাই। যেমন বাজাতাম শৈশবের অলস উদাস দুপুর গুলোতে। বাজাই আর পান করি সোনালি জ্যোৎস্নার অমিয়দ্রাক্ষারস।

আমার কোন আপত্তি নেই রাতভর পাতার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ফুসফুস ভরে নিতে। সারাদিন কত মানুষের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ ঢুকে যায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আর শরীর সেই বিষগুলো নিতে নিতে হয়ে গেছে নীলকণ্ঠ পাখি। কণ্ঠনালীতে জমে আছে কালকুটের ভরা থলে।

হয়না। রাতগুলো থাকে লৌহদরোজার নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বন্ধী। দূরে থাকে গাছ। পাতার বাঁশি।
পাহাড়সমান অনতিক্রম্য বাধা অতি ক্ষুদ্র এক ইচ্ছেপূরণের পথেও!

পুনর্জন্মবিশ্বাসী হলে আমি চাইতাম খোঁপায় বুনোফুল গোঁজা এক পাহাড়ী আদিবাসি রমনীর জীবন। হ্যাঁ জন্মে জন্মে আমি এক নারীই থাকতে চাই। কিন্তু সেই নারী এই নিগড়বন্ধী সমাজের কেউনা। জীবন হবে মুক্তবিহঙ্গের মতো, প্রজাপতির মতো স্বচ্ছন্দবিহারের। যে নারীরা অবগুণ্ঠনের আড়ালে লুকোয়না তাদের নারীত্ব——–বিব্রত নয় লোভীচোখের নগ্ন-চাহনীতে। উৎসবের রাতে মহুয়ার নেশায় ঘোরমাতাল হয়। নাচে তার পুরুষের হাতে হাতে ধরে, পায়ের তালে তালে তাল মিলিয়ে। ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বঁড়শিতে মাছ ধরে। চুলে মহুয়ার ফুল গুঁজে ঘুরে বেড়ায় পাহাড়ীঝর্ণার মতো বন্ধনহীন।

জীবনতো হবেই এমন সহজ আর অনাবিল।
নিরিবিলি রাতে পাতার বাঁশি বাজানোর সুযোগহীন জীবন আমার চাইনা।
এমন নয় যে এই বাঁশির সুরে তৈরি হয় কোন মোহনীয় আবেশ, বরং খানিকটা বিকট অথবা উদ্ভট মনে হয় কখনো কখনো। কিন্তু বাজাতে পারলে প্রাণের অফুরান স্পন্দনের শব্দ বেজে উঠে ঠিকই।
এই ইচ্ছেপূরণের ব্যর্থতাকে আমূল গ্রাস করে ফেলে সীমাহীন বিষাদের নীলঢেউ। আর সারারাত সেই উথালপাথাল ঢেউয়ের নাগরদোলায় দুলতে থাকে পৃথিবী।

ঘুম আসেনা। ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী কেবলই পালিয়ে বেড়ায়। ছড়াগানের ছন্দে ছন্দে ঘুমে ঢুলু ঢুলু সেই চোখ দু’টোই যে ফেলে এসেছি সহস্র আলোকবর্ষ দূরের শৈশবে —- কেন যে বারবার ভুলে যাই! সেই মায়াভরা শিশুকাল আর ফিরবেনা। তবু হাতছানি দেবে। পিছু ডাকবে। আরো অনিদ্রায় অনিদ্রায় ভরে দেবে ব্যাকুল রাতগুলো।

খুব চড়ামূল্যে কিনে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতাটুকু। আর এই মহামূল্য নির্জনতার ভেতরেই ঢুকে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল। নিজের সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় চাওয়াপাওয়া যোগবিয়োগের অংক। জীবনতো কখনো শুরু হয়না কোন অংকের সূত্রে। তবে কেন এত হিসেবের মারপ্যাঁচ উঠে আসে ! কেন যে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও মনটাকে স্মৃতিশূন্য কিংবা একেবারে অনুভুতিশূন্য করে ফেলা যায়না ! কেন যে!

বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না জীবনে কিছু পাগলামি না থাকলে। এই এখন যেমন একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কুয়াশাভেজা ব্যালকনিতে বসে হি হি করে কাঁপছি। মনে হচ্ছে এর চাইতে আনন্দদায়ক আর কিছু ঘটেনি এই জীবনে। এমনকি এখন যদি আকাশভাঙ্গা জ্যোৎস্না নেমে এসে প্লাবিত করে দিতে চায়, তাকে বলবো– ‘এখন নয়। এখন এই জ্বরতপ্ত অন্ধকার নির্জনতাই আমার প্রিয়। আলো চাইনা’।

যাপিতজীবন আর স্বপ্নের মাঝখানে এক রেললাইন ফাঁক। আজীবন পাশাপাশি তবু কেউ কাউকে ছোঁয়না ; কেবলই সমান্তরে ছুটে চলা আকাশ আর সমুদ্রের মতো।

দৃশ্যতঃ আমার কোথাও যাবার ছিলনা।
তবু চোরাটানে আবার এসে দাঁড়াই ইস্টিশনে। টিকেট কাউন্টারের জানালায় হাত বাড়িয়ে এক অচেনা গন্তব্যের টিকিট কিনে ফেলি।

সব যাত্রাইতো আর পূর্বনির্ধারিত নয়।

রাত্রিরে ১

রোজ নিঃশব্দে এসে শয়ানের পাশ ঘেসে ফোটে যে ফুল
সমস্ত প্রহর কাটে সুরভীর আস্বাদ সন্ধানে তার,
হিমশুভ্র তনুখানি জুড়ে সব পেয়ে না পাওয়ার হাহাকার,
অর্ধঘুমঘোরে এ আমার অলস স্নায়ু অবসাদ মোছে কামনায়।

পাশ ফিরলেই সংসার তার আবির ছড়িয়ে ভোর আনে।

রাত্রি তোমার লীলা
পাশ ফিরলেই রাজা
পাশ ফিরলেই প্রজা!

ধূসর পৃথিবীতে-

পাইনি কথাটি ডাহা একটা মিথ্যা হবে
মায়ের কাছে পেয়েছি, পেয়েছি বোনের কাছে,
পেয়েছি বন্ধুদের সাথে; জানা অজানা মানুষের মাঝে
ফিরিয়েও দিয়েছি শতশত এ জনমে!

আকাশ ছোঁয়ার সাধ মিটেছে
কাশফুলের নরম বিছানায় বিনিদ্র রজনীতে
কোলাহল করেছি নীলিমার সাথে বিমুগ্ধ বাক্যালাপে
আঁধার পেরিয়ে অরুণ আলোয় রাঙা পৃথিবীতে!

ঘুরেছি দেশে-বিদেশে; ছুটেছি অজানা পথে
তেপান্তরের মাঠে গল্পে মেতেছি কতো না বিচিত্র্য বিষয়ে!
তাজমহলের পদ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না রাতে স্বপ্নের খেলা খেলেছি বর্ণিল সমাহারে
সাগরের নোলাজলে স্নান করেছি বিষাদের ছায়া মুছে দিতে।

বিস্তীর্ণ মরুর বুকে ক্যাকটাসের স্বপ্নযাত্রায় বিমোহিত হয়ে
স্বপ্ন বুনেছি সজীবতার, সঙ্কল্প করেছি দুর্গম পথে বিজয়ী হতে
হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু রেখেছি; হয়নি পদানত অপঘাতে
সপ্নের সাথে মিতালি করেছি অধরাকে কাছে পেতে।

কোথাও তবু যেন এক ভীষন্নতা, ধূসর এই পৃথিবীর রুক্ষতায়
সকল অর্জন যেন ম্লান হয়ে যায় ক্ষুদ্র এক বালিকার অবহেলায়,
সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়
এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়।।

ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার

rty আমি ততদিনে ফোন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের কাজ ভালোবাসতে শুরু করেছি এবং বহাল তবিয়তে কাজ করছি। ফোন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে আমাদের কাজ হচ্ছে ফোন সার্ভিস নিতে আগ্রহী গ্রাহকদের সহযোগিতা করা। এবং আমি তা অতি আনন্দের সাথে করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে করতে অল্প অসুন্দরের পাশাপাশি অনেক সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়।

অসুন্দর কিছুই আমি মনে রাখি না।
আর সুন্দর যা কিছু দেখি সবই চিন্তা চেতনা স্মৃতিতে জমা রাখি।

আমেরিকায় এসে তো এমনিতেই চারপাশ সুন্দর দেখি। আর ওয়ালমার্টে চাকরি করতে করতে সুন্দর সুন্দর মানুষজনও দেখি, মানুষজনের কাজকর্ম দেখে সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতাও হয়। আমেরিকার ইয়াং জেনারেশান হচ্ছে হুজুগে টাইপ। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে খুব কম আমেরিকান, তারা চিন্তা করে জীবনের বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে। আমাদের দেশে ভিটে মাটি বিক্রি করে হলেও বাবা মা চায় সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। আর আমেরিকায় ইয়াং জেনারেশান ঘটি বাটি বিক্রি করে হলেও লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, জুতো আর লেটেস্ট মডেলের ফোন কিনবে! এই জিনিসগুলোর প্রতি এদের কী যে নেশা!
★***********************★

আজ আমাদের কাছে ফোন সার্ভিস নিতে এসেছে অনেকেই। তাদের মধ্যে দুটো ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো। যাদের দেখা পেলাম, তাদের সাথে গল্প করে মনটা ভালো লাগায় ভরে গেছে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরেও ভালো লাগার রেশটা ছিলো।

এক হোয়াইট আমেরিকান ভদ্রমহিলা, বয়স আনুমানিক ৫৩ বা ৫৪ বছর হতে পারে, এসেছিলো ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। যদিও এটা বিভিন্ন ফোন কোম্পানির টাওয়ারের সমস্যা, তবুও আমাদের গ্রাহক আমাদের লক্ষ্মী তাই ফোন কোম্পানির হয়ে আমিই এই কথাগুলো ভদ্রমহিলাকে বুঝিয়ে বললাম। ভদ্রমহিলা ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণ জানার পর এটা নিয়ে আর কথা বললেন না, চলেও গেলেন না। ভাবলাম, আরও কিছু জানতে চায়। ভদ্রমহিলার কাছে জানতে চাইলাম, আর কিছু জানতে চায় কিনা।

না, তিনি আর কিছু জানতে চায় না। শুধু বললো যে, আমার ইংলিশ উচ্চারণ নাকি তার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পরবর্তী প্রশ্ন ছিলো আমি কোন্ দেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনেই ভদ্রমহিলা, ‘এমিলি এমিলি শীগগীর আসো’ বলে ডাকতেই যে এসে হাজির হলো আমাদের সামনে, অপূর্ব সুন্দরী ২৪-২৫ বছর বয়সী এক তরুণী। একেবারে আমাদের দেশের মেয়েদের মতো অভিব্যক্তি চেহারায়। মুখে সলজ্জ হাসি, কী অমায়িক ভাব চেহারাতে! ভদ্রমহিলা যখন জানলেন যে, আমি বাংলায় কথা কই, খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, এমিলিও বাংলা বলতে পারে!

আমেরিকান তরুণী বাংলা বলতে পারে শুনেই তো আমার চোখ ছানাবড়া! ভদ্রমহিলা জানালেন, এমিলি কলকাতায় থেকেছে এক বছর। অই এক বছরে বাংলা পড়তে ও লিখতে শিখেছে, বলতে তো পারেই। উনার দেয়া তথ্যের সত্যতা জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করার জন্যই হয়তো তিনি এমিলিকে অনুরোধ করতে লাগলেন আমার সাথে বাংলায় কথা বলার জন্য। এমিলি নামের সুন্দরী মেয়েটি বাঙালি মেয়েদের মতোই খুব লজ্জা পাচ্ছিলো! আমিই পরিস্থিতি সহজ করে দিলাম, বাংলায় বললাম, এমিলি তুমি কথা শুরু করো।

এমিলি স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বললো, “আমার নাম এমিলি, কলকাতাতে আমার স্বামীর সাথে এক বছর ছিলাম। ওখানে গড়িয়াহাটে থেকেছি। আধুনিক শিশু শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম আমি। আজ আমি খুব আশ্চর্য্য হয়েছি এই ওয়ালমার্টে একজন বাঙালিকে দেখতে পেয়ে”। এমিলির বাংলা শুনে আমার আক্কেলগুড়ুম! মাত্র এক বছর বাংলা পড়ে এমন শুদ্ধ বাংলা বলতে আমি অন্ততঃ কাউকে দেখিনি। আমি এমিলির সলজ্জ মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।

বাংলাতেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘এমিলি, তোমার সাথের মানুষটি তোমার কে হন?”

এমিলি বললো, ‘উনি আমার শাশুড়ী। আচ্ছা রীতা আন্টি, আপনি কি রান্নাও করেন এখানে? সব বাঙালি খাবার রান্না করেন?”

এমিলির কথা শুনে আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা। এই মেয়ে আমাকে আন্টি ডাকছে! বুঝলাম সে অলরেডী শিখেছে, আমাদের দেশে কাউকে নাম ধরে ডাকার রেওয়াজ নেই, তাই সে আমার নামের ব্যাজ থেকে নামটি নিয়ে সাথে আন্টি যোগ করে ফেলেছে। বাঙালি নারীর যে রান্নাবান্নাই প্রধান কাজ, এটাও সে জেনে গেছে! তাকে জানালাম যে আমি প্রতিদিন রান্না করি, এবং বাঙালি খাবার রান্না করি।

এমিলির শাশুড়ী এবার জানালেন যে উনারা মিসিসিপির অধিবাসী নন, উনারা এসেছেন ইন্ডিয়ানা থেকে। বললাম, তাই তো বলি, আমার ইংরেজি উচ্চারণ কেন তোমার পছন্দ হয়েছে! মিসিসিপির মানুষ তো আমার ইংরেজি উচ্চারণ কিছুই বোঝে না, আমিও মিসিসিপির ইংলিশ কিচ্ছু বুঝি না। মিসিসিপির মানুষদের সাথে কথা বলতে বলতে আমি ইংলিশই ভুলে যাচ্ছি— বলে হেসে ফেললাম।

এমিলির শাশুড়িও খুব হাসলেন। স্বীকার করলেন, সাউদার্ন ইংলিশ উনিও বলতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না! ওরা মিসিসিপিতে এসেছে কারণ এমিলির স্বামী, অর্থাৎ ভদ্রমহিলার ছেলের চাকরির পোস্টিং হয়েছে মিসিসিপি এয়ারবেসে, তাই ছেলে- বৌমার কাছে উনি বেড়াতে এসেছেন। ভদ্রমহিলা বললেন, তাঁর ছেলে ফুল ব্রাইট স্কলারশীপ পেয়ে ইন্ডিয়াতে গিয়েছিল উচ্চ শিক্ষার জন্য, সাথে এমিলিও গেছে। এমিলি কলকাতায় বসে থাকেনি, শিশু শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেছে। এক বছরে ওরা দুজনেই যতখানি বাংলা শিখেছে, এখানে ফিরে এসে কারো সাথে বাংলা চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে দুজনেই খুব আপসেট ছিলো।

আজ আমার দেখা পেয়ে ভদ্রমহিলা মহাখুশি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন আমার মত একজন খাঁটি বাঙালির খোঁজ পেয়ে গেছেন বলে। আর চিন্তা নেই, ছেলেকে গিয়ে বলবেন বাংলা চর্চা করার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। উনার ফোন নাম্বার দিলেন, এমিলির ফোন নাম্বার দিলেন এবং আমার ফোন নাম্বার নিলেন। ফিরে যাওয়ার সময় ভদ্রমহিলা ইংলিশে ধন্যবাদ জানালো এবং অনুরোধ করে বললো, আমি যেনো মাঝে মাঝে ফোনে এমিলির খোঁজ নেই। আর এমিলি বাংলায় বললো, আবার কথা হবে রিটা আন্টি!

এমিলিরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কালো এক তরুণ এলো নতুন ফোন সার্ভিস কন্ট্র্যাক্ট নিতে। তখনও আমিই ছিলাম ডিউটিতে। কেউ নতুন ফোন সার্ভিস নিতে চাইলে আমাদের প্রথম কাজ হলো, গ্রাহকের ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করা। গ্রাহকের সমস্ত পারসোন্যাল ইনফর্মেশান কম্পিউটারে সাবমিট করার পর ক্রেডিট ব্যুরো থেকে রেজাল্ট আসে। সেই রেজাল্টের ভিত্তিতেই ঠিক হয় গ্রাহককে কোনো ডিপোজিট মানি জমা দিতে হবে কিনা।
ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করার কথা শুনে তরুণ একটু আমতা আমতা করছিলো।

তাকে বুঝিয়ে বললাম যে এটা ফোন কোম্পানিগুলোর বেঁধে দেয়া নিয়ম। ক্রেডিট স্কোর ভালো হলে গ্রাহককে কোনো ডিপোজিট মানি জমা দিতে হয় না। আর ক্রেডিট স্কোর খুব ভালো না হলে কিছু ডিপোজিট দিতে হয়। এক বছর সার্ভিস কন্টিনিউ করতে পারলে ডিপোজিট মানি ওরা মান্থলি বিলের সাথে ব্যালেন্স করে দেয়। সব শুনে তরুণ আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবে বলে চলে গেলো। আধঘন্টা বাদে সে সত্যিই ফিরে এলো, এবার একা আসেনি। সাদা আমেরিকান সুন্দরী এক মেয়েকে বগলদাবা করে এনেছে।

অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে দেখলাম, এরা প্রেমিক- প্রেমিকা। ইদানিং প্রায়ই দেখি কালো ছেলেদের সাথে সাদা মেয়েকে গলাগলি করে চলতে। কিনতু সাদা ছেলের পাশে কালো মেয়ে এখনও দেখিনি। কে জানে, এদেশেও হয়তো সাদা চামড়ার কদর বেশী! বাচ্চা মেয়ে, কেমন অভিমানী অভিমানী মুখ করে পাশে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটির ক্রেডিট স্কোর চেক করে দেখলাম দুই ফোন লাইনের জন্য তাকে জমা দিতে হবে ৬০০ ডলার ডিপোজিট।
এবার ফোন পছন্দ করার পালা। মেয়েটি পছন্দ করেছে ‘ আইফোন ফোর’। দুই বছরের জন্য কন্ট্রাক্ট, প্রতি আইফোন ফোরের জন্য দিতে হবে আরও ৯০ ডলার।

টাকার পরিমাণ শোনার পর ছেলেটির মুখের চেহারা করুণ হয়ে গেলো। আমি তাকে অন্য ফোন পছন্দ করতে বললাম, যেগুলো দামে একটু সস্তা হবে। কিন্তু অভিমানী বালিকার জেদ, ‘আইফোন ফোর’ দিতেই হবে তাকে।ছেলেটি মেয়েটির দিকে অনুনয়ের চোখে তাকাতেই মেয়ে মুখ ঘুরিয়ে ছেলেটির পাশ ছেড়ে সোজা হাঁটা দিলো। ছেলেটি উতলা হয়ে বললো, বেইবি ফিরে আসো, তোমার পছন্দের ফোনই নেয়া হবে। বলেই আমাকে বললো, ঠিক আছে, আমি ৬০০ ডলার ডিপোজিট দিবো। ছেলেটিকে বললাম যে, তুমি তো অনেক বড়লোক মনে হয়, নাহলে ৬০০ ডলার ডিপোজিট দেয়া তো সোজা কথা না!

সে বললো, আমি খুবই সাধারণ মানুষ, কিনতু আমার ফিঁয়াসেকে এত ভালোবাসি যে এই টাকার পরিমাণ তুচ্ছ আমার কাছে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়ার আবদারে সে ৬০০ ডলার ডিপোজিট, ২০০ ডলার ফোনের জন্য , ৮০ ডলার একটিভেশান ফি দিয়ে দুটি ‘আইফোন ফোর’ নিতেই মেয়েটির মুখ অনিন্দ্য সুন্দর হাসিতে ভরে গেলো। তরুণ যখন চুক্তিপত্রে সাইন করছিলো, আমি জানতে চাইলাম তারা কবে বিয়ে করতে যাচ্ছে। সাথে সাথে তরুণ বললো, ‘এই ডিসেম্বারে আমরা বিয়ে করবো”

আর মেয়েটি ধীরে সুস্থে বললো, “আমি এখনও জানিনা কবে বিয়ে করবো। এক বছর আগে আমাদের এমগেজমেন্ট হয়েছে, আরও সময় দরকার বিয়ের ডিসিশান নিতে।” মেয়েটির বয়স ১৮, ছেলেটির বয়স তো আমি আগেই জেনেছি ২৬ বছর। মনে মনে স্বীকার করতেই হলো, এই জগত সংসারে সব দেশেই মেয়েরা খুব হিসেবী হয় এবং ছেলেরা হয় বেহিসেবী। ছেলেদের সাথে সম্পর্ক তৈরির আগে প্রায় প্রতিটি মেয়ে সম্পর্কের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, সম্পর্ক চলকালেও সম্পর্কের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সম্পর্কটা রাখবে কিনা।

*এবং পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলে জানা যাবে, বেশীর ভাগ প্রেমিক- প্রেমিকার ব্রেক আপ হয় প্রেমিকার হিসেবী স্বভাবের কারণে, আর ছেলে-মেয়ের বিবাহিত সম্পর্ক ভেঙে যায় ছেলেদের বেহিসাবী স্বভাবের কারণে।* চুক্তিপত্র সাইন হয়ে যেতেই দেখি মেয়েটির মুখে হাসির বন্যা দেখা গেলো, ছেলেটির মুখেও প্রশ্রয়ের এক অপূর্ব হাসি। আমার দেখে এত ভালো লাগলো যে ছেলেটিকে বলেই ফেললাম, ‘জীবনে টাকা আসে টাকা চলেও যায়, কিনতু এমন মুহুর্ত বার বার আসে না। তোমাদের সুখী সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো”।

বাড়ি ফিরে আমার স্বামীর কাছে এমিলি আর তার শাশুড়ির গল্প করলাম। কিছুক্ষণ পরে আমার স্বামী বললেন যেনো নেক্সট ছুটির দিনে এমিলি, তার বর আর এমিলির শাশুড়িকে আমাদের বাড়িতে ডিনারের নেমন্তন্ন করি।
মনে পড়ে গেল, এমিলির শাশুড়ীও আমাকে বলেছিল, মাঝে মাঝে যেনো এমিলির খোঁজ খবর নেই!★★

কিন্তু আমি এমিলির শাশুড়ির দেয়া ফোন নাম্বার লেখা কাগজের টুকরোটি আর খুঁজে পাইনি। খুব সম্ভবতঃ এমিলির শাশুড়িও আমার ফোন নাম্বার লেখা কাগজটি খুঁজে পাননি।

তাই আমাদের আর কখনো কথা হয়নি।

— ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার

প্রার্থনা এই আমার

chho

প্রার্থনা এই তোমার নিকট
ওগো মহান প্রভু
পূণ্যিতে দাও ভরে তুমি
আমার মনের বিঁভু।

অশুদ্ধতা মনের যত
দূর করে দাও ত্বরা
নাড়ে যেন শান্তি এসে
মন দুয়ারে কড়া।

পাপে ভরা জীবন আমার
আছি কষ্টে আমি
মাফ করে দিয়ো পাপ আমার
ওগো অন্তর্যামী।

ভ্রান্তির পথে হাঁটছি সদা
পাই না পথের দিশা
চোখের সম্মুখ খাড়া আছে
পাপের অমানিশা।

সোজা পথে চালাও প্রভু
যে পথে নেই কাঁটা
পাপের কাঁটায় রাখলে যে পা
সুখে পড়ে ভাটা।

এই দুনিয়ার মোহ আমায়
অন্ধ করে রাখে
রঙ তামাশা মন্দ কর্ম
কাছে কেবল ডাকে।

বাঁচাও প্রভু মোহ হতে
মন শুদ্ধ দাও করে
মনের ভিতে পূণ্যির খামার
দাও আল্লাহ দাও গড়ে।

কালকেউটের বাসর

dau

আমি আর কই যামু-
যহন আমারে চিনে না আমার খেতি জমিন
যহন আমারে সে ফিইরা চাহে না, কাদা জলে
মাখতে দেয়না- গড়তে দেয়না কস্তূরী হরিণ…
আমি এখন কোন ক্ষেতে চালামু হালের লাঙ্গল
চাষের কলা কৌশল মেনে চিনে- কোন আশায়
দিমু নিড়ানি সাফ করমু আগাছার জঙ্গল;
আমি না হয় মগ্ন আছিলাম নিশান্তের ধ্যানে-
শ্রাবণে গানে জলধির নৃত্যে
তাই বইলে-কি জমিন ভুলিতে পারে, বেগানা কৃষাণের মদমত্তে!
এখন জমিন জোড়া বধ্যভূমি- বুকের ধন ছেঁড়া স্বপ্ন সমাধি
কান্নার গহীনের বাদ্য বাজে, বাজে শঙ্খধ্বনির মর্মর
রাতের পাখীদের ক্ষুধার্ত শীৎকার- মত্ত শুধু কালকেউটের বাসর!

আমি কোন খানে পামু আশ্রয়, কারে করমু পথের সাথী
যেখানে বেবাকতেই কয় তপ্ত কথা- তয়, কে হইবো অগতির গতি
কে চাইবো ফিরে- অহন
কে বুঝবো এই অধম নাখান্দা নালায়েক (অ)কবির মন
ভিটে বাস্তু হারা- দুদণ্ড ঠাই নাই যার
পথের দিশা হারা- বুকে খণ্ড বিখণ্ড মেঘ, বিচ্ছিন্ন আবেগ
বাড়িয়ে চলিছে সংকট!
কলিজা পোড়া গন্ধ নির্গত দীর্ঘশ্বাসে
বুঝতেইতো পারিনি তুলোর মতন মেঘে- তুষের আগুন পুষে রেখেছে!

৭.৭.১৭

ভালো থাকা ভোরগুলো

‘তোমরা সবাই ভালো থেকো’- বলতে বলতে একটি ছায়া
আচমকা মিলিয়ে যায়। একশত সতেরো বছর,
বেঁচেছিলেন লালন- ডাক তুলে একটি টিয়ে এসে
বসে সবুজ কার্নিশে। একটি ভোর তার সমগ্র যৌবন নিয়ে,
লিখেছিল যে কবিতা, সেই কবিতাটি কেবল
‘কবি,কবি’ বলে সারা দুপুর ভরে কাঁদে।

আসলে কান্নাকামী সমুদ্রই কেবল জানে সকল
প্রাণের দুঃখবাদ। নতুন ভোর উঠবে বলে যে কদমফুল
মাটিতে ঝরে পড়ে, সে ও নিজস্ব নিয়মে লিখে,
বিগত বোশেখের সরল পংক্তিমালা। আর মাটির গভীরে
ক্রমশ বড় হতে থাকে কঙ্কালের বিশালত্ব।

‘ভালো থেকো ভোর, ভালো থেকো কালের সুদূর’
এমন উপাখ্যান ছড়িয়ে নদী ও মেঘ গড়ে প্রবাহের মিতালী।
বড় অসহায় হয়ে এর পাশে এসে দাঁড়ায় জীবনের স্মৃতিগুলো।
#

………………………………………
[ সৈয়দ শামসুল হক- শ্রদ্ধাষ্পদেষু ]

উষ্ণ বাউর

rtyu

নয় তো মাটির চাপায় উড়ে বসবে
এক নাক দুর্বলা ঘাসের বাসনা;
এ কি দর্পণের গায়ে অনল জ্বেলে না
শুধু সেলফিতে ভূত পুত রঙিলা
আজও দেখি দৃশ্যপটে কান্না!
ভাদ্র শেষে আশ্বিনের মার্জনা
আর উষ্ণ বাউর বাজনা;
মনের ময়লা কতখানি পরিষ্কার
এই কার্তিকে হবে পরীক্ষা-
জোছনা সলক আর বুঝি চায় না
গলার মালা সেলফিতে বয় না।

৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২৩

শহরতলীতে ইভনিং ওয়াকের ইমেজারি

ind

ক্রমশঃ দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে
আবছায়া আঁধারে শহর ঢেকে যায়
দূরে নদীর জলে বোটগুলো ঢেউয়ের তালে তালে দোলে
আরও দূরে নদীর ওপারে শহরের
উঁচু উঁচু ইমারতের মাথা মিশে আছে মেঘেদের দেশে
পাশে প্ল্যানেটোরিয়ামের ডিম্বাকৃতি চূড়া
গাছের ডাল হেলে হেলে পড়ে যায় জলের উপর
পাতাগুলো জলের সাথে ভেসে ভেসে ওঠে
ইঁটের রাস্তা আর পাশে জগিং ট্রেইল সোজা চলে গেছে বহুদূর
যেতে যেতে হাঁপিয়ে গেলে বেঞ্চিতে বসে যাই
পাশে হেঁটে যাওয়া হাঁসগুলোকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকি
তারা প্যাঁক প্যাঁক করতে করে শাবকগুলি নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যায়।

ষোলকলা কৌশল

আমি অকর্মা বলে- বাকীরা লুটাইতো গাছে ছড়ার মুনাফা সুকৌশলে। বরই পাকলে বরই, জাম পাকলে জাম, গাছে ছড়তে পারতাম না বলে ঢিল ঢাল ছুড়ে যা পড়তো তাই খাইতাম।
ওরা মচকা মেরে খেতো কচকচে পেয়ারা, কাঁচা আম।
…তলায় থেকে আমি হুদাই চিল্লাইতাম।

শীতের মৌসুমে আমাদের খেজুর গাছ খোদাই হতো। গাছির বাটালের ধারে সব ক’টা খেজুর গাছ তৈরি হতো পরিপাটি রমণীর সাজে, চেঁচে চেটে যাদের গ্রীবার নিচে চাঁদের মত চকচক করতো উজ্জ্বল মোহনা, সিনা সন্ধি, যেখান থেকে ঝরতো ফোঁটা ফোঁটা রসের ধারা। আমি ঐ একটা গছেই চড়তে পারতাম, খোপ বেয়ে বেয়ে। রসের লালসায় সকাল সন্ধ্যা হতাম উন্মুখ, নিকষ বরষায় প্রেতে দিতাম জিহ্বা, লুটাইতাম গাছে চড়ার সুখ।

রোজ রোজ।
আমিও করতাম মধুবালার খোঁজ। যার জন্যে- জাগতো মালতী লতার দোলা, কোকিলার সুরে গাইতাম গান, ডাকতাম গোপনে- মোহন জলে, হংসমিথুন লীলায়, অবিরাম তই তই বোলে।
এই মর্ম জ্বালা। সাপ লুডু খেলা। তুরুপের তাস। চড়াই উৎরাই ফেরিয়ে শিখি আরোহণ। ষোলকলা কৌশল। রসে- কষে মাখামাখি, চিনি সাধের জীবন।