রোডম্যাপ অব ড. ইউনুসঃ
প্রধান উপদেষ্টা টু নির্বচিত প্রধানমন্ত্রী 
বিএনপি উঠতে বসতে সিনায় সিনায় একটা জিগির তুলছেঃ নির্বাচন নির্বাচন। ৫ আগষ্টের চেতনা তারা ধারণ করে না, এটা স্পষ্ট বরং এই ৫ আগষ্টের কথা বললে যেন তাদের অন্তর হয় ছেড়া বেড়া। নির্বাচনকে পেশী মুক্ত, কালো টাকা মুক্ত, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল প্রকার নির্বাচনের যে কোন প্রস্তাবই দেয়া হোক না কেন তারা কেবল বলে, না। নির্বাচন দাও নির্বাচন দাও জিগির তোলে কিন্তু যদি বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক তখন তারা বলে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, যখন বলা হয় আগে স্থানীয় নির্বাচন তখন তারা বলে আগে জাতীয় নির্বাচন হোক তারপর সরকার এসে স্থানীয় নির্বাচন করে নেবে। ঠিকাছে আস জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য সংস্কার শেষ করি, তারা বলে আগে নির্বাচন হোক পরে যারা ক্ষমতায় যাবে তারা সংস্কার করা যাবে। এবং হুমকি দেয় যদি সংস্কার কিছু করাও হয় তবে তারা সেই সংস্কার বদলে দেবে।
ড.ইউনুসের হাতের কোন সংস্কার BNP মেনে নিবে না এমনকি ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার পাল্টে ফেলবো বলে ছাত্র জনতাকে হুমকি দিলেন BNP’র মির্জা আব্বাস।
“ওদের হাতের (ইন্টেরিম সরকারের) কোন সংস্কার আমরা মেনে নিবো না, সংস্কার করলেও আমরা ক্ষমতায় এসে চেঞ্জ করে ফেলবো”- মির্জা আব্বাসের এই দাম্ভিক বক্তব্য নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র!
স্মরণ করি,নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালের শাহাবুদ্দীন সরকার ২৯টি সংস্কার কমিটি গঠন করে। ৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে ২৯টি সংস্কার কমিটির প্রস্তাবিত তেমন কোন সুপারিশই বাস্তবায়ন করেনি।
এমনকি এরশাদ পতনের পর তিন দলীয় যে রূপরেখা হয়েছিল, ১৯৯৪ সালের মাগুরার উপ ইলেকশনে বিএনপিই সেই রূপরেখা প্রথম ভায়ালেট করে।
সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বেশিরভাগ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজেদের অধীনেই নির্বাচন করে।
মনে পড়ে? তখন জামাত, আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে। গঠিত হয় জনতার মঞ্চ। আন্দোলনের তোপে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় বিএনপি।
তারপর বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ২০০১ সালের লতিফুর সরকারের সময়ে টিআইবি কে দিয়ে ১৬টি সংস্কার কমিটির সুপারিশ করা হয়। বিএনপি সেগুলোও অনুসরণ করেনি।
তারপর ২০০৪ সালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে সংবিধানের বিতর্কিত চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে নেয়। যাতে করে নিজেদের লোক তত্বাবধায়ক সরকারে বসাতে পারে।
এই বিতর্কিত সংশোধনীকে কেন্দ্র করেই লগি-বৈঠা আন্দোলন শুরু হয়। আওয়ামী লীগ লাশের উপর নৃত্য করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে এক এগারো সরকার আসে।
রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার এই অতীত ইতিহাস সম্পর্কে এই প্রজন্ম ভালো করেই জানে। সংস্কার মানি না, সংস্কার চেঞ্জ করে ফেলবো এসব নতুন ইতিহাস নয়। আগেও হয়েছে।তাই ওদের হাতের সংস্কার আমরা মেনে নিবো না বলে মির্জা আব্বাস যে বক্তব্য দিসে, সেটা তাদের দলেরই ঐতিহাসিক রূপকে প্রতিফলিত করে।
জুলাই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। সেই কমিশন নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রস্তাবনাও অলরেডি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সাবমিট করেছে।
জুলাই যদি ব্যর্থ হয়, সংস্কারকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো অপোজ করে তাহলে মনে রাইখেন ইতিহাস সচেতন এই প্রজন্ম আর কাউকে ছেড়ে দিবে না,ইনশাআল্লাহ।
এদিকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রথম ছয় মাসে অগোছালো হলেও আস্তে আস্তে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তিনি তার জাত চিনাতে শুরু করেছেন। রমজান ২০২৫ (মার্চ ২০২৫) এ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সামর্থ্য হয়েছেন তার সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দব্যমুল্যের উর্ধগতিকে থামাতে এই সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ কাজে দিয়াছে, ঈদে মানুষের যাত্রাকে সহজ করতে পেরেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফল, চীন সফরে মাথা উচু করা ভূমিকা, সর্বপরি বিমসটেক সম্মলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সম্মানসূচক কথোপকথন আমরা বাংলাদেশির ব্যাপক আমোদিত করেছে।
আর এই অভাগা জাতি আমরা এইটুকু সফলতাতে এত বেশি আবেগাপ্লুত যে, ইউসুস স্যারকে কমপক্ষে ৪/৫ বছরের জন্য ধরে রাখতে চাই।
কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব?
অনেকেই অনেকের কথা বলেন কিন্তু আমি মনে করি মাওলানা ভাসানী বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তার বেশভূষা ছিল গরীবি, টাইটেল ছিল মাওলানা, অত্যন্ত বাকপটুতা যাকে অনন্যতা এনে দিয়েছিল। ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে যিনি বাঙালি জাতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

এবং তার তরুন উদিয়মান শিষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো বটে কিন্তু স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব ভুলে তার গুরুর গুরুত্বের কথা।
পরবর্তী পর্যায়ে নানা পটপরিবর্তনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন। মাওলানা ভাসানীর তখনকার দল ন্যাপ ছিল, রাজনীতিতে তখনও তিনি ছিলেন সক্রিয়, শেখ মুজিবের সমালোচক ছিলেন। তিনি সমর্থন দেন জিয়াউর রহমানকে। জিয়াউর রহমানের অনাড়ম্বর জীবন ও রাস্ট্র পরিচালনায় অনন্য দক্ষতায় বাংলার মানুষের হৃদয়ে সেই যে ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আজও তার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে।

গত চুয়ান্ন বছরে দুইজন নেতা মাওলানা ভাসানী ও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশির মননে সচেতন ও আবচেতনভাবে সুদৃঢ় গাথুনি তৈরি করে গেছেন।
উপরিোক্ত এই দুই মহান নেতার গুণাবলীর সম্মিলন ঘটেছে প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের চরিত্রে। অনাড়ম্বর বেশভূষা, অতি উন্নত আন্তর্জাতিক মানের চিন্তাবিদ, দেশ বিদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সমান তালে তাল মিলিয়ে চলার অন্যন্য দক্ষতা, বরং অনেক ক্ষেত্রে অনেককেই ছাড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিত্ব অথচ কত সাধারণ তার চলাফেরা! কথা বলার ধরণে এক হাসির মাদকতা! অতি উচ্চমানের বক্তৃতা উপস্থাপন করার ক্ষমতা। এই অতি ব্যতিক্রমি চরিত্রটি পৃথিবীব্যাপী চড়ে বেড়ালেও বাংলাদেশীদের কাছে তিনি ছিলেন অপরিচিত এক মুখ যেন। কিন্তু তারণ্যের বিজয়ের মাঝে আমরা তার কার্যক্রম দেখার সুযোগ পেয়ে যাই।
অনেকের মাঝেই এই চিন্তা ভর করে কিভাবে তাকে রেখে দেয়া যায় আমাদের নেতা হিসাবে।

এরই মাঝে জুলাই বিপ্লবের সামনের সারির নেতা বর্তমানে যিনি নানা কারণে আলোচিত, সমালোচিত তিনি সারজিস আলম। তিনি তার মনের এক ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাকে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। মূহুর্তে ছড়িয়ে পরে তার এই ইচ্ছার কথা। এ যেন সমস্ত জাতির মনে কথা বলে ফেললেন সরসিজ আলম।
কিন্তু কি ভাবে সম্ভব? কেউ বলছেন, তিনি যেন আজীবন নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থেকে তার মেধাকে ঢেলে দেন বাংলাদেশ গঠনের কাজে। কিন্তু এভাবে নির্বাচন ছাড়া তাকে পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তিনি যে সময়ের কথা বলেছেন তিনি সেই সময়েই নির্বাচন দিবেন।
তাহলে? কোন উপায় কি নেই?
এক্ষেত্রে আমার কিছু ভাবনা শেয়ার করি।
তার কাছে যেতে হবে। বলতে হবে আগামী ছয় মাসের ভিতর কিংবা সম্ভব হলে আরও কম সময়ের ভিতর তাকে একটা বই লিখতে হবে, কেমন বাংলাদেশ তিনি চান এবং কিভাবে তিনি তা চান। বলা হয়ে থাকে এনসিপি তার আশীর্বাদপুষ্ট দল। আমরাও চাই তাই যেন হয়। এনসিপি এই পুস্তককে তাদের নিজদের দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসাবে ঘোষণা দিবে। এছাড়া নেতৃত্ব নির্বাচন কিভাবে হবে, দলের গঠনতন্ত্র কি রকম হবে তা ইউনুস স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হবে। এনসিপি তাদের দলের গঠনতন্ত্র সেভাবে গঠন করবে। এর মধ্যে যে সংস্কার করার কথা তা সকল রাজনৈতিক দল বা বেশিরভাগ দলের ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব পাস করিয়ে নেয়া হবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে।
তাহলে এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ হয়ে যাবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাধানের প্রদান হতে পদত্যাগ করবেন ইউনুস স্যার ও ছাত্রদের প্রতিনিধিরা। এই সরকারের মধ্যে হতে কিম্বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান মতে তিন মাসের জন্য একটি সরকার গঠিত হবে।
ইউনুস স্যারকে সরাসরি সামনে রেখে এনসিপি নির্বচনের প্রস্তুতি নিবেন।
স্যারকে আমরা যারা কয়েক বছরের জন্য রেখে দিতে চাই তারাও সুযোগ পাবে নিজেদের মেলে ধরতে। আশা করা যায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে।
এভাবে হয়ে উঠতে পারেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস স্যার এই জাতির অনন্য কর্ণধার।