ফারুক মোহাম্মদ ওমর এর সকল পোস্ট

ফারুক মোহাম্মদ ওমর সম্পর্কে

সত্ত্বার নাগরিকত্ব চাইতে গিয়ে দেখি পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। প্রার্থনার মতো একা তবু কেন মাথা তোলে দেয়াল? কারা দেয়াল বানায় পৃথিবীর বুকে,কারাই বা ভাঙে এই বাঁধা? দেয়াল তো আসলে মানুষেরই গল্প। লোহা, ইট আর পাথর দিয়ে লেখা। দেয়ালের ইতিহাসে সেঁটে থাকে আবেগ,রাজনীতি আর বাঁধা। আঠা ফুরিয়ে পোস্টারের মতো দেয়ালে ঝুলে থাকে ভয়, প্রতিরোধ, আত্মরক্ষা,অহমিকা অথবা অবিশ্বাসের গল্প। এখানে গদ্যের শরীরে কবিতার মন, জীবন এখানে স্মৃতি, মনে পড়াটাই ভ্রমণ। সমস্ত দেখাই যেন এক গভির অন্তদৃষ্টি। ধ্যানের মধ্যে পাওয়া এক একটি কবিতা যখন হয়ে ওঠে নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর অস্ত্র। তখন কবিতা হয়ে ওঠে উদ্ভাস।

inbound

এইবার নিমগ্ন হবো

এতোদিন নদী দেখেছি
এইবার সাগর দেখবো
দেখতে দেখতে জগৎ অপূর্ণ তবু মিথ্যা নয়।

আজীবন রাস্তা দেখেছি
এইবার পিচঢালা রাস্তার কালো রং দেখবো
কি শোকে শুষে নেয় সূর্যের তপ্ত আলো
আমি না হয় এইবার পড়ে নেবো ইট-পাথরের শক্ত খোলস।

এইবার না হয় ভিখারি হবো
প্রকৃত সন্যাসী হবো, গান গাইবো
উড়ে যাবে মেঘের দল,তলিয়ে দেখবো পথ
যদি পেয়ে যাই আরশের পথ, মায়ের দেহ পিঠে
আবার সাঁতরাবো, রুটি চাইবো, মাতৃভাষা জানবো,
মননের মন্ত্র জানবো বিশ্বজনহিতায়,

জানতে জানতে আমি আবার শব্দের মাঝে বেদনা খুঁজবো
ঘ্রাণের মধ্যে ব্যাকুলতা, দুঃখের তত্ত্ব খুঁজবো,
আকাশগঙ্গায় সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে ঘর করবো,

খুঁজতে খুঁজতে নিমগ্ন থাকবো নদী আর সাগরের রাস্তায়।

কাশফুলের গভীর গল্প

দুই শীতের মাঝখানে একটি পুরস্কার
আমার দিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাধি নিয়ে তাকিয়ে আছে
আমি কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা
মুর্মূষু শিশুটির মতো অসহায় হয়ে চেয়ে রইলাম।

বহু মানুষ সেদিন
সংক্ষিপ্ত আশ্বিনের আয়ু জানিয়ে
আমাকে বলেছিলো – উঠে এসো, ভিড়ে, চিৎকারে
এই যে এদিকে শব্দের যুদ্ধ ভেলায়।

আমি দুই শীতের মাঝখানে
কাশফুলের গভীর গল্পে
একমাত্র মায়েরই ডাক শুনতে পেলাম
ওই দিকে যাসনে বাবা ধর্মীয় দালালদের আড্ডাখানায়।

কে ভেবেছিলো

কে ভেবেছিলো আকাশটা ঘুরে দাঁড়াবে না
মুষলধারের বৃষ্টিকে ভেদ করে
ঘনকালো মেঘকে উপেক্ষা করে
বিদ্যুতের ধারাপাত কিম্বা মুহুর্মুহু দৈত্যকার গর্জনে!
কে ভেবেছিলো আকাশটা ঘুরে দাঁড়াবে না।

কে ভেবেছিলো এই ধূসর মাটি ঘুরে দাঁড়াবে না?
রিখটার স্কেলে উপচে পড়া সাগরের জল
মাটিকে গিলতে চেয়েছিলো যেদিন
থরথর করে কাঁপাছিলো সমস্ত সভ্যতা
মানুষের সাধ্যমত বাড়ী ঘর , তখন কে ভেবেছিলো
এই ধূসর মাটি আর ঘুরে দাঁড়াবে না।

আকাশের তো আছে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন বিশ্বাস
মাটির তো আছে পাহাড়ের মতো দৃঢ় স্থিরতা
তবু কে, কে ভেবেছিলো
এই ঝড়ো বাতাস ঘুরে দাঁড়াবে না
এই নদীমাতৃক স্রোত কূলে আসবে না
এই শুকনো অনাবাদী জমিনে আর ফসল ফলবে না।

এই শাষনতন্ত্রের বেসামাল আইন হাতে হাতে মৃত্যু পরোয়ানা
দু’হাতে সরিয়ে আজকের বর্তমান ভবিষ্যতে হাঁটবে না
কে ভেবেছিলো এই সভ্যতা, রাষ্ট্র, আমাদের স্বাধীনতা সম্ভ্রম,
মূল্যবোধের এজলাসে আর ঘুরে দাঁড়াবে না
বাংলাদেশ হাসবে না মুক্তির হাসি
জানি, আমি জানি একদিন এই মধ্যান্থের মলিন ফুল
ঘোমটা খুলে হাসবে সুন্দর সকালের হাসি।

স্বীকারোক্তি

তোমার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে
চাকরির অনুর্ধ ত্রিশ পেরিয়ে গেছে সেই কবে
শুধু যায়নি চিরস্থায়ী জিল্লতির সাম্পান।

কতটা তাচ্ছিল্যের সুর শুনেছি কেউ জানে না,
শুধু জানো তুমি, আমার জীবনসঙ্গী
আমি তোমার দ্বিতীয় স্বত্বা
এইটুকুই স্বীকারোক্তি প্রাপ্তি আমার।

কতজন চিড়েচ্যাপ্টা করেছে
কতজন ঠেলে দিয়েছে অস্থিরতায় অকারণ
কতোদিন নিঃশঙ্ক পৃথিবী হাতড়েছি
কেউ জানে না, জানো শুধু তুমি
এখন আর কোন সক্ষমতা নেই আবেদন করার
ত্রিশ পেরিয়ে গেছে সেই কবে
বুক ফাটার চড়াৎ চড়াৎ শব্দে, শুধু জানো তুমি।

এতো দিন প্রাণ খুলে বেচে গিয়েছি যে উদারতার সম্পদ
আজ তা ফিরিয়ে দেবার প্যাঁচে পড়েছে ঘটিরামের দল
দ্যাখো, আমার শরীরে দুই দিকে কথা বলা লোকের মতন
একটি অবিশ্বাসী জীবাণু কিভাবে মৃত্যু উল্লাস করছে ! দ্যাখো
তুমি ছিটিয়ে দাও জীবাণুনাশক পানি
আমি এখনই কমোডে ফ্লাশ করবো মৃত মানুষকে নিয়ে
উপহাস করা ধর্মতলার জারী গান।

আমিই তোমার দ্বিতীয় স্বত্বা
এইটুকুই স্বীকারোক্তি প্রাপ্তি আমার।

ডিজিটাল গোরস্থান

এই ফেসবুক একদিন ডিজিটাল গোরস্থান হবে
প্রতিদিন মৃত আত্মাগুলো ঘুরবে
প্রজন্মের ওয়ালে দেশ থেকে দেশান্তর ।

কতো রকম পোস্ট আসে এখানে
হাসি কান্নার একান্ত বিলাপ
আবার রাত পোহালেই রাষ্ট্রহীন কতো মানুষ
গণবহিষ্কারের অপেক্ষায় পার করছে সময়!

সময়টাও আজকাল বড় বেয়াড়া
বিশ্বাসকে হত্যা করে ইতিহাসে যারা কুখ্যাত
তারাই ফিরে এসেছে আবার
কেউ পৃথিবীর ফুসফুস পোড়াচ্ছে
কেউ রফতানি করছে সর্বত্র ভয়
কেউবা সহিংসতায় ঠেলে দিচ্ছে নাগরিকের জানমাল!

এসবে কি আর লাইক কমেন্ট করা যায়
লাগামহীন উৎপাতে ঘরছাড়া দেশহারা মানুষের ঢলে
আমি লগ ইন করে আছি,
এই ফেসবুক একদিন ডিজিটাল গোরস্থান হবে
প্রতিদিন মৃত আত্মাগুলো ঘুরবে
প্রজন্মের ওয়ালে দেশ থেকে দেশান্তর
পৃথিবী ধ্বংসের খেলায়
এই নীল গ্রহ একদিন মৃতদের বাজার হবে।

সাবস্ক্রাইব করে বেল বাজিয়ে দাও

সাবস্ক্রাইব করে বেল বাজিয়ে দাও

যদি ভালোবাসো
তবে সাবস্ক্রাইব করে বেল বাজিয়ে দাও!
তোমায় দেখাবো কতটা ফুলেছে পাস্তুরিত দুধের বেলুন।

কি ভাবছো! শুধু সাবস্ক্রাইব করবে ,বেল চাপবেনা!
একবার চেপেই দ্যাখো
তোমায় আপডেট দেব বুজুর্গদের বৈঠকখানায়
মৃত মুরগির জন্য কিভাবে বসে আছে একটি কুকুর !

মানব জনমের কী খবর
সেই কবে একটি ফল খেয়ে
মহাশূণ্যের অসীম আদম আলোকবর্ষ থেকে
উড়তে উড়তে টুপ করে পড়ে সৌরজগতের এই গ্রহে,
এরপর নগ্নতায় শুধু খুন গুমের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
প্রতি ব্রাউজে ব্রাউজে দৃশ্য দূষণ আর ধর্ষিত বাংলার মুখচ্ছবি।

যদি গুম গুজবের খবর চাও
তবে সাবস্ক্রাইব করে বেল বাজিয়ে দাও!

আকাশটা ছুঁড়ে মারো রাত্রির দিকে

আকাশটা ছুঁড়ে মারো রাত্রির দিকে

আকাশটা ছুঁড়ে মারো একবার রাত্রির দিকে!
শুঁকে দ্যাখো একবার
কত পোড়া পোড়া গন্ধ মিশে আছে
আকাশের গায়ে!
চেয়ে দ্যাখো একবার
কত ছোট ছোট ধূলিকণা মিশে আছে বাতাসের নিঃশ্বাসে!

কত মেঘ!
কত আবেগ!
কত জমা রাখে দুঃখবতী কষ্টের জল!

কত গল্প!
কত আকল্প বারুদের হাট!
কত না বলা কথা ডুবে যায় অথৈ অতল!

শুধু একবার আকাশটা ছুঁড়ে মারো রাত্রির দিকে!
কে বেশী কালো?
কে কাঁদে বেশী আজও গোপনে?
কে নিরুপায়!
কে অসহায় সময়ের কাছে !
কারা ছেড়ে গেছে নির্মল আলো
কারা ছেড়ে গেছে পথের সাথীকে!

তবু একবার ওই আকাশের হৃদয়টা দ্যাখো,
শুধু একবার,
কালো পাষাণ হিংসুটে রাত্রির চেয়ে
সে আজও কতটা উদার !

হালাল নাইট ক্লাব

চিবুকের কাছে ভীষণ অচেনা
এবং একা ঝুলে আছে এক বিস্ফোরক ছবি
যেন আমার সামনে উতপ্ত সেলফির
পদাঙ্ক অনুসরণ করছে এক ফলবতী নারী।

খোলস ছাড়ার অপেক্ষায়
পবিত্র হেফাজত কারীদের হ্যাশট্যাগে জেদ্দাডিসকো
নারীদের কদর্য ভাঁজের পেয়ালায়
ব্যালিড্যান্সের হিপহপ শিহরণে
পাগল করে দেয়া পুরুষের লালায়িত চোখ
বার ফুলে ওঠে ফুর্তির উচ্চারণ
হাজা আল লাইলু বারে হালাল
একশ পার্সেন্ট হালাল
একশ পার্সেন্ট হালাল নাইট ক্লাব।

আমার উতপ্ত আয়নায় কতিপয় খদ্দর
মুতা বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে
হালাল পতিতালয়ে বিচরণ করবে বলে,

আমি চিবুকের কাছে ভীষণ অচেনা এবং একা
এক নারীকে দেখলাম
স্বাধীনতার উত্তেজনায় জামা খুলে মারছে
পুরুষের নাকের ডগায়।

কুৎসিত সুন্দর

মাতৃগর্ভের অন্ধকার নেমে এসেছে
স্থবির বৃক্ষের মতো শব্দহীন
কি নিদারুন বিষাদে মানুষ মৃত্যুশাসিত চারপাশ
একাই বয়ে চলছে দৃশ্যমান রক্তস্রোত।

কেউ সুস্থ হচ্ছে আল্লাহর অলৌকিকতায়
কেউবা আত্মগরিমায়
বিকলাঙ্গ করছে শিল্পকলার হৃদয় ।

আমি উৎপীড়িত বলেই
তোমার চোখ এতো কুৎসিত সুন্দর !

লোকটি এখন

লোকটি পর্নগ্রাফি দেখতে দেখতে
দেখতে
দেখতে
ধার্মিক হয়ে গেল।

লোকটি এখন এক অদ্ভুত রকমের
বিবেকের দংশনে ভুগছেন
ভুগতে
ভুগতে
ভুগতে
ভুগতে
প্রচণ্ড ধার্মিক হয়ে যান ৷

লোকটি কাঠগোলাপের মায়ায়
পড়তে
পড়তে
পড়তে
পড়তে
পবিত্রতার উৎস খুঁজে পেল মৃত্যুহীন প্রাণের প্রতীক।

লোকটি এখন
সুদীর্ঘ সময়ের বিবর্তিত রূপে
খেলছে বংশবৃদ্ধির গুটিকলম।

আগুনমুখী বৈশাখ

সারাদিন উত্তর দক্ষিণ করে পশ্চিমের কথা
ভুলে গেছে মানুষ !
অথচ আগুনমুখী বৈশাখ দেখে
সমষ্টিগত অস্থির আমার মন ৷

আজকাল ঝড় ওড়াচ্ছে চারদিক
সকালের সোনারোদ তরতর করে
বেড়ে ওঠে যখন বুক বরাবর
আমি চাইতেই আকাশের মুখ অন্ধকার হয়ে যায়।

চলতি পথে একজন বললেন
এবার কালবৈশাখী একটু আগেই শুরু হয়ে গেলো !
আগুনের তাণ্ডব আর মারমুখী ঝড়ের শাসনে
গাড়ীগুলো দেখেন কেমন দাঁড়িয়ে আছে লাশের গল্প নিয়ে,

আমি মনের মুখোমুখি হই
লাল সাদা পোষাকের মহত্ত্বে দেশজুড়ে বর্ষবরণ,
শোভাযাত্রা,অগ্নীস্নান ,গরীব জনগোষ্ঠীর উপহাসি জীবন
ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, আরও কত কি!

পরদিন পত্রিকার শিরোনাম হয়ে সূর্য উঠবে চোখের পাতায়
নাচের তালে তালে গণধর্ষণ কিম্বা ছাত্রীর আগুনে ঝলসানো ছবি।

দূরে একদল নবধর্ষক নিলামে ওড়া্ছে বাঙালীর সম্ভ্রম ।

ফারুক মোহাম্মদ ওমর এর লিমেরিক

তোমার মনের ঠাঁই পুকুরে ওল্ডুপানি খেলি
নিত্য তোমায় পড়িয়ে দেবো হাসনা-হেনা বেলি
ফুল খেলাতেই মন
অবুজ সারাক্ষণ
হঠাৎ পথে থমকে দেখি সবই খামখেয়ালি।

লাবণ্য প্রতিক্ষায়

অনেকক্ষণ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে
শেষমেষ রণেভঙ্গ দিয়ে আকাশভাঙা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছি ৷

চারপাশে তখন বৃষ্টির ছলাৎ ছলাৎ উৎসব
শব্দেরা কথা বলছে,শব্দেরা হাসছে ,স্বপ্ন দেখাচ্ছে
আবার কিছু শব্দ দুমড়ে মুচড়ে
কেবল কাঁদছে দিশেহারা
এই যে এই শব্দটির কেউ নেই
একা চির একা খুঁজে ফেরে শাব্দিক মায়া !

একটা জীবন একটি কবিতার মতোই সুন্দর
কখনো অসভ্যের তকমায় ছুটে চলা শব্দের মায়াজাল
হয়ে যায় একেকটি কবিতা
কবিতা কখনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করে
বৌ-বাচ্চা নিয়ে সাজানো সংসারের মতন
কখনো মৃত্যুর চেয়ে অনেক বড় স্বৈরাচরের বিরুদ্ধে কথা বলা
বুলেট বেয়নেট বুট, টিয়ারশেলের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে ওঠা।

আমি হাঁটছি ঘোমটা পড়া বেগুণী মায়ায়
বৃষ্টিতে ছুটে চলা
একটি মেয়েকে দেখলাম
এক জলপাই সবুজ পাঞ্জাবী পড়া ছেলের সঙ্গে
রিক্সার হুড ফেলে ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে মিলিয়ে গেল!

আমি লাবণ্য প্রতিক্ষায়
সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম।

আগুনে না হয় এক্সিডেন্টে মরবো …

মৃত্যুর মিছিল নিয়ে গুম গুম শব্দে
আমাদের সামনে হাজির হলো ভয়ংকরের জাগরণ !
এরই মাঝে জন্মেছি বাংলাদেশ
হয়তো আগুনে পুড়বো
নয়তো মরবো রোড এক্সিডেন্টে ।

লোহাগাড়া থেকে বনানী অব্যাহত মৃত্যুর খবর
মানুষের বাঁচার আকুতি আর অসহায় করুণ চাহুনি
বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার
হৃদয়কে ভেদ করে যায় বন্ধু
আমি এরি মাঝে জন্মেছি বাংলাদেশ
হয়তো আগুনে পুড়বো
নয়তো মরবো রোড এক্সিডেন্টে ।

উৎসুক জনতার হাতে
মোবাইল ছিলো সেলফিতে আসক্ত
কেউবা নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য
তৈরি করবে কনটেন্ট
লক্ষ লক্ষ ভিউ হবে,পাবে সিলভার প্লে বাটন,
গোল্ড প্লে বাটন
তুমি মনিটরিং করতে করতে
পঁচিশটি তাজা প্রাণ ঢলে পড়লো আগুনের বিছানায়,
প্রকাশ করলে গভির শোক
আমি এরই মাঝে জন্মেছি বাংলাদেশ
হয়তো আগুনে পুড়বো
নয়তো মরবো রোড এক্সিডেন্টে ।

আজকরে দিনটা একটি অপয়া দিন
শুধু মৃত্যুর সংবাদ ভেসে আসছে কানে
টিভিস্ক্রলে পত্রিকার পাতায়, সড়ক দূর্ঘটনায় বিশজন
ছাদ থেকে পড়ে , ছুরিকাঘাতে
আহা দেশ ! মাতৃভূমি আমিতো এরই মাঝে জন্মেছি।

নিদারুণ নিষ্ঠর এই অঙ্কের যোগফল সাতচল্লিশ
হয়তো পুড়বো আগুনে
নয়তো মরবো রোড এক্সিডেন্টে
আমি এরই মাঝে জন্মেছি প্রিয় বাংলাদেশ।

সৈয়দ আলী আহসান জীবন ও কর্ম

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম সৈয়দ আলী আহসান। জাতীয় অধ্যাপকে ভূষিত সৈয়দ আলী আহসান একাধারে কবি, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য ও শিল্প সমালোচক, বুদ্ধিজীবী, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সম্পাদক ও অনুবাদক ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই গুণীজন ১৯২২সালের ২৬শে মার্চ মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার আরমানিটোলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কবি সৈয়দ আলী আহসান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ছিলেন এবং সে সময় তিনি ‘চেনাকণ্ঠ’ ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।

সৈয়দ আলী আহসান কর্ম জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, করাচি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এর ভিসি ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। কবি সৈয়দ আলী আহসান নোবেল সাহিত্য কমিটির ও বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।

তিনি শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, অনুবাদ সাহিত্য, সাহিত্য সমালোচনা, আত্মজীবনী, সাহিত্যের ইতিহাস ও ইসলাম সম্পর্কিত বইসহ শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- অনেক আকাশ, একক সন্ধ্যায় বসন্ত, সহসা সচকিত, কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, স্রােতবাহী নদী, যখন সময় এলো, রবীন্দ্র কাব্য পাঠ, পদ্মাবতী, আল্লাহ আমার প্রভু, মহানবী, শিল্পবোধ ও শিল্প চৈতন্য, চর্যাগীতিকা, আমার পছন্দ দেশ-বিদেশের রান্না, আমেরিকা আমার কিছু কথা, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি। সৈয়দ আলী আহসানের কবিতা আমরা পড়ি না, যেন কেবল কিছু শব্দের আওয়াজ শুনি, তন্ময় হয়ে শুনি আর অনুভব করি সমগ্র সত্তা দিয়ে, কবি যখন এভাবে বলেন :

আমার পূর্ব বাঙলা বর্ষার অন্ধকারের
অনুরাগ
শরীর ছুঁয়ে যাওয়া
সিক্ত নীলাম্বরী
নিকুঞ্জের তমাল কনক লতায় ঘেরা
কবরী এলো করে আকাশ দেখার
মুহূর্ত
অশেষ অনুভূতি নিয়ে
পুলকিত সচ্ছলতা
এক সময় সূর্যকে ঢেকে
অনেক মেঘের পালক
রাশি রাশি ধান মাটি আর পানির
যেমন নিশ্চেতন করা গন্ধ
কত দশা বিরহিনীর-এক দুই তিন

উচ্চারণ কাব্যগ্রন্থের ৩৪ নম্বর কবিতাটি পাঠক লক্ষ করুন:
তোমাকে আমার শস্যক্ষেত্র
করবো ভেবেছিলাম
যেখানে প্রথম মানুষের
আনন্দকে বপন করবো
আমার দেহের উজ্জ্বল হাসিতে
তোমার শস্যভূমি নাচবে।
তোমার সুগন্ধ কেশ থেকে
সূর্যকণা ঝরে পড়তো।
কিন্তু কেন তুমি হঠাৎ ছায়া ফেলবে?
এবং আমাকে
মৃতদেহের মতো বরফের পাথর করলে?
এরপর তুমি যখন
আমার সন্ধান করবে,
তখন আমার কবরের মধ্যে
মাথা রাখবার জন্য
একটি শুকনো হাড় পাবে,
যা একদিন আমার বাহু ছিলো।

সৈয়দ আলী আহসান মানুষ ও তার জীবনকে দেখেছেন অত্যন্ত সূক্ষ্ম চোখে। তার চোখ বড় তীক্ষণ, যা সহজেই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ফুঁড়ে অনন্তে পৌঁছে যায়।
জীবনকে পাঠ করেছেন তিনি নানা আলোয়, নানা আঙ্গিনায়, যে কারণে জীবন ও জগতের ঘটে যাওয়া নানা ট্র্যাজেডিও তার কবিতায় শিল্পের আকার ধারণ করে।

তার সফল কবিতাগুলোর একটি সমুদ্রেই যাবো কাব্যগ্রন্থের ‘উরিরচর’। কবি যখন এভাবে বলেন:

রাত্রিতে হারিকেন জ্বালিয়ে তারা শুয়েছিলো
শোবার আগে হেসেছিল এবং প্রদীপের শিখা
বাতাসের গান স্মরণ করেছিলো। কি করে
অন্ধকার হতে হয় রাত্রি তা জানতো এবং
বনভূমি জানতো কি করে রহস্যময় হতে হয়।
এবং ঘুমুতে যাবার আগে মানুষগুলো জানতো
কি করে গায়ে চাদর টেনে দিতে হয়।

কবি সৈয়দ আলী আহসান সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। এই খ্যাতিমান সাহিত্যিক ২০০২ সালের ২৫শে জুলাই ইন্তেকাল করেন।