নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার বিপরীতে কিছু কথ্য শব্দ

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী একে অপরের সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার সময় কিছু কথ্য শব্দের ব্যবহার করে থাকি। যেমন: কী খাইবেন? জবাবে বলে–কী আর খামু টামুরে ভাই, মনডা বেশি ভালা না। এখানে ‘খাবো’ শুদ্ধ ভাষা। ‘খামু’ নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা। আবার ‘খামু’র বিপরীত শব্দের ঘেঁষা শব্দ ‘টামু’। যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে এমন কিছু বিপরীত শব্দের ঘেঁষা শব্দ দেখানো হলো–

বাবা-টাবা, জেডা-জুডা, আমি-টামি, তুমি-তামি,
কাকা-কুকা, ভাই-টাই, বইন-টইন, মামী-টামি।

ছেলে-টেলে, মায়ে-টেয়ে, মাইয়া-টাইয়া, পোলা-টোলা,
বউ-টউ, জামাই-টামাই, শ্বাশুড়ি-মাশুড়ি, ঝোলা-মোলা।

দুলা-মুলা, দুলাভাই-টুলাভাই, খালত ভাই-খুলত ভাই,
হাউড়ি-মাউড়ি, জিয়ারি-টিয়ারি, বেয়াই-টেয়াই, খাই-দাই।

খাইতাম-খুইতাম, খামু-টামু, যামু-টামু, গেছে-গুছে,
নাইচ-টাইচ, কাঁতা-মুতা, বালিশ-টালিশ, পাছে-পুছে।

জোতা-টোতা, মুজা-টুজা, ভাত-ভুত, তরকারি-মরকারি,
ঝোল-টোল, বত্তা-বুত্তা, জলে-জুলে, মশারি-টোশারি।

ডাইল-ডুইল, কুত্তা-মুত্তা, বিলাই-টিলাই, হলে-টলে,
বল-বুল, মাডে-মুডে, কাপড়-টাপড়, কলে-টলে।

উপ্রে-টুপ্রে, নিচে-নুচে, আগে-টাগে, পাতাইল্লা-পুতাইল্লা,
কালা-টালা, বেয়াই-টেয়াই, লেবু-টেবু, ফতুল্লা-মতুল্লা

ছাগল-টাগল বা ছাগল-ছুগল, গরু-টরু, হরি-টরি,
জিলাপি-টিলাপি, মিষ্টি-মুষ্টি, মালাই-টালাই, পুরি-টুরি।

আম-টাম, লেচু-টেচু, বেগুন-টেগুন, উস্তা-মুস্তা,
আলু-মালু, ভূত-মুত, গেলাস-টেলাস, বস্তা-বুস্তা।

গেলাস-টেলাস, পেলেট-পুলেট, বাসন-টাসন,
স্নান-টান, বিস্কুট-মিস্কুক, কলা-টলা, ভাষণ-টাষণ।

রাগে-মাগে, চেয়ার-টেয়ার, মদ-মুদ, গাজা-গুজা,
হালা-টালা, হালি-হুলি, বউ-টউ, পূজা-টুজা।

জামাই-জুমাই, কপি-টপি, ময়লা-টুয়লা,আগুন-টাগুন,
সিঙ্গাড়া-টিঙ্গাড়া, শাক-টাক, বাঘে-টাঘে, বাগুন-টাহুন।

হাগ-টাগ-(শাক), করি-টরি, ধরি-টরি, কপি-টপি,
চাইল-টাইল, মাছ-মুছ, ডাইল-ডুইল, টুপি-মুপি।

হুটকি-টুটকি( শুঁটকি) কলা-মলা, আপেল-টাফেল,
খাওন-টাওন, পানি-টানি, পড়া-টরা, রাইফেল-টাইফেল।

পোলাও-মোলাও, মুরগী-টুরগী, মাছ-মুছ, পাতা-পুতা,
বিরানি-টিরানি, গোস্ত-মোস্ত, গলা-টলা, ছুতা-মুতা।

এমনভাবে একে অপরের সাথে বা নিজে নিজেও অনেকেই যার যার আঞ্চলিক ভাষায় শব্দের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে থাকে। এর কারণ কী? আমি মনে করি এটা একরকম যার যার আঞ্চলিকতার অভ্যাস!

শহুরে জীবন

শহুরে জীবন থাকে চারদিক ঠাসা,
উঁচু উঁচু দালান, গিজ-গিজে বাসা!
দালানের ফাঁকে থাকে পাখিদের বাসা,
মানুষের মতো ওঁদেরও বাঁচার আশা!

সরু রেললাইন নিঃশব্দে পথ চলা,
পাশের বস্তিঘরে থাকে ক্ষুধার জ্বালা!
শহরের বুকে রাজপথ সৌন্দর্যমণ্ডিত,
হেঁটে যায় লোক শিক্ষিত অশিক্ষিত!

রাস্তার পাশে ফুটপাত, দখলে হকার;
তাঁদেরই সব, বলার সাধ্য নেই জনতার!
শহরের পাশে নদীতেও দূষিত পানি,
পানে অযোগ্য, তবুও বাঁচায় জীবন খানি!

শহরময় মলার স্তুপ, জনজীবন শেষ;
দূষিত আকাশ-বাতাস দূষিত পরিবেশ!
শহরবাসী নিরুপায় উচ্ছৃঙ্খল দৈত্যের কাছে,
শহর কর্তাও হেরে যায় তাঁদেরই কাছে!

শহুরে জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে,
কেউ আছে সুখে কেউ আছে দুখে!
নদীও চলছে নিরবধি, চলছে জীবন;
এভাবেই চলবে, জীবন থাকবে যতক্ষণ।

পৃথিবীটা গোল

সত্যি এই সুন্দর পৃথিবীটা গোল!
তাইতো দেখছি সবখানে এতো গণ্ডগোল!
জাগায় জাগায় লেগে আছে হট্টগোল!
দেশ জুড়ে শুনি দুর্নীতিবাজদের শোরগোল!

গোল না হয়ে যদি হতো চারকোণা
তাহলেই মানুষের কান্না শোনা যেতো না
ধর্ষণ বলাৎকারের মতো ঘটনা ঘটতো না
দুর্নীতিবাজরা লুটপাট করতে পারতো না!

দুনিয়ার সবাই চোর

গানে আছে, দুনিয়ার সকলেই চোর।
কেউ স্বীকার করে না আমি নিজে চোর।
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মন চোর, কেউ দিল চোর,
কেই টাকা চোর, কেউ পয়সা চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ কাঁথা চোর, কেউ বালিশ চোর,
কেউ পর্দা চোর, কেউ ব্যাংক চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ জামা চোর, কেউ জুতা চোর,
কেউ মোজা চোর, কেউ হাঁস চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মুরগী চোর, কেউ গরু চোর,
কেউ ছাগল চোর, কেউ গাড়ি চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ বাড়ি চোর, কেউ রিকশা চোর,
কেউ ভ্যান চোর, কেউ সিএনজি চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ অটোরিকশা চোর, কেউ বিমান চোর,
কেউ নৌকা চোর, কেউ জাহাজ চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ অস্ত্র চোর, কেউ বস্ত্র চোর,
কেউ সোনা চোর, কেউ রুপা চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মাছ চোর, কেউ সবজি চোর,
কেউ লাউ চোর, কেউ কুমড়া চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ আলু চোর, কেউ পটল চোর,
কেউ ত্রাণসামগ্রী চোর, কেউ ত্রাণের চাল চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ রিলিফ চোর, কেউ সাহায্যের টাকা চোর,
কেউ বড় চোর, কেউ ছোট চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ তেল চোর, কেউ বেল চোর,
কেউ কাজ চোর, কেউ জাত চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ ছিঁচকে চোর, কেউ মাপে চোর,
কেউ ব্যালট চোর, কেউ ভোট চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মোবাইল চোর, কেউ ল্যাপটপ চোর,
কেউ ঘড়ি চোর, কেউ বড়ি চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মাটি চোর, কেউ বাটি চোর,
কেউ রড চোর, কেউ সিমেন্ট চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ মেয়ে চোর, কেউ ছেলে চোর,
কেউ বউ চোর, কেউ শালি চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ প্রেমিকা চোর, কেউ নায়িকা চোর,
কেউ দেশ চোর, কেউ রাজ্য চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ আসন চোর, কেউ বাসন চোর,
কেউ লেখা চোর, কেউ কবিতা চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

কেউ ঔষধ চোর, কেউ নমুনা পরীক্ষা চোর,
কেউ নামী চোর, কেউ দামী চোর,
চোর, চোর, দুনিয়ার সবাই চোর!
কে বলে রে কাকে চোর?
যে বলে সে-ও চোর!

নিতাই বাবু
২৩/০৭/২০২০ খ্রী:

করোনা যুদ্ধে আমারও মৃত্যু হতে পারে–তাই ক্ষমাপ্রার্থী

একসময় যুদ্ধ হতো ঢাল, তলোয়ার, বল্লম, আর আগুনের গোল্লা নিক্ষেপ করে। এরপর মানুষ বারুদ তৈরি করা শিখলো। তারপর শিখলো বিশালাকৃতির কামান তৈরি করা। সম্মুখ যুদ্ধে চলতো ঢাল- তলোয়ারের ঝনঝনানি, আর বল্লমের খোঁচা। দূর থেকে নিক্ষেপ করা হতো কামানের গোলা। কামানগুলো ছিল তখনকার সময়ের দা-কুড়াল বল্লম বানানো কামার দিয়ে। সেই কামানগুলো দেখতে হুবহু কলাগাছের মতো দেখা যেতো। এসব যুদ্ধ কেবলি মোগল সাম্রাজ্যের সময়ই বেশি ছিল।

এরপর শুরু হলো মানুষ মারার অত্যাধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রের আবিস্কার। রাইফেল, এলএমজি, পিস্তল, ট্রাঙ্ক ও আকাশ থেকে আকাশে, ভূমি থেকে ভূমিতে মারার স্কাট ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানবিধ্বংসী কামান-সহ সামরিক যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ। এখনো যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য বিশ্বের অনেক দেশ অনেকরকম মারণাস্ত্র তৈরি করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে।

পৃথিবীর অনেক দেশই নিজ নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য গোলাবারুদ, কামান, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ অনেককিছু প্রস্তুত করে রেখেছে। যাতে অন্য দেশের আক্রমণ থেকে নিজের দেশের মানুষ এবং দেশের সম্পদ তথা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায়। এতে কিন্তু অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়। জান-মাল, অর্থনীতি-সহ কয়েকটা দেশ কয়েক দিনের মধ্যেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তবুও ক্ষমতার লড়াই থেমে নেই। প্রাচীনকাল থেকে এ-পর্যন্ত লড়াই চলছেই চলছে। সভ্যতার শুরু থেকে যেসব যুদ্ধ এই পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে, সব যুদ্ধই সৃষ্টি হয়েছে কোনো-না-কোনও মানুষের হিংসাত্মক মনোভাব থেকে।

তারপরও বলা যায় যে, মহান স্রষ্টার এই পৃথিবীতে যা-কিছু ঘটে; সেই ঘটনায় স্রষ্টার ইশারা ইঙ্গিতও কিছু-না-কিছু থাকে। কথায় আছে, “মহান স্রষ্টার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না।” তা-ই যদি হয়, তাহলে মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারা ছাড়া মানুষের একক মতে কিছুতেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারেনি। নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা যুদ্ধগুলোই এযাবতকাল পর্যন্ত এই পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছিল। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া আলো-বাতাস-সহ সবই অচল। সচল করার কারোর সাধ্য নেই।

ইদানিংকালে সারাবিশ্বে দেখা দিয়েছে এক প্রাণঘাতী যুদ্ধ। এই যুদ্ধ মনে হয় ঘটে যাওয়া সেসব যুদ্ধ থেকে খুবই ভয়াবহ এবং নির্মম ভয়ংকর হতে যাচ্ছে। মনে হয় মহান স্রষ্টা সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করার পরেই এই যুদ্ধ সংঘটিত হবার দিনতারিখ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তাই পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বিশ্বে সংঘটিত হওয়া সব যুদ্ধের পর এই যুদ্ধটা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের শেষদিকে। মানুষে এই যুদ্ধটার নাম দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। বর্তমান যুগে এই যুদ্ধের ভাব-নমুনা দেখে মনে হয় এই যুদ্ধটা মহান সৃষ্টিকর্তা নিজেই যেন পরিচালনা করছেন। তাই এই যুদ্ধে কোনও সৈনিক বা সৈন্য নেই। এই যুদ্ধের যোদ্ধা চোখে দেখা যায় না। এই যুদ্ধে কোনও অস্ত্র-সস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, ট্যাংক, কামান, স্কাট ক্ষেপণাস্ত্র, রাইফেল, পিস্তল কিছুরই দরকার হচ্ছে না। যুদ্ধের যোদ্ধাও শুধু একজনই। যাঁর নাম করোনাভাইরাস। এটি দেখা দিয়েছে একরকম প্রাণঘাতী রোগের রূপধারণ করে। এই রোগের নাম নভেল কোরনাভাইরাস, সংক্ষেপে কোভিড-১৯।

সভ্যতার শুরু থেকে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেসব যুদ্ধে কয়েকটা দেশ পক্ষে বিপক্ষে থাকতো। একদেশ অন্য দেশকে আক্রমণ করতো। আবার এক দেশ আরেক দেশকে অস্ত্র-সস্ত্র-সহ বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করতো। কিন্তু এই করোনা যুদ্ধে কোনও পক্ষ বিপক্ষ নেই। এটি গণচীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে আবির্ভাব হয়ে আস্তে আস্তে সারাবিশ্বকে একাই আক্রমণ করে ফেলেছে।

এই যুদ্ধে সারাবিশ্বে ২০ জুলাই, ২০২০ইং এপর্যন্ত–
আহত সংখ্যা; ১,৪৬,০৮,৫১৭ জন।
যুদ্ধাহত হয়ে সুস্থ সংখ্যা; ৮২,০১,৫১৬ জন।
যুদ্ধে মৃত্যু সংখ্যা; ৬,০৮,৪৮৭ জন।

এই যুদ্ধে বাংলাদেশে ২০জুলাই, ২০২০ইং এপর্যন্ত–
আহত সংখ্যা; ২,০৭,৪৫৩ জন
যুদ্ধাহত হয়ে সুস্থ সংখ্যা; ১,১৩,৫৫৬ জন।
যুদ্ধে মৃত্যু সংখ্যা; ২,৬৬৮ জন।

এতো আহত নিহত হবার পরও এই যুদ্ধ এখনো বিরামহীনভাবে আমাদের দেশ-সহ সারা পৃথিবীতে আক্রমণ করা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আহত নিহত হচ্ছেই। তবুও এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও বিজ্ঞানী এই করোনা যুদ্ধ প্রতিহত করার মতো কোনও অস্ত্র, গোলাবারুদ বা ভ্যাক্সিন তৈরি করতে পারেনি। আর পারবে বলেও তেমন কোনও আবাস পাওয়া যাচ্ছে না।

এর কারণ বলতে মনে হয়, মহান সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির উপর বড়ই ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি এই পৃথিবীতে জীবের সেরা জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টির পর থেকে কিছুতেই বশ করতে পারছে না। সভ্যতার শুরু থেকে মানবজাতি দিনদিন অসভ্য উশৃংখল হয়ে দানবে রুপান্তরিত হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে জীবের সেরা মানব যা করছে, বনের পশুজাত প্রাণীরাও তা করছে না। বনের পশুজাত প্রাণীগুলো যা করে, তাও একটু ভেবেচিন্তে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণে রেখে করে। অথচ জীবের সেরা মানুষগুলো যে-কোনো কাজ করার আগে মহান সৃষ্টিকর্তাকে একটু স্মরণ করে না, ভাবেও না। তিনি যে মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, তা এই পৃথিবীর মানুষগুলো বুঝেও বুঝে না।

তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা জীবের জন্য গাছে দিয়েছেন ফল, নদীতে দিয়েছেন জল। মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায় মুহূর্তে এই পৃথিবী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। যেমন– সুনামি, ভূকম্পন, ঝড়তুফান, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা। এগুলো স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তারই ক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ। তাই চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র সবসময়ই মহান সৃষ্টিকর্তার মহিমা কীর্তন করে এবং তাঁর আদেশনির্দেশাদি মেনে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এপর্যন্ত জীবের পাপপুণ্যের হিসাব না করে সবার জন্য সমানভাবে বিতরণ বিচরণ করে যাচ্ছে।

আর আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি জীবের সেরা উপাধি পেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশনির্দেশাদি মেনে চলা তো দূরের কথা, আমরা সবসময়ই একে অপরের ক্ষতিসাধন করছি। হিংসা করছি, অহংকার করছি। একে মারছি, ওঁকে মারছি। তিনি যে একজন অদৃশ্য শক্তি হয়ে আমাদের সাথে সবসময়ই আছেন, তা-ও আমরা ভুলেও মনে করি না। আমরা মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করার জন্য সবসময় লিপ্ত থাকি। নিজের স্বার্থের জন্য নিজের গর্ভধারিণী মা-বাবাকেও হত্যা করে ফেলি।

শুধু তা-ই নয়, নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিতে গিয়ে ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ ভেঙে ফেলি। কেউ মন্দির ভেঙে ফেলি। কেউ ভেঙে ফেলি গির্জা। মানুষ হয়ে মানুষ মারার জন্য তৈরি করি মারণাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, রাসায়ানিক অস্ত্র। জায়গায় জায়গায় মায়ের জাতি নারীদের করি হেস্ত-নেস্ত। রাস্তাঘাটে মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে করি টানা-টানি। আমরা নিজের আখের গোছানোর জন্য কেউ সাজি ঘুষখোর, কেউ সাজি সুদখোর। ক্ষমতার চেয়ারে বসে করি দুর্নীতি। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য করি কতরকমের কারচুপি। আমরা যেন মহান সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বড় বিজ্ঞানী হয়ে গেছি। যুগযুগ ধরে আমরা যেন বেসামাল হয়ে গেছি। আমারা নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য পাপে হয়ে গেছি জর্জরিত।

এসব দেখে মনে হয় মহান সৃষ্টিকর্তা আর ঠিক থাকতে পারছিলেন না। তাই তিনি তাঁরই সৃষ্টি সুন্দর পৃথিবীতে এই করোনা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন। হতে পারে এই যুদ্ধই হবে মহান সৃষ্টিকর্তার শেষ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কে বাঁচি আর কে মরি তাঁর কোনও ঠিক নেই। শুনেছি মহান সৃষ্টিকর্তা মানবের জন্ম, বিবাহ, মৃত্যু, আর রিজিক নিজেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই যাঁর যেখানে জন্ম হবার সে সেখানেই জন্ম হচ্ছে। যাঁর যেখানে যাঁর সাথে বিবাহ হবার সেভাবেই হচ্ছে। যাঁর মৃত্যু যেখানে যেভাবে হবার সে সেভাবে সেখানেই মৃত্যুবরণ করছে। যাঁর আহার যেখানে যাঁর উপর বর্ধিত করে রেখেছেন, সে সেভাবেই খাচ্ছে, চলছে।

তাই ভাবি, যদি মহান সৃষ্টিকর্তা এই করোনা যুদ্ধে আমার মৃত্যু নির্ধারণ করে রাখেন, তাহলে তো আমি নিজেও এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করতে পারি। কারণ আমিও একজন গণ্ডমূর্খ, অজ্ঞানী, মহাপাপী। তাই যেকোনো সময় এই করোনা যুদ্ধে আমার মৃত্যু অনিবার্য । সেই সময়টা হয়তো বেশি আর বাকি নেই। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তার করোনা যোদ্ধা এখন আমাদের সকলের চোখের আড়ালে আবডালে অনেকের সাথেই ঘোরা-ফেরা করছে।

এই যোদ্ধাকে কারোর চেনার উপায় নেই। কার কাঁধের উপর যে এই প্রাণঘাতী করোনা যোদ্ধা বসে আছে, তা-ও বলা মুশকিল! কোন সময় যে এই প্রাণঘাতী করোনা যোদ্ধা অপরের কাঁধ থেকে উড়ে এসে আমার কাঁধে চড়ে বসে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর এই করোনা যুদ্ধ মনে হয় শীঘ্রই শেষ হচ্ছে না। কবে নাগাদ এই প্রাণঘাতী করোনা যুদ্ধ শেষ হয়, তা একমাত্র যুদ্ধ ঘোষণাকারী মহান সৃষ্টিকর্তাই জানেন।তাই সময় থাকতেই আমি সকলের কাচ্ছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যদি নিজের অজান্তে কারোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আমি মৃত্যুর মিছিলে

এই মৃত্যুর মিছিলে আমিও আছি,
আছে আমার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন।
আমার পূর্বপুরুষেরাও ছিল মৃত্যুর মিছিলে,
ছিল জ্ঞানীগুণী, ফকির, সাধু, অলিগণ।

মৃত্যুর মিছিলে ছিল সন্ন্যাসী, দরবেশ,
ছিল রাজা, বাদশা, মন্ত্রী, মিনিস্টার;
জীবের জীবন মৃত্যুতেই হবে শেষ!
এটাই নিয়ম, কেউ করেনি অস্বীকার!

মৃত্যুর মিছিলে ধ্বনিত হয় বাঁচতে চাই!
এই মিছিলে শ্লোগান দেয়না মরতে চাই!
বিধাতা বলে নিয়ম খণ্ডনের বিধান নাই!
জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত, এরচেয়ে সত্য নাই।

ছবি গুগল থেকে।

আমি হিংসুক আমিই অহংকারী

আমি যখন দিনের শেষে সূর্যাস্তের আগে একা একা কোনো এক পথে হেঁটে চলি, আর যদি সূর্যাস্তের দৃশ্যটা চোখে পড়ে; তখন নিজের শেষ সময়ের কথাই ভাবতে ভাবতে পথ চলি। আর সূর্যটাকে বলি তুমি আজকের মতো আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছ ঠিক, রাত শেষে আবার আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটি আলোকিত করতে নিশ্চয়ই পূর্বাকাশে উদিত হবে। আবার এই পৃথিবীর সবকিছু তোমার আলোতে আলোকিত করে রাখবে। কিন্তু আমার জীবনটাও তো সূর্যের মতো একদিন-না-একদিন অস্ত যাবে। তাহলে সেটাই কি হবে আমার জীবনের শেষ অস্ত যাওয়? মনে তা-ই। কারণ আমি তো হিংসুক। আমি অহংকারী। তাই আমি আর সূর্যের মতো উদিত হতে পারবো না। কারণ, আমি মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশাদি মানছি না, তাই। আমি আমার মনগড়া নীতিতেই চলছি।

আর চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্রে মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশাদি মেনে চলেছে। চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশের একটুও হেরফের করছে না। কে পাপী আর কে তাপী, কে ধর্মী কে বিধর্মী সেই দিকে চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র ফেরে তাকাচ্ছে না। সবার জন্যই সমানভাবে বিতরণ করে যাচ্ছে। চন্দ্র-সূর্যের কাছে সবাই সমান।

আর আমি চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্রের মতো হিংসা অহংকার না করে, আর ভেদা-ভেদ না করে চলতেই পারছি না! অথচ আমি মহান সৃষ্টিকর্তার জীবের সেরা জীব মানুষ। শুধু জীবের সেরা জীবের জন্যই মহান সৃষ্টিকর্তা চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আলো-আঁধা, পাহার-পর্বত, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগ, গাছ-পালা, জীবজন্তু, পশু-পাখি, খাদ্য-শস্য ফুল-ফল-মূল, আকাশ-বাতাস, ঝড়তু-ফান, আগুন-পানি সবকিছুই জীবের সেরা জীবের উপকারের চিন্তা করেই সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি গাছে দিয়েছেন ফল, নদীতে রেখেছেন জল। একটা গাছের ফল সবার জন্য যেমন সমান থাকে, একটা নদীর জলও সবার জন্য সমান থাকে। গাছ নিজের জন্য ফল জন্মায় না। যা জন্মা, তা জীবকুলের জন্য জন্মায়। পৃথিবীতে এমনও খাদ্যশস্যের গাছ আছে, সেসব গাছগুলো ফল জন্ম দিয়ে ফল পাকা মাত্রই গাছ মৃত্যুবরণ করে। যেমন– ধানের গাছ ও কলা গাছ সেসব গাছের মধ্যে অন্যতম এক উদাহরণ।

ধান খেতে ধান হলে, ধানগাছ কখনো বলে না যে, এই ধান পাপীরা খেতে পারবে না। আর কলাগাছে কলা জন্মালে কলাগাছ কখনো বনে না যে, আমার এই কলা পাপী-তাপীরা খেতে পারবে না। গাছেরা ফল জন্মায় সবার জন্য। নদী কখনো বলে না যে, আমার পানি পাপী-তাপীরা ছুঁতে পারবে না। সূর্য কখনো বলে না যে, আমি পাপী-তাপীদের আলো দিবো না। পাপীদের জন্য থাকবে সবসময় রাতের আঁধার। সূর্যের আলো সবার জন্য সমান। চাঁদও কখনো বলে না যে, আমার জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো শুধু তাঁদের জন্য, যাঁরা পাপ করেনি। যাঁরা পাপী, তাঁদের জন্য থাকবে আমার আমাবস্যার অন্ধকার! কিন্তু না, চাঁদের আলো সবার জন্যই সমান। আর আমি! আমি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে পাপকে ঘৃণা না করে পাপীকে ঘৃণা করছি। আর প্রতিদিন নিজেই পাপ কাজে জড়িত থাকছি। কে ধর্মী কে বিধর্মী, তা নিয়েও বিরোধ সৃষ্টি করছি। মানুষের পাপপুণ্যের বিচার আমি নিজেই করছি।

ইশ! চন্দ্র-সূর্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যদি আমার মতো কোনও মানুষের হাতে থাকতো, তাহলে দেখা যেতো কে-কে আলো পাচ্ছে, আর কে-কে আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই আলো বন্টন করা হতো ঘুষের বিনিময়ে। আলো বিতরণ করা হতো ক্ষমতাসীনদের মনোমত। আলো বিতরণ করা হতো পাপী-তাপী দেখে। যাঁদের একটু আধটু দোষ থাকতো, তাঁরাই সূর্যের আলো, চাঁদের কিরণ থেকে বঞ্চিত হতো। যেমনটা হয় দেশে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সরকারের দেওয়া রিলিফ নিয়ে। সরকারি চাকরির নিয়োগ নিয়ে। সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। ক্ষমতার জোরে এ-কে মারে, ও-কে মারে। এটা করে, ওটা করে। আমিও তো একজন মানুষ! যদি চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে থাকতো, তাহলে মনে হয় আমিও পাপী-তাপী দেখেই আলো বিতরণ করতাম। পাপীকে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত করতাম। তাপীকে চাঁদের কিরণ থেকে বঞ্চিত করতাম। বিধর্মীদের সারাজীবন আমাবস্যার অন্ধকার দিয়ে রাখতাম। কারণ ঐযে, আমি মানুষ! আমি হিংসুক। আমি অহংকারী তাই।

শক্তের ভক্ত

শক্তের ভক্ত বেশি
নরমের কম
জ্ঞানীর ভক্ত নাই
থাকে শুধু যম!

মুর্খের কথা বেশি
শিক্ষিতের কম
শিক্ষিত কয়না কথা
চুপ থাকে হরদম!

অসতের বুদ্ধি বেশি
কাজে ঠনঠন
ময়লাতে মাছি যেমন
ঘুরে ভনভন!

পরের জিনিস নিজের
ভাবে যে-জন
যখন-তখন বিপদগ্রস্ত
হয় সে-জন!

ঠকবাজি করে যে
পরকে ঠকায়
নিজেই ঠকে যায়
কড়ায় গণ্ডায়!

হিন্দুদের বিয়ের নিয়ম ও সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য

আমি বিবাহ করেছি, ১ আষাঢ় ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদি খাঁন থানাধীন তালতলার দক্ষিণে এবং সুবচনী বাজারের পশ্চিমে নয়াবাড়ি গ্রামের এক গরিব পরিবারের মেয়ের সাথে। বিবাহ করেছি নিজের ইচ্ছেতে। প্রথমে বছর দুয়েক প্রেম প্রেম খেলা। তারপর মা এবং বড়দা’র সম্মতি ক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে। বিয়ে করেছি বর্তমানে ৩৪ বছর গত হতে চললো। কিন্তু বর্তমান করোনা দুঃসময়ের কারণে এবার নিজের বিবাহবার্ষিকীর কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। নিজের মন থেকে ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দেওয়ার জীবনসঙ্গী এখনো সাথে আছে বলেই, তিনি গত ক’দিন আগে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললো, “পহেলা আষাঢ় কিন্তু আমাদের বিবাহবার্ষিকী।”

জীবনসঙ্গী বা সহধর্মিণীর মুখে বিবাহবার্ষিকীর কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম যে, আমাদের হিন্দুদের বিবাহের বা বিয়ের নিয়মকানুনগুলো যদি শব্দনীড় ব্লগে লিখে সবার মাঝে শেয়ার করা যায়, তাহলে মনে হয়ে ভালোই হয়! সেই ভাবনা থেকেই আমার আজকের লেখার শিরোনাম দিলাম, “হিন্দু বিয়ের নিয়ম ও সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য”। এই সাত পাক ঘোরে হিন্দু ভাই-বোনদের সবারই বিয়ে হয় ঠিকই, কিন্তু অনেকেই জানেন না এর কী মাহাত্ম্য। তাই আজ আমার লেখার শিরোনামের শেষের শব্দটাই হলো ‘মাহাত্ম্য’।

আমরা অনেকেই জানি যে, হিন্দু ধর্মের এক ছেলের সাথে এক মেয়ের বিবাহ বা বিয়ে হয়ে গেলে তা ভাঙ্গার বা অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা কারোরই নেই। আর কেউ অস্বীকার করেও না। অনেকেই বলে, হিন্দু বিয়ে সাত পাকে বাঁধা বলেই কেউ অস্বীকার করতে পারে না; আবার কেউ অতি সহজেও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে না।

হিন্দুদের বিয়েতে শুধু সাত পাকে বাঁধা এটাই শুধু নিয়ম নয়, হিন্দুদের বিয়ের আগে পরে এমন আরও অনেক কঠিন কঠিন নিয়ম বাঁধা রয়েছে। যার কারণে খুব সহজে কেউ বিবাহ বা বিয়েকে অস্বীকার করতে পারে না। সংসার জীবনে যত দুঃখ আর যত ঝামেলাই আসুক-না-কেন, কোনমতেই ঝটপট আরেকটা বিয়ে করতে পারে না। এ হলো হিন্দু ধর্মের ছেলেদের বেলায়। আর মেয়েদের বেলায় তো আরও কঠিন নিয়মকানুনে বাঁধা থাকে। তাহলে জেনে নিন আমাদের হিন্দুদের বিবাহ বা বিয়ের আগে পরের এবং বিয়ের দিন সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য কী?

এমনও তো হতে পারে যে, আর ক’দিন পরই আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনও-না-কোনও ভাই-বোনের শুভ বিবাহের দিন ধার্য্য করা রয়েছে। তাহলে আগে থাকতেই তো এবিষয়ে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ, একথা স্বীকার করতে পারবেন না যে, হিন্দু বিয়ের কঠিন সব মন্ত্রের মানে আমরা অনেকেই জানি। যাঁদের জানা নেই, তাঁদের জন্যই আমার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে আজকের এই লেখা।

বিবাহ কথাটর প্রকৃত অর্থ হলো পরিণয়। আবার পরিণয় কথার অর্থ হলো বিবাহ। মানে দুটি মনের চিরবন্ধন। তাও সাত জন্মের জন্য বাঁধ। হিন্দু বিবাহে শুধু দুটি শরীরই এক নয়, এক হয় দু-দুটো পরিবার। আবার বিয়ের সময় চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি, বাতাস, জল, ফল, ধান, দূর্বা, লতা, পাতা, ফুল, চন্দনকে সাক্ষী রেখে স্বামী স্ত্রী সাত পাক ঘুরে যেই সাতটি প্রতিজ্ঞা করেন, তা তাদের দুজনকে সাত জন্মের জন্য এক করে দেয়া। বিবাহের দিন পুরোহিতের মন্ত্র দ্বারা হাতের উপর হাত রাখা, মালাবদল, অগ্নিতে খই পোড়ানো, সিঁদুরদান-সহ নানাবিধ নিয়ম পালন করার পর একটি বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হয়।

আগেই বলে রাখা ভালো যে, হিন্দু ধর্মে থাকা বিভিন্ন জাত গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্নরকম নিয়মে ভারত-সহ বাংলাদেশি বাঙালি হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলোতে অনেকরকম অমিল দেখা যেতে পারে। তবে যে যেই নিয়মেই বিয়ের কার্যসম্পাদন করুক-না-কেন, প্রতিটি বিয়েতেই সাত পাক ঘোরার নিয়ম রয়েছে। এই সাত পাক ঘোরার নিয়ম কোনও জাত গোত্র বা কোনও সম্প্রদায় বাদ দিতে পারে না। ছেলে/মেয়েকে বা বর কনে একসাথে সাত পাক ঘুরতেই হবে।

আমি বাঙালি। তাই আমার দেশের হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের দেশে যেকোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে/মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে ছেলের বাড়ির নিয়ম মেনেই বিবাহ বা বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হয়ে থাকে। এই নিয়মেই বেশিরভাগ হিন্দুদের বিবাহ বা বিয়ে হয়ে থাকে। তবে আমার বিবাহ বা বিয়ের কার্যসম্পাদন হয়েছে মেয়ের বাবার বিড়িতে। এর কারণ হলো, আমি তখন নারায়ণগঞ্জ শহরের নন্দিপাড়ায় মাকে নিয়ে ছোট একটা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। ওই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করার তেমন কোনও জায়গা ছিল না, তাই। এবার জেনে নিন হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলো।

১। পাকা দেখা বা পাটিপত্র ও আশীর্বাদ:
পাকা দেখা বা পাটিপত্র হলো, বিয়েতে ছেলে পক্ষ এবং মেয়ে পক্ষের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা এবং আরও বেশ কয়েকজন মুরুব্বি সাক্ষী রেখে একজন পুরোহিত দ্বারা সাদা কাগজে অথবা ১০০(একশো) টাকা মূল্যের দলিলে লিপিবদ্ধ করে রাখার নামই হলো; পাটিপত্র। যাকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের কাবিননামা বলা হয়ে থাকে। এদিন পাকাকথা এবং দলিল লেখা হয়ে গেলে ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে মিষ্টিমুখ করে সোনার আঙটি অথবা অন্যকোনো গয়না পরিয়ে দিয়ে মেয়েকে আশীর্বাদ করা হয়। এরপর উপস্থিত বয়ষ্ক মহিলারা উলুধ্বনি দিয়ে পাড়াপ্রতিবেশিকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অমুকের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়িতে কথা পাকাপাকি করে ছেলের বাড়িতে এসেও একইরকম উলুধ্বনি দিয়ে ছেলে বাড়ির পাড়াপ্রতিবেশিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এখানেও উপস্থিত থাকা সকলে মিষ্টিমুখ করে থাকেন। তবে আমার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আমার ভাড়া বাসায়। মেয়ের বাবা একজন পুরোহিত সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ এসে আমার বাসায় বসে বিয়ের দিন-তারিখ-সহ আরও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সাদা কাগজে শর্তগুলো লিপিবদ্ধ করেন এবং আমাকে একটা সোনার আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। তারপর ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত উপস্থিত মহিলারা উলুধ্বনি দিয়ে সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন।

২। আইবুড়োভাত:
আইবুড়ো অর্থাৎ এখনও অবিবাহিত বা সবার চেয়ে বড়। তাঁর হাতে রাঁধা ভাত। এই নিয়মটা আমাদের বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে অনেক জাত গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে মানা হয়, আবার অনেকেই নিয়মটা মানেন না বা করেন না। এই নিয়মটা হলো, উভয়পক্ষের। বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গেলে ছেলের অনেক আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব ডেকে খাওয়ানোর একটা অনুষ্ঠান। আবার মেয়ের পক্ষেও তেমনই করতে হয়। খাবারের আয়োজনে থাকে অনেক রকমের মাছের তরকারি। মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট। মাছের ঝোল বা ঝাল, মাংস, চাটনি সহ নানা পদ হয় এই আইবুড়োভাত অনুষ্ঠানে। যিনি আইবুড়ো তিনি এসব তরকারি দিয়ে ভাত মেখে প্রথম গ্রাস ছেলে অথবা মেয়েকে খাইয়ে দেন। এরপর এই মাখা ভাত খেতে উপস্থিত অনেক অবিবাহিত ছেলে/মেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে অনেকেই বিশ্বাস করে এই মাখা ভাত বর অথবা কনের হাতে যাকে খাওয়ায় তার বিয়েও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফলে অনেকের মধ্যেই এই ভাত খাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। তবে আমার আত্মীয়স্বজনের মাঝে এমন কোনও আইবুড়ো ব্যক্তি ছিল না বিধায়, আমার মা এই নিয়মটি বাদ রাখে। বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ের বাবার বাড়িতে ছিল একইরকম অবস্থা।

৩। শাঁখা পলা পরা:
বিয়ের ঠিক আগের দিন। যেই দিনটাকে বলে অধিবাস। এই দিন বিকালবেলা বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েকে নিয়ে তার মা বা বাড়ির বড়রা নিকটস্থ কোনও মন্দিরে যায়। তারপর মন্দিরে থাকা মাটির তৈরি দেবমূর্তি ও পুরোহিতের আশীর্বাদ নিয়ে মেয়ের মা অথবা কাকীমা, জেঠিমা বা অন্য বড় কেউ মেয়েকে শাঁখা আর লাল পলা পরিয়ে দেয়। শাঁখা হলো শাঁখ থেকে তৈরি, আর পলা হয় লাল রঙের। এই সাদা লালের জুটি হল এয়োস্ত্রী বা গৃহলক্ষ্মীর চিহ্ন। এই নিয়মটা শুধু মেয়ে পক্ষেরই নিয়ম।

৪। জল সইতে যাওয়া বা জলভরা:
বিয়ের দিন ভোরবেলা ছেলের ও মেয়ের মা এবং আরও কয়েকজন বিবাহিত মহিলা বাড়ির আশেপাশে থাকা কোনও পুকুর অথবা নিকটস্থ কোনও নদীতে জল সইতে যায়। জল সইতে যাওয়া বিবাহিত মহিলারা তামার পাত্রে বা পিতলের কলসিতে জল ভরে এনে রাখা হয়। বর্তমানে অনেকে এই নিয়মটা সকালের পরিবর্তে বিকালবেলা করে থাকে।

গায়ে হলুদ মাখার পর এই জল দিয়েই ছেলে ও মেয়ের যাঁর যাঁর বাড়িতে স্নান করানো হয়। জল সইতে বা জল ভরতে যাওয়ার সময় গান গাওয়ার রেওয়াজ আছে। বর্তমানে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে এনে বাজনা বাজিয়ে বাজনার তালেতালে নেচে-গেয়ে জলভরার আয়োজন করা হয়। তবে আমার বিয়ের সময় এই নিয়মটা ছিল ঠিক ভিন্নরকম। মানে, আমি বিয়ের আগের দিন অর্থাৎ অধিবাসের দিনই আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে মেয়েদের বাড়িতে চলে যাই। এর কারণ ছিল, নারায়ণগঞ্জ নন্দিপাড়া ভাড়া বাসার বাড়িওয়ালা এতো ঝামেলা করতে দেয়নি বলেই, আমি বিয়ের আগের দিন মেয়ের বাড়িতে হাজির হই। আমার পক্ষ থেকে নিয়মগুলো মেয়ের বাড়ির মুরুব্বীরা সমাধান করেছিল।

৫। গায়ে হলুদের নিয়ম:
তাজা হলুদ শিলপাটায় বেটে তার সঙ্গে সরষের তেল দিয়ে মাখা হয়। প্রথমে ছেলের মা ও বিবাহিতা আত্মীয়রা এই হলুদ ছেলের বা বরের শরীরে মুখমণ্ডলে মেখে দেয়। জল সইতে বা জল ভরতে গিয়ে পুকুর থেকে অথবা নদী থেকে যে জল আনা হয়েছিল, সেই জল দিয়ে ছেলেকে স্নান করানো হয়। বেঁচে যাওয়া হলুদ কাঁসার বাটিতে করে ছেলের বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা মেয়ের বাড়ি নিয়ে যেতে হয়। এই হলুদের সাথে মেয়ের গায়ে হলুদের সাদা লালপেড়ে শাড়ি, আর সিঁদুরের ফোটা লাগানো গোটা একটা রুই মাছ এবং অন্যান্য উপহার নিয়ে যান ছেলে পক্ষের আত্মীয়রা। এই হলো হিন্দুদের বিয়ের আগে গায়েহলুদের নিয়ম।

৬। দধি মঙ্গল:
দধি মানে দুধের তৈরি দই, আর মঙ্গল মানে শুভ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দইকে খুব শুভ মনে করে। অনেকেই সেইজন্য দইয়ের ফোঁটা লাগিয়ে পরীক্ষা দিতে বা যেকোনো শুভ কাজে রওনা হয়। বিয়ের দিন খুব ভোরবেলা অর্থাৎ পূর্বাকাশে সূর্য না উঠতে ছেলে ও মেয়েকে দই, চিঁড়ে, কলা ও সন্দেশ দিয়ে মেখে খেতে দেওয়া হয়। তারপর সারাদিন অর্থাৎ বিয়ের দিন তারা উভয়ই উপোস করতে হয়। বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হলে তবেই তারা খেতে পারে, এর আগে আর কোনও পানাহার করা যায় না। এই নিয়মটাও আমি মেয়ের বাড়িতেই সেরেছিলাম।

৭। বৃদ্ধি পুজো:
ছেলে ও মেয়ের বাড়িতে আলাদা করে এই পুজো করা হয়। ছেলে ও মেয়ের বাবা বা পিতৃতুল্য কেউ যদি থাকে, যেমন: কাকা, জ্যাঠা, মামা, বড়দাদা এরা এই পুজো করেন। পুরোহিতের বলা সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে যার বিয়ে হচ্ছে তার সাত পুরুষের উদ্দ্যেশে এই পুজো করা হয়। এখানে স্বর্গত পূর্বপুরুষের কাছে ছেলে ও মেয়ের মানে বর ও কনের জন্য আশীর্বাদ চাওয়া হয়। এই পূজোটা বিয়ের দিন বিয়ের আগে যেকোনো সময়ই করা যায়। কিন্তু বাধ্যতামূলক করতেই হবে। আমার বিয়ের সময় বিয়ের আগে মেয়ের বাড়িতেই এই বৃদ্ধি পূজার কার্যসম্পাদন করেন আমার বড়দাদা।

৮। বরযাত্রীদের আদর আপ্যায়ন ও বরকে বরণ:
ছেলে বা বর মাকে প্রনাম করে বিয়ে করতে যায়। সাথে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বলে বরযাত্রী। মেয়ে বা কনের বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই বরযাত্রীদের সাদর আপ্যায়ন করা হয়। মেয়ের মা অথবা মেয়ের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে থাকা বিবাহিত একজন মহিলা একটা কুলোয় হলুদ, পানের পাতা, সুপুরি ও প্রদীপ নিয়ে বরকে বরণ করে থাকে। তারপর মেয়ে পক্ষের সকল বিবাহিত অবিবাহিত মেয়েরা বাড়ির গেইটে লাল ফিতা টেনে বরযাত্রীদের আটকে রাখে। গেইটের ফিতা কাটার জন্য বর পক্ষকে কিছু অর্থদণ্ড করা হয়। তারপর বরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ব্যান্ডপার্টির বাজনা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে বিয়ে আসরে নিয়ে যাওয়া হয়। বরের সাথে তো বরযাত্রীরা থাকেই।

৯। বিয়েতে ছেলে বা বরের পোশাকাদি:
বিয়ের সময় ছেলের পোশাক বলতে সাধারণত ধুতি পাঞ্জাবী হয়ে থাকে বা পরতেও হয়। ছেলে বা বরের কপালে সামান্য চন্দনের ফোটা লাগানো হয়। চন্দন মানে মঙ্গলের প্রতীক। মাথায় পরে টোপর বা মটুক। এই টোপর বা মটুক বানানো হয়, একপ্রকার জলজ উদ্ভিদ নরম গাছ দিয়ে। এসব গাছ বর্ষাকালে বাংলাদেশের অনেক গ্রামের ফসলের ক্ষেতে জন্মায়। দেখতে একরকম লম্বা ধনচা গাছের মতো। ওই গাছের ভেতরের অংশ দিয়েই হিন্দুদের বিয়ের মটুক বা টোপর বানানো হয়। এই মটুকই বর এবং কনের মাথায় পরা থাকে। তবে ছেলের মাথার মটুক বা টোপর এবং মেয়ের মাথার মটুক বা টোপর দুটোই দুরকম। এছাড়াও বরযাত্রী মেয়ের বাড়িতে আসে, তখন অনেক বরের গলায় বিভিন্নরকমের ফুলের মালা থাকে। বরের হাতে থাকে একটি পিতলের বস্তু। এটা দেখতে ছোট হাত আয়নার মতো। একে বলা হয় দর্পণ। বিয়ের সময় বরকে অবশ্যই অবশ্যই পরে আসা পোশাক পাল্টে মেয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া ধুতি পাঞ্জাবি বা পট্টবস্ত্র পরতে হয়।

১০। বিয়েতে মেয়ে বা কনের সাজগোছ:
আমাদের বাঙালি মেয়ে বা কনের সাজ খুব সুন্দর হয়। যেভাবে দুর্গা প্রতিমা একটু একটু করে সাজিয়ে তোলা হয়, ঠিক সেভাবেই বাঙালি মেয়ে বা কনেকে খুব যত্নসহকারে করে সাজানো হয়। বেশিরভাগ মেয়েরা বিয়েতে লাল বেনারসি পরে থাকে। কেউ কেউ লাল কাতান শাড়িও পরে থাকেন। বর্তমানে অনেক মেয়ের বা কনের মাথায় ওড়নাও থাকে। আর সোনা গয়নার অলঙ্কার তো থাকেই। কনের কপালে চন্দন বাটা দিয়ে অনেক কারুকার্য ও ডিজাইন করা থাকে। মেয়ে বা কনের মাথায়ও মুকুট বা টোপর পরা থাকে। বিয়েতে ছেলে বা বরের হাতে যেমন দর্পণ থাকে, তেমনি মেয়ের হাতেও থাকে একটা কাঠের বস্তু। এটাকে বলে গাছকৌটো। এই গাছকৌটার ভেতরে থাকে সিঁদুর, আর রুপোর এক টাকা। বর্তমান সময়ে রুপোর টাকা নেই, তাই এক টাকার একটা কয়েন থাকে। মেয়ের হাতে থাকা গাছকৌটা থাকার মানে হলো, মা লক্ষ্মীর হাতে থাকা একটা বস্তু।

১১। সোনা কাপড়:
এই সোনা কাপড় মানে হলো, সোনার গয়নার সাথে মেয়ের পরিধানের কাপড়-সহ স্নো, পাউডার, আলতা, সাবানসহ সাজগোজের যাবতীয় জিনিশপত্রকে সোনা কাপড় বলে। এটা ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে বা কনেকে দিতে হয়। এই অনুষ্ঠানটি বিয়ের ঠিক আগমুহূর্তে বিয়ের আসরেই হয়ে থাকে। কেউ কেউ ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের আগেও সোনা কাপড় মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

১২। মালাবদল ও শুভ দৃষ্টি:
বিয়ের সময় ছেলের পক্ষ থেকে মেয়েকে যেমন সোনা কাপড় দেওয়া হয়, তেমনই মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলে বা বরকে সোনা-সহ কাপড় দিতে হয়। মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলেকে ধুতি পাঞ্জাবী ও সোনার শ্রী আংটি দেওয়া হয়। বিয়ের আসর থেকে একটু আড়ালে গিয়ে বর মেয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া ধুতি পাঞ্জাবী পরে আসে। মেয়ে পক্ষ থেকে যিনি কন্যা সম্প্রদান করবেন, তিনি আগে একটা পুজো করেন পুরোহিতের সাহায্যে। ছেলে বা কাপড় পরে এলে কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসা হয়, বরের সামনে। তখন মেয়ে বা কনের মুখ পান পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। মেয়ের পক্ষের লোকেরা মেয়েকে পিঁড়ির উপরে বসিয়ে বরের চারপাশে সাতবার মেয়েকে ঘোরানো হয়। তারপর কনেকে পিঁড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর মেয়ে বা কনে মুখ থেকে পান পাতা সরিয়ে বরের দিকে তাকায়। একে শুভদৃষ্টি বলে। এরপর হয় মালাবদল। মানে একে অপরের গলায় মালা পরিয়ে দেয়। এসময় অনেকক্ষণ পর্যন্ত মালাবদলের পালা চলতে থাকে। সাথে বাজতে থাকে ব্যান্ডপার্টির বাজনা। বাজনার তালেতালে সবাই নাচতে থাকে সাথে ছেলে মেয়েকে মালা পরিয়ে দেয়, মেয়েও ছেলেকে মালা পরিয়ে দেয়। একেই বলে মালাবদল। এসময় উপস্থিত বিবাহিত অবিবাহিত মেয়েও মহিলারা উলুধ্বনির সাথে শাঁখ বাজিয়ে পাড়াপ্রতিবেশিদের জানিয়ে দেয়।

১৩। কন্যা সম্প্রদান:
যেখানে বিয়ের আসর করা হয়েছে, সেখানে ডেকোরেশনের কর্মী দ্বারা অনেকে সুন্দর করে একটা মঞ্চ তৈরি করা হয়। এই বিয়ের মঞ্চটাকে বলা হয় বিয়ের কুঞ্জ। বর ও কনে মুখামুখি পিঁড়িতে বসা থাকে। যিনি কন্যা দান করবেন, তিনি ছেলের হাতের উপর হাত রেখে কন্যা সম্প্রদান করবেন। যিনি সম্প্রদান করছেন, পুরোহিত একটি পবিত্র সুতো দিয়ে তাঁর হাত বেঁধে দেন।

১৪। হোম:
এরপর বর ও কনে পাশাপাশি বসে এবং পুরোহিত আগুন জ্বেলে হোমযজ্ঞ (আগুনের কুন্ডলী) করেন এবং মন্ত্র পাঠ করেন।

১৫। সপ্তপদী:
পুরোহিত কনের শাড়ি ও বরের পট্টবস্ত্রের সাথে বেঁধে দেন এবং বর-কনে ওই যজ্ঞের চারপাশে সাত পাক একসঙ্গে ঘোরে। তার সাথে সাথে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ ও বিয়ের প্রতিজ্ঞা করেন।

১৬। কুসুমডিঙা বা খই পোড়ানো:
এরপর মেয়ে বা কনে কুলোয় করে আগুনে খই দেয় আর ছেলে বা বর কনের হাত দুটো পিছন থেকে ধরে থাকে।

১৭। সাত পাকের সাত প্রতিজ্ঞা:
১৭-১। প্রথম প্রতিজ্ঞা:
স্বামী ও স্ত্রী চান বাড়িতে কখনও খাদ্য বা ধন সম্পত্তির অভাব যেন না হয়। স্বামী স্ত্রীকে খুশি রাখার এবং স্ত্রী দায়িত্বপালনের প্রতিজ্ঞা।

১৭-২। দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা:
স্বামী স্ত্রী দুজনে দুজনকে সমর্থন করার এবং শরীরে মনে একাত্ম হওয়ার প্রতিজ্ঞা।

১৭-৩। তৃতীয় প্রতিজ্ঞা:
স্বামী ও স্ত্রী ধন সম্পত্তি সামলে রাখার তাকে বৃদ্ধি করার প্রতিজ্ঞা করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সঠিক দেখাশোনা করার প্রতিজ্ঞা।

১৭-৪। চতুর্থ প্রতিজ্ঞা:
সদ্য বিবাহিত দম্পতি প্রতিজ্ঞা করেন তারা পরস্পরের পরিবারকে সম্মান জানাবেন। তাদের দেখাশনার দায়িত্ব নেবেন এবং তাদের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবেন।

১৭-৫। পঞ্চম প্রতিজ্ঞা:
তারা ঈশ্বরের কাছে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান সন্তানের প্রার্থনা করেন। তারা প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাবস্থা তারা করবেন।

১৭-৬। ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা:
ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞায় সুস্বাস্থ্য ও রোগবিহীন জীবন কামনা করেন দুজনে।

১৭-৭। সপ্তম প্রতিজ্ঞা:
সপ্তম ও শেষ প্রতিজ্ঞা হল এই সম্পর্ক যেন স্থায়ী ও মজবুত হয় তার জন্য দুজনেই সচেষ্ট থাকবেন।

১৮। সিঁদুরদান:
বর কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয়। সিঁদুর পরানো হয়ে গেলেই কেউ একজন কনের মাথায় একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। একে বলে লজ্জাবস্ত্র। সিঁদুর পরানর ক্ষেত্রে একেক বাড়িতে একেক রকম নিয়ম করা হয়। কেউ রূপোর টাকা, কেউ আংটি আর কেউ দর্পণ দিয়ে সিঁদুর পরায়। যেহেতু রুপোর টাকা এখন আর নেই, সেহেতু দর্পণ দিয়েই এই নিয়মটা বেশি করে থাকেন।

বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হলে বর ও কনেকে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে থাকে ছেলে বা বরের বন্ধুবান্ধব এবং মেয়ে বা কনের বান্ধবীরা। এখানে বর ও কনের জন্য কিছু পরীক্ষামূলক খেলার আয়োজন থাকে। যেমন: পাশা খেলা, চাউল ছড়ানো ও উঠানো খেলা। জলকেলি খেলা। পাশা খেলায় যে জিতবে সেই সংসার পরিচালনায় দক্ষ ও চালাক হবে। একটা ঘটে কিছু চাউল থাকে। সেই চাউলগুলো বর বিছানার উপর ছিটিয়ে দিবে। কনে সেই চাউলগুলো আস্তে আস্তে কাচিয়ে কাচিয়ে ঘটে ভরবে। এমনভাবে ভরতে হবে, যাতে কোনও শব্দ না হয়। শব্দ হলেই বুঝে নিতে হবে যে, এই মেয়ের সব কাজেই শব্দ হবে। মানে অলক্ষ্মীর ভাব। এভাবে তিন তিনবার চাউল ছিটানো হবে, তিনবার উঠানো হবে। ছেলেও তিনবার, মেয়েও তিনবার। এরপর জলকেলি খেলা।

এই খেলায় একটা পিতলের অথবা মাটির সানকির প্রয়োজন হয়। এই সানকিতে জল থাকে। জল হাত দিয়ে নেড়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর মেয়ের মাথার মটুক থেকে সামান্য একটু বস্তু, আর ছেলের মাথার মটুক থেকে সামান্য একটু বস্তু নিয়ে সেই ঘোরানো জলে আগে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জল ঘুরতে থাকে, সাথে ছেলে /মেয়ের মাথার মটুকের ছেঁড়া অংশও ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে, মেয়েরটা আগে, নাকি ছেলেরটা আগে দৌড়াচ্ছে। যদি মেয়েরটার পেছনে ছেলেরটা থাকে, তাহলে সবাই বলে, “মেয়ে খুবই অভিমানী!” আর যদি ছেলেরটার পেছনে মেয়েরটা থাকে, তাহলে সবাই বলে, “ছেলে তো খুবই দেমাগি!” এভাবে একসময় দুটোই একসাথে মিলে গিয়ে জড়াজড়ি হয়ে যায়। তখন উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে আনন্দে হৈচৈ শুরু করে দেয়। এরপর শুরু হয় বর কনের খাওয়াদাওয়ার পালা। খাওয়াদাওয়ার মাঝেও ছেলের বন্ধুবান্ধব ও মেয়ের সখি ও বান্ধবীরা সাথে থাকে।

১৯। বাসর ঘর:
বিয়ে শেষ হলে বর ও কনেকে ঘুমানোর জন্য দুইজনকে আলাদা এক ঘরে দেওয়া হয়। এসময় বর ও কনের ভাই বোন ও বন্ধুরা সবাই মিলে সারা রাত বিয়ের আসরে বসে আড্ডা দেয়। গান বাজনা হয়। একে বলে বাসর ঘর। তারপর হয় বাসি বিয়ে।

২০। বাসি বিয়ে:
অনেক বাঙালি বাড়িতে নিয়ম আছে। তবে বাসরঘর থেকে আসার কারণে আর বিয়ের রাত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই, এই বিয়েটাকে বাসি বিয়ে বলে থাকে। অনেক জায়গায় বাসি বিয়ের পরই সিঁদুরদান করে থাকে। এই বাসি বিয়েতে একজায়গার চারকোণায় চারটে কলাগাছ রোপণ করে রাখা হয়। এখানেও বর কনে একসাথে কনের কাপড়ের আঁচলের সাথে বরের ধুতি অথবা গায়ের চাদরের কোণা গিঁট বেঁধে কলাগাছের চারদিকে সাত পাক ঘরতে হয়। কলাগাছের চারদিকে সাত পাক ঘোরার পর এখানেও একটা মজার পরীক্ষামূলক খেলা থাকে। এটা হলো আংটি খেলা। কলাগাছের মাঝখানে একটা ছোট গর্ত করা হয়। সেই গর্তটা জল দিয়ে ভরে রাখা হবে। তারপর বর তাঁর হাতের আংটি ঐ গর্তে লুকিয়ে রাখবে, কনে সেই আংটি জল ভর্তি গর্ত থেকে খুঁজে বের করতে হবে। এভাবে উভয়ই তিনবার করে। যে তিন বারের মধ্যে একবার খুঁজে বের করতে পারলো না, সেই খেলায় হেরে গেলো। যে জিতল, সেই বুদ্ধিমানের পরিচয় দিলো।

২১। কনের শ্বশুরঘর যাত্রা:
বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হলো। পাড়াপড়শি সবাই এসে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন। বর ও বরযাত্রীরা কনেকে নিয়ে কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বিদায়বেলায় মেয়ে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়।

২২। বধূ বরণ ও কালরাত্রি:
বরের বাড়ি পৌঁছলে বরের মা কনেকে বরণ করে ঘরে তোলেন। দুধ আর আলতায় পা ডুবিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়। নতুন বউকে ওথলানো দুধ দেখাতে হয়। যাতে সারাজীবন দুধভাত খেয়ে যেতে পারে। চাল ভর্তি পাত্র দেখাতে হয়। যাতে সারাজীবন সংসার চালের অভাব না হয়। এবং একটা পাত্রে থাকা জীবিত মাছ ধরতে বলা হয়। যাতে সারাজীবন এই সংসারে মাছভাত পরিপূর্ণ থাকে। সেদিন স্বামী ও স্ত্রী আলাদা আলাদা শয়ন করেন। একে বলে কালরাত্রি।

২৩। বউ ভাত ও ফুলশয্যা:
বিয়ের একদিন পরে হতে পারে বউভাত অনুষ্ঠান। এটা করা হয় যাঁর যাঁর সাধ্যমতো। এদিন বউয়ের হাতে ভাতের থালা ও কাপড় তুলে দেয় বর। বলে আজ থেকে তমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব আমিই নিলাম। এরপর নতুন বউ শ্বশুরবাড়ির সব গুরুজনদের খাওয়ার পাতে ঘি-ভাত দিতে হয়। এই অনুষ্ঠানে অনেকে অনেক ধরণের আয়োজন করে থাকে। কেউ হাজার হাজার লোকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। এদিন রাতে হয় ফুলশয্যা।

২৪। অষ্টমঙ্গলা বা আট নায়রি:
বিয়ের আট দিনের মাথায় বর ও কনে একসাথে মেয়ের বাড়ি যায়। নারায়ণ পুজো করে বিয়ের দিনে পুরোহিতের বেঁধে দেওয়া হাতের সুতো খুলে দেওয়া হয় এবং মেয়ের মা ওই সাত পাকের জোরের গেঁট খুলে দেয়।

সবশেষে ঘরসংসার:
এরপর থেকে চলতে থাকে সাংসারিক জীবন। কারো-কারোর বেলায় বছর দুয়েক পরই সংসারে আসে নতুন অতিথি। একসময় তাঁরা বুড়ো হয়ে যায়। নতুন আগতরা বড় হয়ে সেই সংসারের হাল ধরে। এভাবেই চলতে থাকে জীবনের পর জীবন। আমাদের জীবনও এভাবেই চলছে। সমাপ্তি।

নভেল করোনাভাইরাস থেকে আমরা অনেককিছু শিখেছি!

২০১৯ সালের শেষদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এই পৃথিবীতে যমদূত হয়ে হাজির হয়েছে, আমাদের কিছু শিক্ষা দিতে। আবার একসময় হয়তো বেশকিছু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এই বিশ্ব থেকে বিদায় নিবে। কিন্তু এই সুন্দর পৃথিবীতে থেকে যাবে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করার কিছু শিক্ষা। যেই শিক্ষা দিকনির্দেশনা বিজ্ঞ চিকিৎসকরা আমাদের বারবার শেখাচ্ছে। আমরাও সেই শিক্ষা অনুসরণ করে চলতে থাকবো, পৃথিবী নামক গ্রহটা যতদিন বেঁচে থাকবে; ততদিন। তবে এই শিক্ষাটা নভেল করোনাভাইরাস আমাদের নতুন করে নতুনভাবে জীবন বাঁচতে সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।

এর কারণ হলো, করোনাভাইরাস থেকে নিজে এবং নিজের পরিবারবর্গ-সহ দেশ ও দশকে বাঁচাতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো শুধু এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে বাঁচতেই নয়, এই দিকনির্দেশনাগুলো একজন মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একটা সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা।

এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আবির্ভাব হবার আগে থেকে যদি আমরা বিশ্ববাসী এসব দিকনির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতাম, তাহলে এই মরণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীকে এতো কাবু করতে পারতো না। আর এই ভাইরাসে এতো মানুষের মৃত্যু হতো না। কথায় আছে, “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে!” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তেমনই।

সারাবিশ্বে প্রায় কোটি মানুষের প্রাণহানির পর আমাদের বুদ্ধি বাড়লো। আগে থেকে শুধু বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া নিয়মকানুনগুলো শ্রবণই করেছিলাম, কিন্তু মেনে চলতে পারিনি। এখন উপায়ন্তর না দেখে সময় হারিয়ে রাষ্ট্রের বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শগুলো ধনী গরিব বস্তিবাসী কৃষক কৃষাণী সবাই মেনে চলতে বাধ্য হয়েছি। এটা আমাদের আগামীদিনের জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একরকম সুশিক্ষা।

করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে মেনে চলতে পারি, তা হবে আগামীদিনের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়া এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা।

বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো নিম্নরূপ:
১। সাবান দিয়ে বারেবারে হাত ধোয়া।
আমরা বাঙালি জাতি। এদেশের বিত্তবান ছাড়া খেটে-খাওয়া মানুষের বারেবারে হাত ধোয়ার অভ্যাস আমাদের কোনও সময়ই ছিল না। এই অভ্যাসে অভ্যস্ত আমরা গরিব কাঙালিদের কোনও সময়ই হয়েছিল না। কিন্তু এখন তা বাধ্যতামূলক! এটা আমাদের জন্য একরকম প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।

একসময় এদেশের গরিব মানুষ তথা কৃষক কৃষাণীরা খেতে খামারে কাজ করে চাষের জমির সামনে থাকা ডোবা নালায় কোনরকম হাত ধুয়ে চাষের জমিতে বসেই মনের আনন্দে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ ডলে পান্তাভাত মেখে খেয়ে ফেলতো। আর এখন এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে ভালো করে থালাবাসন-সহ হাত ধুয়ে খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে খাবার খাচ্ছে।

আগে যেখানে সারাদিনে মাত্র দুই একবার কোনরকম হাত ধোয়া হতো, আজ সেখানে করোনাভাইরাসের ভয়ে অন্তত দিনে কয়েকবার ভালো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছে। কিছুদিন আগেও দেখেছি হাট-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, মাছ বিক্রেতা পঁচা মাছ বিক্রি করছে। বেচাকেনার মাঝেই হাত না ধুয়েই খাবার খেয়েছিল। মাংস বিক্রেতা মাংস বিক্রি করার সময় রক্তাক্ত হাত নিজের লুঙ্গিতে মুছে সেই হাত দিয়ে খাবার খেয়েছিল। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা ভর্তি ড্রেন থেকে ময়লা উঠাচ্ছিল, তাঁরা হাতপা না ধুয়েই কোনরকম হাত মুছে খাবার খেয়েছিল। এতে কোনও রোগব্যাধি গরিব মানুষের ধারেকাছেও আসেনি। যদিও রোগব্যাধি হয়েছিল, তা শারীরিক অসুস্থতা মনে করে কিছু ট্যাবলেট গিলে খেতো। তবে ইদানীংকালের প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস তা বুঝিয়ে দিলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অঙ্গ এবং সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের মূল চাবিকাঠি।

২। মুখে মাস্ক পড়া।
কিছুদিন আগে থেকে রাস্তাঘাটে দেখেছি, কিছু ভদ্রলোক মুখে নরম কাপড়ের খাফ লাগাতো। যেটাকে বর্তমান সময়ে বলে মাস্ক। যাঁরা এই মাস্ক ব্যবহার করতো, তাঁরা রাস্তাঘাটে চলার মাঝে অনেকের মুখপানে চেয়ে নিজেরাই লজ্জা পেতো। আর এখন ধনী গরিব বস্তিবাসী সবার জন্য মাস্ক হয়ে গেলো বাধ্যতামূলক। মোটকথা মাস্ক ছাড়া কোন অবস্থাতেই ঘর থেকে বেরুতে পারবে না।

অনেক ধার্মিক মানুষই বলেছিল, “আমি খোদা বিশ্বাসী! আমার নাকে নাক পশম আছে। যা দিয়ে বাতাস ছেঁকে দেহের ভেতরে ঢুকায়। কাজেই মাস্ক আমার দরকার নেই। আমার নাকই কাপড়ের মাস্ক থেকে বেশি সুরক্ষিত।”

এখন নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে সেসব ধার্মিক মানুষগুলো ভয়ে থরথর। সেই ভয়ে তাঁদের নাকে মুখে লাগানো থাকে একটা মাস্ক। দুই পকেটে থাকে দুইটা। মোটকথা মাস্ক ছাড়া নিজের নাকের প্রতিও কারোর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। সবকিছু পরিবর্তন করে দিলো বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। এটাও আমাদের জন্য সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একটা শিক্ষা। এই শিক্ষাটা আমরা অর্জন করেছি করোনাভাইরাস থেকে, আর বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ থেকে।

৩। সাথে অন্তত গুটিকয়েক রুমাল রাখা, নাহয় টিস্যু পেপার রাখা। কারণ শরীরের ঘাম আর নাক কান গলা মোছার জন্য।
এদেশে এমন লোক দেখেছি, জীবনে একজোড়া জুতাও কিনেনি। একজোড়া জুতো যদি অতি কষ্টে কিনেছে, সেই জুতা জোড়া ধুয়েমুছে ঘরে রেখে দিয়েছে। জুতো পরেছে, কোথাও কোনও নিমন্ত্রণে আমন্ত্রিত হলে। রুমাল তো ছিল অনেকের কাছে স্বপ্নের ব্যাপারস্যাপার। এখনও এই বঙ্গদেশে এমন লোক আছে, কোনও বিয়েসাদীর নিমন্ত্রণে গেলে নিজের জামার পকেটে করে একটুকরো ছেড়া কাপড় সাথে নিয়ে যায়, হাত নাক মুখ মোছার জন্য। এই ছেড়া কাপড়ের টুকরাই হলো ওই লোকের জন্য মূল্যবান রুমাল। বিয়ের নিমন্ত্রণ খেয়ে কিছু দান দক্ষিণা দিয়ে দু’একটা টিস্যু পেপার পকেটে করে বাড়ি নিয়ে আসে।

আজ এই করোনাভাইরাসের আলামতের দিনে ধনী গরিব সবাই রুমাল অথবা টিস্যু নামের সাদা কাগজ সবার পকেটেই দু’একটা সাথে থাকেই। ছোটবেলা শুনেছি নিজের পকেটে একটা চিরনি অথবা একটা রুমাল অথবা একটা কলম থাকা মানে ভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ। আর বর্তমানে এই ভদ্রতা শিখিয়ে দিলো প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। যদিও এই প্রাণঘাতী ভাইরাস লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবুও এই শিক্ষাটা কিন্তু বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী করোনাভাইরসের একটা অবদান।

৪। সবসময় নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যেখানে সারাদিন শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার সন্ধানে সবসময় ময়লা আবর্জনার সাথে যুদ্ধ করেছিল। কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করেছিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। লেইস ফিতার গাট্টি কাঁধে করে ধুলো বালি ভরা শহরের অলিগলিতে ঘুরেছিলে। আজ তাঁরাও নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রেখে মুখে মাস্ক লাগিয়ে হাতে গ্লাভ লাগিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। চা বিক্রেতা ওয়ান টাইম কাপ ব্যবহার করে চা বিক্রি করছে। দোকানের সামনে পরিস্কার করে রাখছে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হাজার মানুষের সামনে যত্রতত্র প্রস্রাব করা থেকে বিরত থাকছে। অযথা যেখানে সেখানে থুথু ফেলাও বন্ধ করছে ভাইরাসের ভয়ে। যাতে কোনও প্রকার প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রমণ না করে। এটাও আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য একরকম শিক্ষা।

৫। হাঁচি-কাশি দেয়, এমন মানুষ থেকে অন্তত তিনফুট দূরে থাকা।
হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বর হলো আমাদের দেশের নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ রোগ। যা সচরাচর ছেলে বুড়ো সকলেরই হয়ে থাকে। এই সাধারণ সর্দিকাশি হলে অন্তত কয়েকদিন অপেক্ষা করে তারপর নিকটস্থ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতো। ডাক্তার হিস্টাসিন প্যারাসিটামল অথবা নাপা নামের কয়েকটা ট্যাবলেট রোগিকে দিয়ে দিতে, রুগি তা সেবন করেই ভালো হয়ে যেতো। আর এখন এমন প্রাণঘাতী ভাইরাসের আবির্ভাব দেখা দিয়েছে, এই ভাইরাসের প্রথম লক্ষ্মণই হলো সর্দি-কাশি, সর্দি-জ্বর। তাই কারোর সর্দি-জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে তাঁর কাছ থেকে সবাই অন্তত দশহাত দূরে থাকে। কোনও অবস্থাতেই এই রুগির সামনে কেউ যেতে চায় না, করোনা ভাইরাসের ভয়ে। এমনকি নিজ পরিবারের কারোর সর্দি-জ্বর হলেও থাকে গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে একঘরে রাখা হয়। যার নাম হোম কোয়ারেন্টি। মানে সবাই নিরাপদে থাকা। এটাও আমাদের শিখিয়ে দিলো বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এবং ভাইরাস প্রতিহত করার বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ।

৬। দরকার হলে প্লাস্টিকের গ্লাভস পরিধান করা।
আগে এদেশের অনেকেই প্লাস্টিকের গ্লাভস নামের বস্তুটিকে কেউ চিনতোও না। এই গ্লাভস নামের বস্তুটিকে চিনত কেবল ডাক্তাররা। এখন এই গ্লাভস যে কী, তা ছোট বড় সবাই চিনে এবং জানেও। ব্যবহারও করে থাকে। এই গ্লাভস নামের বস্তুটিকে চিনিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। গ্লাভস হাতে পরাও নিজেকে সুরক্ষিত রখার একটা শিক্ষাব্যবস্থা।

৭। প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়চোপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা।
এই দেশের অনেক লোকই আছে, যাঁরা এক কাপড়-চোপড় দুই-তিন-দিন পর্যন্ত লাগাতার ব্যবহার করে। তারপর কমদামি পঁচা সাবান দিয়ে, নাহয় সোঁটা দিয়ে সিদ্ধ করে ধুয়ে নেয়। প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়-চোপড় এদেশের গরিব মানুষেরা প্রতিদিন কোনমতেই ধোয় না। কিন্তু এখন এই নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়চোপড় প্রতিদিনই ধুয়ে নিচ্ছে। এই ধোয়া শিখিয়ে দিলো প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এবং ভাইরাস প্রতিহত করার পরামর্শদাতা বিজ্ঞ চিকিৎসকরা। এখন থেকে এই শিক্ষাটা যদি আমরা ধনী গরিব সবাই রপ্ত করতে পারি, তাহলে আগামীতে এর চেয়েও ভয়াবহ রোগজীবাণু আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। কাজেই এই শিক্ষাটাও অর্জন হলো করোনাভাইরাস প্রতিহত করার মাধ্যমে।

৮। ঘরদোর সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
এদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরদোর আর কতটুকুই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকে? কিন্তু এখন, রাস্তার পাশে বস্তিঘরও নিয়মিত পরিস্কার করে রাখছে, করোনাভাইরাসের ভয়ে। আগে যেই ঘরের ভেতরে বাইরে সবসময়ই মাছি ভনভন করতো, আজ সেখানে সেসব ময়লার আবর্জনায় সিটি করপোরেশন থেকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিচ্ছে। রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে সকাল দুপুর বিকাল। আর মশা নিধন করার ঔষধ তো প্রতিদিনই ছিটানো হচ্ছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা সিটি করপোরেশন ময়লার গাড়ি দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে সকাল দুপুর। এমন সুন্দর কার্যক্রম যদি সবসময়ের জন্য বহাল থাকে, তাহলে আমরা নগরবাসী আগামীতে সুন্দর একটা নতুন নগরী দেখতে পাবো। সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগ শুধু নগরবাসীকে নভেল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতেই। এটাও সুন্দর নগরী গড়ার একটা শিক্ষাব্যবস্থা। তা কেবল নভেল করোনাভাইরাস থেকেই এই শিক্ষা অর্জিত।

৯। যেখানে সেখানে কফ, থু থু না ফেলা।
কথায় আছে, “আমরা যেখানে খাই, সেখানেই থুথু ফেলি।” রাস্তার পাশে হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করি। মলমূত্র ত্যাগ ত্যাগ করি। কে এলো আর কে দেখলো, তার কোনও হুঁশ জ্ঞান আমাদের নেই। সেই বিষাক্ত প্রস্রাব রাস্তায় চলাফেরা করা মানুষে পায়ে দলিয়ে চলাফেরা করতো।

কিন্তু ইদানীংকালে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর থেকে এসব অভদ্র মানুষেগুলোর কুঅভ্যাসগুলো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর এসব শহরের আনাচে-কানাচে দেখা যায় না। এক হিসেবে আমরা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের উন্নত নাগরিক হয়ে গেছি। শিক্ষাটা পেয়েছি নভেল করোনাভাইরাস থেকে।

আশা করা যায় যদি কিছুদিনের মধ্যে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আমাদের দেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেয়, তাহলে নভেল করোনাভাইরাস থেকে অর্জন করা শিক্ষা আমাদের জীবন চলার চলার মাঝে অনেক কাজে লাগবে। সবই শিখেছি নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে গিয়ে। জয় হোক মানবতার। মহান স্রষ্টা সবার সহায় হোক। করোনাভাইরাস দূর হোক।

নিতাই বাবু
১০/০৪/২০২০খ্রী:

যেখানে করোনা’র লড়াইয়ে গরিব মানুষ সেখানে দর্শকের সারিতে দেশের বিত্তশালীরা

সময় সময় দেশে যখন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতো, সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন সরকার আন্তরিকতার সাথে সেসব ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিভিন্নরকম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যেতো। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন, চাল, ডাল, তেল, লবণ-সহ নানারকম খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতো। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন-সহ দেশের বিত্তবান, রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন সমাজসেবী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতো। যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা খুব তাড়াতাড়ি সংকটময় সময় থেকে সেরে ওঠতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তা না করুক- এখনও যদি এদেশে কোনও প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতন এমন দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কিন্তু সরকার হাতপা গুটিয়ে বসে থাকবে না। শত সমস্যার মাঝেও সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা করা-সহ দেশের জনগণকে বাঁচাতে এগিয়ে যাবে। এটাই কিন্তু সব দেশের সরকারের দ্বায়িত্ব কর্তব্য।

বর্তমানে মহান সৃষ্টিকর্তার দয়ায় আমাদের দেশে সেসব ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়নি। তবে ইদানিংকালে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে যেই মরণঘাতী করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে, সেটা এখন আমাদের দেশেও মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে এটাও আমাদের জন্য একরকম দুর্যোগ। এই দুর্যোগের কবলে পড়ে সারাবিশ্বের সব দেশের মতো আমারও কাবু হয়ে যাচ্ছি। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকজন। এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

বর্তমানে আমাদের দেশের সরকার এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে এবং দেশের জনসাধারণকে এই রোগ থেকে বাঁচাতে নানারকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি রোগ বিশেষজ্ঞ-সহ চিকিৎকরাও নানারকম পরামর্শ দিচ্ছে। যাতে সচেতনতার সাথে ধৈর্যসহকারে খুব তাড়াতাড়ি এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস কেভিড-১৯ রোগ প্রতিহত করা যায়।

কিন্তু দুঃখের কথা দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, এর আগে আমাদের দেশে যখন কোনও দুর্যোগ দেখা দিতো; তখন সরকারের আদর- সোহাগ ভালোবাসা পাবার জন্য দেশের অনেক জননেতা, জননেত্রী ব্যানার টানিয়ে দুর্যোগ এলাকায় পরিদর্শন করতো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতো। পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট সমাজসেবকরাও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে নিজ নিজ তহবিল থেকে নানারকম সাহায্য করতো। অনেকেই দিতো নানারকম খাদ্যসামগ্রী-সহ টাকা পয়সাও।

কিন্তু বর্তমান এই সংকটময় সময়ে দেশের নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই সংকটময় সময়ে কোনও বিত্তবানদের দেখা যাচ্ছে না। এদেশের কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও তাঁদের নিজ এলাকায় কেউ দেখছে না। শোনা যাচ্ছে না যে, এই নেতায় ওটা দিচ্ছে। সেই নেতায় সেটা দিচ্ছে। কই, কেউ তো এখন পর্যন্ত কোনও জায়গায় গিয়ে কাউকে একটি মাস্কও কারোর হাতে তুলে দেয়নি? বরং ক্ষমতার আসনে বসে বসে বড় বড়ে বুলি ছাড়ছে। আর আমরা তাঁদের সেসব বড় বড় বুলি ভক্তিভরে শ্রবণ করছি, আর করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে মরছি। আর তাঁরা বিত্তবান, বিত্তশালীরা নীরব দর্শকের ভুমিকা নিয়ে টিভির পর্দায় গরিবদের দুর্দশার খবর শুনছে। আবার কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষদের পেটানোর দৃশ্য দেখছে।

এই সংকটময় সময়ে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, ব্যবসায়ীরা, সমাজসেবকরা মানবাধিকারের মহান মানবগোষ্ঠীরা এখন কোথাও? তাঁরা কি নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে হাতপা গুটিয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছে? সরকারের পাশাপাশি তাঁরা কি পারে না জায়গায় জায়গায় গিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করার জন্য কিছু প্রতিরোধক উপকরণ এদেশের জনগণের হাতে তুলে দিতে? যেখানে এদেশে শীত মৌসুমে সামান্য শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে কত নামীদামী ব্যক্তিবর্গ ছোঁড়া-ফাঁড়া কিছু কম্বল বিতরণ করার জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল, আজ দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে কেউ হাতপা গুটিয়ে ঘরে বসে, কেউ নীরব দর্শকের মতো করোনাভাইরাসের ভয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে করুণা চেয়ে চেয়ে মরছে।

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, তা-হলো আপনারা বিত্তবান বিত্তশালীরা নিজ ঘরে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি মজুদ করে ঘরেই বসে থাকুক! নীরব দর্শকের মতো তামশা দেখুন! আর বসে বসে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে আমরা এদেশের গরিব মানুষেরা করোনাভাইরাসের সাথে লড়াই করে আপনাদের বাঁচতে পারি।

মনে রাখবেন এদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মহামারি রোগ কোনও দেশের ধর্ম, বর্ণ, জনগোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত হয়ে জন্য আসে না। যখন আসে তো ধনী গরিব সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। বর্তমান সময়ের এই মহামারি করোনা ভাইরাসও কিন্তু গরিব মানুষদের জন্য নির্ধারিত নয়। এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে সারাবিশ্বের মতন এদেশের সবাই। তবে এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এদেশের অসংখ্য গরিব মানুষ। মানে নিত্যদিন যাঁদের নুন আনতে পানতা ফুরায় তাঁদের অবস্থাই বেশি বেগতিক।

কিন্তু এদেশের এসব গরিব মানুষদের কথা এই সংকটময় সময়ে এদেশে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরাও একটু ভেবে দেখছেন না। বরং বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে সবস্থানে এইসব গরিব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপরই চালাচ্ছেন লাঠিপেটা। তাঁদের অপরাধ হলো, ঘর থেকে বেরিয়েছে কেন? কিন্তু কেন বেরিয়েছে, সেই খবর আপনারা কেউ রাখছেন না। গরিবরা ঘর থেকে না বেরুলে ঘরে বসে খাবে কী?

হয়তো এর জবাবে এদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তশালীরা শান্তনা দিবেন, “আমরাও তো বর্তমানে ঘর থেকে বেরুচ্ছি না! একটু কষ্ট হলেও আপাতত ঘরেই থাকুন!” কিন্তু খাবারের নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছেন না, বিন্দুমাত্র সাহায্য সহযোগিতাও কেউ করছেন না।

তাহলে আবারও শুনে রাখুন! আপনারা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরা এদেশের গরিব মানুষকে এমন সংকটময় সময়ে সাহায্য সহযোগিতা না করে; প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘরে বসে যতই মহান সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন-না-কেন– মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে এদেশের গরিব মানুষেরাই মুক্তি পাবে। হয়তো আপনারই এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তা যেন না হয়! মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করে। মহান স্রষ্টা সবার সহায় হোক!

একটু ধৈর্য ধরুন–ঘরে থাকুন!

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের এই দিনে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও-এর মতো তাণ্ডবলীলা। হানাদার বাহিনীরা তখন যেভাবে নিরস্ত্র অসহায় বাঙালির উপর আক্রমণ করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে ২০২০ সালের এই মার্চ মাসে দুনিয়া কাঁপানো প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস কেভিড-১৯ আমাদের আক্রমণ করে ফেললো!

তখন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল, ঠিক সেভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলার প্রতিটি মানুষ ধৈর্যসহকারে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলো।

এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ হবে অস্ত্র ছাড়া ঘরে বসে। বাইরে থেকে নয়, যুদ্ধের ময়দানে নয়। হাট-বাজারে নয়। চা’র দোকানে বসে নয়। দলেদলে মিছিল করে নয়। বাস-ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমারে ভিড় করে নয়। এই যুদ্ধ হবে অস্ত্র ছাড়া ঘরে বসে। আশা করি এই যুদ্ধেও আমরা জয়ী হবো।

তাই সবার কাছে অনুরোধ থাকলো, সবাই অন্তত কয়েকটা দিন ঘরে থাকুন! ধৈর্য সহকারে ঘরে থেকেই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিহত করুন! নিজে বাঁচুন, সপরিবার-সহ পাড়া প্রতিবেশীদের বাঁচতে সাহায্য করুন! একটু ধৈর্য ধরুন, ঘরে থাকুন!

স্বাদের জীবন

জীবন মানে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা
জীবন মানে শান্তির সন্ধান করা,
জীবন মানে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা
জীবন মানে দুখীর ডাকে দাও সাড়া।

জীবন মানে এই নয় নিজে খাই
জীবন মানে এই নয় নিজে বাঁচি,
জীবন মানে এই নয় পরকে ঠকাই
জীবন মানে এই নয় পরের দুখে নাচি।

মরণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গৃহীত প্রাণঘাতী পদক্ষেপ

বর্তমানে কেভিড–১৯ নভেল করোনা ভাইরাস সারাবিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ সংক্রমণ। যার উৎপত্তিস্থল ছিল গণচীনের উহানে। সেখান থেকে পালাক্রমে সারাবিশ্ব ঘুরে এই প্রাণঘাতী রোগ এখন হানা দিয়েছে আমাদের দেশে। এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস থেকে দেশ ও দশকে বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বিভিন্নরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাস আক্রমণ থেকে বাঁচতে করনীয় দিকনির্দেশনা-সহ বিশ্ব থেকে সব দেশকে একঘরে করে রাখার একঘেঁয়ে পদক্ষেপও নিচ্ছে। এই একঘেঁয়ে পদক্ষেপ হলো, ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ সবধরনের ভ্রমণ ভিসা বন্ধ রাখার পদক্ষেপ। এর মানে হলো, আমার বাড়িতে অন্য বাড়ির কেউ আসতে পারবে না! যার অর্থ দাড়ায় এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে যতগুলো দেশ আছে, একটা দেশ থেকে আরেকটা দেশের সকল যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন করে রাখা।

যদিও আমাদের দেশে এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রমণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চেয়ে নুন্যতম, তবুও আমাদের ভয় থেকে যাচ্ছে নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী সময়ের দিকে। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে এখনো এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তবুও এই রোগসংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী সময়ে হয়তো অনেকেই না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করে মৃত্যুবরণ করবে; তা কিন্তু একশো-তে-একশো নিশ্চিত!

তখন এরকম পরিস্থিতির শিকার শুধু আমাদের দেশেই হবে না, সারাবিশ্বই একইরকম পরিস্থিতির শিকার হবে বলে ধারণা করা যায়। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এরকম পদক্ষেপকে একরকম মরণঘাতী পদক্ষেপই বলা চলে। যেখানে সারাবিশ্ব এই মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের আক্রমণ সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার কথা, সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে একঘরে হয়ে থাকা। তাহলে এতে বুঝাই যাচ্ছে যে, যখন এই মরণঘাতী ভাইরাস ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয় হতে থাকবে, তখন সারাবিশ্ব আক্রান্ত হবে অর্থনীতির দুর্দশার আক্রমণে।

এর কারণ হলো, আমরা কিন্তু সবসময়ই পরনির্ভরশীল। আমাদের যা-কিছু আছে, তা দিয়ে আমারা নিজেরা চলতে পারি না বলে অনেককিছুই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের আমদানি করতে হয়। আবার আমরা আমাদের উৎপাদিত থেকে নিজেরা খরচাদি করে বাড়তি কিছু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করে থাকি। দেশ থেকে আমদানি-রপ্তানি শুধু আমরাই করি না, বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন দেশেই আমদানি-রপ্তানিত করে থাকে।

তাহলে যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশের জনগণের জন্য ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ সবধরনের ভিসা বন্ধ কার্যক্রম চলতে থাকে, তাহলে তো এক হিসেবে আমদানি-রপ্তানি-সহ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন জীবিকার উপরই প্রভাব পড়ে। তাহলে বর্তমান সময়ের উদিত হওয়া মরণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের চেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ভাইরাসে রূপ নিতে যাচ্ছে; বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু একঘেঁয়েমি গৃহীত পদক্ষেপ। যা প্রাণঘাতী পদক্ষেপ বলে বর্ননা করা যায়।

প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস এবং আমাদের করনীয়

নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে সারা পৃথিবী এখন থরথর করে কাঁপছে। আক্রান্ত হচ্ছে লাখো মানুষ। মৃত্যুবরণ করছে হাজারে হাজার। যেটা ছিল বৈদেশে, সেটা এখন এসে পড়েছে আমাদের দেশে। এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ঘরবন্দী কার্যক্রম শুরু করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ রাস্তাঘাটে চলাফেরা বন্ধ করে ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন দেশের মানুষ নিজেদের দৈনন্দিন কাজকর্মও একরকম বাদ দিয়ে ঘরবন্দী হয়ে জীবনধারণ করছে।

এখন কথা হলো, আমরা কি ওইসব উন্নত দেশের মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে পারবো? ঘরে বসে থাকার মত আমাদের ক’জনেরই-বা ওইরকম সহায়সম্বল আছে? আছে হয়তো হাতেগোনা কিছু মানুষের। আর বাকি সবাই সহায়সম্বলহীন। তাহলে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের ঘরবন্দী নিয়মকানুন আমরা ক’জনই-বা মেনে চলতে পারবো? এক কথায় উত্তর আসবে, “পারবো না!” তাহলে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের যা করতে হবে, তা হলো–

১। প্রথমে মনের ভয় দূর করুন।
২। যাঁর যাঁর ধর্মমতে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণে রাখুন।
৩। নিজের মা-বাবাকে ভক্তিভরে শ্রদ্ধা করুন।
৪। যদি স্ত্রীর কথা শুনে নিজের মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে বৃদ্ধাশ্রম থেকে যথাশীঘ্র তাঁদের বাড়িতে নিয়ে আসুন।
৫। পরের ধনসম্পদে থেকে কুনজর পরিহার করুন।
৬। অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন।
৭। নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হউন।
৮। পরকে ঠকানোর চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকুন।
৯। যদি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন, তাহলে ক্ষমতার অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
১০। দেশ ও দশের ক্ষতি হয়, এমন কর্ম থেকে বিরত থাকুন।
১১। মায়ের জাতি নারীদের প্রতি কুনজর পরিহার করুন।
১২। মায়ের জাতি নারীদের নিজের মা-বোন মনে করে সমদৃষ্টি রাখুন।
১৩। সকল জীবের প্রতি উদার মনোভাব দেখান।
১৪। মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এই সুন্দর পৃথিবীকে ভালো-বাসুন এবং সব ধর্মের মানুষকে ভালোবাসতে শিখুন।
সবশেষে; যদি পারেন বিজ্ঞ চিকিৎসকদের আরোপ করা নিয়মকানুন মেনে সতর্কতা অবলম্বন করুন–

১। মুখে মাস্ক পরিধান করুন।
২। সবসময় নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৩। কারো সর্দি কাশি হলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
৪। দরকার হলে হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভস পরিধান করুন।
৫। প্রতিদিনের ব্যবহৃত কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন, ঘরদোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৬। যেখানে সেখানে কফ, থু থু ফেলবেননা।
৭। যাদের সর্দি কাশি আছে তারা রুমাল কয়েকটা সাথে রাখুন, এবং তা প্রতিদিন পরিস্কার রাখুন।
৮। কারো সর্দি কাশি, জ্বর এবং সাথে হাঁপানির মতো অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত স্থানীয় আইসিসিডিআর বির হাসপাতাল, বা সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালে গিতে নিজের চিকিৎসা নিন।

বিঃদ্রঃ মনে রাখবেন! এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে, একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা। আপনার আমার যতক্ষণ আয়ু আছে, ততক্ষণই বেঁচে থাকবো। আয়ু শেষ তো সব শেষ! রোগবালাই হলো একটা আলামত। ঝড়-তুফান, জলোচ্ছ্বাস, ভূকম্পন যেমন, ঠিক তেমন! এই আছে, এই নেই! এতে ভয়ের কিছু নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায় যা হবার, তা হবেই হবে।