সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

রহিতে ভুবন মাঝে

1860

কেবা না চায় আর কিছুটা
ক্ষণ রহিতে ভুবন মাঝে,
প্রেমের বানে ভাসিয়ে দিতে
এ ধরাতল সকাল-সাঁঝে।

শত বলাকা আকাশ তলে
যাচ্ছে উড়ে তেপান্তরে,
রহিতে হায় স্বজন মাঝে
ফিরছে শেষে নিজের ঘরে।

সব জীবের মিনতি কতো
ওই দয়াল প্রভুর কাছে,
একটু আশা রহিতে আরো
সেই আশাতে সবাই বাঁচে।

এই ধরণী কঠিন বড়ো
তাই হৃদয়ে থাকেই ভয়,
খানিক তবু রহিতে চায়
ধরা যদিও স্বর্গ নয়।
.
মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫ / ৫+৫

একুশের ঈদুল ফিতর

18293

করোনাকাল বদলে দিলো
আজ অনেক কিছু,
জীবন কতো থমকে গেছে
লক্ষ প্রাণ মিছু।

তবুও যেনো এবারো তাই
খুশির ঈদ আসে,
ছোট বা বড়ো দেশের সবে
খুশির বানে ভাসে।

ব্যবসা সব নষ্ট হলো
সংকটে যে সবে,
করোনার সে দাপটে হায়
গরিবের কী হবে ?

ঈদের জামা পায় নি কেউ
কষ্ট শিশু মনে,
কখন যাবে করোনা ফিরে
ভাবছে ক্ষণে ক্ষণে।

ঘরে নেই গো খাদ্য কিছু
ফুরিয়ে গেছে হাসি,
সবার মুখে একই জপ
যা না সর্ব নাশী।

.
মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫ / ৫+২

আমার এ চোখের ফ্রেমে

আমার এ চোখের ফ্রেমে

ফ্রেমে বাঁধানো সুন্দর ছবি
দেখি, নিয়তই পাই ধোঁকা;
ঐ সবুজ মাঠ, দীপ্ত রবি
আমি তবে আহাম্মক বোকা ?

ঐ যে মাতাল সমুদ্র ঢেউ
যেন যৌবনের চঞ্চলতা;
আড়ালে আবার হাসে কেউ
দেখে পুষ্প অলির সখ্যতা।

শিশির ঘাসে দারুণ প্রেম
ঘুরে প্রজাপতি বাগে বাগে;
আজগুবি লাগে ঐ সে ফ্রেম
ঝর্ণা বয় কল কল রাগে।

আমার এ চোখের ফ্রেমে
আছে বন্দী আজে বাজে সব;
বাড়ে দীর্ঘশ্বাস ক্রমে ক্রমে
কলহ দ্বন্দ্ব, আছে রণরব।

নেই সবুজ শ্যামল ভূমি
মাঠে নেই ঐ স্বর্ণ ফসল;
মানুষ সবাই আকাশ গামী
সুখীও তবে যারা সবল।

নেই জলধারা, গাছপালা
ছবিতে অগনিত মলিন মুখ;
অশ্রুধারা, শুধু ছলকলা
অস্থিসার, ভাঙ্গা কতক বুক।

রচনা: ২০১৩

বন্ধুর পরিচয়

179136

সুসময়ের অনেক বন্ধু
দুধের মাছির মত,
অসময়ে রয় না পাশে
দূরে সরে তত।

পৃথিবীতে ঘটছে এমন
দেখি দিনে রাতে,
সুদিনে রয় কাছাকাছি
সতত রয় সাথে।

প্রবাদ আছে সুসময়ে
বন্ধু তোমার হবে,
যখন তবে মন্দ সময়
দূরে দূরে রবে।

ভ্রমর যবে বাগানে পায়
কুসুম কলির গন্ধ,
মধু পেতে পাগলপারা
হয় সে তখন অন্ধ।

বন্ধু আসল তব কান্নায়
অশ্রু জলে ভাসে,
তোমার সুখে খুবই খুশি
শান্তি বানে হাসে।

.
স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+২

হেসে খেলে আবার রঙিন

278_n

নেই আনন্দ নেই যে হর্ষ
এসেছে ফের নতুন বর্ষ;
চারিদিকে করোনার ডর
আসে কভু বৈশাখী ঝড়।
মাস্কটি পরে সবাই চলে
রাস্তা ঘাটে দলে দলে।

মুখ সকলের কী বিমর্ষ
এসেছে ফের নতুন বর্ষ;
আম্র কানন গন্ধে ভরা,
মৌমৌ গন্ধ আকুল করা।
গা ছুঁয়ো না, রহো দূরে
একি দশা দেশটি জুড়ে।

লকডাউনে দেশটি অচল
খুশি সবার হয় রসাতল;
নাহি উৎসব না সমাবেশ
হয়েছে শেষ সুখের রেশ।
কবে তবে ফিরবে সুদিন
হেসে খেলে আবার রঙিন।

.
স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+৪

মধুর বিধুর স্মৃতি

41_n

জীবনে রয় বিধুর স্মৃতি
দাগ কাটে যে ক্ষণে,
মধুর স্মৃতি উঁকি দিতেই
ফুর্তি জাগে মনে।

এই জীবনে চলার পথে
স্বপ্ন বুনি কতো,
হই সফল কভু বিফল
পথে বাধা যে শত।

জীবন রথে সকল ক্ষণে
সদা স্বপ্ন জাগে,
এই তো রীতি চলছে হায়
কঠিন ধরা বাগে।

মধুর হোক বা সে বিধুর
হৃদয়ে যেই বাজে,
তাইযে মোরা নতুন আশে
মগ্ন থাকি কাজে।

স্মৃতি জীবনে কভু হাসায়
কভু কাঁদায় হায়,
জীবন রথ থামে একদা
মুক্তি খোঁজে পায়।

.
মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫ / ৫+২

আত্মনির্ভর

12-Habits

শুকনো ডালে শক্তি কোথা
বেশি ওজন সহে,
তাজা ডালের শক্তি বেশি
শুকনো ডালে নহে।

পাখ-পাখালি ভরসা করে
তারি ডানার ‘পরে,
ঝড়-তুফানে ভীত নয় সে
মরে না তাই ডরে।

নিজের বলে পথ চললে
রয় না ভীতি মনে,
অধীনতয়া দুঃখ আনে
বলেন জ্ঞানীজনে।

ভরসা করো আত্মবলে
বাঁচতে হলে ভবে,
বাসবে ভালো তোমায় সবে
জীবনে সুখ রবে।

পাখির মতো আমরা হবো
উড়বো স্বীয় বলে,
নিজের পায়ে এগিয়ে গেলে
সুফল তবে ফলে।

.
মাত্রাবিন্যাস : স্বরমাত্রিক : ৫+৫/৫+২ এবং ৪+৪/৪+২

ঘুষখোর হাসু কাকা

175709533_

হাসু কাকা ঘুষখোর পাকা
ঐ তাঁর সুন্দর ঘর,
কাকুর যে আজ প্রতাপী সাজ
মানুষে পায় ডর।

নেতা পাতি কাকার খ্যাতি
ভাষণ কাকার বেশ,
সদাই বলেন নানান ছলে
ভালোবাসেন দেশ।

দেখতাম তাঁকে রাস্তার বাঁকে
বেচতেন বিড়ি পান,
যেতেন কাজে কন না লাজে
অফিস দাড়ো-য়ান।

ঘুষের টাকা আয় সে পাকা
জুটতো প্রতি-দিন,
চতুর মানুষ বসের ফানুস
দুঃখ সবই লীন।

এখন যে তাঁর বড় কারবার
দেশের প্রেমিক আজ,
সম্পদ ভারি বাড়ি গাড়ি
করছে দেশে রাজ।

.
মাত্রাবিন্যাস : স্বরবৃত্ত : ৪+৪ / ৪+১

একদিন সবই শেষ

1731387

কতো কিছু সে আয়োজন
ছিলো নাকো তার প্রয়োজন;
পূব আকাশে ঐ যে রবি
লাল আবিরে দারুণ ছবি
একদিন সবই শেষ,

পাখ-পাখালি গাছে গাছে
একসাথে সব বসে আছে;
মাঝে মাঝে কোকিল ডাকে
কুহু ডাকে পাতার ফাঁকে
নিমিষে হয় সব রেশ।

কতো কিছু সে আয়োজন
ছিলো নাকো তার প্রয়োজন;
মেঘের রাশি আসলো বলে
গুরু গুরু ডেকে চলে
শেষে হয় সে জল,

বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে
স্বপ্ন তার যে শুধু ওড়ে
তাই সে দিলো সাগর পাড়ি
আকাশ বুকে গড়ে বাড়ি
শেষমেশ বারি ঢল।

.
মাত্রাবিন্যাসঃ ৪+৪ / ৪+৪ / ৪+২

একদিন

y

তবুও তো জীবনখানি চলছে ধেয়ে
স্বপ্ন কল্পনা ভাবনা শত
বাঁধছে বাসা হৃদয়ে যত
জোর করে হাসছি কিছুই না পেয়ে।

জগতে কারো কথা, কেউ না শুনে
নীরবে সহি সকল ব্যাথা
মুখে ফুটে না কোন কথা
রণিত হয় কান্না শব্দ অন্তর কোণে।

তবু চলছি পথ জীবন ঝুলেই কাঁধে
সাধ আহ্লাদ চাপা পাথরে
সর্বদাই কেঁদে কেঁদে মরে
কখনো ঝড় কবলে, নানান ফাঁদে।

মনে হয় জীবনগুলো বালিতে গড়া
ভাঙ্গে কখনো বা প্লাবনে
ঘুরছি আমরা নশ্বর ভুবনে
একদিন ঐ মৃত্যু আসে, হাতে কড়া।

জেগে উঠুক প্রাণে নব সূর্য কিরণ

8680

বৈশাখী ঝড় কখনো বা অতি বৃষ্টি
খরা করে গেল নষ্ট কত ফসল;
বদলে গেল কত যে জীবনের কুষ্ঠি
দগ্ধ করলো প্রাণ বারুদ অনল।

কত যন্ত্রণা শঙ্কা বাংলার ঘরে ঘরে
ধ্বনিত আহাজারি আর বিলাপ;
তবু যেন এই বাংলার মানুষ পারে
করে হজম, চলে প্রেম সংলাপ।

লঞ্চডুবি অহরহ দুর্ঘটনা পথে ঘাটে
রয় ভারাক্রান্ত দু’চোখ সজল;
গুম হত্যা ঔদ্ধত্য প্রতারণা বিভ্রাটে
প্রাণ স্পন্দন থেমে হয় অচল।

এসেছে আবারও ফিরে নূতন বছর
সবার কাঙ্ক্ষিত পহেলা বৈশাখ;
ছোঁড়ে ফেলি ভুলি অতীত কষ্ট প্রহর
হোক নির্বাণ হৃদয়ে জমা আগ।

চারিদিকে কত আনন্দ হৈ-হুল্লোড়
উৎসবে মেতেছে গোটা দেশ;
বর্ণিল সাজে কি মমতা প্রেম ডোর
উচ্ছ্বসিত সবি স্ফূর্তি আবেশ।

জেগে উঠুক প্রাণে নব সূর্য কিরণ
অপ্রাপ্তি ভুলে খুশীর উন্মোচন;
আর নয় হিংসা, কলহ, রক্ত ক্ষরণ
জমে উঠুক সবে মমতা বন্ধন।

নববর্ষের শুভেচ্ছা

আবোল তাবোল

আজকাল তবে জীবন কতো
সহজ হলো ভাই,
হাঁটাহাঁটি কি দরকার ? সব
হাত বাড়ালেই পাই।

যাদের আছে গাড়ি একখান
লাগে না আর শ্রম,
আধা ডজন চাকর বাকর
সুখের নেই যে কম।

আগের দিনে দূর দূরান্তে
ছিলো বাজার হাঁট,
পায়ে হেঁটে চলতো সবাই
মেঠো রাস্তা ঘাট।

দ্রব্য মূল্য বাড়লে আহা
ছুটতো গায়ের ঘাম,
কৃষাণ কষ্টে ফলায় শস্য
পায় কখনো দাম ?

মূল্য তবে বাড়ুক কমুক
ধনীর খুশির ঝড়,
শ্রম নেই তারি বাড়ে ভুঁড়ি
তাতে কিসের ডর ?

স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+১

পাল্কি আর কোথায়

dnj73ep

আগের দিনে সকল গাঁয়ে
পাল্কির ছিলো চল,
নায়র যেতো মা বোনেরা
নামতো খুশির ঢল।

চার বেয়ারা নিতো কাঁধে
ঝরতো কত ঘাম,
এখন আর সে কোথা দেখি
আধুনিক সব গ্রাম।

নতুন বধূ শ্বশুর বাড়ি
পাল্কি চড়ে যায়,
বাপের বাড়ি ছেড়ে যেতে
কন্যার কষ্ট হায়।

তবু কন্যার অনেক স্বপ্ন
করবে স্বামীর ঘর,
মা বাবা আর স্বজন সবে
এখন তার যে পর।

রয় সে শঙ্কা তবুও মনে
কেমন জানি হয়,
যে করে হোক কন্যার স্বপ্ন
করবে তাদের জয়।

স্বরবৃত্ত : ৪+৪+৪+১

আমি হবো রাজা

images

ইচ্ছে করে হবো রাজা
করবো দেশের ভালো,
দেশের থেকে তুলবো ফেলে
আছে যতো কালো।

হেথা হোথা দেশে আজি
ঘুষে গেছে ভরে,
কঠিন সাজা দেবো ওদের
একটা একটা ধরে।

স্বৈরাচারী যতো আছে
দেবো আমি ফাঁসি,
তবেই যেন পাবো শান্তি
দেখবো প্রজার হাসি।

গরিব কত না খেয়ে রয়
আমার কষ্ট লাগে,
দেশের যুবা বেকার আছে
মনে দুঃখ জাগে।

মুনাফাখোর বিষ মিশিয়ে
মারছে মানুষ দেশে,
ধরবো আমি নিজের হাতে
ফাঁসি দেবো শেষে।

এদেশটা সকলের

8443

দেশটা নয় যে কারো চাচার
নয় গো একার এদেশ,
স্বাধীন হয়ে আছি যেথায়
নাই কো হিংসা ও দ্বেষ।

গায়ের শক্তি চলছে দেশে
যেনো দেশটা তাদের,
এদেশখানি একাত্তরে
রক্ত ঝরলো যাদের।

কতো কষ্টে আনছে টাকা
জন সাধা-রণে,
কায়দা করে ঘুষটি নিচ্ছে
অসাধু কয় জনে।

যারা হায় গো চাইছে এখন
রঙিন টাকা কিছু,
আর দিও না টাকা ওদের
টেনে আনো নিচু।

দেশ হয়েছে স্বাধীন আজি
চলো দেশটা গড়ি,
খাচ্ছে লুটে যারা এদেশ
তাদের আনো ধরি।

.
ঠোঁট মুক্ত ছন্দ
স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+২