রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

স্বপ্ন

2822aa

স্বপ্নদের কোনো ডানা নেই, তারা উড়তে পারে না। তাদের তাড়িয়ে নিতে হয় পুব থেকে পশ্চিমে। মুখোমুখি ডুবতে চাওয়া সূর্যের দিকে অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে, একঝাঁক চড়ুইয়ের মতো ব্যস্ততা নিয়ে।

চিবুকের চিঠিতে রাখা আছে এক কল্প ছবি। স্বপ্নরাজ্যে মেঘ-বাতাসের ভেজা শিমূলের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে উপোসী অধর। ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো স্রোতহীন চোখ গুনে যায়, সাগর জলে ঢেউয়ের পরে ঢেউ। অপেক্ষায় থাকে, হয়তো একদিন, ডুবতে চাওয়া সূর্যের দিকে অপলক তাকিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবে স্বপ্নেরা।

অপেক্ষার রঙ নীল। অপেক্ষা বুক জুড়ে, উঠোন জুড়ে।

*****
সামান্য চেষ্টা আমার তুলিতে।

মেঘের চূড়া

27616

মেঘ ছুঁয়েছে পাহাড় চূড়া-
বরফ গলা নদী
তোমায় ছুঁয়ে এমন করে
থাকতে পারি যদি

আপন মনে

রাত বিরেতে চলার পথে
তোমার আমার কথা
দুপুর বেলা সঙ্গে থাকে
নীরব অলসতা

সঙ্গোপনে

সন্ধ্যা প্রদীপ হয়নি জ্বালা
তবুও এত আলো
আকাশ জুড়ে তারার কুচি
করছে ঝলোমলো

আলোর নাচন

চাঁদের বুকে মেঘের বাসর
জোনাক জ্বলা মন
তোমার হাতেই আমার হাতের
পূর্ণ সমর্পণ

মরণ বাঁচন

গভীর রাতে কথার সাথে
গানের সুরে ভেসে
তোমায় আমি জড়িয়ে থাকি
আনন্দে আশ্লেষে

ভীষণ ভালোবেসে

হৃদয় সাগর উথালপাথাল,
থাকনা বিষাদ দূরে
জীবন খাতায় প্রতি পাতা
ভরবে তোমার সুরে

স্বপ্নে কাছে এসে

আমার ভাষা

274610

অনেকেই তোমাকে অস্বীকার করছে
অনেকেই তাদের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে চেয়েছে
তুমি তো সেই প্রাচীন,
প্রায় বৃদ্ধাশ্রমে অপেক্ষারত
আমার প্রিয় ভাষা,
বাংলা ভাষা
২১শে ফেব্রুয়ারী,
হৃদয়ের একেবারে গভীরে তোমাকে রেখেছি।
যারা তোমায় ভুলে গেছে জেনো তারা একদিন ফিরে আসবেই।

কোন কিছুতেই তোমার ভরাডুবি হবে না
আমরা আবার তোমার হাত ধরে যাবো,
আরোগ্য সাধ্য আলোর অভিমুখে…

মন খারাপ

27370

এই শব্দ ছুঁয়ে যাক তাকে
আজ যার সবচাইতে মন খারাপ,
অযথা শব্দবাণ ভুলে,
সাতকাহনের ঘুর্ণিপাকে বয়ে,
মনকুচি উড়ে উড়ে ঘর-জুড়ে।

কত জন কত কথা বলে।
জানা অজানা মন ভাসে চোখের জলে।
রাতচরা সব কথা ভুলে,
আনাচকানাচে থাকা আনন্দকুচি যত,
নেমে আসুক ফুরফুরে হাওয়া ঘর-জুড়ে,
এককুচি মন তুলে রাখি বসন্ত পরাগে।।

মন কেমনিয়া

272733

এই যে শীতকালীন বৃষ্টি! এলোমেলো হাওয়া! আস্তে আস্তে আলো নেমে যাচ্ছে ওই দূরের নারকোল গাছের পাতার আড়ালে। শীতের হাওয়া বারান্দা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আমার ঘরে। দিনান্তের অনন্ত ক্লান্তি অফুরান্ত হাসি নিয়ে বসে আছি ক্যানভাসের সামনে। শীত আদরের চাদর খানি খসে পড়বে রাতের মন-কেমনিয়া রূপকথার মতো। রাতের কুয়াশার মতো ঘিরে ধরবে মায়া। কিছুতেই ফিরতে পারবে না আনমনা মন।

ইচ্ছে নদী

272088

ঘাসের উপর শিশির হবো
নির্মল শৈশব দাও যদি।

আহির ভৈরবে হবো ভোর
অস্তিত্বে স্নিগ্ধ হবে নদী

অভিমান তীব্র হলে হবো
দহনের আগুন পোড়া রং

নির্জন দুপুরে হতে পারি
মুখরিত গৌর সারং

দিন অবসানে সান্ধ্য আজানে
হবো পবিত্র আলাপন

ভালবাসা আর বেদনা মিশিয়ে
হবো কী বেহাগ অথবা ইমন

সেই মেয়েটা তারারকুচি

2690732

সেই মেয়েটা রোজই আসে
সবুজ ঘাসের স্বপ্ন বুনে,
নীলচে আলোর পরত গুনে
লুকিয়ে মাখে মেঘের ফেনা।

রাতের তারার আকাশ দেখে
হাত ছড়িয়ে হাওয়ায় ভেসে,
থমকে দাঁড়ায় ঝড়ের কাছে
পকেট ভরা তারারকুচি।

খুব গরমে রোদকে বকে
বৃষ্টিকে যে আগলে রাখে
ওই মেয়েটা যখন আসে
চাঁদের আলোয় আকাশ ভাসে।

গপ্প বলে কথার ফাঁকে
মেঘ পরীদের সঙ্গে ডাকে
তুমিই জানো সেই মেয়েটা
একটু খানি পাগল কিনা!

আমিও তাকে লুকিয়ে দেখি
ছাদের মাঝে ঘুরতে থাকি
চোখের তারার মাঝে কি সে
রামধনুকে লুকিয়ে রাখে?

মাঝে মাঝে ভুল করে সে
আবোল তাবোল বকবকমে
মনটাকে তার লুকিয়ে রেখে
ছড়িয়ে পড়ে পরাগ মেখে।

রোজ সকালে চুপটি করে
পুব আকাশের জানলা খোলে,
চলতে গিয়ে পথের বাঁকে
থমকে গিয়ে তোমায় খোঁজে।

মেয়েটা বুঝি বড্ড সরল
একটু দস্যি নেইত গরল,
বৃষ্টি হলেই ভিজতে দেখি
ময়না, শালিক সঙ্গে রেখে।

আমি জানি কোথায় থাকে
আমার মনের ঠিক কিনারে
ফুল পরীদের কাপড় পরে
আমায় ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে কাছে।

অবাক হয়ে আকাশ দেখে
মনে মনে গুনগুনিয়ে
হাজার তারার আলোর মাঝে
চাঁদের আলোয় স্নান করে সে।

কবির জীবনে নারী

কবির জীবনে নারী :
______________________

আমরা সবাই জানি তাঁর জীবনে তিনজন নারীর প্রভাব ছিলো সবথেকে বেশি। প্রেমিকাদের জন্য লিখেছেন অজস্র গান, কবিতা, ঘটিয়েছেন নানা ঘটনা। প্রেমের কবিতায় তাঁর তুলনা নেই। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি প্রেমে পড়েছিলেন বারবার।

কবি যাঁদের প্রেমে পড়েছিলেন, প্রথমেই আসে নার্গিসের কথা। ১৯২১ সালে কবি তাঁর বন্ধু আলী আকবর খানের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কুমিল্লার দৌলতপুরে। সেখানে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সৈয়দা খাতুনের। কবি ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাইকে গান শুনিয়েছিলেন। নজরুলের গানের সুরে মুগ্ধ হলেন সৈয়দা খাতুন আর সৈয়দা খাতুনের রূপে মুগ্ধ নজরুল। কবি প্রেমে পড়ে গেলেন প্রথম দর্শনেই। সৈয়দা খাতুনও সমান আগ্রহে কবির প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন। সৈয়দা খাতুনকে ভালোবেসে কবি তাঁর নামও বদলে দিলেন। তিনি তাঁর নাম দিলেন নার্গিস। নার্গিস ইরানি শব্দ, যা এক সাদা ফুলের নাম। দৌলতপুরে থাকা অবস্থাতেই কবি সিদ্ধান্ত নিলেন, নার্গিসকেই তিনি বিয়ে করবেন। বিয়েও হয়ে গেল কয়েক দিনের মধ্যে। কিন্তু ইতিহাস রচনা করল এক দুঃখের নাটক। বিয়ে হলো ঠিকই, বাসর আর হলো না। কবির কাছে শর্ত রাখা হয়েছিল ঘর জামাই থাকবার। সেই রাতেই কবি অভিমানে বাসর ছেড়ে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দৌলতপুর থেকে চলে আসেন কুমিল্লায়। কিন্তু কবির সেই অভিমানের কারণ কবি কোনো দিন কাউকে মুখ ফুটে বলেননি।

এর পর যদি কারও নাম আসে, তিনি হলেন মিস ফজিলাতুন্নেসার। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর মুসলমান ছাত্রী। ইতিহাস বলে, এই প্রেম ছিল একতরফা, মানে শুধু কাজী নজরুল ইসলামের দিক থেকেই। ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে কবির পরিচয় হয় ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কবি তখন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন ঢাকায়। কবি একটু-আধটু জ্যোতির্বিদ্যা জানতেন। কাজী মোতাহার হোসেন সে কারণে কবিকে নিয়ে যান ফজিলাতুন্নেসার বাসায়। ব্যস! শুরু হয়ে গেল হাত দেখা। প্রথমে হাতে হাত, পরে চোখে চোখ। কবির মন প্রেমে টালমাটাল হয়ে উঠল। কবি চলে গেলেন ঢাকা ছেড়ে। কিন্তু ফজিলাতুন্নেসা থেকে গেলেন তাঁর মন জুড়ে। তার পর থেকে নজরুল লিখে চললেন একটার পর একটা প্রেমপত্র।

তবে শেষ পর্যন্ত নজরুলের জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলেন প্রমীলা সেনগুপ্তা। প্রমীলাদেবীর ডাকনাম ছিল দুলি। জানা যায়, নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় থাকা কালীন প্রমীলাদেবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরেন। প্রমীলাদেবীর সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় ক্রমশ প্রেমে পরিণত হয়। তিমি তাঁর এই প্রেমের কথা লিখেছেন, তাঁর ‘বিজয়িনী’ কবিতায়। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে। বিয়েতে বাধা ছিল একটাই, ধর্ম। বিবাহ-আইনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল স্ব-স্ব ধর্মপরিচয় বহাল রেখেই। তখন প্রমীলার বয়স ছিল ১৪ আর নজরুলের ২৩। নার্গিসকে উদ্দেশ্য করে কবি লিখেছিলেন, ‘হার-মানা-হার’। অবশেষে সেই ‘হার-মানা-হার’ পড়ালেন প্রমীলা সেনগুপ্তার কণ্ঠে।

দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৬২ সালের ৩০ জুন মৃত্যুবরণ করেন কবিপত্নী প্রমিলা নজরুল। প্রায় ২৩ বছর পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বাকরুদ্ধ অপ্রকৃতিস্থ কবিকে স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ দেন বন্ধু শৈলজানন্দঃ ”নূরু, দুলী আর নেই।” কবি ফ্যাল ফ্যাল করে বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হয়তো চেষ্টা করছিলেন, দুলী কে ছিলো তাঁর জীবনে, মনে করতে।বিষাদাক্রান্ত হয়ে পরে মন। মনে পড়ে কবির অমর গানঃ
‘ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায় ওগো জাগিও না।’

শুনেছি প্রেম নাকি কবি মানসের প্রধান প্রেরণা। প্রেমিক কবি নজরুলের মন তো প্রেমময় হবেই। আর তাই প্রেম নজরুলের জীবনে এসেছিল বারবার—কখনো ঝড়ের মতো, কখনো নিভৃতে। কখনো রানু সোম (প্রতিভা বসু), কখনো কানন দেবী, আবার কখনো জাহানারা বেগম চৌধুরী, কখনো উমা মৈত্র। কবি বারবার ভেসে গেছেন প্রেমের জোয়ারে।

আলোমাখা ভোর

26293

আলোমাখা ভোর

ভোর চলে যেতে যেতে রেখে যায় চড়ুইদের ধুলাবালি স্নান, শালিখ সংসার, কাকেদের কনসার্ট, স্কুল বাস আর চায়ের দোকানের উনুনের উপচে পরা কয়লা মাখা ধোঁয়া। এ সব কিছু পেরিয়ে এগিয়ে চলে রোদ পরতে পরতে, যত দূর দেখা যায়, তার থেকেও দূরে। পালিয়ে যেতে চায় মন সেখানে, যেখানে শরৎ শেষে হেমন্তের উঠোন জুড়ে ঝরে পড়ে ঈশ্বরময় গন্ধ।পালিয়ে যেতে চায় মন সেখানে, যেখানে শৈশব জুড়ে বসে থাকে অকৃত্রিম ভালোবাসার ওম। এক আকাশ, কোটি কোটি টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে রূপকথা মন। খুঁজে নেয় আনন্দ আর বেঁচে থাকার রসদ।

ততদিন বিষাদ ফিরে আসিস না তুই।

সাধারণ আমি

26204

সাধারণ মেয়ে মালতির মতই অতি সাধারণ আমি। এতোটাই সাধারণ যে সময়ের নদী তিরতির করে বয়ে, পায়ের পাতার নীচে আকুল হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমার ঘরে ফেরার ইচ্ছেরা সব জেগে ওঠে। যে ঘর আছে আমার মনের ছায়ায়, যে ঘর আছে শতেক সময় তীরে।

অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি। একা একাই এক বুক মাটি কেটে রাখি,আর রাখি এক ফালি ফলন্ত জমি,শীতে, ফাগুনের আগেই, যে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে মান্দাসে। অসংখ্য অবজ্ঞার পরে,পড়ে থাকে নির্ভার আলো, আলগোছে মন ভুলে, থেমে যাই নির্জন এক দ্বীপে।

আমি অতি সাধারণ মেয়ে। লোকালয় থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখি, রাত জাগা তারাদের সাথে চলে নিজেকে চেনার পালা।মাঝে মাঝে কার্ণিশে দাঁড়িয়ে, হাওয়ায় মাপি মুক্তির দৈর্ঘ্য,আলতো করে ছড়িয়ে দিয়ে হাত, কিন্তু ডানাজোড়া যে ছিঁড়েই গেছে কবে।

অত্যন্ত সাধারণ আমি। পৃথিবীর বুক থেক জলছবি জমা হতে থাকে। অভিমান হাত রাখে হাতে, নিশ্চুপ মন আরোও চুপচাপ হয়। ছাদ ঘেরা পাঁচিলের আগাছায়, জমে চলে আজন্ম অনুভূতি, রাত কেড়ে রাত্রি নেমে আসে, হিম হিম কুয়াশায় ভিজে যায় যত ইচ্ছে কুসুম।

আমি অতি সাধারণ মেয়ে। কিছুতেই আমি অসাধারণ হতে পারিনা।

(‘প্রেমিকের নাম আগুন ‘কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)

আগুন ফুল

36973926_n

পচা সুতোয় গাথা জীবন,
সামান্য ভুলে মৃত্যুর হাতছানি।
দাঁড়িয়ে রয়েছি একা সতর্ক, আতঙ্কিত-
পাহাড়ের শেষ সীমানায়।

একবার ছুঁয়ে দেখতে চাই আগুন ফুলের গাছ।

উপনিষদের রাজকীয় ভঙ্গিমায়
সূর্যের মতো দীপ্ত প্রেমিক অপেক্ষায়।

অথচ আমি এক আলোকবর্ষ স্বপ্ন নিয়ে,
কেটে গেলাম অসুখি সাঁতার!

স্ফুলিঙ্গ

2460594

প্লাবন এসেছে বলে চিৎকার করলো
কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখলাম মৃতদেহ।
কেউ বলল মুখে জল দাও।
কেউ বলল চোখ বোজ।
শ্মশানে সাজানো কাঠের চিতা,
লক্ষকোটি স্ফুলিঙ্গের আহির ভৈরব।
প্রাচীন গুহায় আলোর রেখা যেদিন থেকে স্পষ্ট
সেদিন থেকেই ভিসুভিয়াস আগুন নদী।
সেদিন থেকেই পৃথিবী কক্ষচ্যুত।

শ্রাবণ সখা

18649

জানিস এখন টুপটাপ শব্দ বাতাসে। আর আমি কান পেতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে শুনতে চেষ্টা করছি। যদি তোকে কিছুটা হলেও শোনা যায়। বড় বেশি ভেজা চারপাশ।শব্দেরা তরঙ্গে তরঙ্গে তবু খেলে যায় লুকোচুরি। আমার আঙুলের ডগা বেয়ে ছুঁয়ে যায় মন, চোখ। অনেকটা অবকাশ হয়ে তুই কোন ফাঁকে আলগোছে এসেছিস আমার মনের জানলায়।

জানালার ওপারে বৃষ্টির হাতছানি। মনে পড়ে এমনই কোনো দিন আর দাদুর পাশে চুপটি করে বসে। মন দিয়ে শোনা গল্প রুপকথার। রাজকুমার আর রাজকুমারীর দুঃখ ব্যাথার। শুনতে শুনতে কখন যে কল্পনার পথে পথে দিলাম পাড়ি, অনেক অনেক দূরে চলে যেতাম, আমার পরিচিত লোকালয় ছেড়ে।

আজ সেই রূপকথা হারিয়েছি। সুতো কেটে উড়ে গেছে স্বপ্নের ঘুড়ি। একা আজ আমি সবার মাঝে। এখন আর হয়না দাদুর পাশে বসা, নেই দাদু আজ, নেই সেই রুপকথা। তবু আজও আছে সেই, পাতা ভেজানো, মন খারাপ করা বৃষ্টি গুড়ি গুড়ি।

তখন আমি তোকে দেখি, মনে মনে, আলতো আড়াল রেখে। মনে মনে তোর চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাই বহুদূর। তোকে দেখি আর রোজ রোজ ভাবি, পুড়ে যেতে বড় বুঝি সুখ! ঝলসে ঝলসেও কি আরামে থাকিস তুই! একটু একটু করে অন্যরকম হয়ে যায় সময়। তবুও অনেকটা চলা বাকি থেকে যায়। এই এত দূর থেকে আনমনে ভাবি, পুড়ে যাওয়া মন থেকে কি করে ভাসাস চন্দনের গন্ধ? আর এই গন্ধ, আর এই ভেজা ভেজা দিন, এই সব নিয়ে চলি আমি আমার পথ।

স্নান সেরে ভোরের মঙ্গল প্রার্থনায় তুই থাকিস অনেকটা জুড়ে। নিষ্পাপের অভিমানে, ভালো থাকিস তুই।

দুর্গা

24554

তোমার দুর্গা কাশের মাঠে,
শিশির মাখছে গায়
আমার দুর্গা পথের ধারে
খাবার খুঁটে খায়।

তোমার দুর্গা অকালবোধন,
হিমালয়ের মেয়ে
আমার দুর্গা শুয়ে আছে
একা কিচ্ছুটি না খেয়ে।

তোমার দুর্গা শপিং মলে,
পিৎজা হাটে ঘোরে
আমার দুর্গা ভিক্ষা করে
চৌ রাস্তার মোড়ে।

তোমার দুর্গা ডিস্কো থে‌ক,
ফ্যাশন প্যারেড করে
আমার দুর্গা স্বামীর হাতে
লাঞ্ছনাতেই মরে।

তোমার দুর্গা হাসি খিলখিল
ভালোবাসায় ঘেরা
নখের আঁচড়ে আমার দুর্গার
কাপড় খানাই ছেঁড়া।

তোমার দুর্গা দশভূজা
সিংহবাহিনী রূপ
অত্যাচারে দুর্গা আমার
নির্বাক, নিশ্চুপ!

স্বপ্ন দেখি তোমার দুর্গা
আমার দুর্গা হবে!
আকাশ জুড়ে মাতবে শরৎ
আগমনী উৎসবে!!