রোমেল আজিজ এর সকল পোস্ট

রোমেল আজিজ সম্পর্কে

শখের বশে কবিতা লেখা শুরু, কিন্তু নিজেকে কবি বলে পরিচয় দেন না। প্রচুর বই পড়েন, বই পড়া পছন্দ করেন, শুধুমাত্র কবিতার বই নয় যেকোন বই। আর মাঝে মধ্যে টুকিটাক লেখালেখি। বর্তমানে শখের বশেই সম্পাদনার সাথে যুক্ত আছেন "দ্বিপ্রহর" কবিতা ও গল্প সংকলন এবং "দ্বিপ্রহর" ম্যাগাজিনের সাথে। প্রিয় কবি জীবননান্দ দাশ, এছাড়া রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, হেলাল হাফিজ, শামসুর রাহমান, সুনীল, আবুল হাসানের কবিতাও প্রিয়। প্রিয় উপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পড়ালেখা ছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, পছন্দ করেন একা একা বেড়াতে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ঘুম আর অপ্রিয় জিনিস ধর্মীয় তর্ক....

তুই থেকে তুমি

-তুই কে?

-আমি? আমাকে বলছেন!

-তোরে কই নাই কী তোর বাপরে কইছি।

-বাপকে নিয়ে টানাটানি করছেন কেন, আর আপনার কথায় ইতো বুঝা যায়, আপনি আমাকে চেনেন না। তাহলে তুই তোকারি করছেন কেন?

-আরে ভোম্বা ব্যাডা, তোরে আবার স্যার কইতে হইবো!

-দেখেন সামনে এসে গায়ে পড়ে ঝগড়া করছেন কেন?

-অই দুই ট্যাকার পোলা, তোরে জিগাইছি তুই কে, কইলে কইবি না কইলে নাই। মাইয়া মানুষ দেখলেই কথা কইতে হইবো?

-আমি কখন আপনার সাথে কথা বলতে গেলাম, আপনিইতো প্রথমে কথা বলেছেন।

-আবার কথা, যাইবি না ভুঁড়ি গালাইয়া দিমু। যা ফোট….

এই কথায় হাফ ছেড়ে বাঁচলো সফিক। আজ সকালে কার মুখ দেখে যে উঠেছে মনে করতে পারছে না। দুপুরে বড় আপা ফোন দিয়ে বলছে অফিস থেকে এক ঘন্টা আগে বের হয়ে বাসায় যেতে। সবই ঠিক ছিল, হঠাৎ আপার বাসার কাছে এসেই এই রকম বাজে একটা অবস্থায় পড়তে হবে কে জানতো। দেখতে শুনতে ভালো অথচ এমন ফাজিল কোন মেয়ে আগে দেখেছে বলে তার মনে পরে না।

কলিং বেল শুনেই আপা দরজা খুলে দিল।

-আপা ফ্রীজের এক বোতল ঠান্ডা পানি দে তো

-আগে ফ্রেস হয়ে আয় আমি শরবত করে দিচ্ছি, এসে সঞ্চয়িতার পঁয়ত্রিশ নাম্বার পৃষ্ঠাটা খুলে দেখিস।

ছোটবেলা থেকেই আপার এমন অভ্যাস, ছোট ছোট চিরকুট রেখে বিভিন্ন কিছু করাবে, জন্মদিন অথবা অন্য কোন উপলক্ষে উপহার দিবে। আজ সফিকের জন্মদিন না সুতরাং কোন উপহার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফ্রেস হয়ে এসে স্বাভাবিকভাবেই সে সঞ্চয়িতাটা নিয়ে বসার ঘরে এসে পঁয়ত্রিশ নাম্বার পৃষ্ঠা খুললো। যা ভেবেছিল তা’ই, আপা একটা চিরকুট লিখে রেখেছে। “শেষ পৃষ্ঠায় একটা ছবি আছে, পছন্দ হলে বইটা টেবিলের উপর উল্টো করে রাখিস।”

চরম কৌতূহল নিয়ে সফিক আস্তে আস্তে শেষ পৃষ্ঠাটা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলো। এতো সেই মেয়ে যে কিছুক্ষণ আগে তাকে তুই তোকারি করে গেল!

আচ্ছা, তুই তোকারি করাটা আপার কোন বুদ্ধি না তো?

_________________________

১১.০৯.২০১৮

শূন্য

তুমি তো সন্ধ্যা কাটাও
জীবনানন্দে ডুবে,
আমি তখন শূন্যে ভাসি
অন্তহীন আঁধারে।

তুমি তো রাত্রি কাটাও
বর্ষায় ভিজে জলে,
আমি তখন শূন্য চোখে
একেলা থাকি জেগে।

চায়ের কাপে চায়ের তাপে
যায় যে সময় বয়ে,
শূন্য আমি তাকিয়ে
ফেলে আসা পথ চেয়ে…

০৮।০২।১৬

মানুষের গল্প ৬

অবরুদ্ধ একাকী সৈনিকের কাছে
বেলফুলের অঞ্জলী শুধুই মূল্যহীন;
হিংসুক হৃদয় যতোই হাসুক
দিন শেষে তব তারাই মলিন।

চিতায় চন্দন কিংবা আম
যে কাঠ সাজাক না কেন,
তা তো মড়াই পোড়ায়।

বোধহীন অহংকারী
যেদিন বুঝে সব, তার
থাকেনা তখন আর
ফেরার উপায়।

তবুও কিছু মানুষ
থাকে অপেক্ষায়,
কখন আসবে তাদের
শুভ বোধের উদয়…

নিরঞ্জনের না বলা কথা -২২

শরতের মেঘ নীল আকাশটাকেও মলিন মনে হয়,
চৈত্রের শেষ বিকেলের আরক্ত আকাশের কাছে।
মধ্য বর্ষায় হঠাৎ রংধনু দেখলে যে আনন্দ আসে
তাও বিষাদে ছেয়ে যায় একাকীত্বের বন্দী দেয়ালে।

উচ্চ মাধ্যমিকের যেদিন শেষ পরীক্ষাটা হলো
সেদিন থেকেই কিভাবে যেন দূরত্বের শুরু।
ফলাফলের তিন মাস শুধু শূন্যতার হাহাকার,
প্রতি সন্ধ্যায় রাতটাকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মনে হতো
আর সকালটাকে আলোকিত দীর্ঘ অবসাদ।

এভাবেই মানুষের অন্তহীন পথে ছুটে চলা,
এভাবেই নিসংগতার আগুনে নীরবে জ্বলা।

মানুষ বলেই আমরা জানি
প্রতীক্ষা আর অপেক্ষার
মাঝে পার্থক্য কী,
মানুষ বলেই আমরা জানি
কীভাবে কাটে নিরঞ্জনের
বিপাশা বিহীন দিন গুলি।

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ২১

সেদিনও সন্ধ্যায় আলো ফুটেছিলো,
ছিল দ্বাদশীর ঝলমলে নীল চাঁদ।
জোছনা জোনাক কখনো এক হয় না
কিন্তু কেন যেন সেদিনও জোনাক ছিল
ছিল কুয়াশা মাখা অস্থির জোছনা।

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ আর
তখন শীতের মাঝামাঝি,
ভোরে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায়
উঠোনে আগুন পোহানো।
সেই দুর্দান্ত দিনের এক
মিঠে রোদের সকালে
নিরঞ্জনের হঠাৎ আগমন!

“কী রে অরুণ, কাল রাতে
বিশু, সৌমেন তোরা কোথায় ছিলি?”

-কেন, কি হয়েছে?

-“বিপাশার মেঝ’দাকে দেখলাম
চেঁচামেচি করছে তাদের নাকি
গাছের নিচে রসের হাড়ি গড়াচ্ছে।”

-“সেজন্য তুই এভাবে বলবি?

-“কী করবো বল, বিশু থাকলে
তোকে বিশ্বাস করতেও ভয় হয়!”

-ছি! এই তোর বন্ধুত্ব?

-ছি! নারে, তুই আগে কাউকে ভালোবেসে দেখ
তখন বুঝবি ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের পার্থক্য…

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ২০

মধ্য আশ্বিনে শাদা মেঘফুল ভরা
নীলচে আকাশটাকে কেন যেন
অপার্থিব মনে হতো সব সময়।

পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির
ভাংগা পুকুরঘাটে তখন
আড্ডা জমতো আমাদের।

তেমন এক সন্ধ্যায় পুকুর জলে
ঝলমলে চাঁদ দেখছিলাম আমরা,
উওরটা কি হবে তা জেনেও
নিরঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলাম –
“কি তোর বেশী ভালো লাগে,
বিপাশা, না পূর্নিমার চাঁদ?”

ঈষৎ কপট দৃষ্টি ছুঁড়ে
নিরঞ্জনের ঠান্ডা উওর –
“চাঁদ তো কখনো অমাবশ্যার হয় নারে অরুণ
শুধু পূর্নিমারই,চাঁদের উপর একচ্ছত্র অধিকার।”

নিরঞ্জনের না বলা কথা- ১৯

স্কুলের শেষ ক্লাসটায় মনোযোগ ধরে রাখা,
সাইকেল চালানো শেখার সময় চাকার দিকে
না তাকানোর চেয়েও সব সময় কঠিন।

কোঁকড়া চুলের ঢেউয়ের মতোই
অনেকটা ছিল, আমাদের গ্রামের
আঁকাবাঁকা মেঠো পথ গুলো।
পণ্যের জীবন চক্রের ধাপের মতো
উত্থান-পূর্ণতা-পতনে সীমাবদ্ধ ছিল না
আমাদের কৈশরের দিন গুলি।
উচ্ছ্বাস উচ্ছলতায় কাটতো সময়,
চলতো বিপাশা নিরঞ্জনের চোখাচোখি।

বিজয়ায় প্রতীমা বিসর্জনের রেশ
তখনো রয়ে গেছে খাল পাড়ে,
দূর্গার ভেঙে যাওয়া কয়েকটা হাত
তখনো জলে ভাসছে এলোমেলো,
মন্ডপের ঢোল কাঁসার মৃদু শব্দ
আসছিল সেসময় থেমে থেমে।

নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলাম-
“পরজন্মে তুই কি হতে চাস,? ”

নিষ্পলক চোখে নিরঞ্জনের শান্ত উত্তর,
“এ জীবনেই যদি বিপাশাকে না পাই,
পরজন্মের স্থুল চাওয়া পাওয়ায়
তাতে আর কী আসে, কী যায়!”

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১৮

নবদ্বীপ থেকে লক্ষণ সেন
যেভাবে পালিয়েছিলো,
অনেকটা সেভাবেই
স্কুল পালাতাম আমরা।

আশ্বিনের রোদ ফুঁড়ে
হঠাৎ ঝরে পড়া বৃষ্টির মতো
উচ্ছ্বলতায় কাটতো
সেই অবিনাশী দিন গুলো।
তেমন একদিনে স্কুল পালিয়ে
মাঝপথে দেখা নেই,
বিপাশা – নিরঞ্জন দুজনেরই।

অগত্যা আবার প্রত্যাবর্তন,
এক বেঞ্চের দুই পাশে
চুপচাপ দু’জন।

– কিরে, হঠাৎ সুশীল হয়ে গেলি,
তোরা আর স্কুল পালাবি না?

চেয়ে দেখি নিরঞ্জনের
হাতের ইশারায়,
ব্যান্ডেজ বাঁধা সেদিন
বিপাশার ডান পা’য়ে…

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১৭

দিন দিন নীল থেকে নীলতর
হয়ে যাচ্ছিলো সেই সময় আকাশটা।
শিমুল তুলোর মতো শুভ্র মেঘগুলো
নীলের ক্যানভাসে দেখে মনে পড়ে গেল,
সেই দিনের মতোই এখন শরৎকাল।

পূজোর ছুটি চলছিলো তখন
কুমোরপাড়া ঘুমায়না রাত-দিন।
ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে দেখতাম,
খড়ের কঙ্কাল, মাটি-জল
মিলে মিশে একাকার।
সময় গড়ায়, দিন যায়
হাত-পা-মুখ-চোখ
একে একে সব হয়।

এমনই এক ছুটির বিকেলে,
ওপাড়ায় প্রতীমা বানানো
দেখতে গিয়ে বললাম-
“দূর্গার মুখটা বিপাশার মতো
করে দিতে বলবো নাকি?”

এক বুক চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,
নিরঞ্জন শুধু বলল-
“প্রতীমাতো পূজো শেষে
শুধু বিসর্জন,
আর বিপাশাতো জীবন শেষে
শুধুই আমার অর্জন…”

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১৬

পশ্চিম আকাশে তখনো
লালাভ আভা রয়ে গিয়েছে,
ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা
টুপ করে ডুবে যাওয়ার,
আগে থেকেই তাকিয়ে আমরা।

ঘরে ফেরা গরুগুলোর পায়ের ধূলো
তখনো ঊড়ছিল, দূরে নদীর তীরে।
ধীরে ধীরে আবছা হয়ে যাওয়া
পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলাম,
বরুণদের পরিত্যক্ত মন্দিরের
কাছে আসতেই,
হঠাৎই নীরবতার অবসান-

-জানিস অরুণ, সাপে কাটলে
ঘোড়া মরে না কখনো।

-বাজে কথা বলবি না,
আমাকে সাপের ভয় দেখাবি না।

-বাজে কথা না,
তুই এটা জানিস না।

– হয়তোবা…

– আচ্ছা অরুণ,
সাপে কাটা ভালো করার তো
কত কিছুই আছে,
কিন্তুু মন কাটা ভালো করার
কি কিছুই নেই?

– প্রশ্নটা তুই বিপাশাকে করিস,
নিরঞ্জন!

নিরঞ্জনের না বলা কথা-১৫‬

আমাদের গ্রামে খুব একটা
কাক দেখা যেতো না,
হয়তোবা শহুরে পাখি বলে।
কর্কশ শব্দের ভোর শুধু শহরেই হয়
গ্রামের ভোর গুলো আসে
চড়ুইয়ের কিচিরমিচির গানে।

এমন এক শেষ শরতে
স্কুল মাঠে শুয়ে শুয়ে,
মেঘ ফুঁড়ে উঁকি দেওয়া
সূর্যটাকে দেখছিলাম।

-আকাশ কি মেঘে ঢাকা থাকেরে অরুণ,
না মেঘ আকাশে ঢাকা থাকে?

– বিরক্তি নিয়েই বললাম,
অদ্ভুত প্রশ্ন করছিস কেন,
নেশা-টেশা করিস নি তো?

আহত দু’চোখ ভরা জল,
শূন্য আকাশপানে চেয়ে
নিশ্চুপ নিরঞ্জন।

– কি হয়েছে, বলবি তো?

– বুদ্ধিমানেরা ভুল করে একবার কিন্তু
বোকারা একই ভুল করে বারবার।

– মানে!

– এবার ইয়ার ফাইনালে কে ফার্স্ট হবে,
বলতে পারিস?

– কে আবার, বিপাশা।

– এবার আর বোধহয় পারলাম না,
ম্যাথ পরীক্ষার অর্ধেকটাও তো
দিতেই সে পারলো না…

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১৪

আমরা কখোনোই অরণ্যচারী ছিলাম না,
ঋতু পরিবর্তনের শেষ রাতের
জ্বরের মতোই বন্ধুত্ব ছিল আমাদের।

গ্রামের সাপ্তাহিক হাঁট
হেমন্ত শেষে মেলা,
সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখি,
অগ্রহায়ণের সকাল বেলার
ঘাসের ডগায় জলের ঝিকমিক,
এসব ঐসব সেসব দেখেই
কেটে যেতো দিন গুলি।

কোন এক শীতে
শিউলী ঝরা ভোরে,
অসময়ে ঝরে যাওয়া
ফুল পাতা দেখতে দেখতে
নিরঞ্জনকে বললাম-
“বিপাশা আর তোর
সম্পর্কটা কি বন্ধুত্বের,
না অন্য কিছু? ”

নিশ্চুপতা ভেঙে শুধু বলল-
“বন্ধুত্ব মানে তো স্বার্থহীন সম্পর্ক,
ভালোবাসায় তা সুদূর পরাহত।”

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১৩

সময়টা তখন বরষার শেষ
কিংবা শরতের শুরু।
নীল আকাশ ভর্তি
পেজা তুলোর মতো
বরফ শাদা মেঘ;
কাশবনে ঘাসফুলে
ফড়িংয়ের উড়া উড়ি
দিগ্বিদিক ছোটাছুটি।

এমন এক শান্ত বিকেলে
পদ্ম ফোটা রক্তাভ ঝিলের জলে,
ঢিল ছুঁড়ে ব্যাঙ লাফাচ্ছিলাম;
পাশে বসা নিরঞ্জন
লাফ গুলো গুনছিলো।

হঠ্যাৎ গুনা থামিয়ে বলল,

– তুই এভাবে আর ঢিল ছুঁড়িস নে।

– কেন?

– লাফিয়ে লাফিয়ে কি আর
জীবন পার করা যায়?

– ধূর শালা,
ফিলোসফি কপচাবি না।

– বিশ্বাসে সবই হয়
পাওয়া যায় শুধু সাধনায়…

– তাই বুঝি তুই ডুবেছিস,
বিপাশার তপস্যায়?

জ্বলন্ত দু’চোখ মেলে,
নিরঞ্জনের ধীরস্থির উত্তর-
“আগুন দিয়ে কি কখনো আগুন
পোড়ানো যায় রে অরুণ;
ভালোবাসা পেতে
শুধু নীরবে ভালোবাসলেই হয়।”

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১২

সে রাতেও আকাশটা
এমনই ঝকঝকে ছিল,
দ্বাদশীর ভাঙা আষাঢ়ে চাঁদ
জানালা ভরা দখিনা বাতাস।

সন্ধ্যা রাতে মেঠো পথটা
এঁকেবেঁকে এঁকেবেঁকে
কখনো চলতো বিপাশার পিছু,
কখনো চলতো নিরঞ্জন
ধূলো মাখানো সেই পথের পিছু।

একদিন বিপাশাকে বললাম-
“তুই কি জানিস তোর আর
নিরঞ্জনের পথের দূরত্ব কত? ”

বিপাশার চাহনিতে কৌতুহল!

-অর্ধেক পৃথিবীর সমান।

-ভ্যাট জানিস তুই।

– বিশ্বাস না হলে “তোর পিছু নিরঞ্জনের
হাঁটা পথটুকু মেপে দেখিস এক সময়।”

– পিছু পিছু চলা পথের কি
কোন মূল্য থাকে রে, অরুণ?

– তাহলে?

– চলতে হয় পাশাপাশি,
চোরের মতো পিছু পিছু নয়…

নিরঞ্জনের না বলা কথা – ১১

পূব আকাশে সদ্য বিধবা মেঘ গুলো
যখন নীলের দেশে সাদা ফুল ফুটাতো,
তখন স্কুল শেষে আদিগন্ত জুড়ে
রঙিন ঘুড়ি উড়াতাম।

এমন এক রংধনু মাখা লালাভ বিকেলে
নাটাই হাতে ঘুড়ি-রংধনু নিয়ে চরম দ্বিধাগ্রস্ত,
মাঠে বসা নিরঞ্জনের ঠোঁটে, মিটিমিটি হাসি।

-হাসিস্ কেন, কখনো কি রংধনুর আকাশে
ঘুড়ি উড়িয়েছিস ?

– আমিতো প্রতিদিনই রংধনুতে ঘুড়ি উড়াই…

– ধুর শালা চাপাবাজ!

প্রতি উত্তরে বললো শুধু –
” বিপাশার চোখ তো তোর
বুঝবার কথা না, অরুণ ”