মোঃ সাহারাজ হোসেন এর সকল পোস্ট

মোঃ সাহারাজ হোসেন সম্পর্কে

জীবন বিস্তারিত পরে দিবো।

মেঘনা নদীর কিছু মোবাইল ফটোগ্রাফি

PicsArt_11-15-10.13.33
মেঘনা নদীর সূর্যাস্তের ছবি।

PicsArt_12-08-03.13.01
এটাও মেঘনা নদীর।

PicsArt_12-08-01.04.01
এটা মেঘনা নদীর তীরে অব্যবহিত কুপ।

PicsArt_12-08-01.05.18

একি কুপ ভিন্নভাবে তোলা।

PicsArt_12-08-01.50.41

মেঘনা তীরের স্থানীয় ছোট ছোট খোঁকা রা লেখছে।

PicsArt_12-08-03.09.27

সবুজের মেলা।

PicsArt_12-08-01.48.00

গোয়ালঘর।

PicsArt_12-08-01.00.55

সবুজের মেলা।

PicsArt_11-15-10.24.48

একটু রোমাঞ্চিত হবার জন্য মেঘনার তীরে অনেকেই। বিকেলের ছবি।

PicsArt_11-15-10.23.08
সূর্যাস্ত।

PicsArt_11-15-10.19.21
মেঘনার পাশের ছবি, ধান খেত।

PicsArt_11-15-10.18.13

মেঘনার পাশে আরেকটি কুপ।

PicsArt_11-15-10.17.46

PicsArt_11-15-10.16.09

PicsArt_11-15-10.16.51

PicsArt_04-03-01.49.46

শুদ্ধ অশুদ্ধ হয়ে গেলো

শুদ্ধতার সাথে জন্মেছি আমি,
সবাই শুদ্ধতার সাথে জন্মেছে।
কারো কোনো পাপের চিহ্ন ছিলো না,
কোনো ভুলত্রুটি ও ছিলো না,
নিষ্পাপ ভাবে প্রত্যেকটি প্রাণ ধীরেসুস্থে বড় হচ্ছে।
তারপর আমি এবং সবাই ছুটে চললাম ভুলের মাঝে! ভুল নদীর স্রোতে,
শুদ্ধ অশুদ্ধ হয়ে গেলো।
কেউ ইচ্ছে করে অশুদ্ধের মাঝে পা বাড়িয়েছে!
কেউ ভুল করে অশুদ্ধের মাঝে পা বাড়িয়েছে!
কেউ আবার যাচ্ছি যাবো এমন গড়িমসি করে হারিয়েছে পথ!
কেউ আবার শুদ্ধতার সাথে থাকবে বলে করেছিল শপথ।
সময় যাচ্ছে চলে, অথচ কারো কোনো প্রতিক্রিয়া নেই একবিন্দু শুদ্ধ হবার,
কেবলি সময়ের সাথে গড়িমসি করে পার করে দিচ্ছে জীবন, নষ্ট করছে সময়!
সবাই যেন ভুলে গেছে, ঐ পাড়ে আমাদের আরেকটি জীবন আছে,
সবাই যেন এখন রঙিন চোখে চকচকে রংবেরঙের স্বপ্ন ঘাঁটাঘাঁটিতে ব্যস্ত,
সবাই যেন ঐ খেয়াঘাটে পারাপার ভুলে যাওয়া নৌকার মতো হয়ে গেছে!
আহা, আমাদের শুদ্ধ জীবন এখন অশুদ্ধ পথের স্রোতে মগ্ন,
শুদ্ধতার সাথে যাচ্ছি যাবো যাচ্ছি যাবো এমন আর কতো গড়িমসি করবো?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি

সুন্দরী নারীর কাছে কে না হার মানে?
আমিও তাই!
তাই-তো বহুবার ভেবে ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম— এখন থেকে আমার সমস্ত দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও আর অনাবাদী রাখবো না,
দুঃখের ভাগবাটোয়ারা দুজন মিলেই করবো,
সুখ দুঃখ মিলেমিশে পরিপূর্ণভাবে হবে পূর্ণাঙ্গ একটা সংসার।

কিন্তু কই আর হলো?
ভুল সিদ্ধান্তগ্রহণ করলাম!
ওই সুন্দরী নারীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাতে নিঃশেষ করলাম নিজেকে!
এখন কেবলমাত্র স্তব্দতা আমার সঙ্গী!
এই স্তব্দতা কেবলমাত্র আমার সঙ্গী নয়,
আরও বহু সুপুরুষকেও স্তব্দ করেছে সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি!

আমি কতবার যে দেখেছি,
সেই সুন্দরী নারীরা ঊরুভুরু শরীর দেখিয়ে কতো সুপুরুষ যোদ্ধাদের নিঃশব্দে নিঃশেষ করতে!
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাতে স্তব্দ করেছিল তাদের সমস্ত হৃদয়! ক্ষতবিক্ষত হয়ে অজস্র দীর্ঘশ্বাস! আর বেদনা ভরা হা-হা-কার দেখেছি!
সেই ক্ষতের চিহ্ন আমাকেও স্তব্দ করে দেয় এখনো!
কতো ভবিষ্যৎ যে অকাতরে ঝরে গেছে!
তা কেবল আমার অন্তরাল যানে।

কতো ইতিহাস জন্মেছিল
সেসব ইতিহাস গুপ্তই রয়েগেছে।

আমার মতো আরও কতো সুপুরুষের মুখে বলতে শুনেছি,
তাদেরও সমস্ত হৃদয় জুড়ে এক ইঞ্চি জমিও আর অনাবাদী রাখবে না,
অথচ তারাও ……..!!!!!!!!
আমি সেই সর্বনাশ দেখেছি
সেই দীর্ঘশ্বাস দেখেছি!
সেই হা-হা-কার ও দেখেছি!

কেনো?

কেনো নারী রাস্তাঘাটে রূপ দেখিয়ে
দেখায় কতো রং?
কেনো সর্ট জামা পড়ে কমর নেড়ে
দেখায় হাঁটার ঢং?

কেনো পরপুরুষের সাথে আড্ডায় মেতে
কাটিয়ে দেয় বেলা?
কেনো সিনেমাহলে গিয়ে বয়প্রেন্ড নিয়ে
খেলে প্রেমপ্রীতির খেলা?

কেনো নারী খেলবে ক্রিকেট- ফুটবল
ক্যারিয়ার গড়ার জন্য?
কেনো বিশ্বের মাঝে আজেবাজে সেঁজে
নিজেকে ভাবে ধন্য?

কেনো পত্রিকা জুড়ে শতো বিজ্ঞাপনে
ফালতু নারীর উৎপাত?
কেনো নারী মডার্ন হতে থাকে মেতে
মিডিয়ায় ভার্তি তেলেছমাত?

কেনো বাংলাদেশী নারী হতে চায়
ক্যাটরিনা কারিনা-কাফুর?
কেনো ভিনদেশী নারীর নগ্ন সাঁজে
চলতে বেশ চতুর?

কথা দিলাম

বাবা— আজ থেকে কথা দিলাম
হবো না আর অবাধ্য,
তোমার খোকা তোমার নির্দেশে
চলতে হবে বাধ্য।

আর কখনো করবো না তোমায়
বাবে বারে অতিষ্ঠ!
আর কখনো দিবো না তোমায়
হরেক জ্বালাময় কষ্ট!

আর কখনো শুনবে না বাবা
আমার সেই অপকর্মকার!
আর কখনো আসবে না বিচার
তোমার বকাটে খোকার।

বাবা— আজ থেকে কথা দিলাম
হবো আমি আদর্শবান,
তোমার আদর্শে আদর্শিত হয়ে
জনকল্যাণে করবো দান।

সমাজে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে
গড়বো তোমার সুনাম,
জনে জনে বাহবা জানাবে তোমায়
দিবে অনেক দাম।

বাবা— আজ থেকে কথা দিলাম
সন্মান হানি করবো না,
তোমার সন্মান মানি আমার সন্মান
সে কথা কখনো ভুলবো না।

বাবা— আজ থেকে কথা দিলাম
ভুলের পথে যাবো না,
মা- আর তোমার কথায় চলবো
অমান্য কভু করবো না।

সেলাই করা শার্ট

নতুন চকচকে শার্ট গায়ে দিতে কি-যে ভালো লাগে,
মনটা ও প্রেস ফ্রেশ লাগে।
কিন্তু চকচকে তো সবমসময় আর থাকেনা!
যতই লাক্স সাবান দিয়ে ধৌত করিনা কেনো,
আগের মতো আর চকচকে হয় না!

শার্টের বোতামগুলো এখন প্রাই জরাজীর্ণ অবস্থায়!
ওগুলো সেলাই করতে করতে সেলাই এর অবশিষ্ট কিছুই নেই!

তবুও মায়ের ওই সূক্ষ্ম হাতের সুই-এর সেলাই এ প্রত্যেকটি বোতাম হয়ে উঠে একেকটি নক্ষত্র,
যেনো নক্ষত্রের ছোঁয়ায় আমার সমস্ত শরীর ভাসছে।

শার্টের বোতামগুলো এখনো নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল,
মায়ের স্নেহশীল হাতের বিন্যাসে পুরনো শার্ট-টি নতুনের মতোই লাগে,

কিন্তু আগের মতো মায়ের হাতে সেলাই করা শার্ট এখন আর গায়ে দেয়া হয় না!
আমার খুব কষ্ট হয়! খুব কষ্ট!!!!

শিক্ষিত ছাগল

বলবো বলবো বলে অনেক কথা
জমে আছে মনে,
কাকে বলি ভাই পাই না উপায়
শুরু করি কেমনে?

এসো শুরু করা যাক, সবাই শুনতে থাক।

এ দেশে কিছু শিক্ষিত ছাগল আছে
জানি আমরা সবাই,
এমন ভাব নিয়ে চলে বড় কথা বলে
ভীষণ জোর গলায়।

নিজেকে ভাবে দক্ষ অন্যরা অজ্ঞ
কেবল সে পণ্ডিত মশাই,
বেটা কথায় কথায় মেজাজ দেখায়
জেনো আস্ত একটা কসাই।

এরা নাকি শিক্ষিত, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী
বুঝে হাল জামানার সবই,
মোল্লারা নাকি কিছুই বুঝে না জানেনা
কেবল বুঝে তারাই সবই।

মোল্লা দেখে বলে সন্ত্রাস, জঙ্গি, উগ্রবাদী
আরও নানান কথা বলে,
টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা দেখে চোখ রাঙিয়ে
কটাক্ষ করে করে চলে।

মোল্লারা নাকি দেশের বোজা দশের বোজা
খেয়ে খেয়ে নাকি উদর ভরে?
আমরা তো দেখি মোল্লারা নয় তোমরাই
দেশটা কে নিয়েছ রসাতলে ।

দেশের কুসংস্কৃত নিয়ে প্রতিবাদ করলে
কেনো করো তোমরা হামলা?
সন্ত্রাস বানিয়ে মোল্লাদের অপদস্থ করে
কেনো দাও মিথ্যা মামলা?

অফিস, আদালত, শিক্ষাঙ্গন, ভার্সিটি
দেখি সন্ত্রাস করে কারা,
আমরা দেখি ঘুষখোর, রক্তখোর তোমরা
করে না তো মোল্লারা।

নয়ছয় বুঝিয়ে এদিকের মাল ওদিক করে
খাও গোপনে গোপনে ঘুষ,
তোমরা তো ডুবে আছো স্বার্থের নেশায়
চুরিদারি তে হয়ে বেহুশ।

শিক্ষিত হয়ে কেমনে অন্নহীনদের রেখে
খাও পোলাও কোর্মা রোস্ট,
এসব নিয়ে মোল্লারা কিছু বলতে গেলে
ওমনি হয়ে যায় দোষ।

এই হাল জামানার কারুণ অবস্থা দেখে
কেবল মোল্লারাই কাঁদে,
তোমরা তো স্বার্থের নেশায় পকেট ভরতে
অন্যকে ফেলো ফাঁদে।

তবুও তোমরা মোল্লাদের বলো অপয়া, অধম
মিথ্যা অপবাদে বলো সন্ত্রাস,
আমরা তো দেখি মোল্লারা নয় তোমরাই
পদে পদে করো জাতীর সর্বনাশ।

মোল্লারা তো জাতীর কল্যাণের কথা বলে
সর্বনাশ কভু নয়,
কেনো তবে তাদের পিছু-পিছু অযথা
করো নয়-ছয় ?

মোল্লাদের দেখে শরীর চুলকাও মাথা চুলকাও
মোল্লাদের দিয়েই তো শুরু,
কেনো তবে তাদের দেখে ফ্যালফ্যালিয়ে হেসে
কটু কথা বলে করো দুরু-দুরু?

মোল্লাদের এবার সন্মান দিতে শিখো
তোমাদেরি তো ভালো তবে,
তাদের কথা শোনো, জানো, এবং মানো
তবেই তোমরা কামিয়াবি হবে।

প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সকলের কাছে। এক শিক্ষকের মুখ থেকে সুনে বাধ্য হয়ে এই লেখাটি লিখলাম, কেউ কিছু মনে করবেন না। কারণ আমি অতি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারবো না বলে লিখে মনের খায়েশ মেটালাম।

চল পথ

বসে থাকিস না:রে
ওহে অলস পথিক,
একটা না একটা দেখে
খুঁজে নে তোর দিক।

এভাবে বসে থাকলে
যাবে যে বেলা,
ছুটে যা সম্মুখে ওই
দীপ্ত করে খেলা।

চল পথ ওহে পখিক
যাত্রা শুরু কর,
যতো সংশয় করে দূর
নিজের হাল ধর।

দিগন্তে বাড়িয়ে দে তোর
চলার গতিবেগ,
সম্মুখে থাকুক না যতো
সংশয়জনিত মেঘ।

চল পথ ওহে পখিক
যতই রাত্রি নামুক,
হামাগুড়ি দে কাদা পথে
যতই ঝড় আসুক।

এ পথে হয়তো আছে
তোর অনন্ত সম্ভাবনা,
পথে পথে চলতে চলতে
দেখা হবে মুক্তোদানা।

তুই সফল হবিই হবি
রাখ আত্মবিশ্বাস,
দ্বিধা না করে চল পথ
নিয়ে আনন্দ উল্লাস।

সত্যের দল

কই রে অন্যায়ের প্রতিবাদীর দল
রক্তে আগুন জ্বালিয়ে চল,
প্রতিবাদ করে সত্যের কথা বলে
নিভিয়ে দে অগ্নি দাবানল।

ভেঙে দে ভেঙে দে জুলুমের যতো
হাঙ্গামা দাঙ্গামার দেয়াল,
উঠ তোরা জেগে এ প্রগতির যুগে
চারিদিক রাখ খেয়াল।

সতেজ চোক দিয়ে দেখো তাকিয়ে
বেদনায় কে হলো দাগী?
কোন অসহায় কাঁদে পড়ে ফাঁদে
হয়ে বিষণ বিবাগী।

কই রে অন্যায়ের প্রতিবাদীর দল
উঠ তোরা উঠ জাগি,
বাজিয়ে প্রলয় বিষাণ হয়ে পাষাণ
ধ্বংস কর :রে অভাগী।

কই রে সত্যের বীর হাতে নিয়ে তীর
দে রে দে এ বিশ্ব নাড়ী,
বিশ্বের কুসংস্কৃতি পিষে দে আকৃতি
লাথি মেরে নে উপাড়ি।

পায়ের তলায় পিষে নাও সব চুষে
ওরে ঐ প্রতিবাদীর দল,
ব্যভিচারীর বন্দীশালা ভাঙতে তালা
চল রে সবাই চল রে চল।

চল রে সবাই একসাথে সত্যের সাথে
আসুক যতো ঝড় বাদল,
যতো শয়তানি শক্তি করবো মুক্তি
আমরা সত্যের দল।

সত্যের দামামা বাজিয়ে চলবো ধেয়ে
মুক্তির নিশান উড়িয়ে,
বলে দে, সত্যবাদী মোরা নয় পথহারা
মিথ্যাবাদী দেই সরিয়ে ।

জাগো রে প্রতিবাদী আর নয় বন্দী
ঐ স্বার্থান্বেষীদের কোলে,
আমরা সত্যের দল মুছে অশ্রুজল
এগিয়ে যাই লড়বো বলে।

আমরা জোয়ান মানিনা তো কোনো
হুমকি বা হুশিয়ারি,
পৃথিবীর যতো শয়তানী অপশক্তির
করি না খবরদারি।

দারিদ্রতা

ছোটবেলা দারিদ্র্যতা কি জিনিস বুঝতামনা!
ক্ষুদা ফেলেই থালাভরে পান্তাভাত লবণ মেখে বেশ পেটভরে খেতাম, খুব ভালো লাগতো।
মাঝে মাঝে পাঁচ থেকে ছয়বারও খেতাম।
এই জন্য আমাকে – আম্মা মাঝেমধ্যে রাক্ষস বলতো। ওমনি আব্বা তখন মায়ের প্রতি রেগে বলতো— তোমার বাপরে-টা খায়? আমার ছেলে যত ইচ্ছে খাবে, তোমার কি?

এই বেশি খাওয়া নিয়ে আম্মা ও আব্বা প্রায়সময় তর্কবিতর্ক করতো।
তবে এসব নিয়ে আমি কিছুই মনে করতাম না, অমি বেশি খাই তা আমিও যানি।
কারণ অন্যকিছু থাক-বা না থাক, পাতিল ভর্তি ভাতটুকু থাকতো, হয়তো তাই বেশি খেতাম।

আমার আব্বাও আমার মতো বেশি খেতেন।
একসাথে খেতে বসলে প্রায়সময় আব্বা আমার মুখের দিকে তাকাতেন এই ভেবে, তরিতরকারি ছাড়া শুধু ভাত খাওয়া নিয়ে আমি কিছু বলি কি-না ।
আমি কিছুই বলতাম না, কারণ আব্বা একা রোজগার করতেন, এ দিয়ে যা পারতেন টেনেটুনে সংসার চালাতেন।
তবে খাওয়ার কষ্ট হলেও সুখের অভাব ছিলোনা, ওই কষ্টের ভেতরেই কেমন যেন একটা সুখ ছিলো।

মনে আছে, একবার আব্বা যখন একজোড়া নতুন জুতো কিনে দিয়েছিলেন, কিযে আনন্দন হয়ে ছিলো আমার নতুন জুতো পেয়ে।
জুতো পড়ে সারাদিন হাটতাম, আর আমার সমবয়সী অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে বলতাম— দেখ দেখ, আমার আব্বা নতুন জুতো কিনে দিয়েছে।
এস বলে খুব আনন্দ পেতাম।

আমার আম্মা তখন বলতো — সারাদিন জুতো পড়ে থাকিস কেনো?
জুতো ক্ষয়ে যাবে, খুলে রাখ?
আম্মা কেনো বলেছে তা আমি বুঝিনি!
তবে তারপর থেকে জুতো খুলে রাখতাম, কেবল সন্ধ্যা হলেই পাও ধৌত করে ঘরে ঢুকতাম, সকাল হলে আবার খালি পায়ে হাটতাম।

সেই দারিদ্রতা এখন বুঝতে শিখেছি।
সেই দারিদ্রতা ছড়াতে ছড়াতে এখন অনেক বড় হয়েছি,
এখন দারিদ্রতার সাথে আমার যুদ্ধ হয়, রোজ যুদ্ধ করি।
আমার সঞ্চয় বলতে এখন আছে কুয়াশা, আরও আছে ধূসর মেঘ, আছে সহস্র শূন্যতা।
এসব নিয়েই যুদ্ধ করি, আর ভাঙাচোরা পথে মসৃণ পথ খুঁজি,
পথে পথে ঝরে যাই,
আমি ঝরাপাতা তাই,
হয়তো ঝরতে ঝরতে একদিন কুঁড়িয়ে নেবো আমার সমস্ত দারিদ্রতা।

দয়াময় আল্লাহ্‌

আমার আল্লাহ্‌ কতো যে দয়াময়
কতো মেহেরবান,
মানুষের কল্যাণে আকাশ জমিন
করেছেন দান।

চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র সাগর নদীনালা
এ বিশ্ব জাহান,
প্রত্যেকটি কারুকাজে অসীম দয়ালুর
অসীম মেহেরবান।

আমরা টাকা ছাড়া সেই সকল সৃষ্টির
করি ব্যবহার,
এসবের বিনিময়ে কি ভাই দাসত্ব
করবো না তাহার ?

আমার আল্লাহ্‌ কতো যে দয়াময়
কতো মেহেরবান,
তবে কেনো গাইবো না আমরা সেই
আল্লাহর গুণগান ?

আনমনা মানুষ

কেউ পেছনে তাকাতে চায়না,
লক্ষ্য তাদের সামনে এগিয়ে যাবার,
পেছনে কে আছে, কে নেই, ফিরে কেউ দেখেনা একবার।
সবাই সবার পথের খোঁজে চলছেই তো চলছেই।
কেউ খাঁদ খুঁড়ে ঝিনুকের ভেতর মুক্ত খুঁজেই চলছে,
কেউ জোনাকির একমুঠো আলো খুঁজছে,
কেউ রং মাখামাখি করে নিজেকে সাজাচ্ছে নানান রঙে,
কেউ রঙের তুলিতে ছবি আঁকছেই তো আঁকছে।
কেউ ডোবা বিল আর পুকুরপাড়ে পদ্মফুল ফোটাতে মত্ত,
কেউ হঠাৎ জেগে উঠছে ঝিমিয়ে পড়া রাত্রির ভেতর।

এই আনমনা মানুষগুলো এভাবেই চলছেই তো চলছেই।
কেউ স্বপ্নের কথা ভাবছে,
কেউ ভবিষ্যতের কথা ভাবছে,
কেউ বলছে, কেউ শুনছে।
কেউ ভুলে গেছে অতীত,
কেউ ভুলে যেতে চেষ্টা করছে,
কেউ এখনো ভুলতে পারেনি!

কেউ এখনো খেতখামারের লকলকে ঘাসের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে নিজেকে, কেউ এখনো গায়ে মাখছে সতেজ পাকাপোক্ত ধানের গন্ধ,
কেউ এখনো গোলাপের সুগন্ধি সৌরভের জন্য হা-হা-কার করছে।

এভাবেই একেকজন একাকার হয়ে অাছে রঙের মেলায়।
যেন চলে যাবার কারো কোনো তাড়া নেই,
কারো কোনো প্রস্তুতি নেই,
কারো কোনো ব্যস্ততা নেই।
সবাই যেন ভুলে আছে-কতো নীড়হারা পাখি উড়ে গেছে!
সেসব পাখিরা তো কেউ আর ফিরে আসেনি!

হে আনমনা মানুষ?
চলে যাবার কথা ভাবো!
হে আনমনা মানুষ?
প্রস্তুতি নাও ওই আখিরাতের!
হে আনমনা মানুষ?
নিজেকে ব্যস্ত করো দ্বীনি কাজে।

কোথায় সেই ছেলে?

একদিন পড়েছিলাম— আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

কোথায় সেই দস্যি ছেলেরা আজ?
মানুষের কল্যাণে যে করবে কাজ।

কোথায় সেই ছেলেদের উদার মন?
যে দুঃসময়ে মানুষকে করবে আপন।

কোথায় সেই ছেলের সুন্দর সমাজের পণ?
ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে আলো করবে গঠন।

কোথায় সেই ছেলে, অন্যের রক্ত দেখে কাঁদে মন?
যে কিনা করবে অত্যাচার নিপীড়ন দমন।

কোথায় আজ সেই আদর্শিত ছেলে?
মিথ্যারঝুড়ি ছেড়ে সত্যের কথা বলে।

কোথায় সেই বীর সোনার ছেলের দল?
ইঞ্চি ইঞ্চি সোনার মাটি করবে সমুজ্জ্বল।

ওরা কি হতে পেরেছে সেই ছেলে তবে?
যারা কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

মানবতা

এখনো নবজাতক শিশুর আর্তনাদ শুনে ঘুম ভাঙে আমার!
জননীর চিৎকার শুনে ঘুমের শহর বিধ্বস্ত হয়!
নিঃশব্দে ছিন্নভিন্ন হয় ঘাতকের বর্বরতায়!
এখনো দেখতে পাই চারিদিকে আগুন আর আগুন! পুড়ছে ঘরবাড়ি, জ্বলে জ্বলে কংকাল হচ্ছে মানুষ!
এখনো শুনতে পাই বিকট কক্ট্রেল বিষ্ফোরণে কতো অসহায় ভাই-বন নির্যাতন নিপীড়ন হচ্ছে!
শহরে, নগরে ক্ষুদ্র পল্লীতে পল্লীতে কোটি কোটি মৃতদেহ শকুনে খাচ্ছে!
হে আকাশ— তুমি কি শুনতে পাও অসহায়ত্বের চিৎকার?
নাকি তুমিও গম্ভীর হয়ে হানাহানি রক্তপাত দেখছো?
দেখো— জমিনে অসহায় মানুষের অশ্রু মুছে দেবার কেউ নেই!
কেবলি ওরা মানুষ হয়ে মানুষের অশ্রু দেখে হাসে, ঠাট্টা বিদ্রূপ করে!
ওদের কি মানবতা নেই?

কোথায় আজ সেই তেজীয়ান বলিয়ান সোনার ছেলেরা?
যারা মানবতার জয় হোক, মানবতার জয় হোক বলে বলে স্লোগান তুলেছিল,
কোথায়, কোথায় সেই বীরপুরুষ?
কোথায় আজ সেই সিংহের বাচ্চারা?
কোথায় আজ রাজপথের সেই দর্শকবৃন্দ?

যারা বক্তৃতার মঞ্চে মানবতার কথা বলে মুখে তুলেছিল ফ্যানা,
যারা মানবতার স্লোগানে রাজপথ করেছিলো ভারি,
যারা কবিতা গল্পের মাঝে মানবতার লিখনীর ঝড় তুলেছিল, সমাজ ও দেশের কণ্যানে,
কণ্ঠে কণ্ঠে তুলেছিল মানবতার জয়ধ্বনি,
কোথায় আজ সেই যোদ্ধারা? কোথায়?

কেনো আজ মানবতা কেবলি মানিব্যাগ বন্দি?
কেনো আজ রাজপথে প্লাবিত রক্তের বন্যা কেউ দেখেনা?
মানবতা কি আজ শুধুই মুখের স্লোগান?

অসুখেরও অসুখ

কান্না দিয়ে শুরু করেছিলাম আমাদের জীবন।
তারপর খুঁজতে শুরু করলাম বারান্দা ভরা সুখ,
সুখ পেলেই সাজিয়ে গুছিয়ে আলমারির ভেতর রাখবো হরেক সুখ,
আর স্তরে স্তরে ভাগকরা সুখগুলি হ্যাঙ্গারে টাঙ্গিয়ে আলমারির ভেতর গচ্ছিত রখবো, বর্তী করবো সবগুলো তাক।
সেই উদ্দেশ্যেই নিরুদ্দেশ হয়েছি বহুবার,
তারপর পথের পথিক হয়ে পথেই ঘুরাঘুরি,
ধুলোবালির ভেতর সুখ খুঁজি,
শস্যখেতে সুখের বীজ রোপণ করি।
তারপরও সুখের বারান্দা জুড়ে অসুখের আনাগোনা!।
যে সুখের খোঁজে শস্যখেতে সুখের বীজ রোপণ করেছিলাম,
প্রাই বীজ গর্তের ভেতরেই রয়ে গেলো! ঔষধপাতি দিয়ে কিছুই হলো না!।
এখন সুখের জমিতে দুঃখের মিছিল!
দুঃখের জমিতে সুখের দর্শকশ্রোতার কোনো মিছিল নেই!
কেবল সুখের জমিতে দুঃখের বক্তৃতা শুনে সুখেরা বাঁকরুদ্ধ!
এ যেন সুখের অসুখ, পথের অসুখ, সময়ের অসুখ,
অসুখেরও অসুখ!