মাসুদুর রহমান (শাওন) এর সকল পোস্ট

মাসুদুর রহমান (শাওন) সম্পর্কে

মাসুদুর রহমান (শাওন) এর জন্ম ১৯৯৭ সালে, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার সবুজে ঘেরা ছায়াঢাকা পঞ্চাশ গ্রামে। পিতার নাম মোঃ মজনু মিয়া, মাতা মোছাঃ খুকুমণি। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বর্তমানে আনন্দমোহন কলেজ'এ (ময়মনসিংহ) বাংলা সাহিত্যে অনার্সে অধ্যায়নরত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছড়া লেখার মাধ্যমে সাহিত্যে প্রবেশ। কবিতা ছাড়াও ছোট গল্প লিখে থাকেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ দ্বারা প্রভাবিত।

তুমি যদি

329

তুমি যদি কখনো আমার পাশে না থাকো তবে আমার ভোরগুলো নীরস হয়ে যাবে,
আমার আঙিনায় আর কোন ফুলই ফুটবেনা, আমার দুয়ারে আসবেনা বসন্ত।
তুমি যদি আমাকে আর নাম ধরে না ডাকো তবে পৃথিবীর সব সুর বদলে যাবে বিশ্রী শব্দ দূষণে,
পাখিদের গানগুলো সব বজ্রধ্বনির মতো এলোপাথাড়ি ডেকে যাবে।
তুমি যদি আমাকে কাছে না ডাকো তবে সবগুলো মেঘ একে একে সরে যাবে সুদূর অন্তরালে,
এই সুন্দর আকাশের সবকটি নক্ষত্রের পতন হবে হঠাৎ অবলীলাক্রমে।
তুমি যদি আমার দিকে কখনো চোখ তুলে না তাকাও তবে এই সমস্ত আলোর বিচ্ছুরণ থেমে যাবে,
মুহূর্তেই অন্ধকারে বদলে যাবে পুরো পৃথিবীর আকাশ, অদৃশ্য হয়ে যাবে সব সৌন্দর্য।
আর তুমি যদি আমাকে নির্মল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দাও তবে মৃত্যুর পরোয়ানা ছিঁড়ে ফেলে আমি পাবো অমরত্বের স্বাদ,
এই নশ্বর পৃথিবীতেই হবে আমার অনন্ত স্বর্গলাভ।
.
০৪/০৪/২০২১

কল্পনায় একদিন

Continuous one line couple in love walk holding hands
একদিন কল্পনায় আমি হেঁটেছি কত দূর তার সাথে,
ছুঁয়েছি চুড়ির রেশ হয়ে তারই হাত সারাটি পথ ধরে।
হঠাৎ হাওয়ার মতো আমিও দুলে দিয়েছি এক গোছা চুল তার,
নীল আচলে আমি দিয়েছি তারে বসন্তে ঝরা কত ফুল।
অপলক আমিই দেখেছি তারে চোখের খুব কাছে,
একদিন কেবলই কল্পনায় আমি পেয়েছি তারে ভালোবেসে।।
.
০৫/০৩/২০২১
ছবিঃ গুগল থেকে

কর্তৃপক্ষের করোনা চিন্তা ও আদু ভাই তৈরি

2338

দেশের সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে, অফিস-আদালত, ব্যাংক, হাট-বাজার ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…
কেবল মাত্র বন্ধ থাকবে শিক্ষাকার্যক্রম কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হলেই করোনা ভাইরাস ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং ইহা মহামারি আকার ধারণ করবে। আর তাই আমাদের দেশের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর তা হলো ঢা.বি‘র অধিভুক্ত সাত কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান সকল পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে অন্য স্তরের শিক্ষাকার্যক্রমও যথারীতি এক বছর ধরে টানা বন্ধ থাকার কথা আপনারাতো জানেনই। উল্লেখ্য যে, কর্তৃপক্ষের ঘুমের সুযোগে অনার্স ৪র্থ বর্ষের প্রথম কিস্তির লিখিত স্থগিত পরীক্ষা কিন্তু ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শেষ হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষ আবার জেগে উঠায় নতুন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
.
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবেই সুরক্ষিত থাকবে, ঘরে ঘরে তৈরি হবে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত আদু ভাইরা, বেকারত্বের উল্লাসে মেতে উঠবে অগনিত তরুণ-যুবক, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে, দেশের আগামী প্রজন্মকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন সুচিন্তিত তামাশাকে আমি সম্মান জানাই এবং কর্তৃপক্ষকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা…
.
শুভেচ্ছান্তে
-মাসুদুর রহমান (শাওন)
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের একজন প্রবীণ ছাত্র, অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা পরীক্ষার জন্য লটকে যাওয়া একজন সৌভাগ্যবান আদু ভাই…
২৩/০২/২০২১

একুশ মানে

1455566444

একুশ মানে আমার মায়ের ভাষার অহংকার,
আমার ভাইয়ের রক্তে জ্বলা জাগ্রত হুংকার।
একুশ মানে মাথা তুলে বাঁচার দীপ্ত পণ,
রক্ত চক্ষু রুখে দেবার শপথ আমরণ।।
.
একুশ মানে শ্লোগান শোভিত পায়ে পায়ে মিছিল,
অধিকার আদায়ে রাজপথটা রক্তে করা পিছিল।
একুশ মানে উত্তাল ঠেউয়ে যুদ্ধে যাবার নেশা,
বুকের ভিতর তপ্ত আগুন বারুদে পুরোটা ঠাসা।।
.
আমার কাছে একুশ মানে স্বাধীন হবার ডাক,
রোদ্র জ্বলা ঝাঁঝালো দুপুরে ডানা ঝাঁপটার হাঁক।
চাষার চোখে সোনালী ভোরের সকাল দেখার স্বপন,
একুশ মানে মজুর যুবার ইচ্ছে বুকে লালন।।
.
একুশ বুঝায় অন্যায় সব দু’পায়ে মাড়িয়ে চলা,
শাসক নামের শোষক শ্রেণির পতন করার খেলা।
একুশ মানে আপন চোখে আকাশ দেখার স্বাদ,
একুশ মানে ন্যায়ের তরে উঁচিয়ে তোলা হাত।।
.
২০/০২/২০২০
ছবি: গুগল থেকে

কিছুই রবেনা জেনো

Dhongso

ক্ষীরের মতো নরম মাটিতে রুয়ে দেয়া গোলাপের চারাগাছটা,
একদিন যৌবনে ভরে দেবে শতশত ফুলের ঘ্রাণে পুরোটা আঙিনা।
সুপারির ভরে নুয়ে যাবে একদিন তার সদ্য গজানো চারাটিও,
তারপর একদিন মরে যাবে এমন করে রুয়ে দেয়া সবকটি চারা।।
.
গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ মাটি; উনুনের মত জ্বলবে তীব্র যন্ত্রণায়,
একদিন তারপর বর্ষায় ধুয়ে যাবে তার বুক; ক্ষয়ে যাবে কিছুটা।
এই যে নদী; কত জোয়ার/ভাটা, ভাঙ্গা/গড়া প্রতি মৌসুমে মৌসুমে,
থেমে যাবে একদিন মানুষ খাওয়া এই জলেদের ঢেউয়ের আন্দোলন।।
.
হাতের তালুতে লেখা ভালোবাসার ফুটে উঠা নামটিও,
একদিন মুছে যাবে হৃদয় থেকে; অনুভূতিরা হয়ে যাবে দৃষ্টিহীন।
বইয়ের পাতায় লেখা যত ইতিহাস; যত কবিতাচক্রের ছন্দ,
তাও একদিন মুছে যাবে, রবেনা তার অভিভাবকেরা।।
.
আকাশের এত ভরাট নীলের বুক; সাদা অথবা কালো রঙের মিছিল,
ঝরে যাবে কান্নার ঘোর লাগা দুপুরে; সন্ধ্যায়; রাতে কিংবা অন্যসময়।
হিমালয়ে জমা বরফের গভীর ঘন আস্তরণ; হীম শিশির,
সবকিছু হয়ে যাবে কোন একদিন আপন পরিচয় হারা।।
.
দু’চোখের কোণে বাসা বেঁধে জমা সকল স্বপ্নেরাও,
হঠাৎ একদিন ভেঙ্গে যাবে যেন মনে হবে স্বপ্ন কী জানতাম না কখনো।
এই পৃথিবীর সবকিছু, এই আমরা, আমাদের যাকিছু আছে,
এসব কিছুই রবেনা কোন একদিন, কিছুই রবেনা জেনো।।
.
০২/১১/২০১৮
ছবি: গুগল থেকে

নিয়মের খেলা

kd91_xlarge

অজস্র দক্ষ সংসারী পাখি,
হঠাৎ একদিন পথ ভুল করে,
হারিয়ে যায় অবেলার হাওয়ায়।
সারারাত পাহারায় থাকা,
নামহীন নক্ষত্রও আচমকা কখনো,
খসে পড়ে নিভে যায় গভীর অন্ধকারে।
এমনই কত যত্নে মোড়ানো ভালোবাসাও,
ধীরে ধীরে কোন একদিন,
মরে যায় কেবলই অবহেলায়।।
.
২৭/১০/২০২০

অনু কবিতা- ২৯৯

Exif_JPEG_420

তুই একা হেঁটে যা শিশিরের পথে,
কান পেতে শোন বাতাসের গুঞ্জন।
ছিঁড়ে দে সব ‍মায়ার বন্ধন যত,
পুড়ে ফেল স্মৃতির ডায়রিটা তোর।
নিজেকে আপন করে, গলা ছেঁড়ে গা,
বেঁচে থাকবার গান।।
.
২৬/১০/২০২০

অনু কবিতা- ৩০১

কোথায় যেন আজও রয়ে গেছে সে নিকটে আমার,
রয়ে গেছে তার আঙুলের ঘ্রাণ, শীতল পরশ।
পৌষ রাতের শিশিরের মতো সারা রাত ধরে,
আজও যেন ঝরে পড়ে সে বুকের ভিতর।।
.
১০/১১/২০২০

অণু কবিতা- ২১৫

হয়তো আকাশ, নদীজল, তীরের হাওয়া,
সব জেনে গেছে, তুমি কার নিবিড় বকুল হয়ে আছো।
কেবল বিষণ্ণ সন্ধ্যা, ব্যাকুল তিয়াসের কণ্ঠ জানে,
তোমার নাম কেবল খুদিত আমার বুকের গভীরে।।
.
০৩/০৬/২০১৯

স্মরণে নজরুল

নজরুল তুমি কই ? বাজাও বিষের বাঁশি,
সত্য ন্যায়ের পাল তুলে দাও অসত্যেরে ফাঁসি।
দারিদ্রে পিষ্টে যে জন মরে দাও তারে সুখ আনি,
নিষ্পাপ জনের লৌহ কবাটে দিয়ে যাও আঘাত হানি।।
.
মুছে দাও তুমি বিভেদ মানুষে সকলে করো একজাতি,
ঘৃণার দেয়াল ধুলায় লুটায়ে দিয়ে যাও প্রেমের খ্যাতি।
অত্যাচারে ঘাতে ঘাতে আজ মরিছে অবুঝ শিশু,
সকলের হিয়ায় বাঁধিতে দরদ এসো হয়ে আজ যিশু।।
.
নীতির মঙ্গায় ঘৃণিত হচ্ছে দেশ ললাটের নেতা,
সাম্যের গান আবার শুনায়ে প্রীতি দিয়ে যাও যথা।
দূরে তুমি থেকোনা আজি এই বঙ্গ হারায় প্রাণ,
তাবেদারী রোধে বিদ্রোহ করে সার্বভৌম করো দান।।
.
২৭/০৮/২০১৬

বৈপরীত্য

এবেলায় আমি খুব ভীষণ রকমের শান্ত প্রভাতের আকাশের মতো,
তবে ভিতরের অবস্থা ঠিক বিপরীত যেন বৈশাখী ঝরো প্রস্তুতি প্রতিক্ষণ।
আমার বাহিরে মাতাল করা পারফিউমের সে কী অপূর্ব ঘ্রাণ,
অথচ ভিতরে কী উপচে পরা ভ্যাপসা উৎকট গন্ধ।।
.
এইতো বেশ লাগে আমায় চোখে সানগ্লাস, হাতে ঘড়ি, নতুন মডেলের টি’শার্টে,
তবে ভেতরে এক উলঙ্গ বিশ্রী রকমের আমি রয়ে গেছে।
আমার বাহিরটা দেখে যে কেউ অনায়েসেই বলে উঠবে কী দারুণ টলটলে মুখ,
অথচ ভিতরে যদি কেউ দেখে তবে নির্বাক হয়ে যাবে, চোখের অন্ধত্ব কামনা করবে মুহূর্তেই।।
.
বাহিরে আমার কী নির্মল স্বচ্ছতা, ঝলমলে আলোক সভা যেন জোৎস্না ঝরে,
অথচ ভিতরে কোটি বছরের দাগ কাটা ভাঙ্গা কাঁচের স্তুপ বহন করে চলেছি।
হাতের তালু, কব্জি, আঙুল, পা থেকে মাথা অবধি কী দারুণ ফর্শা রঙের প্রলেপ দেয়া,
অথচ ভিতরে কী স্পষ্ট অন্ধকার যেমন চোখহীন কোন মানুষের কাছে পৃথিবীর রূপ।।
.
আমার বাহিরে মুখরিত বসন্ত, কচি ডোগার সে কী অনিন্দ্য নৃত্য পুরোটা জুড়ে,
অথচ ভিতরে এক বিষণ্ণ বিমর্ষ বিষাদে ঢাকা আকাশ, খরায় চৌচির ফাঁটা জমি।
নেই কোন ভালোবাসা, কারো ভেজা আবেগ, তীব্র উষ্ণতায় জড়িয়ে থাকা ছোঁয়ার সামান্য প্রয়োজন এ আমার বাহিরের বক্তব্য,
অথচ কী দাবী নিয়ে প্রতিক্ষণ আর্তনাদ করে ভিতরের সেই আমিটা তা কেউই জানেনা, কখনো জানেনি, জানবেওনা।।
.
২৯/১০/২০১৮

রমণী

এই যে পৃথিবী জুড়ে কতশত রমণী,
বিশ্বাস করো আর না করো,
এদের প্রত্যেকের ভিতরে আছে উদার আকাশ, মহাসিন্ধু।।
.
যদি একবার এদের কারো ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে পারে,
তবে জেনে রেখো পৃথিবীর এই আকাশ, মহাসিন্ধু,
তার কাছে মনে হবে তুচ্ছের থেকেও বেশি তুচ্ছ।।
.
তবে মনে রেখো রমণীর ভিতরেই কেবল প্রবেশ করতে হবে,
কিন্তু বাইরের চামড়ার রং কিংবা দেহকে দুয়ার করে নয়।।
.
২৪/১০/২০১৮

অণু কবিতা- ২১৮

নিয়ন আলোয় তোমার শহর, জেগে থাকে রোজ।
ধূসর আঁধার ঢাকে আমায়, শূন্যতে নিখোঁজ।
তোমার পাড়ায় সুরের বাঁধন, বেঁধে রাখো গানে,
আমার ঘরে ব্যথার হাওয়া, বয়ে যায় আনমনে।।
.
০৮/০৬/২০১৯

ভালোবেসে দেখেছি

ভালোবেসে দেখেছি, এলোকেশী রমণীর প্রশস্ত বুকের ভিতর,
আমার নিঃশ্বাস ফেলবার জায়গাটুকুও পাইনি আমি।
কেবল প্রত্যাখ্যাত হয়েছি আমি উদাসী বলে, দিকভ্রান্ত বলে,
আমার এই উড়ন-চণ্ডী জীবনে কেউ বাসা বাঁধার সাহস করেনি।
.
সেবার বর্ষায় ভিজে ভিজে একগুচ্ছ কদম এনেছিলাম,
একটা পুষ্প বিলাসী রমণীও খুঁজে পাইনি সেদিনের আষাঢ়ে।
অনেক গভীর রাতে হাজারো কথা জমিয়ে বসেছিলাম,
তারপর শ্রোতাহীন গল্পেরা উড়ে গেছে ধূসর অন্ধকারে।।
.
ভালোবেসে দেখেছি, মায়াভরা চোখের রমণীর বুকে,
একটুও মায়া জাগেনি আমার জন্য।
অজস্র দেয়া কথা ভুলে রমণীর কাছে অবিরাম বর্ষার মতো,
দীর্ঘ আকুতি করেও পাইনি এতটুকু ভালোবাসার অল্প ছোঁয়া।
তারপর থেকে আমি একা, কেবল প্রত্যাখ্যানে ফিরে আসা,
নতমুখী হৃদয়ের অসহ্য যন্ত্রণায় কেবলই দগ্ধ হচ্ছি আজকাল।।
.
০৭/০৭/২০১৯