ট্যাগ আর্কাইভঃ বিরহের কবিতা

একাকীত্বের ঘোর

সারাদিন শেষে যখন আমি একা হয়ে যাই,
তখন পিছনে যেতে থাকি আমি; বর্তমান ছেড়ে-
অল্প অল্প করে চোখের সামনে স্পষ্ট হয় তোমার মুখ, হাসি এবং চিহ্ন,
মনে হয় যেন, তুমি দূরে যাওনি- এখানেই আছো আমার হাতে স্পর্শ হয়ে।
ফিরে যেতে যেতে আমি থেমে যাই একটা সময়ের মধ্যে, যার নাম বোধহয় প্রেম,
মনে হয় সুদর্শন একটা বিকেলের রোদে হাঁটছি আমরা।
চোখে চোখ ডুবিয়ে দিতে দিতে তুমি লুফে নিচ্ছ আমাকে;
নিতে নিতে একবারে শূন্য-
তারপর সম্বিত ফিরে দেখি আসলে এসবই আমার একা থাকার ঘোর।
তোমাকে আমি আমার ঘোরলাগা একাকীত্বের কথা কিভাবে বুঝাবো ?
অথচ এসবই আমার ভুলে যাওয়া উচিত-
কিভাবে বলো ভুলে যাবো দিনশেষে এমন ঘোরে যাবার অভ্যেস ?
আমি যে তোমার মতো পারিনা-
তোমাকে বৃত্ত ভাবতে ভাবতে আমি যে আবদ্ধ বিন্দু, অভ্যস্ত হতে হতে আমি যে তোমাতে মগ্ন মুখর,
অথচ তুমিতো সেই কবে উড়ে যাওয়া এক ফেরারি পাখি।
.
০৮/১১/২০২২

একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো

একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো কর্পূরের মতো, শূন্যে মিলাবে আমার অস্তিত্ব,
তখন এইসব মায়াভরা রাতে আমি আর একাকী ঘুমহীন চোখে তোমাকে ভাববো না।
তখনও আসবে হিম কুয়াশা, ফোটা ফোটা ঝরবে শিশির শুকনো কাচা ঘাস পাতার শরীরে,
মেঘ ভাসবে হাওয়ায়, একই ঝুম ঝুম শব্দে নেমে আসবে বৃষ্টির দল,
তারারা জ্বলবে একইভাবে, গেয়ে যাবে আগন্তুক পাখিরা উঠোনের ডালে বসে।
.
আহ্নিক গতিতে এই পৃথিবীর রাতগুলোয় আসবে পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যা,
এভাবেই গন্ধ ছড়াবে বসন্তের ফুল, পথে পথে ঝরবে শিমুলের লাল ঠোঁট।
শুধু আমি থাকবোনা এইসব উপমায় তোমাকে মেলাতে আর,
ছটফট করে ক্লান্ত হবোনা আর, অব্যক্ত কিছু কথা নিয়ে আর কখনো হবেনা দম বন্ধ আমার,
হাতরে বেড়াবোনা তোমার সেই চেনা স্পর্শ আর,
একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো কর্পূরের মতো।।
.
০৩/০৩/২০২২

তুমি বলেছিলে আমাকে তুমি ভালোবাসো,
আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলাম।
আমার যাকিছু ছিলো, যত স্বপ্ন, যত ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষা, যত চাওয়া,
এসবের কোন কিছুই আমার নিজের করে রাখতে পারিনি আর,
কেবল তোমার নামে লিখে দিয়েছিলাম এভাবে আমার যাকিছু আদ্যোপান্ত সব।
.
তুমি বলেছিলো আমার হাতে হাত রেখে একসাথে পাড়ি দেবে বার্ধক্যের দিনগুলো,
আমি আমার সব পিছুটান ছুঁড়ে ফেলে তখনই তোমার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছিলাম।
আর তোমার নির্মল স্পর্শের অপেক্ষায় সমস্ত জীবনটা বিলিয়ে দেবার নেশায় উন্মাতাল হয়েছিলাম,
আমার প্রিয় বৈশাখ, পৌষ, বর্ষার রাত সবটা ভুলে গিয়েছিলাম,
কেবল তোমার কোলে জীবনের শেষ নিশ্বাস ফেলবার সময়টুকু উপভোগ করবো বলে।
.
তারপর তুমি বহুদিন আমাকে অবহেলার বারুদে পুড়েছো বারবার, অকারণে যখনতখন,
আমার কান্নার শব্দে তুমি মৌন হাসি হেসেছো আমাকে উপহাস করার আত্মতৃপ্তিতে।
তারপর অন্যকারো গভীর রাতে মেতে উঠেছো উত্তাল মিছিলের মতো আড্ডায়, দারুণ আবেগী কথায়,
অথচ আমি প্রথম বিশ্বাস পুঁজি করে সারারাত ধরে জেগে থেকেছি একবার নাম ধরে ডাকবে বলে।
সেই দীর্ঘ অপেক্ষায় প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকেই চেয়েছি আমি ‘ফিরে এসো অনেকতো হলো’,
অথচ অন্ধকার আমাকে উপহাস করে জানিয়ে দিয়েছে আড্ডা শেষে ক্লান্ত তুমি ঘুমের দেশে স্বপ্নে বিভোর।।
.
১০/০৭/২০২১

রং নাম্বার

uwp1aa

যত্তবার তোমার মনের
নাম্বারে কল দেই
তুমি ততবার ব্যস্ত থাকো।

তোমার মনের নাম্বারে
অনেক কলে আসে
রাকিবের কল আসে
সোহেলের কল আসে
মামুনের কল আসে
কত যে নামের রং নাম্বার ফোন দেয় তোমার মনের নাম্বারে!

তুমি তা ইয়ত্তা করতে পারো না
তুমি কাকে ঠাঁই দিবে
কাকে ভালবাসবে
কার সঙ্গে রঙ্গ করবে
তুমি স্থির করতে পারো না।

তোমার মনের নাম্বার
ব্যস্ত থাকুক চিরকাল,
আমি রং নাম্বার আর রিং দিবো না
আমি তো তোমার মনের নাম্বারের জঞ্জাল…

সইতে পারিনা আর

1197342

এত অবহেলা আমি আর সইতে পারিনা প্রিয়,
সইতে পারিনা এত বেশি উপেক্ষা আর।
এত বেশি ঝাঁঝালো দুপুরের রোদ,
নিতে পারিনা আমি আর চোখে সয়ে।
ম্লান হয়ে আসে সকল অনুভূতি শিরায় শিরায়,
সংকুচিত হয়ে যায় সকল আবেগ অন্তর আত্মায়।
ধীরে চারপাশ ঘিরে ধরে গভীর ঘন অন্ধকার,
কুড়েকুড়ে খায় ছাড়পোকা সবটা শরীর।
এত বেশি ক্রন্দনে ক্রমশ নেমে আসে ক্লান্তি ভীষণ,
আদিগন্ত ভরে যায় নরকের অভিশপ্ত হাওয়ায়।
রক্তের দেহে এত বেশি যন্ত্রণা সইতে পারিনা আর,
মেনে নিতে পারিনা ভালোবাসার বিপরীতে এত অবহেলা তোমার।
.
২৭/০৯/২০২১

আমি বুঝে গেছি

artyyu

শহর জুড়ে সুদর্শন যুবকদের ভির, ওরা বাহ্যিক লাবণ্য দিয়েই,
কেড়ে নেবে প্রতিটা তরুণীর ঘুম, মন, মগজ, সত্তা-দেহ।
আমি কুৎসিত, আমি পারবো না তার কিছু,
আমি পারবো না কারো ভিতরে এতটুকু প্রভাব ফেলতে কোনদিন।
অন্যকারো ভিতরে পঁচা মানসিকতা থাকলেও,
বাইরের সৌন্দর্যের আড়ালে ঢেকে রাখতে পারবে সব।
আমার কুৎসিত আবরণের জন্য ভিতরটা সবার অগোচরেই রয়ে যাবে শুধু,
কেউ উঁকি দেবেনা কোনদিন, ছুঁয়ে দেখবে না আমার ভিতরের সবুজ ঘাস।
আমার অবুঝ মন, শান্ত হও, ঘুমিয়ে যাও তুমি,
আমি তোমাকে কারো ভিতরে একটুও জায়গা করে দিতে পারবো না।
হে আমার হাতজোড়া, আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি,
তোমার হাতে আমি এনে দিতে পারবো না কারো নরম ছোঁয়া।
প্রিয় চোখ, তুমি অন্যদিকে ফিরো, অরণ্য দেখো আকাশ কিংবা নদী,
তোমার সম্মুখে কেউ কোনদিন হাসবে না তোমার জন্য, কাছে এসে দাঁড়াবে না।
এত পরিপাটি যুবকদের সাথে কিভাবে দাঁড়াবো এত অগোছালো আমি ?,
কিভাবে নিজেকে নিয়ে কারো সম্মুখে যাবো ? কিভাবে প্রকাশ করবো অনুভূতি ?
এত বেশি সুন্দর রেখে কে তাকাবে আমার দিকে ?
হে আমার আত্মা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও,
আমি পারবো না কারো ভালোবাসা এনে দিতে, আমাকে দিয়ে হবেনা।
হে আমার ভিতরের অস্তিত্ব, তুমি যত সৎ হও যত সুন্দর হও তাতে কিচ্ছু হবেনা,
আমি বুঝে গেছি,
এই শহর, এই পৃথিবীর সবাই কেবলই বাহ্যিক সুন্দরের পূজা করে, ভিতরের সুন্দর কেবলই পরিত্যাজ্য।
.
১৯/০৮/২০২১

নিয়মের খেলা

kd91_xlarge

অজস্র দক্ষ সংসারী পাখি,
হঠাৎ একদিন পথ ভুল করে,
হারিয়ে যায় অবেলার হাওয়ায়।
সারারাত পাহারায় থাকা,
নামহীন নক্ষত্রও আচমকা কখনো,
খসে পড়ে নিভে যায় গভীর অন্ধকারে।
এমনই কত যত্নে মোড়ানো ভালোবাসাও,
ধীরে ধীরে কোন একদিন,
মরে যায় কেবলই অবহেলায়।।
.
২৭/১০/২০২০

অনু কবিতা- ৩০১

কোথায় যেন আজও রয়ে গেছে সে নিকটে আমার,
রয়ে গেছে তার আঙুলের ঘ্রাণ, শীতল পরশ।
পৌষ রাতের শিশিরের মতো সারা রাত ধরে,
আজও যেন ঝরে পড়ে সে বুকের ভিতর।।
.
১০/১১/২০২০

অণু কবিতা- ২১৫

হয়তো আকাশ, নদীজল, তীরের হাওয়া,
সব জেনে গেছে, তুমি কার নিবিড় বকুল হয়ে আছো।
কেবল বিষণ্ণ সন্ধ্যা, ব্যাকুল তিয়াসের কণ্ঠ জানে,
তোমার নাম কেবল খুদিত আমার বুকের গভীরে।।
.
০৩/০৬/২০১৯

বৈপরীত্য

এবেলায় আমি খুব ভীষণ রকমের শান্ত প্রভাতের আকাশের মতো,
তবে ভিতরের অবস্থা ঠিক বিপরীত যেন বৈশাখী ঝরো প্রস্তুতি প্রতিক্ষণ।
আমার বাহিরে মাতাল করা পারফিউমের সে কী অপূর্ব ঘ্রাণ,
অথচ ভিতরে কী উপচে পরা ভ্যাপসা উৎকট গন্ধ।।
.
এইতো বেশ লাগে আমায় চোখে সানগ্লাস, হাতে ঘড়ি, নতুন মডেলের টি’শার্টে,
তবে ভেতরে এক উলঙ্গ বিশ্রী রকমের আমি রয়ে গেছে।
আমার বাহিরটা দেখে যে কেউ অনায়েসেই বলে উঠবে কী দারুণ টলটলে মুখ,
অথচ ভিতরে যদি কেউ দেখে তবে নির্বাক হয়ে যাবে, চোখের অন্ধত্ব কামনা করবে মুহূর্তেই।।
.
বাহিরে আমার কী নির্মল স্বচ্ছতা, ঝলমলে আলোক সভা যেন জোৎস্না ঝরে,
অথচ ভিতরে কোটি বছরের দাগ কাটা ভাঙ্গা কাঁচের স্তুপ বহন করে চলেছি।
হাতের তালু, কব্জি, আঙুল, পা থেকে মাথা অবধি কী দারুণ ফর্শা রঙের প্রলেপ দেয়া,
অথচ ভিতরে কী স্পষ্ট অন্ধকার যেমন চোখহীন কোন মানুষের কাছে পৃথিবীর রূপ।।
.
আমার বাহিরে মুখরিত বসন্ত, কচি ডোগার সে কী অনিন্দ্য নৃত্য পুরোটা জুড়ে,
অথচ ভিতরে এক বিষণ্ণ বিমর্ষ বিষাদে ঢাকা আকাশ, খরায় চৌচির ফাঁটা জমি।
নেই কোন ভালোবাসা, কারো ভেজা আবেগ, তীব্র উষ্ণতায় জড়িয়ে থাকা ছোঁয়ার সামান্য প্রয়োজন এ আমার বাহিরের বক্তব্য,
অথচ কী দাবী নিয়ে প্রতিক্ষণ আর্তনাদ করে ভিতরের সেই আমিটা তা কেউই জানেনা, কখনো জানেনি, জানবেওনা।।
.
২৯/১০/২০১৮

অণু কবিতা- ২১৮

নিয়ন আলোয় তোমার শহর, জেগে থাকে রোজ।
ধূসর আঁধার ঢাকে আমায়, শূন্যতে নিখোঁজ।
তোমার পাড়ায় সুরের বাঁধন, বেঁধে রাখো গানে,
আমার ঘরে ব্যথার হাওয়া, বয়ে যায় আনমনে।।
.
০৮/০৬/২০১৯

ভালোবেসে দেখেছি

ভালোবেসে দেখেছি, এলোকেশী রমণীর প্রশস্ত বুকের ভিতর,
আমার নিঃশ্বাস ফেলবার জায়গাটুকুও পাইনি আমি।
কেবল প্রত্যাখ্যাত হয়েছি আমি উদাসী বলে, দিকভ্রান্ত বলে,
আমার এই উড়ন-চণ্ডী জীবনে কেউ বাসা বাঁধার সাহস করেনি।
.
সেবার বর্ষায় ভিজে ভিজে একগুচ্ছ কদম এনেছিলাম,
একটা পুষ্প বিলাসী রমণীও খুঁজে পাইনি সেদিনের আষাঢ়ে।
অনেক গভীর রাতে হাজারো কথা জমিয়ে বসেছিলাম,
তারপর শ্রোতাহীন গল্পেরা উড়ে গেছে ধূসর অন্ধকারে।।
.
ভালোবেসে দেখেছি, মায়াভরা চোখের রমণীর বুকে,
একটুও মায়া জাগেনি আমার জন্য।
অজস্র দেয়া কথা ভুলে রমণীর কাছে অবিরাম বর্ষার মতো,
দীর্ঘ আকুতি করেও পাইনি এতটুকু ভালোবাসার অল্প ছোঁয়া।
তারপর থেকে আমি একা, কেবল প্রত্যাখ্যানে ফিরে আসা,
নতমুখী হৃদয়ের অসহ্য যন্ত্রণায় কেবলই দগ্ধ হচ্ছি আজকাল।।
.
০৭/০৭/২০১৯

অণু কবিতা- ২১০

মনে কি পড়ে…?
চেনা পথে দাঁড়িয়ে ছিলাম…
নত চোখে তাকিয়ে ছিলাম…
হারিয়ে যাওয়ার প্রবল স্রোতে…
তোমার নামটি ডেকেছিলাম…
ব্যর্থ বুকে সকল চেপে…
আমার দুহাত বাড়িয়েছিলাম…
.
৩১/০৫/২০১৯

অণু কবিতা- ২৩২

আমি এক দিকভ্রান্ত শৈবাল,
ভেসে যাই এ-কিনার ও-কিনার করে।
কী করে ছোঁবো রত্ন তোমায়…?
তুমি যে থাকো গভীর জলের পরে।।
.
৩১/০৭/২০১৯