সুমন আহমেদ এর সকল পোস্ট

তুমি উদ্যত হলে অধিকতর সুন্দর লাগে

তুমি উদ্যত হলে অধিকতর সুন্দর লাগে

বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমা এবং তর্জনী জুড়ে
কেমন আড়ষ্টতা আজ প্রিয় বলপেন!
তোমাকে দেখি না আঙ্গুলের অগ্রভাবে
বিস্ফোরিত আর উদ্যত ভঙ্গিমায়!

শৈশবের তিন টাকায় কেনা ইকোনো বলপেন
যে তুমি অক্ষরে অক্ষরে ভরে দিতে নিউজ প্রিন্টের পাতা,
দুর্দান্ত কাঁপিয়ে দিতে প্রিয় শিক্ষকের বুক; আর
গোটা গোটা ভুল বর্ণমালায় প্রিয়তমার হৃদয় সংবিধান
সে তুমি বড় আড়ষ্ট আজ, ভীষণ নির্জীব!

বরং তুমি উদ্যত হলে মাটির চিত্রকল্পে
জন্ম নেয় সবুজ স্বপ্নের বীজ।
তুমি উদ্যত হলে পাড়ায় পাড়ায়
ঘুমন্ত কফিন হতে বেরিয়ে পড়ে মানুষের পা।
তুমি উদ্যত হলে শাসকের অবনত মস্তকে
আরও গাঢ়তা পায় পতাকার লাল।

হে বলপেন!
মানুষের কান্না আজ ভীষণ লেপ্টে আছে
তোমার কালিতে; তুমি উগড়ে দিলেই বরং
অধিকতর সুন্দর লাগে স্বদেশের মুখ!

যে তুমি তাক করে আছ বুকের ভঙ্গিমা

যে তুমি তাক করে আছ বুকের ভঙ্গিমা

পকেট থেকে সুনসান মেঝেতে খসে পড়া ধাতব মুদ্রার শব্দের মতো কেঁপে উঠেলো মন আচানক। যে তুমি তাক করে আছ বুকের ভঙ্গিমা অমন ছুরি ছুরি … আমি খুন হয়ে যাই দ্বিধাহীন। খুন হতে হতে ছুঁয়ে দেই বুক … ছুঁয়ে দেই নাভি। কোন কোন মৃত্যুই বুঝি এমন আমি দ্বিধাহীন দেই ঝাঁপ নিশ্চিত মৃত্যু জেনে তোমার প্রান্তদেশে, বুকের চূড়ায়। নিষিদ্ধ লোবানের সুঘ্রাণ মেখে এক একটি চুম্বনের পর জেগে ওঠে শঙ্খচূড়। তুমি কেঁপে ওঠো, কেঁপে ওঠে কামনার তত্ত্ব-পুরাণ।

দীর্ঘ যে দিবস বয়ে গেছে নিদ্রাহীন, তোমার নাভির ওপর যে কৃষক লিখেনি চুম্বনের কৃষি, পৌরাণিক কৃষক আমি এক একটি চুম্বনে ভুলে যাও নির্ঘুম রাত, নাভির ওপর ওষ্ঠের অধিকার বিহীন ভোর, ভুলে যায় অলিখিত শোক। তোমার জলাঙ্গীর বনে জাগে আফ্রোদিতি, আমি বাজখাঁই ঈগল মুহূর্তেই করি তছনছ কামনার সংবিধান।

সবুজ কার্পেটে কার খুন মুছে নিখুঁত যাচ্ছো হেঁটে

সবুজ কার্পেটে কার খুন মুছে হেঁটে যাচ্ছো নিখুঁত
ধুয়ে নিচ্ছো নিটোল জলে ঘাতকের ছুরি!
কী সহজাত ভঙ্গিমায় পাড়ি দিচ্ছো সময়ের ঘড়ি
যেন খুনির রক্তে নেই এতটুকু দ্বিধা, শোক-সন্তাপ!

বস্তুত হত্যা উৎসবের পর পৃথিবীর কোথাও আর
অবশিষ্ট ছিল না বোধের শব্দাবলী!

যেন বা রক্ত এখন সহজলভ্য কোন তরল।

এই সব দিন কাঁদাবে মানুষ

এই সব দিন কাঁদাবে মানুষ

এইসব দিন কাঁদাবে মানুষ! মানুষ কাঁদলে পরে পৃথিবীর কোন কোন বনভূমির গহীনে কেঁদে ওঠে সবুজ বৃক্ষের দল, কোমল পাখি! কেঁদে ওঠে শাবক হরিণ, বন মোরগেরা! মানুষ কাঁদলে পরে এক একটি ঝরে যায় বৃক্ষের পাতা!

মানুষ কাঁদলে পরে, তবু এইসব কান্নাগুলো অতীত স্মৃতির মতো পেছনে রেখে, হেঁটে যায় যোজনার পথ; ঘরের দেয়ালে ক্ষয়ে যাওয়া পলেস্তরায় গেঁথে বিগত স্মৃতি, রাতকে বুকে চেপে ক্রমশ নিদারুণ ভোরের অপেক্ষায় অপলক জেগে থাকা!

কবিতা এবং জীবন

কবিতা

কবিতা কাঁদুক আজ, ব্যথিত হোক!
ধেয়ে আসুক কদর্য জিভ! আঙ্গুলের নখ
চিতায় তুলে রেখে ভুলে যাবো শোক
কবিতা কাঁদুক আজ; হোক আরো;
রক্তাক্ত হোক!

জীবন

জীবনকে একবার চুম্বন করে দেখতে চেয়েছি
একবার ভেবেছি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
শিখে নেবো মন্ত্রপাঠ; মোহনীয় সঙ্গীত!

একবার তোমাকে ছুঁয়ে, জীবনকে ছুঁয়ে
দেখতে চেয়েছি!

একবার দেয়ালের লাল পোস্টারে সেঁটে হৃদপিণ্ড
দেখতে চেয়েছি কতোটা ক্ষত-বিক্ষত হতে পারি!
নগরের বিষাক্ত বাতাসে কতোটা মৃত্যুর ঘ্রাণ
ছড়িয়ে কতোটা উল্লাসে মেতে উঠতে পারে,
নাগরিক সম্প্রদায়! বিনীত ভদ্র মহোদয়গণ!

নঞর্থক

নঞর্থক

ব্যথিত হবো?
শোকে ম্লান হবো?
মেনে নেবো? মেনে নেবো?

মাথা নুয়ে দেবো?

শিখে নেবো? শিখে যাবো?
কদর্য পাঠ! চাটুকরী ভাষা!

তার চেয়ে ভাল
বেশ্যার কোমর আর
শিশ্ন আঁকড়ে বাঁচা!

বিনীত হবো

বিনীত হবো

আজ বিনীত হবো-
নত হবো; নত হতে হতে নুয়ে যাবো!
শিখে যাবো কদর্য রাজার পাঠ, অশ্লীল উপবিধি;

আজ একবার দাঁড়িয়ে যাবো দু’উরু খুলে
নগ্ন তরবারি আর উদ্যত ফলা হাতে!
তারপর; পুনরায় বিনীত হবো!

বিনীত হবো!

ক্রাইসিস অফ আইডেনটিটি

ক্রাইসিস অফ আইডেনটিটি

অতঃপর;
অদূরে অলক্ষ্যে হাসছেন দেবতারা।

আর;
আমাদের সীমান্তে কতগুলো প্রার্থনারত মুখ হতে
আমরা যখন একে একে
ফিরিয়ে নিচ্ছিলাম আমাদের হাত;
এবং প্রার্থনারত মুখগুলো যখন ঝাঁপ দিচ্ছিল
নিশ্চিত মৃত্যুকূপে;

ঠিক তখনি সবার অলক্ষ্যে
শয়তানও হেসে উঠেছিল!

১৫/০৬/১২

আরো কিছুকাল অপেক্ষায় থেকো

আরো কিছুকাল অপেক্ষায় থেকো

তোমার জন্য প্রিয় ভোর গুলো তুলে রেখে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি সবুজ পাতাদের সাথে সমবেত প্রার্থনায়! রাশি রাশি তুলো মেঘের পালকে গেঁথে দিচ্ছি আকুতি। ইথারে ভাসিয়েছি আহ্বান মৌন শব্দের ঋষিমগ্ন ধ্যানে। ধাবমান চলিষ্ণু মেঘদল ঠিক পৌঁছে যাবে সহসা তোমার শহরে যেখানে এখন শীতকে জানিয়ে বিদায় গ্রীষ্মের উত্তাপ মুহূর্তেই জ্বেলে দিচ্ছে দাহ।

আরো কিছুকাল অপেক্ষায় থেকো; এখনো আমার আসতে কিছুটা বাকি। তার চেয়ে বরং আগামী শীতে অতিথি পাখির পালকে পাঠিও হৃদয়ের কোমল সংকেত। গাছে গাছে লিখে দিও বিবিধ মৌন ভাষা। আরো কিছুকাল বরং অভিমানে থেকো। সেটুকু না হলে বাতাসের ভাঁজে বিরহ লিখে দিও। পরাজিত মেঘদল না হয় আরো কিছু কাল ঈর্ষায় জ্বলে জ্বলুক! না হয় আরো কিছু কাল আলোকে বিদ্ধ করুক ঝাঁঝালো সম্ভাষণ! তবু তুমি শোকের অশ্রু গুলো আরো কিছু কাল সযত্নে তুলে রেখো; এখনো আমার আসতে কিছুটা বাকি।

আরো কিছুকাল না হয় প্রিয় অপেক্ষায় থেকো।

ওখানে মেঘের মহল্লা জুড়ে তাবৎ বৃষ্টির কানাঘোষা

ওখানে মেঘের মহল্লা জুড়ে তাবৎ বৃষ্টির কানাঘোষা

ওখানে মেঘের মহল্লা জুড়ে তাবৎ বৃষ্টির কানাঘোষা! এখানে শব্দ খুঁজি ঘুমন্ত বৃক্ষের সবুজ পাতার ললাটে। আজ চৈতালি মন যতদূর পারে মেলে দেয় দৃষ্টির ডানা! তোমার ওখানে জানালার দোষে সেধে পড়লো কি বিরহী রোদ চোরা বুকে? মেয়ে তোমার কোমল থেকে কিছু শব্দ তুলে নেবো ভেবে আঙ্গুলে ফাঁকে ব্যতিব্যস্ত হলো কবিতার কাঠপেন্সিল! বিশুদ্ধ মৌতাত জ্বেলে ভূ-মধ্য স্থল ভাগে; বলি মেয়ে এত দূর কেন মেঘেদের বাড়ি? সহজে পারি না ছুঁতে উড়াল যে জানে না এই মানবিক দুটি ডানা!

অসময়ে বেজে ওঠে ভুলের বাদ্য (দুই)

অসময়ে বেজে ওঠে ভুলের বাদ্য

সোনার পেয়ালা তোমাদের থাক আমি বরং হেঁটে যাবো কাদামাখা পথে। যেতে যেতে পথে কিছু মেখে নেবো ধূলো। পলেস্তরার মতো খসে পড়ে জীবনের বোধ; আরো বেশি হয়ে ওঠে আগ্রাসী সময়ের সাথে জুড়ে দিয়ে দর কষাকষি! বৃষ্টির জল জমে বুকের ভেতর তৈরি হলো যে জলাশয় সেখানে হাঁসেদের মতো জলকেলি করে মন উদ্ভ্রান্ত সময়ে! আমি তবু ভুলে যাই এইসব নাগরিক কোলাহল, বর্ষা বিকেলে প্রেমিকার চোখে নেমে আসা উদাস ভঙ্গিমা। পাললিক মন হতে মুছে যায় পলি; দেখি মন মুহূর্তেই বদলে গেছে, যেন পাথরে লিপিবদ্ধ করে রেখে আসা হতাশার জাদুঘরে। তবু এইসব তুলে রেখে সময়ের তাকে, ফিরে যাই বহুদিন বহুকাল আগে কোন এক বৃষ্টির দিনে ফুলে ওঠা বর্ষার হাঁটু জলে ভাসিয়ে কলার নাও কলমির বৈঠা হাতে ‘হেইয়ো’ ডাক তুলে। ফিরে যাই, ছিপ ফেলে তুলে আনা গুলসা, পুঁটি ভরা খালই হাতে পুরনো সময়ে!

দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব।

অসময়ে বেজে ওঠে ভুলের বাদ্য (এক)

অসময়ে বেজে ওঠে ভুলের বাদ্য (এক)

চেয়েছিলাম কাঁদামাটি জলে গা মাখাবার। শহরে সভ্যতা আমাকে কংক্রীটের রাজপথ দিল; আটোসাঁটো পোশাকে নেহাৎ ভদ্র সেজে গেলাম! ভিনদেশী সঙ্গীতে মগ্ন হতে হতে ভুলে গেছি আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! আমি একবার পিতামহের জন্য নিজস্ব পুকুরে বাঁশ-তক্তার ঘাট বানিয়েছিলাম; কতবার আমিও পা ফেলে সে জলে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে গাইতাম গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান! এরপর কতবার ভুলে গেছি সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসির কথা! নিত্য এখন আমার ডুবে যাওয়া ভিনদেশী সুরের পাত্রে বিলাসী চুমুকে! আমার নিজস্ব একটা ব্যালকনি ছিল! সেখানে বিশুদ্ধ রোদ এলে পাটি বিছিয়ে বসে পড়তাম গায়ে মেখে নিতে অথচ এই সভ্যতার সামান্য আলোটুকুতেও ঝলসে যায় দেহের ত্বক! সময়ের ছুটতে থাকা বল্গা ঘোড়ার অস্পষ্ট পদচ্ছাপে আমি, নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি!

পরষ্পর -০১

পরষ্পর -০১

অতঃপর-
আলিঙ্গনাবদ্ধ চুম্বনে একটি শিশু আত্মার জন্ম হলো
আমরা একটি অভিমূখে ধাবিত হতে থাকলাম!
একটি আলিঙ্গনের রাতে, একটি চুম্বনের শব্দে,
একটি উষ্ণতর মুহূর্তে পরষ্পর
পরষ্পরে গলে যেতে থাকলাম;

বাতাস গর্জে উঠলো; আকাশ বৈরি হলো
আমরা মিশে যেতে থাকলাম;

রাতগুলো-
আরো ঘনিষ্ট শব্দে, ক্রমশ: গভীর হতে থাকলো!

কবিতার কোন এক শব্দকৃষকের কাছে

কবিতার কোন এক শব্দকৃষকের কাছে

কবিতার বুক জুড়ে যে শব্দকৃষক অবিরাম কর্ষণের পর শব্দের মোহনীয় উচ্চারণে লিখে প্রার্থনা সঙ্গীত মানুষ আর মৃত্তিকার, আমি তার সতীর্থ কোন এক। শব্দকৃষকের চোখের কোটরে লিখিত শব্দমালা আমি চেয়ে দেখি এবং একটি বিশ্বাসের কাছে; কবিতার শব্দের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই – দেখি সেই অব্যর্থ চাহনিতে কম্পিত শাসকের চিবুক ও তর্জনী! আমি অর্পিত হই তাঁর প্রতিটি সুগঠিত বাহুর দৃঢ়তা এবং উচ্চারিত শব্দমালার কাছে এবং দেখি সেই শব্দসমূহের কাছে নতজানু হতে শোষকের যাবতীয় আষ্ফালন!

এভাবে কবিতার কোন এক শব্দকৃষকের কাছে সমর্পিত হই প্রতিবার এবং তার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দমালা আমাকে এই মানুষ এবং মৃত্তিকার কাছে নতজানু করে।

________
১৯/০১/১৩

পাখিগুলো প্রতিবাদী হলে

পাখিগুলো প্রতিবাদী হলে

খাঁচায় বন্দী থেকে থেকে যে পাখি একদিন
ভুলেছে উড়াল, রোদ্রের গন্ধ পালকে;
আজ এমন ক্ষুব্ধ হলে ভাবি
পাখিও কি জানে দেয়ালে পিঠ ঠেকলেই
ঠোঁটে জাগে তার ভাষা?
আমি তাকে কি দিই নাম –প্রতিবাদ?

মানুষেরা বোঝে না সে ভাষা;
জানে না পাখিরাও পরাজয় নেয় না মেনে।

এতো যে আমাদের আহত বিকেল
ভাবি আঁধার ডাকলেই ভুলে যাবো
আমাদের আহত বলে কিছু
ছিল না কখনো।

আর;
আমরা ভুলে যেতে যেতে ভুলে যাবো
মানুষের নয় কেঁচোদের,
শরীরে কখনো মেরুদণ্ড ছিল না।

পুনঃপ্রকাশ।
০২/০৭/১২