বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

উষ্ণতার জার্সি

images জাসি

সময়টা এখন মাঠ ভরা ফুটবল-
প্রিয় দলের জার্সি গায়ে হায় উল্লাস
টিভির পর্দায়, এলার্জির আর্তনাদ
রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর বাতাসের
গায়ে পতপত করে উড়ছে পতাকা
আপন চিত্রা কোথায় রাখি বলো ভেবে
পাচ্ছি না, তবু ওরা প্রিয় দল নিয়ে ব্যস্ত
রাস্তা পারাপারে সাদা চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও
গাড়ি স্লো করে না-কখন হবে দুর্ঘটনা
প্রাণ বুঝি যায়, ফুটবলে হায় উল্লাস পায়
এই হলো নাকের ডগায় বাস্তবতা, আর
জেগে থাকা হিমশীতল উষ্ণতার জার্সি।

১৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ০৪ ডিসেম্বর’২২ 

মৌবনী

down

কতবার ভেবেছি তুমি যদি মাঝি হয়ে
আমায় জলের বুকে ভাসিয়ে নিতে
দাঁড় বেয়ে বেয়ে চলে যেতে বহুদূর
আমি শাপলা পদ্ম তুলে নৌকায় রাখি
তুমি না হয় একটা মালা গড়ে দিও
কানপাশা খুলে ছোট্ট একরত্তি চুমু
তারপর নিয়ে যেও অচেনা এক পারে
যেখানে মৌবনী আলতা পা ধুয়ে যায়।

বুকের ভেতর লাল গালিচা

313

কলিজার ভেতর লাল গালিচা বিছাইছি।
আইসবা?

কামরাঙা ফুলের এক জোড়া ঝুমকা,
এক জোড়া বকুলের নূপুর,
আর
একখানা শঙ্খমালা গাঁথি রাখছি আইসবা?
আমি দোতারা বাজাইলে তুমি গান ধইরবা,
চন্দ্রমল্লিকার বাগে জোছনা বইবে,
ডানা মেলে ভাসবা। আইসবা ?

আমি দিয়ে যাইতে চাই-
হাজার বছরের পুঁথির শ্লোক,
আউশ ধানের গন্ধ মাখা কবিতার তিথি,
বৈশাখের ঢোলক, তাল পাতার পাখা।…
আইসবা? জলে
রোদের তেজ মাখা মায়া দোলে,
দেখি-
পদ্ম পাতার তলে পোনা মাছের খোঁট।

আমি চাই তোমার কাঁচের চুড়িতে ঝড় উঠুক,
শরমে আঁচলে ঢাকো মুখ, কাঁপুক লাজুক লিরিক দুটি ঠোঁট!
কি কও… আইসবা তুমি?
উথাল পাতাল ঢেউর তালে মিশাইয়াছি আরক্ত গোলাপের স্রোত…
তোমার নামে ভাসাইয়া দিছি আপন অন্তর্যামী।

অস্থায়ী রঙ্গমঞ্চ

3175

যারা ভালবাসে তারা থাকে না
একে একে যাত্রীবাহী বাস আসে
একে একে হাত নেড়ে উঠে যায়
নির্মোহী আত্মজনেরা
যারা স্নেহ দেয়, তারা থাকে না কিছুতেই।

নির্দিষ্ট সময় এলেই
রঙ্গমঞ্চ ঘুরে যায়
রোদ বৃষ্টি মেঘ ছায়া অতিক্রম করে
বাজ পড়ে বোধন সময়ে
প্রবেশ ও প্রস্থান কান্না শোনে না।

কত রঙ, কত হাসি, কত আদানপ্রদান
হিসাবের খাতায় ক্লোজিং ব্যালান্স
মস্ত গোল এক শূন্য এঁকে যায়
প্রিয় মুখ প্রস্থান করলে
মঞ্চ গুটিয়ে অন্যত্র গামী হয় যাযাবর দল।

.
(কবি প্রণব বসুরায় স্মরণে)

গুহাজীবন

আমার প্রতিবেশী ছিল আলখেল্লা পরা একটুকরো রাত, ডানপাশে
কয়েকটা মাকড়শা বুনছিল তাদের স্বপ্নজাল। আর শুকনো পাতার
মর্মরে বাজছিল অনাগত দিনের দ্যোতনা, কিছু সমবেত পিঁপড়ে
খুঁড়ছিল মাটি। মাঝে মাঝে এভাবে খুঁড়ে যেতে হয় – তা আমার

আগেই জানা ছিল। কালো বন্দুকটার গায়ে হেলান দিয়ে আমি
যে মমতার স্থির চিত্র আঁকতাম, সেও থাকতো বহুদূরে কারণ
এই গুহাজীবন তার কখনোই পছন্দ ছিলো না। কেবল আমিই
একটা পালিত পাঁজর সম্বল করে বেছে নিয়েছিলাম বেদনার তৎসমপর্ব।

একদিন গুহা থেকে বেরিয়ে আমি পেলাম সে এক অন্য মানব-
জীবন ! যেখানে মানুষ মাটি খুঁড়তে জানে না। দাঁড়াতে পারে না
ভালোবাসার স্বপক্ষে। দ্বেষের দ্বিতীয়জীবন নিয়ে তারা দেশ
ছেড়ে যায় – তবু সমবেত হয় না .. হতে পারে না ..হতে পারে না।

চোখে যদি ঘুম থাকে এসো

311

তোমার চোখে ঘুম, রাত বাজে আট মাত্র,
তুমি কী এখনি হয়ে যাবে স্বপ্নপুরির ছাত্র?
নাকি টিভি চ্যানেলে রাখবে চোখ,
ঘুম যাক টুটে, তাকিয়ে দেখো চা তোমার সম্মুখ।

চায়ের জলে ঘুম ডুবিয়ে মারো;
জীবনের রঙ করে বন্ধু গাঢ়,
অযথাই সমগুলো ঘুমিয়ে করো না নষ্ট
দেশের খবরে রাখো চোখ চা হাতে নিয়ে….
ঘুম ভাগাও, মুছে যাক কষ্ট।

এই যে আমি একাকি কাজ করে যাচ্ছি একে একে
মায়া হয় না তোমার? এসব দেখে?
চা’টাও তো করে দিতে পারো তৈরী;
মনের আবহাওয়া করে দাও বৈরী।

এই নাও কড়া লিকারের চা
চোখে যে তোমার ঘুমে খোঁচা;
দুঃসহ সময়টুকু হয়ে যাক পার
ঘুম ভাঙাতে চায়ের মহিমা অপার।

আমাকে এবার সাহায্য করো কাজে
আমার সময় যাচ্ছে বাজে
চা খেয়ে দুজন লেগে পড়ি কাজে দুজন
বন্ধু আমি সখি তুমি হয়ে যাও সুজন।

এত হম্বিতম্বি দেখিয়ো না আমায়
কিছু নেকি তুলো আমলনামায়
চায়ে চুমুক দাও, ঘুমটারে করো গুঁড়ো
বয়স তো কুড়ি নয় আমরা দুজনই বুড়ো।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

স্মরণমুখ

লজ্জারং গাঢ় হলে বিব্রত পাল্টে যায়
এমন ব্যাপার কেবল কোথাও না কোথাও
দীর্ঘ জীবনের নরম ঢেউয়ানো সৌন্দর্য
ঢুকে পড়ে অজ্ঞাত শাদা মৃত গোলাপে-
আর শস্য মহার্ঘ প্লাবনে সুবাস ছড়ায়
যা ছিল রক্ষিত বিজ্ঞাপনের মতো; প্রাণ-
তোমাকে খুঁজে পেয়েছি মিস্ত্রির রাত্রিতে

অথবা রাত্রির কোনো স্মরণমুখ নিয়ে
ভারবাহী স্তনের প্রস্থান নাজিল করো
কেন তার ছাঁয়া কাঁপে রোজ ভিন্ন অর্থে?
আমাকে কাঁপন ধরিয়ে শাসন করে আকর্ষণ
গরম তন্দুরির সংকীর্ণ তাপে ওড়ে ভাপ!

গোধূলির আলোয় মন হারিয়ে যায়

31437

গোলগাল পৃথিবীর আকাশটাও গোল,
নীল সাদা লাল মেঘ সেথা বাঁধায় গণ্ডগোল,
সাদা মেঘ সন্ধ্যায় লাল হয়ে যায়,
আকাশটাও তার বুক রঙে সাজায়।

সবুজের বুকে জ্বলে ওঠে লাল,
পশ্চিমের সূর্য কী গোলগাল,
গোধূলির রঙ এসে হেসে ওঠে ফিক,
জলের উপর লাল রোদ করে ঝিকমিক।

মিহি হাওয়া বয়ে যায় ক্ষেতের বুকে,
ধানের পাতার ঢেউ দোলে যে সুখে,
বিকেলের বুকে বসে সুখ কুড়াই,
কার্তিকের হাওয়ায় মনটা জুড়াই।

নীড়ে ফেরা পাখি’রা নীলে ওড়ে ঘুরে,
সূর্য ঐ যায় চলে মাঠ ছেড়ে দূরে,
ভালো লাগার আবেশে ভরে যায় মন,
গোধূলি লগনে করে আহা সুখ আহরণ।

সময়ের চাকাটা খুব দ্রুত ঘুরে,
দিনের আলোর বিদায়ী বাঁশিটা বাজে করুণ সুরে,
চলে যাবে দিন রাতের বাড়ী,
আলোর পিছনে রাত টেনে দেয় দাঁড়ি।

লাল রঙ হবে কালো রাতের টানে,
আমিও যাব ফিরে নীড়ে মমতার টানে,
সুখগুলো জমা রাখি বুকের কোণে,
রোমন্থন করবো একদিন স্মৃতির রিংটোনে!

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ি চুনারুঘাট)

বিজয় আমার

Good Morning Sunshine!

বিজয় আমার প্রভাত রবি
সকাল বেলার হাসি,
বিজয় হলো মাঠে ঘাটের
ঘামে ভেজা চাষী।

বিজয় আমার শিশুর বলা
মা মা মধুর ডাক,
বিজয় হলো ফেড়িওয়ালার
মিষ্টি গলায় হাঁক।

বিজয় আমার হাজার স্বপ্ন
তিরিশ লক্ষে কেনা,
বিজয় হলো মাতৃভূমির
সবাই মুক্তি সেনা।

বিজয় আমার গরিব বাবার
ছেলের সফলতা,
বিজয় হলো সব জাতিতে
অবাধ স্বাধীনতা।

বাংলাদেশ

imag

বাতাসের গায়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখিনি
গোলাপের গন্ধে গল্প ইতিহাস শুনছি;
চোখে প্রভাতফেরি বিজয় উল্লাস দেখি
জলভারি বুকটা গর্বে ঝর্ণা ধারা বয়-
সুখ দেখি শুধু লাল সবুজের পতাকায়
সুফলা শস্য শ্যামলা চির সবুজের সমাহার
গলা ভরে গায়তে ইচ্ছা হয় “আমার সোনার
বাংলা- আমি তোমায় ভালবাসি- মা গো
খুব বেশি ভালবাসি” “প্রথম বাংলাদেশ আমার
শেষ বাংলাদেশ; জীবন বাংলাদেশ আমার-
মরণ বাংলাদেশ- বাংলাদেশ- বাংলাদেশ”
“আমি বাংলা মায়ের ছেলে- জীবন আমার ধন্য
যে হায়-জন্ম বাংলা মায়ের কোল” “জীবন
বাংলাদেশ আমার- মরণ বাংলাদেশ-বাংলাদেশ”।

১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ০১ ডিসেম্বর’২২

নেইমার গেইমার বিজন বেপারী

খোকার প্রিয় হলুদ জার্সি
তারকা নেইমার,
খোকা বলে বিশ্বে নাকি
সে বড় গেইমার।

সাম্বা নাচের দৃশ্য দেখে
সেও নাচতে রাজি,
ব্রাজিল নাকি জিতবে এবার
বিশ্বকাপের বাজি।

বিল্লোসোনা

টুকটুকে লাল বউ সেজেছে
ছোট্ট বিল্লো সোনা,
রুপ দেখে তার বলছে সবে
লাল পরীদের পোনা।

মাথায় টিকলি হাতে চুড়ি
গায়ে রেশমী শাড়ি,
তার হাসিতে মুক্তা ঝরে
মাতায় সাড়া বাড়ি।

কাজল কালো চোখ দুটিতে
কতো স্বপ্ন আঁকে,
বেরু বেরু যাবে যখন
বায়না ধরে মা’কে।

তার কথাতে ময়না পাখি
ভীষণ লজ্জা পায়,
ঘরের মানুষ পথের মানুষ
সবাই তাকে চায়।

ব্যাকুল রাতে

3101

ধূম্রজালে
বুঁজে আছে পথ
বক্র নীলে
নিঃসীম জলদি
অন্তিম শয়নে
রিক্ত তরণী
বিমর্ষ নদী..

বিষাক্ত নখ
আদিম বুকে
এঁকে দেয় কষ্টের আঁচড়!
অনুক্ত আর্তনাদ
ছুঁয়ে যায়
দীঘল ক্রোধ দিগন্ত অবধি!

আহত মন
পরতে
পরতে
অগাধ শূন্যতা…

নিরঞ্জন মিথ
ব্যাকুল রাতে
বেরিয়ে পড়ে
অজানা পথে
অনিশ্চিত ভবিষ্যত!

যারা পাহারা দেয় ঝড়

আমি তোমার পরিচিত নই, সেকথার ইতিবৃত্ত
না বললেও চলবে,
তুমি আমার পরিচিত- তা বলার জন্যই এই মুক্ত
আকাশের দিকে তুলেছি আঙুল
আর বলেছি- আকাশ নগ্ন হলে রমণীর দু’চোখ
ক্রমশ জলে ভিজে যায়।

বৃষ্টি একাই মধ্যরাতে দেখে সেই জলের প্রকার
যারা পাহারা দেয় ঝড়, যারা বজ্রের চারপাশে
লিখে রাখে নিজ প্রেমিকার নাম,
পরিণত আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি শুধু
এটুকুই বলি–
একদিন আমিও পাতার আখরে সেই নাম
লিখে রেখেছিলাম।

এই দেখো আলো ফোটা ভোর

317

দেখ তাকিয়ে সূর্য কুয়াশার আড়ালে, হেমন্ত কী দ্বারে?
শীতের সুর বাজছে প্রকৃতির তারে,
আমায় নিয়ে যাবে গ্রাম আকাশের নিচে?
এই শহরে হেমন্তের সুখ, ষোল আনা মিছে।

আকাশে শুভ্র মেঘ নেই, মনে নেই আনন্দ,
শরত চলে যায়, বাজে না বুকে সুর ছন্দ,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, দাঁড়াবে পাসে এসে?
দেখে যাও আকাশ যাচ্ছে কেমন বিবর্ণতায় ভেসে।

হিম হাওয়া বইছে, থিরথির কাঁপছে পাতা,
আজ ছন্দ শূন্য আমার কবিতার খাতা,
মনের সুর হারাচ্ছি, জানি না কী জন্য,
এই সবুজ এই স্নিগ্ধতা, ক’দিন বাদের ধুঁধু অরণ্য।

কান পেতে শুনো, আমার বুকের দীর্ঘশ্বাস,
চাই না বিবর্ণতায় ছেয়ে যাক মনের আকাশ,
হেমন্তও চাই, চাই না আকাশে বিবর্ণ রঙ মেঘ,
চাই তুমি স্পর্শ করো আমার আবেগ।

কত শত দুর্ভাবনার বেড়াজারে আটকে আছি,
রোদ ঐ খেলছে দেখো ছায়ার সাথে কানামাছি,
আকাশের মেঘগুলো নিমেষেই হলো কোথায় উধাও,
তুমি যেন মন আকাশ ছেড়ে চলে যাও অন্য কোথাও।

সীমাহীন আকাশজুড়ে কুয়াশার ধুয়াশা,
চোখ মেলে নতুন ভোর দেখে মনে রাখি সুখাশা;
এসো কাছে আকাশে তাকাও এবেলা,
দেখে যাও আকাশে বসেছে কুয়াশাদের মেলা।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)