বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

বৈরাগ্য বিলাপ

316

সুরা সাগরে
অধরা প্রেম তলিয়ে গেছে অনন্ত স্রোতে
অবিমৃষ্য আবেগে আনাড়ি সন্তরণ,
ক্লান্ত অনৃত অভিসারে
দূরে বহুদূরে
ভেসে গেছে প্রমত্ত কবিতার সুবর্ণ সংলাপ
হৃদয়ের গহ্বরে
অবরুদ্ধ চেতনা করছে বৈরাগ্য বিলাপ।

আদিগন্ত
দৃষ্টি খুঁজে তন্ন তন্ন করে সঞ্জীবক সত্যের আশ্রয়
আপন ঘরে সতীত্ব খুইয়েছে নারী,
স্বার্থান্ধ সামাজিক বলয়!

কোথাও কোন শুভ্রতা নাই,
প্রেম নাই, স্বচ্ছতা নাই
নর্দমার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে ভালবাসা
পবিত্রতা
ডুবছে মানুষ অলক্ষ্য সাঁতারে, ব্যর্থ মানবতা!..

আকাশে আজ তুলা মেঘ

312

শরত এসেছে মনের দুয়ারে, মন উঁকি মারে আকাশে,
আহা সাদা সাদা মেঘ দেখি ওড়ে নীলের পাশে,
কী সুন্দর মেঘেদের ডানা, তাদের সাদা পালক,
এই তুমি অবসর আছো? আমার সঙ্গে আকাশ দেখবে বালক?

বালক তোমার ছেঁড়া পালক, মেঘের ডানায় ওড়ো,
বলছি তোমায় এসো, মেঘ দেখি…আমার সঙ্গে ঘুরো;
কাশফুল ছুঁয়ে আসি অথবা খোলা মাঠে বসি
মনের খাতায় চলো বসে ভালোবাসার অঙ্ক কষি।

আজ আকাশটা স্বচ্ছ আলো নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় আছে,
তুমি বালক ওড়ে এসো আমার কাছে,
ডানা মেলা দিনগুলো ওড়িয়ে দেই হাওয়ায়,
কত সুখ এসে বসেছে আজ মনের দাওয়ায়।

ও উদাসী, কী করছো এখন, বসে আছো একাকি?
এই যে আলসেমীতে সময় দিচ্ছে ফাঁকি
এসো খোলা আকাশের নিচে, বেড়াই হেঁটে,
কী লাভ বিগত দুঃখগুলো বসে বসে ঘেঁটে।

আমার মন উতলা আজ, রোদ্দুর আলো চোখের কোণে
তুমি ছাড়া কী করে যাই মনে স্বপ্ন বোনে,
মেঘ মন আমার, আবেগে ভরপুর,
সঙ্গী হও আজ, চলো আপন করি শরতের দুপুর।

আকাশে পাখিদের ডানা মেলা দিন
কেটে গেছে অনায়াসে মনের দুর্দিন
তুমি থাকলে পাশে লাগতো ভালো আরও
এসো মনের রঙ করে নেই প্রেমের রঙে গাঢ়।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ী চুনারুঘাট)

প্রথম এক গল্প

এমন শতাব্দী অবতরণ করল, গলা ছেড়ে
গান গাওয়া মুশকিল, জাগিয়ে রাখে
শাদা মোমের নিচে রুপালি পোকা, আন্ধার;

ডানা মেলাও পাখি, প্রেমে অবতীর্ণ এক
বিজ্ঞাপনের আলোয় লাবণ্যমুদ্রিত মুখ
তোমার এই সবুজ দুয়োরে করুক বৃক্ষ;
জাদুর ডানায় ভরে যাবে আগুন, রাত্রি-
যতটুকু বাড়ুক-শীতের বর্ণনাহীন ছিঁড়ে
বাঁক পড়া সুর কেবল ঝোঁকের সঙ্গে
এই যাত্রা হবে গাঢ়, গভীর মার্জিনে

হল্কার বাজি আহ! ফুল, এখানে অবশিষ্ট
মুষল বৃষ্টি-উড়বার চর্চায় ফিতে কাটা রোদ
বয়ে বয়ে জন্ম দেয় ততকাল রঙিন পথ
না হয় ফাঁসিকাঠে প্রথম গল্প শোনাবে…

মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ! (গীতিকাব্য)

একতারা

খেলিস্ নে তুই পথের বাঁকে
ভুলে রে তার সঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

যুগল চোখের রঙ তামাশা
মোহের সে তো ক্ষণিক আশা
স্বপ্ন নয় কুরঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

মার্ রে তালা ক্রোধের ঘরে
ধ্যান সাজাতে জ্ঞানের দরে
ফেলে অচল ঢঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

খুঁজতে শুধু তারই চরণ
গড় ও’ বুকে নামের ক্ষরণ
নিদ্রা করে ভঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

স্বর্গপানে

সাত বছর পড়ে গিয়েছি যেখানে
হঠাৎ সেখানে আসা
দীর্ঘ দশবছর পর।
এখানে পড়েছি আজ থেকে
বাইশ বছর আগে সেই ২০০০ সালে অর্থনীতি নিয়ে পড়েছি, তবে
অর্থের অভাব সাথেই ছিল।

আজ আর সেদিন নেই তবে অনেক
আফসোস এসে হাজির হয় মনে
অবলীলায় অবেলায়।

আমার প্রিয় কলেজ সেই
সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল।
অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এসেছে আধুনিকতা।

আলোয় আলোকিত আজ সব
নেই পুরোনো সেই আঁধারের নিশি
তবে আলো ছড়ায় রোমান্টিকতায়
যা দেখে…
আবার ফিরে আসতে ইচ্ছে হয়
এই স্বর্গপানে।।

নক্ষত্র ও আমি

আমি নক্ষত্রের মতো চেয়ে থাকি
দূরের মায়াবী ক্যানভাসে
নীল আকাশ, নীল জল ছুঁয়ে
যখন অন্ধকার নামে।

নীলাকাশ সিমাহীন
নীলজল অন্তহীন সমুদ্রে
সু উচ্চ পাহাড়ের বৌন উৎসব
নদীজল প্রমত্তা ছুটে যায়।

জলতরঙ্গ, নীলাকাশ সঙ্গম
অনিকেত সবুজ ছুঁয়ে
মহাকালের উৎসব।

জন্ম-জন্মান্তরের সূর্যাস্তে
নতুনের আগমনী বার্তা
দূরের পথে সংলাপ আর
মুখোরিত জীবনের গান।

অনেক আলোর বিধান ঘিরে

শিশিরের সিক্ততা ছড়িয়ে হেমন্ত চলে যায়। ঘোরের
আভা নিয়ে বাঁচে যে রাখাল,তাকে তুমি বন্দি,
বলতেই পারো। অথবা লিখে রাখতে পারো-
জীবিতদের জন্যই জীবন, মৃতের জন্য- শুধু দীর্ঘশ্বাস

উত্থানের কাহিনি শুনিয়ে সূর্য ডুবে যায়। তপ্ত দুপুর
ছিল বুকের দুপাশে, তার সাক্ষী শুধুই থাকে নদী
আর প্রিয় পিপাসা- অনেক আলোর বিধান ঘিরে
রচিত রজনীগন্ধার ছায়ায় রুয়ে রাখে নিজ নাম

আমি বহুকাল থেকে জমাট হয়ে আছি- রাখালের
রক্ষিত জীবনে,কবিতার শোধবোধে পাশাপাশি
যে নিসর্গ, বেছে নিয়েছি তার দাসত্ব। আর কিছু
ঢেউয়ের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি সেই ছায়ার প্রণাম

তোরে যে মা খুব ভালোবাসি! (গীতিকাব্য)

images32123221

আবার আসবো ফিরে
শ্যামা এ’ নদীর তীরে
সজীব কুঁড়েরই হয়ে বাসি –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

বাঁধবো বিকেলে যতো তোরই নামে বোল,
হিজলের শাখে খেয়ে মিলেমিশে দোল।
এ’ হৃদয়ে ভাব চষে
গোধূলির বাটে বসে
ব্যাকুলে বাজাবো ফের বাঁশি –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

হাতছানি দিলে তোরে আষাঢ়ের ঢল,
ভাবিস না যেন তুই ফেলে আঁখিজল!

আবার মাতাল হাল এ’ হাতেই ধরি,
বাইবো নদীর বুকে পাল তোলা তরী।
সাজবো আশায় জেলে
বরশি বা জাল ফেলে
কখনো দামাল ক্ষেতে চাষী –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

এবং পথিক

হাওয়ার মতো হালকা বায়ে
উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে,
যেতাম যদি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে!
অচেনা সব নগর বন্দর ঘুরে ফিরে
আঁজলা ভরে নদীর জলে,
প্রাণ ভরে তৃঞ্চা মিটে;
পাখপাখালির ঝাঁকের ভিতর
কুড়িয়ে কটা ঝরা পালক
হাতের মুঠোয় সাজিয়ে নিয়ে পথিক হাঁটে;
আমায় সাথে করে না মোটে
পথিক সেতো বড্ড একা আমারই মতো,
তারই সাথেই আমিও হাঁটি
অচেনা ঐ পথটি ধরে
কালে কালে যুগে যুগে;
গোল বাঁধলেও দেখে না মোটেও
উদাস পবন কালো মেঘে
হারিয়ে গেল কখন যে সে?

.
১৪২১/২২, অগ্রহায়ণ/হেমন্ত কাল।

আকাশে আর মেঘ নেই

318

তাতে কী মেঘ নেই, সীমাহীন নীলে ছাওয়া আকাশ
এমনিতেই আকাশ সুন্দর নাই বা হলো মেঘেদের বসবাস;
মেঘগুলো ওড়ে আসুক সে’ও চাই,
বন্ধ চোখে আমি শরতকেই খুঁজে পাই।

শরত যদি থাকতো জড়িয়ে আকাশ বারোমাস
বিবর্ণ রঙের হতো বুঝি সর্বনাশ;
না থাকুক হেমন্তের আকাশে মেঘেদের আস্ফালন
আমি বারোমাস শরতই করি মনে লালন।

মুঠোফোনে সাজিয়ে রেখেছি অজস্র শরত
আমি তালা খুলে চোখ রাখি দেখি মেঘেদের পরত
কী মুগ্ধতা এনে দেয় মেঘগুলো,
মেঘগুলো দৌঁড়ায় উড়িয়ে হেমন্তের ধুলো।

সোনা রঙ রোদ হেমন্তের দোরে নাড়ে কড়া,
হিম খামে শীতের চিঠি নিয়ে আসলো ঐ ঋতু হরকরা;
মিহি আমেজে ভরা দিনগুলো ভালো কাটে,
শিশিরের বিন্দু ঝলমলায় সবুজ ঘাসের মাঠে।

আকাশজুড়ে ভোরের রক্তিম আলো
ঠান্ডা হাওয়ায় সকালটা কাটে ভালো;
রোদ্দুর গায়ে মেখে বারান্দায় দাঁড়ালেই কী সুখ
আকাশজুড়ে মুগ্ধতার রঙ আহা চোখের সম্মুখ।

হেমন্ত শুভ্র মেঘ দূরে ঠেলে দিয়ে আকাশ করে দেয় ফিকে;
এই বিবর্ণতার মূল্যে যেন মানুষের আরাম বিকে
আরাম গায়ে নিয়ে কেটে যাবে হেমন্ত
গায়ে যেতে মন চায়, এবেলা মানে না এ মনতো।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও, চুনারুঘাট )

তারা কেনো খসে পড়ে

hqde

খসে যাওয়া তারার জন্য হৃদয় কাঁদে
কখনো কখনো আকাশ পানে চেয়ে
থাকতে থাকতে চোখ ভিজে নোনা জলে।

কালো আধার রাতে খসে পড়া তারার স্মৃতিতে
ব্যাকুল হই,,ব্যথিত হই নীল কষ্টে
ছুটে যাই রাস্তার পাশে কবরের কাছে
তড়িৎ জিজ্ঞাসা করি তারা কেনো খসে পড়ে।

তারার আলোয় চলতো জাহাজ নামক জীবনটা,
দমকা হাওয়ায় ছিড়ে যেত পাল
তারা জ্বল জ্বল করে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত আপন ঠিকানায়।

তারা যখন আলোকিত করে ঘর
বুঝি না আমরা অনেকে
খসে পড়লে ছুটতে থাকি মিথ্যা মায়া মোহে।

উৎসব হোক মৃতদেহ ঘিরে

3069

তলানিতে ঠেকে আছে জীবনের সমস্ত তপস্যা
কিছুই উত্তীর্ণ করেনি,
পরাজিত গ্লানি
আর …
চরণ তলে নেতিয়ে থাকা জ্যান্ত শবদেহ!

ভালোবাসা ব্যতিরেকে
কিছুই ছিলোনা জীবনানন্দের দোকানে
লাল নীল ভালোবাসা
মুঠো মুঠো স্বপ্ন
স্তরে স্তরে সাজানো আশা প্রত্যাশা..

কান্নার নন্দনে
অবিশ্রান্তির ধারা
চোখের কোণে পুঞ্জিভূত স্বপ্ন!
মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে সম্মুখে
এতটা নির্দয়,
এতটা বেপরোয়া ভাগ্য… এসব দেখে-
ভালোবাসা ভুলে যায় লোকে।

নিভৃতে
পুড়ছে আত্মা
ঝরছে রক্তিমা বৃষ্টি
অগণিত কবিতার আত্মহত্যা!..
কিছুই নেই অবশেষ, কেবলই কান্নার শ্লোক

নিস্তব্ধ শোক
তবু
মৃতদেহ ঘিরে সমবেত উৎসব হোক।

মানুষ

আমাকে যখন বলা হয় মানুষের কাছে যাও
আমি ঘাসের কাছে মনের দুঃখ বলি…

যখন বলা হয় দেখ মানুষের মুখ
আমি উড়ন্ত পাখির ডানায় নীলাকাশ দেখি

মানুষের তৈরি ভজনালয়ে যখন মাথা ঠেকানোর
উপদেশ বর্শিত হয়
আমি নদীর আঁজলা আঁজলা জলে
মুখ ধৌত করি

মানুষ পাঠের ইচ্ছা মরে গেছে
মরে গেছে মানুষ হওয়ার ইচ্ছা

একটা পতঙ্গ যতটুকু কল্যাণ করতে পারে
তার ধারেকাছে পৌঁছাতে পারে না মানুষ

তবু কেউ কেউ মানুষের পুজা করে
আর মানুষ সেই পুজারিকে হত্যা করে…

ভুবনপুর

ভুবনপুর ছেড়ে এসেছি অনেক আগে। এখন বসত করি নরকনগরে, পরখ
করে দেখি নক্ষত্রের চোখ, মুখ,তালু। আমাকেও যেনো দেখে কেউ কেউ, থির
সমুদ্রের ছায়ায় প্রথম যেদিন দাঁড়িয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই দাঁড়াই। দেখে
পাখি, ভোর,ভাস্কর্য। শুধু তুমি বার বার চোখ ফিরিয়ে নাও! বাধ্যবাধকতা
নেই জেনেও আমাকে শেখাও জলখেলা। জলের বাহার আর বাষ্প হয়ে উড়ার
দক্ষতা। আমি তো দক্ষ নই। যজ্ঞ-জ্ঞানও নেই আমার। তবু কেন পরাতে চাও
এই পৈতা। কেন পড়াতে চাও ব্রক্ষ্মাণ্ডনগর !

আশ্বিনের ইজম

জ্যোৎস্নার সঙ্গে কথা বলতে একটা
নিরিবিলি ময়ূরবসন জায়গা লাগবে
এই ভেবে আশ্বিনের শিশিরবিন্দুকে
শাগরেদ করেছি। আর মুখে-মুখে
ফিরফিরে প্রলাপ ছড়াচ্ছে, মৃদু দৃষ্টি।

দৃষ্টি গাঢ় হলে দারুণ অর্থ জুড়ে যায়
বাড়তি চর্চা, গোপনে চলাচল করে
প্রতিধ্বনি রটে, শান্ত নিশানার ইজম
আমলকির ঝুরিপাতায় চড়ুই-শিশির
হৃদয়গামী রাত্রি কেবল এত জাগে
আকাশ তাঁর সঙ্গে সাঁতরায়, আহ! কবি…