বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৬

১৮।
সেই নিরু এবার এমএসসি ফাইনাল দিচ্ছে, সামনেই পরীক্ষা, কবে শুরু হবে এখনও জানে না। এদিকে নিশাতও ক্যাডেট থেকে চিফ মেট হয়েছে এবং বুঝে নিয়েছে তার অনুমান ভুল নয়। সারা পৃথিবী ঘুরে জাহাজের জটিল এবং ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ জীবন যাপন করে এসে এই প্রশান্ত চোখ যার তার বুকে একটু আশ্রয় পাবে। নিশাত ভেবেছিল আর কিছুদিন পরে চিফ অফিসার হয়ে নিরুকে নিয়ে আসবে। এমনিতে যেমন আছে তেমনি চলছে কিন্তু বিয়ের পর কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কত কি মনে পড়ছে! নিশাত সালোয়ার কামিজ পরা পছন্দ করে না বলে নিরু ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরে থেকে শাড়ি পড়ছে। নিশাতের গান শুনতে ভাল লাগে বলে নিরু গান শিখেছে, ছায়ানটে সেকেন্ড হয়েছিল। গাড়িতে পাশাপাশি বসে যাবার সময় বাতাসে নিরুর এলো চুল উড়ে এসে নিশাতের চোখে মুখে লাগবে আর হাতে সরিয়ে দিতে দিতে আরও কাছে আসবে তাই মাথায় তেল দেয়া চুল বাতাসে উড়বে না বলে নিশাতের ভাল লাগার জন্য শ্যাম্পু করা চুলেই নিরু অভ্যাস করে নিয়েছে। মোটামুটি নিরু নিশাতের জন্য নিজেকে সর্বতোভাবে প্রস্তুত করেছে। ওই বুকেই নিশাতের জন্য সঞ্চিত আছে উত্তাল সাগরের মত সীমাহীন সুখ আর নিরাপত্তা, ওই হাত ধরেই এগিয়ে যাবে অনেক দূর! আবার নিশাতকেও অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়েছে। আগে নিশাত বেশ ড্রিঙ্ক করত কিন্তু নিরুর কাছে প্রতিজ্ঞা করে সে অভ্যাস বাদ দিয়েছে তবে নানা দেশে যাদের চলাচল তাদের বিদেশিদের সাথে চলা ফেরা করতে হয়, তাদের সাথে নানান পার্টিতে যেতে হয়। শুধু পার্টির সময় হালকা কিছু পান করার অনুমতি নিয়ে নিয়েছে এবং তার পরদিন কতটা কি ড্রিঙ্ক করেছে তা বিস্তারিত নিরুকে জানাবার প্রতিজ্ঞা করেছে। নিরু আকাশী রঙ পছন্দ করে তাই নিশাতের অন্তত শার্ট আর টি শার্ট মিলে গোটা ছয়েক আকাশী রঙের জামা আছে। এই অবস্থায় কে কাকে ছাড়া বাঁচবে? নিশাতের আলমারি ভরা নিরুর জন্য মুম্বাই থেকে কেনা শাড়ি, ব্রিটেন জার্মানির কসমেটিকস, শ্যাম্পু, ফ্রান্সের পারফিউম কত কি। কিন্তু নিরু এখনই এসবের কিছুই নিবে না। ওই এক কথা সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলব? বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন ভর্তি হলো সেদিন নিশাতই সঙ্গে গিয়েছিল। নীলা এখনও জিজ্ঞেস করে ওই যে প্রথম যেদিন তোর সাথে দেখলাম সেই কি তোর সৌভাগ্যবান? নিরু আস্তে করে এড়িয়ে যায় কাউকে কিছু বলে না, বলতে পারে না অত্যন্ত চাপা মেয়ে।

কত স্বপ্ন। চিফ মেট হলে নিরুকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে তখন দুইজনে একসাথে থাকবে। জাহাজের সাথে সাথে নিরুকে নিয়ে পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে। লন্ডনের কথাই বারবার মনে আসে। বিয়ের পর দুই মাসের ছুটি নিয়ে লন্ডন আসবে। নিরুর হাত ধরে পিকাডেলি সার্কাস দেখবে, বাকিংহাম প্যালেস দেখবে, বিগবেন, মার্বেল আর্চ, লিভারপুল স্ট্রিট, অক্সফোর্ড সার্কাসে কেনাকাটা করবে। সন্ধ্যায় টেমসের পাড়ে নিরুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে টেমসের বয়ে যাওয়া দেখবে। টিউব রেলে করে হোয়াইট সিটিতে গিয়ে বিবিসি বিশ্ব দেখবে, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মাদাম তোশো কত কি দেখবে! ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার, বার্লিন আর প্রেমের তীর্থ ইটালির ভেনিসে না গেলে কি হয়? প্রেম নগরী ভেনিসে নৌকায় করে ঘুরবে। শীতের দেশে নাইট নেভিগেশনের সময় নিরু ব্রিজে থাকবে আর দুজনের হাতে থাকবে কাল কফির মগ। সারা দিনে কঠিন ডিউটি করে রাতে নিরুর বুকে আশ্রয় নিয়ে নিশ্চিন্তে পরম শান্তিতে ঘুমাবে! যখন ভাবনার সাগরে ডুবে গেছে তখনই বেরসিক বিমানবালার কণ্ঠস্বরে চমকে উঠল, বিমানের বাঙালি বিমান বালা বলছে, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয় গন আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা বিমান বন্দরে……………………………..।

ভোরে ঢাকায় নেমে প্রথমে বাবার মতিঝিলের বাসায় যেতে হবে। মা বাবা কেউ জানে না যে নিশাত আসছে। তারা হঠাৎ করে নিশাতকে দেখে অবাক হয়ে যাবে। হিসাব অনুযায়ী আরও প্রায় এক মাস পরে ওর আসার কথা, কাজেই এমন সময় দেখলে অনেকগুলো মিথ্যা বলতে হবে। ওদিকে নিরু এখন কোথায়? হলে নাকি বাড়িতে! ওকে পেতে হলে আগে যেতে হবে বীণা আপার বাড়িতে। ক্লাস না থাকলে ও হলে থাকে না এখানেই চলে আসে। ভোর পাঁচটায় ঢাকা নেমে মতিঝিলের বাসায় আসতে আসতে সকাল আটটা বেজে গেল। মা দেখেই হা করে তাকিয়ে রইল, কি ব্যাপার তুই কোথা থেকে কেমন করে? ভাগ্য ভাল বাবা অফিসে চলে গেছে। বলছি বলছি সবই বলছি। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে মার সাথে নাস্তার টেবিলে বসে আলাপ হলো। জাহাজ আমস্টারডাম যাবার আগে হঠাৎ করে রিলিভার চলে এলো বলে এসেই পরলাম আগামী মাসের শেষ দিকে আবার চলে যাব। ও আচ্ছা, ভাল হয়েছে। ওদিকে তোর বাবা রায়হান ভাইকে বলে রেখেছে সামনের মাসে তুই আসবি। রায়হান চাচাকে আমার আসার কথা জানাবার এমন কি প্রয়োজন?
বারে! তাকে জানাব না তো কাকে জানাব? কি বলছিস তুই? এবারে তুই আসার পরই কাজলকে নিয়ে আসার কথা ভাবছি আমরা সবাই আর তুই কি বলছিস?
কেন কাজল কি কখনও এ বাসায় আসেনি?
সে আসা এ আসা কি এক হলো?
দুই হলো কি করে? মা তোমরা যা ভাবছ তা হবার নয়!
কেন কি হয়েছে? হবে না কেন?
সে অনেক কথা কাজেই এমন করে এখনই কিছু ভাববে না এবং চাচার সাথেও এ ব্যাপারে কিছু আলাপ করবে না। মনে থাকে যেন! আমি এখন একটু বাইরে যাচ্ছি, ফিরতে দেরি হবে।
কোথায় যাবি?
এইতো কাছেই!
তাড়াতাড়ি ফিরবি।
আচ্ছা চেষ্টা করব!

বাসা থেকে বের হয়ে একটা স্কুটার নিয়ে সোজা সোবহান বাগ বাস স্ট্যান্ডের পাশে বীণা আপার বাড়িতে। এখানেও দুলাভাই বাড়ি নেই। এই সময়ে পুরুষ মানুষ কেইবা বাড়ি থাকে!
বীণা আপাও মায়ের মত অবাক, কি ব্যাপার নিশাত কবে আসলি? তুই না বলে গেলি জানুয়ারিতে আসবি!
আজই সকালে আসলাম, হ্যাঁ বলেছিলাম আগামী মাসে আসব কিন্তু চলে আসলাম, কোম্পানির খরচে যাতায়াত কিনা
ও আচ্ছা!
কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর, আচ্ছা আপা নিরু কোথায়?
ওতো বাড়িতে! ক্লাস বন্ধ তাই। এইতো কয়েকদিন আগেই চলে গেল, এ কয়দিন এখানেই ছিল বাবা এসে নিয়ে গেছে!
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আজই মানিকগঞ্জে যেতে হবে। আমি তাহলে চলি আপা!
সে কি?এতদিন পরে আসলি কিছু খেয়ে যা!
না আপা আজই আসলাম তো একটু কাজ আছে, মতিঝিলে যেতে হবে।
বীণা আপা কি বুঝল কে জানে!
বাসায় ফিরে এসে একটা ব্যাগ গুছিয়ে সোজা গুলিস্তান বাস টার্মিনাল। ব্যাগ গোছাবার সময় মা জিজ্ঞেস করেছিল: কিরে কোথায় যাচ্ছিস? এইমাত্র এসেছিস এখনই আবার কোথায় যাবি?
একটু বাড়ি যাব মা
দুই একদিন পরে যা
না আজই যাই
মানিকগঞ্জের শুভ যাত্রা কোচ কোথায় থেকে ছাড়ে নিশাত ভাল করেই জানে। বিকেলের আগেই বাড়ি পৌঁছে গেল।

মইন চাচা দেখেই অবাক,
কিরে নিশাত তুই কবে এসেছিস?
এইতো কাকা আজই এসেছি। শিহাব কি বাড়িতে আছে?
আছে বাড়িতেই আছে, একটু আগে এখান থেকে গেল
চলনা চাচা একটু শিহাবের সাথে দেখা করে আসি
এত ব্যস্ত হবার কি আছে, মাত্র এসেছ বিশ্রাম নাও খাওয়া দাওয়া কর সন্ধ্যার আগে গেলেই হবে
না চাচা তুমি চল ওদের ওখানেই যা আছে খেয়ে নিব
বাড়িতে শিহাবের সাথে দেখা হলেই নিরুকে পাওয়া যাবে।
চল, বলেই হাটা শুরু করল।
শিহাব মইন চাচার ওখান থেকে এসে বাগানের কাজ শুরু করেছে, হাতে একটা প্রুনার। দূর থেকে মইন চাচা আর নিশাতকে দেখে প্রুনার হাতেই এগিয়ে গেল আরে নিশাত কবে এসেছিস? কেমন আছিস?
ভাল আছি! আজ সকালেই এসেছি, তোরা কেমন আছিস?
আমরাও ভাল গত কয়েক দিন একটু ব্যস্ত ছিলাম নিরুকে দেখতে এসেছিল তাই
কথাটা শুনেই নিশাতের বুকে ধক করে উঠল, কি বললি, কাকে দেখতে এসেছিল?
ওইতো নিরুকে
নিশাত এতক্ষণে বুঝতে পারে। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল। স্বপ্নে দেখা, চিঠি এবং ঢাকায় না থাকার সব কিছু এক এক করে নিশাতের চোখার সামনে ভেসে এলো। একই সূত্র। এখনই ওর সাথে দেখা করতে হবে।
আচ্ছা শোন, তুই ভিতরে চাচীদের বল আমার ক্ষুধা পেয়েছে কিছু খেতে দিতে বল।
নিশাত জানে এখন কোন চাচীই ওকে ভাত বেড়ে দিবে না, এখন একমাত্র নিরুই আসবে ওকে ভাত বেড়ে দেয়ার জন্য আর এটাই একমাত্র সুযোগ।
চাচীরা সবাই ব্যস্ত আমি নিরুকে বলছি
যা তাড়াতাড়ি কর
শিহাব বাড়ির ভিতরে গিয়ে সম্ভবত নিরুকে কিছু বলে আসল একটু পরে নিরু এসে শিহাবের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলল আসুন ভিতরে আসুন।

নিশাত উঠে নিরুর সাথে খাবার ঘরে গেল
নিরু
সারা রাত জার্নি করে এই সময়ে এখানে আসা এমন কি জরুরী ছিল? কাল আসলে কি হতো?
তুমি এমন করে স্বপ্নে দেখা দিচ্ছ বারবার, চিঠিতে একই কথা লিখছ, আসব নাতো কি করব? সিঙ্গাপুর থেকে যে চিঠি পেয়েছি তাতে যা লিখেছ দুবাই যেয়ে যে চিঠি পেলাম তাতেও ওই একই কথা
আমি আপনার কে হই যে আমাকে এত স্বপ্নে দেখবেন?
না তুমি আমার কিচ্ছু হও না, খুশী হয়েছ এবার?
আমার খুশীতে কার কি আসে যায়?
তুমি জান না কার কি আসে যায়? তুমি সামনে পরীক্ষা রেখে এখানে এসেছ কেন, তাই বল
কেন আবার? এই জন্যেইতো বারবার লিখেছি দুলাভাইকে জানাতে। তাছাড়া আমিতো আসতে বলিনি, আমি বলেছি দুলাভাইয়ের সাথে আলাপ করতে, ফোনে আলাপ করে কথাটা বলে দিলেই হত না? নয়ত চিঠিতে লিখলেই হতো
কথা বলবে নাকি খেতে দিবে? ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে, এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যেয়ে নাস্তা করেছি এর পরে আর কিছু খাইনি
দিচ্ছি, খেয়ে নেন
কি রান্না হয়েছিল?
করল্লা ভাজি, টেংরা মাছ আর ডাল আছে
করল্লা ভাজি!
হ্যাঁ, আমি রান্না করেছি
ও আচ্ছা তাহলে দাও
নিশাত সাধারণত করল্লা ভাজি খায় না কিন্তু নিরু ভাজি করলেই শুধু খেতে পারে। খেতে খেতে কথা হচ্ছিল।
বল দেখি কি ব্যাপার?
ব্যাপার আর কি, যা হবার তাই, ঘিওর থেকে এক ডাক্তারের বাবা লোকজন নিয়ে এসেছিল, ছেলে নাকি হোলি ফ্যামিলিতে ডাক্তারি করে। আগে থেকে দুলাভাইকে বলে রাখলে এসব ঝামেলা হতো? কতবার বলেছি তা আমার কথায় তিনি কানই দিলেন না
তারা কেন এসেছিল?
কেন এসেছিল তাও বলে দিতে হবে?
তুমি কিছু বলনি?
কি বলব? আমি আপনার ভাতিজা নিশাতকে ভালবাসি আর নিশাত আমার সাথে প্রেম করে বলে এ বিয়েতে মত দিতে পারছিনা, তাই বলব?
কি যা তা বলছ, এই শোনার জন্য আমি দুবাই থেকে এসেছি? এক ফাঁকে এদিক ওদিক দেখে নিরুর হাত ধরে
নিরু!
বলেন
ঘটনা জটিল বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমি কি বলেছ সত্যি করে বল
আমি বলেছি, পরীক্ষার আগে কিছু ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব নয়
বেশ করেছ, তাহলে এখন কি করতে হবে বল
মা বা চাচী কেউ এসে পরবে আপনি খেয়ে নেন পরে বলছি।
খাবার শেষ করে নিশাত শিহাবের ঘরে এসে বসল। শিহাব তখনও বাগানেই কাজ করছে চাচা পাশে বসে আছে। একটু পরে নিরু খাবার ঘরের সব কিছু গুছিয়ে রেখে এ ঘরে এসে সেই ছোট বেলার মত খুটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।
নিশাত আস্তে করে বলল,
তুমি কালই আমার সাথে ঢাকা চলো।
ঢাকা যেয়ে কি হবে?
একটা পথে খুজে পেতে হবে না?
পথ খুজতে হবে না, শুধু দুলা ভাইকে বললেই হবে
তাতেওতো ঢাকা যেতে হবে
আচ্ছা মাকে বলে দেখি

ঝিটকা পর্যন্ত শিহাব এবং নিরুর ছোট ভাই তমাল সাথে এলো। বাসে উঠিয়ে দিয়ে তমাল নিচে দাঁড়িয়ে বোনের সাথে কথা বলছিল। নিশাত নিচে দাঁড়িয়ে শিহাবের সাথে কথা বলছিল
এবারে কতদিন থাকবি?
নারে, বেশিদিন থাকা যাবে না, যাবার টিকেট দিয়ে দিয়েছে সাথে। জানুয়ারির ২৬ তারিখে চলে যাব।
[চলবে]

পৃথিবীর ২৫টি ধনী দেশ

পৃথিবীর ২৫টি ধনী দেশ

২৫. বাহারাইন
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪২,৯৩০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৭০.৯৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১৪ লাখ ৫০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৭৬.৯ বছর

২৪. ফ্রান্স
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৩,৭৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২,৮৭৬.০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৬ কোটি ৪৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩ বছর

২৩. জাপান
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৪,৮৫০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫,৪৮৭.১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১২ কোটি ৬৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮৪.০ বছর

২২. ফিনল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৫,৪০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৪৭.২৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৫ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৮ বছর

২১. কানাডা
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৬,০৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,৭১৪.৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ কোটি ৬৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩ বছর

২০. অস্ট্রেলিয়া
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৭,১৬০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,১৯২.০৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ২ কোটি ৪৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

১৯. বেলজিয়াম
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৮,২৪০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫৪৪.০৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১৩ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.০ বছর

১৮. সুইডেন
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫০,৯৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫০৫.৪৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.২ বছর

১৭. জার্মানী
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫১,৬৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪,১৮৭.৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮ কোটি ২৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৬ বছর

১৬. নেদারল্যান্ডস
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,২০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৮৯৯.৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ৭১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৫ বছর

১৫. ডেনমার্ক
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,৩৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৯৬.৩৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৭ বছর

১৪. অস্ট্রিয়া
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,৫০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪৬১.৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৯ বছর

১৩. আইসল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫৩,২৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১৮১.১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ লাখ ৫০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

১২. সৌদি আরব
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫৪,৭৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,৭৭৩.৫৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ কোটি ২৫ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৪.৬ বছর

১১. ইউ এস এ
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬০,২০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১৯,৩৯০.৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩২ কোটি ৫৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৮.৭ বছর

১০. আয়ারল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬১,৯১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৬৪.১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৬ বছর

০৯. নরওয়ে
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৩,৯৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩২৪.৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৩ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

০৮. হংকং
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৪,১০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪৫৪.৮৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৭৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮৪.২ বছর

০৭. সুইজারল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৫,৬১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫৪৭.৮৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৯ বছর

০৬. লুক্সেমবার্গ
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৭২,৬৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৮২,১৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩

০৫. ইউনাইটেড আরব আমিরাত
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৭৪,৪১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৬৯৪.৪৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৭.৩ বছর

০৪. কুয়েত
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৮৩,৩১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৫৭.৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৪.৭ বছর

০৩. ব্রুনাই দারেসসালাম
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৮৩,৭৬০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৩.৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪ লাখ ৩০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৭৭.২ বছর

০২. সিঙ্গাপুর
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৯০,৫৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫২৭.০২ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৮ বছর

০১. কাতার – পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশ!!!
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ১,২৮,৬০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৩৮.৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ২৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৮.২ বছর

___________________
Source: America Online

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৫

আবার বিদায়, আবার বিরহ। তবে এবারের বিরহ আগের দিন গুলির মত নয়। একটু ভিন্ন রকমের। এতদিন দুজনে ভিন্ন ভাবে দুজনার কথা ভাবত কিন্তু এবার তাদের চলা পথ সম্ভবত একই স্রোতে মিশে যাবার পথ খুঁজে পেয়েছে।

যাবার আগে একদিন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক বেঞ্চে বসে নিরুর কাঁধে হাত রেখে বলল নিরু তুমি চিঠি লিখতে পারবে?
কেন?
কেন মানে? মানুষে চিঠি লিখে কেন?
যারা চিঠি লিখে তাদের একটা নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে কিন্তু আপনার কি তেমন কিছু আছে? এ দেশ থেকে ওই দেশে ঘুরে বেড়ান আপনার কাছে চিঠি লিখব কোথায়? সাগরের ঠিকানায় লিখে পাঠাব আর সে চিঠি সাগর জলে ভেসে বেড়াবে? কোন সাগরের ঠিকানায় লিখব বলে যান
নিশাত এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেল। তাইতো কোন ঠিকানায় চিঠি লিখবে?
আমি কখন কোথায় থাকি সে ঠিকানা জানিয়ে আমি লিখব আর তুমি সেখানে লিখবে। যদিও সে চিঠি আমি কবে পাব তার কোন ঠিক নেই তবুও দেরিতে হলেও আমি তোমার ছোঁয়া মাখা চিঠিটা পাব এবং আবার কিছুদিন চলার শক্তি পাব।
বেশ তাই করবেন কিন্তু আমার কাছে লিখতে কোথায় লিখবেন?
কেন, আপার বাড়িতেই লিখব
আপা কি মনে করবে?
কেন মনে করবে?
আপা আপনাকে খুব স্নেহ করে কিন্তু চিঠি পত্র দেখলে যদি বিরূপ কিছু ভেবে নেয়?
না, আপা সে সুযোগ পাবে না, তার মনে করার মত কোন কাজই আমি করব না। তোমার কাছে যে চিঠি লিখব সে চিঠি ইচ্ছে করলে তুমি আপাকেও দেখাতে পারবে, আমি এমন করেই লিখব।
তাই কি হয়?
হবে, দেখবে এতে ভালই হবে তুমি মাঝে মাঝে তোমার চিঠিগুলি আপাকে পড়তে দিও আর হ্যাঁ আমিও আপা দুলাভাইকে মাঝে মাঝে লিখব।
এমন হলে লিখতে পারেন।

এভাবেই নিশাত কয়েকটা ভয়েজ করে ফেলল। প্রতিটি ভয়েজ শেষে দেশে এসেই আগে নিরুকে চোখে দেখার জন্য ছুটে এসেছে বীণা আপার বাড়ি। আর কেউ কিছু না বুঝলেও হয়ত বীণা আপা কিছু অনুমান করেছে। এখন আর নিরুকে হারাবার ভয় নেই। যখন যে দেশেই গেছে সেখানে বন্দরে পৌছার আগেই চিঠি লিখে খামে ভরে রাখত, মুখ আটকাত না যেন পোস্ট করার আগে সর্বশেষ কথাটা নিরুকে জানান যায়। কবে কোন বন্দরে গেছে সে দেশ কেমন, সে বন্দর বা শহর কেমন, লোকজনের পোশাক আসাক থেকে শুরু করে তাদের খাবার দাবার এবং যাবতীয় বৃত্তান্ত সহ জাহাজে কবে কি করেছে কি খেয়েছে এই সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখতে লিখতে সে চিঠি কখনও বিশ পাতা পর্যন্ত হয়ে যেত। পরের চিঠি কোন ঠিকানায় লিখবে সে এজেন্টের ঠিকানা দিয়ে দিত সাথে। নিরুর চিঠির সাথে আপা বা দুলাভাইকেও কিছু লিখতে কখনই ভুল করত না। আপা বা দুলাভাইকে লিখত নিরুর চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি ওর চিঠি দেখে নিবেন। দুলাভাইকে কখনও ইউরোপিয়ান মেমসাহেবদের কাহিনী লিখত। আবার মাঝে মাঝে ইয়ার্কিও করত, দুলাভাই আপনি সাথে থাকলে একজন মেমসাহেব কিনে দিতে বলতাম। যখন যেখানে গেছে নিরুর জন্য কিছু না কিছু কেনাকাটা করবেই। কখনও দেখা গেছে নিরুর জন্য যা কিনেছে তাই দিয়েই ওর এয়ার টিকেটে ফ্রি লাগেজ এলাউন্স যা পেত তার অর্ধেক হয়ে গেছে। দেশে এলে নিরুকে সেগুলি দিতে গেলে কখনও নিরু কিছুই নিত না। বলত
কেউ জিজ্ঞেস করলে কাকে কি বলব? এ নিয়ে আমি কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে পারব না।
নিশাত অনেক পিড়াপিড়ি করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। নিরুর ওই এক কথা। সেবার প্যারিস থেকে একটা পারফিউম এনে বলেছিল
এটাতো কেউ দেখবে না এটা অন্তত নাও।
আসলেই আপনার মাথা খারাপ।
মাথা খারাপের কি হলো?
বলে নিশাত নিরুর মুখের দিকে চেয়েছিল আর নিরু বলেছিল
এর গন্ধ আমি ঢেকে রাখব কি দিয়ে? এ কথা কবে বুঝবেন আপনি?শুধু শুধু এত খরচ করেন কেন? এসব আজে বাজে খরচ না করে টাকা জমাবেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, মনে যেন থাকে
নিশাত ও কথায় কান না দিয়ে সেগুলি এনে যত্ন করে তার ওই আলমারিতে তুলে রাখত আর ভাবত নিরু যেদিন নিজে এই আলমারির তালা খুলে এগুলি নিবে সেদিনই ও ব্যবহার করবে এর মধ্যে পচে গলে যা হয় হোক এগুলি নিরুর।

গত কয়েকটা ভয়েজে নিশাতের বেশ উন্নতি হয়েছে। লন্ডনে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড অফিসার হয়েছে। পাশ করল যেদিন সেদিন মা বাবা এবং বীণা আপা দুলাভাই সহ নিরুকে একসাথে চিঠি লিখে জানিয়েছিল। বীণা আপার বাসায় ফোন করে নিরুর সাথে কথা বলেছিল। আর মাত্র আড়াই বছর পরেই চিফ মেট পরীক্ষা দিব। নিরু তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করবে যেন আমি সুস্থ থেকে দিনগুলি কাটাতে পারি। আর তুমিও ভাল করে পড়াশুনা করবে। আর হ্যাঁ গানের ব্যাপারে কিন্তু আলসেমি করবেনা। দেখবে একদিন আমি সব পাব। তখন তোমাকে নিয়ে শুধু ঢাকা নয় পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াব। তুমি আমার পাশে থাকবে। তোমার হাত ধরে চলে যাব অনেক দূরে যেখানে চির বসন্ত থাকে সেই দেশে। আমাদের দেখে আকাশের তারারাও হেসে হেসে আমন্ত্রণ জানাবে। যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি।
এমন করে তোমার কিছু মনে হয় না নিরু?
হয়, আমারও অনেক কিছু মনে হয় কিন্তু আমারযে ভীষণ ভয় করে!
কিসের ভয়? কোন ভিয় নেই। দেখবে একদিন আমাদের সব হবে।

১৬।
এমনি করে সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, মান অভিমান, বিরহ বিরাগ নিয়ে দিন মাস বছর চলে গেল। এর মধ্যে নিশাত চিফ মেট পরীক্ষায় পাশ করেছে কিন্তু কোম্পানির কোন জাহাজে আপাতত চিফ মেটের পদ খালি নেই বলে ওই পদে পোস্টিং পাচ্ছে না তবে চিফ মেট এর বেতন পাচ্ছে। এক সময় সপ্তম ভয়েজের মাঝামাঝি একদিন নিশাতের সারা রাতে ঘুম হয়নি। মাত্র শেষ রাতের দিকে একটু চোখ লেগে আসছিল, এর মধ্যেই কোথা থেকে যেন নিরু এসেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আজ সকালে দুবাই থেকে পাওয়া চিঠির মত একই ভাষায় বারবার করে বলে গেল আপনি দুলাভাইকে বলবেন। আমার মনে হয় এখন অন্তত দুলাভাইকে বলার সময় হয়েছে। দুবাই পোর্টে হারবারে জাহাজ ভিড়ার পর এজেন্টের গাড়ি এসে যে মেইল ব্যাগ দিয়ে গিয়েছিল তাতে একটাই চিঠি ছিল আর সেটা নিরুর লেখা নিশাতের চিঠি। এই চিঠিতেও অন্তত পাঁচ বার লিখেছে আপনি তাড়াতাড়ি দুলাভাইর সাথে যোগাযোগ করে কথাটা বলুন নতুবা আমি শেষ হয়ে যাব আর এজন্যে একমাত্র আপনিই দায়ী থাকবেন। কেন এবং কি বলতে হবে তা কিছু লেখেনি। না লিখলেও নিশাত জানে কি বলতে হবে। স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানায় শুয়ে শুয়েই চলে গেল এবার দেশ থেকে আসার আগে যখন নিরুর সাথে নবাব বাড়ির বাগানের এক পাশে বেঞ্চে বসে চিনাবাদাম খাবার সময় কথা হচ্ছিল সেখানে। আগের মত নিরু একটা একটা করে চিনা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছিল।
আপনি কি কোন দিন নিজে ছিলে বাদাম খেতে পারবেন না?
হয়ত পারব যেদিন তুমি করে বলতে পারবে। আসলে হয়েছে কি জান, ওসব দেশে লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম প্যাকেট করা থাকে কাজেই দোকান থেকে কিনে অমনিই খেয়ে ফেলা যায়, আবার এখানে আসলে তুমিইতো ছিলে দাও, কাজেই আমাকে আর কোথাও ছিলে খেতে হয় না
ছেলা বাদাম হাতে দেয়ার সময় একটা চিমটি দিয়ে বলেছিল
তাহলে আর আপনার এ দেশে আসার দরকার নেই ওখান থেকেই কোন মেমসাহেব নিয়ে এলেই পারেন আমরাও একজন মেমসাহেব দেখতাম!
উহ কি হলো চিমটি দিলে কেন, লাগেনা? বেশতো আমি না হয় মেমসাহেব আনলাম কিন্তু তুমি কাকে আনবে? তাছাড়া তোমার মেম সাহেব কি বাদাম ছিলে দিবে?
বাদাম ছিলায় মগ্ন হয়ে বলল
আমার কাউকে লাগবে না! যে মেম সাহেব বাদাম ছিলে দিবে তাকেই আনবেন!
আচ্ছা তাকেই আনব।
সেদিন সারা দিন একসাথে ঘুরেছিল। দুপুরে ম্যান্ডারিনে লাঞ্চ করেছিল আবার বিকেলে নবাব বাড়ি থেকে বাদাম তলি এসে নৌকায় করে বুড়িগঙ্গায় ঘুরেছিল। কোথা দিয়ে যে সারাটা দিন চলে গেল টের পায়নি। বুড়িগঙ্গায় সূর্য ডুবতে দেখে নিরু চমকে উঠেছিল। নিশাতের হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিল,
তাড়াতাড়ি চলেন আমাকে সন্ধ্যার আগেই হলে ফিরতে হবে বলে এসেছি।
এমএসসি ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে বলে পরীক্ষা পর্যন্ত হলে থেকে পরীক্ষা দিবে বলে হলে এসে উঠেছে। বিগত দিনগুলিতে দুইজনে ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশে এমনি করে অনেক ঘুরেছে। সাভারের স্মৃতিসৌধে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, আরিচা ঘাটের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে ফেরার পথে একবার শাহবাগের নিচে সুপর্ণা থেকে একটা পারফিউম কিনে দিয়েছিল। আগের মত নিরু এটাও নিতে চায়নি কিন্তু নিশাতের চাপাচাপিতে নিতে হয়েছিল। এটা কি আর কেউ দেখবে! তোমার হলে রাখবে কেউ দেখবে না। যখন গায়ে মাখবে এর সুগন্ধ আমার কথা মনে করিয়ে দিবে। মনে করবে আমি সারাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে রেখেছি।
এই পারফিউম মেখে আপনাকে মনে করার দরকার হবে না। এমনিই সবসময় আপনি আমার সাথে থাকেন। বলছেন কেউ দেখবে না! জানেন হলের বান্ধবীরা কেমন হয়? ধারনা আছে কিছু? ওরা একেকটা বিচ্ছুর মত বিশেষ করে রোকেয়া আর নীলাতো জোকের মত লেগে থাকবে, বল না কোথায় পেলি! জানেন?
১৭।
দুবাই থেকে জাহাজ আমস্টারডাম যাবার আগে অস্থির হয়ে সাইন অফ করে শুধু নিরুর জন্য দেশে ছুটে এসেছিল চৌকস সেকেন্ড অফিসার নিশাত জামান যে কিনা আর কয়েকদিন পরেই এমনি এক জাহাজের চিফ অফিসার হবে। ক্যাপ্টেন স্টিভ বারবার বলছিল
জামান তুমি আমস্টারডাম যাবার পর সাইন অফ কর!
না, সে কথা মানেনি। তাকে শুধু বলেছিল
দেখ স্টিভ, তুমি প্লিজ আমাকে বাধা দিও না, যে করেই হোক নিরুকে আমার চাই ই চাই ওকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতে পারিনি কোনদিন।
ক্যাপ্টেন স্টিভ অবাক হয়েই বলেছিল
‘হু ইজ নিরু?’
ওহ স্টিভ সরি! আমি তোমাকে বেফাঁস বলে ফেলেছি। নিরু ইজ মাই ডার্লিং এন্ড মাই ড্রিম এন্ড আই কেন নট সারভাইভ উইদাউট নিরু! গত কয়েকদিন থেকেই আমি ওকে স্বপ্নে দেখছি আর এখানে আসার পর ওর চিঠিতে জরুরী এক সংবাদ জেনেছি!
আই মিন ইউ আর টেলিং এবাউট ইয়োর লাভ এফেয়ার? যার ছবি তোমার কেবিনে সাজান রয়েছে?
ইয়েস স্টিভ, ইউ আর রাইট!
ও! রিয়েলি সি ইজ এ নাইস লেডি!
বেটার ইউ আসক ফর এনাদার সেকেন্ড অফিসার এন্ড রিলিজ মি। আই উইল জয়েন আফটার এ মন্থ হোয়েন ইউ উইল বি ইন লন্ডন!
ঠিক আছে জামান তুমি যাও আমি তোমার টিকেটের ব্যবস্থা করছি। আর দেখি ইরান বা ইন্ডিয়া থেকে কোন সেকেন্ড অফিসার পেলে তাকে দিয়ে এই এক মাস চালিয়ে নিচ্ছি তবে তুমি জানতো আমস্টারডাম থেকে আমরা মাইনর রিপেয়ারের জন্য লন্ডন যাব এবং তুমি কিন্তু আমরা লন্ডন ছেড়ে যাবার আগেই ফিরে আসবে।
হ্যাঁ ঠিক আছে তুমি দরকার মনে করলে আমার টিকেট ওই ভাবে করিয়ে নিতে পার দুবাই-ঢাকা-লন্ডন।
আচ্ছা জামান ঠিক আছে আমি তাই করছি। উইশ ইয়োর বেস্ট লাক এন্ড হ্যাভ আ নাইস টাইম উইথ নিরু।

সঙ্গে সঙ্গে দুবাইর এজেন্ট ইউসুফ বিন আহমেদ কানুর অফিসে রেডিওতে জানিয়ে দিয়েছিল।
আমাকে জরুরী ভাবে একজন সেকেন্ড অফিসার দাও, এখানে থাকতেই যেন পাই আর নিশাত জামানের জন্য দুবাই- ঢাকা-লন্ডন একটা টিকেট করে দাও ঢাকা ডিপার্চার হবে এক মাস পর।
ওকে ক্যাপ্টেন।
ঠিক তিন দিন পরের একটা তারিখে নিশাতের ঢাকা যাবার টিকেট পাঠিয়ে দিল তার পর দিন এবং তার পর দিন ইন্ডিয়ান এক সেকেন্ড অফিসার এলো নিশাতের জায়গায়। টিকেট হাতে নিয়ে দেখে পরশু রাতে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা যাবে এবং আগামী জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বিমানের ফ্লাইটে আবার দুবাই ট্রানজিট হয়ে গালফ এয়ারে লন্ডন। সময়মত সাইন অফ করে সিডিসিটা নিয়ে সন্ধ্যায় এজেন্টের গাড়িতে দুবাই এয়ারপোর্টে চলে এলো। সারাক্ষণ একটা কথাই মাথায় ঘুরছে, হঠাৎ নিরু এতোটা ব্যস্ত হলো কেন? এমন কি হয়েছে? নিরু ভাল আছেতো? গত দুই বছর ধরেই নিরু বলছে আপনি দুলাভাইকে বলুন। কিন্তু নিশাতই বলতে পারছিল না, ভেবেছিল চিফ অফিসার না হয়ে নিরুকে আনবে না। যতবার ঢাকায় গেছে প্রতিবারেই সিঙ্গাপুর থেকে কেনা ইয়াশিকা ইলেক্ট্রো ৩৫ জিএসএন ক্যামেরা দিয়ে অনেক ছবি তুলেছে এবং তখন দেশে রঙ্গিন ছবি ওয়াস প্রিন্ট হতোনা বলে সিঙ্গাপুর কিংবা মিডল ইস্টের কোথাও থেকে প্রিন্ট করিয়ে নিত। ছবিগুলি নিরুকে দেখাবার পর সব নিশাতের আলমারিতে যত্নে রেখে দিয়েছে। কিছু ছবি নিয়ে যেত সাথে করে। জাহাজে ওর রুম সাজাত নিরুর ছবি দিয়ে। সাত বছরের ছবি গুলো বছর অনুযায়ী ভাগ করে করে সাজাত। বিয়ের পর সবাইকে এই ছবি দেখিয়ে চমকে দিবে বলে দেশে কাউকে এই ছবি দেখাত না।

দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করার পর রাতের ডিনার সার্ভ করল। তার পরে প্লেনে বসে পাঁচটি ঘণ্টা ধরে এক নিরু ছাড়া আর কোন চিন্তা মাথায় আসেনি। দূর সম্পর্কের চাচার মেয়ে নিরুকে কাছে থেকে দেখার কথা আজও ভুলেনি। নিশাত যখন সবে মাত্র ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে জয়েন করতে লন্ডন যাচ্ছে। নিরু তখন কলেজে ভর্তি হবে। দেখা অনেক হয়েছে। একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি। যদিও নিশাতের বাবা চাকুরী উপলক্ষে করাচী সহ বিভিন্ন শহরে বসবাস করে কিন্তু গ্রামে নিয়মিত যাতায়াত আছে। জমিজমা দেখতে হয়, শীতের খেজুর রস, পিঠা, আম বাগানের আম খেতে হয় তাছাড়া ঈদ পার্বণে গ্রামে আসতেই হয়। তখন অনেক দেখেছে কিন্তু কখনও তেমন করে চোখে পড়েনি।
[চলবে]

r:স্টুডেন্ট’স ভিসা প্রসেসিং ফার্মে এক্সিকিউটিভ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

স্টুডেন্ট’স ফরেন ভিসা প্রসেসিং ফার্মে এক্সিকিউটিভ নিয়োগ।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, কানাডা, ইংল্যাণ্ড এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভিসা প্রসেসিং কনসালটেন্ট ফার্মে এক্সিকিউটিভ ০১ পদে বাংলাদেশী নাগরিক যে কোন আগ্রহী ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। প্রার্থীকে অবশ্যই স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, বিনয়ী এবং পরিপাটি হতে হবে। এক আধটু অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : মাস্টার্স বা অনার্স পড়ুয়া বা সম্পন্ন।
কর্মঘন্টা : 10:30 – 17:00
পারিশ্রমিক : ১০,০০০ টাকা (স্টার্টিং)
সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।

ছবি সহ আপনার বায়োডাটা মেইলে পাঠিয়ে দিন।
[email protected]

Contact –
Q1. International.

Sadek Rahaman. (M.D)
01711 283 220 (Mob)

BIT central plaza
Holding no – 95
Room – 213
Lift 2nd Floor
Green Road, Farmgate.

Dhaka, Bangladesh.

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৪

ওখান থেকে বের হয়ে সোজা চলে এলো সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। কিছুক্ষণ হাটা হাটি করে একটা নির্জন বেঞ্চ দেখিয়ে বলল এখানে বসবে?
না বসলে হয় না?
কেন হবে? আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরব সারাদিন বেড়াব চাইনিজ খাব তারপরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরব
বলেই নিরুর হাত ধরে একটা বেঞ্চে বসে পড়ল
আপা দুলাভাই কি ভাববে?
যা ইচ্ছা হয় তাই ভাবুক
পাশে দিয়ে এক বাদাম ওয়ালা যাচ্ছিল তাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল বাদাম খাবে? বলে কোন জবাবের অপেক্ষা ন করে ছেলেটাকে ডেকে কিছু বাদাম কিনল। বাদামের ঠোঙ্গা নিরুর হাতে দিয়ে বলল নাও ছিলে দাও
নিরু ঠোঙ্গা হাতে নিয়ে হতভম্বের মত বসে রইল। বলে কি এই মানুষটা। একটু বসে থেকে আবার কি মনে করে দুই একটা বাদাম ছিলে দিয়ে ঠোঙ্গাটা এগিয়ে দিয়ে বলল
নেন নিজে হাতে বাদাম ছিলে খেতে ভাল লাগবে।
নিশাত একটু অবাক হয়ে বলল
কি হলো, খুব কঠিন নাকি বাদাম ছেলা?
না কঠিন কিছু নয় তবে আমার ভাল লাগছে না
থাক ভাল না লাগল তবুও তুমি ছিলে দাও আমি এই কাজটা মোটেই পারি না বলে আমার বাদাম খাওয়া হয় না
আচ্ছা ঠিক আছে দেন ছিলে দিচ্ছি
ছিলে দিচ্ছি মানে কি! তুমি খাবে না? তুমিও খাও, আমি কি বলেছি শুধু আমাকেই ছিলে দিবে?
আচ্ছা বললামতো দিচ্ছি
হাতের ক্যামেরা দিয়ে নিরুর কয়েকটা ছবি নিয়ে নিল। ছবি তোলা নিয়েও নিরুর আর পশলা বাগরা। কেন ছবি তুলবেন, যদি আপনার কাছে কেউ এই ছবি দেখে ফেলে তাহলে কেমন হবে!
কি বলছ তুমি! আমি কি সবাইকে নিয়ে এই ছবি দেখাব ভেবেছ? এগুলি শুধু আমার কাছেই থাকবে তবে তুমি চাইলে দেখতে পার বা নিতেও পার
না আমার এ ছবি নিতে হবে না
তাহলেতো আর কোন কথাই নেই
বাদাম খেতে খেতে ঘড়ি দেখে বলল একটা বেজে গেছে চল লাঞ্চ করব
না লাঞ্চ করতে হবে না চলেন বাসায় চলেন আপা চিন্তা করবে
কিচ্ছু চিন্তা করবে না, আপা জানে তুমি আমার সাথে রয়েছ এবং এই ঢাকা শহর আমি খুব ভাল করেই চিনি কাজেই তার বোনের হারিয়ে যাবার ভয় নেই, চল ওঠ

নিরু একটু কিন্তু কিন্তু করে শেষ পর্যন্ত নিশাতের পিছে হাটা শুরু করল
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে রমনা পার্কের দিকের গেট দিয়ে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে নিউ মার্কেটের পাশে মিড নাইট সান এ এসে রিকশা থেকে নেমে ভিতরে গিয়ে বসল।
বল কি খাবে
আপনার যা ইচ্ছা
আচ্ছা বলে ওয়েটারকে ডেকে নিশাতই অর্ডার দিয়ে দিল
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে জিজ্ঞেস করল
বল আজকের এই দিনটা তোমার কেমন লাগছে
জানিনা
বলনা কেমন লাগছে
বললামতো জানিনা
আচ্ছা ঠিক আছে আমার কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করবে না?
বলেন
আমার খুব ভাল লাগছে
কেন?
কেন আবার কি এই যে তুমি সাথে আছ তাই।
আমি সাথে থাকলেই কি ভাল লাগবে?
যেদিন নোমান ওই কথা বলেছিল সেদিন থেকে বুঝতে পারছি আমি তোমার সংস্পর্শে এলে ভাল থাকি মানে আমার ভাল লাগে
থাকেনতো বাইরে বাইরে আমার সংস্পর্শ কোথায় পেলেন?
কেন এই যে এখন তুমি আমার পাশে আছ। কত দিন পরে তোমাকে এই প্রথম একা পেয়েছি! ভুল বললাম আমার মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম তোমাকে একা পেলাম। আমার কি মনে হচ্ছে জান? আমার মনে হচ্ছে আমার আর কিচ্ছু চাই না, শুধু তুমি আমার পাশে থাকলেই হবে।
সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসা সহজ সরল এই মানুষটার এমন আকুতি ভরা কথা শুনে নিরুর মন ভিজে গেল। এখন বুঝি তার এত দিনের অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে অনুমান করে চোখ দুটিও কেমন যেন ভিজে এলো এবং একটু পরেই চোখ বেয়ে এক ফোটা জল হাত ধরে রাখা নিশাতের হাতের উপর পরল আর অমনিই নিশাত চমকে উঠে নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল সে কি! তুমি কাঁদছ কেন? কি হলো নিরু! কাঁদছ কেন? রাগ করেছ? বল, নিরু বল কি হয়েছে?
বলেই নিরুর ওড়না দিয়ে চোখ মুছে দিল। আস্তে করে নিরু নিশাতের হাত সরিয়ে বলল
না কিছু হয়নি।
রাগ করেছ?
না
তা হলে!
নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল
আপনার মত মানুষের সাথে কি কেউ রাগ করতে পারে?
তাহলে?
বললামতো কিছু না
বলনা কি হয়েছে
এখন কাঁদছি না, এতদিন কেঁদেছি। জানেন সেই যেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই আপনার মুখ থেকে এই কথা শোনার অপেক্ষায় রয়েছি।
তাহলে এতদিন বলনি কেন?
হঠাৎ করেই নিরু মুখ তুলে হেসে দিয়ে বলল সত্যিই আপনি বড়ই সরল মানুষ, কিছুই বোঝেন না। এই কথা কি মেয়েরা বলতে পারে?
মনে মনে বলল আপনি জানেন না আপনার এই সরলতার জন্যই আপনাকে আমার এত ভাল লাগে সারাক্ষণ আপনার জন্য মন এত উতলা থাকে, এতদিন আপনার পথে চেয়ে অপেক্ষায় ছিলাম।
১৫।
এর পরে নিশাত যতদিন দেশে ছিল প্রায় প্রতিদিন নিরুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কবে শুরু হবে সেই রুটিন জানার জন্য বা ভিন্ন কোন অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুই জনে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একসময় নিশাতের যাবার দিন ঠিক হয়ে গেল। কোথা দিয়ে যে দিনগুলি চলে গেল বোঝা গেল না। মনে হলো যেন ঝরের গতিতেই দিন চলে গেল। এত দিনের সঞ্চিত যত কথা সব যেন পাখির মত মুখোমুখি বসে এক এক করে কত কি বলতে চেয়েও সব বলা হলো না কত বাকি রয়ে গেল। একদিন আরিচা ঘাটের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে বসে ঢলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে নিশাত বলছিল নিরু একটা গান গাও
জানেন না আমি গান জানি না
কেন ওই যে সেদিন তোমাদের বাড়িতে কুয়োর পাড়ে বাসন মাজার সময় গাইছিলে
কবে?
সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা, তুমি তখন স্কুলে পড়
কি জানি আমার মনে নেই, আচ্ছা কোন গান?
নিঝুম সন্ধ্যায় শ্রান্ত পাখিরা……
হ্যাঁ ওটা আমার প্রিয় গান তবে এখন মনে নেই আর তাছাড়া সেই কবে কি গুনগুন করেছিলাম এখনও কি তাই মনে থাকে?
দেখনা চেষ্টা করে, সেদিন কিন্তু আমি তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে গানটা শুনেছিলাম, কি যে ভাল লাগছিল, আমি আজও ভুলিনি। এখনো আমার কানে সেই সুর লেগে আছে।
কি জানি আমার কিন্তু কিছুই মনে পড়ছে না।
আচ্ছা থাক, অনেকদিন আগের কথা মনে না থাকলে নেই। তুমি গান শিখ নিরু আমি ওস্তাদের ব্যবস্থা করে দিব।
গান আপনার এত ভাল লাগে?
হ্যাঁ নিরু, সুর আমাকে পাগল করে দেয়
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
নিশাত স্তব্ধ হয়ে নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল
কি হলো এমন করে কি দেখছেন?
তোমাকে দেখছি! কি বললে তুমি?
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
শোন, গানের জায়গায় গান আর তোমার জায়গায় তুমি। তোমার সাথে এই পৃথিবীর আর কোন কিছুর সাথে তুলনা করবে না কখনও
আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিজেই গান শিখব, সেদিন আপাও বলছিল গান শিখব কিনা তাহলে ছায়া নটে ভর্তি হতে বলেছিল। ছায়া নটের টিচার আফরিন মজুমদার আপার প্রতিবেশি
তাহলে তুমি ছায়ানটে ভর্তি হও, তোমার এত সুন্দর কণ্ঠ তুমি খুব ভাল গান করবে, ছোট বেলায় বেশ গুনগুন করতে।
[চলবে]

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৩

কথার সাথে সাথে শিহাবের নাশতা শেষ হলো, নিরু চা নিয়ে এলো। চা খেতে খেতে বলল এই চলনা আমি হাবিবদের বাড়ি যাব তুইও চল
আমাদের হাবিব?
হ্যাঁ, দুইজনে একসাথে গেলাম অথচ আমি চলে আসলাম ও কিন্তু এখনও আসতে পারেনি তাই চাচা চাচীদের সাথে একটু দেখা করে আসি আর ওর খবরটা জানিয়ে আসি আর তুই যখন এসেই পরেছিস তাহলে হাসির সাথে একটি দৃষ্টি বিনিময় করে যাবিনা?
কি যে বলিস, সে দিন কি আর আছে?
কেন নেই কি হয়েছে?
কি আর হবে, কতদিন হয়ে গেল সব ভুলে গেছি
আরে যাহ! এই কি কেউ ভুলে না ভুলতে পারে? লুকাচ্ছিস কেন, চল দেখা করে আসবি, বেচারি হয়ত তোর পথ চেয়ে আছে
না রে আমার অনেক কাজ আছে সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে কিছু কেনাকাটা করতে হবে
আরে চল পরে আমিও তোর সাথে থাকব, যে কয়দিন ঢাকায় থাকবি আমি তোর সাথে থাকব
তাহলে তুই যখন বলছিস চল ঘুরেই আসি, তুই আর হাবিব কি এক সাথেই ছিলি?
না রে, আমি ছিলাম ইউরোপে আর ও ছিল এশিয়ান লাইনে তবে আমরা যখন মিডল ইস্টে আসতাম লোড নেয়ার জন্য তখন মাঝে মাঝে কথা হত। আমি দেশে আসছি জেনে বলে দিয়েছে ওদের বাড়ি যেতে।
চল

শিহাব যতদিন ঢাকায় ছিল নিশাত শিহাবের সাথেই ছিল। এই যাত্রায় সবার সাথে দেখা হলো আর সেই সাথে নানা সময়ে নিরুর সাথেও দেখা হলো।
পরেরদিন আপা জানাল তোর দুলাভাই বিয়ের দিন যাবে আমরা হলুদের দিনেই সকালে চলে যাব তুই কিন্তু এসে পরবি
আচ্ছা আপা, আমি সময়মত চলে আসব
তিনদিন পরে শিহাব আর নিরু চলে গেল।
পরের বুধ বারে সকালে উঠেই নাশতা খাবার সময় মাকে বলল
আমি বাড়ি যাচ্ছি যূঁইয়ের বিয়েতে। আজ হলুদ, বীণা আপা যাচ্ছে তার সাথে যাব আপনারা কি শুক্রবারেই আসবেন নাকি আগে আসবেন?
আগে কেমনে আসব, তোর বাবার অফিস আছে না!
আচ্ছা, তাহলে আপনারা আসেন আমি আজই চললাম।
বিয়ে বাড়িতে নিরুর সাথে সময়ে অসময়ে দেখা, চোখে চোখ আর সবার সাথে হৈ চৈ আমোদ প্রমোদে চলে গেল। নিরুর সাথে দুই একটা সাধারণ কথা ছাড়া একান্তে তেমন আলাপের সময় বা সুযোগ হয়ে উঠেনি। শনি বারে বাবা মা সহ বীণা আপা, দুলাভাই নিরুর সাথে এক সাথে ঢাকায় চলে এল।
১৪।
এবারে মাত্র দেড় মাস ছিল দেশে। এর মধ্যে এমনি করে আসা আর যাওয়ার মধ্যে দুইজনে কিছু টুকি টাকি কথাবার্তা একটু হাতে হাত এভাবেই চলে গেল। এখন নিরু আগের মত হাত ধরলে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয় না। নিশাত ভাই বলে ডাকে না। এইযে, শুনছেন এমনি করে নিশাতকে ডাকে কিন্তু আপনি ছেড়ে তুমি করে বলতে পারে না। নিশাত কত অনুরোধ করেছে কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। নিশাত ভেবেই পায়না নিরু কবে তুমি বলা শিখবে। একদিন নিশাতের যাবার সময় এসে হাজির। আগের মতই নিরু আর বীণা আপার কাছে বিদায় নিয়ে নিশাত চলে গেল।
এই যাত্রায় আবার ফিরে আসতে নিশাতের অনেক সময় লেগে গেল। নিয়ম অনুযায়ী নয় মাস পরে দেশে আসতে পারেনি। বেশ অনেকদিন পরে এসে যখন বীণা আপার বাড়ি গেল তখন শুনল নিরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অপেক্ষায় রয়েছে। দুলাভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল। দুলাভাই বেশ আমুদে মানুষ এটা সেটা নানা কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনল। মাঝে আবার ইয়ার্কিও করল
কোন বিদেশিনী বা মেমসাহেবের দেখা পাওনি এখনও?
কি যে বলেন দুলাভাই! আমি মনে প্রাণে বাঙালি কাজেই আমার পাশে দেখলে বঙ্গ ললনাই দেখবেন। পাশে বীণা আপা এবং নিরু দুইজনেই ছিল। নিরু লজ্জা পেয়ে চা আনার ছল করে উঠে চলে গেল। দুলাভাই জানাল আগামী কাল নিরুর ভর্তি হবার তারিখ কিন্তু আমাকে যশোর যেতে হবে তোমার আপাকেও ওদের নিয়ে স্কুলে যেতে হবে। এর আগে দেখেছে শুধু অয়ন স্কুলে যেত কিন্তু এখন অয়ন রায়ান দুইজনেই যায় এবং রায়ানটা হয়েছে ভীষণ দুষ্ট। কে যাবে নিরুর সাথে তাই নিয়ে একটু চিন্তিত। নিশাত বলল
তাহলে নিরুর সাথে যাবার জন্য আমি আসলে হবে?
বীণা আপা বলল তুই আসবি? তাহলে আয়, সকাল নয়টার মধ্যে চলে আসবি
বলেই আপা নিরুকে বলল
শোন কাল আমি স্কুলে যাবার পর ও আসবে ওর সাথে যেয়ে ভর্তি হয়ে আসবি
আচ্ছা
নিশাত তুই কাল সময়মত চলে আসবি
ঠিক আছে, তাহলে আমি এখন উঠি
আচ্ছা।
নিশাত নিরুর দিকে ঘুরে বলল তুমি কিন্তু এর মধ্যে রেডি হয়ে থেকো।
নিরু মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল সে বুঝতে পেরেছে কি করতে হবে।

পরদিন সকালে যথারীতি নিশাত এসে দেখে নিরু রেডি হয়ে ওর অপেক্ষা করছে। ঘরে ঢোকার পর নিরু জিজ্ঞেস করল একটু চা খেয়ে বের হবেন?
তুমি বানাবে নাকি নার্গিস বানাবে?
নার্গিস বাসায় নেই আমিই বানাব
তাহলে দাও
চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল ছবি কাগজপত্র সব নিয়েছ?
নিয়েছি
কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবে?
জিওগ্রাফি
এত সাবজেক্ট থাকতে জিওগ্রাফি কেন? তুমিও কি জাহাজে চাকরী করবে নাকি?
এই সাবজেক্ট আমি এখন ভাল বুঝি তাই
তাই নাকি? তুমিতো একসময় বলতে এটা খুব কঠিন
কেন, সেই যে আপনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তারপর থেকেই আমার কাছে এটা ভাল লাগতে শুরু করেছিল এখন এটাই আমার প্রিয় বিষয়।
কিন্তু সেতো মাত্র কয়েকদিন দেখিয়ে দিয়েছিলাম
হ্যাঁ তারপরে যুঁই আপাকে বলেছিলেন আমাকে পড়াবার জন্য, আপনার মনে নেই
হ্যাঁ মনে আছে কিন্তু যুঁই কি তোমাকে পড়াত?
হ্যাঁ
বেশ ভাল কথা, জেনে খুব ভাল লাগল কিন্তু তুমিতো এতদিন আমাকে কিছু বলনি!
আপনি কি ও কথা বলার কোন সুযোগ দিয়েছেন? নাকি কোনদিন জানতে চেয়েছেন?
হ্যা নিরু সত্যিই ভুল হয়ে গেছে, কথা দিচ্ছি আর এমন হবে না, আচ্ছা আজ চল
চলেন

বাইরে এসে একটা রিকশা ডেকে দুইজনে উঠে চলল বিশ্ববিদ্যালয়ের এডিমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিঙের দিকে। এরপর আর কোন কথা নেই, অনেকক্ষণ চুপচাপ। একটা বছরেরও বেশি সময়ের আগে এমনি এক দিনের কথা উভয়ের মনে পরল কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। মনে হচ্ছিল এই পথ যেন শেষ না হয়। যেন অনন্ত কাল ধরেই চলতে থাকে। কিন্তু এক সময় নিউমার্কেটের সামনে এসে পিছনের আর এক রিকশার ধাক্কায় উভয়েই সম্বিত ফিরে পেল।
শুনছ?
বলেন
আজ কিন্তু আমরা এক সাথে সারাদিন ঘুরব!
তাই কি হয়?
কেন হবে না? তুমি কেমন, কিছুই কি বুঝবে না?
নিরু কোন কথা বলল না।
এইমাত্র না বললে আমি কোনদিন সুযোগ দেইনি তাহলে এখন এমন কথা বলছ কেন?
নিরু চুপচাপ
কি হলো কিছু বলছ না!
কি বলব? আপনার ছেলে মানুষীর কথা ভাবছি, আপনি এখনও সেই অতটুকই রয়ে গেলেন। এত দেশ বিদেশ ঘুরে এলেন তবুও বড় হলেন না!
ঠিকই বলেছ সত্যিই আমি তোমার কাছে এলেই যেন কেমন হয়ে যাই, সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় গুছিয়ে কিছু বলতেও পারি না কিছু ভাবতেও পারি না। মনে হয়…
কি মনে হয়? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?
মনে হয়………………………
কয়েকবার শুধু মনে হয়, মনে হয় বলল কিন্তু তারপরে কথা থেমে যাচ্ছে, কিছু বলতে পারছে না। তাই শুনে নিরু বলল
কি মনে হয় বলেন, শুধু মনে হয় মনে হয় করছেন কেন?
লজ্জা লাগছে
তাহলে থাক বলার দরকার নেই
কিন্তু তোমাকে যে এ কথা শুনতেই হবে!
তাহলে বলেন!
এবার সাহস করে নিশাত নিরুকে বলল আমার চোখের দিকে তাকাও
নিরু তাকাল আর অমনি নিশাত ওর চোখে চোখ রেখে একটু কাছে এগিয়ে হাত ধরে বলল
মনে হয় আমি তোমার প্রেমে পড়েছি
আস্তে করে একটু ধাক্কা দিয়ে নিরু বলল যাহ! আপনি আগে এত অসভ্য ছিলেন না বিদেশে গিয়ে বুঝি এই হয়েছে? আর এই জন্যেই বুঝি আজ আমার সাথে আসা?
কি বল তুমি, অসভ্যের কি হলো যেটা সত্যি আমি তাই বলেছি। না, নিরু তুমি বুঝতে পারছ না, সেই ছোট বেলা থেকেই আমি লক্ষ করেছি তুমি কাছে এলেই যেন আমি কেমন হয়ে যাই। আমি অনেক ভেবে দেখেছি। সত্যি করেই আমি তোমার প্রেমে পড়েছি বিশেষ করে সেদিন নোমানের ওই কথা শুনে আমি ভাল করেই বুঝতে পারলাম এত দিন কেন এমন হয়েছে। তার পর থেকেই তোমাকে এই কথাটা বলার সুযোগ খুঁজেছি কিন্তু পাইনি আজ তাই প্রথম সুযগেই বলে ফেললাম।
নিরু নিজের মনে ভাবল এ কথাতো আমারও। আমিও কেমন যেন হয়ে যাই, সব ভুলে যাই। যুঁই আপা যখন আপনাকে বলত তোর বৌ এসেছে তখন মনে হত যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে, ভীষণ খারাপ লাগত কিন্তু আপাকে কিছু বলতে পারতাম না তাই নীরবে শুধু কেঁদেছি সে কি আপনি কিছু বুঝতে চেষ্টা করেছেন কখনও? মুখে বলল
আচ্ছা সে দেখা যাবে এখন রিকশা থেকে নামুন চলুন দেখি আগে ভর্তি হয়ে নিই। পরে বিচার করব সত্যি বলছেন নাকি বানিয়ে বলছেন!
নিশাত সামনে চেয়ে দেখে ওদের গন্তব্যে চলে এসেছে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে নিরুর পিছে পিছে এসে যেখানে টাকা পয়সা দিতে হবে সে সব কাজ সারতে প্রায় ঘণ্টা খানিক লেগে গেল। ভর্তির কাজ সেরে ওই অফিসেই একজনের টেলিফোন থেকে বীণা আপার বাসায় ফোন করে বলল
আপা নিরুর ভর্তি হয়ে গেছে আমরা একটু পরে আসছি
কোথায় যাবি?
না তেমন কোথাও না এখানেই এলাকাটা ওকে চিনিয়ে দেই পরে যাতে কোন অসুবিধা না হয়
আচ্ছা ঠিক আছে বেশি দেরি করবি না তাড়াতাড়ি আসবি।
আচ্ছা আপা তাড়াতাড়িই আসব।
নিরুকে সাথে নিয়ে বাইরে চলে এলো। মেইন রোড।
শুনেছ তোমার আপার কাছে অনুমতি নিয়ে নিয়েছি এবার চল আমরা আজ বেড়াব এবং দুপুরে চাইনিজ খাব।
আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে
তোমার ওই এক কথা, ভয় আর লজ্জা, আপার কাছে অনুমতি নিয়েছি না! তবে আবার কিসের ভয়? ভয়ের কি আছে এটা কি তোমাদের গ্রাম? এটা রীতিমত ঢাকা শহর এখানে কে কার খবর রাখে? তুমি এখন বড় হয়েছ, আজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছ তোমার এত ভয় পেলে চলবে? এখানে লজ্জারই বা কি আছে? তোমার এখন নিজস্ব মতামত দেয়ার সময় হয়েছে
নিরু আমতা আমতা করে বলল চলেন কোথায় যাবেন।
[চলবে]

কথোপকথন -২

– কে আপ‌নি ?
– সেই প্রশ্নটা তো আমার করার কথা, কারণ ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আপনার কাছ থেকেই এসেছিল। আমি শুধু একসেপ্ট করলাম।
– আ‌মি ঠিক চিনতে পারছি না।
– অচেনা মানুষকে কি বন্ধুত্বের বাঁধনে রাখা যায়?
– আপনার লেখা পোস্ট ভাল লে‌গে‌ছে, অবশ্যই বন্ধুত্ব হ‌বে, কিভা‌বে রিকু‌য়েস্ট পা‌ঠি‌য়ে‌ছি ম‌নে নেই, স্মৃতিভ্রষ্ট হচ্ছি!
– তাহলে বন্ধু হিসাবে থাকা যায়, আমি এমনিতেই কম বন্ধু নিয়ে থাকি।
-জ্বী

আরো কয়েক দিন পর ….

– ভাল আ‌ছেন আপ‌নি ?
– ভালো আছি …।
– আপনি … কেমন আছেন ?
– আ‌ছি‌ মোটামু‌টি। থা‌কেন কোথায় আপ‌নি ?
– বাড়ীতে
– আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনি কোথায় থাকেন ?
– আমার প্রোফাইল এ আছে।
– ও। আ‌মি জানতাম না, আপনার জেলা কোথায় দে‌শে ?
– আমার জেলা ঢাকা
– ভাল, বাংলার প্রতি অ‌নেক ভালবাসা আপনার !
– তাই কি মনে হচ্ছে ?
– জ্বী তাই
– অতো ভালোবাসা থাকলে রাজনীতি করতাম !

______________
কথোপকথন#২

আমি অপরাজিতা নারী………

কতটুকু চিনতে পেরেছিলাম
আমরা দুজন দুজনকে,
আজ আর কোন প্রশ্ন নয়
নয় কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা,
সোনার পেয়ালায় রাখা
অমৃত সুধা পান করেছি আমি
কেঁদেছি একাকী,
আজ আর কোন প্রশ্ন নয়
নয় কোন অনুশোচনা,
আমি প্রতিবার সফল হয়েছি
আরো সাহস নিয়ে
আরো শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছি
আর নিজেই আগুনে পরিণত হয়েছি,
জয় করা না পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেইনি,
জয় করা আমার প্রথম টার্গেট,
হোক তা কারো হৃদয় হোক তা পাহাড় সমান দুঃখ ।
কারো হৃদয় জয় করা খুব সহজ,
কিন্তু দুঃখ কে জয় করতে হয়
হাজার বার নিজেকে ভেঙে নিজেকে গড়ে,
হাজার বাধা বিঘ্ন পেড়িয়ে দুঃখ কে জয় করতে হয় | আর যে দুঃখ কে জয় করতে পারে তার কাছে পৃথিবীর অসাধ্য বলতে কিছু নেই,
আর আমি সেই অপরাজিত নারী……..

ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে এদেশের প্রচার মাধ্যমে অনেকেরই অন্ধ ভারত বিদ্বেষ এবং একই সঙ্গে অন্ধ পাকিস্তান প্রেম দেখে লেখাটি কাল রাতে হুট করে লিখে ফেললাম।


মনে পড়ছে, খুব সম্ভবত ২০০৬ সালে সিডর পরবর্তী বাংলাদেশে দারুণ খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। একেবারে ‘মন্বন্তর’র দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। দারুণ সঙ্কট দেখা দিয়েছিল চালের। রাতারাতি অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গিয়েছিল। অন্যান্য খাবারও পর্যাপ্ত ছিলো না। শাকসবজি কিংবা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের অপ্রতুলতার থেকেও চালের সঙ্কট মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল আমাদের। ভাত না খেলে আমরা বাঁচবো কী করে! ইতোমধ্যেই চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিলো। পঞ্চাশ টাকা কেজিতে এক কেজি চাল বিক্রি হতে দেখেছিলাম সে সময়। কেবল ধনী লোকেরাই ক্রয় করতে পারতো। পরিষ্কার মনে পড়ছে, কী যে শ্বাস রূদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সারা দেশে। তখন বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিনাক রঞ্জণ চক্রবর্তী। তার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। অনুরোধ করা হয়, বাংলাদেশে চাল রপ্তানির। এ সময় ভারত নামক বিশাল প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আরেকবার আমাদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশে বিরাট পরিমাণের চাল অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে রপ্তানি করে এ দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষের মুখে ভাত তুলে দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছিল ভারত। হ্যা এই তো পরিষ্কার মনে করতে পারছি, ভ্রাম্যমান চালের গাড়িতে চালের বস্তায় গোটা গোটা হরফে লেখা কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিম বাংলা, ভারত। আমি একাত্তর দেখিনি, ২০০৬ দেখেছি। নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ মন্বন্তরের হাত থেকে এ দেশকে বাঁচিয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। আমি ভুলে যাইনি। আমি ভুলতে পারি না। কারণ আমার রক্ত অকৃতজ্ঞের রক্ত নয়, প্রতারকের রক্ত নয়, কৃতঘ্নের তো নয়ই। ভারতের কাছে আমার, আমাদের ঋণ, রক্তের ঋণ। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমি এই ঋণের প্রতিদান দিতে পারি। ভারতের যদি দরকার হয়, তাহলে আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের হয়ে শত্রু দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত। সেটা পাকিস্তান বা চিন যেই হোক।

আমাদের গ্রামখানি

আমাদের গ্রামখানি
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আমাদের গ্রামখানি অজয়ের পারে,
সবুজ গাছের সারি পথের দুধারে।
আমগাছ, তালগাছ, খেজুর, সুপারি,
রাঙাপথ গেছে চলে নদীঘাট ছাড়ি।

অজয়ের নদীঘাটে রবি রোজ উঠে,
উড়িয়ে পথের ধূলো গরুগাড়ি ছুটে।
গরুগাড়ি নদীঘাটে থামে অবশেষে,
ভাটিয়ালি গায় মাঝি আসে সুর ভেসে।

গাঁয়ে আছে পদ্মদিঘি কালো জল তার,
জলে তার হাঁসগুলি কাটিছে সাঁতার।
কলসী কাঁখে বধূরা জল নিয়ে যায়,
তরুতলে বসি কেহ বাঁশরী বাজায়।

বেলাশেষে ডুবে রবি অন্ধকার নামে,
চাঁদ উঠে তারা ফুটে আমাদের গ্রামে।

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২২

মনে মনে নিশাতের যাবার তারিখ হিসেব করে নিরু দিন গুনছে ও কবে আসবে! কি যেন বলেছিল সেদিন? নয় মাস পরে আসবে! হে খোদা, মাত্র গেল সাত মাস! আর কত? এমনিতেই কতদিন পরে পরে দেখা হয় তার কাছে এই নয় মাস এমন কিছু না কিন্তু কেন যেন মনে হয় এই দুই মাস অনেক মাস। এর আগে কখনও এমন লাগেনি। শুধু ভাবনা আর জল্পনা কল্পনার মধ্যেই সীমিত ছিল কিন্তু এবার যেন একটু অন্যরকম। কেমন যেন বোঝান যায় না বলা যায়না। আর বলবেই বা কাকে! যেখানে হাতে ধরেছিল বারবার সেখানে তাকায়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিজে একটু আলতো করে ছুঁয়ে দেখে নিশাতের স্পর্শ লেগে আছে কিনা! এই একটু খানি স্পর্শের জন্য আজ কতদিন ধরে অপেক্ষায় আছে সে কথা কি আর কাউকে বলা যায়? না, এ যে একান্তই তার নিজের অনুভব। কাউকেই এ কথা বলা যায় না। মানিকগঞ্জে নোমান ভাইয়ের কথাটা শুনে খুবই মিষ্টি লেগেছিল, মনে হলো তাই যেন হয় নোমান ভাই। মানুষটা এমন বোকা যে নিজে যেন কিছুই বলতে পারে না। কোন আভাস ইঙ্গিতও কি কিছু বুঝতে নেই! আর সেদিন কেমন হঠাৎ করেই হাত টেনে ধরল! অবাক কাণ্ড, ভাবাই যায় না এই মানুষ এমন করে বসবে। তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য মুখে যা আসে তাই বলে দিয়েছে। আসলে এইতো তার মনের কথা। সারা জীবন কেন অনন্তকাল ধরে ওর অপেক্ষায় থাকতে পারি। তখন ভয়েই আর কিছু বলা হয়নি। কত কথা জমে রয়েছে কত কি বলার আছে, কবে সময় হবে? ও কি আর একটু এগিয়ে আসতে পারে না?। তখন মনে ভয় ছিল যদি হঠাৎ করে আপা এসে পরে তাহলে? যখন হাত টেনে ধরেছিল তখন কেমন যেন এক অনুভূতি আবার ওদিকে আপা চলে আসে কিনা সেই ভয়! ভয় আর অজানা এক শিহরণ মিলে কেমন যেন বলতে না পারা একটা ভিন্ন অনুভব। যা শুধু অনুভবেই অনুমান করা যায় কাউকে বলা যায় না। আপা কি কিছু বুঝে ফেলেছে? না! তা কি করে হয়! একটা চিঠিও তো দিতে পারে মানুষটা! কেমন? যুঁই আপার কাছে দিলে কি হয়? না থাক তাহলে জানাজানি হয়ে যাবে। শুধু আমার বুকের মাঝে রয়েছে তাই থাক আর কারো জানার দরকার কি? কিসে থেকে কি হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য সব কিছু ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। থাক যেমন আছে তাই থাক। এই আমার ভালো। ওর মনের কথা জানতে পেরেছি তাই বুকে করেই কাটাতে পারব।

নিশাত যাবার পর নিশাতের বাবা অফিস থেকে মতিঝিল কলোনিতে বাসা পেল। নিশাতকে জানিয়েছিল যাবে কিনা। ঢাকা শহরের মুল কেন্দ্রে বলে আশেপাশে অনেক ভাল স্কুল কলেজ আছে তাই নিশাত ছোট ভাই বোনদের ভাল লেখাপড়া হবে বলে বলেছিল এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় উঠে পরুন।

দেখতে দেখতে একদিন নিশাত তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা শেষ করে নয় মাস পরে কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে একটা অটোরিকশা নিয়ে মতিঝিলের বাসায় এসে হাজির। বাসায় মা একা ছিল সে দরজায় চেনা নক শুনে একটু অবাক হয়ে ভাবছিল কে এলো এই সময় একেবারে নিশাতের মত নক। দরজা খুলেই মা নিশাতকে দেখে অবাক স্তব্ধ হয়ে তুই! বলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। একটু পরেই সম্বিত ফিরে পেয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরল বুকে। বাবা তুই এসেছিস! কোন খবর দিতে পারলি না?
না আম্মা সবাইকে চমকে দিব বলে ইচ্ছে করেই কাউকে খবর দেয়ার চেষ্টা করিনি। প্রথম বলে বিদেশ থেকে যা পেরেছে ছোট ভাই বোন এবং নিরুর জন্য কিছু কেনা কাটা করেছে। খাবার পর বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পর সবাই যখন একত্রে হলো বাবা মা ভাই বোন সবাই তখন যার জন্য যা এনেছিল সেগুলি একটা একটা করে দিয়ে দিল কিন্তু নিরুর জন্য যা এনেছিল সেগুলি আর বের করা হলো না। সুটকেসের ভিতরেই রয়ে গেল। পরদিন সকালে ফকিরাপুল গিয়ে একটা স্টিলের আলমারির অর্ডার দিয়ে এলো। কয়েকদিন পরে আলমারিটা এনে সুটকেস থেকে বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখল। নিরু যখন আমার হবে, নিরু যখন এই বাড়িতে আসবে তখন আলমারির চাবিটা নিরুর হাতে দিয়ে বলবে আলমারিটা খুলে দেখ ওখানে যা যা আছে সব তোমার।

পরদিন বীণা আপার বাড়িতে এসে হাজির। দুলাভাই থাকলে বেশিক্ষণ থাকা যাবে মনে করে বিকেলের দিকেই এসেছিল। বাড়ির কাজের মেয়ে নার্গিস দরজা খুলে অচেনা মানুষ দেখে জিজ্ঞেস করল কাকে চান?
সর দেখি ভিতরে যেতে দাও।
একরকম ওকে ঠেলে ভিতরে এসেই দেখে বারান্দা দিয়ে নিরু এগিয়ে আসছে। ওকে দেখে নিরুর চলা থেমে গেল। কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়েই জিজ্ঞেস করল আপনি! এতো দিন নিশাত ভাই বলে ডাকত কিন্তু আজ কেন যেন আর সেই আগের ডাক ডাকতে পারল না। আপনি! এটুক বলেই থেমে গেল। কোথা থেকে যেন এক রাশ লজ্জা আর সংকোচ এসে পা জড়িয়ে ধরেছিল। নিশাত এগিয়ে এসে পিছনে কাজের মেয়েটার কথা ভুলে গিয়ে নিরুর কাঁধে হাত দেয়ার জন্য হাত তুলতে আসছে বুঝতে পেরে এক পা পিছিয়ে জিজ্ঞেস করল কবে এসেছেন? নিশাত একটু অভিমান ভরা কণ্ঠে বলল যেদিনই এসে থাকি তাতে তোমার কি? আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু পিছনের পর্দা সরিয়ে বীণা আপাকে আসতে দেখে থেমে গেল। বীণা আপাকে দেখেই এগিয়ে এসে নিচু হয়ে বীণা আপার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলল আপা আপনারা ভাল আছেন সবাই?
হ্যাঁ কিন্তু তুই কবে এসেছিস?
গতকাল এসেছি আপা! ছেলেরা কোথায় বলে একটা চকলেটের প্যাকেট নিরুর হাতে এগিয়ে দিয়ে বলল ওদের দিও।
ওরা বাইরে খেলতে গেছে একটু পরেই আসবে যা ও ঘরে বস গিয়ে আমি আসছি।
নিরু এসে লাইট জ্বেলে দিয়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু সেদিনের মত আবার নিরুর হাত টেনে ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল তুমি আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না? নিরু আজ হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল না। শুধু বলল কি জিজ্ঞেস করব? মনে মনে বলল আপনি কিছু জিজ্ঞেস করলেই পারেন। হঠাৎ বারান্দায় পায়ের শব্দ পেয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল আপা আসছে আমি যাই! একটু পরেই দুলাভাই এলো। অনেক রাত পর্যন্ত নিশাতের সমুদ্র যাত্রা ও লন্ডন ভ্রমণ নিয়ে গল্প সল্প হলো কিন্তু এর মধ্যে নিরু একবারও এ ঘরে এলো না। আপা দুলাভাই রাতে খাবার জন্য পিড়াপিড়ি করল কিন্তু কিসের এক অব্যক্ত অভিমানে নিশাত সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে চলে এলো।

প্রেম মানুষকে উদাস করে দেয়, উদার হতে শেখায়, ভালবাসতে শেখায় সেই সাথে নিষ্পাপ প্রেম মানুষকে বড়ই অভিমানী করে তোলে। সেই অভিমানের জের ধরে দুলাভাইর সাথে রাতের খাবার খেতে অসম্মতি। নিরু যদি একবারও অন্তত চায়ের ট্রে নিয়েও এ ঘরে আসত তাহলে এমন হতো না। সে রাতে দুলাভাইর কথায় বুঝতে পেরেছিল নিরুর কলেজ বন্ধ। পরদিন সকালে হিসাব করে আপার ছেলেদের স্কুলে চলে এলো। জানে আজ নিরু বাসায় আছে কাজেই আপা তার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে আসবে না নিরুই আসবে। সত্যি সত্যি একটু পরেই দেখল একটা রিকশা আসছে তাতে নিরুর সাথে আপার বড় ছেলে অয়ন। রিকসা থামলে ভাড়া দেয়ার জন্য নিরু হাতের ব্যগটা খুলছে এমনি সময় নিশাত সামনে এসে অয়নকে বলল
মামা কাল চকলেট খেয়েছ?
হ্যাঁ মামা খুব মজা
আচ্ছা যাও স্কুলে যাও। নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল যাও ওকে ক্লাসে দিয়ে এখানেই আসবে আমি দাঁড়ালাম।

যেন নিরুর উপরে তার কত দাবি। নিরু কেন এখানে আসবে? সে নিরুর কে? নিরু কেন তার কথামত চলবে? তাইতো! নিরু এখানে না এলে কি করব? সাত পাঁচ অনেক ভাবনা আসছে যাচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই দেখল স্কুলের গেটের ভিতরের রাস্তা দিয়ে নিরু বের হয়ে আসছে। মাথায় ওড়না জড়ান হাতে সেই ব্যাগটা। মাথা নিচু করে নিরুর স্বভাব মত আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। নিরু আগের মত চঞ্চল ছটফটে নেই এখন অনেক বদলে গেছে। যে নিরু না হেটে দৌড়াত সেই নিরু এখন ধীর পায়ে হাটে। হতে পারে বয়সের সাথে বদলে গেছে কিংবা মনে কোন পরিবর্তন এসেছ। কি সে পরিবর্তনের কারণ? গেটের বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই নিশাত পাশে গিয়ে বলল আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরব চল রিকশায় ওঠ।
তোমাকে নিয়ে ঘুরব! বললেই হলো!
কেন?
সহজ সরল এই মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিরু কি বলবে একটু ভাবল।
কেন আবার কি, আপনি কি কোনদিনই কিছু বুঝবেন না?
এখানে বোঝার কি আছে?
আমি এসেছি অয়নকে স্কুলে দিতে, আর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগে তা আপা জানে না? সে সময় পেরিয়ে গেলে আপা কি করবে? কি বলব আপাকে? বলব তোমার প্রিয় ভাই নিশাতের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম? বলব এ কথা?
ও, এই কথা! তাহলে বল তোমাকে আমি একা কোথায় কখন পাব?
এত অস্থির হবার কি হলো? একা পাবার এমন কি প্রয়োজন?
অস্থির মানে কি বলছ তুমি! জান আমার এই নয়টা মাস কি করে কেটেছে?
কি করে কেটেছে?
শুধু নিরু আর নিরু, তুমি আর তুমি
কেন আপনার কাজকর্ম কিছু ছিল না?
শোন এত কৈফিয়ত আমি দিতে পারব না
তাহলে কি করবেন? বাসায় যাবেন?
চল বাসায় যাই
তাই চলেন কাল আপনি চলে আসার পরে মেঝ ভাই এসেছে
তাই নাকি?
হ্যাঁ যূঁই আপার বিয়ে ঠিক হয়েছে
কবে বিয়ে?
এই শুক্রবারের পরের শুক্রবারে
বাহ! আমি ভাবতেই পারছি না যূঁইর বিয়েতে আমি থাকতে পারব, শিহাব বাসায় আছে?
আমিতো ঘুমে দেখে এসেছি
একটা রিকশায় উঠে বসল। এই প্রথম নিরু আর নিশাত এক রিকসায় এত কাছা কাছি বসেছে। দুইজনের মনেই এক অপার্থিব সুখস্রোত বয়ে যাচ্ছে। স্বর্গিয় অনুভুতি, অনেকক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু একজন আর একজনের স্পর্শ অনুভব করছে। হঠাৎ করেই নিশাত এই নীরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করল
আমার কথা তোমার মনে পড়েনি?
পড়েছিল
সবসময়?
সবসময় কেন হবে? মাঝে মাঝে একটু একটু
তাহলে তুমি কাল রাতে একবারও ও ঘরে এলে না কেন?
আবার বোকার মত কথা বলছেন
কেন বোকার মত কেন হবে?
দুলাভাই কি ভাবত? আপা কি ভাবত?
ও আচ্ছা! কিন্তু যেদিন আকাশে সূর্যের উদয় হবে সেদিন কি ভাববে?
আগে উদয়তো হোক, তখন দেখব কে কি ভাবে!
চলনা আজ কোথাও একটু যাই
আমি আপাকে কিছু বলতে পারব না
আচ্ছা ঠিক আছে না বললে
আরও কিছু কথা হলো
বাসায় এলে বীণা আপা দরজা খুলে ওদের দুইজনকে এক সাথে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কিরে তোরা এক সাথে হলি কি করে?
আমি বাসে কল্যাণপুর যাচ্ছিলাম ওকে দেখলাম রিকশায় করে আসছে তাই নেমে ওর সাথে চলে এলাম।
এসে ভাল করেছিস আয় ভিতরে আয়। কাল শিহাব এসেছে যূঁইর বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামি সপ্তাহে
হ্যাঁ ওর কাছে তাই শুনলাম, শিহাব কোথায়?
কথা বলতে বলতে ভিতরে এসে দেখে শিহাব নাশতা খাচ্ছে। নিশাতকে দেখে এক লাফ দিয়ে উঠল
কিরে তুই কবে এসেছিস? তুইতো অনেক হ্যান্ডসাম হয়েছিস!
তুইওতো বেশ নাদুশ নুদুস হয়েছিস, এই যূঁইয়ের বিয়ে কবে রে?
এইতো সামনের শুক্রবেরের পরের শুক্রবারে
বাহ! কি আনন্দ! তুই বাড়ি যাবি কবে?
দুই তিন দিন পরে যাব, যাবি আমার সাথে?
একটু ভেবে বলল
তোর সাথে যেতে পারব না তবে আমি হলুদের দিন চলে আসব
বীণা আপার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল আপা আপনারা কবে যাবেন?
দেখি তোর দুলাভাইর সাথে আলাপ করিনি এখনও তবে মনে হয় আমিও হলুদের দিন যাব নিরু শিহাবের সাথে চলে যাবে। তুই তাহলে আমাদের সাথেই যাবি, পারবি? শিহাব আজ তোদের বাসায় যাবে চাচা চাচীদের দাওয়াত দিতে।
তাহলে ভালই হবে। ঠিক আছে আপা আমি আপনাদের সাথেই যাব।
[চলবে]

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২১

১২।
পর দিন সকালে ডিউটিতে যেয়ে দেখে জাহাজ প্রায় অর্ধেকের বেশি লোড হয়ে গেছে। নিশাত সব গুলি ট্যাঙ্ক একে একে ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছে। পাম্প ম্যানের সাথে ঘুরছে। সে কোন ভাল্ব কি ভাবে কোন দিকে ঘুড়িয়ে খুলছে বন্ধ
করছে, গেট ভাল্বের পাশে পাইপ লাইনের সাথে স্পিড মিটারে দেখল ঘণ্টায় ২৪০ টন বেগে তেল আসছে। সব কিছু কৌতূহল নিয়ে দেখছে। অরুণ অফিস রুমে। এর আগে ডিজেল দেখেছে সাধারণ বোতলে ভরা কিন্তু এমন বিশাল ট্যাঙ্কে এত ডিজেল দেখে নিশাত অবাক হচ্ছে। ডিজেলের গন্ধে কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠল বমি বমি ভাব লাগল। এই তেলের এমন গন্ধ! এর আগে তো কখন এমন মনে হয়নি। একটু পরে অরুণ’দা এলে জিজ্ঞেস করল

দাদা, আমাদের দেশে যে ডিজেল দেখেছি সে গন্ধ আর এই গন্ধের মধ্যে এমন তফাত কেন?
গন্ধ একই, পার্থক্য হলো তুমি এই এত বিশাল পরিমাণ তেল কখন এক সাথে দেখনি তাই এমন লাগছে,
আমার কিন্তু বমি এসে গিয়েছিল
তাই না কি?
তা হলে তো সমস্যা। ট্যাংকারে কাজ করলে কত গ্রেডের তেল নিতে হবে, একেক তেলের একেক রকম গন্ধ তোমাকে সহ্য করতে হবে। আচ্ছা শোন তুমি বেশী করে লেবু খাবে, বুঝেছ?
কেন, লেবু খেলে কি হবে?
তেলের যে গ্যাস শ্বাসের সাথে যায় তা কিছুটা ক্ষতি করে। লেবু ওটা একটু কমাতে সাহায্য করে।
ও, আচ্ছা ঠিক আছে খাব।
ওদের ডিউটির মধ্যেও জাহাজের লোড শেষ হয়নি। ওরা চলে গেল আবার মুকিত ভাই তার সঙ্গী সাথী সহ এসে অরুণকে জিজ্ঞেস করল
আর কতক্ষণ লাগবে?
দেরী আছে তোমরা শেষ করতে পারবে মনে হচ্ছে।
বেশ ভালো, তা হলে এই সময়েই শেষ হোক আমি তাই চাইছিলাম।
আচ্ছা ঠিক আছে নাও তুমি যতটা পার কর তার পরে আমরা এসে শেষ করে সেইল করবো, তা হলে থাক আমরা চললাম।

নিশাত এসে গোসল সেরে খেয়েই শুয়ে পরল। ঠিক ৬টায় ডিউটিতে গেল। যেয়ে দেখে এখনো অরুণ বা তার সাথের আর কেউ আসেনি। এখনও শেষ হয়নি?
এইতো কাছা কাছি এসেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে যাবে!
মুকিত ভাই জিজ্ঞেস করল
কি নিশাত ঘুম হলো?
হ্যাঁ এই একটু, সময়ের সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে তো মানিয়ে নিতে একটু সময় নিবে।
কেমন লাগছে এখানে?
খুব ভালো, তবে মা বাবাকে ছাড়া কখন কোথাও এত লম্বা সময়ের জন্য থাকিনি তাই একটু খারাপ লাগে মাঝে মাঝে।
ও কিছু না, দেখবে এক সময় সব অভ্যাস হয়ে যাবে। আমরাও কি থেকেছি, কিন্তু দেখ এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, মানুষের জীবনটাই এরকম।
হ্যাঁ মুকিত ভাই তবুও আমার ভাগ্য ভালো যে আপনাকে পেয়েছি আর অরুণ’দাও বেশ ভালো মানুষ। সবাই ভালো। আমি চিন্তা করছি আমার বন্ধু হাবিবের কি অবস্থা
হাবিব কে?
আমার বন্ধু, আমরা এক কলেজে পড়তাম, আমাদের বাড়িও এক জায়গায়, আবার এখানে এসেছিও এক সাথে, ও ফরিদা জাহাজে গেছে।
ও, ফরিদা?
হ্যাঁ
তা হলে কোন চিন্তা করো না ওখানে অনেক বাংলাদেশি আছে। দেখ আজ সেইল করার পর ওদের ডেকে দেখবে ও যদি ব্রিজে থাকে তা হলে কথা বলতে পারবে।
হ্যাঁ অরুণ’দা সেদিন বলেছে। দেখি আজ চেষ্টা করবো।

এমন সময় অরুণ এলে মুকিত ভাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। তার সাথে থাকা অন্যান্য লোক জন সবাই গেল। এখন জাহাজের লোডিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। অরুণ এবং সবাই ভীষণ দৌড়া দৌড়ীর মধ্যে, এই ট্যাঙ্ক থেকে ওই ট্যাঙ্কে যাচ্ছে দেখছে আর অরুণ নির্দেশ দিচ্ছে কোন ট্যাঙ্কে লোড শেষ হয়েছে ওটা বন্ধ করতে বলছে। প্রায় সব ট্যাঙ্কে লোড হয়ে গেছে এখন সর্ব শেষ ট্যাঙ্কে চলছে। জেটির লোক জনকে ডেকে জেটির পাশে দাড় করিয়ে রেখেছে আর অরুণ ট্যাঙ্কের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে কখন বন্ধ করতে হবে। নিশাত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। নিশাত দেখতে পেল নির্দিষ্ট জায়গায় আসার একটু আগেই জেটিতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে স্টপ বলে দিল আর সাথে সাথে লোকটাও তার হাতের ওয়াকি টকি দিয়ে স্টপ বলল। তেলের গতি কমে এক সময় বন্ধ হয়ে গেল। জাহাজের পাইপের গেট ভাল্ব বন্ধ করে সব গুলি ট্যাঙ্কের সব মুখ বন্ধ করে আটকিয়ে দিল। একটু পরে যারা পাইপ কানেকশন দিয়েছিল সেই গাড়ি এসে জেটির পাশে দাঁড়াল। এবার অন্য দুই জন লোক ওই আগের লোকদের মত পোশাক পড়নে এসে পাইপ খুলে জেটিতে উঠিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। একটু পরে আবার ভিন্ন এক গাড়ি নিয়ে এলো আরও দুই জন। হাতে কত গুলি বোতল আর মাপার ফিতা নিয়ে। নিশাত শুধু দেখে যাচ্ছে। জাহাজের ট্যাঙ্কের তেল মাপার যে সাউন্ডিং পাইপ সেখানে থেকে তেল তুলে বোতলে ভরে জাহাজের নাম, তেলের নাম, তারিখ এই সব লিখে একটা করে লেবেল বোতলের গায়ে লাগিয়ে নিলো। এর পর কি একটা পেস্টের মত ফিতায় বাধা একটা পেন্ডুলামের গায়ে লাগিয়ে ওই মুখ দিয়ে ট্যাঙ্কের ভিতর ছেড়ে ট্যাঙ্কে কত ফুট তেল আছে তা মেপে একটা খাতায় টুকে রাখল আর পেন্ডুলামে যে গোলাপি রঙের পেস্ট লাগিয়েছিল তার রঙ পরিবর্তন হয়েছে কি না তা দেখছে। ট্যাঙ্কে পানি থাকলে না কি এর রঙ বদলে নীল হয়ে যায়। এর পর প্রতিটি ট্যাঙ্কে থার্মো মিটার নামিয়ে তেলের তাপ দেখে ওই খাতায় লিখে নিয়েছে। এগুলি শেষ হলে ওদের নিয়ে অরুণ’দা তার অফিস রুমে চলে গেল হিসেব করতে। হিসেব নিকেশ সেরে ওরা চলে গেল আর সবাই অপেক্ষায় রইল কখন পাইলট এসে জেটির বাইরে নিয়ে যাবে।

প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিট পর পাইলট এসে জাহাজে উঠে সরাসরি অরুনের সাথে ব্রিজে গেল। জেটি থেকে জাহাজের সিঁড়ি নামিয়ে নেয়া হলো। ওরা ব্রিজে যাবার পর ক্যাপ্টেন জাহাজ ছাড়ার অর্ডার দিয়ে দিল। এক এক করে পিছন থেকে রশি খুলে যে টাগ বোট এসেছিল তারা রশি বেধে টেনে জাহাজ ঘুড়িয়ে নিয়ে জেটি ছেড়ে বের করে দিল। বাইরে এসে সোজা চালিয়ে এক বারে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেল। পাইলটকে নামিয়ে নেয়ার জন্য পিছনে একটা পাইলট লঞ্চ আসছিল, বাইরে এসে জাহাজ থামিয়ে দিলে লঞ্চটা জাহাজের গায়ে এসে ভিড়ল আর পাইলট নেমে গেল। এবার ফুল স্পিডে জাহাজ চালিয়ে দিয়ে নিশাতকে ব্রিজে ডেকে নিয়ে গেল।

ব্রিজে এসে দেখে জাহাজ সামনে এগিয়ে চলছে স্পেনের দিকে। শাহিন স্টিয়ারিং করছে। অরুণ গ্রে বাহরাইনকে ডেকে বাহরাইন ছেড়ে যাবার সংবাদ জানিয়ে দিল। এর একটু পরেই গ্রে বাহরাইনকে ডেকে স্পেনে কখন পৌঁছাবে বলে দিল। প্রায় ঘণ্টা খানিক হয়ে গেছে জাহাজ রাস্তানুরাহ ছেড়ে এসেছে। ফাঁকে ফাঁকে অরুণ রাডারে দেখে নিচ্ছে আশে পাশে কোন জাহাজ আছে কি না। বন্দরের কাছে বলে সব সময় জাহাজ আসা যাওয়া করে এই জন্যে এত সাবধানতা। শ খানিক মাইল দূরে চলে গেলে এত সাবধানতার দরকার হয় না। স্টিয়ারিং হুইলের সামনে একটা লিকুইড ম্যাগনেটিক কম্পাস, উপরে জাইরো কম্পাসের মনিটরে দেখল জাহাজ কত ডিগ্রীতে চলছে।
জগে কফির পানি গরম দিয়ে জিজ্ঞেস করল
কফি খাবে?
হ্যাঁ।
হাবিবকে একটু দেখবেন পাওয়া যায় কিনা!
দাঁড়াও দেখছি।
ভিএইচএফের রিসিভার হাতে নিয়ে আবার ফরিদাকে ডাকল। সাথে সাথে ফরিদা থেকে হান্নান নামের এক জন জবাব দিল।
কি হান্নান, তোমরা কোথায়?
আমরা কুয়েতে
কবে এসেছ?
গত পরশু
যাবে কবে?
কি জানি হয়তো আগামী পরশু হয়ে যাবে আমাদের এখনও লোডিং শেষ হয়নি
কোথায় যাবে?
টোকিও যাব
তোমরা কোথা থেকে এসেছ?
আমরা ডান্ডি থেকে লন্ডন হয়ে এখানে এসেছি, হান্নান শোন, তোমাদের ওখানে হাবিব নামে বাংলাদেশ থেকে একজন নতুন এসেছে?
হ্যাঁ এসেছে, কেন?
ওর এক বন্ধু নিশাত আমাদের এখানে এসেছে। হাবিব কি ব্রিজে আছে?
হ্যাঁ আছে একটু অপেক্ষা কর ডেকে দিচ্ছি।
হ্যাঁলো আমি হাবিব বলছি!
হাবিব, আমাকে তুমি চিনবে না। আমি প্যাসিফিক ম্যারিনারের চিফ অফিসার অরুণ , তোমাদের চিফ অফিসার হান্নান আমার বন্ধু। তোমার বন্ধু নিশাত এইতো আমার সঙ্গে আছে।
ও আচ্ছা, অরুণ’দা নিশাত ভালো আছে?
হ্যাঁ তা মনে হয় ভালোই আছে। আচ্ছা হাবিব তুমি নিরু নামে কাউকে চেন?
নাতো, কেন কি ব্যাপার?
এদিকে অরুণ যখন হাবিবের সাথে এসব কথা বলছে তখন নিশাত অরুণের মুখ থেকে হঠাৎ নিরুর নাম শুনে চমকে উঠল। কি ব্যাপার দাদা এ নাম জানল কি করে? ওহ! ওই যে জেটিতে লিখার সময় দেখেছে তাই মনে করে রেখেছে।
না, তেমন কিছু না তবে তোমার বন্ধু আজ বাহরাইনের সিতরা জেটিতে এই নামটি লিখে রেখে এসেছেতো তাই ভাবলাম তুমি হয়ত চেন। আচ্ছা ঠিক আছে এমনিই একটু ফান করলাম। নাও নিশাতের সাথে কথা বল।
হ্যালো হাবিব
নিশাত তুই কেমন আছিস কবে জাহাজে উঠেছিস কেমন লাগছে ওখানে কি তোরা সবাই বাঙালি?
এক নিশ্বাসে হাবিব অনেক গুলি প্রশ্ন করে একটু থামল। এবার নিশাতের পালা।
থাম থাম, এক সাথে এত গুলি প্রশ্ন করলে জবাব দেব কি করে? যাক তোর সন্ধান যখন পেয়েছি তখন সামনা সামনি কথা হবে যখন তখন সব বলব।
দেখা হবে না কি?
একই লাইনে চলাচল আমাদের কাজেই দেখা অবশ্যই হবে।
১৩।
ইউরোপ এবং এশিয়ার নানা দেশ দেখার আনন্দে এবং চমকে দিন গুলি বেশ কেটে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাহাজের সব বাংলাদেশিদের সাথে বিশেষ করে নিশাতের সমবয়সীদের সাথে ভাব জমে উঠেছে। দিন গুলি কেটে যায় কিন্তু যখন একা হয় তখন কোথা থেকে যেন নিরু এসে হাজির হয় ওই যে বীণা আপার বাসায় নিরু যখন বলেছিল “দরকার হলে আমি সারা জীবন আপনার জন্য অপেক্ষা করব” ওই কথা বলার সময়ে নিরুর চেহারা এবং ওই ক্ষণটাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারে না। যখনই নিরুর কথা মনে হয় তখনই সেই চেহারা সেই পরিস্থিতি মনে ভেসে আসে। বীণা আপার বাসার সেই সোফায় বসে ওরা দুইজন, নিরুর ডান হাতটা শক্ত করে ধরা। নিরু বলেছে কিন্তু সিরাজ চাচা! যদি চাচা ওর কথা না মানে তাহলে! এমনিতে চাচা যেমন মেজাজি মানুষ! সে কি নিরুর কথা রাখবে? কি জানি, রাখতেও পারে কারণ চাচা নিরুকে খুব ভালবাসে মা ছাড়া ডাকে না। বড্ড ভুল হয়ে গেছে, আবার ভাবল বীণা আপা বা অন্তত যূঁইকে কিছু একটা বলে আসলে ভাল হতো। এর বেশি আর কিছু ভাবতে পারে না নিশাত। নানা দুশ্চিন্তা এসে মাথায় ভর করে। মাঝে মাঝে একটু অন্যমনস্ক হলে অরুণ’দা এবং মুকিত ভাইয়ের কাছে ধরা পরে যায় কিন্তু তবুও কখনও নিরুর কথা জানতে বা বুঝতে দেয় না। শুধু ওই জেটিতে নাম লিখা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না। নিরু কি আমার হবে? এই এক প্রশ্ন সারা বেলা অবেলায়। কতবার ভেবেছে একটা চিঠি দেই কিন্তু কোথায় কিভাবে কার ঠিকানায় লিখবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। শুধু ভয় যদি অন্য কারও হাতে পরে তাহলে কি হবে! কত বড় কেলেঙ্কারি হবে! এই ভয়ে কত চিঠি লিখে ছিড়ে ফেলেছে আর সেগুলি হয়ত এখনও বিভিন্ন সাগর জলে ভেসে বেড়াচ্ছে।
[চলবে]

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২০

এ কি, তুমি এখনও মুখ ধোওনি?
না অরুণ’দা ঘুম থেকে উঠেই দেখার জন্য ডেকে চলে গিয়েছিলাম।
আচ্ছা যাও ডিউটির জন্য রেডি হয়ে এসো, একবারে নাস্তা খেয়ে এসো!
আচ্ছা, বলে নিচে চলে এলো।
দুপুর ১২টা নাগাদ নিশাত ব্রিজেই রইল। কখনও বাইনোকুলার চোখে দিয়ে আবার কখনও রাডারের পর্দায় শুধু দেখছিল। প্রায় দুইটার দিকে সউদি রাস্তানুরাহ পাইলট এসে ওদের জেটিতে নিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন, কাস্টম ইত্যাদি ঝামেলা সেরে ছয়টার পরে একটা পিক আপ এসে জাহাজের পাশে দাঁড়াল। পিক আপ থেকে দুই জন লোক নীল রঙের বয়লার স্যুট পড়নে হাতে টুল বক্স নিয়ে জাহাজের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো। টুল বক্স রেখে আবার পিক আপে গিয়ে একটা রাবারের মোটা হোস পাইপ এনে জাহাজের পাইপের মুখের সাথে আগে কানেকশন করে পরে আর এক মাথা জেটির পাইপের সাথে কানেকশন করে দিয়ে চলে গেল। নিশাত ওদের কানেকশন দেয়ার ঢং দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কি দক্ষ এরা! কেমন করে এই টুক সময়ের মধ্যে সেরে ফেলল। পাম্প ম্যান গেট ভাল্ব খুলে দিল। ভাল্ব কতটা খুলছে তা বেশ সুন্দর ভাবে একটা কাঠি দিয়ে দেখা যাচ্ছে, নিশাতকে বুঝিয়ে দিল বিষয়টা। একটু পরে দেখতে পেল একোমডেশন ডেক থেকে ক্যাপ্টেন এদিকে এগিয়ে আসছে, পিছনে তার স্ত্রী। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল
লোডিং শুরু হয়েছে?
না এখন হয়নি, এই মাত্র কানেকশন করে গেল
কখন শুরু করবে কিছু বলেছে?
না।
আচ্ছা ঠিক আছে লোড শুরু হলে আমাকে বলবে।
আচ্ছা বলব।
ওরা ডেকের উপরে একোমডেশন ডেক থেকে মেইন ডেকের উপর দিয়ে ফোর ক্যাসেলে যাবার কাঠের ব্রিজ দিয়ে কিছুক্ষণ হাটা হাটি করে চলে গেল।
জাহাজের পাম্প ম্যান গেট ভাল্ব খুলে অপেক্ষা করছে কখন লোডিং শুরু করবে। মুকিত ভাই ডেকে গিয়ে আবার সব ট্যাঙ্ক, কানেকশন, ভাল্ব সব দেখে ডেকের উপরেই হাটা হাটি করছে সাথে নিশাত সব কিছু দেখছে। অরুণ’দা এসে বলল
মুকিত যাও রেস্ট নাও, ও ভালো কথা লোডিং এর ব্যাপারে কিছু বলেছে?
না, ওরা এসে শুধু পাইপ কানেকশন করে গেছে, কখন স্টার্ট করবে তা কিছু বলে নাই।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও, আমি দেখছি।
ওহ ভালো কথা, অরুণ’দা নিশাতকে একটু দেখিয়ে দিবেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ যাও সে আর তোমাকে বলতে হবে না।

মুকিত চলে গেল। ডেকে আর দুই জন জিপি ডিউটি করছিল, শাহিন এবং জয়নুল। অরুণ শাহিনকে ডেকে নিশাতকে নিয়ে শুধু ব্রিজ বাদে জাহাজের আগা গোরা সব কিছু দেখিয়ে আনতে বলে দিল। শাহিন নিশাতকে নিয়ে প্রথমে জাহাজের ফোর ক্যাসেলে (জাহাজের সামনের ভাগ, যেখান থেকে নোঙ্গর ফেলা হয়, তোলা হয় এবং জাহাজ সামনের দিকে বাধা হয়) সেখানে নিয়ে গেল। এখানে কোন জিনিসের, কোন অংশের কি নাম কি কাজ এসব দেখিয়ে নিয়ে এলো ফোর ক্যাসেলের নিচে। এখানে নোঙ্গরের চেইন কোথায় থাকে, রঙ ব্রাশের স্টোর, আরও যা যা থাকে সব দেখিয়ে নিয়ে গেল পিছনের ডেকে। ওখানে কি ভাবে জাহাজ বাধা হয় ছাড়া হয় সব কিছু দেখিয়ে দিল। গ্যালিতে গিয়ে দুই জনে চা খেতে খেতে কিছু গল্প করে আবার ডেকে নিয়ে গেল।
কি নিশাত দেখেছ?
হ্যাঁ দেখলাম।
এই মহসিন ওকে ডেকের পাইপ লাইন গুলি বুঝিয়ে দাও, বলেই আবার বলল না ঠিক আছে তুমি থাক নিশাত আমার সাথে এসো।
এখানে জাহাজের কয়টা ট্যাঙ্ক, বিভিন্ন রঙ দিয়ে আলাদা করা পাইপ লাইন তার সাথের ভাল্ব, মেইন গেট, কোন লাইনের তেল কোন ট্যাঙ্কে যায় কি ভাবে লাইন ব্যবস্থা করতে হয়, তেলের প্রেশার মিটার, টেম্পারেচার দেখার থার্মো মিটার সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে বলল,
ব্যাস আজ এই পর্যন্তই থাকুক না হলে সব গুলিয়ে ফেলবে, আস্তে আস্তে সব দেখে শুনে বুঝে নিবে, যার কাছে যখন যে সুযোগ পাও দেখবে।
আচ্ছা অরুণ’দা। আপনারা যে ভাবে যা বলবেন সে ভাবেই করবো, ভুল ভ্রান্তি হলে বলবেন। আমি কি ভয়ে ভয়ে এসেছি জানেন, শুধু ভেবেছি কোথায় যাচ্ছি, কারা কারা থাকবে, কাদের সাথে চলতে হবে। ভাবতে পারিনি যে এখানে এসে সব বাঙ্গালি পাব।

একটা কার এসে জাহাজের পাশে জেটিতে দাঁড়াল। এক লোক হাতে ওয়াকি টকি নিয়ে নেমে পাশে এসে জিজ্ঞ্যেস করল
তোমরা কি লোডের জন্য রেডি?
হ্যাঁ আমরা কখন থেকে বসে আছি।
আচ্ছা, তাহলে লোড স্টার্ট করতে বলব?
হ্যাঁ বল, কত স্পীডে আসবে জান?
২৫০ টন।
আচ্ছা ঠিক আছে।
জেটির পাশে দাঁড়ান লোকটা ওয়াকি টকি দিয়ে কাকে বলল ‘স্টার্ট’
একটু পরে পাইপ লাইন দিয়ে ছিট মিট ,পট পট শব্দ করে তেল আসা শুরু হলো। প্রথমে পিছন দিকের ট্যাঙ্কে নিচ্ছে, ওখানে কিছু নিয়ে পরে অন্যান্য গুলিতে নিবে। অরুণ’দা পিছনের ট্যাঙ্কের মুখের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তার সাথে পাম্প ম্যানও আছে। নিশাত কৌতূহল নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ট্যাঙ্কের নীচে তাকিয়ে আছে। কি ভাবে তেল আসে তাই দেখার জন্য। একটু পরেই ট্যাঙ্কে তেল আসা শুরু হলো। অরুণ’দা আর পাম্প ম্যান ঘুরে ঘুরে সব ভাল্ব, জয়েন্ট চেক করে দেখে নিলো কোথাও লিক হচ্ছে কি না। এবার ঘড়ি দেখে হিসেব করে বলল বিশ ঘণ্টা লাগবে। মানে কাল দুপুর তিনটা বেজে যাবে। আর আমরা সেইল করতে পারব ধর আরও ঘণ্টা খানিক পর। ঠিক আছে চলুক, আমি ভিতর থেকে আসি। চল, যাবে আমার সাথে চা খেয়ে আসি!
হ্যাঁ খেতে পারি অবশ্য আমি এত চা কখনো খাইনি,
কি যে বল, জাহাজে চাকরী করতে এসেছ এখন দেখবে আগের অভ্যাস অনেক বদলে যাবে।

চা খেয়ে এসে নিশাত এবার একটু একা একা জাহাজের ডেকের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখছে। তখন ভাটায় পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। যখন এখানে এসেছিল তখন জোয়ার ছিল বলে জাহাজের ডেক জেটির বেশ উপরে ছিল। এখন পানি নিচে নেমে গেছে বলে জাহাজের ডেক জেটির লেভেলে চলে এসেছে। জেটির নিচে চোখ পরতেই দেখল জেটির পাইল এবং বিমে নানা ভাষায় নানা রঙ দিয়ে অনেক কিছু লেখা তার কোনটা সে পড়তে পারলো তবে বেশির ভাগই ভিন্ন ভাষা বলে সেগুলি পড়তে পারলো না। প্রায় লেখা গুলির মাঝে যোগ চিহ্ন দিয়ে এ পাশে ও পাশে কারো নাম লেখা, যা পড়তে পেরেছে তার মধ্যেও এই রকম আবার যা পড়তে পারেনি তাতেও এমন অনেক লেখা। কেউ কেউ আবার বিদঘুটে কিছু ছবিও একে গেছে, কেউ আবার জাহাজের নাম লিখে রেখে গেছে, কবে কে এসেছিল তারিখ লিখে তার নিজের নাম, জাহাজের নাম লিখেছে। নিশাত ভাবল তা হলে সেও পারে এমন করে তার নাম লিখে দিতে। না আমার নাম না নিরুর নাম লিখি, না তাইবা কেন নিরু কি একা? ওর সাথে যে আমিও জড়িয়ে আছি! নিশাত কি পারে না এমন করে একটা যোগ চিহ্ন দিয়ে ওর আর নিরুর নাম লিখে দিতে? না, এখানে নতুন এসেছে, সবার সাথে তেমন কোন ঘনিষ্ঠতা হয়নি এরা দেখলেই বা কি ভাববে? একটা ভ্যাবাচ্যাকার মধ্যে পরে গেল। কি করবে। না লিখেই ফেলি। এই লেখার সূত্র ধরে যদি কোন দিন নিরু আমার হয়ে যায় তা হলে মন্দ কি?
শাহিন ভাই, আপনাদের বোসন্স স্টোরে একটু যাব?
কেন?
আমার একটু রঙ আর ব্রাশ লাগবে।
এখন রঙ ব্রাশ দিয়ে কি করবেন?
কাজ আছে, দেন না একটু
আচ্ছা চলেন দেখিয়ে দিচ্ছি।

স্টোরে ঢুকে রঙ আর একটা ব্রাশ নিয়ে এসে একটা সুবিধা মত জায়গা খুঁজতে লাগল কোথায় লেখা যায়। এমন জায়গায় লিখতে হবে যেন সবার চোখে পড়ে অথচ জেটি মেইনটেনেন্স এর সময় মুছে না যায়। সব জায়গাই ভর্তি। খুঁজতে খুঁজতে একটু খালি জায়গা পেয়ে নাম লেখা শুরু করল। বাংলায় লিখবে না ইংরেজিতে এ আবার আর সমস্যা। ইংরেজিতেই লেখি পৃথিবীর সবাই পড়তে পারবে। নিশাত লিখছে ওর পিছনে শাহিন দেখছে।
লেখা শেষ হলে শাহিন জিজ্ঞেস করল
কি ভাই কার নাম লিখলেন?
দেখছেন তো।
তা দেখছি কিন্তু এ কে?
কি জানি তা জানি না।
ও বুঝেছি
একটু পরে অরুণ’দা এসে বলল
কি নিশাত ওখানে কি করছ?
কাছে এসে সদ্য লেখা এক মেয়ের নাম দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ?
না ডুবে আর খাচ্ছি কোথায়, প্রকাশ্য দিবা লোকেই তো লিখলাম।
হুম তুমি তো বেশ চালাক দেখছি, তা কার নাম লিখলে?
দেখতেই তো পাচ্ছেন।
তা তো পাচ্ছি, কিন্তু এ কে?
জানি না।
ও বুঝেছি। আচ্ছা ঠিক আছে জাহাজ ছাড়তে দাও দেখি।
জাহাজ ছেড়ে দিলে আর দেখবেন কি ভাবে, তার চেয়ে এখনি দেখে নিন, জাহাজ চলে গেলে কিন্তু দেখতে পারবেন না।
কেন?
বা রে, আমি কি জেটিটা সাথে নিয়ে যাব না কি?
ওরে বাব্বা এত দূর! তুমি দেখি সাঙ্ঘাতিক হাবু ডুবু খাচ্ছ! আচ্ছা আচ্ছা তা হলে এই ব্যাপার? তা এই সৌভাগ্যবতীটি কে?
না দাদা প্লিজ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। যা দেখেছেন ওই পর্যন্তই থাক।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যদি বলতে না চাও তা হলে জিজ্ঞেস করবো না। তবে কাজটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না।
নিশাত হেসে দিল।
এই সব নানা হাসি তামাশার মধ্যে জাহাজের লোডিং চলছে এর মধ্যে ওদের ডিউটির সময় শেষ হয়ে এলো। মুকিত ভাই এসে হাজির। কোন ট্যাঙ্কে কতটা লোড হয়েছে তা সব কিছু মুকিত ভাইকে বুঝিয়ে দিয়ে অরুণ বলল
চল নিশাত আমাদের ছুটি। কিছু খাবে, ক্ষুধা লেগেছে?
হ্যাঁ একটু মনে হচ্ছে, বিকেলে রাতের খাবার খাইনি কখনও, তাই অভ্যাস হতে সময় নিচ্ছে।
আচ্ছা চল তাহলে গ্যালিতে যাই দেখি কি আছে।
[চলবে]

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-১৯

কি ব্যাপার নিশাত ভাই খেতে এসেছেন? জাহাজের নিয়ম কিন্তু এই ডিউটির সময়ের সাথে খাওয়া, এক দল ডিউটিতে যাবার আগে খেয়ে যায় আবার তার পরে আর এক দল ডিউটি শেষ করে খেয়ে ঘুমাতে যায়।

ঠিক আছে সে না হয় বুঝলাম কিন্তু এই এত তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেলে রাতে ক্ষুধা লাগবে না তখন কি হবে?
কেন এই যে দেখেন এখানে ব্রেড, বাটার, জ্যাম, ডিম, দুধ সব কিছু রয়েছে ব্রিজেও থাকে। ক্ষুধা লাগলে যা ইচ্ছা খেয়ে নিবেন, স্যান্ডউইচ বানিয়ে নিতে পারেন এই যে এই ফ্রিজে টমাটো, শসা, লেটুস সব কিছু আছে কোন নিষেধ নেই, কেউ কিচ্ছু বলবে না।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, খাবার ব্যাপারে জাহাজে যথেষ্ট সাবধানতার সাথে খুব হিসেব করে মেনু তৈরি করে। চিটাগাঙে আর্টিক্যাল সই করেছেন তাতে দেখেননি এক জন মানুষের দৈনিক কি পরিমাণ এবং কোন ধরনের খাবার দিবে তা ওখানে লেখা আছে, দেখবেন এখানে এক খাবার পর পর দুই বার হবে না। প্রতি দিন ভিন্ন ভিন্ন মেনু থাকবে। এটার দায়িত্ব সেকেন্ড অফিসারের। মুকিত ভাই কিছু বলেনি?
না, বলার সময় পেল কোথায়, অন্যান্য কথায় সময় চলে গেল।
দেখবেন আরও অনেক নিয়ম আছে জাহাজে, নেন খেয়ে নেন আপনার আবার ডিউটির সময় হয়ে গেছে।
কি রান্না হয়েছে?
এখন সবজী, মুরগী আর ডাল
আচ্ছা ওই ফিলিপিনোরা কি খাবে? ওরাও কি এই খাবে? তারপর ক্যাপ্টেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওরা?
হ্যাঁ ওরাও এই খাবে, এখানে এমন ভাবে রান্না হয় যা সবাই খেতে পারে তবে ক্যাপ্টেন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য আলাদা রান্না হয়।
আচ্ছা বেশ ভালোই তো এই নিয়ম, দেন দেখি কি দিবেন, তবে এনাম ভাই আমার কাছে এই বিকেল বেলা রাতের খাবার খেতে একটু কেমন অবাক লাগছে।
তা প্রথম প্রথম একটু লাগবেই, পরে অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর অসুবিধা হবে না।
খাবার খেয়ে নিশাত কেবিনে গিয়ে চিটাগাং থেকে দেয়া ডিউটির পোশাক পড়ে ডেকে মুকিত ভাইর কাছে গেল। মুকিত ভাই ওকে দেখে বলল কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি এলে?
তাড়াতাড়িই এলাম দেখি কি হচ্ছে।
বেশ ভালো কথা, হ্যাঁ সব সময় এই ভাবে পাঁচ সাত মিনিট আগে আসবে এতে অফিসাররা তোমাকে সুদৃষ্টিতে দেখবে।

ওদের কথা বলতে বলতে চীফ অফিসার অরুণ এসে হাজির।
কি ব্যাপার নিশাত, বল দেশের খবর কি, তখন একটু কাজ করছিলাম বলে কথা বলতে পারিনি, তোমার শরীরে বাংলাদেশের গন্ধ পাচ্ছি।
না, অরুণ’দা বাংলা দেশের গন্ধ দুবাইতে দামী হোটেলের দামী সাবান দিয়ে গোছল করে ধুয়ে ফেলেছি।
আরে ধুর কি বল! আমি এখনও গন্ধ পাচ্ছি, সাবান দিয়ে কি দেশের গন্ধ ধোয়া যায়? আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশটা বুঝি এসে পরেছে। তা বল দেখি কোন কোন ঘাট ধরে এসেছ?
নিশাত এক এক করে বলছে আর মুকিত, অরুণ ডেকের আর দুই জন শাহিন এবং জয়নুল এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।
একটু পরে কথা শেষ করে মুকিত বলল তাহলে অরুণ’দা আমি যাই? মুকিত ভাই চলে যাবার পর নিশাত অরুণ’দার সাথে ব্রিজে ঢুকল। অরুণ’দা প্রথমেই সব কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, ব্রিজ দেখেই নিশাতের খুব ভালো লেগে গেল। মন দিয়ে সব শুনছে। প্রাথমিক ভাবে দেখে যা বোঝা যায় এক নজরে দেখে নিয়েছে। রাডার, স্টিয়ারিং হুইল, কম্পাস, জাইরো কম্পাস, হেল্মস ইন্ডিকেটর, ইঞ্জিন রুম টেলিগ্রাম, ব্যারো মিটার, হাইগ্রো মিটার, ট্রিমিং ইন্ডিকেটর, ইকো সাউন্ডার, স্যাটালাইট ন্যাভিগেটর, ডেকা ন্যাভিগেটর আরও কত কি!
অরুণ’দা ব্রিজের টেবিলের পাশে কফি বার থেকে কফি বানিয়ে কাপ হাতে নিয়ে এলো চার্ট টেবিলের কাছে। অরুণ’দা চার্ট টেবিলে একটা ম্যাপের মত মেলে কি যেন করছে
ভূগোল, ম্যাপ কেমন বুঝ?
একে বারে খারাপ না, ভূগোল আমার প্রিয় সাবজেক্ট,
তাই নাকি! বেশ ভালো হয়েছে, তাহলে ম্যাপ বুঝতে তোমার সুবিধা হবে।
টেবিলের উপর একটা ম্যাপের মত বিছানো রয়েছে। তার পাশে কাটা কম্পাস, দুইটা বড় স্কেলের মত এক সাথে জোড়া লাগান রয়েছে এগুলি দেখিয়ে আবার বলল
দেখ তো এগুলি চিনতে পার কি না?
হ্যাঁ এটা একটা ম্যাপ বুঝতে পারছি এই যে এই হচ্ছে সাগর, আর এই যে আমরা যেখান থেকে এসেছি সেই এলাকা, এই হচ্ছে ল্যাটিচুড মার্ক আর এটা লঙ্গিচুড, আর এই পেন্সিলের লাইনটা মনে হচ্ছে আমাদের রাস্তা, তাই না?
বাহ বেশ!, তুমি তো অনেক জান দেখছি!
তবে এই স্কেলটা এমন কেন?
এটাকে প্যারালাল রোলার বলে, দেখ এটা দিয়ে কি করি
এবার চার্ট টেবিলের পাশে উপরে দেয়ালের সাথে লাগান ডেকা ন্যাভিগেটর কেমন যেন একটা ক্লিক ক্লিক শব্দ করছিল ওটায় কি রিডিং দেখে রোলার দিয়ে মেপে চার্টে একটা দাগ দিয়ে বলল
এই যে আমরা এখানে আছি এখন
ও বুঝেছি এর নাম নেভিগেশন?
হ্যাঁ।

কফি শেষ হয়ে গেছে কাপ ধুয়ে রেখে দিল। রাডার দেখে বলল
আচ্ছা এই যে সাদা দাগ দেখা যাচ্ছে এগুলি কি?
ওগুলি জাহাজ বা অন্য কিছু হতে পারে, সে তুমি লক্ষ্য করে দেখবে এই দাগ মুভ করছে কি না, যদি মুভ করে তা হলে বুঝবে এটা জাহাজ, আর যদি মুভ না করে স্থির থাকে তা হলে বুঝবে ওটা সাগরের কোন বয়া বা কোন স্থির কিছু হবে, ওয়েল রিগও হতে পারে, দেখ আমাদের পিছনে এই স্থল ভাগ কেমন দেখাচ্ছে, আর সাগরের পানি কেমন দেখাচ্ছে। এখানে এই যে এই রাডার এটার রেঞ্জ আরও বেশি। এই ইংলিশ চ্যানেলে আমরা এটা চালাই না। এখানে এই ৫০ মাইল রেঞ্জ যথেষ্ট। আর একটু কফি খাবে?
না আর না আপনি খেলে খান আমি বানিয়ে দিই?
না না আমিই বানিয়ে নিচ্ছি
কি শাহিন তুমি খাবে?
না দাদা।
ওকে আজ এই পর্যন্তই, তুমি স্টিয়ারিং করতে পারবে?
চেষ্টা করে দেখি
শাহিন ওকে একটু দাও তো।
শাহিন স্টিয়ারিং হুইল ছেড়ে টুল থেকে নেমে এলো, নিশাত ওখানে বসে স্টিয়ারিং হাতে নিলো।
শাহিন বলে দিল এটা হচ্ছে হেল্মস ইন্ডিকেটর মানে আপনার স্টিয়ারিং সোজা আছে না কোন দিকে ঘুরছে তা বুঝতে পারবেন আর এই হচ্ছে আপনার কম্পাস। দেখেন আমাদের জাহাজের হেড এখন কত ডিগ্রিতে আছে দেখছেন?
হ্যাঁ দেখলাম,
তাহলে ঠিক এই কোর্সে রেখে চালান।
নিশাত স্টিয়ারিং করছে। অরুণ ব্রিজের বাইরে বের হয়ে পিছনে দেখে এসে বলল তোমার স্টিয়ারিং ঠিক হচ্ছে না।
কি ভাবে বুঝলেন?
কি ভাবে বুঝলাম দেখবে এসো আমার সাথে।
ব্রিজের বাইরে এসে পিছনে প্রপেলারের ঘূর্ণির ফলে পানিতে ফেনা উঠেছে সেদিকে দেখিয়ে বলল
দেখ কেমন জিগ জাগ দেখাচ্ছে না? কারেক্ট স্টিয়ারিং হলে এই লাইনটা সোজা হবে। এই দেখে মিটার না দেখে যে কেউ বলতে পারবে স্টিয়ারিং কেমন হচ্ছে। তবে সে যা হোক তুমি যে সাহস করে হাতে নিয়েছ এতেই আমি খুশি, আস্তে আস্তে শিখে নিও।
দাদা ফরিদা কোথায় আছে একটু দেখবেন?
হ্যাঁ দেখছি,
ফরিদাকে ডেকে পেল না।
আমার মনে হয় ওরা ইউরোপে নেই। কেন, ফরিদাকে কেন?
আমার সাথে আমার এক বন্ধু এসেছে ওকে ফরিদায় দিয়েছে তাই জানতে চাচ্ছিলাম ওরা কোথায় আছে
ও আচ্ছা! তোমার বন্ধু কে?
হাবিব!
হাবিব?
আমি আর হাবিব এক সাথে এসেছি, আমরা এক সাথে একই কলেজে পড়া শুনা করেছি এবং আমাদের বাড়িও এক জায়গায়।
ও, তাই নাকি?

১১।
আজ নিশাত ঘুম থেকে উঠেই লক্ষ করল জাহাজের ইঞ্জিন চলছে না থেমে আছে। কি ব্যাপার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে জাহাজ চলছে না এবং কোন রোলিং হচ্ছে না, নোঙর করে রয়েছে। কাছা কাছি আরও অনেক জাহাজ এমনি নোঙ্গরে রয়েছে। সউদি আরবের সবুজ সাদা পতাকা উড়ছে। কেবিন থেকে বের হয়ে ওই ডেক থেকে নেমে মেইন ডেকে এসে বাইরে দেখে এটা এক নতুন দেশ। সুয়েজ খালের পাশে যেমন দেখেছে অনেকটা ওই রকম। সামনে একটা ডকইয়ার্ড দেখা যাচ্ছে আশে পাশে বেশ কয়েকটা বিশাল বিশাল জাহাজ নোঙ্গর করে আছে। ওইতো দূরে কিনারা দেখা যাচ্ছ। একটু একটু ওগুলি কি মাটির ঘর, না কী ওগুলি? সুয়েজের দুই পাড়ে আরব দেশগুলিতে এমন দেখেছে। অন্যান্য সমুদ্র বন্দর যেমন হয় ছোট ছোট অনেক বোট এবং পালের বোট এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে। ওইতো সমুদ্রের মাঝখানে জেটি দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলি জাহাজ ভিড়ে রয়েছে। মনে হয় সবগুলি ট্যাংকার হবে, একটারও মাস্তুল বা ক্রেন নেই। নিশাত অবাক হয়ে শুধু দেখছে। নাস্তা খাবার কথা ভুলে গেছে। মিডল ইস্টের প্রচণ্ড গরমেও ওর খেয়াল নেই। লন্ডন থেকে এখানে আসার পথে এ পর্যন্ত কতগুলি দেশ এবং সাগর দেখে নিয়েছে। মনে মনে শুধু ভাবছে, এ কোথায় এসেছি! কত কি দেখছি! কি আনন্দের চাকরী! তন্ময় হয়ে যখন দেখছে আর ভাবছে তখন ব্রিজ থেকে অরুণ’দা ডাকল ‘এই নিশাত ওখানে কি করছ?’ নিশাতের সম্বিত ফিরে এলো। পিছনে ফিরে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল অরুণ’দা ডাকছে! দেখছি অরুণ’দা! কাপড় বদলে ব্রিজে চলে আস!
আচ্ছা আসছি!
[চলবে]

ভালোবাসা……..

ভালোবাসা সে তো নদীর স্রোতের মতো আবহমান ধারা,
সীমাহীন নীল আকাশের মতো বিস্তৃন আবার কখনো
শ্রাবনের মেঘলা আকাশ……..
ভালোবাসা সে তো বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে রবীন্দ্রনাথের গান,
ভোরের বেলা শিশিরের বিন্দু মেশানো শিউলী ফুলের একটি মালা…….
ভালোবাসা সে তো সন্ধ্যা তারার কাছ থেকে নেয়া,
রুপালী অক্ষরে তোমায় লেখা একটি চিঠি…….
তোমায় এতো ভালোবাসি বলেই আকাশ ও প্রকৃতি জুড়ে চলছে এতো আয়োজন…….
দুর থেকে মনে হয় আর একটু কাছে গেলেই ছোঁয়া যাবে,
অথচ যতোই কাছে যেতে চাই ততোই যেনো আরো দুরে সরে যাই……..