বিভাগের আর্কাইভঃ ইতিহাস-ঐতিহ্য

মুক্তিযুদ্ধের কথা– বিজয় দিবসের কথা

বছরের শুরুতেই অনেক নতুন নতুন ক্যালেন্ডার বাজারে বিক্রি হয়। নানান রঙের, নানান কোম্পানির। নানান ব্যাংকের, নানান ইন্স্যুরেন্সের ক্যালেন্ডার। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসের পরও কতগুলো মাস গত হয়ে যখন নভেম্বরের শেষে ডিসেম্বরের আগমন ঘটে, তখনই বাংলাদেশের বাঙালিদের মনে বাজতে থাকে মহান বিজয় দিবসের গান। আর ক’দিন পরেই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ’র এই দিনটির (১৬ই ডিসেম্বর) জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজে। তাই এই বিশেষ দিনটিকে আমি গভীরভাবে স্মরণ করি। যদি পারি কিছু লিখে সবার মাঝে শেয়ারও করি। সে-সময়কার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির কিছু স্মৃতি রোমন্থন করে রাখি। তাই এই ২০১৯ইং বর্ষের বিজয়ের মাসে আসন্ন ১৬ই ডিসেম্বরকে সামনে রেখে স্বনামধন্য দিনলিপি শব্দনীড় ব্লগেও কিছু লিখে রাখলাম। যাতে আগামীতে এই লেখা আমার জীবনের একটি ডায়েরি হয়ে থাকে। আশা করি সবাই সাথে থাকবেন।

বর্তমানে আমরা সবাই জানি ইংরেজি বর্ষের ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা দিবস। যা এখন সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এরপরই আসে অগ্নি ঝরা মার্চমাস। এই মার্চ মাসেই শুরু হয় বাঙালির মুক্তির জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের মাধ্যমেই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে আমাদের জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণে বজ্র কণ্ঠে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

জনসভায় লাখো বাঙালি এই ঘোষণার অপেক্ষাই বাঙালি জাতি করছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তুললো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাষণে দিক নির্দেশনা পেয়ে সবাই প্রস্তুত হতে শুরু করে। শহর থেকে সাধারণ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হতে লাগলো। বড়সড় নেতা কর্মীরা মফস্বল ও গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করতে শুরু করল। আর পশ্চিমা শাসকেরা গোলাবারুদ সৈন্যসামন্ত পূর্ব-পাকিস্তানে এনে বাঙালি নিধনের নীল নকশা তৈরি করতে লাগল। তারপরও চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে মিছিল, মিটিং। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার চালায় গুলি, ধরপাকড়, লাঠিচার্জ, গ্রেফতার।

তারপরও ক্ষিপ্ত বাঙালি কিছুতেই থামছে না। আন্দোলন চলছেই। এরমধ্যেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তথা কথিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে একেবারে স্তব্ধ করে দেওয়া। তখন ঘড়ির কাটা মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের স্বাধীনতা ২৬ মার্চ। তারপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মেজর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তখন স্বাধীনতাকামী মানুষের মাঝে উৎসাহ জোগায়। এমনিভাবে আগুনঝরা মার্চে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। এই মুক্তিযুদ্ধ চলে দীর্ঘ ৯মাস। অর্থাৎ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে হয় বিজয়ের শুভসূচনা। মানে গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস।

আমি তখন ৮ বছরের নাবালক এক শিশু। তখন আমার বাবা চাকরি করতেন নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড় চিত্তরঞ্জন কটন মিলে। আর বড়দাদা চাকরি করতেন শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড় আদর্শ কটন মিলে (বর্তমান সোহাগপুর টেক্সটাইল)। ঐ ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ের সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই জনসভায় লাখো মানুষের মধ্যে আমার বাবাও একজন ছিলেন। সেদিন ঢাকার আশ-পাশের সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। শুনেছিলাম বাবার মুখে। তখনকার সময়ে এই মার্চ মাস থেকেই আমরা হয়ে পড়ি বিপদগ্রস্ত। বাবার মিল বন্ধ, চাকরি নেই। বড়দা শরণার্থী হয়ে ভারতে অবস্থান। আমার মা-সহ তিন বোন থাকতাম নোয়াখালী বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে মাহাতাবপুর গ্রামের বাড়িতে। আমাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তখন কষ্টের আর শেষ ছিল না। আমাদের সংসারই চলতো বাবা বড়দা’র চাকরির বেতনে। তখন এই বঙ্গদেশে টাকার যেমন দাম ছিল। আবার চলছে যুদ্ধ! যুদ্ধের কারণে কেউ কাউকে টাকা-পয়সা ধারকর্জও দিত না। তাই কোনদিন দুপুরে খেতাম, রাতে না খেয়ে রাত কাটাতাম। আবার কোনদিন সকালে খেতাম দুপুরে না খেয়ে থাকতাম। কিছুদিন এভাবেই চলছিল আমাদের দিনগুলো।

তাই প্রতিবছর মার্চ মাসের আগমনেই ঐসব অতীত হয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় বাবার কথা। রাজাকারদের হাতে প্রাণ হারানো এক মামার কথা। কানে বাজে মেশিনগান আর এলমজির গুলির শব্দের আওয়াজ। চোখে ভাসে হাট-বাজারে লাগানো আগুনের ধোঁয়া। তখন ছিলাম চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র। বাবা নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসে। সময়টা তখন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি। যুদ্ধের কারণে মিল বন্ধ। বাবার পকেট খালি। মিল এলাকার স্থানীয় সহকর্মীদের কাছ থেকে ২০ টাকা কর্জ করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। অনেক কষ্ট করে খালি হাত পা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসে। বাবা বাড়িতে এসে জেঠা জেঠিমা আর মায়ের কাছে সব কথা বললেন। আমরা সবাই শুনলাম। কিন্তু বাড়িতে এসেও বাবা নিরুপায়! হাতে টাকা-পয়সা নেই। সংসারে খাবার নেই। কোথাও কোনও দিনমজুরের কাজও নেই। এদিকে বড়দা’রও খবর নেই। মা হয়ে গেলেন পাগলের মতো।

তখন এই দেশে টাকার খুবই অভাব ছিলো। তখন জিনিসের দামও যেমন সস্তা ছিল, টাকার দামও অনেক ছিলো। সংসারে খানেওয়ালা ছিলাম ৫জন। বাবার পকেট শূন্য। মায়ের শেষ সম্বল একজোড়া কানের দুল ছিলো। সেই কানের দুল বন্দক রেখে কিছু টাকা সংগ্রহ করতে চাইল। কিন্তু না, তা আর হলো না। যুদ্ধের সময় মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেখানে জরুরি, সেখানে সোনার জিনিস দিয়ে কী হবে? তার আর মায়ের কানের দুল রেখে টাকা জোগাড় করা হলো না। শেষ সম্বল বাড়ির দলিল। একজন সম্মানিত মুসলমান ব্যক্তির কাছে বাড়ির দলিল রেখে কিছু টাকা কর্জ করা হলো। ঐ টাকা থেকে ৫০ টাকার ধান কিনে বাবা মুড়ির ব্যবসা শুরু করে। গ্রামের আরও অনেকেই মুড়ির ব্যবসা করতো। একদিন বাবার সাথে মুড়ি নিয়ে নিকটস্থ একটা বাজারে যাই। বাজারটির নাম আমিষাড়া বাজার। বজরা রেলস্টেশন থেকে ৩ মাইল পশ্চিমে এই আমিষাড়া বাজার অবস্থিত।

সকাল দশটার মতো বাজে। বাবা বিক্রি করার জন্য মুড়ির বস্তা বাজারে রাখলো। এমন সময় হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। পাকবাহিনী বাজারে হানা দিয়েছে। রাস্তার ধারে কয়েকটা দোকানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই বাজারের মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে দিলো। বাজারটিতে একেক পণ্যের একেক সাইট ছিলো। বাবার সাথে মুড়ি বিক্রেতা আরও অনেকেই ছিলো। সবাই সবার মুড়ি বস্তা নিয়ে পালাতে শুরু করে দিলো। বাবা আর পালাতে পারছে না, মুড়ির বস্তাটার জন্য। হুড়াহুড়ির কারণে মুড়ির বস্তাটা কেউ আর বাবার মাথায় উঠিয়ে দিচ্ছে না। বাপ-ছেলে দুইজনেই মুড়ির বস্তাটা নিয়ে অনেক পারাপারি করলাম। কিন্তু মুড়ির বস্তাটা বাবার মাথায় আর উঠিয়ে দিতে পারলাম না। তখন বস্তাটা ধরেই বাবা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। মনের ভেতরে ভয়, শুধুই ভয়।

পাকবাহিনীরা গুলি করে মানুষকে মেরে ফেলে, তাই এতো ভয়। বাবা এক হাতে বস্তা আরেক হাতে আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক কষ্টের মুড়ির চালান। সেজন্য বাবা মুড়ির বস্তা রেখেও পালাতে পারছে না। এরমধ্যে পুরো বাজার জনশূন্য হয়ে গেল। সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলো। বাজারের কয়েকটা দোকানে লাগানো আগুনের তাপ শরীরে লাগতে শুরু করলো। চারজন পাকবাহিনী বাবার সামনে এসেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে বাবাকে আঘাত করলো। বাবা মুড়ির বস্তা ছেড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। বাবাকে বললো কলেমা বাতাও। বাবা কলেমা বলতে পারল না। বাবা কাঁপছে আর কাঁদছে। পাকবাহিনী আমার দিকে বড়বড় চোখ করে কয়েকবার তাকালো। আমি বাবাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। তাঁদের দয়া হলো। তারা আর আমাদের কিছুই বললো না, সোজা বাজারের দিকে চলে গেল। বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি আমার কান্নাতে হয়তো তাদের মায়া লেগেছিল। তাই তারা আমাদের কিছু না বলে সোজা বাজারের ভেতরে চলে গেল। এর কিছুক্ষণ পরই পাকবাহিনী তাদের সাঁজোয়া যান নিয়ে বাজার ত্যাগ করলো। সেদিন আর আমাদের সব মুড়ি বিক্রি হলো না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাবা কয়েক সের মুড়ি বিক্রি করে, কোনরকমে বাবা-সহ বাড়ি চলে আসি।

রাইফেলের আঘাতে বাবা পুরোপুরিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা রাইফেলের বাঁটের আঘাতে, ৬/৭দিন আর বাজারে যেতে পারেনি। তখন আমাদের গ্রামে তেমন কোনও নামিদামি ডাক্তারও ছিল না। পুরো গ্রামে কেবল একজন মাত্র ডাক্তার ছিলো, তাও হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। সেই ডাক্তারের ঔষধ মেশানো জলপড়া খেয়ে ক’দিন পর বাবা সুস্থ হলেন। আবার শুরু করে দিলেন মুড়ি নিয়ে জীবনসংগ্রাম। খবর পেলাম বড়দাদা শরণার্থী হয়ে ভারত ভ্রমণে। বড়দাদার জন্য মায়ের কান্নাকাটিতে বাতাস ভারী হতে লাগলো। কিন্তু বড়দাদা ফিরে আসার কোনও খবরও নেই। সেসময়ে এই বঙ্গদেশে মোবাইলের আগমন হয়নি। যা-ই সংবাদ পেতো, তা শুধু রেডিওর সংবাদ। আর চিঠির মাধ্যমে। কিন্তু চিঠি দিবে কে, আর পাবেই বা কে? পোস্ট অফিসও বন্ধ। ট্রেন বন্ধ, ব্যাংক বন্ধ, লঞ্চ-স্টিমার সবই বন্ধ। তাই আর বড়দা’র খবর আমরা কেউ জানতাম না। শুধু জানা যেত পাকবাহিনীরা কোথায় কোন বাজারে আগুন লাগিয়েছে, ক’জন মেরেছে এই খবর। আমরা থাকতাম ভয়ে ভয়ে! ভয় শুধু কখন যেন পাকবাহিনীরা গ্রামে ঢুকে পড়ে, সেই ভয়েই বেশি অস্থির হয়ে থাকতাম। অবশ্য পাকবাহিনীরা তাঁদের গাড়ি নিয়ে আমাদের ঢুকতে পারবে না। গাড়ি নিয়ে গ্রামে আসার মতো রাস্তা ছিল না। তবুও ছিল ভয়!

আমাদের বাড়িটা ছিল বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে। বজরা পাকা সড়ক থেকে আমাদের গ্রামে আসার জন্য কোনও পাকা রাস্তা ছিল না। ছিলো সরু একটা মাটির রাস্তা। সেসময় ওই মাটির রাস্তা দিয়ে দু’একটা গরুর গাড়ি আসা-যাওয়া করতো। তাই পুরো যুদ্ধের সময়ও পাকবাহিনী আমাদের গ্রামে আসতে পারেনি। যা কিছু টুকিটাকি অত্যাচার-অবিচার করেছে, তা কেবল পার্শ্ববর্তী গ্রামের রাজাকাররা করেছে। মাহাতাবপুর গ্রামে ছিলো হিন্দু জনবসতি। পুরো গ্রামে মুসলমান বাড়ি ছিল মাত্র দুটি, তাও খরিদ সূত্রে তাঁরা মালিক ছিল। সারাদেশে যখন মুক্তিবাহিনীর জয়জয়কার। তখন মে মাস ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ। আমাদের বাড়িটি ছিল গ্রামে প্রবেশদ্বারের প্রথম বাড়ি। আমাদের বাড়ির পরেই পার্শ্ববর্তী গ্রাম ‘হিলমুদ’।

হিলমুদ গ্রামের পরেই বজরা বাজার ও রেলস্টেশন। তাই আমাদের বাড়িটা ছিল মুক্তিবাহিনীদের পছন্দের বাড়ি। আমার দুই জেঠা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আমাদের বাড়িতে আসতো। এসেই আমার দুই জেঠার সাথে বসে গল্প করতো। মাঝেমাঝে চা’র আড্ডা হতো। বাড়িতে বানানো মুড়ির মোয়া থাকতো। নারিকেল কোরা সহ মুড়ি তাদের দেওয়া হতো। তারা আনন্দের সাথে খেতো আর জেঠা মহাশয়ের সাথে কথা বলতো। সময় সময় জেঠার সাথে বসে বসে নিজেও তাদের কথা শুনতাম। মা চা বানিয়ে দিতেন, সেই চা তাদের এনে দিতাম। সেসব হৃদয়বান মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কোনদিন ভুলবো না। পাকবাহিনী আর রাজাকার বাহিনীদের ভয়ে অনেক মানুষই গ্রাম ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারত চলে গেছে। আমাদের তেমন টাকা-পয়সা ছিল না বিধায় আমরা নিজ গ্রামেই থেকে যাই।

আমাদের ভরসাই ছিল একমাত্র হৃদয়বান মুক্তিযোদ্ধারা। সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুনজরের কারণে, রাজাকার আর পাকবাহিনীরা গ্রামের একটা বাড়িতেও ক্ষতি করতে পারেনি। এভাবে চলতে চলতে কেটে গেল দীর্ঘ ৮ মাস। সময় তখন নভেম্বর ১৯৭১ সাল। রেডিওর শুধু সংবাদ ছিল বিবিসি, আর আকাশবাণী কোলকাতার বাংলা সংবাদ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপর মায়ের সাথে বড়বাড়িতে গিয়ে রেডিওর খবর শুনতাম। মুক্তিবাহিনীদের কাছেও একটা রেডিও ছিলো। যা দিয়ে তারা খবর শুনতো। তখন চারিদিকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জয়জয়কার। জাগায় জাগায় ঘটতে লাগলো পাকবাহিনীর পরাজয় এর আত্মসমর্পণ। আর পিছু হঠার খবর। সামনেই ডিসেম্বর মাস। পুরো ডিসেম্বর মাসই ছিল সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কুকুর পাগল হলো যেমন এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে মানুষকে কামড়ায়, ঠিক সেই অবস্থাই হয়েছিল পাকবাহিনীদের বেলায়। তারা ঠিক হিংস্র জানোয়ারের মতো হিংসাত্মক হয়ে উঠলো। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষদের গুলি করে মারতে লাগলো।

তাদের মুখে ছিলো শুধু ইদুর কাঁহা (হিন্দু)? মুক্তিবাহিনী কোন আদমি হ্যাঁ? এটাই ছিল তাদের প্রথম জিজ্ঞাসা। হিন্দুদের বেশি খুঁজতো এই কারণে যে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পার্শ্ববর্তী ভারত সহযোগিতা করছিল, তাই। আমাদের বীর বাঙালিরা ভারত গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করার ট্রেনিং নিয়ে আসছে, তাই। তাই পাকবাহিনীদের প্রথম শত্রুই ছিলো ভারত ও হিন্দু। রাস্তাঘাটে পাকবাহিনীরা চেকপোস্ট বসিয়ে মুক্তিবাহিনী আর হিন্দুদের খুঁজতো। যাকেই ধরতো, আগেই জিজ্ঞেস করতো, ‘তুমি হিন্দু না মুসলমান?’ যদি বলতো, আমি মুসলমান। তাহলে আদেশ আসতো, ‘কলমা পড়ে শোনাও।’ কলমা পড়ে শোনানোর পরও বলা হতো, ‘কাপড়া উঠাও।’ কাপড় উঠিয়ে দেখানোর পরই ওরা নিশ্চিত হতো লোকটি হিন্দু না মুসলমান। হিন্দু হলে মরণ অনিবার্য। আর মুসলমান হলেও তবু সন্দেহ থেকেই যেতো।

সন্দেহ শুধু একটাই, তা হলো- সাধারণ মানুষ, না মুক্তিবাহিনী? অনেক সময় সাধারণ মানুষকে মুক্তিবাহিনী সন্দেহ করে মেরেও ফেলেছে ঐ হিংসাত্মক পাকবাহিনী। আবার অনেকসময় একটু স্বাস্থ্যবান মানুষদেরও ধরে নিয়ে মেরে ফেলতো। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশীয় রাজাকারবাহিনীও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু করে দিলো। কার বাড়িতে কয়টা যুবতী মেয়ে আছে, সেসব তালিকা পাকবাহিনীদের কাছে পৌঁছাতে লাগলো। সময় সময় পাকবাহিনীদের মনোরঞ্জনের জন্য, বাড়ি থেকে জোরপূর্বক যুবতী মা-বোনদের তুলে নিয়ে যেতো। এসব দেশীয় আলবদর-রাজাকাররাই পাকবাহিনীদের সবকিছু শিখিয়েছিলো। অচেনা রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিয়েছিলো। হিন্দুদের কিভাবে চেনা যায়, সেটাও শিখিয়েছিল। ডিসেম্বরের আগমনের সাথে সাথে পাকবাহিনী সহ তাদের দোসররাও মানুষ খেকো রাক্ষসের মতন হয়ে উঠলো।

ডিসেম্বরের প্রথম থেকে এভাবে চলতে চলতে একসময় সারাদেশেই পাকবাহিনী পরাজয় বরণ করতে লাগলো। ১৫ ডিসেম্বর দেখেছি, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে রাজাকারদের হাত বেঁধে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে। সেই দৃশ্য দেখার জন্য গ্রামের অনেক মানুষের মধ্যে আমিও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। মা-বাবা বড়দিদিদের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে জয়বাংলা ধ্বনি শুনেছি। গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মুখেও শুনেছি জয়বাংলা বাংলার জয়। যা-ই দেখেছি বা শুনছি, সবকিছুই ১৯৭১ সালের স্মরণীয় মার্চ মাস থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাই প্রতিবছর মার্চমাস আর ডিসেম্বর মাস আসলেই মনে পড়ে সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। বিজয়ের কথা। বিজয় দিবসের কথা।

পিয়ারা নবী

তিমির যুগে ফুটলো আলো
মা আমিনার কোলে।
সবাই তাঁকে বাসতো ভালো
ডাকতো আল আমীন বলে।

বড় হয়ে ব্যবসা করেন
পান খাদিজা মা কে
সুখে দুখে পাশে ছিলেন
অভয় দিতেন তাঁকে।

হেরা গুহায় এবাদতে
রত ছিলেন তিনি।
আদেশ হলো “পড়ো রবের নামে”
সৃষ্টিকতা যিনি।

ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে
সহ্য করেন অশেষ নির্যাতন।
জিহাদ করে প্রতিষ্ঠা করেন
ক্বোরআনের আইন প্রবর্তন।

এই মহাপুরুষ ছিলেন মোদের
মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সঃ।
ছিলেন তিনি সবার সেরা
হাবিবে আল্লাহ।

আমার দেখা নতুন তিন শতাব্দী

সৌভাগ্য আমার নতুন তিন শতাব্দী দেখার সুযোগ হলো।
ভাবিয়ে তোলে যুদ্ধ, গ্রীন হাউস, এইডস আর মারণাস্ত্র গুলো।
হ্যাপি নিউ ইয়ারের নামে উন্মত্ত আচরণ।
উন্নত প্রযুক্তির বিপর্যয় যখন Y2K জীবন।
তবুও কামনা শুভ হোক নব বর্ষ ।
জেগে উঠুক প্রাণে প্রেম প্রীতি হর্ষ।
বিংশ শতাব্দী পার হয়ে এক বিংশ শতাব্দীর পথ ধরে।
যিশুর আদর্শ পৌছে যাক দুঃস্থ অনাথের দ্বারে।

হিজরী সনের গোড়া পত্তন হিযরতের পরে।
আঁধারের যুগ কেটেছে তখন কোরআনের নূরে।
তৌহিদ প্রচার করে গিয়েছেন শত নির্যাতনের মাঝে।
খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন উম্মতের কাছে।
১৪-শ শতাব্দী পার হেয় ১৫-শ শতাব্দীকে ঘিরে।
নবীর শিক্ষা থেকে বিশ্ব বাসী আজ অনেক অনেক দূরে।

বাংলা সনের গোড়া পত্তন সালতানাতের যুগে।
সামন্ত প্রথা মাথা চাড়া দেয় সেই সুযোগে।
করের টাকায় সামন্ত প্রভুরা ছিল বিলাশ ব্যসনে মত্ত।
শৌর্য-বীর্য সব হারিয়ে ভাগ্যের রবি হয়েছে অস্তমিত।
১৪-শ শতাব্দী পার হয়েছে কালের গভীরে।
যোগ বিয়োগের চলছে পালা ইতিহাসের ভিতরে।

খৃষ্টাব্দ মুলত শুরু হয়েছে যিশুর জন্ম লগ্নে।
দু হাত প্রসারিত করেছিলেন জ্বরা জীর্ণ রুগ্নে।
ঈসা মারইয়ামের ব্যাটা আল্লাহর বান্দা নবী।
ইন্জিল কিতাব প্রাপ্ত হয়ে প্রচার করেছেন সবই।
অশান্ত পৃথিবীতে আসবেন তিনি উম্মতে আখেরী।
ইসলামী জাগরণে সঙ্গী হবেন ইমাম মেহেদী।
পাপ পঙ্কিলতা দূর করে করবেন শুচি শুদ্ধ পৃথিবী।
আল্লাহর মহিমা উঠবে গেয়ে আবার সকল সৃষ্টি।

মগজের জট খুলি: মনু ও নূহ (আ.)

মহাভারত ও মৎস্যপুরাণে বৈবস্বত মনু নামে একজন মহর্ষীর উল্লেখ রয়েছে। বাংলা মনুষ্য শব্দটির উৎপত্তি এই মনু শব্দ থেকেই। কেন তা বলছি। বিষ্ণুর দশজন অবতারের মধ্যে মৎস্য অবতার অন্যতম। তিনি মলায়চলের একদেশে গিয়ে বিপুল তপস্যা করেন।

বহু বর্ষ অতীত হলে ব্রহ্মা তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বর প্রদান করতে চাইলেন। প্রণিপাত করে মনু বললেন, ‘হে পিতামহ! আমি আপনার নিকট একটিমাত্র বর ইচ্ছা করি। যখন প্রলয়কাল উপস্থিত হবে, তখন আমি যেন জীবসকলসহ সমগ্র জগতের রক্ষা করতে সমর্থ হই।’ ব্রহ্মা ‘তথাস্তু’ বলে অদৃশ্য হলেন।

কিছুদিন পর ভগবান বিষ্ণু মাছের রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়ে বলেন ‘হে নিষ্পাপ! শুনুন, এখন একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটার সময় উপস্থিত। পাহাড়, বনসহ সমস্ত পৃথিবী অচিরেই জলমগ্ন হবে। আপনি সুদৃঢ় একখানি নৌকা নির্মাণ করাবেন আর সপ্তর্ষীগণসহ যাবতীয় জীবের বীজ নিয়ে ঐ নৌকায় আরোহণ করে আমার জন্য প্রতীক্ষা করবেন।”

এরপর শুরু হোল শতবর্ষব্যাপী প্রবল খরা। দারুণ দাবদাহে পৃথিবী ছাইবর্ণ হয়ে গেল। কোথাও এক ফোটা পানি নেই। এরপর এলো সেই প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ মহাপ্লাবন। বিশ্বচরাচর প্লাবিত হয়ে এক মহাসমুদ্রের রূপ নিল।

শিংবিশিষ্ট মৎস্যরূপে ভগবান বিষ্ণু আসলেন। মনু তাঁর শৃঙ্গে রজ্জু বন্ধন করলেন। তিনি তখন মহাবেগে নৌকাকে টেনে নিয়ে সমুদ্রে বিচরণ করতে লাগলেন। মহাপ্লাবনে সকল মানুষে বিলীন হোয়ে গেল, কেবল সপ্তর্ষিগণ, মনু ও মৎস্যই দৃশ্যমান থাকলেন।

মৎস্য এইভাবে অনেক বৎসর সাগরসলিলে নৌকাসহ বিচরণ করতে লাগলেন। অতঃপর একটি পর্বতের চূড়া দৃশ্যমান হলে মৎস্য সেদিকে নৌকা নিয়ে চললেন। সেখানে নৌকা বাঁধা হল।
.

এরপর মৎস্য নৌকারোহীদের বললেন, ‘হে মহর্ষিগণ! আমি মৎস্যরূপ নিয়ে এই বিপদ থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করলাম। এখন এই বৈবস্বত মনু সকল প্রকার জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করবেন।’ বন্যার পানি কমতে লাগলো। পৃথিবী পুনর্ণিমাণের জন্য মনু ও তাঁর পরিবার পাহাড় থেকে ভূমিতে নেমে এলেন এবং পুনরায় পৃথিবীতে বংশবিস্তারের মাধ্যমে মানব প্রজাতি টিকিয়ে রাখলেন।

নূহ (আ.) এর জীবনের সঙ্গে মৎস্যপুরাণের এই ঘটনাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাম্য দেখা যায়। যেমন:
১। স্রষ্টার নির্দেশে বিরাট নৌকা নির্মাণ।
২। স্রষ্টার পূর্বঘোষিত মহাপ্লাবনে ও বারিবর্ষণে সমগ্র পৃথিবী প্লাবিত হওয়া।
৩। নৌকায় চোড়ে স্রষ্টার সহায়তায় মনু ও ঋষিদের উদ্ধার পাওয়া। উদ্ধারপ্রাপ্তদের সংখ্যা ছিল অতি অল্প।
৪। সকল প্রাণীর প্রজাতি (বীজ) নৌকায় তোলা ও বন্যার পরে আবার সেসব প্রজাতির বিস্তার ঘটানো।
৫। সকল মানুষ ধ্বংস হওয়ার পর কয়েকজন থেকে আবার মানবজাতির বংশবিস্তার ঘটানো।

প্রশ্ন হলো, অধিকাংশ মুসলিম মনে করেন হিন্দু ধর্ম কাল্পনিক। তাহলে কোর’আনের হাজার হাজার বছর আগের এই পুরাণে প্রায় হুবহু ঘটনার বিবরণ কীভাবে ঠাঁই পেল? এই বৈবস্বত মনু আসলে কে?

পৃথিবীর থ্রী ডি

পৃথিবীর গভীর আলিঙ্গনে, পাহাড় দাড়িয়ে শীর উঁচু করা,
পরতে পরতে সাজানো ‍য‍তনে নানা উপাদানে ভরা।
থাকে পানির প্রস্রবন ধরাকে করতে সিক্ত,
থাকে আগ্নেয়গীরি অগ্নুৎপাত লাভা করতে অরন্য রিক্ত।
থাকে গ্যাস পেট্রোল থাকে সোনা দানা,
থাকে কয়লা, হিরা, থাকে জেম, কত কিছ‍ু অজানা।
পাহাড়ের খবর দেয় মুষিক সুড়ঙ্গতে আনা গোনা,
পেরেকের রূপে পৃথিবীর বুকে পোতা এন্টেনা।

পৃথিবীর বুক চিরে সমুদ্র শুয়ে নীল চাদরে ঢেকে,
মোবাইল ডিজাইন চাদরে হরদম নকশা আঁকে।
বিচরন করে মাছ, হাঙ্গর, তিমি আবাস জলজ প্রানীর,
তলায় জন্মে জলজ উদ্ভিদ শৈবাল, ঘেরা মজবুত প্রবাল প্রাচীর।
মানুষেরা শুষে নিচ্ছে তেল-গ্যাস অতুল সম্পদ,
ছেড়ে দিচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য বিনাশে জলজ সম্পদ।
রাতের আলোতে বাহারি চাদর ঝলমল করে,
স্বর্গীয় রূপালী অপ্সরীরা ডিসপ্লে শো করে।

পৃথিবীর কো‍লে রূক্ষ মেজাজে ছড়িয়ে মরূভূমি,
উদয়‍াস্ত সূর্য গভীর মমতায় দিয়ে যায় চুমি।
মায়া মরিচিকা কুহেলিকা যতো বদনাম,
তার মাঝে আছে খর্জুর বৃক্ষ আছে মরুদ্যান।
আছে ‘উট’ মরূ-জাহাজ পথ হারাকে বইতে,
আছে ‘ভেক’ সচ্ছ সলিলে পথ হারার তেষ্টা মেটাতে।
মরূর বুকে আছে তেল-গ্যাস আছে সোনার খনি,
তপ্ত মরূতেই নাজিল হয়েছে পৃথিবী রহস্যের বানী।

কারবালার আদর্শ

কারবালার নাম করে কেঁদে হবে কি
শহীদের আদশ পালন হয়েছে কি?
মাথানত করেনিতো হোসাইন(স)ইয়াজিদের কথাতে
ভ্রুক্ষেপ করেননিতো সীমারের ছোরাতে।
রাসুলের সঃ দৌহিত্র আলী ফাতিমার দুলাল
ধরে রেখেছেন উধে তুলে ইসলামের হেলাল।
এ যুগেও আছে কত ইয়াজিদ সীমার
এদেরও রুখতে হবে সব অন্যায় অনাচার।
শিয়া সুন্নির প্রভেদ ঘুচিয়া ইসলামের জয় হোক
তবেই সাথক হবে কারবালার শোক।

স্মরণে

আজও শ্রাবনের আকাশ কাঁঁদে,
ঢাকে শোকের ছায়ায়।
তোমার স্মরণে কাঁদে বাংলা
আছো প্রাণের মায়ায়।
ভুলি নাই তোমাকে
ভুলবোনা কোনোদিন।
বাংলার আকাশে জ্বলবে
জ্বল জ্বলে চিরদিন।
যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী বহমান
ততোদিন রবে কীতি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

ফিলিস্তিনিদের গল্প – ২

সব মিলিয়ে দু’ঘণ্টার মত ঘুমিয়েছি কিনা সন্দেহ। আসলে গোটা ট্রিপটাতেই ঘুম এলোমেলো হয়ে গেছে। একে নিউ মেক্সিকোর সাথে নয় ঘণ্টা সময়ের পার্থক্য, তার উপর সকালে ঘুম ভাঙ্গার নেই কোন তাড়া। ফজরের আযানের সাথে ঘুম ভাঙ্গতে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আর ঘুমানোর চেষ্টা করবো না। হোটেলের দরজা খুলতেই ভুতের মত দাঁড়িয়ে থাকা সাদা কটা দেয়াল অভ্যর্থনা জানালো নিঃশব্দের পৃথিবীতে। হোটেল করিডোরে আধাভৌতিক একটা আবহ মনে করিয়ে দিল এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি অনেকের। তাই সাবধানী পায়ে আলতো করে ঢুকে গেলাম অপেক্ষমান লিফটায়। এক তলায়ও একই অবস্থা। লবি খা খা করছে। কাউন্টারে কেউ আসেনি। কফি মেশিনটা তখনও চালু ছিল। কাগজের গ্লাসে কড়া এক গ্লাস কফি বানিয়ে ঘাপটি মেরে ফিরে গেলাম রুমে।

পর্দা সরিয়ে রুমের সবকটা জানালা খুলে দিলাম। বাইরের হাল্কা আলোতে জেরুজালেম নগরী আছড়ে পরলো জানালায়। গ্রাস করে নিল আমি ও আমার সত্ত্বা। যতদূর চোখ যায় ইটপাথরের বাড়িঘর। হবে হয়ত হাজার বছরের পুরানো। শহরের দেয়ালে কান পাতলে হয়ত এখনো শোনা যাবে রোমানদের, জর্ডানিয়ানদের, টার্কিস অথবা সাময়িক কালের ইস্রায়েলিদের পায়ের শব্দ। শহরের প্রতিটা কোনা স্বাক্ষী দেবে ইতিহাসের অমোঘ পরিণতির। প্রতিটা রাস্তা কথা বলবে শৌর্য্য, বীর্য, ঐতিহ্যের। বাইরের হাল্কা বাতাস চোখ মুখে শান্তির প্রলাপ এঁকে দেয়। অজান্তেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠল এন্ডিসের বুক চিড়ে বলিভিয়া ভ্রমণের প্যানোরমা। পেরুর সীমান্ত শহর পুনের হোটেলে আটকে আছি। অপেক্ষা করছি লা পাসগামী বাসের। দেশটায় ধর্মঘট চলছে। সব ধরণের যানবাহন বন্ধ। অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আটকে আজকের মত সে রাতেও ঘুম আসেনি। খুব সকালে উঠে জানালার পর্দা সরাতেই চোখের সামনে আছড়ে পরেছিল গোটা এন্ডিস। এর বিস্ময়কর প্যানোরমা সহজেই ভুলিয়ে দিয়েছিল অপেক্ষার কষ্ট।

ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা বেরিয়ে আসছে রাতের আশ্রয় হতে। আলো ফুটতে শুরু করেছে শহরে। দূরে দামাস্ক গেইটের কাছে দু’একটা গাড়িও চলতে শুরু করেছে। রামাল্লায় শোনা ভবিষৎবাণী সত্য হলে আজ ওখানে কিছু একটা ঘটার কথা। ফিলিস্তিনিরা প্রতিবাদ করবে তাদের শতাধিক বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে। আজকের প্রতিবাদ দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবাদে রূপ নেয়ার সম্ভবনাও উড়িয়ে দেয়নি সদ্য পরিচয় হওয়া বেথেলহেমের এক ফিলিস্তিনি পরিবার। ওরা সবাই অপেক্ষায় আছে একটা স্ফুলিঙ্গের। বিভক্ত দেয়াল পেরিয়ে জেরুজালেমে প্রবেশের অনুমতি নেই অনেকের। স্বপ্নের শহর নিয়ে ওদের আক্ষেপের শেষ নেই। শেষ করে এ শহরকে দেখেছিল, কোথায় ঘুরেছিল, কি খেয়েছিল এ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন ঘরে ঘরে। অথচ রামাল্লা, বেথেলহেম অথবা জেরিকো হতে জেরুজালেম চল্লিশ মিনিটের পথ। ছোট মিনিবাস ধরলে আরও আগে পৌঁছানো যায়।

সূর্য উঠার আগে আরও একবার ঢুঁ মারলাম হোটেল কাউন্টারে। আপাদমস্তক ঢাকা সাদা ধবধবে এক মহিলা বসে আছেন কাউন্টারে। সালাম দিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করলাম। খুব নীচু গলায় জবাব দিল। জানতে চাইলো এত সকালে এখানে আগমনের হেতু। হোটেলের মূল ফটকটা খুলে দেয়ার অনুরোধ করলাম। আমি বাইরে বের হবো। সকালের সব শহরের চেহারাই অন্যরকম হয়। থাকে ভাল লাগার একটা চিকন অথচ মসৃণ অনুভুতি। এমনকি মনুষ্যভারে ডুবন্ত ঢাকা শহরের সকালেও থাকে হাল্কা এক ধরণের ভাল লাগা। খুব কাছ হতে না দেখলে বুঝা যায়না। মহিলা একটু অবাক হলো। একটু হাসল এবং সাবধান করে খুলে দিল অটোমেটেড দরজা।

বাইরে বেরিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম। মনে হলো বাতাসে অক্সিজেন এখন অনেক বেশী। মধ্যদুপুরের কোলাহলের লেশমাত্র নেই। Suq Khan El Zeit নামের কালো পাথরের রাস্তাটা এখন খাঁ খাঁ করছে। দুএকজন দোকানদার তাদের পণ্য নামাচ্ছে। একটু হেঁটে কাঁচা বাজারের কাছাকাছি আসতে দৃশ্যপট বদলে গেল। সব্জির বাজার রীতিমত জমজমাট। পাশের দুয়েকটা কসাইয়ের দোকানও খোলা। দোকানদারদের অনেকে ফিলিস্তিনি মহিলা। পুরুষদের ব্যস্ততা পণ্য পরিবহনে। আমি দেখছি আর কচ্ছপ গতিতে হাঁটছি। চোখের মত পায়েরও কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই।

ধাক্কাটা ভালভাবেই লাগলো। কালো পাথরের রাস্তাটা এমনিতেই ঢালু, তার উপর পণ্য সাজিয়ে দোকানদারের দল পানি ঢালছে পরিস্কার রাখার জন্যে। পিচ্ছিল পথে প্রায় ছিটকে পরেছিলাম। উঠে দাঁড়িয়ে চোখ ফেরালাম যে ধাক্কা মারল তার দিকে। ভারতীয়। দক্ষিন ভারতীয় ভাষায় কথা বলছে নিজেদের ভেতর। আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলা দেয়াটা যেন কোন ঘটনাই না। ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, চোখ ঘুরিয়ে একবারও দেখার চেষ্টা করল না কে আমি। পরিচয় পেয়ে আমিও অবাক হইনি এদের ব্যবহারে। অবাক হয়েছি এই ভেবে এর সকালে কি করছে এখানে। সেই তেল আবিব হতে দেখে আসছি ভারতীয়দের উপস্থিতি।

.
ফিলিস্তিনিদের গল্প … ১ম পর্ব
– চলবে

ঈদুল আজহা

ঈদুল আযহা আনলো বয়ে
ত্যাগরই সাক্ষ্যর।
ইব্রাহীম(আ) মহান ত্যাগে
হয়ে আছেন ভাস্বর।
আল্লাহর আদেশ পেয়েছিলেন
প্রিয় বস্তু ত্যাগে।
একনিষ্ট ছিলেন তারা
আদেশ পালনের মহান ব্রতে।

চোখ বেধে ছুরি চালান
পৌছে যান অভিষ্ঠে।
আল্লাহ বলেন হয়েছে বন্ধু
ধন্য হও আমার সন্তুষ্টে।
ইসমাইলের(আ) বদলে
কোরবানী হয়েছে বেহেস্তি দুম্বা।
সারা জাহানে পালন করছে
মুসলিম উম্মাহ।
প্রতি নামাজে তার তরে
দরুদ পড়া হয়।
মুসলিমের জীবন সেই আদর্শে
যেন গড়া হয়।

ঈদ মুবারক

কাশ্মীর কি এবং কেন!

রাজা হর সিং এর নাম কি এর আগে কখনো শুনেছেন? না থাকলে ক্ষতি নেই। লাখো নামের ভীড়ে এমন একটা নাম জানা অথবা মনে রাখা তেমন জরুরি নয়। তবে আজকের কাশ্মীর নিয়ে আপনার ক্ষোভ দুঃখ থাকলে এই মানুষটার সাথে পরিচিত হওয়া আপনার জন্যে জরুরি। আসুন ফিরে যাই আপনার আমার জন্মের অনেক আগে, সেই ১৯৪৭ সালে। এই উপমহাদেশে ২০০ বছর দুধকলা খেয়ে বৃটিশরা যখন বুঝতে পারল দুধ ঘোলা হতে শুরু করেছে, কলায়ও পোকার প্রকোপ দেখা দিয়েছে, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল, যথেষ্ট হয়েছে, আর না, এবার ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু বললেই তো হুট করে চলে যাওয়া যায়না। হাজার হলেও দুইশ বছরের ময়লা!

মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্ আর জওহর লাল নেহেরু ততদিনে দুই মেরুর দুই নেতা। এক কথায় পালের গোদা, যাদের নেত্রীত্বে দুধ ঘোলা হচ্ছে। সবার সমর্থন নিয়েই বৃটিশরা সিদ্ধান্ত দিল, দুই ভাগে বিভক্ত হবে এ উপমহাদেশ। এবং নিজেদের পছন্দ মতই রাজ্য গুলো যোগ দেবে প্রস্তাবিত ভারত ও পাকিস্তানে। যদিও নেহেরুর দল কোন মতেই চাইছিল না তাদের অখণ্ড ভারত খণ্ড-বিখণ্ড হোক। ধর্মীয় প্লাটফর্মের ভিত্তিতেই বিভক্ত হয় পাক-ভারত উপমহাদেশ। হিন্দুদের জন্যে হিন্দুস্থান আর মুসলমানদের জন্যে পাকিস্তান।

সমস্যা দেখা দেয় কাশ্মীর নিয়ে। সে রাজ্যে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের রাজা তখন একজন হিন্দু। এবং তিনিই আমাদের হরি সিং। ভারতের চাপ ছিল তাদের সাথে যোগ দেয়ার। কিন্তু মিঃ সিং সময় চাইলেন। কারণ তিনি জানতেন রাজ্যের মুসলমান জনগন তা সহজে মেনে নেবে না। অন্যদিকে পাকিস্তান ছিল আরও মরিয়া। কারণ দেশটার একটা বিরাট অংশের পানি আসে প্রতিবেশী কাশ্মীর হতে। নতুন দেশের কৃষিকাজের অনেকটাই নির্ভর করবে ঐ অঞ্চলের পানির উপর। তারাও চাপ দিল রাজা হরি কে। রাজা তাতে কান দিলেন না। পাকিস্তানের তর সইছিল না, তাই বিনা ঘোষণার জন্মের প্রথম প্রহরেই ঝাঁপিয়ে পরে কাশ্মীরের উপর। দখল করে নেয় বিরাট একটা অংশ। এই অংশটাই আজকে তাদের জন্যে আজাদ কাশ্মীর। রাজা হরি সিং চোখে অন্ধকার দেখেন। দ্রুত যোগযোগ করেন স্বধর্মী ভারতীয়দের সাথে। ভারত বাহু মেলে অপেক্ষায় ছিল এই মাহেন্দ্রক্ষণের। আরও অনেক রাজ্যের মত কাশ্মীরকেও প্রস্তাব দেন এই ইউনিয়নে যোগ দিতে। রাজা রাজী হলেন, কিন্তু কিছু শর্তে। এই যেমন, কাশ্মীর এখনই ভারতের অংশ হবেনা। রাজ্যের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে সময় দিতে হবে। পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা সিদ্ধান্ত নিবে ভারত না পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকবে। নাকি স্বাধীন তৃতীয় একটা রাষ্ট্রের দাবি জানাবে।

পাকিস্তানী আগ্রাসনের হাত হতে বাঁচার জন্যে রাজা হরি বিশেষ মর্যাদায় কাশ্মীরের বাকি অংশ নিয়ে ভারতের সাথে যোগ দেন। কথা ছিল, ভারত পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কোন দিনই কাশ্মীরকে তাদের অংশ বলে দাবী করতে পারবেনা। বিদেশ ও সামরিক বিষয়ক দপ্তর গুলো বাদে বাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে কাশ্মীরি জনগণ। এমনকি তাদের নিজস্ব একটা পতাকা পর্যন্ত থাকবে।

দুদিন আগ পর্যন্ত এই বিশেষ মর্যাদা নিয়েই বেঁচে ছিল কাশ্মীরের জনগণ। কিন্তু গো-মূত্রখোর, নিরেট ধর্মীয় উন্মাদ নরেন্দ্র মোদি তার ‘জয় শ্রীরাম’ উন্মাদনায় আসক্ত ভোটারদের নিজের ক্যাম্পে ধরে রাখার মিশন হিসাবে কেড়ে নিয়েছে সেই বিশেষ মর্যাদা। উস্কে দিয়েছে গৃহযুদ্ধের দামামা। জন্ম দিয়েছে নতুন এক ফিলিস্তিনের।

ফিলিস্তিন সমস্যার মত কাশ্মীর সমস্যায়ও স্বধর্মীয় মুসলমানদের ফেলে ভারতের সাথে যোগ দিয়েছে সৌদি ও আমিরাতি রাজা-বাদশার দল। অনেকের জন্যে ব্যপারটা খটকার হলেও, যারা এই সৌদি ও আমিরাতী রাজপরিবারের ইতিহাসের সাথে পরিচিত তাদের জন্যে মোটেও খটকার ব্যপার না। গোটা ব্যপারটাই লেনাদেনার। বেনিয়া ভারতীয়দের চরিত্র ও লুচ্চা রাজপরিবারের চরিত্রে একবিন্দুতে মিলিত হয় স্বার্থের লেনাদেনায়। এখানে ধর্ম কোন ফ্যাক্টর না।

কাশ্মীরিদের লড়াই কোন ধর্মীয় লড়াই নয়। এটা তাদের অস্তিত্বের লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই। এখানে ভারতের মত পাকিস্তানও তাদের অস্তিত্বের শত্রু। কাশ্মীরের ইতিহাস একটা জাতিকে দলিত মথিত করে বন্দুকের নলের মুখে দাস বানিয়ে রাখার ইতিহাস। এতে ভারতের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি আছে পাকিস্তানের হাত। আছে বৃটিশদের কুটচাল। আছে একজন বিধর্মী রাজার বিশ্বাসঘাতকতা।

কাশ্মীরিদের মুক্তির লড়াই তাদের নিজেদেরই চালিয়ে যেতে হবে। মুসলমান হিসাবে তথাকথিত মুসলিম উম্মার সাহায্য সহযোগীতা আশা করা হবে নেহায়েত বোকামি। তার কিছুটা হলেও লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বাকি মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা হতে। বাকি বিশ্বের কথা বাদ দিয়ে নিজ ঘরের দিকেই দৃষ্টি ফেরাতে পারে বাংলাদেশের জনগণ। দেশটার ভাড়াটিয়া খুনি বাহিনী র‍্যাব প্রধান সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছেন কাশ্মীর প্রশ্নে যারা ভারতের বিরোধীতা করবে তাদের একচুল ছাড় দেয়া হবেনা। স্বদেশীয় এই জল্লাদের আস্ফালন এটাই প্রমাণ করে হরি সিং’রা মরে না… ওরা বার বার ফিরে আসে… ফিরে আসে ভিন্ন নামে… ভিন্ন চেহারায়।

ফিলিস্তিনিদের গল্প

বিশেষ কোন প্লান না থাকায় দিনটা হোটেলে বসে কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। তাই রাতে সকাল সকাল বিছানায় যাওয়ার ইচ্ছাটাও উঠিয়ে রাখতে হল। প্যালেস্টাইনে একদিনের ঝটিকা সফরে এমনি ছিলাম ক্লান্ত, তার উপর দুদিন আগে ইসরায়েলিরা ওয়েস্টার্ন ওয়াল বরাবর ফিলিস্তিনিদের শতাধিক বাড়িঘর গুড়িয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠার সম্ভাবনা ছিল। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে পা রাখতেই বাতাসে এর গন্ধ পাওয়া গেল। ট্যুর গাইড, রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, বাস ড্রাইভার সহ অনেকেই এমন একটা সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিল না। রামাল্লার মূল রাস্তা ধরে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। উদ্দেশ্য খুব কাছ হতে ফিলিস্তিনিদের জীবনকে অনুভব করা। ট্যুর গাইড শহরের একটা গোল চত্বরে এসে ক্ষণিকের জন্যে থমকে দাঁড়াল। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালো এই এখান হতেই শুরু হয়েছিল তাদের বিদ্রোহের গল্প। ফিলিস্তিনিদের ইন্তিফাদা।

রামাল্লা হতে জেরিকো চল্লিশ মিনিটের বাস জার্নি। ছোট মিনিবাস ধরলে আরও আগে পৌঁছানো যায়। এগার হাজার বছর পুরানো এ শহরকে বলা হয় পৃথিবীর সবচাইতে বয়স্ক শহর এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে সবচাইতে নীচে। মধ্য দুপুরে শহরের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী ছুঁইছুঁই করছিল। শহরের আঠার হাজার বাসিন্দাদের বলতে গেলে কাউকেই বাইরে দেখা গেলনা। ট্যুর গাইড জানালো এটাই শহরের জীবন! দিনে সাধারণত কেউ বের হয়না। সন্ধ্যা নামতেই শহরের বাজার বন্দর, ক্লাব, রেস্তোরা সব জেগে উঠে, রাস্তায় কিলবিল করে মানুষ। শহরের ভূতুড়ে রাস্তা ধরে কম করে হলেও পাঁচ কিলোমিটার হাটতে হল গাইডের কারণে। সামনে ভাল একটা রেস্তোরা আছে, এমন লোভ দেখিয়ে আমাকে সে টেনে আনল শহরের কেন্দ্রে। খা খা করছে বিশাল রেস্তোরাটা। খদ্দেরের কোন চিহ্ন নেই। কিন্তু রান্নাঘরের ব্যস্ততায় কোন কমতি নেই। গ্রিলে মুরগী ও আস্ত ভেড়া পোড়ানো হচ্ছে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে বিয়ে বাড়ির মেহমানদারীর প্রস্তুতি চলছে। ট্যুর গাইড জানাল সুর্যাস্তের পর রেস্তোরার চেহারা বদলে যাবে। সহজে সীট পাওয়া যায় না এখানে। খোদ ইয়াসির আরাফাতও এ শহরে বেড়াতে এলে এ রেস্তোরায় ঢুঁ মারতেন। দশজনের লম্বা টেবিলে আমাদের দুজনকে বসানো হল। মেনুর ছবি দেখে আমিই লাঞ্চের অর্ডার দিলাম।

রেস্তোরা হতে বের হয়ে আরও আধাঘণ্টা হাঁটতে হল বেথেলহামগামী বাস ধরার জন্যে। তাপমাত্রা তখনো ঊর্ধ্বগামী। কম করে হলেও ৫২ ডিগ্রী। আমি ঘামছি। বোতলের পর বোতল পানি খাচ্ছি আর হাঁটছি। এ শহর খ্রিষ্টানদেরও ঐতিহাসিক জায়গা। শহরকে ঘিরে জড়িয়ে আছে যীশু খ্রিষ্টের অনেক স্মৃতি। উত্তপ্ত মরু শহরে হাঁটছি আর শুনছি ট্যুর গাইডের বর্ণনা। এক মিনিটের জন্যেও সে ভুলে যায়নি তার কর্তব্য।

বেথেলহাম পৌছতে সূর্যের তাপ অনেকটাই কমে এলো। তাছাড়া উচ্চতাও বেড়েছে। হাল্কা মৃদু বাতাস স্বাগত জানালো যীশু খৃষ্টের জন্মভূমিতে। ন্যাটিভিট চার্চ ঘুরে আসার পর ফিলিস্তিনি একটা পরিবারের সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটানো হল অনেকটা বাধ্য হয়ে। হাঁটার জন্যে যে শক্তি প্রয়োজন তার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট ছিলনা। বাড়ির বারান্দায় লম্বা একটা সোফার উপর কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নিলাম।

চোখ মেলতেই মনে হল অন্ধকার নামছে পশ্চিম তীরে। পাহাড় গুলোর চূড়া আর দেখা যাচ্ছেনা। মানুষও মনে হয় লম্বা একটা দিনের পর জেগে উঠছে। এবার ফেরার পালা। পথে হেবরন শহরে কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি। ট্যুর গাইডই উপদেশ দিল, জেরুজালেমে ফিরে আমি যেন মুসলিম কোয়ার্টার ছেড়ে ইহুদি কোয়ার্টারে চলে যাই। ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় নামলে লম্বা সময়ের জন্য দামেস্ক গেইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন ওখান হতে বেরুনো খুব একটা সহজ হবেনা। কিন্তু আমার ইচ্ছা করছিলোনা হঠাৎ করে এভাবে পালানোর। বরং ইচ্ছা করছিল খুব কাছ হতে দেখি ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ। কে জানে, হয়ত এ বিদ্রোহ হতেই শুরু হতে পারে নতুন এক ইন্তিফাদা।

ভোর ৩টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। ইচ্ছা ছিল দশটার দিকে উঠে নাস্তা সেরে দামেস্ক গেটের সিঁড়িতে বসে চারদিকের জেরুজালেমকে দেখবো। কোথাও গোলমাল বাধলে ওখানেও যাবো। খুব কাছ হতে কিছু ছবি তুলবো।

ঘুম ভাঙ্গল খুব ভোরে আযানের সুরে। হয়ত পাশের আল আকসা মসজিদ হয়ে ভেসে আসা আযান। জানালার পর্দা খুলে জেরুজালেমের আকাশকে দেখার চেষ্টা করলাম। ভোর হয় হয় করছে। রাস্তায় কিছু বেওয়ারিশ কুকুর এদিক ওদিক হাটতে শুরু করেছে। পাশের বাড়িঘর হতে এক ঝাঁক পায়রা উড়ে গেল আকাশে। কে জানে, হয়ত ওরা উড়ে গেছে পশ্চিম তীরের শহর হেবরন, রামাল্লা অথবা বেথেলহেমে।

– চলবে

খানায়ে ক্বাবা

জন মানব শ‍ুন্য মর‍ু প্রান্তরে বানিয়েছেন কা’বা হযরত ইব্রাহীম।
আদেশ করেছিলেন আ‍ল্লাহ রহমানু‍র রহীম।
আজান দিয়েছেন অনাগত মানুষকে আ‍ল্ল‍াহর ঘর জিয়ারতে।
দে‍খিয়েছেন পথ একাত্ববাদের ধ্যানে জ্ঞানে ফিতরতে।

ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে হজ্ব উত্তম এবাদত।
ইসলামের অমীয় বানী শোনাতে বিশ্ব ভাতৃত্ব রক্ষার্থেই এই জমায়েত।
রাসুল সঃ বিদায় হজ্বে পূরণ করেছেন দ্বীনের সব হুকুম আহকাম।
নিষ্ঠার সাথে পালন করলে, হবে সে সফলকাম।
সেলাই বিহীন কাপড় পরে হাজিরা আ‍ল্লাহর ধ্যানে মশগুল।
পরিবার পরিজনে‍র কথা ভুলে গিয়ে বিলকুল।
মনে হয় যেন কেয়ামতের মাঠে অগনিত মানব ঢল।
হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গি‍য়ে আমীর ফকির সব আজ এক দল।
বিগলিত হৃদয়ে তোয়াফ করে আ‍ল্লাহকে পাবার মানসে।
পৌছাতে চায় মনে‍র আর্জি আ‍‍ল্লাহর আরশে।
মিনা আরাফার গগন ভেদে বলে হাজিরা ‍লাব্বায়েক।
মাফ কর ‍হে মালিক আমি না লায়েক।
হযরে আ‍সওয়াদে চুমু খেয়ে সাফা মারা‍ওয়া সাঈ করে।
আবে জমজমে তৃষ্না ‍মি‍টিয়ে কায়মনে দোয়া করে তেষ্টা‍ মেটাও হাউজে কাউসারে।
ইব্রাহীমের সুন্নত কোরবানী করে সেই সাথে নিজের নফসে‍র পশুকে।
শয়তানে ঢিল মেরে মাফ চায় খোদা দ্রোহিতার প্ররোচনা থেকে।
এই‍ সেই হজ্ব, আদর্শ ছিলেন পরিবার সহ (হঃ) ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ।
নিজের সত্বা‍কে বি‍লিয়ে দিয়ে‍‍‍ছেন রাহে ফি সাবিলিল্লাহ।

চূর্ণ-বিচূর্ণ ভাবনা থেকে-২

১.
গ্রামের মূর্খ থেকে নগরের বুদ্ধিজীবী, প্রতিটি মানুষ আজও গুজবে বিশ্বাসী।

২.
বাঙ্গালিদের কখনও বিশ্বাস করতে নেই। কারন তারা শুধু জাতিতেই, মানুষে নয়।

৩.
নারীবাদী, মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর লোকজন মানসিক ভারসাম্যহীন।

৪.
এটা সমস্যা ওটা সমস্যা চারদিকে নানান সমস্যা নিয়ে পাবলিক হৈচৈ করে কিন্তু মূল সমস্যার কথা কেউই বলে না। আসলে কেউ বলতে চায় না।

৫.
“সন্তান দুটির বেশী নয় তবে একটি হলে ভালো হয়” চায়না প্রমাণ করে দিয়েছে একথাটা ভিত্তিহীন।

৬.
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো”।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মায়েরাই হচ্ছে অশিক্ষিত, মূর্খ। ধর্ম কি বলে, কি বোঝাতে চায় ভণ্ড পীরদের সংস্পর্শে থেকে এ বিষয়গুলো তারা এড়িয়ে যায়। ভণ্ডরা যা বলে তাতেই এদের যতসব বিশ্বাস। এসকল মূর্খ মা-কে আগে শিক্ষিত করতে হবে, বোঝাতে হবে কোনটা ধর্ম আর কোনটা অধর্ম। আর তা না হলে কুসংস্কার থেকে কোন দিনও বেরিয়ে আসতে পারবে না এ জাতি আমার বিশ্বাস।

মুসলিম ( বিশ্বাসীদের) বলছিঃ

বিজয় টিভিতে দেখলাম লিটন দেওয়ান চিশতী নাকি যে কোনও মানুষের চেহারা দেখে ভবিষ্যত বলে দিতে পারে। অথচ পবিত্র কোরান এ আল্লাহ বলেছেন ভবিষ্যত শুধু তাঁর জ্ঞানে আছে।

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর কাছেই রয়েছে। [সূরা ১৬ /নাহল – ৭৭]”

উক্ত লিটন দেওয়ান নাকি এমন আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী যে উনি যে পাথর দিবেন তা দিয়ে যে কেউ কোটিপতি হয়ে যাবেন কয়েক দিনের মধ্যে এবং এও বলেন যে নবী (সাঃ) নাকি আকিক পাথরের আংটি পড়তেন।

আসুন দেখি সহীহ হাদিস কী বলে?

১) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাঃ) রূপার আংটি ব্যবহার করতেন। আর তার আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল। (৭১])আবু দাউদ, হা/৪২১৮

২) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সঃ) একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করেছিলেন। তিনি তা দ্বারা (চিঠিপত্রে) সীল মারতেন, তবে তিনি (সচরাচর) তা পরিধান করতেন না। [৭২] নাসাই, হা/৫২১৮; মুসনাদে আহমদ, হা/৫৩৬৬।

৩) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াতপত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা সীল ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তাই তিনি একটি আংটি তৈরি করান। তার হাতের নিচে রাখা আংটিটির ঔজ্জ্ব্বল যেন আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। [৭৩]সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩০৭৫

৪) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে, ‘রাসূল’ এক লাইনে এবং ‘আল্লাহ’ এক লাইনে। [১] সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৮; ইবনে হিব্বান, হা/১৪১৪

এখানে ৪ টি সহিহ হাদিস এর মধ্যে প্রথম হাদিস এ দেখা যায় তিনি রুপার আংটিতে আবিসিনীয় পাথর লাগিয়ে ছিলেন কিন্তু পরের ৩ টি সহিহ হাদিস বলা আছে নবী (সাঃ) রুপার আংটি ব্যবহার করতেন।

কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রুপার যে আংটি ব্যবহার করতেন সেই আংটিতে লেখা ছিল “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এবং যেহেতু তিনি অক্ষর জ্ঞান হীন ছিলেন তাই কারও কাছে ইসলামের আহবান করার জন্য চিঠি লিখতে জানে এমন সাহাবীকে দিয়ে ইসলামের আহবান লিখাতেন এবং নবী (সাঃ) ওই চিঠিতে নিজের নাম এবং তিনি রাসুল – তা ওই আংটি দিয়ে সীল মারতেন।

কোনও সহিহ হাদিসেই এমন বর্ণনা নেই যে তিনি পাথরের আংটি ব্যবহার করে নিজে এবং মানুষকে কোটিপতি করেছেন। লিটন দেওয়ান নামক এই লোকটি নিজেও শিরক করছে এবং অনেক মানুষকে শিরক করাচ্ছে। আল্লাহ পবিত্র কোরান এ ঘোষণা করেছেন, জেনে শুনে শিরক করলে তওবা করলেও তা মাফ করবেন না।

প্রথম মারাত্মক শিরক যেটা করছে সেটা তিনি নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ বলছেন, অর্থাৎ আল্লাহ সুরা নাহলে বলছেন, অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে আছে, আর লিটন দেওয়ানও বলছে অদৃশ্যের জ্ঞান অর্থাৎ সে ভবিষ্যত বলে দিতে পারে।

দ্বিতীয় শিরক করছে, নবী (সাঃ) রুপার আংটি ব্যবহার করতেন সীল মারার জন্য আর লিটন দেওয়ান বলছে সে পাথরের আংটি দিয়ে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা কাটিয়ে দ্রুত মানুষকে কোটিপতি করে দিতে পারে। এর মানে আল্লাহ ওই দুঃখ, দুর্দশা কাটিয়ে দ্রুত মানুষকে কোটিপতি করতে পারে না কিন্তু তার ওই পাথর এগুলো পারে।

লিটন দেওয়ান সাহেবকে বলছি, ধর্মের নামে মানুষকে শিরক এর পথে নেয়ার স্পর্ধা আপনার আসলো কোথা থেকে? আপনি এতো আধ্যাত্মিক শক্তিধর হয়ে থাকলে আপনার দশ আংগুলে দশটি পাথর পড়ে থাকলেই তো প্রতিদিন আকাশ থেকে দশ বস্তা টাকা আপনার ঘরে চলে আসবে। আপনি অযথা ধর্মের নামে পাথর বেচার ধান্দাবাজি বন্ধ করুন।

এভাবে মানুষকে শিরক করাবেন না। আলেম সমাজ হয়তো আপনাকে কিছু বলতে পারে না আপনার পেশী শক্তির ভয়ে কিন্তু আমার মতে একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আমি এই শিরক কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আর মানুষকে ধোঁকা দেয়ার বা বাটপারির যে রাষ্ট্রিয় আইন আছে সেই আইনের আওতায় আপনাকে আনা হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ

আমি একজন বাঙালি। বাঙলা আমার মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য এদেশের অগণিত জনতা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা রক্ষা করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় দুঃখের সাথে বলতে হয়, সেই ভাষা আন্দোলন ৬৮ বছর গত হয়ে গেলেও; এখনো আমার এই মাতৃভাষার স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, শব্দ, বাক্য, উচ্চারণ-সহ লেখা নিয়ে ঘষামাজার শেষ হয়নি। প্রতিবছর পরপরই বর্ণের পরিবর্তন, শব্দের পরিবর্তন, বাক্যের সংযোজন, বানানের হেরফেরের ঘষামাজা চলছেই চলছে।

কিন্তু বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের অঞ্চলের অনেক আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। তারমধ্যে প্রাচ্যের ডান্ডি নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জেরও আঞ্চলিক ভাষা আছে। যেই ভাষা আজ পর্যন্ত কোনও ভাষা বিজ্ঞানী রদবদল করতে পারেনি। এই ভাষা আমার মায়ের ভাষা, আমার মুখের ভাষা। আমদের নারায়ণগঞ্জবাসীর কথ্য ভাষা। আমাদের সেই গর্বের ভাষার কিছু শব্দ সবার মাঝে গর্বের সাথে শেয়ার করছি।

শব্দের পরে ও:
আইও, আও, যাও, যাইও, খাও, খাইও, খায়াইও, লও, লইও, দাও, দেও, দিও, দেয়াও, নেও, নাও, নিও, নেয়াও, কও, কয়াও, কইও, করাইও, গাও, গাইও, গায়াইও, কিও, পাও, পাইও, হও, হইও, বও, বইও, দাঁড়াও, খাড়াও, খাড়ইও, পুইড়ও, পোড়াইও, ধরও, ধরাও, ধরাইও, ভরাও, ভরাইও, মারও, মরও এমন আরও অনেক আছে।

শব্দের পরে ন:
আইয়েন, যাইয়েন, বইয়েন, বাইয়েন, কইয়েন, কয়াইয়েন, খাইয়েন, খায়াইয়েন, লইয়েন, লয়াইয়েন, দিয়েন, দেয়াইয়েন, নিয়েন, নেয়াইয়েন, বাইয়েন(নৌকা), বায়াইয়েন, হুইয়েন, হোয়াইয়েন, গাইয়েন, গায়াইয়েন, হুনায়েন, হুনাইয়েন, ঘুমায়েন, খারইয়েন, দাঁড়াইয়েন, কইরেন, করাইয়েন, ধরাইয়েন, ভইরেন, ভরাইয়েন, বুইঝেন, বুঝাইয়েন, বানাইয়েন, সরাইয়েন, হামলাইয়েন, সামলাইয়েন, ছাইরেন, ছাড়াইবেন, মাইরেন, মারাইয়েন এমন আরও আছে।

শব্দের পরে ব+এ যোগে ন:
আইবেন, যাইবেন, বইবেন, আনবেন, আনাইবেন, নিবেন, নেয়াইবেন, দিবেন, দেয়াইবেন, খাইবেন, খায়াইবেন, লইবেন, লয়াইবেন, হুইবেন, হোয়াইবেন, ঘুমাইবেন, হুনাইবেন, হুনতাছেন, হুনবেন, কইবেন, কয়াইবেন, করবেন, করাইবেন, ধরবেন, ধরাইবেন, ঘুরবেন, ঘুরাইবেন, মানবেন, মানাইবেন, পাযাইবেন, পাইবেন, আঁরাইবেন, আঁরবেন, আঁসবেন, হাসবেন, হাসাইবেন, ভরবেন, ভরাইবেন, উডবেন, উডাইবেন, বেচবেন, কিনবেন, ঠকাইবেন ঠকবেন, পড়বেন, পড়াইবেন, শিখবেন, শিখাইবেন, হিগবেন, হিগাইবেন, জিতাইবেন, জিতবেন, আঁরাইবেন, আঁরবেন, হারবেন, নামবেন, নাবাইবেন, সরাইবেন, সরবেন, জাঁতবেন, বকবেন, ঝকবেন, ছাড়বেন, ছাড়াইবেন, ভাবাইবেন, ভাববেন, মারবেন মরবেন এমন আরও অনেক!

শব্দের পরে ছ:
আইছ, বইছ, বয়াইছ, খাইছ, খায়াইছ, গেছ, ধরছ, ধরাইছ, করছ, করাইছ, পারছ, পারাইছ, হুইছ, হোয়াইছ, ঘুমাইছ, কিনছ, কিনাইছ, বেচছ, বেচাইছ, দিছ, দিতাছ, নামছ, নামাইছ, ভরছ, ভরাইছ, পড়ছ, পড়াইছ, পড়াইতাছ, ছাড়ছ, ছাড়াইছ, ছাড়াইতাছ, আনছ, আনাইছ, আনতাছ, হুনছ, হুনাইছ, উঠছ, উডাইছ, উডাইতাছ, ঘুরছ, ঘুরাইছ, ঘুরাইতাছ, বকছ, ধকছ, গেছ, পিডাইছ, লাগাইছ, লাগছ, বুঝছ, বুঝাইছ, বুঝতাছ, হুনছ, হুনাইছ, ভাবাইতাছ, ভাবতাছ, ভাবছ, দেখছ, দেখাইতাছ, দেখতাছ, লইছ, লয়াইছ, লইতাছ, কান্দাইছ, কানছ, কানতাছ, শিখছ, শিখাইছ, শিখাইতাছ, হিগছ, হিগাইছ, হিগাইতাছ, গাইছ, গায়াইছ, জিতাইছ, জিতাইতাছ, জিতছ, ঢরাইছ, ঢরাইতাছ, মরছ, মারছ এমন আরও আছে।

শব্দের পরে ছে:
আইছে, আইতাছে, গেছে, যাইতাছে, দেখছে, দেখতাছে, দেখাইতাছে, খাইছে, খাইতাছে, হুইছে, হুইতাছে, হুনছে, হুনতাছে, কইছে, কইতাছে, হুগাইছে, হুগাইতাছে, বইছে, বইতাছে, বাইছে, বাইতাছে, নুইছে, নুইতাছে, বকছে, বকতাছে, ভরছে, ভরতাছে, হিগছে, হিগাইতাছে, আঁসছে, (হাসি) আঁসতাছে, গাইছে, গাইতাছে, জিতছে, জিতাইতাছে, চলছে, চালাইতাছে,ভরছে, ভরতাছে, মারতাছে, মরছে এমন আরও অনেক শব্দ আছে।

শব্দের পরে ছ+এ যোগে ন:
আইছেন, বয়াইছেন, বইছেন, খায়াইছেন, খাইছেন, খাইতাছেন, গেছেন, যাইতাছেন, ধরছেন, ধরাইতাছেন, কইছেন, কয়াইছেন, করছেন, করাইতাছেন, করতাছেন, ঢরাইছেন, ঢরাইতাছেন, উঠছেন, উডাইতাছেন, ঘুরছেন, ঘুরাইতাছেন, ঘুরাইছেন, লইছেন, লইতাছেন, লয়াইতাছেন, দেখছেন, দেহাইছেন, ছাড়ছেন, ছাড়াইতাছেন, বুঝছেন, বুঝাইছেন, বুঝাইতাছেন, ঘুমাইছেন, ঘুমাইতাছেন, হুনছেন, হুনাইছেন, হুনাইতাছেন, গাইছেন, গায়াইছেন, গাইতাছেন, পড়ছেন পড়াইতাছেন, দিছেন, দিতাছেন, দেখছেন, দেখাইছেন দেখতাছেন, শিখছেন, শিখাইতাছেন, হিগছেন, হিগাইতাছেন, ভাবাইছেন, ভাবাইতাছেন, ভাবছেন, লাগাইছেন, লাগাইতাছেন, লাগছেন, বাইরাইছেন, বাইরাইতাছেন, মারছেন, মারতাছেন মরছেন।

শব্দের পরে ‘ন’ এবং ন্ন:
খাইয়েন, খাইয়েন্না, যাইয়েন, যাইয়েন্না, পাইয়েন, পাইয়েন্না, বইয়েন, বইয়েন্না, কইয়েন, কইয়েন্না, হুয়েন, হুইয়েন্না, নিয়েন, নিয়েন্না, দিয়েন, দিয়েন্না, বেচ্চেন, বেচ্চেন্না, কিননেন, কিননেন্না, কইরেন, কইরেন্না,পইড়েন, পইড়েন্না, পড়াইয়েন, পড়াইয়েন্ন, শিক্ষেন শিক্ষেন্না, ধইরেন, ধইরেন্না, ঘুমাইয়েন, ঘুমাইয়েন্ন, গাইয়েন, গাইয়েন্না, পাইয়েন, পাইয়েন্না, পাইতেন্না, সইরেন, সইরেন্না, সরাইয়েন্না ভইরেন, ভইরেন্না, লাগাইয়েন, লাইগেন, লাগাইয়েন্না, বাজাইয়েন, বাজাইয়েন্না, হিগাইয়েন, হিগাইয়েন্না, শিখাইয়েন, শিখাইয়েন্না, মাইরেন, মাইরেন্না, আইসেন, আইসেন্না, লইয়েন, লইয়েন্না, পাইড়েন, পাইড়েন্না, উইঠেন, উইঠেন্না, বইকেন, বইকেন্না, বুঝেন, বুঝেন্না, ভাইবেন, ভাবাইয়েন্না, মাইরেন, মাইরেন্না,

শব্দের পরে র+এ=রে:
নাইরে, নারে, হরে, করে, লরে, কররে, দেরে, কেরে, পরে, পারিরে, পারবিরে, পারছরে, পাইছেরে, পাইবোরে, পাইতো নারে, খারে, খায়রে, খাবিরে, খাইবোরে, খাইতাছেরে, হোরে, ঘুমারে,দিবিরে, দিছরে, নিছরে, নিছেরে, উডাইছেরে, উডাইতাছেরে, উঠছেরে, ঘুমাইছেরে, ঘুমাইতাছেরে, কিনছেরে, কিনতাছেরে, কিনবোরে, বেচবোরে, বিচ্চেরে, বেচতো নারে, কয় কিরে, করিছরে, যাবিরে, ধররে, ধরিছরে, ধরতাছেরে, ভররে, ভরতাছেরে, ভরিছরে, হুনতাছেরে, হুনবোরে, মারতাছেরে, মারিছরে, মররে, মরছিরে।

শব্দের পরে ম+উ=মু:
কোমু, হুনমু, হুনামু, বুঝমু, বুঝামু, যামু, দিমু, হুমু, লোমু, আমু, ঘুমামু, কমামু, জমামু, নিমু, হোয়ামু, নোয়ামু, দেয়ামু, লাগামু, বাড়ামু, ঘুরামু, ঘুরমু, যাওয়ামু, আঁরমু, আঁরামু, কারামু, দেওয়ামু, কোরমু, কিনমু, কিনামু, কামামু, কমামু, বেচামু, বেচমু, ধরামু, ধরমু, ছাড়মু, দেখমু, দেখামু, খামু, খাওয়ামু, কোবামু, পুড়মু, পোড়ামু, জ্বলমু, জ্বালামু, ডুবামু মারমু এমন আরও অনেক!