বিভাগের আর্কাইভঃ ইতিহাস-ঐতিহ্য

আমার ভাবনা – ০৩

বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। তবে কেন সেটাকে আমি স্বীকার করবো ?

উচ্চ বর্ণ ও নিন্ম বর্ণ নিয়ে পৌত্তলিক ধর্মে যে ভেদাভেদ রয়েছে আমি সেটাকে স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মনগড়া কেচ্ছা ছাড়া কিছুই বলে মনে করি না।

বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। আছে ‘বর্ণাশ্রম’। শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘বর্ণ’ শব্দটি এসেছে ‘Vrn’ থেকে; যার অর্থ ‘to choose’ বা পছন্দ করা অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের সমাজে এখন তা জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।

বাবা দিবস … পৃথিবীর সকল প্রকৃত বাবাকে জানাই সম্মান

বাবা দিবস প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের ৫২টি দেশে পালিত হয়। পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। যদিও পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তবুও মা দিবসের অনুকরণে দিনটি পালিত হয় বাবা দিবস। বাবার দূর্লভ স্মৃতি বিনেসুতায় গাঁথা। বাবা’র তুলনা বাবা স্বয়ং।

ইতিহাস :
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে থেকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি পিতারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে পিতাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার পিতাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।

বাবা দিবস বেশ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই পালিত হতো! আসলে মা দিবস নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, বাবা দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না, বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

বাবা দিবসের প্রয়োজনীয়তা :
আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছেই মা দিবস বা বাবা দিবস পালনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তাই বলে এ ধরনের দিবসগুলো একেবারেই যে অপ্রয়োজনীয়, তেমনটা কিন্তু মোটেও বলা যাবে না। সন্তানের জন্য পিতার ভালোবাসা অসীম। মুঘল সাম্রাজ্যরের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। এমন স্বার্থহীন যার ভালোবাসা, সেই পিতাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। বাবা দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে পিতাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া বাবা দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে পিতাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তানরা মূল্যায়ন করছে, এ বিষয়টিও পিতাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মোটকথা আমাদের পরিবার তথা সমাজে পিতার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই বাবা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

বাবা দিবসের বৈচিত্র্যতা :
“ফাদারস ডে সেলিব্রেশনের” ক্ষেত্রে দেশ ভেদে দেখা যায় বৈচিত্র্য। এ দিবসটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। এটি মূল বিষয় হচ্ছে গিফট। অর্থাৎ এদিনে ছেলেমেয়েরা তাদের পিতাদের কোনো না কোনো গিফট দিতে খুব পছন্দ করে। আর পিতারাও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে গিফট পেয়ে বেশ অভিভূত হয়ে যান। এ গিফট দেয়ার ক্ষেত্রেও দেশ ভেদে দেখা যায় ভিন্নতা। কোনো কোনো দেশে ছেলেমেয়েরা পিতাকে কার্ড বা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা জানায়। আবার কোথাও কোথাও পিতাকে ছেলেমেয়েরা নেকটাই ও উপহার দেয়। অনেকে আবার বাবা দিবস উপলক্ষে স্পেশাল কেক কাটার আয়োজনও করে। আমাদের দেশেও ফাদারস ডে সেলিব্রেশনের ক্ষেত্রে পিতাকে শুভেচ্ছা জানানো, কার্ড দেয়া বেশ প্রচলিত। কার্ড ছাড়াও গিফট হিসেবে ফাদারস ডে মগ, টি-শার্ট ইত্যাদি।

একটি শিশুর জন্য পিতা হচ্ছেন সবচেয়ে বড় শক্তি। পরিবারে একটি শিশু তার নিষ্পাপ চোখে পিতাকে দেখে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, জ্ঞানী, স্নেহশীল এবং পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। মেয়ে শিশুরা জীবনের শুরুতেই আদর্শ পুরুষ হিসেবে পিতাকেই কামনা করে। অন্যদিকে ছেলে শিশুরা জীবনের শুরুতে পিতাকে দেখে শক্তির উৎস হিসেবে। তাই ছেলে শিশুরা চায় পিতার মতোই শক্তি অর্জন করতে তথা পরিবারের সর্বময় কর্তা হতে। এছাড়া শিশু যখন বাড়ন্ত অবস্থায় থাকে, তখন পিতা তার মূল্যবান উপদেশ দিয়ে সন্তানদের জীবনের পথ বাতলে দেন।

বিভিন্ন ভাষায় পিতা :
জার্মান ভাষায় পিতা শব্দটি হচ্ছে “ফ্যাট্যা” আর ড্যানিশ ভাষায় “ফার”। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন পিতা! চীনে ভাষায় চীনারা আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় পিতা হচ্ছেন ‘পাপা’ তেমনি ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’ ভাগ্যিশ! ক্রোয়েশিয়ায় জন্মাই নি! কারণ ওরা পিতাকে ‘ওটেক’ ওটেক বলে! দাঁড়ান আরো আছে, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় পিতা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে পিতা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা পিতাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় পিতা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। আমরা কিন্তু পিতাকে আদর করে হিব্রু ভাষাতেও ডাকি! হিব্রু ভাষায় পিতা হচ্ছে ’আব্বাহ্‌’। হিন্দি ভাষার পিতা ডাকটি পিতাজী! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ সেই ‘বাহাসা ইন্দোনেশিয়া’য় যদি পিতা ডাকি তাহলে সেটা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় পিতাকে ডাকেন- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য পিতাকে ‘বাবা’ ডাকা হয়! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও পিতা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। বাংলা ভাষায় বাবা বা আব্বা।

বাবা দিবস দেশে দেশে :
বাবা দিবসের পালনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশ দিবসটি পালন করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব দেশ একই দিনে বাবা দিবস পালন করে না। বরং বেশির ভাগ দেশের ভিন্ন ভিন্ন দিন রয়েছে বাবাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য। এমনকি দেশভেদে বাবা দিবসের রীতিতেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য।

প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে বেশ কিছু দেশ। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া, বাহামা, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টা রিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, গায়ানা, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মরিশাস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পুয়ের্টো রিকো, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে। এদিকে ইরান বাবা দিবস পালন করে ১৪ মার্চ। আবার মার্চ মাসের ১৯ তারিখে বাবা দিবস পালন করে বলিভিয়া, ইটালি, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেন। প্রতিবছর মে মাসের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে জুন মাসের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে লিথুনিয়া, ৫ জুনে ডেনমার্ক এবং জুনের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে অস্ট্রিয়া, ইকুয়েডর ও বেলজিয়াম। এল সালভেদর ও গুয়েতেমালা বাবা দিবস পালন করে ১৭ জুন। নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডা ২৩ জুন পালন করে বাবা দিবস। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উরুগুয়ে জুলাই মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালন করে বাবা দিবস। ডমিনিকান রিপাবলিক জুলাই মাসের শেষ রবিবার দিবসটি পালন করে। ফুটবলের জন্য জনপ্রিয় দেশ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল বাবা দিবস পালন করে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আগস্টের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে তাইওয়ান ও চিন। ফুলবল প্রিয় আরেক দেশ আর্জেটিনা বাবা দিবস পালন করে ২৪ আগস্ট। সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড। আবার একই মাসের পূর্ণিমায় বাবা দিবস পালন করে হিমালয় কন্যা নেপাল। পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ বাবা দিবস পালন করে ৫ অক্টোবর এবং একই মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন। আর এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ড ৫ ডিসেম্বর বাবা দিবস পালন করে।

বাবা। তিনি বটবৃক্ষ, নিদাঘ সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া—তিনি বাবা। বছরের এই একটি দিনকে প্রিয় সন্তানরা আলাদা করে বেছে নিয়েছেন। আজ বাবা দিবস। সারা বিশ্বের সন্তানরা পালন করবেন এই দিবস। ‘কাটে না সময় যখন আর কিছুতে/বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না/ আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়…।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া এই গানটি সন্তানদের এক অসীম নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে দেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেট এবং স্যাট টিভির প্রচার দাক্ষিণ্যে বাবা দিবস ঘটা করেই পালিত হচ্ছে। তারপরও এমন ভাবনা অনেকের মধ্যে থাকে যে, বাবার জন্য একদিন কেন! কেউ কেউ বলে থাকেন, বাবা দিবসটা ঠিক আমাদের জন্য নয়। এটি পাশ্চাত্যের। বাবার জন্য আমাদের অনুভূতি প্রতিদিনকার। প্রতি মুহূর্তের। তার জন্য আলাদা দিনের দরকার নেই। কারও কারও অভিযোগঃ এ ধরনের দিবসগুলো করপোরেট কিছু বিষয়কেই বিজ্ঞাপিত করে।

এই প্রসঙ্গে একটা তথ্য দেয়া যাক। ২০১০ সালের বাবা দিবসে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই ৯৫ মিলিয়ন শুভেচ্ছা কার্ড পেয়েছিলেন বাবারা। বলা যেতেই পারে, এ কেবল কার্ড বিজনেস। সবকিছুর পরেও তো বাবা দিবসে প্রিয় সন্তানের কাছ থেকে বাবারা পেয়েছেন শুভেচ্ছা কার্ড। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবাটি দীর্ঘদিন পর দেখা পান প্রিয় সন্তানের। বাংলাদেশে অনেক সন্তান তাদের পিতাকে ভাবে অভাজন। পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মত সন্তানও এই সমাজে আছে। ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’ নচিকেতার এই গানের বাস্তবতা মিলবে গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। অান্তর্জাল থেকে।

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

প্রদায়কের ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

বিটকেলে নৈতিকতাবোধ ও আমাদের গর্ব

সক্রেটিসের আবির্ভাবের সাথে সাথেই পশ্চিমা সাহিত্য এবং আধুনিক দর্শনের আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়। যদিও সেটা সক্রেটিসের মৃত্যুর পর টের পেতে শুরু করে। হেলিনিস্টিক শতককে বলা হয় গ্রীকদের জন্য স্বর্নসময়। এসময় সক্রেটিস, প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের কাজগুলো আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে এবং তার পথ ধরে আর্কিমিডিস টলেমি ত্বরান্বিত করেন গ্রীক দর্শন ও ধর্ম চেতনা, মধ্য আফ্রিকা থেকে পারস্য এমনকি হিমালয়ের পাদদেশ, হিন্দুকুশ অতিক্রম করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

তখন গ্রীক সমাজে দাসপ্রথা বেশ প্রচলিত এবং সাধারন ব্যাপার ছিলো। সমাজের উচুশ্রেনী সবসময় নিজেদেরকে একটু আলাদা করে চলতেন। প্লেটো তার রিপাবলিক ও ল বইতে একটি আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা দিয়েছিলেন। যদিও এ যুগে এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা শুনলে সবাই তেড়ে আসবে কিন্তু প্লেটোর এই ধারনা তখনকার সমসময়িক সময়ে বেশ প্রভাব ফেলে এবং এ্যারিস্ট টল এর সমূহ সমালোচনাও করেন। প্লেটোর আদর্শ রাস্ট্রে দু শ্রেনীর মানুষ থাকবে যার মধ্যে একদল শাসক আরেকদল হবে শোষিত। শাসক দল আবার দু ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে পড়বে অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনী এবং পরবর্তী ভাগ হবে তাদের সাহায্যকারী। প্লেটোর মতে বিয়ে হচ্ছে প্রকৃতি ও মানুষের শত্রূ যা শুধু সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনে। যেহেতু রাস্ট্র পরিচালনা করার অধিকার একমাত্র অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনীর সেহেতু তাদের মধ্যে যারা বীর তারা সবচেয়ে সুন্দরী ও উর্বরা নারীদের মাধ্যমে তাদের সন্তানের জন্ম দেবে। এখানে কোনো সন্তান জানবে না তার পিতা কে, কোনো পিতা জানবে না তার সন্তান কে। এই গ্রুপের মধ্যে যে সবচেয়ে দুর্বল এবং অযোগ্য তার ভাগ্যে পড়বে কোনো কুশ্রী, দুর্বল নারী। তাদের সন্তানও হবে দুর্বল, বিকলাঙ্গ অথবা অযোগ্য শ্রেনীর। যারা একবারেই বিকলাঙ্গ তাদেরকে আলাদা করে সতর্ক ও মানবিক উপায়ে ছেটে ফেলতে হবে। এর ফলে যিনি শাসক হবেন তার ধন সম্পদ নিয়ে লোভের মাত্রা কমবে। যেহেতু তার সন্তান কে তা তিনি জানেন না সেহেতু তার জন্য সম্পদের পাহাড় বা প্রশাসনে তার জন্য স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না। তাই রাস্ট্রপরিচালনায় তিনি নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের আশ্রয় নিতে পারবেন। আর যেহেতু সন্তান জানবে না যে তার পিতা কতটা ক্ষমতাধর বা উচুপদে আসীন সেহেতু তাকেও নিজেকে তৈরী করতে হবে আরও উচু পদের জন্য। তাকে দেয়া হবে দার্শনিক জ্ঞান যাতে করে সে নিজেকে দর্শনের আধ্যাত্মবাদের গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

যদিও প্লেটো সাথে সাথে এও বলে গেছেন এরকম আদর্শ রাস্ট্র একমাত্র স্বর্গেই সম্ভব, পৃথিবীতে সম্ভব নয়, কিন্তু জন্মগতশ্রেষ্ঠত্ব ব্যাপারটা এখনও মানুষ তার অজান্তেই বহন করে। প্লেটোর এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা নিষ্ঠুর, বর্বর এবং যত যাই বলি না কেন, আজ আমরা যে গনতান্ত্রিক পরিবার তন্ত্রে বসবাস করছি সেখানে সরকারী বা বিরোধী দলীয় পার্টির প্রধানেরা প্লেটোর এই জন্মগত ধারায় বিশ্বাসী হয়েই চলছে। কিছু দিন আগে ভারতে নির্বাচন হয়ে গেলো এবং সমালোচিত, নিন্দিত একইসাথে নন্দিত মোদী ফের নির্বাচিত হলেন এবং ভারতে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির যুগ আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং পাকাপোক্ত হতে শুরু করলো। সেই সাথে কংগ্রেসের ভরাডুবি হলেও রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতাকে কেও পাত্তাই দিলো না। বরংচ পার্টি হেরে যাক, পরিবারততন্ত্র বেচে থাকুক। যদিও বিজেপিতে এই পরিবার তন্ত্র নেই, তবে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো।

পরিবারতন্ত্র বা জন্মসূত্রে শাসক হওয়ার ব্যাপারটা সৌদী আরবেও দেখা যায়। আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দলে তো রীতিমত আয়োজন করে সবাই পূজো করে।

প্লেটোর ছাত্র এ্যারিস্ট টল বিয়ে ও রাজনীতি নিয়ে তার বিপরীত আদর্শের চিন্তাভাবনা বেশ সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে “পুরুষ মাত্রই রাজনৈতিক প্রানী”। এর অর্থ হলো মানুষ জন্মগত ভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বেড়ে ওঠে। সামাজিক জীব হবার কারনে গোষ্ঠীর বাইরে বেড়ে ওঠার কথা চিন্তা করা যায় না বলেই গোষ্ঠীর উচিত প্রতিটি মানুষকে তার স হজাত উপায়ে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া। যদিও এ্যারিস্ট টল একটি রাস্ট্রের সরকার কি কি রূপ নিতে পারে তার একটা সরলীকৃত সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও তার এই সংজ্ঞা আমাদের সামনে খুব সহজেই ধরা দেয়। যদি একজন শাসক সবার কথা চিন্তা করে রাস্ট্র শাসন করেন তাহলে সেটা হবে রাজতন্ত্র আর যদি সে শাসক নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে শাসন করেন তাহলে সেটা হবে স্বৈরতন্ত্র। যদি শাসকশ্রেনী সমাজের একটি নির্দিষ্টশ্রেনীর হয় এবং সবার স্বার্থে শাসন করে তাহলে সেটা হয় অভিজাততন্ত্র আর যদি সেই নির্দিষ্ট শ্রেনীর শাসক নিজেদের কথা চিন্তা করে তাহলে সেটা হবে গোস্ঠী শাসনতন্ত্র। আর সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হয়ে সবার স্বার্থে কাজ করে তাহলে সেটা হবে রাস্ট্র শাসনব্যাবস্থা বা পলিটি। আর যদি সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের স্বার্থে কাজ করার অর্থ হলো গনতন্ত্র। এ্যারিস্টটলের মতে সর্বোত্তম রাস্ট্রব্যাবস্থা হলো রাজতন্ত্র যার পরেই লাইনে আছে অভিজাততন্ত্র। যেহেতু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র একসময় একনায়কতন্ত্র ও গোষ্ঠিশাসনতন্ত্রে পরিনত হয়, সে হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ ও ভালো অবস্থা হলো পলিটি বা রাস্ট্রশাসনব্যাবস্থা।

সে সূত্রে এ্যারিস্টটল প্লেটোর অস্থায়ী বিয়ে বা জন্মসূত্রে গোষ্ঠীর অংশ হওয়াটার বিরোধীতা করেন। তিনি পরিবারকে রাস্ট্রের অংশ হিসেবে দেখেন এবং প্রতিটা পরিবারের বিকাশ রাস্ট্রের অগ্রগতীর ধারক বলে মনে করেন। সে সূত্রে পুরো রাস্ট্রটাই হবে সকল পরিবারের রাস্ট্র যেখানে প্লেটোর রাস্ট্র হবার কথা এক পরিবার রাস্ট্র।

আসলে বিয়ে, রাস্ট্র, রাজনীতি নিয়ে এসব কথা এজন্যই বললাম আজ পত্রিকায় একটা খবর চোখে আসলো। ভগ্নীপতি তার স্ত্রীর বড় ভাইকে ফোন করে বললেন যে তার বোনের আত্মচিৎকার শুনতে। এই বলে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগলেন। এরকম প্রহার এই প্রথম ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর ছোটবোনকে কোনো মতে মানুষ করে পরে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় যৌতুক দেয়া হয় ৩ লাখ টাকা ন গদ। কিন্তু যার সাথে বিয়ে দেয়া হয় তার দাবী ছিলো আরও বেশী। সে ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্মও হয়। তারপরও যৌতুকের বাকি টাকার জন্য এরকম বেদম প্রহার দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এরকম ঘটনা আজই প্রথম নয়, আবহমান কাল থেকেই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রহারে অংশ নেন শ্বাশুড়ী ননদ এমনকি শ্বশুড় সাহেবও। প্রাচীন আব্রাহামিক ধর্মের নিয়মানুসারে আপনাকে মেয়েকে অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে হবে এবং তার বাকী জীবনের ভরনপোষনের দায়িত্ব নিয়ে হবে। তার বদলে একজন স্ত্রী তার সতীত্ব ও গর্ভ পুরোটাই স্বামীর জন্য বরাদ্দ রাখবেন। এর অন্যথা হলে ব্যাভিচার স হ নানা শাস্তির ব্যাবস্থা আছে। যদিও আব্রাহামিক ধর্মের সর্বেশষ সংস্করন ইসলামের প্রসার এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রসার ঘটলেও একটি মেয়ের পিতাকে অর্থ দিয়ে তাকে বিয়ে করার চল তেমন একটা দেখা যায় না। তবে নারীর সতীত্ব ও গর্ভের অধিকারের বেলায় এ অঞ্চলের মানুষের তারা কড়ায় গন্ডায় ওসুল করে ছাড়ে। সেখানে ধর্মের কড়া নিয়ম কানুন যেগুলো কিনা ক্ষেত্রবিশেষে জীবনসংহারী সেগুলো পালনেও কেও পিছপা হয় না।

এক্ষেত্রে আরো যে ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগে আমাদের দেশে গনতন্ত্রের নামে অলিগার্কি বা গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের সুবাদে নারী দ্বারা সুদীর্ঘ সময় দেশ পরিচালিত হলেও নারীরা আজও অবহেলিত।

এই পারস্পরিক দ্বন্ধপূর্ন ব্যাপারগুলো আমাকে বেশ আগ্রহী গড়ে তোলে এই ভেবে যে আমাদের স্বজাতীর নৈতিকতাবোধ বানর বা শিয়ালের ডায়াস্পরার সাথে মেলে কিনা! যখন কোনো বাঙ্গালী বিদেশের মাটিতে নিজেদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে বড় কথা বলে, তখন আমার বড্ড হাসি পায়।

এটা কি আমার দোষ? আমি আসলেই জানতে ইচ্ছুক।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডদ্রোহী রাজা রামমোহন রায়

সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডদ্রোহী এক মহান ব্যক্তিত্ব রাজা রামমোহন রায়……
জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলার নবযুগের প্রথম ও প্রধান নায়ক কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামমোহন রায়। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক অগ্রদৃষ্টিমান চিন্তানায়ক ও কর্মনেতা ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় ও শিক্ষাক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। ১৮৩০ সালে খেতাবসর্বস্ব মুঘল সম্রাট রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

রামমোহন রায় ১৭৭২ খ্রিস্ট্রাব্দের ২২ মে মাসে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কুলীন (বন্দোপাধ্যায়) ব্রাক্ষ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহন খুবই মেধাবী ছিলেন। তিনি সংস্কৃত, আরবী, উর্দু, ফারসী ও ইংরেজি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। এ ছাড়া হিব্রু, গ্রিক ও সিরীয় প্রভৃতি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম, খ্রিষ্ট ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি হিন্দুধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করেন এবং ইসলাম ধর্মতত্ত্ব ও আইনশাস্ত্রে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। প্রথম যৌবনেই তিনি অ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যা এবং ইউক্লিডের মূলনীতিগুলো পাঠ করেন। এ গ্রন্থাবলি অধ্যয়নের ফলে তাঁর ভেতরে যুক্তিবাদিতা ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম হয়। এ সময়ই তিনি ইসলাম ও হিন্দুধর্মের মধ্যে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করেন। পারস্যের সুফি মরমিয়া কবিদের কাব্য পাঠও তাঁর মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। যৌবনের প্রারম্ভে নানা গ্রন্থ ও শাস্ত্র অধ্যয়নের ফলে রামমোহন রায় মূর্তি পুজার ব্যাপারে বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। এবং তাঁর বিপ্লবী চিন্তার ফসল হিন্দুধর্ম সংস্কার আন্দোলন। তিনি প্রতিমা পূজা বর্জন করেন এবং বিশ্বাস করতেন এক সর্বজনীন ঈশ্বরপূজায়। তিনি ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্ম সভা, যা পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্ম সমাজ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ব্রাহ্ম সমাজকে হিন্দুধর্মের নতুন শাখা হিসেবে অভিহিত করা যায়।

স্বামী বিবেকানন্দ এর দৃষ্টিতে রামমোহনের তিনটি দান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। “His acceptance of Vedanta, his preaching of patriotism and the love that embraced the Muslanmans equally with the Hindus”.
এবং স্বামীজী তাঁকে “the first man of new generation” নামে ভূষিত করেছেন।

রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ। সনাতন হিন্দুধর্মে প্রচলিত অমানবিক ও নির্মম সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর আন্দোলনের ফলে ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথার মতো কুপ্রথা সরকার আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়।

রামমোহন রায় স্বীয় ধর্মমত ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য ১৮২১ সালে সংবাদ কৌমুদী নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ১৮২২ সালে মিরাত-উল-আখবার নামে ফারসি ভাষায় একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এই দুই পত্রিকায় রামমোহন রায়ের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের সপক্ষের যুক্তিগুলো গদ্য রচনার মাধ্যমে প্রকাশিত হতো।

১৮২৩ সালে গভর্নর জেনারেল জন এডাম ভারতীয় প্রেসের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন, তখন রামমোহন রায় বন্ধুদের নিয়ে প্রিভি কাউন্সিলে স্নারকলিপি পেশ করে বলিষ্ঠভাবে এর প্রতিবাদ করেন। তিনি বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুরকে নিয়ে ১৮২৬ সালে ভারতীয় জুরি আইনের কতিপয় বৈষম্যমূলক ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থবিরোধী সরকারি রাজস্বনীতির বিরুদ্ধে তিনি বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিংয়ের কাছে ১৮২৯ সালে প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন। বলা যায়, রাজা রামমোহন রায়ের সমসাময়িককালে কলকাতায় সংঘটিত এমন কোনো সামাজিক আন্দোলন পাওয়া যাবে না, যাতে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেননি। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন।

রাজা রামমোহন রায় ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর পর সেখানকার ইংরেজ সমাজ তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করে। ১৮৩২ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে যান। ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল নগরীতে ভ্রমণকালে তিনি অসুস্থ হন।ব্রিস্টলেই তাঁর চিকিৎসা চলে। বিলেতি প্রাজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলার নবযুগের নায়ক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

ইসলাম ধর্ম ও সনাতন (হিন্দু) ধর্ম – পর্ব এক

এ কথা সকল তথ্যাভিজ্ঞ মানুষই স্বীকার করবেন যে, বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখন ধর্ম এক নম্বর ইস্যু। পাঁচ শতাব্দী আগে ইউরোপে বস্তুবাদী ধর্মহীন একটি সভ্যতার উন্মেষ ঘটে এবং পরবর্তী সময়ে তারা যখন বিশ্বের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয় তখন তাদের তৈরি ব্যবস্থাগুলোকে দুনিয়াজুড়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে চর্চিত বস্তুবাদী ধর্মহীন পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’র প্রভাবে পৃথিবীর মানুষ এখন এতটাই মানবতাবোধহীন, আত্মাহীন, জড়বাদী, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিকে পরিণত হয়েছে যে সকল চিন্তাশীল, সাহিত্যিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই এখন একবাক্যে স্বীকার করছেন যে, যদিও ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি ও পৈশাচিকতা রুখতে ধর্মকে বাদ দিয়েই জাতীয় জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত ইউরোপে গৃহীত হয়েছিল কিন্তু সেটার ফল আশানুরূপ হয় নি, মানুষ শান্তি পায় নি। যেটা পেয়েছে সেটা হলো যান্ত্রিক প্রগতি (Technological advancement)। তারা দেখতে পাচ্ছেন যে, বাস্তবে কোথাও ধর্মকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয় নি। শত সহস্র বছর থেকে মানুষের মনে লালিত ধর্মবিশ্বাস দূর করা যায় নি। এ কারণে তারা নীতি পাল্টিয়ে ধর্মকে ব্যক্তিগত উপাসনার সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ করে। কিন্তু একটা পর্যায়ে রাষ্ট্র যখন কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare state) উপাধি ধারণ করে ব্যাপকভাবে জনসম্পৃক্ত হওয়া শুরু করল, মানুষও রাষ্ট্রের নানা কাজে অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেল, তখন সেই ধর্মবিশ্বাস আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে গণ্ডিবদ্ধ থাকে নি। নানা ইস্যুতে, নানা প্রেক্ষাপটে, ঘটনাপ্রবাহের নানা বাঁকে সেই ধর্মবিশ্বাস রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী নানা ইস্যুতে মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি সৃষ্টি করেছে। তখন রাষ্ট্রকে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। ধর্ম দিনশেষে ব্যক্তিগত গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে নি। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দখলদারিত্ব নিয়ে এবং জঙ্গিবাদের উত্থানের ইস্যুকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে মানবজাতি। এ পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ধর্ম এখন বিশ্বরাজনীতির এক নম্বর ইস্যু। ইউরোপে ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার সেক্যুলার দলগুলো রাজনীতির মাঠ দখল করেছিল সেই মাঠ এখন ডানপন্থী খ্রিস্টান প্রভাবাধীন দলগুলোর হাতে চলে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নী ইস্যুতে এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে যুদ্ধ চলছে তো চলছেই। সেখানে বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো জড়িত হয়ে গেছে। আর এই ভারত উপমহাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ক্রমশ উত্থান কীভাবে রাজনীতির অঙ্গনে কলকাঠি নাড়ছে সেটা সবাই জানেন।

ঔপনিবেশিক যুগ থেকে ভারতবর্ষেও চেষ্টা করা হয়েছে ধর্মকে জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার। ব্রিটিশ যুগের পূর্বে এ অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলমান এই দুটো ধর্মের অনুসারীই ছিল সংখ্যাগুরু। তার আগে বৌদ্ধরা ছিল বড় জনগোষ্ঠী। মুসলমানদের আগমনের পর কোটি কোটি ভারতবাসী ইসলামের শৃঙ্খলা, ন্যায়, সুবিচার, সাম্য ও উন্নত আদর্শের পরিচয় পেয়ে মুসলিম হয়। এখনও হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এই পাক-ভারত উপমহাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বর্তমান বাস্তবতায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যগঠন করা, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজিত তাদের পারস্পরিক মনোমালিন্য ও মানসিক দূরত্ব দূর করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা নির্যাতন চালিয়ে প্রায়ই নির্মমভাবে ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে। এখানে করা হচ্ছে হিন্দুদের উপর আর ভারতে করা হচ্ছে মুসলমানদের উপর।

এই দাঙ্গা, হামলার প্রেক্ষিতে উভয় ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে আরো সন্দেহ, আরো দূরত্ব, আরো বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে। এই শত্রুতামূলক মনোবৃত্তি যতদিন তাদের মধ্যে বজায় রাখা যায় ততই সাম্রাজ্যবাদী, অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর জন্য সুবিধা; তারা এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করতে পারবে। মধ্যপ্রাচ্যে তারা শিয়া সুন্নীর দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে তেলসম্পদসমৃদ্ধ দেশগুলো দখল করে নিচ্ছে। আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বটিকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, যদি আমরা সত্যিই আমাদের দেশটিকে ভালোবাসি, আমরা উপলব্ধি করি যে এ দেশের মাটিতে আমাদের পূর্বপুরুষের অস্থিমজ্জা মিশে আছে, এই মাটি দিয়ে হিন্দুরা মূর্তি বানিয়ে পূজা করে আর মুসলমানেরা এই মাটি দিয়েই ইটের মসজিদ গড়ে নামাজ পড়ে। এই মাটির ফল-ফসল খেয়েই হিন্দু – মুসলমান উভয় জাতির মানুষ পুষ্ট হয়। আমাদের এই অঞ্চলে হিন্দু মুসলমানের ভিতরে বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব এখন প্রবল যা অবিলম্বে দূর করা জরুরি। যখন কোনো লোকালয়ে অগ্নিকা- হয় তখন কারো ভবনই রক্ষা পায় না, দেবালয় মসজিদ কিছুই এড়ায় না। যখন ইরাক আক্রান্ত হলো তখন সিরিয়ার লোকজন বারে গিয়ে ফুর্তি করেছে। কিন্তু কয়দিন পরে দেখা গেল সেই আগুন সিরিয়াকেও ছাড়ল না, এখন সিরিয়ার মানুষ ইউরোপে ভিক্ষা করে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা সহজ কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন করা অত সহজ নয়। ওটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সরকারগুলো চেষ্টা করে আইন দিয়ে, শক্তি দিয়ে, অর্থ দিয়ে কারণ সরকারের কাছে ওগুলোই আছে। সরকারের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ান, ক্রন্দনরত মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত¦না দেন, ভাঙা উপাসনালয় সংস্কার করে দেন, ভাঙা মূর্তি জোড়া লাগিয়ে দেন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মানুষের মন যখন ভেঙে যায় তখন সেটা জোড়া লাগানো সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। সেজন্য এখন দুই সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্ম এক নম্বর ইস্যু, ধর্মকে ব্যবহার করে জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে, বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বিদ্বেষ বিভক্তি দূর করতে হলে উভয় সম্প্রদায়কে মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এটা করার জন্য তাদের উভয়কেই বুঝতে হবে তাদের গোড়া কোথায়, তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি কিনা, তারা আদৌ ঐক্যবদ্ধ হতে চায় কিনা। ঐক্যবদ্ধ হতে হলে উভয়পক্ষকেই ছাড় দিতে হয়। তারা তাদের উভয়ের লালিত ধ্যানধারণা, সংস্কার থেকে কতটুকু ছাড় দিতে রাজি হবে। যেহেতু বিষয়টি ধর্মীয় তাই ধর্মবিশ্বাসের মধ্য থেকে কতটুকু তারা বিসর্জন দিতে পারবে, কতটুকু গ্রহণ করতে পারবে, ঐক্যের স্বার্থে তারা কতটুকু উদারতা নিজেদের মধ্যে আনয়ন করতে পারবে এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

আমরা দেখব হিন্দু ও মুসলমানের বিশ্বাসগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে হাজার হাজার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুটো ধর্মদর্শনের মৌলিক বহু বিষয়ের গোড়া এক জায়গায়, দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কেবল ডালপালা নিয়ে। এখন এই দুটো ধর্মের মধ্যে কী কী বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ সেদিকে আলোকপাত করব।

একেশ্বরবাদ: ওয়াহদানিয়াত বা একত্ববাদ। ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতা হিসাবে মানা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা। সনাতন ধর্মেরও মর্মবাণী একমেবাদ্বীতিয়ম (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬:২:১), একমব্রহ্ম দ্বৈত্ব নাস্তি। যার অর্থ হচ্ছে প্রভু ব্রহ্ম একজন। তাঁর কোনো শরিক নাই।

এক বাবা-মা: এক পিতামাতা থেকে সমগ্র মানবজাতির উদ্ভব হয়েছে। এই বিশ্বাস সনাতন ও ইসলাম উভয় ধর্মের অনুসারীরাই লালন করেন। ইসলামে বলা হচ্ছে তাঁরা হচ্ছেন বাবা আদম ও মা হাওয়া। সনাতন ধর্মে তাঁদেরকে বলা হচ্ছে আদম ও হব্যবতী (ভবিষ্যপুরাণ)। চলমান … পর্ব দুই

গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অন্যতম

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি-
ধম্মং শরণং গচ্ছামি-
সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি’

গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অন্যতম
গৌতম বুদ্ধের চারটি আর্য সত্যের (চতুরার্য সত্য) সব কটিই দুঃখকে কেন্দ্র করে। তাঁর শিক্ষা ও দর্শনের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে কীভাবে দুঃখের হাত থেকে বাঁচানো যায়। গৌতম বুদ্ধ দুঃখের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাননি, তিনি দুঃখকে জয় করতে চেয়েছেন। দুঃখের হাত থেকে বাঁচার জন্য গৌতম বুদ্ধ কারও কাছে সাহায্য না চেয়ে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও সংযমের মাধ্যমে দুঃখের হাত থেকে অব্যাহতি লাভের চেষ্টা করেছেন।

জগতে দুঃখের কথা শুধু গৌতম বুদ্ধ একাই বলেননি, বিভিন্ন উপনিষদে দুঃখ সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে। সাংখ্য দর্শনের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ সাংখ্যকারিকার প্রথম সূত্রই ত্রিবিদ দুঃখ নিয়ে শুরু করেছে। ভারতীয় দর্শনের একমাত্র চার্বাক সম্প্রদায় ছাড়া আস্তিক ও নাস্তিক সব কটি দার্শনিক সম্প্রদায়ই দুঃখ নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এর হাত থেকে অব্যাহতি লাভ করাকেই জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য বলে মনে করেছে। তবে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের কোন দার্শনিকই গৌতম বুদ্ধের মত এত গভীরভাবে এবং যৌক্তিকতার সঙ্গে দুঃখ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেননি।

গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার সঠিক মূল্যায়নের জন্য পাশ্চাত্য দার্শনিকদের মধ্যে Schopen Hauer, Nietzsche, Kierkegaard কী বলেছেন আলোচনা করে দেখা যাক।

Schopen Hauer একজন দুঃখবাদী দার্শনিক। তাঁকে অনেকেই‍‍‍ ‘Prince of Pessimism’ বলেন। তাঁর মতে, এ জগত দুঃখের আলয়। দুঃখই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য। সুখ অকল্পনীয় ও অসম্ভব বস্তু। যতই আমাদের জ্ঞান বাড়ে, ততই আমাদের দুঃখ বাড়ে। কিন্তু গৌতম বুদ্ধ দুঃখের কথা বললেও আশার বাণী শুনিয়েছেন, বাঁচার পথ দেখিয়েছেন। Schopen Hauer বৌদ্ধধর্মকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম মনে করলেও বুদ্ধের মূল শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে আছেন। বুদ্ধের শিক্ষা আমাদের আশার আলো দেখায়, আর শোপেন হাওয়ার তাঁর সামনে পর্দা টেনে আমাদের হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দেন।

Nietzsche ও দুঃখ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য আরও ভিন্নতর। তিনি প্রথম জীবনে Schopen Hauer দ্বারা প্রভাবিত হলেও পরে সে প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। সে যাই হোক তিনি মায়া-মমতা, দয়া-সহানুভূতি ইত্যাদিকে অনেক ছোট করে দেখিয়েছেন। তাঁর কাছে মানবিক গুণের চেয়ে শক্তির গুরুত্ব বেশী। তিনি বলেন, উচ্চতর সম্প্রদায়ের স্বার্থে নিম্নতর সম্প্রদায়ের ধ্বংস হওয়া উচিত। গৌতম বুদ্ধের দর্শন ঠিক এর বিপরীত। তাঁর শিক্ষা ভালোবাসা আর দয়ার কথায় পূর্ণ। তাঁর কাছে ছোট-বড় কেউ নেই। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রীয়, বৈশ্য ও শূদ্র- এই শ্রেণী বিভাগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, জন্মগত কারণে মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। তাই Nietzscheর দর্শনের মতো উচ্চতর শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থে নিম্নতর শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের ধ্বংস বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনে অকল্পনীয়।

Kierkegaardও বুদ্ধের মত তত্ত্ববিদ্যায় উৎসাহী ছিলেন না এবং তাঁরও মূল লক্ষ্য মানুষের নৈতিক দিকটা। তিনিও বুদ্ধের মতো বলেছেন, কামনা-বাসনাই দুঃখ আনে। তবে তাঁর এ ব্যাখ্যা ঈশ্বরকেন্দ্রিক, কিন্তু বুদ্ধের ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই। বুদ্ধের মতো Kierkegaard বাসনার উর্দ্ধে যেতে চান না। কারণ তিনি মনে করেন, বাসনা ত্যাগ বৌদ্ধিক আত্মহত্যার শমিল।

প্রত্যেকটি দুঃখের জন্য ব্যক্তি নিজেই দায়ী, অন্য কেউ নয়। আরব দেশের এক কবি বলেছিলেন, ‘মারা যাওয়ার পর তাঁর কবরের ওপর যেন লিখে রাখা হয় যে, তাঁর পাপের জন্য তাঁর বাপ দায়ী। কারণ তাঁর বাপ না থাকলে তাঁর জন্ম হতো না এবং জন্ম না হলে তিনি পাপ করতেন না ।‘ কিন্তু বুদ্ধ কখনোই উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাননি। তাঁর মতে, আমার দুঃখ আমারই সৃষ্টি। শুধু দুঃখ নয়, এমনকি আমাদের জন্মের জন্যও আমরাই দায়ী। জন্মলাভের বাসনা থেকেই আমাদের জন্ম হয়েছে।

Pragmatism সম্প্রতিক কালের আর একটি দর্শন। এ দর্শনের মূল বক্তব্য হলো, যা কাজে লাগে এবং যা প্রয়োজনীয় ত-ই সত্য, তা-ই আলোচ্য ও বিবেচ্য হওয়া উচিত। সম্ভবত গৌতম বুদ্ধই প্রয়োগবাদেরও পুরোধা। মালুক্য পুত্রের তত্ত্ববিদ্যা বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে তিনি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, কেউ যদি তীর বিদ্ধ হয় তাহলে কী তার প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া উচিত ? যেহেতু সে কষ্ট পাচ্ছে, সেহেতু সে প্রথমে তীরটা খুলবে। এর আগে সে নিশ্চয়ই ভাববে না, তীরটা কী গতিতে এল, তীরটা কে মারল, তীরটা কীসের তৈরী। তাই আমরা যেহেতু দুঃখের সাগরে ভাসছি, আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া উচিত এই দুঃখের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায় তার চেষ্টা করা। বুদ্ধের মতে, আমাদের কাছে এর চেয়ে বড় সত্য আর নেই।

সমকালীন দর্শনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো Logical positivism. এ মত অনুসারে principle of verification হচ্ছে সত্যের মানদণ্ড। যে বাক্যকে পরখ করা যায় না তা অর্থহীন। তাঁদের মতে, তত্ত্ববিদ্যাবিষয়ক অবধারণ এই পরখনীতির আওতায় পড়ে না। তাই এরা অর্থহীন।

গৌতম বুদ্ধ পরখনীতির উল্লেখ না করলেও অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তত্ত্ববিদ্যায় আলোচ্য বক্তব্য প্রমাণও করা যায় না আবার অপ্রমাণও করা যায় না। গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রকার চরম মত ও পথের বিরোধী ছিলেন। সম্ভবত এটা তাঁর ব্যক্তি জীবনেরই অভিজ্ঞতার ফল। তিনি মধ্যমা প্রতিপদ বা মধ্যম পথকেই উত্তম পথ বলে স্বীকার করেছেন। অ্যারিস্টটল যে Golden Mean এর কথা বলেছেন তা তাঁর ২০০ বছর আগে গৌতম বুদ্ধই বলে গেছেন। বস্তুত বুদ্ধের মধ্যমা প্রতিপদ ও অ্যারিস্টটলের Golden Mean এর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন।

অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্মের আর একটি শাখা বলে মনে করেন। কেউ আবার মনে করেন, বৌদ্ধধর্মের মধ্যেই হিন্দুধর্ম পূণর্তা লাভ করেছে। যেমন, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিকাগো বক্তৃতায় বলেছেন, ‍’ Buddhism is the fulfillment of Hinduism.’ অনেকে আবার বৌদ্ধধর্মের সাথে খ্রীষ্ট ধর্মের মিল খুঁজে পেয়ে এদের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্বন্ধ আছে কিনা তা খুঁজতে চান।

বুদ্ধ ব্যবহৃত উপমাগুলি এবং যিশু খ্রীষ্টের প্যারাবেলস –এর মধ্যে সাদৃশ্য এত ঘনিষ্ঠ যে, তাহা শুধু chance coincidence বলে যেন সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। যেমন বুদ্ধের উপমাগুলি ভারতের পূর্ববর্তী সাহিত্যে পাওয়া যায় না তেমন যীশুর প্যারাবেলস বাইবেলের পূরাভাগে পাওয়া যায় না। গৌতম বুদ্ধ ও যীশু খ্রিষ্টের শিক্ষার মিল আমাদের চিন্তাকে নাড়া না দিয়ে পারে না।

আমার জানা মতে পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন কোন মনীষীর আবির্ভাব ঘটেনি যিনি গৌতম বুদ্ধের মতো একাধারে নৈতিক শিক্ষার প্রবক্তা ও সমাজ সংস্কারক এবং যার দর্শনকে অস্তিত্ববাদ, প্রয়োগবাদ ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সব ধর্মের শিক্ষিত প্রবক্তাদের কাছে তিনি সমাদৃত এবং এ বিষয়ে তিনি সত্যিই অনন্য। রাজত্বের লোভ ত্যাগ করে তিনি সত্যের সন্ধানে ব্রতী হয়েছিলেন। আজ তাই কোটি কোটি মানুষের হৃদয়সিংহাসনে তিনি সমাসীন।

তথ্যসূত্র : গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শন।

আঁকা : রিয়া দাশগুপ্ত।

মহামনীষী ওমর খৈয়াম

আজ থেকে ৯৭১ বছর আগে সুদূর ইরানে জন্ম নিয়েছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ ও কবি ওমর খৈয়াম। আজ গুগল নিজস্ব ডুডল দিয়ে বিখ্যাত ফার্সি গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং কবি ওমর খৈয়ামের ৯৭১ তম জন্মদিন উদযাপন করছে। গণিতবিদ হিসাবে, খৈয়াম ঘনকের সমীকরণ শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সমাধান সম্পর্কে তার বিশদ কাজের জন্য পরিচিত। তিনি কণিকের ছেদের জ্যামিতিক সমাধান বের করেছিলেন। তিনি প্রথম ঘন সমীকরণ সমাধান করার জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতির ব্যবহার করেন। খৈয়াম সমান্তরাল অক্ষ বিষয়েও কাজ করেছেন। একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে, তিনি জালালি ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করেন একটি খুব সুনির্দিষ্ট ৩৩ বছরের intercalation চক্রের একটি সৌর ক্যালেন্ডার। এটি পরে বেশ কয়েকটি ক্যালেন্ডার তৈরির ভিত্তি হয়ে ওঠে।

ওমর খৈয়ামের জন্ম ১০৪৮ সালের ১৮ মে ইরানের নিশাপুরে। তাঁবু নির্মাণকারীদের (খৈয়াম) একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওমর। আরবি ভাষায় তাঁর পুরো নাম ছিল আবু’ল ফাত ওমর ইবন ইব্রাহিম আল খৈয়াম। কবিতা ও গদ্যের জন্যও বেশ বিখ্যাত ছিলেন খৈয়াম। তিনি হাজারেরও বেশি রুবাইয়াত বা গদ্য লিখেছেন। ওমর খৈয়ামের ‘রুবাইয়াত’ পরে আর এক বিখ্যাত কবি Edward fitzgerald অনুবাদও করেন, তার মৃত্যুর বহুকাল পরে খৈয়ামের এই লেখা পর পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ওমর খৈয়াম চার লাইনের বিশেষ ধরনের কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়ে অাছেন। তার কবিতাগুচ্ছ রুবাইয়াৎ নামে সমাদৃত হয়েছে। পেত্রার্কের সনেটের মত রুবাইয়াৎ এক বিশেষ ধরনের চতুষ্পদী কবিতা। খৈয়ামের কবিতা গুচ্ছের বিষয়বস্তুু প্রেম, উপভোগ,পরকালের সুখ দু:খের অবিশ্বাস,জাগতিক বিষয়ে উদাসীনতা,মাদকতা প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে। ওমর খৈয়াম ঠিক কতগুলো রুবাই লিখে গেছেন তার সঠিক হিসাব কারো জানা নেই। তাঁর অমর গ্রন্থ রুবাইয়াৎ-ই-খৈয়ামে ৭২২ টি রুবাই পাওয়া গেছে। রুবাই ছাড়াও কবিতা গজল লিখেও তিনি খ্যাতি পান। ঊনিশ শতকে ইংল্যান্ডের কবি Edward fitzgerald ওমর খৈয়ামের কবিতা ইংরেজীতে অনুবাদ করলে পারস্যের বাইরের পাঠকের খৈয়ামকে জানার সুযোগ ঘটে। সেটা সতের শতকের দিকে। ইংরেজী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় ওমর খৈয়ামের কবিতা অনূদিত, বহুল পঠিত ও সমাদৃতি হয়।জীবনের অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে ১১২৩ সালে ৭৯ বছর বয়সে বিশ্বখ্যাত কবি ও মহামনীষী ওমর খৈয়াম মারা যান।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে অনুবাদ সাহিত্যের অনন্য এক কারিগর, তিনি সে প্রমাণ রেখেছেন পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামের ফারসি ভাষায় লেখা ‘রুবাইয়াৎ-ই-খৈয়াম’ বাংলায় অনুবাদের মধ্য দিয়ে। তিনিই প্রথম বাংলায় এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন এবং গ্রন্থটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। সে সময় বইটির চিত্রায়ন করেছিলেন খালেদ চৌধুরী এবং ভূমিকা লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী।

চলুন কাজী নজরুল ইসলামের অনূদিত ওমর খৈয়ামের কয়েকটি রুবাইয়াৎ পড়ে নেওয়া যাক-

১. আত্মা আমার! খুলতে যদি পারতিস এই অস্থিমাস
মুক্ত পাখায় দেবতা-সম পালিয়ে যেতিস দূর আকাশ।
লজ্জা কি তোর হল না রে, ছেড়ে তোর ওই জ্যোতির্লোক
ভিনদেশি-প্রায় বাস করতে এলি ধরায় এই আবাস?

২. সাকি! আনো আমার হাতে মদ-পেয়ালা, ধরতে দাও!
প্রিয়ার মতন ও মদ-মদির সুরত-ওয়ালি ধরতে দাও!
জ্ঞানী এবং অজ্ঞানীরে বেঁধে যা দেয় গাঁট-ছড়ায়,
সেই শরাবের শিকল, সাকি, আমায় খালি পরতে দাও।

৩. ছেড়ে দে তুই নীরস বাজে দর্শন আর শাস্ত্রপাঠ,
তার চেয়ে তুই দর্শন কর প্রিয়ার বিনোদ বেণির ঠাট;
ওই সোরাহির হৃদয়-রুধির নিষ্কাশিয়া পাত্রে ঢাল,
কে জানে তোর রুধির পিয়ে কখন মৃত্যু হয় লোপাট।

৪. আমরা দাবার খেলার ঘুঁটি, নাইরে এতে সন্দ নাই!
আসমানী সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই?
এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব
খেলা শেষে তুলে মোদের রাখবে মৃত্যু-বাক্সে ভাই!

চু চেন তাং

চু চেন তাং

চু চেন তাং! কার নাম চু চেন তাং ? এতো আমাদের দেশীয় নাম নয়। খাস চীন দেশীয় নাম। আরও অবাক লাগবে যে, চু চেন তাং রবীন্দ্রনাথেরই আর এক নাম। কবি সবেমাত্র নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গীতাঞ্জলী লিখে। সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ভারত-রবির খ্যাতি। দেশ দেশান্তর থেকে প্রচুর আমন্ত্রণ আসছে তাঁর কাছে। তিনি যে রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বকবি, তাই বিশ্বের ডাকে সাড়া না দিয়ে তাকে বিমুখ করবেন কি করে ? তাই পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে বিলেত, আমেরিকা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান এবং আরও নানান দেশ তিনি ঘুরলেন। তারপর ডাক এলো মহাচীন থেকে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আমন্ত্রণ জানালো।

ভারতের যুগ যুগান্তের বন্ধু, কৃষ্টি ও সভ্যতার সহযাত্রী মহাচীনের আমন্ত্রণ পেয়ে কবির অন্তরাত্মা আনন্দে নেচে উঠলো। ভারত ঋষি, কবি, আসছেন চীন ভ্রমণে। কিভাবে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হবে ? আর কি ভাবে করা হবে তাঁর আদর আপ্যায়ন? তাই নিয়ে সকলেই মহাব্যস্ত। দেশের ছোট-বড়-যুবক-ছাত্র সবার পক্ষ থেকে চীন সম্রাটের কাছে আবেদন গেল মহামান্য অতিথি কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ কে যেন চীন সম্রাটেরই প্রাসাদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ যে সম্রাটেরও সৌভাগ্য, তাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দেশবাসীর আবেদনে সাড়া দিলেন চীন সম্রাট। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ পা রাখলেন ঐতিহাসিক পিকিং শহরে, এখন যার নাম বেজিং বা পেইচিং। সমগ্র দেশের লোক জড়ো হলো কবিকে দেখার জন্য। তিল ধারণের জায়গা নেই। কবিকে দেখেতো সবাই অবাক। কবি কই ? এ যে শান্ত সমাহিত সর্বসুন্দর এক ঋষি, যাঁর চোখে মুখে দীপ্ত অপূর্ব সুন্দর জ্যোতি। ভূতপূর্ব চীন সম্রাট হু য়ান তাং কবিকে অভ্যর্থনা জানালেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি কবিকে উপহার দিলেন ৪০০ বছরের পুরনো একটি ছবি। ভারত-চীনের অতীত দিনের মধুর সম্পর্কের স্মারক। সেই প্রতীক উপহার পেয়ে আনন্দ উপচে পড়ে বিশ্বকবির।

এই আনন্দের ঢেউ যেতে না যেতেই সেখানেই আরেক আনন্দের বান এলো, কবির জন্মদিন – ২৫শে বৈশাখ। রাত্রির অন্ধকার মন্থন করে সূর্যশঙ্খ বেজে উঠলো। পরম সৌভাগ্যে মেতে উঠলেন চীনবাসী। বিশ্বকবির জন্মোৎসব পালন করবেন তাঁরা কবিকে সঙ্গে নিয়েই। কবি হয়তো সেই সময় ভেবেছিলেন, “পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই, তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই”। তিনি এখানেও পরমাত্মীয়দের খোঁজ পেলেন। চীন দেশীয় রীতিতেই পালন করা হলো তাঁর জন্মদিন। সারা দেশ থেকে এলো শত শত উপঢৌকন। নীল পাজামা, কমলা রঙের আলখাল্লা আর মাথায় বেগুনি টুপি দিয়ে সাজানো হলো কবিকে। সবার সামনে কবি বক্তৃতা দিলেন আবেগভরা কণ্ঠে। চীনের মানুষও তাঁদের প্রাণের ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বরেণ্য কবির জন্মোৎসবে। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই চীনবাসী ক্ষান্ত হলেন না, তাঁরা তাঁদের প্রিয় কবিকে নিজস্ব ভাষায় নতুন নামকরণ করে তাঁকে একান্ত আপনার পরমাত্মীয় করে নিলেন। কবির নতুন নাম দিলেন তাঁরা – “চু চেন তাং”, যার অর্থ “বজ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত ভারতসূর্য”। পরম তৃপ্তিতে কবি হাসলেন। হাসলেন ভারতসূর্য।

সাঈদ বাঙাল ভনে শুনে মূর্খ জন… বাংলা নববর্ষ প্রসঙ্গে…

প্রথমত: পয়লা বৈশাখ বাঙালের সার্বজনীন উৎসব ছিলো না। পয়লা বৈশাখ ছিলো বাঙালের দায়মুক্তির প্রহসন। রাজা, জমিদারদের খাজনা পরিশোধ আর মওকুফের মাধ্যমে নতুন দাসত্বের সূচনার জন্য পয়লা বৈশাখের জন্ম। পয়লা বৈশাখকে পয়দা করার ক্ষেত্রে বাঙালের ঐতিহ্য প্রাধান্য পায়নি, প্রাধান্য পেয়েছে সম্রাট আকবরের খাজনা আদায়ের সুযোগসুবিধার হিসাব নিকাশ।

দ্বিতীয়ত: বাঙালি বইলা যারা নিজেদের খুব গর্বিত ভাবেন, যারা নিজেদের আর্য রক্তের ধারক-বাহক হিসাবে আভিজাত্য প্রকাশ করেন তারা প্রকৃতপক্ষে সুবিধাবাদী দালাল। কারন ভূমিপুত্র বাঙাল থেকে বিশেষ হতে যাওয়া, বিশেষ হয়ে ওঠার কালচারেই বাঙালি গোষ্ঠীর জন্ম। বাঙাল পরিচয়ে তারা হীনমন্যতায় ভুগতো। এই কালচাঁড়াল বাঙালরা মোগল আমলে নায়েব হতে ছুটেছে আর ইংরেজ আমলে বাবু হতে চেষ্টার কসুর করেনি। ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে আর নিজেদের পিঠে শিক্ষিত লেবেল এটে এরাই ভূমিপুত্র বাঙালদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এসেছে এবং আসছে। এই বাঙালিরাই লুঙ্গি আর ধূতিকে অসভ্য পোশাকে পরিণত করেছে, আবার প্যান্টুলুন আর চোস্ত পায়জামা-শেরোয়ানিকে সভ্য পোশাকের মর্যাদা দিয়েছে। গিলে করা পাঞ্জাবি ছাড়া আজও তথাকথিত বাঙালি কালচাঁড়াল বাবুর চলেই না।

তৃতীয়ত: বাঙালি নয়, একমাত্র বাঙালরা এই ভূখণ্ডের প্রকৃত ভূমিপুত্র। বাঙালের যা কিছু অর্জন এমন কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত তাতে ভাগ বসিয়েছে এই ভূইফোঁড় বাঙালি গোষ্ঠি। বঙ্গবন্ধু ৭মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন সে ভাষণের শব্দ চয়ন আর ভাষা প্রমিত ছিলোনা, ছিলো নিপাট বাঙালের ভাষা। বাঙালই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো, আজও তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অবহেলিত, অপাঙ্কতেয়, রাজনীতির মাখন মালাই খাবার জন্য বাঙালি বাবুদের মত কখনো হামলে পরেন নাই।

চতুর্থত: পয়লা বৈশাখ বাঙালের দায়মুক্তির প্রহসন হিসেবে শুরু হলেও এখন তা বাংলাদেশের বাঙালের একমাত্র সার্বজনীন সামাজিক ও জাতীয় উৎসব। বাঙাল এই উৎসবকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছে, নিজের আয়ত্তে নিয়েছে। কিন্তু বাঙালের এই সার্বজনীন উৎসবকে কালচাঁড়াল বাঙালিরা নিজেদের দখলে নিতে চেষ্টা করবে না, তা কি হয়! তাই তারা বাঙালের নিত্যদিনের পান্তাকে পরিণত করেছে উৎসবের খাবারে, বাঙাল যে মৌসুমে সচেতনভাবেই ইলিশ পরিহার করে তখন ঐতিহ্যের তকমা এটে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশের মিশেল দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে তথাকথিত ঐতিহ্য। আগে অবহেলিত বাঙালরা বিস্মিত হতো- ‘বাবুরা দেখি পান্তা খায়।’ আর এখন খলবলিয়ে হাসে আর বলে- ‘ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিত।’

পঞ্চমত: বাঙালের ঐতিহ্য হলো শুভ কিছু পালনে মিষ্টি খাওয়া ও খাওয়ানো। নববর্ষে মিষ্টি আর দইয়ের সাথে চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, খই, বাতাসা, ওখরা, তিলের খাজা, কদমা, পিঠি খাওয়া এবং খাওয়ানো বাঙালের ঐতিহ্য। এছাড়া যে কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে ভালো খাবার খাওয়াও বাঙালের চরিত্র। লোকগান ও যাত্রাপালাও বাঙালের একান্ত ঐতিহ্য।

ষষ্টত: কেউ যদি ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে আর বাঙালের কালচারের দোহাই দিয়ে পান্তা-ইলিশের কথা, বটতলায় রবীন্দ্রসংগীত আর কেলোয়াতি গান শুনে বাঙালি কালচার নবায়নের তথাকথিত হাজার বছরের তত্বকথা শোনায়- তাদের বোঝান সেটা বাঙালির কালচার হতে পারে, এই দেশের জনসংখ্যার ৯৯.৯৯% বাঙালের কালচার নয়। তারপরেও যদি তর্ক করে, বাঙালের ঐতিহ্যবাহী প্যাদানি দিতে ভুলবেন না।

সপ্তমত: নববর্ষ পালন করুন নিজের মত। শিকড়ে ফিরতে হলে সঠিক ঐতিহ্যে ফিরুন, ভুল ঐতিহ্যে নয়। নতুন প্রজন্মকে দেশী খাবার, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনার- আমার সকলের।

পুনশ্চ:
রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ, কেলোয়াতি গানও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাঙালির ঐতিহ্য রক্ষার নামে সাত সকালে গাছের তলায় রবীন্দ্রনাথ গাওয়া আর কেলোয়াতি গান গাওয়াকে বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা ‘শিক্ষিত না-বাবু না-বাঙাল গোষ্ঠী’র হুতাশনের বেশী কিছু নয়।

পূনর্প্রকাশ

প্রাণের আকুতিই হচ্ছে সংস্কৃতির মূল স্পন্দন!

প্রাণের আকুতিই হচ্ছে সংস্কৃতির মূল স্পন্দন!

কি আজব কাণ্ড!
চারদিকে এতো উৎসব এতো ডামাডোল!
এতো আয়োজন, রঙ ঢঙ..
হৈচৈ.. গান
অথচ
কোথাও বঙাব্দের সুর নাই
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য নাই
সংস্কৃতির আবেদন নাই!!
একধরনের অপসংস্কৃতির প্রতিযোগিতা সর্বত্রই!
সংস্কৃতির মঞ্চ গুলো ছিনতাই হয়ে গেছে
কোথাও স্বকীয়তা নাই
কোন আত্মিক মমতা নাই
জাতিগত কোন প্রতিচ্ছবির চিহ্ন অব্ধি নাই!
অথচ
সবাই কবি
সবাই সাহিত্যিক, সবাই শিল্পী, সংস্কৃতকর্মী! হাহাহা…
একদিনের বাঙালিয়ানা সাজতে গিয়ে
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য কে লালিত প্রথা কে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে
আঘাত হানতে হানতে বিধ্বস্ত করে পেলেছে জাতিসত্তার শেকড়!
তবুও আমরা মন বোঝাই। মন কে বোঝাতে বৈশাখে ঘরের বাহির হই। নতুন বানী শুনি, স্বপ্ন আকি, আশার বুক বাঁধি।
শংকিত চোখে একদিকে দেখি ধর্মীয় গোঁড়ামি অন্যদিকে দেখি জাতীয়তাবাদের আকুতি
এরিই মাঝে আহত হই, বিভ্রান্ত হই
যখন পুঁজিবাদিরা তাদের অবৈধ অর্থকে হালাল করতে
এধরনের সংস্কৃতির মঞ্চ গুলো কিনে নেয়, ওরা অবলীলায় দখল করে নেয় আমাদের হাজারো ত্যাগ তিতিক্ষার মঞ্চ!..
বশ করে নেয় রাজনৈতিক মাথা গুলো
যাদের অগাধ অর্থ আর ক্ষমতার তেজস্ক্রিয়তায় সংকুচিত হয়ে থাকে আমাদের অজস্র কোমলমতি মন।
সে সব মাথা গুলো বশ করে
পুঁজিবাদেরা ইতিমধ্যে নামের আগে নানান বিশেষণ যুক্ত করেছে, অর্জন করেছে নানারকম বাহবা! হাহাহা..
কারণ আমরা নিজেরা যতোটা না তার অধীক অর্জনের নেশায় বুদ হয়ে আছি। যেহেতু ওদের কালো টাকার অভাব নাই, যেহেতু ওরা ক্ষমতাবান, যেহেতু ওরা শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ থেকে শুরু করে পাড়ার ক্লাব অব্ধি আধিপত্যের ক্ষমতা রাখে, সেহেতু
এদেশ, এই জাতিসত্তা এই ঐতিহ্য, এই সংস্কৃতি এখন শুধুই মাত্র একটি সিড়ি, একটি মুখোশ
যার আড়ালে চলছে অবিরাম স্বার্থ সিদ্ধির পাঁয়তারা।

তবুও
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আমার শুভেচ্ছা তাদের জন্য
যাদের সুবেহ সাদেকের আগে ঘুম ভাঙে, বিছানা ছাড়ে
যারা মাটি আর কাদাজলে অন্ন খোঁজে
যাদের রক্ত ঘামে আমাদের পাতে ভাত রুটির বন্দোবস্ত হয়। আমার শুভেচ্ছা তাদের জন্য যারা
কবি নয় অথচ কবিতার আকুতিতে দিনিমান নতজানু হয়ে থাকে হৃদয়ের বৃন্তে, যারা আড়ষ্ট শিল্পের কৌমার্য হতে আজো খুজে বের করে জন্ম জন্মান্তরের ইতিহাস!
যারা খরতাপে পুড়ে পুড়ে
এক ঢোক শীতল জলের আশায় ঘরে ফেরে মায়ের আচলে, বধূর কাছে…
যাদের আকণ্ঠ উচ্চারণই এই বাংলার ধ্বনিত সুর
যাদের অবলীলার ভাষাই
এই সংস্কৃতির আদিম শক্তি! আমার শুভেচ্ছা আমার সকল প্রেম সকল ভাষা তাদের জন্যই!…

শুভ নববর্ষ! …

পহেলা বৈশাখের পান্তা ইলিশে হিন্দু মুসলিমের আনন্দ দ্বিখণ্ডিত!

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের সাথে ইলিশের সম্পর্ক কী?
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। যেখানে আগেকার সময়ে এই বৈশাখ ছিলো কৃষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁরা চৈত্র সংক্রান্তিতে রাজা-জমিদারদের খাজনা বুঝিয়ে দিতো। রাজা-জমিদাররা তাদের পাওনা বুঝে পেয়ে, পহেলা বৈশাখে কৃষকদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতো। বাড়ি এসে কৃষকরা কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে নতুন করে জমিতে চাষাবাদ শুরু করতো। গরিব কৃষকদের সেই বৈশাখ আজ ধনী-গরিব সবার ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে।

একসময় মানুষ বাজার থেকে আটা কিনে লোকলজ্জার ভয়ে খুব গোপনে নিজেকে সামলে বাড়ি ফিরতো। যদি কেউ দেখে ফেলে, সেই ভয়ে। বাজার থেকে আটা কিনে এনেছে– কেউ দেখে বলবে, “লোকটা টাকার অভাবে আটা কিনে খাচ্ছে!” আর এখন সেই আটার দুর্মূল্যের কারণে গরিব মানুষ আটার সামনেও যেতে পারে না। একসময়ের গরিবের খাবার আটা এখন বড়লোকে খায়।

একসময় এদেশের প্রায় নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। ইলিশের মৌসুমে সস্তা দরের ইলিশমাছ খেয়ে ডায়রিয়া, কলেরা হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছাপ হয়ে যেত। সেই ভয়ে এদেশের ধনী ব্যক্তিরা ইলিশ মাছ খেতো না। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও দেখেছি, এদেশের মন্ত্রী এমপি মহোদয় বন্যার্তদের মাঝে ইলিশ মাছ বিতরণ করেছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ খায়নি, ডায়রিয়া কলেরার ভয়ে। আর এখন সেই ইলিশ মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে। আর মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, বড়বড় ব্যবসায়ীদের দরবারের খাবারের পরিবেশনে থাকে।

বাংলা পহেলা বৈশাখে ইলিশের সুসম্পর্ক স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও দেখা যায়নি। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে পহেলা বৈশাখ রূপ নিয়েছে নতুন সাজে। সেই সাথে পহেলা বৈশাখে যোগ হয়েছে গরিবের খাবার পান্তাভাতের সাথে বড়লোকের দামি ইলিশ।

অনেক বছর ধরে দেশের কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন বৈশাখের সাথে পান্তা-ইলিশকে পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ করে তুলেছে। প্রকৃত অর্থে এটি বানোয়াট সংস্কৃতিচর্চা। এর সঙ্গে বাঙালির কোনও সম্পর্ক নেই। পান্তা হচ্ছে গরীবের খাবার। আর যেকোনো উৎসবের সময় মানুষ যেখানে ভালো ভালো খাবার খায়, সেখানে আগেকার বড়লোকের ঘৃণিত খাবার গরিবের পান্তাকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্যবসার খাতিরে।


শব্দনীড় প্লাটফরমের সবাইকে বাংলা শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা।

আজ আমরা হিন্দু মুসলিম দ্বিখণ্ডিত!
পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস। যা বৈশাখ মাসের ১ তারিখ বা বাংলা সনের প্রথম দিন। যাকে আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা সাদরে বরণ করি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে। যাকে বলা হয়, “বাংলা নববর্ষ”। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের কয়েকটা রাজ্যে পালিত হয়। আগেও এই পহেলা বৈশাখ খুব জাঁকজমক ভাবে ঢাক ঢোল পিটিয়ে, সবাই একইদিনে বিশেষ উৎসবের সাথে পালন করতো। কিন্তু এখন এই বিশেষ দিনটি দুইভাগে বিভক্ত। কেউ পালন করে ১৪ এপ্রিল, কেউ করে ১৫ এপ্রিল। অর্থাৎ, ১৪ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় ভাবে সকল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের, আর ২৫ এপ্রিল নীরবে পালন করতে হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।

তাই অনেকে অনেকসময় বলেও ফেলে যে, আজকের পহেলা বৈশাখ আমাদের; আগামীকাল হবে আপনাদের। তার মানে হলো, আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের। আগামীকাল হবে হিন্দুদের। দুঃখ এখানেই, এক দেশে থেকেও একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব দুই ধর্মাবলম্বীদের দুইভাবে দুই দিনে করতে হচ্ছে। তা হয়েছে একটু ব্যবধানের কারণে।

ব্যবধান হলো, সৌরজগতের চাঁদ আর সূর্য, আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরী এবং খ্রিষ্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো, হিজরী সন। যা হয় চাঁদের হিসাবে। আর খ্রিষ্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যা আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর। আর খ্রিষ্টীয় সনের নতুন দিন শুর হয়, ইউটিসি ±০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু-না সূর্যোদয় থেকে শুরু; এ নিয়ে ভিন্নমত এখনো রয়েছে। ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও, ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে, আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০ টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে।

সেই থেকেই আজ আমরা এই পহেলা বৈশাখ দুইভাবে, আর দুইদিনে পালন করে থাকি। যা রাষ্ট্র এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা ১৪এপ্রিল। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে। সত্যি আজ আমরা হিন্দু মুসলিম ভাইভাই হয়েও, দুই ধর্মের মানুষ বছরের একটি বিশেষ দিনের আনন্দ দুইভাবে দুইদিনে পালন করতে হচ্ছে। তবু মনে দুঃখ নিয়ে, দুইভাবে দুইদিনে সবাইকে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!

আমার লিখা Speech বিশ্বের ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে

আমার লিখা Speech বিশ্বের ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন
World Miss University Bangladesh 2017 winner: Tahmina Othoi

December 04, 2017
Rohingya problem and internal situation in Bangladesh,special attention to the International community.

The land which is decorated with the largest mangrove forest in the world, one of the longest sea beaches in the planet, bountiful rivers and with its evergreen nature is my beloved motherland Bangladesh. The land is surrounded by India in the North, West and East. The Bay of Bengal is located in the South and shares a very little bit of border with its another neighbor country Myanmar in the south-East.

Myanmar was formerly known as Burma, its official present name is “Republic of the Union of Myanmar”, the capital is known as Naypyidaw. On 4 January 1948, the nation became an independent republic, named as the “Union of Burma”. On 2 March 1962, the military overtook the republican government through a coup and since then the government has been under direct or indirect control of the military.

Civilization had planted its root in Myanmar 13000 years ago. The first people to live there were from Tibet who used to communicate in ancient Burmese language and were the followers of Buddhism. That used to be an independent state back then.In 1287 the mighty Mongolians overtook the state from the natives and ruled there till 1552. The Burmese native culture got mixed with the Mongolian culture in that period of time.

Later, in the 17th and 18th century Burma was greatly developed,which is known as Taungoo Dynasty. The Taungoo Dynasty was overthrown by the Konbaung Dynasty in the mid 18th century. Later from 1824 to 1885 the land faced “Anglo-Burmese War” and as a result of which it was overtaken by the British Government and became a British colony. Historians indicate that, that was the time when the culture of the land was hugely influenced by the British and that was the period when the inter-racial fights among the Burmese started at an extreme level,which at a stage led Myanmar to achieve its independence from the British Empire in 1946.

There are many nuclear tribes in Myanmar,among which the “Muslims” is a profound one and could be traced back there from at least 700-800years ago from this time.

A beautiful state of Myanmar named “Rakhain” is one of the main living place of the “Muslim” tribe, which has an area of 36 thousand square km. Though all of you surely know at least something about them, I am going to tell you some more about the people of that place, their life, culture and history.

Why they have been oppressed till now from 1962? Why the military regime, even the republican government of the state is too much eager to terminate them? The people who live in the state of “Rakhain” are known as “Rohingyas” and who are mostly Muslims.

Now,the “Rohingyas” have lost their own homes, own villages, their own state. They are living in the refugee camps in other countries. It all started within the first decade of the state’s independence. It is really not clear why the ethnic group of Rohinyas was never enlisted by the state as an ethnic group and even why the state has never updated their list. But, as they were never enlisted in the list by the government, the government now refuses to recognize them as a native ethnic society ! Though there were many profound Muslim leaders in the state, from the time of their independence, even in their national assembly as representatives. But,the present evidence of the violence against the Muslims/Rohingyas show us that the government-military regime is too much interested in the business of killing their men, raping their women and burning their homes !

It is not that the people of Rakhain state were living in a heavenly situation before the present situation. they have been neglected since 1946 and as a result nor development neither education took place there in a healthy way and as a result of which the standard of living became poorly and full of struggle. It’s not that,the people who lives and had lived there were narrow minded and didn’t want development, education or a better future for their children, but the policy of the country has provide them none.

Though, as Bangladeshi we are taught, not to get involved in the matters which do not concern us, but we got involved when it has pushed its barrier and became our problem too by them killing the innocent people and by us by taking them as refugees.

Bangladesh is a hardworking proud developing country and as a nation we had passed difficult times to achieve this pace of development, but still we ourselves have not achieved proper timely development.

The hard working work force of our country, who is leading us on this path of development make us proud. But, if now as a nation we are to face the refugee problem because of the policy of the neighbor government, it makes us worried that our own economic progress might be hampered for their policy. The huge population of the country, is still our main problem and we are still not able to provide jobs for our own working class people. At a time like this, the “Rohingya” situation has thrown a new challenge to us and introduced a new level of difficulty on the path of our economic development.

Still, as a nation we are trying our best to provide for the Rohingya refugees, who has flown away from their home, who has been tortured and had their families killed and we have opened the border for them. At least 5 lakh Rohingyas have flown away from their land to ours from 1962 to 2012 and the present violent act by their military regime have made them to leave their home too and this present number of people has exceeded all the previous statistics. Its is said that, there are vast amount of natural resources in that Rakhain state and some of the powerful nations of the world have invested their money for those resources. But, the social scientists are investigating that whether it is the main reason to kill those innocent lives and make them leave their own homes or anything else.

“The whole world is a home for human beings. Even human beings have tried to make a suitable living place for the animals, but isn’t it unfair for human beings, not being able to live in their own homes?”

We demand that the government of Myanmar needs to set up the regulations about the Rakhain state in a proper manner, by establishing the right to live their lives and develop as today’s human beings. It seems like no one cares about the sufferings of the Rohingyas. We the people of Bangladesh don’t want financial support for our Rohingya refugees, we want a guarantee that the government of Myanmar will secure a future for them, in their own land.

Only in this year at least 10 lakh of their people have flown away to our country. At least 16 lakh of them has come here since 1962 and still they are living here. Not a single diplomatic step taken by our government has become fruitful because of their governments negligence about them. We as a nation could have indicated this as an International problem, a long time ago, but we did not,as we are the people of a peaceful land. But, now a time has when the situation has hit the rock bottom. Their military is breaking the International border laws and sending their air-force on the border, even they are crossing the borders sometimes ( approximately 17 times) to impose some kind of a threat.

But, still as a nation we have kept our head cool, did not fire back a single shot or send a single plane of our air-force to face them in the border. We as a nation is not that much arrogant to break the International border laws, instead we respect them. But if the government of Myanmar finds our good manner as weakness then it will be a mistake for them.

We just want to guarantee a safe passage to the refugees to return to their homes and live a life in the proper way and not be threatened again. We want the support from all the other nations from all over the world to make the government of Myanmar take back their people and to preserve their normal human and civil rights.

We, Bangladesh as a nation has destroyed a huge amount of forest land which is worth at least 1 thousand crore taka to make camps for these refugees. Every single person of our country has tried something to make the lives of these refugees habitable and not only that, we tried to collect funds from the all the International sources to support these innocent lives.
If we as the residents of this planet cannot guarantee the future safety of this Rohingya tribe it will surely be a loss for all of us. People might forget this incident, this period of time as other International issues will appear, but that will guarantee us nothing but the loss of innocent lives.

We, Bangladesh as a nation is not able to provide them livelihood for an unknown period of time, as I have already mentioned that we ourselves are a newly developing nation. if the situation does not change now, it will not only be a loss of the lives of those innocent refugees but also it will affect Bangladesh as a nation in its new speed of development. Therefore,we want all of our help and support to solve this problem. We want to deliver the message to the Myanmar government that, ”You, as an institute might be powerful and you do fulfill all the needs of your policy and the needs of your powerful individuals’ lives, but you need to keep in mind that these innocent people have lives too, they also feel the hunger and thirst, they also bleed, so what made you think that you can just terminate them just because they are weak! Sometimes things cannot be made possible due to economic barriers,but that does not mean the minimum quality of life cannot be provided to the people.”

All we want is safety,security and a quality life for all the people around the world who have been tortured and fled away from their homes,as it is their civil rights. It is a great honor to fight and raise our voice for those who are under privileged and tortured, the innocent victims. Dear, honorable audience, I want to deliver this message to the world through you to establish the right for these innocent people. I want to deliver this message, so that the people or institutions who think and work for people can listen to us, understand and help those poor innocent lives. I want to send this message as I consider myself as a voice for the under privileged and tortured human lives.

My warm appreciation is there for all of you present here as a representative of Bangladesh and I convey my respect and love from Bangladesh to all of you as I am about to finish my speech. May all of you live long and may Bangladesh live long. Thank you.

Writer: Bakhtiar Shamim.
Journal poet and columnist, Dhaka, Bangladesh.

আমার দেখা ব্লগ ব্লগার ও ফেসবুকে শব্দনীড় ব্লগ পেইজ!

ফেসবুকে স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজ আছে, তা আপনি জানেন কি? আমি জানি এবং নিয়মিত ফলো করে আসছি। আজকে এ নিয়েই কিছু লিখতে চাই! আশা করি সাথে থাকবেন। তার আগে ব্লগ এবং ব্লগিং নিয়ে আমার কিছু নূন্যতম অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, জেনে নিন!

বর্তমানে মোবাইল ফোন হাতে-হাতে ছড়াছড়ি। ঘরে ঘরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ওয়াই ফাই নামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। একসময় কারোর হাতে মোবাইল ফোন দেখলেই, সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতাম। আর ভাবতাম, কী দিয়া যে তৈরি করলো এই মোবাইল! ঈশ! যদি আমি একটা কিনতে পারতাম!

এভাবে ভাবতে ভাবতে ২০০৬ ইংরেজি সালে নোকিয়া ১১১০ মডেলের ৩৬০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল সেট নিজেই কিনে ফেললাম। সাথে ৫৫০ টাকা দিয়ে একটা বাংলালিঙ্ক সিম কার্ডও কিনে শুরু করলাম, নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা অপরের সাথে কথা বলা।

এরপর ২০০৭ ইংরেজি সালে নোকিয়া N-73 মডেলের পুরাতন একটা মোবাইল সেট কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকি। তখনকার সময়ে নেটওয়ার্কভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল GPRS সার্ভিস। সেসময় নোকিয়া বাটন মোবাইলের সেটিং থেকে কনফিগারেশন সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। আর অনলাইনে থাকা বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করতাম। এটাই ছিলো আমার নিয়মিত অভ্যাস।

কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর মোবাইলটি আর ভালো লাগছিল না। ভালো না লাগার করণ ছিলো শুধু একটাই। তাহলে নোকিয়া N-73 মডেল মোবাইলে বাংলা লেখা যেতো না, আর মোবাইল স্ক্রিনে বাংলা লেখা প্রদর্শিতও হতো না।

এরপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোকিয়া C-3 দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। তাতেও বাংলা লেখা যেতো না। মনের আক্ষেপ আর আফসোস শুধু থেকেই যেতো। তারপরও বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সার্চ করা ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ। সেসব কাজের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ব্লগে উঁকি মারা সহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া সহ আরও অনেককিছু। তবে বেশকিছু অনলাইনভিত্তিক দিনলিপি বা ব্লগে সময়টা বেশি ব্যয় করতাম।

একসময় অনলাইনে থাকা একটা স্বনামধন্য ব্লগে লেখকদের লেখা পড়তে খুবই ভালো লাগতো। নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করতো। একসময় নোকিয়া বাটন মোবাইল C-3 দিয়ে এক ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কিন্তু নোকিয়া C-3 মোবাইলে তো বাংলা লেখা যায় না। কোনরকমভাবে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে স্বল্পসংখ্যক শব্দ দিয়ে একটা লেখা জমা দিলাম। ব্লগে লেখা জমা দিয়ে বেশকিছুদিন আর ব্লগে প্রবেশ করিনি।

এরপর প্রায় দুই তিনমাস পর অনেক কষ্ট করে মনের স্বাদ মেটানোর জন্য সিম্ফনি W-82 মডেল-এর একটা মোবাইল কিনলাম। মোবাইলটা কিনেই, সেইদিনই ব্লগে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য হলো, আমার জমা দেওয়া লেখাটার অবস্থা দেখা। দেখি সম্মানিত মডারেটর লেখার শিরোনাম বাংলায় দেওয়ার জন্য বলছে। সিম্ফনি এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা লেখা যেত। লেখার শিরোনাম দিলাম, “আমিও মানুষ”। আবার জমা দিয়ে আর ব্লগে প্রবেশ করি না। প্রায় কয়েকমাস পর ব্লগে প্রবেশ করলাম। দেখি আমার লেখায় কয়েকজন সম্মানিত লেখকদের মূল্যবান মন্তব্য। সেসব মন্তব্যের উত্তর দিতে গেয়েই, আজ অবধি ব্লগ আর ব্লগিংয়ের মাঝেই আটকা পড়ে আছি। ব্লগে লিখছি, পড়ছি, দেখেও যাচ্ছি। অনেক সম্মানিত লেখক-লেখিকাদের সাথে ঘনিষ্ঠতাও গড়েছি। শুরু থেকে এপর্যন্ত ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগের পোস্টের মন্তব্য বিষয়ে সামান্যতম ধ্যানধারণাও মোটামুটি অর্জন করতে পেরেছি বলেও মনে হয়।

ব্লগ:
আমার জানা মতে ”ব্লগ” শব্দটি ইংরেজী (Blog), এর বাংলা প্রতিশব্দ৷ যা এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি (Blog) শব্দটি আবার (Weblog) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেটুকু জানা যায়, এই ব্লগের ইতিহাস এবং অনলাইন দিনপত্রী ১৯৯৭ ইংরেজি সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলছে। প্রায় ব্লগই মূলতঃ লেখায় আকিন, কিছু কিছু আছে শিল্প(আর্টব্লগ), ছবি(ফটোব্লগ)। ডিসেম্বর ২০০৭এর হিসাবে, ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন “টেকনোরাটি” প্রায় এগারো কোটি বার লাখের ও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছে।

ব্লগার:
যারা আমার আগে থেকে ব্লগে লিখেন, তাঁরা অবশ্যই ব্লগ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালোই জানেন। তা আর নতুন করে নতুন কিছু উপস্থাপন করার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমরা যারা ব্লগে লেখালেখি করছি, সবাই জানি যিনি ব্লগে লিখেন; তাকে “ব্লগার” বলে। তবে সহ ব্লগারগণ একে অপরকে লেখক লেখিকা বলেই বেশি সম্বোধন করে থাকে। যেহেতু একই প্লাটফরমে একে অপরের সাথে লেখা শেয়ায় করছে, তাই। তারপর পছন্দ অপছন্দের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যার যার মনের ভাব জানান দিচ্ছে। এতে করে একে অপরের সাথে খুব অল্পদিনে মধ্যেই সুসম্পর্কও গড়ে উঠছে।

ব্লগিং:
যিনি ব্লগে পোষ্ট করেন তাকে ব্লগার বলে। পোস্ট করা বা ব্লগে লেখালেখি করা হচ্ছে “ব্লগিং”।

মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া:
ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের পছন্দের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন। আর পাঠক সেখানে লেখার উপর ভিত্তি করে তাদের মন্তব্য করতে পারেন৷ মন্তব্য দানকারী পাঠককে অবশ্যই ব্লগের নিবন্ধিত পাঠক হতে হবে। মানে হচ্ছে, একজন ব্লগারের লেখনীয় পোস্টে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে তাকে সেই ব্লগে লগইন করতে হবে। নিবন্ধিত সদস্য ছাড়া কিছুতেই মন্তব্য করতে পারবে না। ব্লগের পোস্টে আর ব্লগার অথবা লেখক-লেখিকার লেখায় মন্তব্য হলো একরকম চুম্বকের আকর্ষণের মতন। চুম্বক যেমন লোহাকে কাছে টানে, তেমনিভাবে মন্তব্যকারীকে পোস্টদাতা বা লেখক-লেখিকা ভালোবেসে ফেলে। তারপর একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাব গড়ে উঠে।

ব্লগ পোস্ট:
সাম্প্রতিক কালে অনলাইনে থাকা বেশিরভাগ ব্লগ সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একজন দায়িত্বশীল ব্লগার নিজের এলাকার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক লেখা ব্লগে আপডেট করেন বা করে থাকেন। অনেক সময় কোন খবরের শিরোনামের উপরও ব্লগার তার মতপোষন করে লিখে ব্লগে পোস্ট করে থাকেন। আবার কেউ কবিতা লিখেন। কেউ ইতিহাস লিখেন। কেউ সাহিত্য নিয়ে লিখেন। কেউ আবার ছোটগল্প ও রম্য লিখে ব্লগে পোস্ট করেন।

শব্দনীড় বাংলা ব্লগ:
তবে আমার মনে হয়, আমাদের এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের জন্মকাল ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ। ব্লগে প্রথম পোস্ট করেছিলেন, সম্মানিত লেখক মুরুব্বী। লেখার শিরোনাম ছিল, “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল!” পোস্টে মন্তব্য দানকারী ছিলেন, সম্মানিত লেখক মামুন। এপর্যন্ত শব্দনীড় বাংলা ব্লগে পোস্টের সংখ্যা ৭৭৮১টি। সর্বশেষ পোস্টের শিরোনাম, “আমার দেখা ব্লগ ব্লগার ও ফেসবুকে শব্দনীড় ব্লগ পেইজ!”

ব্যক্তিগত:
আমি এই স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগে নিবন্ধিত হয়েছি, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ। পোস্ট করেছি আগস্ট মাসের ৭ তারিখ। লেখার শিরোনাম ছিল, “আমি রাত জাগা পাখি!” মন্তব্য পড়েছিল ৬+৬=১২টি। আমার নগণ্য লেখনীয় পোস্টে ৫জন সম্মানিত লেখক-লেখিকার করা মন্তব্যের উওর দিয়ে গিয়েই হয়তো এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের মায়াজালে আটকা পড়েছি। মনে হয় আর কখনো শব্দনীড় থেকে আড়াল হতে পারবো না।

আমার চেয়ে আরও হৃদয়বান ব্লগার এই শব্দনীড়ে আরও অনেক আছে। তাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন, পোস্ট করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি অধম শুধু সময়ের অভাবে এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগে নিয়মিত হতে পারছি না। কারণ, আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ, তাই। তবে আমার হাতে থাকা ব্যবহারিক মোবাইল থেকে প্রতিদিন কয়েকবার ব্লগে উঁকি মারি। সবার পোস্ট ফলো করি। সময়ের অভাবে পোস্টে মন্তব্য করতে বা দিতে পারি না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত!

ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ:

শব্দনীড় বাংলা ব্লগে আমার লেখা প্রকাশ হওয়ার পর আমি ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করি। একসময় ফেসবুকের সার্চ বক্সে শব্দনীড় লিখে সার্চ করে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ দেখতে পাই! মনে মনে খুবই আনন্দিত হলাম। আনন্দিত হলাম এই কারণে যে, বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক নিউজ, ব্লগ সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিজস্ব পেইজ থাকে। যার কারণ হলো সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ানো। ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগের নিজস্ব পেইজ থাকা মানে ব্লগের পোস্ট বা ব্লগারদের লেখায় পাঠক সংখ্যা বাড়ানোই এর মূল লক্ষ্য।

দুঃখ:
শব্দনীড় ব্লগ টিম ব্লগের সমস্ত পোস্ট অটোমেটিক ফেসবুক পেইজে শেয়ার হচ্ছে। আমরাও শব্দনীড় বাংলা ব্লগে লেখালেখি করছি, পোস্ট করছি, পাঠক সংখ্যার দিজে নজর রাখছি, মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি রাখছি আমরা কিন্তু সবাই বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করছি। কেউ কেউ নিজের প্রকাশিত পোস্ট ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করছে। পোস্টের পাঠক সংখ্যা দিকে তাকিয়ে থাকছে।

অথচ ফেসবুকে থাকা শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজের দিকে কেউ একটি নজরও দিচ্ছি না। শব্দনীড় বাংলা ব্লগ ফেসবুক পেইজে থাকা নিজের পোস্টের দিকেও কেউ নজর দিচ্ছে না, লাইক দিচ্ছে না, দুটি শব্দ বিশিষ্ট বাক্য লিখে মন্তব্যও করছে না।

এসব দেখে সবই ভালো লাগে, তবুও দুঃখ শুধু এখানেই থেকে যায়। দুঃখ থাকবে না সেদিন, যেদিন দেখবো ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজে ব্লগ থেকে শেয়ার হওয়া প্রতিটা পোস্টে সবার লাইক কমেন্ট দেখবো। তখন ব্লগে থাকা পোস্টগুলোর পাঠক সংখ্যাও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ব্লগের সুনামও বাড়বে।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদের সাথে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!

আগেকার হাতে খড়ি বর্তমানে শিশুর স্কুলব্যাগ!

শিশুদের জন্য “হাতে খড়ি” উৎসব আগে গ্রাম শহরের সবখানে প্রচলিত থাকলেও, বর্তমানে এর বিন্দুবিসর্গ বলতে নেই বা কারোর চোখেও পড়ে না। আক্ষরিক অর্থে হাতে খড়ি হচ্ছে, লেখাপড়ার সাথে শিশুর প্রথম পরিচয়। শিশু জন্মের তিন থেকে চারবছরের মাথায় এই উৎসবটি পালন করা হতো। তা বেশি প্রচলন দেখা যেত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। জন্মের পর থেকে জীবনে যতোগুলো উৎসব পালন করা হয়, তারমধ্যে হাতে খড়ি শিশুদের জন্য খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ছিল।

হাতে খড়ি অর্থ হলো, শিক্ষার সূচনা বা শিক্ষার শুরু। এই উৎসবটি পালন করা হতো, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে, নাহয় সরস্বতী পূজার পরপর এক সপ্তাহের মধ্যে শনিবার বাদে যেকোনো দিন।

অনেকে এই বিশেষ উৎসবটি সরস্বতী পূজার দিনই করে ফেলতো। কেননা, সরস্বতী পূজা মানেই বিদ্যাদেবীর পূজা। তাই ওইদিন পুরোহিত সরস্বতী পূজা সম্পাদন করা শেষে, এই হাতে খড়ি উৎসবটির কাজ সম্পন্ন করতো।

যেসব অভিভাবকগণ তাঁদের শিশুকে হাতে খড়ি দিতে ইচ্ছুক থাকতো, সেসব শিশুদের হাতে খড়ি দেওয়ার কাজটি পূজামণ্ডপেই করে ফেলা হতো। যেসব শিশু বাদ পড়তেন, পূজার পর শনিবার বাদে যেকোনো দিন তাঁদের হাতে খড়ি উৎসবের কার্যসম্পাদন করা হতো। আগেকার সময়ে বেশিরভাগ শিশুদেরই হাতে খড়ি দিয়ে লেখাপড়া শুরু করা হতো। তা ধনী আর গরিবদের মধ্যে কোনও ব্যবধান ছিল না। তবে ধনীব্যক্তিদের সন্তানদের একটু জাঁকজমকভাবেই করা হতো। কেননা, ধনীব্যক্তিদের ধনসম্পদ বেশি বলে, তাঁদের নিয়মনীতিও একটু বেশি থাকতো, তাই। তবে সব পিতামাতাই তাঁদের সন্তানকে হাতে খড়ি দেওয়ার নিয়মটা করেই স্কুলে পাঠিয়েছেন।

আমারও হাতে খড়ি দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট মনে না থাকলেও, একটু বড় হয়ে যাদের হাতে খড়ি উৎসব দেখেছি, তা খুবই মনে আছে। সরস্বতী পূজার আগের দিনই শিশুর অভিভাবক এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পূজা কার্যসম্পাদনকারী পুরোহিতকে অবহিত করে রাখতেন।

সরস্বতী পূজার আগে বা হাতে খড়ি উৎসবের আগের দিন বাঁশের কঞ্চি (ছিপ), কলাপাতা, একটা খালি দোয়াত, গরুর খাটি দুধ, ধান-দূর্বা, ফুল-তুলসী সহ কিছু ফলফলারি সংগ্রহ করে রাখা হতো। হাতে খড়ি উৎসবের দিন ভোর থেকে শিশুকে কিছুই খেতে দিতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে খড়ি কার্যসম্পাদন না হতো।

এমনিতেই যেকোনো পূজার আগের দিন সংযম পালন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়মনীতি। তাই ছোটবেলায় শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজায় সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার করা এমনিতেই ছিল বাধ্যবাধকতা, তারমধ্যে বাড়তি যোগ হচ্ছে হাতে খড়ি! শিশুটির নিরামিষ আহার, আতপ চালের ভাত খাওয়া, উপোস থাকা সম্ভব হবে কি-না এসব নিয়ে পূজার আগের দিন শিশুর অভিভাবকগণ খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো।

সরস্বতী পূজার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণে হতো আনন্দঘন এক আয়োজন! পুষ্পাঞ্জলি পর্বের পরপরই একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা কোমলমতি শিক্ষার্থীও ধর্মীয় চেতনায় দিয়ে থাকতো হাতে খড়ি। পুরোহিত হাতে খড়ি দিতে বা নিতে ইচ্ছুক সব শিশুদের একসারিতে বসাতেন। শিশুর সামনে থাকতো কাগজের মতো কলাপাতার চিকণ টুকরো। আর গরুর খাটি দুধে জল মিশ্রিত একটা দোয়াত। দোয়াতে থাকতো কলমের মতো চোকা একটা ছোট বাঁশের কঞ্চি(ছিপ)। শিশুর পেছনে থাকতো শিশুর মা, বাবা অথবা বড়দিদি।

পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে দোয়াত থেকে কলমের মতন কঞ্চি দিয়ে এক এক করে প্রত্যেক শিশুর সামনে থাকা কলাপাতায় অ-আ ক-খ লিখে দিতেন। এরপর শিশুর পেছনে বসা মা, বাবা অথবা বড়দিদিরা শিশুর হাতে কঞ্চি ধরিয়ে পুরোহিতের অ-আ ক-খ-এর উপর শিশুর হাত ঘোরাতেন। কয়েকবার ঘোরানোর পর পুরোহিত সবার বিদ্যাবুদ্ধি কামনা করে সরস্বতী দেবির নিকট প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেষ করতেন, হাতে খড়ি উৎসব। এরপর থেকেই শিশুর লেখা-পড়ার জন্য চলতো শতরকমের চেষ্টা প্রচেষ্টা।

এই যুগে আর হাতে খড়ি উৎসবটা দেখা যায় না। আর হাতে খড়ি কাকে বলে এবং হাতে খড়ি কী, তাও অনেকে জানেনা। এখন শুধু জানে এবং বুঝে, শিশুর বয়স তিনবছর হলেই; শিশুকে ইংলিশস্কুল বা কিন্ডারগার্টেন ভর্তি করতে হবে। আর শিশুর কাঁধে একটা সুন্দর বেশি দামি বড়সড় স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে হবে।

তাই এখন দেখা যায় শিশুর বয়স তিনবছর হলেই, শিশুর কাঁধে বড় একটা স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে কিন্ডারগার্টেন নিয়ে যেতে। এটা একরকম আধুনিক যুগের ফ্যাশনও বলা চলে। এমনও দেখা যায়, শিশু তাঁর হাতের বুড়ো আঙুল চুষতে চুষতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে যাচ্ছে। সাথে সেজে-গুঁজে যাচ্ছে শিশুর মা অথবা অন্য কেউ। শিশুকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে, শিশুর ছুটি না হওয়া পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেনের আশেপাশেই ডিউটি দিচ্ছে।

স্কুল ছুটির পর আবার বিশাল একটা স্কুলব্যাগ শিশুর পিঠে ঝুলিয়ে দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কেউ হেঁটে, কেউবা গাড়িতে। শিশুর স্কুলব্যাগের ভেতরে থাকছে, পানির বোতল, প্লাস্টিকের টিফিন বাটি সহ পড়ার চেয়েও বাড়তি কিছু বই। যা শিশুর অভিভাবকরা খুব সখ করে শিশুর স্কুলব্যাগের ভেতরে ভরে দেয়। যাতে শিশুর কাঁধে ঝুলানো স্কুলব্যাগটি একটু বড় দেখা যায়। যত বড় স্কুলব্যাগ হবে, তত বাড়বে শিশুর অভিভাবকদের প্রশংসা। তাই সময়সময় দেখা যায়, বিশাল স্কুলব্যাগের ভারে শিশু কুঁজো হয়ে যাচ্ছে। তবুও শিশুটিকে স্কুলব্যাগ বহন করতেই হচ্ছে।

চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ-ভ্যান গঘ এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা

জন্মদিনে সমকালীন ও আধুনিক চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ-ভ্যান গঘ এর প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা …

“ছবি এঁকে কিছু বলতে চাই আমি, আর তাতেই সঙ্গীত যেমন সান্ত্বনা দেয় তেমনি সান্ত্বনা পাবো” – বলেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ- পৃথিবীর মহান শিল্পীদের একজন। জন্মেছিলেন হল্যান্ডে ১৮৫৩ সালে আজকের দিনেই। সেজান, গঁগা এবং ভ্যান গঘ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্কর এই তিন শিল্পীই আধুনিক শিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ। অতীত এবং সমকালীন শিল্প সাহিত্য জগত সম্বন্ধে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের এর প্রচুর জ্ঞান ছিলো; নিজের মননে সব কিছুর সম্মেলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন।

“কখনো কখনো অনির্বচনীয় অনেক কিছু থাকে, সমস্ত প্রকৃতিটা যেন মনে হয় কথা বলতে চায়; এ জিনিসটা সবাই দেখতে পায় না, অনুভব করতে পারেনা। যার চোখ আছে, কান আছে, হৃদয় আছে তার জন্যেই ঈশ্বর এ সৌন্দর্য করে রেখেছেন। এ কারণেই আমার মনে হয় একজন শিল্পী সুখী, সে যা দেখে তার একটুখানিও প্রকাশ করতে পারলে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায়।

আমি আমার কাজের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যার ভেতর আমার হৃদয় ও আত্মা সম্পূর্ণ দিয়ে নিবেদিত থাকতে পারি এবং যা আমার বেঁচে থাকা অর্থময় করে, অনুপ্রাণিত করে।” (ছোট ভাই ও জীবনের একমাত্র সহযোগী থিও-কে লেখা চিঠির অংশ বিশেষ )

ভ্যান গঘ সম্বন্ধে বলা হয় … His paintings are characterized by thick brush strokes, brilliant colors, and jagged lines, through which Van Gogh expressed his emotional response to his subjects rather than providing an accurate description of them. As a result he became a leader in the development of expressionism in painting.

বেলজিয়ামে গিয়ে এন্টর্প একাডেমিতে ভর্তি হন পদ্ধতিগতভাবে ছবি আঁকার নিয়ম-কানুন শিখতে। কিন্তু নিয়মে বেঁধে থাকা তাঁর পক্ষে ছিল অসহনীয়। ফলে ফার্স্ট টার্ম শেষ হওয়ার আগেই আর্ট একাডেমি ছাড়লেন।

ভ্যান গঘ তার জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। তীব্র মানসিক অস্থিরতার ফলে প্রায় উম্মাদ দশা হয় তাঁর। সেন্ট রেমি-র এক মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হন কিন্তু থেমে থাকেনি শিল্পচর্চা। মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে বসে-ও ২০০ ক্যানভাস আঁকেন !!!

প্যারিসে এসে ফানার্ড করমনের স্টুডিওতে কাজ করতে শুরু করেন। এসময় বন্ধু পল গঁগ্যার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পরেন এবং এক ব্যাক্তিগত কারণে তিনি নিজের এক কান কেটে নেন। এ ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন গঘ। রক্তাল্পতা এবং হ্যালুসিনেসনে ভুগতে থাকেন। আর্লেসের হাসপাতালে দু’সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ঘরে ফিরে অবিরাম ছবি আঁকতে থাকেন অদ্ভূত উন্মাদের মতো।

এক পর্যায়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গঘকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে আর্লেস থেকে বিতাড়িত করে নগর কর্তৃপক্ষ। গঘ নিজেই গিয়ে ভর্তি হন সেন্ট রেমি’র মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সুস্থ না হয়ে বরং বিষণ্নতায় ভুগে ভুগে পূর্ণ পাগলই হয়ে যান গঘ। এতো অসুস্থতার মধ্যেও বন্ধ করেননি ছবি আঁকা। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে বসেও ২০০ ক্যানভাস ছবি আঁকেন। ছোট ভাই থিও তাঁকে নিয়ে এলেন প্যারিসে। কিন্তু কিছুদিন পরই গঘ চলে গেলেন অভঁরো। ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই রাতে নিজের বুকে গুলি করে শুয়ে থাকলেন আর ঐ অবস্থাতেও খালি পাইপ টেনে গেলেন। ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পৃথিবীর দুঃখীতম এই চিত্রকর। তখন তার বয়স মাত্র ৩৭ বছর।

সেজান, গঁগা আর গঘ … স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এই তিন শিল্পীই আধুনিক চিত্রশিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত … সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গগ … শিল্পী জীবন পেয়েছিলেন মাত্র ১০ বছরের … অতীত এবং সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য জগত সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান ছিলো তাঁর নিজের মননের সাথে সব কিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। বন্ধুহীন, নিঃস্ব আর দূর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটালেও সমকালীন চিত্রকলায় তাকেই মনে করা হয় সবচেয়ে সার্থক শিল্পী হিসেবে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী ১০ টি চিত্রকর্মের মধ্যে একক ভাবে তাঁরই অঙ্কিত রয়েছে ৪ টি!