বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

শালিকের ভাবনা

ইটের শাখায় জোড়া শালিক
মুখোমুখি বসা,
কিচির মিচির কত সুরে
চলছে স্বপ্ন কষা।

নতুন নীড় গড়বো কোথা
বলছে হেসে সখা,
লৌহ গরাদের এই শহরে
যায়না শ্যামল দেখা।

ডিশের শাখায় নেটের শাখায়
ছেয়েছে সারা শহর,
সবুজ শাখা হারিয়ে গেল
কেউ রাখেনা খবর।

বাসা বানাই বাতির খোপে
দুরু দুরু বুকে,
ফোরম্যানরা আসবে যখন
মারবে ধুকে ধুকে।

ভীরু গলায় বললো সখী
মনে ভরা দুখ,
সেদিন কি আর আসবে সখা
মিটবে মনের সুখ।

বুদ্ধিমানরা বুদ্ধি করে
ফন্দি এঁটেছে,
গাছ গাছালি কেটে সব
উজাড় করেছে।

ডাস্টবিনের এঁটো ঝুটায়
ফরমালিনের ঝাঁজ,
ক্ষেতের দানায় কীটনাশক
পড়েছে মাথায় বাজ।

ইতর প্রাণীর নেই যে দাম
তাদের বিচারে,
যুপকাষ্ঠের বলী তারা
বুদ্ধির অনাচারে।

ইতর প্রাণীর প্রাণ নাশও
তাদের ধংসের কারণ,
সময় থাকতে প্রাণে বাঁচাও
কর সংরক্ষণ।

ঝড় বৃষ্টি খরাও তাদের
পিছু নিয়েছে,
ভূকম্পনের ভীতিও তাদের
তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

পরিবেশের উপর যত আঘাত
সব মানবের গড়া,
ছাড় দেবেনা নিতে দাদন
প্রতিশোধ ছাড়া।

কর্মচারী

আপনার কি জানা আছে পার্শ্ব কর্মচারী কেন নিয়োগ করা হয়? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন পোষ্টে কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন অবস্থান বেসরকারী হয়ে যাচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন সিভিক কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে চারিদিকে কেন অনেকক্ষেত্রে আর তেমন কোন পার্মানেন্ট পোষ্টের কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে না?
এত সবকিছুর একটাই উত্তর, কাজ। আপনি আপনার কাজ করুন। কোথাও না কোথাও পার্মানেন্ট হিসেবে আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। আপনি আপনার কাজে যতটা ফাঁকি দেবেন ঠিক ততটাই ভবিষ্যতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর পার্মানেন্ট নিয়োগ হবে না।
যে কাজ পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে না সেই কাজ সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে। কিংবা আরো বেশি ও আরো ভাল কাজ পাচ্ছে। তাই খামোখা পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে বেশি টাকা খরচ করা উচিত হবে কি? আপনি কি বলেন?
তাই আপনি পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হলে আপনি আপনার সমগোত্রীয় পার্মানেন্ট কর্মচারীকে প্রশ্ন করে দেখেছেন কি ” ভাই, তুমি তোমার কাজ নিয়মিত ও ফাঁকি না দিয়ে কর কি?” পার্মানেন্ট তো আপনার পাশের টেবিলে কাজ করে। আপনি ভাল করেই জানেন, ও পার্মানেন্ট তাই সবার আগে ফাঁকি দেওয়া শিখে নিয়েছে। কিন্তু আপনি কাজ চলে যাওয়ার ভয়ে আপনার দায় এড়াতে পারেন না। বরং বেশি করে কাজ করতে হয়। বেশি সিনসিয়ারিটি দেখাতে হয়। তাই নয় কি?
তাহলে ভাই, তোমাকে যদি পার্মানেন্ট কর্মচারী করে দেওয়া হয় তাহলে তুমিও যে ভাই তাই করবে। ফাঁকি দেবে, দায়বদ্ধতা থেকে দূরে সরে যাবে। তাহলে? তার চেয়ে বাড়ির মালিক বা সরকার বা যে কোন কনসার্ন কাকে চাইবে? তুমিই বলো, কাকে চাইবে? পার্মানেন্ট কর্মচারী নাকি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী। তাই সবার আগে কাজ চাই। কাজ। নিষ্ঠার কাজ।
কেন না আমি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ যতটা না দায়ী তার চেয়ে একশগুণ দায়ী আমার পূর্ববতী পার্মানেণ্ট কর্মচারী। তাদের না কাজ করার, ফাঁকি দেওয়ার, কাজ পেন্ডিং রাখার, স্কুলে না পড়ানোর, সমাজে নিরাপত্তা না দেওয়ার প্রবণতার জন্য আজ আমরা এই পথে। তার মানে আমার ভবিষ্যৎ ছেলেমেয়ের কাজ না পাওয়া বা পার্শ্ব সিভিক ও কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হওয়ার জন্য আমিই দায়ী, আমরা দায়ী।
তাই কর্তৃপক্ষকে দোষ না দিয়ে পার্মানেন্ট কর্মচারীদের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে জোরালো আবেদন, কাজ করুন। কাজ। যার যতটুকু কাজ ততটুকুই করুন। ফাঁকি দেবেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, আমাদের ছেলেমেয়ের কাজের নিশ্চিত নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেবেন না। কাজ করুন। কাজ। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
তবে কাজ কিন্তু হয়। কোনো কাজ বসে থাকে না। পড়ে থাকে না। সরকারী বেসরকারী কিছু উদাসীনতায়, কিছু অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বাহানায়, কিছু তোষণনীতির জন্য যাই হোক করে কিছু কাজ চালানো হয়। ফলে সেখানে এই রকম সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে কাজ চালানো হয়। তখন জনমানসের আর কিছু করার থাকে না।
তবু প্রত্যেকের নিষ্ঠার সঙ্গে করা কাজ কোথাও না কোথাও তার ছাপ ফেলে যায়। সেখানে একশ শতাংশ না হলেও মোটামুটি সত্তর আশি শতাংশ কর্মচারীকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে তার প্রতিফলন অবশ্যই নিয়োগে দেখা যাবে। যেখানে এই শতাংশ চল্লিশ পঞ্চাশে নেমে যাবে সেখানে সরকার বা মালিক বা কনসার্ন এইভাবে সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করেই কাজ চালিয়ে নেবে।
তাই সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, কাজ করুন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের কাজ পাওয়ার জন্য নিজে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
সরকার বা মালিক বা কোন কনসার্ন শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য পার্শ্ব বা সিভিক বা কনন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে না। ভাল কাজ পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে এমন পন্থা বেছে নেয়। আজ যারা কাজ হারানোর জন্য আন্দোলন করছে। একদিন তারাই বা তাদের সমগোত্রীয় কর্মচারী কিভাবে পাবলিককে, পরিসেবা পাওয়ার অধিকারীকে ঘুরিয়েছে, কিভাবে কমিশন না নিয়ে কোন কাজ করে নি, কিভাবে পার্সেন্টেজের দিকে হাত বাড়িয়ে থাকত সেসব মনে করলেই বুঝতে পারবে কেন কাজ চলে যাচ্ছে।
অবাক করা ব্যাপার হল, পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী কিন্তু নিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে। তাতে হাজার হাজার লাখো লাখো দরখাস্ত জমা পড়ছে। কই, টাকায় পোষাচ্ছে না তাই আমরা কেউ দরখাস্ত করব না। তা তো হচ্ছে না।
তাহলে? কেন না কাজ নেই। মানুষের সংখায় মানুষ দিন দিন বাড়ছে। আগামী প্রজন্ম আসছে। আসবে। এমএ, এম এসসি, এম বি এ, বি টেক, এম বি এ, পি এইচ ডি প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়তেই আছে।
আপনি পি এইড করলেও যদি কোথাও আপনি নিয়োজিত না হন তাহলে আপনি প্রফেসার বা লেকচারার নন। আপনি এমএ বিএড কিন্তু কোন স্কুলে নিয়োগ না হলে আপনি শিক্ষক নন। আপনি ম্যানেজমেন্ট পড়লেও কোন কনসার্নে না নিয়োজিত হলে আপনি কোন পদাধিকারী নন। তাই ডিগ্রীর সাথে সাথে নিয়োগও প্রয়োজন।
কিন্তু আবার ভেবে দেখুন কোথাও কোন প্রতিষ্ঠান কনসার্ন বা সরকারী সিস্টেম বন্ধ থাকছে না। চলছে। স্কুল চলছে। কলেজ চলছে। হাসপাতাল চলছে। পরিবহণ চলছে। করপোরেট চলছে। নতুন নতুন কনসার্ন খুলছে। সেখানে পারমানেন্ট এবং তার সাথে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে। কার কাছে কাজ বেশি পাচ্ছে সেটা সেই কনসার্ন দেখছে। টাকা পয়সা কোথায় বেশি খরচ হচ্ছে সেটা তারা দেখছে না। কেন না ভাল কাজের জন্য একটু বেশি খরচ হলে সেই খরচ তারা প্রোডাক্ট থেকে কিংবা সিস্টেম থেকে তুলে নেবে। তাই তারা দেখছে কম টাকায় বেশি কাজ কিভাবে কোথায় পাওয়া যায়। আমি আমার বাড়ির কাজেও তাই দেখি। আপনিও দেখেন।
তাই দেখবেন কিছু হোটেল হাসপাতাল বাজার চলতি প্রোডাক্ট তাদের দাম কিছুতেই কমায় না। আপনার মনে হবে একই বিরিয়ানি এখানে এত দাম কেন? একই খাওয়ার মশলা এখানে এমন কি দেয় যে এত দাম নিচ্ছে? ওরা জানে দাম একটু বেশি এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল দায়বদ্ধতা। সেখানে কোন কম্প্রোমাইজ চলে না।
এই দায়বদ্ধতার বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে পার্মানেন্ট কর্মচারীর মধ্যে। সে প্রাইভেট হোক কিংবা সরকারী বা কোন কনসার্ন। সব ক্ষেত্রে পারমানেন্ট কর্মচারী যত দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসবে তত এভাবে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে।
পার্মানেন্ট ভাবে, আমি কাজ করি কিংবা না করি আমার কিছু করতে পারবে না। আমি কাজে দায়বদ্ধ থাকি কিংবা না থাকি, আমি কিছু দুর্নীতি বা অন্য অন্য উপার্জন করলেও আমার কিছু করতে পারবে না। বড় জোর একটু আধটু ট্রান্সফার করবে কিংবা এটা ওটা করে হ্যারাসম্যাণ্ট করবে। তাতে আমার বয়েই গেছে। আমার মাইনে পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো পাকা। আমার কিছুটি করতে পারবে না। আমিই বস। অফিসের ডেকোরাম, অফিসারের উচ্চবাচ্য মানছি না মানব না। কাজও করব তথৈবচ। এরকম ভাবনার পার্মানেন্ট কর্মচারী দিন দিন বাড়ছে। ফলে কাজের জন্য, সরকারী বেসরকারী অবস্থান আরো উন্নত করার জন্য মালিক সরকার বা কোন কনসার্ন বাধ্য হয়ে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করছে।
ভরসা ছিল। তাই কিছুদিন আগে পর্যন্ত এভাবেই নিয়োগ হতো। সরকারী বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত নিরাপত্তার ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। কেন না কর্মচারীর পূর্ণ নিরাপত্তা দিলে তবে সেই কর্মচারী পূর্ণ আস্থার সঙ্গে কাজ করবে। কাজ পাওয়া যাবে একশ শতাংশ দায়বদ্ধতা যুক্ত। তারপর এল ইউনিয়ন লিডার মেম্বার মিটিং মিছিল ধর্মঘট আরো চাই আরো চাই মুনাফা ইত্যাদি। ফলে কাজের ভিত্তিতে ঢুকে পড়ল না-কাজের নানান বাহানা।
কত কষ্ট করে, মামা কাকা দাদার সোর্স করে, অনেক খরচাপাতি করে, কত বিনিদ্র রাত জেগে তবে এই চাকরি পেলাম। আর কি পড়াব? আর কি নিরাপত্তা দেব? আর কি পরিবহণ করব? আর কি পরিসেবা দেব? আর কি পাবলিক সিমপ্যাথি দেখাব? যা হয় হোক তাতে আমার কি? মাস গেলে আমার একাউণ্ট ভরবে নিশ্চিত। তাই কাজ কাজের মত চলছে, চলুক। আমি আমার চাকরি পাওয়ার জন্য যা কষ্ট করেছি তা উসুল করে নেব। আয়েশ করে, যতটা পারি মুনাফা আদায় করে নেব।
এরকম ভাবনা হলে তাহলে কি করে হবে?
এই প্রশ্নের আমিও উত্তর খুঁজি। আপনিও খোঁজেন। এমন কি তিনিও খোঁজেন। সবাই চায়। পারমানেন্ট কর্মচারী হলে সত্যিই নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তাই পারমানেন্টকে তার দায়বদ্ধতা আরও বেশি করে নিতে হবে। তবেই না মালিক সরকারী বা কনসার্ন তার কর্মচারী পারমানেন্ট নিয়োগ করবে।
আমার পারমানেন্ট কর্মপদ্ধতি আগামী সমাজ গড়ার অন্যতম দিক দিশা। আমার হাতে সামাজিক মূল্যায়ণের ভবিষ্যৎ সূচনা। এরকম ভাবনা সমস্ত পারমানেন্ট কর্মচারীকে ভাবতে হবে। তবেই পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা বন্ধ হবে। না হলে আরো বেশি করে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে। তারপর এই সব পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী আরো আন্দোলন করবে। তবে লাভ কিছু হবে কি?

সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বখাটেদের প্রতিহত করতে হবে

বখাটে ছেলেদের বখাটেপনা হলো, ডিজিটাল যুগের এক ডিজিটাল স্বভাব চরিত্রের নাম। এসব চরিত্রে অংশগ্রহনকারী ডিজিটাল যুগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে-পেলে। এঁদের বলে বখাটে ছেলে। এঁরা মা-বাবার অতি আদরের সন্তান হয়েও, অবাধ্য সন্তানের মতো উড়া-ধুরা চলাফেরা করে। এঁদের মনে যখন যায় চায়, তা-ই করে। এসব ছেলেদের আগে বলা হতো ইতর ফাজিল। এজাতীয় ছেলেদের সবসময়ই মেজাজ গরম থাকে। এসব বখাটে ছেলেরা কারোর কথা মানে না, শুনেও না। কারো ধারও ধারে না। এঁদের নিজের বুঝেই এঁরা চলে। কিন্তু ওঁরা অন্য কোনও দেশের নাগরিক নয়, অন্য কোনও গ্রহ থেকেও আসেনি। বখাটে ছেলেরা এই সমাজেরই আমার আপনার সন্তান। নাহয় কারো-না-কারোর ভাই।

এখনকার সময়ের বখাটেদের স্বভাব চরিত্র, চলা-ফেরা ডিজিটালি। মানে আধুনিক। একসময় ডিজিটাল শব্দটা এই বঙ্গদেশে কেউ ব্যবহার করতো না, ছিলও না। কয়েক বছর ধরে ডিজিটাল শব্দটি বাংলাদেশের সাথে যোগ হয়েছে। যে-কোনো একটি বিশেষ কারণে। সেই থেকে রবিঠাকুরের সোনার বাংলা আর জাতীয় কবি নজরুলের বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। যাই হোক স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ইতর ফাজিলদের স্বভাব চরিত্র ছিল একটু ভিন্ন রকম। তখনকার সময়ের সেসব ইতর ফাজিল ছেলেদের সবাই ওঁদের রুস্তম বা পাইন্না রুস্তম বলতো। রুস্তম হলো, বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। মানে বড়-সড় নেতাদের সাথে যাদের চলা-ফেরা তাঁরাই রুস্তম। আর পাইন্না রুস্তম হলো রুস্তমদের চুনোপুঁটি। মানে রুস্তমদের চামচা। তাঁদের হাতে রুমাল বাধা থাকতো। গলায়ও রুমাল পেছানো থাকতো। কারো কারো সাথে ড্রেগার নামের ছুরি থাকতো।

সেসব রুস্তম বা পাইন্না রুস্তমদের মধ্যে বর্তমানে কেউ ভালো থাকলেও, কেউ কেউ অসহায় হয়ে দিন যাপন করছে। আবার কেউ করেছে মৃত্যুবরণ। কেউ হয়েছে বুড়ো। কেউ আবার সংসারের বোঝা হয়ে ছেলে-পুলেদের ঘাড়ের পর বসে বসে খাচ্ছে। সেসব রুস্তম পাইন্না রুস্তমদের দিন শেষে ১৯৯০ দশকের দিকে নতুন করে দেখা দিয়েছে, ক্যাডার মাস্তান। সাথে জন্ম হয়েছে একধরণের হিংস্র ভয়ঙ্কর জানোয়ার। এঁদের নাম বখাটে। এঁরাই রাস্তা ঘাটে পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বখাটেপনা করে। বর্তমান যুগের এসব বখাটে ছেলেদের স্বভাব চরিত্র নিয়েই আমার আজকের আলোচনা সমালোচনা এবং বখাটে বন্দনা।

বখাটেদের দেখতে হুবহু আরও দশজন শান্ত ছেলেদের মতো দেখা যায়। শরীরের কোথাও লেখা থাকে না যে ওঁরা বখাটে ছেলে। কিন্তু এঁদের স্বভাব চরিত্র আরও দশজন ছেলেদের থেকে ভিন্ন। কিন্তু মানুষ। বর্তমানে এঁরা অনেক বাবা-মায়ের সংসারের বোঝা। কারণ, একটি পরিবারের একটা বখাটে ছেলের কারণের পরিবারের সকলের রাতের শান্তির ঘুম হারাম। অনেক সময় বখাটে ছেলের বখাটেপনার জন্য পরিবারের কর্তাব্যক্তিকে অপমান অপদস্ত হতে হয়। হয়ও অনেক সময়। আবার বিচার হয়। সালিশ হয়। জেল জরিমানাও হয়। আর পুলিশের তাড়া তো থাকেই। তাই অনেক বাবা মায়ের কাছে বখাটে ছেলেরা পরিবারের কলঙ্কের বোঝা। আবার অনেকের কাছে এঁরা মানুষ নামের কলঙ্ক। কারণ, এঁদের স্বভাব ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো। সময় সময় এঁরা বনের হিংস্র প্রাণীর মতো রূপধারণ করে। অনেক সময় বখাটেদের হিংস্র থাবায় এদেশের অনেক মানুষ আহত নিহতও হয়। আগে-পরে হয়েছেও অনেক। যা এখনো প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কেউ বখাটেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে গেলেই আক্রমণের শিকার হতে হয়। তাই সহজে বখাটে ছেলেদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে চায় না। এঁদের পোশাক-আশাক, সাজগোছ, চলন-বলনের উপরও কেউ বিধিনিষেধ আরোপ করে না। কারণ, এঁরা বখাটে নামের বর্তমান জানোয়ার তাই।

এবার আসি বখাটেদের চলন-বলন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায়। বখাটদের চলন-বলন, পোশাক-আশাকও থাকে আরো দশজন ছেলেদের থেকে আলাদা। আমার দেখা এবং জানা মতে আধুনিক ইতর ফাজিল বখাটেদের চলন-বলন, পোশাকাদি বিষয়ে কিছু শর্টকাট বর্ণনা দিতে চাই। বর্ণনা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছি এই কারণে যে, রাস্তা-ঘাটে, স্কুল-কলেজের সামনে, পাড়া-মহল্লায় শুধু বখাটে ছেলেরাই যে ঘোরাফেরা করে তা নয়। তাঁদের সাথে উঠতি বয়সের অনেক ভালো ছেলে-পেলেরাও ঘোরা-ফেরা করে। তাই বলে কি সবাই বখাটে? না, সবাই বখাটে নয়। বখাটে স্বভাবের ছেলেরাই বখাটেপনা করে থাকে। তাই বখাটে ছেলেদের বিষয়ে আমি শর্টকাট বর্ণনা দিচ্ছি, যাতে তাঁদের পোশাকাদি দেখে খুব সহজে যেকেউ বখাটেদের চিনে নিতে পারে। মনে রাখা ভালো যে, পাড়া মহল্লার ভালো ছেলেদের সাজগোজ থাকবে সাধারণ। আর বখাটে ছেলেদের সাজগোজ থাকবে অসাধারণ। সেজন্যই অসাধারণ সাজগোজ দেখে সবাই বখাটেদের সহজে চিনে নিবেন। তাহলে এবার আসি বখাটেদের সাজগোজের কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনায়।

বখাটেদের পরনে থাকে পাতলা গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি হাফপ্যান্ট। এই পাতলা কাপড়ের হাফপ্যান্ট পরেই বখাটেরা রাস্তা-ঘাটে, পাড়া-মহল্লায় ঘোরা-ফেরা করে। বখাটেরা যেভাবে হাফপ্যান্ট পরে ঘোরাফেরা করে, তা ফরেন কান্ট্রির ইংরেজদেরও হার মানায়। বখাটে ছেলেরা যখন এই পাতলা গেঞ্জির কাপড়ের হাফপ্যান্ট পরে রাস্তায় অথবা নিজেদের মহল্লায় থাকা স্কুলের সামনে ঘোরাফেরা করে, তখন স্কুল পড়ুয়া উঠতি বয়সের মেয়েরা ওঁদের দেখে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে রাখে। কিন্তু বখাটে ছেলেরা একটুও লজ্জা পায় না। ওঁরা বখাটেরা আনন্দ পায়।

মেয়েদের লজ্জায় বখাটে ছেলেরা মনের আনন্দে নাচে। আবার গানও গায়। লাজুক মেয়েরা মনের ক্ষোভ মনে রেখে ভয়ে ভয়ে নিজেদের ঘরে চলে যায়। ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের কাছে নালিশ দেয়। অভিভাবকরা কেউ প্রতিবাদ করে, কেউ আবার নিজেকে অসহায় ভেবে মেয়েকে সাবধানে চলার উপদেশ দেয়। তারপরও অনেক সময় অসহায় অভিভাবকদের বখাটেদের খপ্পরে পড়তে হয়। মার খেতে হয়। জীবন দিতে হয়। এর কারণ আগেই উল্লেখ করেছি, বখাটে ছেলেদের মেজাজ সবসময় গরম থাকে। এঁরা নিজের পিতা-মাতার কথাই শুনতে পারে না। তাহলে পরের কথা আর পরের শাসন এঁরা মানবে কী করে? তাই বখাটে ছেলেরা কাউকে মানে না। পাত্তাও দেয় না। শোনে না কারোর বারণও।

বখাটে ছেলেরা চলে ওঁদের নিজের ইচ্ছায়। ওঁরা মেয়েদের মত হাতে চুড়ির পড়ে। যাকে বলে কিনা ব্যাস লেট। কানে দুল পড়ে। আবার হাতে থাকে একটা কমদামী বেশিদামী এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। যা এ-যুগের একরকম ফ্যাশন। ধনী গরিব সকলের কাছেই যখন থাকে, ওঁদের কাছে থাকাটাও স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আবার গলায় ঝুলানো থাকে মোবাইল ফোনের হেডফোন। যা দিয়ে ডিজে গান শুনে। বাজনার তালে তালে নাচে। চোখের ভ্রু-তে একধরনের রিং গাথা থাকে। মাথার চুল থাকে বখাটে কাটিং। মাথার এক সাইটে চুল থাকে, আরেক সাইট থাকে ন্যাড়া। কেউ কেউ মেয়েদের মত লম্বা চুলও রাখে। সেই চুল আবার বেনি গেঁথে রাখে। ওঁরা বখাটেরা চুলের এই বিশেষ কাটিংগুলো বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখে আবিষ্কার করে। কেউ কেউ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখে ফুটবলারদের মত করে চুলের কাটিং করে। বখাটে ছেলেরা মনে মনে ভাবে, আমার চুলের এরকম কাটিং দেখে সমাজের সব মেয়েরা পাগল হয়ে যাবে। বখাটেদের চুল অনেক সময় বড়সড় কবিদের চুলকেও হার মানিয়ে দেয়। কেউ কেউ চুলে এলিট পেইন্টের মত রং লাগায়। যাকে বলে কলব। তাও থাকে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি রঙের।

একসময় চুলের বাহার দেখা যেতে সিনেমায়। তবে তা ছিল পরচুলার বাহার। এখনো সিনেমার পরিচালকরা যেমন পরচুলা ছাড়া সিনেমাই তৈরি করতে পারে না। তেমনি নায়ক নায়িকারাও পরচুলা ছাড়া একচুলও নড়ে না। কারণ, পরচুলা পড়ে অভিনয় করতে করতে পরচুলা পড়ার অভ্যাস হয়ে গেছে তাই।। তবে বখাটে ছেলেদের মাথায় কিন্তু পরচুলা থাকে না। বাস্তব চুলা থাকে। কারণ এঁরা সভ্য যুগের অসভ্য বখাটে ছেলে তাই। বখাটেদের মধ্যে কেউ কেউ গোঁফের সাথে হালকা দাড়ি রাখে। দাড়ির কাটিং থাকে এরাবিয়ান কাটিং। এরকম কাটিঙে দাড়ি রেখে বখাটে ছেলেরা নিজেকে আরব দেশের আমির মনে করে। নিজেকে প্রিন্স ভাবে।

আবার বখাটেদের মধ্যে যারা বিত্তশালীদের ছেলে-পেলে, তাঁদের থাকে হোন্ডা নামের এক বাহন। হোন্ডার পিছনে গরিব বখাটে ছেলেদের বহন করে। সাথে নিয়ে আড্ডা দেয়। গরিব বখাটে ছেলেরা আনন্দ পায়। বড়লোকের বখাটে ছেলেদের হুকুম পালন করে। মানে চামচামি করে। বখাটেপনা করতে সাহায্য করে। এর বিনিময়ে গরিব বখাটে ছেলেরা একটু আধটু মদ, গাঁজা, আফিম, তারি, ফেন্সির ভাগ পায়। ওঁরা খায়। আনন্দ পায়।

বখাটে ছেলেরা আর কিছুর পাগল হোক-বা-না-হোক, কিন্তু মেয়ে পাগল। মেয়ের দিকেই ওঁদের নেশা বেশি। চোখও সে-দিকেই বেশি যায়। তাই ভাদ্র মাসের কুকুরের মত পাগল হয়ে ঘুরে। রাস্তা-ঘাটে, স্কুলের সামনে মেয়েদের দেখে ওঁরা শিশ মারে। গান গায়। অভিনয় করে। হাসাহাসি করে। রাস্তায় পড়ে থাকা একটুকরো ছেড়া কাগজে কিছু লিখে নিজের পছন্দের নায়িকার দিকে ছুড়ে মারে। কিছু বলতে গেলে ক্ষেপে যায়। প্রতিশোধ নিতে চায়। নেয়ও। সময় সময় সুযোগ বুঝে অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার মত অপরাধও করে ফেলে। সেই অপরাধ থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য খুন করে। গুমও করে। তখন এর জের টানতে হয় অপরাধী বখাটে ছেলের পরিবারকে।

বখাটেদের হাতে খুন গুম ধর্ষণ হওয়া নতুন কিছুই নয়! এটা আরও অনেক পুরানো ঘটনা। এসব ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এঁদের জ্বালায় গ্রাম সহরে থাকা মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়ছে। অভিভাবকেরা পড়ছে দুঃশ্চিন্তায়। কিছুতেই বখাটেদের দমানো যাচ্ছে না। প্রতিহত করা যাচ্ছে না। দিন যাচ্ছে তো পুকুরের কচুরিপানার মতো বাড়ছেই। এঁদের দমাতে হলে আমাদের সামাজিক পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তাই বখাটে ছেলেদের পরিবারবর্গের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা আপনাদের উঠতি বয়সের ছেলেদের গতিবিধি ফলো করুন। সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে এ-সবের দিকে লক্ষ্য রাখুন। যদি বখাটেদের মতো স্বভাব দেখা যায়, তাহলে সন্তানকে আদর করে কাছে টেনে একটু বোঝানোর চেষ্টা করুন! নাহয় মনে রাখবেন, উচ্ছৃঙ্খল এক বখাটে সন্তানের জন্য পুরো পরিবার-সহ সমাজের আরও দশজন অশান্তি ভোগ করবেন, তা একশো তে একশো নিশ্চিত।

আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। ঘটনাটি ঘটেছিলো রাজশাহীতে। ঘটনার শিকার হয়েছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম। ঘটনা ঘটেছে গত ১০ আগস্ট রাজশাহী শহরের জনবহুল এলাকা সাহেববাজার মনিচত্বরে। শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম নিজের স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে বখাটেদের হাতে মার খেয়েছিলেন।

বিষয়টি সেদিনই নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। ঘটনার সময় সময় আশপাশে মানুষের কাছে সাহায্য চাইলে তারা কোনো সাহায্য না করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছিলো বলে জানান তিনি। এমনকি, তিনি সকলের কাছে ‘বাঁচান’ বলে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি কিন্তু তিনি এক পর্যায়ে ক্রোধান্বিত হয়ে ‘ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবীননামা দেখাতে হবে আপনাদের?’ বললে উল্টো বখাটেদের পক্ষ নিয়ে একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে, ‘হ্যাঁ, কাবীননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে!’ লিংক দিলাম, এখানে দেখুন!

তাহলে দেখা যায় বখাটেদের দাপটে অদূর ভবিষ্যতে সবাইকে এভাবেই বিয়ের কাবিননামা অথবা নিজ সন্তানের জন্মসনদ সাথে নিয়েই রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করতে হবে। নাহয় যেকোনো সময়ই বখাটেদের আক্রমণের শিকার হতে হবে। তাই সময় থাকতেই সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বখাটেদের প্রতিহত করুন। তা না হলে আমার আপনার আদরের লাজুক মেয়েটির জীবন বিপন্ন হবে। একসময় মায়ের জাতি লাজুক মেয়েরা বখাটে ছেলেদের জ্বালায় ঘর থেকে বেরুতে পারবে না, তাও নিশ্চিত।

তা যেন না হয়। তাই আগে থেকেই বখাটেদের বখাটেপনার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। বখাটেদের মন থেকে ঘৃণা করতে হবে। রাস্তা-ঘাটে চলাফেরার মাঝে বখাটে ছেলেদের দেখলে থুথু ফেলতে হবে। বখাটে ছেলেরা বেশি বিরক্ত করলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে নালিশ করতে হবে। বখাটেদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ-সহ প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে আমার আপনার আদরের লাজুক মেয়েটির জীবন বিপন্ন হবে। ঘরের মেয়েরা ঘরেই কোণঠাসা হয়ে পড়বে। একসময় মায়ের জাতি লাজুক মেয়েরা বখাটে ছেলেদের জ্বালায় একসময় ঘর থেকে বেরুতে পারবে না। তাও নিশ্চিত।

রোহিঙ্গারা আধিপত্য বিস্তার করবে- সেদিন বেশি দূরে নয়

গত দুইবছর আগে মিয়ানমার রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা যখন সেদেশের নিরাপত্তার উপর হামলা করেছিল, তখন এর পাল্টা জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে দিলো। ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করলো। এভাবে পালাক্রমে দলেদলে আসতে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখেরও বেশি। যা আমাদের ছোট্ট একটা দেশের জন্য বিরাট একটা বোঝা। আমাদের মাথায় ঋণের বোঝা থাকলেও আমরা কিন্তু অতিথিপরায়ণ। আমাদের মানবতা একটু বেশি। কারোর দুঃখ দেখলে আমাদের দরদ উথলে পড়ে। কারণ মানবতার দিক দিয়ে আমরা পৃথিবীতে সেরা, তাই। আমাদের আরকিছু না থাকুক, কিন্তু মানবতা আছে।

এই মানবতার কথা ভেবে একসময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুতুপালং গেলেন। নিজের চোখে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখলেন। রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখে কাঁদলেন। সমাবেশে আমাদের দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, “আমরা ষোল কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরও লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে আমরা খাওয়াতে পারব।” দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সারাবিশ্ব থেকে পেলো বাহাবাহা। রোহিঙ্গারা পেলো বেঁচে থাকার আশ্বাস। শুরু হলো মানবতার মহামানবদের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ। অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য ছিল অসহায় রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা।

সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন মানবতার সংঘটন। সবাই নিজ নিজ সাধ্যমতো বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কুতুপালঙের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। দেশের অনেক মসজিদে মসজিদে শরনার্থী রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা উঠাতে শুরু করলেন। কেউ টাকা, কেউ পয়সা, কেউ জামাকাপড়, কেউ খাবার, কেউ বাসনপত্র সাহায্য হিসেবে দিতে শুরু করলেন। সেসব ত্রাণসামগ্রী ট্রাকে ভরে ভরে কুতুপালং নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছিল।

সেসময় এমনও দেখেছি, নিজের প্রতিষ্ঠানের গরিব দুঃখীদের দুই টাকা সাহায্য সহযোগিতা করে না, সেসব মালিকরা দশ থেকে পনেরো দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বানিয়েছে। সেসব প্যাকেটে ছিল চিড়ামুড়ি, দুধ, চিনি, মিঠাই, পাউরুটি, চালডাল, তেল, লবণ, লুঙ্গি, গেঞ্জি-সহ আরও অনেককিছু। অথচ নিজের প্রতিষ্ঠানেই খেয়ে-না-খেয়ে যাঁরা চাকরি করে, তাঁদের জন্য একটি প্যাকেটও জুটেনি।

সেই প্যাকেট ট্রাকে ভরে সামনে “রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ত্রাণসামগ্রী” লেখা ব্যানার টাঙিয়ে নিয়ে গেলেন রোহিঙ্গাদের জন্য। দিলেন তাঁদের। রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থা-সহ মানবাধিকার সংস্থাও। আসলেন বিদেশিরাও। আসলেন নোবেলজয়ী কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। সরকার জায়গা দিলেন। দিলেন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি। বানিয়ে দিলেন থাকার ঘরদোর। রোহিঙ্গাদের দেখভাল ও নিরাপত্তার জন্য দিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনছার-সহ শতশত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দিলেন এইজন্য যে, তাঁরা রোহিঙ্গারা নিরুপায় অসহায় বলে। সরকারের উদারতায় বাংলার প্রতিটি মানুষও সেসময় খুশি ছিলেন। বাংলার মানুষ ভেবেছিল ওঁরা আর থাকবেই বা ক’দিন? থাকুক! কিন্তু এই থাকা যে চিরস্থায়ী থাকা হবে, তা বাংলার খুব কম মানুষেই জানতো। বেশিরভাগ মানুষেই জানতো তাঁরা অসহায়। কিন্তু এখন আর রোহিঙ্গাদের মাঝে অসহায় বলতে কেউ নেই। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়েও ভালো অবস্থায় আছে। বিশেষ করে কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশপাশের স্থানীয় মানুষের চেয়ে খুবই ভালো আছে।

তাই এখন আর বাংলার মানুষ কেউ রোহিঙ্গাদের জন্য ভাবে না। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায় না। মসজিদে মসজিদে রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা ওঠায় না। অনেকে রোহিঙ্গাদের নামও শুনতে চায় না। রোহিঙ্গা নামটি এখন এদেশের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গণমানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের নাম। ভবিষ্যৎ বিপদের নাম এখন রোহিঙ্গা। তাই বলে রোহিঙ্গাদের কিছুই আসে যায় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন এদেশের কাউকে তোয়াক্কা আর জমা-খরচের হিসাব-নিকাশও দেয় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা চলছে ওঁদের নিজের মত করে স্বাধীনভাবে।

তাঁদের এখন মানুষের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন হয় না। লাগেও না। তাঁদের ঘরদোর আছে। টাকাপয়সা আছে। কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালঙের স্থানীয় বাসিন্দাদের যা না আছে, রোহিঙ্গাদের তা আছে। থাকে শুধু সরকারি শরনার্থী শিবিরে। তাতে দোষের কিছুই নেই। এই শরনার্থী শিবিরে থেকে ওঁরা রোহিঙ্গারা বিদেশ যাবার পাসপোর্টও সংগ্রহ করছে। বিদেশেও যেতে পারছে। চুরি ডাকাতি ছিনতাই খুনখারাপি সবই করতে পারছে। খুন তো সময় সময় করেও থাকে। ওঁদের এখন অনেক শক্তি। ওঁদের অত্যাচারে স্থানীয় বাসিন্দা সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গারা গতবছরও বেঁচে থাকার আকুতি-মিনতি করেছিল। আজ ওঁরা স্থানীয় নেতাদের গুলি করে মেরে ফেলে। ওঁদের সাহায্য সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকা এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও প্রতিনিয়ত ওঁদের হাতে মার খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও মার খাচ্ছে। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন হয়তো নতুন করে ঘোষণা দিতে পারে স্থায়ীভাবে থাকার। কারণ ওঁরা এখন মিয়ানমার থেকে ভালো আছে। সুখে আছে। এই সুখ ওঁরা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। হাতছাড়া করবেও না। ওঁরা এই দেশ থেকে কখনোই স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না।

ওঁরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকা অবস্থাও এমন করেছিলো। কিন্তু সেখানে ওঁরা সফল হতে পারেনি। মিয়ানমার সরকারও ওঁদের নাগরিকত্ব দেয়নি। ওঁদের নাগরিকত্ব ছিলও না। সেই ক্ষোভে রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়েছিল, আমরা রোহিঙ্গা মুসলমান। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এবং মিয়ানমারের সব নাগরিক জানতো, ওঁরা রোহিঙ্গারা বিষাক্ত প্রজনন। এখনো মিয়ানমারের অনেক নাগরিক রোহিঙ্গাদের জংলি জানোয়ার বলেই মনে করে থাকে। ওঁদের ব্যবহারিক ভাষাকে মিয়ানমারের নাগরিকরা জংলি ভাষা হিসেবে মনে করে। আরও অনেককিছুর কারণেই, মিয়ানমার সরকার থেকে ওঁরা নাগরিকত্ব আদায় করতে পারেনি। পারেনি শান্তি বজায় রেখে সেদেশে থাকতে। এ-সবকিছু আমাদের জানা থাকতেও আমরা ওঁদের সাদরে গ্রহণ করে বুকে টেনে নিয়েছি। আদর-সমাদর করেছি। খাবার দিয়েছি। থাকার জায়গা দিয়েছি। জামাকাপড় দিয়েছি। বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ওঁদের দুঃখ দুর্দশা সেরে ওঠার সুযোগ দিয়েছি। বিনিময়ে ওঁরা এখন আমাদের দিচ্ছে বাঁশ।

ওঁরা এখন সুর উঠিয়েছে। ওঁরা বলছে, মিয়ানমার সরকার ওঁদের নাগরিকত্ব সহ আরও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা না দিলে ওঁরা আর মিয়ানমার ফিরে যাবে না। রাখাইনে ওঁদের যেমন নেতা ছিল, এখানে ওঁদের নেতাও আছে। রোহিঙ্গাদের নেতারা এখন সমাবেশের ডাক দিয়ে মনের আনন্দের দুইবছর ফুর্তি উদযাপন করে। লক্ষলক্ষ রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে মিছিল মিটিং করে। এতে কী বোঝা যায়? এতে বোঝা যায় আর কিছুদিন পরই ওঁরা এদেশের নাগরিকত্ব চাইবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডে হাতে পাবার জন্য আন্দোলনে নামবে। আরও দশজন নাগরিকের মতো ওঁরাও নাগরিকত্ব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে চাইবে। বিশ্বের কাছে বেঁচে থাকার অধিকার চাইবে।

যদি তা-ই হয়, তাহলে কি আমাদের মানবতার সরকার ওঁদের সেই চাওয়া পূরণ করতে পারবে? না করতে পারলেই হবে মহাবিপদ। রোহিঙ্গা দ্বারা আগামীতে ঘটবে এমন বিপদগুলো বর্তমানে কিছু কিছু রূপধারণ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত দুই বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৪৭১টি মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি৷ রয়েছে ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের অভিযোগও৷ হয়তো আর কিছুদিন পর রোহিঙ্গারা আরও ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তখন আর কিছুতেই ওঁদের দমানো যাবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আমাদের মানবতার সরকারকে এখনই ভেবে দেখা উচিৎ বলে করি। নাহয় অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। আরও বেগতিক। একসময় রোহিঙ্গারা কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশ-পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের জায়গাজমি জবরদখল করে নিবে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে, এঁরাই আধিপত্য বিস্তার করতে থাকবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, অতি নিকটেই।

ফেসবুক আইডি হ্যাক ভুয়া

সময় সময় শুনি ফেসবুক হ্যাক হয়েছে। কেউ বলে, আমার আইডিতে হ্যাকারের নজর পরেছে। তাঁদের প্রতি আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন! আপনি কি কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধান? নাকি রাষ্ট্রপতি? নাকি কোনও ভিআইপি? হ্যাকাররা তো কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও আইডি হ্যাক করতে শুনিনি। তাহলে হ্যাকাররা আপনার আমার আইডি হ্যাক করতে যাবে কেন? হ্যাকারদের কি বাপের শ্রাদ্ধ লেগেছে যে, আপনার আইডি হ্যাক করার? হ্যাকাররা আপনার আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কি বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে? তাও তো মনে হয় না! শুনেছি হ্যাকাররা অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে জমানো অর্থ চুরি করে নিয়ে যায়। আমার আপনার ফেসবুক আইডিতে কি কোনও জমানো টাকা পয়সা আছে? তাহলে হ্যাকাররা আমার আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে যাবে কেন? এটা ভুয়া খবর!

এবার মূল খবরে আসি। মূল খবর হলো আমার আপনার আইডির নির্ধারিত জায়গা শেষ। এটাই হ্যাক বা হ্যাঙ্ক। এর কারণ বলতে যতটুকু জানি তা হলো, আপনি যখন ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, তখন ব্যবহারের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আপনাকে নির্ধারিত কতটুকু জায়গা দিয়েছিল। যা দিয়ে আপনি বেশ কয়েকবছর ছবি, ভিডিও, লেখা ইচ্ছেমতো আপলোড এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করেছিলেন। দিন নেই, রাত নেই সর্বক্ষণ ফেসবুক নিয়েই থেকেছেন। এভাবে একসময় আপনাকে ফেসবুক থেকে দেওয়া নির্ধারিত জায়গা শেষ যায়। তখই আইডি হ্যাঙ্ক হয়ে যায়। মানে আইডি নিস্তেজ হয়ে যায়। আরও সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়, মোবাইল ফোনের বা ল্যাপটপের যেমন Ram বা Rom থাকে তেমন। এবার বলুন তো দেখি, মোবাইল ফোনের স্টোরে জায়গা না থাকলে কেমন হয়? নিশ্চয়ই মোবাইল ফোনটা বারবার বন্ধ হয়ে যায়! তাহলে এবার বুঝতেই পারছেন যে ফেসবুক হ্যাক বা হ্যাকিং কাকে বলে? মানে ব্যক্তির আইডি’র জায়গা শেষ।

তারপরও যদি বলেন যে আইডি হ্যাক হয়েছে বা হ্যাকারদের নজর পরেছে। তাহলে বলবে নো চিন্তা। এতে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কারণ হলো আমাদের চেয়ে বেশি চিন্তা ফেসবুকের। ফেসবুক চায় না যে আপনার আমার আইডি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাক। ফেসবুক চায় আমি আপনি সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়েই যেন থাকি। যার কারণে ফেসবুক পৃথিবীর সবার জন্য উম্মুক্ত করে রেখেছে। তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সবার জন্য বিনা খরচে, বিনা পয়সায় ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ রেখেছে। ফেসবুক চায় দুনিয়ায় সকল মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করুক। ফেসবুক চায় না, ফেসবুক থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিক।

এরপরও কি ফেসবুক চাইবে যে আপনার আমার আইডিটা বন্ধ থাকুক? তা কোনও দিনও না। তার জন্য আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য মানে কয়েকদিনের জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মাঝেই ফেসবুক আপনার আইডির জায়গা আরও বড় করে দিবে। যাতে আপনি আরও বেশ কয়েকবছর অনায়াসে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন এবং যাতে আপনার আর কয়েকবছরের মধ্যে কোনও সমস্যা না হয়। মনে রাখবেন, কোনও সময় আপনার ফেসবুক আইডি আপনা-আপনি নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ বা হ্যাঙ্ক বা হ্যাক হয়ে গেলে, বিশেষ কোনও বাজে চিন্তা না করে; ফেসবুককে একটু সময় দিবেন। তারপর দেখবেন দুইএক দিনের মধ্যেই আপনার আইডি আপনা-আপনি সচল হয়ে যাবে বলে আশা করি।

পোস্টের তথ্য নিজের আইডিয়া থেকে।

আমার ভাল আমি চাই?

আমার ভাল আমি কি চাই? তাহলে আমি কেন মদ খাই? বিড়ি সিগারেট খৈনি গুটখা খাই? এগুলো খেলে কি কি অসুবিধা হয় তা আমি জানি। আমরা সবাই জানি। তাও খাই। আবার না খেলে কোন অসুবিধা হয় না এটাও জানি।
আবার এই নেশার জিনিস খেলে পরবর্তীতে যে যে অসুবিধা হতে পারে সেসবই এসব না খেলেও হতে পারে এই দোহাই দিয়ে আমি খাই। আমি অসুবিধায় পড়ি। আমাকে বাঁচাতে এসবের গায়ে সর্তকবাণী অন্যকে (সরকারকে) লিখতে হয়। smoking is injurious to health. তামাক ক্যান্সারের কারণ।
আমার ভাল আমি চাই বলে এইসব নেশা করে যে অসুবিধায় পড়ি, অসুস্থ হয়ে পড়ি তাতে বাড়ির লোককে, পাশের বাড়ির লোককে, আত্মীয়কে আমি অসুবিধায় ফেলি।
আমার ভাল আমি চাই বলে আমি হেলমেট না পরে মোটর সাইকেল চালাই। সিটবেল্ট না লাগিয়ে গাড়ি চালাই। কানে হেডফোন গুঁজে রাস্তা পারাপার হই। আমাকে বাঁচাতে অন্যকে (সরকারকে) আইন প্রনয়ন করতে হয়। Safe drive Save life.
আমার ভাল আমি চাই বলে ছাত্র জীবনে আর একটু ভাল করে পড়ি নি? পড়ায় ফাঁকি দিয়েছি। আমার ক্যারিয়ার তৈরি করতে অন্যকে (আমার বাবা মা শিক্ষক পাড়া প্রতিবেশী) বার বার বলতে হয় ‘পড়, পড়। বাবা পড়’। যেখানে শুধু আর একটু বেশি পড়লেই কাজ হয়, আর একটু বেশি পড়া অভ্যাস করলেই জীবনে অনেক কিছু সহজেই পাওয়া যায় সেখানে না পড়ে বা পড়ায় ফাঁকি দিয়ে আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি তার জন্য প্রশাসনকে দোষ দিই ‘আমাকে কেন কোন কাজ দিল না’?
কাজের জায়গায় কম কাজ করে ফাঁকি দিয়ে বেশি মুনাফা আশা করেছি। আমার ভাল আমি চাই বলে অন্যকে হরদম ঠকানো শিখে গেছি। অন্য আবার অন্যকে এবং আমাকে লাগাতার ঠকায়। কেন না সেও ‘আমার ভাল আমি চাই’ ভালই শিখে গেছে।

তার মানে কি? তার মানে আমার ভাল আমি চাই না। যদি ‘আমার ভাল আমি চাই’ও কিন্তু তাকে বাঁধন দিয়ে ধরে রাখতে পারি না। কি করে যেন তার মধ্যে অনৈতিক ঢুকে পড়ে। সে অযাচিত জীবনে পা রাখে। পরচর্চা থেকে পরকীয়ায় মাথা গলিয়ে ফেলে।
তাই আমার ভাল আমার চাওয়ার জন্য অন্যের স্নেহময়, আইনানুগ, সম্পর্কের ঘেরাঢোপ দরকার। যাতে আমি অনৈতিক কিছু করে ফেললে কেউ যেন বাধা দেয় – না। তুমি এটা ঠিক করছো না।
অযাচিত কোন কিছুর দিকে আমি হাত বাড়ালে কেউ যেন আমার সেই হাত চেপে ধরে – এটা তুমি করতে পারো না। তোমাকে এর কৈফিয়ৎ দিতেই হবে।
পরচর্চা পরকীয়াতে সে যেন মর্যাদা হয়ে দাঁড়ায় – প্লিজ, আমাদের কথা অন্তত একবার ভাবো। প্লিজ।
তখনই আমার ভালো আমি চাইতে পারব।
তাই আমার ভালোর জন্য আমাকেই এদের মর্যাদা দিতে হবে।
শ্রদ্ধার পরিপূর্ণ মর্যাদা বাবা মাকে দিতে হবে। কথা শুনতে হবে।

ফেসবুক ইউজার হিন্দু ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ

বর্তমান যুগের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে Sign-up করেছি কয়েক বছর গত হয়ে গেল। গত সাত-আট বছর আগে ফেসবুকের চেহারা যে-রকম দেখেছি, এখন আর সেই চেহারা নেই। ফেসবুকের চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে এদেশের অনেক জ্ঞানীগুণীরা ফেসবুক বেশি একটা পছন্দ করতো না। দেশের কবি সাহিত্যিকরা ফেসবুক দর্শন (ভিজিট) করতো না। তাঁরা ফেসবুককে একরকম ঘৃণার চোখেই দেখতো। বর্তমানে ফেসবুক সবার জন্য প্রযোজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুক ছাড়া এখন আর কেউ কিছু বুঝে না।

ফেসবুক এখন সব কাজের কাজী। খবর, বিনোদন, আড্ডা, গল্প, চ্যাটিং, প্রচার, মুহূর্তে বার্তা আদান-প্রদান-সহ দেশ-বিদেশের টাটকা খবর একমাত্র ফেসবুকেই পাওয়া যায়, দেখা যায়, শোনাও যায়। তাই আগে যাঁরা ফেসবুককে আড়চোখে আর ঘৃণার চোখে দেখতো, তাঁরা এখন ফেসবুককে পূজার প্রসাদ হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। তাই এখন এই বঙ্গদেশের সব কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নায়ক-নায়িকা, ক্যাডার, মাস্তান, আস্তিক, নাস্তিক, ধর্মী বিধর্মী-সহ দেশের সমশ্রেণীর মানুষেই ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছে।

এর কারণ ফেসবুক বিশ্বের সবার জন্য উম্মুক্ত তাই। ব্যবহারের দিক দিয়েও ফেসবুক মানুষের সুবিধার্থে আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক সহজ করে দিয়েছে। রেখেছে নানারকম সুবিধাজনক সিস্টেম বা অপশন। আগে কারোর পোস্টে লাইক দেওয়ার জন্য একটা অপশন ছিল। এখন লাইক-সহ চার-পাঁচটে ইমেজিং অপশন। আগে আলাদা কোনও ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপস ছিল না। যা ছিল ফেসবুকের সাথেই ছিল। এখন ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে মেসেঞ্জার অ্যাপের ভেতরে মেসেজ-সহ ভিডিও কল করার মতো সিস্টেমও রাখা হয়েছে। আগে ফেসবুকে পেইজ বা গ্রুপ ছিল না। এখন গ্রুপ-সহ গ্রুপিংও আছে। এসব গ্রুপগুলো কয়েকশো বদ্ধু মিলে ব্যবহার করতে পারে। অপরকেও গ্রুপে আসার আহবান জানাতে পারে। বন্ধু তালিকার বন্ধু ছাড়াও গ্রুপে অনায়াসে সদস্য হতে পারে। গ্রুপ পরিচালনায় কয়েকজন মডারেটর থাকতে পারে বা থাকেও। এসব গ্রুপগুলো কবি, সাহিত্যিক, ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ডাক্তার, দেশের ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ-সহ আস্তিক, নাস্তিক, ধর্মী, বিধর্মী অনেকেই তৈরি করে থাকে।

এসব গ্রুপে কবিদের লেখা কবিতা পোস্ট হয়। মানুষে পড়ে। সাহিত্যিক ব্যক্তিরা সাহিত্য নিয়ে পোস্ট করে। সাহিত্যপ্রেমীরা মন্তব্য করে। ভাষাবিদরা ভাষা, বর্ণ, শব্দ, বাক্য, বানান নিয়ে পোস্ট করে। মানুষে বুঝে, শিখে, মন্তব্য করে। রাজনীতিবিদরা দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে পোস্ট করে। মানুষে পড়ে, মন্তব্য করে। ডাক্তাররা মানুষের উপকারের জন্য চিকিৎসা নিয়ে পোস্ট করে। মানুষে পোস্ট পড়ে উপকার পায়। ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ তাঁদের কৃতিত্ব প্রকাশে পোস্ট করে। সাপোর্টাররা মন্তব্যে আছি বলে জানান দেয়। আস্তিকরা ধর্ম নিয়ে পোস্ট করে ধর্ম প্রচার করে। ধর্মের অনুসারীরা সাপোর্ট করে, মন্তব্য করে। নাস্তিকরা ধর্মে আঘাত করে পোস্ট করে। আস্তিকরা প্রতিবাদ করে। ধর্মীরা বিধর্মীদের সমালোচনা করে। বিধর্মীরা ধার্মিকদের ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট করে।

এভাবে সময় সময় বিধর্মীদের করা কারোর ধর্মে আঘাত করা পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। ভাইরাল মানে যত শেয়ার তত ভাইরাল। শেষতক দেশে থাকা মিডিয়ার চোখে। তখন জাত গেল জাত গেল বলে তোলপাড় শুরু হয়। জ্বালাও, পোড়াও, ভাংচুর, মিছিল, মিটিং শুরু হয়। অন্য কোনও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর পোস্টের সমালোচনা তেমন না হলেও, এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্ম অবমাননাকর কোনও পোস্ট কেউ করলেই মহাবিপদ। ফেসবুকে কিছু বেশি বুঝনেওয়ালা হিন্দু ইউজার আছে, তাঁরা হঠাৎ করে না বুঝেই তাঁদের গ্রুপে বা তাঁদের নিজেদের টাইমলাইনে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট করে। সেই পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে সৃষ্টি হয় আলোচনা সমালোচনা। তারপর ভাংচুর হাঙ্গামা। জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও! কিন্তু কেন? এসব পোস্ট কারা দরকারই বা ছিল কেন?

জীবের সেরা একজন মানুষ হয়ে আরেকজন ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার আমাদের প্রয়োজন কী? আমি মনে করি আগে আমার নিজের ধর্ম নিয়ে ভালো করে বুঝে নেওয়া উচিত। নিজের ধর্ম বিষয়ে শিক্ষা নেওয়াও উচিৎ মনে করি। তারপর নাহয় অন্যের ধর্ম বিষয়ে বন্ধুসুলভ আচরণে পরামর্শ দেওয়া। তাও খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে। কারণ, আমাদের সকলের জানা থাকা উচিত একজন মানুষের আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, কিন্তু ধর্ম থাকে। সবাইকে বুঝতে হবে মানুষ সব আঘাত সইতে পারলেও, একজন ধার্মিক মানুষ ধর্মে আঘাত সইতে পারে না।

তাই সময় সময় দেখা যায় ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাসের কারণে কয়েকটা গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মানুষও মারা যায়। এসব স্ট্যাটাস বা পোস্টগুলো থাকে ধর্ম অবমাননাকর। যা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ সহ্য করতে পারে না। তাও আবার এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম নিয়ে করা। যা এদেশে বিগত সময়ে অনেকবারই এরকম ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। ঘটনা ঘটিয়েছিল এদেশের ফেসবুক ইউজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুইএক জন ছেলেপেলে। কিন্তু তাঁরা কেউ জানে না যে, পরের ধর্মকে ছোট করে নিজের ধর্মকে কোনদিনও বড় করা যায় না। অপরের নিন্দা করে যেমন নিজের সুনাম বাড়ানো যায় না, তেমনি অন্য ধর্মকে আঘাত করে নিজের ধর্ম বড় করা যায় না। বরং নিজের ধর্ম অপরের কাছে ঘৃণিত হয়। আর নিজের সহধর্মীরা বা স্বজাতিরা হয় ঘৃণার পাত্র।

তাই ফেসবুকে থাকা সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু ভাই বোনদের অনুরোধ করছি, সামাজিক যোগাযোগ সাইটে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মে আঘাত করে কোনও স্ট্যাটাস দিবেন না, লিখবেনও না। কোনও গ্রুপে পোস্টও করবেন না। এতে ক্ষতি ছাড়া কোনও লাভ হয় না। আর ক্ষতিটা শুধু পোস্টদাতার একার হয় না। জের টানতে হয় দেশের সকল হিন্দুদের। জেনে রাখুন, একজন সংখ্যালঘু হিন্দু যদি না বুঝে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মে আঘাত দিয়ে পোস্ট করে, তাহলে সেই ফেসবুক পোস্টের কারণে আরও কয়েকশো সহধর্মীদের ক্ষতি হবে। এর কারণ খামখেয়ালিভাবে ভুল পোস্টের ভুল খেসারত।

আবার আমরা এদেশে কিন্তু সংখ্যালঘু। এটা তো একটা নাবালক শিশুও বুঝে। আর একজন সাবালক ফেসবুক ইউজার হয়ে বুঝছেন না কেন? এরকম খামখেয়ালি করবেনই বা কেন? এরকম খামখেয়ালিতে শুধু নিজে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ছাড়া তো আর কিছুই নয় বলে মনে করি। সেই আগুনে আরও দশজন পুড়ে ছাই হয়। দোহাই আপনাদের, এভাবে নিজের ঘরে আগুন জ্বালাতে যাবেন না। আপনাদের মনে থাকা উচিত, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর পোস্টের কারণে কক্সবাজার রামুর উখিয়ার ঘটনা, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছির নগরের ঘটনা কী হয়েছিল সেটা মনে রাখা। নিশ্চয়ই একজনের ভুলের কারণে আরও দশজনের ক্ষতি-সহ দশটি বসতঘর পুড়েছিল! তাহলে আর ফেসবুকে অন্য ধর্মের অবমাননাকর পোস্ট নয়!

এর চেয়ে উত্তম কাজ হবে আগে বেশি করে নিজেদের ধর্ম (হিন্দু ধর্ম) নিয়ে প্রচার করে প্রসারিত করুন। নিজেই নিজ ধর্মশিক্ষায় সুশিক্ষিত হন। অপরকেও ধর্মশিক্ষা দিন। যেমনটা দেখা যায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদে মাদ্রাসায়। যা আমাদের সনাতন ধর্মের মাঝে নেই। আমরা হিন্দুরা অর্থের লোভ বেশি করি। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি ভাবি। নিজেদের ধর্মও তো একরকম ভবিষ্যৎ বলে মনে করি। যা এখন আছে, তা খেয়ে-দেয়ে বেঁচে থেকে নিজেদের ধর্মটাকে তো টিকিয়ে রাখতে হবে। তা না করে নিজের ধর্মকে অবহেলা করি। অন্যে ধর্ম অবমাননা করি। তা না হলে আজ আমাদের এই অবস্থা কেন? এই অবস্থা শুধু নিজ ধর্মশিক্ষায় অশিক্ষিত তাই।

আমাদের ধর্ম তো নাকি সনাতন ধর্ম। সনাতন শব্দের অর্থ যদি হয় চিরস্থায়ী বা শাশ্বত ধর্ম; প্রাচীন অপরিবর্তনীয় বা আবহমান প্রচলিত হিন্দু ধর্ম। তাহলে আজ আমাদের ধর্মের জনসংখ্যা শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে কেন? আমি মনে করি এরকম পরিস্থিতি ধর্মের প্রতি আমাদের অবহেলার কারণেই হয়েছে। আমাদের ধর্মের প্রতি ভক্তি আছে ঠিক, কিন্তু বিন্দুমাত্র ধর্মশিক্ষা নেই। ধর্মের প্রতি ভয়ও নেই। ধর্মীয় শিক্ষা দেখি হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের দেখি জীবনভর বৌদ্ধভিক্ষু সেজে থাকতে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরও দেখি একই অবস্থা। তাঁরা ধর্মকে ভক্তি করে। ধর্মজ্ঞান অর্জনের তপস্যা করে। ধর্মগুরুদের আদেশ মেনে চলে।

ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছেলে মেয়েদের দেখি প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা আরবি শিক্ষা বা ধর্মশিক্ষা বই নিয়ে মক্তবে, মাদ্রাসায়, মসজিদে যায়। মক্তবে মাদ্রাসায় গিয়ে ধর্মশিক্ষা শিখছে, ধর্মীয় ভাষা শিখছে। আরবি লেখা-সহ পড়াও শিখছে। ওরা ধর্মশিক্ষায় সু-শিক্ষিত হয়ে মাওলানা হচ্ছে। ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনে হাফেজ হচ্ছে। ধর্মীয় চিন্তাবিদ হচ্ছে। দেশ-বিদেশে যাচ্ছে। ইসলাম ধর্ম প্রচার করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ওয়াজ মাহফিল করছে। মানুষকে বোঝাচ্ছে। সাথে নানাবিধ বুদ্ধি পরামর্শও দিচ্ছে। তা ছাড়াও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো পড়ছেই, সকাল সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। তাও একরকম বাধ্যতামূলক।

আর আমাদের ধর্মের পণ্ডিত, বৈষ্ণব, ঠাকুর, পুরোহিতরা শুধু হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ বলে চিল্লা-চিল্লি করে যাচ্ছে। অথচ হরে কৃষ্ণের অর্থও কারো কাছে বলতে চায় না। বোঝায়ও না। অনেক জায়গায় হরিনাম সংকীর্তন হয়। রামায়ণ পাঠ করা হয়। মহাভারত পাঠ করা হয়। কিন্তু কোথাও হিন্দু ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয় না। এদেশে কোনও হিন্দু ধর্মশিক্ষা পাঠশালাও নেই বলে মনে হয়। ধর্ম কীভাবে পালন করতে হবে, আর কীভাবে ধর্ম প্রচার করতে হবে সেই দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতও কোনও ধর্মগুরু নেই। দৈনন্দিন কাজকর্মের মাঝে কীভাবে উপসনা করতে তাও কেউ কাউকে শেখায় না। অথচ মন্দিরে কর্মরত থাকা পুরোহিত নামের ঠাকুরদের দেখি মন্দিরে দুই পা টান করে বসে থাকে, আর কিছু ভক্তগণ এসে পুরোহিতের পায়ের বৃদ্ধ আঙুল চেটে খায়। এতে পুরোহিত মহা খুশি। ভক্তগণও পায় পরম তৃপ্তি। ধর্মের ঘণ্টা মন্দিরে বাজে ঠন-ঠনা-ঠন।

মন্দিরের পুরোহিতের কাছে কেউ ধর্ম বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে ওরা মুখ ঘুরিয়ে রাখে। যদি জিজ্ঞেস করে গোসাইজী শিবলিঙ্গ বিষয়ে একটু বুঝিয়ে বলুন। তাহলেই পুরোহিতের মাঠায় বাড়ি পড়ে। প্রশ্নকারীকে বলে, এসব শেখার বয়স এখনো হয়নি। তাই এসব বিষয়ে জানতে চেওনা। এর মানে হলো, পুরোহিত হিন্দু ধর্ম বিষয়ে নিজেই কিছু জানে না। অথচ পূজা শেষে মন্দিরের দেবমূর্তির সামনে থাকা সবকিছু ধুয়ে মুছে গাট্টি ভড়ে পুরোহিত নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এতেই বুঝা যায়, ওরা শুধু পূজা দেওয়াই শিখেছে। ধর্ম বিষয়ে ওদের বিশেষ কোনও জ্ঞান নেই। ধ্যান ধারণাও নেই। শতভাগ প্রমাণিত হয় যে, বেশিরভাগ বৈষ্ণব, ঠাকুর, পুরোহিতেরা হিন্দু ধর্মের মর্মকথা কিছু জানে না। তাঁরা শুধু হরিনাম জপতে জানে, আর ঘণ্টা বাজিয়ে দেবমূর্তি পূজা করতে জানে। এছাড়া আর কিছুই জানে না, বুঝেও না। তাহলে ওরা পরকে বুঝাবে কী করে? আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও ধর্ম বিষয়ে বেশি কিছু শিখবেই বা কোথা থেকে? এভাবেই হিন্দুরা ধর্ম বিষয়ে থেকে গেল অজ্ঞ। হিন্দুদের ঘরে নতুন করে আসা নতুন অতিথিরাও থেকে যাচ্ছে অজ্ঞ। তাই সনাতন ধর্ম প্রাচীনকাল অতিক্রম করে আজকালকার সভ্যযুগে সনাতন ধর্ম প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সনাতন ধর্মের অস্তিত্ব হারানোর পেছনে আরও বেশকিছু কারণও আছে। তা হলো, প্রায়-ঘরের মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা নেই। না থাকার কারণে মুসলমান ছেলেদের প্রেমে পড়ে। এরপর নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। হিন্দু ছেলেও মুসলিম মেয়েদের প্রেমে পড়ছে। এরপর নিজের ধর্মকে ঘৃণা করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। কেউ আবার কারোর মুখের মধুর কথা শুনে সপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। সেদিন এক পত্রিকায় দেখলাম, এক হিন্দু মেয়ে মুসলমান ছেলের সাথে প্রেম করে বিবাহ করেছে। এরপর বাড়িতে এসে মেয়েটার মা-বাবা-সহ ছোটবড় ভাই-বোনদের বুঝিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে ফেলেছে। অথচ ছোট থেকে বড় হয়ে আজ পর্যন্ত দেখিনি একজন মুসলিম ছেলে বা মেয়ে একজন হিন্দু ছেলে মেয়ের প্রেমে পড়ে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছে। করেনি, দেখিওনি। আর করবেই বা কেন? তাঁরা নিজ নিজ ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত, দীক্ষিত। আর আর হিন্দু ছেলে মেয়েরা বেশি বেশি লেখা-পড়া করেও নিজ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে চলে যাচ্ছে।

এভাবেই ধর্মশিক্ষার অভাবে জেনে-না-জেনে, বুঝে-না-বুঝে অনেকেই হিন্দু ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, অন্য ধর্মে চলে যাচ্ছে। এভাবে যেতে যেতে আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। তাই আজ হিন্দুরা বিশ্বের বুকে ধর্মীয় জনসংখ্যার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব হচ্ছে শুধু ধর্মশিক্ষা না থাকার কারণে। ধর্মশিক্ষা না থাকার কারণে ধর্মের প্রতি দিন দিন মানুষের বিশ্বাসও উঠে যাচ্ছে। ধর্মের প্রতি অনীহা প্রকাশে যে একরকম শাস্তি ভোগ করতে হয়, সেই ভয়ও কারোর মনে প্রাণে নেই। এই সুযোগে অন্য ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু ধর্মের উপর বারবার আঘাত হানছে। সেই আঘাত সইতে হচ্ছে, যাঁরা হরিনাম জপে কোনরকম বেঁচে আছে। এসবের মূল কারণই হচ্ছে ধর্মশিক্ষায় অশিক্ষিত হয়ে থাকার কারণ।

যাঁরা ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম বা অন্য ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন, মার খেয়েছেন, ঘরবাড়ি ছাই করেছেন, তাঁরা এবার একটু ভেবে দেখুন! একটু পেছনে ফিরে তাকাক এবং দয়া করে একটু লক্ষ্য করুন! আপনারা অনেকেই ভাবেন যে হিন্দুধর্ম আদি অনন্ত কাল থেকে বিরাজমান। তাই হিন্দু ধর্মকে কেউ আঘাত ও ধ্বংস করতে পারবেনা। আমি এটাতে বিশ্বাসী নই। কারণ, আমি সবসময়ই অতীতকে সামনে রেখে পথ চলি। অতীতের কিছু ভুল বর্তমান এবং ভবিষ্যতে শোধরানোর চেষ্টা করি।

প্রিয় হিন্দু ভাই ও বোনেরা, আপনারা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন আফগানিস্তানের হিন্দুরা কোথায় গেল? এই আফগানিস্তানেও কোনও একসময় হিন্দু ছিল। সনাতন ধর্মের বিস্তার ছিল। অনেক মন্দিরও নাকি ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। আফগানিস্তান আর পাকিস্তানে হিন্দুদের কোনও অস্তিত্ব নেই। হিন্দুদের একটা মন্দির পর্যন্ত নেই। আবার ‘গান্ধার’ যার বিবরণ পাওয়া যায় মহাভারতে। যেখানকার নাকি রাণী ছিলেন গান্ধারী। আজ সেই স্থানের নাম কান্দাহার। আজ সেখানেও কোনও হিন্দু নেই। ‘কম্বোডিয়া’ জানা যায়, একসময় সেখানকার রাজা ছিলেন সূর্য্যদেব বর্মন। যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মন্দির ‘আঙ্কোরভাট’ নির্মাণ করিয়েছিলেন। আজ সেখানে কোনও হিন্দু নেই। হিন্দুদের অস্তিত্ব নেই, কোনও মন্দিরও নেই। হিন্দুদের প্রাচীন কোনও স্থাপনা নেই।

একসময় ইন্দোনেশিয়ার বালিদ্বীপে ৯০% হিন্দু ছিল। এখন সেখানে মাত্র ২০% অবশিষ্ট রয়েছে। তাও কোনরকমভাবে। যেই কাশ্মীর নিয়ে বর্তমানে ভারত পাকিস্তান মারামারি হানাহানি হচ্ছে, সেই কাশ্মীরে ২০ বছর পূর্বেও ৫০% হিন্দু ছিল। এখন সেখানে শূন্যের কোঠায়। আগামী কয়েক বছর অতিবাহিত হলেই মনে হয় কাশ্মীরেও হিন্দুর অস্তিত্ব থাকবে না নিশ্চিত। এমন আরও বিস্তর উদাহরণ দেওয়া যায়, কিন্তু বেশি উদাহরণ টেনে কাউকে ক্লান্ত করতে চাই না। শুধু সব হিন্দুদের মাঝে ছোট্ট একটা প্রশ্ন রাখতে চাই। প্রশ্ন হলো, আমাদের সনাতন ধর্মের অবস্থা এমন হলো কেন? এখনো বা এই অবস্থা কেন? এখন হয়তো প্রশ্নের উত্তর আসবে জানি না। আমি মনে করি এই অবস্থার জন্য আমরা নিজেরা এবং ধর্মের ধর্মগুরুরা দায়ী।

এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাও কমতো না। যদি সনাতন ধর্মের ধর্মগুরু বা ধর্ম পন্ডিতগণ ইসলাম ধর্মের নবীদের মতো খেয়ে-না-খেয়ে কষ্ট করে দেশবিদেশে ঘুরে ঘুরে সনাতন ধর্ম প্রচার করতেন। আর ধর্মশিক্ষা দিতেন। কিন্তু না, তা তাঁরা করেননি। কোনও হিন্দু মহাপুরুষ দেশবিদেশে ঘুরে ঘুরে সনাতন ধর্ম প্রচারে নামেননি। তাঁরা ধর্ম পণ্ডিত, তাঁরা ধর্মগুরু। তাঁরা শুধু ঘরে বসে বসেই হরিনাম জপেছেন। আর হরিনাম সংকীর্তন করেছেন। বিস্তর শাস্ত্রগ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু হাতে কলমে আসল ধর্মশিক্ষা দেননি। এখনো তাঁরা যদি দেশের প্রতিটি মন্দিরে, প্রতিটি আশ্রমে, প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে হিন্দু ধর্মশিক্ষা দেওয়া শুরু করে, তাহলে ভবিষ্যতে বেশকিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী ধর্মশিক্ষায় সু-শিক্ষিত হবে।

তা হয়তো তাঁরা কোনদিন করবে না। তাঁরা হিন্দু ধর্ম প্রচারেও কোনদিন নামবেন না। তাহলে আমাদের নিজের ঘর নিজেদেরই সাজাতে হবে। আমাদের করতে হবে, দেশের প্রতিটি মন্দিরে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা সবার জন্য ধর্মশিক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত এমন পণ্ডিত একজন করে প্রতিটি মন্দিরে রাখতে হবে। ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজের লেখা-পড়ার পাশা-পাশি ধর্মশিক্ষাও বাধ্যতামূলক করতে হবে। ধর্মীয় ভাষা সংস্কৃত ভাষা শিখতে হবে, পড়তে হবে। তা কী এই বিশ্বে, এই দেশে কখনো হবে? মনে হয় না। মনে হয় তা আর হবার আশংকা নেই। আশংকা আছে এভাবে চলতে থাকলে কোনো এক সময় হিন্দু ধর্ম একেবারে বিলুপ্তি হবার। এছাড়া আর কী? কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের সাথে ধর্ম নিয়ে বাদ প্রতিবাদ না করে, আগে আমাদের নিজেদের ধর্ম জানতে হবে, শিখতে হবে। নিজ ঘরের সন্তানাদি ধর্মশিক্ষায় সু-শিক্ষিত করতে হবে। তাহলেই একদিন-না-একদিন মরা গাছে ফুল ফুটবেই ফুটবে। সনাতন ধর্মও নতুন করে জাগ্রত হবে। আর না হলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

বি:দ্র: কিছু ভুল হলে বা কারোর পবিত্র মনে আঘাত লাগলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিয়ে ক্ষমা করে দিবেন।

কে জানতো

কে জানতো তুমি হবে একদিন বাংলার স্থপতি
জন্ম তোমার গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে
টুঙ্গিপাড়া সুনিবিড় ছোট্ট গ্রামের ছায়াতলে
যার কোল বেয়ে অবিরাম চলছে নদী মুধুমতী।

কে জানতো ঐ খোকা একদিন হবে বড় নেতা
মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বাংলার
করবে দূর দরিদ্র মানুষের কান্না, হাহাকার
এনে দেবে মুক্তি এনে দেবে বাংলার স্বাধীনতা।

কে জানতো বজ্র কণ্ঠ তোমার, আকাশে বাতাসে
ভাসবে, প্রেরণা যোগাবে আবালবৃদ্ধবনিতার
একদিন তুমি হবে গর্ব শস্য শ্যামল বাংলার
হবে সকলের প্রিয় হবে শ্রেষ্ঠ নেতা সমগ্র বিশ্বে।

কে জানতো তুমি হবে প্রধান মন্ত্রী হবে রাষ্ট্রপতি
কে জানতো আসবে একদিন নির্মম রাত
আসবে একদিন একটি সে নিষ্ঠুর প্রভাত
তবু সকল হৃদয়ে সেই তুমি এক মোহন জ্যোতি।

শোকাবহ ১৫ই আগষ্ট

মুজিবের ঐ ভরাট কণ্ঠে সারা বাংলা মুখরিত
বিশাল সে জনসমুদ্র সেদিন হয়েছিল উদ্দীপ্ত;
তাঁর বজ্র কণ্ঠ রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেব
এদেশকে মুক্ত করেই ছাড়বো …..
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেন ছড়িয়ে পড়লো বাতাসে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও বাংলার আকাশে।

এ বাংলার বুকে সে কি আকাশ ফাটা গর্জন
মুহূর্তে যেন জ্বলে উঠে বাংলার লক্ষ জনগণ;
জেগে উঠলো বাংলার পশুপাখি সকল জীব
আমাদের নেতা শেখ মুজিব
বাংলা তোমার বাংলা আমার শত মুখে মুখে
হয়ে উঠে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বের চোখে।

এতই তেজোদৃপ্ত ভাষণখানি প্রেরণার উৎস
স্তম্ভিত বাংলার আকাশ বাতাস, সমগ্র বিশ্ব;
মুজিবই ভাবতেন শোষিত ও বঞ্চিতের কথা
তাই বাংলার বন্ধু, বিশ্বনেতা
ছাত্র কৃষক শ্রমিক সকল শ্রেণীর অনুপ্রেরণা
মাটি ও মানুষের কাছাকাছি, যেন কত চেনা।

শোকাবহ ১৫ই আগষ্ট যেই আসে ঘুরেফিরে
হৃদয়বিদারক স্মৃতি যেন হৃদয় রক্তাক্ত করে;
ছিলেন তিনি মহান ব্যক্তিত্ব, বাংলার স্থপতি
ভালোবেসেছিল বাঙালি জাতি
সপরিবারে হন নিহত পিশাচ পশুদের হাতে
তবুও পারেনি ওরা, তাঁর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে।

এবারের ঈদুল আজহা

শহরে যেন আজ কেউ নেই
রাস্তাঘাট শূন্য করে ধূ ধূ
শুনি পশুপাখির শব্দ শুধু
হেন চিত্র কোন উৎসব যেই।

ভোগান্তি কত ফিরবেই গ্রামে
প্রিয়জনদের এ পুনর্মিলন
একেই কয় নাড়ির বন্ধন
প্রেম ছাড়া কি আছে ধামে ?

ঈদুল আজহা ত্যাগের চেতনা
মনের লোভ হিংসা-দ্বেষ
ক্রোধ পশুত্ব করো শেষ
দূর করো সে বৈষম্য ভাবনা।

এবারের উৎসব বড্ড ফিকে
বান ডেঙ্গু গণপিটুনী হত্যা
ধর্ষণ, বেঁচে নেই মানবতা
কার সাধ্য বাঁচায় প্রশান্তিকে।

রক্ত মাংস কই চায় বিধাতা
চায় জবাই করি নিজ-পাপ
করি ভুল কর্মের অনুতাপ
হই সে মানুষ সত্য মূলকথা।

তোর নাম নাকি এডিস

চোখেই দ্যাখি না তোকে
তোর নাম নাকি এডিস;
সবাই যে ভয়ে ভয়ে থাকে
তুই বাবা কতই পারিস্।

জন্ম তোর পরিস্কার জলে
মুখে তবু শুধু যেন বিষ;
শিশু, বুড়ো যাকেই পেলে
তাকেই কামড়ে দিস।

চতুর্পাশে কত বোমা ফাটে
মানুষ তো পায় না ভয়;
মুখে কিছু বলিস না মোটে
তবু যে তোকে ভয় হয়।

সব্বাই বলে তুই নাকি ভদ্র
শুনিস না মন্ত্রীদের কথা;
হঠাৎই তুই হয়ে যাস রুদ্র
দিস জ্বর, সর্বাঙ্গে ব্যথা।

কেড়েও নিস মা বাবা ভাই
কারো বোন, কত কচি;
করিস কত যে সংসার ছাই
ভদ্রের এ কেমন রুচি ?

যুগসন্ধিক্ষণের কথা

পুরাতন ব্যবস্থা ভেংগে পরবে আর নতুন ব্যবস্থার জন্ম হবে ? আবার সেই হাজার বছরে সভ্যতা নতুন রুপ নিয়ে প্রতিভাবিত হবে? যে প্রকার বর্ষা ঋতুর পূর্বে মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ ময়লা দেখায় আর ধুলায় ঢাকা মাটি ময়লা দেখায় সেই প্রকার স্থিতি আজ।

আর বৃষ্টির পড়ে আকাশ আর পৃথিবী ধুয়ে স্বচ্ছ হয়ে যায় ঠিক এই রুপ এই বিধ্বংসের পরে বিষাক্ত সভ্যতা ধুয়ে স্বচ্ছ হয়ে যাবে তবে ভয় কিসের আমাদের ? এই নতুন সভ্যতা নির্মাণের কারণে আমাদের কে মোহ ত্যাগ করতে হবে ?

সমগ্র পৃথিবীর কল্যাণের চিন্তা করতে হবে? এর পড়ের আমরা কি বসে থাকতে পারি না পারি না? হয়ত এর অর্থ আমাদের হৃদয় পর্যন্ত যাচ্ছে না? কারণ আমাদের এই মন মোহ দ্বারা ঘিরে আছে?

প্রশ্ন থেকে যায় আমাদের যে কি জানতে পারলে আমাদের এই মোহ বা দুর্বলতা ত্যাগ করতে পারব ? তাহলে জানতে হবে আমাদের জীবনের রহস্যকে, জানতে হবে সংসারের বাস্তবিক রূপকে অনুধাবন করতে হবে? নদীর প্রবাহকে যেমন মুষ্টিবদ্ধ করে গ্রহন করলে কিছুই পাওয়া যায়না কিন্তু সেই হাতকে অঞ্জলী করে নদীর প্রবাহে নিমজ্জিত করলে নদীর পানি মুখ পর্যন্ত পৌছাতে পারে?

আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে অহংকারে মুষ্টিবদ্ধ করছি না সমর্পণের অঞ্জলী বানিয়েছি আমরা? আসলে আমরা কি এই জ্ঞানকে গ্রহন করতে পারবো?

প্রসঙ্গঃ ধর্ষক, লম্পট ও পায়ুকামী মোল্লা

ইদানীং দেখা যাচ্ছে ধর্ষক, লম্পট, পায়ুকামী কোনো মোল্ল অপকর্মে লিপ্ত হলে তাদেরকে বলা হচ্ছে তারা আলেম নয়। তারা আলেম বেশে মসজিদ মাদ্রাসায় প্রবেশ করে অপকর্ম করে ইসলামের বদনাম করছে। অথচ কিছুদিন আগেও বলা হতো, আলেমদের অপরাধ গোপন করতে। এগুলো ফেসবুকে প্রকাশ না করতে। এ জন্য তারা হাদিসের অপব্যবহার পর্যন্ত করেছে। তারা বলেছে, এক মুসলিমের অপরাধ গোপন করলে নাকি পরকালে আল্লাহ তার অপরাধ গোপন করবেন। এটা ঠিক ঐরকম ধর্ষকদের ট্রিক্স এর মতোই মনে হয় যারা ধর্ষণ বলাৎকার করার সময় ভিক্টিমের প্রতি পরকাল ও আল্লাহর ভয়কে কাজে লাগাত। অর্থাৎ ওস্তাদের কথা না শুনলে পরকালে জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখানো আর ওস্তাদদের পাপ গোপন করার নীতি একই সূত্রে গাঁথা।

ধর্ষকরা আলেম নয়- এবার এ বিষয়ে আসি। দশ বছর, বিশ বছর একজন ব্যক্তি মসজিদে খতিবগিরী করলো, মাদ্রাসায় মুহতামিমের পদে থেকে ছাত্রছাত্রীদের কোরান শিক্ষা দিল, নুরানী চেহারা নিয়ে পরের বাড়ি খেলো, ঘাড় মোটা করলো- সে ব্যক্তি আলেম না হলে তবে আলেম কোন বেটা? এতদিন আলেমদের পাপ গোপন করার কথা বলে এসে এখন যদি বলেন তারা আদৌ আলেম নয় তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ালো? এভাবে আর কত পিছলাবেন ভাই?

ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত আপনিই তাকে আলেম মনে করে আপনার বাবা মায়ের জানাজা পড়িয়েছেন, বিয়ে করেছেন তাদের মাধ্যমে, সন্তানের নাম রেখেছেন তাদের কাছ থেকে। আকিকাতে খাসি জবাই করে মাথা খাইয়েছেন ঐ আলেমকেই। আর আজ সে আলেম থেকে বাতিল হয়ে গেল? ভবিষ্যতের নন আলেম (ধর্ষক, বলাৎকারকারী) যে এখন আপনার কাছে আলেম হিসেবে গৃহিত হচ্ছে না, আপনার বাড়ি যে ভালো ভালো খাচ্ছে না তার নিশ্চয়তা কি? সারাজীবন সম্মান করে এসে দেখলেন আসলে বেটা একটা ধর্ষক, লম্পট, বলাতকারকারী কওমে লুতের সদস্য- তখন ব্যাপারটা কি রকম দাঁড়াবে?

আপনি বলতে পারেন আলেমরাও মানুষ। তারাও অপরাধ করতে পারে। কিন্তু আমি বলি, আসলে তারা আলেমও না, মানুষও না। ওরা অবিশ্বাসী। না হলে প্রতিদিন কোরান পাঠ করে, পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে কীভাবে বাচ্চা বলাৎকার করে? ওরা জানে না এটা কত বড় পাপ? ওরা জানে না এই অপরাধে কওমে লুত নামে একটা পুরো কওমকে আল্লাহ জমিন উল্টিয়ে ধ্বংস করেছেন? সে ঘটনা জেনে কেবল অবিশ্বাসী হলেই একই অপরাধ দিনের পর দিন করে যাওয়া সম্ভব।

আরও একটা কারণ আছে। ওরা অপ্রাকৃতিক জীবন বেছে নিয়েছে। খ্রিষ্টানদেরকে যেমন আল্লাহ সংসার ত্যাগী হওয়ার আদেশ দেননি, কিন্তু তারা সেই বৈরাগ্যই গ্রহণ করে তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা সোজা কথা নারে ভাই। কত ঋষি-মুনি বনে জঙ্গলে গিয়ে বৈরাগ্য নিয়ে কামনার যন্ত্রনায় ছটফট করেছে, কামনা রোধ করতে কত সাধনা করেও ব্যর্থ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আর তুমি বেটা কোন শালা? আল্লাহর নিয়মকে লঙ্ঘন করে ওরা যেমন পারেনি, তেমনি তথাকথিত ধার্মিক শ্রেণি নারী সংসর্গ বাদ দিয়ে অপ্রাকৃতিক জীবন গ্রহণ করে নিয়েছে তারাও পারছে না, পারবেও না। উলটো তাদের মনে বিকৃত যৌনতা প্রবেশ করেছে। নদীকে বাঁধ দিলে যেমন তা লোকালয় উপচে পড়ে, এদের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। অপ্রাকৃতিক জীবনধারা তাদেরকে যৌনকামনায় সর্বদা তিরতির করে কাঁপতে থাকা অসুস্থ মানুষে পরিণত করেছে। যৌন চিন্তা এদেরকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে। মেয়েদের দেখলে এরা যে মন্তব্য করে বা মেয়েদের নিয়ে এদের চিন্তা যে লেভেলের তা যদি কোনো প্রকারে ভিজ্যুয়াল করা যেত তবে দেখা যেত চারপাশ কমনার লালায় পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এরা এমনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় কওমে লুতের অপরাধ মসজিদ মাদ্রাসার মতো পবিত্র স্থানে বসে করে যাচ্ছে। এদেরকে সুস্থ দাবি করার মানুষ কেবল তারাই, যারা তাদের মতো অসুস্থ।

নির্ঘুম রাত

মশার প্যান প্যানিতে
কান ঝালা পালা।
কামড়ে কামড়ে নাভিশ্বাস
বাড়ছে অন্তরজ্বালা।
আন্তর্জালে বুদ হয়ে রই
টের পেয়েছে মশা।
গুন গুনিয়ে শোনায় গান
করছে তামাশা।

আন্তর্জালে বাইটগুলি
যেমনি শুষে নেয়।
মশাও যেন সেই সুযোগে
বাইটে শুষে নেয়।
ডেঙু, ম্যালেরিয়া
জানান দিয়ে যায়।
লেট নাইটের সুখগুলি সব
শূন্যে মিলায়।
অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখি
বাইটের কারবার।
আমি, আমার পার্সের দশা
বড়ই জেরবার।
আন্তর্জালে বাড়ছে অন্তর জ্বালা
রাতকে রাত কাটছে নির্ঘুম।
অলিক প্রেমে বিভোর হয়ে
গুম হয়েছে ঘুম।

শিরোনাম হীন লেখা

বাঙালি সুস্থ চিন্তা ভুলে যাচ্ছে। সব সময় খোঁজে আছে খারাপ কিছুর। এরা পদ্মাসেতুতে মাথা লাগে এইটাতে বিশ্বাস করেছে। ছেলেধরা সন্দেহ করে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে মেরেছে। আহত করেছে অনেককে। কিন্তু প্রকৃত ছেলেধরার সাথে একটি ঘটনারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই যে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল, এতগুলো মানুষ আহত হলেন তাদের কি হবে?

সবসময় মানুষের রক্ত টগবগ করছে। এরা গরম গরম কিছু চাচ্ছে অনবরত। স্বাভাবিকতা, সুস্থতা তারা গ্রহণ করতে পারছে না। চরম কিছু চায় এরা। ধুমধাম না হলে এদের গা ম্যাজম্যাজ করে। গা ম্যাজম্যাজ থেকেই অপরকে পিটিয়ে এরা চরমানন্দ খুঁজছে। এরা ভালো জিনিস মানতে পারছে না।

ইউএনও’র ফোন পানিতে পড়ে গেছে। এক ছাগল মার্কা সাংবাদিক সেটাকে রসিয়ে বসিয়ে ইউএনও’র স্ত্রীর সাধের মোবাইল ফোন বলে রিপোর্ট করলো। ক্ষমতা দেখিয়ে বউয়ের ঐ সাধের মোবাইলখানি ফায়ার সারভিসের লোক দিয়ে উঠানো হয়েছে বলেও খবর করা হলো। পাবলিক সেটাই খেয়ে নিল। ভাইরাল হলো। কিন্তু দেখা গেল ঘটনা খুব সাধারণ। ফোনটা মোটেও ঐ সরকারি কর্মকর্র্তার স্ত্রীর ফোন নয়।

ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় নির্বাচক সুজন বিদেশে গিয়ে ক্যাসিনো খেলেছেন কি খেলেননি, ছবি তুলে প্রচার করে দেওয়া হলো। আসলে মানুষ তক্কে তক্কে আছে এমন খারাপ কিছু গ্রহণের জন্য। অর্থাৎ এগুলোই এখন স্বাভাবিক ঘটনা। কাউকে বিশ্বাস নেই।

ভিআইপি আসবেন বলে ফেরি বন্ধ করে রাখা হলো। ওদিকে অসুস্থ এক কিশোরের এ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকল। সে অবস্থায়ই প্রাণ গেল তার। খবর হলো। পাবলিক সেটা খেলো। এখন পর্যন্ত খবর হচ্ছে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ সেদিন আদৌ কোনো ভিআইপি সেই ফেরি পার হয়নি।

দোষটা আসলে কাদের? দোষটা সার্বিক পচন ধরা সমাজের। অসুস্থ হিট সিকার কিছু সাংবাদিক পিলে চমকানো শিরোনাম খুঁজছেন, পিলে চমকানো ঘটনা তৈরি করছেন। ক্রমাগত দুর্নীতিতে ছেয়ে যাওয়া সমাজের মানুষ বেড়ে যাওয়ার কারণে যে কারো নামে যে কোনো কিছু বললেই মানুষ সেটাকে প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্বাস করে নিচ্ছে। বিশ্বাস করবেই না কেন? নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলে অন্যের উপর কি বিশ্বাস রাখা যায়? আর পুরো সমাজটাতো এমনই হয়ে গেছে। মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। ঠকলে কার বিশ্বাস ঠিক থাকে।

এই অবিশ্বাসে ভরা সমাজের এখন ধ্বংসের পালা। সামান্য ঘটনা থেকে বড় বড় কাণ্ড ঘটতে থাকবে এখন। অসুস্থ খানা খেয়ে হজম করা মানুষের উপর এসব বিষের ক্রিয়া তো কোনো না কোনোভাবে হবেই। ইমান-বিশ্বাস গেছে, মানবতা অনেক আগেই বিদেয় নিয়েছে। এখন মানুষ শুধুমাত্র একটা জীব হিসেবে টিকে আছে। ভয়ানক ক্ষমতাসম্পন্ন এত জীব- জানোয়ার সুস্থভাবে টিকতে পারে না। এরা কামড়াকামড়ি করবেই। এটাই স্বাভাবিক।