বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

কালো সূর্যের কালো রাতে কালো বন্যা

রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের দেশকে বিভক্তির শেষপ্রান্তে টেনে এনেছে সন্দেহ নেই। এই টানাটানির ফল এখন আমদের চোখের সামনে। গোটা দেশ ডুবে আছে পানির নীচে। মরণঘাতী মশার কাছে মানুষ পরাজিত। দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন কোন খবরই না। ছয় মাসের শিশু হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণের সাথেও আমরা খাপ খাইয়ে নিচ্ছি। কোথাও এমন কোন খবর নেই যা নিয়ে মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে। জীবনের সব সঞ্চয় নিঃশেষ করে পিতা তার সন্তানকে পাঠাচ্ছে বিদেশ। সে ভূমধ্যসাগরে লাশ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। একটু সচ্ছলতার আশায় স্বামী তার স্ত্রীকে পাঠাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। ওখানে ওরা আরব ধনকুবের হাত লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, ধর্ষিত হচ্ছে মধ্যযুগের ক্রীতদাসদের মত। এমিড এভ্রিং থিং, আমাদের রাজনীতিবিদের মুখে নির্বিবাদে চলছে মিথ্যাচারের জোয়ার।

ডেঙ্গু নাকি মিথ্যা… তাতেও কি বিরোধীদলের হাত আছে
বন্যার খবর নাকি অতিরঞ্জিত
উন্নয়নের মহাসড়কের কাহিনী নাকি সঠিকভাবে প্রচারিত হচ্ছেনা।

কিন্তু হায়! দিনশেষে একদিনেই নাকি ২৭ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে যায় শেয়ার মার্কেট হতে। হবে হয়ত এটাও বিরোধী দলের মিথ্যাচার। তবে একজন বিনিয়োগকারী যার ক্ষতি হয়ে গেল, তাকে কি গেলানো যাবে মিথ্যাচারের এ বিষ?

সুশাসনের অভাব এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষ খুন করা হচ্ছে কেবল রাজনৈতিক মতভেদের কারণে। ক্ষমতার ডানায় ভর করে শিশুদের গলা কাটছে। পুলিশ ঘর হতে উঠিয়ে নিচ্ছে মা-বোনদের। মফস্বলের একজন সাংবাদিক আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানালেন তাদের অবস্থা। সরকারী দলের কেউ খুন করলে থানা হতে ফোন আসে তাদের কাছে। আসে খবর ছাপালে বাবার নাম মনে করার স্মৃতিশক্তি কেড়ে নেয়ার হুমকি।

ছবিটা দেখুন! কক্সবাজারের চকোরিয়ার এক ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কর্মী অস্ত্র উঁচিয়ে নিজের দম্ভ প্রকাশ করেছে ফেইসবুকে। ক্যাপশন ছিল, সাবধান, ডাইরেক্ট একশন হবে। এই একটা ছবিই তুলে ধরে বাংলাদেশের সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক অবস্থা। রাজনৈতিক ক্ষমতা মানুষকে কতটা পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে এই ছবি তার নিষ্ঠুর প্রমাণ। ইউনিয়ন পর্যায়ের ছাত্রের কাছে যদি এ ধরণের অস্ত্র থাকতে পারে, তাহলে আন্দাজ করা যায় আরও উপরের নেতাদের অবস্থা। গোটা দেশ এখন একটা এখন ভাগাড়। জাতি এখানে লাশ হয়ে শুয়ে আছে। ক্ষমতাসীনরা এ লাশ চেটেপুটে খাচ্ছে।

ডেঙ্গু হতে বাঁচতে চান? – তাহলে আগে জবাবদিহিতা চান। জবাবদিহিতা চান? – তাহলে আগে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করতে শিখুন। আইনের শাসন চান? – তাহলে ছবির এ নেতাকে দিয়েই শুরু করতে বলুন।

সংখ্যাগুরুদের উপর সংখ্যালঘুর অত্যাচার! ইতিহাস হতে নেয়া

সংখ্যাগুরুদের উপর সংখ্যালঘুর অত্যাচার! ইতিহাস হতে নেয়া…

প্রিয়া সাহার কাছে আমি বিভিন্ন কারণে কৃতজ্ঞ। দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের বিরুদ্ধে লেখালেখি দিয়েই আমার ওয়াচডগি শুরু হয়েছিল। সাল ফাল মনে নেই। পুরানা পল্টনে বোনের বাসায় থাকি, চাকরি করি ধানমন্ডি নতুন ২ নাম্বার রাস্তায়, সোবহানবাগ মসজিদটার পাশে। চাকরি করতে গিয়ে আবিস্কার করি কর্পোরেট দুনিয়ায় আমার ইংরেজী জ্ঞান যথেষ্ট নয়। শুরু হয় ইংরেজী শিক্ষার শাটল মিশন। ভর্তি হই নটেরডেম কলেজের ইংরেজী শর্ট কোর্সে। বাসা হতে তালাক দেই বাংলা পত্রিকা। টিভি চ্যানেলে কেবলই ইংরেজী। নিজের সাথে নিজেই কথা বলি, তাও ইংরেজিতে। নিজের জ্ঞান যাচাই করার জন্যে এনায়েতুল্লাহ খানের সাপ্তাহিক একটা ইংরেজি পত্রিকায় পাঠকের কলামে দু’চার লাইন লেখা শুরু করি। ওখানেই জানতে পারি বিডিআরের রিটায়ার্ড জেনারেল সি আর দত্ত ঐ চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠনের প্রধান। তিনি এক কলামে লিখেছেন সরকার এখুনি ব্যবস্থা না নিলে দেশ খুব শীঘ্রই হিন্দুশুন্য হয়ে পরবে। পাঠকদের মন্তব্যের কলামে কাঁচা ইংরেজিতে আমি লিখলাম, এ দেশের মাটি হতে একজন মানুষও যদি চলে যায় তা হবে ব্লেসিং, রিগার্ডলেস অব হিন্দু অর মুসলিম। ট্রাম্পের মত বলেছিলাম, ভাল না লাগলে হিন্দুদের এ দেশ হতে চলে যাওয়াই ভাল। তাতে আর যাই হোক, দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। আর যাই কোথা! মৌমাছির মত আওয়ামী লীগাররা ঝাঁপিয়ে পরল আমার উপর। বিশেষকরে সংখ্যালঘুর দাবিদার হিন্দুরা। বোকার মত আমার লেখায় ঠিকানা দিয়েছিলাম। হুমকি ঘরের দরজায় এসে পর্যন্ত নক করল। রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কটা দিন লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। প্রিয়া সাহার কারণে আজ এসব নিয়ে মুখ খুলতে পারছি।

১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের ন’মাস। অনেকের মত আমরাও নিরুর্দ্দিষ্ট হয়ে যাই নিজ শহর ছেড়ে। চলে যাই দাদাবাড়ি। এলাকাটা ছিল অনেকটা দ্বীপের মত। কাছের বাজারে যাওয়ারও একমাত্র রাস্তা ছিল খেতের আইল ধরে হাঁটা। আমাদের মফস্বলের আপন শহর ততদিনে চলে গেছে রাজাকার সহ পাকিস্তানিদের দখলে। আমাদের বসতবাড়ির অর্ধেক উড়ে গেছে ওদের আর্টিলারির আঘাতে।

মার্চ হয়ে এপ্রিল, এভাবে জুন পর্যন্ত কাটিয়ে দেই গ্রামের বন বাদারে ঘুরে। সখের বশে ফুফাতো ভাইদের সাথে মিলে কবুতরের ব্যবসা শুরু করি। মাঝে মধ্যে ফসলের মাঠে খাবার নিয়ে যাই কৃষিকাজে নিয়োজিত কামলাদের জন্যে। গরুর কাধে জোয়াল চড়িয়ে কিভাবে চাষাবাদ করতে হয় তার তালিম নেয়ার চেষ্টা করি। এক বিষ্যুতবার হাট হতে ফিরি মহাখুশি হয়ে। কবুতর ব্যবসায় বেশকিছু লাভ করেছি আমি। এখানেই ঘুরে যায় আমার জীবন।

এক সকালে তৈরী হচ্ছি গঞ্জের ওপারে রেলষ্টেশন যাব বলে। ওখানে সস্তায় ঘোড়ায় চড়া যায়। বাবা গম্ভীর গলায় ডাক দিয়ে বললেন, আমি শুনেছি তোমার ব্যবসার কথা। মনে হচ্ছে মাথা আছে তোমার। চলো আমার সাথে, বাজারের ব্যবসায় মন দেবে। বাবাকে না করার মত ইহজগতে কেউ ছিলনা। আমিও পারিনি। সেই হতে প্রতিদিন সকালে রওয়ানা দেই গঞ্জের দিকে। ওখানে আমাদের হরেক রকম ব্যবসা। বাবার সাথে যাই, আবার রাতে ফিরে আসি। দুপুরের খাবার বাড়ির কামলা দিয়ে আসে। উপভোগ করতে শুরু করি নতুন জীবন। এভাবেই চলতে চলতে একসময় বর্ষা আসে। ডুবে যায় গ্রাম-গঞ্জের মাঠঘাট। এখন আর হেঁটে যাওয়া যায়না, যেতে হয় নৌকায় চড়ে।

একদিন লাল রঙের ক্ষয়িষ্ণু একটা বাড়ির সামনে এসে নৌকার মাঝিকে থামতে বললেন বাবা। আমি একটু অবাক হলাম। এ পথে অনেকদিন ধরে আসা-যাওয়া করছি বাবাকে কোনদিন মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেও দেখিনি বাড়িটার দিকে। মনে হল কিছু একটা হতে যাচ্ছে।

নৌকাটা ঠিক বাড়ির মুল ফটকের সামনে এসে থামল। বাবা আমার দিকে তাকালেন। ভয় পেয়ে গেলাম। গ্রামের দুষ্ট একটা মেয়ের সাথে কিছু একটা হয়ে গেছে আমার, এমন একটা অলীক তথ্য বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ভাবলাম হয়ত কিছু শিক্ষা দেবেন। না, তার ধারে কাছেও গেলেন না। কিছু কথা হলো…
– তুমি কি বাড়িটা চেন? কখনো ভেতরে গেছ?
– জমিদার বাড়ি হিসাবে চিনি। ভেতরে যাওয়া হয়নি কোনদিন। ওখানে নাকি শেয়াল-কুকুরদের বাস।
– হ্যা, ওটা জমিদার বাড়ি নিশ্চয়। ওখানে এখন কেউ থাকেনা। সবাই ভারতে চলে গেছে। একটা দারোয়ান আছে পাহাড়ার জন্যে।
– আমরা কি এখন ভেতরে যাব?
– না, তা দরকার নেই। এখানে একটা আইল আছে। শুকনার দিনে দেখা যাবে, এখন ডুবে আছে। এই আইলটা ধরে প্রতিদিন আমি স্কুলে যেতাম। জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয় আইল। নিয়ম ছিল কোন মুসলমান বাড়ির সামনে জুতা পরে হাটতে পারবেনা। এখানে আসার আগে জুতা হাতে নিতে হবে।
– এ কেমন আইন? একই দেশে একদল জুতা পরবে, অন্যদল পরতে পারবেনা?
– বাবা আকাশের দিকে তাকালেন। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মনে হল একদলা কষ্ট বাইরে আনার চেষ্টা করছেন।
– তা আপনারাই বা খুলতে রাজী হতেন কেন?
– এটাই ছিল নিয়ম। শুধু তাই না, স্কুলে আমাদের বসতে হতো মাটিতে পাটি বিছিয়ে। আর হিন্দুদের জন্যে কাঠের টুল। মাঝে মধ্যে আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে ওরা ধমকাতো ছেলেকে ইস্কুলে পাঠাচ্ছে বলে। খাজনা বাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিত। লোভ দেখাতো বিভিন্নভাবে। বাবা ভয় পাননি। বরং আরও উৎসাহ দিয়ে আমাকে ইস্কুলে পাঠাতেন।
যেদিন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হয়ে গেল, প্রথম রাতেই জমিদার বাড়ির সবাই প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেল। ভারত বিভক্তির আভাষ আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিল ওরা। তাই গোপনে সহায় সম্পত্তিও বিক্রি শুরু করেছিল। ওরা আমাদের প্রজা হিসাবে মনে করত। আমাদের লেখাপড়া ছিল তাদের অন্যতম প্রধান শত্রু।

বাবার একাডেমিক শিক্ষা কতদূর পর্যন্ত গড়াতে পেরেছিল তা আমরা কেউ জানতে পারিনি। যে শিক্ষাই থাক তা নিয়েই তিনি ঐ আমলে পার্লামেন্টে বসেছিলেন। ৭১’এ ঐ দিনের পর আর কোনদিন বাবার মুখে জমিদারদের কথা শুনিনি।

প্রিয়া সাহা বিলুপ্ত হিন্দুদের হিসাব দিতে গিয়ে আগের ইতিহাস টেনেছেন। ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন সেই বৃটিশ আমল হতে আমরা তাদের উচ্ছেদ করছি। কিন্তু এই সাহা উচ্ছেদ কাহিনীর সবটা তুলে ধরেননি হয়ত নিজদের কালো ইতিহাস আড়াল করার জন্যে।

মোরাল অব দ্যা স্টোরি ইজ, অত্যাচারীরা এভাবেই বিলুপ্ত হয়। ইতিহাস তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় এবং তারা সে পথে হাঁটতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের হিন্দুদের সবাই অত্যাচারী ছিল তা সত্য নয়। কিন্তু অনেকেই ছিল। এবং এই তারাই ধর্ম ভিত্তিক বিভক্তির প্রথম বীজ বপন করেছিল এ দেশে।

জেরুজালেম, ২৫ শে জুলাই। ২০১৯ সাল।

খোলাচিঠি তাসলিমা তুবাকে উদ্দেশ্য করে


তাসলিমা তুবা।

তারিখ: বৃহস্পতিবার, ১০ শ্রাবণ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।

প্রিয় তাসলিমা তুবা,
কেমন আছো মামনি? আশা করি মহান আল্লাহ তোমাকে বেশ ভালো রেখেছেন তোমার স্বজনদের মাধ্যমে।

আমি জানি তোমার হৃদয়ের মাঝে স্বজন হারানোর বেদনা নেই। থাকবে কি করে,তুমি তো এখনো খুব ছোট্ট, তুবা। তোমার মায়াবী চোখগুলো যখন দেখি এক আকাশ যন্ত্রনায় বিদ্ধ হই, জানো?অশ্রুসিক্ত চোখের পলক পড়তেই গাল ভিজে যায় আমার। বুকে চিরে নেমে আসে হতাশার দাবানল। অজস্র প্রশ্নরা ডানা মেলতে শুরু করে। জানো তুবা, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন দেশে বাস করি, কি আমার পরিচয়, কি আমার অধিকার?

কিন্তু কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না। সবার হৃদয় ছেয়ে আছে বিভীষিকা ঘোর। কারণ পরিস্থিতি। এই শহরে না আছে শান্তি, না আছে তুষ্টি। চারদিকে কেবলই ভোগান্তি। যানজট থেকে শুরু করে সব কিছুতেই ভোগান্তি। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের মূর্খতা। আর এই মূর্খতার দরুন মানুষ মানুষকে জবাই করে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে,লাঠি-পেটা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে। যেমনটা ঘটেছিলো তোমার মায়ের সাথে। একজন মহিলা যে নিজেও মা, যে তোমার মত ছোট্ট একটা তুবারও মা সে তোমার মাকে “ছেলে ধরা/কল্লা কাটা” বলে জনতাকে ক্ষেপিয়ে তোলে এবং জনতা কি নৃশংসভাবে তোমার মাকে হত্যা করে সেটা আর নাইবা বললাম। কিন্তু লক্ষ্য করেছো কি মানুষ একটা বারের জন্যও তোমার মায়ের আসল পরিচয় জানতে চায় নি। তাদের যা বলা হয়, একজনের কাছ থেকে যা শুনেছে তাই বিশ্বাস করেছে। এটা নিঃসন্দেহে একটা মূর্খতা।

তুমি নেপোলিয়ান বোনাপারট সম্পর্কে জানো, সে বলেছিলো, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব। জানো তুবা, আমাদের দেশে অধিকাংশ মায়েরা আজও অশিক্ষিত, মূর্খ। মূর্খতা তাদের এমনভাবে গ্রাস করে রেখেছে যে, তারা আজও বাড়ি করতে বাড়ির প্রথম স্তম্ভে মুরগী জবাই করে তাতে রক্ত ঢেলে দেয়, কিংবা অনেকে স্বর্ণ গেঁথে দেয়। তারা মনে করে এটা না করলে অশুভ শক্তি এসে তাদের গ্রাস করবে। যেখানে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ ও আমাদের রাসূল (সঃ) এ বিষয়ে কোন কিছুই বলেন নি। অথচ ভন্ড হুজুরদের কথায় অন্ধবিশ্বাস করে এসব কাজগুলো করছে যা মূর্খতার পাশাপাশি ভয়ংকর পাপ। শত শত বছর ধরে তাদের সন্তানসন্ততিরা তাই করে আসছে। এগুলো নিঃসন্দেহে কুসংস্কার। আর তোমার মা এই কুসংস্কারের বিশ্বাসী মূর্খ জনতার হাতে হত্যার শিকার হয়েছে।

যারা তোমার মাকে হত্যা করেছে তাদের হয়তো বিচার হবে না। কারন তোমার মত অনেক তুবা এভাবে মা-বাবা হারিয়েছে। সেই স্বজনহারা তুবাদের এতিমকারী পশুদের বিচার আজও অধরাই থেকে গেছে। মন খারাপ করো না মামনি। এটা আমাদের দেশে স্বাভাবিক। দেশে যখন দেখবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে তখন মন খারাপের পরিবর্তে ভেবে নিও, এটা বাংলাদেশ।

তোমার সামনে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। আমি মনে প্রাণে চাই তুমি অনেক বড় মানুষ হও। একজন আদর্শ শিক্ষিকা হবে। তোমার দায়িত্ব থাকবে কেবল মেয়েদের প্রতি। কারন মা কেবল মেয়েরাই হতে পারে কোন ছেলে নয়। তাদের বলে দিও, “ঘর তৈরি করতে, সেতু তৈরি করতে মানুষের মাথা লাগবে কিংবা মোরগের রক্ত লাগবে কিংবা স্বর্ণের চেইন দিতে হবে ইত্যাদি” আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহ’ম্মদ (সঃ) এটা আমাদের শিখান নি। বরং তিনি বলেছেন, তোমরা আমার বিষয়ে বাড়াবাড়ি করো না। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহন করো এবং যা নিষেধ করে তা থেকে দূরে থাকো। কাজেই রাসূলের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা অন্যায়। যারা রাসূলের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করবে আল্লাহ তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

তাদের বলে দিও, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন, “দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গীবতকারী”। একজন লোক এসে যদি বলে, ওই লোকটা খারাপ তা যেন বিশ্বাস করে সেই ব্যক্তির ওপর হামলে না পড়ে। কারন অন্যের বিষয়ে খারাপ ধারনা পোষনকারী এবং মানুষের দোষত্রুটি বলে বেড়ানো মানুষদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। এবং তাদেরকে নিক্ষেপ করবেন হুতামায়। মামনি, তুমি কি জানো হুতামাহ কি জিনিস?” হুতামাহ হলো, আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন। যা মানুষের হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে”। সুতরাং তুমি তাদের বলে দিও তারা যেন পরনিন্দা না করে, অন্যের বিষয়ে খারাপ ধারনা মনে না সৃষ্টি করে। কারন খারাপ ধারনা থেকেই তো এসব অযাচিত নৃশংস-বর্বর ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

এটাই হলো আমার কথা। তোমার জন্য উপদেশ মনে করে গ্রহন কোরো। আমি তোমার জন্য মনে প্রাণে দোয়া করি মামনি। আল্লাহ তোমাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুক। দুনিয়া ও বারযাখ এবং আখিরাতে কামিয়াবি করুক। আমীন।ভালো থেকো, মামনি।

ইতি,
একজন অতি সাধারণ মানুষ
মাহমুদুর রহমান।

গুজবে কান না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিৎ

ছেলেধরা গুজবটি এদেশে নতুন কিছু নয়! অনেক পুরানো গুজব। সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। আমার মতো এ গুজব আরও অনেকেই শুনেছে বলে মনে হয়। তবে ছোটবেলা থেকে এপর্যন্ত স্বচক্ষে কখনো সত্যিকারের ছেলেধরা দেখিনি। কেবল মানুষের মুখে মুখেই শুনে আসছি। সেই ছেলেধরা গুজব আবার নতুন করে এই বঙ্গদেশে শোনা যাচ্ছে। যা গত রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে ছেলেধরা, মাথাকাটার গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা যায়, হয়তো ফেসবুকের মাধ্যমে এই গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

বর্তমানে যে কোনো গুজব রটানোর সহজ উপায় হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নামের ফেসবুক। এর কারণ হলো, ধনীর দুলাল থেকে শুরু করে বস্তির ছেলে পর্যন্ত সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। দেশের যেকোনো জরুরি সংবাদ জানতে কাউকে খবরের কাগজ সংগ্রহ করতে হয় না। ফেসবুকে লগইন করার সাথে সাথেই ফেসবুক নিউজ ফিডে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার খবর চোখের সামনে বিড়বিড় করতে থাকে। এর সাথে ফেসবুক বুন্ধুদের আপলোড করা খবরতো থাকেই। একারণেই গুজব রটনাকারীরা বর্তমান যুগের জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে গুজব রটানোর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাঁরা গুজব রটনাকারীরা অতি সহজে আজগুবি গাঁজাখুরি মিথ্যে খবর ফেসবুকের টাইমলাইনে পাবলিক করে দেয়। ফেসবুকে পাবলিসিটি হওয়া সেই খবর মুহূর্তেই অন্যসব বন্ধুরা শেয়ার করতে থাকে। এরপর খবরটি গুজবে পরিণত হয়ে ভাইরাল হয়ে যায়। গুজব রটনাকারীরা পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা প্রয়োজন এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করে থাকেন।

ছেলেধরা, গলাকাটা গুজব যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লো, তখন সরকারের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে জনগণকে নানাভাবে সজাগ করেও দেওয়া হয়েছিলো। যা এখনো দেশের জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজে, টেলিভিশনের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই এবিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও আমাদের সুষ্ঠু মন-মানসিকতার অভাবে, সত্যমিথ্যা যাচাই বাছাই না করার কারণে; বিভিন্ন স্থানে কেউ-না-কেউ ছেলেধরা গুজবে পড়ে গণপিটুনির শিকার হচ্ছে। এরমধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।

বর্তমানে ছেলেধরা গুজব হলো এক আতঙ্কের নাম। যেই আতঙ্ক এখন বাঙলার প্রতি ঘরে ঘরে। প্রতিটি গ্রামে। প্রতিটি শহরে, হাটবাজারে। বর্তমানে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ প্রতিপক্ষকেও ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকদিনের মনের জ্বালা মেটাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনেকে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মানুষ মারার ঘটনা। যা একরকম হীন মন-মানসিকতার পরিচয় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনিতেই আমরা হুজুগে বাঙালি, গুজবে বিশ্বাসী। শোনা কথায় বেশি দৌড়াই। যেমন: চিলে কান নেওয়ার মতো ঘটনা। অথচ নিজের কানটা আছে কি-না, তা কেউ একটু হাত দিয়ে দেখে না। গুজবে বিশ্বাসীরা চিলকে ফলো করে চিলের সাথেই দৌড়ে মরছে।

গুজব শুধু গুজবই। এর আগেও একবার গুজবের জিকির উঠেছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত এক লোককে চাঁদে দেখা যাচ্ছে। সেই গুজব এমনভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, তা আর লিখে শেষ করা যাবে না। চাঁদে দেখা গুজবের সময় দণ্ডিত লোকটির ভক্তবৃন্দদের মুখে শুধু শোনা যেত, হায় চাঁদ হায় চাঁদ, হায় নেতা, মহান নেতা। গুজবের উদ্দেশ্য ছিল দণ্ডিত ব্যক্তি অনায়াসে জেল থেকে মুক্ত করা। ভক্তরা মনে করেছিল হয়তো গুজবে বিশ্বাস করে সরকার তাঁদের নেতাকে মুক্ত করে দিবে। কিন্তু তা আর হয়নি। অথচ প্রতিদিন সন্ধ্যাকাশে চাঁদ মামার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে কতো মানুষের যে ঘাড়ব্যথা হয়েছিল, তা এদেশে সকলেই জানে। সেই চাঁদ মামার গুজবের ইতি টানতে-না-টানতেই ইদানীংকালে শুরু হয়েছে কল্লাকাটা, মাথাকাটা, ছেলে ধরার মত গুজব। বাঙলায় একটা কথা আছে, ‘যাহা রটে, কিছু-না-কিছু ঘটে’। কিন্তু এ গুজব শুধু রটানোই হচ্ছে। রটনার সাথে ঘটে যাচ্ছে মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই দেশের ক্ষতিসাধন করতে ইচ্ছুক কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে দিয়ছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা প্রয়োজন। এ ধরনের গাঁজাখুরি গুজব ছড়ানো এবং এরপর ছেলেধরা বা কল্লা কাটা বা গলাকাটা সন্দেহে গণপিটুনিতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে, তা কোনোভাবে বাঙলার মানুষ মেনে নিতে পারছে না। যারা এ ধরনের বেআইনি কাজ করছে, প্রশাসনের উচিত দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। পাশাপাশি দেশপ্রিয় মানুষেরও উচিৎ হীন মন-মানসিকতা পরিহার করা। গুজবে কান না দেয়া। আর আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে, সরাসরি ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা। প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় খবর দিয়ে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা।

একদিন সময় আসবে রেণুরও!


তাসলিমা তুবা। মায়ের অপেক্ষায় ব্যর্থ প্রহর গুনছে।

স্কুল-কলেজে চেয়ারে পায়ের ওপর পা রেখে
বসে থাকা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গুজবে বিশ্বাসী
প্রধান শিক্ষক এবং তার শিক্ষকমণ্ডলী,
তোদের সবার মুখে কর্দমাক্ত জুতা মারি।

কথা ছিলো জাতিকে আলো দেখাবি
কুসংস্কার থেকে বের করে শুদ্ধ করবি,
কিন্তু কি করে ওহে অগা,
তোরা নিজেরাই তো অন্ধকার লালনকারী।

তোদের মূর্খতার দরুন হুজুগে জনতার হাতে
একজন নিরপরাধ মা হয়েছে বলির পাঁঠা,
এতিম হয়েছে দুই শিশু তাসফিক-তুবা
মুলতঃ তোরাই তো এ কাজের মদদদাতা।

হে শিক্ষিত সমাজ শোন গভীর মনোযোগে
পার পেয়ে যাবি খুব সহজে তাই ভাবছিস,
একদিন সময় আসবে রেণুরও
সেদিন আত্মকর্মের কথা স্মরণ করিস!

নপুংসক জাতির অহংকার

ভারতীয়দের চোখে মুখে তাকানো দায়। তাদের প্রোফাইলগুলো থেকে ঠিকরে যেসব ছবি বেরুচ্ছে তা আমাকে কোনোভাবেই শান্তি দিচ্ছে না। ভারতীয়দের আমি আগাগোড়াই হিংসে করি যদিও এটা খারাপ অর্থে বোঝায় না। স্কুলে থাকতে অনুপ নামের একটা ছেলে ছিলো ক্লাসে। সত্যিকার অর্থে ফটোগ্রাফিক মেমোরী বলতে বোঝায় তার তাই ছিলো। তখন বাংলা ইংলিশ র‌্যাপিডে গল্প মুখস্থ করার চল ছিলো এবং দ্বিতীয় ও বার্ষিক পরীক্ষায় এসব গল্প লিখতে বলা হতো। আমি তো এমনি ছিলাম ১০ লাইনে গল্প শেষ করে দিতাম পুরো ৬ পাতার উপন্যাস। কিন্তু অনুপ যখন ক্লাশে দাড়িয়ে তোতাপাখির মতো দাড়ি কমা পুঙ্খানুপুঙ্খ ঠিক রেখে অনর্গল বলতো তখন হিংসে না করে উপায় কি! পরীক্ষার রেজাল্টের দিন যখন পিঠে ছালা বাঁধার চিন্তা করতাম বাসায় মাইরের যন্ত্রনা থেকে বাঁচবার জন্য তখন ছেলেটা পারফেক্ট স্কোর নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটতো। এরকম হিংসে করি ভারতীয়দের। তাই যত প্রোফাইল আছে সব ব্লক, ইমোর নম্বরও মুছতে শুরু করি যাতে বজ্জাত পোলাপানের হিস্টোরি দেখতে না হয়।

আজ তাদের মহা আনন্দের দিন যে চাঁদে অত্যাধুনিক রোবট পাঠিয়েছে এবং পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে তারা এই কাজটি করেছে। মঙ্গলের বুকে যখন চীন; ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবেধন এসা নিজেদের রোবটযান হুমড়ি খেয়ে ধ্বংস হয়, নাসা যেখানে তিনবারের চেষ্টায় সফল হয় সেখানে এই ব্যাটারা প্রথম চেষ্টাতেই সফল তাও সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তিতে।

আপনি হয়তো মনে করতে পারেন আমি নিশ্চয়ই খারাপ মানুষ। নিজের ব্যাপারে আমি বারংবারই বলি যেহেতু আমার ওপর ওহী নাজিল হয় নাই, তাই আমি মহাপুরুষ হবো কোন দুঃখে! নইলে দেশের পত্রিকা থেকে শুরু করে ফেসবুক প্রোফাইলের প্রায় অশিক্ষিত শিক্ষিত সবাই পড়ে আছে প্রিয়া সাহার বদনাম আর মাদ্রাসায় নিজের সন্তান কিভাবে তাদের পুটু রক্ষা করবে সেটা নিয়ে গভীর গবেষনায় লিপ্ত।

এখন ফিরে আসি অনুপ প্রসঙ্গে। অনুপ বারংবার প্রথম হলেও দ্বিতীয় হতো রাজকুমার। তার ফটোগ্রাফিক মেমোরী হলেও অনর্গল বলতে গেলে তাকে দু তিনবার থামতে হতো। তার শ্বাসকষ্ট ছিলো না যে দম নিতে হবে। কারন সে ক্রিকেট ফুটবলে স্কুলের টিমে প্রথম সারিতেই থাকতো। তাই বলা যায় তার বুদ্ধিমত্তা অনুপের থেকে কিছুটা কম। আর তৃতীয় হতো আমাদের সবেধন মুসলমানের বাচ্চা মাহী ওরফে আমিনুল ইসলাম বেগ। যারা পত্র পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা হয়তো এই নামটা শুনে থাকবেন।

তখন ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কারনে ভারতের মর্দে মুমিনরা তাদের ঈমানী কাজ টিকিয়ে রাখতে দেশের সব মন্দির ভাঙ্গা শুরু করেছিলো। একদিন ছোট ফুপা বোয়ালমারী থেকে সকাল বেলা বাসায় আসলেন। আমি তো ছোট ফুপিকে দেখে বেজায় খুশী। ছোটফুপা রাতে আমাদের সাথে খাবার খেতে খেতে বললেন বোয়ালমারীর সব মন্দির ভাঙ্গা শেষ। এখন ফরিদপুরে কিছু বাকি আছে। তাই ফরিদপুরের ইমাম ও মাদ্রাসার নেতা সহ রাজনৈতিক নেতারা আশেপাশের অঞ্চল থেকে লোক ডেকে এনেছেন যাতে করে ফরিদপুরের মতো বিশাল এলাকার হিন্দুদের ঘর বাড়ী মাদ্রাসাগুলো ভাঙ্গা হয়। এটা শুনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আমি তখন বললাম ওরা কি দোষ করছে? আকাম তো করছে ইন্ডিয়া। আমাকে ফুপা ধমক দিয়ে বললেন ঈমানী দায়িত্বে কখনো পিছুপা হতে নেই। যদিও বাবা পুলিশী ভায় দেখালেন। তখন ফুপা যেটা বললো আরও ভয়ংকর। তারা নাকি ফরিদপুরের ওসির বাসায় কথা বলে এসেছেন। তারা প্রোটেকশন দিবে।

সে যাত্রায় অনুপদের বাড়ী বেঁচে গেলেও তাদের এলাকার মন্দিরটি রক্ষা পায়নি। অনেকদিন সেটা খালি জায়গা হিসেবে থাকলেও ২০০৩-৪ এর দিকে সেখানে বিশাল একটা চক্ষু হাসপাতাল করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভালো উদ্যোগ তাই না? কারন ঐ জমির মালিক সেই মন্দির ভাঙ্গার সময়ই ইন্ডিয়া ভেগেছে ভিটে বাড়ী না বিক্রি করেই। তার পরের বছর হিন্দু শিক্ষক কল্যান স্যার অসুস্থ থাকায় অনুপ রাজকুমারদের ইসলাম ধর্মের ক্লাশে আমাদের সাথেই বসে থাকতে হয়। এরকম মাঝে মধ্যেই হতো, কল্যান স্যার বড্ড ফাঁকিবাজ ছিলেন। তো নন্দাইলের ইউনুস ওরফে আমাদের ইসলাম শিক্ষার হুজুর হঠাৎ বইয়ের পড়া না ধরে ওয়াজ শুরু করলেন। নবী মোহাম্মদের গুন গান। সে কত ভালো মানুষ তাংফাং। যদি আমরা কয়েকজন মিলে খাতায় কাটাকুটি খেলছিলাম কিন্তু হঠাৎ ফার্স্ট বেঞ্চে অনুপ কি যেনো বলে বসলো এবং ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো। পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলে বলে, “অনুপ কইছে ইয়া মোর দ্বীনের নবি, তোমার বস্তার মধ্যে কি!” এটা শুনে নিজেই সেই হাসিতে যোগ দিলাম। হুজুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি পুরো কালো হয়ে গেছে। বেঞ্চে দুটি বাড়ি দিয়ে ক্লাশ শেষ করে চলে গেলেন।

এরপর পরের তিন দিন অনুপ ক্লাসে আসে নাই। বাবাকে এসে বাসায় বললে তিনি বললেন খবর নেবেন। বাবা খবর নিতে গিয়েছিলেন কিনা জানি না তবে পরের সপ্তাহে অনুপ আসলে সে প্রায় নিশ্চুপ ছিলো। কয়েকটা ক্লাস করেই চলে যায়। তাকে আর দেখিনি। অনেকদিন পর বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলে ওরা ইন্ডিয়া চলে গেছে। তবে অল্প কিছুদিনের জন্য।

সে অল্প কিছুদিন এখনো ফুরোয় নি।

বাংলাদেশের ১২৪এ ধারা অনুযায়ী প্রিয়া সাহা রাষ্টবিরোধী কাজ করেছেন কারণ তিনি এমন কিছু কথা এমন জায়গায় বলেছেন যেটা ওখানে বলা উচিত ছিলো না। তবে আমরা সকলেই জানি সেগুলো কতটা সত্য। বাংলাদেশে মোটেই অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। বিয়ের কাবিননামায় ৫ম অনুচ্ছেদ বাতিলের জন্য যেখানে আদালত বায়তুল মুকাররমের খতিবের কাছে মতামত জানতে চায়, যেখানে রাষ্টের মাথায় টুপি পড়ানো প্লেবয় স্বৈরাচারের মৃত্যুতে সবাই শোক প্রকাশ করে বা মদিনা সনদের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা আলোচনায় আনেন খোদ প্রধান মন্ত্রী সেটা রাষ্ট্র সংঘ হতে পারে না, গনতন্ত্র তো নই, একটা ভঙ্গুর থিওক্রেটিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়।

আরও একটা মজার ব্যাপার যেখানে সুন্নতী কর্ম পালন হিসেবে মাদ্রাসার হুজুরগুলো শিশুদের ধর্ষন করে সেই ধর্ষন থেকে বাচতে সেই সুন্নতি কাজ এবং শিশুকামী অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে শিশুদের লোহার ডাইপার (রূপকার্থে) পড়ানোর কথা প্রোফাইলে ভেসে উঠে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবার স্ট্যাটাসে তখন ভারতীয়দের ইসরার চন্দ্রাভিযান দেখলে হিংসা কেন করবো না বলেন একটু?

উল্লেখ্য অনুপ ভারতে গিয়ে ইকোনমিক্সে পাশ করে সেখানকার কাস্টমসের ট্যাক্স অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে এবং আমাদের আমিনুল ইসলাম বেগ ২০১৫ সাল থেকে জেল খানায় তার জঙ্গি কার্যক্রমের কারণে কারাভোগ করছে প্রায় বিনা বিচারে বা আইনী মার প্যাঁচে। আমিনুল ইসলাম বেগ নামে গুগল করলেই বেরিয়ে পড়বে আমাদিয়া ইশতিশাদী বা ফিদায়ী অভিযানের মতো ফরজে কিফায়া পালন করতে গিয়ে বেচারা কিভাবে জেলে পচছে!

আমাদের মতো ধর্ম প্রাণ নপুংসক বাঙ্গালীদের বরং সেটা নিয়েই আক্ষেপ করা উচিত!

হ্যাপী ব্লগিং।

অসুস্থ এক সমাজে আমাদের বসবাস

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে গত কাল সারাদেশে ২৭টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছে ৪৩ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি এমন ঘটনা হয়ত আরও অনেক।

মানুষ নিজের বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হতেও ভায় পাচ্ছে কারণ বাচ্চাটা যদি কান্নাকাটি শুরু করে তাহলেই বিপদ। অতি উৎসাহী জনতা যদি সন্দেহ করে বসে যে আপনি ছেলে ধরা বা গলাকাটা ওয়ালা তাহলেই শুরু হয়ে যাবে গণপিটুনি।

কাঁধে একটা বস্তা, বস্তাটা একটু ফুলে আছে। ব্যাস, আপনি ছেলে ধরা। শুরু হবে গণপিটুনি।

আপনার কথাবার্তা অসংলগ্ন, সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছেন, ব্যাস আপনি ছেলে ধরা।

কোনো একটা বাচ্চাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন- বাবু, তোমার নাম কী? কোন ক্লাসে পড়ো, বিস্কিট খাবা? আপনি আর ওখান থেকে ফিরে আসতে পারবেন না।

এক কথায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মনে। সুন্দরবনে গেলেও মানুষের মনে এত ভয় তৈরি হবে না যতটা ভয় জনারণ্যে তৈরি হচ্ছে। কারণ মানুষগুলো পশুর চেয়ে হিংস্র আর নির্বোধ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- কেন এমন হচ্ছে?

হুজুগ এবং গুজবের পেছনে প্রধান কারণ হলো সাধারণ মানুষের সীমাহীন অজ্ঞতা, যুক্তিহীন মনোভাব, চরম অন্ধত্ব। এগুলোর সাথে যখন হিংস্রতার যোগ হয়েছে তখন ঘটনা ঘটছে গণপিটুনির, এমনকি বহু মানুষ মারাও যাচ্ছে গণপিটুনিতে।

মানুষের মধ্যে এগুলো একদিনে তৈরি হয় না। যখন কেউ জন্মগ্রহণ করে তখন কিন্তু সে পশুর মতোই একটা সাধারণ প্রাণী হিসাবে জন্মগ্রহণ করে। তাকে মানুষ বানানোর জন্য কিছু শিক্ষা দিতে হয়। শিক্ষার মধ্যে ত্রুটি থাকলে সে পরিপূর্ণ মানুষ হবে না, মানুষের সকল গুণ সে পাবে না।

একটা উদাহরণ দিই-

১দিন বয়সের একটা বাঘের বাচ্চা আপনাকে আক্রমণ করবে না, আপনাকে হত্যা করতে পারবে না। এই বাচ্চাটাকে যদি তার বাবা-মা শিক্ষা দেয় তাহলে সে কিছুদিন বাদে হিংস্র হয়ে উঠবে এবং আপনাকে এক মিনিটেই হত্যা করতে পারবে। আবার ঠিক ঐ বাঘের বাচ্চাটাকেই যদি আপনি বাড়িতে এনে ফিডারে দুধ খাইয়ে, নিজ হাতে বিভিন্ন খাবার খাইয়ে বড় করতেন, শিকার ধরার শিক্ষা না দিয়ে আপনার সাথে খেলা করার শিক্ষা দিতেন তাহলে কিন্তু সে বন্য বাঘের মতো হিংস হতো না।— এই যে পার্থক্য, এটা আসলে শিক্ষার পার্থক্য।

মানুষ শিক্ষা পায় কোথা থেকে?

পরিবার থেকে, খেলার সাথীদের কাছ থেকে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে, সমাজ থেকে, শিক্ষকদের কাছ থেকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, টেলিভিশন ও পত্রিকা থেকে, জুম’আর খুতবা থেকে, ওয়াজ-মাহফিল থেকে, সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতি থেকে ইত্যাদি উৎস থেকে সমাজের মানুষগুলো শিক্ষা নিয়ে থাকে। যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে না তারাও কিন্তু উপরে বর্ণিত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। মানুষগুলো যে সকল উৎস থেকে শিক্ষা নিচ্ছে সেখানে কতটুকু যুক্তিবোধ, চিন্তাশীলতা, সচেতনতা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, আনুগত্য শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, মানুষের প্রতি সহনুভূতিশীল হতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, নারীদের প্রতি সম্মানবোধ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।

একজন চিন্তাশীল, যুক্তিবোধসম্পন্ন মানুষকে যদি বলা যায় যে, পদ্মা সেতুর জন্য সরকার মাথা সংগ্রহ করছে তাহলে সে কি সেটা বিশ্বাস করবে? নাকি প্রশ্ন করবে- মাথা দিয়ে কী হবে? নিজের বিবেকই তাকে উত্তর দিবে- এসব ফালতু কথা। যখন দেশের বিরাট একটা শ্রেণি এমন বাজে একটা গুজব বিশ্বাস করে ফেলে, যখন চাঁদে কাউকে দেখা যাচ্ছে- এমন গুজব বিশ্বাস করে ফেলে, যখন সাধারণ একটা নারীকে কেবলই সন্দেহের বশে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে তখন বুঝতে হবে বেশিরভাগ মানুষকে আমরা সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।

আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম

হতবাক!

গত কয়দিন যাবত ফেসবুকের পাতায় পাতায় ভাসছিলো একটি শিরোনাম, “১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী”। শিরোনামটা চোখে পড়তেই বেশ অবাক হলাম! রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা পড়লাম আর তারপর জানতে পারলাম ঘটনাটা সত্য। এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম, ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরী পাওয়া অত্যান্ত সৌভাগ্যের বিষয় যদি সেটা হয় বাংলাদেশে। আমি গাইবান্ধা পুলিশের নিকট সত্যিই কৃতজ্ঞ কারন এধরনের করুণা ইতিপূর্বে কোন বাহিনী করেনি আমাদের প্রতি। আমি এটাকে করুণাই বলবো। দেশে যখন চারকোটি ৮২ লক্ষ বেকার; তাদের চাকুরী দেয়ার মত কোন মামা চাচা খালু নেই; তাই এমতাবস্থায় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গাইবান্ধার জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান প্রশংসার দাবীদার। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই অন্য সকল জেলার পুলিশরাও তাকে দেখে শিখুক। তারা আমাদের দিকে করুণাভরে তাকাবে। অন্ততপক্ষে দেশের বেকারদের সংখ্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

যে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্যে; নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সে দেশে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো তা কি কখনও ভেবে দেখেছিলাম? দেখিনি। কারন দুষ্টুলোকেদের দখলে চলে গিয়েছে দেশ। আজ জাগায় জাগায় দুর্নীতি। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান ,অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ মোটকথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শক্তির অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো কোন মানুষও নেই। আমার মনে পড়ে সেই ৫২’র কথা, ৭১’র কথা এবং ৮০’র দশকের কথা; যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসমুদ্রে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সারাদেশ। তখন শকুনরা পারেনি আমাদের দমাতে। দমে গিয়েছিলো তাদের দম্ভ। এখন?

এখন আমাদের সাথে আব্দুল জব্বাররা নেই; নেই ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর; নেই নূর হোসেনরাও। মূলত এরা একবারের জন্যই আসে। তারা আসে। আসে আমাদের শিক্ষা দিতে। কিভাবে অধিকারের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো; কিভাবে শকুনের কন্ঠ রোধ করবো? কিন্তু আমরা তো অতিচালাক বাঙ্গালী। বুদ্ধিজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। ফলশ্রুতিতে আমরা নিজেরাই আজ নিজেদের কন্ঠ রোধ করে ফেলেছি। এক সময়ের ঈগল আমরা আজ সর্পের বেশ ধরেছি। তাই তো দেশ আজ খুন-গুম-ধর্ষণে একাকার। বাংলাদেশ পুলিশ এর ক্রাইম পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ২২১৪১৯টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে মোট খুনের ঘটনা ৩৮৩০টি, ডাকাতি ৮২৪ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬২৫৩টি, অপহরণ ৪৪৪টি, চুরি ৭৬৯৮টি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো মন্ত্রী মহোদয়গন বলেন দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তাহলে উন্নয়নের দেশে কেন এসব ঘটনা ঘটছে? দেশে এতো উন্নয়ন তাহলে মনুষ্যত্বের অবনতি কেন? কেন এক সময়ের ঈগলরা আজ শকুনের বেশে? আছে কি কোন উত্তর? গত ৬ মাসে প্রায় ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে সোনার দেশে। বিচার হয়েছিলো কি একটারও? সবগুলো প্রক্রিয়াধীন হয়তো নয়তো কোন কোনটি।

আসলে এদেশে যে সকল মানবাধিকার সংগঠ্নগুলো রয়েছে সেগুলো পুরুষ, শিশু ও নারীদের জন্যই অভিশাপ। নারীবাদ যদি শিশু ও নারীদের জন্যই হতো তাহলে দেশে শিশু ও নারীরা নির্যাতনের শিকার হতো না। মূলত সবস্থানে আজ দুষ্টলোকে ভরে গিয়েছে। কথায় মহানুভবতা কাজে হিংস্রতা। অথচ এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই মামলা-মোকাদ্দমায় ডুবিয়ে দিবে। এগুলো কে ঠিক করবে? নেই কোন মানুষ নেই। হে আল্লাহ, তোমার কাছে বিচার দিলাম।

আইসো গাঁজা টানি

একসময় এলুমিনিয়ামের বাজারমূল্য রূপার চেয়েও বেশী ছিলো। কোনো রাজকীয় অনুষ্ঠানে রাজা বা তার পরিবারের লোকজনদেরকে এলুমিনিয়ামের চামচ দেয়া হতো এবং অন্যান্য অতিথিদেরকে দেয়া হতো রূপার চামচ। তখন রাজার টাকশাল থেকে শুরু করে বনেদী ঘরের সুন্দরী রমনীর অলংকারে এই ধাতুটি শোভা পেতো। অথচ এই এলুমিনিয়াম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় এমন তিনটি মৌলিক পদার্থের একটি। শুধুমাত্র বক্সাইট থেকে এলুমিনিয়ামের আলাদা করা বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল হবার কারনেই তখন এমন অবস্থা ছিলো।

যদিও ইলেক্ট্রোলাইট পদ্ধতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এলুমিনিয়ামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন পরবর্তিতে বেশ সহজলভ্য হয়ে যায় তারপরও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও জার্মানি তাদের এয়ারফোর্সের উন্নয়নের জন্য এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার ব্যাপকভাবে শুরু করে। হালকা এবং ক্ষয়রোধী হবার কারনে বেশ প্রচলন ছিলো এখনো। যদিও বিমান তৈরীতে এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার কমে গেছে তারপরও গেরস্থ ঘরের পাঁকা রাধুনীর কাছে এলুমিনিয়ামের পাত্রের কদর এতটুকু কমেনি।

মনে পড়ে গ্রামীন ফোনের সিআইসি প্রজেক্ট যখন চালু হয় তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধীর গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের জন্য সেবা দেয়াটা একটু দুস্কর ছিলো। বিশেষ করে খালবিল সংলগ্ন বা সপ্তাহে একবার হাটের সমাগম ঘটে এমন জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হতো। আবার এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোনো দিনে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বাড়াবার জন্য টাওয়ারে অতিরিক্ত রিসোর্স বিনিয়োগ করা সেসময়ে কারো জন্যই সাশ্রয়ী ছিলো না। তখন প্রায় সবার হাতেই নোকিয়ার টিপ মোবাইল। টাচস্ক্রীনের মোবাইলের নামগন্ধটি নেই কোথাও। তখন সমাধান হিসেবে আমি ইয়াগী উডা এন্টেনার একটা মডেল বানিয়ে বললাম কাজ হতে পারে। লম্বা খুটির মাথায় লাগিয়ে কোএক্সিয়াল ক্যাবেল আর হোল্ডার দিয়ে নেটওয়ার্ক দুর্বলতার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তখন এই এন্টেনাগুলো বিক্রী হতো ২০০ টাকার মতো। আমার নিজ হাতে যেটা বানিয়েছিলাম সেটার খরচ মাত্র ৭৫ টাকা। এর মধ্যে লোকাল বাসে করে বংশালের মার্কেটে যাওয়া আসাও ছিলো। ইয়াগী উডা এন্টেনা বানানোর প্রধান অনুষঙ্গই ছিলো এলুমিনিয়ামের পাইপ। এটা ২০০৭ এর দিকের কাহিনী হবে।

এমন না যে এগুলো বাজারে ছিলো না বা এগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতো না। মানুষের প্রয়োজনই বাধ্য করে নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে এবং পন্থা বের করতে। এর পেছনের গুঢ় রহস্য একটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ধরা যাক মধ্যযুগে ইহুদী আর ইসলামের প্রভাবে এলকোহলের প্রচলন পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। আল রাজী নিতান্ত ধার্মিক হয়ে এলকোহলের বিশুদ্ধ সংশ্লেষ প্রক্রিয়া বের না করতেন তাহলে কি হতো?

তার আগে জেনে নেই আসলে এলকোহলটা কি? আমরা যে সুমিস্ট ফল খাই তার মধ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্লুকোজ থাকে। এই গ্লুকোজ যখন ঈস্টের সংশ্পর্শে আসে তখন একধরনের এনজাইম নিঃসৃত হয় এবং বিক্রিয়া করে ইথানলের সৃস্টি হয় এবং তার ওপর কার্বন ডাই অক্সাইডের ফেনার সৃষ্টি হয়। তাই কোনো পচনশীল আম বা ভাতের মাড়ে পঁচে গেলে তার ওপর ফেনার অস্তিত্ব থাকলেই বুঝতে হবে সেখানে ইথানলের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি খান তাহলে নেশা ধরবে না কারন এলকোহলের পরিমান তাতে খুব কম পরিমানে আছে। এই ইথানলের পরিমান বাড়ালেই এটা বেশ ভালোমানের মদ হবে।
ইথানলের বেশ কিছু উপকারী গুন আছে। যখন এন্টিবায়োটিক ব্যাপারটার প্রচলন ছিলো না বা যুদ্ধের সময় এর অভাব দেখা যায় তখন ইথানলের প্রয়োজন পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষত সারাই এবং ডিসইনফেকশনে। এছাড়া ক্যামিস্ট্রির অনেক বিক্রিয়াতে এর অনুঘটক হিসেবে শুরু করে দ্রব্য, দ্রাব্য হিসেবে এর প্রচলন। আমাদের সভ্যতার বিকাশ বিশেষ করে রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রে একটা অন্ধকার সময় এখনো বিরাজ করতো।

তবে নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে এ্যালকোহলের ক্ষতির কথা সর্বজনিবেদিত। কিছুদিন আগে গবেষনায় প্রকাশিত যেকোনো পরিমানের এলকোহলই শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এবং ইউরোপীয়ানদের গড় আয়ু ঈর্ষনীয় হলেও এটা আরও বেশী হতো যদি তারা এলকোহলের আসক্ত না হতো। এই এ্যালকোহল আসক্তির কারনে তারা স্বাস্থ্য ও সামাজিক দিক দিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে অনেক বড়াই করতে পারেন যেসব দেশে এ্যালকোহল নিষিদ্ধ তারা খুব বুঝি ভালো আছে। এটাও মিথ্যা। ২০১৪ সালের এক মেডিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে পুরো বিশ্বে এমফিটামিনে আসক্ত হয়ে যতজন মানুষ ইমার্জেন্সিতে যায়, তার ত্রিশ ভাগ ঘটে সৌদী আরবে। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে মদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও সে দেশের জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ হেরোইন গাজা এমফিটামিন ম্যাথ স হ অনেক মারাত্মক ড্রাগে আসক্ত।

প্রশ্ন আসতে পারে মানুষকে কেনো নেশা করতে হয়। এটা কি জেনেটিক? প্রত্নতত্ববিদরা খুজে বের করেছেন আজ হতে প্রায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগে চীনারা এলকোহলের সংশ্লেষ করতে পারতো এবং বীয়ার জাতীয় পানীয় নিয়মিত পান করতো। তারও আগে ঈজিপশীয়ানরা, হিসাব করলে ১২০০০ বছর আগের ঘটনা, তারা তাদের শস্যাদী ঘরে তুলে বাড়তি অংশ গেজিয়ে মদসমতুল্য এলকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পান করতো। যদিও তাতে এলকোহলের পরিমান বর্তমান সময়ের মতো এত বেশী ছিলো না, কিন্তু তা পান করেই টাল হয়ে থাকতো।

এলকোহল বেশ ক্যালোরী সমৃদ্ধ হওয়ায় এটার পুস্টিগুন আছে বৈকি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে মেসোমোর্ফিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদের দেহ ক্যালোরী থেকে গ্লুকোজ সংগ্রহ করে সরাসরি মেটাবোলিজমের কাজে ব্যায় করতে পারে। দেহের গঠনে বেশ শক্তিশালী, স্পার্টান এ্যাথলেট যাকে বলে। অনেক প্রাইমেট আছে যাদের মধ্যে উচ্চ ক্যালোরীর খাবার বেশ কাজে দেয়। উচ্চ মেটাবোলিক হার বজায় রাখতে এ্যালকোহলের বিকল্প আর কি হতে পারে। যদিও মানবদেহে এলকোহলের ক্রিয়া একটু বেশী বিনোদনমূলক, পুষ্টিগত দিকের থেকে একটু কমই বা চলে।

আজ হতে ১২ -১৩ হাজার বছর আগে যখন টিভি ইন্টারনেট ইলেক্ট্রিসিটি কিছুই ছিলো না। তখন গরীব শ্রান্ত কৃষক উদাসী মনে আকাশের তারাদের পানে তাকিয়ে পাত্রের গেজানো তাড়িতে চুমুক দিয়ে নিজের কষ্ট ভুলতো। অথবা নতুন বিয়ে বা নবান্নের আনন্দকে আরেকটু ভিন্ন মাত্রা দিতে সাময়িক উত্তেজনার লোভে একটু মদে চুমুক দিলে দুনিয়া তো উল্টে যাচ্ছে না তাই না!

হয়তো এসব কারনেই আমরা নিয়েনডারথাল থেকে আলাদা হতে পেরেছি, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পেরেছি। নইলে বানর হয়ে দেখা যেতো ঐ গাছের শাখা প্রশাখায় ডিগবাজী খেতাম।

প্রয়োজন জিনিসটা এমনই একটা অনুষঙ্গ যেটা কিনা সভ্যতার মোড় ঘুরিয়েছে সবসময়ই। জেনোর ছাত্র লিউসিপিয়াসের দর্শনানুসারে কোনো কিছুই দৈব্যক্রমে ঘটে না কিন্তু সবকিছুই ঘটে কোনো কারনে এবং প্রয়োজনে। এ্যারিস্ট টল এই যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তাকে একটু স্পস্টবোধক রূপ দিতে গিয়ে বললেন পারস্পরিক বিপরীতার্থক বক্তব্যের একটি সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হবে। এ থেকে ডিডোরাস ক্রোনাস চারটা ধাঁধাঁর জন্ম দেন।

যদিও এরিস্ট টল সে ধাঁধাঁগুলোকে বেশ ভালোভাবেই খন্ডান সাগরের যুদ্ধের উদাহরন টেনে, কিন্তু সব কথার মধ্যে একটা ব্যাপার খুজে পাওয়া যায় না সেটা হলো যদি ১২০০০ বছর আগে এলকোহলের ব্যাব হার না জানতাম বা এলুমিনিয়ামের সংশ্লেষ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতাম, তাহলে কি হতো?

আকাশে কি প্লেন উড়তো না? যুদ্ধাহতরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গ্যাংগ্রীনে মারা যেতো? নতুবা কেউ না কেউ পরে সেটা আবিস্কার করতোই?

তার চেয়ে বড় কথা আবিস্কার তো হয়েই গেছে, এখন এটা ভেবেই বা লাভ কি?

ঠিক এ কারনেই কি আমরা জাতি হিসেবে কোনো কিছুর আবিস্কারক হতে পারছি না?

একটার সাথে একটা খুব সূক্ষ্ম সংযোগ আছে বৈকি!

গণতন্ত্র সে কোথায়

স্বপ্ন সাধের গণতন্ত্র আজ ঝুলে আছে
কখনো ফেলানী সীমান্তের কাঁটাতারে,
কখনো আদরের ছোট বোন তনু হয়ে
নির্জন জঙ্গলে রক্তাক্ত পড়ে থাকছে ৷

গণতন্ত্রের আজ দেখা মেলাটাই ভার
গণতন্ত্র নামে চলে গলাবাজি নেতার,
গণতন্ত্র স্লোগানে গঠিত হয় সরকার
ক্ষমতা পেলেই শুরু হয় অপব্যবহার ৷

সাধের গণতন্ত্রের আজ দেখা মেলে
শুধুই নেতা-নেত্রীর ঝড়ো স্লোগানে,
নয়তো সংবিধানের পাতা উল্টিয়ে
বাস্তবেতো সে কবে পালিয়ে গেছে ৷

গণতন্ত্র ঝলসানো শরীরে পড়ে থাকে
কোন এক বার্ণ ইউনিটের বারান্দাতে,
নয়তো নিরপরাধ এক বিশ্বজিত হয়ে
পড়ে থাকছে পথের ধারে রক্তাক্ত হয়ে ৷

গণতন্ত্র সেতো আজ শুধুই ফাঁকা মন্ত্র
গণতন্ত্রের মুখোশে চলে শুধুই ষড়যন্ত্র,
আর মনে-মনে বাসনা একনায়কতন্ত্র
গণতন্ত্র আজ চাবি দেওয়া একটা যন্ত্র ৷

স্বতন্ত্রতা হারিয়ে গেছে সাধের গণতন্ত্রে
মুখ থুবড়ে পরেছে সে গভীর ষড়যন্ত্রে,
গণতন্ত্র সেতো পরিণত একনায়কতন্ত্রে
রুপ নিয়েছে সে আজ এক শাসনতন্ত্রে ৷

পুরুষ তুমি মানুষ হও আগে …

হ্যালো, আপনাকে বলছি, শুনতে পাচ্ছেন তো ? ভেবেছিলাম কানেও শোনেন না, চোখেও দেখেন না।

“I simply dont care.” আপনি এই মুহূর্তে কি ভাবছেন। আপনার ৭ বছর বয়সী পুত্র সন্তানকে ঠিকঠাক বৈষম্যতা দূরীকরণের মন্ত্র দিচ্ছেন তো ? এখনও না !! তবে কবে? পাশের বাড়ির মেয়েকে দেখে ১৪/১৫ বছর বয়সে যখন কু-চিন্তায় মগ্ন হবে তখন ?

বুঝেন কিন্তু। আপনার ৭ বছর বয়সী রাজকন্যা কিন্তু সেই বৈষম্যতা বইবে যুগের পর যুগ ধরে। প্রথমে ঘরে তারপর স্বজনদের মাঝে, এরপর কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে, সব শেষে সবচাইতে নিরাপদ স্থান স্বামীর ঘরে।

এই যে পুরুষদের নিয়ে গাল মন্দ করছেন, পুরুষ গুলো তো আর আসমান থেকে ঠুস করে ধরণীতে পরেনি। আমার আপনার গর্ভে ধরেছে। অতি যত্নে, আদরে, আহ্লাদে আস্কারা দিয়ে, মানুষ না গড়ে, পুরুষ মানুষ গড়েছি। ভেবেছেন কখনো, সেই পুরুষ একদিন ধর্ষণের মতো অপরাধ করবে ?

আজ আমি কথা বলছি না; বলছে আমার বিবেক। বিবেক আজ বড় বেয়াদপ। মানুষটা আমি ভীষণ বিনয়ী আর নম্র ভদ্র। আমার কলম আর আমার বিবেক দুটোই লাগামহীন। উহু, পারিবারিক শিক্ষা আমাকে সেই স্বাধীনতা দেয়নি। ধন্যবাদ জরাজীর্ণ নির্লজ্জ সমাজ তোমাকে … তুমি আমাকে আমূল পাল্টে দিয়েছো।

প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তো যে পুত্র সন্তান হলে দু’দুখানা গরু জবাই করে নামকরণ আর কন্যা সন্তানের বেলায় একটা ছাগল; তো সেই সমাজে জীবনের শুরুতে প্রেমিক পেটাবে, জবরদস্তি করবে, ভবিষতে স্বামী পেটাবে, জবরদস্তি ? নাহ! সেটাকে বলে স্বামীর অধিকার। তো যখন কন্যা বাপের বাড়ি এসে ফিরে যেতে চায় না, নানান ভাবে আকুতি মিনতি করে, কাঁদতে কাঁদতে অত্যাচারের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়, আপনি তখন ভুলিয়ে ভালিয়ে মেয়েকে আবারও পাঠান সেই বাড়িতে। কখনো কখনো সেই রাজকন্যা লাশ হয়ে ফেরে; এতে অবাক হবার কি কিছু আছে ?

আমাদের গর্ভে জন্মে, আমাদের পেটাবে, নির্যাতন করবে, ধর্ষণ করবে এই তো খুব স্বাভাবিক … কথা গুলো গায়ে জ্বলুনি দিচ্ছে ? দিক না হয়, একদিন না হয় কিছু মুহূর্ত বিবেকের আগুনে জ্বলুক।

হুঁশটা যে আমাদের কখন হবে ? কখন যে ভেতর থেকে এই দায়িত্ববোধ আমরা অনুধাবন করবো জানিনা। আমার পুত্র সন্তান যদি একজন বিবেকবান মানুষ হয়, তবেই না আমার আর আপনার কন্যা সন্তানদের জন্য নিরাপদ হবে পৃথিবী। এর আগে কিচ্ছু হবে না।

অনেক বাবা মাকে ছেলের দোষ ঢাকতে খুব গর্ব করে বলতে শুনি, He is a man. সরি, কিছু মনে করবেন না … আমার পিতা, আপনার পিতা, আপনার স্বামী, আমার স্বামী পুরুষ যে হয়েছে তাতো জীবনের প্রতি পদে দেখেছি। আসুন সময়কে সময়ের তালে হাতে সামলে, আগে নিজ পুত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ি। সুশিক্ষা দেই। সে যখন ভালো একজন মানুষ হবে, by default একজন ভালো পুরুষ হবে।

পুরুষ তুমি মানুষ হবে কবে না বলে, আসুন বলি, পুরুষ আমরা দুঃখিত, আমরা মানুষ গড়িনি বলে।

________________________
সাজিয়া আফরিন। সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।

দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ২

১। ‘How to change your life’ বইটি একবার দ্বিতীয় সংস্করণে নামের বানান ভুল করে ‘How to change your wife’ হয়ে বের হয়েছিলো, তারপর সেটা সাথে সাথেই বেস্ট সেলার! পরে সেটা তারা কারেকশন করেছিল। তাতে কি? ব্যাপক বিক্রিই প্রমান করে সবাই এরকম একটা বই অনেক দিন থেকে খুঁজছিল।

>আহা এরকম যদি সত্যি একটা বই থাকত!

২। কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার নাসির আর তার প্রেমিকা শোভার অডিওর কয়েকটা ভার্সন রিলিজ পেয়েছিল। বিশেষ করে শোভার কিছু অডিও। যারা বাংলা ভাষার সব ধরনের গালগালীর সংকলন চান তাদের জন্য আমি এটা চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করলাম। একবার শুনলে আপনার মনে হবে বাংলা ভাষার সব ধরনের গালীর উপর PhD করে ফেলেছেন। YouTube এ আছে।

>কষ্ট করে খুঁজে নিন। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না! আর এই কেষ্ট যা তা কেষ্ট না।

৩। আপনি কি জানেন গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!! তাই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!! মেয়ের বাবা-মা সাধারনত এই কাজের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন!! মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেটও দেয়!!

>সেইদিন খুব ইয়ার দোস্ত টাইপের একজন উপরের নিউজটা শেয়ার করে খুব দুঃখ করে আমাকে বললঃ কেন যে এই দেশে জন্ম নিলাম! এত দিন কি সব উল্টা পাল্টা চাকরী করছি! আমি এর আক্ষেপ শুনে একদম বাক্যহারা!

৪। বর্তমানে আমরা কেবল পোশাকে আধুনিক হচ্ছি, মানসিকতায় না। মেয়েদের স্লিভলেস পরা, সর্ট ড্রেস পরা বা স্কুটি চালানোই কেবল যদি আধুনিকতা হয় তবে সেটা ভুল, অবশ্যি ভূল। আমরা অনুকরণ করেই দ্রুত বড় হতে চাই, একবারে গাছের মগডালে ওঠার স্বপ্নের মতো, সিড়ি বাদ দিয়ে লিফটে উঠার মতো! এদিকে যে পাছার কাপড় খুলে কখন সবার অজান্তেই পড়ে গেছে সেদিকে কোন খবর নাই। আধুনিক হবেন সমস্যা নেই, বেঁচে থাকতে হলে আধুনিক হতে হবে এটা কে আপনাকে বলল?

>আপনি এই অদ্ভুত ধ্যান ধারনা নিয়ে আধুনিক না হয়ে আদিম হয়ে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের ন্যাংটো সংস্কৃতি আমাদের এত সুন্দর সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে এটাকে আরও ন্যাংটো করে দিয়েছেন, সেটা কি জানেন?

৫। সেদিন যেন কোথায় ইন্টারনেটে পড়েছিলাম, এয়ারটেলের অ্যাড দেখে বন্ধুত্ব শিখো না, তাহসান এর নাটক দেখে প্রেম শিখো না। এগুলোতে হাজারটা জ্ঞানের কথা থাকতে পারে, তবে সবার অভিভাবক টাকা কিংবা অবস্থানের কথা কখনো লেখা থাকে না।

বাস্তবতা হলো, তোমার কাছে যখন মধু থাকবে তখন অসংখ্য শুভাকাংখী তোমার খোঁজ খবর নিবে, ভালো মন্দ জানতে চাইবে। এগুলোর অ্যাটিওলজী তুমি না, তোমার কাছে থাকা মধুটা। তাই নিজের কাছে থাকা এই মধুর ডিব্বাটার যত্ন নিও। মনে রেখ, ভোমরার অভাব না থাকতে পারে পৃথিবীতে, মধূ কিন্তু সবার কাছে থাকে না। কষ্ট করলে ঐ মধু সংগ্রহের জন্য করো, আশে পাশের ভোমরা গুলাকে আটঁকে রাখতে করো না।

>কথাটা দারুন বাস্তব এবং সত্য মনে হলো আমার কাছে । আপনার কি মনে হয়?

৬। অবশেষে সিভিতেও…সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরি খোঁজা একটা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই অফিস ঐ অফিস ঘুরে ঘুরে সিভি ড্রপ আর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে এখন আমি বেশ বিরক্ত। গতকাল এক অফিসে গেলাম সিভি জমা দিতে, সেখানে এক আপুর সিভি নিয়ে একটা কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। উনার মতে আমার দেয়া সিভি সেক্সি না। এখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে… আপা সিভি সেক্সি হয় কেমনে? সিভিতে দেয়া ছবিতে ক্লিভেজ দেখায়, নাকি লিখাগুলোয় আমার চাকরীর এক্সপেরিন্সের বদলে কারো সাথে শুয়ে জব পাওয়ায় পার্রদশী কিনা তা দেখিয়ে? অবাক লাগে যখন প্রফেশনাল কোনো সিভির বদলে আজকাল মানুষ সেক্সি সিভি খুঁজে। হায়রে মানুষ!! এখন সিভিকেও সেক্সি হতে হবে!!! নাহলে জব কাছে আসবে না!’

>ভাষাটা সুমধুর হলেও যা লিখেছে সেটা পড়ার পর থেকে আমি বাক্যহারা। এই বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না। আপনাদের কি মন্তব্য?

৭। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক কিংবা সমালোচনার শেষ নেই। গতবছর ফাইনালের মঞ্চের নাটকীয়তাকে ঘিরে কম বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আর এবার অনুষ্ঠানটির ফাইনাল পর্ব শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইনালিস্টদেরকে নিয়ে। জনপ্রিয় মডেল এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার অভিমত শেয়ার করেছেন। দেশের একটা দৈনিক পত্রিকা এটা তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেনঃ-
“আমরা কেন এই মেয়েগুলাকে নিয়ে হাসতেছি? ওদের কী দোষ। ওরা তো জেনেই আসছে যে ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি নাই দিয়ে থাকে ওদের কী গ্রুমিং করাইছে বা কারা করাইছে যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’ পর্যন্ত বলা শিখাই নাই?
এতো ক্ষ্যাত মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিস্ট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এতো দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতোগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সবসময় ক্ষমারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওইটা জেনেই আসছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়”!

>মেয়েটার কথার খুব যৌক্তিক তাৎপর্য আছে আর তাই এটা এখানে তুলে দিলাম।

৮। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর বুকে হাত দেয়ার জন্য আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি রোববার বিমানে চড়ে হিউস্টন থেকে আল বাকার্কি যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনের সারিতে বসা একজন নারীর বুকে দু’বার হাত দেন। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ব্রুস আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘নারীদের অঙ্গ স্পর্শ করা দোষের কিছু না। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজে এ কথা বলেছেন’। এবিসি নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ঘটনার শিকার নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন প্রথমবার হঠাৎ করেই তার বুকে ব্রুসের হাতের স্পর্শ লেগে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটার সময় বিপত্তি বাধে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাকালীন ওই মহিলার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। তখন ব্রুস আলেকজান্ডার আবার তার বুক স্পর্শ করেন। এ সময় ওই নারী ঘুরে দাঁড়ান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এ কাজ করছেন? এবং তাকে অবশ্যই এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বিমানের স্টুয়ার্ডরা ওই নারীর সিট বদল করে দেন। বিমানটি আলবাকার্কিতে অবতরণের পর পুলিশ ব্রুস আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেন, যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মেয়েদের গোপন স্থানে হাত দিলে কোন দোষ নেই। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে তাকে আদালতে তোলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়ে ছিল যে, সেলেব্রিটিরা চাইলে নারীদের অঙ্গ তাদের অনুমতি ছাড়াই খামচে ধরতে পারে। তার এই মন্তব্যের জন্য তার নিজের দলসহ সারা দেশে প্রবল সমালোচনা হয়।

>লেখাটার পড়ার পর আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কথা কেন যেন খুব করে মনে পড়ে গেল!

বর্তমান এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মতো একজন অতি তুচ্ছ আমজনতা কি ভাবে আর মন কি চায় সেটাই তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পুরো লেখাটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবনের কাছ থেকে যে ঘটনা গুলি দেখে মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে যাব যদি সময় ও সুযোগ থাকে। এই এক্সপেরিমেন্টের এটাই দ্বিতীয় লেখা পোষ্ট। আমার মাথায় সারাক্ষনই এরকম উল্টা পাল্টা লেখা ঘুরে……

এর আগের পর্ব পড়ুন:-
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ১

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

জলাতঙ্ক বনাম ইভটিজিং

জলাতঙ্ক বনাম ইভটিজিং

ইভটিজিং একটা মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মহামারীর রূপ নিচ্ছে। এর থেকে সত্বর প্রতিকার পেতে হবে। কিন্তু উপায় কি, ইভটিজিং কিভাবে নির্মূল করা যাবে!

জলাতঙ্ক বলে একটা রোগের নাম ছোট বেলায় শুনতাম, কুকুর বাহিত রোগ। কুকুর দেখলে ভয় এবং আতংকে অন্তরাত্মা বেড়িয়ে আসতো। পাগলা কুকুর জলাতঙ্ক ছড়ায় কিন্তু কোন কুকুর পাগল এবং কোনটা পাড়ার পোষা নেড়ি দেখে ঠাওর করতে পারতাম না বলে কুকুর দেখলেই উল্টো দিকে দৌড় দিতাম।

জলাতঙ্কের সাথে ইভটিজিং এর কিছু সাদৃশ্য আছে অর্থাৎ দুটোই অস্বাভাবিকতায় ঘটে, রেবিস ভাইরাস কুকুরকে আক্রমণ করে ক্রমান্বয়ে জলাতঙ্কে রূপ নেয়, এসময় কুকুর তার স্বাভাবিক প্রবাহ ভুলে যায়। তার আচরণ মারমুখো এবং অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। সে যে কাউকে কামড়ে দিতে উদ্যত হয়। ইভটিজিং এর রাসায়নিক গবেষণা হলে আমি নিশ্চিত আক্রান্তের শরীরে রেবিস ভাইরাসের জিনোম পাওয়া যাবে, এ রোগের আক্রান্তরাও স্বাভাবিক জীবনাচারণ ভুলে যায়, সভ্য কিংবা শুদ্ধ চিন্তা এদের জন্য রহিত হয়ে যায়। কুকুরের মতো এরাও কাউকে কামড়ে দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কামড়ে উপশম হবে এই চিন্তায় এরা সমাজ, সামাজিকতার তোয়াক্কা করা ছেড়ে দেয়।

জলাতঙ্কের আতংক এখন অনেকাংশে কমে এসেছে। এ রোগের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ত্বরিত সিদ্ধান্তে আক্রান্ত কুকুরকে নির্মূল করা হয়েছে অর্থাৎ পাগলা কুকুর যেন জলাতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে কুকুরকে গুলি করে কিংবা অন্য প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে। ফাঁকফোকরে হয়তো দুয়েকটা আক্রান্ত রয়ে গেছে কিন্তু এতে সমাজ তেমনভাবে আর প্রভাবিত হচ্ছে না।

ইভটিজিং নির্মূলে জলাতঙ্কের মতো ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়। এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত না নেয়া গেলে ইভটিজার কুকুরেরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এদের এখনই থামাতে হবে।

চারপেয়ে কুকুরদের নির্মূল করা সহজ কিন্তু দু’পেয়ে কুকুরদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা সভ্য সমাজে কিছুটা অসুবিধার কারণ হতে পারে সে জন্যই প্রয়োজন ত্বরিত সিদ্ধান্তের। এই পশুদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

একজন নারীর জন্য সবচেয়ে অপমানের বিষয় হচ্ছে লিঙ্গের কারণে নিগৃহীত হওয়া। আজকের ইভটিজার কালকের ধর্ষক কিংবা খুনি। নারী তথা মানবের সম্মান সমুন্নত রাখতে এখনই ইভটিজিং নির্মূল করা হউক!

কোম্পানিদের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে

একসময় আমরা সকলে বাটন মোবাইলে GPRS সংযোগে ইন্টারনেট ব্যবহার করিয়াছিলাম। তখনকার দিনে এখনকার মতন দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট না থাকিলেও, যাহা ছিল তাহাতেই অগণিত মানুষের ইন্টারনেটের কাজ চলিয়াছিল। মোবাইলে টাকা রিচার্জ করিয়া যার যার ইচ্ছামত ইন্টারনেট চালাইত। ইন্টারনেটের উপর কোনপ্রকার শর্তাবলি বা মেয়াদ ছিল না। নেটওয়ার্ক কোম্পানির ব্যাপারেও কাঁহারো কোনপ্রকার অভিযোগ ছিল না বলিয়া মনে হয়। তখন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ছিল সীমিত। মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাঁহারা ইন্টারনেট বুঝিত, তাঁহারাই ইন্টারনেট চালাইত। বর্তমানে যেই হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়িয়াছে, সেই হারে নেটওয়ার্ক কোম্পানিরও জোচ্চুরি বাটপারি অনেকাংশে বাড়িয়া গিয়াছে। নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলি মনে করিতেছে, “বর্তমানে এই বঙ্গদেশের অগণিত আদম সন্তান যখন ইন্টারনেটে আসক্ত হইয়া পড়িয়াছে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাইতে হইবে।”

সেজন্য তাঁহারা দ্রুতগতি সম্পন্ন 4G সেবা প্রধানের নামে নানারকম ফন্দি-ফিকির করিয়া আসিতেছে। কোম্পানিগুলি দ্রুতগতিতে বাংলার জনগণকে ফকির করিবার চিন্তাভাবনা করিয়া, 4G সেবার সাথে তাঁহাদের খেয়ালখুশি মতো মনগড়া মেয়াদ বাঁধিয়া দিয়েছে। যাহা এই বঙ্গদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য মরার উপর খরার ঘা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তাহার পরেও বহু মানুষ ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত হইয়া কোম্পানিগুলির বাঁধিয়া দেওয়া কঠিন শর্তাবলি মানিয়া লইয়া ইন্টারনেট ব্যবহার করিতেছে। এর ফলে নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলি দ্রুতগতিতে দৈনিক কোটি কোটি টাকা হাতিয়া লইয়া যাইতেছে। আর বাংলার জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করিয়া দ্রুতগতিতে নিজেদের পকেটের টাকা উড়াইয়া দিতেছে।

এর কারণ হইয়াছে যে, নতুন একখান মোবাইল ফোন বাজার হইতে খরিদ করিয়া প্রথমেই ইন্টারনেট ট্যাবলেট গিলিয়া ফেলিতেছে। তাহার পর আস্তে আস্তে ফেসবুক সহ অনলাইনভিত্তিক সাইটগুলিতে আনাগোনা শুরু করিয়া, ইন্টারনেটের মজা পাইয়া ইন্টারনেটে আসক্ত হইয়া পড়িতেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এইরূপ অবস্থা টের পাইয়া নেটওয়ার্ক কোম্পানি 4G’র উপর কঠিন মেয়াদের শর্তাবলী বাঁধিয়া দিতেছে। ফলে অগণিত মানুষের কষ্টার্জিত টাকা গচ্ছা যাইতেছে। আর নেটওয়ার্ক কোম্পানিও ইচ্ছামত দেশের অগণিত মানুষের পকেটের টাকা চুরি বাটপারি করিয়া লইয়া যাইতেছে। ইহা মনে হইতেছে বাংলার কেহ টেরও পাইতেছে না। কোম্পানিগুলি দৈনিক একজন মোবাইল ব্যবহারকারী হইতে যদি এক টাকা করিয়া চুরি করে, তাহা হইলে বাংলার অগণিত মোবাইল ব্যবহারকারী হইতে কত টাকা নিতে পারে? তাহা আর হিসাব বাহির করিয়া দেখাইয়া দেবার দরকার আছে বলিয়া মনে হইতাছে না। এই হিসাব বাংলার জনগণ মুখে মুখে যোগবিয়োগ করিয়া বলিয়া দিতে পারিবে নিশ্চয়।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটাইয়া দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক 4G চালু হইয়াছিল। তখন মানুষ আনন্দে টগবগাইয়া উঠিয়াছিল। মানুষ ভাবিয়াছিল স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট হাসিয়া খেলিয়া চালাইতে পারিবে। কিন্তু না, তাহা আর হয় নাই। জনগণের মনের আশা মনেই থাকিয়া গেল। বর্তমানে 4G ইন্টারনেটের মূল্য সীমিত থাকিলেও, কোম্পানিগুলির বিশেষ মেয়াদের কারণে বাংলার জনগণ মনে আনন্দ নিয়া ইন্টারনেট ব্যবহার করিতে পারিতেছে না। 4G প্যাকেটের (প্যাকেজ) উপর বাঁধিয়া দেওয়া মেয়াদের কারণে এর দাম হইয়া যাইতেছে আকাশছোঁয়া।

নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলি মিষ্টির প্যাকেটের (প্যাকেজ) মতন 4G প্যাকেটের ভিতরে চায়না মুলা ঢুকাইয়া দিয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে বিশেষ মেয়াদে 4G বিক্রি করিতেছে। ব্যবহারকারীদের সান্তনা দিবার জন্য সাথে দিতেছে দুই চার মিনিট ফ্রি টকটাইম। বাংলার জনগণ এমনিতেই ফাও খাইতে বেশি ভালোবাসে। ফাও খাইলে যে মুখে ঘাও হইয়া যায়, তাহাও বাংলার জনগণ জানে। তাহার পরও বাংলার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দুই চার মিনিট ফ্রি টক-টাইম পাইয়া তাঁহাদের বিশেষ প্যাকেটগুলি (প্যাকেজ) খরিদ করিয়া প্রতিদিনই ধরা খাইতেছে। তাহা 4G’র উপর তাঁহাদের বাঁধিয়া দেওয়া মেয়াদের দিকে তাকাইলেই অনুমান করা যায়। ইহা একরকম জনগণের সাথে প্রতারণার সামিল বলিয়া ধরিয়া নেওয়া যায়। বাংলাদেশে 4G সেবা দানে নিয়োজিত নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলির মেয়াদের কিছু নমুনা নিচে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দেওয়া হইল।

৫জিবি বাংলালিংক 4G ইন্টারনেট, মেয়াদ হইল ৭দিন। দাম হইল মাত্র ৮৯টাকা। এই ৭দিন মেয়াদের মধ্যে একজন দক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কিছুতেই ৫জিবি ইন্টারনেট শেষ করিতে পারিবে না। পারেও না। এতে অর্ধেকের চাইতেও বেশি 4G খরিদ্দারের গচ্চা যায়। ইন্টারনেট কোম্পানিও জানে যে, “৫জিবি ইন্টারনেট খরিদ করিয়া কিছুতেই ইহা ৭দিনে শেষ করিতে পারিবে না। ৭দিনে ইচ্ছামত চালাইয়া যাহা শেষ করিতে পারে করুক, আর যাহা থাকিয়া যাইবে তাহা তো আমাদেরই।” সেজন্যই তাঁহাদের এইরকম আকাশচুম্বী অপার! যাহা গাধাকে মুলা দেখাইবার মতন কাণ্ড!


ছবিটি এলাকায় থাকা একটি ফোন-ফ্যাক্স-এর দোকান থেকে তোলা।

আবার ২জিবি 4G ইন্টারনেট, মেয়াদ হইল ৩দিন। দাম মাত্র ৪৮টাকা। এই ৩দিন মেয়াদকালে খরিদদার অর্ধেক ব্যবহার করিতে পারিবে বলিয়া মনে হয়। বাদবাকি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কোম্পানির তহবিলেই জমা থাকিয়া যায়। ৭২ঘণ্টা মেয়াদ শেষ হইবার পরপরই মেগাবাইট ব্যালেন্স হইয়া যায় শূন্য।

আবার ১জিবি ইন্টারনেট, মেয়াদ ৭ দিন। এই প্যাকেটখানার দাম দ্বিগুণ, ৮৬টাকা । তাঁহারা জানে যে, এই ১জিবি ইন্টারনেট ৭দিনে খরিদ্দারের কিছুতেই হইবে না। খরিদদারকে আবার ইন্টারনেট খরিদ করিতে হইবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পকেটে টাকা না থাকিলেও ধারকর্জ করিয়া ইন্টারনেট প্যাকেট (প্যাকেজ) খরিদ করিবে। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইন্টারনেট নেশায় আসক্ত হইয়া পড়িয়াছে।

আবার ৩৫০ মেগাবাইট ইন্টারনেট, মেয়াদ ৩দিন। দাম ৩১টাকা। এইখানেও একই অবস্থা দাঁড়াইয়াছে। যেইখানে ১জিবিতে ব্যবহারকারীর ৭দিন চলা যাইবে না, সেইখানে ৩দিনে ৩৫০ মেগাবাইট ইন্টারনেটে কী হইবে? ৩৫০ মেগাবাইট ইন্টারনেট একদিনেই শেষ করিয়া, আবার ইন্টারনেট খরিদ করিতে হইবে। তাঁহাদের চালাকি কে বুঝিতে পারে!

তাঁহাদের এমুন জোচ্চুরি চালাকি অল্পকিছু আদম সন্তান ছাড়া আর কাহারও নাথায় ঢুকিতেছে না বিধায়, তাঁহারা তাঁহাদের ইচ্ছামত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সাথে ভানুমতীর খেইল দেখাইয়া যাইতেছে। দেখা যাইতেছে যে, গ্রাহক যেকোনো মেয়াদে 4G খরিদ করিবার পর মেয়াদ শেষে অর্ধেকের বেশি 4G থাকিয়া যায়। এইগুলি মেয়াদ শেষ হইবার সাথে সাথে কোম্পানি খরিদ্দারের কষ্টের টাকা দিয়া খরিদ করা 4G ব্যালেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তন করিয়া লইয়া যায়।

বাংলায় একখান কথা প্রচলিত আছে। তাহা হইল, “ঠনঠনাঠন ঘণ্টা, তোমরা পাইবা ধোনটা।” ‘সব আমার, সব আমার।’ কথাটার মানে হইলো, হিন্দুদের মন্দিরে পুরোহিত যখন পূজা করিয়া থাকেন। তখন দেবমূর্তির সামনে অনেককিছুই দেওয়া হইয়া থাকে। কাপড়-চোপড়, ফল-ফলারি, তামা-কাসা সহ আরও অনেককিছু। পুরোহিত পূজা করিবার সময় একহাতে পঞ্চপ্রদীপ, আরেক হাতে ঠনঠনাঠন ঘণ্টা বাজায়। পূজা শেষ হইবার পর সব ভক্তগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া, দেবমূর্তির সামনে থাকা সবকিছু পুরোহিত নিয়া যায়। ইন্টারনেট কোম্পানিরাও পুরোহিতদের মতন আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া যাইতেছে।

এখন কথা হইল গিয়া, এতো দামের 4G টাকা দিয়া খরিদ করিয়া তাঁহাদের মেয়াদে শেষ করিতে হইবে কেন? আমার টাকা দিয়া খরিদ করা উচ্চমূল্যের 4G আমার হিসাব মতন আমি ব্যবহার করিতে পারিব না কেন? মোবাইল সিমে টাকা ঢুকাইলে যেইভাবে মেয়াদ বিহীনভাবে চলে, সেইভাবে হইবে না কেন? নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলির এহেন কর্মকাণ্ডে বাংলার অগণিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী চুপ করে বসে আছে কেন? আসলে মনে হইতেছে বাংলার অগণিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলি জিম্মি করিয়া ফেলিয়াছে।

শুনিয়াছি বর্তমানে সরকার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করিয়াছে। ইহাতে শহুরে থাকা মানুষের মাথা গরম হইয়া গিয়াছে। রাজপথে মিছল মিটিং করিবার সিদ্ধান্তেও করিয়া ফেলিয়াছে। গ্যাস শুধু শহুরে মানুষেই ব্যবহার করিয়া থাকে। চুলা প্রতি অল্পকিছু টাকা বাড়িয়াছে বলে মনে হইতেছে। তাও নিবে মাসে একবার করিয়া। আর ইন্টারনেট কোম্পানিগুলি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা কাড়িয়া নিতেছে প্রতিদিনই। ইন্টারনেট এখন গ্রাম শহরের সকলেই ব্যবহার করে। অথচ এই ইন্টারনেট কোম্পানিদের চুরি বাটপারির বিষয়টি নিয়া কেউ প্রতিবাদ করিতেছে না। এই কারণেই তাঁহাদের চুরি বাটপারি দিন দিন আরও বাড়িয়া যাইতেছে।

একজন চোর দশ টাকা চুরি করিয়া ধরা খাইলে, ওই চোর মাইর খাইয়া দশদিন হাসপাতালে শুইয়া থাকিতে হয়। আর দেশের ইন্টারনেট সেবা দানকারী কোম্পানিগুলি 4G প্যাকেটের(প্যাকেজ) উপর তাঁহাদের খুশিমত মেয়াদ বসাইয়া দিয়া বাংলার জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি বাটপারি করিয়া ছিনিয়া লইয়া যাইতেছে। তাহাতে বাংলার কাহারো কোনও অভিযোগ নাই, প্রতিবাদও নাই। সত্যি আমরা দিন দিন কেমন যেন ইন্টারনেট নেশায় আসক্ত হইয়া ইন্টারনেট কোম্পানিদের কাছে জিম্মি হইয়া যাইতেছি। এই সবের প্রতিকার কিছুই দেখিতেছি না। শুধু দেখিতে পাই, 4G’র অপারেটরের সাথে বাঁধিয়া দেওয়া মেয়াদের বাহার। 4G খরিদ করিব নিজের টাকায়। ব্যবহার করিব নিজের ইচ্ছায়। 4G শেষ করিবার ইচ্ছাও থাকিবে ব্যবহারকারীর নিজের। কিন্তু না, তাহা কিছুতেই হইবে না! ইন্টারনেট ব্যবহার করিতে হইলে ইন্টারনেট কোম্পানিদের কথামত ব্যবহার করিতে হইবে। কিন্তু কেন-ই-বা করিতে হইবে? তাহা হইলে কি সত্যি ইন্টারনেট কোম্পানিগুলি আমাদের জিম্মি করিয়া ফেলিয়াছে? প্রশ্ন শুধু থাকিয়া যায়!

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতেই হবে

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতেই হবে

রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক ধারনা পোষণ করছেন। তাদের বলছি থিং পজেটিভ অর্থাৎ ইতিবাচক ভাবে ভেবে দেখুন।

রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের ২টি ইউনিট থাকবে। আশা করা যায় সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হবে। তবে দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষম হবে। তখন ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪২ টন সালফার ডাই-অক্সাইড ও ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। এই বিষাক্ত গ্যাস শুধু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, পরিবেশ এবং পশুপাখির জন্যও সমান ক্ষতিকর। বিদ্যুত কেন্দ্রের চিমনি থেকে অনবরত তাপ এবং আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, ব্যারেলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, রেডিয়াম ইত্যাদি বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গত হয়ে বাতাসে মিশে সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস করবে।

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে যার ৯৫%ই কৃষি জমি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাত্র ৬০০জনের কর্মসংস্থান হলেও জমি অধিগ্রহণের কারণে উচ্ছেদ হবে প্রায় আট হাজার পরিবার।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভয়াবহ দূষণ ঘটায়। তাই বিশ্বের কোথাও সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়না। কিন্তু রামপাল থেকে প্রায় ৯ মতান্তরে ১৪ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের অবস্থান হলেও দেশপ্রেমিক ও প্রকৃতিপ্রেমিক সরকার এবং সরকারের এলাহী উপদেষ্টা রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। কারণ, সরকারের কাছে সবার আগে সুন্দরবন।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবন কি আসলে ধ্বংস হবে? দেশপ্রেমিক সরকার কি সুন্দরবনকে ধ্বংস করার মত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে? উত্তর হল সুন্দরবন ধ্বংস হবেনা, সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করার মত কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনা। একমাত্র সুন্দরবনকে রক্ষার জন্যই রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
-সুন্দরবনে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে যাবে। সুন্দরবনের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশাল স্ক্রীনের এলসিডি মনিটর লাগিয়ে দেওয়া হবে। সেই এলসিডি মনিটরে হরিণেরা হিন্দী সিরিয়াল দেখে দেখে খুনসুটি করবে। বানর’রা ডিসকভারী আর এনিমেল প্ল্যানেট দেখে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখে বানরকূল সভ্য হবে, শান্ত হবে। বাঘ সমাজ ধর্মীয় চ্যানেল আর সামাজিক অনুষ্ঠান দেখে দেখে মানবিক হয়ে উঠবে। তারা মাংসের বদলে ভেজিটেবল স্যুপ আর পটেটো নুডুলস খেতে শিখবে। হরিন,বানর আর বাঘ শিশুরা একসাথে বসে কার্টুন চ্যানেল দেখবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় সকল পশুপাখী আবহাওয়া বার্তা শুনে সতর্ক হবে।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
শেয়াল পন্ডিতের পাঠশালা আবার নতুন করে জেগে উঠবে। পাঠশালাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হবে। নাইট শিফটে ছাত্র পড়ানো হবে। শিয়াল পণ্ডিত আর রাতের বেলা টক’শো দেখে দেখে সচেতন হওয়া কুমীর সন্তানদের খেতে পারবেনা। সকাল বেলা বাঘ-হরিণ-মোষ-বানর-কুমির শিশুরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ইশকুলে যাবে। পশু-পাখীদের সন্তানরাও জিপিএ-5 পেয়ে বাবা-মার মুখ উজ্জল করবে। শিক্ষাকে জঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
সুন্দরবনকে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে। বনের প্রতিটি প্রানীর ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে। যুবক হরিণেরা যুবতী হরিণের সাথে অসভ্যের মত বন-বাঁদাড়ে না ঘুরে-ফিরে ঘরে বসে বসে ফেসবুকে চ্যাট করবে। বানর রমনী তার বানর প্রেমিকের বিষয়ে স্ট্যাটাস দিবে। পুরো পশুকুল বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করবে। সুন্দরবনের স্মার্ট বাঘের সাথে ফেসবুকে প্রেম হয়ে যেতে পারে কোন আফ্রিকান সুন্দরী সিংহীর। বাঘ বিপন্ন প্রানী বলে তাদের গলায় গলায় জিপিএস লাগিয়ে দেওয়া হবে। ফলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবার সম্ভবনা প্রচুর। সুন্দরবন সভ্য হয়ে উঠলে সুন্দরবনের পশুদের মাঝে রং ফর্সা করা ক্রীম, হরলিক্স, চুলের কলপ, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, সুগন্ধী হার্বাল সাবান বিক্রি করার একটা বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে। এছাড়া টিভি, ফ্রীজ, চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কর্পোরেট হসপিটাল, ফ্রাঞ্চাইজি রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশাল ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
সুন্দরবনের পশুদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান সম্ভব হবে। বিদ্যুতের তার এবং পশুদের বিনোদন কেন্দ্র ছাড়া বাকী গাছগুলো কেটে কেটে পশুদের জন্য পাকা বাড়ি/ফ্ল্যাট বানিয়ে দেওয়া হবে। ফলে ঝড়-বৃষ্টি অথবা অন্য কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে পশুরা থাকবে নিরাপদ। ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌছে দেওয়ার ফলে গরমে পশুরা এসির বাতাসে শীতল হতে পারবে আর শীতে হিটারের গরমে উষ্ণ হবে। এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন পাখিদের কি হবে? পশুদের পাকা বাড়ীর ভেনটিলেটারে পাখিদের জন্য আরামদায়ক আবাসন তৈরী হবে।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হলে-
সুন্দরবন আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। সুন্দরবনের ভিতরে পৌঁছে যাবে সভ্যতার আলো। যারা সকলের জন্য সভ্যতা চায়না, যারা চায়না বৈষম্য কমে আসুক তারাই রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করতে পারে, তারা সবাই অসভ্য।

রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হলে-
সুন্দরবন দিনে দিনে সভ্য হয়ে উঠবে। সুন্দরবন হবে পৃথিবীর প্রথম সভ্য জঙ্গল। আমাদের একজন সভ্য ইলাহী সাহেব আছেন। তিনি তার নিজ তৌফিকে সুন্দরবনে সভ্যতার আলো পৌঁছে দিবেন। সভ্যতার খাঁটি ডিজিটাল বৈদ্যুতিক আলো। ভবিষ্যতে ভোটার লিস্টে সভ্য সুন্দরবনের শিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক পশুদের নাম উঠবে। আর সেই পশুরা রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে সভ্য করে গড়ে তোলার স্বপ্নদ্রষ্টা ও মহান কারিগর এলাহী সাহেবের দলকেই ভোট দিবে।

শেষ কথা হল রামপালে বিদ্যুতে কেন্দ্র হতেই হবে। যাদের একজন তৌফিক-ই-এলাহী আছেন তাদের সুন্দরবনের প্রয়োজন কি!!

______________
২৫শে আগস্ট, ২০১৩