ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসিয়াকের কবিতা

বিভ্রম

হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা,
শব্দগুলো যখন,
খাতার পাতায় একত্রিত সমাবেশে,
কবিতা হয়ে ফোটে।

ঠিক তখনই তুমি এসে,
হাজির হও আমার সামনে।
কিশোরী কন্যার মতো
বেনী দুলিয়ে।

সলাজ নয়নে,নত মাথায়।
আড়ে আড়ে চেয়ে দেখো
অদেখা কোন সুন্দরকে।

তুমি কবিতা না প্রেমিকা?
আমি মেলাতে পারিনা কিছুতেই।

অধিকার


ভাষার মাসে ফোটে ফুল,
পলাশ, গাঁদা আর শিমুল।
কোকিল ডাকে মধুর সুরে,
মনটা নাচে দোদুল দুল।

আমার ভাষা বাংলা ভাষা,
বাংলা আমার মায়ের মুখ।
এই ভাষাতে হেসে কেঁদে
সারাবেলা মনের সুখ।

মৃত্যুহীন প্রাণ, করেছে দান,
যেসব ভাষা শহীদেরা।
আজীবন তারা স্মরণীয়
যতদিন রবে বাঙালিরা।

ছাত্র জনতার দাবি ছিলো,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।
সেই মিছিরে গুলি হলো,
রক্তাক্ত হলো আমার ভাই।

পাকিরা চেয়েছিলো কাড়বে,
ভাষার অধিকার।
বীর বাঙালি রুখে তাদের
ছিনিয়ে নিলো অধিকার।

গড়মিল

এক সময় খুব ভাবতাম,
তুমি ফিরে এলে কী কী হবে!
কিভাবে সাজাবো আবার আমাদের জীবন।
মান অভিমান পর্বে,
কি কথা কব তোমার কথার পিঠে।

অবহেলায় কত বসন্ত বয়ে গেল একা একা!
কত জোড়ায় হলো মনের মিল।
শুধু তুমি দেখলে না বলে,
হিসাবের খাতা রয়ে গেল গড়মিল।

এলো বসন্ত এলো ফাগুনের দিন

হিম ভেজা সব ফুল নরম গন্ধ ছড়িয়ে দেয়।
যখন মেঘেরা অভিমান করে কুয়াশার আড়ালে লুকায়,
বসন্তের প্রথম সকালে।

কিছুকাল মান,অভিমান পর্ব শেষে,
লুকোচুরি খেলার মতো
সাঁঝবাতি নিভে গেছে,
রৌদ্রালোকের ছায়ায়।
ঝরছে টুপটাপ সববয়সী আমড়া ও মেহগনী পাতারা।
বসন্তের আগমনী বার্তায় ফোটে শিমুল পলাশ।
নববাসন্তী সাজে যুবকযুবতীরা
যৌবনের আহ্বানে বাসন্তী আবরনে খোলস বদলে নেয়,
সঙ্গী খোঁজার তালে।
পাখীরা গায় গান ,সুরে সুরে দল বেঁধে।
সরব প্রকৃতি তীব্র আবেগে হঠাৎ নিশ্চল,
শ্বাস চেপে প্রতীক্ষায় রত।
কখন নতুন প্রেমিকের দল এসে ছুঁয়ে দেবে,
বসন্তকে নবীন বরণে।

রূপসীর জবানবন্দী

আমার নাম রূপসী !!!!!
কুমারী রূপসী রানী দাস।
হা ভগবান ভাগ্যের কী পরিহাস….।
এত বড় ঠাট্টা তুমি করতে পারলে আমার সাথে?

আমিতো এখন আর রূপসী নই। আমি এখন রাক্ষসী।
আমায় দেখলে লোকে এখন মুখ ফিরিয়ে নেয়।
হাসে। মুখে কাপড় চাপা দেয়।
বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে!!!
আমি কি পারবো আর কোন শিশুকে কোলে তুলে নিতে,কোনদিন ?
আমার কি একটা সংসার হবে ? স্বামী সন্তান নিজের সংসার। নিজের একটা সন্তান !!
ফুটফুটে.. কোল জুড়ে রইবে..। আমায় দেখে কি সে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠবে?

আমি কখনো ভাবতেই পারিনি এমন একটা দিন আসবে আমার জীবনে।
আমি ভুলেও কল্পনা করিনি
আমি চেয়ে ছিলাম, আমি চেয়ে ছিলাম, অনেক অনেক লেখা পড়া শিখব, বড় হব আর…..।
এরকম হাজারটা স্বপ্ন ছিলো।
আমিও খোলা মাঠে দৌড়াতে ভালোবাসতাম।
আমি নদীতে সাঁতার কাটতে ভালোবাসতাম। আর ভালোবাসতাম ফুল…..

ওরা আমায় রোজ জ্বালাতো রোজ, বিশ্বাস করুণ আমি সব মুখ বুজে সইতাম….
আমি জানি প্রেম ভালোবাসা পাপ নয়, কিন্তু ওকে, কাজল নাম তার, তাকে আমি কখন ই সেরকম ভাবিনি ।
আমার নিজের পছন্দ অপছন্দ আছে। আমি তাকে ভালবাসি,ভালোবাসতাম।
যখন সে জানলো সে আমাকে পাবে না, তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।
হায়েনার মতো আচরণ শুরু করলো…
দিনে দিনে তার অত্যাচার বেড়েই চলল..। চেয়ারম্যানের ছেলে বলে কথা।
আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করলাম…..
একদিন রাতে শুয়ে আছি..। জানালা খুলে, বড্ড গরম পড়েছিলো সেদিন………।
তীব্র জ্বালায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার..। সে কি জ্বালা..আর চীৎকার!!!
শত সহস্র প্রদীপের আগুনে যেন আমার মুখ ঝলসে গেল!!!!!
আমি নিমেষে আমার জীবনের সব হারালাম।
আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
আমি এসিড সন্ত্রাসের শিকার হলাম।

হলদে পাখি

সজনে গাছের মগডালে,
একটি হলুদ পাখি।
নাম জানিনা তাইতো তারে,
হলদে পাখি ডাকি।

হলদে পাখি, হলদে পাখি,
কোথায় তোমার বাড়ি?
বাড়ি তো নাই, এদেশ ওদেশ
করি ঘোরাঘুরি।
বেশতো ভালো মজার জীবন,
অবাধ মুক্ত স্বাধীন।
গান গেয়ে যাও, ঘুরে বেড়াও,
নাচো তা ধিন ধিন।

আমি তো ভাই নিয়ম জালে
পড়ে গেছি বাধা।
মানব জীবন বড়ই কঠিন,
জটিল এক ধাঁধা।

প্রেমচিত্র

আকাশের লজ্জাহীন নগ্ন ক্যানভাসে,
চলে আঁকি বুকি।
প্রতি দুপুর রাত্রি ভোরে।
মেঘমালা তুলি স্পর্শে ছুঁয়ে যায়,
আর ফুটে ওঠে প্রতি মুহুর্তের নানা ব্যঞ্জণের
প্রেমের বিমূর্ত চিত্র।
তোমার আমার গভীর প্রেমের ছবি,
পৃথিবী দেখে তো দেখুক।
টুপটাপ ঝরে পড়ুক
ফুলরাশি জলকণা সম…….
হোক ঝড়, বজ্র সহ বৃষ্টি,
মাতাল বাতাসে উত্তাল হোক পৃথিবী।
আমি চেয়ে থাকি শুধু তোমার ওই মুখপানে।
তুমি দেখো আমায় মুগ্ধ নয়নে।
অন্যকাজে মন দিয়ে কাজ নেই আর।
শুধু তুমি আর আমি এক নিঃশ্বাস পরিমান কাছে
বসে থাকি হাতে হাত ধরে।

বসন্ত বাহার

বনে বনে দোলে ফুল গায় পাখীরা,
সখাগন ধরে হাত,নাচে সখীরা।
বসন্ত বাতাস এতো বসন্ত বাতাস,
ভালোবাসা প্রকৃতি করছে প্রকাশ।

দিকেদিকে ফোটে ফুল পলাশ শিমুল,
অলিগণ গায় গান প্রেমেতে আকুল।
প্রেমের প্রকাশ এতো প্রেমের প্রকাশ,
হেসে হেসে নেচে নেচে করছে বিকাশ।

এত সুখে কচি পাতা হেসে কথা কয়,
চির অমর হোক তবে সব পরিণয়।
ভাবনা উদাস আহা ভাবনা উদাস,
অনুরাগ প্রকৃতি যত করছে প্রকাশ।

জোছনারাশির গান, মলয় সুরকার,
বাসন্তী আবাহনে নানান সাকার।
বসন্ত বাহার এতো বসন্ত বাহার,
প্রেম পরিনয় তার চুড়ান্ত আকার।

ঘুড়ি

নাটাই সুতো নাটাই সুতো,
আকাশ জুড়ে ঘুড়ি।
শূন্যর বুকে নীলের মাঝে,
রঙের ছড়াছড়ি।

অলস দুপুর অঁচল জুড়ে,
উড়ছে ঘুড়ির ঝাক।
লেজগুলো নাড়ছে বেশ,
একেবারে ঠিকঠাক।

হরেক বাহার হরেক রকম,
স্বতন্ত্র তাদের সাজ।
বাক্স ঘুড়ি চিল ঘুড়ি,
নানান কারুকাজ।

বাতাস যখন উঠলো ছুটে,
ঘুড়িরা ছুটলো ধায়।
রঙবেরঙের ঘুড়ির সাজ,
জাঁকাল দেখতে হয়।

খোকা টানে ঘুড়ির সুতো,
বাতাস বুঝে বুঝে।
কেটে গেলে পালাবে ছুটে,
পাবে না আর খুঁজে ।

তাইতো খোকা দক্ষ হাতে,
সুতো ধরেছে টেনে।
কেটে গেলে যাবে হারিয়ে,
অজানা অচিনে।

একাকী জীবন

চোখের জলে ভিজে গেল,
মনের যত আবেগ।
জোছনা রাশি ঢেকে দিলো,
ইশান কোনের মেঘ।
সেই মেঘ বরষাতে শুরু,
যত সর্বনাশ।
বজ্রের মাথায় আটকে গেল,
অস্থির দীর্ঘশ্বাস।
তখন থেকে শুরু হলো,
কষ্টে ভরা জীবন।
অসম প্রেমের পাঠশালাতে,
অরণ্যে রোদন।
অমানিশা এলো ধেয়ে,
প্রকৃতির খেয়ালে।
স্বপ্নগুলো আটকে গেলো,
আবদ্ধ দেয়ালে।
টুপটাপ খসে গেলো,
যত খুশির ক্ষণ।
তোমার চলে যাওয়াই হলো,
আমার একলা জীবন।
এখন আমি একলা থাকি ,
একলা থাকে মন।
অতীত স্মৃতি বুকে নিয়ে,
কাটছে এ জীবন।

ব্যাধি

বিকৃত কামতৃষ্ণা হতে সৃষ্ট
পাপাচার, কামাতুর উষ্ণতার লোভে,
কাঠ, খড় পুড়িয়ে, অসহ্য তপ্ত হয় কতিপয় যুবক।
বিকারগ্রস্থ শরীরের তৃষ্ণা মেটাতে।
ফাঁদ পাতে গলি, পার্কে, নির্জন রাস্তায়,
পাবলিক টয়লেটে অথবা ছাত্রী হোষ্টেলে।

যে জনপদে যৌন শক্তি বর্ধক পানীয়, ট্যাবলেট
দেদার বিক্রি হয় মুড়ি মুড়কির মতো।
সেই সমাজে কোন রমনীই নিরাপদ নয়।
অসুস্থ চিন্তাধারা, বিকারগ্রস্ত মনমানসিকতা,
সামাজিক অবক্ষয়ের এক বীভৎস তৈলচিত্র।

নারীকে দলিত করার তীব্র ইচ্ছা, বেহিসেবী জীবনে,
পাওয়া না পাওয়ার হতাশা, ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় পাপ!
সেই পাপ ব্যাধি হতে সৃষ্ট কর্মকাণ্ডের নাম ধর্ষণ।

স্বপ্নছোঁয়া

ফুলে ফুলে বনতল,
সুবাসিত দিন।
ছেড়া ছেড়া মেঘে ছাওয়া,
আকাশটা নীল।
রঙিন হাওয়ায় উড়ছে পালক,
উড়ছে স্বপ্নগুলো।
ফাগুন হাওয়ায় মনমাতাল,
ভাবনা এলোমেলো।
নিস্তব্ধ চরাচর,
উদাস দুপুর।
মেঘবালিকা হেঁটে চলে,
পায়েতে নুপুর ।
অচিন পাখি গাইছে গান
বাজছে হওয়ায় সুর ।
স্বপ্ন ছোঁয়া দিনটি আজ
অপ্রতিম মধুর ।

তুমি চাইলে অনেক কিছু হতে পারতো

তুমি চাইলে অনেক কিছু হতে পারতো আমাদের।
কেন মুখ ফিরিয়ে ছিলে?
আমি কি এতটাই অপাঙ্‌ক্তেয়।

তোমার নীল যৌবন আমার হৃদয় হরণ করেছিলো,
শুক্লা তিথির রাতে।
আমি তো অর্গল খুলেই রেখেছিলাম।
তুমি শুধু হাত বাড়ালেই হতো।
সবইতো বরাবরই ছিলে এক নিঃশ্বাস পরিমান কাছে।

তুমি কি জানো ?
তোমার চুলের ঘ্রাণ পাবার লোভে,
আমি তোমার পিছু পিছু ছুটেছি
শ্যমলী থেকে আজিমপুর অবধি কত শত বার?
এতো কাছে তবু ফিরে দেখনি আমায়।
তোমার অপরুপ মোহে,
বুকেতে তোলপাড় শুধু তোমার জন্য করে গেল আজীবন।
তুমি শুধু চাইলে না ফিরে মোহময়ী।

ভালোবাসি

যতবার তোমার সাথে দেখা হয়,
মনেমনে ভাবি ,বলি,
”ভালোবাসি” ।
তোমার চোখে, তোমার ঠোঁটে,
তোমার ওই রক্তিম দু’গালে,
মনেহয় একটু আদর করি
আর বলি কানেমুখে,
”ভালোবাসি” ।

তোমার মোহমায়ায় আমি এতটাই আবিষ্ট যে,
দিকহারা নীহারিকার মতো,
ছুটে যাবো যখন তখন
তোমার কক্ষপথে।
তখন আমায় সস্নেহে ধরবে তো ?
দু’বাহু প্রসারিত করে?

যদি ধরতে না পারো,তাতেও অসুবিধা নেই কোন।
শুধু ঠেঁটে মৃদু কাঁপন তুলে বললেই হবে,
”ভালোবাসি” ।

যে কথাটি শত চেষ্টাতে আমি বলতে পারিনি,
মুখ ফুটে,তুমি বললেই হবে।
বলবেতো, ”ভালোবাসি” ।

ভদ্রলোক

উঠানে বসে নতুন চুলায়,
মা ভাজছে খই।
খোকার বায়না সাথে চাই,
টক মিষ্টি দই।

দই তো হলো, এবার তবে,
একটু মিষ্টি হোক।
খোকা খেয়ে ঠান্ডা হবে,
দেখাবে ভদ্রলোক।