যেখানে উড়ে আকাশে
শঙ্খ শকুনের দল,
সেখানে নাহয় দিব ছুঁড়ে
এক মুঠো সফেদ মেঘ ফুল।
.
লিওনিদোভিচ ঘুমিয়ে থাকুক
ভিজুক ওষ্ঠ অগ্নি সরাবে,
ত্রিদিব মোহে ডুবুক পৃথিবী
শব্দান্ধের তাতে কী যায় আসে?
.
চলুক হরণ রাম রাবনে
সীতার তাতে কী দায় আছে,
ভাসুক কলম লোহিত জলে
হতাশা বাড়ে যে মিথ্যা আশ্বাসে।
ট্যাগ আর্কাইভঃ রোমেল আজিজ এর কবিতা
অচিন শহর
রংচটা ধূসর অচিন এ’শহরের
অসংখ্য বিবর্ণ দেয়ালজুড়ে,
হয়তোবা রয়েছে লেখা
হাজারো অদৃশ্য লাইনের
পঙ্কিলতার নির্মম ইতিহাস।
ডাস্টবিন উপচেপড়া ময়লা
ঢাকনাহীন ম্যানহোল,
মানুষ, মানুষ আর কোলাহল
চলে অবিশ্রান্ত, অবিরাম।
এসব নিয়েই শাসক শোষিতের
মিথ্যায় ভরা অভিশপ্ত এ’শহর।
অথচ আমাদের গ্রামটা ছিল
ঐতিহ্যের সমাহারে ভরপুর,
বর্ষায় শাপলা শালুক
শীতের তালপুকুরের ঘাট,
ভোরের একেলা জলফড়িং।
গল্পের মতো শৈশব কৈশোর,
জোছনার মতো উৎসব
হেমন্তের পাকা ধান,
সবই আজ বিস্মৃত ম্লান
শহুরে কুহকের টানে।
সবই আজ নিষ্প্রাণ
কাছাকাছি থেকেও,
দেয়ালের এপাশ-ওপাশে…
অপাংক্তেয়
শেষ যে উল্কাটা খসে পড়লো,
সে পথে এখনো খুঁজলে পাবে
আমাদের পায়ের ছাপ।
.
হয়তোবা এ কয়দিনে
শীতের কিছু ঝরা পাতা,
শিমুলের বিচ্ছিন্ন তুলো
অথবা বন মোরগের
পাখার ঝাপটার ধূলো,
দিয়েছ ঢেকে ছাপগুলো।
ধূলোয় পাতায়
যায় ঢেকে স্মৃতি গুলো।
.
অভিমান অভিযোগে
হারায় নিঃসংগ সময়,
কাটে দীর্ঘ রাত্রির পরে
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিহীন
দীর্ঘ এক একটা দিন।
কাটে দীর্ঘ দিনের পরে
একেকটা নির্জন রাত্রি
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিহীন।
কল্পিত সুখের ভ্রম
শব্দের গায়ে মরীচিকা পড়ছে,
কৃষ্ণপক্ষের ঝরে যাওয়া উল্কার মতো
ক্ষয়ে যাচ্ছে শব্দ গুলো,
আমার অলেখা কবিতার।
ছন্দ ব্যাকরণ পড়েছিলাম স্কুলে,
সেই যে কবে !
যে বছর যমুনা সেতু হলো
তার আগে থেকেই জানতাম
দীর্ঘতম শুধু সেতুই হবে,
সম্পর্ক নয়।
কেউ বাস্তবতাকে সঙ্গী করে
যায় চলে অবেলায়,
কেউবা আবার দেয় ধোঁকা
দিন অথবা রাতে,
তাতে তার আর
কিইবা আসে যায় ?
গোপন রেখে
মনের অভিলাষ,
কেন যে দেয় তারা
মিথ্যা আশ্বাস ?
প্রণয় কিংবা প্রশ্রয়
যায় ডুবে সব,
কল্পিত সুখের আশে ;
নিরাপদ ভবিষ্যৎ নামক এক
কুহকের পোতাশ্রয়ে …
মানুষের গল্প -৮
হোক সাদা কিংবা কালো;
রঙে কী বা যায় আসে !
হাসির পেছনে ছুঁরির ফলা
লোভীরাই যে পুঁড়ে
আত্ম অনলে শেষে।
শান্তির শপথে পায়রা পুষে;
অহংকারী কি পায়,
শান্তি অবশেষে ???
নিরঞ্জনের না বলা কথা – ২৫
মাধ্যমিক শেষেই আমাদের সুতো
ছেঁড়ার গল্পটা শুরু, কেউ মফস্বলে
কেউ শহরে এভাবে বিচ্ছিন্ন আমরা
কাটা পড়া ঘুড়ির মতোন।
ঈদ পূঁজোয় ক্ষনিকের হৈ হুল্লোড়
ছুটির শেষে অলিকপানে দৌড়,
এভাবে বয়ে চলা সময়ের মাঝেও
কেউ কেউ কারোতে মগ্ন বিভোর।
কিছু সুতো যায় ছিঁড়ে
আবার কেউ কেউ সেই সুতোয়
রং মেখে স্বপ্নের জাল বুনে।
তাই হয়তো কখনো নিরঞ্জনকে
আমরা আশাহত হতে দেখিনি,
বিপাশার তাচ্ছিল্য, বাঁকা হাসি
সবই মিশে যেতো নির্লিপ্ততায়
একাকী বুনে যাওয়া জালে
শীত শেষে
এক শিমুল রাঙা লালচে বিকেলে বললাম,
” জাল বুনতে শেখার আগে
জাল মারা শিখতে হয়,
তা কি জানিস নিরঞ্জন? ”
চোখ না তুলেই
শান্ত স্বরে শুধু বলল,
” আগে সাঁতার শিখে
কেউ কি জলে নামে রে অরুণ,
জলে নেমেই যে তবে
পরে সাঁতার শিখতে হয়……..
নগর জীবন
সীমাহীন নিয়ে সীমাবদ্ধতা নিয়ে
অলীক পানে আমাদের ছুটে চলা,
ইটের উপর ইট গেঁথে যে নগর গড়ে উঠে
সেই নাগরিক দেয়ালের পেছনেও
কিছু না কিছু, না বলা গল্প থাকে।
সুতো ছিঁড়ে গড়িয়ে যাওয়া শার্টের বোতাম
খাটের নিচে খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে
প্রায় ভুলে যাওয়া হাজার মলিন বিস্মৃত স্মৃতি।
চুলের ক্লিপ, বিবর্ন টিপ, মরচে পড়া টাই পিন,
প্রতিটা বস্তুই একেকটা গল্প হয়ে সামনে দাঁড়ায়।
জীবনের ব্যাস্ততায় আমরা ভুলে যাই
আমাদের দেয়ালেও দু ‘একটা জানালা আছে।
সেই জানালা দিয়ে দেখা যায়
শুক্লপক্ষের রাতে আকাশভরা জোছনা,
শ্রাবণ রাতের ঘন বর্ষনে হাত বাড়িয়ে
ছোঁয়া যায় বৃষ্টির শীতল জল।
ব্যাস্ততার মিথ্যা অভিনয়ে ডুবে
সপ্তাহান্তে চালাই বুনো উল্লাস।
ভুলে যাই দেয়ালের ওপাশেও
অচেনা হাজার মানুষ আছে।
সেই মানুষগুলোর চোখেও
আছে সীমাহীন অদেখা স্বপ্ন…
দূরে কোথাও
মধ্যরাতে দক্ষিণ জানালা
হয়ে যায় কালের আয়না,
রাস্তা নেড়ি কুকুরের গর্জনে
ঢেকে যায় লঞ্চের হুইসেল।
জ্বলে লাল নীল হলুদ বাতি
রেন্টাল, কুইক রেন্টাল,
পাওয়ার হাউজের উপর।
ম্রিয়মান উদাস তারা ভাসে,
সপ্তর্ষিহীন আঁধার আকাশে।
গলায় নামে তরল আগুন
রক্ত রংয়ে মগজ ঘোলাটে
ফুসফুস ভরা ধোঁয়ার বিষে,
মাথার ভিতর ঘুরছে যেন –
দূরে কোথাও
কে হাসে, কে হাসে…
মাধবীলতা
মাধবীলতা বেড়ে উঠছিল
সে-সময়, সকাল – বিকেল।
এ-পাড়া ও-পাড়া বেড়াতে বেড়াতে
উড়তে উড়তে দূরে দূরে
জড়িয়ে গিয়েছিল, অদৃশ্য সুতোয়।
যেদিন মাকড়সা এলো
বুনলো নতুন জাল
পুরনো সুতোয়;
সেদিন থেকে দিন ফুরালো-
ফিরলো না আর সুদিন
মাধবীলতার…
কত দিন যে সমুদ্র দেখিনা
তুই কী জানিস তোর দু’চোখে
আলো আঁধার খেলা করে,
খেলা করে মৌনতার বিষণ্ণ রঙ।
মন খারাপের দিনে
আমি আকাশ দেখিনা,
দেখি অস্থির চোখের
অফুরান কৌতুহল।
জানিস অনুসৃতা,
কত দিনে যে আমি
সমুদ্র দেখিনা,
সমুদ্র যে গিয়েছে ডুবে
তোর দু’চোখের অতল…
নিরঞ্জনের না বলা কথা – ২৪
পথ কখনো সরল রেখার মতো চলে না,
সরলরেখার মত চললে নিরঞ্জন বিপাশার
আর না বলা কোন কথা থাকতো না।
শীত গ্রীষ্ম বর্ষার দিনগুলো
তাই কেটে যেতো নিমিষেই।
এক শিউলী ঝরা হিমের সকালে
জিজ্ঞেস করেছিলাম –
“চাইলেই যদি পাওয়া যেতো
সেই পাওয়ার তো কোন মূল্য নেই,
বিপাশা নামক অনিশ্চয়তার পেছনে
আর কত ছুটবি তুই নিরঞ্জন? ”
সদা গম্ভীর নিরঞ্জন,
ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি
রেখে দিয়ে শুধু বললো –
“অনিশ্চয়তার কারনেই
জীবন এতো কঠিন,
অনিশ্চয়তার কারনেই
জীবন এতো সুন্দর …”
থার্মোমিটার
পারদের ঘর যখন একশো দুই ছুঁই ছুঁই,
এখান থেকে আমার ভেসে চলা শুরু।
মহাকর্ষের নিয়ম ভেঙে,
তখন আলোর বেগে ছুটে চলা…
নিউরনে নিউরনে হাজার
আলোক বাতি…
লাল-নীল-হলুদ-সবুজ
নীল-লাল-সবুজ-হলুদ,
চারদিক রিমঝিম
ঝিমঝিম রিমঝিম।
চোখে ভাসে স্কুলের বেঞ্চ
চক -ডাস্টার, পাটিগণিত।
স্রোতের অনুকূল প্রতিকূল ছাপিয়ে
কানে বাজে ছলাৎ ছলাৎ…
সেখান থেকেই আমার ডুবে যাওয়া শুরু
পারদের ঘর এখন একশো চার ছুঁই ছুঁই…
নিরঞ্জনের না বলা কথা – ২৩
শীতের রাতে রসের হাঁড়ি
কিংবা গ্রীষ্মে আম কাঁঠাল,
চুরি করলেও আমরা কখনো
ঘরের খেয়ে বনের মোষ
তাড়ানোর মতো ছিলাম না।
বিপাশার কল্যাণে নিরঞ্জন ছিল
বয়সের তুলনায় অতি গম্ভীর।
মাঝ কৈশোরে আমাকেও
অর্ধেক বুড়ো বানিয়ে দিয়েছিল।
এর মাঝেই একরাতে বিশু,
সৌমেন আমি মিলে দিলাম
বিপাশার বাড়িতে হানা।
ভূড়ি ভোজন শেষে
মুরগির হাড় সব ফেলেছিলাম
নিরঞ্জনের ঘরের পেছনে।
সন্ধ্যায় পারমানবিক রাগ নিয়ে
ফেটে পড়লো আমাদের নিরঞ্জন,
কপালের বাঁ দিকের কাটা দাগটা
দেখলে এখনো মনে হয়,
আমরা বোধহয় সেদিন শুরু
বিপাশার শখের মুরগি খাইনি,
খেয়ে ফেলেছিলাম নিরঞ্জনের
হৃদয় জড়ানো বাঁ পাশের পাঁজর
চার দেয়াল
বাম দিকের নীল দেয়ালটা
শোনায় আমায় দুঃখে গাঁথা
অন্ধকার রাত্রিগুলোর কথা।
ডান দিকের সবুজ দেয়ালটা
মনে করায় বর্ষায় সিক্ত
শালবনের নির্জনতায়
অচিন কুহকের টানে
একাকী হারিয়ে যাওয়া।
পেছনের হলুদ দেয়ালটা
স্বাক্ষী হয়ে আছে দাড়িয়ে,
জোনাকজ্বলা শীত রাত
আর মেঘলা জোছনার মাঝে।
সামনের লাল দেয়ালটা বলে
গোধূলীলগ্নের রক্তাভ আকাশের
পরাজিত সূর্যটার কথা,
যেকিনা তোর মতোই আলো হয়ে
রাখে ঘিরে সারাবেলা সংগোপনে,
আবার তোর মতোই অবেলায়
ডুব দিয়ে হৃদয় পোড়ায়,
রেখে যায় অনিশেষ
স্মৃতির পোড়া ছাই।
বদলে যাওয়া সময়
মাছরাঙাদের জীবনও বদলে গেছে অসময়ে,
দেহ বিচ্ছিন্ন ঝলমলে রঙিন পালকগুলোতে
এখন লেগে আছে রক্তের কালচে দাগ।
সময় দিয়েছে বদলে
ঘাস ফড়িংয়েরও জীবন,
যেভাবে পাল্টে দিয়েছে
নদী -নারী -বন!
সময় বহমান, নদী প্রবাহমান;
বহমান -প্রবাহমানের দোলাচলে
গাংচিল উড়ে যে নদীর বুকে,
সেই নদীও বদলায় পথ
ক্ষুদ্র চরের বাধার কাছে।
ক্ষুব্ধ নদীও ব্যার্থ হৃদয়ে বদলায় পথ,
ভেঙে দিয়ে লোকালয় ;
বদলিয়ে দেয় তোরই মতন
অনুশোচনায় আক্রান্ত হাজার জীবন।