দাউদুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

শূন্য স্থানের বাক্যটি

150

দুঃখ খাচ্ছি
শোক খাচ্ছি, চোখের জলে মেটাচ্ছি সীমাহীন তৃষ্ণা
রাগ খাচ্ছি
ক্রোধ খাচ্ছি, বুকের আগুনে শোধ করছি হৃদয়ের ঋণ।

কৃষ্ণ-কালো আঁধার খাচ্ছি
উষ্ণ-দাহের খরা খাচ্ছি, জখমে ভরা বুকের কষ্ট খাচ্ছি
দীর্ঘশ্বাসের শোক খাচ্ছি
বেদনার শ্লোক বুনে মেটাচ্ছি সমবেদনার মলিন সান্ত্বনা।

একাকীত্বের নিষ্ঠ রাতে হাত পেতেছি আকুতির সীমাহীন মুদ্রায়
ব্যাকুল চিত্তে গোগ্রাসে গিলেছি পাত্র অপাত্রে ভরা বিষ
প্রাণান্ত মিনতির নির্বাক আবেদন, শুনতে পায়নি কেউ
অবলার এই বাঁচার রোদন!
মরতে মরতে বেঁচে যাই দুর্ভাগ্যের আরেকটি কৃপায়
পুড়তে পুড়তে ছাই হবার বাকী যখন-
আলোক বৃন্তে তখন কোন স্বপন উঁকি দিয়ে যায়!

অপেক্ষার ত্যক্ত তিক্ততা খাচ্ছি, খাচ্ছি-
বিষাদের নীলাভ সন্ধ্যায় কামিনীর মো মো গন্ধের উপহাস
বকুল তলায় এক খানা ভেজা কাক
ফিস ফিস করে সুক্ষ্ণ ভাষায় বলে যায়-
অবাক করা একটি বাক্য!”…………” সর্বনাশ!

তিমিরাবৃত আত্মা

33

হে নিরঞ্জন
হে প্রভাকর
আমার অন্তর তিমিরাবৃত
বিক্ষিপ্ত… নিষ্প্রভ, ক্ষত বিক্ষত!..
গ্রন্থিতে ডাইনীদের ফুৎকার
মনোমদ আচ্ছন্ন পাপাচারে
তুমি মহান
মহা পবিত্র, অবিনশ্বর
আমাকে আলো দাও
আমার ধাঁধাঁর্চ্ছন্ন সফরে
চাঁদের উজ্জ্বলতা আর তারকারাজিদের পাথেয় করো ;
হে আমার প্রতিপালক
আমার ইচ্ছাকে নিভৃত করি তোমার ইচ্ছার সাধনে
উপেক্ষা করি বিস্মৃতির ডাক
মনের গভীরে মন পোড়া লাভা
নির্গত করি অশ্রুত স্রোতে… নির্বাক অনিমেখে
অরণ্যের সংসারে একাত্ম হই তোমারই জন্যে!
তুমি নির্মল করো
মঙ্গল ঊষার স্বর্ণোজ্জ্বল সকালে
আমার আত্মাকে দীপ্তমান করো
আমি কায়মনো কৃতজ্ঞতায়… মহোচ্ছর্ন হই
নব নব মহিমায়….!

.
২৬/৩/২৩

পলাশ সম্ভোগ

330

রূপে তোর মহামায়া
নেশা ভরা ঘোর চোখে বাল্মীকি রোদ জ্বলে
মাতাল করা গন্ধে বিভোর আমি-
নিজেকে হারাই তোর উথাল পাতাল চুলে।

তাপে উত্তাপে হই উদগ্রীব বিরহী বিলাপে
বুকে তোর ধ্রুপদী সকাল, আড়ালের হিমে কাঁপে;
স্বপ্ন ফোটা উচ্ছ্বাসে
কমুদীনি সুবাস ভাসে প্রজাপতির বাগে, আগলের ঝাঁপে
বর্ণাঢ্য ফাগুন; লাজ লজ্জা ভুলে, মেতে থাকে পলাশী সম্ভোগে!

দ্বিগুণ মন্থনে উত্থিত আগুন
যদিও বুকে ধরে রেখেছিস বসন্তের একান্ত কোমলতা,
তোর অন্তরে বেঁধেছিস পূজার ঘণ্টা; প্রতিমার চোখে
সীমাহীন পিয়াস জাগে!
আমার চেয়ে বেশী কে আর জানে তা?

অবিনশ্বর সুর

out.ll

সুর সম্রাজ্ঞী শ্রদ্ধেয়া লতা মুঙ্গেশকরের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি!…

সময়ের বাঁধন চিড়ে
উড়ে গেলো
আমাদের চির বসন্তের কোকিল
অনন্তের অরণ্য উদ্যানে… চির জ্যোত্স্নার দেশে
যেখানে
বাতাসের শনশন তরঙ্গে
ঘুরে বেড়ায়… সা রে গা মা পা দা নি সা….
কোকিলা কণ্ঠে… নিবেদিত ভালবাসা!
জানি
মুক্ত বিহঙ্গে ফিরবে আবার হৃদয় নিংড়ানো সুর
মধুর ডাকে ভাঙবে নিদ্রা
সুষমা প্রভাতে
ধূমায়িত চায়ের কাপে!
মোহন জ্যোতস্নায় হিম ঝরা রাতের নীড়ে
দেখা হবে ছন্দময় শিশির প্রপাতে
রূপোলী চাঁদের অভিসারে..
উঠবে
শিল্পের নন্দিত জয়োধ্বনি
সমবেত কণ্ঠে গাইবে” প্রেম একবারই এসেছিল নিরবে….”
গেয়েই যাবে পৃথিবী… অবিনশ্বর সুরে!..

কষ্টের অসহযোগ

002_n

আফসোস!
যদি একবার বিশ্বাস করতে
যদি একবার হাত বাড়িয়ে দেখতে…
কেন বুঝোনি?
তুষের অনল নিভৃতে জ্বলে
জ্বলতে
জ্বলতে
পুড়তে
পুড়তে
ছাই হয়ে উড়তে উড়তে
আমি
সুযোগ পাইনি তোমাকে বোঝাতে!

আফসোস!
যদি একবার পড়তে
সহস্র কবিতার যে কোন একটি!
তবে-
নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে পারতে;
বুঝতে
আমার অজস্র রাত… বিনিদ্র যন্ত্রণা…
এক একটি মুহূর্ত
ছুঁতে পারতে-
বেদনা বিগলিত কান্না আর সম্যক উপহাস!…

আমার মত নিরীহ কবির কি করার থাকে?
একটা দীর্ঘশ্বাস!
আর তেপান্তরে মিলিয়ে যাওয়া অবধি
যে যায় তার দিকে চেয়ে থাকা;
যতক্ষণ না থামছে অন্তঃপুরের ধড়পড়…
অশ্রু গড়া দাগ
তারপর…..
বিহ্বল চিত্তে এক আকাশ গ্লানি আকণ্ঠ হতে হতে বরণ করি নিত্যকার সর্বনাশ!

….. আর কুয়াশার ধোঁয়াশায় ঘিরে উঠা নিকষ অন্ধকার, আরাধ্য দুর্ভোগ
অদৃষ্টের মর্মরে চলতে থাকে কষ্টের অসহযোগ!

.
২/২/১৪ (প্রথম রচনাকাল)

সুখ মগ্ন অন্তর্যামী

325

নাই হলাম তোমাদের মত সুশীল
তথাকথিত ভদ্র,মননে অশ্লীল
আর নিচ্ছিদ্র মুখোশ ধারণে-
নাইবা হলাম লোলুপ অন্ধ!
আমার দারিদ্র আমারই থাক,
চাইনা সেই ধন, অর্থকড়ি
বিগলিত মনুষ্যত্বের বিনিময়ে;
কে কবে হয়েছে মহান
আমার এক চারণ কবিত্ব সমান!

জীবনের দামে কিনেছি স্বপন,
সহস্র রজনীর বিসর্জনে-
অর্জন করেছি আমার দুঃখী পদাবলীর জয়
নাইবা পেলাম রাজ সিংহাসন, যেখানে
মিথ্যের ছড়াছড়ি; উলঙ্গ নৃত্যের প্রলয়!
আমার পদ্য আমার অহংকার
সদ্য ফোটা করবীর মতন নৈবদ্য অলংকার,
তোরা থাক তোদের ক্ষুধা,মদ্য দুর্গে
রোজকার প্রেমিক বদলে; লাশ কাটার মর্গে!
লাশই তো!
মন দহনের উন্মত্ত বিভীষিকাকে
লাশের সঙ্গে তুলনা করলেও কম হয়!

আমার স্বর্গ আমার বুকে
হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ উজাড় করে-
যে নৈবদ্যে নিমগ্ন আমি,
আলোর সুরম্য পথ বেয়ে, পেয়ে যাই
সুখ মগ্ন অন্তর্যামী।

অমিত যাতনা

32

যে লহমায়
নিবিষ্ট আমার সমগ্র জীবন
যে হাসিতে নিরাময় ব্যাধি
যেই রমণীর চোখের জলে –
বুকে নামে বাণ,
উথাল পাতাল…
যার একটি চুম্বনে বেঁচে রই আমি
প্রাণান্ত প্রেমে…অনন্ত কাল ;
তারে আমি দিইনি কিছুই! …
এক চোখে রেখেছি হিজল
অন্য চোখে তমাল!
এক ধ্যানে ঘুমাক পিয়াসুর মন
অন্তরীপে উঠে ঝড়- অন্য যাতনে
পোড়ে মন… হাল – বেহাল!

বিমূর্ত সকাল

322

এই যে
এতো বাঁচার নেশা,
সুখের আকুতি,
জীবনের উন্মাদনা…
মগ্ন জুয়ার আসর, জেতার সম্ভাবনা…
প্রার্থনার গভীরে গুপ্ত প্রার্থনা
এত প্রাপ্তি-
এত দেনা
এত মোহ, মৌজ- মাস্তি;
ভোগের বাহানা!

এই যে
এতো হাসি.. বিনয়,
এই অভিনয়, রাগ- অনুরাগ, গড়িমসি..
উত্তর দেবে-
মৃত্যুর মোহনায় দু’ফোটা নীরব অশ্রু
অথবা রক্ত মিশ্রিত ঘাম!
কেউ না কেউ। কিংবা সবাই…
গোপনে বলবে- আসলে
“লোকটা কে ভালবাসতাম”!…
একটি বিমূর্ত সকাল
ধুয়ে যাবে বৃষ্টির শীতল জলে….

ভাষারা সব ফুল হয়ে যায়

Poli

ভাষা
রুধিরা স্রোতে
ভেসে যাওয়া প্রাচীন ভালবাসা!
মাতৃ জঠরে জন্মানো প্রাণের লিপিকা
নিঃশ্বাসে
প্রশ্বাসে
চেতনায়
আদর্শে
মিশে থাকা অনুপ্রাণন
অ আ ক খ…
অক্ষরের জঠরে অক্ষরের ধ্বনি!…
বুলবুলির বোলে
কোকিলের কুহু সুরে
মাতৃকার মাদল;
কে না জানে-
বাদল দিনে
ঝিরিঝিরি বরিষণে
টিনের ছালে
পাতায় পাতায় … গাছের শাখায় …
জেগে উঠে একটি আন্দোলন
মাতৃভাষা বাংলা চাই
তোমার ভাষা আমার ভাষা
বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা…..

বন্দুকের নল থেকে
লৌহ মোড়ানো বুট থেকে
ফুলের কলি থেকে চিনিয়ে নেয়া দীর্ঘশ্বাস থেকে
ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি গুঞ্জন তোলে;
ভিন ভাষায়
প্রকাশ করা যায় না এমন সব আত্মনিনাদ
অবলীলায় রচিয়ে যায় মহাকাব্য
নির্ভিকতার অদম্য বীর
রফিক
সালাম
জব্বার
শফিক
পিতৃত্বের অধিকারে আসে একুশে গ্রন্থমেলায়
প্রতি বছর জন্ম দিয়ে যায় অসংখ্য কবি-র!
গভীর শ্রদ্ধায়
গভীর ভালবাসায়
লাখো ভাষাপ্রেমী মানুষ
স্রোতের মতো নেমে আসে
প্রভাতফেরিতে
কৃতজ্ঞচিত্তে, ফুলেল জলসায়
একুশ এলে
এভাবেই
ভাষারা সব ফুল হয়ে যায়।
.

ভাষারা সব ফুল হয়ে যায় // দাউদুল ইসলাম ২১/২/২৩

আমি জন্মেছিলাম রাহু যুগের কবি হতে

32

আমি জন্মেছিলাম মাঘের হাড় কাঁপানো শীতের সন্ধ্যায়
কুয়াশা ঘেরা এক ঝাঁক অতিথি পাখির কিচির মিছির
আর মেঘ সাদৃশ্য বৃক্ষের ডগায় জোনাকির অস্থিরতায়,
শিশির ধোয়া জমিন এর সোঁদা গন্ধ মাখা হিমে
নীল হয়ে উঠা আমার পীযুষ মুখ; পরম স্নেহে
মাতৃত্বের খোমে পেয়েছিলাম প্রথম আমৃত্যু সুখ।

অতঃপর ধীরে ধীরে গভীর রাতের সাক্ষাত
নৈশব্দের জঠরে স্পন্দিত পৃথিবীর ঈষৎ দীর্ঘশ্বাস!
ধ্যান মগ্ন ঋষির নির্লিপ্ত সচেতনতা, নিকষ অন্ধকার,
চাপা কান্নার মত বিলাপ করা বৃক্ষের পাতা, ধাবমান রুহ্‌ ধ্বনি
একে একে চিনতে থাকি মর্মগাঁথা সৃষ্টি; জগত সংসার।
অগণিত চোখের দৃষ্টি রেখা মাপতে মাপতে অদম্য এক স্রোতে
প্রবেশ করি বৃত্তাকার জীবন গহ্বরে ……

অথচ আমি জন্মেছিলাম রাহু যুগের কবি হতে
ভ্রহ্মাণ্ডের গোপন কারাগারে বন্দি দশা হতে
আজন্ম শব্দ গুলো মুক্ত করতে; পাখীদের ঠোঁটে
কিংবা কোন বাউলের গানে-
যেই শব্দ, যেই সুর,ধ্বনিত হয়নি আজো!

আমি জন্মেছিলাম ছিলাম সেই নদীর স্রোত হতে
কৃষ্ণচূড়ার মতো মদিরা হতে হতে যেই নদী
হারিয়েছিলো তার অধরা যৌবন;
মিথ পোড়া দহনে নিজেকে জ্বালিয়ে
এসেছিলাম আমি, জাগাতে সেই নাড়িস্পন্দন!

মৌন পাথর

3208

অনন্তকাল গুনেছি প্রহর
প্রতিক্ষার প্রদীপ জ্বেলে,
অনন্তকাল পুড়েছে অন্তর
বয়েছে গেছে নদী নিরবধি
বুকের বরফ গলে!….

আসেনি ফিরে প্রাণ সুজন
মেঘের কৈলাশ
রয়েছে দাঁড়িয়ে
একা
বিস্তৃত মৌন পাথর।

ভালোবাসাই ধর্ম!…

329

এক জন বিশ্বাসী মানুষের আচার আচরণ
আর এক জন অবিশ্বাসীর আচার আচরণে পার্থক্য থাকবে, থাকে।
আচার আচরণে সুশীলতা
কিংবা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তুষের আগুনের মত শক্তি শালী; আপনি যতোই ধামাচাপা দিতে চাইবেন সে ততোই শক্তি পাবে।
তুষের আগুন যখন মিন মিন করে তখনো প্রজ্বলিত
আর যখন দাউ দাউ করে তখনো প্রজ্বলিত; পার্থক্য হচ্ছে একটা দৃশ্যমান- আরেক টা অদৃশ্য!
বিখ্যাত সাধক মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রা:
বলেছেন –
ভালোবাসা হল সুস্থ থাকার উপায়। ভালোবাসা হলো শক্তি। ভালোবাসা হল সবকিছু বদলে দেওয়ার জাদু। ভালোবাসা হল স্বর্গীয় সুখ দেখার আয়না।।। এস আবারো ভালোবাসায় নিমগ্ন হই। এসো। ভালোবাসায় এই পৃথিবীর সমস্ত ধূলিকণা। চকচকে সোনায় রূপান্তর করি।
যখন কাউকে ঠকাতে যাবেন, বা ঠকাবেন
মনে রাখবেন তাকে ঠকিয়ে আপনি হয়ত একটা কিছু জিতে নিচ্ছেন
কিন্তু যা হারাচ্ছেন তা হচ্ছে আপনার আপন সত্তা;
আর আপন সত্তা যখন হারিয়ে যায় তখন দুনিয়ার কিছুই আপন থাকে না।
পক্ষান্তরে যিনি ঠকছেন
তিনি হয়তো বিশেষ বিজয় বা বিশেষ অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাতেও তিনি সন্তুষ্ট!
কারণ তিনি আপনাকে বিশ্বাস করেছিল
আপনার উপর আস্থা ও ভালোবাসায় নিজেকে লীন করেছেন।

ভালোবাসা একটা ধর্ম!
পরম ধর্ম!
এই ধর্মের একটা আদর্শ হচ্ছে দুনিয়ার সবার কাছে সে সুপ্ত, অথবা গুপ্ত থাকলেও
যেই মানুষের ভালোবাসা সে লালন করে তার কাছে সে স্বচ্ছ, পরিষ্কার!
দু’জনের দু’টি মন এক-বৃন্তে লীন না হলে কখনো ভালোবাসা তার স্বরূপ মর্যাদা লাভ করে না।
অন্য সবার কাছে আপনি যা-ই হওন
এক জনের কাছে আপনি চির উন্নত মম শির এর মত
যদি আপনি তাঁকে পায়ের ধুলো ভাবেন, কিংবা আর সবার মত একি দৃষ্টিভঙ্গি তে দেখেন-
তাতে তার কিছু করার নাই
কিন্তু আপনাকে সে যেই স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন, আপনার ক্ষীণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আপনি তার দেয়া সেই মর্যাদা ,
সেই স্থানের অবমাননা করলেন।

এই যে বিশ্বাস
এই যে ভালোবাসা
মর্যাদা
সম্মান
এই সব ঘিরে গড়ে উঠা যেই স্বপ্নের স্থাপত্য
ধীরে ধীরে এই স্থাপত্য নড়বড়ে হয়ে উঠে! ভঙ্গুর হয়ে উঠে!
যার ফলে একটি প্রলয় একটি দুর্যোগের জন্ম নেয় যার প্রভাব শুধু আপনার একার অথবা সংশ্লিষ্ট সেই মানুষ টার উপর পড়ে না,
বরং এর প্রভাব পড়ে আশা পাশের চারদিকে।
একটা নেতিবাচক অনুরণন এর প্রভাব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।

মানুষ তখনি সব ভুলে ভুল পথে পা বাড়ায় যখন সে ঠকতে ঠকতে নিজের উপর আর মায়া থাকে না।
যখন নিজের উপর মায়া থাকে না তখন সে ভুলে যায় তার ব্যক্তিত্ব, তার স্ট্যাটাস …… আনুষঙ্গিক সব।

সুতরাং নিজেদের মধ্যে যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছতা রাখুন।
কারণ ভুলে যাবেন না
আপনি একা নয়।।

নির্ভার দাস বাজার

318

….হুম
নিকুচি করে এলাম তোদের বুর্জুয়া জোট
থাক তোরা মাংসের দরকষাকষিতে
মেকি হাসির মাখামাখিতে
আমি তো সেই কবেই
মাগনা বিক্রি করে দিয়েছি ঝুড়ির সব বন্ধুপ্রীতি!..

আদতে
আমি তা ভিক্ষা দিয়েছি
কি হবে এই মিথ্যের বেসাতি আঁকড়ে
যেখানে
মুত্রের দামে বিক্রি হয় বিবেকের মনুষ্যত্ব!
প্রেমের নামে
বিক্রি হয় নির্মম দাসত্ব,
মুনাফা অর্জনে বিকোয় বন্ধুত্ব
বিশ্বাসের সস্তা বলিদানে!…

নিগূঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত হীরক কণা
অবলীলায় মেনে নেয় নির্বাক-ধূসর শূন্যতা
জীবনের ক্ষণে ক্ষণে জড়িয়ে থাকা লাজুকলতা
ছলনাটা ভালোই আয়ত্ত করতে জানে,
জানে উত্তাল ঢেউ*র ফণা
কেমন করে ছোবল মারলে ছড়াবে বিষ মনে প্রাণে!

…. এভাবে একদিন মৃত্যু ঘটে সমস্ত দাবীর!…
কবির অন্তরে আগুনের গনগনে দহন
বহুকাল আগে
খেলার ছলে অবলীলায় দিয়েছি যেই অঞ্জলি
পূতপবিত্র সেই আত্মাকে
আজ তোরা টেনিস বলের মতো
দক্ষ হাতে ঘুরাচ্ছিস অবিরাম
এ-প্রান্ত হতে ও-প্রান্তে.….

আমি নির্বোধ বলে-
জেনেও থেকেছি না জানায়, থেকেছি নীরবে
নিভৃতের ক্রন্দনে…
শুনেছি পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম ভাঙনের আর্তনাদ
দেখেছি – প্রান্তর জুড়ে উন্মাদ রঙ্গ তামাশা
জমিন হতে অন্তরীক্ষ নির্ভার দাস বাজার
বিকৃত উল্লাসে নির্বিবাদে আবাদ হচ্ছে
সর্বনাশা অহম বৃক্ষ!

জন্মতিথি

327

আত্মা হে
হে প্রিয় আত্মা আমার
তুমি কি খুঁজে পেয়েছ আমাকে?
আমি তবে কেন পাইনি তোমায়
আমার নিঃশ্বাসের নিবিড়ে থেকেও
কেন যোজন যোজন দূরত্ব তোমাতে আমাতে!

কেন এতো হাহাকার
সহিংসতা
নীরব স্রোতে ভেসে যাওয়া কান্নার শ্লোক
পুলক দুলক ছেদ করে
কোথা হতে আসে এতো দীর্ঘশ্বাস
অর্ঘ্য পোড়া উত্তাপ!
আত্মা হে
আমি কি সে-ই?
যে মাঘী বিকেলের ধোয়াশার ভেলা চড়ে
একফোঁটা শীতের মতো টুপ করে ঝরেছিলেম
পাতা ঝরা বৃক্ষের কর্কশ শরীরে!

নাকি
আদৌ আমি যুদ্ধরত একাকী সৈনিক
যার কদমে কদমে পেচিয়ে আছে গুপ্ত আততায়ী
যার বেদনার্ত চিৎকার
পৃথিবীর মায়া মোহে নামিয়েছে সমগ্র অন্ধকার!..
কিন্তু সেখানে তো
নির্মল হাসিও আর একবিন্দু আলোই যথেষ্ট!

শব্দ বোধন দিনে
আমি ছুঁয়েছি এই মাটি
ছুঁয়েছি একটি নূরবিন্দু
অথচ
সেই আমি খাঁটি রশ্মি হয়েও
রচনা করেছি- এই মোহগ্রস্ত জীবন!
এই অন্ধকার তাড়া করতে করতে
আমি পৌঁছেছি এক অমৃত শব্দের সামনে
একটি উড়ন্ত পাখি ক্লান্ত চিত্তে মেলে আছে ডানা
বৃক্ষের শাখায় স্পন্দিত দীর্ঘশ্বাস
একটি মায়াকণ্ঠী গান
কুয়াশার দেয়াল ভেদ করে দেখেছি স্ফটিক সকাল!

হে আত্মা
হে আমার প্রিয় আত্মা
এতো ডাকি
শুনো হে… ঘুমাইছো নাকি?

.
১২ই মাঘ
২৫/১/২৩

কোথাও নেই কবি

3259

পরম কষ্ট গুলো নিমেষে ঢেকে ফেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পচিত্র। নীরবে খসে যায় নক্ষত্র। শূন্য আকাশে শ্রান্তি পরিক্রমা, বিরান ক্যানভাসে উঠে আসে উই পোকার ঢল। নেহাতই নগণ্য
কিছু শব্দ- যাকে পুঁজি করে এতকাল বেঁচেছিলো কবি। সংকোচে- নিঃসংকোচে হেসে ছিলো
পল্লবী চাঁদ! হিংসার আগুন- তাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে গেছে।নিঃশেষ হয়ে গেছে সুরভী বাতাস। হঠাৎ… অদ্ভুত এক নির্বাণ জাগে, তির্যক চোখে। মৃত আবেগে। উদ্বিগ্ন আর প্রখর দৃষ্টি আটকে যায় দৈনিক পত্রিকার সাময়িকী পাতায়, লিটল ম্যাগে, অনলাইন পোর্টালে…

আজন্মকাল ধরে যে শব্দবীজ বুনেছি বহু যতন করে, যে অক্ষরে ফুটেছে হৃৎপদ্ম, যে স্বরে
দুলেছে চিত্ত, লুটেছে মায়া- হয়েছে তীর্থ; পবিত্র সে অক্ষর গুলো ভেসে যাচ্ছে নগ্ন জোয়ারে
… উলঙ্গ সাঁতারে!… কোথাও নেই কবি!

কবি নেই কবিতার সন্ধ্যার আসরে। মেলার মাঠে। কাদামাটির প্রান্তরে।ধান সিঁড়ি নদীর তীরে। আমি খুঁজেছি তারে- সাম্য সবুজে, সোঁদা অরণ্যে, নীল অনিলে, গোধূলির বর্ণীলে, জ্যোৎস্নার অভিসারে…
কোথাও নেই কবি-

আশ্চর্যজনক ভাবে ক্ষুধার রাজ্য ছেড়ে, পৃথিবীর কবি’রা পাড়ি জমাচ্ছে- ভোগে গদ্যময়
এক মহাসাগরে!