জাহিদ অনিক এর সকল পোস্ট

জাহিদ অনিক সম্পর্কে

ঝাঁপ দাও হে নক্ষত্র, জাহিদ অনিক ভাল নেই ।

মাতৃত্ব

এই যে তোমাকে ছুঁয়ে আমার নতুন জন্ম হয় রোজ রোজ, তুমি মায়ের মত এক নারী;
এ তোমার নব-মাতৃত্ব!
যুগপৎ এই জন্ম আমার, এ জন্ম তোমার।

তুমি এক প্রেমিকা মাতৃ-জন্ম নাও,
আমি নেই সেই মানবজন্ম; যা পূর্ণ করে তোমার মাতৃ-প্রকৃতি,
যুগপৎ এ মাতৃত্ব তোমার, এ মাতৃত্ব আমার।

(মে ১২, ২০১৯)

অধঃপতন

কখনো দিনের শেষে যখন মনে হয় এসেছে উপযুক্ত সন্ধ্যা –
অসীমে তাকাতে ইচ্ছে হলে চোখ লেগে থাকে আকাশের নীলে;
সমগ্র নীল যেন শোষণ করে নেই নিজের অভ্যন্তরে
যেন নেভী ব্লু জামা গায়ে বহুদিন পরে কেউ এসেছে স্কুলে হাজিরা দিতে।

হঠাৎ তারা খসে যেতে দেখলে-
বুকে হাত চেপে, আঙুল দিয়ে কাটাকুটি করে;
নিপাতিত হওয়া তারার কাছে চাইতে ইচ্ছে করে একটা দুইটা অপূর্ণ চাওয়া;
ইচ্ছে করে কিছু ফরিয়াদ জানাই!
অথচ হায়! দেখ নিয়তি!
কার কাছে চাইব? কোন্ তারার কাছে? যে নিজেই সামলাতে পারে না নিজেকে!

আকাশ হতে অসীম বেগে যে তারাটি আছড়ে পড়ে মর্তের বুকে –
তা’কে দেখে নিজের কথাই ভাবতে বসি;
কী তফাত ও’র আর আমার?
পৃথিবীর বুকে একজনের কেবল হচ্ছে পতন –
আর আমি; নক্ষত্রের’ই সন্তান –
সেই কত আগে আমারও হয়েছে অধঃপতন।

তবুও এমন উপযুক্ত সন্ধ্যাবেলায়-
আরতি থাকে, ধূপের কড়া গন্ধ থাকে-
কাঁসার থালায় বেল পাতা’তে আত্মশুদ্ধির শঙ্কা থাকে।

অস্তিত্ব

মেয়ে আমি তোমার তেমন প্রেমিক নই
যার কাঁধে তুমি হাত রেখে পাবে নির্ভরতা।
আমি তোমার সেই ভালোবাসা নই
যার বুকে মাথা এলিয়ে পাবে পরম প্রশান্তি।
একই মায়ের গর্ভ ভাগাভাগি করে নেয়া আমি তোমার ভাই নই
যা’র সাথে তোমার নাড়ীর বাঁধন।
আমি তোমার পিতার মত নই-
যা’র আঙুল ধরে বেড়ে উঠেছ -পেরিয়েছ ভীত কৈশোর।

আমি তোমার দুঃসময়ের বন্ধু নই
প্রভুর মত স্বামী নই;
তোমার কোমল বাহুতে বাঁধা, মোমে বদ্ধ রূপার রক্ষাকবচ নই-
ভিড়ের মধ্যে আমি তোমার তেমন কেউ নই
যে তোমাকে আগলে রাখবে পাহাড়ের মত;
এমন কোনো শক্তি আমি নই, যে ফেরাবে সব ঝড়-জলোচ্ছ্বাস।

আমি তোমার এমন কেউ-
যা স্পর্শকাতর; যা’কে রেখেছ গোপনে- গভীর সঙ্গোপনে।
আমি সেই দমকা বাতাস-
যা’কে নিয়েছ বুকের প্রকোষ্ঠে নিশ্বাসের সাথে।
আমি তোমার এমন কেউ-
যে চাইবে,
একটা কাঁটা আমার যদি বিঁধে – তোমার পায়েও কিছু রক্ত ঝরুক।

বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত মুহূর্তে পাশাপাশি দাঁড়ানো আমি কোনো রাত্রি নই-
আমি সেই সন্ধ্যা-
যখন একাকী ভেবেছ একান্তে নিজের কথা।
আমি সেই অনড় সত্তা;
যা মিশেছে তোমার অস্তিত্বে, যা বড় হয় তোমার শিরা ধমনীতে-
আমি তোমার তেমন কিছু- যা রোজ বড় হয় তোমার অস্থিমজ্জায়;
বলতে পারো, আমি তোমার অনাগত সন্তানের মত-
যে মিশেছে তোমার সত্তায়; যে করেছে পূর্ণ তোমাকে।

০৩ রা মে, ২০১৯

r:আমার দেখা ব্লগের সাড়ে তিন বছরঃ ব্লগারদের ধরণ-

আমি নিজে বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরিয়া। এই বেশ একটা সময়ে নানা ধরনের ব্লগারের দেখা পাইয়াছি। তাহাদের নানা ধরণ লইয়াই আজকের পোষ্ট!

বাংলা ব্লগে মোটামুটি পাঁচ ধরনের ব্লগার আছেন। (মতান্তরে ছয় ধরনের)। যাহারা সবাই নিজ নিজ স্থান থেকে ব্লগে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে যাইতেছেন।

১. আম জনতার ব্লগারঃ
ইহারা রেগুলার পোষ্ট করিয়া থাকেন, কখনো দিনে দুইটা কিংবা তিনটাও হইয়া যায়। অন্যের ব্লগে মন্তব্য করিয়া থাকেন, নিজের ব্লগেও মন্তব্যের জবাব দিতে বিলম্ব করেন না। খুঁজে খুঁজে অন্যের পুরানো লেখায়ও মন্তব্যে করেন। ইহারা মোটামুটি আমুদে, তেমন কোন কাজকর্ম ইহাদের থাকে না বলে ইহারা সারাদিন ব্লগে পড়ে থাকতে পারেন।

২. জনতার মাঝে নির্জনতার ব্লগারঃ
ইহারা শুধুমাত্র নিজের পোষ্টে মন্তব্য পেলে অমনি ধরে সেটাতে উত্তর দেন। অন্যের পোষ্টে মন্তব্য করেন না। ইহারা এক সময়ের সেলিব্রেটি ব্লগার ছিলেন, তবে এক্ষন আর তাহাদের ব্লগে মাক্ষীও বসেন না।

৩. উদাস ব্লগারঃ
ইহারা যে কবে কোনদিন ব্লগে লগিন দিয়েছিল ভুলিয়া যান, যখন মনে হয় অনেকদিন ব্লগে যাওয়া হয় না তখন পোষ্ট দিয়ে সাথে সাথেই আবার লগ আউট করিয়া দেন এবং ইহা নিশ্চিত থাকে যে আগামী ঈদের চাঁদ দেখিবার পূর্বে তাহাদের মুখ আর দেখা যাইবে না।

৪. ওয়াচম্যান ব্লগারঃ
ইহারা সারাদিন সারারাত ব্লগে লগিন দিয়ে থাকেন– কিন্তু না কোন পোষ্ট করেন, না কোন মন্তব্য করেন- না কারও লেখায় লাইক দেন ! ইহারা যে কাহার উপর এমন অভিমান করিয়া থাকেন আর কে যে আসিয়া উহাদের রাগ ভাঙ্গাইবেন তাহা কেহ না জানে।

৫, আপদকালীন সময়ের ব্লগারঃ
ইহাদের নাম যেমন উদ্ভট হয় কাজকর্মও তেমন উদ্ভট হয়। সারা বছর এদের কোন হদিস থাকে না, কিন্তু যদি দেখা যায় যে ব্লগে কোন ধরনের কোন ক্যাচাল লাগিয়াছে তাহলেই কেবল ইহাদিগকে দেখা যায়। এরা যে কে কার পক্ষ হয়ে কথা বলে সেটাও বোঝা দায় ! ইহারা যে মাল্টিধারী ব্লগার তাহা বুঝিতে রকেট সায়েন্স পড়িতে হয় না।

অসমাপ্ত ক্যানভাস

হরহামেশা তোমার মনে আমার কেমন ছবি আঁকছ বল?
তুমি কি ঠিক সত্যিই আমার পিকাসো?
পেন্সিল কেটে বারে বারে শুধু লাইন’ই টানছ?
ভার্টিক্যাল – হরিজন্টাল!
নাকি আঁকাবাঁকা দাগও আছে দু’চারখানা?

তোমার কল্পরাজ্যে দেখতে আমি কেমন?
হাসিখুশি নাকি গোমড়ামুখো?
গোলগাল, নাকি চ্যাপ্টা-চতুর্ভুজ?
আমার শরীরে তুলির স্পর্শ করতে ভালো লাগে তোমার?
নিজের আঙ্গুলে আমাকে আঁকছ, নিশ্চয়ই প্রভুত্বের দাবী চাইবে, না?
শোনো, আমার খুব কাছে এসে এঁকো না আমায়;
দূরত্বে রেখো- জলরঙে এঁকো!

আমার ত্রিভুজ চোখ, আঁকতে পেরেছ?
যেদিন আমার চোখ আঁকবে, মোটা দাগে কাজল দিও।
যেদিন আমার গাল আঁকবে, দুই আঙ্গুলে একটু ধ’রে আদর দিও!
আমার নাক কি পেরেছ আঁকতে? পারনি তো!
জানো, খুব দমবন্ধ লাগে, নিঃশ্বাস নিতে পারি না।

আমাকে আঁকতে আঁকতে তোমার হাতের কব্জি নিথর হয়ে আসবে
দিন যাবে- রাতে আসবে; বাইরের আলো দেখতে পাবে না;
আমাকে তুমি আঁকতে পারবে না,
রয়ে যাব আমি, তোমার অসমাপ্ত ক্যানভাসে।

============================================

ছবিঃ Girl with mandolin
শিল্পিঃ Pablo Picasso

@জাহিদ অনিক
৪/১২/২০১৮

হায় কবিতা, শব্দে নাহি কুলায়

ফেলে আসা সময়ের লেখচিত্র উলটে পালটে দেখলে
বোঝা যায়, মূলত আমি বেঁচে থেকেছি এখানে ওখানে
কখনো এর উচ্ছিষ্ট হয়ে, কখনো ওর এঁটো হয়ে।
কখনো একটু আধটু জড়িয়ে থেকেছি গুল্মলতায়
কখনোবা স্বচ্ছ জলে ভেসে থেকেছি নিশ্চুপ নিরুপায় মাছের মতন।

কখনো পিতার কঠিন হাত মুছে দিয়েছে কপালের জ্বর
কখনো অসুখ ধুয়ে নিয়ে গেছে প্রেমিকার কোমল হাত;
তবু কখনো সুখে অথবা অসুখে কারও নাম জপতে থাকিনি।
আমি জানি – তারা কেউ জানবে না,
আমি ভালোবেসেছি বারে বারে আমার পিতাকে, আমার প্রেমিকাকে;
আমার জন্ম এক’বারে হয়নি- আমি বেঁচে থেকেছি বারে বারে মরে গিয়ে।

আমি বেঁচে উঠি অকস্মাৎ, আমার জন্ম যেমন হয়েছিল দৈবচয়নে
আমার বেঁচে থাকা আমার অস্তিত্ব;
আমার অক্ষরে অক্ষরে- আমার ভালোবাসায়-না বাসায়।

হায় ভালোবাসিবার আক্ষেপ না কখনো ফুরায়
হায় কবিতা, শব্দে নাহি কুলায়।

———————————–
জাহিদ অনিক
ছবিঃ ছবি এখান থেকে নেয়া
১/১২/২০১৮

বিনিদ্র বিচরণ

রাত অনেক হয়েছে ঘুমাও তুমি
নারীর বুকে রাত্রিত্ব; কী বুঝবে তুমি?
তুমি পুরুষ; হয়ত পরিণত
তবুও তুমি রাত্রি’র মত নও;
অন্ধকারে তোমার জেগে থাকা স্বভাববিরুদ্ধ স্বেচ্ছাচারিতা।

আমি জানি পুরুষ, তোমার বুকে রাত্রির মাদকতা থাকে
লোমশ বুকের উদ্যম মাতাল গন্ধ
উন্মাদিনীর মত টানে আমাকে।
আমিও চাই, জাগিয়ে রাখো আমাকে – পরাস্ত হও।
তবুও, আজ ঘুমাও তুমি প্রিয়তম,
যদিওবা জেগে রইলে সারাটি রাত, বুঝবে তুমি তারাটির কথা?

প্রিয়তম আমার,
ঘুমাও তুমি, নিষ্পাপ শিশুর মত মাথা রাখো আমার বুকে
এসো শুনে যাও কান পেতে,
বিদায়ের ভায়োলিন এখনো সুতীব্র হয়নি
নোনা জল এখনো জমেনি বুকে।
একাকীত্বের দুঃসহ যন্ত্রণা,
জেগে থাকার একটি পূর্ণাঙ্গ রাত তোমাকে দেয়া হবে
আজ এসো, ঘুমাও প্রিয়তম;
তোমার বুকে আমার হোক বিনিদ্র বিচরণ।

—————–
জাহিদ অনিক
১/১২/২০১৮

ছবিঃ https://www.pinterest.pt/pin/34621490866745486/

অচেনা অজানা অনুভূতি

নেই দূরপথে চোখ রাখা পেরিস্কোপ
অপেক্ষা আবেগ;
রাগ অথবা অভিমানের দোহাই,
নেই শত্রুতা কিংবা বন্ধুত্ব।

.
অনেকটা দিন হয়,
খোঁজ নেই কাছে অথবা দূরে;
হিসেব নেই ঘণ্টা মিনিট- মাইল কিলোমিটারে।

.
কেবল,
একটা অচেনা অজানা অনুভূতি
ক্ষণে অনুক্ষণে;
শরীরের গোপন অভ্যন্তরে টের পাই যার অস্তিস্ত্ব।

২৫/১১/২০১৮
ছবিঃ https://www.pinterest.pt/

জোছনা উন্মাতাল

জ্যোৎস্না রাতে জমিনে লুটিয়ে পড়ে
গলিত আগ্নেয় লাভার মত মোলায়েম চাঁদোয়া।
মানুষ চাঁদ ধরতে পারে না- আলো স্পর্শ করে,
হায় জ্যোৎস্না!
প্রেমিকার কোমল নাকের মতন, গালের মতন।

এইসব রাতে,
কে বা কারা জেগে থাকে সপ্তাহের শেষদিন।
ওদের হয়ত প্রেমিকা নেই, থাকলেও হয়তবা মরে গেছে,
কেউ কেউ ওরা নিজেকে লটকে রাখে কার্নিশে হুকের সাথে,
চড়ুই যেখানে বাসা বেঁধেছিল ভেন্টিলেটর কোটরে;
যতদূর পারে দেখে নেয়- যত লম্বা পারে নিঃশ্বাস নেয়।
শুনলে মনে হয়, অনেকদিন হয়ত ওরা দম নিতে পারে নি
মনে হয়, এক নিশ্বাস শুষে নেবে পৃথিবীর সমস্ত বিশুদ্ধ বাতাস।

রাত আরও বাড়ে-
ওরা কবিতার মত ক’রে প্রেমের চিঠি লেখে যুবতী চাঁদের কাছে,
মানুষ প্রেম বোঝে না, বিরহ বোঝে না-
মানুষ চাঁদ চেনে না, কেবল জ্যোৎস্না ধরতে চায়;
মানুষ প্রেমে পড়তে পারে না, কেবল কবিতা পড়তে পারে।

—————————–
জাহিদ অনিক
২৩/১১/২০১৮

পার্শ্বচরিত্র

সিমুলেশন ল্যাবে বসে আছি। টিচার তখনো আসেনি। সবাই যার যার ইনস্ট্রুমেন্টস নিয়ে ব্যস্ত। ল্যাব এসিস্টেন্ট এসে পাওয়ার পয়েন্টে ডাটা টেবিল, ডায়াগ্রাম ওপেন করে দিয়ে গেছে। সবাই ব্যাগ থেকে ল্যাব রিপোর্ট বের করে একেক করে টেবিলের উপরে স্তূপ করে রাখছে। একজন আমার সামনে রিপোর্ট এটেন্ডডেন্স সীট পাস করে দিলো, আমার ঠিক উপরের ঘরে কোনও সিগনেচার নেই। কলম বামে টেনে একঘর উপরে যেতে নামটা পড়লাম, মালিহা মাইশা।
আমার ঠিক উপরেই যেহেতু নাম, তার মানে আমার ডান পাশের টেবিলেই থাকার কথা। আশ্চর্য প্রায় সাত মাস এই ল্যাবে দুইটা ল্যাব করছি, অথচ আমার ডান পাশের টেবিলে কে বা কারা ছিল সেটাই জানি না। আমি কি এতটাই আনমনা থাকি ! থাম্ব আঙ্গুল দিয়ে ক্লিক পেন বারবার ওঠা-নামা করছি। এটেন্ডডেন্স সীটে সিগনেচার করছি দেখে পাশ থেকে নাইম বলে উঠলো,
– কি রে নিজের নাম ভুলে গেছিস নাকি? সই টা দে, পাস কর!

এই গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। মালিহা মাইশা নামের কাউকে আমি চিনিই না, তাকে ভাবনায় নিয়ে আসা একদম উচিত না। আমার এখন উচিত ল্যাব এক্সপেরিমেন্টে ফোকাস করা। এই ল্যাবগুলো খুব বিচ্ছিরি। পিন আউট ডায়াগ্রাম দেখে দেখে সার্কিট বানিয়ে বসে থাকতে হয়, কখন টিচার এসে দেখবে- গ্র্যান্ড করবে তারপর পাওয়ার কানেকশন দিতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডাটা টেবিলে ভেল্যু তুলে তারপর আবার টিচারের সিগনেচার নিয়ে ল্যাব থেকে বের হতে হবে। কম্পোনেন্টগুলোও মারাত্মক খবিশ। সিরিয়াল নাম্বার দেখে নিতে হয়, সিরিয়াল নাম্বার থাকে পিন আউটের বিপরীত পিঠে। এত ছোট ছোট করে লেখা থাকে যে পড়তে গেলে রীতিমত চোখ খুলে হাতে নিয়ে পড়তে হয়।

নিজেকে অনেকবার কমান্ড দিয়েছি অলরেডি, ফোকাস জাহিদ! ফোকাস! এই বুড়ো সাদা মাথার টিচার মোটেও ভালো গ্রেড দেয় না, ফোকাস! ফোকাস।
কিন্তু কিছুতেই ফোকাসটা ল্যাবে দিতে পারছি না। সব ফোকাস চলে গেছে মালিহা মাইশার দিকে।

ল্যাব সীট হাতে নিয়ে হয়ত ভাবতে বসে গেছি, মালিহা’টা কে? তাকে আমি আগে দেখেছি কী?
সে আমাকে দেখেছে? নাকি সেও আমার মত বেখেয়ালি!
আমি কী আজ ল্যাব থেকে বের হয়ে তাকে খুঁজে বের করব? নাকি ফেসবুকে খুঁজব?
নক দেব? কী বলব নক দিয়ে? ল্যাবে আসেনি কেন? সুস্থ আছে কিনা, এসব?
বেশি বেশি হয়ে যাবে না? সব ছেলেই একইরকম, গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে, এসব ভাববে না তো!
দেখা যাবে সে হয়ত ইঞ্জিনিয়ারিং আর পড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে হয়ত চীনে যাচ্ছে মেডিকেল পড়তে!
আরও অনেক অনেক সম্ভাব্যতা আছে। হতে পারে তার জ্বর কিংবা গাড়িতে করে আসছিল, গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ঠ্যাং ভেঙে গেছে! হতেই পারে। একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ল্যাব থেকে যখন বের হলাম, তখন সন্ধ্যা ৬ টা। বুধবারের এই ল্যাবটা একদম সন্ধ্যা বানিয়ে দেয়। চারদিকে এত রোদ ঝলমল পরিবেশ দেখে ল্যাবে যাই আর যখন বের হই মনে হয় এক আকাশ অন্ধকার সাথে করে বের হয়েছি। ক্যাম্পাসের লাল দেয়াল পেরিয়ে আইডি-কার্ড পাঞ্চ করে যখন বাইরে বের হই, শীত কিছুটা লাগে লাগে যেন। দু’চারজন যাদেরকে চিনি কোনমতে হাই হ্যালো বলে পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে বাঁশের বেঞ্চের উপরে বসি। অনেকক্ষণ ল্যাবে বসে থাকতে থাকতে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে, বের হয়েই একটা কফি-টাচ আর ব্যানসন না ধরাতে পারলে যেন প্রাণ উশখুশ করে।
সিগারেটে টান দিতেও দিতেও সেই যেন মালিহা মাইশা’র কথাই ভাবছি। কিন্তু কী কী ভাবছি সেগুলো ঠিক সুনির্দিষ্ট নয়। হয়ত, ল্যাব থেকে বের হয়ে এরকম সন্ধ্যায় সে কী কী করে বা করতে পারে সেগুলো ভাবছি। নিশ্চয়ই বাসায় চলে যাবে। বাসা দূরে হলে দ্রুতই ক্যাম্পাস ত্যাগ করবে আর যদি কাছে হয় তাহলে হয়ত বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেবে।
মেয়েরা সাধারণত বাইরের টং দোকানগুলোতে কম আসে। তারা ভেতরের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ক্যাফেটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেখানে ওয়াইফাই আছে, যদিও খুব স্লো। আমি দুই তিনবার ইউজ করেছি।
এসব ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট শেষ হয়ে গেল। কফিও শেষ। এই গল্প শেষ করে এবার আমাকেও বাসায় যেতে হবে।

একটা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে ওঠা চাট্টেখানি কথা না, মূল চরিত্র হতে গেলে সব সময়ের লেখকের সাথে সাথে থাকতে হয়। লেখক যেভাবে ভাবে নিজেকে সেভাবে ভাবনায় মানিয়ে নিতে হয়। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয়। আমি নিজে কখনো কোনো গল্প লিখে উঠতে পারিনি। গল্প লিখতে গেলে মনে হয় এখুনি সবকিছু গুলিয়ে ফেলব। গল্পের অনেক চরিত্র, অনেক দুশ্চরিত্র, অনেক পার্শ্বচরিত্র।
এত চরিত্রের ভীড়ে পাঠকের চোখ কীভাবে কেবলমাত্র মূল চরিত্রের দিকে আটকে রাখতে হয় সেই আঠা রেসিপি আমার জানা নেই, আর তাই গল্প লেখা হয় না আমার।
আজ অবচেতনভাবে একটা জিনিস খেয়াল করে যাচ্ছি, সেই প্রায় ল্যাবে যাওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মালিহা মাইশা বেশ ভালোকরেই আমার অলিখিত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে বসে আছে, অথচ গল্পটা আমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমাররই থাকার কথা।

আমি যদি, এই-সবকিছু টাইপ করে মালিহাকে একটা ইমেইল করে দেই কেমন হবে? নিশ্চয়ই সে খুব বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে যাবে! সে কি ভাববে? আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি? সে কী আমাকে মেইলের রিপ্লাই দেবে?
সে কী ব্যাপারটা বন্ধুদের জানাবে? আমাকে দেখে সবাই হাসাহাসি করবে? শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কী কেবল গল্পের মধ্যেই থাকবে, নাকি বাস্তবে রূপ নেবে? গল্প সত্যি হয়ে গেলে সেটা আবার কেমন গল্প!

————————————————-

জাহিদ অনিক
ছবিঃ গুগল
২২ শে নভেম্বর, ২০১৮

বেঁচে থাকার চুক্তিপত্র

এবার না হয় নাইবা হলো-
পরের বারে যখন তুমি কাব্য লিখবে-
তোমার হাতে তিন আঙ্গুলে, দু’এক চিমটি শব্দ দিও;
এবার না হয় বেশ তুমি এই একলা থাকো
পরের বারে লিখবে যখন, তোমার কাব্যে আমায় নিও।

এই আকাশের পরের আকাশ
এই নদীটির পরের নদী;
তোমায় আমি দিলাম দিয়ে।
এই শীতের পরের শীতে
আমায় তুমি নিও টেনে তোমার গরম শালের মত;
এই বছরের পরের বছর, তোমায় আমি আর যাব না ছেড়ে
এই বছরের এই ক’টাদিন-না হয় তুমি একলাই থাকো।

বছর ঘুরে-
এই বছরের পরের বছর,
চুক্তিনামায় স্বাক্ষর রইলো- রইলো পড়ে শর্ত;
আর ক’টা দিন থাকো বেঁচে,
পরের বারে তোমায় আমি আর দেব না মরণ কামড়।

======================
@জাহিদ অনিক
ছবিঃ পিন্টারেস্ট
১৬/১১/২০১৮

প্রতীক্ষা

কেউ আমাকে আজীবন প্রতিদিন ভালবাসবে-
কিংবা আমিও ভালবাসব দিন দিন প্রতিদিন;
ভালবাসায় এমন গতানুগতিকতা বড্ড অপছন্দ আমার।
প্রেম প্রতিদিন থাকে না-
ভালোবাসা সব বেলাতে আসে না।
হুট করে চলে আসে,
সকালে অথবা রাতে কিংবা দুপুরে।

ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছি
বছর, যুগ এমনকি শতাব্দী;
দোহাই লাগে-
কেউ যেন বলতে চেয়ো না
ভালোবাসা একটি ক্রমাগত অবিচ্ছিন্ন এবং ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া;
প্রতিদিন, প্রতিরাতে ভালবাসতে হয় না।

হঠাত দশ বছর পরে,
আজ যদি কেউ ভেবে থাকে আমাকে তার পড়ছে মনে
খুব আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে
মাত্রাভুলে আমাকে একটা চুমু খেতে চাইছে;
চলো এসো, দিয়ে যাও তোমার দশ বছরের সঞ্চিত চুম্বন
আমিও হয়ত অধীর আগ্রহে তোমার চুম্বনের অপেক্ষাতেই প্রতীক্ষিত।

যদি ভালবাসো- যদি ভালবাসতে জানো
দীর্ঘদিনের অনভ্যাসেও যদি না ভুলে যাও নাম
এসো যুবক তবে, এসো চুম্বন তোমার ন্যায্য প্রাপ্য।
এসো প্রথমা, তোমার চুলে আমার হাত বিলি কাটুক
তোমার প্রাপ্য ভালোবাসা, এসো তুমি বুঝে নাও।

———————–

কবিতাশ্বর

কিছু কবিতা প্রেমী মানুষ
যারা কবিতাকে বাইবেল মানে
কবিকে জানে ঈশ্বর
দোহাই তোমার, ওদের তুমি কাফের বলো না।

মূলত কবি ও ঈশ্বরের একই কাজ
নরকের মানচিত্র যদি পৃথিবী হয়
মিথ্যা আস্ফালনে কবিতা তবে স্বর্গের মন্ত্র।

কিছু কবিতা পবিত্র বাণীর মত
তসবীহ গুনে গুণে যারা করেছে কবিতার তাকবীর
সম্পূর্ণ বিশ্বাসে নিজেকে করেছে সমর্পণ
শব্দের গুঞ্জনে যে স্বত্তা নত মস্তকে করেছে সেজদায়ে তাহিয়্যাহ
দোহাই তোমার, ওদের তুমি কাফের বলো না।

কিছু কবিতা প্রেমী মানুষ
সুবেহ সাদিকের আবছা আলোয়
নিজেকে জড়িয়েছে মখমল জায়নামাজে
স্মরণ করেছে কবিতার কথা
স্বীকার করেছে আনুগত্য;
দোহাই তোমার, ওদের তুমি কাফের বলো না
তাদের পবিত্র কবিতা তুমি কবুল করো।

১১/১১/২০১৮

ইন্ধন

নির্বাচন বলতে বুঝি
হৃদয়ের ব্যালট বাক্স লুটপাট
আমার আঙুলে তুমি অমোচনীয় দাগ;
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় স্বৈরচারী প্রেমিকের ঐতিহাসিক বিজয়।

অধিবেশন মানে বুঝি
তুমি রুলিং পার্টি- আমি অপজিশন,
সংবিধান মানে বুঝি- কবিতার খাতা।

হরতাল অর্থ বুঝি- মৌনতা নীরবতা
ভায়োলেন্স মানে বুঝি, যন্ত্রণা-যৌনতা।

প্রেম বলতে আমি বুঝি- প্রেষণ, প্রেরণা
উৎসাহ, উদ্দীপনা অথবা ইন্ধন;
জ্বালাও পোড়াও – হৃদয়ে ভাংচুর।


জাহিদ অনিক
৯/১১/১৮

Winter Love

At the northwest coast, nights are long in winter
How long?
Sailors can cross the Pacific over a night
A writer can complete his last unfinished novel
An eighteenth can discover herself falling in love for the third time.
The world can be changed over the night,
That big a winter night can be.

Go and find yourself at the middle of glaciers
Feel the beauty the Alaska,
A gentle breeze is blowing and you remember
You missed the last night dinner.
Perhaps the most pensive and lonely winter night
Ever you have passed, was the last cold night.

Freezing over the suspension bridge
Recall the man who loved you,
Remember the small river you crossed together by aquabus;
That was in last winter.
This is how a long winter night comes and freezes every second!
This is how love comes secretly in winter.

@All rights reserved
Jahid Onik
November 8, 2018

Source of Image- Winter images link

শানে-নজূলঃ
——————–

একজন নারী আছেন আমার মগজে। তিনি পশ্চিমের কোথাও থাকেন। তার দেশে বরফ জমে। আমার দেশে জমে না। আমি চাই সে কিছু বরফ প্যাকেটে ভরে পাঠিয়ে দিক আমার জন্য।
আমি তার কথা ভাবি, তিনি কেমন আছেন এই শীতে, তিনি কি করেন শীতের রাতে, কিভাবে তার রাত হয় দিন যায়।
কিভাবে সে স্নোবল নিয়ে খেলে। বরফে স্কি করতে গিয়ে তার পা মচকায় কিনা।

এসব আমার ভাবনা রাজ্য, আমার সেই ভিনদেশী নারীর কথা ভাবতে ভাবতে পরবাসী মেঘের কথা কবিতায় লিখি।