রিমঝিম রিমঝিম বাদল দিনে তোমার কথা পড়ে মনে
কোথায় আছ তুমি আজ এমনি বরষা মুখর দিনে।
তোমার পরশ মাখা স্বপ্ন আমায় করেছে মগ্ন
দিন কাটে ঘরে একা তোমার সুরে গান গেয়ে।
বিদায় নিয়েছে বসন্ত এসেছে বরষা তবু কেন
কাটে না যে দিন গুলি তোমার পথ পানে চেয়ে।
রিমঝিম রিমঝিম বাদল দিনে তোমার কথা পড়ে মনে
কোথায় আছ তুমি আজ এমনি বরষা মুখর দিনে।
তোমার পরশ মাখা স্বপ্ন আমায় করেছে মগ্ন
দিন কাটে ঘরে একা তোমার সুরে গান গেয়ে।
বিদায় নিয়েছে বসন্ত এসেছে বরষা তবু কেন
কাটে না যে দিন গুলি তোমার পথ পানে চেয়ে।
উনিশ দিন আগে হারিয়েছিল; খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল শূন্য। প্রকৃতির অদ্ভুত লীলা; উনিশ দিন পরে ফিরে এসেছে। এখানে একটু রহস্য আছে; বিরাট রহস্য, কোন কূলকিনারা পাচ্ছিনা। তাই শেক্সপিয়ারের আপ্তবাক্যতে শান্তনা খুঁজছি। there are many things in heaven and earth…
বলছিলাম চশমার কথা। আমাকে সর্ট সাইটেড বলা হয়; দূরবর্তী কিছু ভালো দেখতে পাই না। দূরের নদী, গাছের পাখি, আকাশের ঘুড়ি কিংবা ঈদের নতুন চাঁদ দেখতে আমার চশমা লাগে। চল্লিশ পরবর্তী বয়সে চশমা ছাড়া দৈনন্দিন কাজ করা সম্ভব হয় না। চশমা এবং মোবাইল ছাড়া জীবন অচল, আমি জীবনের অনেক কিছু ভুলে থাকতে পারি কিন্তু চাইলেই চশমা ভুলতে পারি না মোবাইল ভুলতে পারিনা। চোখ চশমা ভুলার অনুমতি দেয় না, কাজ মোবাইল ভুলার অনুমতি দেয় না।
এই চশমা উনিশ দিন আগে হারিয়ে গেল, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন হদিস পাওয়া গেল না। কাজ থেকে ফিরে ড্রয়ারে চশমা রেখে বাথরুমে ফ্রেস হতে গিয়েছি। প্রতিদিনের অভ্যাস ভুল হওয়ার কথা নয়। মোবাইল এবং চশমা ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হয়ে, নামাজ পড়ে পুনরায় চোখে চশমা পড়ি এবং হাতে মোবাইল নেই।
প্রতিদিনের রুটিনে সেদিন ব্যতিক্রম ঘটলো, মোবাইল জায়গা মতই আছে কিন্তু চশমার কোন হদিস নেই। ঘরের সম্ভব-অসম্ভব সব জায়গায় খোঁজা হলো, ড্রয়ারের অন্যান্য জিনিসপত্র এক এক করে সরিয়ে বারবার তালাশ করেও চশমার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। আমি সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও খুঁজতে খুঁজতে গলদঘর্ম।
সবাই আমাকে দোষারোপ করলো, আমাকে আসামী সাব্যস্ত করা হলো। আমি ভুলে অন্য কোথাও ফেলে এসেছি। হয়ত রাস্তায়, গাড়িতে না হয় কাজের কারণে যে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া হয় বেখেয়ালে হয়তো সেসব কোন জায়গায় ফেলে এসেছি। তাদের বোঝানো গেল না যে চশমা ছাড়া আমি অচল কোথাও যদি ফেলে থাকি, তাহলে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে আমি ঘরে ফেরার কথা না। কেউ যদি হাত ধরে পৌঁছে না দেয় তাহলে চশমা বিহীন আমার পক্ষে গাড়ি চালিয়ে ফিরা সম্ভব না।
চশমার জন্য মন খারাপ হলো বটে কিন্তু শোক বেশিক্ষণ ধরে রাখা গেল না। নতুন চশমা পুরাতনের জায়গা দখল করে ফেলল, প্রকৃতির এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে কোন কিছুকে শূন্য থাকতে দেয় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শূন্যস্থান পূরণ করে ফেলে।
দু তিনদিন পরে চশমা হারানোর শোক ফিকে হয়ে গেল, জীবন পুনরায় স্বাভাবিক গতি ফিরে পেল। উনিশ দিন পরে আজ রুটিন মোতাবেক ড্রয়ারে চশমা, মোবাইল রেখে ফ্রেস হয়ে, নামাজ পড়ে যখন ড্রয়ার খুলেছি নতুন চশমার পাশে পুরনো চশমা পাওয়া গেল।
এই চশমা এতদিন কোথায় ছিল; কিভাবে ফিরে এলো কোন ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না। এবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামি ভেবে কঠোর জেরা করা হলো, তবু চশমা রহস্যের কোন সুরাহা হল না। তাদের ব্যাখ্যা অবিশ্বাসের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত অমীমাংসিত রহস্যের জন্য হ্যামলেটের আশ্রয় নিতে হল, শেক্সপিয়ারে শান্তনা খুঁজতে হল।
একদিকে দেশে করোনা’র যাতাযাতি
ফেসবুকে ভিনদেশি খেলার মাতামাতি
সরকার ঘোষিত লকডাউন দিন-রাতি
তবুও হাটবাজারে লোকের যাতাযাতি।
আসলে আমরা তো বীর বাঙালি
মিথ্যে ভাষণে দিয়ে থাকি করতালি
অযথা অকারণে ছাড়ি মিথ্যে বুলি
আমরা স্বাধীন দেশের হুজুগে বাঙালি।
জ্ঞানের গভীরতা ও কোন মানুষকে বদলানোর মনস্তাত্ত্বিক দর্শন কেমন হওয়া উচিত। নতুন করে পথ চলা…
পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল’ দিন বদলে যায় রাত আসে, ভোর আসে, সকাল হয়,আবার রাত হয়ে যায়, আবার আসবে দিন। আমাদের এই চলমান জীবন অভিধানে সময়ের ঘড়ির কাটায় বেঁধে দেয়া সময় বদলে সময় আসে’ মানুষগুলো তাদের জায়গা থেকে মানুষই থেকে যায় তবে তাঁদের রঙ বদলায়। কিছু কিছু মানুষ তার জীবনের সত্য নীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে না পারলেও অন্য কেউ বদলানোর চেষ্টা করবে। তবে সর্বক্ষেত্রে বোঝা যায় যে, মানুষের প্রয়োজনে মানুষই পণ্যসামগ্রীর মত ব্যবহৃত হয়।
আমাদের মানুষ সমাজ’ কিছু কিছু মানুষের মধ্যে যখন কোন কিছুর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তখন আবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার নানান কলাকৌশল চলতে থাকে। এসব মানুষের জীবনযাত্রা বিষয়ে আমি খুবই গভীর ভাবে অবলোকন করি তাদের অন্তর তুষ্টির কথা! আদতে তারা কি কখনো সুখী ছিল? সুখী হয়েছিল? সুখী জীবনের কোন চিন্তা করে কী, তাদের ভিতরে কোন সুখি ভাবনা রয়েছে নাকি তারা শুধুই মরীচিকার পিছে ছুটে চলে?
এর পেছনের উত্তর কি হতে পারে সেটা আপনাদের কে আর খোলাসা করে বলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। আশা করছি আমার এই লেখা শব্দগুলোর ভেতরেই তাদের চিন্তাভাবনার উত্তরগুলো রয়েছে যা নতুন করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। জীবনের এই চক্র মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত ঘটে, ঘটে চলে এটা চলমান থাকবে এটা জারি থাকবে থাকবে। যে সমাজ ব্যবস্থায় যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে পরিবার ব্যবস্থায় মানুষের সততা, মানুষের বিশ্বাস’ মানুষের মর্যাদার কোন মূল্য নেই, সেই সমাজ পরিবারও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এর পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না তবে আমরা আশায় বুক বাঁধি স্বপ্ন দেখি সবকিছু পরিবর্তন হবে সবকিছুতে নতুনের ছোঁয়া লেগে জীবনের এই চলমান গতি নতুন করে শুরু হবে সমাজ পরিবার রাষ্ট্র নীতি তে কিংবা অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এই সমাজ ব্যবস্থায় এই পরিবার ব্যবস্থায়। যারা দুই দিনের আলোয় এসে নিজেকে আলোকিত বলে দাবি করে, যারা দুই দিনের জীবন বিধানের পথে হেঁটে নিজেকে অনেক জানেওয়ালা বোঝানোর চেষ্টা করে আসলে তাঁরা একটি ক্ষুদ্র চিন্তার ভেতরেই নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছে বলেই মনে করি। এইটুকু ক্ষুদ্র চিন্তার মাধ্যমে যখন কোন মানুষ অন্যকে বদলানোর প্রয়াস করে তারা কি প্রকৃত মানুষ? প্রকৃত সত্যের চর্চা করে? প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা করে? প্রকৃত ঈশ্বর ভাবনার চর্চা করে? তবে আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থায় একজন খারাপ মানুষ কখনোই একবারে হঠাৎ করে বদলে যায়না। পেছনে একটা রিজন থাকে রহস্য থাকে এমনকি অনেক চড়াই-উতরাই পার করে তারা তাদের সঠিক গন্তব্যের পথে প্রত্যাবর্তন করেন এটা কে আমি সাধুবাদ জানাই।
এই জগতে কারো যদি কোন বদ অভ্যাস থাকে সেটাকে কোন মানুষই একদিনে সংশোধন করতে পারেনা, যখন কোন মানুষ একজন মানুষকে সামান্য একটা কথার মাধ্যমে হঠাৎ করে বদলানোর চেষ্টা করবে তখন বুঝতে হবে তার চিন্তার পরিধি কতটুকু বা কতটা অসম। যে কোনো বিষয়ে একজন মানুষকে বদলানোর প্রয়োজন বোধ করলে তার খারাপ গুন গুলো ধরে ফেলুন তার সাথে একটু একটু করে কথা বলুন প্রতিদিন একটা করে কথা বলুন প্রতিদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ দিয়ে শুরু করুন প্রতিদিন একটা তথ্য নিয়ে হাজির হন সেখানে অবশ্যই আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে অবশ্যই সময় নিয়ে বদলানোর ভাবনা রাখতে হবে এর পেছনে অবশ্যই আপনাকে সময় দিতে হবে। একটা মানুষের জীবনে সাধনা ব্যতীত কোন কিছুর সফলতা অর্জন হয় না। সৎ চিন্তা সৎ ভাবনায় সৎ উপাসনায় সমাজের কিছু বদল ঘটাতে গেলে অবশ্যই সমাজকেও সেই সময় টা দিতে হবে।
বদলানোর যদি কোন রিজন থাকে তাহলে তার পিছে লেগে থাকতে হয়। ভালো কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে একজন মানুষ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। সমাজে এমন অনেক খারাপ কাজ হয় পরিবারে এমন অনেক জঘন্য অপরাধ হয় সেগুলোকেও পরিবর্তন করা দরকার। আপনি যদি কোন কিছু বদল ঘটাতে চান তবে অবশ্যই আপনার পরিবার থেকে বদলটা শুরু করতে হবে। তার আগে কোনভাবেই অন্যকে জ্ঞান দেওয়া যায়না তার আগে কোনো ভাবে অন্যকে বদলানোর চিন্তা মাথায় আনা যায় না।
যখনই আপনি আপনার ঘর থেকে বদলানোর চিন্তা না করে অন্যকে বদলানোর চিন্তা করবেন তখন আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ভালো কাজে অবশ্যই প্রশংসার যোগ্যতা রাখে কিন্তু এক দিনের ভিতরে জগতের কোন কিছু পাল্টানো অসম্ভব। আমাদের জগতের এই সিস্টেম একদিনে কেউ পাল্টাতে পারবে না। আর এই জগতের সিস্টেমটাও একদিনের আসেনি মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও একদিনে গঠন হয়নি মানুষের বুঝ পরামর্শ একদিন শুরু হয়নি মানুষের অনুধাবন, চিন্তা, একদিনে উন্মোচন হয় না। অতএব, যা কিছুই করেন সেই চিন্তার বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে।
আমাদের পরিবার পরিজনের অসহায়ত্বকে একদিনে বদলাতে পারবেন না আমাদের জীবনের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনাকে কেউ একদিনে বদলাতে পারে না। তার জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন সেজন্য ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে, প্রত্যেকটা মানুষের; যারা সমাজের সেই বদলানোর দায়িত্বটা নিয়েছেন তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হয়। যারা পরিবারের সেই দায়িত্বটা নিয়েছেন তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হয়।
যারা সমাজের সেই দায়িত্বটা নিয়েছেন তাঁদেরকে ধৈর্যশীল হতে হয় এমনকি ধৈর্যশীল হতেই হবে। ধৈর্যশীল না হওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই। পরিবর্তনশীল মানুষদের জন্য পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে খুবই কৌশলী হতে হয়। তাছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কাউকে যদি বদলানোর প্রয়াস থাকে তাহলে তার হৃদয়ে প্রবেশ করতে হবে, অন্তর থেকে অন্তরের গভীরে তার অবস্থান করতে হবে। তাদের অতীত ভাবনা, তাদের বর্তমান ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও একটা মানুষের পেছনে যদি কেউ লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বদলাতে পারে’ বদলে যায়, বদলাতে হয়।
সেটা আপনজনের জন্য পরিবারের জন্য অন্য কোন শ্রেণীর জন্য কিংবা সমাজের জন্য কিংবা রাষ্ট্রের জন্য কিংবা এই পরিবর্তনটা করতেই হবে। কিন্তু আমরা কি সত্যিই পরিবর্তন করতে চেষ্টা করি? আমাদের মত এই সমাজের মানুষদের প্রতি আমার একটি প্রশ্ন?
আমরা কি জানি, সেই পরিবর্তন করতে গিয়ে আরো খারাপ পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছিনা তো আমরা? পরিবর্তনের রীতি নীতি দৃঢ় হতে হয়। রাগ কিম্বা বদ মেজাজ অথবা নিজের মস্তিষ্কের সুস্থ ব্যবহার না করে আপন গতিতে হুংকার দিয়ে জগতের কোন সিস্টেমকে পরিবর্তন করা যায়না। কোন মানুষকে পরিবর্তন করা যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে মানুষটা আপন বিবেকের মধ্যে পরিবর্তনের বিশ্বাসটা অর্জন করতে না পারবে। এর জন্য চাই সুকৌশল সাদৃশ্য মান চিন্তা চেতনা, এসব ব্যতীত অন্য কোন কিছু দিয়ে সমাজ পরিবারের কোনো মানুষকে পরিবর্তন করা যায়না।
এসব কোনো কাজের বিষয় নয়। আমরা যখন কোন অবস্থান থেকে সরে আসার প্রমোদ বাসনা অন্তরে ধারণ করি লালন করি কিংবা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই তখন একজন মানুষের ভেতরে অনেক ধরনের ভুল চিন্তা কাজ করে, ভুল ভাবনা কাজ করে, একজন মানুষের দীর্ঘ বছরের চিন্তাভাবনাকে যখন আপনি একদিনে পরিবর্তন করতে যাবেন তখন বুঝতে হবে আপনার কোনো যোগ্যতা নেই অন্যকে জ্ঞান দেবার। আমি জানি ভালোবাসা দিয়ে জগতে মানুষ অনেক কিছুকেই জয় করে, যদি আপনি ভালোবেসে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, অবশ্যই সময় নিয়ে সেই বিষয়টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। যদি কারো মাঝে সেই যোগ্যতাটা না থাকে তবে সেই মানুষটা কোন ভাল কাজ করেও সাফল্য অর্জন করতে পারে না।
পরিবর্তনের বিষয়টি টোটালি একজন মানুষের সম্পূর্ণ অন্তর্দৃষ্টির ব্যাপার। অন্তরের গভীর থেকে একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের যখন শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয় তখন সেই মানুষটা অবশ্যই চাইবে সে মানুষটার জীবন ভালো কাটুক সুন্দর কাটুক পরিবর্তনের অমোঘ স্পৃহা যখন হিংস্রতায় পরিণত হয় তবে তাকে অবশ্যই কোন সফল মানুষ হিসেবে পরিগণিত করা যায় না। যে মানুষ অন্যকে বুঝাতে অক্ষম কিন্তু তার রাগ অশ্লীল বাক্য ব্যবহার কিংবা ঊশৃংখল আচরণের মাধ্যমে সবকিছুকে পরিবর্তন করতে চায় সেই মানুষটা অবশ্যই সমাজের অযোগ্য মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আমাদের জগৎ জীবন তখনি সুন্দর হয় তখনই উজ্জ্বল হয় তখনই ঊর্ধ্বগামী হয় যখন মানুষের হৃদয়ে মানুষের বিবেককে মানুষের চিন্তায় মানুষের প্রজ্ঞা, মানুষের ভাবনায় সৃষ্টিশীল চিন্তার অস্তিত্ব বিদ্যমান বলে উপলব্ধি হয়।
আমরা কি আদৌ এই পৃথিবীর সিস্টেমকে বদলাতে পারবো? আমরা কি সাধারণ মানুষ হয়ে একটি দেশের সিস্টেমকে বদলাতে পারবো? আমরা সাধারন মানুষ হয়ে এদেশের চিন্তাশীল মানুষের বিবেককে নাড়া দিতে পারব?
না, তা কখনোই সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের যার যার অবস্থান থেকে সেই চিন্তাটা না করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই চিন্তার জায়গাটা আপনার কাছে অন্ধকার বলে বিবেচিত হবে। আপনি যদি সেই চিন্তা শীল মানুষের চিন্তার বিষয় বস্তুকে খনন করেন এবং সেটাকে অন্য কেউ সঠিক বলে বিবেচিত করে অবশ্যই সমাজ নয় সে মানুষটা বদলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। সে মানুষটা তার জায়গা থেকে সরে আসবে, সেই মানুষটার নিকট আপনার সম্মান অবশ্যই বৃদ্ধি হবে। পৃথিবীর এই অন্ধকার মুখী সমাজব্যবস্থায় অনেক কঠিন বিষয় রয়েছে যে বিষয়গুলো কখনোই পরিবর্তন করা যায় না।
আমরা একজোট হয়ে লড়াই করলেও সেই বিষয়টাকে কখনোই পরিবর্তন আনতে পারব না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই জায়গা থেকে সেই মানুষের ও তার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম না হবে। আমাদের অক্ষমতা কখনোই দুর্বলতা নয় আমাদের অক্ষমতা কখনোই বোকামি নয় পৃথিবীতে সবাই অক্ষম মানুষ নয়। আমরা যদি এসবে হাত না দিয়ে প্রথমে ঘর থেকে শুরু করি তবে আপনি বলতে পারেন অন্যের পরিবর্তনে কোন কথা। তবেই আপনি বলতে পারেন অন্যের পরিবর্ধনের কথা। তবে আপনি বলতে পারেন অন্যকে বদলানোর কথা।
কিন্তু আপনি নিজে কতটুকু বদলেছেন কতটুকু বদলে গেছেন ততটুকু দিয়েই কি পরিপূর্ণ হয়েছেন নাকি আপনার জীবনে আরও জানার বিষয় রয়েছে আরও বোঝার বিষয় রয়েছে আরও ভাবার বিষয় রয়েছে? নাকি আপনি অল্পতেই বিদ্বান হয়ে গিয়েছেন? নাকি আপনি অল্পতেই সবজান্তা হয়ে গিয়েছেন? আপনি কতটুকু নিজে জানার চেষ্টা করেছেন দুই দিনের জ্ঞানধর্মের তালিম নিয়ে আপনি যদি সর্ব জ্ঞানী হয়ে যান সে ক্ষেত্রে আমি মনে করবো আপনি ভিন্ন জগতে বাস করছেন। আপনার চিন্তার খোরাক সেই সামান্যতম। এই চিন্তা দিয়ে ফসলের মাঠে কোনভাবেই কোন ফসল ফলাতে পারবেন না। ফসল ফলানোর জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম জ্ঞানের প্রয়োজন ফসল ফলানোর জন্য যে জ্ঞান দরকার সেই জ্ঞান নিতান্তই আলাদা রয়েছে।
মানুষের ভেতরে যদি আপনি জ্ঞান তৈরী করতে চান মানুষের ভেতরে যদি আপনি চিন্তা তৈরি করতে চান মানুষের ভেতরে যদি আপনি পরিবর্তনের কোনো কথা বলার চেষ্টা করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই সর্ববিষয়ে অন্যের চেয়ে সর্বাপেক্ষা জানতে হবে। এমনকি তাদের ভেতরে সেই বোঝার মত জ্ঞান থাকতে হবে। আমরা যারা এডুকেশনাল সার্টিফিকেট কিংবা তার কোয়ালিফিকেশন নিয়ে গর্ববোধ করি আমরা যারা সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্রে যাদেরকে মেধাবী বলে পরিচয় দিই বা স্বীকৃতি দেয় তাদের বিষয়ে আপনি যদি একবার ভাবেন বা চিন্তা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন একটা দুইটা কিংবা তিনটা বই এর উপরেই সর্বোচ্চ ডিগ্রীটি নেয়!
কিন্তু যারা আমাদের এই সমাজে বহুবিধ চিন্তার অধিকারী বহুবিধ ভাবনার অধিকারী বহুবিধ যুক্তিকে খন্ডন করতে পারে বহুবিধ ভাবনার প্রয়াস ঘটাতে পারে এসকল মানুষ তাদের মুক্ত জ্ঞানকোষ এর মাধ্যমে যখন কোন নিত্য নতুন ভাবনার উদ্ঘাটন করে চলেছে যারা বহু জ্ঞানে জ্ঞানানিত্ব আমরা কি তাদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করি? আমরা কি তাদেরকে মেধাবী বলে পরিচয় করে দিতে পারি? অবশ্যই না। অবশ্যই না … পারি না। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যারা একটা বই পড়ে ডিগ্রি নিয়ে মেধাবী হয়ে যায় তারাই সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ।
এখানে আমাদের ভাবনার সীমাবদ্ধতা নিজেদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। আসলে আমরা জ্ঞানের চর্চা করতে জানিনা বলে আমরা জ্ঞানীর কদর করতে জানিনা। আমরা যদি সমাজের সেই সকল মানুষদেরকে একটু সুযোগ দিতাম কোন কিছু বলার একটু সুযোগ দিতাম কোন কিছু উদঘাটন করার তবে এই সমাজ এই পরিবার এই রাষ্ট্র’ অনেকদূর এগিয়ে যেত বদলে যেত, বদলে যেত পৃথিবীর অবকাঠামো, সমাজব্যবস্থা, জগত সুন্দর ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠত প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে সফলতা অর্জন হতো।
আমরা কুসংস্কারে বিশ্বাসী কিন্তু আমরা যখন কাউকে কোন কিছু বলার প্রয়াস করি তখন আমরা একবার ভেবে দেখি না যার সঙ্গে কথা বলছি তার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিত। কিভাবে কথা বললে তার কাছে একটা সঠিক জায়গা করে নিতে পারব কিভাবে কথা বললে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তবে আমি এটুকু বিশ্বাস করি জগতের সর্বাপেক্ষা মূর্খ শিক্ষিতরা। অন্ধকার জগতের সেই কুসংস্কারকে এখন পর্যন্ত হৃদয়ে ধারণ করে। তাদের ভেতরে বদলানোর কোন যোগ্যতাই নেই আসলে বদলানোর মতো জ্ঞান যদি থাকতো তারা অবশ্যই সেই জ্ঞানেরই প্রয়োগ করবে। যদি কেউ কোনোদিন কোনভাবে জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটাতে পারে অবশ্যই একজন মানুষ পরিবর্তন হতে বাধ্য।
কারণ সত্য সবার জন্যই সমান ভূমিকা পালন করে সত্য সবার জন্যই গ্রহন যোগ্যতা রাখে, সত্য সবার জন্যই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে, সত্য সবার জন্যই চমৎকার একটা সমাজ ব্যবস্থা রচনা করে যে সমাজ ব্যবস্থায় আমরা সকলেই সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারব। যেখানে মানসিক প্রশান্তি জীবনের সকল বিষয়বস্তুকে আলাদা করে এক সাইডে রেখে নিজের জীবনকে উন্নত ও একটি শ্রেণীবদ্ধ জীবনের আওতায় এনে সমৃদ্ধ ঘটাতে সক্ষম হয়। এখানে মানব জীবনের পরিস্ফূটিত সুন্দর ভাবনাগুলো রচিত হয়। মানুষ এগিয়ে যায় আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে আর ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে উঠে আলোকিত মানুষ। আমরা সেই আলোকিত জীবনের স্বপ্নই দেখি।
তেলে তেলবাজি খেলা
খেলছে আনাচে-কানাচে,
নেতার পায়ে মেখে তেল
ডিং-ডিনা-ডিং নাচে।
শরীরে মেখে তেল
করে শরীর তৈলাক্ত,
নেতাদের মেখে তেল
হয়ে যায় তার ভক্ত।
তেলে ভাজা ইলিশ
খেতে বড় মজা,
তেল মাখতে করলে ভুল
ভোগ করে সাজা।
খাঁটি সরিষার তেল
সবার কাছে পছন্দ,
তেল ছাড়া দুর্নীতিবাজরা
পায়না মনে আনন্দ।
তাইতো তেলের মূল্যবৃদ্ধি
দিনদিন অকারণে বাড়ছে,
সরিষা নারিকেল সোয়াবিন
সীমা ছেড়ে যাচ্ছে।
তেল মাখার কৌশল
জানা আছে যার,
তিনিই হয়ে ওঠে
এলাকার পছন্দের সবার।
তেলে হয়েছে তেলতেলা
এই বাংলার রাজনীতি
কর্তাদের মেখে তেল
কোটিপতি হচ্ছে রাতারাতি
তেলে শান্তি তেলে মুক্তি
তেল মেখে ধান্ধাবাজি
তেলে তৈলাক্ত রাজপ্রাসাদ
সদা দুর্নীতি কারসাজি।
একপশলা বৃষ্টি বয়ে নিয়ে এলো তোমার সুবাস। একলা হয়ে যাওয়া দুপুরের কাপাসিয়া মেঘে ভেসে আসে তোমার কথারা। এক একটা দিনের সাথে মিশে যায় গুঁড়ো গুঁড়ো ভালোবাসার অনুভূতি। মন জুড়ে, কোল পেতে, এক বুক আকাশ নিয়ে বসে থাকি তোমার অপেক্ষায়। দিগন্তের চিহ্ন বরাবর মনে মনে হেঁটে আসি তোমার সাথে …
.
___________________
ছবি : Anushka Saha ❤️
মডেল : Jayoti Saha ❤
এই লকডাউনের বিকালবেলা
চলছে মাঠে খেলা,
চারদিকে লোকে লোকারণ্য
মিলছে যেন মেলা!
কে শোনে কথা চলছে খেলা
দোকানপাটও খোলা,
বিধিনিষেধ মানছে না কেউ
করছে সবাই অবহেলা।
হেলায় হেলায় অবহেলায়
বাড়ছে করোনা সংক্রমণ,
কেউ মরছে গ্রামে, কেউ শহরে
মরছে আপামর জনগণ!
যদি মানতো বিধিনিষেধ
কমে যেতো রোগ সংক্রমণ,
করোনা থেকে রেহাই পেতো
দেশের সব জনগণ।
ঘুমানোর আগে কিছু টুকটাক কাজ সেরে ঘুমাতে যাই। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। বিয়ের আগে অভ্যাসটি রীতিমতো ভয়ংকর ছিল। বিয়ের পর একটু কমে আসলেও মহুয়া’র মৃত্যুর পর পুরনো অভ্যাসটি আবারো জেঁকে বসেছে। এখন অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, প্রায় প্রতি রাতেই নির্ঘুম কাটে।
যেখানে থাকি সেই গ্রামটির নাম হাওয়া পাইড়া। এই গ্রামের একদম শেষ মাথায় দুই রুমের একটা ছোট টিনের ঘরে আমার বাস। ঘরের পিছনে এবং ডানে-বামে পুরাটাই ফাঁকা। এককথায় বলা যায় যতো দূর চোখ যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। সামনের সাইটে একটা গ্রাম আছে, পাথরঘাটা তার নাম। পায়ে হেঁটে গেলে তাও প্রায় মিনিট বিশেক তো লাগবেই। তবে আমার কখনো যাওয়া হয়নি ওদিকে। একদিকে তো ওই গ্রামে তেমন কোন কাজ থাকে না তার ওপর মহুয়ার বিশেষ নিষেধ ছিল ওদিকটায় যাওয়ার।
কিন্তু আজ যেতে হচ্ছে আমায়। এই নিশুতি রাতে জনমানবহীন জমির আইল ধরে হেঁটে যাচ্ছি। উদ্দেশ্য জমির চাচা। আপন চাচা নন তিনি আমার। বয়স প্রায় সত্তুরের ওপরে। এখনো লাঠির সাহায্য ছাড়াই দিব্যি হেঁটে বেড়ান। শুনেছি নামকরা কবিরাজ তিনি। দুই-চারটা জ্বিন – ভুত নাকি তার সবসময়ের সঙ্গী। যে আইল ধরে হাঁটছি সেটা৷ একটু পিছলা। সন্ধ্যার দিকে একটা বড় বৃষ্টি হয়ে গেছে। সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। তিন- চারবার পা পিছলে পড়ে যেতে গিয়ে নিজেকে ঠিক রেখেছি।
লাইট না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বেশি। রাত জাগা পোকামাকড়ের ডাক বড়ই অদ্ভুত লাগছে। হঠাৎ একসঙ্গে তিন-চারটা বিড়ালের ডাক কানে। এর মধ্যে আবার একটা কান্না শুরু করে দিয়েছে। ছোট্ট বাচ্চার কান্নার আওয়াজের মতো। ছোট বেলায় মা বলতেন বিড়ালের কান্না ভালো নয়। কুলক্ষণ। বিড়ালের চিৎকারে টেকা দায়। মাথাটা তুলে সবে ডান দিকে তাকিয়েছি। আর অমনিই বাঁ পাটা পিছলে পড়ে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ডান হাতটা কে যেনো খপ করে ধরে ফেলল। তাকিয়ে দেখি জমির চাচা। ধবধবে সাদা পাজামা – পাঞ্জাবি পড়ে আছেন। মুখে হাসি। তার পায়ে কোন কাদার চিহ্ন নাই দেখে একটু হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে ছালাম দিলাম।
– চাচা আমি তো আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম
– হু, চলো তাহলে বাসায় চলো সেখানে আলাপ পাড়বো।
বলেই তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন। আমি ওনার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। গল্পে পড়েছিলাম ভুতদের পায়ের গোড়ালি, আঙুল, পাতা কিছুই থাকে না। কিন্তু চাচার পায়ের দিকে তাকিয়েও আমি কিছু উদ্ধার করতে পারলাম না তার পাজামার কারণ।
জমির চাচার বাড়ি। আমি দাঁড়িয়ে তার দরজার সামনে। উনি বাথরুমে গেছেন। যাওয়ার আগে বললেন, একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। প্রায় মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলেও তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। এভাবে পনের, বিশ, পঁচিশ আধাঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বের হচ্ছেন না দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আশ্বিনের রাতেও আমি ঘেমে উঠছি। একসময় বাধ্য হয়ে দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া শুরু করলাম। যিনি দরজা খুলে দিলেন তাকে দেখে হোঁচট খেলাম। একি জমির চাচা! কিন্তু বয়স এতো কম কেন তার?
দরজা খুলেই তিনি বিরক্ত গলায় বললেন, কে আপনি, এতো রাতে কি চাই?
আমি কোনরকমে আমতা আমতা করে বললাম, জ..মি..র চাচা….! আমার মুখের কথা শেষ করার আগেই উনি কেড়ে নিয়ে বললেন, আব্বা তো নেই। তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
এবার আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। ধপাস করে পড়ে গেলাম সেখানেই। দেখি লাল – নীল – হলুদ বিভিন্ন রকমের আলো দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে। আর আলোর মাঝখানে মাথা তুলে তাকিয়ে আছে মহুয়া। সে যেনো বলছে, আমি তোমাকে নিষেধ করছি না, ওদিকে যাবা না, যাবা না।
.
চলবে…
কখনো কখনো
ভালোবাসা হেরে গিয়েও জিতে যায়;
প্রেমের মুগ্ধতা, নজরকাড়া-শুভ্রতা ছড়ায়।
নতুন বৃক্ষে গজানো কচি পাতার মতই
সজীব হয়ে ওঠে’
প্রেম যেন নদীর তীরবর্তী পথ ধরে
এগিয়ে চলে মহা পথের দিকে…
যেখানে চারপাশ ঘেসে পাহাড়ি উপত্যকা
আর নির্জন মেঠো পথ’ জল স্থল মারিয়ে
পেরিয়ে যায় অসীম এক জটিল পথে।
অবশেষে প্রেম জিতে যায়।
সকল দৈন্যতা’ সকল দুর্দশা, সকল কষ্ট,
সকল ক্লান্তি, সকল বিঘ্নতা অতিক্রম করে
প্রেম জিতে যায়; ভালোবাসা জয়ী হয়।
ভালোবাসা জিতে যায়।
প্রেম জয়ী হয়, জয়ী হয় দুজনের
কাছে আসার পথ সুগম করে।
ভালোবাসা জিতে যায় সাগরের
উত্তাল ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে জিতে যায়।
প্রেম জিতে যায়, নদী মহা নদীর স্রোতের
বিপরীত মুখে পাড়ি দিতে দিতে’
হাঁটাচলা করতে করতে…
এভাবেই প্রেম জিতে যায়
এভাবেই ভালোবাসা জয়ী হয়।
প্রেমই জিতে যায়।
প্রেমের শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ে দিগ্বিদিক
প্রেম যেন জগতের বিস্তৃত পাহাড়ের মতোই অসীম।
প্রেমের কাছে, ভালোবাসার কাছে, যেন
প্রস্তর যুগ, তাম্রযুগ, লোহিত যুগ, বরফ যুগ
যা কিছু রয়েছে যে কোন কিছুই বাধাহীন।
প্রেমের সজীবতা যেন
অনন্ত পৃথিবীর সকল
মরে যাওয়া প্রাণকে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করে।
আর একে যায় সুন্দর পৃথিবীতে নতুন এক পদচিহ্ন!
প্রেম যেন মরুভূমির রাত্রিতে অনন্ত চাঁদ,
অনন্ত জোসনা, অনন্ত রূপের মুগ্ধতা ছড়ায় আকাশ পানে।
প্রেম যেন সাগরের উত্তাল হৃদয়;
প্রেম যেন মরুভূমি বিস্তৃত পথ।
প্রেম যেন দূর নক্ষত্রের তারাভরা অসীম আকাশ।
প্রেম যেন স্বপ্নের মোহনীয়তা…
প্রেম যেন কঠিন হৃদয়ে উর্বর ফসলের মাঠ।
প্রেম যেন কঠিন শাসকের হৃদয়েও
ভালোবাসার কাঁপন তোলে;
প্রেমই যেন আমাদের অন্তর তন্ত্রের নিয়ন্ত্রক;
আমাদের শাসক’ আমাদের সবকিছুর মূলে
প্রেমই যেন জগতের সুন্দর বার্তাবাহক।
নানাভাবে বার্তা দিয়ে যায় নানা রঙের নানা সমঝোতায়।
প্রেম ও ভালবাসার রাস্তায় ক্ষত হলে
মরে যায় প্রেম; মরে যায় ভালোবাসা, মরে যায়
একটি একটি করে দুটি জীবন।
প্রেম নানা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাণের পথ খোঁজে।
আসলে প্রেম খোঁজে শৃঙ্খলা, শান্তি কোমলতা।
প্রেম আত্মিক কামনায় নানাভাবে বলিদান দেয়।
যুগল মনে সঞ্চার করে নতুন এক দিগন্ত।
প্রেম হিংস্রতা খোঁজে না কারও বিরুদ্ধে গিয়ে।
বিপন্নতা খোঁজে না, সহ শতাব্দি ধরে
মৌনতা ভরে তুলে দেয় পাখির কন্ঠে, সুমধুর সুর।
ভালোবাসা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় না।
প্রেম, মনের নগণ্য ভাবনা, নগণ্য চিন্তা আর নগণ্য
অযাচিত প্রবঞ্চনার দানা বাঁধা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আসলে প্রেম বিদ্রোহী নয়
প্রেম বিদ্রোহ করেনা প্রেমে ভালোবাসা থাকে,
অভিমান থাকে, তারপরেও
সবকিছুকে ভুলে গিয়ে কাছে আসে, কাছে যায়।
প্রেম শুধু পবিত্র স্বচ্ছ পানির মত পবিত্র নয়।
তার চেয়েও বেশি কিছু তার চেয়েও সুন্দর।
প্রেম ভালোবাসা শুধু সৃষ্টির সূচনা করে না
প্রেম রচিত করে সমাধির প্রাচীন কবর।
প্রেম মরুর বুকে সৃষ্টি করে নতুন জীবন
শুনেছি প্রেম পাথরে ফুল ফোটায়, মরা বৃক্ষে পাতা জন্মায়।
প্রেম শুধু পবিত্র নয়।
প্রেমের পবিত্রতা জগতের অন্য সব কিছুর
চেয়েও সুন্দর’ অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা
অন্য সব কিছুর
চেয়েও অনন্য অসাধারণ।
প্রেম সঙ্গীত এর চেয়েও সুন্দর, সুমধুপুর।
রাতের ধ্রুব তারার চেয়েও উজ্জ্বল
ধূসর চাঁদের চেয়েও অমায়িক।
প্রেম কঠিন সূর্যের মতো কখনো কখনো জ্বলে ওঠে!
প্রেম নগরের প্রস্তর কঠিন দেয়াল প্রাচীর…
প্রেম সংগীতের চেয়েও সুমধুর
রহস্যের চেয়েও রহস্যময়, অলৌকিকতার চেয়েও অলৌকিক।
প্রেমকে কিভাবে তুলনা করবো বলো,
ভালোবাসাকে কিভাবে তুলনা করবো…
যার কোনো কিছু দিয়ে তুলনা হয়না তাকে কোনো কিছু দিয়ে তুলনা করা যায় না।
প্রেম হেঁটে চলা হাজার কিলো পথ…
প্রেম দীর্ঘ দৈহিক দৌত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইতিহাস গড়ে
প্রেম প্রস্ফুটিত কোমল আলোর চেয়েও সুন্দর।
প্রেম যৌবনের বাধাকে ছেড়ে চলে যায়।
তৈরি করে নতুন এক জীবন আসলে প্রেমের কোন বয়স নেই
ভালোবাসার কোন ছোট বড় নেই।
প্রেম যে কোন ধরনের আগাছা মুক্ত করে
এগিয়ে চলে নতুন এক দিগন্তের দিকে…
প্রেম আগুনকে ভয় পায়না, পানিকে ভয় পায় না।
ঝড় কে ভয় পায় না, তুফান কে ভয় পায় না।
টর্নেডোকে ভয় পায়না, সাইক্লোনকে ভয় পায় না
এমন কি কোন কিছুতে নয়!
প্রেম-ভালোবাসা শাসকের বুকেও কাঁপন ধরায়।
আসলে প্রেম ভালোবাসার জ্যোতির্ময় উৎস
যাকে বারংবার অনুধাবন করতে হয়।
প্রেম সুন্দর, একমাত্র জগত, এই মহান পৃথিবী।
প্রেম ভালোবাসা একজন প্রেমিক মনে পৃথিবীতে বেহেশত তৈরি করে।
প্রেমের মধ্যে স্বর্গের সবকিছু রোহিত।
ভালোবাসা আত্মার নিকটতম মসনদ
থেকে ভেসে আসা রহস্যময় মুগ্ধতা
সৌন্দর্য আর বন্ধুত্বের প্রতীক।
প্রকৃতির মতোই সুন্দর, বন্য হাওয়ার মতই পাগল করা।
প্রেম পৃথিবীর নতুন এক প্রহর…
প্রেম পৃথিবীর নতুন এক দিগন্ত…
প্রেম পৃথিবীর নতুন এক সন্ধ্যা…
প্রেম কখনো সমাহিত নয় সমাদিত হয় চারদিকে
প্রেম যখন জেগে ওঠে অন্তরের কঠিন কলরব থেকে
তখনই বিস্ফোরিত হয় নতুন উজ্জ্বল আলোকরশ্মি নিয়ে।
প্রেম পৃথিবীর অন্য এক রূপ।
যেখানে কোন বর্ণ নেই, সেখানে কোন ধনি-গরীব নেই যেখানে কোন ছোট বড় নেই
আসলে প্রেমের কোন ধর্ম নেই জাতপাত নেই।
প্রেমের কাছে সবাই সমান
প্রেমের কোন বয়স নেই, ভালোবাসার কোনো ঠিকানা নেই।
প্রেম নিজেই এক অসীম ক্ষমতার অধিকারী
প্রেম-ভালোবাসা নিজেই সৃষ্টি করে একটি সাম্রাজ্য।
প্রেম আমাদের আত্মার সুদূর থেকে ভেসে আসা উচ্ছ্ল কলহাস্য।
প্রেম সেই বন্য হাওয়া, যা তোমাকে তোমার বোধের মাঝে সমাহিত করে।
আর শাসন করে শাসক হয়ে
আমাদের সুজলা সুফলা সুন্দর পৃথিবীকে
এখানে মানুষ সবাই সমান।
এখানে মানুষ মানবতার আলোকে নিজেকে রাঙ্গিয়ে
এগিয়ে চলে ভবিষ্যতের দিকে।
আমাদের অন্তরে যদি প্রেম না থাকে, ভালোবাসা না
থাকে তবে তার মাঝে সৃষ্টির কোন কিছুই বিদ্যমান নয়।
প্রেম পরিযায়ী পাখির মতই সুন্দর
পরিযায়ী পাখির মতই দেখতে
প্রেম প্রাচীন হ্রদ এর মতই মানুষকে কাছে টানে
প্রেম আসলে সভ্যতার উদ্যোক্তা…
প্রেম ছাড়া জগতের কোন কিছুই সুন্দরভাবে গঠন হয় না, পরিচালিত হয় না।
যাঁর হৃদয়ে প্রেম আছে ভালোবাসা আছে
তার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই, কেউ নেই।
মন বলে আজ ফিরে যাই সেই ছোটেলায়
যেসময় কেটেছিল দিনগুলো খেলায় খেলায়
ঘুরেফিরে কেটেছিল সময় মেলায় মেলায়
দিন মাস বছর ফুরিয়েছে হেলায় হেলায়।
মন বলে আজ সময়তো বেশি নেই হাতে
যেটুকু সময় ছিল তা হয়েছে শেষ অজান্তে
তবুও যে হায় মন চলে যায় সেই ছোটবেলাতে
জীবনের শেষ সময়েও পারিনা মনটাকে মানাতে।
তা কি হায় সেখানে কি আর ফিরে যাওয়া যায়?
ফিরে দেখা যায়, স্মৃতিগুলো যে মনের মণিকোঠায়
স্মৃতিগুলো যাবেনা মুছে, যদিও চলে যাই ঐ চিতায়
স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে যখন থাকবো না দুনিয়ায়।
আমি ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছানোর কাজ করি; ফুড ডেলিভারি ড্রাইভার। আমাকে রেস্টুরেন্ট এবং ক্রেতার সংযোগ ভাবতে পারেন। কাঁচা বাংলায় দালাল। গরু বাজারে, পাসপোর্ট অফিসে, হাসপাতালে এমনকি সচিবালয়ে আমার প্রজাতিকে পাবেন। তবে তাদের সাথে আমার ব্যবধান হচ্ছে আমি স্বীকৃতি প্রাপ্ত অর্থাৎ সব ধরনের আইন কানুন মেনে দালালি করি। দালালি থেকে আয়কৃত টাকা থেকে সরকারকে নিয়মিত কর পরিশোধ করি। বিনিময়ে কাজে থাকাকালীন সময়ে এবং কাজ বিহীন সময়ে সরকার আমার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। আমাদের প্রজাতিকে লোকে ভাল চোখে দেখে না তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, অথচ বিপদে আমাদের স্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া অনেকের কোন গতি থাকে না।
তবে আজকের গল্প দালালির নয় স্বীকৃত কাজের পুরস্কার এবং প্রসংসার। নামীদামী চেইন রেস্টুরেন্ট যেমন ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সি, বার্গার কিং, নানদোজ, সাবওয়ে, পিৎজা হাট, পিৎজা এক্সপ্রেস, কস্টা, স্টারবাকস, ক্যাফে নিরো ইত্যাদি আমাদের ক্লায়েন্ট, দিনে কয়েকবার এসব রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয়।
দালাল হিসেবে এসব রেস্টুরেন্টে আমাদের কিছু অধিকার থাকে যেমন লকডাউন এর কারণে অন্য কেউ রেস্টুরেন্ট বাথরুম ব্যবহার করতে না পারলেও আমরা যখন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারি। করোনার কারণে কাস্টমার ভিতরে ঢুকতে পারে না কিন্তু আমাদের ঢুকতে কোনো বাধা নেই। আমাদের বসার জন্য আলাদা জায়গা আছে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছাড়াও অন্যান্য সুরক্ষা উপাদান আছে। তাছাড়া আমরা চাইলেই বিনামূল্যে যেকোন ড্রিংকস খেতে পারি। কফি, জুস, কোকোকোলা আমরা চাইলেই রেস্টুরেন্ট দিতে বাধ্য।
আমি সাধারণত যে ম্যাকডোনাল্ড থেকে খাবার সংগ্রহ করি তারা মোটামুটি পরিচিত হয়ে গেছে, হাই হ্যালোর পরেও দুচার বাক্যলাপ আমার এবং স্টাফের মধ্যে হয়। ষাট বছরের এক বৃদ্ধাকে গার্লফ্রেন্ড ডাকি নাম মিস ক্যারোলিনা, সেও আমাকে হানি বলে ডাকে। আমার বয়সের তিন সন্তানের মা। অন্যান্য স্টাফ তাকে এবং আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। আমি ক্যারোলিনাকে বলি ‘ইয়াং লেডি আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ’, সে সম্মতির হাসি হাসে।
গতমাসে একদিন ম্যাকডোনাল্ডে গেলে দেখলাম আমার গার্লফ্রেন্ডের মন খারাপ; কেন জিজ্ঞেস করলে জানাল সে অসুস্থ বোধ করছে, বললাম চলে যাচ্ছ না কেন? সর্ট স্টাফ; ম্যানেজারকে বলতে ভয় পাচ্ছি। ম্যানেজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আমি অনুদার হয়ে গার্লফেন্ডের অসুস্থতার কথা বললাম, কি ভেবে ম্যানেজার ছুটি দিতে রাজী হয়ে গেল।
আমার অর্ডার রেডি হতে কয়েক মিনিট বাকী আমার গার্লফেন্ড রেডি হয়ে এল, আমি বললাম যাবে কিভাবে। বললো বাসে চলে যাবে। বাসে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগে। আমি বললাম চল তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। বললো আরে নাহ, তোমার কাজ। আমার অর্ডার ক্যান্সেল করে দিলাম।
অনেকটা জোর করে তাকে গাড়িতে উঠালাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে ক্যারোলিনা বললো সে বেশ অসুস্থ বোধ করছে তাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিতে, দেখলাম বেশ জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে। আমি বললাম আচ্ছা। হাসপাতাল বেশি দূরে নয় কয়েক মিনিটে পৌঁছে গেলাম, দেখলাম সে তখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। হাসপাতালে ফটকে সে নামল বললাম সাথে আসবো নাকি। ক্যারোলিনা বলল; লাগবে না কিছুটা ভালো বোধ করছে। কাউকে ফোন করতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে জানালো ছেলেকে টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে।
তাকে নামিয়ে দিয়ে আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পরের এক সপ্তাহ ওদিকে যাওয়া হল না। ক্যারোলিনার খোঁজ খবর নেওয়া হলো না। এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ সেই ম্যাকডোনাল্ড থেকে অর্ডার আসলো। আমি ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে পৌঁছালে যে স্টাফ যেখানে ছিল ছুটে এল। সবাই আমাকে ধন্যবাদ দিতে থাকলো।
আমি কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, পিছন থেকে ম্যানেজার এসে হ্যান্ডসেইক করে একটা কাগজ আমার হাতে তুলে দিল। দেখলাম তাতে লেখা ‘থ্যাঙ্ক ইউ মাই ফ্রেন্ড ইউ সেইভড মাই মাদার্স লাইফ’। এরপরেও কিছু না বুঝলে ম্যানেজার বললো এ চিঠি ক্যারোলিনার ছেলে লিখেছে। কাজে থাকতেই ক্যারোলিনার স্ট্রোক হয়েছিল সময়মতো হাসপাতলে পৌঁছায় এ যাত্রা বেঁচে গেছে।
ম্যাকডোনাল্ডে আমার মূল্য অনেক বেড়ে গেছে, স্টাফ ম্যানেজার সবাই আমার খোঁজখবর রাখে যখন তখন ড্রিঙ্ক অফার করে। ম্যানেজার বলেছে যতদিন সে এখানে আছে আমি যা ইচ্ছা খাবার খেতে পারবো।
গত সপ্তাহ ক্যারোলিনা কাজে ফিরেছে আমাকে দেখেই দৌড়ে এল। আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল ‘আই এম রেডি ফর দি ম্যারেজ’। বলেই সে কি লাজুক হাসি! আমি বললাম ‘ইফ মাই ওয়াইফ লেট মি ম্যারি এগেইন, আই উইল ম্যারি ইউ’। ওকে হানি বলে পুনরায় আমার কপালে চুমু। তার মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি, চোখে স্নেহ উপছে পড়ছে ।
তোরাই আমার দেহের নিশ্বাস
স্বপ্ন তোদের ঘিরে,
পাই খুঁজে পাই বাঁচার আশ্বাস
এই দুঃখের নীড়ে।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে
অনেক বড় হবে,
সেই আশাই রাখছি ধরে
আশা পূর্ণ হবে কবে?
ওরা মরলে মরুক;
আমার এতে কী এসে যায়,
টেবিল ভর্তি নানান পদের খাবার সাজাই
দফায় দফায় ছবি দিয়ে জাহির করি,
আমার হাতের রান্না অতি জাদুর খেলা;
লোকে দেখে যতোই ঢেকুর তুলুক,
আমার তাতে কী এসে যায়
লোকের যদি মন খারাপ হয়, করুক।
খাবো দাবো ফূর্তি করে
এফবি ভরে ছবি দেব;
মহামারী’র তান্ডবে আর আগুন পুড়ে
যতোই মানুষ মরুক।
যারটা গেছে বুঝুগগে সে
আমার প্রোফাইল ভরা থাকবে
আনন্দময় মহোৎসবে;
পাশের বাসায় যতোই কান্না চলুক।
দেশের ভেতর যা হচ্ছে তা চলুক
আমি কী ছাই দেশের নাকি;
আমার বাড়ি মঙ্গল গ্রহে
কার মেয়েকে খুন করে যায়
যার মনে চায় যতোই মিছিল করুক,
আমার দরজা খুলছি না ভাই
যা মনে চায় যতোই লোকে বলুক।।
হঠাৎ একটা আর্তনাদ এসে জমাট বেঁধে রইল আমার হাতের মুঠোয়। অন্তহীন জলরেখায় এক জ্বলন্ত মোমের মতো। মানুষের মুখোশ চারপাশে ঘিরে থাকে আর ছায়া অপচ্ছায়ার বীভৎস মুখ।
শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পড়ে রইল কিছু শব্দ, কিছু না বলা কবিতা, একরাশ ঘৃণা, আর এক আকাশ অভিমান। জমাট বাঁধা কান্নায় চিহ্নিত করে গেলাম আমার পথ, এই উদভ্রান্ত বর্ষায়।
গাছপালা উপড়ে দিলেই বন্ধ্যা মাটি, আর গোলাপের কাঁটার ছোঁয়ায় রক্তে ভরে যায় হাত, সমুদ্রের নোনা ঢেউ নেচে ওঠে দুচোখের কোণে। ঠিক যেন নিষ্ঠুর গাংচিলের মাছ শিকার।
কাল রাতেই মিশিয়ে ফেললাম নিজেকে বর্ষার বৃষ্টির সাথে, চোখের জলের সাথে,এদের সাথে বন্ধুত্ব আমরণ। মিশিয়ে নিলাম কিছুটা ফুল,পাতা আর একফালি পাথরের সাথে।
মাঝে মাঝেই নেচে ওঠে স্বপ্ন ছুরির ফলায়, বুকের ভেতরে উথাল পাথাল ঢেউ, আর, জ্যোৎস্নায় ঝড়ের মুকুট পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেই প্রাচীন পাহাড়ের চূড়োয়; একা আমি।
প্রতিদিন যে নিজের বুকে আঁকে ক্রুশ চিহ্ন।
আমরা দু’জন
নেই জায়গা নেই জমি
নেই যে বাড়িঘর,
পরের বাড়িই আমার বাড়ি
ভাড়া একটা ঘর।
ঘরখানা মোর ছোটখাটো
ভাড়া চার হাজার,
টোনাটুনি দু-জনই থাকি
আমার সামান্য রোজগার!
ছেলে ছিলো মেয়েও ছিলো
এখন ছেলে পরপারে,
মেয়েটা থাকে তার শ্বশুরবাড়ি
তিন মানিক ওর ঘরে।
দুটো মেয়ে একটা ছেলে
সুখের স্বামীর ঘর,
শ্বশুর শ্বাশুড়ি ননদ-ননদী
কেউ-তো নয় পর।
আমরা দুজন আছি এখন
চলছি ফিরছি খাচ্ছি,
কদিন পরে যাবো মারা
কী রেখে যাচ্ছি?
যা ছিল মোর বংশের প্রদীপ
অকালে নিভে গেলো,
মৃত্যুর পরে মোদের সমাধিতে
কে জ্বালাবে আলো?