বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

১৪ই জুন নীরাকথা

FB_IMG_160

নীরার সবদিন টাই শ্বশুড়বাড়িতে জেলবন্দী জীবন। এইদিন অত্যাচারের মাত্রা বেশী ছিল। সকাল থেকে খেতে ইচ্ছে করছিল না। বর রীতিমতো লোকদেখানো র জন্য রান্না করে আর নিজের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করে, বৌ কে পদে পদে ছোট করানো হল তাঁর কাজ।

সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”-রমনীকে যদি রমনী হিসেবেই না মানে কি করে সুন্দর হবে।

খেতে ইচ্ছে করে না কেমন যেন বাঁচাটা তাঁর কাছে দায়। খুব কষ্টের। নিজের ইচ্ছায় জল” খাওয়াটাও হয় না। মেয়েদের হয়তো কোন ইচ্ছের দাম দেওয়া হয় না।

মেয়েদের কাজের লোক হিসেবে সংসারে দেখা নিয়ম। গ্রামে শিক্ষিত মেয়েদের কোন মর্যাদা নাই। তাঁরা খুন্তি দিয়ে সময় কাটাবে পরচর্চা করে সবাইকে তাঁদের মতো থাকতে হবে না হলে সমস্যা স্বামীকে দিয়ে মার খাইয়ে এইসব মহিলা মজা পায়।

মানুষের ধর্ম হল দুর্বল লোককে চেপে ধরা। নীরা একজন এম এ পাশ মেয়ে। এদের মত করে না চলতে পারলে এদের সয়তানী বুদ্ধির স্বীকার হতে হয়। গ্রামের লোক সবাই সহজ সরল সিনেমা য় দেখায়। একদম পাক্কা ভুল ধারনা। গ্রামের লোক সবথেকে বেশী হিংস্র টাইপের হয়ে থাকেন। এরা নিজেরা নিজেদের ভালো চাননা। এদের স্বভাব মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো। কেউ পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে তাঁকে প্রতি প্রতি পদে পদে বিপদে ফেলানো। পিছন টে নে ধরা হল মানুষের ধর্ম। নীরা পড়তে ভালোবাসে ঘরকুনো পরচর্চা পছন্দ করে না এটা হল তাঁর সরলতা।

এটার ই সুযোগ নিয়েছে তাঁর শাশুড়ি স্বামী। অত না মেশার কারনে পাড়ার কেউ তাঁর পক্ষে কথা বলতে চাইত না।

এইদিন নীরা কেমন এলোমেলো। মেঘ থেকে লক ডাউন লক ডাউন ঝলকানি। আনন্দহীন জীবনে প্রকৃতি যেন রামধনু নিয়ে ইশারা দেয়। গালিগালাজ খারাপ ব্যবহার পাওয়া সামাজিক ক্রুয়েলিটি মেন্টাল ক্রুয়েলিটি অনেক বেশী সহ্য করতে হয়।

বৃষ্টি সই

198525104_43

আমার কাছে বৃষ্টি আসে রোজই, শার্সি ভেজায়, আরশি ভেজায়, ঝাপসা চোখে ইচ্ছে মেখে, চুপিচুপি জানলায় এসে আমায় ডাকে, কুচি কুচি বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় আমার মুখ। হালকা মাটির গন্ধ নিয়ে, আলতো হাতে আমার চুল উড়িয়ে, বেলা অবেলায় ডাক দিয়ে যায়, ঝিরঝিরিয়ে, আমার ডাকনাম ধরে স্পষ্ট বলে,

“টুউউউকিইইই”…

আমার কাছে বৃষ্টি আসে রোজই। মুচকি হেসে, সবুজ পাতায় নেচে নেচে, আলতো পায়ে কখন এসে দরজা খুলে, আমার গালে টুসকি মেরে, চিলতে খানেক ভিজিয়ে আমায়, হটাৎ ডাক নামেতে ডেকে বলে,

“কুমিরডাঙ্গা খেলবিইই আয়”

আমার কাছে বৃষ্টি আসে রোজই। মন খারাপের উজান বেয়ে, যখন তখন চমক মেখে,মেঘের দেশের হদিশ হতে, বৃষ্টি আসে মন উঠোনে, রিমঝিম তার গানের সুরে, আমায় বলে কানে কানে,

“দেখবি তোকে লুকিয়ে ফেলি”
আমার কাছে বৃষ্টি আসে রোজই!
******
.
আঁকা : রিয়া চক্রবর্তী।

স্বাদের সেলফি

19663

সেলফি’র ঢং, কত-না হয় রঙ-বেরঙে
কেউবা রাস্তায়, কেউ রেল জংশনে
কেউ নদীর পাড়ে, কেউ আগানে-বাগানে
কেউ আকাশ পানে, কেউ মিশে যায় মরণে।

.
ছবিটি চিত্তরঞ্জন গুদারা ঘাট সংলগ্ন নবনির্মিত একটা ভবন।

জাবরকাটা ৫

456454

আমাদের ছোটবেলাটা আজকের বাচ্চাদের শৈশবের মতো এমন তুতুপুতু ছিল না। ছিল না এতরকম অনর্থক ‘এটা কোরোনা কার্টসি শেখো, ওটা কোরোনা প্রোটোকল জখম হবে’ র ত্রিবন্ধনী। পড়ার সময় বাদে অন্য সময় চেটেপুটে সদব্যবহার করেছি। দেখেছি দুচোখ মেলে। সেদিনের দেখে শেখা আজও বহু কাজে লাগে। মাঝেমাঝে নিজের মধ্যে নিজে একলা ডুব দিলে দেখা দৃশ্য সিনেমায় রূপান্তরিত হয়ে মনের চোখের পাতায় খেলা করে।

বলতে গেলে ভারতের মোটামুটি প্রায় সব ভাষাভাষী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের। প্রত্যেক প্রদেশের মানুষের বিভিন্ন অভ্যাসে যে স্বতন্ত্রতা আছে তাকে অনুভব করেছি। উত্তরের খাওয়া আর দক্ষিনী খাওয়া যেমন মেলে না, ঠিক তেমনি দৈনন্দিন আচার, অভ্যাসও আলাদা।
ওড়িয়ারা এমনিতে খুবই শান্ত প্রকৃতির আর স্বভাববাধ্য মানুষ। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে? থাকেও সর্বদাই। কিন্তু শান্ত, সাংঘাতিক কর্মঠ এই মানুষগুলোকে মিশলেই ভালোবেসে ফেলা যায়। ওড়িয়া ভাষাও শিখেছিলাম সেই সময়ে। আজ চর্চার অভাবে ভুলে গেছি।

পখলভাতঅ মানে পান্তাভাত আর রাগঅ মানে ঝাল ওদের খুব পছন্দের খাবার। মাছ বেশি ভালোবাসে মাংসের চেয়ে। সাধারণ নিম্নবিত্তরা গুড়াকুর নিয়মিত নেশা করে। মিষ্টির মধ্যে ওদের প্রিয় মালপোয়া। এটা ওরা প্রত্যেক বাড়ীতেই বানায় উৎসবে, ব্যসনে।

অন্ধ্রের লাগোয়া গঞ্জাম জেলার ওড়িয়ারা তাদের ভাষায়, খাবারে পরিস্কার তেলেগু ছাপ বহন করে। আর মজার ব্যাপার হলো মেয়ের জন্যে ওদের কাছে সবচেয়ে ভালো পাত্র হলো মেয়ের মামা।
আমরা যেমন দোসা খাই ঠিক সেরকমটি তামিল রা খায় না। ওরা নারকেল তেলে ভাজা প্লেন দোসা ভেতরে কোনোরকম পুর ছাড়াই নারকেলের চাটনি দিয়ে খায়। অসম্ভব টক দই ওদের খুব প্রিয়। লুঙ্গির মতো ধুতি যাকে ওরা বলে ভেস্টি, এখনো বহু তামিল, তেলেগু, মালয়ালি পরেন।

গোলগাপ্পা মানে আমাদের ফুচকার ভেতরে গোলাপের পাপড়ি আর বোঁদে দিয়ে কি যে অখাদ্য করে তুলে পরম তৃপ্তিতে পাঞ্জাবীরা খায় সেটা পাঞ্জাবে না গেলে জানতেই পারতাম না। ওদের লস্যির গ্লাস ভারী অদ্ভুত। অনেকটা শঙ্কুর মতো। নীচে সরু ওপরে চওড়া। সাধারণ মানুষেরা কিন্তু খুবই সরল।

বেশিরভাগ রাজস্থানী হিন্দু আর জৈন দু ধর্মই পালন করেন। গরম রুটিতে পাকা ঘি লাগিয়ে উচ্ছে ভাজা আর মাঠঠা মানে ঘোল দিয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ওরা খায়। সঙ্গে অবশ্যই লংকা কিম্বা লেবুর আচার আর আগুনে সেঁকা পাঁপড়।

ওই রুটিই আবার গমের বদলে বাজরার আটার হলে গুজরাতিদের প্রিয়। ব্যাসনের লাড্ডু পশ্চিমাঞ্চলের প্রিয় মিষ্টি।

নাগারা শুনেছিলাম কুকুর খায়। সত্যিই খায়। তবে সব নাগারা খায় না। ওদের মধ্যে বিশেষ দু একটা উপজাতি কুকুরের মাংস খায়। এটা ওদের খুব প্রিয় মাংস। তবে কুকুর পুড়িয়ে খাওয়াই ওরা বেশি পছন্দ করে।

বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। এত ছোট্ট পরিসরে এত বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, আমি তাদের সেইসময়ে এত কাছ থেকে দেখেছি, খেলেছি, ভাব হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে অখন্ড ভারত আছে সেদিন বুঝিনি। আজ একান্তে বসে অনুভব করি গান গাইতে গাইতে শীতের দুপুরে পাঁপড় বেলা মধ্যবয়সীনির দল আর আমার মায়ের মধ্যে একটুও তফাৎ ছিল না সেদিন, আজও নেই।

জীবনের পতাকা

উনচল্লিশে আটকা পড়েছিলাম
এই বুঝি রাস্তার শেষ।
কোথাও কোন আলো ছিল না,
পাশে ছিল না কোনো খড়কুটো;
সব সম্ভাবনা তিরোহিত হওয়ার পরে;
যখন চিরকালের ডুব দেওয়ার
প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন ভেতর থেকে
শেষবারের মতো ভেসে উঠার
আওয়াজ আসছিল। মৃত্যু প্রবল
বিক্রমে টানছে জীবন তবু শেষ চেষ্টার
গান শোনাচ্ছে, হাল না ছাড়ার
প্রণোদনা দিচ্ছে।

এখন একান্ন’র রাস্তায়।
উনচল্লিশে জয়ী হয়ে
রাস্তার পরিধি বাড়িয়েছি।
জীবনের গানে আস্থা
আরো মজবুত হয়েছে।
পরাজয় সহজ, সহজ
আত্মসমর্পণ। জীবন আপোষের
মৃত্যুর চেয়ে অনেকগুণ মূল্যবান,
জীবনের মূল্য জ্ঞাত হতে হবে।

হাল ছেড়ে দিলে মানুষ
মরে যায়, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত
মানুষকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে
জীবনের পতাকা।

কবর

হ্যারিকেনের সলতে শুকিয়ে গেছে
তলানিতে যতটুকু কেরাসিন ছিল
ফুরিয়ে গেছে।

দপ করে জ্বলে ওঠা সুদূর অতীত
অবশিষ্টাংশ শুধুই ছাই
সব ফুরিয়ে গেলে যেমন
শূন্যতা ছেয়ে আসে

তেমনি শূন্য শরীর নিয়ে
অপেক্ষায় আছি, শীঘ্র কবরে ঢুকব।

ছোটলেখকি

কিছু ছড়া আর অল্প কিছু পদ্য নিয়ে ‘হিরের স্বপ্ন চারকোলে’ – একটা তিন ফর্মার সংকলন করেছিলাম ২০১১ সালের শেষে। তার শুরুতে এই চতুর্পদী ছিল –

রাত যদিও মূর্ছিত
সকাল জন্ম তার কোলে
ভাঙা ডানায় উড়ছি তো
হিরের স্বপ্ন চারকোলে

আমার তখন ভাঙা-ডানা নয়, মূর্ছিত দশাই। সেই বইয়ের বড়জোর পাঁচ কপি বিলিয়েছি বন্ধুদের। বাকিটা পড়ে থেকে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

গত আট-ন’ বছরে আমার কবিতা লেখার ক্ষমতাও হাত ফসকে জলডুব, আর টলমলে জাহাজডেকে দাঁড়িয়ে সেই অনুত্তীর্ণ হাতে ধরার চেষ্টা করেছি উড়ন্ত কিছু ঠাট্টাতামাশা, ছড়াপদ্যের রুমালে জড়িয়ে। এরাই আমার হালকাপুলকা ছোটলেখকি। আজকে নতুন-পুরনো লেখা থেকে বেছে একটা ‘ছদ্য’ সংকলনের কাজ গুছিয়ে রাখলাম।

কারও আপত্তি থাকলে ‘ছোটলেখকি’-র বদলে বইয়ের নাম হতে পারে –

‘ভালো হইতে সাবধান’

সমস্ত গাছ রাজনৈতিক, মাথায় পেরেক পতাকার
পাঞ্জাবিরঙ দিচ্ছে ব’লে কে কোন গানের কথাকার

ভাবুক চোখে ছাত্র পড়ায়… কী যেন ‘বিশ্বাস’ ছিল?
‘বিদ্বেষী’ ওর হাল-পদবী, মনে মেঘের চাষ ছিল!

আঙুরথোকায় ভক্তি রেখে দেশের সেবায় যোগদান
ঢোল বাজছে : “আমিই ভালো”। ভালো হইতে সাবধান!

বাংলা মায়ের কাঙাল ছেলে তাও তো পেলে সান্ত্বনা
পঞ্চধাতুর বিদ্যেসাগর আছাড় খেলে ভাঙত না

আমরা সড়কছাপ, শুধু এই পথের স্লোগান দেবো:
হাওয়াগাড়ি হে, সাইকেলকে মানুষ ব’লে ভেবো।

স্মরণার্থী

এক
কাল রাত্তিরে বাথরুমে ঢুকছি, ফটাস করে হাওয়াই চপ্পলের ফিতে গেল ছিঁড়ে। আর প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় এক মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে আমার মাথা প্রশ্ন করল, সেফটিপিন?
চৌকাঠে ঝিম হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম দু’তিন মিনিট। মাটির ১২০ ফুট নীচ থেকে ভেসে উঠেছে “নিরাপত্তাকাঁটা” শব্দটা, আর মন কাঁকরবালি খুঁড়তে খুঁড়তে হু হু করে নেমে যাচ্ছে আরও অন্তত ২৩০ ফুট, আর্সেনিকহীন দ্বিতীয় স্তরের জলে — যেখানে শালুকপাতার মতো থাক-থাক সাজানো আমার শৈশব, স্কুলের পেতলের থালাঘন্টা, আমার আধপেটা রাতগুলো।

হাওয়াই চপ্পলের সঙ্গে শরণার্থী জীবনের সম্পর্ক নিয়ে কোনও না কোনও দিন প্রেমের এপিক লেখা হবে আমি জানি। মনে পড়ছে সদ্য চাকরি পেয়ে অডিট টিমে পোস্টিং হয়েছে, সবাই শিয়ালদায় একসাথ হই, তারপর গাড়ি নিয়ে অকুস্থলে রওনা। তো একদিন স্টেশানের “অনুসন্ধান-এ পৌঁছোতেই সিনিয়ার কোলিগ বললেন, ঠিক বুঝেছিলাম, এই যে ভিড়ের ঝাঁকটা বেরলো, এ চন্দনের ট্রেন না হয়েই যায় না।
— কী করে বুঝলেন!
— আমি তো প্যাসেঞ্জারের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। এইট্টি পার্সেন্ট হাওয়াই চটি মানেই বনগাঁ লোকাল।

দুই
আমরা রাবারের চপ্পল ফটফটিয়ে কলেজে বা সিনেমায় যেতাম; বিয়েবাড়ির ড্রেস হল ডেকরনের প্যান্টে টেরিলিনের ফুলহাতা শার্ট ইন করা এবং পায়ে বল-সাবানে মাজা হাওয়াই চপ্পল। আর ঝিঁঝিঁব্যাঙল্যাটামাছশামুককেঁচোখচিত ছোটবেলার সেই বিমানবিধ্বংসী বর্ষাকালে সবুজ শ্যাওলা অবুঝ এঁটেলমাটির ওপর দিয়ে আমরা যেভাবে আছাড়বিমুক্ত ছুটে যেতে পেরেছি পায়ে মসৃণ চটি, ততটা স্বচ্ছন্দ ডোবার জলে জলঢোঁড়া হয়ে দেখাক তো!
কিন্তু কখনও কখনও ওই এঁটুলি মাটিই চটির আত্মাকে ছাড়তে চাইতো না, তখন তাকে খিঁচকে সরাতে গেলেই উৎপটাং ব্যাপার। পা বেরিয়ে এসেছে, নগ্ন-একপদ বুদ্ধদেব চেঁচিয়ে উঠল:
— মা? ও মা! চটি ছিঁড়ে গেছে। সেপ্টিপিন নিয়ে আসো।
হন্তদন্ত এক ঘোরশ্যামা অনেকখানি লম্বা হেতু রান্নাঘর থেকে ঘেঁটি-নিচু বেরিয়ে আসে। দুহাতের শাঁখাপলা-সমৃদ্ধ কবজি হাতড়ায়।
—না রে মনা, সেপটিপিন তো নেই!
— ধুস, তোমরা যে কী কর না! এখন কী ক’রে ইশকুলি যাব?
দাঁড়া দেখতিছি, ব’লে মা আমার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে বাড়ির দক্ষিণে লিচুগাছের ওপর বসা দোয়েলপাখির দিকে তাকায়, ওপরটি দিয়ে নিচের ঠোঁট আস্তে চেপে ধরে। আর বুকের কাপড়ের নিচে চালান করে দেয় হাতদুটো।
এমন কতবারই হয়েছে, কিন্তু তখন তো আমি ক্লাস এইট ছিলাম না, সমঝদার ছিলাম না। ঝটকা দিয়ে মুণ্ডু ঘোরাই।
— লাগবে না। তুমি বরং আমারে পাঁচ নয়া দাও, চটিসারা-র কাছ থেকে সেলাই ক’রে নিয়ে যাবানে।
মা প্রথমে বিমূঢ় হয়, তারপর তার মুখের সাগরতীরে “আচ্ছা, বুঝেছি”-র গোলাপি সূর্য উঠতে থাকে! নিজের শিশুসন্তান পরিণত ও যত্নবান পুরুষে বদলে যাচ্ছে টের পেলে আনন্দ আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের নারীসত্তার দিকেও কি আর একবার ফিরে তাকায় সেই মা?
— অ মিনু, তোর কাছে সেপটিপিন থাকলি অ্যাট্টা নিয়ে আয় তো!
খোপের পড়ার ঘর থেকে বাড়ানো-হাত দিদি নেমে আসে, তার দিকে মা এক অসীম রহস্যভরা মুখে তাকায়।
— আমারে না, ভাইরে দাও। উনি আমার সেপটিপিন নেলেন না।
হাঁটু গেড়ে বসে চটিতে রিফুকর্ম শুরু করি আর বেশ বুঝতে পারি অন্ধকার আকাশে তরোয়াল ছুটে যাওয়ার মতো দুই নারীর সংকেতময় চোখ আমার মাথার চুলে অজস্র নরম তারা ঝরিয়ে দিচ্ছে।

.
[“আকাশের আন্ডারগ্রাউন্ড” গদ্যগ্রন্থ থেকে]

এক বন্ধুর আত্মকাহন

4521

ক্লাসের সবচেয়ে চঞ্চল জেদি একঘেয়ে কৃষ্ণবর্ণের ছেলেটা,
স্মৃতিকে এক পলক দেখবার জন্য চেয়ে থেকেছে ঐ পথটা।
মনের আকিঞ্চনে ঐ পথটার ধারে করেছে কতবার পায়চারী,
তা জানেন শুধু বিভো,আর করেছে কত আহাজারি।
স্মৃতির মুখনিঃসৃত বাণী শ্রবণের জন্য, কেঁদেছে তার মন প্রাণ,
সাইন্স ল্যাবের কাছে দাঁড়িয়ে ছেলেটা গাইত বেদনা বিধুর গান।
সেই এক ঝড়ের দিন অপরাহ্ণে মনে জাগল ছেলেটার আশা,
হঠাৎ দেখা স্মৃতি সাথে তার বদনখানিতে নেইকো কোনো ভাষা।
তখন স্মৃতির আঁখি ছলছল করছিল বেশ,
আঁখিতে তেমন একটা স্বপ্ন ছিল না কিন্তু,
যার ছিল দীঘল কালো কেশ।
স্মৃতির বাহুদ্বয় সতত লাগত নকশা করে মেহেদি,
চরণ যুগলে পড়তো নূপুর আরও যেন কি কি।
কোনো এক বৈশাখী মেলাতে স্মৃতি ছিল মঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে,
তখন সে ছেলেটা স্মৃতির প্রাণে তাকিয়ে দুহাত দিয়েছিল বাড়িয়ে।

যদি হতো না কোনো কারণে স্মৃতির সাথে দেখা,
ছেলেটা সেই দিন থাকত বুভুক্ষা।
বলত না কো কভু কারো সাথে কোনো কথা,
উদাস মনে ঐ পলাশ বৃক্ষের নিচে বসে থাকত নিয়ে বিরহ ব্যথা।
সেই কি মান অভিমান শেষ হবার নয়,
যতক্ষণ না পর্যন্ত স্মৃতির দেখা হয়।
নিত্য নতুন চিঠি লিখে ঘুরত নানা জন,
তারা কেউ ছিল না স্মৃতির সেই ছেলেটার মতো সুজন।

.
উৎসর্গ : (রাসেল স্মৃতি )

রচনাকালঃ
২৪/০৪/২০২১

Probable Causes of Blood Clotting Driven by SARS-CoV-2

Coronavirus Disease 2019 (COVID-19) has transmitted almost all over the world. COVID-19 is caused by Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2 (SARS-CoV-2), which transfers from an infected person to a susceptible person via direct contact (e.g., hand-shaking, hugging) or indirect contact through touching materials or objects that are contaminated by an infected person (e.g., doorknob, handrail, paper tissue). It can also spread via airborne route (i.e. through aerosols created by expiratory activities). After entering the respiratory tract of human body, SARS-CoV-2 bioparticles may cause the most common symptoms of fever, cough, and fatigue. They may also cause sore throat, headache, chill, runny nose, loss of taste or smell, skin rash, muscle pain, nausea and vomiting, loss of appetite, diarrhea, dizziness, abdominal pain, and discoloration of fingers or toes. The severe symptoms of COVID-19 are shortness of breath or difficulty in breathing, chest pain, and loss of speech or movement. Recently, blood clotting has emerged as a new risk of COVID-19. Indeed, skin rash and discoloration of fingers or toes are the visible signs of blood clotting. The reduction of oxygen level in blood is another indication of blood clotting, as the oxygen supply to the tissues and organs of human body will be greatly affected if blood clots occur. The following are the probable causes of blood clotting.

1. SARS-CoV-2 particles can increase the viscosity of blood because of their own physical characteristics. The outer surface of SARS-CoV-2 having protein spikes may cause friction with other ingredients of blood (e.g., red cells, white cells, and platelets) and among themselves. They can also cause friction on the surface of the innermost layer (tunica intima) of blood vessels. It means the blood flow in the blood vessels will be hindered due to the increased resistance against flow. Such impaired blood flow may contribute to cause blood clotting.

2. SARS-CoV-2 particles may increase the viscosity of blood by increasing the concentration of the bioparticles in blood. The viscosity of whole blood is directly related to the viscosity of its plasma (the higher the viscosity of plasma, the greater will be the viscosity of whole blood) and the concentration (volume fraction) of the bioparticles present in blood (the larger the concentration of the bioparticles, the greater will be the viscosity of whole blood). This means the effective viscosity of whole blood will increase with the increasing volume fraction of the bioparticles existing in blood. It implies that the whole blood shall be thicker when the increased load of virus particles increases the volume concentration of the bioparticles in blood. The extremely increased viscosity could lead to blood clotting in human body.

3. SARS-CoV-2 particles could interlock with each other because of their characteristic outer layer having protein spikes, leading to formation of virus cluster. This physical process may also involve other blood particles (e.g., blood cells). In addition, the stickiness of the envelope of SARS-CoV-2 due to its spike protein (S-protein) and envelope protein (E-protein) could help forming the clusters of virus particles and blood cells. It implies that SARS-CoV-2 may collectively form obstacles across the blood flow direction, thus contributing to blood clotting.

4. SARS-CoV-2 particles may attach to the inner lining (tunica intima) of blood vessels, taking the benefit of their sticky outer layer, thus narrowing the vessel space along the direction of the blood flow (i.e., the cross-sectional area of blood vessels across the blood flow direction decreases). It is also possible that SARS-CoV-2 particles assemble in several layers with the foremost layer attaching to the tunica intima of blood vessels. Such array of virus particles will also decrease the cross-sectional area of the blood vessel across the blood flow direction. Consequently, the blood flow will be significantly obstructed. Furthermore, the endothelial cells of tunica intima may not help regulate the pressure for blood flow when they are lined with SARS-CoV-2 particles. The production of enzymes (e.g., nitric oxide) that help inhibit blood clotting may also be impeded when the endothelial cells are attacked by SARS-CoV-2 particles. These probable consequences eventually may cause blood clotting in extreme condition.

5. The physical structure of tunica intima reveals that SARS-CoV-2 particles could easily be attached to the endothelial cell-to-cell links. These links are very thin compared to the other parts of tunica intima. Hence, the inner lining can easily be ruptured by SARS-CoV-2 particles at those thin links and the underlying internal elastic membrane can be exposed. This damage may trigger blood clotting inside the blood vessels. The breaching of tunica intima shall result in rushing of additional platelets and clotting factors (e.g., prothrombin, fibrinogen) to the damage sites and they will start the process for the formation of blood clots.

6. SARS-CoV-2-induced cytokine storm may be another reason of blood clotting in the blood vessels. Coronaviruses can reach different locations of human body including the blood vessels although they first penetrate the lungs. When the endothelial cells in tunica intima are injured by SARS-CoV-2, they send “SOS” to the immune cells, which rush to the damage sites. The immune cells crowd on the damage sites. The activated immune cells secrete small proteins called cytokines, which prevent the pathogens (e.g., bacteria, viruses) from spreading in the body, contributing to blood coagulation (thickening) with increased viscosity. However, excessive cytokines may lead to uncontrollable blood coagulation. In such condition, anti-coagulants (thinner) present in the whole blood are not quite enough to inhibit blood clotting.

7. SARS-CoV-2 particles would decrease the velocity of whole blood being in the blood vessel. This is due to the additional mass of viruses or owing to the thickening of blood in the presence of virus particles. Since blood is a non-Newtonian flow, its viscosity increases at a lower velocity. Also, the low flow state of blood enhances the molecular interactions of blood cells among themselves and with plasma proteins. Consequently, blood cells (particularly red cells) can agglomerate to form clusters of cells, and thus further increase the viscosity of blood. At a very high viscosity caused by high degree of molecular interactions, blood may stop flowing if the driving pressure remains below the yield stress that initiate flow. Moreover, platelets can get closer at a higher viscosity and the cluster of platelets, acting along with plasma proteins, can entrap red cells to form blood clotting.

টুকরো কিছু শব্দ

18276_n

কত অখাদ্য, কুখাদ্য, হাবিজাবি লিখি যে! অর্থবহুলতা কিংবা অর্থহীনতার শব্দের একরাশ মালা গাঁথা। কখনো যাপিত জীবনের ক্লান্তি! কখনো দীর্ঘশ্বাসের উত্তপ্ততায় বাতাসকে উষ্ণ করে দেওয়া! আমি কি আদৌ কখনো নৈবেদ্য সাজিয়েছি? অর্থ বহুল, অর্থহীন স্বপ্নের জাল বুনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি ক্যানভাসে?

জানি, জীবনের ক্যানভাস বেশিরভাগ বেরং থাকে, কিংবা কোনো শ্যেড মেলেনি। মিলবেও না জানি। রঙ তো আর ইচ্ছে নদী নয়, বয়েই যাবে ইচ্ছেমত। রঙ দিয়ে জীবন রাঙায় ঠিকই, তবে রঙ তো থাকতে হয়। লাল আর হলুদ মিলে এক তীব্র আগুন রং হয়। তাতে কারো হৃদয় শীতল হয় কি?

শব্দেরা যেমন অদ্ভুত, এলোমেলো কিংবা অচেনা। রং গুলোও তেমন। কারো হয়ত বৈচিত্র্যে জীবন ভরে যায়। তবে, সেগুলো নেহাতই ক্ষণস্থায়ী। সমস্ত কিছু কে বুঝতে চায়? সমস্ত কিছু বুঝতে পারেই বা ক’জন? কেউ পারেনা। পৃথিবীতে খুব কমই বুঝতে পারে বা বুঝতে চায়। অদেখা একটা পৃথিবীতে বাস এই পৃথিবীর মাঝেই।

কোথাও যেমন সবকিছু স্পষ্ট। আবার কোথাও সবই অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে, অজানা। জীবন আমাদের স্পষ্ট আর অস্পষ্ট এই দুই নিয়েই বহমান। কারো জীবন থেমে থাকেনা অজানা জানতে না পারায়, কারো জীবন থেমে থাকে না ভীষণ আঘাতে জর্জরিত হওয়ায়। “শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা”। নিয়মের নির্নিমেষ অদ্ভুত খেয়াল।

শব্দকে জঞ্জালের মতন লাগে মাঝে মাঝে। অথবা জালের মতন? কী অদ্ভুত এক ইন্দ্রজাল এই শব্দগুলোতে। জাল এবং জঞ্জাল, শুধু ‘জন’ মিলেই দু’টি আলাদা শব্দ করে দিলো, আলাদা অনুভূতি, আলাদা সম্পর্ক। মানুষও অনেক সময় জালের মতন, শুধুই আটকে থাকতে চায় মোহে আর মায়ায়। আবার ক্ষুদ্র কিছু ‘জন’ মিলেই তাকে হয়ত জঞ্জালে পরিণত করে দেয়।

প্রায়ই খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবি, এভাবে আকাশ দেখতাম ছেলেবেলাতেও, হয়ত অনেক বছর আগেও। অথচ সেই আকাশ আর এই আকাশ বদলে গেছে কতই। বুকের ভাষা, চোখের ভাষা, হৃদয়ের অনুভূতি বদলে গেছে অহর্নিশ। কে মাপতে পারে তা?

জানি থাকবো না একদিন। তবু এত মায়ায় জড়ানো, এত ঘৃণায় জড়ানো এই জীবনের প্রতি অনিচ্ছাকৃত ভাবেও তাকিয়ে অবাক লাগে। কত না বলা শব্দ, কত উত্তর না জানা প্রশ্নগুলো জমে থাকবে আইসবার্গ এর মতো মৃত্যুবধি। আচ্ছা, যদি আমি নাই হয়ে যাই? এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে, সত্যিই কি কেউ মনে রাখবে আমায়? জানি কেউ মনে রাখবে না। তবে সবসময় সবকিছু জানতে নেই।

মাঝে মাঝে কিছু আড়ালে থাকাই ভালো।

বৃষ্টি এল রে

pexels

বৃষ্টি শুরু হলো। এ বাংলা বছরের প্রথম বৃষ্টি। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই কাঠের বনবাংলোর টালির চালে বেশ একটা মৌতাত জমানো কনসার্ট। হাওয়ার গোঁ গোঁ শব্দ, ভয়ার্ত পাখিছানার অস্ফূট কিচমিচ, দূরের আদিবাসী গ্রামে ঘুমন্ত গেরস্তর দরজায় শুয়ে থাকা বার্ণিশ করা কালো কুকুরের ডাক, গম্ভীর মেঘের তাল – সুর – লয় মেলানো ডাক মিলেমিশে মোৎসার্টের সিক্সথ সিম্ফনি কেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলো। এ বছরের প্রথম বৃষ্টি।

প্রত্যেক টুকরো মিলিসেকেন্ড জুড়ে এক আশ্চর্য নক্সায় বোনা হয়ে যায় এক আস্ত জীবন। সিগারেটের নীল ধোঁয়া আবছায়া নারী অবয়ব তৈরী করতে করতেই যেমন হঠাৎই ভেঙে এদিক ওদিকে বিস্তার করে তার লাইটইয়ার গতির অয়েলপেন্টিং। তারপর টুকরো হতে হতেই মিলিয়ে যায়, রেখে যায় কিছুটা কটু কিছুটা মিষ্টি গন্ধ, তেমনি অনেক আঁচড়ের দাগ দেহে স্বাক্ষর না রেখে লাবডুবডুব ছন্দের মেশিনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের আবোলতাবোল সরণীর এ গলি ও গলি বেয়ে কুমির তোর জল কে নেমেছি খেলায় মেতে ভুলেই যায় সারাদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোন অন্ধ বনে এক কাঠুরিয়া একমনে লোহার কুড়াল কে আদর করে আর মুখ তুলে অন্যমনস্ক চোখে আকাশ দেখে।

বৃষ্টি এলো কি মহাজন! বছরের প্রথম বৃষ্টি!

পাঁচশো কোটির একমাত্র সবেধন নীলমনি প্রাণী ইউনিভার্সে একা রাজত্ব করে অন্যদের মাথায় ছড়ি ঘুরিয়ে। তার ঘরকুনো স্বভাব, তার মুসাফিরি, তার বৈপরিত্য, তার অসূয়া, তার তীব্র পাহাড় ফাটানো গলিত লাভার মতো ভালোবাসা আছড়ে পড়ে বৃষ্টির প্রথম দমকে তেতে থাকা ফুটিফাটা মাটির ওপরে। একা রাত্রির অনাদর সহ্য করে ভাবনারা নিউরন ভেদ করে উঠে আসে, সূর্য লাল না হলে গাছেরা সবুজ হতো না। অন্ধকালো একপাশে সরিয়ে আকাশ লাল আভায় পেতে দিচ্ছে ইচ্ছে আসন। সাইবেরিয়ান অতিথি ফিরে গেছে তার নিজস্ব চঞ্চু নির্মানে প্রিয় মুখ ঢলঢল আবেগ শিবিরে। এসেছে নতুন অতিথি, বহুদিনের অপেক্ষার মেঘের গর্ভ ফাটিয়ে।

ওরে শাঁখ বাজা! ও গ্রাম্য ছলাৎ ছল কালো নষ্টস্বপ্ন পারিস কি এই সাইবার সময়ে এখনো উলু দিতে!

বৃষ্টি এলো রে! এ বছরের প্রথম বৃষ্টি!

সূচয়না

সূচয়না, তুমি কি জানো কতদিন দেখিনি তোমায়,
হয়তো জানো না, আর জানতেও তুমি চাওনা।
জানে ঐ নদী নক্ষত্রের দেশের, নীল আকাশের নক্ষত্রগুলো।
আরও জানে ঐ অমাবস্যার রাতে বিস্তর জোনাকি।

সূচয়না, তুমি বিহীন এ আমার জীবন স্পন্দনহীন,
তোমার পরশ পেলে আমার এই নিথর দেহে প্রাণ ,
স্পন্দনে স্পন্দিত হয়,
তোমাকে বিহীন আজ আমার হৃদয়, বিধস্ত ট্রয়নগরীর মতো।

তোমার কথা মনে পড়লে প্যালেস্টাইনের শোকার্ত জননীর মতো,
চিৎকার করে কাঁদত আমার ইচ্ছে করে।
সূচয়না, তুমি হয়ো না কো পাষাণী,
পত্র ঝরা বৃক্ষের নিচের বিদীর্ণ প্রহরে একটু দেখা দিয়ো।

সূচয়না, তুমি হয়ো না কো হৃদয়হীনা,
তাহলে আমি হয়ে যাব ঐ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মতো,বাস্তুচ্যুত।
সূচয়না, তুমি আমারে ফেরারি জীবন দিয়ো না,
আমি তোমায় নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পারি দেব,
এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিলাষ ।

রচনাকালঃ
১২/০৪/২০২১

অন্যকে বাঁচাতে নিজে সতর্ক হোন, অন্যকে সতর্ক করুন

175

গণ চিতায় জ্বলছে ভারত। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ! আমাদের অসতর্কতা আমাদের গাফিলতি আমাদের কেউ কি এমন নির্মম পরিণতির শিকার করবে? আমরাও কী তবে মাটিচাপা পড়বো? করোনা আপনার কাছে আপনাআপনি আসবেনা একে বাইরে থেকে আমরাই আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের অসতর্কতা অসচেতনতা গাফিলতি হেঁয়ালিপনা’ই মহামারীতে রূপ দিচ্ছে।

আমরা যদি আমাদেরকে সতর্কতার সহিত নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলেই করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পাবো, নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। অতএব বাইরে যেখানেই যান মাস্ক ব্যবহার করুন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর ব্যবহার করুন। নিজের প্রটেকশন ছাড়াও আপনার আশেপাশের যে সকল গরিব মানুষ অসহায় মানুষ আছে তাদেরকেও এসব ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করুন, সহযোগিতা করুন এতে আপনার সামাজিক দায়িত্বটিও পালন হবে।

বিনা কারণে বিনা প্রয়োজনে বাইরে অকারণে ঘোরাঘুরি করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী চারপাশের গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষদেরকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করুন। আপনার সামান্য সহযোগিতাই পারে একটা পরিবারকে রক্ষা করতে। মনে রাখবেন কোন জীবনী ছোট নয় মূল্যহীন নয়, অপ্রয়োজনীয় নয়, জীবন অতি সহজলভ্য বস্তু নয় যা অকারণে হারাবে।

রাষ্ট্রের এই বিপদে যার যার জায়গা থেকে যার যার অবস্থান থেকে যার যার সামর্থ্য থেকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে পারেন। জীবন বাঁচাতে জীবন রক্ষা করতে জীবনের মূল্য দিতে। এই বিপদ কেটে গেলে অবশ্যই আমরা আবার মিলিত হব, সবাই হাতে হাত রেখে চলতে পারবো, প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারবো, নতুন একটা জীবন নিয়ে আবার নতুন করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।

আপনার পরিবার আপনাকে নিয়ে যেভাবে চিন্তিত তেমনি চিন্তিত ওই গরীব অসহায় দিনমজুর মানুষের পরিবারটিও। আপনি যেমন আপনার পরিবারের হিরো সেই গরীব অসহায় পরিবারের একজন পিতা একজন ভাই একজন মাথা একজন বোন। এই করোনা মহামারী নিশ্চয়ই আপনাকে বুঝিয়ে দিয়েছে দুনিয়াতে অর্থ সম্পদের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বড় কিন্তু এই করোনা মহামারীর কাছে আপনার জীবনের মূল্য একদম বেকার। করোনা ধনী গরিব দুঃখী অসহায় মানুষ দেখে আসে না, আমাদের অসহায়ত্ব আমাদের দুর্বলতাগুলো আমাদের হেঁয়ালিপনা আমাদের ছোট ছোট ভুল করো না আমাদেরকে আক্রমণ এর জন্য দায়ী।

আমরা চাইলেই একে প্রতিরোধ করতে পারি। আসুন জীবনের মূল্য দিতে জীবনের জন্য এগিয়ে আসি। এই মহামারী হেরে গেলে নতুন একটা জীবন পাবো আমরা। এই মহামারী যদি তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে পারে তাহলে আমরা হেরে যাবো। আমরা অতীতে বহু যুদ্ধ জয় করেছি এই যুদ্ধ একইসঙ্গে লড়ি; এই যুদ্ধ আমরা জয় করব এই যুদ্ধ থেমে গেলে আমরা আবার নতুন করে শ্বাস নেবো। সবাই সতর্ক থাকুন সবাই সবার কে সহযোগিতা করুন, সবাই সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।

আমাদের সতর্কতা এবং আমাদের সহযোগিতাই পারে আমাদের দেশকে এমন বিপদ থেকে রক্ষা করতে। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করতে। আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে। আসুন আমরা হাতে হাত মিলে এই ভয়ঙ্কর মহামারী বিরুদ্ধে লড়াই করি। আমরা বেঁচে থাকলে আগামী প্রজন্ম বেঁচে যাবে। আমরা বেঁচে গেলে আরেকটি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবো। আমাদের এই লড়াইটা নিজের সাথে নয়; অদৃশ্য একটি শক্তির সাথে এই অদৃশ্য শক্তি কে হারাতে গেলে, অবশ্যই নিজের শক্তির সাথে আপোস করতে হবে।

নিজের সামর্থ্যের সাথে আপোস করতে হবে। নিজের চিন্তা ভাবনার সাথে আপোস করতে হবে। নিজের বিবেক বিবেচনাবোধের সাথে আপোষ করতে হবে। নিজে যদি এই আপোষহীনভাবে যাচ্ছেতাই ভাবে ঘোরাফেরা করি, চলাচল করি তাহলে এই যুদ্ধে আমরা হেরে যাবো আর এই যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানে এই যুদ্ধ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। বিশ্বের অন্যান্য লড়াকু জাতির মত ওই আমরা একটি লড়াকু জাতি, আমরা কোন বিপদে দেশের বিপদে, রাষ্ট্রের বিপদে, সমাজের বিপদে, পরিবারের বিপদে অদৃশ্য শক্তির বিপদে পেছনে ফিরে তাকাতে পারিনা।

এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হলে সম্মুখ সারিতে থেকেই লড়াইটা করতে হবে। আসুন করোনাকে ভয় না পেয়ে ধৈর্যের সাথে তার মোকাবেলা করে করোনাকে ভয় না পেয়ে তাকে প্রতিহত করার দুর্গ গড়ে করোনাকে ভয় না পেয়ে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
👍🏿মাস্ক পড়ুন
👍🏿ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
👍🏿হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন
👍🏿খালি চোখে চলাচল বন্ধ করুন
👍🏿শরীরে প্রটেকশন পোশাক পরিধান করুন
👍🏿বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে গোসল করুন
👍🏿অফিস আদালতে কলিগ সহপাঠী সহকর্মী বন্ধু-বান্ধবদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলুন,কথা বলুন।

👍🏿 বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
👍🏿যে পোশাক পড়ে একবার বাইরে গিয়েছেন দ্বিতীয়বার পরিধান করার চিন্তা না করে বাইরে রাখুন প্রয়োজনে খোলা মাঠে বা বারান্দায়, ছাদে সূর্যের তাপমাত্রায় রেখে দিন এবং দ্রুততার সহিত পরিষ্কার করুন।

👍🏿ঘনঘন গণসমাবেশে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
👍🏿যাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার সামর্থ্য নেই অথবা মার্কেটে শর্ট সাপ্লাই হচ্ছে পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে কি করবেন ঘরে ব্যবহারের জন্য আপনি নিজে নিজেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে পারেন।

যেভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাবেন
👍🏿১.৫ লিটার পানির মধ্যে একটি লাইফবয় সাবান, ডেটল সাবান অথবা ব্যাকট্রল সাবান গুলিয়ে নেবেন তারপর কিছুক্ষণ আগুনে জ্বাল করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সাবান পিকগুলো মিইয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত জ্বাল করে তরল জাতীয় হবে যখন তখন তা যে কোন স্প্রে বোতলে তুলে ব্যবহার করতে পারেন।

দ্বিতীয় নাম্বার অপশন হলো
👍🏿১ মুঠো পরিমাণ ডিটারজেন্ট পাউডার (রিন চাকা হুইল অথবা ফাস্ট ওয়াশ) ডিটারজেন্ট পাউডার ১.৫ লিটার পানির মধ্যে গুলিয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
👍🏿নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান নিজে সতর্ক হোন; অন্যকে সতর্ক করুন।
Stay safe stay home.