বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

গাঁয়ের কবিতা মাটির গান কবিতা-২

গাঁয়ের কবিতা মাটির গান কবিতা-২
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

গাঁয়ের কবিতা মাটির গান
এ গাঁয়ের কথা বলে,
গাঁ আমার মাটি যে আমার
সবুজের ছায়াতলে।

এই গাঁয়েতে গাঁয়ের বধূ
জল নিয়ে যায় ঘরে,
সবুজ গাছে পাখিরা নাচে,
পরাণ পাগল করে।

এই গাঁয়েতে রাখাল ছেলে
বাজায় বাঁশের বাঁশি,
গাঁয়ের মাটি স্বর্গ আমার
আমি গাঁকে ভালবাসি।

এই গাঁয়েতে গাঁয়ের চাষী
মাটিতে চালায় লাঙল,
মাটির গন্ধে পরাণ পাগল
ফলায় মাটিতে ফসল।

এই গাঁয়েতে দিনের বেলা
কিরণ ছড়ায় রবি,
আঁধার রাতে চাঁদের আলো
আঁকে স্বপ্নময় ছবি।

এক ঝাঁক হাইকু ১৬

(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ 
জাপানি কবিতা)

এক
তোমার মন
অজানা সততই
গহীন বন।

দুই
সময় কম
তাই তো চলা ধেয়ে
সে হরদম।

তিন
কত না লড়ি
জীবন খেলা ঘরে
সর্বদা হারি।

চার
কৃষক হাসে
নাচে ধানের শীষ
মৃদু বাতাসে।

পাঁচ
বারুদ ঘ্রাণ
জনতাও নির্বাক
হারাবে প্রাণ।

ছয়
এ ভালোবাসা
পেতে কত কি করি
শুধু প্রত্যাশা।

মাত্রা:৫-৭-৫

চূর্ণ-বিচূর্ণ ভাবনা থেকে-৪

১। দীর্ঘদিন যাবত প্রচণ্ড চাপে ছিলাম। পরীক্ষার চাপ। সবার মত এই বিষয়টা আমার কাছেও প্রচণ্ড যন্ত্রণার। আচ্ছা শুধু কি পরীক্ষায় অল্প কয়টি পৃষ্ঠাই কি একজন মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে?

২। বাদলের দিনে বৃষ্টির ধারা ঝরে ঝরঝর। টিনের চালের নীচে চোখ বন্ধ করে খাড়া কানে বৃষ্টির সুর শুনি। সুবাহা’ন আল্লাহ! এই সুর কতই না মনোহর।

৩। ব্লগ আমার কাছে এক বুক আনন্দ। আপন চিন্তাশক্তি ও ভাবনার বহিঃপ্রকাশ করার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম আর কি হতে পারে?

৪। পৃথিবীর যে কোন যুক্তিমূলক কথায় কারো বাবা-মাকে টেনে আনলে এই বিষয়টা কারও বাবা-মায়ের প্রতি অসম্মান করা হয় না। এমনকি তারা যদি মৃতও হয়। যদিও বিষয়টা আপনার হৃদয়ে আঘাত দিবে কিন্তু যুক্তির খাতিরে আপনাকে শুনতে হবে, বুঝতে হবে বিষয়টা। আপনি আমাকে কিংবা আমি আপনাকে হাজারটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি শুধুমাত্র যুক্তির খাতিরে। কিন্তু যুক্তি নির্ভর প্রশ্নগুলো যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নিন তাহলে আপনার মাঝে যা আছে তা বোকামীপনা ছাড়া আর কিছুই না। আবার আপনি যদি তৃতীয় পক্ষ হয়ে বিষয়টা উস্কে দেন তবে আপনি নিঃসন্দেহে একজন অপদার্থ।

৫। যে পরিবেশে থেকে আমরা বেড়ে উঠি সেটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক বনে যায়। তখন না পারি স্বাধীনভাবে কিছু ভাবতে না করতে।

৬। কখনও কি মন খুলে আকাশ দেখেছেন? জানালা খুলে আকাশের দিকে মুখ তুলুন কি সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আকাশ। হৃদয় বিগলিত হবে।

মুক্ত বাক, মুক্ত চেতনা, freedom of speech

বাক স্বাধীনতা, মুক্ত বাক
১৩ জুন ২০১৯ ঈসায়ী।

ব্লগ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার চিন্তা-চেতনা, মনের কথা, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সব ধরনের কথা আমরা পাঠকদের সামনে মোবাইল, ল্যাপটপের কী বোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরি। ব্লগ হলো হাজারো গুণী লেখকদের একটি মিলন সেতু। আমরা ব্লগাররা ব্লগে লেখি, পাঠক ও অতিথিগণ সে সব গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল গুলো পড়ে সেখানে মন্তব্য করেন। এক কথায় বলা যায় ব্লগ একটি পাবলিক সাইট। হাজারো মানুষের হাজারো চিন্তা ও মন্তব্য বলার একটি জায়গা।
ব্লগে বাক স্বাধীনতা রয়েছে, বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়, এর কি অর্থ সে বিষয়ে আজ কথা বলার জন্য লিখছি।

বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে শুরুতেই কিছু জেনে নেয়া যাক, আসলে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়?
যে কোন মতামত কি আমরা প্রকাশ করতে পারি বা করার সার্মথ্য রাখি? কিংবা বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র কতটুকু? বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখে গণতান্ত্রিক দেশে। তাদেরও স্বাধীনভাবে বলার অধিকার আছে। বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা ভাবনাকে বিষয়বস্তু বানিয়ে বিশ্লেষণ করলে সারমর্ম যা বেরিয়ে আসে তা হলো, জাতি স্বাধীনভাবে কোন বিষয়ের উপর তার মন্তব্য তার ইচ্ছা তার চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করবে স্বাধীনভাবে। এক কথায় স্বাধীন ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির মত।

তারপরেও আমাদের মস্তিস্কে হিউম্যান ব্রেইন বাই ডিফল্ট এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া বসানো আছে, যা আমাদেরকে সব সময় সব জায়গাতেই সব কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। সহজভাবে বলা যায়, প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই বিবেক নামক একটি সত্তার উপস্থিতি রয়েছে যা মানুষের চাহিদা মোতাবেক যা খুশি তা বলার পরিস্থিতিকে বাধা প্রদান করে বা সিস্টেমকে কিছু সময়ের জন্য স্থির করে দেয়।

পৃথিবীর বুকে আমরা বিচরণ করছি, বিশুদ্ব অক্সিজেন গ্রহন করছি এসবি হচ্ছে উপরওয়ালার নিয়ামত। যদি তা না থাকে তাহলে কি হতো সেটা আমরা চোখ বন্ধ করে চিন্তা ভাবনা করলেই বুঝতে পাই, দেখতে পাই। ধরে নিন আমি ব্লগে এমন কিছু লিখলাম বা বললাম যার দ্বারা আমাদের দেশের মরহুম গ্রেট লিডার শেখ মুজিবর রহমান, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ওনার ছেলে এসব কথা বা লিখার দ্বারা আক্রান্ত হলেন বা মনে কষ্ট পেলেন। তারা কি ভারাক্রান্ত মন ও রাগ ক্ষোভ নিয়ে বসে থাকবে? নিশ্চই উত্তর দিবেন না, তারা আমাকে আইনের আওতায় আনবে, আমার বিরুদ্ধে চার্জ নিবে আন্তর্জাতিক আদালতে।

এখন ভাবুন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলায় যদি আপনি আইনের আওতায় আনা হয়, আপনার উপর চার্জ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৮৮% মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কথা বা মন্তব্যের শাস্তি কি?

বাংলাদেশ পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা অনুসারে ধর্মাবমাননার অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মাবমাননার তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই ধারায় বর্ণিত শাস্তির পরিমাণ হলো এই।

বাক স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনার আছে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনি বলবেন, আপনাকে বাধা প্রদান করার মত কেউ নেই, তবে বলার বা মন্তব্য করার একটি সীমানা পরিধি থাকে। আসলে বাক স্বাধীনতা হলো সর্বস্তরের মানুষের কথা বা মত বক্তৃতা-বিবৃতি ধারণা প্রকাশের একটি মৌলিক মানবিক অধিকার। মানুষ যা চিন্তা করে তা বাধাহীনভাবে বলতে পারার নামই বাক স্বাধীনতা। বাক স্বাধীনতার ও পরিধি-সীমানা রয়েছে।

আপনি কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন। বাক স্বাধীনতার প্রাথমিক ধারণাটি মানবাধিকার সম্পর্কিত প্রাচীন নথিপত্রেও পাওয়া যায়। ১৯৪৮ সালে অান্তর্জাতিকভাবে এ অধিকারটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ( Universal Declaration of Human Right) আর্টিকেল-১৯ এর মাধ্যমে গৃহীত হয়, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (International covenant on civil and political Right ICCPR) কর্তৃক স্বীকৃত। একবার নজর করলেই বুঝা যাবে ঐ অান্তর্জাতিক ঘোষণায় বাক স্বাধীনতার পরিধি ও সীমান্তপথ কতটুকু? বলার বা মতামতের ক্ষেত্রে কতটুক আপনার বলার অধিকার আছে। প্রত্যেকেরই কোনো রকম হস্তক্ষেপ এবং বাধা ছাড়াই যে কোন মত পোষণ এবং প্রকাশের অধিকার থাকবে যে কোন ধরণের তথ্য বা ধারনা চাওয়া, এবং তাতে অংশ নেয়ার অধিকার, তা তার পছন্দের যে কোন মিডিয়ার মাধ্যমে বা পাবলিক সাইড গুলিতে হতে পারে। যেমন: মৌখিক, লিখনি, মুদ্রণ, অংকন ইত্যাদি।

এ ঘোষণার ভিতরেই যে নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার কথাও রয়েছে তা হলো (১) বিশেষ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন (রাষ্টীয়, আঞ্চলিক, সামাজিক নেতৃত্ব এ সীমা নির্ধারণ করবে) (২) অন্যের অধিকার, খ্যাতি ও সম্মান সুরক্ষার ক্ষেত্রে (৩) জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনা (৪) নাগরিক সুশৃঙ্খলা সংরক্ষণ (৫) জনস্বাস্থ্য (৬) নীতিশাস্ত্র (ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, কল্যাণকর সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি) সেখানে আরো উল্লেখ আছে যে, এই বাক স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, পর্ণগ্রাফি, অসামাজিকতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্ম নিয়ে এমন কথা যার ভিত্তি নেই, ইত্যাদি অবাধ প্রচারের সুযোগ থাকবেনা। কারো প্রতি বা কোনো বিষয়ে ঘূণা প্রকাশের মাত্রারও সীমা অতিক্রম করা যাবে না। তাহলে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা যখন যা খুশি তাই বলা, মত প্রকাশ করা বা প্রচার করা কিংবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সুযোগ কি আছে?? অবশ্যই উত্তর হবে না!

অথচ ইদানিং প্রায় লক্ষ্য করা যায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নানা রকম অশ্লীল ও আপত্তিজনক মন্তব্যও লেখা হচ্ছে মুক্ত চেতনার নামে। আসলে মুক্ত চেতনা কি কাউকে বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য চেতনা? বরং মুক্ত চেতনা তো হওয়া উচিত যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, প্রতিবাদী হয়ে উঠা। তাহলে ধারাবাহিকভাবে ইসলাম, কোরআন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিষোদগারের হেতু কি?

আর যারা এ জাতীয় কাজে লিপ্ত তারা বেশিরভাগই অমুসলিম কিংবা অঘোষিত বা স্বঘোষিত নাস্তিক। তাহলে প্রশ্ন রাখা যায়, একজন অমুসলিম কুরআন, হাদীস, ইসলামের রীতি-নীতি, ইসলামিক জীবন-ব্যবস্থা, শিষ্টাচার,আইন কানুন সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান আছে বা রাখে? যতটুকু জানে তা দিয়ে কি নানারকম বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলতে পারে? তাহলে উপরে বলা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি ঠিক থাকলো? আমাদের দেশের পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা কোথায় টিকলো?

বর্তমান সময়ে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা এমন একটি বহুল প্রচারিত টার্ম, যা মানুষকে স্বস্তিও দিতে পারে আবার বিড়ম্বনায়ও ফেলতে পারে। তথাকথিত মুক্ত চিন্তার লেখকের নাম দিয়ে, বিজ্ঞানমনস্ক লেখার দোহাই দিয়ে, বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা এসব করছে এরা আমাদের আশে পাশেই আছে। আমরা তাদেরকে বলি আহাম্মক, বলি ব্যাটার হুঁশ-বুদ্ধি নাই নাকি? কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না? এরা মনে যা আসে তাই বলে। কোনো রাখঢাক না করে বাছ-বিচার না করে বলে ফেলা মানুষদের আমরা বলি পাগল বা উন্মাদ।

কারণ বিবেক সত্তা তাদের ভিতরে নেই, এরা নিজেদেরকে সমাজের সামনে অনেক জ্ঞানী বলে উপস্থাপন করেন। একটি কথা শেষের দিকে না বললেই নয়, আপনি, আমি, আমরা সবাই বলার অধিকার রাখি সব জায়গাতেই। আপনার বলার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নেয়নি। বলা বা মতামতের ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম অনেক গুরত্ব দিয়েছে আপনাকে। সন্দেহের বিষয়গুলো আলেম মাওলানা বা মুফতিদের থেকে জেনে সন্দেহ দূর করুন।

ব্লগে ইদানিং কালে কিছু ব্লগার শব্দ দিয়ে অন্যকে আঘাত করে, ধর্মকে অবমাননা করা করে, না জেনে না পড়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথা বলে! এটা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্ত ব্লগার রা যুক্তি তর্কে গ্রহণযোগ্যতা রাখে না। আপনাকে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে গা ঢাকা দিয়ে চলে যায়। ফিরতি তর্কে এরা আপনার ধারে কাছেও ফিরে না। সত্যিকার ব্লগাররা গা ঢাকা দেয় না, তারা তর্ক করে সত্যকে জানতে চায়। শব্দনীড়কে এ নিয়ে কিছু বলার ছিলো বলে আজ বলছি। ব্লগের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আপনি তর্ক করুন, প্রশ্ন রাখুন। আপনার করা যত কঠিন প্রশ্নের উত্তর কেউ না কেউ দিবেই। সুতরাং কোন বিষয় সম্পর্কে না পড়ে না জেনে গালমন্দ করা বোকাদের কাজ। ধর্ম নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ডিবেট করতে পারেন। আঘাত করতে পারবেন না। ব্লগ কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ের দিকে কড়া নজর না রাখে তাহলে ব্লগ তার লেখকদের হারাবে।

আমি তর্ক বা ডিবেট করাকে পছন্দ করি বলেই তর্ক করে যাই। তর্কে সত্য বেরিয়ে আসে। আমি শব্দনীড়ে রাগ করেই কয়েকদিন পোস্ট দেইনি। একজন ব্লগারের পোস্টে আমার করা মন্তব্য তর্কের জবাব এখনো পাইনি ! আমি জবাব চাই! যদি ফিরতি তর্ক মন্তব্য না পাই তাহলে ধরে নিবো আপনি হেরে গিয়েছেন আপনার যুক্তিতে। সুতরাং জবাব দিয়ে যান, তা না হয় স্বীকার করুন আপনি ভুলের বশে না জেনে বলে ফেলেছেন! বিদ্বেষ ছড়ানো কোন মন্তব্য করবেন না ব্লগে। ধন্যবাদ।

বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা

আজকের এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে হাত বাড়ালেই প্রচুর বন্ধু পাওয়া যায়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এগুলোর মধ্যে ঢুকলেই হাজার হাজার বন্ধু পাওয়া যায়। এ সকল বন্ধুরা আসলে সবাই সুসময়ের এবং ক্ষণিকের বন্ধু। দুঃসময়ে সুখে দুঃখে সব সময় যাদের বা যাদেরকে কাছে পাওয়া যায় তারাই প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্ব বেঁচে থাকুক আজীবন।

সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা! ☺

আমার প্রাণের ঠাকুর দ্বিতীয় খণ্ড গীতিকবিতা-৮

দয়াল ঠাকুর শ্রী অনুকূল
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দয়াল ঠাকুর শ্রী অনুকূল
সদা বিরাজমান তিনি,
মানুষ আপন টাকা পর
সবারে শেখালেন যিনি।

কলিতে নাম ধ্যান জপ
করো তুমি অবিরাম,
নামে আছে সুখ ও শান্তি
পাবে তুমি মোক্ষধাম।

মধুর নাম ধ্যান অবিরত
জপ করে যেইজন,
রোগ সন্তাপ দূরেতে যায়
করে বৈকুণ্ঠে গমন।

কলিতে শ্রীঅনুকূল ঠাকুর
এসেছিলেন ধরায়।
সত মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে সবে
পাপী পরিত্রাণ পায়।

a:আসুন শব্দনীড়কে রাঙিয়ে তুলি নানান রঙে নানান বর্ণে

আমাদের শব্দনীড়ের প্রথম পাতায় যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে বেশির ভাগই কবিতা। সাধারণত সত্তুর থেকে নব্বই শতাংশ। দেখে মনে হতে পারে শব্দনীড় একটা কবিতা ব্লগ। আসলে কিন্তু তা নয়। শব্দনীড় সামাজিক ব্লগ। এখানে শিল্প সাহিত্য রাজনীতি সমাজ নমাজ সব কিছুই থাকবে। এখানে দশটি প্রধান বিভাগ দেখা যায়। এদের অধীনে আবার বেশকিছু উপবিভাগ আছে। অর্থাৎ হেন কোন বিষয় নাই যা নিয়ে আপনি শব্দনীড়ে লিখতে পারেন না। এত সব বিভাগ কে পেছনে ফেলে কবিতা দখল করে আছে পুরো শব্দনীড়। কবিতা একটি বিভাগও না; সাহিত্যের অধীনে উপ-বিভাগ মাত্র। কবিতা শিল্পের শুদ্ধতম প্রকাশ। যারা কবিতা লিখেন তারা শুদ্ধতম শিল্পী। সুতরাং যারা কবিতা চর্চা করছেন তাঁরা সাধুবাদই পাবার যোগ্য। মননশীল হৃদয় কবিতাতে পরিশুদ্ধ হতে চায়। অতীন্দ্রিয় অতৃপ্তির তৃপ্তি শুধু কবিতাই দিতে পারে। কিন্তু কবিতাই তো পুরো জীবন নয়। শুধু হাওয়া খেয়ে মানুষ বাঁচে না। বাঁচার জন্য খাদ্য ও পানীয়ের দরকার হয়। আর খাদ্য ও পানি হজমের জন্য দরকার হাওয়া। কিন্তু কাউকে যদি খেতে না দিয়ে শুধু হজমের উপকরন সাপ্লাই দেন তবে কেমন হবে? আমদের অবস্থা কিছুটা সেরকম হয়ে যাচ্ছে না! এত কবিতা লিখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যারা কবি তারাও কবিতা লিখছেন যারা কবি না তারাও লিখছেন। সবাই কবি হবে এমন কোন কথা নেই। কবিতা যেহেতু লিখছেন অন্যকোন বিভাগে যদি আপনি হাত দেন সোনা ফলবে নিশ্চিত।

ব্লগে একটু গুছিয়ে আপনার মনের কথার চর্চা করুন। নিজ জীবনের কথা বলুন। মজার অভিজ্ঞতা, দুঃখের অভিজ্ঞতা, এমন কিছু বিষয় যা আপনি জানেন আরো অনেক জানাতে চান। এই এত রাজনৈতিক গোলযোগ আপনি কি ভাবছেন তা নিয়ে। রাজনৈতিক বিষয়ে আপনার মতামত দিন। আপনার মত হয়ত অনেকের পছন্দ হবে না, অনেকের হবে। অনেকে আলাদা মত দিবেন তবে ব্লগ জমে উঠবে। এইটা তো আমাদের স্বীকার করতে হবে বাংলা অন্য যেকোন ব্লগের চেয়ে শব্দনীড় কিছু বিষয়ে একদম আলাদা। কোন গালাগালি নেই। অযাচিতে মডারেশন নেই। কথায় কথায় ব্যান করার হুমকি নেই। সর্বোপরি যে জিনিসটী উপভোগ্য তাহল সকলের মধ্যে একটা মননশীলতা লক্ষ্য করা যায়। তাই বলছিলাম আসুন সবাই মিলে ব্লগটা আরো জমিয়ে নেই। হাসির লিখা দিন, মজার লিখা দিন, সিরিয়াস রাজনৈতিক লিখা দিন, আমাদের কে গুরুগম্ভীর ইতিহাস শেখান, জাগিয়ে তুলুন আমাদের মধ্যে নতুন কোন জীবনবোধ। বেড়াতে গিয়েছেন; ঘুরে এসে লিখে ফেলুন সুন্দর এক ভ্রমন কাহিনী। ছবিটবি দিয়ে ফাটাফাটি করে সাজিয়ে শব্দনীড়ের আর দশজনের মাঝে লোভ জাগিয়ে দিন যেন তারাও ঘুরে আসে। সাহিত্য করবেন? লিখুন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সমালোচনা, রম্য আলোচনা। নতুন একটা বই পড়েছেন, সিনেমা দেখেছেন একটা রিভিউ তৈয়ার করে আমাদেরকে জানান। আমরাও সে বই পড়ি সেই সিমেমাটা দেখি। সামাজিক রাজনৈতিক নানা অসঙ্গতি দেখে আপনার সংবেদনশীল মন কেঁদে উঠে, ফুঁসে উঠে, প্রতিবাদি হতে চায় সেই বিষয়টা চেপে না রেখে শব্দনীড়ে ছেড়ে দিন। কবিতা সাহিত্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীন শাখা, কিন্তু একমাত্র নয়। গদ্য আধুনিক, বিদ্যাসাগরের পর থেকে সে কিন্তু আর থেমে নেই।

আর একটু আধটু মন্তব্য করুন না। শুধু একটা কবিতা লিখে বসে থাকলাম দেখি কে কি বলে। আন্যদের বাড়ি গিয়ে আপনিও কিছু বলুন। আর শুধু দায়সারা গোছের বলার জন্য বলবেন না। ভাল লাগলে কোন জায়গাটা ভাল লেগেছে সেটা বলুন, কেন ভাল লেগেছে সেটা। খারাপ হলে উন্নতির সুযোগ কোথায় সে উপদেশ দিতে পারেন। আপনার যদি দ্বিমত থাকে লেখকের সাথে, সে আপনার থাকতেই পারে, বিতর্ক জুড়ে দিন। যুক্তি তর্কে রেফারেন্সে আপনার জ্ঞানের বহরটা একটু দেখিয়ে দিন। চলুক না কিছুক্ষণ যুক্তি পালটা যুক্তি। কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে এরকম বিষয় শব্দনীড়ে প্রায় অনুপস্থিত। শুধু ভাল লেগেছে, ভাল লাগা রেখে গেলাম, আর ভাল না লাগলে চুপচাপ। আর একটা কথা যাই লিখেন না কেন ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। লিঙ্কটা মেসেজ দিয়েও পাঠিয়ে দিন বন্ধুদের। আপনার প্রতিভার কথা আপনার বন্ধুদের জানার হক আছে। সেই হক আদায়ের সাথে শব্দনীড়ের বিষয়টাও তারা জানুক। শুধু কৃপনের মত নিজের লিখা না শেয়ার করে কারো লিখা ভাল লাগলে সেও শেয়ার করুন। আমাদের নিজেদের এবং শব্দনীড়ের জন্য আমরা এওটুকু নিশ্চয় করতে পারি।

নানান রঙে, নানা বর্ণে, নানা ঢঙে শব্দনীড় কে জমিয়ে তুলি। কবিতার কোমলতা নয় শুধু, কিছু বাঁকা-ত্যাড়া, খাড়া-কড়া লিখাও লিখি। শুভ ব্লগিং।

উগ্র ধর্মান্ধতা বিকারগ্রস্ততার আরেক রূপ

ওপার বাংলার কলেজ স্কোয়ারে সড়কের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ রাত। আনুমানিক এগারোটা বাজে। এ সময় একজন মধ্যবয়স্ক দীর্ঘকায় লোক কোনও বিশেষ ঠিকানা বা কোনওকিছু জানতে চাইলে, আমি আমার আয়ত্তের মধ্যে তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করি। লোকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গা’য়ে পড়ে আমার সঙ্গে আলাপ জমাতে লাগলো। এব্যাপারে আমার মোটেও কোনও আগ্রহ ছিলো না। তারপরও সমাজ রক্ষার্থে কথোপকথনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও জড়িয়ে পড়ি। বয়সে বড় কাওকে সরাসরি বলতেও পারি না যে, আমি এখন বেশি কথা বলতে চাচ্ছি না! এক পর্যায়ে আমার ভাষা শুনে সে বুঝতে পারে, আমি বাংলাদেশী। আমিও কথায় কথায় তাকে দ্বিধাহীন জানিয়ে দেই, বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ট্যুরিস্ট, অমুকদিন এসেছি, তমুকদিন যাবো ইত্যাদি। তারপর এক পর্যায়ে সেই ভদ্রলোক তার পরিচিত আরও কোনও বাংলাদেশীর কথা বলতে লাগলো আমাকে; ভারতে পরিচয়, হিন্দু, বাংলাদেশের বিশেষ জায়গায় বাড়ি, নাম ইত্যাদি। যে কোনও কারণেই হোক লোকটা অনেকটা নিশ্চিত ছিলো যে, আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ পর্যায়ে আমি সেখান থেকে যেতে উদ্যত হই। লোকটা আসলে চাইছিল যে, আমার সাথে পথ চলতে চলতে কিঞ্চিত এই পরিচয়টাকে আরও স্থায়ী করতে। বেশ হাসিখুশি উজ্জ্বল মুখে তখন আমাকে সে আচানক জিজ্ঞেস করে বসলো, “আপনি তো হিন্দু তাই না?” এমনিতেই বিরক্তির পারদ উপরে চড়া ছিলো, তারপর আবার এরকম অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অর্থহীন ব্যক্তিগত প্রশ্ন! আমি উত্তরে বেশ খানিকটা কঠিন স্বরে সোজাসাপ্টা বললাম যে, “আমি হিন্দু কিনা সেটা জেনে তার কি হবে? চেনা নেই জানা নেই অকস্মাৎ এভাবে অপরিচিত কাওকে সে হিন্দু কিনা জিজ্ঞেস করার কোনও অর্থই হয় না!” খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম হঠাৎ এরকম প্রশ্নে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

আমার প্রাণের ঠাকুর দ্বিতীয় খণ্ড গীতিকবিতা-২

হে প্রিয়পরম প্রভু

হে প্রিয়পরম প্রভু! তুমি ভগবান,
ভক্তিঅর্ঘ দিয়ে প্রভু জানাই প্রণাম।
তুমি রাম তুমি কৃষ্ণ জগতের সার,
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

মানুষেরে ভালবেসে করিলে আপন,
পরম কারণ তুমি, তুমি নারায়ণ।
তুমি যে পরমপিতা পূজ্য সবাকার,
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু তুমি ভগবান,
তোমারে জানাই প্রভু সতত প্রণাম।
তুমি দেব তুমি গুরু হে প্রভু আমার!
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

জীবনে চলার পথে তুমি ধ্রুবতারা,
চিরসুখী সেইজন দীক্ষা লভে যারা।
হে পরমপিতা তব মহিমা অপার,
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

রাতুল চরণে তব থাকে যেন মতি,
প্রণাম জানাই প্রভু আমি তব প্রতি।
জ্বালাও জ্ঞানের দীপ নাশিয়া আঁধার,
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

তুমি ধ্যান, তুমি জ্ঞান জগতের গুরু,
তোমার আশীষে মোর পথ চলা শুরু।
জপ নাম অবিরাম, নাম কর সার,
প্রণাম জানাই প্রভু চরণে তোমার।

কেমন আছো কলকাতা?


কেমন আছো কলকাতা?
– আমি ভালো নেই!
বিষাক্ত কার্বনমনোক্সাইডের গন্ধে
আমার ফুসফুস আক্রান্ত,
ডেঙ্গু -ম্যালেরিয়ায় আমার শরীর জরাগ্রস্ত ;
প্রতিনিয়ত শান্তির অভাবে ধুঁকছি।
প্রাণবায়ু কেড়ে নিতে সর্বক্ষণ চলছে ষড়যন্ত্র,
আমাকে কলুষিত করতে চলছে নিত্য পরিকল্পনা ;
আমার চরিত্রে দাগ দিতে চলছে রমরমিয়ে মধুচক্র।
ধনী গরীব নেই কোন হুঁশ
মধুর লোভে এরা সেজেছে আদিম মানুষ!
মধুচক্রে সামিল কত নেতা ও আমলা
অসহায় চোখে দেখি সকাল-সন্ধ্যাবেলা
রক্ষী আজ নিজেই অরক্ষী
তাকে কে করবে রক্ষা?
দিনে রাতে চলে ধর্ষণ এখানে
সমাজে ঢুকে গেছে যক্ষ্মা!

একদা এখানে ছিল মানুষ
সত্যিকারের সভ্য,
রচনা করেছে কত উপন্যাস
কত না নামী কাব্য।

তোমারা আমায় দেবে সম্মান
আমি নাকি সাহিত্য নগরী,
অশ্লীলতায় ভরেছে গেছে শহর
পাচ্ছে না বিচার ধর্ষিতা নারী!

কি করে ভালো থাকবো
কেই বা ভালো রাখবে?
সবাই নিজের আখের গোছায়
আমায় কে এখন দেখবে!

মিছিল নগরীর ঐতিহ্য হারিয়েছি
এখন যা হয় দম্ভ,
ব্রিগেডের ডাকে ভরে না মাঠ
দেখাই অষ্টরম্ভ!

ফুটপাত আজ উধাও হয়েছে
পাত আছে নেই ফুট,
ভোটের মায়ায় চলছে এসব
এতে নেই কোন ঝুট!

রাতের আমি নেই মোহময়ী
সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ,
নিরাপত্তায় ভোগে মহিলারা সব
অখ্যাত বা বিখ্যাত!

তোমরাই বলো আমি কি আছি ভালো?
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষের হাওয়ায় চারিপাশ ঘন কালো!

মানবতার পরিচয় আত্মত্যাগেই

চলছে চলবে ধরণী
নাইকো তাহার ক্লান্তি,
আত্মত্যাগে আপনারই
দিয়ে চলেছে প্রশান্তি।

হুগলীর হাজী কিংবদন্তী
ছিলেন অনেক দরদী,
পেটের দায়ে করায় চুরী
চোরকে দিলেন মাফ করি!

সুদীর্ঘ দীর্ঘ পথপাড়ী
দিয়েছিলেন যেসব সন্যাসী,
মানবতার ডাকেপড়ী
তেরাসা মহাত্মা গান্ধী।

বীর বিক্রম বাংগালী
মানব সম্প্রদায়ের উন্নতি,
উদারতা যাহার প্রকৃতি
হক সাহেবের জীবনী।

শেখ মুজিবুর ব্জ্রকন্ঠী
ছিলেন স্বদেশের তরে জেলবন্দী,
হেতু ছিল কেবল একটি
মানবতা পাবে মুক্তি।

জাগাও জাগিয়ে স্বপ্রকৃতি
দুঃস্থের হও সহনাভূতি
জিয়া ছিলেন যেমন কৃষকের প্রতি
ইতিহাস আজও ভূলেনি।

হটাও হটিয়ে স্বতুষ্টি
বিলিয়ে দাও যে অসুখী
আপনার সুখ ত্যাগকারী
সেই তো খাঁটি সম্মানী।

নপুংশক জাতীর অহংকার: প্রসঙ্গ কিছু আলোচিত মন্তব্য

শ্রদ্ধেয় একজন ব্লগার পূর্ববর্তী এক পোস্টে তার মূল্যবান মন্তব্য করেছেন এবং তাতে আরেকজন ব্লগার সমর্থনও করেছেন। আমার কাছে মনে হলো এটা নিয়ে কিছু তথ্যবিভ্রাট সম্পর্কিত আলোচনার দাবী রাখে।

১৯৪৭, ৬৬, ৭১ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্রচুর বাঙ্গালী হিন্দু মাইগ্রেশন নিয়েছে ভারতে। হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়। প্রণামে আর ঈশ্বর কৃপায় মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে ফেলেন আর কি। বৃষ্টি হয় এখানে আর মাথায় ছাতা তুলে দেশে।

“দাঙ্গার ইতিহাস” লিখেছেন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রকমারীতে পাবেন। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। বেশ বস্তুনিষ্ঠ দলিল এজন্য বলবো যে ততকালীন পত্র পত্রিকা ও দস্তাবেজ ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়েগেছে এবং সে খবরে বাংলাও বেশ গরম। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর নোয়াখালীর পীর গোলাম সারোয়ার হুসেনী জনসমাবেশে হিন্দুদের ওপর সরাসরি আক্রমন করার নির্দেশ দেন নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান ও বানু কুরায়জার গনহত্যার রেফারেন্স টেনে। তখন তার নিজস্ব মিঞা বাহিনী ও এলাকার মুসলমান অনুসারীরা হিন্দুদের ওপর আক্রমন করে হাটের মধ্যে। শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। পুরো দাঙ্গায় মৃত্যু হয় প্রায় ৫০০০০ হিন্দু এবং ধর্ষিতা হয় লক্ষাধিক নারী। কখনো কখনো নবী মোহাম্মদের সাফিয়া ধর্ষন অনুসরনে সেখানকার বনেদী ব্যাবসায়িক পরিবারের প্রধান কর্তা, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করে যুবতী ও কিশোরী নারীদের ধর্ষন করা হতো গনিমতের মাল হিসেবে এবং তাদেরকে উপহার হিসেবে বন্টন করে দেয়া হতো। প্রতিবেশী হিসেবে থাকা মুসলমানেরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের ঘরে ঢুকে হত্যা ধর্ষন কিছুই বাদ রাখেনি। পরে যখন নোয়াখালী ছেড়ে রায়টের ভয়াবহতা কুমিল্লা চাঁদপুর ছড়িয়ে পড়ে তখন মুসলিম লীগের পান্ডারা তাতে যোগ দেয় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম আক্রান্ত হয়।

ততকালীন মাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী এটাকে তুচ্ছ সন্ত্রাসী ঘটনা বলে উড়িয়ে মুসলমান জঙ্গিদের আরও সুযোগ করে দেন সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে। যখন কেন্দ্রিয় সরকার থেকে প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে এবং স্বয়ং গান্ধীজি স্বদ্যোগী হন তখন তিনি মেনে নেন। কতটা চশমখোর হলে এটা সম্ভব, চিন্তা করা যায়? এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের টাকা মেরে খাওয়া আরেক জোচ্চর শেরে বাংলা ফজলুল হক বলে বসেন হিন্দু নারীদের ধর্ষন সম্পর্কে: হিন্দু নারীরা প্রাকৃতিক ভাবেই বেশী সুন্দরী।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে কম্যুনিস্ট ধরবার নামে এক হিন্দু বাসায় গিয়ে স্ত্রী কন্যাকে একি বিছানায় ধর্ষন করতে উদ্যোত হলে জয়দেবের বর্শায় খোচায় দুই ধর্ষক মুসলমান কনস্টেবল জায়গায় অক্কা পায় এবং শুরু হয় ৫০ এর রায়ট যা ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল খুলনা পর্যন্ত। নাচোলের গনহত্যার নাম শুনে থাকবেন হয়তো। এরকম আপ্যায়নের কথার সাথে “হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়।” এ কথাটি যায় না।

সত্যিকারের অত্যাচারিত কত জন সেটা বলা যাবে না। আমি তো অন্তত বিশ্বাস করি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব দেশেই আছে।

মন্তব্যে এ কথাটা তৎকালীন বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী বললেও যখন গান্ধীজি এবং কেন্দ্রিয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী আকাশযোগে উপদ্রুত এলাকা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে সেসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে নামসর্বস্ব তদন্তকমিটি গঠন করলেন। কিন্তু সেসব এলাকার জঙ্গি মুসলমানরা এক অদ্ভুত টেকনিক হাতে নিলো। তারা ধর্ষিতা ও গনিমতের মাল হিসেবে রেখে দেয়া নারীদের দ্রুত কাগজ কলমে টিপসই নিয়ে ধার্মান্তরীত করে বোরখা পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে স হসা না চেনা যায়। এবং যারা বেচে গেছেন তাদের কাছ থেকে মুসলিম লীগের জিহাদী ভাইয়েরা জিজিয়া করের নামে চাঁদা ওঠাতে লাগলেন। পরে যখন কেন্দ্রীয় সরকার স হ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন রিপোর্ট দেয়া শুরু করলো তখন বাঙ্গালী জঙ্গি মুলসমানদের হত্যাকান্ডগুলো বানু কুরায়জার ওপর নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান বা আলির খাওয়াজিরী গনহত্যা বা বক্কর উমরের রিদ্দার যুদ্ধে অনুসৃত নৃশংস ও বর্বরতম পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা হয়েছে যেসবের বর্ননা দেখলে আতকে উঠতেই হয় এবং শুধু শৈলেশের বই নয়, ১৯৬০ সালে লেখা মোকসেদের লেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নামের বইতেও সেটা উঠে এসেছে। এরপরও প্রচুর দাঙ্গা হয়েছে এবং সেসবে বাঙ্গালী জঙ্গি মুসলমানদের বর্বরতা পাকিস্থানীদের হার মানায়। আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই পাকিস্থানী মুসলিম ভাইয়েরাই ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি মুসলমানদের একই রকম ফিদায়ী ধর্ম যুদ্ধ শুরু করে যার ফলাফল হয় রক্তাক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু যে জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফিদায়ী অভিযান, আমাদিয়া ইশতিশাদী, ইন ঘিমাসের মতো জিহাদী চেতনা সে দেশ কিভাবে সাম্প্রদায়িক না হয়ে থাকতে পারে?

কাগজে কাগজে যতই সেক্যুলারিজমের কথা বলা হোক না কেন; বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ আপনিও ভালো জানেন। ভারত এখন আর অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। হিংসাত্মক অত্যাচার কতটা আর এর চেহারা কতটা ভয়াবহ তা কিন্তু বাংলাদেশের নব্য মাথামোটাদের ধারণায়ই আসবে না। বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

ভারতের কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক হলেও তার কিছুটা ধরে রেখেছিলো বলেই আবুল কালাম আজাদ নামের মুসলিম বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। সেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। এটা ঠিক মোদীর থিওক্রেটিক চেহারার ভারত কখনোই কারো কাছে কাম্য নয় এবং সেজন্যই সেখানে এর জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ভারত বিজ্ঞান স হ অন্যান্য বিষয়ে যতটা এগিয়েছে সেটা আপনি ভাবতে পারবেন না। আবার বাংলাদেশের যত মানুষ ভারতে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়, শোনা যায় না কাশ্মীর বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে মুসলমানরা নিগৃহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতে মুসলমানরা যদি খারাপ হয়েই থাকবে তাহলে চলচ্চিত্র তারকা নুসরাত কিভাবে লোকসভায় আসন পায় এবং ধুমধাম করে শাদী করে। অথবা সালমান খান শাহরুখ খান? আপনি হয়তো বলবেন এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আসুন পরিসংখ্যান। অন্তত মানুষের মুখের গুজব ও মিথ্যা কথার জবাব পরিসংখ্যান ভিন্ন কিছু হতে পারে না
উইকির এই পেজ অনুসারে আপনি বাংলাদেশ থেকে কত হিন্দু, এমনকি মুসলমানরাও সেখানে যাচ্ছে। বারাকাত সাহেবের পরিসংখ্যান আপনাদের বিশ্বাস হবে না কারন উনি নিজে কিছু অন্যান্য দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার সবকিছুই এখন প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু উইকির ঐ পেজে বেশ কিছু একাডেমিক ও স্বাধীন পরিসংখ্যান আছে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাওয়া হাস্যকর। যদিও বাঙ্গালী যেখানে এখনও বিশ্বাস করে চাঁদে নবী মোহাম্মদের দ্বিখন্ডনের দাগ আছে বা চাঁদে নাসা যাইনি কিন্তু সাঈদিকে দেখা গেছে, তাদের কাছে একাডেমিক গবেষনা মানেই নাপাকী জিনিস, তাই না?

আরেক জায়গায় বলা হয়েছে

আমার আশেপাশে মুসলিম যারা রয়েছেন, আমি দেখেছি তারা কখনও ভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হবার চিন্তাই করে না।

ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন কাউন্সেলিং এর তথ্যমতে ইউরোপে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিমরা অভিবাসী হয়। এদের বেশীরভাগই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো মাইগ্রেশন পলিসির তথ্যমতে লিবিয়া দুবাই হয়ে সাগর পথে পাড়ি দেয়া সবচেয়ে অবৈধ অভিবাসী হলো বাংলাদেশীরা। ইউরোপীয়ানরা এই পরিসংখ্যান এজন্য অবাক হন যে বাংলাদেশে নেই কোনো দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বা কোনোকিছু। আবার আপনিও বলছেন এদেশে হিন্দু মুসলমান সবাই ভারতের থেকে অনেক ভালো।

আবার কমেন্টের সাথে সহমত জানিয়ে আরেক সহব্লগার যে কমেন্ট করেছেন, প্রোফাইল ঘেটে দেখলাম উনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী। তবে এটা ঠিক ব্যাক্তিগত জীবনে আমরা সবাই এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হই যেটা কিনা আমাদের ভাবনার মানসপটে এবং চিন্তা চেতনায় প্রভাব ফেলে

গতকাল বাবাকে ফোন দিলাম দেশের পরিস্থিতি জানার জন্য উনি বললেন গুজব নাকি ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র। আমি তার উত্তরে বললাম, গুজব সবচেয়ে বেশী হয় পুরান ঢাকায় এটা তুমি নিজেও জানো। এবং এসব অশিক্ষিত লোকজন কি ভারত থেকে টাকা খাইছে? এটা তোমার মনে হয়?

তখন সে একটু চিন্তা করে বললো, তুমি ঠিক বলছো। অশিক্ষিতদের দোষ দিয়ে হবে, শিক্ষিতরাও তো করতেছে। সবাই করতেছে। আমি বুঝি না দোষটা তো সব তো দেখি আমাদের। আমরা এমন হইলাম কেন?

বাবার এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। কিন্তু তাকে দিতে মন চাচ্ছে না। উনি আবার আগামী বছর দ্বিতীয় হজ্ব করার স্বপ্ন দেখছেন।

শুভ ব্লগিং

আমার প্রাণের ঠাকুর গীতিকবিতা-১০

আমার প্রাণের ঠাকুর গীতিকবিতা-১০
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

(পূর্ব-প্রকাশিতের পর)

সৎসঙ্গ রসৈষণা মন্দির
যখনই কেউ জটিল রোগগ্রস্ত হয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে উপস্থিত হতো শ্রীশ্রীঠাকুর সেগুলোর ফরমূলা দিতেন। এভাবে তিনি বহু জটিল রোগের ফরমূলা দিয়ে গেছেন। আর তাই নিয়ে গড়ে ওঠে সৎসঙ্গ রসৈষণা মন্দির। অত্যাধুনিক প্রক্রিয়া দ্বারা ভেষজ ঔষধাদি প্রস্তুত ও ঔষধের গুণমান বজায় রাখার জন্য এবং নিত্যনতুন ঔষধের অনুসন্ধানের জন্য অত্যাধুনিক সাজসজ্জাযুক্ত গবেষণাগারও নির্ম্মাণ করা হয়েছে। এখানে মধুমেয় (ডায়াবেটিস), ব্লাড কোলেস্টেরল ইত্যাদি ব্যাধিগুলির থেকে মুক্তির জন্যে ফলপ্রসু গবেষণা সম্পাদিত হয়েছে। শ্রীশ্রীবড়দা (শ্রীশ্রীঅমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) বিভিন্ন রোগের নিদানহেতু বহু ফর্মূলা দিয়েছেনÑ সেগুলির সাহায্যেও ঔষধ বানানো হয়। বর্তমানে আশ্রমে আগত নিত্য অসংখ্য যাত্রীদের মধ্যে রোগক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট নিবারণের জন্যে শ্রীশ্রীদাদাও (শ্রীশ্রীঅশোক চক্রবর্তী) স্বয়ং বহুবিধ জটিল রোগের অব্যর্থ জীবনদায়ী ঔষধ উদ্ভাবন করেছেন।

সৎসঙ্গ ভেষজ উদ্যান
বহু দুর্লভ গাছ-গাছড়া এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাগিয়েছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা। কঠিন, পাথুরে এবং শুষ্ক মরুপ্রায় এই ভূমিতে তৃণখন্ডের জন্মনোই এক আশ্চর্য ব্যাপার। সেই জমিতে তিনি বহু দূর-দূরান্ত থেকে এনে লাগিয়েছেন মহামূল্যবান বনৌষধি এবং আবিষ্কারও করেছেন বহু বনৌষধি। এছাড়াও এখানে রয়েছে বহু ফলের গাছ এবং সারা বছর ধরেই হয় বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ। “উদ্যানটি দেখে এর পূর্ব অবস্থা কল্পনা করাও দুষ্কর হবে” এমনটাই বলেন প্রবীণ আশ্রমিকগণ।

সৎসঙ্গ দ্যূতদীপ্তি হাসপাতাল
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরির কথা বলেছিলেন। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৪৫টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বেশি বেডের ব্যবস্থা করার মতো সামগ্রীও মজুদ আছে। বিশেষ প্রয়োজনে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ এসে তাদের সেবা দান করে থাকেন। এই হাসপাতাল শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীদাদার অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় এবং শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যম পুত্র ডাঃ অলোক কুমার চক্রবর্তী (মেজদা), এম.বি.বি.এস-এর পরিচালনায় আজ এক বিশিষ্ট হাসপাতাল রূপে খ্যাতি লাভ করেছে। হাসপাতালের উন্নতির জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এখানে দেওঘরের ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চিকিৎসকগণ বৎসরে ২বার সমবেত হয়ে দুইটি সেমিনারের আয়োজন করে থাকেন। হাসপাতালের একটি নিজস্ব লাইব্রেরিও রয়েছে। প্রতি বৎসর একটি মেডিকেল বুলেটিন প্রকাশিত হয়। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদদের আধুনিক গবেষণা বিষয়ক প্রবন্ধ ও রচনায় বুলেটিনটি সমৃদ্ধ থাকে। বর্তমানে সৎসঙ্গ দ্যূতদীপ্তি হাসপাতালে উল্লিখিত বিভাগগুলি খোলা হয়েছে এবং সেখানে নিয়মিত কাজ চলছেÑ(১)আউটডোর (২)চ্যারিটেবল ডিস্পেনসারি (৩)একস্-রে বিভাগ (৪)চক্ষু,কর্ণ ও নাসিকা বিভাগ (৫)দন্ত চিকিৎসা বিভাগ (৬)প্যাথোলজি বিভাগ (৭)আকস্মিক চিকিৎসা বিভাগ (৮ হোমিওপ্যাথি বিভাগ।

সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজ
শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশ^সমস্যা সমাধানী বাণীগুলি প্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজ থেকে। বাংলা ও ইংরেজিতে প্রদত্ত মূল বাণীগ্রন্থ ছাড়াও শ্রীশ্রীঠকুরের সাথে কথোপকথন ও প্রশ্নেত্তরমূলক মৌলিক গ্রন্থও বাংলা ও বিভিন্ন ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে। মাসিক বিভিন্ন পত্রিকাও এই পাবলিশিং হাউজ থেকেই প্রকাশিত হয়। ইংরেজি, হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া, মারাঠী, নেপালী, তামিল, তেলেগু, সাঁওতালী ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষাতেও মূল গ্রন্থ থেকে অনুবাদ করা হচ্ছে সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজের পক্ষ থেকে। প্রধান আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা স্বয়ং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন এবং তাঁর নির্দেশে আরও কয়েকজন ব্যক্তি এই কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন।

অমরদ্যুতি বিদিমন্দির(সৎসঙ্গ লাইব্রেরি)
এই পাঠাগারে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্যের বহু দুর্লভ প্রাচীন ও আধুনিক পুস্তকের বিপুল সম্ভার আছে। এখানে পাঠকদের একান্ত অধ্যয়নের জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। এর সাথে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে আশ্রমিক, ছাত্রছাত্রী ও সাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য সম্বৎসর বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বেদভবন
শ্রীশ্রীঠাকুরের অত্যন্ত আগ্রহ ছিল বেদ, উপনিষদ্, শাস্ত্রীয় গ্রন্থাদির প্রতি। এসবের চর্চার জন্য বেদভবন নির্মাণের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল ইচ্ছা। শ্রীশ্রীঠাকুরের এই ইচ্ছাকে সাকার রূপ দিয়েছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা ‘বেদভবন’ নির্মাণ করে। এখানে উপযুক্ত আচার্য্যরে তত্ত্বাবধানে চারিবেদের পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া, বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানাদির সময় স্বস্ত্যয়ন-হোমযজ্ঞাদিও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।

সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়
এখানে প্রচলিত পাঠ্যক্রম অনুসারে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি চরিত্র গঠন, স্বনির্ভরতা ও ব্যবহারিক শিক্ষাদিও সুযোগ্য শিক্ষকদের দ্বারা দেয়া হয়। কুটির শিল্প, টাইপিং, কম্পিউটার ও অনান্য ব্যবহারিক শিক্ষার সঙ্গে-সঙ্গে শারীরিক গঠন ও আত্মরক্ষা হেতু ড্রিল ও মার্শাল আর্ট শেখানোরও ব্যবস্থা আছে। সুষ্ঠু ও একান্ত বিদ্যাভ্যাসের জন্য বিদ্যালয়ে বিরাট ছাত্রবাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
সৎসঙ্গ অমরদ্যুতি
শ্রীশ্রীঠাকুর ইপ্সিত শান্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পদক্ষেপরূপে ‘সৎসঙ্গ অমরদ্যুতি মহাবিদ্যালয়’ বর্তমানে দুমকার সিধু-কানুহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক স্তরে কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান এবং স্নাতকোত্তর স্তরে বাণিজ্য শাখায় পঠন-পাঠনের যথেষ্ট মর্যাদা লাভ করেছে। আইন ও অনান্য শিক্ষাক্রমও চালু করার চেষ্টা চলছে।

সৎসঙ্গ বীণাপাণি বিদ্যামন্দির
এখানে বালিকাদের আদর্শানুগ উপযুক্ত শিক্ষা ও শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা আছে।

কলা বিভাগ
আশ্রমস্থ ‘কৃষ্টিবান্ধব নাট্য-শিল্পম্’-এর প্রযোজনায় যাত্রা-থিয়েটার ও অনান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে, যার ফলে মনোরঞ্জনের সাথে-সাথে লোকশিক্ষারও সুযোগ পাওয়া যায়।‘সঙ্গীত-বিভাগ’-এ উচ্চাঙ্গ ও লঘু সঙ্গীত, ভজন-কীর্তানাদির শিক্ষা ও চর্চা হয়ে থাকে। এছাড়া, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও অনান্য শিল্পকলা চর্চাও আশ্রমে হয়ে থাকে। নিয়মিতরূপে চিত্র ও বিভিন্ন শিল্পকলার প্রদর্শনীর আয়োজনও আশ্রমে হয়ে থাকে।

অতিথি ভবন
আশ্রম-আগত ভক্তশিষ্যদের নিশ্চিন্তবাসের জন্য বেশ কয়েকটি অতিথিশালা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থান-সংকুলানের জন্যে কয়েকটি বহুতল ভবন ও বেশ কয়েকটি স্থানে হলঘরের (ডর্মিটরী) সংখ্যাবৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান অতিথি-আবাস নির্মাণ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কর্মরত থাকে।

মেমোরিয়া
এখানে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীবড়মার ব্যবহৃত জিনিসপত্রাদি অবিকৃত অবস্থায় ও উপযুক্ত তত্ত্বাবধানে রক্ষিত। শ্রীশ্রীঠাকুর-সন্দর্শনে আগত দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতি, আলোচনা, বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারের দুর্লভ মুহূর্ত্তগুলি সাল-তারিখ সন্নিবেশে ছবির মধ্যে বাঁধানো রয়েছে। এছাড়া ‘ষোড়শী- ভবন’ (শ্রীশ্রীবড়দার বাসগৃহ)-এর একটি পৃথক ভবনে ‘স্মারণ-সৌধ’ নামে শ্রীশ্রীবড়দার ব্যবহৃত জিনিসপত্রাদি পরিচ্ছন্ন ও উপযুক্ত তত্ত্বাবধানে রক্ষিত। পরিবার-পরিজনের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিশিষ্ট মানুষদের সাথে সাক্ষাৎকার ও দেশের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের দুর্লভ মুহূর্ত্তগুলির আলোকচিত্র এখানে প্রদর্শনের জন্য সুসন্নিবেশিত করা হয়েছে।

যতি-আশ্রম
শ্রীশ্রীঠাকুর চেয়েছিলেন এমন কতকগুলো মানুষ, যাদের মধ্যে ধর্ম ও কৃষ্টি রূপ-পরিগ্রহ করবে। যাদের চরিত্র ও চলন অমৃত জালুস বিকিরণ করে মানুষকে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভাবে ইষ্টে কেন্দ্রায়িত করে তুলবে। এই উদ্দেশ্যেই শ্রীশ্রীঠাকুর ২৬শে আশি^ন, ১৩৩৫, মঙ্গলবার (ইং ১২-১০-১৯৪৮) শুভ বিজয়ার দিন থেকে কতিপয় প্রবীণ কর্মীকে নিয়ে ‘যতি-আশ্রম’-এর সূত্রপাত ঘটান। ঠাকুর-বাংলার মধ্যেই তাদের থাকার পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বসে যতিদের নিয়ে বহুদিন বহু আলোচনা ও বাণী প্রদানের মাধ্যমে চলার পথের অমৃত-সঙ্কেতগুলি লিপিবদ্ধ করে দেন। যতি-জীবনে পালনীয় সে-সব বাণী সঙ্কলিত করে পরে ‘যতি-অভিধর্ম্ম’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে যতি-আশ্রমে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যবহৃত শয্যাসহ অনান্য পবিত্র নিদর্শনগুলি সযত্নে রক্ষিত আছে। সংলগ্ন দীক্ষাগৃহগুলি যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আশ্রমে আগত দীক্ষা প্রার্থী ব্যক্তিগণকে ঐ গৃহগুলিতে বসেই দীক্ষাদান করা হয়।

সৎসঙ্গ প্রেস
সৎসঙ্গের নিজস্ব প্রেস এটি। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী-সংকলন শত শত গ্রন্থরূপে মুদ্রিত হয়েছে এখানে। এই প্রেসের তত্ত্বাবধানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারা-সম্বলিত নি¤œলিখিত মাসিক পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হয়Ñআলোচনা (বাংলা), সাত্বতী (হিন্দি), খরমধঃব (ইংরেজি), আগমবাণী (অসমীয়া), ঊর্জ্জনা (ওড়িয়া), আরশাল (সাঁওতালি) ও স্বস্তিসেবক (বাংলা)।
অনেক সময় দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দ শ্রীশ্রীঠাকুরকে বিরল প্রজাতির পশুপক্ষী উপহার দিলে তিনি খুশির সঙ্গে সেগুলো গ্রহণ করে সযতেœ রক্ষাবেক্ষণের নির্দেশ দিতেন। ফলে আশ্রমে স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠে এক নাতিবৃহৎ চিড়িয়াখানা। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই দেখতে যেতেন সেসব পশুপক্ষীদের। পশুপক্ষী সম্বন্ধে শ্রীশ্রীবড়দারও ছিল বিশেষ আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা। তাঁরই অভীপ্সায় এক বিশাল খাঁচা নির্মিত হয়, যেখানে একই সাথে বিভিন্ন প্রজাতির পক্ষীদের রাখা হয়। মূলতঃ তাঁরই তত্ত্বাবধানে পশুপক্ষীগুলো পালিত ও রক্ষিত হতে থাকে এবং এক সময় ভারত সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিড়িয়াখানার মর্যাদা লাভ করে। নাম হয় ‘পশু-পালিনী’ (সৎসঙ্গ জু ফর চিল্ড্রেন এডুকেশান)। বর্তমানে পশুপক্ষী সংক্রান্ত আইনী জটিলতার দরুণ চিড়িয়াখানাটির সঙ্কোচন ঘটেছে। তথাপি এখনও বহু বিরল-প্রজাতির পক্ষীর সমবায়ে সেটি দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জন করে থাকে। আশ্রমের মধ্যে একটি বৃহৎ গোশালাও রয়েছে। সেখানে উপযুক্ত তত্ত্বাবধানে গো-পালন এবং আশ্রমিকদের দুগ্ধ সরবরাহ করা হয়।

প্রাত্যহিক সাংসারিক কাজ শেষ করে আশ্রমিক মায়েরা এখানে একত্রিত হয়ে ইষ্টদেবতার গুণর্কীতন করে থাকে। এখানে মায়েরা প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবারে মাতৃ-সম্মেলনের আয়োজন করেন। ‘উপাসনা’-র উদ্বোধনের দিনটির স্মরণে বার্ষিক অনুষ্ঠান ছাড়াও বছরের বিশেষ কয়েকটি দিনে মায়েরা ‘সৎসঙ্গ’, ভজন-কীর্তনাদির আয়োজন করে থাকেন। তাছাড়া, এখানে আশ্রমিক বালিকা ও কিশোরীদের নৃত্য-গীতাদি অনুশীলন করার সুযোগ দেয়া হয়।

শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছেন- ধর্ম কখনও বহু হয় না-ধর্ম এক। সপারিপার্শ্বিক জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে এবং শ্রীশ্রীঠাকুর হলেন ধর্মের মূর্ত্ত আদর্শ। তিনি কোন সম্প্রদায়-বিশেষের নন, বরং সব সম্প্রদায়ই তার। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-“একজন মানুষের বিনিময়ে আমি একটি সাম্রাজ্য ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু একজন মানুষকে ছাড়তে পারি না।” তাই তিনি বললেন- মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর।

আসুন, আমরা সকলেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের নির্দেশিত চলার পথে অগ্রসর হই আর তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে জীবনকে ধন্য করে তুলি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

আমার প্রাণের ঠাকুর গীতিকবিতা-১০
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

নাম নিয়ে ভাসালাম তরী জীবন নদীর স্রোতে,
শপথ নিলাম চলবো আমি তোমার চলা পথে।
ওগো ঠাকুর…..

তোমার চলা তোমার বলা তোমার জীবনধারা,
তুমি আমার পরমগুরু মোর জীবনে ধ্রুবতারা।
ওগো ঠাকুর…..

জীবন মানে মরণ জেনো এ পৃথিবীর বুকে,
মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো কাটবে জীবন সুখে।
ওগো ঠাকুর…..

মানুষ আপন টাকা পর, এই ভবে দুনিয়ায়,
তোমার নামে দীক্ষা নিলে শান্তি পাওয়া যায়।
ওগো ঠাকুর…..

হে প্রিয়পরম যুগাবতার তোমাকে প্রণাম করি,
চরণ পূজা করবো তোমার, সারা জীবন ধরি।
ওগো ঠাকুর…..

জীবন পথে চলতে গিয়ে পেলাম প্রভু তোমায়,
ওগো আমার প্রাণের ঠাকুর বন্দনা সবে গায়।
ওগো ঠাকুর…..

তুমি আমার প্রাণের ঠাকুর তুমি আমার প্রাণ,
সকাল সাঁঝে তাই তো প্রভু, জপি তব নাম।
ওগো ঠাকুর…..

কলির ঠাকুর অনুকূল ধর্মমূলক সামাজিক নাটক

কলির ঠাকুর অনুকূল
ধর্মমূলক সামাজিক নাটক

পরিবেশনায়- নতুন দিল্লি নাট্য সমাজ
সংগ্রহ, সম্পাদনা, নির্দেশনা
ও অভিনয়ে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী,
প্রযোজনা-শঙ্খ বিশ্বাস,
সুর- প্রশান্তকুমার,
সুর ও আবহ: কাঞ্চন নস্কর।
মঞ্চসজ্জা- ইন্দ্রনীল চ্যাটার্জী
সামাজিক নাটক- কলির ঠাকুর অনুকূল

নাট্যকারের নিবেদন

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সনাতন ধর্মের একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ। বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ শে ভাদ্র পাবনা জেলার অদূরে পদ্মানদীর তীরে হিমাইতপুরে তিনি আবির্ভূত হন। অনুকূলচন্দ্রের পিতা শিবচন্দ্র ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। তার জননী মনোমোহিনী দেবী ছিলেন একজন স্বতীসাধ্বী রমনী।

তিনি উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য। বাল্যকালে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন। পদ্মানদীর তীরে হিমাইতপুর গ্রমেই অনুকূলচন্দ্রের শৈশব, বাল্য ও কৈশর অতিক্রান্ত হল। পিতা-মাতার প্রতি ছিল তার গভীর শ্রদ্ধা।

একবার পিতার অসুখের সময় সংসারে খুব অর্থকষ্ট দেখা দেয়। বালক অনুকূলচন্দ্র এগিয়ে এলেন সংসারের হাল ধরতে। তিনি প্রতিদিন আড়াইমাইল হেটে গিয়ে শহরে মুড়ি বিক্রি করে সে অর্থ দিয়ে পিতার জন্য ঔষধ আনতেন, পথ্য আনতেন। মায়ের প্রতিও ছিল তাঁর অগাধ ভক্তি। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে সকল কষ্টিতিনি অকাতরে সইতে পারতেন। হিমাইতপুরে পাঠশালায় পাঠ সমাপ্ত হলে তিনি পাবনা ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হন।

সহপাঠীদের কাছে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছিলেন প্রিয়পাত্র। কেউ তাকে বলতেন ‘প্রভু’ আবার কেউ একধাপ এগিয়ে বলতেন অনুকূল আমাদের রাজা ভাই। পাবনা থেকে নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এলেন অনুকূলচন্দ্র। এখান থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি মনোনীত হন। কিন্তু সে পরীক্ষা দেওয়া আর তার ভাগ্যে ঘটেনী। এক দরিদ্র সহপাঠীর পরীক্ষার ফিসের টাকা যোগাড় করতে পারেনী দেখে ব্যথিত ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নিজের টাকাটা তাকে দিয়ে দেন। মায়ের ইচ্ছা পূরনের জন্য এরপর তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পিতা অসুস্থ, সংসারে দারিদ্রের কালো ছায়া।

তাই কলকাতায় শিক্ষা জীবন ছিল ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবন সংগ্রামের সময়। টাকার অভাবে ঠিকমত খাওয়া পর্যন্ত জুটত না। কখনও রাস্তার ধারের কল থেকে জল খেয়ে কাটাতে হত। আর্থিক কষ্ট থাকলেও অনুকূলের ছিল মধুর অমায়িক ব্যবহার। তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবেশী ডাক্তার হেমন্তকুমার চাটুজ্জে ঔষধসহ একটি ডাক্তারী বাক্স তাকে উপহার দেন। অনুকূলচন্দ্র ঐ ঔষধ দিয়েই শুরু করেন কুলিমজুরদের সেবা। সেবার আনন্দের সাথে সাথে যে সামান্য কিছু অর্থ আয় হত তাতেই ক্রমে ক্রমে তার অর্থকষ্টের অবসান হয়।

কলকাতা থাকা অবস্থায় অনুকুলচন্দ্র মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে বসে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। হিমাইতপুতে চিকিৎসক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এতে তার অভূতপুর্ব সাফল্য আসে। তবে তিনি শুধু দেহের চিকিৎসাই করেন না, মনের চিকিৎসাও করেন। তিনি উপলব্দি করলেন, মানুষের দুঃখের স্থায়ী নিবারণ করতে হলে শারীরিক মানসিক ও আত্মিক এই তিন রকম রোগেরই চিকিৎসা দরকার। তিনি মানসিক ব্যাধীর চিকিৎসা শুরু করলেন। অসহায় যারা অবহেলিত যারা অনুকূল তাদের হলেন প্রাণের বন্ধু। তাদের তিনি নাম মহাত্ম্য শুনিয়ে কীর্তনের দল গড়ে তুললেন। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষিত তরুণও এই সময় তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এদের নিয়ে কীর্তন আনন্দে মেতে উঠলেন অনুকূলচন্দ্র।

তখন থেকে সমাগত ব্যক্তিগণ তাকে ডাক্তার না বলে ঠাকুর বলে সম্মোধন করতে থাকেন। ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের এই মহিমার কথা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে লাগল। তবে কীর্তনের ব্যাপারটা নিয়ে ঠাকুর গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন, কীর্ত্তন মানুষের মনকে উপরের স্তরে নিয়ে যায় বটে, কিন্তু সে অবস্থা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। মনের স্থায়ী উন্নতি ঘটাতে হলে চাই সৎনাম স্মরণ ও মননের সাহায্যে ব্রহ্মার উপলব্ধি। আর তার জন্য দীক্ষা একান্ত আবশ্যক।

শুরুহল সৎ নাম প্রচারের মহিম্মানিত অধ্যায়। তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগল। সৎসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ঠাকুর শ্রী অনুকূলচন্দ্র। প্রতিষ্ঠান্টির নামের তাৎপর্য ব্যখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সৎ ও সংযুক্তির সহিত তদগতিসম্পন্ন যাঁরা তাঁরাই সৎসঙ্গী, আর তাদের মিলনক্ষেত্রি হল সৎসঙ্গ। শুরু হল মানুষ তৈরির আবাদ। কর্মের মাধ্যমে যোগ্যতর মানুষ গড়াই হল এর লক্ষ্য।

অন্যদিকে হিমাইতপুরে গড়ে উঠল ধর্ম কর্মের অপূর্ব সমন্ব্যে সৎসঙ্গ আশ্রম। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সুবিবাহ আস্তিকের এই চার স্তম্ভের অভিব্যক্তি। এই আশ্রমে বিভিন্নমুখী কর্ম প্রতিষ্ঠানের বিদ্যায়তন গড়ে উঠল, প্রাচীন ঋষিদের তপবনের নবতর সংস্করণ যেন।

ব্রহ্মচর্যা, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস সনাতন আর্য জীবনের এই চারটি স্তরই সৎসঙ্গ আশ্রমভূমিতে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ যুগোপযোগী রুপ লাভা করে। ঠাকুর অনুকূলচন্দের আধ্যাত্মিক প্রেরণায় উদদ্ভু হয়ে দলে দলে মানুষ এসে তাঁ শিষ্যত্ব গ্রহন করে। ঠাকুর অনুকুল চন্দের প্রতিষ্টিত হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম নামে উপমাহাদেশে সুপরিচিতি লাভা করে। মহাত্মা গান্ধী এই সৎসঙ্গের কর্মকান্ড দর্শন করে ভূয়শী প্রশ্নংসা করেন।

এটি একটি ধর্মমূলক সামাজিক যাত্রাপালা। গ্রামে গঞ্জে, শহরে এ পালাটির বহুল প্রচার হলে ও যুগের ঠাকুর যুগপুরুষোত্তমের প্রদর্শিত পথে সকলেই অগ্রসর হলে আমার প্রয়াস সফল হবে।

বিনীত নাট্যকার
নতুন দিল্লি- ১১০০২৮

কুশীলবগণ

অনুকূলচন্দ্র- যুগ পুরুষোত্তম [নাম ভূমিকায় অংশ গ্রহণ করেছেন কবিপূত্র সূর্যশেখর ভাণ্ডারী]
শিবচন্দ্র- অনুকূলচন্দ্রের পিতা [ভূমিকায় অংশ গ্রহণ করেছেন কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী]
মনমোহিনী- অনুকূলচন্দ্রের মাতা [ভূমিকায় অংশ গ্রহণ করেছেন কবিপত্নী শেফালী ভাণ্ডারী]
দুর্বৃত্তপ্রধান- [দুরৃত্তের ভূমিকায় অংশ গ্রহণ করেছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র (পল) অমিত বারিক]
দুর্বৃত্তগণ-গ্রামবাসীগণ- গ্রামের মাতব্ররগণ ইত্যাদি।

(সুত্রধর মাইকে ঘোষণা করবে)

হিমাইতপুর ছোট্ট গ্রামে পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা মনমোহিনী দেবীর গর্ভে বিশ্বমানবের পরম কল্যাণস্বরূপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। তিনি মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেই শুরু করে দেন নতুন কাজ, নতুন জীবন। তিনি নবউদ্যম নিয়ে উৎফুল্ল মনে উঠেপড়ে লেগে যান মানুষের চরিত্র গঠনের কাজে। তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কলূষমুক্ত করার জন্য এতো অপমান, এতো গঞ্জনা সহ্য করে চলেছিলেন তাঁর আপন গতিপথে। যেথায়ই দেখেছেন অসৎ প্রকৃতির লোকেরা শাসন পীড়নের মাধ্যমে সঠিক পথে আনা যাচ্ছে না, তখনই তিনি দেবদূত হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর প্রেম ভালবাসা নিয়ে। তাঁরই অংশ বিশেষ সংলাপ আকারে তুলে ধরছি :

(মঞ্চে আলো জ্বলে ওঠে। বেজে ওঠে নহবতের সুর। )

প্রথম দৃশ্য
(শিবচন্দ্রের বাড়ির অভ্যন্তর)

অনুকূলচন্দ্র : মানুষের দেহের রোগ সাময়িক, অল্প দিনেই সেরে যায়। কিন্তু দেহের ভিতরের রোগটা কীভাবে সারিয়ে তোলা যায় তাঁর একটা উপায় করতে হবে মা।

মনমোহিনী দেবী : খোকা তুই কি বলছিস! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না রে বাপ।

অনুকূলচন্দ্র : তুমি না বুঝলে কে বুঝতে পারবে মা, তুমি যে বিশ্বজননী। জগতের ভাল মন্দের চিন্তা করা তোমার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি।

মনমোহিনী : এবার বলতো বুড়ো বাপ আমার, তুমি কি করতে চাও?

অনুকূলচন্দ্র : মা-মানুষের দেহের ভিতরে অবস্থিত মন-মন্দিরই সর্বসিদ্ধ আত্মিক তথা আধ্যাত্মিক জীবনের মূল আধার। মানুষ আজীবন কষ্ট পায় মনের এই রোগ নিয়েই এবং অপরকেও কষ্ট দেয়। তাই আমি ভেবে দেখছি আমার সর্বশক্তি, প্রেম ভালবাসা দিয়ে মানুষের মনের সুস্থতা ফিরিয়ে আনবো।

মনমোহিনী : বাবা-অনুকূল, ঐ অঞ্চলে মূঢ় নীতিজ্ঞানহীন অসৎ লোকের অভাব নেই। সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ। তাঁরা না পারে এমন কোনো হীন কাজ নেই। অবলীলাক্রমে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা, অগ্নিকান্ড, লুটতরাজ, নারীদের ওপর অত্যাচার চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি করে চলছে। যারা তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেছে তাদেরকেই প্রাণে বাঁচতে দেয়নি।

অনুকূল চন্দ্র : তাই বলে আমিও হাল ছেড়ে বসে থাকতে পারিনা। তুমি শুধু আশীর্বাদ করো তাতেই সফল হতে পারবো। আর এই কাজটা ভেবে চিন্তেই করবো। তা নিয়ে কোনো চিন্তা করো না মা।

(ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মনে মনে ভাবলেন হুট করেই তাদেরকে বাধা দিতে যাওয়া ঠিক হবে না। তাদের আসুরিক মনোবৃত্তি যাতে ক্ষুন্ন হয় সেদিক বিবেচনা করে ধীরে ধীরে কাজ করে যেতে হবে)
(দৃশ্যান্তর)

দ্বিতীয় দৃশ্য
(গ্রাম্য পথ)

অনুকূলচন্দ্র : বন্ধুগণ তোমাদের জন্য মিষ্টি এনেছি। নাও তোমরা সবাই মিলে আনন্দ করে খাও।

দুর্বৃত্তগণ : সেকি ডাক্তার! তুমি আমাদের এতো খাতির করছ যে বড়। কোনো সভ্য ঘরের সন্তান আমাদের বন্ধু হতে পারে? তাতে যে তোমার দুর্নাম হবে গো। নাকি কোনো ছল করছো?

অনুকূল চন্দ্র : আরে বন্ধুগণ-আমি দুর্নামকে ভয় পাই না। কোনো ছলও করছি না। শুধু আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই, বন্ধু হতে চাই। তোমাদের আলোচনায় থাকতে চাই। এবার বিশ্বাস হলো তো?

দুর্বৃত্তদের প্রধান : ডাক্তার অনুকূলচন্দ্র, আমাদের একজন পরম হিতাকাঙ্খী। আমার মনে হচ্ছে। তোরা ভুল বুঝিস না। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সঙ্গে থাকলে ভালই হয়।

দুর্বৃত্তগণ : ওস্তাদ আপনার কথাই মেনে নিলাম। কিন্তু ডাক্তারকেও বলে রাখবেন সে যেন আমাদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা না করে।

অনুকূলচন্দ্র : কি বলছ বন্ধুগণ! প্রকৃত বন্ধু যে, সে কি তাঁর বন্ধুদের ক্ষতি চায়, নাকি করতে পারে?
(দৃশ্যান্তর)

তৃতীয় দৃশ্য
শিবচন্দ্রের বাড়ি

(কয়েকজন গ্রামবাসী সহ মুরুব্বি লোকেরা প্রবেশ করে)

গ্রামের মুরব্বি লোকেরা : কি যুগ পড়ছে রে বাবা-লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়ে শিবচন্দ্রের ছেলে অনুকূল একেবারে গোল্লায় গেছে। ডাক্তারি করতেছিল ভালই ছিল। কিন্তু সেসব ছেড়ে দুর্বৃত্তদের সঙ্গ নিচ্ছে। সবাই চলো তো, তাঁর বাবা মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করি।

(ডাক্তার অনুকূলচন্দ্র তথাকথিত মান-সম্মানের ভয় না করে বিষাক্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন কেন, কেউ বুঝবার চেষ্টাও করে নি। হয়তো এটাকেই বলে মোহ-মায়াজালে অন্ধ)

মুরব্বিগণ : শিবচন্দ্র বাড়ী আছ?

শিবচন্দ্র : আপনারা! কি সৌভাগ্য আমার। আসুন, আসুন, বসুন।

মুরব্বিগণ : আমরা বসতে আসিনি বাপু। জানতাম ভদ্রলোকের ঘরে ভদ্র সন্তান হয়। কিন্তু-

শিবচন্দ্র : কিন্তু কি?

মুরব্বিগণ : দেখ শিবচন্দ্র, তোমার ছেলে যে দুর্বৃত্তদের সাথে মিশে আড্ডা দেয় তা কি তোমার চোখে পড়েনি? এবার তোমাকে জানিয়ে গেলাম যা ভাল বুঝ তাই করবে।
(গ্রামবাসীগণ সহ মুরুব্বিগণের প্রস্থান)

শিবচন্দ্র : হায় ভগবান! এই ছেলেকে নিয়ে আর পারছিনা। মনো, ওরা কি বলে গেল তা তো তুমি নিজের কানেই শুনলে।

মনমোহিনী : ওরা ওদের কথা বলে গেছে তাতে কি হয়েছে? আমরা তো জানি, আমাদের ছেলে কেমন। অনুকূল এমন কোনো কাজ করতেই পারে না যাতে করে সমাজের অকল্যাণ হয়। তাছাড়া সে তো বাড়ি ফিরবে।

(অনুকূলচন্দ্রের প্রবেশ)

অনুকূলচন্দ্র : মা-আমাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে গো?

মনমোহিনী : আর কি হবে? তুমি দুর্বৃত্তদের পাল্লায় পড়ে দুর্বৃত্ত হয়ে গেছ এই এই …..

অনুকূলচন্দ্র : জান মা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দূষিত হলে সবার গায়েই তাঁর আঁচ লাগবে। তাই পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে তা নেভানোই সর্বপ্রথম কর্তব্য। তাঁর নীতিবাক্যই বলে দেয় সমাজে প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। কারণ পাপকে ঘৃণা করলেও পাপীকে ঘৃণা করা উচিত নয়। এবার হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক বা বৌদ্ধই হোক, সবাই একই পিতার সন্তান। এখন তুমি বলো, কেন ওদের সঙ্গ নিচ্ছি?

মনমোহিনী : তাই বুঝি নীলকণ্ঠের মতো গরল পান করে প্রত্যেককে পথ দেখাতে চাইছিস?

অনুকূলচন্দ্র : হ্যাঁ, মা। তাঁরা আমার অকৃত্রিম সেবা-ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে অকপটে তাঁদের মনের গোপন কথা বলছে। আর যদি আমি তাঁদের সাথে মেলামেশা না করতাম তাহলে কি তাঁরা বলতে চাইতো?

মনমোহিনী : সত্যি তোর এই কৌশল দেখে আমিও মুগ্ধ হচ্ছি। তুইই পারবে বাবা, ওদেরকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে।
(দৃশ্যান্তর)

চতুর্থ দৃশ্য

দুর্বৃত্ত প্রধান : তোরা ভাল করে কান পেতে শোন-আজই ঐ গৃহস্থ বাড়ির মেয়ে-ছেলেকে অপহরণ করবো। সে কি ডাক্তার! এই সময়ে তুমি?

অনুকূলচন্দ্র : তোমরা কোথাও যাচ্ছ বুঝি? আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো।

দুর্বৃত্তগণ : না-না। এটা কিছুতেই সম্ভব না। তোমার দ্বারা এসব কাজ হবে না।

অনুকূলচন্দ্র : তোমাদেরকে বুঝিয়ে বলছি-আমি সঙ্গে থাকলে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং তোমাদের লাভই হবে।

দুর্বৃত্তগণ : কি নাছোর বান্দা রে বাবা। কি আর করা যাবে। ডাক্তার চল। কিন্তু মাথায় রেখো তোমার দ্বারা যেন কোন অনর্থ না ঘটে।

(সুত্রধর মাইকে ঘোষণা করবে)

(তাদের সঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রও গেলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা গৃহস্ত বাড়ির আস্তাকুড়ের পাশেই লুকিয়ে রইল। কখন এই গৃহস্ত বাড়ির মেয়েরা বাইরে আসবে আর সঙ্গে সঙ্গে অপহরণ করবে। কিন্তু ঠাকুর ঐ আস্তাকুড়ের দুর্গন্ধ ও সাথে প্রচন্ড মশার কামড় সহ্য করতে পারেননি। তাই জোরে জোরে ইচ্ছে করেই চাপড় মেরে মশা মারতে লাগলেন)।

দুর্বৃত্তগণ : ঐ যে ডাক্তার, আগেই বলেছিলাম না তুমি এসব কাজ পারবে না। আবারও সাবধান করে দিচ্ছি শব্দ যেন না করো।

অনুকূলচন্দ্র : দূর হো শালার মশা-

দুর্বৃত্তগণ : সে কি! ডাক্তার জোরে চপেটাঘাত করতে করতে মাঠের উদ্দেশ্যে ভীমবেগে দৌড়াতে লাগল কেন? নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। চলতো আমরাও তাঁর পিছু পিছু যাই ……

অনুকূলচন্দ্র : আর পারছি না বাপু, একটু জিরিয়ে নিই।

দুর্বৃত্তগণ : ডাক্তার তুমি এমনভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠে এলে কেন?

অনুকূলচন্দ্র : কি আর করবো-শালার মশার কামড় খেয়ে মরতে গিয়েছিলাম এই ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে আমার কি প্রাণের মমতা নেই? জীবনটা কি এতই তুচ্ছ।

দুর্বৃত্তগণ : ডাক্তার তুমি বজ্রকণ্ঠে কিসব বলছ?

অনুকূলচন্দ্র : কেন তোমরা বুঝতে পারনি? তুচ্ছ মেয়ে মানুষের পাছে ছুটে লাভ কি? আমরা কি পুরুষ নই যে পরস্ত্রী হরণের চেষ্টা করবো? আমাদের কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই? আমরা কি এতই নিচ যে আত্ম মর্যাদা বিসর্জন দেব? আমাদের শৌর্য-বীর্য, রূপ-গুণ দেখে নারীরাই ছুটে আসবে আমাদের পেছনে তবেই তো …..

দুর্বৃত্তগণ : হে ডাক্তার, হে প্রাণের ঠাকুর! আমরা সৃষ্টিকর্তাকে চোখে দেখিনি কিন্তু তুমি আমাদের নতুন জীবন সৃষ্টি করেছো, তাই তুমি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তোমার এই বজ্র-গম্ভীর বাণী আমাদের আত্মসম্মানে প্রচন্ডভাবে ঘা দিয়েছে। আমাদের অন্তর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তুমি দয়া করে তোমার পদতলে স্থান দিয়ে আশীর্বাদের হাত আমাদের মাথায় রেখ।

অনুকূলচন্দ্র : বন্ধুগণ! আমার পা ছাড়। আর কেঁদো না। তোমরা কাঁদলে আমার প্রাণেও ব্যথা লাগে। তাই আল্লাহই বলো, ভগবানই বলো, গডই বলো যে যাই বলো না কেন তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করো। দেখবে দুঃখ ক্লেশ সব দূর হয়ে গেছে। তোমরা তোমাদের ভুল বুঝতে পারছ তাতেই আমি প্রীত হয়েছি আর আমি কিছু চাই না।

যবনিকা