বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

দেবযানী

প্রেমের প্রতীক তুমি দেবযানী
ত্যাগের প্রতীক তুমি দেবযানী
ব্যাথার নাম তুমি দেবযানী
ছলনার শিকার তুমি দেবযানী।

অপেক্ষার আর এক নাম দেবযানী
বঞ্চিতার আর এক নাম দেবযানী
করুণার আর এক নাম দেবযানী
ভালোবাসার আর এক নাম দেবযানী।

উপেক্ষিতা নায়িকা তুমি মহাকাব্যের পাতায়
কাটিয়েছ বড়ো দীর্ঘ সময় আশায় আশায়
মগ্ন ছিলে মধুর স্বপ্নে দিবস-যামিনী-ভোর
ছিন্ন হলো স্বপ্ন তব কাটিলো যখন ঘোর।

হতাশার আলো পিছনে ঢেলে
ব্যার্থতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে
আশার আলো সামনে মেলে
ক্ষমার প্রদীপ সামনে জ্বেলে
এগিয়ে চলবে জানি-
আমার প্রিয়তমা দেবযানী।

ওহে মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী

চিরকুট: ১৩। তারিখ: পহেলা জোষ্ঠ ১৪২৬ বাংলা

প্রিয় সুন্দরী লম্বা নাক ওয়ালী।

পত্রের প্রারম্ভে জানাই জোষ্ঠের অলস বিকেলে পুষ্পরথে মধুমক্ষিকার দিক বিদিক শহরশে ছুটোছুটির ব্যস্ততম শুভেচ্ছা। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত মাদ্রাজ নাভেল বেস স্টেশনে আমার জাহাজ নোঙর ফেলেছে কয়েকদিনের জন্য। মাদ্রাজের এই কোলাহলপূর্ণ নগরের মোড়ে ছোট্ট একটি টেবিলে বসে তোমায় লিখছি।

জানি খুব ভালো আছো। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পর্যুদস্ত মেঘের ক্যানভাসে অনুপস্থিতি বিকেলের পড়ন্ত সোনালী রোদ্দুর আর পাখির আলাপন বেশ জমে উঠেছে এ নগরে খোলা আকাশে। আমি এখন তেইশের কোঠায় দাঁড়ানো তোমার অচেনা মায়াময় রূপের বাঁধনে আবদ্ধ বুক ভাঙা এক উম্মাদ যুবক। রঙ রূপ গন্ধ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমি অনুভব করেছি তোমায়। আমি তোমার সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত বিমোহিত। শুনেছি ভালবাসা নাকি সবকিছুরই দাবীদার, সে দাবীর দোহাই রেখেই বলছি,আমার চিঠির জবাব দাও।

তোমার ঐ অবয়ব রূপ বৈশাখ মাসের পাকা ধান ক্ষেতে তপ্ত গরমে হা করা ফাটা মাটিতে এক পশলা বৃষ্টির প্রথম পরশ। তুমি ফোটা হয়ে বর্ষিত হও আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চাইতেও অনেক গভীরে। সমুদ্রে ভাসমান আমার কিস্তি, কুল কিনারাহীন, ঠিকানা বিহীন, সঠিক সময়ে যদি কিনারায় না পৌছায় তাহলে ডুবে বিনাশ হওয়ার আশংকায় আমি আতংকিত। কবে কেথায় কোন কিনারায় আমার কিস্তি ভিড়বে কেউ জানেনা ওই উপরওয়ালা মনিব ছাড়া। তোমার হৃদয়পটের দ্বীপপুঞ্জে আহবানের অপেক্ষায় আমার কিস্তি। সেথায় নোঙর ফেলতে চায়। তুমি সাড়া দাও, আমি উদ্ধার হই।

গোধূলির ধুয়াশার কক্ষপথে কল্পনার সত্যে অবলোকনে তুমিময় একটি সন্ধ্যের অবসান। ভয় মানুষের চোখে নয়,ভাবনায় আর মনে। মেয়েদের সন্দেহ প্রবণতা যেন জন্মগত, তাই তোমাকে বোঝাতে পারিনি তোমাকে ভুলতে পারবোনা। মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী আমার প্রাণে অপলক চেয়ে মনের মাঝে সন্দেহের ঘুড়ির এলোমেলো উড়োউড়ি। বৃষ্টি আসলে মনে হয় আমি তোমার শূন্যতায় মৌনতা। এই জীবনের নবগঙ্গায় কাগজের নৌকোসম জীবন কিছুদূর গিয়েই ডুবে যায় স্রোতের ঘায়ে। এই শহরের নীলা আকাশে কত দৃশ্যের অবতারণা,সকালে একরকম বিকেলে আরেকরকম। তুমি স্বপ্নের মতো ইচ্ছে ছাড়াই দেখা দাও, ইচ্ছে হলেই চলে যাও।

প্রিয় সুপ্তিতা সন্ধ্যে হলে বড্ড একা হয়ে পড়ি রোজ, তোমার খুনঁশুটিতে আমি খুন হই প্রতিনিয়ত। জলকলস্কে ভেঙে যায় আমার স্বপ্নের দেয়াল, তোমার জন্য হাজারো রঙে গড়া আমার সব কাল্পনিক রোমান্টিক ছবিতা। তোমার আকাশ সমান মনের ঘরে আমার অনুভূতির আলো পৌছায় আর, সে আলো বড্ড ম্লান তোমার মনের মন্দিরে। পাঁজর পোড়া ঘ্রাণে তুমি আনন্দ পাও, আমারও ভালো লাগে বুঝি??

আঘাতের কষাঘাতে জন্মায় ভালবাসা। তোমাকে ভুলে থাকা যায় না এ শহরে। অধরা সুখ হাতড়ে বেড়ায় এই নগরের মোড়ে মোড়ে তুমি ধরা দিয়েও দাও না ধরা। মৃত্যশয্যায় ঘুমিয়ে থাকার অভ্যেস আমার আছে, যদি এই চিঠিটাই তোমায় লেখা শেষ চিঠি হয়। আমি কাছে এলেই হারায় আকর্ষণ, আর দূরে গেলে তুমিও রেখেছিলে আমার খোঁজখবর। দেখো ছেলেটা অনেকখানি বদলে গেছে, সেই আগের মত নেই। তোমায় ভালবাসি বিক্ষিপ্ত আত্মার ছলনাময় প্রলাপে দুর্বোধ্য তুমি, দুর্বোধ্যই থেকে যাবে। আমার মনে হয় তোমার অভিশাপের চেয়ে আমার দুরত্বটাই শ্রেয়। অতি যত্নে চোখের নিচে একটা জলের নদী বানিয়েছি, আমি সে জলে রোজ ভেসে যাই নৌকো হয়ে। ভালবাসা সে আলো লেগেছিলো তোমার চোখের আকর্ষণে। অনুভূতিগুলো শিশিরের মত ঝরে পড়ে আমার পুরনো টিনের চালে, ক্লান্ত নিমের গাঁ বেয়ে বেয়ে। অন্ধ কারাগার শিবিরে বন্দি যত আমার অভিমান,তোমার অভিমান আমার আকাশ সমান। আমার শূন্যতা হয়ত তোমাকেও কাঁদাবে, সে আমার মিথ্যে ভাবনা হলেও মোটেই যে সত্যি নয় তা হয়ত নয়। তোমার মন জয়ের যুদ্ধে আমি হয়ত পরাজিত নাবিক, জয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম সামান্য। তোমার মায়াভরা রূপ ফাঁদে আমি পা দেয়ার অপেক্ষায়।

সে অপেক্ষার প্রহর যেন গভীর সমুদ্রে আরো গভীরে প্রবেশ করছে। না পাওয়ার যন্ত্রণা আমার হৃদয়ের মারাত্মক ফাঁদ মনে হয়। হয়তো তুমি বলবে এসব নিছক পাগলামি। তবে আমি জানি, তোমার নীরবতা আমার জন্য কেবল বিভ্রান্তিই হবে।

তোমার অভিযোগ লিখতে লিখতে আমি চিঠির শেষ প্রান্তে, মস্তিষ্কের আটক করা শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, চোখে ঘুমের ছাপ নিয়ে এখানেই আজ সমাপ্তি দিব ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ভালো থেকো কল্পনার দুর্গেশনন্দিনী।

ইতি:
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া চিরকুট লেখক।

ছবি : মাদ্রাজ ভ্রমণে ব্লগ।

কেমন আছো কবি?


কেমন আছো কবি?
তুমি কি এখনও লেখ কবিতা?
এখনও কি সমান ধার তোমার লেখনীতে?
কি সব ছাইপাঁশ লেখ বলতো-
কেউ কি পড়ে তোমার কবিতা?
কি লাভ এসব লিখে?
পারবে তুমি সমাজকে বদলাতে?

তোমার নাকি বিদ্রোহী মন
সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া
অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ঝলসে ওঠে তোমার কলম;
প্রতিবাদের ভাষায় রচনা ক’র কবিতা।

তোমার প্রতিবাদ প্রতিনিয়ত দলিতমথিত হচ্ছে,
প্রতিনিয়ত সমাজের বুকে ধর্ষিতা হচ্ছে
আমাদের মা-বোন;
রক্তে রাঙা আমাদের মাটি
স্বজন হারানো স্বজনের বিলাপে
বাতাস আজ ভারাক্রান্ত।

তবুও তুমি লিখে চলেছ কবিতা!
তোমার কবিতায় – মা কাঁদছে,
বোন কাঁদছে,পুত্রহারা পিতা কাঁদছে –
তাদের কান্নার ধ্বনি, চোখের জল
উঁচুর দিকে ধায় না,নিচুর দিকেই ধাবমান,
উঁচুর দিকে যে তেনাদের বাস!

আমি ভালো নেই,
তুমি কেমন আছো কবি?

শ্রাবণে আশা


আষাঢ়ের শেষ বৃষ্টির ফোঁটাগুলি
শ্রাবণের বার্তা বয়ে নিয়ে এলো,
বারান্দায় শেষ বিকেলে একলা বসে
উতলা মন যেন শ্রাবণকেই চাইছিল।
নূতনের আহ্বান, পুরাতনের দীর্ঘশ্বাস
এটাই পরিবর্তনের ইতিহাস!

শ্রাবণের বারিধারা ঝরবে ঝরঝর
আশায় আশায় কৃষকের দল,
আরও প্রাপ্তির আশা নিয়ে আছে
দাবদাহে অবগাহিত বৃক্ষদল।
আশা নিয়ে জমা রেখেছে শক্তি
মিলবে শ্রাবণে ভেকের মুক্তি!

অফিসের বাবুরা রয়েছে তাকিয়ে
কখন আসিবে শ্রাবণ,
রাস্তার জমা জলে বন্ধ যান
অফিসে লাগবে গ্রহন!
কেরানীর আশা শ্রাবণ এলেই কামাবে,
ভেজাবাবুদের থেকে উপরিটা জমাবে।

শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে শুভাকাঙ্ক্ষী
ধুয়ে মুছে পাপ
হয়ে যাবে সাফ
চাইছে সমাজের যত হিতাকাঙ্ক্ষী।

প্রস্তুতি

সারা দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে
খোলা আকাশের নীচে ছাদের কার্নিশের
রেলিং-এ ভর দিয়ে সে এসে দাঁড়ালো;
এলোমেলো কিছু বাতাস তাকে সঙ্গ দিল।
ফুসফুসে কিছু টাটকা খাবার চালান দিয়ে
রসিদের জন্য কর্মরত চাঁদের দিকে
তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো।

আজ সারাদিন তার এতটুকুও বিশ্রাম মেলেনি।
অসুস্থ স্ত্রীর পরিচর্যায়,ছোট্ট শিশুটির দেখাশোনায়,
কোথায় কোনদিক দিয়ে কেটে গেছে
কর্মব্যস্তময় দিনটি-
সে বুঝতেই পারেনি!
অবশেষে-
রুগ্ন স্ত্রীকে দিনের শেষ ওষুধটি খাইয়ে,
ছোট্ট শিশুটিকে ঘুম পাড়িয়ে
সে এসে দাঁড়ালো…..

মুখের সিগারেট থেকে একরাশ ধোঁয়া
বাতাসকে ধরতে দিয়ে সে শরীরকে রেলিং-এর
উপর ছেড়ে দিল;
উড়ে যাওয়া ধোঁয়ার সঙ্গে সারাদিনের ক্লান্তি
নিমেষে মিলিয়ে গেল।

প্রস্তুত হলো সে আগামী দিনের জন্য….

ডগি সেলফি

তিন বছর আগের কথা। ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম এক ছেলে বন্ধু ছবি পোষ্ট করেছে, তাতে ক্যাপশন লিখেছে – “একদা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি দ্বারা ছবিটি আঁকিয়ে নিয়েছিলাম” তার এই ক্যাপশন দেখে দুই মিনিট মুখ হা করে বসে ছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারিনি। পরে তাকে কমেন্ট করলাম “তোমাকে মোনালিসা আপুর মত লাগছে”।
তার দুই-তিন দিন পরে জানতে পারলাম প্রিজমা নামের একটি অ্যাপ বাজারে এসেছে। অ্যাপটির বিশেষ্যত হল সদ্য তোলা ছবি বা ইমেজ লাইব্রেরি থেকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ৩৩টি ফিল্টার ব্যবহার করে বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পিকাসো, মনেট, ভ্যান গগ, মাঞ্চ, লেভিটান, ক্যানডিনস্কি’র শিল্প ভঙ্গির আদলে ছবির রূপ দিতে পারে। তাছাড়া ডিসি কমিক বুকের জনপ্রিয় ডিজাইনগুলোর আলোকেও ছবি ফিল্টার করতে পারে। সেই সময়ে বাংলাদেশে কি যে হুলুস্থূল অবস্থা হয়েছিল! ছেলে, বুড়ো থেকে শুরু করে সবাই প্রিজমা অ্যাপ খেতে শুরু করলো। বেশ কিছুদিন চলেছিল অ্যাপটি তারপর শেষ। মূলত পাবলিক এক জিনিষ বেশীদিন খায় না।
প্রিজমা শেষ হবার পর ভালই চলছিল দিনগুলো কিন্তু এর পরবর্তী ঘটনা আরো ভয়াবহ!

ঈদের দিন বন্ধু বাসায় বেড়াতে গেলাম। আমাকে দেখে তার ৪ বছর বয়সী ছেলে মোবাইল নিয়ে ছুটে এল। কাছে এসে বলতে শুরু করল:
-আঙ্কেল, আঙ্কেল! চল আমরা ডগি সেলফি তুলি।
আমিতো রিতিমত অবাক, বলে কি এই বাচ্চা? ডগি সেলফি?
-ডগি সেলফি কিভাবে তোলে আমি জানিনা বাবা।
-আঙ্কেল তুমি না অনেক বোকা, চল আমি তোমাকে শিখিয়ে দেই।
মোবাইলের ক্যামেরা তুলে ধরতেই আমার চোখ ছানাবড়া! আমি কুত্তা হয়ে গেছি, কু্ত্তার মত নাক, কান আমার!
পরে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এটা এক ধরনের অ্যাপ যা ছবি তোলার সময় মানুষের মুখের আকৃতি কুকুর বা বিড়ালের মত করে দেয়। তাহলে ভাবুন একবার কি ভয়াবহ অবস্থা? কবে যেন দেখবো অ্যাপগুলো কুত্তার মত লেজও বানিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি শুরু হয়েছে আরেক ছাগুমি, ফেস অ্যাপ! ভাইরাল এই অ্যাপটি জোয়ান মানুষকে বুড়ো বানিয়ে দিচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ নিজের বুড়ো ছবি আপলোড দিচ্ছে। কিন্তু আরেক জাতীয় মানুষ এতে খুশি না, কারন এই ট্রেন্ডে মেয়েদের অংশগ্রহন নাকি অনেক কম, তারা নাকি বুড়ি হতে পছন্দ করছে না।

যাইহোক এখন ভাবছি আমার কথা আমি তো এমনিতে বুড়ো তাহলে আমার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায়না যদি একটু জোয়ান টোয়ান হতে পারতাম।

পালাকীর্তন ও বাউল গান (প্রথম অধ্যায়)

পালাকীর্তন ও বাউল গান।(প্রথম অধ্যায়)

কীর্তনবাংলা সঙ্গীতের অন্যতম আদি ধারা। কীর্তন বলতে সঙ্গীতের একটি সঙ্গীতশৈলীকে বোঝায়। বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত হিসেবে কীর্তনকে ধরা হয়। সাধারণ লোকের পক্ষে অতি সহজে ঈশ্বর সাধনার একটি উপায় হিসেবে এর উদ্ভব। গানের মাধ্যমে ধর্মচর্চার এ ধারা প্রাচীনকাল থেকেই এদেশে চলে আসছে।ঈশ্বরের নাম, গুণ ও লীলা বিষয়ক গানই কীর্তন।

সে ধারাবাহিকতায় বাংলার বৈষ্ণবধর্মজাত সঙ্গীতধারার বিকশিত রূপই কীর্তন। এতে সাধারণত ঈশ্বরের গুণ ও লীলা বর্ণিত হয়। তবে প্রাচীন, মধ্য ও বর্তমান এই তিন যুগেই কীর্তনের প্রচলন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১২ শতকে রচিত ‘গীত গোবিন্দ’ প্রথম কীর্তন গ্রন্থের সন্ধান পাত্তয়া যায়। এরপর যে সব কীর্তন রচয়িতার নাম উল্লেখ করা যায়। তাদের মধ্যে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের কথা উল্লেখযোগ্য।

কীর্তন দুপ্রকার-

১) নামকীর্তন বা নামসংকীর্তন এবং
২ ) লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন।

নামকীর্তন

হরি বা বিষ্ণুকে সম্বোধন করে ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে/ হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে\’ এ ষোল পদবিশিষ্ট কীর্তনই নামকীর্তন। অবশ্য নামকীর্তনের এ বোল ছাড়া আরও বোল আছে। সেগুলিও নামকীর্তন হিসেবেই প্রচলিত।

লীলাকীর্তন

রাধাকৃষ্ণ এবং গোপী-শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী অবলম্বনে যে তা লীলাকীর্তন। পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গ বা শ্রীচৈতন্যের কাহিনী অবলম্বনেও লীলাকীর্তনের প্রচলন হয়। কয়েকটি প্রধান লীলাকীর্তন হলো গোষ্ঠ, মান, মাথুর, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি। এগুলি পদাবলি কীর্তন নামেও পরিচিত।

পালা কীর্তন

পালা কীর্তন গুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী পালা করে গাওয়া হয় বলে একে পালা কীর্তন বলা হয়। পালা কীর্তন এ গায়ক অথবা গায়িকা গান গেয়ে থাকে এবং সাথে সংগীরা নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে থাকে। পালা কীর্তন এক সময় গ্রাম গঞ্জের অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল, এখন ও কিছু কিছু অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। পালা কীর্তন এ বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী বর্ণনা করা হয়, পালা কীর্তনকে পালা গান ও বলা হয়ে থাকে। এই গানটি হিন্দু ধর্মেই বেশি জনপ্রিয়। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী যেমন রামায়ণ , মহাভারত, শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন কথা বলা হয়ে থাকে।

বাউল গান

একতারা।

বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই তার যন্ত্র। বাউল গানে আলাদা মাত্রা দেয় এই একতারা। অথচ এই একটা তারই কাজ করতে পারে চারটি পৃথক যন্ত্রের। গত ৮ বছর ধরে সেই গবেষণাই করছেন বকখালির বাসিন্দা গৌতম হাজরা। লালন ফকিরের এই গান আজও চিরন্তন। শুধু লালন ফকিরই নন। বাউল সম্রাট পূর্ণদাস বাউল থেকে শুরু করে লক্ষণদাস বাউল কিম্বা কার্তিক দাস বাউলের মত শিল্পীদের কথায় সুর তোলে এই একতারা। কিন্তু জানেন কি যে একতারার একটা তার থেকেই তৈরি হতে পারে চারটে পৃথক যন্ত্রের সুর? বোঝা গেল না তো?

বাউল গান-১

আমার বাউল ঘরে জনম যেন হয়
শিল্পী-গোষ্ঠ গোপাল দাস

আমার বাউল ঘরে
জনম যেন হয় গো বারে বার
আমি চাইনা রে সুখ,
দাও ভরা দুঃখ।।
ওগো অন্তরে আমার;
হয় যেন বারে বার।

আমি ভিক্ষা মাগিয়া দ্বারে দ্বারে।।
পাই যাহা পাই ভালো।
আমি চাইনা ওগো
পূব আকাশে রমণ সুরা জানুক;
আমার একতারা হোক জীবন সাথি
এই দুঃখ পারাবার
হয় যেন বারে বার।

আমার কুঁড়েঘরে দারুন শাওন
বাধে প্রীতির বাসা
তবু এ ঘর স্বর্গ নরক
সুখের সর্বনাশা।
আমার নাইরে বান্ধব
স্বজন সুজন
ডেকে কথা কয় রে
খাই কি না খাই কোন পথে যাই
কেমনে জনম কাটাই রে
আমি দুঃখের মাঝে পেলাম খুঁজে
এই সুখেরই সংসার।
হয় যেন বারে বার।
আমার বাউল ঘরে জনম যেন
হয় গো বারে বার।

আইসো গাঁজা টানি

একসময় এলুমিনিয়ামের বাজারমূল্য রূপার চেয়েও বেশী ছিলো। কোনো রাজকীয় অনুষ্ঠানে রাজা বা তার পরিবারের লোকজনদেরকে এলুমিনিয়ামের চামচ দেয়া হতো এবং অন্যান্য অতিথিদেরকে দেয়া হতো রূপার চামচ। তখন রাজার টাকশাল থেকে শুরু করে বনেদী ঘরের সুন্দরী রমনীর অলংকারে এই ধাতুটি শোভা পেতো। অথচ এই এলুমিনিয়াম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় এমন তিনটি মৌলিক পদার্থের একটি। শুধুমাত্র বক্সাইট থেকে এলুমিনিয়ামের আলাদা করা বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল হবার কারনেই তখন এমন অবস্থা ছিলো।

যদিও ইলেক্ট্রোলাইট পদ্ধতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এলুমিনিয়ামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন পরবর্তিতে বেশ সহজলভ্য হয়ে যায় তারপরও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও জার্মানি তাদের এয়ারফোর্সের উন্নয়নের জন্য এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার ব্যাপকভাবে শুরু করে। হালকা এবং ক্ষয়রোধী হবার কারনে বেশ প্রচলন ছিলো এখনো। যদিও বিমান তৈরীতে এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার কমে গেছে তারপরও গেরস্থ ঘরের পাঁকা রাধুনীর কাছে এলুমিনিয়ামের পাত্রের কদর এতটুকু কমেনি।

মনে পড়ে গ্রামীন ফোনের সিআইসি প্রজেক্ট যখন চালু হয় তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধীর গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের জন্য সেবা দেয়াটা একটু দুস্কর ছিলো। বিশেষ করে খালবিল সংলগ্ন বা সপ্তাহে একবার হাটের সমাগম ঘটে এমন জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হতো। আবার এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোনো দিনে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বাড়াবার জন্য টাওয়ারে অতিরিক্ত রিসোর্স বিনিয়োগ করা সেসময়ে কারো জন্যই সাশ্রয়ী ছিলো না। তখন প্রায় সবার হাতেই নোকিয়ার টিপ মোবাইল। টাচস্ক্রীনের মোবাইলের নামগন্ধটি নেই কোথাও। তখন সমাধান হিসেবে আমি ইয়াগী উডা এন্টেনার একটা মডেল বানিয়ে বললাম কাজ হতে পারে। লম্বা খুটির মাথায় লাগিয়ে কোএক্সিয়াল ক্যাবেল আর হোল্ডার দিয়ে নেটওয়ার্ক দুর্বলতার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তখন এই এন্টেনাগুলো বিক্রী হতো ২০০ টাকার মতো। আমার নিজ হাতে যেটা বানিয়েছিলাম সেটার খরচ মাত্র ৭৫ টাকা। এর মধ্যে লোকাল বাসে করে বংশালের মার্কেটে যাওয়া আসাও ছিলো। ইয়াগী উডা এন্টেনা বানানোর প্রধান অনুষঙ্গই ছিলো এলুমিনিয়ামের পাইপ। এটা ২০০৭ এর দিকের কাহিনী হবে।

এমন না যে এগুলো বাজারে ছিলো না বা এগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতো না। মানুষের প্রয়োজনই বাধ্য করে নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে এবং পন্থা বের করতে। এর পেছনের গুঢ় রহস্য একটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ধরা যাক মধ্যযুগে ইহুদী আর ইসলামের প্রভাবে এলকোহলের প্রচলন পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। আল রাজী নিতান্ত ধার্মিক হয়ে এলকোহলের বিশুদ্ধ সংশ্লেষ প্রক্রিয়া বের না করতেন তাহলে কি হতো?

তার আগে জেনে নেই আসলে এলকোহলটা কি? আমরা যে সুমিস্ট ফল খাই তার মধ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্লুকোজ থাকে। এই গ্লুকোজ যখন ঈস্টের সংশ্পর্শে আসে তখন একধরনের এনজাইম নিঃসৃত হয় এবং বিক্রিয়া করে ইথানলের সৃস্টি হয় এবং তার ওপর কার্বন ডাই অক্সাইডের ফেনার সৃষ্টি হয়। তাই কোনো পচনশীল আম বা ভাতের মাড়ে পঁচে গেলে তার ওপর ফেনার অস্তিত্ব থাকলেই বুঝতে হবে সেখানে ইথানলের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি খান তাহলে নেশা ধরবে না কারন এলকোহলের পরিমান তাতে খুব কম পরিমানে আছে। এই ইথানলের পরিমান বাড়ালেই এটা বেশ ভালোমানের মদ হবে।
ইথানলের বেশ কিছু উপকারী গুন আছে। যখন এন্টিবায়োটিক ব্যাপারটার প্রচলন ছিলো না বা যুদ্ধের সময় এর অভাব দেখা যায় তখন ইথানলের প্রয়োজন পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষত সারাই এবং ডিসইনফেকশনে। এছাড়া ক্যামিস্ট্রির অনেক বিক্রিয়াতে এর অনুঘটক হিসেবে শুরু করে দ্রব্য, দ্রাব্য হিসেবে এর প্রচলন। আমাদের সভ্যতার বিকাশ বিশেষ করে রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রে একটা অন্ধকার সময় এখনো বিরাজ করতো।

তবে নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে এ্যালকোহলের ক্ষতির কথা সর্বজনিবেদিত। কিছুদিন আগে গবেষনায় প্রকাশিত যেকোনো পরিমানের এলকোহলই শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এবং ইউরোপীয়ানদের গড় আয়ু ঈর্ষনীয় হলেও এটা আরও বেশী হতো যদি তারা এলকোহলের আসক্ত না হতো। এই এ্যালকোহল আসক্তির কারনে তারা স্বাস্থ্য ও সামাজিক দিক দিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে অনেক বড়াই করতে পারেন যেসব দেশে এ্যালকোহল নিষিদ্ধ তারা খুব বুঝি ভালো আছে। এটাও মিথ্যা। ২০১৪ সালের এক মেডিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে পুরো বিশ্বে এমফিটামিনে আসক্ত হয়ে যতজন মানুষ ইমার্জেন্সিতে যায়, তার ত্রিশ ভাগ ঘটে সৌদী আরবে। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে মদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও সে দেশের জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ হেরোইন গাজা এমফিটামিন ম্যাথ স হ অনেক মারাত্মক ড্রাগে আসক্ত।

প্রশ্ন আসতে পারে মানুষকে কেনো নেশা করতে হয়। এটা কি জেনেটিক? প্রত্নতত্ববিদরা খুজে বের করেছেন আজ হতে প্রায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগে চীনারা এলকোহলের সংশ্লেষ করতে পারতো এবং বীয়ার জাতীয় পানীয় নিয়মিত পান করতো। তারও আগে ঈজিপশীয়ানরা, হিসাব করলে ১২০০০ বছর আগের ঘটনা, তারা তাদের শস্যাদী ঘরে তুলে বাড়তি অংশ গেজিয়ে মদসমতুল্য এলকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পান করতো। যদিও তাতে এলকোহলের পরিমান বর্তমান সময়ের মতো এত বেশী ছিলো না, কিন্তু তা পান করেই টাল হয়ে থাকতো।

এলকোহল বেশ ক্যালোরী সমৃদ্ধ হওয়ায় এটার পুস্টিগুন আছে বৈকি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে মেসোমোর্ফিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদের দেহ ক্যালোরী থেকে গ্লুকোজ সংগ্রহ করে সরাসরি মেটাবোলিজমের কাজে ব্যায় করতে পারে। দেহের গঠনে বেশ শক্তিশালী, স্পার্টান এ্যাথলেট যাকে বলে। অনেক প্রাইমেট আছে যাদের মধ্যে উচ্চ ক্যালোরীর খাবার বেশ কাজে দেয়। উচ্চ মেটাবোলিক হার বজায় রাখতে এ্যালকোহলের বিকল্প আর কি হতে পারে। যদিও মানবদেহে এলকোহলের ক্রিয়া একটু বেশী বিনোদনমূলক, পুষ্টিগত দিকের থেকে একটু কমই বা চলে।

আজ হতে ১২ -১৩ হাজার বছর আগে যখন টিভি ইন্টারনেট ইলেক্ট্রিসিটি কিছুই ছিলো না। তখন গরীব শ্রান্ত কৃষক উদাসী মনে আকাশের তারাদের পানে তাকিয়ে পাত্রের গেজানো তাড়িতে চুমুক দিয়ে নিজের কষ্ট ভুলতো। অথবা নতুন বিয়ে বা নবান্নের আনন্দকে আরেকটু ভিন্ন মাত্রা দিতে সাময়িক উত্তেজনার লোভে একটু মদে চুমুক দিলে দুনিয়া তো উল্টে যাচ্ছে না তাই না!

হয়তো এসব কারনেই আমরা নিয়েনডারথাল থেকে আলাদা হতে পেরেছি, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পেরেছি। নইলে বানর হয়ে দেখা যেতো ঐ গাছের শাখা প্রশাখায় ডিগবাজী খেতাম।

প্রয়োজন জিনিসটা এমনই একটা অনুষঙ্গ যেটা কিনা সভ্যতার মোড় ঘুরিয়েছে সবসময়ই। জেনোর ছাত্র লিউসিপিয়াসের দর্শনানুসারে কোনো কিছুই দৈব্যক্রমে ঘটে না কিন্তু সবকিছুই ঘটে কোনো কারনে এবং প্রয়োজনে। এ্যারিস্ট টল এই যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তাকে একটু স্পস্টবোধক রূপ দিতে গিয়ে বললেন পারস্পরিক বিপরীতার্থক বক্তব্যের একটি সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হবে। এ থেকে ডিডোরাস ক্রোনাস চারটা ধাঁধাঁর জন্ম দেন।

যদিও এরিস্ট টল সে ধাঁধাঁগুলোকে বেশ ভালোভাবেই খন্ডান সাগরের যুদ্ধের উদাহরন টেনে, কিন্তু সব কথার মধ্যে একটা ব্যাপার খুজে পাওয়া যায় না সেটা হলো যদি ১২০০০ বছর আগে এলকোহলের ব্যাব হার না জানতাম বা এলুমিনিয়ামের সংশ্লেষ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতাম, তাহলে কি হতো?

আকাশে কি প্লেন উড়তো না? যুদ্ধাহতরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গ্যাংগ্রীনে মারা যেতো? নতুবা কেউ না কেউ পরে সেটা আবিস্কার করতোই?

তার চেয়ে বড় কথা আবিস্কার তো হয়েই গেছে, এখন এটা ভেবেই বা লাভ কি?

ঠিক এ কারনেই কি আমরা জাতি হিসেবে কোনো কিছুর আবিস্কারক হতে পারছি না?

একটার সাথে একটা খুব সূক্ষ্ম সংযোগ আছে বৈকি!

আমার চিন্তা ভাবনা- ০৩

যখন টাইটানিক ডুবছিল তখন কাছাকাছি তিনটে জাহাজ ছিল। একটির নাম ছিল “স্যাম্পসন”। মাত্র সাত মাইল দুরে ছিল সেই জাহাজ। ওরা দেখতে পেয়েছিল টাইটানিকের বিপদ সংকেত, কিন্তু বেআইনি সীল মাছ ধরছিল তারা। পাছে ধরা পড়ে যায় তাই তারা উল্টোদিকে জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে বহুদুরে চলে যায়। এই জাহাজটার কথা ভাবুন। দেখবেন আমাদের অনেকের সাথে মিল আছে এর। আমরা যাঁরা শুধু নিজেদের কথাই ভাবি। অন্যের জীবন কি এল কি গেল তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই আমাদের। তাঁরাই ছিলেন ঐ জাহাজটিতে।

দ্বিতীয় জাহাজটির নাম “ক্যালিফোর্নিয়ান”। মাত্র চোদ্দ মাইল দুরে ছিল টাইটানিকের থেকে সেই সময়। ঐ জাহাজের চারপাশে জমাট বরফ ছিল। ক্যাপ্টেন দেখেছিলেন টাইটানিকের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকুল ছিল না এবং ঘন অন্ধকার ছিল চারপাশ তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘুমোতে যাবেন। সকালে দেখবেন কিছু করা যায় কিনা। জাহাজটির অন্য সব ক্রিউএরা নিজেদের মনকে প্রবোধ দিয়েছিল এই বলে যে ব্যাপারটা এত গুরুতর নয়। এই জাহাজটাও আমাদের অনেকের মনের কথা বলে। আমাদের মধ্যে যারা মনে করেন একটা ঘটনার পর, যে ঠিক সেই মুহুর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি অনুকুল হলে ঝাঁপিয়ে পড়বো।

শেষ জাহাজটির নাম ছিল “কারপাথিয়ান্স”। এই জাহাজটি আসলে যাচ্ছিল উল্টোদিকে। ছিল প্রায় আটান্ন মাইল দুরে যখন ওরা রেডিওতে শুনতে পায় টাইটানিকের যাত্রীদের আর্ত চিৎকার। জাহাজের ক্যাপ্টেন হাঁটুমুড়ে বসে পড়েন ডেকের ওপর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি সঠিক পথ দেখান তাঁদের। তারপর পুর্ণশক্তিতে বরফ ভেঙ্গে এগিয়ে চলেন টাইটানিকের দিকে। ঠিক এই জাহাজটির এই সিদ্ধান্তের জন্যেই টাইটানিকের সাতশো পাঁচজন যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান।

মনে রাখা ভাল এক হাজার কারণ থাকবে আপনার কাছে দায়িত্ব এড়াবার কিন্তু তাঁরাই মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবেন যাঁরা অন্যের বিপদের সময় কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ইতিহাস হয়তো মনে রাখবেনা তাঁদের কিন্তু মানুষের মুখে মুখে গাওয়া “লোকগাথা”য় বন্দিত হবেন তাঁরাই যুগে যুগে।
দেশ যখন ডুবছে তখন ষোল কোটি মানুষ ঘুমোচ্ছে কার ভরসায়?

স্মৃতিতে গত ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮ রাশিয়া

আসছে বিশ্বকাপ ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবল আসন্ন। এবারের বিশ্বকাপ হবে রাশিয়ায়। বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয়ে থাকে, ‘বিগেস্ট শো অন দ্যা আর্থ’। সারা পৃথিবীকেই এই পুরো একটি মাস মোহাবিষ্ট করে রাখবে ফুটবল। একটি মাস শুধুই ফুটবলের। আমাদের দেশেও বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা মোটেও কম নয়, বরং অনেকক্ষেত্রে তা অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর থেকেও বেশি। বিভিন্ন দেশের রঙবেরঙের জাতীয় পতাকা এসময় উড়তে দেখা যায় দেশের সবখানে- গ্রাম গঞ্জ, শহর বন্দর সর্বত্রই। লোকজন দল বেধে সড়কের মোরে মোরে ভিড় ক’রে লাইভ ম্যাচ টিভিতে উপভোগ করে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয় শুধুমাত্র বিশ্বকাপ উপলক্ষেই। চায়ের দোকান, লোকাল বাস, অফিস আদালত, রোয়াক, পার্কের বেঞ্চ সবখানে শুধু ফুটবল ফুটবল আর ফুটবল। সত্যি, আমাদের দেশের আপামর মানুষের জন্যে দারুণ আনন্দের একটি মাস, বিশ্বকাপ ফুটবলের এই একটি মাস।

মনে পড়ছে, বিগত কোনও এক বিশ্বকাপে একবার সেলুনে চুল কাটতে গিয়েছিলাম, এসময় নরসুন্দর মহাশয় সেখানে উপস্থিত জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে ফুটবল নিয়ে এমন সিরিয়াস আড্ডা দেয়া শুরু করলো যে, আমার মনে হচ্ছিল, কোনও ফুটবল বিশ্লেষক গবেষক যেন আমার চুল কাটছে! চুল কাটায় তার আদতে কোনও মনোযোগই ছিল না, সব মনোযোগ ফুটবল নিয়ে আড্ডায়। কোনওরকম আর্মিদের মতো চুল ছোট ক’রে ছেটে দিয়েই বিদেয় করেছিল। হা হা হা।

ব্রাজিল আর্জেন্টিনা- দুভাগে পুরো দেশ বিভক্ত হয়ে যাবে। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা, তর্কবিতর্ক, বাদানুবাদ হবে দেশের সর্বত্রই। দুয়েক জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভক্ত সমর্থকদের মাঝে তপ্ত বাক্য বিনিময় ও মৃদু হাতাহাতিও হবে কোথাও কোথাও।

***
এরিয়েল ওরতেগার জন্য ভালবাসা

আর্জেন্টিনা’র এরিয়েল ওরতেগা আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন ফুটবলার। এ শুধুই তাঁর ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য। সত্যি বলতে কি, বল ড্রিবলিং কাটানোতে তাঁর মতো দক্ষ খেলোয়াড় আমি আমার এযাবতকালের জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি! এ কাজটা খুব ভালোই পারতেন তিনি। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে দেখেছিলাম তাঁর অতিমানবীয় ফুটবলের জাদু। দিব্যি পাঁচ ছয় জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, ইচ্ছেমতো ডস দিয়ে দিয়ে বল নিয়ে বারবার টুপ করে ঢুকে পড়তেন প্রতিপক্ষের ডি বক্সে। একবার দুবার তিনবার- বারবার। বল পেলেই প্রতিপক্ষের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতেন তিনি। সহযে আর বল পা ছাড়া করতেন না, যেন বুটে অদৃশ্য কোনও আঠা লেগে আছে, তাতে লেপটে আছে বল। প্রতিপক্ষকে কাটানো ডালভাতের মতো সহজ ব্যাপার ছিল এরিয়েল ওরতেগার জন্য। চার পাঁচ জন একত্রে ঘিরে ধরেও বল ছিনিয়ে নিতে পারতো না তাঁর পা থেকে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা বুঝে যেতো, এঁকে বৈধভাবে কিছুতেই থামানো সম্ভব নয়। তাই বারবার অবৈধভাবে থামিয়ে দেয়া হতো। বেশিরভাগ সময় দেখতাম প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা জামা টেনে ধরতো, ধাক্কা দিতো, পা’য়ে ল্যাঙ মারতো- এভাবে একের পর এক ফাউল করে বলতে গেলে তাঁকে তাঁর স্বাভাবিক খেলাটাইই খেলতে দেয়া হয়নি; আমি ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের কথা বলছি। সেবার নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে রেফারি নেদারল্যান্ডের পক্ষে উলঙ্গ পক্ষপাতিত্ব করে অবৈধভাবে লাল কার্ড দেখিয়েছিল ওর্তেগাকে। সে ম্যাচে ড্যানিস বার্গক্যাম্পের শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মনে পড়ছে, ওরতেগার অশ্রুসিক্ত চোখে হতাশ হয়ে মাথা নিচু করে শ্লথ পা’য়ে হেটে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। তখন বুঝিনি, সেটাই হতে চলেছে আমার দেখা তাঁর শেষ পূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ! সেসময় সেভাবে ক্লাব ফুটবলের সাথে পরিচিত ছিলাম না। তাঁর পরের ২০০২ কোরিয়া জাপান যৌথ রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সম্ভবত এরিয়েল ওর্তেগা আর খেলার সুযোগ পাননি। পেলেও পুরো সময় খেলতে পারেননি। সম্ভবত বদলি খেলোয়াড় হিসেবেই খেলেছিলেন দুয়েকটি ম্যাচে। এরকম কিছু হয়েছিল।
জানি না এখনও তিনি খেলেন কিনা। আমি তাঁর চমকপ্রদ অতিমানবীয় ক্রীড়া নৈপুণ্যের সাক্ষী। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে আমি হাই স্কুলে অধ্যায়ণরত কিশোর ছিলাম। খেলাধুলা দারুণ পছন্দ করতাম। বিশেষ করে ফুটবল, ভলিবল ও সবরকমের মারপিটের খেলা- রেসলিং, বক্সিং, জুডো, তায়কোয়ান্দো ইত্যাদি। ক্রিকেট অতোটা নয়। সব থেকে প্রিয় ছিল ফুটবল। সেবার বিশ্বকাপে একমাত্র এই এরিয়েল ওর্তেগা’র কারণেই কিছুতেই চাইতাম না, জুর্গেন ক্লিন্সম্যান, অলিভার কান, লোথার ম্যাথিউস, মাইকেল বালাক’র মতো দক্ষ খেলোয়াড়ে পূর্ণ প্রিয় জার্মানি ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা’র মুখোমুখি হোক।
সে সব দিন ধূসর অতীত আজ। নিটোল সুখের একগুচ্ছ স্মৃতি। অনেককিছুই ভুলে গেছি সময়ের সাথে সাথে, যেটুকু মনে আছে, তাও বিস্তারিত বা পুঙ্খানুপুঙ্খ নয়। কিন্তু আমার পরিষ্কার মনে আছে এরিয়েল ওর্তেগাকে, তাঁর অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া নৈপুণ্য- খেলার যে কোনও পর্যায়ে বল পেলেই প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়কে ইচ্ছে মতো নাচিয়ে কাটিয়ে ডি বক্সে বারবার ক্ষিপ্রগতিতে ঢুকে পড়া। এঁকেই বোধহয় জন্ম ফুটবলার বা জাত ফুটবলার বলা হয়ে থাকে! বেশ নস্টালজিক হয়ে উঠছি তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। তাঁর সাথে সাথে আরও মনে পড়ছে, আমার ছেলেবেলার শহর- রাত জেগে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখা, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠা, বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়ানো, খেলার পর বিজয়ী প্রিয় দলের পক্ষে মিছিলে শরীক হওয়া… আহ, কতো যে প্রাণোচ্ছল সুমধুর ছিল সেসব দিন! যাই হোক প্রিয় ফুটবলার এরিয়েল ওর্তেগা’র জন্য হৃদয় নিংড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আজ আমার এ সামান্য লেখার মাধ্যমে। যেখানে যেভাবেই থাকুক তিনি, সুখদায়ক ফল্গুপ্রবাহে ভরা থাক তাঁর অনাগত প্রতিটি দিন।

***
এক কাপ ক্যাপুচিনোতে খেলা শেষ ও আরও কিছু প্রাসঙ্গিক এলোমেলো কথা

গেল বিশ্বকাপের কোনও একটি ম্যাচ (ঠিক কোন খেলা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না, সম্ভবত আর্জেন্টিনার কোনও একটা গ্রুপ পর্বের খেলা ছিল সেটা) ঢাকার গুলশানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত রেস্টুরেন্টে বসে দেখেছিলাম। চিনি ছাড়া ভীষণ কড়া এক কাপ গরমাগরম ক্যাপুচিনো খেতে খেতে। এক কাপ ক্যাপুচিনোতেই আমার খেলা শেষ! হা হা হা। রাত দেড়টা পর্যন্ত সেদিন ছিলাম সেখানে। আমার খুব প্রিয় ছিল সেই রেস্টুরেন্টটি সে সময়। তখন নিয়মিতই যেতাম। খুব ভালো বিভিন্ন কফি পাওয়া যেতো। ছিল, যেতো বলছি, কারণ দীর্ঘদিন সেখানে আর যাই না। ঠিক আজকে থেকে চার বছর আগের কথা এগুলো। এখনও রেস্টুরেন্টটা আছে সেখানে, সম্ভবত সবই তেমনি চার বছর আগের মতোই আছে, যেমন দেখেছিলাম। কিন্তু আমি এর মাঝে আর বহুদিন সেখানে যাইনি। রেস্টুরেন্টটির নাম সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করলাম না। ছোট্ট এক কাপ ক্যাপুচিনোর দাম তখন ছিল, একশত পঞ্চাশ টাকার মতো। এখন নির্ঘাত আরও বেড়ে গেছে। তবুও তুলনামূলক সস্তাই বলা যায়। ওর পাশে হোটেল ওয়েস্টিন’এ একবার একজন ক্যাফে লাত্তে খাইয়েছিল। আলোআঁধারিতে বিলটা এক ঝলক দেখেছিলাম, লাত্তে ছয়শত + টাকা!

যাই হোক রাত দেড়টা পর্যন্ত ছিলাম সে রাতে, সেই রেস্টুরেন্টে। আগেই বলেছি গুলশানের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট ছিল সেটা। ওখানে নিত্য বড় বড় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আসা যাওয়া করতো। অনেককে দেখেছিলাম। মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করতো, ওদের দুয়েকজনকে ধরে গুলশান দুইয়ের মোড়ে নিয়ে যেয়ে ইচ্ছে মতো পেটাই। তখন বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের আগুন সন্ত্রাসের দগদগে ক্ষত আমার বুকে। তাই মাঝেমাঝে এই ইচ্ছা বড্ড মাথাচাড়া দিতো।

এ ব্যাপারে আর তেমন কিছু বলার নেই আমার। শুধু আবারও বলছি, এক কাপ ক্যাপুচিনোতেই আমার সেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল! হা হা হা। রাত দেড়টায় ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু কীভাবে ফিরেছিলাম, তা আজ আর মনে নেই। বাসে নাকি হেঁটে হেঁটেই- এখন কিছুতেই মনে পড়ছে না। তখন অবশ্য গুলশানের খুব কাছে উত্তর বাড্ডায় থাকতাম। আরও অনেক এলোমেলো স্মৃতি এসে ভিড় জমিয়েছে সেই সময়ের। আহা, চারটি বছর চলে গেছে মাঝখানে। এখন আমি আর্জেন্টিনা’র ঘোর সমর্থক। আর্জেন্টিনা’র খুব ভালো একজন পত্র মিতা ছিল আমার, এন্টোনেলা পিনেডা নাম ছিল ওর। ২০১৩ সালে পরিচয় হয়েছিল। অত্যন্ত ভালো ও উদার মনের মেয়ে ছিল। ও তখন অষ্টাদশী। বেচারি ওর বাবাকে কোনওদিন দেখেনি। ওর জন্মের পরপরই ওর বাবা মা’র ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওর বাবা ওদের ছেড়ে চলে যায়। তারপর আর কোনও যোগাযোগ ছিল না তাদের মধ্যে।

আর্জেন্টিনা’র টেনিস খেলোয়াড় ডেভিড নালবান্দিয়ান আমার অত্যন্ত প্রিয় খেলোয়াড় ছিল। বেশ ক’বছর হলো অবসর নিয়েছেন। কের্টে কখনও হাসি ছাড়া তাঁর মুখ দেখিনি। খেলায় অনেককেই দেখতাম আম্পায়ার লাইনম্যান’র সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে, অনেকে তো রীতিমতো মারমুখী হয়ে উঠতো এসব নিয়ে। ডেভিড নালবান্দিয়ানকে কখনওই এরকম করতে দেখিনি। এক্কেবারে একজন মাটির মানুষ যাকে বলে, নিরহংকার, ক্রোধহীন, জলের মতো সহজ সরল। সবকিছু হাসি মুখে সহজভাবে গ্রহণ করতো। বেশ ক’বার আম্পায়ার লাইনম্যান’র পরিষ্কার ভুল সিদ্ধান্তেও সামান্য খেদ প্রকাশ করতে দেখিনি তাঁকে। একই কথা মেসিসহ সকল আর্জেন্টাইনদের ব্যাপারেই সম্ভবত প্রযোজ্য। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, রাগবি, টেনিস সবখানেই আর্জেন্টাইনদের মতো সুসভ্যা জাতি আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। তাই আমি এখন পুরোপুরিভাবে ঘোর আর্জেন্টাইন সমর্থক। এই বিশ্বকাপেও প্রত্যাশা আর্জেন্টিনার ঘরে যাক বিশ্বকাপ ট্রফিটি, নাহলে আবার জার্মানিই শিরোপা জয়লাভ করুক। তা নাহলে ইংল্যান্ড বা পর্তুগাল। পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’র মতো তুখোড় ফুটবলারের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটি ওঠা উচিৎও বৈকি। একই কথা লিওনেল মেসি’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবই অবশ্য কথার কথা। আমার কথায় তো আর কিছুই নির্ধারণ হবে না। আমি তান্ত্রিক বা জ্যোতিষীও নই। তবে আর সবার মতো মেসি, রোনালদো’র ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখার জন্যে মুখিয়ে আছি। উঠুক না হয় দুজনের একজনের হাতে দারুণ শৈল্পিক দৃষ্টিনন্দন ট্রফিটি।

***
স্মৃতিতে ৯৪’র ফুটবল বিশ্বকাপ

৯৪ সালে আমি খুব ছোটো ছিলাম, মাত্র সাত আট বছর বয়স। তবুও ফুটবল বিশ্বকাপের কথা মোটামুটি একটু আধটু ভালোই মনে করতে পারি। বিটিভি’র যুগ সেটা। স্যাটেলাইট তখনও আসেনি। টিভিসেটই ছিল হাতে গোনা! যাই হোক খেলা শুরুর আগে এ্যান্ড্রু কিশোর’র গান হতো, দিতি ইলিয়াস কাঞ্চন টিভি পর্দায় নাচতো; ‘রূপসী দেখেছি আমি কতো/ দেখিনি তোমার মতো’, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে…’। এইসব সিনেমার গান খুব ভালো লাগতো আমার। ঢাকাই সিনেমায় তখন ইলিয়াস কাঞ্চনের দারুণ জয়জয়কার। পাশাপাশি রুবেলও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমাদের বাড়ির কাছেই একটা সিনেমা হল ছিল। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সিনেমা দেখতামও বৈকি। বিশ্বকাপের খেলাও দেখতাম, কিন্তু বোঝার মতো পরিণত ছিলাম না। ফুটবল খেলার মোটেই কিছু বুঝতাম না, শুধু দেখতাম একদল হাফ প্যান্ট ও সাদা কালো জামা পরিহিত মানুষ ফুটবল নিয়ে এলোমেলো দৌড়াদৌড়ি করছে। খুব সম্ভবত খেলাটাকে তখন বিরক্তিকরই মনে হতো! সেবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন ও ইতালি রানার্স আপ হয়েছিল। চারিদিকে তখন ‘রোমারিও রোমারিও’ তোলাপার। এছাড়া খুব ভালো মনে করতে পারছি, বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে ম্যারাডোনা’র ড্রাগ কেলেঙ্কারি, খেলা না খেলার দোলাচল নিয়ে সারা শহরজুড়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। হ্যা পরিষ্কারই মনে করতে পারছি ঘটনাগুলো, সমস্ত শহর তখন ম্যারাডোনাময়। সে কী উত্তেজনা ম্যারডোনা’কে নিয়ে। আমার ফুটবল পাগল পিতাও যারপরনাই উদ্বিগ্ন, সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও। স্থানীয় অনেককেই ফুটবল নিয়ে আলোচনায় ফিফা, রেফারি, আমেরিকা (৯৪’র আয়োজক রাষ্ট্র) এর ওর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে দেখেছি। অনেকের তো রীতিমতো শোকে জর্জর হয়ে কেঁদে ফেলবার মতো পরিস্থিতি। যাই হোক সেই প্রথম শৈশবে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের ম্যারাডোনাকে নিয়ে এই উদ্বিগ্নতা দেখে, মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম যে, ম্যারডোনা খুব সম্ভবত সম্পর্কে আমার চাচা। বিশ্বকাপ শেষ হলেই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। আত্মীয় না হলে কী আর আমার বাবার মতো এহেন কাঠখোট্টা মানুষও তাকে নিয়ে এমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে! বেচারা সর্বত্র অস্থিরতা নিয়ে ঘোরাফেরা করছে, চেহারা যারপরনাই বিষণ্ণ, জীবনের প্রতি হঠাৎই যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। কারণ আর কি- ভাই বলে কথা। মায়ের পেটের না হলেও কোনওরকমের রক্তের সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে দুজনার মাঝে! আমি অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম এ ব্যাপারে যে, ম্যারাডোনা নির্ঘাত বাবার দিকের কোনও আত্মীয় আমার! হা হা হা।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Show must go on…’(অনুষ্ঠান নিশ্চয় চলতে থাকবে)। কথাটা এই মানবজীবন’রই অত্যন্ত সার সত্য। কারও জন্যেই কিছু থেমে থাকে না। ৯৪’র বিশ্বকাপও ম্যারাডোনার জন্য থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে দেখেছি, একই ক্রীড়া প্রেমিক মানুষগুলো মেতে উঠেছে ব্রাজিলীয় রোমারিও’কে নিয়ে। চারিদিকে ‘রোমারিও রোমারিও’ হৈ চৈ। এর মাঝে আরও অন্যান্য বেশ কিছু খেলোয়াড়ের নামের সাথেও এর ওর মুখে শুনে ভালো পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। যেমন- বেবেতো (ব্রাজিল), ক্যানিজিয়া, বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা), রজার মিলা (ক্যামেরুন), রবার্টো ব্যাজিয়ো (ইতালি) ইত্যাদি। সেবার ব্রাজিল’র হাতে চতুর্থ বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি ওঠে। রানার্স আপ হয়েছিল ইতালি। খেলার ফলাফল এক্সট্রা টাইমসহ সম্পূর্ণ ম্যাচ গোলশূন্য, টাইব্রেকারে ব্রাজিল ৩ – ২ ইতালি। সেই বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল পাওয়া সেরা ফুটবলার রবার্টো ব্যাজিয়ো পেনাল্টি মিস করেছিল ফাইনালে। খুব সম্ভবত সেটাই এযাবতকালের একমাত্র গোলশূন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ।

এই তো মনে পড়ছে, শহরজুড়ে হৈ চৈ, ইতিউতি ব্যস্তসমস্ত আলোচনা মানুষের, বাবার চেহারায় উদ্বিগ্নতা; খেলা চলছে, ফুটবল… বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষের কয়েকটি তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে টুকে দিয়েছি। আগেই বলেছি, খেলা বোঝার মতো পরিণত তখন ছিলাম না আমি, মাত্র সাত আট বছর বয়স। অনেকটা এমনি এমনিই বসে থাকতাম টিভিসেটের সামনে, কিন্তু উল্লেখিত ঘটনাগুলো দারুণভাবে মনে আছে। আর মনে আছে দিতি, ইলিয়াস কাঞ্চনের সিনেমার গানগুলো, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে…’। খেলার থেকে তখন এই গানগুলোই বেশি আকর্ষক ছিল আমার কাছে।

আহ্ ৯৪! আহ্ দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা! সময় যেন বহতা পানি। ২৪ বছর চলে গেছে মাঝখান, দু’ দুটি যুগ, অথচ মনে হচ্ছে যেন এই তো সেদিনেরই কথা!

***
স্পেনের জন্য শুভকামনা

স্পেন মরক্কো’র খেলা দেখছি। এই সেন্টার হলো বলে। স্পেন’র প্রতি আমার বিশেষ ভালো লাগা, শুভকামনা আছে। আমি স্পেনীয় টেনিস খেলোয়াড় কার্লোস ময়া’র খেলা ও ব্যক্তিত্বের একজন অনুরাগী ছিলাম। ছিলাম নয়, বরং বলি, এখনও আছি, কিন্তু তিনি অবসর নিয়েছেন বেশ ক’বছর আগে, আর টেনিসও সেভাবে ইদানীং দেখা হয় না। বিশ্ব ফুটবলে স্পেন ভীষণ রহস্যময় একটা দল। নিয়মিত অংশগ্রহণ যেমন আছে তাদের বিশ্বকাপে, তেমনি ফুটবল বোদ্ধারাও বরাবরই ফেভারিটদের তালিকায় রেখে আসছে স্পেনকে। সেটাই স্বাভাবিক। স্পেনিশ লা লিগা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যয়বহুল ফুটবল টুর্নামেন্ট। সেখানকার রিয়েল মাদ্রিদ ক্লাবটি যেমন অভিজাত, ঐতিহ্যবাহী, তেমনি সবচেয়ে ধনী ক্লাব। বিশ্বের সবচেয়ে পরীক্ষিত, শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সংগ্রহ করে থাকে দলটি বেশুমার অর্থের বিনিময়ে। এছাড়া অলিম্পিক, কনফেডারেশন কাপ, ইউরো ইত্যাদি অন্যান্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বেশ ভালো ফলাফল করে আসছে তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে বরাবরই হতাশাজনকভাবে কোয়ার্টার ফাইনালের পর আর যেতেই পারতো না! অনেক পরে ২০১০ এই শেষমেশ শিকে ছিড়লো স্পেনীয়দের। প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করলো। আমার শৈশব, কৈশোরে স্পেনিশ স্ট্রাইকার রউল গনজালেস একজন প্রিয় ও আদর্শ ফুটবলার ছিলেন। ৯৮, ০২, ০৬- ববিশ্বকাপ মাতিয়েছিলেন তিনি, যে পর্যন্ত স্পেন ছিল। মাঠে ভালো খেলার পাশাপাশি সবসময় সহাস্যমুখ দেখেছি তাকে। ভীষণ অমায়িক, উদার মনমানসিকতায় সমৃদ্ধ চমৎকার একজন মানুষ তিনি, একজন ভালো খেলোয়াড় হবার পাশাপাশি। ক্লাব ফুটবলে স্বদেশী ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদের হয়েও দৃষ্টিনন্দন ফুটবল শৈলী দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছিলেন আমার মতো আরও কোটি কোটি ক্রীড়ামোদী দর্শকদের। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করছি রউল গনজালেসকে।

এবারের স্পেনিশ দলটিও দারুণ খেলছে। ভরপুর শুভকামনা তাদের জন্য। স্পেনের হাতে আবার উঠুক বিশ্বকাপ।

মরক্কো দুটো ম্যাচ হেরে রেস থেকে আগেই বাদ পড়েছে। কিন্তু পর্তুগাল, ইরানের সাথে দুটো পরাজিত ম্যাচেই তারা প্রতিপক্ষের থেকে ভালো ফুটবল খেলেছিল, কিন্তু গেলটাই শুধু দিতে পারেনি (না দিয়েছে ইরানের জালে নিজের জালে নিজেই হেতে বল জালে জড়িয়েছিল একজন মরক্কান খেলোয়াড়) হা হা হা।

যাই হোক, ভালো পরিচ্ছন্ন উপভোগ্য উত্তেজনাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখার অপেক্ষা…

***
গতকালকের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা

গতকাল রাতে ঢাকার একটি বিশেষ স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিনে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়া খেলা দেখছিলাম। কোনও স্টেডিয়ামের ফুল প্যাকড গ্যালারীর মতো ভিড় বেশ বড়সড় একটি মাঠে। তিল ধারণের জায়গাও নেই বলতে গেলে। সত্যি, আর্জেন্টিনাতেও এভাবে তাদের খেলা দেখবার জন্য খোলা মাঠ ভর্তি দর্শক মাঝরাত অবধি থাকবে কিনা এব্যাপারে আমি সন্দিহান! গতকাল রাতের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা আমি কোনওদিন ভুলবো না। এক্কেবারে যেন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে চাক্ষুষ দেখছি খেলাটি। সিংহভাগ দর্শক আর্জেন্টিনার ঘোর সমর্থক। খেলা চলাকালীন মেসি, ম্যারাডোনা পর্দায় এলেই, চিৎকার চেঁচামিচি করে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে লাগলো তারা। অনেকেই ভুডুজেলা, বাঁশী, আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে এসেছিল খেলা দেখতে। অনেকের গা’য়ে আর্জেন্টিনার নীল সাদা জার্সি। একেবারে মেলার মতো উৎসবমূখর পরিবেশ। আমিও হাফ প্যান্ট, টি শার্ট পড়ে হাজির। বড় দলের খেলা হলে আমি সাধারণত মিস করি না, খেলা দেখতে চলে আসি এই মাঠে। যা হোক খেলা শুরু হলো। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে এ ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়ের কোনও বিকল্প ছিল না। মনে মনে অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে আর্জেন্টিনা আফ্রিকান বা এশিয়ান কোনও দলের কাছে পরাজিত হবে না (এর আগে কখনও এরকম ঘটেনি)। প্রথম অর্ধের শুরুতেই মেসি জ্বলে উঠলো। ১৪ মিনিটে দারুণ এক গোল করে এগিয়ে দিলো আর্জেন্টিনাকে। আর অমনি অনাবিল উল্লাসে মেতে উঠলো সেই মাঠে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখতে আগত উপস্থিত দর্শকবৃন্দ। হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল চারিদিকে। ভুডুজেলা, পটকা ফোটানোর শব্দে কান ঝালাপালা একেবারে। ‘মেসি মেসি’ চিৎকার উল্লাস সর্বত্র। ‘আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা’ কলরব। এর খানিক পর শুরু হলো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। কী যে বিড়ম্বনা। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই খেলা দেখছিলাম, আরও অনেকের সঙ্গে। অনুমিত ছিল, এই বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। থেমে গেলে টি শার্ট খুলে মাথা ও শরীর যথাসম্ভব মুছে নেবো। এভাবেই ঝঞ্ঝাটে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ খেলা দেখলাম।

খেলা চলতে লাগলো। আর্জেন্টিনা ১-০ গোলের লীড নিয়ে খেলছিল। এভাবেই শেষ হলো প্রথমার্ধ।

***
শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও আরও দুয়েকটি ছন্নছাড়া কথা

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল শুরু হতে যাচ্ছে আজ। এ পর্যন্ত ভালো, সফল, নির্ঝঞ্ঝাট একটি বিশ্বকাপ সমাপ্তির দিকে চলেছে। আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, যাদের শিরোপা জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছিল ফুটবল বোদ্ধা বিশেষজ্ঞরা, তারা কেউ প্রথম কেউ দ্বিতীয় রাউন্ডের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে ব্যথিত হয়েছি, দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর পরাজয়ে। খুব আশা করেছিলাম, ব্রাজিলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে তারা। কিন্তু তা হয়নি। পরের দিকে খেলাই আর দেখিনি। ব্রাজিল প্রথম রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচ থেকে ছন্দময় ফুটবল খেলছে। আমার এই ব্রাজিল দলের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় গ্যাব্রিয়েল জেসুস। খুবই ভালো লাগে ওকে। প্রচুর পরিশ্রমী ও পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলে থাকে, ফাউল টাউল একেবারেই করে না, আর নেইমারের মতো ন্যাকামো ট্যাকামো তো নয়ই। ওর জন্য বিশেষ শুভকামনা। বড় ক্লাব দলে দেখতে চাই জেসুসকে।

রাশিয়ার উথ্থান চমকে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। প্রথম রাউন্ডে দারুণ খেলেছে তারা, তবে সাবেক এক চ্যাম্পিয়ন দল স্পেনকে ২য় রাউন্ডে টাইব্রেকারে হারানোটা সবচেয়ে চমকপ্রদ। এই বিশ্বকাপের মাঠ থেকেই পুতিন আমেরিকার দীর্ঘ একক আধিপত্য ভেঙে আবার বিশ্বের (সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন ছিল) সমান্তরাল আরেকটি প্রধান পরাশক্তি হবার মিশনে নামবেন, বা ইতিমধ্যেই নেমেছেন বলে মনে হচ্ছে। ইদানীং রাশিয়াকে প্রায়শই আন্তর্জাতিক নানান বিষয়ে মত ভিন্নতা থেকে সরাসরি যুদ্ধ, আক্রমণ, সামরিক পদক্ষেপ ইত্যাদির ভয় দেখাতে দেখা যায় সারা বিশ্বকে। রাশিয়ানরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত উন্নাসিক, বেপরোয়া, জেদি আর উগ্র স্বভাবের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ান সৈন্যরা জার্মানিতে পৌছে অত্যন্ত বর্বরতা ও স্থানীয় নারীদের ওপর ভয়াবহ পৈশাচিক শারীরিক অত্যাচার করেছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক যোসেফ স্ট্যালিনকে এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, তিনি সরাসরি কোনওরকমের ভণিতা ছাড়াই বেমালুম বলে বসেন, “পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যুদ্ধ করে জার্মানিতে গেছে আমার ছেলেরা। তারা স্বভাবতই এখন ক্লান্ত, এ সময় তাদের একটু আনন্দ ফুর্তির দরকার আছে বৈকি!”

যাই হোক, আজকে প্রথম খেলা উরুগুয়ে বনাম ফ্রান্স। দারুণ একটি ম্যাচ দেখার অপেক্ষা করছি। দুটো দলই সমমানের শক্তিশালী দল। তবে উরুগুয়ের রক্ষণভাগ আর্জেন্টিনার তুলনায় ঢের শক্তিশালী। ফ্রান্সকে গোল পেতে হলে প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে। বিগত খেলাগুলো দেখে আমি এই ম্যাচে উরুগুয়েকেই এগিয়ে রাখবো। ফ্রান্সের রক্ষণভাগ ত্রুটিপূর্ণ। আর্জেন্টিনা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছিল গত ম্যাচে। তবে আবারও বলছি, আমার কথায় বা ভাবনায় তো আর কিছু হবে না, হয়ও না! নইলে ৯৪ সাল থেকে মেক্সিকো কেন কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডিই পেরোতে পারে না! হা হা হা। আমার তো প্রতিবারই মনে হয়, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানিকে হারিয়ে দেবে তারা, শ্রেয়তর দল হিসেবেই। কিন্তু কোনওবারই তো তা হয় না!

পরের খেলা ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম। এটাও খুব বড় একটা ম্যাচ হতে চলেছে। উভয়ই ফিফা রেটিংয়ের শীর্ষস্থানীয় দুটো দল। ব্রাজিল ১, বেলজিয়াম ৩। এখানেও আমি এগিয়ে রাখবো বেলজিয়ামকে। এ পর্যন্ত বেলজিয়ামকেই আমার ব্রাজিলের থেকে পরিণত, সুগঠিত, শ্রেয়তর দল মনে হয়েছে। মনে পড়ছে ২০০২ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড বা কোয়ার্টারে ফাইনালেই উভয় দল খেলেছিল, দারুণ লড়াই হয়েছিল সেই ম্যাচে। সেখানে তখনকার বেলজিয়াম অধিনায়ক উইলমোস্ট’র শুরুর একটি গোল অফসাইড বা অন্য কোনও কারণে রেফারি কর্তৃক বাতিল করা হয়, পরবর্তীতে এটা নিয়ে অনেকের সাথে, কিংবদন্তী আর্জেন্টাইন ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনাও রেফারির সমালোচনা করেছিল। এই বিশ্বকাপেও রেফারিং নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে, হবেও। এটাসহ আসন্ন প্রতিটি বিশ্বকাপেই হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, “মানুষ মাত্রই ভুল করে”। আর রেফারিরাও তো মানুষই, রোবট কিংবা ফেরেশতা নয়!

***
সেমি ফাইনাল লাইনআপ চূড়ান্ত, সমাপ্তির কাছে বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল লাইন আপ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ফ্রান্স বনাম বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া। দুটো সেমি ও পরবর্তীতে ফাইনাল ছাড়াও, ফাইনালের আগে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলা হবে। সবমিলিয়ে শেষ চারটি ম্যাচের অপেক্ষা এখন সবার। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক একটি ম্যাচ ছাড়া আর কোনও গুরুত্ব বহন করে না- সাধারণ দর্শকের জন্যে যেমন, তেমনি সেমি ফাইনালে পরাজিত দেশ দুটির জন্যেও। আমি খুব খুশি হবো, বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া’র মধ্যে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হলে। নতুন এক চ্যাম্পিয়ন দেখার জন্যে মুখিয়ে আছি। নতুন একটি দেশ চ্যাম্পিয়ন মানেই শিরোপাধারী দেশের কুলীন ক্লাবে আরেকটি নতুন নাম যুক্ত হওয়া। সেই কবে ১৯৬৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই থেকে চির ফেভারিট হয়ে আছে তারা বিশ্বকাপ আসরে। এবার এই তালিকা আরও স্ফীত হোক।

বেলজিয়ামের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে চার দলের মধ্যে। ফ্রান্স’র খেলোয়াড়রা রাফ, পাওয়ার ফুটবল খেলছে। উরুগুয়ের সাথে ম্যাচে প্রচুর ফাউল, নাটক, টাইম কিলিং ইত্যাদি অসাধুতা করেছে তারা। আমি কিছুতেই চাই না, ফ্রান্স ফাইনাল খেলুক। এছাড়া বিগত খেলাগুলো দেখে সার্বিকভাবে আমি বেলজিয়ামকেই শ্রেয়তর দল হিসেবে এগিয়ে রাখবো। তবে এটা যে মোটেও সহয হবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। ২য় রাউন্ডের খেলায় আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও পরপর তিন গোল করে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া ছিল বিস্ময়কর। যে কোনও সময় গোল করার দক্ষতা রয়েছে ফ্রান্স দলের। বেলজিয়ামকে জিততে হলে ডিফেন্স খুব শক্ত রাখতে হবে, প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে খেলোয়াড়দের। আর আমার মনে হয়, বেলজিয়ামের ডিফেন্স ফ্রান্সকে রুখে দিতে সক্ষমও বৈকি। দেখা যাক, কী হয়। খেলা তো আর অঙ্ক নয় যে, সূত্রানুযায়ী সব করলেই সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। ফলাফল যে কোনও কিছুই হতে পারে। দেখা গেল, আমার সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে বেলজিয়ামকে সেমি ফাইনালে ৫-০ গোলে হারিয়ে দিল ফ্রান্স! হা হা হা।

ইংল্যান্ড ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে আমি ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে রাখবো। ক্রোয়েশিয়া ইংল্যান্ডের থেকে ঢের শ্রেয় দল। ইংল্যান্ড দলটা অনেকটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। তুলনামূলক তরুণ ও সাধারণ মানের একটি দল। এ পর্যন্ত তেমন কোনও শক্ত প্রতিপক্ষের সামনে পড়েনি তারা। কলম্বিয়া, সুইডেন দুটো দলই তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ ছিল। এবার সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া দুটো দলের থেকে অনেকটাই দক্ষ, সুগঠিত দল। শতাংশের হিসেবে আমি আমি উক্ত ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৭০% বনাম ৩০% জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে রাখবো। ক্রোয়েশিয়া চমৎকার দল। ওদের খেলা বরাবরই উপভোগ্য। মনে পড়ছে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল তারা। ডেভর সুকার নামের একজন দারুণ ফুটবলার ছিল সেই দলে। ক্রোয়েটদের খেলার একটা দিক আমার খুব ভালো লাগে, তারা কখনওই সেভাবে ডিফেন্সিভ খেলে না। একাধিক গোলে এগিয়ে থাকলেও তারা সবসময় চেষ্টা করে গোল ব্যবধান আরও বাড়ানোর। শুভকামনা তাদের জন্য। পক্ষান্তরে ইংল্যান্ড, আগেই যেমন বলেছি, তুলনামূলক তরুণ অনভিজ্ঞ, সাধারণ দল। এই ইংল্যান্ড দল কিছুতেই গুণে মানে ক্রোয়েশিয়া’র সমকক্ষ নয়। তাদের জয় মানে নেহাতই বিশ্বকাপে আরেকটা অঘটনের জন্ম দেয়া।

ক্রোয়েশিয়া বা বেলজিয়াম’কে এই বিশ্বকাপের সম্ভব্য শিরোপা জয়ী দল হিসেবে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখছি।

সবমিলিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে দারুণ উপভোগ করেছি এই বিশ্বকাপ। প্রচুর গোল হয়েছে, প্রত্যেক ম্যাচেই গোল হয়েছে, আর এবারের বিশ্বকাপেই খুব সম্ভবত প্রথমবার কোনও গোলশূন্য ম্যাচ দেখতে হয়নি আমাদের। রাশিয়াকে আন্তরিক ধন্যবাদ দুর্দান্ত একটি বিশ্বকাপ উপহার দেবার জন্য। গতকাল রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকারে দুঃখজনকভাবে হেরে গেছে তারা। তবে তাদের খেলা দারুণ উপভোগ্য ছিল। রাশিয়ানরা খেলোধূলায় বরাবরই ভালো। অলিম্পিক গেমসে প্রচুর পদক পায় তারা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গড়া অন্যান্য দেশও বিভিন্ন খেলাধূলায় ভালো করে আসছে নিয়মিতভাবে।

যাই হোক এখন অপেক্ষা সেমি ফাইনালের…

(সংগ্রহ)

ছেড়ে দে হারামজাদা

আর কত রক্ত খাবি –
আর কত চিরবি আমাকে
খুবলে খেয়েও মিটছে না সাধ
আমার এই ছোট্ট যৌনটাকে।

কামুক তুই বুঝলাম আমি
আছে অনেক পল্লী
তারা থাকতে আমার উপড়
হাতটা কেন ফেললি।

স্বপ্ন তো দেখি আমি
তোরই মেয়ের মত
তবু কেন করলি আমার
এই শরীরটা ক্ষত।

এতই যখন সাধ তোর
গেলিনা কেন মা”র কাছে।
তোকে জন্ম দিয়ে
মাতৃত্বটাই তার মিছে।

মানুষ তো নয় তুই
পশু হবি বটে।
তোর মত হারামজাদার
লিঙ্গটা দিব কেটে।

কত বলব তোকে আমি
ছেড়ে দে হারামজাদা
এই পৃথিবীতে বাচার অধিকার
আমারও আছে আধা।

বাঙালের সাধ

বাঙালের সাধ

সন্ধ্যা থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, জানালা দিয়ে বৃষ্টির শব্দ আসছে সামান্য। ইচ্ছা করছে প্রত্যন্ত কোন গ্রামে গিয়ে মাটির ঘরে বসে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনি। আদা-লেবুর চা খেতে খেতে গালে হাত দিয়ে কল্পনা করতে থাকি আবোলতাবোল। আমার উচ্চাভিলাষের সীমা এই পর্যন্তই, বৈষয়িক ভাবে এর বেশি আমি চাইতে পারিনা। চেষ্টা যে করিনি তা না, কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে খুব বকাঝকা করেন। কিন্তু মানুষের প্রকৃতি বদলায় না।

সুইস ব্যাংকের শত কোটি টাকা সাথে অকেজো লিভার, কিডনি, হার্টের চেয়ে মন্দ কি বৃষ্টি বিলাস, বাঙালীয়ানা?

আসিফ আহমেদ
০৬.১১.২০১৬

download

নকল ভালোবাসা

তোমার সুন্দর মুখখানির দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম-
বল প্রিয়ে, কিবা তব প্রয়োজন?
বলেছিলে তুমি: হে আমার রাজন-
দেহ মোরে এক বচন, মম নাহি প্রয়োজন,
তবু তুমি কর রোজগারের আয়োজন।

তোমার দীঘল হরিণ নয়নের দিকে
তাকিয়ে বলেছিলাম-তোমার কি দরকার?
নয়নে নয়ন দিয়ে উত্তরিলে-শুধু তোমার রোজগার!

তোমার রক্তিম দুটি ওষ্ঠের দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞাসিলাম-বল প্রিয়ে,তোমার চাহিদা?
রাঙা দুটি ওষ্ঠের অল্প ফাঁকে দিলে উত্তর-
জগতের আকাঙ্খিত বস্তুটিতে মিটিবে সব আশা,
বুঝলে আমার সোনামনি-
তোমার পকেটে দেখতে চাই মানি, মানি আর মানি।

টাকার কাছে সেইদিন হার মানলো ভালোবাসা,
পেলাম ব্যাথা,বুকে গভীর হতাশা,
মনে মনে করিলাম কঠিন পণ,
আজি হতে টাকাই আমার হোক্ ধ্যান-জ্ঞান।
চাই না আমি নকল ভালোবাসা
প্রেম থাক্ দেবতা হয়ে বাকী সব কুয়াশা।

» =জীবন গদ্য………..(একজন মায়ের জন্য সন্তানদের আকূতি)


এই লেখাটি শাশুড়ি হাসপাতাল থাকার সময় লিখেছিলাম। তিনি গত রমজানে আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন। আল্লাহ পাক তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।

©কাজী ফাতেমা ছবি

ফণী তো ওদের বুকের বাড়ি আঘাত হানছে প্রতিনিয়ত। যেদিন থেকে মা শুয়ে আছেন হাসপাতালের বেডে। নাওয়া খাওয়া ভুলে কী দিন কী রাত পালাক্রমে শিয়রে বসে থাকা সন্তানেরা সামলাচ্ছেন সন্তর্পণে বুকের বাড়ি আগত শত সুনামী টর্নেডো সিডর অথবা ফণী। অশীতিপর বয়স, হাজার রোগ ব্যাধী বাসা বেঁধেছে তার দেহে, কখনো কিডনি আঁড়ি কাটে কখনও রক্তরা করে বিদ্রোহ, কখনো বা রক্তচাপ হয়ে যায় বৈশাখী খরা অথবা দেহের সোডিয়াম পটাশিয়াম রেখে ফেলে অনায়াসে রোজা, ঘাটতি পড়ে যায় এসব উনার। চোখের ঝাপসা আলোয় আত্মজদের বড় কার্পণ্য উনার। নাকের নলে থিরথির করে রিযিকের দানায় উদর ফুর্তি সে কী আর মিটে অথৈ ক্ষিধে!

অপেক্ষার বুকে মাথা রেখে কখনো চোখ লেগে যায় চেয়ারে বসে বসে, মায়ের নড়াচড়ায় চকিতে ফিরে আসে চেতন, ঘুমকে ছুটি দিয়ে দিন শেষে রাত যায় নিদ্রাহীন সহস্র ঘন্টা। ফিরে না দেহের শক্তি, ফিরে না চেতন, কেবল নড়াচড়া করলে ভুমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠে পুরো দেহ উনার। জিভের আগায় আটকে থাকে না বলা হাজার কথা। বলা হয়ে উঠে না আর।

সটান শুয়ে মা, নাক ডাকার নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে উঠে পরিচ্ছন্ন কেবিন। সফেদ কাপড়ে ঢাকা কেবিন, জানালায় সফেদ পর্দা, বিছানার চাদরখানাও পবিত্রতার ছুঁয়া মিশে আছে। অথচ এই শুদ্ধতার রঙ পোষাকেই উনাকে আমাকে সবাইকে ছাড়তে হবে এই মোহ দুনিয়া। সব অহংকার সব ক্ষমতা মিশে যাবে ধূলায়।

যে মা পেটে রেখেছেন দীর্ঘ নয় মাস নয়দিন অথবা তারও বেশি, তারপর একদিন পেট ব্যথায় দুনিয়া কাঁপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন পর পর আটটি সন্তান। লালন পালন শিক্ষা দীক্ষায় কেটে গেলো তার মনোহারী প্রজাপতি দিন। কেটে গেলো যৌবন, কেটে গেলো দোয়েল সময়। সন্তানদের সাফল্য এখন তুঙ্গে, তিনি সুখি মানুষ, স্বস্তি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন সে আশায় কেবল সুখ দিনাতিপাত শুরু। ঠিক তখনি যৌবনের সেই হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনির দেহে বাসা বাঁধে দুঃস্বপ্ন। মনে শান্তি আর দেহ জুড়ে রাজ্যের ব্যথা বেদনা নিয়ে তার শুরু দিন যাপন।

সন্তান হলো মানুষ, তিনি হলেন বুড়ো, মা মা বলে পাগল ছেলেরা মা চলে যাবেন মানতে নারাজ। নাওয়া খাওয়া ভুলে মায়ের সেবায় নিয়োজিত দিনরাত। আশা না ছাড়া সন্তানদের আকূতি যেনো ছুঁয়ে যায় আরশ, তিনি যেনো প্রাণ ফিরে পান দেহে। আবারও যেনো কথা বলেন তার সন্তানদের সাথ। হাসিমুখে ওরা ফিরে আসুক হাসপাতাল ছেড়ে,আপন নীড়ে। আল্লাহ যেনো প্রার্থনা করেন কবুল ওদের।

সন্তান যেনো এমনি হয়, উনার সন্তানের মত। দুনিয়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা সময়গুলো যেনো সকল মায়ের নসীবেই হয়। মানুষকে ভালোবেসে মানুষ ঠকে যায়, মাকে ভালোবেসে ঠকে যায়নি কোনো সন্তান। মাকে ভালোবাসুন, তার চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করুন অনায়াসে। তার মন পড়ুন, তাকে রাখুন শ্রদ্ধায় সম্মানে ভালোবেসে মাথার টোপর করে। জগতের সকল মা সুখি হোন এ কামনায় আমি বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ, ফি আমানিল্লাহ।